কি আছে ইসলাম ধর্মে যা তার আশ্রয়দাতার গলায় ছুরি চালাতে উদ্বুদ্ধ করে ?
বিভিন্ন মুসলিম দেশের নানা ভাবে অত্যাচারিত জনগোষ্ঠী বিপুল হারে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া সহ অন্যান্য উন্নত দেশে রিফুজি হিসাবে আশ্রয় লাভ করে। নিজের মুসলিম দেশে গৃহযুদ্ধ, অবিচার, অনাহার, অশিক্ষা , কুশিক্ষা থেকে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় এরা পাড়ি জমায় উন্নত বিশ্বে। এই সব দেশে তারা পায় বেকার ভাতা, বাসস্তান, বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা , সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাবস্থা ও সম্পূর্ণ বাধাহীন ভাবে ধর্মপালন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা যা কিনা তার ছেড়ে আসা সহি ইসলামি দেশে ছিল কল্পনার অতীত।
হাসান খালিফ শায়ের আলি নামের ৩০ বছরের যুবক গতকাল অর্থাৎ ৯ই নভেম্বর ২০১৮ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে তার পিকাপ গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন জ্বালিয়ে জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে । গাড়ি থেকে নেমে হাসান ৭৪ বছরের এক নিরপরাধ কফি শপের মালিককে ছুরি মেরে হত্যা করে ও আরও দুইজনকে হত্যার চেষ্টা করে পরে উপস্থিত পুলিশকেও ছুরি মারার সময় পুলিশের গুলিতে সে নিহত হয়। ১৯৯০ সালে এই হাসানের পরিবার সোমালিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় লাভ করে। বাবা ট্যাক্সি চালিয়ে ভাল আয় রোজগার করেন। হাসান সালাত আদায় করতেন উত্তর মেলবোর্নের এক মসজিদে। ২০১৫ সালে হাসানের পাসপোর্ট অস্ট্রেলিয়া কর্তৃপক্ষ বাতিল করে যখন ধারনা করা হয় সে আই এস নামের সহি ইসলামি দলে যোগদানের জন্য সিরিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করে। প্রথমদিকে হাসান কিছু নজরদারিতে থাকলেও পরে তার উপর থেকে তা তুলে নেয়া হয়। হাসান ছিচকে চুরি ও মাদকের সাথে জড়িত ছিল। আই এস ইতোমধ্যে হাসান খালিফ শায়ের আলির এই জেহাদি কর্মকাণ্ডের কৃতিত্ব দাবি করেছে। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পুরো অস্ট্রেলিয়ার কোথাও কেও কোন মুসলিমকে আঘাত তো দুরের কথা একটি কটু বাক্যও বলেনি। এ প্রসঙ্গে, বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার পর বাংলাদেশে হিন্দু ও তাদের মন্দিরে আমাদের তাওহিদি জনতা কি করেছিল তা পাঠকরা একটু তুলনা করে দেখতে পারেন।

এই অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরেই কাকতলিও ভাবে ৯ই ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রী ভিসায় পড়তে আসা বাংলাদেশী যুবতী মোমেনা সোমার ইসলামি আদর্শের নুমনায় সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। এই ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশী তার আশ্রয়দাতা ঘুমন্ত ভদ্রলোকের ঘাড়ে ছুরি ঢুকিয়ে দেন। ঘুমন্ত ভদ্রলোকের পাশে তার ৫ বছরের মেয়েটি বাবার পাশে ঘুমন্ত ছিল। সম্প্রতি মোমেনা সোমা অস্ট্রেলিয়ার আদালতে তার বক্তব্য দিয়েছে। এতে জানা যায়, আই এস এর ভিডিও দেখে ও ইয়ামেনি ইসলামী প্রচারক আনোয়ার আল আওলাকির লেকচার শুনে ইসলামে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুধু হত্যার উদ্দেশেই সে অস্ট্রেলিয়া এসেছে। হত্যা চেষ্টার আগে কালো ইসলামি পোশাক পরে আল্লাহু আকবর বলে আশ্রয়দাতার ঘাড়ে ছুরি চালায়। আদালতকে সে জানায়, ঘুমন্ত ভদ্রলোককে সহজ টার্গেট হিসাবে সে বেছে নেয়, আশ্রয়দাতার প্রতি তার কোন ব্যাক্তিগত ক্ষোব নাই এবং ছুরি মারার পর সে নিজের উপর ইসলামি দায়িত্বের বোঝা লাঘব বোধ করতে থাকে এই ভেবে যে আল্লাহর সামনে সে বলতে পারবে যে সে জিহাদের চেষ্টা করেছে। উল্লেখ্য তার এই সহি ইসলামি শিক্ষা এক নিরাপরাধ ঘুমন্ত আশ্রয়দাতার উপর ছুরি চালাতে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা বা নৈতিক দায়বদ্ধতার উদ্রেক করে নি এমনকি বাবার পাশে ৫ বছরের ঘুমন্ত মেয়েটিকে পিতৃহারা

করার চিন্তাও তার ইসলামি মস্তিস্কে আসেনি। ঢাকার কাজীপাড়ায় মোমেনা সোমার বাসায় যায় ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের দল। একপর্যায়ে মোমেনার বোন আসমাউল হুসনা সুমনা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তার ওপর ছুরি নিয়ে আক্রমণ চালান। পুলিশের অন্য সদস্যরা তাঁকে ধরে ফেলেন। এই সুমনাও তার বোনের মত একই ইসলামি আদর্শে দীক্ষিত ছিল।
সময়টা নব্বইয়ের দশকে, মসজিদে নামাজ পড়ার সময় ইমাম সাহেব বসনিয়ার মুসলমানদের সাথে সহমর্মিতা জানিয়ে দোয়া করছিলেন। বসনিয়ার মুসলমানদের জন্য আমার সহানুভুতি সবসময় ছিল। ভাগ্যক্রমে এক বসনিয়ার ট্যাক্সি চালকের সাথে আমার আলাপ হয়। তার দেশের কথা জিজ্ঞাসা করলে এক আশ্চর্য তথ্য জানতে পারি। সৌদি সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর কঠোর সমালোচনা করে ভদ্রলোক জানালেন, সৌদিরা তার যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পুনরনির্মাণে একটি রাস্তা, হাসপাতাল, স্কুল বা বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য এক পয়সাও বরাদ্দ করেনি বরং হাজার হাজার কপি কোরান বিতরন, মসজিদ নির্মাণ আর ওয়াহাবি ইসলামের প্রচার ছাড়া আর কিছুই করেনি। লক্ষ লক্ষ মুসলিম শরণার্থী ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে, কোন ধনী আরব রাষ্ট্র এইসব মুসলিম উম্মার ভাইদের তাদের দেশে ঠাই দেননি। আর এই মুসলিম শরণার্থীরাও জানে কোন আরব রাষ্ট্রের বর্ডারে জড় হলে গুলি খেয়ে মরতে হবে।
এই সব হতভাগ্য মুসলিম জনগোষ্ঠী যখন একটি উন্নত দেশে আশ্রিত হিসাবে তার সকল সামাজিক অধিকার ভোগ করে, কোন এক বিচিত্র কারনে ইসলামি উন্মাদনায় তারই আশ্রয়দাতার গলায় নির্দ্বিধায় ছুরি চালায় বা ঐ দেশের নিরপরাধ মানুষদের বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে চায়। এই অদ্ভুত মনস্তত্ত্ব ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম বা গোত্রে দেখা মেলা ভার। কি আছে এই ধর্মে, কোরান আর হাদিশে আর এর প্রচারক মোল্লা-মাশায়েখদের বয়ানে যার জন্য এই মুমিনরা সব মানবতার জলাঞ্জলি দিয়ে পাখা উঠা পিপিলিকার মতো আগুনে ঝাঁপ দেয়? আমাদের সামাজিক মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক ডিজিটাল ইস্লামিস্টদের দেখা যায়। ইনারা বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিতর্কের মাধ্যমে কখনো বিবর্তনবাদকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন কখন বা নয় বছর বয়সে বিবি আয়েশার ভরা যৌবনের প্রমান দেন আবার কখনো ইসলামে যুদ্ধবন্দি নারীদের যৌনদাসি বানানো যে অতি মানবিক এটা সকল নাদান শ্রোতাদের গুলিয়ে খাইয়ে দেন। পশ্ছাদ থেকে পশ্ছাদপদ বঙ্গ মুসলিমদের জ্ঞান, বিজ্ঞান, সামাজিক বা অর্থনৈতিক উন্নয়নে এদের কোনই ভুমিকা নাই। এক আত্মঘাতী, নিজের পায়ে কুড়াল মারা মুসলিমদের মগজে আরও বেশি অন্ধত্বের গোবর ভরা ছাড়া এনাদের আর কোন বড় ঈমানই দায়িত্ব নাই। কাজেই এই জাতি যে উপকারির ঘাড়ে লাথি মারবে সেটাই স্বাভাবিক।
তথ্যসুত্রঃ
Bourke Street attacker identified as Hassan Khalif Shire Ali as police carry out raids in Melbourne
ইসলাম ধর্ম জঙ্গিবাজ/ জেহাদী শেখায় ।কোরান হাদিস ছাড়া ইসলাম ধর্ম কি চলবে না?
এখানে সব লেখকের সাথে যোগাযোগ রাখতে চাই সেটা কিভাবে সম্ভব? আমার কিছু প্রশ্ন এবং কিছু দাবী রয়েছে সেগুলো ওনাদের কাছে উত্থাপন করতে চাই।