সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান?

Print Friendly, PDF & Email

এ আর্টিকেলটি কোরআনের দাবি ‘সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট’ ভুল প্রমাণ করাসহ এ বিষয়ে মুসলিমদের দাবি সমূহ খন্ডন করে।

ইসলামের এপোলোজিস্টগণের দাবি

জোড়ায় জোড়ায় জীবন্ত বস্তু
সাম্প্রতিক সকল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের একটি আবিষ্কার হলো, আমাদের মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীল সবকিছুই জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান, যেমন : জীবন্ত জিনিসে নারী ও পুরুষ জোড়া।
কোরআনে আল্লাহ্‌ বলেছেন : আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর। ( সূরা যারিয়াত : আয়াত ৪৯ )
ইউসুফ আলী বলেন, “সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান : প্রাণী ও উদ্ভিদের লিঙ্গ যার দ্বারা একে অপরের পরিপূরক। দিন এবং রাত, ধনাত্মক ও ঋণাত্মক শক্তি, আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ বল এবং আরও অনেক বিপরীত বস্তু, যারা প্রত্যেকে তাদের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করছে এবং আল্লাহ্‌র মহাবিশ্বের কার্যে ভূমিকা রাখছে। ভালোবাসা এবং বিতৃষ্ণা, কৃপা এবং বিচার, সংগ্রাম এবং বিশ্রাম এরকম আরও অনেক আছে, সবকিছুই আল্লাহ্‌র শিল্পকৌশল এবং অপূর্ব উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করছে। সবকিছুরই প্রতিরূপ, অথবা জোড়া, কিংবা পূরক রয়েছে। কেবল আল্লাহ্‌ই এক, তার মতো কেউ নেই, না তার কোনো পূরক প্রয়োজন।”
Qur’an and Science: all things in pairs
Dr. Ibrahim B. Syed, Islamic Research Foundation International, Inc

উদ্ভিদ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট, নারী এবং পুরুষ
আগে মানুষ জানতেন না যে, উদ্ভিদের মধ্যেও নারী পুরুষ পার্থক্য রয়েছে। উদ্ভিদবিদ্যা বলে, প্রত্যেক উদ্ভিদেরই একটি স্ত্রীলিঙ্গ এবং একটি পুংলিঙ্গ রয়েছে। এমনকি একলিঙ্গ উদ্ভিদেরও নারী এবং পুরুষ উভয় লিঙ্গের স্বতন্ত্র অঙ্গ রয়েছে।
“তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে শয্যা করেছেন এবং তাতে চলার পথ করেছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি।” ( আল কোরআন ২০:৫৩ )
ফলমূল জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট, নারী এবং পুরুষ
“তিনিই ভুমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড় পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দু’দু প্রকার সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্যে নিদর্শণ রয়েছে, যারা চিন্তা করে।” ( আল কোরআন ১৩:৩ )
উচ্চতর উদ্ভিদের প্রজননের শেষ ফলাফল হলো ফল। ফলের পূর্ববর্তী পর্যায় হলো ফুল, যার পুংলিঙ্গ এবং স্ত্রীলিঙ্গের অঙ্গ রয়েছে (পুংকেশর ও ডিম্বক)। পরাগ ফুলে বাহিত হলে তা গর্ভে ফল ধারণ করে, যা পূর্ণবর্ধিত হয় এবং বীজ মুক্ত করে। অতএব সকল ফল পরোক্ষভাবে স্ত্রী ও পুং অঙ্গসমূহের অস্তিত্ব প্রকাশ করে, এটি একটি বাস্তবতা যা কোরআনে প্রকাশ পেয়েছে। কিছু প্রজাতির ফল নিষিক্ত নয় এমন ফুল থেকেও আসতে পারে, যেমন : কলা, এক ধরণের আনারস, ডুমুর, কমলা ইত্যাদি। তাদেরও লিঙ্গগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত রয়েছে।
সবকিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট
“আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর।” ( আল কোরআন ৫১:৪৯ )
আয়াতটি মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ এবং ফল ছাড়া অন্যান্য জিনিস বুঝিয়েছে। এটি সরাসরি ইন্দ্রিয়গোচর বস্তু বা ব্যাপারও বুঝাতে পারে, যেমন : বিদ্যুৎ যার মধ্যে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জে চার্জিত ইলেকট্রন ও প্রোটন দ্বারা গঠিত পরমাণুসমূহ বিদ্যমান।
“পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন।” ( আল কোরআন ৩৬:৩৬ )
কোরআন এখানে বলছে, সবকিছুই জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট। এমনকি সেইসব জিনিসও জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট যা সম্পর্কে মানুষের বর্তমানে কোনো জ্ঞান নেই এবং ভবিষ্যতে আবিষ্কৃত হতে পারে।
The Qur’aan and Modern Science: Compatible or Incompatible?
Dr. Zakir Naik, Islamic Research Foundation

আবার, অনেকে দাবি করেন, ম্যাটারের পূরক এন্টিম্যাটারের অস্তিত্ব ‘সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট’ আয়াতসমূহ বিশেষভাবে ৪৩:১২, ৫১:৪৯ এবং ৩৬:৩৬ এর ন্যায্যতা প্রমাণ করে। কোরআনের আয়াত ৩৬:৩৬ এর ‘যা তারা জানে না’ অংশ অনুমান-অনুসারে পার্টিকল ফিজিক্সে আমাদের আধুনিক জ্ঞান নির্দেশ করে।

ব্রিটিশ পদার্থবিদ্যাবিৎ পল ডিরাক যিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে ম্যাটার জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট, তিনি ১৯৯৩ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী হয়েছিলেন। এই আবিষ্কার ‘সমতা’ নামে পরিচিত, যা ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার নামে দ্বৈত প্রকাশ করেছিলো। এন্টিম্যাটার ম্যাটারের বিপরীত স্বভাব ধারণ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ম্যাটারের বিপরীত, এন্টিম্যাটার ইলেকট্রন পজিটিভ এবং প্রোটন নেগেটিভ।

আলোচ্য আয়াতসমূহ

13:3
وَهُوَ الَّذِى مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوٰسِىَ وَأَنْهٰرًا ۖ وَمِن كُلِّ الثَّمَرٰتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ يُغْشِى الَّيْلَ النَّهَارَ ۚ إِنَّ فِى ذٰلِكَ لَءَايٰتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আর তিনিই যমীনকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে সুদৃঢ় পর্বতমালা ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন। আর প্রত্যেক প্রকারের ফল তিনি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। নিশ্চয় যে কওম চিন্তাভাবনা করে তাদের জন্য এতে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

36:36
سُبْحٰنَ الَّذِى خَلَقَ الْأَزْوٰجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنۢبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ
পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি মাটি হতে উৎপন্ন উদ্ভিদ, স্বয়ং মানুষ এবং ওরা যাদের জানেনা, তাদের সকলকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন।

43:12
وَالَّذِى خَلَقَ الْأَزْوٰجَ كُلَّهَا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْفُلْكِ وَالْأَنْعٰمِ مَا تَرْكَبُونَ
আর যিনি সব কিছুই জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্য নৌযান ও গৃহপালিত জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা আরোহণ কর,

51:49
وَمِن كُلِّ شَىْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
আর প্রত্যেক বস্তু থেকে আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আশা করা যায়, তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।

অনেকে দাবি করে থাকেন, এসকল আয়াতের সকল আয়াত বলে না, ‘সকল জীব’ জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্ট। তারা কখনো আক্ষরিক আবার কখনো রূপকশোভিত অর্থ গ্রহণ করেন যখন যা ব্যাখ্যায় সুবিধাজনক।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা দাবি করেন, আয়াত ১৩:৩ কেবলমাত্র ফল নির্দেশ করেছে, অথবা আয়াত ৩৬:৩৬ কেবল উদ্ভিদ নির্দেশ করেছে। যাইহোক, আয়াত ৪৩:১২ এবং ৫১:৪৯ একেবারে সহজবোধ্য করে প্রকাশ করে যে, আল্লাহ্‌ সকল জীব জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এতে কোনো অনিশ্চয়তার ছাপ নেই।

অনেক মুসলিম আবার নিজের মনকে বুঝ দেন এভাবে যে, এসকল আয়াতে ‘জোড়ায় জোড়ায়’ বলতে নারী ও পুরুষ জোড়া বুঝানো হয়নি, বরং কেবল ‘দুটো’ বুঝানো হয়েছে। এমন ধারনা যে একেবারেই ভুল এবং কোরআনে ‘জোড়ায় জোড়ায়’ বলতে যে নারী পুরুষ জোড়া বা বিপরীত বস্তুদ্বয় বুঝানো হয়েছে যা একে অপরের পূরক তার প্রমাণ আমরা কোরআন থেকেই পাই।

53:45
وَأَنَّهُۥ خَلَقَ ٱلزَّوْجَيْنِ ٱلذَّكَرَ وَٱلْأُنثَىٰ

আর এই যে, তিনিই সৃষ্টি করেন জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ ও নারী

75:39
فَجَعَلَ مِنْهُ ٱلزَّوْجَيْنِ ٱلذَّكَرَ وَٱلْأُنثَىٰٓ
অতঃপর তিনি তা হতে সৃষ্টি করেন জোড়া জোড়া নর ও নারী।

বিশ্লেষণ

আলোচ্য বিষয়ে ইসলামের এপোলোজিস্টদের দাবি খন্ডন করা খুবি সহজ ব্যাপার। আপনাকে কেবল দেখাতে হবে যে, সকল জীব জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান নয়।

কোরআন অযৌন জীব বাদ দিয়েছে

অনেক জীবের মধ্যেই অযৌন জনন পাওয়া গেছে, যার মধ্যে আছে অধিকাংশ উদ্ভিদ, প্রোটিস্ট (যেমন, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, এককোষী জলজ উদ্ভিজ্জ এবং ছত্রাক) এবং অনেক অমেরুদন্ডী প্রাণী (যেমন, ফিতাকৃমি)। (1)

অযৌন জন্মদায়ক জীবের অন্যান্য উদাহরণ হলো হাইড্রা, অনেক নিম্নতর উদ্ভিদ (যেমন, ফার্ন)। কিছু জীব পুনরুৎপাদন করতে সামর্থ্য রাখে যা একটি বিশেষ ধরণের অযৌন জনন, যেমন : তারা মাছ, পলিপ, জেব্রাফিশ, গোধা এবং স্যালামান্ডার। অনেক উদ্ভিদ পুরো পুনরুৎপাদন করতে সামর্থ্য রাখে। প্রাণীদের মধ্যে প্রাণীর গঠন যতো নিম্নতর হবে পুরো পুনরুৎপাদন করতে ততো সমর্থ হবে। কোনো মেরুদন্ডী প্রাণীর এ সামর্থ্য নেই। পুনরুৎপাদন জায়মান জননের স্বজাতীয়, যা জীবের বিভিন্ন অংশ দ্বারা একটি নতুন স্বতন্ত্রের গঠন। সামুদ্রিক স্কোয়ার্টের মত ঔপনিবেশিক আচ্ছাদিতরাই সর্বোচ্চ প্রাণী যাদের বর্ধনশীল প্রজনন ঘটে, যারা আসলে উদ্ভিদের মত।

(বিঃদ্রঃ হাইড্রা এবং জেলিফিশ এবং আরও অনেক অযৌন জীব যৌন জননের সামর্থ্য রাখে। তবে অনেক সাধারণ জীব যেমন : ব্যাকটেরিয়া, ইষ্ট এবং ছত্রাক একেবারেই অযৌন।)

কোরআন উভলিঙ্গদের বাদ দিয়েছে

উদ্ভিদসহ কিছু জীব আছে যারা একেবারেই উভলিঙ্গ। যেমন : স্পঞ্জ, শামুক এবং গভীর সমুদ্রের এক ধরণের ক্রিমি পুরোপুরিভাবে উভলিঙ্গ, যার অর্থ তাদের দেহে উভয় ধরণের লিঙ্গ বিদ্যমান। (2)

কিছু জীব তাদের জীবনচক্রে লিঙ্গ পরিবর্তন করে। যেমন : শক্ত খোসা বিশিষ্ট ঝিনুক পুরুষ হিসেবে জন্ম নেয় ও বেড়ে ওঠে, আবার পরবর্তীতে তাদের অর্ধেক নারীতে পরিণত হয়। তারা প্রত্যেক ঋতুতে পুরুষ হিসেবে আসে তবে পরবর্তীতে তাদের প্রায় সকলেই এমবিসেক্সুয়ালিটির একটি ধাপ অতিক্রম করে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নারীরে পরিণত হয়। কিছু প্রজাতি পরিবেশের ওপর নির্ভর করে লিঙ্গ পরিবর্তন করে। যদি মোটাসোটা অল্পবয়স্ক নারী পরবর্তীতে অপুষ্ট হয় তাহলে তারা আবার নিজেদের পুরুষে পরিণত করে। কিছু মাছ অনায়াসে নিজেদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে, যেমন : কিছু গ্রাউপার।

কিছু মুসলিম দাবি করেন, উভলিঙ্গ জীব মূলত একটি নারী-পুরুষ জোড়া কেননা তাদের মধ্যে উভয় প্রকার লিঙ্গ বিদ্যমান। এ দাবিটি একেবারেই ভুল, কেননা উভলিঙ্গের সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি উভলিঙ্গ জীব একইসাথে নারী ও পুরুষ। এমনকি তারা যদি কেবল এক লিঙ্গ দ্বারা যৌন ক্রিয়াকলাপ করে তাহলেও তাদের দাবিটি ভুল কেননা তারা নারী কিংবা পুরুষ নয়, তারা একইসাথে নারী পুরুষ উভয়ই।

কোরআন পার্থেনোজেনেটিক জীব বাদ দিয়েছে

‘যৌনসংসর্গ ব্যতীত সন্তানজন্ম’ প্রজননের একটি রূপ, যাতে ডিম্বাণু একটি নতুন স্বতন্ত্রে বিকশিত হয় নিষেক ছাড়াই। প্রাকৃতিক যৌনসংসর্গ ব্যতীত সন্তানজন্ম অনেক নিম্নতর জীবে পাওয়া গেছে। বিশেষ করে পোকামাকড়ে।

মনে রাখতে হবে, জাবপোকা, মৌমাছি এবং পিপড়া প্রকৃত পার্থেনোজেনেটিক জীব নয়, কেননা তারা যৌন জননে সামর্থ্য রাখে।

যাইহোক, মুহাম্মদ হয়ত জানতেন না যে ১৫ প্রজাতির হুইপটেইল টিকটিকি পুরোপুরি পার্থেনোজেনেটিক, যেমন : Cnemidophorus tigris ও C. neomexicanus. (3)

কোরআন সিজোফিলাম কমিউন বাদ দিয়েছে

সিজোফিলাম কমিউন পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ছত্রাক, যা এন্টার্কটিকা বাদে সকল মহাদেশে দেখা যায়। এটির ২৮ হাজারেরও বেশি স্বতন্ত্র লিঙ্গ রয়েছে। (4)

লিঙ্গের সংখ্যাধিক্য অ-সহোদর এবং অনাত্মীয় মিলনকে উৎসাহিত করে, যা জনসংখ্যার মধ্যে জেনেটিক বৈচিত্র্য নিশ্চিত করে।

এমন অন্যান্য ছত্রাকসহ এই প্রজাতি আয়াত ৩৬:৩৬ এর জন্য একটি দারুণ বিপরীত উদাহরণ। কেননা এমন অনেক উদ্ভিদ আছে যাদের কোনো যুগল নেই।

জেনে রাখুন, কিছু অনুবাদ মূল আরবিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে। যেমন, কিছু অনুবাদ আয়াতটির অর্থ দাঁড় করায়, ‘সকল যুগল যা মাটি হতে উৎপন্ন’ অথচ আয়াতটি বলে, ‘মাটি থেকে উৎপন্ন সবকিছু জোড়ায় জোড়ায়’। এধরণের চালাকি সরাসরি আয়াত ১৩:৩ এবং ৫১:৪৯ এর সাথে সংঘর্ষ করে।

চীনা ইন ইয়াং দ্বৈত ধারনা

কিছু এপোলোজিস্ট দাবি করেন, কোরআনের ‘জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি’ বিষয়ক আয়াতসমূহ বিশেষভাবে আয়াত ৩৬:৩৬ ম্যাটার এন্টিম্যাটার সম্পূরক সমূহ নিয়ে আমাদের আধুনিক জ্ঞান নির্দেশ করে। কিছু সমালোচক ম্যাটারের তুলনায় এন্টিম্যাটারের অল্পতা হাইলাইট করে জবাব দেন। (5) যেহেতু বিগ ব্যাং এর প্রথম সেকেন্ডে অধিকাংশ এন্টিম্যাটার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।

আবার, অনেকে দাবি করতে পারেন, এন্টিম্যাটারের অস্তিত্ব কোরআনের ‘জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি’ বিষয়ক আয়াত সমূহ অলৌকিক প্রমাণ করে। কেননা সপ্তম শতাব্দীর একজন সাধারণ মানুষ ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটারের ব্যাপারে কিভাবে জানবে?

যাইহোক, প্রাচীন চীনদেশবাসী আগেই সকল সৃষ্টির দ্বৈত ধারনায় বিশ্বাস করতেন। এই দ্বৈত নীতি ‘ইন এবং ইয়াং’ নামে পরিচিত, যা তাওবাদী বিশ্বাস ব্যবস্থার অংশ। যাইহোক, সকল যুক্তিসঙ্গত নির্ণয় নির্দেশ করে যে এসব ইসলামের ২৫০০ বছর আগেই প্রচলিত ছিল। (জেনে রাখুন, ইন ইয়াং চিহ্ন খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ সালের আগে প্রচলিত ছিলো এবং সাং রাজবংশ ব্রোঞ্জে অস্তিত্বশীল ছিলো, তবে ইন ইয়াং নীতি আরও অনেক আগে প্রচলিত ছিলো।)

খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৯৮ সাল থেকে ২৫৯৮ সাল পর্যন্ত শাসন করা এবং হান চীনাদের পূর্বপুরুষ লিজেন্ডারি চীনা সম্রাট কালচারাল বীর হলুদ সম্রাট বলেছেন, ‘ইং এবং ইয়াং এর নীতি পুরো মহাবিশ্বের মূল। এটি প্রত্যেক সৃষ্টির অধীন। এটি অভিভাবকত্বের অগ্রগতি নিয়ে আসে। এটি জীবন এবং মৃত্যুর মূল ও উৎস। (6)

ইন ইয়াং বিষয়ক নিচের উদ্ধৃতি দুটি দেখায় যে বিষয়টি বোধহয় ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার সম্পূরক সমূহ পর্যন্ত বিস্তৃত :

‘প্রতিরূপ’ এবং ‘বিরুদ্ধ’ একে অপরের বিপরীত, তারা একটি সৃজনশীল বল গঠনে একে অপরের পূরক, আসমান এবং ফলমূলসহ পৃথিবী যার পণ্য। (7)

সুতরাং, কোরআনের জন্য পরিচিত অপরিচিত সবকিছু ‘জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি’ দাবি করা অলৌকিক নয়, কেননা ইসলামের ২৫০০ বছর আগেই চীনা মানুষরা একইধরনের দ্বৈত নীতিতে বিশ্বাস করতেন।

উপসংহার

  • নবী মুহাম্মদের কাছে কোনো অণুবীক্ষণযন্ত্র কিংবা জীববিদ্যা পাঠ্যপুস্তক ছিলো না, তাই তার অযৌন জীব, পার্থেনোজেনেটিক জীব, উভলিঙ্গ জীব এবং সিজোফিলাম কমিউন নিয়ে কোনো ধারনা ছিলো না।
  • তার জন্য স্ত্রী ও পুং লিঙ্গের মানুষ, কুকুর, উট পর্যবেক্ষণ করা খুব সহজ ছিলো, তবে ছোটো জীব নিয়ে তার কোনো ধারনা ছিলো না এবং তিনি তার বিশ্বাসে ভুল ছিলেন যে, সকল জীব জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান।
  • অযৌন জীব, উভলিঙ্গ জীব, পার্থেনোজেনেটিক জীব এবং সিজোফিলাম কমিউনের ওপর নির্ভর করে ‘কোরআনের আল্লাহ্‌ সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন’ বিষয়ক আয়াত সমূহ ভুল প্রমাণিত হয়।

References

1. David Pratt, “Sex and Sexuality (part 1)“, Exploring Theosophy, April 2002 .
2. David Pratt, “Sex and Sexuality (part 2)“, Exploring Theosophy, April 2002.
3. Parthenogenesis – Wikipedia, accessed September 7, 2010
4. Prof. Tom Volk, “Schizophyllum commune, the split gill fungus“, University of Wisconsin, February 2000.
5.  Quennel Gale, “Does Science really prove the Quran? Part 2 “A refutation to answering-christianity’s ‘Earth in Islam'””, Answer Islam, accessed February 14, 2011.
6.  Ray Wood, “Yin and Yang“, Taichido, accessed February 14, 2011
7.  J. Dominguez, M.D, “Religions in China“, Religion-Cults, September 11, 2004

Marufur Rahman Khan

Marufur Rahman Khan is an Atheist Blogger from Bangladesh.

3 thoughts on “সবকিছু জোড়ায় জোড়ায় বিদ্যমান?

  • April 24, 2020 at 11:48 AM
    Permalink

    হাহাহা আসলে দুনিয়ার সৃস্টি থেকে কেয়ামত পর্যন্ত প্রতি ১০০০ জনে ১ জন জান্নাতে যাবে। সুতারাং আপনাদের মত কিছু লোক যদি থাকে তাহলে আমরা কিছুটা স্বস্তি পাই। অন্তত সবাই যদি বিশ্বাসী হতো তাহলে আল্লাহর কথা দ্বিধা করতো মুমিনেরা। ঐ যে আল্লাহ যে বলেছেন তিনি জাহান্নাম পূর্ন করবেন মানুষ এবং জ্বিন দিয়ে। তো সবাই কি সঠিক থাকতে পারবে! অসম্ভব এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয় আল্লাহর ওয়াদা ই সত্য। এনজয় দিস টাইম।

    চাইলেই কথাগুলো বুঝবেন না, কারন আল্লাহ নাস্তিকদের অন্তর মোহর দিয়ে ঢেকে রাখেন। যারা সত্যি কথা গোপন করে। একটা বিল্ডিং পরিমান সত্যি প্রমান থাকা সত্বেও একটা বালু পরিমান মিথ্যাকে ব্যাখ্যা করে বেড়ায়।

    অথচ, যা সমন্ধে তাদের প্রেক্টিকেলি কোনো ধারনাই নেই । যাই বলে অনুমান, যাই বলে কল্পনা থেকে। তাদের মতই অবিশ্বাসী দের বানানো কথা থেকে। অথচ চোখের সামনে কুরআন যা ১৪০০ বছর আগের। এখনো যেনো মনে হচ্ছে এই শতাব্দীতে নাজিল হয়েছে। হাহাহা।

    যে পথে আছত সেই পথেই থাক।
    তাতে আমিও খুশি।
    আল্লাহ যেন হেদায়েত না দেন।
    অপেক্ষা কর মৃত্যুর শেষ দিবসের।

    Reply
  • April 26, 2020 at 2:16 AM
    Permalink

    ভাই আপনার প্রবন্ধ গুলো পড়ে আমার সত্যিই হাসি পায় আর সেই প্রিয় উক্তিটা বারবার মনে পড়ে, ” অল্প বিজ্ঞান জানলে তুমি হবে নাস্তিক আর যদি তুমি বিজ্ঞান সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখ তাহলে তুমি হবে সত্যিকারের ধার্মিক”
    আপনার হাস্যকর যুক্তির জবাব শুনে নিন।
    উত্তর:
    আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ

    Yusuf Ali: [051:049] And of every thing ‘We have created pairs’: That ye may receive instruction.:

    “আমি সকলকিছুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।” (৫১:৪৯)

    এবার Arabic আয়াতের অংশটি দেখুন:(from right to left):

    51:49 خلقنا ’زوجين’ ومن كل شئ

    কুরআনের এই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি জোড়া সৃষ্টি করেছেন অথবা তাদের মধ্যে দুই ‘ধরণ’ বা ‘প্রকার’ সৃষ্টি করেছেন। কুরআনে আল্লাহ এখানে শুধু নারী-পুরুষের কথাই বলছেন না বরং পরিষ্কার ও তর্কাতীতভাবে বলেছেন প্রত্যেক সৃষ্টির দুই প্রকার সৃষ্টি/স্পিসিজ রয়েছে।এখানে প্রশ্নকর্তা নারী-পুরুষের কথাই ইন্ডিকেট করেছেন যা সবসময় সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ অনেক sexless creation ও আছে, যেমন: উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ফেরেশতাগণ। তাঁদের লিঙ্গ নেই। তাঁরাও আল্লাহর সৃষ্টি। তাহলে আল্লাহর সকল সৃষ্টি কেবল নারী পুরুষের জোড়ার বিষয়ই ধরলে ভুল হবে।

    এ সূত্রে আল্লাহ বলেন:-যারা আখিরাতে বিশ্বাস করেনা তারা ফেরেশতাদের নারী নাম দেয় (৫৩:২৭)
    সুতরাং এখানে আল্লাহ কোনোভাবেই শুধু ‘জোড়া’ বলতে নারী পুরুষের জোড়াকে বুঝাচ্ছেন না।

    এখন প্রশ্নোল্লিখিত আরেকটি আয়াত লক্ষ্য করি।
    আল্লাহ বলেছেন: “সকল মহিমা তারঁ যিনি জোড়া সৃষ্টি করেছেন—পৃথিবী যা উৎপন্ন করে তার মধ্য হতে সব কিছুর,আর তাদের নিজেদের মধ্যেও এবং তারা(মানুষ)যার কথা জানে না তাদের মধ্য হতেও।” (৩৬:৩৬)

    এই প্রশ্নে দেওয়া আয়াতগুলোতে যে আরবি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো أزواج, যার বহুবচন হলো زواج.যার অর্থ: জোড়া,মিল,সঙ্গী অথবা এ أزواج বলতে দুইটি বস্তুর বৈপরিত্য যেমন: ধণাত্মকতা-ঋণাত্মকতা এবং এক সৃষ্টির বিভিন্নতার বিষয়ও এখানে চলে আসে।

    আয়াতের এই أزواج হতে তিনটি বিষয় লক্ষ্যনীয়:

    ১.জোড়া যা পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়।
    ২.মানব জোড়া এবং মানব চরিত্রের বৈপরিত্য জোড় যেমন:সাহসী-ভীরু,ভালো-মন্দ ইত্যাদি।
    ৩.এমন অজানা জোড় যা মানুষ জানে না।

    এবার আবার প্রশ্নে ফিরে যাই। প্রশ্নের ১ নং পয়েন্টে যাদের asexual reproduction হয় তাদের উদাহরণ টানা হয়েছে (ব্যাকটেরিয়া, এককোষী প্রোটেজোয়া, এককোষী শৈবাল, ছত্রাক ইত্যাদি)। প্রশ্নকর্তা বোধহয় জানেনা যে এদেরও যৌনজনন হয়। ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, শৈবালের অযৌন ও যৌন-দুই ধরনেরই জনন হয়। অযৌন জননে খণ্ডায়ন, বিভাজন, মুকুলোদগম ইত্যাদির মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হয় এবং যৌনজননে শৈবালের নেগেটিভ ও পজেটিভ জিন আদান প্রদানের মাধ্যমে প্রজনন হয় অর্থাৎ দুটি গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হয়। ছত্রাকেরও একইভাবে যৌনজনন হয়। প্রোটোজোয়াদের ক্ষেত্রেও একই।

    তার মানে এখানেও দুই!! যৌন ও অযৌন জননের জোড়া।

    এবার আসে উভলিঙ্গ প্রাণীর কথা। যাদের দেহে দুই ধরনের reproductive organ থাকে অর্থাৎ male-female দুই ধরনেরই sex organ বিদ্যমান থাকে। এখানেও দুই!!
    ‘আযওয়াজ’এর ঐ অর্থটাই এখানে ধরা দিচ্ছেন; এক সৃষ্টির বিভিন্নতা।

    সুতরাং এ বিষয়ে কুরআন খুবই স্পষ্টভাবে একই সাথে male ও female এর জোড়, উভলিঙ্গ প্রাণীর দেহের জনন অঙ্গের জোড় এবং যারা অযৌন জননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে তাদের ব্যাপারেও বলেছে।

    সুতরাং কুরআনে ভুল — 404 not found.

    Reply
  • July 31, 2020 at 7:06 PM
    Permalink

    আসিফ তুমি আসুস্থ, কারন তুমি বুঝনা এই দুনিয়ায় নিজের মনেও শান্তি দরকার আছে। তুমি এমন এক পৃথিবী চাও যেখানে মানুষ অসুস্থ থাকুক? তুমি কি মনে কর তথাকথিত উন্নত বিশ্ব খুব সুখী? মনে হয় এখনও তোমাকে ভিসা দেয় নাই অথবা তাদের জীবনে তুমি ঢুকতে পার নাই।

    তুমি যদি সুস্থ একজন নাস্তিক হইতা তাহলে কোন ধর্মের বীরুধেই বলতা না।
    আর তোমাকে কখনই দেখিনা খ্রিস্টান ধর্মের বিপক্ষে বলতে। কেন ? না বলে পারলাম না তুমি হলা বেশ্যার মত, তারা শরীর বিক্রি করে আর তুমি তো আত্মাই বিক্রি করে দিছ।

    সত্যিই তোমার জন্য মায়া হয়।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *