ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ কেন? – জাকির নায়েকের উত্তর
জাকির নায়েককে একবার তার টিভি শো তে একজন অমুসলিম জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, “ইসলামী দেশ সমূহে অমুসলিমদের ধর্ম প্রচার করা এবং উপাসনালয় নির্মাণ করা নিষিদ্ধ কেন, যেখানে মুসলিমরা চায় অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ সমূহে তাদের ধর্ম প্রচার এবং মসজিদ নির্মাণ করার অধিকার থাকুক?”
জাকির নায়েক এব্যাপারে সহমত পোষণ করেন যে, ইসলাম অমুসলিমদের প্রকাশ্যে তাদের ধর্ম প্রচার, ধর্ম চর্চা এবং উপাসনালয় করার অধিকার দেয় না। তার মতে, একজন অমুসলিম সর্বোচ্চ নিজের ঘরে নির্জনে গোপনীয়তা বজায় রেখে নিজের ধর্ম পালন করতে পারেন।
জাকির নায়েকের মতো ইসলামিস্টরা পশ্চিমা পোশাক পরে বড় কোনো প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে কথা বললে সহজ সরল মুসলিমরা তাদের অনেক বড় মাপের জ্ঞানী মানুষ বলে কল্পনা করে সুখ পান। তবে জাকির নায়েকদের মন মানসিকতা যে কতোটা নীচ ও জঘন্য এবং তাদের মধ্যযুগীয় বর্বর আদর্শকে ন্যায্য প্রমাণ করতে তাদের উপস্থাপিত অজুহাত সমূহ যে কতোটা হাস্যকর, সেটা একজন যুক্তিবাদী এবং বিবেকবান মানুষ সহজেই অনুধাবন করতে পারেন। জাকির নায়েক ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের প্রকাশ্যে ধর্ম প্রচার করা এবং উপাসনালয় নির্মাণ করা নিষিদ্ধ থাকাকে পূর্ণ সমর্থন দেন, আবার অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মুসলিমদের ইসলাম প্রচার করার অধিকার যেন থাকে, বেশি বেশি করে মসজিদ নির্মাণ করার সুযোগ যেন থাকে তাও চান!
এটি অবশ্য কেবল জাকির নায়েকের মানসিকতা নয়, এটি পুরো মুসলিম বিশ্বের মানসিকতার প্রতিফলন। অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে যে অধিকার না পেলে তারা ‘ইসলামোফোবিয়া’ ‘ইসলামোফোবিয়া’ বলে আর্তনাদ করবেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে অমুসলিমদের কাছ থেকে সেই একই অধিকার কেড়ে নেয়ায় তারা প্রকাশ্য বা নিরব সমর্থন দিবেন।
তার বক্তব্যটি এই ভিডিও থেকে দেখে নিতে পারেন:
জবাব:
জাকির নায়েক অত্যন্ত উদ্ভট এবং হাস্যকর একটি উপমা দিয়েছেন। তার বক্তব্য, “কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষককে যদি তার স্কুলের জন্য একজন গণিত শিক্ষক ঠিক করতে হয় তাহলে তিনি কি তার স্কুলে এমন শিক্ষক নিয়োগ দিবেন যিনি বলেন, ‘২ + ২ = ৩’?” তিনি বলেন, “অবশ্যই তিনি এমন কোনো শিক্ষক নিয়োগ দিবেন না যিনি গণিত বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখেন না। একইভাবে মুসলিমরা তাদের দেশে অমুসলিমদের ধর্ম মেনে নিবেন না, কারণ তাদের ধর্ম ভুল।” কি হাস্যকর! ‘২ + ২ = ৪’ একটি সার্বজনীন সত্য, আম গাছে আম আর জাম গাছে জাম ধরার মতোই সত্য। অপরদিকে ইসলাম কোনো প্রমাণিত সত্য নয়। মুসলিমরা ইসলামে বিশ্বাস করে, ঠিক যেমন অমুসলিমরা তাদের নিজ নিজ ধর্মে বিশ্বাস করে। আমরা কেউ বিশ্বাস করি না যে ‘২ + ২ = ৪’, আমরা জানি ‘২ + ২ = ৪’। আমরা কেউ বিশ্বাস করি না যে আম গাছে আম ধরে আর জাম গাছে জাম, আমরা জানি যে আম গাছে আম ধরে আর জাম গাছে জাম। মুসলিমদের কাছে যেমন কেবল ইসলামই সত্য এবং অন্যান্য সকল ধর্ম ভুল, তেমনি অমুসলিমদের কাছেও তাদের নিজ নিজ ধর্ম বাদ দিয়ে সকল ধর্মই ভুল। জাকির নায়েকের এই উদ্ভট উপমা ব্যাবহার করে অমুসলিমরা যদি তাদের দেশে মুসলিমদের ইসলাম প্রচার করার অধিকার কেড়ে নেয় এবং মসজিদ ভাঙা শুরু করে তাহলে জাকির নায়েকের অশিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত এবং শিক্ষিত-মূর্খ মুরিদরাই ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ বলে কান্নাকাটি করে চোখের জল নাকের জল একাকার করে ফেলবেন।
তারপর জাকির নায়েক বলেন, “কুরআনের আয়াত ৩:৮৫ বলে, ‘ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম’।” কুরআনের আয়াতে ‘ইসলামই একমাত্র সত্য ধর্ম লেখা থাকলে ইসলাম সত্য ধর্ম বলে প্রমাণিত হয়ে যায় না। কুরআনের আয়াতে ‘কুরআনে কোনো ভুল নেই’ লেখা থাকলেই প্রমাণিত হয় না যে ‘কুরআনে কোনো ভুল নেই’। কুরআনের আয়াতে ‘আল্লাহ্ আছেন’ লেখা থাকলেই প্রমাণিত হয় না ‘আল্লাহ্ আছে’। ঠিক যেমন কোনো কমিক বুক প্রমাণ করে না যে কোনো কমিক ক্যারেকটারের অস্তিত্ব বাস্তবে আছে। এধরণের বাচ্চাসুলভ কথাবার্তা বলে বেড়ানো জাকির নায়েকের খণ্ডিত লেখা সমূহ অনুবাদ করে অনেকে “নাস্তিকদের দাঁত ভাঙা জবাব” দেন!
জাকির নায়েক বলেন, “ধর্মের মামলায় আমরা মুসলিমরা অবশ্যই সত্য, অমুসলিমরা নয়”। খুবই অর্থহীন কথা। ইসলাম কেবল মুসলিমদের কাছেই সত্য, অমুসলিমদের কাছে নয়। জাকির নায়েকের কাছে ইসলাম ততোটাই সত্য যতোটা সত্য খ্রিস্টান ধর্ম একজন খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারকের কাছে।
জাকির নায়েকের এই হাস্যরসাত্মক বক্তব্যের জবাবে তৈরি এই ভিডিওটিও দেখতে পারেন:
ভালো লিখসেন