কোরআন এবং মেঘের ওজন

Print Friendly, PDF & Email

ভূমিকা

কোরআনের সূরা আল আ’রাফের ৫৭ নং আয়াতে কোরআনের লেখক ভারী মেঘমালার কথা বলেছেন। এইযে কোরআনে মেঘমালাকে ‘ভারী’ বলা হয়েছে সেটাকে কোরআনের একটি বৈজ্ঞানিক মিরাকল বলে দাবি করেছেন বিশিষ্ট ইসলামিক অ্যাপোলজিস্ট হারুন ইয়াহিয়া। তার দাবি অনুসারে, আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘেরও যে ওজন আছে সেই তথ্যটি ১৪০০ বছর আগের একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব ছিলো না। হারুন ইয়াহিয়ার এই দাবিটি কতটুকু যুক্তিসংগত সেটাই আমরা এ প্রবন্ধে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

মিরাকলের দাবি

হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,

“মেঘের ওজন অত্যাশ্চর্য অনুপাতে পৌঁছাতে পারে। যেমন, একটি পুঁজমেঘ, যা সাধারণত ‘বজ্র মেঘ’ বলে পরিচিত, ৩০০,০০০ টন পর্যন্ত পানি ধারণ করতে পারে। ৩০০,০০০ টন পানির একটি স্তূপ যে আকাশে ভেসে থাকতে পারে সেটা সত্যিই আশ্চর্যজনক।
মেঘের ওজনের ওপর লক্ষ্য রেখে কুরআনে বর্ণিত আয়াত সমূহ:
7:57
وَ ہُوَ الَّذِیۡ یُرۡسِلُ الرِّیٰحَ بُشۡرًۢا بَیۡنَ یَدَیۡ رَحۡمَتِہٖ ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَقَلَّتۡ سَحَابًا ثِقَالًا سُقۡنٰہُ لِبَلَدٍ مَّیِّتٍ فَاَنۡزَلۡنَا بِہِ الۡمَآءَ فَاَخۡرَجۡنَا بِہٖ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ ؕ کَذٰلِکَ نُخۡرِجُ الۡمَوۡتٰی لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۵۷﴾
আর তিনিই তাঁর রহমতের পূর্বে সুসংবাদরূপে বাতাস প্রেরণ করেন। অবশেষে যখন তা ভারি মেঘ ধারণ করে, তখন আমি তাকে চালাই মৃত ভূমিতে, ফলে তার দ্বারা পানি অবতীর্ণ করি। অতঃপর তার মাধ্যমে বের করি প্রত্যেক প্রকারের ফল। এভাবেই আমি মৃতদেরকে বের করি, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
13:12
ہُوَ الَّذِیۡ یُرِیۡکُمُ الۡبَرۡقَ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا وَّ یُنۡشِیٴُ السَّحَابَ الثِّقَالَ ﴿ۚ۱۲﴾
তিনিই ভয় ও আশা সঞ্চার করার জন্য তোমাদেরকে বিজলী দেখান এবং তিনি ভারী মেঘমালা সৃষ্টি করেন।
অবশ্যই কোরআন নাজিলের সময় মেঘের ওজন সম্পর্কে জানা সম্ভব ছিলো না। কোরআনে তথ্যটি এসেছে, কিন্তু আবিষ্কৃত হয়েছে অতি সম্প্রতিই, যা কোরআন যে আল্লাহর বাণী তার আরও একটি প্রমাণ।” [1]

জবাব

হারুন ইয়াহিয়ার লেখাটি পড়ে সত্যিই হাসতে বাধ্য হয়েছি। ঠিক কি গ্রহণ করে হারুন ইয়াহিয়ারা কোরআনে এমন মিরাকল খুঁজে পান আমার তা সত্যিই জানতে ইচ্ছে করে।

মেঘেরও যে ওজন আছে সেটা বোঝাটা সপ্তম শতাব্দীর একজন সাধারণ মানুষের জন্য কোনোভাবেই কোনো অসম্ভব ব্যাপার ছিলোনা। তখনকার একজন সাধারণ মানুষের জন্য এটা অনুধাবন করতে পারাটা কঠিন ছিলো না যে, যেহেতু মেঘ থেকে আসা বৃষ্টির পানির ওজন আছে, সেহেতু মেঘেরও ওজন আছে। তখনকার মানুষ এতটাও বোধবুদ্ধিহীন ছিলেননা।

হারুন ইয়াহিয়ার লেখাটি পড়লে মনে হয় সপ্তম শতাব্দীর মানুষজন কিছুই বুঝতেননা, একেবারে অবুঝ শিশুর মতো ছিলেন।

হারুন ইয়াহিয়ার দাবিটি কেবলই হাসির খোরাক জোগায়। তার মতো অনেক ইসলামিক অ্যাপোলজিস্ট আছেন যারা নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে ন্যায্যতা প্রদান এবং বিধর্মীদের সামনে ইসলামকে প্রকৃত সত্য হিসেবে উপস্থাপন করতে এমন এমন সব দাবি করে বসেন যা তাদেরকেই কৌতুকে পরিণত করে।

উপসংহার

নিঃসন্দেহেই হারুন ইয়াহিয়ার দাবিটি যুক্তিসংগত নয়। কেননা, মেঘমালা থেকে আসা বৃষ্টির পানির ওজন থাকলে যে মেঘমালারও ওজন থাকবে সেটা তখনকার মানুষের জন্য বুঝতে পারাটা একেবারেই কঠিন ছিলোনা।


তথ্যসূত্র

1. Yahya, Harun. “THE WEIGHT OF CLOUDS.” MiraclesOfTheQur’an.com. n.d. Web. 12 July 2014


আরও পড়ুন

Marufur Rahman Khan

Marufur Rahman Khan is an Atheist Blogger from Bangladesh.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *