কোরআন এবং বীর্যের উৎস

Print Friendly, PDF & Email

ভূমিকা

কুরআনের সূরা তারিকের ৫ থেকে ৭ নং আয়াত বলে, বীর্য নির্গত হয় বা আসে মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে। কুরআনের এই কথাটি কুরআনের অন্যতম বড় বৈজ্ঞানিক ভুল হিসেবে সমালোচিত। কুরআনের এই কথাটি ভুল নয় প্রমাণ করতে ইসলামিস্টরা এপর্যন্ত বেশকিছু ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। এই প্রবন্ধটির উদ্দেশ্য কুরআনের এই বক্তব্যটি পর্যালোচনার মাধ্যমে বাস্তবতা উপস্থাপন করা।

আয়াত সমূহ

সূরা আত-তারিক আয়াত ৫
فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ
ফালইয়ানযুরিল ইনছা-নুমিমমা খুলিক।
অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে।

সূরা আত-তারিক আয়াত ৬
خُلِقَ مِنْ مَاءٍ دَافِقٍ
খুলিকা মিমমাইন দা-ফিকি।
সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।

সূরা আত-তারিক আয়াত ৭
يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ
ইয়াখরুজুমিম বাইনিসসুলবি ওয়াত্তারাইব।
এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে।

বীর্য নাকি অন্যকিছু?

উপরে উল্লেখিত আয়াত সমূহ পড়লে আমরা জানতে পারি যে, কুরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে সৃষ্টি করা হয় দ্রুতবেগে নির্গত তরল থেকে যা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে। এখানে সবেগে স্খলিত পানি বা দ্রুতবেগে নির্গত তরল বলতে নিঃসন্দেহেই বীর্যকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, এখানে মানুষ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। যার অর্থ দাঁড়ায় একজন মানুষের মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে আসা এমন এক তরল পদার্থের কথা বলা হয়েছে যা থেকে আরেকজন মানুষ বা সন্তান সৃষ্টি হয়। এখানে মানবদেহের এক প্রকার তরলকে সন্তানের উৎস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং সন্তানের উৎসের সাথে জড়িত তরল অবশ্যই মানবদেহের যৌন তরল হবে, যা বীর্য। অতএব, উপরে উল্লেখিত আয়াত সমূহে সবেগে স্খলিত পানি বলতে নিঃসন্দেহেই বীর্য বুঝানো হয়েছে। তাই সরাসরি বীর্য লেখা হয়নি বলে বীর্য বুঝানো হয়নি এমনটা ভাববার কোনো সুযোগ নেই।

প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের ব্যাখ্যা

ব্যাখ্যা ১ – মানুষ দ্রুতবেগে নির্গত পানি বা নারী-পুরুষের বীর্য থেকে সৃষ্টি হয়। পুরুষের বীর্য নির্গত হয় তার মেরুদণ্ড থেকে এবং নারীর বীর্য নির্গত হয় তার বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে। নারী-পুরুষ উভয়ের বীর্যের মিশ্রণ থেকে সন্তান জন্ম নেয়। (ইবনে কাসির, তাবারী, জালালাইন, খোমেনী, যামাখশারী)

ব্যাখ্যা ২ – আয়াতটি কেবল পুরুষের বীর্যের কথাই বলছে, যা তার মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে নির্গত হয়। (কুরতুবী, কাইয়িম, উসাইমীন, সাদী)

মন্তব্য

কুরআনে আলোচ্য আয়াতটি যদি এটি বুঝিয়ে থাকে যে, পুরুষের বীর্য নির্গত হয় তার মেরুদণ্ড থেকে এবং নারীর যৌন তরল নির্গত হয় তার বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে, তাহলে আয়াতটি অবশ্যই বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। একজন পুরুষের বীর্য তার মেরুদণ্ড থেকে নির্গত হয় না। আর একজন নারীর বুকের পাঁজর থেকে প্রজনন সম্পর্কিত কোনোকিছুই নির্গত হয় না।

একইভাবে, আয়াতটি যদি এটি বুঝিয়ে থাকে যে, একজন পুরুষের বীর্য তার মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যে থেকে নির্গত হয়, তাহলেও আয়াতটি বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল। একজন পুরুষের বীর্য না তার মেরুদণ্ড বা বুকের পাঁজর থেকে বেরিয়ে আসে, না এমন কোনো অঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসে যা তার মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যে অবস্থিত।

মানুষের বীর্য চারটি গ্রন্থির উৎপাদিত বস্তু দ্বারা গঠিত : অন্ডকোষ শুক্রাণু বা পুংজননকোষ উৎপাদন করে, সেই শুক্রাণু যে তরলে বাহিত হয় তা আসে সেমিনাল ভেসিকল, প্রোস্টেট গ্রন্থি এবং বালবোইউরেথাল গ্রন্থি থেকে। এই ভিডিওটি খুব সুন্দরভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেঃ              

মুসলিম অ্যাপোলজিস্টদের ব্যাখ্যা সমূহ

সুলব শব্দটির নানা অর্থ রয়েছে, যেমনঃ কঠিন, দৃঢ়, শক্ত, অনমনীয়। শব্দটি দ্বারা মেরুদণ্ডের যেকোনো অংশও বোঝায়, বিশেষভাবে কটিদেশীয় অংশ বা কোমর। আর কোমর সেক্স অরগ্যান বা যৌন অঙ্গসমূহের একটি ইউফেমিজম (শ্রুতিকটু পদের পরিবর্তে কোমলতর পদের প্রয়োগ)।

প্রখ্যাত আরবী-ইংরেজী ডিকশনারি Len’s Lexicon অনুযায়ী ‘সুলব’ শব্দটির অর্থ সমূহ হচ্ছেঃ কঠিন, দৃঢ়, শক্ত, অনমনীয়, মেরুদণ্ড, পিঠের একটি অংশ, কশেরুকা ধারণকারী পিঠের যেকোনো অংশ, কটিদেশীয় অংশ বা কোমর। (1)

এখন কথা হলো, কুরআনের আয়াতটিতে যদি ‘সুল্‌ব’ শব্দটি দ্বারা আসলেই ‘কোমর’ বুঝানো হয়ে থাকে, তাহলে কি কুরআনের আয়াতটি নির্ভুল প্রমাণিত হয়? অবশ্যই নয়।

অ্যাপোলজিস্টদের এই ব্যাখায় সমস্যা হলো এই যে, ইংরেজি ভাষাতেই ‘কোমর’ শব্দটি দ্বারা কোমল বা পরোক্ষ অর্থে প্রজনন অঙ্গ সমূহ বোঝায়, আরবি ভাষায় নয়। অ্যাপোলজিস্টরা এমন কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন না যা নিশ্চিত করে যে প্রাচীন আরবরা ‘কোমর’ শব্দটি দ্বারা কোমল বা পরোক্ষ অর্থে প্রজনন অঙ্গ সমূহ বোঝাতো।

Oxford English Dictionary অনুসারে Loins (কোমর) শব্দটির প্রাইমারি ডেফিনেশন (2) নিচে তুলে ধরা হলোঃ

বীর্য 2

শব্দটির সেকেন্ডারি ডেফিনেশন অনুযায়ী, শব্দটি যৌনাঙ্গ বা লজ্জা স্থান সমূহের জন্য একটি ইউফেমিজম (কোমল বা পরোক্ষ অর্থের প্রকাশ)। Oxford English Dictionary ও Online Etymology Dictionary (3) উভয় ডিকশনারিই তা নিশ্চিত করে:

বীর্য 4

ইউফেমিস্টিক সংজ্ঞাটি বর্ণনা করা হয়েছে ‘কারো যৌনাঙ্গ বা লজ্জা স্থান সমূহ’ হিসেবে, যা ষোড়শ শতাব্দীর সময় উদ্ভূত হয়। কোনো ইংরেজি শব্দের ষোড়শ শতাব্দীর সময় জন্ম হওয়া একটি সংজ্ঞাকে সপ্তম শতাব্দীতে ব্যাবহৃত হওয়া একটি আরবী শব্দের ওপর আরোপ করা অত্যন্ত হাস্যকর।

তারায়িব শব্দটির অর্থ বুকের হাড়, বুকের পাঁজর অথবা শ্রোণী ঘোর। আর নারী জননকোষ শ্রোণী ঘোর অঞ্চল থেকে আসে।

‘তারায়িব’ শব্দটির অর্থ যে ‘শ্রোণী ঘোর’, তার কোনো নির্ভরযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই। আরবি-ইংরেজি ডিকশনারি Lane’s lexicon অনুযায়ী ‘তারায়িব’ শব্দটির অর্থসমূহ হচ্ছেঃ বুকের হাড়, বুকের হাড় যা কণ্ঠা এবং স্তনের বোঁটার মধ্যে অবস্থিত, বুকের সেই অংশ যা দুই কণ্ঠার নিচে অবস্থিত, দুই স্তন এবং কণ্ঠার মধ্যবর্তী অংশ, বুকের ডান পাশের চার পাঁজর এবং বাম পাশের চার পাঁজর, দুই হাত এবং দুই পা এবং দুই চোখ, দুই কণ্ঠার নিচে অবস্থিত দুই পাঁজর। তবে, বেশিরভাগ শব্দবিজ্ঞানী ‘বুকের হাড়’ অর্থটিকেই সঠিক অর্থ বলেছেন। (4)

‘বুকের হাড়’ অর্থটিই ‘তারায়িব’ শব্দের সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য অর্থ হতে পারে। কেননা, আরবী ভাষায় এবং আরবী কাব্যে সেটাই সুপরিচিত ব্যবহার। (5)

এছাড়াও, একটি শব্দ দ্বারা যদি একই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দুটি স্বতন্ত্র পরিভাষা নির্দেশ করা হয়, তাহলে ভাষার উদ্দেশ্য কি? ধরা যাক, কিছু ব্যক্তি শনিবার আর বুধবারকে “মজাবার” বলে সংজ্ঞায়িত করে। গড়বড় তৈরি করা ছাড়া এমন একটি শব্দের উদ্দেশ্য আর কি হতে পারে? “এই মজাবারে আমার জন্মদিন” এরকম বাক্যের জন্য সবসময়ই আরও ক্ল্যারিফিকেশন প্রয়োজন হবে। আর তাই এটা অনুমান করা অর্থহীন যে এরকম শব্দের অস্তিত্ব আদৌ আছে।

আধুনিক দেহতত্ত্ব অনুযায়ী, বীর্যের প্রধান উৎস হলো সেমিনাল ভেসিকল থেকে আসা তরল আর এই ভেসিকল সমূহ মেরুদণ্ড এবং বুকের পাঁজরের মধ্যেই পড়ে।” (খাড়াভাবে বা উপর থেকে নিচ বরাবর ধরা হলে)

এখানে প্রশ্ন এসে যায়, ‘মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে’ কথাটি খাড়াভাবে বা উপর থেকে নিচ বরাবর ধরে ব্যাখ্যা করা গ্রহনযোগ্য কিনা। এভাবে ব্যাখ্যা করলে ‘মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে’ কথাটি দ্বারা হাত পা ও মাথা বাদে পুরো শরীরেরই ভেতরের অংশকে নির্দেশ করা যাবে। নিচের চিত্রটি দেখুন:

বীর্য 6

হ্যাঁ অ্যাপোলজিস্টরা এই ব্যাখাটি ব্যবহার করে দাবি করতে পারেন যে সূরা তারিকের ৭ নং আয়াতটি সঠিক। তবে এই ব্যাখাটি কুরআনের আয়াতটিকে আরও বেশি সমস্যার মধ্যে ফেলে দেয়, কেননা এই ব্যাখাটি আয়াতটিকে অত্যন্ত অস্পষ্ট একটি আয়াত হিসেবে প্রমাণ করে।

ধরা যাক, কোনো স্কুলে গণিত পরীক্ষা হচ্ছে এবং সেই পরীক্ষার একটা প্রশ্ন হলো, ‘২৩৯৮৬ এবং ৪৯৬২৭ যোগ করলে কতো হয়?’ রাশেদ নামে একজন ছাত্র এই প্রশ্নের উত্তর লিখলো ‘কোনো এক সংখ্যা’, আবার শফিক নামে একজন ছাত্র উত্তর লিখলো ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’ এবং শ্রাবণী নামে একজন ছাত্রী উত্তর লিখলো ‘৭৩৬১৩’।

‘২৩৯৮৬ এবং ৪৯৬২৭ যোগ করলে কতো হয়?’ এই প্রশ্নের একেবারে সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য উত্তর হলো ‘৭৩৬১৩’। তবে কি রাশেদ আর শফিকের উত্তর সঠিক নয়? হ্যাঁ তাদের উত্তরও সঠিক। ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি কোনো একটি সংখ্যাই। তাই কেউ যদি রাশেদের মতো বলে ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি ‘কোনো একটি সংখ্যা’, তাহলে ভুল কিছু বলা হয় না। আবার, ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি অনেক বড় একটি সংখ্যাও। তাই কেউ যদি শফিকের মতো বলে ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’, তাহলেও ভুল কিছু বলা হয় না। রাশেদ আর শফিকের পরীক্ষার খাতা যে শিক্ষক দেখবেন তিনি কি তাদের এই প্রশ্নের উত্তর সঠিক বলে গ্রহণ করবেন এবং মার্কস দেবেন? অবশ্যই নয়, কোনো যুক্তিবাদী শিক্ষকই এমনটা করবেন না। কেন করবেন না? কারণ রাশেদ আর শফিকের উত্তরটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেন গ্রহণযোগ্য নয়? কারণ, ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি কোনো একটি সংখ্যা হলেও সকল সংখ্যাকেই ‘কোনো একটি সংখ্যা’ বলা যায়। আবার, ‘৭৩৬১৩’ সংখ্যাটি অনেক বড় একটি সংখ্যা হলেও এমন সংখ্যার কোনো শেষ নেই যাদের ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’ বলা যায়। তাই ‘২৩৯৮৬ এবং ৪৯৬২৭ যোগ করলে কতো হয়?’ প্রশ্নটির উত্তরে ‘কোনো একটি সংখ্যা’ বা ‘অনেক বড় একটি সংখ্যা’ বলা হলে তা হবে খুবই অস্পষ্ট ও অগ্রহণযোগ্য উত্তর!

একই সমস্যা কুরআনের আয়াতেও এসে পড়ে যদি সূরা তারিকের ৭ নং আয়াতের ‘মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে’ কথাটি খাড়াভাবে বা উপর থেকে নিচ বরাবর ধরে ব্যাখ্যা করা হয়। এভাবে ব্যাখ্যা করলে ‘মেরুদণ্ড ও বুকের পাঁজরের মধ্যে’ কথাটি দ্বারা হাত পা ও মাথা বাদে একজন মানুষের পুরো শরীরের ভেতরটাই নির্দেশ করা যায়। একজন পাঠকের এখানে বোঝার কোনো কায়দা নেই যে বীর্য আসলে দেহের কোথায় থেকে বের হয়ে আসে। এখানে এটা বোঝারও কোনো কায়দা নেই যে কুরআনের লেখক আসলেই জানেন কিনা যে একজন মানুষের বীর্য তার দেহের ঠিক কোন জায়গা থেকে বের হয়ে আসে।

তথ্যসূত্র:

  1. SulbEdward William Lane. An Arabic-English Lexicon. Librairie Du Liban 1968. Vol.4, page 1712
  2. “loin, n.” The Oxford English Dictionary. 2nd edition, 1989; online version June 2012.
  3. “Loin”. Online Etymology Dictionary.
  4. Taraib Edward William Lane. An Arabic-English Lexicon. Librairie Du Liban 1968 Vol 1 page 301
  5. Commentary on the verse “He is created from a water gushing forth, Proceeding from between the back-bone and the ribs” (at-Taariq 86:6-7) – Islam Questions And Answers.

আরও পড়ুনঃ

Marufur Rahman Khan

Marufur Rahman Khan is an Atheist Blogger from Bangladesh.

13 thoughts on “কোরআন এবং বীর্যের উৎস

  • October 1, 2018 at 3:58 PM
    Permalink

    The term islam is no more applicable for the muslims. Mohammad first picked up this word meaning “Shelter” for the followers of Moses, Jesus and Mohammad. Later he dissociated the first two. Mohammad declared whatever he found suitable for his rising to power, all however, in the name of allah. His extreme shortage of knowledge is reflected in the above suras of quran.

    Reply
  • September 20, 2019 at 7:09 PM
    Permalink

    হাহাহাহা, ভাই আপনি ওটা পুরুষের বীর্য না ধরে মেয়েদের বাচ্চা গর্ভাশয় ধরে মিলায়ে ব্যাখ্যা প্রদান করলে বুঝবেন হয়তো!

    Reply
    • January 22, 2020 at 8:38 AM
      Permalink

      \\‘আল-মায়ু (اَلمَاء)’ এর বাংলা অর্থ শুধু পুরুষদের বীর্য নয়। এর স্বাভাবিক অর্থ হলো, যেকোনো ‘পানি জাতীয় জিনিস বা পানি’। এই ‘আল-মায়ু (اَلمَاء)’-এর পরে যখন ‘দাফিক্ব’ (دَافِق) শব্দটি এসেছে, তখন ৬ নং আয়াতের ‘মায়ুন দাফিকুন’-এর বাংলা অর্থ হয় ‘সবেগে স্খলিত পানি বা প্রবাহিত পানি’। আর এই সবেগে স্খলিত পানি শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নয়, এটা মহিলাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ মেয়েদের ডিম্বাণু যখন ডিম্বাশয় থেকে বের হয়, তখন কুমুলাস কমপ্লেক্স ও পানিসহ সবেগেই বের হয়। আবার যেহেতু এখানে ‘একটি পানি’র কথা বলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে এই পানিকে জাইগোটও বলা যেতে পারে। কারণ, জাইগোটও ফেলোপিয়ান টিউবের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে সামনে আগায়।//

      জাইগোট হলো ভ্রূণকোষ। আর একটি ভ্রূণকোষকে পানি জাতীয় জিনিস বা এক প্রকার তরল পদার্থ বলা যায় না। কোনোকিছু প্রবাহিত হয় মানেই আমরা সেটিকে পানি জাতীয় জিনিস বলতে পারি না। তাপও প্রবাহিত হয়, বিদ্যুৎও প্রবাহিত হয়, বায়ুও প্রবাহিত হয়, এমন অনেককিছুই আছে যা প্রবাহিত হয় যাদেরকে আমরা পানি জাতীয় জিনিস বলতে পারি না। পুরো লেখাটিতে এই জাইগোটের অংশটাই সবচেয়ে বেশি হাস্যকর মনে হলো।

      Reply
    • January 22, 2020 at 8:40 AM
      Permalink

      আর বাদ বাকি ব্যাখ্যা সমূহের জবাব এই আর্টিকেলই দেয়। আর্টিকেলের পয়েন্ট সমূহ একটু খেয়াল করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

      Reply
    • January 22, 2020 at 8:52 AM
      Permalink

      //আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে মানুষের মেরুদণ্ডে আঘাত জনিত রোগ বা spinal cord injury (SCI) হলে এর ইফেক্ট পুরুষের প্রজননতন্ত্রের উপরে ব্যাপক।//

      মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত রোগের প্রভাব একজন পুরুষের প্রজননতন্ত্রের ওপর ব্যাপক হলেই কি আমরা বলতে পারি, একজন পুরুষের বীর্য তার মেরুদণ্ড থেকে বেরিয়ে আসে? একটু ভেবে বলেন তো। যদিও আমি বিশ্বাস করি না, যিনি লেখাটি লিখেছেন তিনি আদৌ ভাবতে জানেন। কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য সামনে এনে খেয়ালখুশি মতো একটা অপব্যাখ্যা দাঁড় করানো যতো সহজ, ভাবাটা ততো সহজ না, এটা সবাই পারে না।

      Reply
    • July 15, 2021 at 7:12 PM
      Permalink

      উত্তর মারুফ ভাই দিয়েছেন। আমি একটা অন্য প্রসঙ্গ তুলি।

      আপনার এই লেখা যে সাইফুর রহমান লিখেছেন তিনি একজন মিথ্যাচারী, যেমন আপনারা অনেক দাঈই ডাহা মিথ্যাচারী। এই সাইফুর রহমান দাবী করে যে সে কেম্বিজে পড়ে অথচ তার একাডেমিক ইমেইল এড্রেস জানতে চাওয়ায় তিনি পিঠটান দিয়েছেন।

      Reply
  • May 1, 2020 at 2:28 PM
    Permalink

    একটু সহজভাবে চিন্তা করুন। “নির্গত হয়” বলা হয়েছে, “উৎপন্ন হয়” বলা হয় নি। কুরআনের যত জায়গায় জননাঙ্গের কথা এসেছে, ততবারই বিভিন্ন উপমা ব্যবহার করা হয়েছে, সরাসরি নাম বলা হয় নি, খেয়াল করবেন। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। একটু লক্ষ্য করে দেখুন, পুরুষাঙ্গ মেরুদণ্ডের সামনের দিকে, সেটা আশা করি বুঝাইতে হবে না। কিন্তু পাঁজরের ঠিক বরাবর নিচের দিকে কিন্তু এর অবস্থান নয়, একটু পেছনের দিকে। অর্থাৎ এই হিসাবে কিন্তু মেরুদণ্ড ও পাঁজরের মাঝামাঝিই আছে, যদি খেয়াল করে দেখেন।
    Note: এই ব্যাখ্যা প্রযোজ্য হবে যদি পুরুষাঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা করেন। অন্যান্য ব্যাখ্যার ব্যাপারে আমার জানা নেই

    Reply
  • June 2, 2020 at 11:29 AM
    Permalink

    ????তাহলে কি মহাগ্রন্থ আল-কুরআন রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেম সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয় ???????
    জানতে পড়ুন সম্পূর্ণটা ????????

    আমি সেদিন রমজান মাসে বাংলা অনুবাদসহ কুরআন পড়ছিলাম। তখন আমি পড়তে পড়তে হঠাৎ খেয়াল করলাম সূরা আত-ত্বরিকের দিকে এবং তার এই তিনটি আয়াত দেখে আমি জাস্ট অবাক হয় গিয়েছি । আয়াত তিনটি হলো :
    সূরা আত-তারিক আয়াত ৫
    فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ مِمَّ خُلِقَ
    ফালইয়ানযুরিল ইনছা-নুমিমমা খুলিক।
    ××{অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে।}××

    সূরা আত-তারিক আয়াত ৬
    خُلِقَ مِنْ مَاءٍ دَافِقٍ
    খুলিকা মিমমাইন দা-ফিকি।
    ××[{সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে।}]××

    সূরা আত-তারিক আয়াত ৭
    يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ الصُّلْبِ وَالتَّرَائِبِ
    ইয়াখরুজুমিম বাইনিসসুলবি ওয়াত্তারাইব।
    ××{{এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে।}]××

    পরক্ষনেই আমার কেমন জানি একটা লেগে উঠলো । কি ব্যাপার তথ্য গুলা মনে হচ্ছে কেমন জানি।আমার মনে অনেকগুলা প্রশ্ন চলে আসলো। তার মধ্যে ছিল এগুলা:-

    ০১. কোরানে বলা হয়েছে পুরুষের বীর্য নাকি মেরুদণ্ড ও বক্ষপাজরের হাড় থেকে তৈরি হয়েছে? কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বলে বীর্য পুরুষের টেস্টিস বা অণ্ডকোষ থেকে তৈরি হয় ????????
    তাহলে কি মহানবী (সা.) জানতোনা বীর্য কোথায় উৎপন্ন হয় ??

    এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমি অনেক গুগলে খুঁজাখুঁজি করলাম এবং অনেকগুলা স্কলারের ব্যাখ্যা শুনেছি। কিন্তু কারো ব্যাখ্যাই আমার কাছে সন্তোষজনক মনে হয় নি। কেউ বলে মায়ের পেটে থাকাকালে থেকে টেস্টিস মেরুদণ্ড আর পাজরের মাঝে থাকে। আবার কেউ বলে ওই স্থান থেকে ব্লাড সাপ্লাই আসে। এগুলো সবই শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। এই আয়াতে কোথাও টেস্টিস কোথায় থাকে বা কোন স্থান থেকে ব্লাড সাপ্লাই পায় সেটা বলা নেই। এখানে স্পষ্ট বলা আছে বীর্যের কথা ।
    আবার অনেকে বলে বিজ্ঞান তো ভুলও হতে পারে। হয়তো এখনো সঠিকভাবে আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু আমিতো এর ভিসুয়াল এবং প্র্যাক্টিক্যাল প্রমাণ দেখেছি।

    *এই প্রশ্নগুলোর আসল প্রমাণ খুঁজার জন্য আমি আরো সার্চিং শুরু করি । তারপর আমি আমার কাঙ্ক্ষিত উত্তর পেয়ে যাই , তাও শুধু একভাবে না কয়েকভাবে । আপনি চাইলে নিচে থেকে পড়া শুরু করতে পারেন।

    প্রথমেই আমি বলেছি যে কুরআন নাকি বলেছে ‘পুরুষদের বীর্য তৈরি হয় মেরুদণ্ড ও বক্ষপাজর থেকে।’ কিন্তু কুরআন কখনোই এই কথা বলে নি যে বীর্য তৈরি হয় মেরুদণ্ড ও বক্ষপাজরের মধ্যে থেকে। এখানে আমার ট্রান্সলেশান বুঝতে ভুল হয়েছে। ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘যেটি নির্গত হয়’। এখানে ‘যা তৈরি হয়’ তো বলা হয়নি। এই আয়াতে ‘যেটি নির্গত হয়’-শব্দগুলো যেই শব্দের অনুবাদ সেটি হলো, ‘يَخْرُجُ’ বা ‘ইয়াখরুজু’। যেটি এসেছে ফি’ল বা ক্রিয়া ‘খরাজা(خرج)’ থেকে। এটির অর্থ ‘বের হয়ে যাওয়া’।[১] এই শব্দের অর্থ কখনোই ‘সৃষ্টি বা তৈরী হওয়া’ নয়। তারপরে আমি ৬ নং আয়াতে, ‘আল-মা­­য়ুন(مَاء)’ এর বাংলা শুধু ‘পুরুষদের বীর্য’ ভেবেaছি। কিন্তু ‘আল-মা­­য়ুন(مَاء)’ এর বাংলা অর্থ শুধু পুরুষদের বীর্য নয়। এর স্বাভাবিক অর্থ হলো, যেকোনো ‘পানি জাতীয় জিনিস বা পানি’।[২] এই ‘আল-মা­­য়ুন(مَاء)’-এর পরে যখন ‘دَافِق’ বা ‘দাফিক্ব’ শব্দটি এসেছে তখন ‘মায়িন দাফিক্ব(مَّآءٍ دَافِق)’-এর বাংলা অর্থ হয় ‘সবেগে স্খলিত পানি বা প্রবাহিত পানি’। আর এই সবেগে স্খলিত পানি শুধু পুরুষের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নয় এটা মহিলাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।[৩] কারণ মেয়েদের ডিম্বাণু যখন ডিম্বাশয় থেকে বের হয়, তখন কুমুলাস কমপ্লেক্স ও পানিসহ সবেগেই বের হয়।[৪] আবার যেহেতু এখানে ‘একটি পানির’ কথা বলা হয়েছে সেক্ষেত্রে এই পানিকে জাইগোটও বলা যেতে পারে। কারণ, জাইগোটও ফেলোপিয়ান টিউবের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে সামনে আগায়। তাহলে জাইগোট যেহেতু একটি পানি এবং এর ‘দাফিক্ব’ বা প্রবাহিত হবার বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেহেতু ‘মায়িন দাফিক্ব(مَّآءٍ دَافِق)’ বলতে ‘জাইগোট’ অর্থও যুক্তিযুক্ত। কেউ কেউ এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, এখানে পুরুষের এবং নারীর পানির কথা বলা হয়েছে। আর একটি পানি বলার কারণ হলো, যেহেতু পানির বিন্দুদ্বয় একস্থানে একত্রিত হয়ে একাকার হয়ে যায়।[৫] তাহলে, এই আয়াতে ‘মায়িন দাফিক্ব(مَّآءٍ دَافِق)’ বলতে পুরুষের বীর্য, নারীর ডিম্বাণুসহ পানি এবং জাইগোট এই তিনটি অর্থই নেওয়া যায়।[৬] এটুকু ক্লিয়ার হয়েছে।
    আচ্ছা সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু এর কোনোটাইতো মেরুদন্ড বা বক্ষপিঞ্জরের মধ্যে থেকে আসে না। এটার আমি কিভাবে ব্যাখ্যা পাবো ???
    এরপর এর ব্যাখ্যা যা পেলাম তাহলো :-

    ৭ নং আয়াতের ‘ٱلصُّلْب’ বা ‘আস-সুল্ব’ এবং ‘ٱلتَّرَآئِب’ বা ‘আত-তারায়িব’ শব্দ দুটির অর্থ এখানে কী হতে পারে, সেটি একটু বিশ্লেষণ করি। প্রথমেই এটা মাথায় রাখবেন যে, এই শব্দ দুটি পুরুষ কিংবা মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। এখন, প্রথম শব্দটা হলো, ‘الصلب’ বা ‘আস-শুল’। এখানে, ‘صلب’ বা ‘সুল্ব’ শব্দের অর্থ মেরুদণ্ড। বিশেষ করে কোমরে যে মেরুদণ্ডের হাড় থাকে সেটুকু। আবার একটি অর্থ ঔরস।[৭] তাফসির-বিদগণ ‘সুল্ব’ শব্দের অর্থ এই আয়াতে মেরুদণ্ড হিসেবেই নিয়েছেন। এবার ৬ নং আয়াতের ২য় শব্দটি হলো, ‘اَلتَّرَآئِب’ বা আত-তারায়িব। এখন, ‘تَرَائِب’ বা ‘তারায়িব’ শব্দটির প্রচুর অর্থ রয়েছে। আসলে একেক তাফসিরকারক ‘তারায়িব’ শব্দটির একেক অর্থ গ্রহণ করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেমন, কেউ বলেছেন বুকের পাঁজরের হাড় বা দুই কাঁধ এবং বুকের মধ্যবর্তী স্থান। আবার কেউ বলেছেন, দুই চোখ বা দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থান।[৮] এই শব্দের অর্থে কেউ একমত হতে পারেনি। তাই এখানে অর্থের ব্যাপকতা আছে। আমরা প্রত্যেক অর্থ নিয়েই আলোচনা করব ইনশা-আল্লাহ।

    ওহহ! আরেকটা কথা বলে রাখি ,

    “আয়াতের অর্থ করার আগে কুরআনের একটি বিশেষ দিক বলি। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে যতবার লজ্জা স্থান হেফাজতের বলেছেন, ততবারই কিন্তু সরাসরি অঙ্গটির নাম উল্লেখ করেননি। বলেছেন, দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থানের হেফাজত করতে।[৯] এই আয়াতেও দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থান বুঝাতে সরাসরি শব্দটি না ব্যবহার করে ইংগিত দিয়েছেন বলেই আমার মনে হয়। এখন আমারতো আয়াতের ব্যাখা করার কথা আমি এটা কেনো বলছি। আসলে আমরা জানিনা তাইতো আমাদের আয়াতের অর্থ বুঝতে এত সমস্যা হয়।

    ওহঃ! তো যেটা বলছিলাম,

    এখন সুল্বের অর্থ ‘মেরুদণ্ড’ এবং তারায়িবের অর্থ ‘দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থান’ ধরে অনুবাদ করলে, সূরা তারিকের ৭ নং আয়াতের অর্থ হয়, ‘এটি বের হয়ে আসে, কোমড়ের মেরুদণ্ডের হাড় এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থানের মাঝখান থেকে।’ অর্থাৎ, কোমরের হাড় তো দেহের পিছনে এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থান বা লজ্জা স্থান হলো সামনে থাকে। সুতরাং, এই দুইটা স্থানকে যদি আমি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ধরি, তাহলে অর্থ দাঁড়ায়- ‘ছেলেদের বীর্য বা মেয়েদের ডিম্বাণুসহ পানি এই দুই স্থানের মাঝখানে আড়াআড়িভাবে যে ফাঁকা যায়গা আছে, সেই যায়গায় অবস্থিত বিভিন্ন অঙ্গগুলো থেকে বের হয়ে আসে।’ বিজ্ঞানও বলে, ছেলেদের টেস্টিসের শুক্রাণু, সেমিনার ভেসিকলের তরল, প্রোস্টেট গ্লান্ডের তরল ইত্যাদি সকল কিছু মিলেই বীর্য তৈরি হয়। যদি শুধু টেস্টিসের কথা বলা হত, তাহলে তো কুরআন ভুল হয়ে যেত। কিন্তু সুবহানাল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করেছেন, যেটা ছেলেদের ‘বীর্য’ কিংবা মেয়েদের ‘ডিম্বাণুসহ পানি’ যেসকল স্থান থেকে তৈরি এবং বের হয়, সব অঙ্গাণুকেই কভার করেছে। এটা কুরআনের একটি বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা’য়ালা অল্প শব্দ ব্যবহার করেন, কিন্তু এতেই খুব অর্থবোধক একটি বাক্য তৈরি হয়। কেননা যদি বৃহৎ আকারে ব্যাখা করতেন তাহলে তেমন বড়ো বড়ো দালান-কোঠা ও কম পড়ে যেত কোরআনকে রাখার জন্য। কিন্তু আল্লাহতাআলা অনেক সুন্দর করে ছোট করে ছন্দে ছন্দে এবং আরবী ভাষার সর্বোচ্চ ব্যাকরণ দিয়ে এটাকে ব্যাখা করেছেন। তাই আরবী ভাষার ব্যাকরণ এখনও কুরআন থেকে নেয়া হয়। তো:
    মূল কথাই ফিরে আসি।

    এখন আমি যদি তারায়িব’ শব্দের অর্থ আমি বুকের হাড় নেই তখন কি হবে?

    => তখনও কুরআনের আয়াত সঠিক থাকে। সেক্ষেত্রে শুধু স্পেসটাকে লম্বভাবে ধরতে হবে। তাহলে সুল্বের অর্থ ‘মেরুদণ্ড’ এবং তারায়িবের অর্থ ‘বুকের হাড়’ ধরে অনুবাদ করলে, সূরা তারিকের ৭ নং আয়াতের অর্থ হয়, ‘এটি বের হয়ে আসে, কোমরের মেরুদণ্ডের হাড় এবং বক্ষপিঞ্জরের মধ্যে অবস্থিত স্থান থেকে।’ অর্থাৎ, কোমরের হাড় তো দেহের পিছনে এবং বক্ষপিঞ্জর থাকে সামনে। সুতরাং, এই দুইটা স্থানকে যদি আমি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ধরো, তাহলে অর্থ দাঁড়ায়- ‘ছেলেদের বীর্য বা মেয়েদের ডিম্বাণুসহ পানি এই দুই স্থানের মাঝখানে লম্বভাবে যে ফাঁকা যায়গা আছে, সেই যায়গায় অবস্থিত বিভিন্ন অঙ্গগুলো থেকে বের হয়ে আসে। বুঝার সুবিদার্থে একটি ছবি দিচ্ছি । তাহলে পরিষ্কার বুঝতে পারবেন।

    এখানে যখন আমি ‘তারায়িব’ শব্দের অর্থ ‘দুই পায়ের মধ্যবর্তী অঞ্চল’ ধরব, তখন আয়াতের মূলভাব আসে, বীর্য এবং ডিম্বাণুসহ পানি এই জলপাই রঙের অংশ থেকে আসে। আমি এই অর্থটিকেই অগ্রাধিকার দেই। আবার যখন আমি ‘তারায়িব’ শব্দের অর্থ ‘সামনের পর্শুকা’ ধরবে, তখন আয়াতের মূলভাব আসে, বীর্য এবং ডিম্বাণুসহ পানি লম্বভাবে লালসহ জলপাই রং যে স্থান জুরে আছে, সেই স্থান থেকে। সুতরাং, কুরআনের বর্ণনা শতভাগ সত্য। এবং এটি মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এক মহা গ্রন্থ। এতটুকু বুঝতে পেরেছি । কিন্তু ????……

    যদি ৬ নং আয়াতের ‘মায়িন দাফিক্ব’-এর অর্থ তোমার কথামত ‘নারী পুরুষের মিশ্রিত পানি বা জাইগোট’ হয়, তাহলে অর্থ কেমন হবে? তখন তো আর জাইগোট বের হয়ে আসার কিছু নেই। সেটাতো ওই স্পেসে তৈরি হয়। এটার উত্তর কোথায় পাবো। সেটাও পেয়ে গেলাম।
    যদি আপনি পড়তে পড়তে এখান অব্দি এসে থাকেন তাহলে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ । তো: যেখানে ছিলাম।

    ৬ নং আয়াতের ‘মায়িন দাফিক্ব’-এর অর্থ ‘নারী পুরুষের মিশ্রিত পানি বা জাইগোট’ হয়, যেমনটি তাফসীরে বাহারুল মুহিতে (বই) বলা হয়েছে; তাহলে এই আয়াতগুলোর অর্থে একটু পরিবর্তন আসবে। আরবি ভাষায় ক্রিয়ার মাধ্যমেই সর্বনাম প্রকাশ পায়। যেমন ধরুন, আমি বললাম ‘যাহাবা’। ‘যাহাবা’ একটি আরবি ক্রিয়াবাচক শব্দ। এর অর্থ সে গেল। দেখো, আরবিতে ‘সে’ বুঝাতে ‘হুয়া’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। সেই অনুযায়ী ‘সে গেল’-এই বাক্যের আরবি হওয়া উচিত ছিল, ‘হুয়া যাহাবা’। কিন্তু সেটা না হয়ে শুধু ‘যাহাবা’ দিয়েই অর্থ প্রকাশ পেয়ে যায়। আমি যদি ‘যাহাবা’ না বলে ‘যাহাবু’ বলি তাহলে অর্থ হত ‘তারা গেল’। অর্থাৎ, কি সুন্দর ভাবে ক্রিয়ার মাধ্যমেই সর্বনামের প্রকাশ পায়।

    আবার , ৫ নং আয়াত খেয়াল করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘অতএব, মানুষের ভেবে দেখা উচিত, কি বস্তু থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ এখানে ‘মানুষ’ হলো বিশেষ্য। এবং ‘সৃষ্টি করা হয়েছে’-এটুকু ক্রিয়া। বারবার বিশেষ্য ব্যবহার না করার জন্য ব্যবহার করা হয় সর্বনাম। এখানে ‘সৃষ্টি করা হয়েছে’ শব্দগুলোর আগে ‘তাকে’ শব্দটি একটি সর্বনাম। যেটি এই লাইনে বিশেষ্য ‘মানুষ’-কে নির্দেশ করে। এর পরের আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রবাহিত পানি থেকে। অর্থাৎ, জাইগোট থেকে।’ এই আয়াতে ‘তাকে’ বিশেষ্য দিয়ে আগের আয়াতের বিশেষ্য ‘মানুষ’কে বোঝানো হয়েছে। এবং ‘তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে’-এত কিছু বুঝাতে আরবিতে মাত্র একটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সেটি হলো ‘খুলিকা’। ‘খুলিকা’ একটি ক্রিয়া। ঐযে একটু আগে বললাম যে, আরবি ভাষায় ক্রিয়ার মাধ্যমেই সর্বনাম প্রকাশ পায়। এখানেও তাই হয়েছে। এই ‘খুলিকা’ শব্দের মধ্যেই মানুষকে নির্দেশ করার সর্বনাম আছে। এবার পরের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এটি বের হয়ে আসে মেরুদণ্ড ও দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থান বা পাঁজরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে।’ এই আয়াতে ‘এটি’-শব্দটি একটি সর্বনাম। এই ‘এটি’ সর্বনামটি আগের আয়াতের দুইটি বিশেষ্যকে নির্দেশ করতে পারে। একটি হলো ‘ইনসান বা মানুষ’ এবং অপরটি হলো, ‘সবেগে স্খলিত বা প্রবাহিত পানি’। এখানে ‘এটি’ সর্বনামটি দিয়ে যদি ‘সবেগে স্খলিত বা প্রবাহিত পানি’ বুঝায় তাহলে এই আয়াতের অর্থ কি হবে- সেটা আগেই বলেছি। আর যদি ‘এটি’ সর্বনামটি দিয়ে ‘ইনসান বা মানুষ’-কে বুঝায় তাহলে এই আয়াতের অর্থ হবে, ‘যেটি বা মানুষটি বের হয়ে আসে এমন একটি স্থান থেকে, যেটি মেরুদণ্ড এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী স্থানের মাঝখানে অবস্থিত।’ সুবহানাল্লাহ।

    দেখলেন, কুরআনের ভাষা কত প্রাঞ্জল! আল্লাহ তায়ালা মাত্র দুটি শব্দ; ‘মাঈন দাফিক’ বা সবেগে স্খলিত বা প্রবাহিত পানি’- ব্যবহার করে সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরণের পানিকে এই আয়াতের আওতায় নিয়ে এসেছেন।

    কিছুক্ষণ পর আমার মাথায় একটি প্রশ্ন আসলো যে ,তাহলে মুসলিমরা যে এই আয়াত থেকে বৈজ্ঞানিক নিদর্শন বের করে প্রচার করে! তারা বলে বীর্য নাকি মেরুদণ্ড আর বুকের পাঁজর থেকে তৈরি হয়! এটা কেন?”

    যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড বায়োলজির নয় এবং আরবি ভাষার উপর জ্ঞান নেই, তারা এগুলো বলতেই পারে। তারা অবুঝ। এটা তাদের ভুলনা এটা তাদের ধারণা কেননা এর সম্পর্কে কিছু,, ; কিছু না অনেক মতবাদই আছে, তা সম্পর্কে পরে বলছি । মনে রাখবেন যে, কুরআন আল্লাহ তায়ালার কথা।
    [ আর অনুবাদ হলো,
    মানুষের মস্তিষ্ক নিঃসৃত চিন্তার ফল ।
    অনুবাদে ত্রুটি হতে পারে। ]
    কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কথায় কোন ত্রুটি নেই। এই আয়াতটি বুঝতে গেলে একসাথে মেডিকেল বিদ্যা এবং আরবি ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান থাক দরকার। এর যেকোনো একটি না থাকলে, ভুল অনুবাদ করার সম্ভাবনাই প্রবল। কুরআনের শুধু অনুবাদ পড়েই ইসলাম বিদ্বেষীরা অপপ্রচার চালায়। থার্ড ক্লাস চিন্তা ভাবনা আরকি।
    ওও হ্যাঁ , আরেকটি কথা আমি বলেছিলাম মহানবী (সাঃ) কি জানতোনা বীর্যের উৎপত্তিস্থল কোথায় । তারও জবাব পেয়েছি। সেট হলো ;-

    “কিছু লোক নিজেদেরকে নারীসহচর্য থেকে দূরে রাখার জন্য নিজেদের অণ্ডকোষ বা টেস্টিস কেটে ফেলার জন্য আল্লাহর রাসূলুল্লাহ’র ﷺ নিকট অনুমতি চাইলে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে অনুমতি দেয়নি।[১০] কারণ এভাবে নিজেকে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতাহীন করে ফেলা জায়িয নেই। সুতরাং, এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি রাসূলুল্লাহও ﷺ জানতেন যে, বীর্য কোথায় উৎপন্ন হয়।”

    [এখানে যে সমস্ত বিষয় আলোচনা করা হয়েছে, সেগুলো মদিনা ইউনিভার্সিটির একজন সম্মানিত শায়েখ আব্দুল্লাহ(ছদ্মনাম) হাফিজ্জাহুল্লাহ এবং আবু সা’দ(ছদ্মনাম) ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে ঐক্যমতে পৌছানোর পরে নেওয়া সিদ্ধান্তের উপর লেখা হয়েছে। তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী এখানে তাদের মূল নাম প্রকাশ করা হলো না। এই লেখায় যা কিছু কল্যাণ সেটি শুধুমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং যা কিছু ত্রুটি তা আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে।]

    এখন ওটা বলি কেনো মুসলিমদের মধ্যে কারো কারো বিশ্বাস স্পার্ম মেরুদন্ডে তৈরি হয় :- মানুষের মেরুদণ্ডে আঘাত জনিত রোগ বা spinal cord injury (SCI) হলে এর ইফেক্ট পুরুষের প্রজননতন্ত্রের উপরে ব্যাপক। ইরেক্টাইল ডিসফাংকশন, বীর্যের খারাপ মান, ত্রুটিপূর্ণ বীর্য নির্গমনসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরী হওয়ার পিছনে SCI বিশাল ভূমিকা রাখে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর বীর্যে শুক্রাণু বা স্পার্মের সংখ্যাও কম থাকে স্বাভাবিক পুরুষের তুলনায়, যেটাকে বলা হয় এজোওস্পের্মিয়া (Azoospermia)। সুস্থ স্বাভাবিক মেরুদন্ড স্পার্ম সংখ্যা নরমাল লেভেলে রাখতে সাহায্য করে।
    .
    SCI রোগীদের শুক্রাণু সচল থাকা বা মোটিলিটির সমস্যা থাকে, যে রোগের নাম এস্থেনোজোওস্পেরমিয়া (asthenozoospermia)। তারমানে এদের শুক্রানো একজায়গায় পড়ে থাকে, সচল থাকে না, যেটা পুরুষদের ইনফার্টিলিটির অন্যতম কারণ। গবেষণাগারে দেখা গেছে, SCI রোগাক্রান্তদের থেকে সেমিনাল ফ্লুইড নিয়ে সুস্থ পুরুষের শুক্রাণুর সাথে মিক্সড করলে সুস্থ পুরুষদের শুক্রাণুও সক্রিয়তা হারিয়ে ফেলে। শুক্রাণু সচল থাকা প্রজননের পূর্বশর্ত। সুতরাং দেখা যাচ্ছে সুস্থ মেরুদন্ড প্রজননের সহায়ক।
    .
    SCI রোগাক্রান্ত পুরুষেরা অনেকসময় ইরেক্টাইল ডিসফাংকশন অথবা ত্রুটিপূর্ণ বীর্য নির্গমন সমস্যা Vibratory stimulation ও electroejaculation পদ্ধতির মাধ্যমে দূর করে থাকেন যা স্বাভাবিক বীর্য নির্গমন সাহায্য করে। সুস্থদের ক্ষেত্রে সবল মেরুদন্ড এই কাজগুলো করে থাকে। তারমানে বীর্যের স্বাভাবিক নির্গমন ও ইরেকশনের জন্য মেরুদন্ড সুস্থ সবল থাকা অপরিহার্য।
    এই কারণেই কেও কেও ভাবে বাংলা অনুবাদটাই সম্ভবত সঠিক যেখানে তারা বাকরণটাই অর্থাৎ কি বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে সেটা দেখেনি।

    তথ্য ও গ্রন্থসূত্রাবলীঃ

    [১] Al-Mawrid; By Dr. Rohi Baalbaki; Dar As-Salam Publication; Page: 507

    [২] Al-Mawrid; By Dr. Rohi Baalbaki; Dar As-Salam Publication; Page: 933

    [৩]Arabic-English lexicon by Edward William Lane; Volume: 03; Page: 58-59

    [৪] The Developing Human by Dr. Keith L. Moore (10th edition); page: 22

    [৫] তাফসীরে বাহারুল মুহিত: খন্ডঃ ১০; পৃষ্ঠাঃ ৪৪৮

    [৬] Arabic-English lexicon by Edward William Lane; Volume: 03; Page: 58-59

    [৭] Arabic-English lexicon by Edward William Lane; Volume: 04; Page: 435-437

    [৮]

    Arabic-English lexicon by Edward William Lane; Volume: 01; Page: 301

    Tafsir Ibn Kathir; Volume: 11; Page: 473-474(Islamic Foundation BD)

    [৯] Surah Mumtahina(60); Verse: 12

    [১০] সহিহ মুসলিমঃ কিতাবুন নিকাহঃ হাদিস নং- ৩২৯৫,৩২৯৬,৩২৯৭

    আবারও ধন্যবাদ সম্পূর্ণটা মন দিয়ে পড়ার জন্য। ক্ষমা করবেন কোনো ভুল হয়ে থাকলে।

    Reply
  • September 20, 2021 at 1:16 PM
    Permalink

    কুরানে আরও হাজার হাজার ভুল আছে।

    Reply
  • May 30, 2023 at 3:09 AM
    Permalink

    অনেক ধন্যবাদ
    অনেক তথ্যবহুল আলোচনা করেছেন।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *