খিলজির বঙ্গ আক্রমণ এবং ভারতে শরিয়তী শাসন

খিলজি 217

সূচিপত্র

ভূমিকা

প্রাগৌতিহাসিক সময় থেকেই প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া ও মিনোয়ান সভ্যতার সাথে সাথে সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে ওঠা মহেঞ্জোদারো সভ্যতা সারা পৃথিবীর মানুষের আকর্ষণের বিষয়বস্তু ছিল। হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথাল, কালিবাঙ্গান, ধলাবিরা এবং রাখিগাড়ি সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান নগর। এদের মধ্যে মহেঞ্জোদারো ঐ সময়ে পুরকৌশল ও নগর পরিকল্পনায় শ্রেষ্ঠ ছিল, যা সারা পৃথিবীর মানুষের কাছেই অত্যন্ত লোভনীয় স্থান বলে বিবেচিত হতো। সেইসাথে হিন্দুস্থানের ঐশ্বর্য্য এবং ধনসম্পদের বিবরণ, তাদের কৃষিভূমি, এই অঞ্চলের নগর পরিকল্পনা, শিক্ষাব্যবস্থা এবং জ্ঞানবিজ্ঞানে এগিয়ে থাকা অনেক অঞ্চলের জন্য ঈর্ষার বিষয় ছিল। সেই কারণেই বিভিন্ন সময়ে অ্যালেক্সান্ডার দ্যা গ্রেইট থেকে শুরু করে বড় বড় যুদ্ধবাজ রাজাগণ বারবার ভারত আক্রমণের চেষ্টা করেছে। সেই প্রাচীন আমলের রাজাবাদশা থেকে শুরু করে ইউরোপের আগ্রাসন, ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি বা পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের ভারতে উপনিবেশন স্থাপন, প্রায় সবসময়ই ভারতকে শোষণ করার এক অশুভ পরিকল্পনা ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। আমরা প্রায়শই ইউরোপিয়ানদের উপনিবেশ তৈরি এবং আমাদের ভারতের সম্পদ লুটপাটের জন্য দায়ী করি, অবশ্যই তারা এই অপরাধে অপরাধী। কিন্তু এর মধ্যে খুব কৌশলে ভারতে ইসলামি আগ্রাসনকে নিয়ে খুব বেশি আলাপ করা হয় না, কেউ বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করতে চাইলেও তাকে ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দেয়া হয়। কারণ কোন দিক থেকে চাপাতির আক্রমণ শুরু হয়ে যায়, এই আশংকায় বেশিরভাগ শান্তিপ্রিয় মানুষই ভীত থাকেন। প্রকৃতপক্ষে এটিই সত্য যে, এই অঞ্চলে তরবারির জোরে ইসলাম ভালভাবেই প্রবেশ করেছে। বেশীরভাগ মুসলিমই তাই ভারতে ইসলামী আগ্রাসনকে নানাভাবে জায়েজ করার চেষ্টা করে থাকে। শুধু তাই নয়, যেকোন বিরুদ্ধ মতকে ইসলাম ফোবিয়া সহ নানা উদ্ভট শব্দ দ্বারা এমনভাবে উপস্থাপন করে যেন এই বিষয়ে কেউ কথা বলার সাহস না করে। এর সাথে যুক্ত হয় জবাই করার হুমকি। এই লেখাটিতে আমরা শুধুমাত্র ভারতে ইসলামী আগ্রাসন বিশেষ করে খিলজি ও তার পরবর্তী কিছু আক্রমণ, শাসন এবং বিধর্মীদের সম্পর্কে ইসলামের শরিয়তের বিধানবলী নিয়েই আলোচনা করবো। সেই সাথে এটিও আমাদের মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজাই আসলে ভারত, বিশেষত বাংলা বিহার উড়িষ্যা এই অঞ্চলগুলো আক্রমণ করেছে। সকল আগ্রাসনই, তা দেশি হোক বা বিদেশী, তা অন্যায়, যখন তা মানুষের জীবনের মূল্যে হয়। নিরাপরাধ বেসামরিক জনগণ যেখানে ভুক্তভোগী হয়। তাই আপনারা অমুক আগ্রাসনের কথা বললেন, তমুকের কথা কেন বললেন না, এগুলো যেকোন অপরাধ ঢাকার খুব সস্তা কৌশল। অন্য কোথাও ঘটা অন্যায় কোন অন্যায়কে ন্যায়ে পরিণত করে না, এই কথাটি মনে রেখে লেখাটি পড়তে হবে। অর্থাৎ, কলিমুদ্দীন দশটি ধর্ষণ করেছে, তাই রহিমুদ্দীনের আটটি ধর্ষণ জায়েজ হয়ে গেল, এমনটি নয়। দুইটি কাজই তখন অন্যায় এবং অপরাধ হবে।

ইসলামে ভারত আক্রমণের ফজিলত

ইসলামের নবী মুহাম্মদের জীবদ্দশাতেই মক্কায় একজন চিকিৎসকের কথা জানা যায়, যিনি ভারতের গুন্দেশপুর এসেছিলেন চিকিৎসাশাস্ত্রে উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের জন্য। সেই চিকিৎসকের নাম ছিল হারিস ইবনে কালাদা। তিনি মুহাম্মদের আমলের একজন আরব চিকিৎসক। অসংখ্য ইসলামিক গ্রন্থে তার সম্পর্কে কিছু কিছু বিবরণ পাওয়া যায়, তবে বিস্তারিত জানা যায় না। এরকম হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, তিনি সেই সময়ে রীতিমত মানুষের চিকিৎসা করতেন এবং শরীর, স্বাস্থ্য, মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ইত্যাদি বিষয়ক পরামর্শ দিতেন এবং আলোচনা করতেন। আসুন উনার সম্পর্কে একটি ফতোয়া দেখি,

২১৯৯. প্রশ্ন
আমি একজন আলেমকে স্বাস্থ্য রক্ষার গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে নিম্নোক্ত হাদীসটি বলতে শুনেছি।
المعدة بيت الداء، والحمية رأس الدواء، وأعط كل بدن ما عودته
(অর্থাৎ) উদর হল সর্বরোগের কেন্দ্র। আর খাদ্য-সংযম সর্বরোগের মহৌষধ। দেহকে তা-ই দাও, যাতে তাকে অভ্যস্ত করেছ। জানার বিষয় হল, এটি কি হাদীস। হাদীস হলে তা কোন কিতাবে আছে? জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর
প্রশ্নোক্ত কথাটি কোথাও হাদীস হিসেবে উল্লেখেতি হলেও হাদীস বিশারদগণ বলেছেন, এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস হিসেবে প্রমাণিত নয়; বরং তা আরবের প্রসিদ্ধ চিকিৎসক হারিস ইবনে কালদাহ-এর উক্তি।
অতএব তা হাদীস হিসেবে বর্ণনা করা যাবে না।
-আলমাকাসিদুল হাসানাহ পৃ. ৬১১; কাশফুল খাফা ২/৯৩; আদ্দুরারুল মুনতাছিরাহ ১৬৮; আল লাআলিল মানসুরাহ ১৪৫; আলফাওয়াইদুল মাজমূআহ ১৬৬; যাদুল মাসীর ৩/১৮৮; রুহুল মাআনী ৫/১১০; তাফসীরে কুরতুবী ৭/১৯২

শুধু তাই নয়, উনার সম্পর্কে কিছু জইফ হাদিসও পাওয়া যায়। জইফ হাদিসগুলো ( অর্থাৎ, এই হাদিসগুলোর বর্ণনাকারী রাবীদের ধারাবাহিকতায় কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে) সঠিক হয়ে থাকলে, মুহাম্মদ তার কাছে মানুষকে চিকিৎসা নেয়ার জন্য পাঠাতেন বলেই মনে হয়। উনি গ্রীসের চিকিৎসকদের গ্রন্থগুলো আরবিতে অনুবাদ করেছিলেন বলেও কিছু কিছু সূত্র থেকে জানা যায়।

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব ২১: খাদ্য
পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৪২২৪-[৬৬] সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক সময় আমি মারাত্মকভাবে পীড়িত হয়ে পড়লাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার খোঁজ-খবর নিতে তাশরিফ আনলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজের হাতখানা আমার দু’ স্তনের মাঝখানে (বুকের উপর) রাখলেন। তাতে আমি আমার কলিজায় শীতলতা অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি একজন হৃদ-বেদনার রোগী। সুতরাং তুমি সাক্বীফ গোত্রীয় হারিস ইবনু কালদাহ্-এর নিকট যাও। সে একজন চিকিৎসক। পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে যেন অবশ্যই মদীনার সাতটি ‘আজওয়াহ্ খেজুর বীচিসহ পিষে তোমার মুখের মধ্যে ঢেলে দেয়। (আবূ দাঊদ)[1]
[1] য‘ঈফ : আবূ দাঊদ ৩৮৭৫, য‘ঈফুল জামি‘উস্ সগীর ২০৩৩, আল মু‘জামুল কাবীর লিতু ত্ববারানী ৫৩৪৬, য‘ঈফুল জামি‘ ২০৩৩।
হাদীসটি য‘ঈফ হওয়ার কারণ হলো মুজাহিদ সা‘দ হতে বর্ণনা করাটা মুরসাল। আবূ যুর্‘আহ্ আর্ রাযী এমনটিই বলেছেন। বিস্তারিত দেখুন- ‘আওনুল মা‘বূদ ১০/২৫৫ পৃঃ, হাঃ ৩৮৭৫।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai’f)
বর্ণনাকারীঃ সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২২/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ১২. আজওয়া খেজুর সম্পর্কে।
৩৮৩৫. ইসহাক ইবন ইসমাইল (রহঃ) …. সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একবার আমি পীড়িত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখার জন্য আসেন। এ সময় তিনি তাঁর হাত আমার বুকের উপর রাখলে আমি তাঁর শৈত্যতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেনঃ তুমি হার্টের রুগী। কাজেই তুমি ছাকীফ গোত্রের অধিবাসী হারিছা ইবন কালদার নিকট যাও। কেননা, সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদীনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে, তা বীচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরী করে দেয়।
হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai’f)
বর্ণনাকারীঃ সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)

একইসাথে সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ তার অনুসারীদের হিন্দুস্থানের চন্দনকাঠ ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছিলেন। যা থেকে বোঝা যায়, ভারতের চন্দনকাঠ সেই সময়ে আরব অঞ্চলে খুব দামী এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হিসেবে পরিগণিত হতো। তাই হিন্দুস্থানের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আরব অঞ্চলের মানুষের আগ্রহ ছিল, এটি মনে করা অস্বাভাবিক নয়।

সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২২/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ১৩. আংগুল দিয়ে গলা দাবানো সম্পর্কে।
৩৮৩৭. মুসাদ্দাদ ও হামিদ ইবন ইয়াহইয়া (রহঃ) …. উম্মু কায়স বিনত মিহসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি আমার এক ছেলেকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হই; যার গলা (অসুখের কারণে) আমি মালিশ করেছিলাম। তখন তিনি বলেনঃ তোমরা তোমাদের সন্তানদের গলার আসুখে কেন তাদের গলা মালিশ কর? বরং তোমাদের উচিত (এ রোগের জন্য) হিন্দুস্থানের চন্দনকাঠ ব্যবহার করা। কেননা, তাতে সাত ধরনের রোগ ভাল হয়, যার একটি হলো নিউমোনিয়া। গলা-ফুলা রোগে তা নাকের ছিদ্রে ব্যবহার করবে এবং নিউমোনিয়া হলে তা বড়ি বানিয়ে খাবে।
ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেনঃ চন্দন কাঠের অর্থ- তা চূর্ণ করে বড়ি বানিয়ে খাবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু কায়স বিনত মিহসান (রাঃ)

এসব তথ্য থেকে বোঝা যায় যে, নবী মুহাম্মদের সময় ভারত জ্ঞানবিজ্ঞান ও শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে ছিল, এবং বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ভারত আসতো। ভারত আসলে তারা নিশ্চিতিভাবে ভারতের সভ্যতার সাথেও পরিচিত ছিল। সেই কারণেই, ভারত আরব অঞ্চলের মানুষের জন্য ছিল একটি অত্যন্ত লোভনীয় জায়গা। নবী মুহাম্মদ একটি সহিহ হাদিসে ভারত আক্রমণকারীদের জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। অর্থাৎ নবীর উম্মতদের মধ্যে যারা ভারত আক্রমণ করবে, তারা যতবড় অপরাধই বা পাপীই হোক না কেন, সকল পাপ তাতে মুছে যাবে, এবং তারা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পাবে। অথচ, ভারতের সাথে কিন্তু নবী মুহাম্মদের কোন শত্রুতাই ছিল না। ভারতের কেউ কোনদিন নবী মুহাম্মদের পাকা ধানে মইও দেয়নি। এই হাদিসে জিহাদ বলতে তাই আক্রমণাত্মক জিহাদের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। আসুন হাদিসটি পড়ে নিই,

সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৫/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ৪১. হিন্দুস্থানের জিহাদ
৩১৭৮. মুহাম্মাদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন আব্দুর রহীম (রহঃ) … রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোলাম ছাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের দুটি দল আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে জাহান্নাম হতে পবিত্রাণ দান করবেন, একদল যারা হিন্দুস্থানের জিহাদ করবে, আর একদল যারা ঈসা ইবন মারিয়াম (আঃ) এর সঙ্গে থাকবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ। সহীহাহ ১৯৩৪, সহীহ জামে’ আস-সগীর ৪০১২।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাওবান (রাঃ)

একইরকম বক্তব্য বর্ণিত আছে নুআইম বিন হাম্মাদের হাদিস সংকলন গ্রন্থে। যদিও এই হাদিস গ্রন্থে অনেক সমস্যা থাকার কথা ইসলামি আলেমগণ বলে থাকেন, কিন্তু একই বক্তব্য যেহেতু অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও পাওয়া যায়, তাই এই হাদিসগুলোকে সঠিক হিসেবেই গণ্য করতে হয় [1]

প্রাচীন বঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর তক্ষশীলা কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। টলেমির ভূগোলে তক্ষশীলাকে বর্ণনা করা হয়েছে ‘তক্ষিয়ালা’ (Taxiala) হিসেবে[2]। তবে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাঠদান করা হতো না। কৌটিল্য তার অর্থশাস্ত্র এখানে রচনা করেছিলেন বলে কিংবদন্তি আছে। রাজা বিম্বিসার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জীবক এখানে অধ্যয়ন করেছিলেন। এই স্থান তৎকালীন বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের অধ্যয়নস্থল। পরবর্তী সময়কার বিভিন্ন লেখায় ছড়ানো ছিটানো সূত্র থেকে জানা যায় যে, তক্ষশীলার সূচনা সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দে হয়েছিল। ভারতের বিহার রাজ্যে অবস্থিত নালন্দাও প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত শিক্ষাকেন্দ্র বা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সমাদৃত ছিল। ৫ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ৭০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্র ছিল, যা সারা বৌদ্ধ বিশ্বের ছাত্র এবং পণ্ডিতদের আকর্ষণ করতো। বিশ্ববিদ্যালয়টি ৫ম শতাব্দীতে বৌদ্ধ শিক্ষার অধ্যয়নের কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি এশিয়ার উচ্চ শিক্ষার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃত ছিল। নালন্দা ছিল পণ্ডিত এবং ছাত্রদের একটি বৈচিত্র্যময় সম্প্রদায়ের আবাসস্থল যারা চীন, তিব্বত এবং মধ্য এশিয়া থেকে তার প্রখ্যাত শিক্ষকদের অধীনে অধ্যয়ন করতে এসেছিল। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বা সোমপুর বিহার বা সোমপুর মহাবিহার ছিল দক্ষিণ হিমালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার। আয়তনে এর সাথে ভারতের নালন্দা মহাবিহারের তুলনা হতে পারে। এটি ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের অতি বিখ্যাত ধর্ম শিক্ষাদান কেন্দ্র ছিল। শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, বরং চীন, তিব্বত, মায়ানমার (তদানীন্তন ব্রহ্মদেশ), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন। খ্রিস্টীয় দশম শতকে বিহারের আচার্য ছিলে প্রাচীন বাঙলা এবং গোটা বিশ্বেরই অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এবং পণ্ডিত হিসেবে খ্যাত বাঙালি অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।

আরো একটি তথ্য যা অনেকেই জানেন না সেটি হচ্ছে, নালন্দা মহাবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্ম নেয়া মহাপণ্ডিত মহাস্থবির শীলভদ্র। তিনি ছিলেন বৌদ্ধশাস্ত্রের একজন বিদগ্ধ ব্যক্তি ও সেই সময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক। তিনি বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক ও সন্ন্যাসী হিউয়েন সাঙের সরাসরি শিক্ষকও ছিলেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি ছিল এর বিশাল গ্রন্থাগার, যা ‘ধর্মগঞ্জ’ (‘ধর্মের হাট’) নামে পরিচিত ছিল। তিনটি বহুতলবিশিষ্ট ভবনে এই গ্রন্থাগারটি অবস্থিত ছিল। ভবনগুলির নাম ছিল ‘রত্নসাগর’ (‘রত্নের মহাসাগর’), ‘রত্নোদধি’ (‘রত্নের সমুদ্র’) ও ‘রত্নরঞ্জক’ (‘রত্নখচিত’)। রত্নোদধি ছিল নয়টি তলবিশিষ্ট ভবন। এখানেই পবিত্রতম ধর্মগ্রন্থ প্রজ্ঞাপারমিতা সূত্র ও গুহ্যসমাজ রক্ষিত ছিল।। লাইব্রেরিটিতে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের কয়েক হাজার ভলিউম, সেইসাথে অন্যান্য বিষয়ের বিস্তৃত পরিসরের পাঠ্যপুস্তক ছিল বলে জানা যায়। লাইব্রেরিটি এতটাই বিস্তৃত ছিল যে খ্রিস্টীয় ১২শতকে আক্রমণকারী তুর্কি মুসলিম সেনাবাহিনী কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়টি যখন পুড়িয়ে দেয়া হয়, কয়েক মাস ধরে সেই বই পুড়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়কে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজীই ধ্বংস করেন, এরকম সরাসরি প্রমাণ পাওয়া না গেলেও, আশেপাশে যেসকল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেসব স্থানে খিলজির আক্রমণ এবং ধ্বংসের দলিল প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন বাংলা ও মগধে পাল রাজাদের আমলে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ বিহার গড়ে ওঠে, যার মধ্যে পাঁচটি মহাবিহারের নাম পাওয়া যায়। মহাবিহারগুলো হলো: বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয় (পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাবিদ্যালয়), নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (পৃথিবীর প্রথম আবাসিক মহাবিদ্যালয়, অতীতে গৌরবোজ্জ্বল এবং বর্তমানেও আলোচিত), সোমপুর মহাবিহার, ওদন্তপুরী ও জগদ্দল। পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ই পরস্পর সংযুক্ত ছিল, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় রাজাদের তত্ত্বাবধানে ছিল এবং বিহারগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ ছিল। পাল সাম্রাজ্যের অধীনে পূর্ব ভারতে প্রতিষ্ঠিত আন্তঃসম্পর্কিত বিহার বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো একত্রে একটিমাত্র নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচিত হতো। মহাবিহারগুলোর পণ্ডিতেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে পারতেন, এমনকি বিখ্যাত পণ্ডিতদের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদবীর ভিত্তিতে স্থানান্তরিত হওয়া সাধারণ ব্যাপার ছিল। নালন্দার মতো ওদন্তপুরীর অধিকাংশ আচার্য ও শিক্ষার্থী বাঙালি ছিলেন।

বিভিন্ন ঐতিহাসিকের মতে, ১১৯৩ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজী ওদন্তপুরী বিহার আক্রমণ করেন। কিছু কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, বখতিয়ার খিলজী নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ও ধ্বংস করেন। নালন্দা ও ওদন্তপুরী মহাবিহারের দুরত্ব মাত্র কয়েক কিলোমিটার তাই নালন্দার ক্ষেত্রেও একই পরিণতি হয়েছিল বলে ধরা হয়। সেই যুগের অপর দুই বিহার বিক্রমশিলা ও জগদ্দল তুর্কীদের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। বখতিয়ার খিলজী দুর্গ আক্রমণকালে উঁচু প্রাচীরঘেরা ওদন্তপুরীকে দুর্গ ভেবে ভিক্ষুদের ন্যাড়া মাথা ব্রাহ্মণ ভেবে আক্রমণ করে ধ্বংস করেন এবং ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালান।

বখতিয়ার খিলজির আক্রমণ

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, নবী মুহাম্মদ ভারত আক্রমণের নির্দেশ তার সাহাবীদের দিয়ে গিয়েছিলেন, এবং ভারত আক্রমণকারীদের জন্য সকল গুনাহ মাফ করে তাদের জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। এই বিষয়টি খুবই বিপদজনক। কারণ কোন মানুষের কাছে যদি এরকম কোন পন্থা থাকে যে, এই কাজটি করলে তার অতীতের সকল অন্যায় ধুয়ে যাবে, সেটি তার অপরাধবোধকে কমিয়ে দেয়। এই নিয়ে ভবিষ্যতে অন্য কোথাও আলোচনা করা যাবে, আপাতত আমরা খিলজির ভারত আক্রমণ নিয়ে আলোচনা করি।

তুর্কি বংশোদ্ভূত ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজি প্রাথমিক জীবনে ভাড়াটে সৈনিক ছিলেন। তিনি আফগানিস্তানের গরমশিরের (বর্তমানে দশতে মার্গ) বাসিন্দা ছিলেন। দারিদ্র্যের কারণে মাতৃভূমি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ খুঁজতে থাকেন। তারপরে তিনি হিজবার উদ্দিনের অধীনে একটি চাকরি পান, তার ভাগ্য পরিবর্তন করতে এবং দ্রুত ধনী হওয়ার জন্য তিনি ভারত আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি বিহার ও বঙ্গ আক্রমণ ও জয় করেন। আরও লোভী হয়ে তিনি তিব্বত আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার সেনাবাহিনী নিয়ে তিব্বত আক্রমণ করেন। তার তিব্বতি অভিযান ব্যর্থ হয় এবং সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি হয়। তখন প্রজাদের মধ্যে বিদ্রোহ ও বিরোধ দেখা দিতে থাকে। গণহত্যা ও পরাজয়ের শোকে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বিখ্যাত মুসলিম ঐতিহাসিক মিনহাজ ই সিরাজের মতে, আলী মর্দান খলজির ছুরিকাঘাতে তিনি নিহত হন।

মিনহাজ আল-সিরাজ জুজজানি (জন্মঃ ১১৯৩) এর পূর্ণ নাম আবু উসমান মিনহাজউদ্দিন বিন সিরাজউদ্দিন। তিনি ছিলেন ১৩শ শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ পার্সিয়ান ইতিহাসবিদ। তার লিখিত তবকাত-ই-নাসিরী মিনহাজ-ই-সিরাজ জুর্জানি মধ্যযুগের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস গ্রন্থ। এ গ্রন্থে ইসলামের বিভিন্ন নবী-রসুলের ইতিহাস থেকে শুরু করে মিনহাজ তার নিজের সময় পর্যন্ত ঘটনাবলি বর্ণনা করেছেন। বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ আকর গ্রন্থ। বাংলা মুলুকে মুসলিম শাসনের প্রথম ৫০ বছরের ইতিহাস একমাত্র এ গ্রন্থেই পাওয়া যায়।

ঘোরের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত জুর্জান ছিল মিনহাজের পরিবারের আদি নিবাস। তার পিতা ঘোরী সুলতানদের অধীনে কাজীর পদে নিযুক্ত ছিলেন। ৩৪ বছর বয়সে মিনহাজ ভারতে আসেন। সমসাময়িক মানদন্ডে তিনি উচ্চশিক্ষিত ছিলেন এবং তাঁর কিছু কূটনৈতিক অভিজ্ঞতাও ছিল। তিনি প্রথমে উচ্চ-এ নাসিরুদ্দীন কুবাচার দরবারে যোগদান করেন। কুবাচা তাকে কাজী পদে নিযুক্তি দেন। কুবাচার নিকট থেকে শামসুদ্দীন ইলতুৎমিশ মুলতান দখল করে নিলে মিনহাজ দিল্লিতে চলে আসেন। দিল্লিতে মিনহাজ একাধারে ইমাম, কাজী, খতিব প্রভৃতি পদে অধিষ্ঠিত হন ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দিল্লি সুলতানদের সাহচর্যে আসেন এবং মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, ইমাম, খতিব, কাজী ও সদর-ই-জাহান পদে নিয়োগ লাভ করেন। সুলতান নাসিরুদ্দীন মাহমুদের রাজত্বকালে দিল্লির কাজী থাকা অবস্থায় তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ তবকাত-ই-নাসিরী রচনা করেন এবং ক্ষমতাসীন সুলতানের নামে এটি উৎসর্গীকৃত হয়।

বখতিয়ার খিলজীর বিজয় থেকে শুরু করে ১২৫৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার ইতিহাসের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস হলো তবকাত-ই-নাসিরী। অন্যান্য সমসাময়িক উৎস হিসেবে কিছু শিলালিপি ও মুদ্রা পাওয়া যায়। শুধু সমসাময়িক গ্রন্থ বলে নয়, অন্য আরও দুটি কারণে গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, মিনহাজ স্বয়ং বাংলায় আসেন, দুবছরের মতো এখানে অবস্থান করে তাঁর রচনার জন্য তথ্যাদি সংগ্রহ করেন এবং এখানকার রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহেও অংশ নেন। দ্বিতীয়ত, বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তিনি তাঁর গ্রন্থের সম্পূর্ণ এক অধ্যায় জুড়ে (তবকাত) বর্ণনা করেন। বাংলার রাজধানীতে অবস্থানকালে তিনি বখতিয়ারের বাংলা বিজয় সম্পর্কে তাঁর বেঁচে থাকা সহযোগীদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। দিল্লি সুলতানদের বাংলায় অভিযান কালে আসা দিল্লিবাসীদের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করেও তিনি ইতিহাস রচনার কাজে লাগান। বাংলায় মুসলিম সমাজের বিকাশ সম্বন্ধেও ঐতিহাসিক মিনহাজ তাঁর তবকাত-ই-নাসিরীতে ধারণা দেন। তার তবকাত ই নাসিরী গ্রন্থটি পাঠকদের জন্য দেয়া হচ্ছে। পাঠকগণ ডাউনলোড করে পড়তে পারেন [3]। এই গ্রন্থের কয়েকটি পাতা আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করবো।

প্রথমেই দেখে নিই, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি কীভাবে লুটতরাজ চালিয়েছেন এবং মস্তক মুণ্ডিত কথিত ব্রাহ্মণদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছেন। উল্লেখ্য, বইটির লেখক ভুল করে ঐ অঞ্চলের অধিবাসী মস্তক মুণ্ডিত মানুষদের ব্রাহ্মণ ভেবেছিলেন, যদিও তারা ব্রাহ্মণ ছিলেন এরকম প্রমাণ মেলে না। বরঞ্চ এই অধিবাসীগণ বৌদ্ধভিক্ষু ছিল বলেই প্রমাণ মেলে। উল্লেখ্য, বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও একইরকম মস্তক মুণ্ডিত থাকে [4]

সেই সময়ে এটিও জানা যায়, সমগ্র নগর এবং দূর্গটি মিলে একটি অতি বৃহৎ শিক্ষায়তন ছিল। আধুনিক সময়ের ইউনিভার্সিটির মতই, সেই শিক্ষায়তনটি ছিল পুরো নগজ জুড়ে। প্রাচীন এথেন্স, আলেক্সান্ড্রিয়া বা আধুনিক সময়ের অক্সফোর্ড শহরে গেলে আপনি দেখতে পাবেন, পুরো শহর জুড়েই শিক্ষায়তন। ভাবা যায়, সেই আমলে ভারতে একটি পুরো নগর গড়ে উঠেছিল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আদলে? কিন্তু সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিহারে খিলজি নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিলেন [5]

শুধু গণহত্যাই নয়, বিধর্মী বা কাফেরদের মা বোন স্ত্রী কন্যা সকলকেই তিনি গনিমতের মাল হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন [6]

এত বিপুল সম্পদ তিনি লুটপাট করেন, যা ইতিহাস লেখক ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না। দেখুন, তার লিখিত গ্রন্থ থেকে [7]

এরপরে শুরু হয় তিব্বত আক্রমণের ঘটনা [8]

মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি এই সময়ে মানুষের অভিশাপ এবং গালাগালির শিকার হতে শুরু করেন। এত বেশি মানুষের অভিশাপ তিনি পাচ্ছিলেন, যে তিনি এই সময়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যান [9]

এবারে আসুন, বইটির ইংরেজি অনুবাদ থেকেও খানিকটি অংশ দেখে নেয়া যাক [10]

বখতিয়ারের ঘোড়া ও জিহাদী চেতনা

উপরে বর্ণিত হলো বখতিয়ারের নির্মম গণহত্যা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস, লুটতরাজ এবং নারী শিশুদের গনিমতের মাল হিসেবে দাসদাসীতে পরিণত করার ইতিহাস, ইতিহাসের সবচাইতে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ, ছাত্রছাত্রী, শিশুকিশোর জানে না বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের নাম, জানে না মহাপণ্ডিত মহাস্থবির শীলভদ্রের নাম। তারা কিন্তু খুনী বখতিয়ারের নাম ঠিকই জানে। এই ডাকাতকে আমাদের শিশুদের বইতে একজন বীর হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়। এমনকি, ইসলামপন্থী কবি আল মাহমুদ এই খুনী ডাকাতকে নিয়ে কবিতাও লেখে। আসুন সেই কবিতাটি পড়ে দেখি, এবং বোঝার চেষ্টা করি যে, এই ধরণের কবিতা শিশু কিশোরদের মনে জিহাদ, খুনোখুনি,ও রক্তারক্তি আর কাফের হত্যার উৎসাহ দেবে, নাকি এক অসাম্প্রদায়িক মানবিক চিন্তাভাবনার জন্ম দেবে!

বখতিয়ারের ঘোড়া- আল মাহমুদ
—————————————–
মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে।
মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদই অন্তিম তৃপ্তি;
আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ, জেহাদ বলে জেগে উঠি।
জেগেই দেখি কৈশোর আমাকে ঘিরে ধরেছে।
যেন বালিশে মাথা রাখতে চায় না এ বালক,
যেন ফুৎকারে উড়িয়ে দেবে মশারি,
মাতৃস্তনের পাশে দু’চোখ কচলে উঠে দাঁড়াবে এখুনি;
বাইরে তার ঘোড়া অস্থির, বাতাসে কেশর কাঁপছে।
আর সময়ের গতির ওপর লাফিয়ে উঠেছে সে।
না, এখনও সে শিশু। মা তাকে ছেলে ভোলানো ছড়া শোনায়।
বলে, বালিশে মাথা রাখো তো বেটা। শোনো
বখতিয়ারের ঘোড়া আসছে।
আসছে আমাদের সতেরো সোয়ারি
হাতে নাংগা তলোয়ার।
মায়ের ছড়াগানে কৌতূহলী কানপাতে বালিশে
নিজের দিলের শব্দ বালিশের সিনার ভিতর।
সে ভাবে সে শুনতে পাচ্ছে ঘোড়দৌড়। বলে, কে মা বখতিয়ার?
আমি বখতিয়ারের ঘোড়া দেখবো।
মা পাখা ঘোরাতে ঘোরাতে হাসেন,
আল্লার সেপাই তিনি, দুঃখীদের রাজা।
যেখানে আজান দিতে ভয় পান মোমেনেরা,
আর মানুষ করে মানুষের পূজা,
সেখানেই আসেন তিনি।
খিলজীদের শাদা ঘোড়ার সোয়ারি।
দ্যাখো দ্যাখো জালিম পালায় খিড়কি দিয়ে
দ্যাখো, দ্যাখো।
মায়ের কেচ্ছায় ঘুমিয়ে পড়ে বালক
তুলোর ভেতর অশ্বখুরের শব্দে স্বপ্ন তার
নিশেন ওড়ায়।
কোথায় সে বালক?
আজ আবার হৃদয়ে কেবল যুদ্ধের দামামা
মনে হয় রক্তেই ফয়সালা।
বারুদই বিচারক। আর
স্বপ্নের ভেতর জেহাদ জেহাদ বলে জেগে ওঠা।

মোঘল আমল ও ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী

ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির পূর্বে এবং পরে বহু মুসলিমই ভারত আক্রমণ করেন এবং এটি চলতেই থাকে। কিন্তু আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু সেই ঐতিহাসিক বিষয়াদি নয়, বরঞ্চ ইসলামী শরিয়ত এবং অমুসলিমদের সম্পর্কে ইসলামী শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি। তাই এই আলোচনায় মূলত ইসলামী আইন নিয়েই পর্যালোচনা করা হবে। ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী বা আল-ফাতাওয়া আল-আলমগিরিয়া বা আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া নামে পরিচিত একটি ইসলামী আইন সংকলন রয়েছে। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে এই সংকলন প্রণীত হয়। “ভারতে তৈরি মুসলিম আইনের সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন” হিসাবে ঘোষণা করা হয়, সংকলনটি ব্যাপকভাবে ইসলামিক আইনশাস্ত্রের (ফিকহ) ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুসংগঠিত কাজগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। সুন্নি হানাফি মাজহাবের ভিত্তিতে শরিয়া আইন এতে সংকলিত হয়েছে। অনেক আলেম এই গ্রন্থ প্রণয়নে অবদান রেখেছেন। এতে কোরআন, সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদ, জামি’আত-তিরমিযী থেকে সব দলিল গ্রহণ করা হয়েছে।

ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী প্রণয়নের উদ্দেশ্যে আওরঙ্গজেব ফিকহের ৫০০ আলেমকে নিয়োগ দেন। তাদের মধ্যে ৩০০ জন দক্ষিণ এশিয়া, ১০০ জন ইরাক এবং ১০০ জন হেজাজ থেকে আগত। দিল্লি ও লাহোরে সংকলন কর্মে শেখ নিজাম বুরহানপুরি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের কয়েক বছরব্যাপী পরিশ্রমের মাধ্যমে ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী প্রণীত হয়। এই গ্রন্থে বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিস্থিতির সাপেক্ষে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, দাস, যুদ্ধ, সম্পদ, আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক, বিনিময়, কর, অর্থনীতি ও অন্যান্য আইন এবং আইনি নির্দেশনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। মূলত এই গ্রন্থটি ইসলামের একটি বুনিয়াদী আইন শাস্ত্র। এর ওপর ভিত্তি করেই মোটামুটি পৃথিবীর ইসলামি দেশগুলোতে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা দীর্ঘসময় চালু ছিল। আসুন এই গ্রন্থ থেকে অমুসলিমদের সাথে সম্পর্ক, ইসলামি শাসকের অধীনে থাকা অমুসলিমদের অধিকার, জিহাদের নীতিমালা এবং গনিমতের মাল গ্রহণের ইসলামিক পদ্ধতি জেনে নেয়া যাক [11]

সুফিবাদঃ ভেড়ার ছদ্মবেশে নেকড়ে

সুফিবাদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা হচ্ছে, সুফিবাদ আসলে আরবের কট্টর ইসলামের মত কট্টর কিছু নয়, বরঞ্চ মানবতাবাদী অসাম্প্রদায়িক একটি ইসলামের ধারা, যেই ধারায় আধ্যাত্মবাদকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এ সম্পর্কে এটিও প্রচলিত যে, সুফিবাদ একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভারতের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ভূখণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অনেক সাধারণ মুসলমানই মনে করেন, এটি একটি আধ্যাত্মবাদী অতীন্দ্রিয় আন্দোলন যা ইসলামের মধ্যে খোদাপ্রেম থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং এটি সুফি সাধক এবং অতীন্দ্রিয়বাদীদের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে এটি গড়ে ওঠা যা প্রেম, ভক্তি এবং ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণের উপর জোর দেয়। সুফিবাদের মূল বিশ্বাসগুলি ঈশ্বরের সাথে মিলিত হওয়ার এবং জীবনের চূড়ান্ত সত্য ও বাস্তবতাকে অনুভব করার ধারণাকে কেন্দ্র করে,ও এটিও মনে করা হয়।

ভারতীয় সুফিবাদের শিকড়গুলি অষ্টম শতাব্দীতে খুঁজে পাওয়া যায়, যখন সুফিবাদ প্রথম ভারতে পার্সিয়ান সুফি সাধক এবং মিস্টিকদের দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, সুফিবাদ বিকশিত হয়েছে এবং ভারতের স্থানীয় সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে অভিযোজিত হয়েছে, যা ভারতীয় সুফিবাদের একটি অনন্য এবং স্বতন্ত্র রূপের জন্ম দিয়েছে।

ভারতীয় সুফিবাদ হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং অন্যান্য দেশীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে এবং এটি তাদের অনেক শিক্ষা ও অনুশীলনকে তার নিজস্ব আধ্যাত্মিক অনুশীলনে অন্তর্ভুক্ত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি এবং আত্মসমর্পণের অনুশীলন হিন্দু ভক্তিবাদী ঐতিহ্যের অনুরূপ, যেখানে ধ্যান এবং আত্মদর্শনের উপর গুরুত্ব দেয়া হয় যা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের মৌলিক শিক্ষা দ্বারা প্রভাবিত।

ভারতীয় সুফিবাদের সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল ভক্তি প্রকাশ এবং ঈশ্বরের সাথে আধ্যাত্মিক মিলন অর্জনের মাধ্যম হিসেবে সঙ্গীত ও কবিতার ব্যবহার। সুফি সঙ্গীত, কাওয়ালী নামে পরিচিত, সুফি আধ্যাত্মিক অনুশীলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি সুফি মাজার এবং সমাবেশে পরিবেশিত হয়। সুফি গানের গানে প্রায়ই রহস্যময় এবং আধ্যাত্মিক বিষয় থাকে, যেমন ঈশ্বরের সাথে মিলনের আকাঙ্ক্ষা এবং ঐশ্বরিক প্রেমের অভিজ্ঞতা। আমি নিজেও বিশেষ করে সুফি সঙ্গীতের বিভিন্ন শাখার অনেক গানই খুব পছন্দ করি, এর মধ্যে নুসরাত ফতে আলী খান থেকে শুরু করে এ আর রহমানের অনেক গানই অন্তর্ভূক্ত।

ভারতীয় সুফিবাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সুফি সাধক বা আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শকের ভূমিকার উপর জোর দেওয়া, যা একজন পীর নামে পরিচিত। সুফি সাধকদের আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে সম্মান করা হয় যারা উচ্চ মাত্রার আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং যারা তাদের অনুসারীদের পথপ্রদর্শক এবং পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেন। একজন সুফি সাধক এবং তার অনুসারীদের মধ্যে সম্পর্ক প্রায়ই প্রেম, ভক্তি এবং গভীর আধ্যাত্মিক সংযোগ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

ভারতীয় সুফিবাদ জিকরের অনুশীলনকেও অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়, যা ঈশ্বরের নাম বা সুফি সাধকদের নামের পুনরাবৃত্তি এবং ঈশ্বরের সাথে আধ্যাত্মিক মিলনের একটি মাধ্যম হিসাবে। যিকিরকে হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করার, ভক্তি বৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

ভারতীয় সুফিবাদ একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য যা ভারতের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি সুফিবাদের একটি অনন্য রূপ যা ভারতের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপট দ্বারা গঠিত হয়েছে এবং এটি হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং অন্যান্য দেশীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রেম, ভক্তি এবং ঈশ্বরের প্রতি আত্মসমর্পণের উপর জোর দিয়ে, ভারতীয় সুফিবাদ আজও তার অনুসারীদের জীবনে একটি শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী শক্তি হয়ে চলেছে।

আমাদের এই আলোচনায় আমরা সমগ্র সুফিবাদ নিয়ে আলোচনা করবো না, শুধুমাত্র মুজাদ্দিদিয়া তরিকার সুফিবাদ নিয়ে আলোচনা করবো। শায়খ আহমদ সিরহিন্দ মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ এর প্রতিষ্ঠিত তরিকাকে মুজাদ্দিদিয়া তরিকা বলা হয়। এটি মুলত বাহা-উদ-দিন নকশবন্দ বুখারী রহ. এর নকশবন্দিয়া তরিকার একটি গুরত্বপূর্ণ সংস্করণ। তাই একে নকশবন্দিয়া-মুজাদ্দিদিয়া তরিকাও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক ইত্যাদি দেশে নকশবন্দিয়া মুজাদ্দিয়া তরিকার প্রচলন বেশি। তবে সকল মুসলিম দেশেই এই তরিকার অনুসারি দেখা যায়। শায়খ আহমদ সিরহিন্দ মুজাদ্দিদে আলফে সানী হচ্ছেন সুফীদের মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, যার কারণে শুধুমাত্র তার কিছু বক্তব্যই আমাদের আলোচনাতে থাকবে। ভবিষ্যতে আমরা অন্যান্য সুফীদের নিয়েও আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

আহমেদ আল-ফারুকি আল-সিরহিন্দি (২৬ জুন ১৫৬৪- ১০ ডিসেম্বর ১৬২৪) একজন ভারতীয় ইসলামি পন্ডিত, একজন হানাফি শাস্ত্রজ্ঞ এবং নকশবন্দি সুফি ধারার একজন বিশিষ্ট আলেম। ভারতে তিনিই শরীয়তপন্থী সুফিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম বলে অনেকেই মনে করেন। তিনি পাঞ্জাবের তৎকালীন পাতিয়ালি রাজ্যের বিখ্যাত শহর সিরহিন্দে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা আব্দুল আহাদ শাইখ আব্দুল কুদ্দুস গাঙ্গোহির মুরিদ ছিলেন। তার বংশানুক্রম হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে বলে প্রচলিত রয়েছে। আহমেদ সিরহিন্দিকে বলা হয়ে থাকে একজন মুজাদ্দিদ, অর্থাৎ ইসলামকে পুনরুজ্জীবীতকারী। তাকে মুজাদ্দিদে আলফে সানি বলা হয় যার অর্থ “দ্বিতীয় সহস্রাব্দের সংস্কারক”। সিরহিন্দি মোঘল আমলে ইসলামের বিধিবিধান মেনে না চলার তীব্র সমালোচনা করেন এবং শরীয়তের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার প্রচেষ্টার ফলাফল হিসেবে বাদশাহ আলমগীর আবারো শরিয়তের বিধিবিধান চালু করেন, যার ফলাফল হিসেবে ভারতে আবারো ইসলামি শরিয়তের প্রবর্তন ঘটে।

মুঘল সম্রাট আকবরের সময় সম্রাট আকবর অসাম্প্রদায়িক চিন্তায় উদবুদ্ধ হয়ে ইসলামী শরীয়তের বেশ কিছু ধারা ভারতে বন্ধ করে দেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অমুসলিমদের ওপর আরোপিত অবমাননাকর জিজিয়া কর। ইসলামি শরীয়তের এই বিধান তুলে দেয়ায় সম্রাট আকবর শরিয়ত সমর্থক ইসলামিক আলেমদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন। এই সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিলেন আহমেদ সিরহিন্দি।

মুজাদ্দিদে আলফে সানীর উল্লেখযোগ্য রচনা হচ্ছে-

  • আল বাবদা ওয়াল-মাআদ
  • রিসালা-ই তাহলীলিয়্যা
  • রিসালা ফী ইছবাতিন নাবুওয়া ওয়া আদাবিল মুরীদিন
  • রাদ্দে রাওয়াফিজ
  • মাকতূবাত। 

সিরহিন্দির ভয়ঙ্কর সব উদ্বৃতি

মুজাদ্দিদে আলফে সানি ওরফে আহমেদ আল-ফারুকি আল-সিরহিন্দি তার বেশ কিছু গ্রন্থে বেশ কিছু বক্তব্য দিয়ে গেছেন, যা ইসলামের ইমান আকিদার ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং ভারতে ইসলামী শরীয়ত কায়েমে ভূমিকা রেখেছিল। তার উল্লেখযোগ্য উদ্বৃতিগুলো এখানে সন্নিবেশিত করা হলো। প্রথমেই দেখে নিই সাইয়েদ আব্বাস রিজভীর একটি প্রখ্যাত গ্রন্থ Muslim Revivalist Movements In Northern India থেকে [12]

এবারে আসুন আহমেদ সিরহিন্দির বিখ্যাত গ্রন্থ মকতুবাত শরীফ থেকে তারই লিখিত একটি চিঠি পড়ে নিই, যেখানে সিরহিন্দি কাফের মুশরিকদের অপমান ও লাঞ্ছনা করার শরীয়তের বিধান কায়েম করার ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন, মোঘল শাসক কেন অবমাননাকর জিজিয়া কর নিচ্ছে না সেই ব্যাপারে হতাশা ব্যক্ত করেছেন [13]

এবারে আসুন এই একই গ্রন্থ থেকে আরও কিছু চিঠি পড়ি [14]

উপরের বক্তব্যগুলো ছাড়াও সিরহিন্দির আরও অনেক ভয়ঙ্কর সব বক্তব্য বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়, যেগুলো অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক এবং কুরুচিপূর্ণ। আসুন সিরহিন্দির কিছু বক্তব্যের নমুনা দেখে নেয়া যাক।

শরীয়ত তলোয়ারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে[15]

অবিশ্বাসীদের সাথে লড়াই করা এবং তাদের সাথে কঠোর আচরণ করা ইসলামের অন্যতম আবশ্যিক শর্ত

ইসলামের সম্মান অবিশ্বাস ও অবিশ্বাসীদের পতনের মধ্যে

(অবিশ্বাসীদের) থেকে জিজিয়া নেওয়ার মূল লক্ষ্য তাদের অবক্ষয় এবং এই অবক্ষয় যেন এমন হয় যে তারা জিজিয়ার ভয়ে সুন্দর পোশাক পরতে না পারে… এবং তারা সর্বদা ভীত ও কাঁপতে থাকে…

■ সেদিন গোবিন্দওয়ালের অভিশপ্ত কাফেরকে খুব সৌভাগ্যক্রমে হত্যা করা হয়। এটি নরকী হিন্দুদের পরাজয়ের এক কারণ। তাদের যে উদ্দেশ্যে বা যে লক্ষ্য পূরনেই হত্যা করা হোক, তাদের জীবনই আসলে মুসলমানদের জন্য অপমানের। এই কাফিরকে হত্যা করার আগে, আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম যে, সে সময়ের সম্রাট শিরক বা কুফরির মাথার মুকুট ধ্বংস করেছেন। এটা সত্য যে, এই কাফের (গুরু অর্জুন) কাফিরদের প্রধান এবং কাফিরদের নেতা ছিল। তাদের উপর জিজিয়া (অমুসলিমদের উপর কর) ধার্য করার লক্ষ্য হল কাফিরদের লাঞ্চিত ও অপমান করা এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা এবং তাদের প্রতি বৈরিভাব রাখাই হল মুহাম্মদীয় বিশ্বাসের আবশ্যকতা।

যখনই কোনও ইহুদিকে হত্যা করা হয় তা ইসলামের স্বার্থে হয়[16]

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানকে সমস্ত নতুনত্ব বা বিদাত ( যা ইসলামে নেই ) এর বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। [17]

■ ভারতে গরু-কোরবানি হল ইসলামি রীতিগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। কাফিররা (হিন্দুরা) হয়ত জিজিয়া কর দিতে রাজি হতে পারে তবে তারা কখনও গরু-কোরবানি রাজি হবে না… তাদের (হিন্দুদের) থেকে জিজিয়া নেওয়ার মূল লক্ষ্য তাদের এতদূর অবমাননা করা যেন তারা জিজিয়ার ভয়ে সুন্দর পোশাক পরতে না পারে এবং জাঁকজমকপূর্ন জীবনযাপন করতে না পারে। তাদের ক্রমাগত আতংকে ও কাপুনিতেঁ রাখা উচিত। এর উদ্দেশ্য তাদের অবক্ষয় এবং ইসলামের সম্মান এবং গরীমার উত্থান। [18]

কুফর এবং ইসলাম একে অপরের পরিপন্থী। একটির অগ্রগতি কেবল অন্যটির অবক্ষয়ে সম্ভব এবং এইদুটি পরস্পরবিরোধী বিশ্বাসের মধ্যে সহাবস্থান অচিন্তনীয়। 

কুফর এবং কাফিরদের অপমান করার মধ্যেই ইসলামের সম্মান নিহিত। যে কাফিরদের সম্মান করে, মুসলমানদের অসম্মান করে সে। তাদের শ্রদ্ধা করার অর্থ কেবল তাদের সম্মান করা এবং সংসদে একটি আসন অর্পণ করা তা নয়, বরং এটি তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা বা তাদের গুরুত্ব দেয়া বুঝায়। তাদের এক হাত দূরে রাখতে হবে যেমনটি একটি কুকুরকে রাখা হয়… যদি তাদের ছাড়া কোনো পার্থিব ব্যবসা সম্পাদন করা সম্ভব না হয় তবে সেক্ষেত্রে তাদের সাথে কেবল ন্যূনতম যোগাযোগ স্থাপন করা উচিত তবে তাদের উপর কোনো বিশ্বাস ব্যতিরেকেই। শীর্ষস্থানীয় ইসলামিক মনোভাব জোর দেয় যে, সেই পার্থিব ব্যবসাটি পরিহার করাই উচিত এবং কাফিরদের সাথে কোনও সম্পর্ক স্থাপন না করা উচিত।

তাদের (অমুলিমদের) উপর জিজিয়া ধার্য করার লক্ষ্য হল কাফিরদের এমনভাবে লাঞ্চিত ও অপমান করা যেন তারা জিজিয়ার ভয়ে সুন্দর পোশাক পরতে না পারে এবং জাঁকজমকপূর্ন জীবনযাপন করতে না পারে। তাদের ক্রমাগত আতংকে ও কাপুনিতেঁ রাখা উচিত। এর উদ্দেশ্য তাদের অবক্ষয় এবং ইসলামের সম্মান এবং গরীমার উত্থান।

(তিনি লালা বেগকে লিখেছেন) ভারতে গরু-কোরবানি হল ইসলামি রীতিগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম। কাফিররা (হিন্দুরা) হয়ত জিজিয়া কর দিতে রাজি হতে পারে তবে তারা কখনও গরু-কোরবানি রাজি হবে না।

■ গোবিন্দওয়াল (শিখ নেতা) -এ অভিশপ্ত কাফিরের ফাঁসি কার্যকর হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন এবং অভিশপ্ত হিন্দুদের মহান পরাজয়ের কারণ। ‘মৃত্যুদন্ডের পিছনে যে উদ্দেশ্যে বা যে লক্ষ্যই থাকুক না কেন, কাফিরদের অসম্মান মুসলমানদের জন্য সর্বোচ্চ প্রশংসনীয় কাজ। এই কাফিরদের হত্যা করার আগে, আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম যে, সে সময়ের সম্রাট, শিরক এর মাথার মুকুট ধ্বংস করেছেন। প্রকৃত সে ছিল মুশরিকদের প্রধান এবং কাফিরদের নেতা [19]

ইসলামে মূর্তি ভাঙ্গার সুন্নত

একজন হিন্দুর কাছে দূর্গা কিংবা শিব বা কালীর মূর্তিও কিন্তু সম্মানিত এবং পবিত্র বিষয়। বাঙলাদেশে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নানা মন্দিরে মূর্তি ভাঙ্গা হয়। ওয়াজে হুজুররা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মূর্তি ভাঙ্গার উষ্কানি দেন। অথচ, ইসলামের বিধান হচ্ছে, কেউ যদি নবী মুহাম্মদের সামান্যতম সমালোচনাও করে, তাকে বিনা বিচারে যেকোন মুসলিম গিয়ে জবাই করে আসতে পারে। ইসলামে শাতিমে রাসুলের শাস্তি দিতে কোন বিচার আচারের প্রয়োজন নেই। এর মানে হচ্ছে, মুসলিমরা ঠিকই অন্য ধর্মের অবমাননা করতে পারবে, কিন্তু অন্য কেউ ইসলামের বিষয়ে কিছুই বলতে পারবে না। অন্য ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা নাকি তাদের ধর্মীয় অধিকার! আসুন কয়েকটি ভিডিও দেখি, যেখানে অমুসলিমদের পুজনীয় মূর্তি ভাঙ্গার প্রকাশ্যে উষ্কানি দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, এরকম ওয়াজের সংখ্যা লক্ষাধিক। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি দেখানো হচ্ছে।

আফগানিস্তানে বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস

বামিয়ানে অবস্থিত বুদ্ধ মূর্তি একসময় বিশ্বব্যাপী বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তিগুলির একটি হিসাবে বিবেচিত হত। ২০০১ সালে তালেবান দ্বারা এটি ধ্বংস হয়, তারা ইসলাম ধর্মের শরিয়তের বিধান অনুসারেই মূর্তিগুলো ধ্বংস করে ফেলে। প্রায় ১৫০০ বছরের পুরানো মূর্তি যা ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল, মধ্য আফগানিস্তানের বামিয়ান উপত্যকায় একটি পর্বত শৈলশিরায় খোদাই করা হয়েছিল। মূর্তিটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ মিটার বা ৮২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। বড় মূর্তিটির উচ্চতা ৫৫ মিটার, আর ছোটটি ৩৫ মিটার লম্বা। উপরন্তু, এই অঞ্চলে পাহাড়ে খোদাই করা অসংখ্য ছোট বুদ্ধের মূর্তি রয়েছে। এই মূর্তিগুলিকে গান্ধার শিল্পের সর্বোত্তম উদাহরণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, এটি একটি স্বতন্ত্র শিল্প ফর্ম যা খ্রিস্টীয় তৃতীয় থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে সমৃদ্ধ হয়েছিল। ইউনেস্কো এই মূর্তিগুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০১ সালের মার্চ মাসে, তালেবান নেতা মোল্লা মুহাম্মদ ওমরের নির্দেশে ডিনামাইট বিস্ফোরণের মাধ্যমে দুটি বড় মূর্তি ধ্বংস করা হয়েছিল। কিন্তু এই মূর্তি ধ্বংসের পেছনে ইসলামী শরীয়তের বিধান প্রভাবশালী ছিল, নাকি মোল্লা ওমর ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এসব মূর্তি ভেঙ্গেছে, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে ওঠে।

খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভারতের প্রথম মুঘল শাসক সম্রাট বাবরও এই মূর্তিগুলো ধ্বংসের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সম্রাট বাবর ১৫২৮ সালের সেপ্টেম্বরে লিখেছিলেন যে, তিনি উভয়কেই ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন [20] পরে, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মূর্তিগুলি ধ্বংস করার জন্য ভারী কামান ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিলেন। আওরঙ্গজেবের পদক্ষেপের কারণে বুদ্ধ মূর্তিগুলোর পা ভেঙ্গে যায় [21]। বামিয়ান মূর্তিগুলিকে ধ্বংস করার আরেকটি প্রচেষ্টা ১৮ শতকের পারস্যের রাজা নাদের আফশার দ্বারা করা হয়েছিল, তাদের দিকে কামান দিয়ে গুলি চালানো হয়েছিল [22]

১৯ শতকে আফগান রাজা আবদুর রহমান খান এই অঞ্চলে হাজারা বিদ্রোহের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের সময় বৃহত্তর ব্যক্তিত্বের মুখের উপরের অংশটি ধ্বংস করেছিলেন[23]। ২০০১ সালে তালেবান শীর্ষ নেতা মোল্লা ওমর এই বৌদ্ধ মূর্তি ধ্বংস করার পরে স্বগৌরবে ঘোষণা করেন,

পৃথিবীর প্রতিটি মুসলমানদের এই মূর্তি ভাঙ্গা নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত। এই মূর্তি ধ্বংস আল্লাহরই প্রশংসা করেছে যে আমরা তাদের ধ্বংস করে দিয়েছি । [24]

নবীর উপস্থিতিতে ধর্ম অবমাননা

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদের সম্মুখেই আবু বকর কাফেরদের দেবদেবী নিয়ে অত্যন্ত অশালীন এবং কুরুচিপূর্ণ গালাগালি করতেন। নবীরও সেখানে নিরব সম্মতি ছিল, নইলে নবী আবু বকরকে তখনই থামাতেন। ফাতহুল বারী গ্রন্থের লেখক ইবনু হাজার আসকালানি এই হাদিসের ব্যাখ্যাতে বলেন, নবী সেই সময়ে আবু বকরের এই কাজে নিরব সম্মতি জানিয়েছিলেন [25]। এই হাদিসটি অত্যন্ত দীর্ঘ বিধায় কিছু অংশ এখানে দেয়া হচ্ছে, আগ্রহী পাঠকগণ বাদবাকি অংশ মূল বই থেকে পড়ে নিতে পারেন। কাফেরদের সাথে যত শত্রুতাই থাকুক না কেন, যত যুদ্ধই হোক না কেন, কাফেরদের দেবদেবী বা ধর্ম নিয়ে এরকম অবমাননাকর, নোংরা এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কোন সভ্য মানুষ কীভাবে বলতে পারে? [26] [27]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৬/ শর্তাবলী
পরিচ্ছেদঃ ১৭০১. যুদ্ধরত কাফিরদের সাথে জিহাদ ও সন্ধির ব্যাপারে শর্তারোপ এবং লোকদের সাথে কৃত মৌখিক শর্ত লিপিবদ্ধ করা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৫৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩১ – ২৭৩৩
২৫৪৭। …
তখন আবূ বকর (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি লাত দেবীর লজ্জাস্থান চেটে খাও। আমরা কি তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যাব?

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মারওয়ান ইবনু হাকাম (রহঃ)

নবীর মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশ

উপরে যুল খালাসায় সৈন্য পাঠিয়ে অমুসলিমদের উপাসনালয় এবং পুজনীয় মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশের কথা বলা হয়েছে। এরকম উদাহরণ অনেকগুলোই আছে। আসুন আর-রাহীকুল মাখতূম থেকে পড়ি, সেখানে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে সৈন্য পাঠিয়ে নবী মূর্তি, উপাসনালয় এবং সেই সব মূর্তির পুজা কারী মানুষদের সমূলে নিশ্চিহ্ন করতেন। এমনকি মহিলাদেরও বাদ দিতেন না। অবস্থা এমন খারাপ হয়েছিল যে, নবী নিজেই খালিদ বিন ওয়ালিদের ওপর এত হত্যাকাণ্ড দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন [28]

বিভিন্ন অভিযান ও প্রতিনিধি প্রেরণ (السَّرَايَا وَالْبُعُوْثِ):
১. মক্কা বিজয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজকর্ম সুসম্পন্ন করার পর যখন তিনি কিছুটা অবকাশ লাভ করলেন তখন ৮ম হিজরীর ২৫ রমযান উযযা নামক দেব মূর্তি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একটি ছোট সৈন্যদল প্রেরণ করলেন। উযযা মূর্তির মন্দিরটি ছিল নাখলা নামক স্থানে। এটি ভেঙ্গে ফেলে খালিদ (রাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,‏ (‏هَلْ رَأَيْتَ شَيْئًا‏؟‏‏)‏‘তুমি কি কিছু দেখেছিলে?’ খালিদ (রাঃ) বললেন, ‘না’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, ‏(‏فَإِنَّكَ لَمْ تَهْدِمْهَا فَارْجِعْ إِلَيْهَا فَاهْدِمْهَا‏)‏ ‘তাহলে প্রকৃতপক্ষে তুমি তা ভাঙ্গ নি। পুনরায় যাও এবং তা ভেঙ্গে দাও।’ উত্তেজিত খালিদ (রাঃ) কোষমুক্ত তরবারি হস্তে পনুরায় সেখানে গমন করলেন। এবারে বিক্ষিপ্ত ও বিস্ত্রস্ত চুলবিশিষ্ট এক মহিলা তাঁদের দিকে বের হয়ে এল। মন্দির প্রহরী তাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল। কিন্তু এমন সময় খালিদ (রাঃ) তরবারি দ্বারা তাকে এতই জোরে আঘাত করলেন যে, তার দেহ দ্বিখন্ডিত হয়ে গেল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে তিনি এ সংবাদ অবগত করালে তিনি বললেন, ‏(‏نَعَمْ، تِلْكَ الْعُزّٰى، وَقَدْ أَيِسَتْ أَنْ تَعْبُدَ فِيْ بِلَادِكُمْ أَبَدًا‏) ‘হ্যাঁ’, সেটাই ছিল উযযা। এখন তোমাদের দেশে তার পূজা অর্চনার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়ে পড়েছে (অর্থাৎ কোন দিন তার আর পূজা অর্চনা হবে না)।
২. এরপর নাবী কারীম (সাঃ) সে মাসেই ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-কে ‘সুওয়া’ নামক দেবমূর্তি ভাঙ্গার জন্য প্রেরণ করেন। এ মূর্তিটি ছিল মক্কা হতে তিন মাইল দূরত্বে ‘রিহাত’ নামক স্থানে বনু হুযাইলের একটি দেবমূর্তি। ‘আমর যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন প্রহরী জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কী চাও?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর নাবী (সাঃ) এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার জন্য আমাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন।’
সে বলল, ‘তোমরা এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে পারবে না।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘কেন?’
সে বলল, ‘প্রাকৃতিক নিয়মেই তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হবে।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা এখনও বাতিলের উপর রয়েছ? তোমাদের উপর দুঃখ, এই মূর্তিটি কি দেখে কিংবা শোনে?’
অতঃপর
মূর্তিটির নিকট গিয়ে তিনি তা ভেঙ্গে ফেললেন এবং সঙ্গীসাথীদের নির্দেশ প্রদান করলেন ধন ভান্ডার গৃহটি ভেঙ্গে ফেলতে। কিন্তু ধন-ভান্ডার থেকে কিছুই পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি প্রহরীকে বললেন, ‘বল, কেমন হল?’
সে বলল, ‘আল্লাহর দ্বীন ইসলাম আমি গ্রহণ করলাম।’
৩. এ মাসেই সা‘দ বিন যায়দ আশহালী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে বিশ জন ঘোড়সওয়ার সৈন্য প্রেরণ করেন মানাত দেবমূর্তি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। কুদাইদের নিকট মুশাল্লাল নামক স্থানে আওস, খাযরাজ, গাসসান এবং অন্যান্য গোত্রের উপাস্য ছিল এ ‘মানত’ মূর্তি। সা‘দ (রাঃ)-এর বাহিনী যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন মন্দিরের প্রহরী বলল, ‘তোমরা কী চাও?’
তাঁরা বললেন,
‘মানাত দেবমূর্তি ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে আমরা এখানে এসেছি।’
সে বলল, ‘তোমরা জান এবং তোমাদের কার্য জানে।’
সা‘দ মানাত মূর্তির দিকে অগ্রসর হতে গিয়ে
একজন উলঙ্গ কালো ও বিক্ষিপ্ত চুল বিশিষ্ট মহিলাকে বেরিয়ে আসতে দেখতে পেলেন। সে আপন বক্ষদেশ চাপড়াতে চাপড়াতে হায়! রব উচ্চারণ করছিল।
প্রহরী তাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘মানাত! তুমি এ অবাধ্যদের ধ্বংস কর।’
কিন্তু
এমন সময় সা‘দ তরবারির আঘাতে তাকে হত্যা করলেন। অতঃপর মূর্তিটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিলেন। ধন-ভান্ডারে ধন-দৌলত কিছুই পাওয়া যায় নি।
৪. উযযা নামক দেবমূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলার পর খালিদ বিন ওয়ালীদ (সাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৮ম হিজরী শাওয়াল মাসেই বনু জাযামাহ গোত্রের নিকট তাঁকে প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল আক্রমণ না করে ইসলাম প্রচার। খালিদ (রাঃ) মুহাজির, আনসার এবং বনু সুলাইম গোত্রের সাড়ে তিনশ লোকজনসহ বনু জাযীমাহর নিকট গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। তারা (ইসলাম গ্রহণ করেছি) বলার পরিবর্তে (আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি) বলল। এ কারণে খালিদ (রাঃ) তাদের হত্যা এবং বন্দী করতে আদেশ দিলেন। তিনি সঙ্গী সাথীদের এক একজনের হস্তে এক এক জন বন্দীকে সমর্পণ করলেন। অতঃপর এ বলে নির্দেশ প্রদান করলেন যে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর নিকটে সমর্পিত বন্দীকে হত্যা করবে। কিন্তু ইবনু উমার এবং তাঁর সঙ্গীগণ এ নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলেন। অতঃপর যখন নাবী কারীম (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি দু’ হাত উত্তোলন করে দু’বার বললেন, ‏(‏اللهم إِنِّيْ أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدًا) ‘হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তা হতে তোমার নিকটে নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।’(1)
এ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র বনু সুলাইম গোত্রের লোকজনই নিজ বন্দীদের হত্যা করেছিল। আনসার ও মহাজিরীনগণ হত্যা করেন নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী (রাঃ)-কে প্রেরণ করে তাদের নিহত ব্যক্তিদের শোণিত খেসারত এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন। এ ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে খালিদ (রাঃ) ও আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ)-এর মাঝে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং সম্পর্কের অবণতি হয়েছিল। এ সংবাদ অবগত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,
‏(‏مَهَلًّا يَا خَالِدُ، دَعْ عَنْكَ أَصْحَابِيْ، فَوَاللهِ لَوْ كَانَ أَحَدٌ ذَهَبًا، ثُمَّ أَنْفَقَتْهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا أَدْرَكَتْ غُدْوَةَ رَجُلٍ مِّنْ أَصْحَابِيْ وَلَا رَوْحَتَهُ‏)‏‏
‘খালিদ থেমে যাও, আমার সহচরদের কিছু বলা হতে বিরত থাক। আল্লাহর কসম! যদি উহুদ পাহাড় সোনা হয়ে যায় এবং তার সমস্তই তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করে দাও তবুও আমার সাহাবাদের মধ্য হতে কোন এক জনেরও এক সকাল কিংবা এক সন্ধ্যার ইবাদতের নেকী অর্জন করতে পারবে না।(2)

শুধু এইটুকুতেই শেষ নয়। আলীর প্রতি এবং পরবর্তীদের প্রতি নবীর নির্দেশও আমরা দেখে নিই [29]

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১০/ কাফন-দাফন
পরিচ্ছেদঃ কবর সমান করে দেওয়া।
১০৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ….. আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আবূল- হায়্যাজ আল-আসা’দী (রহঃ) কে বলেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন, আমি তোমাকেও সেই দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করছি। তা হলো, কোন উঁচু কবরকে (মাটি) সমান করা ব্যতীত ছাড়বেনা, আর কোন প্রতিকৃতি বিধ্বংস করা ব্যতীত ছাড়বে না। – আল আহকাম ২০৭, ইরওয়া ৭৫৯, তাহযীরুস সাজিদ ১৩০, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১০৪৯ [আল মাদানী প্রকাশনী]
এই বিষয়ে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও হাদীস বর্ণিত রয়েছে। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি হাসান। কোন কোন আলিম এতদনুসারে আমল করেছেন। তারা যমীনের উপর কবর উচূঁ করে বাঁধা অপছন্দনীয় বলে মনে করেন। ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেন, যতটুকু উঁচু করলে এটিকে কবর বলে চিনা যায় তদপেক্ষা কবরকে উঁচু করা আমি পছন্দ করি না। তবে চি‎হ্নস্বরূপ কিছু উঁচু করার দরকার এই জন্য যে, এটিকে যেন কেউ পদদলিত না করে বা এর উপর যেন কেউ না বসে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ওয়াইল (রহঃ)

ভাষ্কর্য তৈরি কী ইসলাম সম্মত?

ইদানিং অনেক মডারেট মুসলিমই দাবী করে থাকেন, ইসলামে পুজনীয় মূর্তি ভাঙ্গা জায়েজ হলেও ভাষ্কর্য বানাতে নাকি কোন বাধা নেই! অথচ, নবী মুহাম্মদ যখন মক্কা বিজয় করেন, সেই সময়ে কাবায় একটি কবুতরের কাঠের মূর্তি ছিল। নবী নিজ হাতেই সেটি ভেঙ্গে দিয়েছেন। সেটি কোন পুজনীয় মূর্তি ছিল না। শুধুমাত্র সৌন্দর্য্য বর্ধনের মূর্তি ছিল। অর্থাৎ, ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা হলে যাবতীয় মূর্তি ভাষ্কর্যই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। [30]

প্রখ্যাত আলেমদের অভিমত

বর্তমান সময়ে সবচাইতে প্রখ্যাত ইসলামের আলেমদের এই বিষয়ে মতামত হচ্ছে, মুসলিমরা যখন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে, তখন অমুসলিমদের সকল মূর্তি এবং মন্দির ধ্বংস করে ফেলতে হবে। কোরআন হাদিস সব গবেষণা করে ইসলামের প্রখ্যাত আলেমগণ এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছেন। এই বিষয়ে সরাসরি ফতোয়াও দেয়া আছে। ফতোয়াটি এখানে দেয়া হলো, যেটি প্রখ্যাত ফতোয়ার ওয়েবসাইট Islamweb থেকে নেয়া – [31]

Demolishing idols in a non-Muslim country
Fatwa No: 190575
Fatwa Date:18-11-2012 – Muharram 5, 1434Email Print
Rating:
Question
Assalamu Alaikum, In the Quran, Allah says that Abraham destroyed the idols to teach the people that idols don’t have any power. In another place, Quran asks to follow the religion of Abraham. Is it required for a muslim living in a hindu country to destroy the idols. Will this not cause religious hatred and communal violence? Is it allowed to construct hindu temple in an islamic country?
Answer
All perfect praise be to Allaah, The Lord of the Worlds. I testify that there is none worthy of worship except Allaah, and that Muhammad sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) is His slave and Messenger.
There is Islamic evidence that it is an obligation to demolish idols and statues, among which is the Hadeeth narrated by ‘Amr ibn ‘Abasah may Allaah be pleased with him that he asked the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ): ”What did Allaah send you with?” He sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) said: “He sent me to keep ties with kinship and demolish idols, and that Allaah Alone should be worshipped without associating anything with Him.” (Muslim)
Also, Abu Al-Hayyaaj Al-Asadi may Allaah be pleased with him said: “ ‘Ali ibn Abi Taalib may Allaah be pleased with him said to me: “Shall I send you for a mission once the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) had sent me for: Do not leave an idol unless it is destroyed, nor you leave an up leveled grave unless you level it down to ground.” (Muslim)
However, this is restricted to the ability of the Muslims in doing so and them being safe from causing a greater harm. Our best example is that of the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) as he used to go to the House of Allaah and perform Tawaaf (circumambulation around the Ka‘bah) while there were 360 idols around it but he did not cause harm to any of them until after the conquest of Makkah and after the Muslims became strong and the polytheists were no longer ruling over Makkah; it was then that the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) destroyed the idols. He sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) prodded the idols with a bow while saying: “The truth has come and falsehood has vanished.” The story is narrated in Saheeh Al-Bukhari and Saheeh Muslim.
The Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) used to take into consideration the prevailing circumstances and leave that which could lead to a greater evil despite the fact that it was permissible in principle. The evidence about this is the Hadeeth of ‘Aa’ishah may Allaah be pleased with her who said: “I asked the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) about Al-Hijr (the area adjacent to the Ka’bah enclosed by a low semi-circular wall), is it from the House (of Allaah)? He sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) said: ’Yes.’ I said, ‘Why did they not include it in the House?’ He sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) said: ’Your people did not have enough resources to spend on it.’ I said: ’Why is the level of its door raised high?’ He sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) said: ’Your people did so, so that they would let whomever they want to enter it and prevent whomever they want from entering it. Your people are close to the Pre-Islamic Period of Ignorance; so I fear that they would reject if I included the Hijr in the House and make its door at a level with the ground.’ ” (Al-Bukhari and Muslim)
Besides, what the Prophet Ibraaheem (Abraham) may Allaah exalt his mention did does not contradict what we have stated, as he did not do that matter until he was capable of doing it and being secure from being harmed. Ibn ‘Aashoor may Allaah have mercy upon him said while interpreting the verse (which means): {And (I swear) by Allaah, I will surely plan against your idols after you have turned and gone away.} (Quran 21:57): “He conditioned that his plan (agaist their idols) be after they depart in order to indicate that he will inflict harm on the idols as soon as he will be able to do so. This proves his strong determination to change evil, because taking the initiative to change evil although it is by hand (physically), is a rank of strong determination, but he would not be able to do so in the presence of idolaters. So, if he were to try to demolish it in their presence, then his act will be in vain. What is meant from changing evil: is to remove it as much as possible, so removing it by hand can only be done with the existence of the ability to do so.”
Finally, it should be noted that it is not permissible for the Muslims to allow non-Muslims to establish one of their temples in a Muslim country, let alone the Muslim country establishing it itself. The conditions that ‘Umar may Allaah be pleased with him put on the non-Muslims living safely in a Muslim country under Muslim rule included: “….that we will not erect in our city any church….”
Allaah Knows best.

উপরের ফতোয়াটির ভাবানুবাদ দেয়া হলো ( অনুবাদক- কোয়েস আলী ) –

প্রশ্নঃ
আসসালামুয়ালাইকুম। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন যে, ইব্রাহিম মুর্তি ভেঙে মানুষকে এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন যে মুর্তির কোন শক্তি নেই। কোরআনের আরেক জায়গায় ইব্রাহিম প্রবর্তিত ধর্মকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এখন, হিন্দু দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের কি মুর্তি ভাঙা বাধ্যতামূলক? এতে কি ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো এবং সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয়ে যাবে না? ইসলামিক দেশে হিন্দু মন্দির স্থাপন করা কি জায়েজ?
উত্তরঃ
ইসলামে মুর্তি ভাঙার নির্দেশনা বিষয়ে যে তথ্য আমরা পাই, তার মধ্যে একটি হাদীস- আমির ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত,যে তিনি নবীকে জিজ্ঞাসা করলেন,”আল্লাহ আপনাকে কি নির্দেশ প্রেরণ করেছেন?” নবী বললেন,”তিনি আমাকে সংহতি বজায় রাখতে পাঠালেন ও মুর্তি ভাঙতে বলেছেন, যাতে আল্লাহর সমকক্ষ কোনকিছুই না থাকতে পারে।“(মুসলিম)
আবার আবু আলা হায়াজ আল আসাদী বলেন, “আলী ইবনে আবু তালিব বললেন, নবী আমাকে যে কাজে পাঠিয়েছিলেন,তোমাকেও সে কাজে পাঠাতে পারি কি-কোন মুর্তি আস্ত রাখবে না, যতক্ষন পর্যন্ত সেগুলো ধংসস্তুপ হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই উচু ধ্বংসস্তুপ সমতল ভূমিতে পরিণত হয়।(মুসলিম)
যাইহোক, এখন মুসলিমদের জন্য এটা সীমিত করা হয়েছে, যাতে তারা বড় ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারে। সেরা উদাহরণ হচ্ছে, নবী সাঃ আল্লাহর ঘরে নিয়মিত যেতেন ও তাওয়াফ করতেন। সেখানে চারপাশের ৩৬০ ডিগ্রি জুড়ে নানা মুর্তি ছিল, কিন্তু তিনি মক্কা বিজয়ের আগে সেগুলোর কোন ক্ষতি করেন নি এবং এরপর যখন মুসলিমরা শক্তিশালী হল এবং বহু ঈশ্বরবাদীরা দুর্বল হল, তখন নবী সাঃ এক ঝটকায় মুর্তিগুলো ভেঙে দিলেন ও বললেন,”সত্য উন্মোচিত হয়েছে, মিথ্যা দূর হয়েছে।“ ইহা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে।
নবী চারপাশকে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতেন এবং আদর্শগত দিকের চেয়ে কোন কাজে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাকে বেশী গুরুত্ব দিতেন। আয়েশা বর্ণিত হাদীস হতে আমরা পাই- ‘আমি নবীকে জিজ্ঞেস করলাম, আল হিজর (কাবা সংলগ্ন অর্ধচন্দ্রাকৃতির দেয়াল ঘেরা স্থান) কি আল্লাহর ঘরের সাথে সংযুক্ত?’ নবী বললেন,’হ্যা’। আমি বললাম, ‘তবে আল্লাহ একে ঘরের সাথে কেন সংযুক্ত করেন নি?’ নবী বললেন,’তোমার লোকেদের যথেষ্ট অর্থ ছিল না”। আমি বললাম, দরজার পাড় এত উচু কেন?’ নবী বললেন,’তোমার লোকেরা এটা করেছে, যাতে তারা কাউকে কাউকে এখানে ঢুকতে দিতে পারে, কাউকে কাউকে না দিতে পারে। তোমার লোকেরা ইসলামপূর্ব সময়ের ন্যায় অজ্ঞ/মূর্খ ছিল। তাই আমি চিন্তিত ছিলাম যে আমি যদি হিজরকে কাবার সাথে যুক্ত করি ও দরজা ভেঙে মাটির সমান করে দিই, তবে তারা আমাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
এখন ইব্রাহিম নবী যা করেছেন, তার সাথে আমাদের বক্তব্য সাংঘর্ষিক না। কেননা, তিনি সক্ষমতা অর্জনের পরেই কাজটা করেছিলেন এবং ক্ষতি থেকে দূরে ছিলেন। ইবনে আসুর বর্ণণা করেন-“আল্লাহর কসম, যখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করব।”
তিনি শর্ত দিলেন যে, মুর্তি ধ্বংসের কাজটা তখনই করতে হবে, যখন সেটার সামর্থ্য আপনার হবে।
এটা দিয়ে প্রমানিত হয় যে, খারাপকে বদলাবার ব্যাপারে নবীর দৃঢ় মনোভাব ছিল কারণ নিজ হাতে মুর্তি ভাঙার উদয়োগ তার দৃঢ় ইচ্ছার বিষয়টি নিশ্চিত করে। কিন্তু মুর্তি পূজারীদের উপস্থিতিতে তিনি সেটা করতে পারতেন না। কারণ, এর ফলে সেই প্রচেষ্টা ব্যার্থ হতে পারে। খারাপকে বদলাবার মানে হল, যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা ও নিজ হাতে ধ্বংস করা। সেটা তখনই সম্ভব, যখন আপনার সামর্থ্য হবে।
সবশেষে, মুসলিম দেশে কোন অমুসলিম মন্দির স্থাপন কিংবা কোন মুসলিম দেশকে করতে দেয়া, মুসলমানের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। হযরত উমরের ইসলামিক শাসনের অধীনে অমুসলিমদের নিরাপত্তা দিয়ে শর্ত দিয়েছিলেন, ’ আমরা আমাদের নগরে কোন চার্চ তৈরী করতে দেব না”

সেইসাথে, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বর্তমান সময়ে ইসলামী শারীয়া সম্পর্কে সবচাইতে বড় পণ্ডিতদের মধ্যে একজন মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ সৌদি আরবের একজন সালাফি স্কলার, যিনি ইসলামকিউএ.ইনফো ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচিত- যা সালাফি মানহাযের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে। আল জাজিরা এবং সৌদি সরকার সহ অসংখ্য জায়গাতেই তার ব্যাখ্যা রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তার দ্বারা পরিচালিত ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে কী বলা, তা আগে জেনে নিই। [32]

Obligation to destroy idols
Question
Is it obligatory to destroy statues in Islam, even if they are part of the legacy of human civilization? Why is it that when the Sahaabah conquered other lands and saw statues there they did not destroy them?.
Answer
Praise be to Allah.
The evidence of sharee’ah indicates that it is obligatory to destroy idols, for example:
1 – Muslim (969) narrated that Abu’l-Hayaaj al-Asadi said: ‘Ali ibn Abi Taalib said to me: “Shall I not send you with the same instructions as the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) sent me? ‘Do not leave any image without defacing it or any built-up grave without leveling it.’”
2 – Muslim (832) narrated from ‘Urwah ibn ‘Abasah that he said to the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him): “With what were you sent?” He said, “I was sent to uphold the ties of kinship, to break the idols, and so that Allaah would be worshipped alone with no partner or associate.”
The obligation to destroy them is even stronger if they are worshipped instead of Allaah.
3 – al-Bukhaari (3020) and Muslim (2476) narrated that Jareer ibn ‘Abd-Allaah al-Bajali said: The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said to me: “O Jareer, will you not relieve me of Dhu’l-Khalsah?” That was a house (in Yemen) belonging to the (tribe of) Khath’am, which was called Ka’bat al-Yamaaniyyah. I set out with one hundred and fifty horsemen. I used not to sit firm on horses and I mentioned that to the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him). He struck me on my chest with his hand and said, ‘O Allaah! Make him firm and make him one who guides others and is guided on the right path.’ ” So Jareer went and burned it with fire, then Jareer sent a man called Abu Artaat to the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him). He said, “I did not come to you until we had left it like a scabby camel.” Then the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) blessed the horses of (the tribe of) Ahmas and their men five times.
Al-Haafiz Ibn Hajar said:
This hadeeth indicates that it is prescribed to remove things that may tempt or confuse the people, whether they are buildings, people, animals or inanimate objects.
4 – The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) sent Khaalid ibn al-Waleed (may Allaah be pleased with him) on a campaign to destroy al-‘Uzza.
5 – and he sent Sa’d ibn Zayd al-Ashhali (may Allaah be pleased with him) on a campaign to destroy Manaat.
6 – And he sent ‘Amr ibn al-‘Aas (may Allaah be pleased with him) on a campaign to destroy Suwaa’. All of that happened after the Conquest of Makkah.
Al-Bidaayah wa’l-Nihaayah, 4/712. 776. 5/83; al-Seerah al-Nabawiyyah by Dr. ‘Ali al-Salaabi, 2/1186.
Al-Nawawi said in Sharh Muslim when discussing the issue of image-making:
They were unanimously agreed that whatever casts a shadow is not allowed and must be changed.
Images that cast a shadow are three-dimensional images like these statues.
With regard to what is said about the Sahaabah (may Allaah be pleased with them) not destroying idols in the conquered lands, this is merely conjecture. The companions of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) would not have left idols and statues alone, especially since they were worshipped at that time.
If it is asked, how come the Sahaabah left alone the ancient idols of the Pharaohs and Phoenicians? The answer is that these idols fall into one of three categories:
1 – These idols may have been in remote places that the Sahaabah did not reach; when the Sahaabah conquered Egypt, for example, that does not mean that they reached every part of the land.
2 – These idols may not have been visible, rather they may have been inside Pharaonic buildings etc. The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) told us to hasten when passing through the abodes of the wrongdoers and those who had been punished, and he forbade entering such places. In al-Saheehayn it is says: “Do not enter upon those who have been punished unless you are weeping, lest there befall you something like that which befall them.” He (peace and blessings of Allaah be upon him) said that when he passed by ashaab al-hijr (the dwellers of the rocky tract – see al-Hijr 15:80), in the land of Thamood, the people of Saalih (peace be upon him).
According to another report narrated in al-Saheehayn, “If you are not weeping, then do not enter upon them, lest there befall you something like that which befall them.”
What we think is that if the companions of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) saw a temple or building belonging of these people, they did not enter it or even look at what was inside it.
This will dispel any confusion about why the Sahaabah did not see the Pyramids or what is inside them. There is also the possibility that their doors and entrances were covered with sand at that time.
3 – Many of these idols that are visible nowadays were covered and hidden, and have only been discovered recently, or they have been brought from remote places that the companions of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) did not reach.
Al-Zarkali was asked about the Pyramids and the Sphinx etc: Did the Sahaabah who entered Egypt see them?
He said: They were mostly covered with sand, especially the Sphinx.
Shibh Jazeerat al-‘Arab, 4/1188
Then even if we assume that there was a statue that was visible and not hidden, then we still have to prove that the Sahaabah saw it and were able to destroy it.
The fact of the matter is that the Sahaabah (may Allaah be pleased with them) would not have been able to destroy some of these statues. It took twenty days to destroy some of these statues even with tools, equipment, and explosives etc that were not available to the Sahaabah at all.
This is indicated by what Ibn Khuldoon said in al-Muqaddimah (p. 383), that the caliph al-Rasheed was unable to destroy the estrade of Chosroes. He started to do that, and he gathered men and tools, and burned it with fire, and poured vinegar on it, but he was unable to do it. And the caliph al-Ma’moon wanted to destroy the Pyramids in Egypt and he gathered workers but he could not do it.
With regard to the excuse that these statues are part of the legacy of mankind, no attention should be paid to such words. Al-Laat, al-‘Uzaa, Hubal, Manaat and other idols were also a legacy for those who worshipped them among Quraysh and the Arabs.
This is a legacy, but it is a haraam legacy which should be uprooted. When the command comes from Allaah and His Messenger, then the believer must hasten to obey, and the command of Allaah and His Messenger cannot be rejected on the grounds of this flimsy excuse. Allaah says (interpretation of the meaning):
“The only saying of the faithful believers, when they are called to Allaah (His Words, the Qur’aan) and His Messenger, to judge between them, is that they say: “We hear and we obey.” And such are the successful (who will live forever in Paradise)”
(al-Noor 24:51)
We ask Allaah to help the Muslims to do that which He loves and which pleased Him.
And Allaah knows best.

এই ওয়েবসাইটে বাঙলা অনুবাদও দেয়া রয়েছে- [33]

মূর্তি ভাঙ্গার আবশ্যকতা
প্রশ্ন
ইসলামে প্রতিকৃতি ভাঙ্গা কি আবশ্যক; এমনকি সেটা যদি মানব ঐতিহ্য ও সভ্যতার ঐতিহ্য হয় তবুও? সাহাবায়ে কেরাম যখন বিভিন্ন দেশ জয় করলেন তখন তারা বিজিত দেশগুলোতে প্রতিকৃতিগুলো দেখা সত্ত্বেও সেগুলো ভাঙ্গেননি কেন?
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
শরিয়তের দলিলগুলো মূর্তি ভাঙ্গা আবশ্যক হওয়ার সপক্ষে প্রমাণ বহন করে। এমন দলিলগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১। আবুল হাইয়্যাজ আল-আসাদি (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, আলী বিন আবু তালেব (রাঃ) আমাকে বললেন: “আমি কি তোমাকে সে কাজে পাঠাব না; যে কাজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তুমি যত প্রতিকৃতি পাবে সেগুলোকে নষ্ট করবে এবং যত উঁচু কবর পাবে সেগুলোকে সমান করে দিবে।”(সহিহ মুসলিম (৯৬৯))
২। আমর বিন আবাসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন: “আপনি কী নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন? তিনি বললেন: ‘আমি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, মূতি ভাঙ্গা এবং আল্লাহ্‌র এককত্ব প্রতিষ্ঠা ও তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করা নিয়ে’ প্রেরিত হয়েছি।”(সহিহ মুসলিম (৮৩২))
মূর্তি ভাঙ্গার আবশ্যকতা আরও তাগিদপূর্ণ হয় যখন আল্লাহ্‌র বদলে সে সব মূর্তির পূজা করা হয়।
৩। জারীর বিন আব্দুল্লাহ্‌ আল-বাজালি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন: হে জারীর! তুমি আমাকে যুল খালাসা (এটি খাছআম গোত্রের একটি ঘর যাকে ইয়ামেনী কাবা ডাকা হত) থেকে প্রশান্তি দিতে পার না? তিনি বলেন: তখন আমি দেড়শ অশ্বারোহী নিয়ে অভিযানের প্রস্তুতি নিলাম। আমি আমার ঘোড়ার উপর স্থির থাকতে পারতাম না। এ বিষয়টি আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উল্লেখ করলাম। তখন তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন এবং বললেন: اللهم ثبته واجعله هاديا مهديا (হে আল্লাহ্! তাকে স্থির রাখুন এবং পথপ্রদর্শক ও সুপথপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন।) বর্ণনাকারী বলেন: জারীর (রাঃ) রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং গিয়ে সে কাবাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য আমাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে পাঠালেন; যার কুনিয়ত ছিল আবু আরতা। সেই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন: আমরা সেই মন্দিরটিকে এমন অবস্থায় রেখে আপনার কাছে এসেছি যেন সেটি রোগের কারণে আলকাতরা দেয়া (কালো) উট। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহমাস গোত্রের ঘোড়া ও বীরপুরুষদের জন্য পাঁচবার বরকতের দোয়া করলেন।”(সহিহ বুখারী (৩০২০) ও সহিহ মুসলিম (২৪৭৬))
ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
এ হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে: যে জিনিস দ্বারা মানুষ ফিতনাগ্রস্ত হয় সেটি দূর করা শরয়ি বিধান; হোক সেটি কোন ভবন বা অন্য কিছু; যেমন- মানুষ, প্রাণী বা ঝড় পদার্থ।(সমাপ্ত)
৪। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর নেতৃত্বে উজ্জা নামক মূর্তিকে ধ্বংস করার জন্য অভিযান পাঠিয়েছিলেন।
৫। তিনি সাদ বিন যায়েদ আল-আশহালি (রাঃ) এর নেতৃত্বে মানাত নামক মূর্তিকে ধ্বংস করার জন্য অভিযান পাঠিয়েছেন।
৬। তিনি আমর বিন আ’স (রাঃ) এর নেতৃত্বে সুআ’ নামক মূর্তিটি ধ্বংসের জন্য অভিযান পাঠিয়েছেন। এ সবগুলো অভিযান হয়েছে মক্কা বিজয়ের পর।
(‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ (৪/৭১২, ৭৭৬, ৫/৮৩) এবং ড. আলী সাল্লাবীর রচিত ‘আস-সিরাতুন নাবাওয়িয়্যাহ’ (২/১১৮৬))
ইমাম নববী ‘শারহে মুসলিম’ এ تصوير (প্রতিকৃতি তৈরী, ছবি অংকন/নির্মাণ) সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন: “আলেমগণ ইজমা করেছেন যে, যেটার ছায়া আছে এমন ছবি তৈরী করা নিষিদ্ধ এবং এটি বিকৃত করা আবশ্যক।”(সমাপ্ত)
যে ছবিগুলোর ছায়া হয় সেগুলো তো এই মূর্তিগুলোর মত দেহের অবকাঠামোবিশিষ্ট ছবিগুলো।
আর সাহাবায়ে কেরাম বিজিত দেশসমূহে প্রতিমাগুলো না ভাঙ্গার যে কথা বলা হয় সেটি নিছক ভিত্তিহীন ধারণা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীবর্গ মূর্তি ও প্রতিমা রেখে দেয়ার কথা নয়। বিশেষতঃ যেহেতু ঐ যামানায় এগুলোর পূজা করা হত।
যদি বলা হয়: তাহলে এই ফেরাউনদের প্রতিকৃতি, ফিনিকীনদের প্রতিকৃতি কিংবা অন্যান্য প্রতিকৃতিগুলো বিজয়ী সাহাবীগণ কিভাবে রেখে দিলেন?
জবাব হল: এই মূর্তিগুলোর ব্যাপারে তিনটি সম্ভাবনা রয়েছে:
এক. এ মূর্তিগুলো এত দূরবর্তী স্থানে ছিল যে, সাহাবায়ে কেরাম সে সব স্থানে পৌঁছেননি। উদাহরণস্বরূপ সাহাবীদের মিশর জয় করার মানে এটা নয় যে, তারা মিশরের সকল স্থানে পৌঁছেছেন।
দুই. কিংবা সেই মূর্তিগুলো দৃশ্যমান ছিল না। বরং সেগুলো ফেরাউনদের ও অন্যদের বাসাবাড়ীর অভ্যন্তরে ছিল। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল জালিম ও শাস্তিপ্রাপ্তদের বাসস্থান অতিক্রমকালে দ্রুত গমন করা। বরং ঐ সমস্ত স্থানে প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে এসেছে যে, “তোমরা শাস্তিপ্রাপ্তদের এলাকায় প্রবেশ করলে কেবল ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ করবে। যেন তাদেরকে যা পাকড়াও করেছে তোমাদেরকে সেটা পাকড়াও না করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরবাসীদের এলাকা অতিক্রম করাকালে এ কথা বলেছেন। যেটা ছিল হুদ আলাইহিস সালামের কওম ছামুদ সম্প্রদায়ের বাসস্থান।
সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমের অপর এক রেওয়ায়েতে আছে: “যদি তোমাদের কান্না না আসে তাহলে এদের গৃহে প্রবেশ করো না; যেন তাদেরকে যা পাকড়াও করেছে তোমাদেরকে সেটা পাকড়াও না করে।”
সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে যে ধারণা রাখা যায় সেটা হল তাঁরা যদি এদের মন্দির বা বাড়ীঘর দেখেও থাকেন তারা সেগুলোতে প্রবেশ করেননি এবং এগুলোর অভ্যন্তরে যা রয়েছে সেসব তারা দেখেননি।
এর মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক পিরামিড এবং এর মধ্যে যা কিছু ছিল সেগুলো ধ্বংস না করার যে আপত্তি আসতে পারে সেটার জবাব হয়ে যায়। তবে এর সাথে এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, সে যামানায় পিরামিডের প্রবেশপথগুলো বালির স্তুপ দিয়ে ঢাকা ছিল।
তিন. বর্তমানে দৃশ্যমান মূর্তিগুলো তখন বালিতে ঢাকা ছিল, অদৃশ্য ছিল কিংবা এগুলো নব আবিষ্কৃত কিংবা এগুলোকে অনেক দূরবর্তী স্থান থেকে নিয়ে আসা হয়েছে; যে স্থানগুলোতে সাহাবায়ে কেরাম পৌঁছেননি।
ইতিহাসবিদ যিরিকলিকে পিরামিড ও আবুল হুল (একটি মূর্তির নাম) ইত্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, যে সকল সাহাবী মিশর প্রবেশ করেছেন তারা কি এগুলোকে দেখেছেন? জবাবে তিনি বলেন: এ মূর্তিগুলোর অধিকাংশই ছিল বালিতে ঢাকা। বিশেষতঃ আবুল হুল।(শিবহু জাযিরাতিল আরব (৪/১১৮৮))
যদি ধরে নেয়া হয় যে, কোন একটি মূর্তি দৃশ্যমান ছিল; বালিতে ঢাকা ছিল না; সেক্ষেত্রেও সাহাবীরা ঐ মূর্তিটিকে দেখেছেন এবং তারা ঐ মূর্তিটি ভাঙ্গতে সক্ষম ছিলেন এটা সাব্যস্ত হওয়া আবশ্যক।
বাস্তবতা হচ্ছে কোন কোন মূর্তি ধ্বংস করতে সাহাবায়ে কেরাম অক্ষম ছিলেন। কেননা এ ধরণের কোন কোন মূর্তি ভাঙ্গতে মেশিনারি, যন্ত্রপাতি, বিস্ফোরক ও লোকবল থাকা সত্ত্বেও বিশদিন সময় লেগেছে; যেগুলো সাহাবীদের যামানায় ছিল না।
সাহাবীরা যে এগুলো ভাঙ্গতে অক্ষম ছিলেন এর প্রমাণ হল যা ইবনে খালদুন তাঁর ‘মুকাদ্দিমা’-তে (পৃষ্ঠা-৩৮৩) উল্লেখ করেছেন যে, একবার খলিফা আর-রশিদ পারস্যের বাদশার প্রাসাদ ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি সেটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করে দেন এবং এর লক্ষ্যে লোকবল জমায়েত করেন, কুঠার সংগ্রহ করেন, প্রাসাদটিকে আগুনে উত্তপ্ত করেন, এর উপরে শির্কা ঢালেন। কিন্তু অবশেষে তিনি ব্যর্থ হন। এবং খলিফা মামুন মিশরের পিরামিডগুলো ভাঙ্গার লক্ষ্যে হাতি জড়ো করেন। কিন্তু তিনিও সক্ষম হননি।
আর মূর্তিগুলো না ভাঙ্গার পক্ষে এ কথা বলে কারণ দর্শানো যে, এ মূর্তিগুলো মানব ঐতিহ্য- এমন কথার প্রতি দৃষ্টিপাতের সুযোগ নাই। কেননা লাত, উজ্জা, হুবাল, মানাত ও অন্যান্য মূর্তিগুলোর যারা পূজা করত কুরাইশরা কিংবা আরব উপদ্বীপের অন্যান্য লোকেরা তাদের নিকট এগুলো তো মানব ঐতিহ্যই ছিল।
এগুলো ঐতিহ্য ঠিকই; কিন্তু হারাম ঐতিহ্য যা ধ্বংস করা ওয়াজিব। যখন আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ এসে যায় তখন একজন মুমিন দেরী না করে সে নির্দেশ পালন করে। এ সমস্ত দুর্বল যুক্তি দিয়ে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আদেশকে প্রত্যাখ্যান করে না। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “রাসূল তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবেন, এই উদ্দেশ্য যখন তাদেরকে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয় তখন মুমিনদের কথা হয় এটাই: তারা বলে আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। আর তারাই সফলকাম।”(সূরা নূর, আয়াত: ৫১)
আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন সকল মুসলিমকে তিনি যা পছন্দ করেন ও যেটার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট তা পালন করার তাওফিক দেন।
আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

ইসলামে আক্রমণাত্মক জিহাদ

একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, ইসলামে আসলেই এরকম আক্রমণাত্মক জিহাদ এবং কাফের হত্যার বিধান আছে কিনা। নাকি এগুলো গুটিকয়েক উগ্রবাদী লোকের অপরাধ। তাই আসুন নবী মুহাম্মদের কয়েকটি বিখ্যাত হাদিস পড়ে নেয়া যাক, সেই সাথে সীরাত এবং কোরআনের আয়াত সমূহ, যেখানে কোনরকম লজ্জাশরম না করেই পৃথিবীর সর্বত্র তরবারির মাধ্যমে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোরআন এবং হাদিসের বহুস্থানেই অমুসলিম কাফের অঞ্চলগুলোতে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তারা ইসলাম কবুল না করলে নতি স্বীকার করে তাদের জীবনের মূল্য হিসেবে তাদের ওপর অবমাননাকর জিযিয়া কর আরোপের কথা বলা হয়েছে, সেটিতেও সম্মত না হলে তাদের আক্রমণ করে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সব অঞ্চলের নারী ও শিশুদের মুসলিমরা দাস হিসেবে গ্রহণও করতে পারবে, আবার বিক্রিও করে দিতে পারবে। এই বিষয়টিই আমরা বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে সরাসরি প্রমাণ করবো।

ইসলাম গ্রহণে জোরজবরদস্তি

ইসলাম সরাসরিই জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে, নতুবা অবমাননাকর জিযিয়া কর আরোপ করে। অনেকেই দাবী করেন যে, ইসলামে যার যার দ্বীন তার তার এরকম কথা বলা রয়েছে, অথবা ইসলামে কোন জোর জবরদস্তি নেই এরকম আদেশ দেয়া হয়েছে! এই বিধানগুলোতে আসলেই কী বলা হয়েছে, আসুন সরাসরি তাফসীর গ্রন্থগুলো থেকে কুরআনের এই আয়াতটির শানে নুজুল এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা পড়ে নিই। ইসলামে জোর জবরদস্তি নেই, এরূপ বিবরণ সংবলিত আয়াতটি হচ্ছে সূরা বাকারার ২৫৬ নাম্বার আয়াত, যা কোরআনেরই সূরা তাওবার ৫ নং ও ৭৩ নং আয়াত দ্বারা মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিখ্যাত গ্রন্থ আহকামুল কোরআনে [34]

আল্লাহর কথা,
দ্বীনে কোন জোর প্রয়োগ নেই। হেদায়েতের পথ গুমরাহী থেকে আলাদা স্পষ্ট প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।
( সূরা বাকারাঃ ২৫৬ )
দহাক, সুদ্দী, সুলায়মান ইবনে মৃসা বলেছেন, এই আয়াতটি মনসূখ হয়ে গেছে এ আয়াতটি দ্বারাঃ
হে নবী! তুমি কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর। (সূরা তওবাঃ ৭৩)
এবং এ আয়াতটি দ্বারাঃ
অতএব তোমরা মুশরিকদের হত্যা কর। (সূরা আত্-তওবাঃ ৫)

আল-হাসান ও কাতাদা বলেছেন, ‘দ্বীনে জোর প্রয়োগ নেই’ কথাটি বিশেষভাবে সেই আহলে কিতাব লোকদের বেলায়, যারা জিযিয়া দিতে প্রস্তুত হবে। আরবের সাধারণ মুশরিকদের বেলায় এ কথা নয়। কেননা তারা বশ্যতা স্বীকার করে জিযিয়া দিতে রাজী হয়নি। তাদের নিকট থেকে হয় ইসলাম কবুল নিতে হবে, না হয় তরবারির আঘাত তাদের উপর পড়বে।
এ পর্যায়ে এ – ও বলা হয়েছে যে , উক্ত আয়াতের অর্থ হল, যুদ্ধের পরে যারা ইসলাম কবুল করেছে তাদের সম্পর্কে বল না যে, জোর – জবরদস্তির ফলে তারা ইসলাম কবুল করেছে ।
আবু বকর বলেছেনঃ দ্বীনে জোর প্রয়োগের অবকাশ নেই। এটি সংবাদ দানরূপে বলা কথা। কিন্তু মূলত একটি আদেশ। এটি সম্ভব যে , আয়াতটি মুশরিকদের বিরুদ্ধে করার আদেশ নাযিল হওয়ার পূর্বে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল। ফলে তখন সে কথা সব কাফির সম্পর্কেই প্রয়োগীয় ছিল। যেমন আল্লাহর এই কথাটিঃ
প্রতিরোধ কর সেই পন্থায় যা অতীব উত্তম। তাহলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা আছে, সে সহসাই অতীব উষ্ণ বন্ধুতে পরিণত হবে ।
( সূরা হা-মিম-আস সিজদাঃ ৩৪ )
যেমন আল্লাহর কথাঃ
এবং যা অতীব উত্তম পন্থা, তদ্বারা বিরোধীদের সাথে মুকাবিলা কর ।
( সূরা নহলঃ ১২৫ )
আল্লাহর কথাঃযখন তাদেরকে মূর্খ লোকেরা সম্বোধন করে , তখন তারা বসে সালাম।
( সূরা ফুরকানঃ ৬৩ )
ইসলামের প্রথম দিকে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল। শেষ পর্যন্ত কাফিরদের প্রতি ইসলাম পেশ করার কাজটি যখন সম্পূর্ণ হয়ে গেল, নবীর সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হল, তারপরও যখন তারা শত্রুতা করতে থাকল, তখন মুসলমানদেরকে নির্দেশ দেয়া হল তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে। তখন দ্বীনের জোর প্রয়োগ করার অবকাশ নেই ‘ কথাটি আরবের মুশরিকদের বেলায় মনসুখ হয়ে গেল। আয়াত নাযিল হলঃ
মুশরিকদের যেখানেই পাবে , হত্যা করবে। ( সূরা আত্-তওবাঃ ৫)
মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার হুকুম সম্বলিত আরও বহু আয়াত রয়েছে। তাই উক্ত আয়াতের প্রয়োগ কেবলমাত্র আহলি কিতাবের সাথে থেকে গেল অর্থাৎ দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে তাদের উপর কোন জোর প্রয়োগ করা যাবে না। আর আহলি কিতাবদেরকেও নিষ্কৃতি দেয়া হবে তখন, যদি তারা বশ্যতা স্বীকার করে জিযিয়া দিতে রাজী হয়। তখন তারা মুসলমানদের যিম্মী হয়ে থাকবে। ইসলামের শাসনাধীন হবে।
এ কথার হাদিসী প্রমাণ হচ্ছে , নবী করীম ( স ) নিজে আরবের মুশরিকদের নিকট থেকে ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে প্রস্তুত হন নি। তা নাহলে তাদের উপর তরবারি চালিয়েছেন।

অনেক মুসলিম আবার কোরআনের সূরা কাফিরুনের একটি আয়াত এনে দাবী করতে শুরু করেন যে, ইসলাম ধর্ম অন্যান্য ধর্মের মানুষের সাথে পাশাপাশি সহাবস্থান এবং সব ধর্মের মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকার কথা বলে! অথচ এই কথাটিও ডাহা মিথ্যা। ইসলাম কখনোই অন্যা ধর্মের মানুষের সাথে সহাবস্থান এবং সম্প্রীতির মাধ্যমে সকল মত পথ ও ধর্মকে মেনে নেয়ার শিক্ষা দেয় না। বরঞ্চ ইসলাম ছাড়া বাকি সব মত ও ধর্মকে উচ্ছেদ করার হুকুম দেয় সশস্ত্র জিহাদের মাধ্যমে। আসুন সেই আয়াতটি এবং তার তাফসীর পড়ে নিই [35] [36] [37]

তোমাদের পথ ও পন্থা তোমাদের জন্য (সে পথে চলার পরিণতি তোমাদেরকেই ভোগ করতে হবে) আর আমার জন্য আমার পথ (যে সত্য পথে চলার জন্য আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, এ পথ ছেড়ে আমি অন্য কোন পথ গ্রহণ করতে মোটেই প্রস্তুত নই)।
— Taisirul Quran
তোমাদের জন্য তোমাদের কর্মফল এবং আমার জন্য আমার কর্মফল।
— Sheikh Mujibur Rahman
‘তোমাদের জন্য তোমাদের দীন আর আমার জন্য আমার দীন।’
— Rawai Al-bayan
তোমাদের দীন তোমাদের, আর আমার দ্বীন আমার [১]।’
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

কোরআনে আক্রমণাত্মক জিহাদ

ইসলামে ধর্মে ধর্ম প্রসারের স্বার্থে অমুসলিম রাষ্ট্রে আক্রমণাত্মক জিহাদ পরিচালনা করা এবং অমুসলিমদের তরবারির জোরে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা সম্পূর্ণ বৈধ। কোরআনে এই বিষয়ে খুব পরিষ্কার বিধান উল্লেখ করা রয়েছে। আসুন আয়াতগুলোর কয়েকটি অনুবাদ পড়ি [38] [39]

SAHIH INTERNATIONAL
And fight them until there is no fitnah and (until) the religion, all of it, is for Allah . And if they cease – then indeed, Allah is Seeing of what they do.
MUHIUDDIN KHAN
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন।
কোরআন ৮/৩৯

MUHIUDDIN KHAN
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে।
SAHIH INTERNATIONAL
Fight those who do not believe in Allah or in the Last Day and who do not consider unlawful what Allah and His Messenger have made unlawful and who do not adopt the religion of truth from those who were given the Scripture – (fight) until they give the jizyah willingly while they are humbled.
কোরআন ৯/২৯

তাফসীরে আক্রমণাত্মক জিহাদ

ইসলামের জিহাদের মূল ধারণা বোঝার জন্য শুরুতেই সূরা আনফালের ৩৯ নম্বর আয়াতটির তাফসীর পড়ে নিই। এই তাফসীরটি আপনারা পাবেন তাফসীরে মাযহারী পঞ্চম খণ্ডে। হানাফী মাযহাবের একনিষ্ঠ অনুসারী বিশ্ববিখ্যাত সুন্নি ইসলামী পন্ডিত আল্লামা কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথীর লেখা এই তাফসীর কোরআনকে সঠিকভাবে বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ [40]

এবং তোমরা তাহাদিগের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে থাকিবে যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহের দ্বীন সামগ্রীকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যদি তাহারা বিরত হয় তবে তাহারা যাহা করে আল্লাহ্ তাহার সম্যক দ্রষ্টা।
যদি তাহারা মুখ ফিরায় তবে জানিয়া রাখ যে আল্লাহ্ই তোমাদিগের অভিভাবক এবং কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী ।
( সূরা আনফালঃ ৩৯, ৪০ )
প্রথমে বলা হয়েছে এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে থাকবে যতক্ষণ না ফেতনা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর দ্বীন সামগ্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ফেতনা অর্থ বিশৃংখলা। আর পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় বিশৃংখলা হচ্ছে শিরিক ( অংশীবাদিতা )। আলোচ্য বাক্যে ফেতনা অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কথার অর্থ-মুশরিকেরা যতক্ষণ পর্যন্ত শিরিক পরিত্যাগ না করবে, অথবা মুসলমানদের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে জিযিয়া দিতে সম্মত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংগ্রাম করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। আলোচ্য নির্দেশনাটিতে এ রকম বলা হয়নি যে, সকল অংশীবাদী ও অবিশ্বাসীকে যুদ্ধের মাধ্যমে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করতে হবে। এ রকম মনে করা হলে আলোচ্য আয়াতটি চলে যাবে জিযিয়া দিতে সম্মত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কোরো না। সুতরাং – এই আয়াতের নির্দেশনাটি দাঁড়াচ্ছে এ রকম অবিশ্বাসীরা ইসলাম গ্রহণ না করা পর্যন্ত অথবা জিযিয়া প্রদানের মাধ্যমে পূর্ণ অনুগত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এখানে দ্বীন প্রতিষ্ঠার অর্থ হবে শক্তি , বিজয় এবং একচ্ছত্র শাসন প্রতিষ্ঠা। ‘ দ্বীন ‘ শব্দের এ রকম অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে কামুস গ্রন্থে।
হজরত মেকদাদ বিন আসওয়াদ বর্ণনা করেছেন, রসুল স . বলেছেন, এক সময় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে পৃথিবীর সকল গৃহে। অবিশ্বাস ও অংশীবাদিতা হয়ে যাবে ইসলামের সম্পূর্ণ অধীন। সকল শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্য হবে কেবল আল্লাহর।
হজরত ইবনে ওমর কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, রসুল স . বলেছেন, আমাকে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ওই সময় পর্যন্ত সংগ্রাম করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-যতক্ষণ না তারা বলে, ‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ’ প্রতিষ্ঠা করে নামাজ এবং প্রদান করে জাকাত। যে এ রকম করবে আমার পক্ষ থেকে তার জীবন ও সম্পদ হয়ে যাবে সুরক্ষিত। আল্লাহ্ই তাদের অভ্যন্তরীণ হিসাব গ্রহণ করবেন ( তিনি বিচার করবেন , তারা তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্যে , না অন্তরের তাগিদে ইসলাম গ্রহণ করেছে )। বোখারী ও মুসলিম। হজরত আবু হোরায়রা থেকে ছয়জন সাহাবী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আল্লামা সুয়ুতী বলেছেন , হাদিসটি সুবিদিত ( মুতাওয়াতির )।

হাদিসে আক্রমণাত্মক জিহাদ

কোন রাখঢাক না রেখে নবী মুহাম্মদ খুব সরাসরিই বলেছেন যে, জান্নাত হচ্ছে তরবারীর ছায়াতলে। এর মাধ্যমে যে আসলে সর্বাত্মক জিহাদকে উৎসাহিত করা হয়েছে, সেটি খুব সহজেই বোধগম্য হয় [41] [42]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার
পরিচ্ছদঃ ৫৬/২২. জান্নাত হল তলোয়ারের ঝলকানির তলে।
মুগীরাহ ইবনু শু‘বা (রাঃ) বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জানিয়েছেন, আমাদের ও প্রতিপালকের পয়গাম। আমাদের মধ্যে যে শহীদ হলো সে জান্নাতে পৌঁছে গেল।
‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলেন, আমাদের শহীদগণ জান্নাতবাসী আর তাদের নিহতরা কি জাহান্নামবাসী নয়? আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, হ্যাঁ।
২৮১৮. ‘উমার ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ্ (রহ.)-এর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবূন নাযর (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) তাঁকে লিখেছিলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা জেনে রাখ, তরবারির ছায়া-তলেই জান্নাত।
উয়াইসী (রহ.) ইবনু আবূ যিনাদ (রহ.)-এর মাধ্যমে মূসা ইবনু ‘উকবাহ (রহ.) থেকে হাদীস বর্ণনার ব্যাপারে মু‘আবিয়াহ ইবনু ‘আমর (রহ.) আবূ ইসহাক (রহ.)-এর মাধ্যমে মূসা ইবনু ‘উকবাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের অনুসরণ করেছেন। (২৮৩৩, ২৯৬৬, ৩০২৪, ৭২৩৭) (মুসলিম ৩২/৬ হাঃ ১৭৪২, আহমাদ ১৯১৩৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬২০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হাদীস সম্ভার
২০/ (আল্লাহর পথে) জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ জিহাদ ওয়াজেব এবং তাতে সকাল-সন্ধ্যার মাহাত্ম্য
(১৯০০) ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি (কিয়ামতের পূর্বে) তরবারি-সহ প্রেরিত হয়েছি, যাতে শরীকবিহীনভাবে আল্লাহর ইবাদত হয়। আমার জীবিকা রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে। অপমান ও লাঞ্ছনা রাখা হয়েছে আমার আদেশের বিরোধীদের জন্য। আর যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।
(আহমাদ ৫১১৪-৫১১৫, ৫৬৬৭, শুআবুল ঈমান ৯৮, সহীহুল জামে’ ২৮৩১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)

একইসাথে, নবী মুহাম্মদ বলেছেন, নবীকে ভীতি বা সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বিজয়ী করা হয়েছে। এই হাদিসটির বঙ্গানুবাদ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাঙলা অনুবাদে অনেক রকম ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। আসুন এই হাদিসটি আগে বাঙলায় এবং পড়ে ইংরেজিতে পড়ে দেখি [43]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ৫৬/১২২. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তিঃ এক মাসের পথের দূরত্বে অবস্থিত শত্রুর মনেও আমার সম্পর্কে ভয়-ভীতি জাগরণের দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।
وَقَوْلِهِ جَلَّ وَعَزَّ )سَنُلْقِيْ فِيْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ كَفَرُوا الرُّعْبَ بِمَآ أَشْرَكُوْا بِاللهِ ( قَالَهُ جَابِرٌ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
মহান আল্লাহর তা‘আলার বাণীঃ আমি কাফিরদের অন্তরে ভীতি প্রবিষ্ট করব। যেহেতু তারা আল্লাহর শরীক করেছে। (আলে ইমরান ১৫১)
(এ প্রসঙ্গে) জাবির (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস উদ্ধৃত করেছেন
২৯৭৭. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে এবং শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, তখন পৃথিবীর ধনভান্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে দেয়া হয়েছে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো চলে গেছেন আর তোমরা ওগুলো বাহির করছ। (৬৯৯৮, ৭০১৩, ৭২৭৩) (মুসলিম ৫/৫ হাঃ ৫২৩, আহমাদ ৭৭৫৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৭৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৭৬৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

এবারে আসুন এই হাদিসটির ইংরেজি অনুবাদটি দেখি। নবী এখানে বলেছেন, I have been made victorious with terror। এর সঠিক বাঙলা অনুবাদ হয় আমাকে বিজয়ী করা হয়েছে সন্ত্রাসের দ্বারা। কিন্তু উপরে দেখুন, এর অনুবাদ কী করা হয়েছে!

Narrated Abu Huraira:
Allah’s Messenger (ﷺ) said, “I have been sent with the shortest expressions bearing the widest meanings, and I have been made victorious with terror (cast in the hearts of the enemy), and while I was sleeping, the keys of the treasures of the world were brought to me and put in my hand.” Abu Huraira added: Allah’s Messenger (ﷺ) has left the world and now you, people, are bringing out those treasures (i.e. the Prophet did not benefit by them).

ইসলাম ধর্মে কোন জোরজবরদস্তি নেই, কিংবা ইসলামে আক্রমণাত্মক জিহাদ নেই, শুধু রক্ষণাত্মক জিহাদ রয়েছে, এরকম যারা বলেন বা দাবী করেন, তারা কতটুকু সত্য বলেন সেটি পাঠকই বিবেচনা করে দেখবেন। এখন আমরা আরো কিছু হাদিস পর্যালোচনা করি। এই হাদিসটি সহিহ এবং তাহকীককৃত সহিহ [44]-

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
অধ্যায়ঃ ১৪/ কর, ফাই ও প্রশাসক
৩০০৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমরা মাসজিদে উপস্থিত ছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বেরিয়ে এসে বললেনঃ ইহুদীদের এলাকায় চলো। ‘আমরা তাঁর সাথে বের হয়ে সেখানে গিয়ে পৌঁছলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাদেরকে ডেকে বললেনঃ হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম কবূল করো শান্তিতে থাকবে। তারা বললো, হে আবুল কাসিম! আপনি পৌঁছে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আবার বললেনঃ তোমরা ইসলাম কবূল করো, নিরাপত্তা পাবে। তারা বললো, হে আবুল কাসিম! আপনি পৌঁছে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেনঃ এ দাওয়াত পৌঁছে দেয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিলো। তৃতীয় বারও তিনি একই কথার পুনরাবৃত্তি করে বললেনঃ জেনে রাখো! এ ভুখন্ডের মালিকানা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। আমি তোমাদের এ ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত করতে চাই। সুতরাং তোমরা কোনো জিনিস বিক্রি করতে সক্ষম হলে বিক্রি করো। অন্যথায় জেনে রাখো! এ ভূখন্ডের মালিক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

উপরের হাদিসটি পড়লে বুঝতে সমস্যা হয় না, ইসলাম ধর্মে জোরজবরদস্তির কোন সুযোগ নেই, এই বক্তব্যটি কতটা হাস্যকর এবং স্ববিরোধী। নবী মুহাম্মদ নিজেই ইহুদি গোত্রের কাছে গিয়ে হুমকি দিতেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করলে নিজ ভূমি থেকে ইহুদিদের উৎখাত করবেন বলে শাসাতেন! বিশ্বাসী পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, নিশ্চয়ই তারা কোন অন্যায় করেছিল, সেই কারণে নবী মুহাম্মদ শাস্তি হিসেবে এরকম করেছিলেন। কিন্তু কোন ইহুদি বা কয়েকজন ইহুদি কোন অন্যায় করলে, বা অন্যায্য কাজ করলে খুব সহজেই সেই ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতো। কিন্তু পুরো একটি গোত্রই কীভাবে অপরাধী হয়? এমনকি বৃদ্ধা, বাচ্চা, নারীরাও? কীভাবে সম্ভব?

একজন বা কয়েকজন ইহুদির দোষে যদি পুরো গোত্রকে শাস্তি পেতে হয়, তাহলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যেই অত্যাচার চলছে, তাদের বিতাড়িত করা হচ্ছে আপন ঘরবাড়ি থেকে, সেটিও তো ন্যায্যতা পেয়ে যায়। তাই না? আল কায়েদা আইসিসের মত কট্টর মুসলিমদের বোমাবাজি বা জঙ্গিবাদের কারণে যদি এখন সব মুসলিমকে এর জন্য দায়ী করা হয়, তাহলেও তো সেটি অন্যায় হবে, তাই না? যে অপরাধ করেছে দায় তো শুধু তার ওপর বর্তায়। অন্যের ওপর নয়। তাহলে ইহুদিদের পুরো গোত্র কীভাবে দায়ী হলো? এরপরেও যদি কেউ বলে ইসলাম ধর্মে জোরজবরদস্তির কোন সুযোগ নেই, এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে?

একইসাথে, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী বলেছেন যে, মানুষ যে পর্যন্ত না “আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” এই কথার স্বীকৃতি দিবে সেই পর্যন্ত আমি(নবী) তাদের বিরুদ্ধে কিতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি [45] [46]

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৮/ ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ১. যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি
২৬০৭। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যুর পর আবূ বকর (রাযিঃ) যখন খলীফা নির্বাচিত হন, তখন আরবের কিছু সংখ্যক লোক কাফির হয়ে যায়। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) আবূ বাকর (রাযিঃ)-কে বললেন, আপনি এদের বিরুদ্ধে কিভাবে অস্ত্ৰধারণ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যে পর্যন্ত না “আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” এই কথার স্বীকৃতি দিবে সেই পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। আর যে ব্যক্তি বললো, “আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” সে আমার থেকে তার মাল ও রক্ত (জীবন) নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের অধিকার সম্পর্কে ভিন্ন কথা। আর তাদের প্রকৃত হিসাব-নিকাশ রয়েছে আল্লাহ তা’আলার দায়িত্বে।
আবূ বকর (রাযিঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ নামায ও যাকাতের মধ্যে যে ব্যক্তি পার্থক্য করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। কেননা যাকাত সম্পদের হাক্ক। কেউ উটের একটি রশি দিতেও যদি অস্বীকার করে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দিত, আল্লাহর কসম! আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। তারপর উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি দেখতে পেলাম আল্লাহ যেন যুদ্ধের জন্য আবূ বাকরের অন্তর উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। অতঃপর আমি বুঝতে পারলাম যে, তার সিদ্ধান্তই যথার্থ।
সহীহঃ সহীহাহ (৪০৭), সহীহ আবূ দাউদ (১৩৯১-১৩৯৩), বুখারী ও মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। শু’আইব ইবনু আবী হামযা (রহঃ) যুহরী হতে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদিল্লাহ হতে, তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ)-এর সূত্রে একই রকম বর্ণনা করেছেন। এই হাদীস মামার-যুহরী হতে, তিনি আনাস (রাযিঃ) হতে, তিনি আবূ বাকর (রাযিঃ) হতে এই সূত্রে ইমরান আল-কাত্তান বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনাটি ভুল। ‘ইমরানের ব্যাপারে মা’মার হতে বর্ণিত বর্ণনাতে বিরোধিতা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৮/ ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ২. আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে এবং নামায আদায় করবে
২৬০৮। আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ তা’আলার বান্দা ও তার রাসূল এবং আমাদের কিবলামুখী হয়ে নামায আদায় করবে, আমাদের যবেহকৃত পশুর গোশত খাবে এবং আমাদের মতো নামায আদায় করবে। তারা এগুলো করলে তাদের জান ও মালে হস্তক্ষেপ করা আমাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে। কিন্তু ইসলামের অধিকারের বিষয়টি ভিন্ন। মুসলিমদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা তারাও পাবে এবং মুসলিমদের উপর অর্পিত দায়-দায়িত্ব তাদের উপরও বর্তাবে।
সহীহঃ সহীহাহ (৩০৩) ও (১/১৫২), সহীহ আবূ দাউদ (২৩৭৪), বুখারী অনুরূপ।
মুআয ইবনু জাবাল ও আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। ইয়াহইয়া (রাহঃ) হুমাইদ হতে, তিনি আনাস (রাযিঃ)-এর সূত্রে একই রকম হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

নিচের হাদিসটি পড়ুন। ইসলামে কাফেরদের বাসভবনে অতর্কিত আক্রমণ সম্পূর্ণ বৈধ, একইসাথে তাদের বাড়িঘরে আক্রমণ করে তাদের নারী শিশুদের বন্দী করাও ইসলামে সম্পূর্ণ জায়েজ। এগুলো ইসলামের খুব পরিষ্কার বিধান, যদিও আমাদের দেশের মোল্লারা ওয়াজ মাহফিলে এসব হাদিস ভুলেও উচ্চারণ করেন না। কারণ এসব হাদিস বললে জঙ্গিবাদের দায়ে জেল জরিমানা হয়ে যাবে [47] [48]

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১. যে সকল বিধর্মীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা বৈধ
৪৩৭০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) … ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি’ (রহঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যুদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (নিয়ম) ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্থায় যে, তারা অপ্রস্তুত ছিল (তা জানতে পারেনি।) তাদের পশুদের পানি পান করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের যোদ্ধাদের (পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ) হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের (নারী শিশুদের) বন্দী করলেন। আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি বলেছেন) জুওয়ায়রিয়া অথবা তিনি নিশ্চিতরূপে ইবনাতুল হারিছ (হারিছ কন্যা) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই হাদীস আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই সেনাদলে ছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু ‘আউন (রহঃ)

শরহে মুসলিমে আক্রমণাত্মক জিহাদ

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান হচ্ছে জিহাদুত ত্বলাব বা আক্রমণাত্মক জিহাদের বিধান। এই বিধানটি তখনই প্রযোজ্য যখন মুসলিমদের শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকবে। সেনাবাহিনী থাকলে এবং অস্ত্রশস্ত্র থাকলে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে, কারণ কুফরি ইসলামের দৃষ্টিতে সবচাইতে বড় ফিতনা। এই বিষয়ে পরিষ্কার বিবরণ পাওয়া যায় সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকেও। শুধুমাত্র ইসলাম কবুল অথবা অপমানিত অবস্থায় নত হয়ে জিযিয়া প্রদানের মাধ্যমেই কাফের আহলে কিতাবীগণ জীবিত থাকতে পারবে। আর মুশরিকদের কাছ থেকে তো ইসলাম ভিন্ন আর কিছুই গ্রহণ করা হবে না, যার রেফারেন্স আগেই দেয়া হয়েছে [49]

চতুর্থ ধাপঃ মুসলমানগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরম্ভ না করিলেও সকল ধর্ম ও বর্ণের কাফিরদের বিরুদ্ধে প্রথমেই জিহাদ শুরু করিবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না তাহারা ইসলাম গ্রহণ করে কিংবা জিযিয়া (ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের উপর ধার্যকৃত কর) প্রদান না করে। আর ইহা দ্বারা আল্লাহ তা’আলার কালেমা সমুন্নত করা, দ্বীন ইসলামের মর্যাদা দান এবং কুফরের দাপট ধ্বংস করা উদ্দেশ্য। আর এই ধাপের কার্যক্রম হিজরী ৯ম সনে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাযি.)-এর যবানীতে এই ধাপের ঘোষণা দেওয়া হইয়াছিল। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা সূরা তাওবায় ইহার বিস্তারিত বিবরণ দিয়াছেন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, অনন্তর যখন হারাম মাসসমূহ অতীত হইয়া যাইবে তখন ঐ মুশরিকদেরকে তোমরা যেইখানেই পাও হত্যা কর এবং ধৃত কর আর অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাটির অবস্থানসমূহে তাহাদের লক্ষ্য করিয়া বসিয়া যাও। অতঃপর তাহারা যদি (কুফরী হইতে) তাওবা করিয়া লয় এবং নামায আদায় করিতে থাকে এবং যাকাত দিতে থাকে, তবে তাহাদের পথ ছাড়িয়া দাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা অতীব ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। -(সূরা তাওবা ৫)
সূরা তাওবার অপর আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, তোমরা যুদ্ধ কর ঐ সকল লোকদের বিরুদ্ধে যাহারা আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁহার রসূল যাহা হারাম করিয়া দিয়াছেন তাহা হারাম করে না আর গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম যতক্ষণ না তাহারা বশ্যতা স্বীকার করতঃ জিযিয়া (কর) প্রদানে স্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। -(সূরা তাওবা ২৯)
সূরায়ে আনফালে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেনঃ আর তোমরা তাহাদের সহিত লড়িতে থাক যদ্যাবধি তাহাদের মধ্য হইতে ফিতনা (শিরক) বিলুপ্ত হইয়া না যায় এবং দ্বীন যেন কেবল আল্লাহর জন্যই হয়। -(সূরা আনফাল ৩৯)

ধর্ম গ্রহণের হুমকি দেয়া চিঠি

নবী মুহাম্মদ তার জীবদ্দশাতে যাদের সাথে মুহাম্মদের কোনকালেই কোন রকম শত্রুতা ছিল না, এরকম বেশ কিছু অঞ্চলে চিঠি লিখে সেই সব অঞ্চলের শাসকদের ইসলাম গ্রহণের সরাসরি হুমকি দেন। চিঠিতে তিনি এটিও লেখেন যে, ইসলাম গ্রহণ না করলে সেই সব অঞ্চলে নবী তার দলবল নিয়ে আক্রমণ করবেন এবং সেইসব শাসকদের হত্যা করবেন। ভেবে দেখুন তো, আজকের দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যদি বাঙলাদেশের হাসিনাকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণের জন্য চিঠি লেখে, এবং হিন্দু ধর্ম গ্রহণ না করলে আক্রমণ করবেন বলে হুমকি দেন, তখন ব্যাপারটি কেমন হবে? এগুলো কী কোন সভ্য আচরণ, নাকি সরাসরি মাফিয়া নেতাদের মত গুণ্ডারাজ কায়েম করা? আসুন ওমানে পাঠানো নবী মুহাম্মদের একটি চিঠি পড়ি এবং চিঠিত ভাষা পর্যালোচনা করি [50]

‘… আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে জুলান্দা আযদীর দুই পুত্র জায়ফার ও আব্দের প্রতি। শান্তি বর্ষিত হৌক ঐ ব্যক্তির উপরে যিনি হেদায়াতের অনুসরণ করেন। অতঃপর আমি আপনাদের দু’জনকে ইসলামের দিকে আহবান জানাচ্ছি। আপনারা ইসলাম কবুল করুন, নিরাপদ থাকুন। আমি সমগ্র মানবজাতির প্রতি আল্লাহর রাসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি, যাতে আমি জীবিতদের সতর্ক করি এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। অতঃপর যদি আপনারা ইসলাম কবুল করেন, তবে আপনাদেরকেই আমি গবর্ণর নিযুক্ত করে দেব। আর যদি ইসলাম কবুলে অস্বীকার করেন, তাহ’লে আপনাদের রাজত্ব শেষ হয়ে যাবে। আমার ঘোড়া আপনাদের এলাকায় প্রবেশ করবে ও আমার নবুঅত আপনাদের রাজ্যে বিজয়ী হবে’।

ফিকাহশাস্ত্রে আক্রমণাত্মক জিহাদ

ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের জগতে, বিশেষতঃ হানাফি ফিকাহ্‌র পরিমণ্ডলে আল-হিদায়া একটি মৌলিক ও বুনিয়াদি গ্রন্থ। এক কথায় এ গ্রন্থকে হানাফী ফিকাহ্‌ শাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলা যায়। এই গ্রন্থে জিহাদ অধ্যায়ের অংশবিশেষ আসুন এবারে পড়ে নিই [51]

উপরের তথ্যসূত্রগুলো থেকে এটি পরিষ্কার যে, ইসলাম আক্রমণাত্মক জিহাদের মাধ্যমে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে অথবা অবমাননাকর জিযিয়া কর দিতে বাধ্য করে। সেগুলোতে সম্মত না হলে হত্যা অথবা দাসে পরিণত করার প্রক্রিয়া ইসলামের খুব পরিষ্কার বিধান। অবমাননাকর জিযিয়া কর বিষয়ে এখানে আলোচনা করলে লেখাটি দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায় সেই অংশটি বাদ দেয়া হচ্ছে। তবে আগ্রহী পাঠকগণ এই লেখাটি পড়তে পারেন। [52]

ইসলামে শিরককারী হত্যাযোগ্য

প্রখ্যাত বাংলাদেশের আলেম এবং ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রের অন্যতম পণ্ডিত ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়ার সম্পাদনায় প্রকাশিত মো আব্দুল কাদেরের বই বাংলাদেশে প্রচলিত শির্ক বিদ‘আত ও কুসংস্কার পর্যালোচনা গ্রন্থে পরিষ্কারভাবেই বলা আছে যে, শিকর হচ্ছে হত্যাযোগ্য অপরাধ। যারা শিরক করে, তাদের রক্ত মুসলিমদের জন্য হালাল [53]

যুদ্ধবন্দীদের প্রচুর রক্তপাত ঘটানো

এবারে আসুন ইসলামিক জিহাদের পরে অমুসলিম যুদ্ধবন্দীদের সাথে মুসলিমদের আচরণ কীরকম হবে, সে সম্পর্কে আসুন পড়ি ইবনে কাসীর থেকে [54]

তাফসীরঃ উল্লেখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ পাক কাফিরদের প্রতি তাঁহার ঘৃণা এবং তাহাদের অপকর্মের বর্ণনা দিয়া বলিতেছেন যে, ভূপৃষ্ঠে জীবকুলের মধ্যে বেঈমান কাফিরগণই হইল আল্লাহর নিকট অতি নিকৃষ্ট জীব। উহাদের মধ্যকার যাহাদের সাথে তুমি যখনই কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হও, তখনই উহারা সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে। যখন উহাদিগকে বিশ্বাস করিয়া আস্থা স্থাপন কর, তখন বিশ্বাস ভঙ্গ করিয়া তোমার আস্থা নষ্ট করিয়া ফেলে। উহারা আল্লাহকে আদৌ কোনরূপ ভয়ই করে না। নির্ভয় দাম্ভিকতার সহিত পাপাচারে লিপ্ত হয়। আলোচ্য আয়াতাংশের মর্ম হইলঃ তুমি যদি উহাদের যুদ্ধে পরাস্ত করিয়া বিজয় লাভ করিতে পার, তবে কঠোরভাবে বন্দী করিয়া জ্বালা-যন্ত্রণা দিবে। এই ব্যাখ্যা প্রদান করেন ইবন আব্বাস (রা)।
হাসান বসরী, যাহহাক, সুদ্দী, আতা খুরাসানী ও ইবন উআয়না (র) ইহার ব্যাখ্যায় বলেনঃ যুদ্ধে উহাদিগকে পরাস্ত করিতে পারিলে অতি কঠোরভাবে শাস্তি দিবে এবং নির্দয়ভাবে উহাদিগকে হত্যা করিবে যেন ইহাদের ছাড়া আরবের অন্যান্য শত্রুগণ এই শাস্তির কথা শুনিয়া ভীত হয় এবং নসীহত ও শিক্ষা গ্রহণ করে। তাহাদের মধ্যে লজ্জা ও অনুশোচনার সৃষ্টি হয়।

এই বিষয়ে কোরআনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়। বদর যুদ্ধের সময় একটি আয়াত নাজিল হয়, যেই আয়াতে খুব পরিষ্কারভাবে আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে দেন যে, যুদ্ধের পরে কাফের যুদ্ধবন্দীদের ওপর যথেষ্ট পরিমাণ হত্যাকাণ্ড এবং রক্তপাত ঘটানো না পর্যন্ত তাদেরকে মুক্তিপণের জন্য বন্দী করা নবীর জন্য জায়েজ নেই। অর্থাৎ আল্লাহ খুব পরিষ্কারভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন, যুদ্ধে যেসকল কাফের পরাজিত এবং বন্দী হবে, তাদের যথেষ্ট পরিমাণ রক্তপাত ঘটানো জরুরি! [55]

কোন নবীর সাথে যুদ্ধরত কাফিরদের মাঝে প্রচুর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তাদেরকে ভালোভাবে পর্যুদস্ত না করা পর্যন্ত নিজের কাছে বন্দী রাখা তাঁর জন্য উচিৎ হবে না। যেন তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চারিত হয় এবং তারা তাঁর সাথে দ্বিতীয়বার যুদ্ধ করতে না আসে। হে মু’মিনরা! তোমরা মূলতঃ বদরের কাফিরদেরকে বন্দী করে তাদের থেকে মুক্তিপণ নিতে চাও। অথচ আল্লাহ তা‘আলা আখিরাত চাচ্ছেন যা ধর্মের বিজয় ও তার পরাক্রমশীলতার মাধ্যমে হাসিল করা সম্ভব। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সত্তা, গুণাবলী ও ক্ষমতায় অপ্রতিদ্ব›দ্বী। তাঁকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। তেমনিভাবে তিনি তাঁর শরীয়ত প্রণয়নে ও তাক্বদীর নির্ধারণে অতি প্রজ্ঞাময়।
— Bengali Mokhtasar
কোন নাবীর জন্য এটা সঠিক কাজ নয় যে, দেশে (আল্লাহর দুশমনদেরকে) পুরোমাত্রায় পরাভূত না করা পর্যন্ত তার (হাতে) যুদ্ধ-বন্দী থাকবে। তোমরা দুনিয়ার স্বার্থ চাও আর আল্লাহ চান আখিরাত (এর সাফল্য), আল্লাহ প্রবল পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী।
— Taisirul Quran
কোন নাবীর পক্ষে তখন পর্যন্ত বন্দী (জীবিত) রাখা শোভা পায়না, যতক্ষণ পর্যন্ত ভূ-পৃষ্ঠ (দেশ) হতে শক্র বাহিনী নির্মূল না হয়, তোমরা দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সম্পদ কামনা করছ, অথচ আল্লাহ চান তোমাদের পরকালের কল্যাণ, আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
— Sheikh Mujibur Rahman
কোন নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, তার নিকট যুদ্ধবন্দি থাকবে (এবং পণের বিনিময়ে তিনি তাদেরকে মুক্ত করবেন) যতক্ষণ না তিনি যমীনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন। তোমরা দুনিয়ার সম্পদ কামনা করছ, অথচ আল্লাহ চাচ্ছেন আখিরাত। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।
— Rawai Al-bayan
কোনো নবীর জন্য সংগত নয় যে [১] তার নিকট যুদ্ধবন্দি থাকবে, যতক্ষণ না তিনি যমীনে (তাদের) রক্ত প্রবাহিত করেন [২]। তোমরা কামনা কর পার্থিব সম্পদ [৩] এবং আল্লাহ্‌ চান আখেরাত; আর আল্লাহ্‌ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এই আয়াতটির অনুবাদ তাফসীরে জালালাইন থেকে পড়ে নিই [56]

এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে আয়াতটির ব্যাখ্যা পড়ে দেখা যাক [57]

এবারে আসুন দেখি, ইসলামের বিধান অনুসারে যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করাটি উত্তম আমল নাকি তাদের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া উত্তম আমল সেটি [58]

গেরিলা যুদ্ধ নাকি অতর্কিত হামলা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর পাকবাহিনী হামলা চালায়। এমন অবস্থায় হামলা চালায় যে, আমাদের কারোর প্রস্তুতি নেয়ার কোন উপায় ছিল না। অপ্রস্তুত ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালানো সকল নৈতিকতার মানদণ্ডে অন্যায়, তার ওপর যদি যুক্ত হয় নারী ও শিশু হত্যা, তাহলে সেগুলো সরাসরি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

রাতের অন্ধকারে চুপিসারে কোন জানান না দিয়ে যারা আক্রমণ করে, তাদের আমরা ডাকাত বলি। একই উদাহরণ নবী মুহাম্মদের বাহিনীর মধ্যেও দেখতে পাওয়া যায়। মুমিন সমাজের মধ্যে অনেকেই একে গেরিলা যুদ্ধের সাথে তুলনা দিয়ে উদাহরণ হিসেবে বলে থাকেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা করেছিল। অথচ, এই কথাগুলো বলার সময় তারা যে বিষয়টি গোপন করে সেটি হচ্ছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বদাই পাকবাহিনীর কোন বেসামরিক পাকিস্তানের নাগরিক বা নারী অথবা শিশু যেন হতাহত না হয়, সেইদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখা হতো।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেরিলা আক্রমণ একটি স্বীকৃত যুদ্ধের কৌশল। কিন্তু এই স্বীকৃত আক্রমণের কৌশলের মধ্যেও নীতি বজায় রাখতে হয়। এমন নয় যে, গেরিলা আক্রমণ একটি বৈধ যুদ্ধকৌশল বলে যার যেমন খুশি রাতের অন্ধকারে অস্ত্রসহ ঢুকে ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষকে খুনোখুনী করে যেতে পারে। গেরিলা যুদ্ধ পরিচালিত হয় সাধারণত দুইটি যুদ্ধরত বাহিনীর মধ্যে, এবং লক্ষ্য রাখা হয় যে, কোন বেসামরিক জনগণ যেন এর কারণে হতাহত না হয়। কারণ গেরিলা আক্রমণ হয় হঠাৎ করে, কেউ প্রস্তুতি নেয়ার সময় পায় না। তাই এই ধরণের আক্রমণে নারী শিশু বা বেসামরিক জনগণের জানমালের যেন কোন ক্ষতি না হয়, তার দিকে লক্ষ্য রাখা বাধ্যতামূলক।

পৃথিবীর বেশিরভাগ গেরিলা যুদ্ধে অতর্কিত আক্রমণ করার সময় সবচাইতে বেশি নজর রাখা অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে, আক্রমণে যেন শুধুমাত্র সেনাসদস্যদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এই গেরিলা আক্রমণে কোন বেসামরিক মানুষ আহত বা নিহত হলে সেটি আর ন্যায়সঙ্গত আক্রমণ থাকে না। কোনটি গেরিলা যুদ্ধ, আর কোনটি স্রেফ ডাকাতি- ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্যাতন, তার পার্থক্য বোঝার জন্য এটি দেখাই যথেষ্ট যে, যদি যুদ্ধটিতে বেসামরিক জনগণকে হত্যা বা আহত করা হয়, তাদের জীবনের ওপর কোন হুমকি আসে, তাহলে সেটি স্রেফ ডাকাতি বা অন্যায্য হামলা। আর বেসামরিক জনগণকে বাইরে রেখে শুধুমাত্র অস্ত্রধারী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ হচ্ছে নৈতিক আক্রমণ। এটিকে তখন আর ডাকাতি বলা যায় না। আর ইসলামের এই আক্রমণগুলোতে নিরীহ নারী শিশুদের ক্ষয়ক্ষতি হতো। একদম ডাকাতদের মতই এই গুপ্ত অতর্কিত হামলাগুলো ছিল খুবই নৃশংস। রাতের অন্ধকারে তারা তরবারি নিয়ে কাফেরদের ঘরবাড়িতে ঝাঁপিয়ে পরতো, ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষ নারী শিশু কেউই রেহাই পেতো না। নবীকে এসে তারা জিজ্ঞেসও করতো যে, এরকম অবস্থায় রাতের অন্ধকারে বেপরোয়া অতর্কিত আক্রমণে নারী শিশুকে মারা যাবে কিনা। নবী বলে দিয়েছিলেন, রাতের অন্ধকারে না দেখে অনিচ্ছাকৃতভাবে মারলে এতে কোন দোষ নেই। যেসব নারী ও শিশুদের যুদ্ধের পরে জীবিত পাওয়া যেত, তাদের বন্দী করে দাস বানানো হতো, এটিও আন্তর্জাতিক আইনে একটি পরিষ্কার যুদ্ধাপরাধ। [47] [59] [60] [61] [62] !

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১. যে সকল বিধর্মীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা বৈধ
৪৩৭০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) … ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি’ (রহঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যুদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (নিয়ম) ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্থায় যে, তারা অপ্রস্তুত ছিল (তা জানতে পারেনি।) তাদের পশুদের পানি পান করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের যোদ্ধাদের (পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ) হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের (নারী শিশুদের) বন্দী করলেন। আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি বলেছেন) জুওয়ায়রিয়া অথবা তিনি নিশ্চিতরূপে ইবনাতুল হারিছ (হারিছ কন্যা) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই হাদীস আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই সেনাদলে ছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু ‘আউন (রহঃ)

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছদঃ ৯. রাতের অতর্কিত আক্রমনে অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই
৪৩৯৯। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া, সাঈদ ইবনু মনসুর ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) … সা’ব ইবনু জাছছামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুশরিকদের নারী ও শিশু সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যখন রাতের আধারে অতর্কিত আক্রমণ করা হয়, তখন তাদের নারী ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তারাও তাদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩৩। জিহাদ ও সফর‏
পরিচ্ছদঃ ৯. রাতের আকস্মিক হামলায় অনিচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশু হত্যায় দোষ নেই
৪৪৪২-(২৭/…) আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা রাতের অন্ধকারে আকস্মিক হামলায় মুশরিকদের শিশুদের উপরও আঘাত করে ফেলি। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারাও তাদের (মুশরিক যোদ্ধাদের) মধ্যে গণ্য। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৪০০, ইসলামিক সেন্টার ৪৪০০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
গ্রন্থঃ সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ১৮/ জিহাদ
হাদিস নাম্বার: 2839
১/২৮৩৯। সাব‘ ইবনে জাসসামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাতের বেলা মুশরিকদের মহল্লায় অতর্কিত আক্রমণ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হলো, যাতে নারী ও শিশু নিহত হয়। তিনি বলেনঃ তারাও (নারী ও শিশু) তাদের অন্তর্ভুক্ত
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

নবীর আক্রমণাত্মক জিহাদের উদাহরণ

নবী মুহাম্মদের যখন ক্ষমতা কম ছিল, অস্ত্র এবং লোকবল কম ছিল, তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। আর যখনই ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন, যুদ্ধ এবং কতল করার মত লোকজন যোগার হয়ে গেছে, নবির নির্দেশে মুসলিমরা পৌত্তলিকদের মূর্তি এবং মন্দির ধ্বংস করে দিতো। যাদের সাথে নবীর কোন যুদ্ধ বা শত্রুতা কিছুই ছিল না, তাদেরকেও কোন কারণ ছাড়াই শুধুমাত্র ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, এবং তারা মূর্তি পুজা করে এই অপরাধে হত্যা করার নির্দেশ দিতেন নবী।

ইয়ামেনের অন্তর্গত একটি জায়গায় পৌত্তলিকদের একটি তীর্থস্থান ছিল, যার নাম যুল খালাসা। সেটি যোদ্ধা পাঠিয়ে নবী সেটি ধ্বংস করতে হুকুম দেন। এরকম ঘটনা অনেকগুলো। এই সম্পর্কে প্রখ্যাত স্কলার আল্লামা ইবনে কাসীরের আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে বলা আছে, নবী মুহাম্মদ এই তীর্থস্থানটি ধ্বংসের নির্দেশ দেন [63]

উল্লেখ্য, যে সকল জায়গাতে লোক পাঠিয়ে মন্দির ধ্বংস এবং মানুষ হত্যার হুকুম নবী দিতেন, তাদের কারোর সাথে মুসলিমদের কোন রকম শত্রুতা ছিল না। আক্রমণাত্মক জিহাদের আয়াত নাজিলের পরেই শুরু হয়ে যায় সর্বাত্মক যুদ্ধ। যারাই ইসলাম কবুল না করবে কিংবা জিজিয়া না দিবে, তাদেরই কতল। আর মুশরিকদের কাছ থেকে তো ইসলাম ছাড়া কিছুই গ্রহণ করা হবে না, যা আগেই বলা হয়েছে। সহিহ বুখারী হাদিস গ্রন্থ থেকে যুল খালাসা গোত্রের ওপর আক্রমণের বিষয়ের সত্যতা পরিষ্কার হয়ে যায় [64] [65] [66] [67] [68] [69] [70]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৫. ঘরবাড়ী ও খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দেওয়া
২৮১১। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি কি আমাকে যিলখালাসার ব্যাপারে শাস্তি দিবে না? খাশআম গোত্রে একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর (রাঃ) বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ’ আশ্বরোহী সাথে নিয়ে রওনা করলাম। তারা নিপুন অশ্বারোহী ছিল। জারীর (রাঃ) বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলীর চিহৃ দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দোয়া করলেন যে, ‘হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং হেদায়েত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন।’
তারপর জারীর (রাঃ) সেখানে গমন করেন এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলে ও জ্বালিয়ে দেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সংবাদ নিয়ে এক ব্যক্তিকে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর (রাঃ)-এর দূত বলতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ তা‘আলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখনই যুলখালাসাকে আমরা ধংস করে দিয়েছি। জারীর (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাচঁবার বরকতের দু‘আ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজলী (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২১৩১. জারীর ইবন আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) এর আলোচনা
৩৫৪৯। ইসহাক আল ওয়াসিতী (রহঃ) … জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গৃহে প্রবেশ করতে কোনদিন আমাকে বাঁধা প্রদান করেন নি এবং যখনই আমাকে দেখেছেন মুচকি হাসি দিয়েছেন। জারীর (রাঃ) আরো বলেন, জাহিলী যুগে (খাস’আম গোত্রের একটি প্রতীমা রক্ষিত মন্দির) যুল-খালাসা নামে একটি ঘর ছিল। যাকে কা’বায়ে ইয়ামানী ও কা’বায়ে শামী বলা হত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি যুল-খালাসার ব্যাপারে আমাকে শান্তি দিতে পার? জারীর (রাঃ) বলেন, আমি আহমাস গোত্রের একশ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে যাত্রা করলাম এবং (প্রতীমা ঘরটি) বিধ্বস্ত করে দিলাম। সেখানে যাদেরকে পেলাম হত্যা করে ফেললাম। ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবাদ শোনালাম। তিনি (অত্যন্ত খুশী হয়ে) আমাদের জন্য এবং আহমাস গোত্রের জন্য দু’আ করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২২২৬. যুল খালাসার যুদ্ধ
৪০১৮। ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) … জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসার পেরেশানী থেকে স্বস্থি দেবেনা? আমি বললামঃ অবশ্যই। এরপর আমি (আমাদের) আহমাস গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈনিক নিয়ে চললাম। তাদের সবাই ছিলো অশ্ব পরিচালনায় অভিজ্ঞ। কিন্তু আমি তখনো ঘোড়ার উপর স্থির হয়ে বসতে পারতাম না। তাই ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালাম। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন।
এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর হাতের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ্! একে স্থির হয়ে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন’। জারীর (রাঃ) বলেন, এরপরে আর কখনো আমি আমার ঘোড়া থেকে পড়ে যাইনি। তিনি আরো বলেছেন যে, যুল-খালাসা ছিলো ইয়ামানের অন্তর্গত খাসআম ও বাজীলা গোত্রের একটি (তীর্থ) ঘর। সেখানে কতগুলো মূর্তি স্থাপিত ছিলো। লোকেরা এগুলোর পূজা করত এবং এ ঘরটিকে বলা হতো কা’বা।
রাবী বলেন, এরপর তিনি সেখানে গেলেন এবং ঘরটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন আর এর ভিটামাটিও চুরমার করে দিলেন। রাবী আরো বলেন, আর যখন জারীর (রাঃ) ইয়ামানে গিয়ে উঠলেন তখন সেখানে এক লোক থাকত, সে তীরের সাহায্যে ভাগ্য নির্নয় করত, তাকে বলা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিনিধি এখানে আছেন, তিনি যদি তোমাকে পাকড়াও করার সুযোগ পান তাহলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবেন।
রাবী বলেন, এরপর একদা সে ভাগ্য নির্নয়ের কাজে লিপ্ত ছিল, সেই মূহুর্তে জারীর (রাঃ) সেখানে পৌঁছে গেলেন। তিনি বললেন, তীরগুলো ভেঙ্গে ফেল এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই- এ কথার সাক্ষ্য দাও, অন্যথায় তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব। লোকটি তখন তীরগুলো ভেঙ্গে ফেলল এবং (আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এ কথার) সাক্ষ্য দিল।
এরপর জারীর (রাঃ) আবূ আরতাত নামক আহমাস গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে পাঠালেন খোশখবরী শোনানোর জন্য। লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে সত্তার (আল্লাহর) কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, ঘরটিকে ঠিক খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত উটের মতো কালো করে রেখে আমি এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী এবং পদাতিক সৈনিকদের সার্বিক কল্যাণ ও বরকতের জন্য পাঁচবার দোয়া করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২২২৬. যুল খালাসার যুদ্ধ
৪০১৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … কায়স (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, জারীর (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসা থেকে স্বস্থি দেবে না? যুল-খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি (বানোয়াট তীর্থ) ঘর, যাকে বলা হত ইয়ামনী কা’বা। এ কথা শুনে আমি আহমাস্ গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশজন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে শক্তভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমার বুকের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখতে পেলাম।
(এ অবস্থায়) তিনি দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্! একে (ঘোড়ার পিঠে) শক্তভাবে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাঃ) সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিয়ে তা জ্বালিয়ে ফেললেন। এরপর তিনি (জারীর (রাঃ)) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীর (রাঃ) এর দূত (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) বলল, সেই মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য বাণী সহকারে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত কালো উঠের মত রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈনিকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দোয়া করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ)
পরিচ্ছদঃ ৬৪/৬৩. যুল খালাসার যুদ্ধ।
৪৩৫৬. ক্বায়স (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জারীর (রাঃ) থেকে আমাকে বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল খালাসা থেকে স্বস্তি দেবে না? যুল খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি ঘর, যার নাম দেয়া হয়েছিল ইয়ামানী কা‘বা। এ কথা শুনে আমি আহ্মাস গোত্র থেকে একশ’ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে স্থিরভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমি আমার বুকের উপর তার আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! একে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াত দানকারী ও হিদায়াত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাঃ) সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিলেন আর তা জ্বালিয়ে দিলেন। এরপর তিনি (জারীর (রাঃ)) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীরের দূত (রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বলল, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে চর্মরোগে আক্রান্ত কাল উটের মতো রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর জন্য পাঁচবার বারাকাতের দু‘আ করলেন। (৩০২০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০১৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

উপরে যুল খালাসায় সৈন্য পাঠিয়ে অমুসলিমদের উপাসনালয় এবং পুজনীয় মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশের কথা বলা হয়েছে। এরকম উদাহরণ অনেকগুলোই আছে। আসুন আর-রাহীকুল মাখতূম থেকে পড়ি, সেখানে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে সৈন্য পাঠিয়ে নবী মূর্তি, উপাসনালয় এবং সেই সব মূর্তির পুজা কারী মানুষদের সমূলে নিশ্চিহ্ন করতেন। এমনকি মহিলাদেরও বাদ দিতেন না। অবস্থা এমন খারাপ হয়েছিল যে, নবী নিজেই খালিদ বিন ওয়ালিদের ওপর এত হত্যাকাণ্ড দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন [28]

বিভিন্ন অভিযান ও প্রতিনিধি প্রেরণঃ
১. মক্কা বিজয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজকর্ম সুসম্পন্ন করার পর যখন তিনি কিছুটা অবকাশ লাভ করলেন তখন ৮ম হিজরীর ২৫ রমযান উযযা নামক দেব মূর্তি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একটি ছোট সৈন্যদল প্রেরণ করলেন। উযযা মূর্তির মন্দিরটি ছিল নাখলা নামক স্থানে। এটি ভেঙ্গে ফেলে খালিদ (রাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,‏ (‏هَلْ رَأَيْتَ شَيْئًا‏؟‏‏)‏‘তুমি কি কিছু দেখেছিলে?’ খালিদ (রাঃ) বললেন, ‘না’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, ‏(‏فَإِنَّكَ لَمْ تَهْدِمْهَا فَارْجِعْ إِلَيْهَا فَاهْدِمْهَا‏)‏ ‘তাহলে প্রকৃতপক্ষে তুমি তা ভাঙ্গ নি। পুনরায় যাও এবং তা ভেঙ্গে দাও।’ উত্তেজিত খালিদ (রাঃ) কোষমুক্ত তরবারি হস্তে পনুরায় সেখানে গমন করলেন। এবারে বিক্ষিপ্ত ও বিস্ত্রস্ত চুলবিশিষ্ট এক মহিলা তাঁদের দিকে বের হয়ে এল। মন্দির প্রহরী তাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল। কিন্তু এমন সময় খালিদ (রাঃ) তরবারি দ্বারা তাকে এতই জোরে আঘাত করলেন যে, তার দেহ দ্বিখন্ডিত হয়ে গেল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে তিনি এ সংবাদ অবগত করালে তিনি বললেন, ‏(‏نَعَمْ، تِلْكَ الْعُزّٰى، وَقَدْ أَيِسَتْ أَنْ تَعْبُدَ فِيْ بِلَادِكُمْ أَبَدًا‏) ‘হ্যাঁ’, সেটাই ছিল উযযা। এখন তোমাদের দেশে তার পূজা অর্চনার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়ে পড়েছে (অর্থাৎ কোন দিন তার আর পূজা অর্চনা হবে না)।
২. এরপর নাবী কারীম (সাঃ) সে মাসেই ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-কে ‘সুওয়া’ নামক দেবমূর্তি ভাঙ্গার জন্য প্রেরণ করেন। এ মূর্তিটি ছিল মক্কা হতে তিন মাইল দূরত্বে ‘রিহাত’ নামক স্থানে বনু হুযাইলের একটি দেবমূর্তি। ‘আমর যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন প্রহরী জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কী চাও?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর নাবী (সাঃ) এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার জন্য আমাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন।’
সে বলল, ‘তোমরা এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে পারবে না।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘কেন?’
সে বলল, ‘প্রাকৃতিক নিয়মেই তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হবে।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা এখনও বাতিলের উপর রয়েছ? তোমাদের উপর দুঃখ, এই মূর্তিটি কি দেখে কিংবা শোনে?’
অতঃপর মূর্তিটির নিকট গিয়ে তিনি তা ভেঙ্গে ফেললেন
এবং সঙ্গীসাথীদের নির্দেশ প্রদান করলেন ধন ভান্ডার গৃহটি ভেঙ্গে ফেলতে। কিন্তু ধন-ভান্ডার থেকে কিছুই পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি প্রহরীকে বললেন, ‘বল, কেমন হল?’
সে বলল, ‘আল্লাহর দ্বীন ইসলাম আমি গ্রহণ করলাম।’
৩. এ মাসেই সা‘দ বিন যায়দ আশহালী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে বিশ জন ঘোড়সওয়ার সৈন্য প্রেরণ করেন মানাত দেবমূর্তি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। কুদাইদের নিকট মুশাল্লাল নামক স্থানে আওস, খাযরাজ, গাসসান এবং অন্যান্য গোত্রের উপাস্য ছিল এ ‘মানত’ মূর্তি। সা‘দ (রাঃ)-এর বাহিনী যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন মন্দিরের প্রহরী বলল, ‘তোমরা কী চাও?’
তাঁরা বললেন, ‘মানাত দেবমূর্তি ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে আমরা এখানে এসেছি।’
সে বলল, ‘তোমরা জান এবং তোমাদের কার্য জানে।’
সা‘দ মানাত মূর্তির দিকে অগ্রসর হতে গিয়ে
একজন উলঙ্গ কালো ও বিক্ষিপ্ত চুল বিশিষ্ট মহিলাকে বেরিয়ে আসতে দেখতে পেলেন। সে আপন বক্ষদেশ চাপড়াতে চাপড়াতে হায়! রব উচ্চারণ করছিল।
প্রহরী তাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘মানাত! তুমি এ অবাধ্যদের ধ্বংস কর।’
কিন্তু
এমন সময় সা‘দ তরবারির আঘাতে তাকে হত্যা করলেন। অতঃপর মূর্তিটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিলেন। ধন-ভান্ডারে ধন-দৌলত কিছুই পাওয়া যায় নি।
৪. উযযা নামক দেবমূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলার পর খালিদ বিন ওয়ালীদ (সাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৮ম হিজরী শাওয়াল মাসেই বনু জাযামাহ গোত্রের নিকট তাঁকে প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল আক্রমণ না করে ইসলাম প্রচার। খালিদ (রাঃ) মুহাজির, আনসার এবং বনু সুলাইম গোত্রের সাড়ে তিনশ লোকজনসহ বনু জাযীমাহর নিকট গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। তারা (ইসলাম গ্রহণ করেছি) বলার পরিবর্তে (আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি) বলল। এ কারণে খালিদ (রাঃ) তাদের হত্যা এবং বন্দী করতে আদেশ দিলেন। তিনি সঙ্গী সাথীদের এক একজনের হস্তে এক এক জন বন্দীকে সমর্পণ করলেন। অতঃপর এ বলে নির্দেশ প্রদান করলেন যে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর নিকটে সমর্পিত বন্দীকে হত্যা করবে। কিন্তু ইবনু উমার এবং তাঁর সঙ্গীগণ এ নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলেন। অতঃপর যখন নাবী কারীম (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি দু’ হাত উত্তোলন করে দু’বার বললেন, ‏(‏اللهم إِنِّيْ أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدًا) ‘হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তা হতে তোমার নিকটে নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।’(1)
এ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র বনু সুলাইম গোত্রের লোকজনই নিজ বন্দীদের হত্যা করেছিল। আনসার ও মহাজিরীনগণ হত্যা করেন নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী (রাঃ)-কে প্রেরণ করে তাদের নিহত ব্যক্তিদের শোণিত খেসারত এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন। এ ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে খালিদ (রাঃ) ও আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ)-এর মাঝে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং সম্পর্কের অবণতি হয়েছিল। এ সংবাদ অবগত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,
‏(‏مَهَلًّا يَا خَالِدُ، دَعْ عَنْكَ أَصْحَابِيْ، فَوَاللهِ لَوْ كَانَ أَحَدٌ ذَهَبًا، ثُمَّ أَنْفَقَتْهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا أَدْرَكَتْ غُدْوَةَ رَجُلٍ مِّنْ أَصْحَابِيْ وَلَا رَوْحَتَهُ‏)‏‏
‘খালিদ থেমে যাও, আমার সহচরদের কিছু বলা হতে বিরত থাক। আল্লাহর কসম! যদি উহুদ পাহাড় সোনা হয়ে যায় এবং তার সমস্তই তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করে দাও তবুও আমার সাহাবাদের মধ্য হতে কোন এক জনেরও এক সকাল কিংবা এক সন্ধ্যার ইবাদতের নেকী অর্জন করতে পারবে না।(2)

শুধু এইটুকুতেই শেষ নয়। আলীর প্রতি এবং পরবর্তীদের প্রতি নবীর নির্দেশও আমরা দেখে নিই [29]

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১০/ কাফন-দাফন
পরিচ্ছেদঃ কবর সমান করে দেওয়া।
১০৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ….. আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আবূল- হায়্যাজ আল-আসা’দী (রহঃ) কে বলেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন, আমি তোমাকেও সেই দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করছি। তা হলো, কোন উঁচু কবরকে (মাটি) সমান করা ব্যতীত ছাড়বেনা, আর কোন প্রতিকৃতি বিধ্বংস করা ব্যতীত ছাড়বে না। – আল আহকাম ২০৭, ইরওয়া ৭৫৯, তাহযীরুস সাজিদ ১৩০, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১০৪৯ [আল মাদানী প্রকাশনী]
এই বিষয়ে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও হাদীস বর্ণিত রয়েছে। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি হাসান। কোন কোন আলিম এতদনুসারে আমল করেছেন। তারা যমীনের উপর কবর উচূঁ করে বাঁধা অপছন্দনীয় বলে মনে করেন। ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেন, যতটুকু উঁচু করলে এটিকে কবর বলে চিনা যায় তদপেক্ষা কবরকে উঁচু করা আমি পছন্দ করি না। তবে চি‎হ্নস্বরূপ কিছু উঁচু করার দরকার এই জন্য যে, এটিকে যেন কেউ পদদলিত না করে বা এর উপর যেন কেউ না বসে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ওয়াইল (রহঃ)

শরিয়া রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার

ইসলামি শরিয়া রাষ্ট্রে অমুসলিম জনগোষ্ঠী ঠিক কতটুকু সম্মান ও আত্মমর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করতে পারেন, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আসুন এই বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের বিধানগুলো খুব ভালভাবে পড়ে দেখা যাক, যার মাধ্যমে আমরা ভালভাবে বুঝতে পারবো, ভারতে আসলে অমুসলিমদের সাথে মুসলিম শাসকদের আচরণ কেমন ছিল।

অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ

ইসলামে অমুসলিমদের সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কোরআনের বহুস্থানে এই বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইদানীংকালের মুমিনগণ কোরআনের আরেকটি আয়াত নিয়ে এসে দাবী করে থাকেন যে, সকল অমুসলিমের বেলাতে নাকি এমনটি বলা হয়নি! বিস্তারিত এই লেখাটিতে আলোচনা করা হয়েছে [71] [72]। তাই সেই দলিলগুলোর চাইতে আলেমদের বক্তব্যই এখানে গুরুত্বপূর্ণ হবে। আসুন আমরা বাংলাদেশের সবচাইতে প্রখ্যাত কয়েকজন আলেমের বক্তব্য শুনে নিই,

অমুসলিমের উপাসনালয় ও ধর্ম পালন

শরিয়া বা ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমদের নতুন কোন উপাসনালয় তৈরি করা যায় না। হযরত উমর শাম দেশের নাগরিকদের সাথে একটি চুক্তি করেছিলেন, যেই চুক্তিটি ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ এবং এই চুক্তির ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ে অমুসলিমদের সাথে মুসলিমরা চুক্তি করে থাকে। এই চুক্তিটি তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে পড়ে নিই। [73]। এখানে পরিষ্কারভাবেই বলা হচ্ছে, অমুসলিমগণ নতুন কোন উপাসনালয় তৈরি করতে পারবে না, মেরামত করতে পারবে না, যেগুলো মুসলিমগণ দখল করেছে তা ফেরত নিতে পারবে না, টুপি পাগড়ি জুতা পরতে পারবে না, ঘোড়ায় চড়লে গদি ব্যবহার করতে পারবে না, ধর্ম প্রচার করতে পারবে না, মৃতদেহ বহনের সময় জোরে কাঁদতে পারবে না, ইত্যাদি।

হানাফী ফিকাহশাস্ত্রের বুনিয়াদি গ্রন্থ আশরাফুল হিদায়াতে এই বিষয়ে যা বলা হয়েছে, সেটিও জেনে নিই, [74]

অমুসলিমদের ধর্ম প্রচারের অধিকার নেই

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুসলমানগণ যখন যান, তারা সেই সব দেশে ইসলাম প্রচারের অধিকার এবং অনুমতি চান। প্রতিটি সভ্য দেশেই তাদের নিজ ধর্ম পালন এবং তার প্রচারের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে শরিয়া কায়েম হলে অমুসলিমদের আর তাদের ধর্ম প্রচারের কোন অধিকার থাকবে না। এই বিষয়ে প্রখ্যাত ইসলামিক দাইয়ি জাকির নায়েক কী বলেছেন সেটি দেখে নেয়া যাক-

অবমাননাকর জিযিয়া কর

জিযিয়া শব্দটির অর্থ কী, তা আমাদের সকলের জেনে নেয়া জরুরি । অনেকেই জিযিয়া এবং খেরাজকে মিলিয়ে ফেলে জিযিয়াকে সাধারণ অর্থে কর বা ট্যাক্স হিসেবে দাবী করেন। কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। খেরাজ হচ্ছে অমুসলিমদের দেয়া ভূমি কর। কিন্তু জিযিয়া হচ্ছে তাদের বিজয়ী মুসলমানদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া, বেঁচে থাকার বা নিরাপত্তা পাওয়ার জন্য দেয়া অর্থ। এই অর্থ দিতে হবে নত অবস্থায়, অপমানিত ভাবে। কোরআনে পরিষ্কারভাবেই বিষয়টি বলে দেয়া হয়েছে, [75]

তোমরা লড়াই কর আহলে কিতাবের সে সব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দ্বীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিয্য়া দেয়।

এই বিষয়ে তাফসীরে জালালাইনে যা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে, জিযিয়া শব্দটি “জায়া” শব্দ থেকে নিষ্পন্ন অর্থাৎ তুমি মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত অপরাধী ব্যক্তি। কিন্তু তোমাকে এ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে যে, তোমার উপর এ দণ্ড জারি হচ্ছে না এবং দারুল ইসলামে নিরাপত্তার সাথে অবস্থানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে [76]

জিযিয়া কাকে বলে, এর অর্থ এবং উদ্দেশ্য আসুন আমরা পড়ে দেখি হানাফি ফিকাহ শাস্ত্রের গ্রন্থ আশরাফুল হিদায়া থেকে [77]

আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী রচিত তাফসীরে মাযহারী কোরআনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ তাফসীর গ্রন্থ। এই গ্রন্থে জিযিয়া সম্পর্কিত সুরা তওবার ২৯ নম্বর আয়াতে কী বলা আছে এবং তার ব্যাখ্যা কী, তা স্পষ্টভাবে বিবৃত রয়েছে। জিযিয়া যে আসলে অপমান, অপদস্থতার নিদর্শন, এবং জিযিয়া কীভাবে গ্রহণ করা হবে, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই অধ্যায়টি পড়ে দেখতে হবে [78]

একই বিষয় আমরা দেখতে পারি তাফসীরে ইবনে কাসীরেও [79]

এবারে আসুন ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত একটি ফতোয়া গ্রন্থ ফাতায়ায়ে আলমগীরী থেকে দেখি যে, অমুসলিম জিম্মি মহিলাদের গলায় লোহার শেকল এবং তাদের হেয়তা ও তুচ্ছতা প্রমাণের জন্য বাড়িতে কিছু আলামত রাখার বিধান ইসলাম রেখেছে কিনা। তথ্যগুলো সরাসরি বই থেকে জেনে নিই, [80]

জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ

অনেকেই দাবী করেন কুরআনে সূরা বাকারার ২৫৬ নম্বর আয়াতে বলা আছে, ধর্মের মধ্যে কোনোরকম জোরজবরদস্তি নেই! কিন্তু এই আয়াতটির প্রেক্ষাপট কী? আয়াতটির হুকুম কি এখনও বলবত আছে? আসুন এবারে সরাসরি তাফসীর গ্রন্থগুলো থেকে কুরআনের এই আয়াতটির ব্যাখ্যা পড়ে নিই, [81]। এখানে খুবই পরিষ্কার যে, ইসলামে জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণের বৈধতাও দেয়া রয়েছে।

অমুসলিমের সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য

ইসলামের আইন অনুসারে, একজন মুসলিমের বিরুদ্ধে একজন অমুসলিমের সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ একদিন কোন মুসলিম যদি অমুসলিম কোন মানুষের বাসায় ঢুকে তাদের পরিবারের কয়েকজনকে হত্যা করে, এবং সেই অমুসলিম পরিবারের কয়েকজন যদি ঘটনাটি দেখে, তাহলে বিচারের সময় সেই সব অমুসলিমের সাক্ষ্য ইসলামি আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে না। এর অর্থ হচ্ছে, অমুসলিমরা মুসলিমদের কোন অপরাধ দেখে ফেললে, বা তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে, সেগুলো ধর্তব্যের বিষয় নয় [82]

রাস্তার কিনারায় ঠেলে দিতে হবে

ইসলামি রাষ্ট্রে একজন ইহুদি বা খ্রিস্টানের অবমাননাকর জিযিয়া কর দিয়ে বসবাসের অনুমতি থাকলেও, তাদেরকে আসলে অপমান অপদস্থতার সাথেই জীবন যাপন করতে হয়। নিচের হাদিস থেকে জানা যায়, নবী খোদ ইহুদি নাসারাদের রাস্তায় চলাফেরার সময়ও রাস্তার কিনারার দিকে ঠেলে দিতে বলেছেন, যেন তারা রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলাফেরা করতে না পারে [83]

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ১৯/ যুদ্ধাভিযান
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
‏পরিচ্ছদঃ ৪১. আহলে কিতাবদের সালাম প্রদান প্রসঙ্গে
১৬০২। আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ইয়াহুদী-নাসারাদের প্রথমে সালাম প্রদান করো না। তোমরা রাস্তায় চলাচলের সময় তাদের কারো সাথে দেখা হলে তাকে রাস্তার কিনারায় ঠেলে দিও।
সহীহ, সহীহা (৭০৪), ইরওয়া (১২৭১), মুসলিম, বুখারী আদাবুল মুফরাদ, ২৮৫৫ নং হাদীসটির আলোচনা আসবে।
ইবনু উমার, আনাস ও আবূ বাসরা আল-গিফারী (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এই হাদিসটির বর্ণনায় এটিও বলা হয়েছে যে, মুসলিমদের প্রতি নির্দেশনাই হচ্ছে অমুসলিমদের লাঞ্ছিত করার [84] [85]

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৪/ অভিযান
পরিচ্ছেদঃ কিতাবীদের সালাম দেওয়া।
১৬০৮। কুতায়বা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়াহূদী খ্রিষ্টানকে প্রথমেই সালাম দিবে না। এদের কাউকে যদি পথে পাও তবে এর কিনারায় তাদের ঠেলে দেবে। সহীহ, সহীহাহ ৭০৪, ইরওয়া ১২৭১, মুসলিম, আদাবুল মুফরাদ, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৬০২ [আল মাদানী প্রকাশনী]
এই বিষয়ে ইবনু উমার, আনাস, সাহাবী আবূ বাসরা গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান-সহীহ। হাদীসটির তাৎপর্য হলো, ইয়াহূদী খৃষ্টানকে প্রথমেই তুমি সালাম দিবে না। কতক আলিম বলেন, এটা অপছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলো এতে এদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়, অথচ মুসলিমদের প্রতি নির্দেশ হল এদেরকে লাঞ্ছিত করার। এমনিভাবে পথে এদের কারো পাওয়া গেলে তার জন্য পথ ছাড়া হবে না কেননা, এতে তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

এই বিষয়টি তাফসীরে ইবনে কাসীরেও বলা আছে, [86]

অমুসলিমদের যাকাত দেয়া যাবে না

একটি ইসলামিক দেশে সকল মুসলিমকে যাকাত দিতে হয়। কিন্তু ইসলামি আইন অনুসারে, দরিদ্র কাফেরদের যাকাত দেয়া যাবে না। যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে দেখতে হবে, দরিদ্র মানুষদের ধর্মবিশ্বাস কী। ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে তারা যাকাত পাবে। আসুন একটি বিখ্যাত ফতোয়া দেখে নিই, [87]

Question
Last week a scholar said that we can give Zakah to non-Muslims, also that where the Qur’an says to give to the 8 people it does not clearly say for Muslims only. Is this correct?
Answer
Praise be to Allah, the Lord of the Worlds; and may His blessings and peace be upon our Prophet Muhammad and upon all his Family and Companions.
Zakah should be strictly limited to the 8 categories mentioned in the verse. Allah Says (interpretation of meaning): {As-Sadaqât (here it means Zakât) are only for the Fuqarâ’ (poor), and Al-Masâkin (the poor) and those employed to collect (the funds); and for to attract the hearts of those who have been inclined (towards Islâm);….}(9:60).
Now if the person gives Zakah to non-Muslims apart from those inclined to Islam his/her deed is not permissible and does not free him/her from the Zakah duty. So, he/she still has to pay that Zakah again.
In fact, Zakah should not be paid to a Kafir (non-Muslims) unless he/she is from “those inclined to become Muslims”.
The evidence for the above rule is the Hadith reported by Muslim and Al Bukhari from Ibn Abbas (Radiya Allahu Anhu) that the Prophet (Sallallahu Alaihi wa Sallam) said: “(Zakah) is taken from their wealthy people and paid to their poor ones”. The pronoun “their” in both cases refers to Muslims.
As for those who are inclined to Islam, they are of two types:
1) The non-Muslims who could become Muslim, these could be given Zakah according to the Maliki and Hanbali but according to the Shafi’e and Hanafi should not be given Zakah.
2) Muslims who could become more firm in their religion. These should be given Zakah according to the Maliki, Shafi’e and Hanbali.
The Hanafis opinion is that neither types should be given Zakah as Allah has made Islam glorious and does not need pushing people to it.
Now those Muslims who are doubtful or weak in religion should be given Zakah not to convince them but, because they are poor or needy so, what you heard about giving Zakah to non-Muslims is wrong unless the scholars meant those inclined towards Islam.
Allah knows best.

একই বক্তব্য পাওয়া যায় প্রখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ তাফসীরে মাযহারী থেকে, [88]

এছাড়াও আল-ফিকহুল মুয়াসসার গ্রন্থেও একই কথা বলা হয়েছে [89]

মুশরিকদের সাথে বসবাস করা নিষেধ

নবী মুহাম্মদ ইসলামিক রাষ্ট্রে মুশরিক বা মূর্তি পুজারীদের বসবাস নিষিদ্ধ করেই শেষ করে নি, একইসাথে অন্যান্য স্থানেও মুশরিকদের সাথে বসবাস নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গেছেন। কোন মুসলিম কোন মুশরিক প্রতিবেশির সাথে মিলে মিশে বসবাস করতে পারবে না, এই হাদিসে এটিই বলা হয়েছে [90] [91]

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ১৯/ যুদ্ধাভিযান
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৪২. মুশরিকদের সাথে বসবাস করা নিষেধ
১৬০৫। আবূ মুআবিয়ার হাদীসের মত হাদীস হান্নাদ-আবদাহ হতে, তিনি ইসমাঈল ইবনু আবৃ খালিদ হতে, তিনি কাইস ইবনু আবূ হাযিম (রাহঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তবে এই সূত্রে জারীর (রাঃ)-এর উল্লেখ নেই এবং এটিই অনেক বেশি সহীহ। সামুরা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।
আবূ ঈসা বলেন, ইসমাঈলের বেশিরভাগ সঙ্গী তার হতে, তিনি কাইস ইবনু আবূ হাযিমের সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছোট বাহিনী পাঠান। এ সূত্রেও জারীরের উল্লেখ নেই। আবূ মুআবিয়ার হাদীসের মত হাদীস হাম্মাদ ইবনু সালামা-হাজ্জাজ ইবনু আরতাত হতে, তিনি ইসমাঈল ইবনু আবূ খালিদ হতে, তিনি কাইস হতে, তিনি জারীর (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
আমি ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি, সঠিক কথা হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে কাইসের বর্ণনাটি মুরসাল। সামুরা ইবনু জুনদাব (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “মুশরিকদের সাথে তোমরা একত্রে বসবাস কর না, তাদের সংসর্গেও যেও না। যে মানুষ তাদের সাথে বসবাস করবে অথবা তাদের সংসর্গে থাকবে সে তাদের অনুরূপ বলে বিবেচিত হবে।”
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৯/ জিহাদ
১৮২. মুশরিকদের এলাকায় অবস্থান সম্পর্কে
২৭৮৭। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কেউ কোনো মুশরিকের সাহচর্যে থাকলে এবং তাদের সাথে বসবাস করলে সে তাদেরই মতো।(1)
(1). সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

অমুসলিমদের খাবারও দেয়া যাবে না

কাফেরদের খাবার দেয়ার বেলাতেও রয়েছে ইসলামে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আসুন এই বিষয়ে নবী কী বলেছেন দেখে নিই [92]

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৬/ শিষ্টাচার
১৯. যার সংস্পর্শে বসা উচিত
৪৮৩২। আবূ সাঈদ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি মু‘মিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না এবং তোমার খাদ্য যেন পরহেযগার লোকে খায়।(1)
হাসান।
(1). তিরমিযী, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)

কাফেরদের খাবার দাবারের পরিমাণ নিয়েও নবী মুহাম্মদ অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে গেছেন [93]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৭/ আহার সংক্রান্ত
পরিচ্ছেদঃ ২১১৬. মু’মিন ব্যক্তি এক পেটে খায়
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৫০০৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৫৩৯৬
৫০০৪। ইসমাঈল (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিন ব্যাক্তি এক পেটে আহার করে আর কাফির সাত পেটে আহার করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

অমুসলিমের জীবনের মূল্য কম

ইসলামি শরিয়ত অর্থাৎ ইসলামি আইনের রাষ্ট্রে একজন মুসলিমের জীবনের মূল্য একজন অমুসলিমের জীবনের মূল্যের চাইতে অনেক বেশি। এই কারণে একজন অমুসলিমকে হত্যা করলে তার জন্য মুসলিমের প্রাণদণ্ড দেয়া যাবে না। অথচ, একজন অমুসলিম কোন মুসলিমকে হত্যা করলে অবশ্যই প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হবে। এর অর্থ হচ্ছে, শরিয়ার দেশে অমুসলিম হত্যার দুনিয়াবি শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নয়।

সেইসাথে উল্লেখ্য, আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, কোন মুসলমান কোন জিম্মি অর্থাৎ জিজিয়া কর দেয়া অমুসলিমকে হত্যা করলে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না, তবে তার জন্য দুনিয়াবি মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির কথা বলা নেই। যেখানে মুসলিমকে হত্যা করা হলে তার দুনিয়াবি এবং আখিরাত উভয় শাস্তির কথাই বলা আছে [94] [95] [96]

বুলুগুল মারাম
পর্ব – ৯ঃ অপরাধ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ কাফিরের হত্যার বদলে মুসলিম হত্যা করা প্রসঙ্গ এবং সকল মুমিনের রক্ত সমমর্যাদা সম্পন্ন
১১৬৩। আবূ জুহাইফাহ (রাঃ) হতে বৰ্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে বললাম, আপনাদের নিকট কি কিছু লিপিবদ্ধ আছে? তিনি বললেন, ‘না, শুধুমাত্র আল্লাহর কিতাব রয়েছে, আর একজন মুসলিমকে যে জ্ঞান দান করা হয় সেই বুদ্ধি ও বিবেক। এছাড়া কিছু এ সহীফাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে’। তিনি [আবূ জুহাইফাহ (রাঃ)] বলেন, আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কী আছে? তিনি বললেন, ‘ক্ষতিপূরণ ও বন্দী মুক্তির বিধান, আর এ বিধানটিও যে, ‘কোন মুসলিমকে কাফির হত্যার বদলে হত্যা করা যাবে না’।[1]
[1] বুখারী ১১১, ১৮৭০, ৩০৪৭, ৩১৭২, ৩১৮০, ৬৭৫৫, মুসলিম ১৩৭০, তিরমিযী ১৪১২, ২১২৭, নাসায়ী ৪৭৩৪, ৪৭৩৫, ৪৭৫৫, আবূ দাউদ ২০৩৪, ৪৫৩০, ইবনু মাজাহ ২৬৫৮, আহমাদ ৬০০, ৬১৬, ৭৮৪, ৮০০, দারেমী ২৩৫৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ জুহাইফাহ (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৮৭/ রক্তপণ
পরিচ্ছদঃ ৮৭/৩১. কাফেরের বদলে মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না।
৬৯১৫. আবূ জুহাইফাহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আলী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের কাছে এমন কিছু আছে কি যা কুরআনে নেই? তিনি বললেন, দিয়াতের বিধান, বন্দী-মুক্তির বিধান এবং (এ বিধান যে) কাফেরের বদলে কোন মুসলিমকে হত্যা করা যাবে না। (১১১) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৪৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৪৪৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ১৫/ রক্তপণ
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন‏
পরিচ্ছদঃ ১৫/২১. কাফের ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না
১/২৬৫৮। আবূ জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আলী ইবনে আবূ তালিব (রাঃ) কে বললাম, আপনাদের নিকট এমন কোন জ্ঞান আছে কি যা অন্যদের অজ্ঞাত? তিনি বলেন, না, আল্লাহর শপথ! লোকেদের নিকট যে জ্ঞান আছে তা ব্যতীত বিশেষ কোন জ্ঞান আমাদের নিকট নাই। তবে আল্লাহ যদি কাউকে কুরআন বুঝবার জ্ঞান দান করেন এবং এই সহীফার মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দিয়াত ইত্যাদি প্রসঙ্গে যা আছে (তাহলে স্বতন্ত্র কথা)। এই সহীফার মধ্যে আরো আছেঃ কোন কাফেরকে হত্যার অপরাধে কোন মুসলমানকে হত্যা করা যাবে না।
সহীহুল বুখারী ১১১, ১৮৭০, ৩০৪৭, ৩০৩৪, ৩১৭২, ৩১৮০, ৬৭৫৫, ৬৯০৩, ৬৯১৫, ৭৩০০, মুসলিম ১৩৭০, তিরমিযী ১৪১২, ২১২৭, নাসায়ী ৪৭৩৪, ৪৭৩৫, ৪৭৪৪, ৪৭৪৫, ৪৭৪৬, ৪৫৩০, আহমাদ ৬০০, ৬১৬, ৪৮৪, ৯৬২, ৯৯৪, ১০৪০, দারেমী ২৩৫৬, ইরওয়া ২২০৯। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ১১. কাফির হত্যার দায়ে মুসলিমকে হত্যা করা হবে কি না?
৪৫৩০। কাইস ইবনু আব্বাদ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি ও আল-আশতার আলী (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বলি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আপনাকে বিশেষ কোনো উপদেশ দিয়েছেন যা সাধারণভাবে মানুষকে দেননি? তিনি বললেন, না; তবে শুধু এতটুকু যা আমার এ চিঠিতে আছে। অতঃপর তিনি তার তরবারির খাপ থেকে একখানা পত্র বের করলেন। তাতে লেখা ছিলোঃ সকল মুসলিমের জীবন সমমানের। অন্যদের বিরুদ্ধে তারা একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি।
তাদের একজন সাধারণ ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত নিরাপত্তাই সকলের জন্য পালনীয়। সাবধান! কোনো মু‘মিনকে কোনো কাফির হত্যার অপরাধে হত্যা করা যাবে না। চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিককেও চুক্তি বলবৎ থাকাকালে হত্যা করা যাবে না। কেউ বিদ‘আত চালু করলে তার দায় তার উপর বর্তাবে। কোনো ব্যক্তি বিদ‘আত চালু করলে বা বিদ‘আতিকে মুক্তি দিলে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ এবং ফিরিশতা ও মানবকূলের অভিশাপ।(1)
সহীহ।
(1). নাসায়ী, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ কায়স ইবনু ‘উবাদ (রহঃ)

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৪/ রক্তমূল্য
পরিচ্ছেদঃ ১১. কাফির হত্যার দায়ে মুসলিমকে হত্যা করা হবে কি না?
৪৫৩১। আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতঃপর আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীদের অনুরূপ। তবে এতে রয়েছেঃ তাদের দূরবর্তীরাও তাদের পক্ষে নিরাপত্তা দিতে পারবে, উত্তম ও দুর্বল পশুর মালিকরা এবং পিছনে অবস্থানরত ও সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ সৈন্যগণও গানীমাতে সমান অংশ লাভ করবে।(1)
হাসান সহীহ।
(1). এটি গত হয়েছে হা/ ২৭৫১।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ)

এবারে আসুন ফিকহে ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু গ্রন্থ থেকে এই বিষয়ে ওসমানের শাসনামলের একটি ঘটনা জেনে নিই [97]

এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানা যায় দরসে তাওহীদ ও কিতাল (চতুর্থ দরস) যে সকল কারণে কারো রক্তপাত হালাল হয়ে যায় গ্রন্থ থেকে [98]

এই বিষয়ে ফতোয়া বিষয়ক প্রখ্যাত ওয়েবসাইট ইসলাম ওয়েব থেকে একটি ফতোয়া দেখে নিই, [99]

All perfect praise be to Allaah, The Lord of the Worlds. I testify that there is none worthy of worship except Allaah, and that Muhammad is His slave and Messenger. We ask Allaah to exalt his mention as well as that of his family and all his companions.
First of all, you should know that a Muslim should not be killed for killing a belligerent non-Muslim according to the consensus of the scholars may Allaah have mercy upon them. According to the view of the majority of the scholars may Allaah have mercy upon them a Muslim should not be killed against a free non-Muslim under the Muslim rule. The evidence about this is the saying of the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ): “A Muslim should not be killed for killing a non-Muslim.” (At-Tirmithi)
Moreover, according to the view of the majority of the scholars may Allaah have mercy upon them the title (and rulings) “disbeliever” is applicable to a free non-Muslim under the Muslim rule. However, Abu Haneefah, and the scholars of his School of jurisprudence may Allaah have mercy upon them are of the view that a Muslim should be killed for killing a free non-Muslim under Muslim rule; their evidence is the two verses which the questioner mentioned. Nonetheless, the correct opinion is that of the majority of the scholars may Allaah have mercy upon them that is based on the above Prophetic narration, which is a direct proof related to the case of dispute.
Allaah Knows best.

অমুসলিম হত্যার রক্তপণ

উপরের হাদিস এবং ফতোয়াটি থেকে স্পষ্ট যে, অমুসলিমদের হত্যার জন্য কোন মুসলিমকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে না। তার মানে হচ্ছে, অমুসলিমের জীবনের মূল্য ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে কম। তাহলে অমুসলিম হত্যার জন্য কী শাস্তি দেয়া হবে? ইসলামের বিধান অনুসারে, অমুসলিম হত্যার জন্য রক্তপণ বা দিয়াত দিতে হবে, তবে তা হবে মুসলিমের অর্ধেক দাম [100]

সুনানে ইবনে মাজাহ
১৫/ রক্তপণ
পরিচ্ছেদঃ ১৫/১৩. কাফের-এর দিয়াত
১/২৬৪৪। ‘আমর ইবনে শু‘আইব (রাঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফয়সালা দেন যে, দু’ আহলে কিতাব সম্প্রদায় অর্থাৎ ইয়াহূদী ও নাসারাদের দিয়াত হবে মুসলমানদের দিয়াতের অর্ধেক।
তিরমিযী ১৪১৩, নাসায়ী ৪৮০৬, ৪৮০৭, ইরওয়া ২২৫১।
তাহকীক আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবী আব্দুর রহমান বিন আয়্যাশ সম্পর্কে ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি মাকবুল। ইমাম যাহাবী তাকে সিকাহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ)

আরেকটি হাদিস পড়ি [101]

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৬/ রক্তপণ
পরিচ্ছেদঃ কাফেরের দিয়াত প্রসঙ্গে।
১৪১৭. ঈসা ইবনু আহমাদ (রহঃ) ….. আমর ইবনু শুআয়ব তাঁর পিতা তাঁর পিতামহ (আবদুল্লাহ ইবনু আমর রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিমকে অমুসলিমের বদলে হত্যা করা যাবে না। – ইবনু মাজাহ ২৬৫৯, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৪১৩ (আল মাদানী প্রকাশনী)
এই সনদে আরো বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কাফিরের দিয়াতের পরিমাণ হল মুমিনের দিয়াতের অর্ধেক। – ইবনু মাজাহ ২৬৪৪
এই বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি হাসান। ইয়াহুদী ও খৃস্টানের দিয়াতের বিষয়ে আলিমগণের মতবিরোধ রয়েছে। কতক আলিমের মাযহাব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত এই হাদীস অনুসারে। উমার ইবনু আবদুল আযীয (রহঃ) বলেন, ইয়াহুদী ও খৃস্টানদের দিয়াত মুসলিমের দিয়াতের অর্ধেক। আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) এ মত পোষণ করেন। উমর ইবনু খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত তিনি বলেছেন, ইয়াহূদী ও খৃস্টানদের দিয়াত হল চার হাজার দিরহাম। অগ্নি উপাসকের দিয়াত হল আটশত দিরহাম। এ হল ইমাম মালিক, শাফিঈ ও ইসহাক (রহঃ)-এর অভিমত। কোন কোন আলিম বলেছেন, ইয়াহুদী ও খৃস্টানের দিয়াত হল মুসলিমের দিয়াতের সমান। এ হল ইমাম সুফইয়ান ছাওরী ও কুফাবাসী আলিমগণের অভিমত।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আমর ইবনু শু‘আয়ব (রহঃ)

অর্থাৎ, অমুসলিমের জীবনের মূল্য মুসলিমের জীবনের মূল্যের অর্ধেক। ধর্মের ভিত্তিতে একজন মানুষের জীবনের মূল্য যে মতাদর্শে নির্ধারিত হয়, সেই মতাদর্শকে কীভাবে ইনসাফমূলক মতাদর্শ বলা সম্ভব, আমি জানি না। মুয়াত্তা মালিকের এই হাদিসটিও পড়ি, [102]

মুয়াত্তা মালিক
৪৩. দিয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১৫. কাফির যিম্মীর দিয়াত
মালিক (রহঃ) বলিয়াছেন, তাহার নিকট রেওয়ায়ত পৌছিয়াছে যে, উমর ইবন আবদুল আযীয (রহঃ) বলতেন, ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানদের দিয়াত যখন তাহারা একে অন্যকে হত্যা করে, স্বাধীন মুসলমানের দিয়াতের অর্ধেক।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমাদের নিকট বিধান এই যে, কোন মুসলমানকে কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা হইবে না। হ্যাঁ, যদি ধোঁকা দিয়া সে যিম্মীকে হত্যা করে তবে তাহাকে হত্যা করা হইবে।
সুলায়মান ইবন ইয়াসার (রহঃ) বলিতেন, অগ্নিউপাসকদের দিয়াত আট শত দিরহাম।
মালিক (রহঃ) বলেন, ইহাই আমাদের নিকট বিধান।
মালিক (রহঃ) বলেন, ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের ক্ষত করার দিয়াত মুসলমানদের ক্ষত করার দিয়াতের হিসাবে মুযিহার বিশ ভাগের একভাগ এবং মাসুমা ও জাইকায় তিন ভাগের একভাগ। ইহার উপর অন্যগুলির অনুমান করা যায়।
হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
বর্ণনাকারীঃ মালিক ইবনু আনাস (রহঃ)

ইসলাম ত্যাগের শাস্তি

বিশ্বাস মানুষের মনের ব্যাপার। যার বিশ্বাস হয় সে বিশ্বাস করে, যার বিশ্বাস হয় না তাকে জোর করলেও তার মধ্যে বিশ্বাস আসে না। আর মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে কেউ জিজ্ঞেসও করে না, তুমি কোন ধর্মটি বেছে নিবে? মানে, মতামত না দিয়েই, নিজে দেখেশুনে বুঝে পছন্দ করার বয়সে পৌঁছাবার আগেই একজন মানুষ মুসলমান হয়ে যায়। কিন্তু পরে যদি তারা ইসলাম ত্যাগ করতে চায়? সে যদি অন্য কোন ধর্ম বেছে নিতে চায়? বা সে যদি নাস্তিক হয়ে যায়? ইসলাম ধর্মে ধর্ম ত্যাগের শাস্তি কী? এই বিষয়ে শরিয়তের বিধান কী? আসুন নিচের হাদিসগুলো থেকে জেনে নিই। [103] [104]

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান‏
৪৩০০. আহমদ ইব্‌ন মুহাম্মদ (রহঃ) — ইকরাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী (রাঃ) ঐ সব লোকদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন, যারা মুরতাদ হয়েছিল। এ সংবাদ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পৌছলে, তিনি বলেনঃ যদি আমি তখন সেখানে উপস্থিত থাকতাম, তবে আমি তাদের আগুনে জ্বালাতে দিতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোময়া আল্লাহ্‌ প্রদত্ত শাস্তির (বস্তু) দ্বারা কাউকে শাস্তি দেবে না। অবশ্য আমি তাদেরকে আল্লাহ্‌র রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করতাম। কেননা, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ দ্বীন পরিত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, তবে তোমরা তাকে হত্যা করবে। আলী (রাঃ) ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-এর এ নির্দেশ শুনে বলেনঃ ওয়াহ্‌! ওয়াহ্‌! ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) সত্য বলেছেন। আর ইহাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান‏
৪৩০১. আমর ইব্‌ন আওন (রহঃ) —- আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্‌র রাসূল”। তবে তিনটি কারণের কোন ‘একটির জন্য’ কোন মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কোন বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করে; (২) যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে এর বিনিময়ে হত্যা এবং (৩) যে ব্যক্তি দ্বীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আসুন, সহি বুখারী গ্রন্থ থেকে সরাসরি হাদিসগুলো যাচাই করে নিই [105] [106]



এবারে আসুন দেখি, প্রখ্যাত হাদিস প্রনেতা ইমাম মালিকের মুয়াত্তা ইমাম মালিক গ্রন্থ থেকে মুরতাদের শাস্তি কী হতে পারে তা জেনে নিই। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশ হওয়া মুয়াত্তা ইমাম মালিক দ্বিতীয় খণ্ডের ৪০৬, ৪০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় হাদিসটি পাবেন। ডাউনলোড লিঙ্ক [107]

সেইসাথে, আরো অমানবিক ব্যাপার হলো, মুরতাদকে কেউ হত্যা করলে তার জন্য হত্যাকারীর ওপর মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ হবে না। বিষয়টি সন্নিবেশিত আছে বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন খণ্ড ১ এ [108]

একই সাথে, মুরতাদের বিষয় সম্পত্তিও জবরদখল করা হবে, তেমনটিই বলা আছে ইসলামিক আইনে [109]

আমীর হবে কুরাইশ বংশ থেকে

ইসলামে কুরাইশ বংশকে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং খলিফা নির্ধারণের জন্য কুরাইশদের থেকে নেয়ার বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে [110] [111]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮২/ আহকাম
পরিচ্ছেদঃ ৩০০৬. আমীর কুরাইশদের থেকে হবে
৬৬৫৪। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … মুহাম্মাদ ইবনু জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, তারা কুরাইশের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মুআবিয়া (রাঃ) এর নিকট ছিলেন। তখন মুআবিয়া (রাঃ) এর নিকট সংবাদ পৌছল যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, অচিরেই কাহতান গোত্র থেকে একজন বাদশাহ হবেন। এ শুনে তিনি ক্ষুদ্ধ হলেন এবং দাঁড়ালেন। এরপর তিনি আল্লাহ তা’আলার যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন, তারপর তিনি বললেন, যা হোক! আমার নিকট এ মর্মে সংবাদ পৌছেছে যে, তোমাদের কতিপয় ব্যাক্তি এরূপ কথা বলে থাকে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই এবং যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বর্ণিত নেই। এরাই তোমাদের মাঝে সবচেয়ে অজ্ঞ। সুতরাং তোমরা এ সকল মনগড়া কথা থেকে যা স্বয়ং বক্তাকেই পথভ্রষ্ট করে সতর্ক থাক। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, (খিলাফতের) এ বিষয়টি কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে, যতদিন তারা দ্বীনের উপর কায়েম থাকবে। যে কেউ তাদের সঙ্গে বিরোধিতা করে তবে আল্লাহ তা’আলা তাকেই অধোমুখে নিপতিত করবেন। নুআয়ম (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) সুত্রে শুআয়ব এর অনুসরণ করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জুবায়র ইবনু মুত‘ইম (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৯৩/ আহ্‌কাম
পরিচ্ছেদঃ ৯৩/২. আমীর কুরাইশদের মধ্যে থেকে হবে।
৭১৩৯. মুহাম্মাদ ইবনু যুবায়র ইবনু মুতঈম (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, তারা কুরাইশের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে মু‘আবিয়াহ (রাঃ)-এর নিকট ছিলেন। তখন মু‘আবিয়াহ (রাঃ)-এর নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, অচিরেই কাহতান গোত্র থেকে একজন বাদশাহ্ হবেন। এ শুনে তিনি ক্রুদ্ধ হলেন এবং দাঁড়ালেন। এরপর তিনি আল্লাহ্ তা‘আলার যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন, তারপর তিনি বললেন, যা হোক! আমার নিকট এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, তোমাদের কিছু লোক এমন কথা বলে থাকে যা আল্লাহর কিতাবে নেই এবং যা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বর্ণিত নেই। এরাই তোমাদের মাঝে সবচেয়ে জাহিল। সুতরাং তোমরা এ সকল মনগড়া কথা থেকে যা স্বয়ং বক্তাকেই পথভ্রষ্ট করে- সতর্ক থাক। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, (খিলাফাতের) এ বিষয়টি কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে, যদ্দিন তারা দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকবে। যে কেউ তাদের বিরোধিতা করে তবে আল্লাহ্ তাকেই অধোমুখে নিপতিত করবেন।(1) (৩৫০০)
নু‘আয়ম (রহ.) …. মুহাম্মাদ ইবনু যুবায়র (রহ.) সূত্রে শুআয়ব-এর অনুসরণ করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬৫৪)
(1) যতদিন ইসলামী হুকুমাত কুরাইশ প্রভাবিত এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল ততদিন কুরাইশরাই ছিলেন ইমারাতের হকদার। কারণ কুরাইশগণ হলেন দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। কুরাইশ প্রভাবিত ভূখন্ডে কুরাইশদের বর্তমানে অন্য কেউ আমীর হলে তিনি সকলের নিকট গ্রহণীয় হতেন না, সেখানে কুরাইশরাই সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য। আরব ভূখন্ডে ইসলামী হুকুমাতের প্রেক্ষাপটে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এ কথা বলেছিলেন। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরাই মুসলিমদের নেতৃত্ব দিবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

অমুসলিম নারীকে উলঙ্গ করার হুমকি

নবী মুহাম্মদ একবার হযরত আলীকে একজন মুশরিক নারীর কাছে প্রেরণ করলেন, যেই নারীর কাছে একটি চিঠি ছিল। সেই নারী সেই চিঠিটির কথা অস্বীকার করলে, হযরত আলী তাকে উলঙ্গ করে তল্লাশি করার হুমকি দান করেন। এরপরে বাধ্য হয়ে সেই নারী চিঠিটি হযরত আলীকে দিয়ে দেয়। সেই চিঠিটি যত গুরুত্বপূর্ণ চিঠিই হোক না কেন, একজন নারীকে উলঙ্গ করে তল্লাশি করার হুমকি কতটা ভয়াবহ হুমকি, তা আমরা সকলেই বুঝি। তল্লাশি যদি চালাতেই হয়, আধুনিক সভ্য পৃথিবীতে নারী পুলিশ সদস্য দিয়েই যেকোন নারীকে তল্লাশি করা হয়। এমনকি, কোন বোরখা পড়া নারীকে সভ্য দেশগুলোর বিমানবন্দরে তল্লাশি চালালে সেটি একজন নারী পুলিশ সদস্যকে দিয়েই তল্লাশি চালান। যদি একইভাবে কোন মুসলিম বোরখা পড়া নারীকে ভারতের বিমানবন্দরে কোন পুরুষ নিরাপত্তাকর্মী একই হুমকি দেয়, তাহলে মুসলিমরা কি তা মেনে নেবে? তারা কই বলবেন না, তল্লাশি যদি চালাতেই হয়, তাহলে কোন নারীকে দিয়ে যেন তল্লাশি চালানো হয়? একজন পুরুষ যদি একজন মুসলিম নারীকে উলঙ্গ করে তল্লাশি করার হুমকি দেন, সেটি কতটা সভ্য আচরণ হবে? [112]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৯/ অনুমতি প্রার্থনা
পরিচ্ছেদঃ ৭৯/২৩. কারো এমন পত্রের বিষয়ে স্পষ্টরূপে জানার জন্য তদন্ত করে দেখা, যাতে মুসলিমদের জন্য শংকার কারণ আছে।
৬২৫৯. ’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ও যুবায়র ইবনু আওয়াম এবং আবূ মারসাদ গানাভী (রাঃ)-কে অশ্ব বের করে নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা রওয়ানা হয়ে যাও এবং ’রওযায়ে খাখে’ গিয়ে উপস্থিত হও। সেখানে একজন মুশরিক স্ত্রীলোক পাবে। তার কাছে হাতিব ইবনু আবূ বালতার দেয়া মুশরিকদের প্রতি প্রেরিত একখানি পত্র আছে। আমরা ঠিক সেই জায়গাতেই তাকে পেয়ে গেলাম যেখানকার কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন। ঐ স্ত্রী লোকটি তার এক উটের উপর সওয়ার ছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তোমার কাছে যে পত্রখানি আছে তা কোথায়? সে বললঃ আমার সাথে কোন পত্র নেই। তখন আমরা তার উটসহ তাকে বসালাম এবং তার সাওয়ারীর আসবাবপত্রের তল্লাশি করলাম। কিন্তু আমরা কিছুই খুঁজে পেলাম না।
আমার দু’জন সাথী বললেনঃ পত্রখানা তো পাওয়া গেল না। আমি বললামঃ আমার জানা আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনর্থক কথা বলেননি।
তখন তিনি স্ত্রী লোকটিকে ধমক দিয়ে বললেনঃ তোমাকে অবশ্যই চিঠিটা বের করে দিতে হবে, নইলে আমি তোমাকে উলঙ্গ করে তল্লাশি চালাব। এরপর সে যখন আমার দৃঢ়তা লক্ষ্য করল, তখন সে বাধ্য হয়ে তার কোমরে পেঁচানো চাদরে হাত দিয়ে ঐ পত্রখানা বের করে দিল। তারপর আমরা তা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছলাম।
তখন তিনি হাতিব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে হাতিব! তুমি কেন এমন কাজ করলে? তিনি বললেনঃ আমার মনে এমন কোন খারাপ ইচ্ছে নেই যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। আমি আমার দৃঢ় মনোভাব পরিবর্তন করিনি এবং আমি দ্বীনও বদল করিনি। এই চিঠি দ্বারা আমার নিছক উদ্দেশ্য ছিল যে, এতে মক্কাবাসীদের উপর আমার দ্বারা এমন উপকার হোক, যার ফলে আল্লাহ তা’আলা আমার পরিবার ও সম্পদ নিরাপদে রাখবেন। আর সেখানে আপনার অন্যান্য সাহাবীদের এমন লোক আছেন যাঁদের দ্বারা আল্লাহ তা’আলা তাদের পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা দান করবেন।
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাতিব ঠিক কথাই বলেছে। সুতরাং তোমরা তাকে ভাল ব্যতীত অন্য কিছুই বলো না। রাবী বলেনঃ ’উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বললেন, তিনি নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং মু’মিনদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। অতএব আমাকে ছেড়ে দিন আমি তাঁর গর্দান উড়িয়ে দেই। রাবী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ’উমার! তোমার কি জানা নেই যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে, তোমরা যা ইচ্ছে করতে পার। নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে আছে। রাবী বলেনঃ তখন ’উমার (রাঃ) এর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সবচেয়ে ভাল জানেন। [৩০০৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ)

যার যার দ্বীন তার তার?

উপরের আলোচনা থেকে এটি মোটামুটি স্পষ্ট যে, ইসলাম আসলে অমুসলিমদের কতটুকু অধিকার ও মর্যাদা দান করে। এই বিষয়ে আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে কিছু মডারেট মুসলিম বলতে শুরু করেন, কোরআনে নাকি বর্ণিত আছে, যার যার দ্বীন তার তার! এই আয়াতটি আরো দুই একটি আয়াত দিয়ে তারা প্রমাণ করতে চায়, ইসলাম খুব শান্তির ধর্ম! ইসলাম অন্য ধর্মের মানুষকেও অনেক অধিকার দেয়! বা ইসলাম একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্ম! অথচ, তারা কেউই এই আয়াতটির তাফসীর পড়ে দেখেন না। অনেকে আবার তাফসীর ঠিকই পড়ে, কিন্তু ইসলামের সম্মান রক্ষার্থে মিথ্যা বলে। আসুন এই আয়াতটি নিয়ে আলোচনা করি। এই বিষয়ে প্রখ্যাত ক্লাসিক্যাল তাফসীরগুলো কী বলে জেনে নিই। প্রথমে আয়াতটি দেখি [113]

তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।
( সূরা কাফিরুন, আয়াত ৬ )

আসুন এবারে সরাসরি তাফসীর গ্রন্থগুলো থেকে কুরআনের এই আয়াতটির ব্যাখ্যা পড়ে নিই [34]

উপরের তথ্যসূত্র থেকে এটি পরিষ্কার যে, ইসলাম যার যার ধর্ম তার তার এই কথাতে মোটেও বিশ্বাসী নয়। বরঞ্চ ইসলাম জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণে বাধ্য করে। মুসলিমদের ক্ষমতা যখন কম ছিল, তখন কৌশল হিসেবে এই আয়াত নাজিল হলেও, মুসলিমদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া মাত্রই এই আয়াত মানসুখ হয়ে আক্রমণের আয়াত নাজিল হয়। জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের বিধানও নাজিল হয়।

এবারে আসুন, তাফসীরে জালালাইন থেকে দেখি, এই আয়াতটি নাজিলের প্রেক্ষাপট এবং অর্থ কী! এই আয়াতে কী যার যার ধর্ম নিয়ে সহাবস্থানের কথা বলা হয়েছে, নাকি কাফেরদের বিরুদ্ধে এই আয়াতটি ছিল একটি সাময়িক কৌশল, যেহেতু মুসলিমদের তখনো খুব বেশি ক্ষমতা ছিল না। তাফসিরে কিন্তু সরাসরিই বলা রয়েছে, এই সময়ে মুসলিমরা ছিল সংখ্যালঘু এবং দুর্বল, তাই যেন আল্লাহকে গালি না দেয়া হয়, সেই ভয় থেকেই এই আয়াতটি নাজিল হয়েছিল। পরবর্তীতে মুসলিমরা যখন শক্তিশালী হয়েছে, তারা পুরো আরব উপদ্বীপের সমস্ত মূর্তি ধ্বংস করে দিয়েছে [114]

সেইসাথে, আরো একটি আয়াতের কথা তারা বলেন, সেটি হচ্ছে সূরা আন আমের ১০৮ নম্বর আয়াত [115]

তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত।

এই আয়াতের তাফসীর দেখে নিই প্রথমে ইবনে কাসীরের তাফসীর থেকে [116] । ইবনে কাসীরের তাফসির থেকে যা জানা যায় তা হচ্ছে, মুসলিমরাই আগে পৌত্তলিকদের প্রতিমাগুলোকে গালাগালি শুরু করে। তখন বাধ্য হয়ে পৌত্তলিক কোরাইশরা মুহাম্মদের চাচা আবু তালিবের কাছে বিচার দেয়, এবং তাদের দেবদেবীকে গালি দিতে নিষেধ করে। সেই সাথে এটিও হুমকি দেয়, মুহাম্মদ তাদের দেবদেবীকে গালি দিলে তারাও মুহাম্মদের আল্লাহকে গালি দিবে। তখন নিতান্তই বাধ্য হয়ে, তাফসীরের ভাষ্য অনুসারে “উপকার থাকা সত্ত্বেও” কাফেরদের প্রতিমাগুলোকে গালি দেয়া থেকে বিরত থাকার আয়াত নাজিল হয়, যেহেতু সেই সময়ে মুসলিমরা সংখ্যালঘু ছিল!

এবারে পড়ি আরেকটি বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ শায়খুল মুফাসসিরীন, ফক্বীহুল উম্মত আল্লামা ছানাউল্লাহ পানীপথীর তাফসীরে মাযহারী থেকে [117]

এই প্রসঙ্গে ইসলামকিউএ ডট ইনফো নামক প্রখ্যাত সালাফি স্কলারদের দ্বারা পরিচালিত একটি উত্তর প্রাসঙ্গিক পড়ে নেয়া প্রয়োজন [118]

বিধর্মীদের উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান
প্রশ্ন
প্রশ্ন: বিধর্মীদের উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি?
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
খ্রিস্টমাস (বড়দিন) কিংবা অন্য কোন বিধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে কাফেরদের শুভেচ্ছা জানানো আলেমদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী হারাম। ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) তাঁর লিখিত “আহকামু আহলিয যিম্মাহ” গ্রন্থে এ বিধানটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: “কোন কুফরী আচারানুষ্ঠান উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন- তাদের উৎসব ও উপবাস পালন উপলক্ষে বলা যে, ‘তোমাদের উৎসব শুভ হোক’ কিংবা ‘তোমার উৎসব উপভোগ্য হোক’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কথা। যদি এ শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করা কুফরীর পর্যায়ে নাও পৌঁছে; তবে এটি হারামের অন্তর্ভুক্ত। এ শুভেচ্ছা ক্রুশকে সেজদা দেয়ার কারণে কাউকে অভিনন্দন জানানোর পর্যায়ভুক্ত। বরং আল্লাহর কাছে এটি আরও বেশি জঘন্য গুনাহ। এটি মদ্যপান, হত্যা ও যিনা ইত্যাদির মত অপরাধের জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে মারাত্মক। যাদের কাছে ইসলামের যথাযথ মর্যাদা নেই তাদের অনেকে এ গুনাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে; অথচ তারা এ গুনাহের কদর্যতা উপলব্ধি করে না। যে ব্যক্তি কোন গুনার কাজ কিংবা বিদআত কিংবা কুফরী কর্মের প্রেক্ষিতে কাউকে অভিনন্দন জানায় সে নিজেকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির সম্মুখীন করে।”(উদ্ধৃতি সমাপ্ত)
কাফেরদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হারাম ও এত জঘন্য গুনাহ (যেমনটি ইবনুল কাইয়্যেম এর ভাষ্যে এসেছে) হওয়ার কারণ হলো- এ শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি স্বীকৃতি ও অন্য ব্যক্তির পালনকৃত কুফরীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। যদিও ব্যক্তি নিজে এ কুফরী করতে রাজী না হয়। কিন্তু, কোন মুসলিমের জন্য কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা কিংবা এ উপলক্ষে অন্যকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও; তবে (জেনে রাখ) তিনি তোমাদের জন্য সেটাই পছন্দ করেন।”(সূরা যুমার, আয়াত: ৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”(সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩) অতএব, কুফরী উৎসব উপলক্ষে বিধর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হারাম; তারা সহকর্মী হোক কিংবা অন্য কিছু হোক।
আর বিধর্মীরা যদি আমাদেরকে তাদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানায় আমরা এর উত্তর দিব না। কারণ সেটা আমাদের ঈদ-উৎসব নয়। আর যেহেতু এসব উৎসবের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট নন। আর যেহেতু আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমস্ত মানবজাতির কাছে ইসলাম ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন, যে ধর্মের মাধ্যমে পূর্বের সকল ধর্মকে রহিত করে দেয়া হয়েছে; হোক এসব উৎসব সংশ্লিষ্ট ধর্মে অনুমোদনহীন নব-সংযোজন কিংবা অনুমোদিত (সবই রহিত)। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”(সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮৫)
কোন মুসলমানের এমন উৎসবের দাওয়াত কবুল করা হারাম। কেননা এটি তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে জঘন্য। কারণ এতে করে দাওয়াতকৃত কুফরী অনুষ্ঠানে তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করা হয়।
অনুরূপভাবে এ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে কাফেরদের মত অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টান্ন বিতরণ করা, খাবার-দাবার আদান-প্রদান করা, ছুটি ভোগ করা ইত্যাদি মুসলমানদের জন্য হারাম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের-ই দলভুক্ত”। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর লিখিত ‘ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম’ গ্রন্থে বলেন: “তাদের কোন উৎসব উপলক্ষে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করলে এ বাতিল কর্মের পক্ষে তারা মানসিক প্রশান্তি পায়। এর মাধ্যমে তারা নানাবিধ সুযোগ গ্রহণ করা ও দুর্বলদেরকে বেইজ্জত করার সম্ভাবনা তৈরী হয়।”(উদ্ধৃতি সমাপ্ত)
যে ব্যক্তি বিধর্মীদের এমন কোন কিছুতে অংশগ্রহণ করবে সে গুনাহগার হবে। এ অংশগ্রহণের কারণ সৌজন্য, হৃদ্যতা বা লজ্জাবোধ ইত্যাদি যেটাই হোক না কেন। কেননা এটি আল্লাহর ধর্মের ক্ষেত্রে আপোষকামিতার শামিল। এবং এটি বিধর্মীদের মনোবল শক্ত করা ও স্ব-ধর্ম নিয়ে তাদের গর্ববোধ তৈরী করার কারণের অন্তর্ভুক্ত।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন মুসলমানদেরকে ধর্মীয়ভাবে শক্তিশালী করেন, ধর্মের ওপর অবিচল রাখেন এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তাদেরকে বিজয়ী করেন। নিশ্চয় তিনি শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী।(মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিস শাইখ ইবনে উছাইমীন ৩/৩৬৯)
সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

প্রখ্যাত বাংলাদেশের আলেম এবং ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রের অন্যতম পণ্ডিত ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়ার সম্পাদনায় প্রকাশিত মো আব্দুল কাদেরের বই বাংলাদেশে প্রচলিত শির্ক বিদ‘আত ও কুসংস্কার পর্যালোচনা গ্রন্থে পরিষ্কারভাবেই বলা আছে যে, শিকর হচ্ছে হত্যাযোগ্য অপরাধ। যারা শিরক করে, তাদের রক্ত মুসলিমদের জন্য হালাল [53]

নিজদেশে অমুসলিমদের দাসের জীবন

ইসলামী শরীয়ত একটি অপরিবর্তনীয় ইসলামি আইন। এই আইন অনুসারে, একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে অন্য কোন ধর্মের মানুষের প্রকাশ্যে অন্য ধর্ম পালন, প্রচার, মন্দির বা চার্চ তৈরি, ধর্মীয় সিম্বল যেমন ক্রুশের লকেট পড়া, গাড়িতে গনেশ বা কৃষ্ণের মূর্তি রাখা, মুসলিমদের নিজ ধর্মে দাওয়াত দেয়া, এগুলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অর্থাৎ, মুসলিমরা যখন অমুসলিমদের দেশে বসবাস করবে, তারা তাদের ধর্ম পালন, ধর্মের দাওয়াত দেয়া, মসজিদ বানানো, আজান দেয়া, ওয়াজ করা, প্রকাশ্যে নামাজ আদায় করার অধিকার দাবী করলেও, ইসলামিক দেশে কোন বিধর্মী এই সুবিধাগুলোর কোনোটাই পাবে না। এটাই ইসলামী শরিয়তের বিধান।

ইসলামী শরীয়ত এই বিষয়ে স্পষ্টভাবেই ঘোষণা দেয়, অমুসলিমদের যদি ইসলামিক শাসনে থাকতে হয়, তাহলে তাদের অপদস্থতার নিদর্শন স্বরূপ জিজিয়া কর দিতে হবে। এই বিষয়ে তাফসীরে জালালাইনে বলা রয়েছে, জিজিয়া হচ্ছে সেই কর, যা কাফেরদের জীবনের বদলে আদায় করা হয়। তাফসীরে এটিও বলা আছে, কাফেররা আসলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতই অপরাধী, কিন্তু জিজিয়া কর নিয়ে তাদের আসলে হত্যা করা হচ্ছে না! বেঁচে থাকার সুযোগ দেয়া হচ্ছে! [119]

এই বিষয়ে তাফসীরে মাযহারীতে বলা হয়েছে, [120]

কোরআনে আরো সাম্প্রদায়িকতা 

ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে অসংখ্যবার অমুসলিমদের সমালোচনা, কটাক্ষ, গালাগালি এবং কটূক্তি করা হয়েছে। আসুন কোরআন থেকে কয়েকটি আয়াত দেখে নেয়া যাকঃ

আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। 
কুরআন ৯৮ঃ৬

সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকারকারী হয়েছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি।
কোরআন ৮:৫৫

নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা’নত।
কোরআন ২-১৬১

বস্তুতঃ এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহবান করছে যা কোন কিছুই শোনে না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কিছুই বোঝে না।
কোরআন ২-২৫৭

কাফেরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হয়ে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নীত হবে-সেটা কতই না নিকৃষ্টতম অবস্থান।
কোরআন ৩-১২

বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।
কোরআন ৩-৩২

আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।
কোরআন ৭:১৭৯

অতএব যারা কাফের হয়েছে, তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো দুনিয়াতে এবং আখেরাতে-তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
কোরআন ৩-৫৬

যাতে ধবংস করে দেন কোন কোন কাফেরকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন-যেন ওরা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়।
কোরআন ৩-১২৭

খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহ্র সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুত: জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।
কোরআন ৩-১৫১

আসুন দুইটি আয়াতের তাফসীর পড়ে দেখি, এইসব সাম্প্রদায়িক আয়াতগুলো আসলেই সাম্প্রদায়িক, নাকি আমাদেরই বোঝার ভুল! দেখে নিই, সর্বাপেক্ষ গ্রহণযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে এই আয়াতগুলোর ব্যাখ্যাতে কী বলা রয়েছে। এখানে ইবনে কাসীর [121] ও জালালাইনের [122] তাফসীর গ্রন্থ থেকে দুইটি আয়াতের তাফসীর দেয়া হলো, যথাক্রমে সূরা আনফালের ৫৫ নম্বর, এবং সূরা আল বাইয়িনার ৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর-

উপসংহার

উপরের আলোচনা থেকে এটি মোটামুটি স্পষ্ট এবং এটি বোঝা খুবই সহজ যে, ভারতে মুসলমানদের শাসন শুরু হয়েছিল লুটপাট, গনিমতের মাল এবং ধনসম্পদের লোভে। একইসাথে, মোঘল আমলে কিছু সময়ে ভারতের অমুসলিমগণ শান্তিতে থাকলেও বেশিরভাগ সময়ই তাদের নিজেদের দেশের দাসের মত পরাধীন ও দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়েছে। বহু মানুষকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করাও হয়েছে। এই সময়ে ভারতে সম্রাট আকবরের দ্বীন ই ইলাহির মত অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধর্মের উদ্ভব ঘটে, একইসাথে গুরু নানকের শিখ ধর্মও এই সময়ে প্রভাব বিস্তার শুরু করে। কিন্তু ইসলামের তলোয়ারের মুখে কোন অসাম্প্রদায়িক চেতনাই আসলে শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি। আশাকরি আমাদের পাঠকগণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পুরো লেখাটি পড়বেন এবং পর্যালোচনা করবেন। একইসাথে, তরবারির জোরে যেই ধর্মটি এই অঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, তাদের সেই শরীয়তী বিধানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন। যেন বর্বর আরবের শরীয়তের বিধান আর কোনদিন ভারতের মাটিতে প্রবেশ করতে না পারে।

তথ্যসূত্র

  1. কিতাবুল ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ []
  2. J. W. McCrindle, The Invasion of India by Alexander the Great as Described by Arrian, Q. Curtius, Diodorus, Plutarch and Justin, Westminster, Constable, 1893, pp.343-344 []
  3. তবকাত-ই-নাসিরী, মিনহাজ-ই-সিরাজ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা []
  4. তবকাত-ই-নাসিরী, মিনহাজ-ই-সিরাজ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৯ []
  5. তবকাত-ই-নাসিরী, মিনহাজ-ই-সিরাজ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২০ []
  6. তবকাত-ই-নাসিরী, মিনহাজ-ই-সিরাজ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৭ []
  7. তবকাত-ই-নাসিরী, মিনহাজ-ই-সিরাজ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ২৮ []
  8. তবকাত-ই-নাসিরী, মিনহাজ-ই-সিরাজ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৩৪ []
  9. তবকাত-ই-নাসিরী, মিনহাজ-ই-সিরাজ, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৪২ []
  10. Tabakat-i-nasiri Vol.1, page 552, 557, 558 []
  11. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০২, ৫০৩, ৫৩৫, ৫৩৭, ৫৪০ []
  12. Muslim Revivalist Movements In Northern India by Rizvi,saiyid Athar Abbas, Page 247 []
  13. মকতুবাত শরীফ, ২য় খণ্ড, মূলঃ গাওছে ছামদানী মহবুবে ছোবহানী এমামে রব্বানী হযরত মোজাদ্দেদে আলফেছানী, অনুবাদকঃ শাহ মোহাম্মদ মুতী আহমদ আফতাবী, প্রকাশকঃ আফতাবিয়া খানকাহ শরীফ, পৃষ্ঠা ৭০-৭৩ []
  14. মকতুবাত শরীফ, ২য় খণ্ড, মূলঃ গাওছে ছামদানী মহবুবে ছোবহানী এমামে রব্বানী হযরত মোজাদ্দেদে আলফেছানী, অনুবাদকঃ শাহ মোহাম্মদ মুতী আহমদ আফতাবী, প্রকাশকঃ আফতাবিয়া খানকাহ শরীফ, পৃষ্ঠা ২৩-২৪ []
  15. সাইয়েদ আব্বাস রিজভী, ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে মুসলিম পুনরুজ্জীবনের আন্দোলন, আগ্রা, ১৯৬৫, পৃঃ ২৪৭ []
  16. Excerpted from Saiyid Athar Abbas Rizvi, Muslim Revivalist Movements in Northern India in the Sixteenth and Seventeenth Centuries (Agra, Lucknow: Agra University, Balkrishna Book Co., 1965), pp.247-50; and Yohanan Friedmann, Shaykh Ahmad Sirhindi: An Outline of His Thought and a Study of His Image in the Eyes of Posterity (Montreal, Quebec: McGill University, Institute of Islamic Studies, 1971), pp. 73-74 []
  17. Saiyid Athar Abbas Rizvi, Muslim Revivalist Movements in Northern India in the Sixteenth and Seventeenth Centuries  (নয়া দিল্লিঃ মুনশিরাম মনোহরলাল প্রকাশনী প্রাইভেট লিঃ, ১৯৬৫), ২৫৬ []
  18. বোষ্টম, দি লিগেছি অব জিহাদ, পৃঃ২০০-২০১ []
  19. বোষ্টম, এ.জি.এম.ডি. এবং বোষ্টম, এ.জি. (২০১০)। দি লিগেছি অব জিহাদঃ ইসলামিক হলি ওয়ার এন্ড দি ফেইট অব নন-মুসলিমস। এমহার্স্টঃ প্রমিথিউস। স.আ.আ. রিজভী কর্তৃক উদ্বৃত, ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে উত্তর ভারতে মুসলিম পুনর্জাগরনের আন্দোলন, আগ্রা, ১৯৬৫, ওয়াই. ফ্রেডমেন, শায়েখ আহমেদ সিরহিন্দিঃ এন আউটলাইন, ১৯৭১। []
  20. The Baburnama: Memoirs of Babur, Prince and Emperor, trans. Wheeler M. Thackston (Washington, DC: Ferrer Gallery of Art/Arthur M. Sackler Gallery, 1996), 406–07; cf. Zahiru’d-Din Muhammed Babur Padshah Ghazi, Babur-nama (Memoirs of Babur), trans. Annette Susannah Beveridge (1922; New Delhi: Oriental Books Reprint Corporation, 1979), 608–13. Beveridge notes that Babur’s destruction amounted to cutting off the heads of the idls, which were restored with plaster by the Jains in the locality. []
  21. Jain, Meenakshi (2019). Flight of Deities and Rebirth of Temples: Episodes from Indian History. Aryan Books International. p. 28. ISBN 978-81-7305-619-2. []
  22. Asian Art, chap. “History of attacks on the Buddhas” []
  23. “Ancient Buddhas Will Not Be Rebuilt – UNESCO”. Ipsnews.net. Archived from the original on 13 September 2011. Retrieved 9 October 2013. []
  24. Markos Moulitsas Zúniga (2010). American Taliban: How War, Sex, Sin, and Power Bind Jihadists and the Radical Right. Polipoint Press. p. 8ISBN 978-1-936227-02-0Muslims should be proud of smashing idols.[]
  25. Fath Al Bari 5/340 []
  26. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৫৪৭ []
  27. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৪, হাদিস নম্বরঃ ২৫৪৭ []
  28. আর-রাহীকুল মাখতূম, আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ), তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ৪৬৬, ৪৬৭ [][]
  29. সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ১০৪৯ [][]
  30. সিরাত ইবন হিশামে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৬-৬৭ []
  31. Demolishing idols in a non-Muslim country []
  32. Obligation to destroy idols []
  33. মূর্তি ভাঙ্গার আবশ্যকতা []
  34. আহকামুল কুরআন, খায়রুন প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৫ – ৩৫৮ [][]
  35. সূরা কাফিরুন, আয়াত ৬ []
  36. তাফসীরে জালালাইন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৯৮ []
  37. তাফসীরে মাযহারী, ১২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬১৩ []
  38. সূরা আনফাল, আয়াত ৩৯ []
  39. সূরা তওবা, আয়াত ২৯ []
  40. তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৭-১২০ []
  41. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৮১৮ []
  42. হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ১৯০০ []
  43. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৭৭ []
  44. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), আল্লামা আলবানী একাডেমী, চতুর্থ খণ্ড, হাদিস নম্বরঃ ৩০০৩ []
  45. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২৬০৭ []
  46. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২৬০৮ []
  47. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭০ [][]
  48. সহিহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮১, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭০ []
  49. সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), আল হাদীছ প্রকাশনী, ১৭ ও ১৮ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২, ১৩ []
  50. নবীদের কাহিনী-৩, সীরাতুর রাসূল(ছাঃ), মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব, হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৪৭৮ []
  51. আল হিদায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৯, ৪৩০ []
  52. ইসলামি শরিয়া রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার []
  53.  বাংলাদেশে প্রচলিত শির্ক বিদ‘আত ও কুসংস্কার পর্যালোচনা ২. শির্কের পরিণতি [][]
  54. তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৮১ []
  55. কোরআন, সূরা আনফাল, আয়াত ৬৭ []
  56. তাফসীরে জালালাইন, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬০১ []
  57. তাফসীরে মাযহারী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৯-২০০ []
  58. তাফসীরে মাযহারী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৭ []
  59. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৯৯ []
  60. সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৪২ []
  61. সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৮৩৯ []
  62. সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), আল হাদীছ প্রকাশনী, ১৭ ও ১৮ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১ []
  63. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৫৭ []
  64. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৮১১ []
  65. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৪৯ []
  66. সহীহ বুখারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ৩৬৫-৩৬৬, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৪৯ []
  67. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪০১৮ []
  68. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪০১৭ []
  69. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৬[]
  70. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৫-১৮৭ []
  71. ইসলাম কি অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্বের অনুমোদন দেয়? []
  72. অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব প্রসঙ্গে | আল্লামা ইবনে কাসীর []
  73. তাফসিরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৬৬-৫৬৭ []
  74. আশরাফুল হিদায়া, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৯৩-৪৯৫ []
  75. কোরআন, সূরা তওবা, আয়াত ২৯ []
  76. তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৫৩ []
  77. আশরাফুল হিদায়া, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৭৬-৪৯২ []
  78. তাফসীরে মাযহারী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯১-৩০১ []
  79. তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৬৪-৫৬৫ []
  80. ফাতায়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৪২ []
  81. আহকামুল কুরআন, খায়রুন প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৫-৩৫৮ []
  82. ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৭০ []
  83. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ১৬০২ []
  84. সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৬০৮ []
  85. সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৮ []
  86. তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৬৫-৫৬৬ []
  87. Giving Zakah to non-Muslims Fatwa No: 87316 []
  88. তাফসীরে মাযহারী, ১১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৫১ []
  89. আল-ফিকহুল মুয়াসসার, প্রয়োজনীয় শব্দার্থ সহ মূলানুগ বঙ্গানুবাদ, হযরত মাওলানা শফীকুর রহমান নদভী, ভাষান্তরঃ মাওলানা আশরাফ হালিমী, বাড কম্প্রিণ্ট এন্ড পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ২৪৭ []
  90. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ১৬০৫ []
  91. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২৭৮৭ []
  92. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৮৩২ []
  93. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫০০৪ []
  94. বুলুগুল মারাম, হাদিস নম্বরঃ ১১৬৩ []
  95. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৬৯১৫ []
  96. সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ২৬৫৮ []
  97. ফিকহে ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু, ড মুহাম্মদ রাওয়াস কালা’জী, ভাষান্তর ও সম্পাদনাঃ মুহাম্মদ খলিলুল রহমান মুমিন, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১৫২-১৫৪ []
  98. দরসে তাওহীদ ও কিতাল (চতুর্থ দরস) যে সকল কারণে কারো রক্তপাত হালাল হয়ে যা , মূল- শাইখ মুজাহিদ হারেস বিন গাযী আন নাযারী রহ , অনুবাদ- আব্দুল্লাহ সিরাজী, আল-আবতাল মিডিয়া প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৭-৮ []
  99. Killing a Muslim in punishment for killing a non-Muslim []
  100. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ২৬৪৪ []
  101. সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৪১৭ []
  102. মুয়াত্তা মালিক, হাদিস নম্বরঃ ১৬১৪ []
  103. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৩০০ []
  104. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৩০১ []
  105. সহিহ বুখারী খণ্ড ৫ পৃষ্ঠা ২৩৬ []
  106. সহিহ বুখারী খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা ২৬১ []
  107. মুয়াত্তা ইমাম মালিক, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৬-৪০৭ []
  108. বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৭ []
  109. বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৬ []
  110. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৬৫৪ []
  111. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৭১৩৯ []
  112. সহিহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৬২৫৯ []
  113. সূরা কাফিরুন, আয়াত ৬ []
  114. তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৯৪, ৫৯৫, ৫৯৬, ৫৯৮ []
  115. সূরা আন আম, আয়াত ১০৮ []
  116. তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৬৬, ৮৬৭[]
  117. তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৮, ২৭৯, ২৮০ []
  118. বিধর্মীদের উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান []
  119. তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৫৩ []
  120. তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৮, ৩০০, ৩০১ []
  121. তাফসীরে ইবনে কাসীর (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৮১ []
  122. তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৮ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

View Comments (1)

  • The picture you had provided is of Sikh warrior Banda Singh Bahadur, not Bakhtiyar Khilji. Kindly rectify it(if possible)!

Leave a Comment