ইহুদীকন্যা সাফিয়ার না-বলা গল্প
সূচিপত্র
- 1 ভূমিকা
- 2 সাফিয়ার পারিবারিক পরিচয়
- 3 বাবা-চাচার অতি আদরের সাফিয়া
- 4 হুয়াই ইবনে আখতাবের সাথে শত্রুতার কারণ
- 5 নবীর কঠোর সমালোচক ছিলেন হুয়াই
- 6 আবু বকরের সাথে দ্বন্দ্ব
- 7 আল্লাহর স্রষ্টা কে প্রশ্ন করায় নবীর রাগ
- 8 বনু নাদীরের নিমন্ত্রণ এবং মুহাম্মদের পলায়ন
- 9 পিতা হুয়াই ইবনে আখতাবকে জবাই
- 10 নবী মুহাম্মদের খায়বার আক্রমণ
- 11 স্বজনদের লাশের ওপর দিয়ে আনা হলো সাফিয়াকে
- 12 সাফিয়ার স্বামী কিনানাকে হত্যা
- 13 মানুষ যেভাবে মালে পরিণত হয়
- 14 গনিমতের মালের ভাগাভাগি
- 15 দিহয়াতুল কালবীর ঝোপ বুঝে কোপ
- 16 ষোড়শী তরুণীর সাথে ৫৭ বছরের নবী
- 17 আদৌ কী তাদের বিয়ে হয়েছিল?
- 18 নবীকে ঘৃণা করতো সাফিয়া
- 19 সাফিয়াকে বিছানায় তোলা হয় অল্প পরেই
- 20 একটানা তিনরাত তাঁবুর ভেতর
- 21 তাঁবুর বাইরে সারারাত পাহারা
- 22 নবীকে বিবাহ না করলে যা হতো
- 23 সাফিয়াকে আয়িশার গালাগালি
- 24 সাফিয়াকে নবীর অশ্রাব্য গালাগালি
- 25 সাফিয়াকে বন্ধ্যা নেড়ি বলে গালির কারণ
- 26 শেষ জীবনেও সাফিয়ার স্বজনদের প্রতি ভালবাসা
- 27 উপসংহার
- 28 তথ্যসূত্র
ভূমিকা
ইতিহাসে ধর্মযুদ্ধ, ধর্মের নামে মানুষ হত্যা, অন্য ধর্মের ওপর আরেক ধর্মের বিজয়ের নামে বহু অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটেছে, বহু মানুষের জীবন চলে গেছে। সেইসব ঘটনাবলীর মধ্যে খায়বার আক্রমণের পর নবী মুহাম্মদের হাতে সাফিয়া বিনতে হুয়াইয়ের বন্দিত্ব এবং বন্দীদশা থেকে মুক্তির জন্য পরবর্তী বিবাহ অন্যতম। এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কীভাবে যুদ্ধ শুধু ভূমি বা সম্পদের জন্যই নয়, নারীর ওপরও এক অমানবিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল। নারীর দেহ ভোগ যে যুদ্ধের একটি অন্যতম চালিকা শক্তি, তা এই ঘটনা থেকে খুব স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়।
খায়বার ছিল একটি সমৃদ্ধ ইহুদি বসতি, যেখানে মুহাম্মদ এবং তার অনুসারীরা ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে আক্রমণাত্মক জিহাদ চালান। যুদ্ধের নামে হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়, এবং বিজিতদের মধ্যে নারীদের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে বন্দী করা হয়। সাফিয়া বিনতে হুয়াই ছিলেন বনী নাদির গোত্রের এক সম্ভ্রান্ত নারী, যাঁর স্বামী ও পরিবারের অধিকাংশ সদস্য এই যুদ্ধে নিহত হন। এক মুহূর্তের মধ্যে তিনি সম্ভ্রান্ত নারী থেকে পরাজিত জাতির যুদ্ধবন্দীতে পরিণত হন। এই পরিস্থিতিতে মুহাম্মদের এক অনুসারী সাফিয়াকে ভাগে পান, কিন্তু শেষপর্যন্ত মুহাম্মদ তার রূপের খ্যাতি শুনে নিজেই তাঁকে গ্রহণ করেন এবং বিবাহ করেন। একজন যুদ্ধবন্দী, স্বজনহারা, বিধ্বস্ত, সদ্য স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের হারানো নারী কতটা স্বেচ্ছায় এই বিবাহে সম্মত হতে পারেন, সেটি সহজেই অনুমেয়। বাস্তবতা হচ্ছে, এটি ছিল এক ধরনের ধর্মীয় বৈধতার মোড়কে মোড়া দাসত্ব, যেখানে বিজিত নারীদের কোনো স্বাধীন ইচ্ছা বা পছন্দের অধিকার ছিল না।
মুহাম্মদের আচরণ শুধুমাত্র নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করেনি, বরং এটিকে ধর্মীয় অনুমোদন দিয়েছিল। যুদ্ধের পর নারী বন্দীদের গ্রহণের এই সংস্কৃতি পরবর্তী সময়েও ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকে। নারীদের স্বাধীন সত্তা ও সম্মানের কথা বললেও, এই ঘটনার মাধ্যমে ইসলামে নারীর অবস্থান প্রকৃতপক্ষে কী ছিল, তা পরিষ্কার হয়ে যায়। খায়বারের এই ঘটনা ধর্মীয় বিজয়ের নামে সহিংসতা, দাসত্ব এবং নারীর প্রতি নির্মম আচরণের এক নির্মম উদাহরণ। এটি শুধুমাত্র ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, বরং একটি স্পষ্ট প্রমাণ যে, যুদ্ধ ও ধর্মীয় আদর্শের নামে কীভাবে নারীর মৌলিক অধিকারের ওপর আঘাত হানা হয়েছে।
এই প্রবন্ধে আমরা সেই বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করবো, ইসলামের ইতিহাস থেকে সাফিয়ার গল্প তুলে আনবো। এখানে দেয়া তথ্যগুলো পড়ার সময় মনে রাখতে হবে, এগুলো সবই ইসলামপন্থী বিজয়ী বাহিনীর লিখিত তথ্য, সাফিয়ার কথা কোন নিরপেক্ষ তথ্যসূত্র থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ নিরপেক্ষ সকল সূত্রই নবীর বাহিনীর হাতে খুন হয়েছিল। তাই পড়ার সময় আমাদের এটি স্মরণ রাখতে হবে এবং এটিও মনে রাখতে হবে, নবী মুহাম্মদকে সর্বোচ্চ আদর্শ পুরুষ হিসেবে উপস্থাপন মুসলিমদের ধর্মবিশ্বাসের প্রচারের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই তারা নিশ্চিতভাবেই এমন কিছু তাদের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করবেন না, যার কারণে নবীকে একজন বর্বর যুদ্ধবাজ ও নারীলোভী হিসেবে মনে হতে পারে। এইসব বর্ণনা বরঞ্চ নবীর শৌর্যবীর্য প্রকাশের জন্যই লিখিত হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো থেকেই নবীর কৃতকর্ম সম্পর্কে ধারণা মেলে। ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা সাধারণত পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগের নারী চরিত্রগুলোর মধ্যে নবী-পত্নী সাফিয়ার নামটি যতটা উচ্চারিত হয়েছে, তার ব্যক্তি জীবনের জটিলতা ততটাই আড়ালে থেকে গেছে। এই লেখায় আমরা কেবল একজন নবী-পত্নীর জীবন নয়, বরং একটি পরাজিত জনগোষ্ঠীর একজন নারীর জীবনকাহিনী জানার চেষ্টা করব, যাকে জোর করে এক বিজয়ীর ঘরে আনা হয়েছিল।
সাফিয়ার পারিবারিক পরিচয়
সাফিয়ার পিতা ছিলেন খায়বারের বিখ্যাত ইহুদি নেতা হুয়াই ইবনে আখতাব। তিনি ছিলেন বনী নাযির গোত্রের প্রভাবশালী ব্যক্তি। সাফিয়ার মা ছিলেন বনু কুরাইজা গোত্রের। অর্থাৎ, তিনি আরবের ইহুদি সমাজে সম্মানিত ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক পরিবারের সন্তান। তাঁর স্বামী কিনানা ইবনে রাবি’ ছিলেন একজন ইহুদি নেতা যিনি খায়বার আক্রমণের ফলে নির্মমভাবে নিহত হন। এই সকল পরিচয় থেকেই বোঝা যায়, সাফিয়ার জীবন শুরু হয়েছিল স্বাধীন, মর্যাদাবান ও জাতিগতভাবে গর্বিত এক ইহুদি পরিবারের নারী হিসেবে। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন একজন স্বাধীন-চেতা তরুণী যিনি তার গোত্রকে ভালবাসতেন। এই বিষয়গুলো ধীরে ধীরে আমরা এই প্রবন্ধে প্রমাণ করবো। পাঠকদের অনুরোধ থাকবে, পুরো প্রবন্ধটি মন দিয়ে পড়ার।
বাবা-চাচার অতি আদরের সাফিয়া
খায়বার যুদ্ধের সময় সাফিয়া ছিলেন অল্পবয়সের এক কিশোরী বা তরুনী। যতদূর জানা যায়, সেই সময়ে নবী মুহাম্মদ ছিলেন ৫৭ এর কাছাকাছি একজন বৃদ্ধ মানুষ, আর তিনি ছিলেন ১৬ পেরুনো এক তরুণী। আগেই বলা হয়েছে, তার পিতার নাম হুয়াই ইবনে আখতাব, চাচার নাম আবু ইয়াসির ইবনে আখতাব। অল্পবয়সেই সাফিয়ার বিয়ে হয়েছিল কিনানা ইবন রাবির সাথে। উল্লেখ্য, খায়বার যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন সদ্য বিবাহিতা। আসুন শুরুতেই জেনে নেয়া যাক, বাবা ও চাচার অতি আদরের শিশু ছিলেন সাফিয়া [1]
সাফিয়ার সাক্ষ্য
… আমাকে বলেছেন, সাফিয়া বিনতে হুইয়াই ইবনে আখতার বলেছেন, ‘আমি বাবা ও চাচার প্রিয়পাত্র ছিলাম। আমি কাছে থাকলে তাঁরা অন্য কোনো বাচ্চাকাচ্চার দিকে চোখ তুলেও তাকাতেন না। রাসুল (সা.) তখন কুবায় বনি আমর ইবনে আউফদের সঙ্গে থাকছেন। সূর্য ওঠার আগে দুজন গেলেন তাকে দেখতে। ফিরে এলেন অনেক রাতে, শ্রান্ত, ক্লান্ত, অবসন্ন, দুর্বল। অভ্যাসমতো শিশুসুলভ চপলতায় আমি তাঁদের কাছে ছুটে গেলাম। ‘শুনলাম, চাচা বাবাকে বলছেন, “ইনিই কি তিনি? চিনতে পেরেছেন তো, ঠিক নাকি? আপনি নিশ্চিত?” “হ্যাঁ!” “তাহলে এখন করবেন, ভাবছেন?” “ঈশ্বরের শপথ, যত দিন দেহে প্রাণ আছে তত দিন আমি হব তার জানের দুশমন।

একই কথা বর্ণিত আছে ইবনে হিশামের সিরাত গ্রন্থেও [2]
সীরাতুন নবী (সা) পৃষ্ঠা ১৯৬
হযরত সফিয়্যা (রা)-এর বর্ণনা
ইবন ইসহাক বলেন : আমার কাছে বর্ণনা করেছেন আবদুল্লাহ্ ইব্ন আবূ বকর ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন আমর ইবন হাযম (র)। তিনি বলেন : আমার কাছে সফিয়্যা বিন্ত হুয়াই ইবন আখতাবের নিকট থেকে রিওয়ায়ত পৌঁছেছে, তিনি বলেছেন : আমি আমার পিতা ও চাচা আবূ ইয়াসিরের সন্তানদের মধ্যে প্রিয়তম সন্তান ছিলাম। যখনই আমি তাঁদের সাথে দেখা করতাম, তখনই তাঁরা তাঁদের অন্য সন্তানদের ছেড়ে আমাকেই কোলে তুলে নিতেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) যখন মদীনায় পদার্পণ করলেন এবং কুবায় বনূ আমর ইব্ন আওফের পল্লীতে অবস্থান করেন, তখন আমার পিতা হুয়াই ইব্ন আখতাব এবং আমার চাচা আবূ ইয়াসির ইব্ন আখতাব তাঁর নিকট গেলেন ভোর সকালে। তিনি বলেন : কিন্তু সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত তাঁরা আর ফিরে এলেন না ।
তিনি বলেন : তারপর তাঁরা যখন এলেন, তখন তাঁরা এতই ক্লান্ত যে, চলতে গিয়ে যেন পড়ে যাচ্ছিলেন। আমি চিরাচরিত নিয়মে খুশি মুখে তাঁদের দিকে এগিয়ে গেলাম কিন্তু আল্লাহর কসম, দুজনের একজনও আমার দিকে একটু ফিরেও তাকালেন না। কারণ তারা ছিলেন বিষণ্ণ ও চিন্তিত। তিনি বলেন, আমি আমার চাচা আবূ ইয়াসিরকে আমার পিতা হুয়াই ইন আখতাবকে লক্ষ্য করে বলতে শুনলাম : এ কি সেই ব্যক্তি? জবাবে তিনি বললেন : হ্যাঁ, আল্লাহর কসম, তিনিই সেই ব্যক্তি। তখন চাচা বললেন : আপনি কি তাঁকে সত্যিই চিনতে পেরেছেন এবং এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন ? পিতা বললেন : হ্যাঁ। তখন চাচা বললেন : এখন আপনি তাঁর সম্পর্কে কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ? পিতা বললেন : আজীবন তাঁর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে যাব ।

হুয়াই ইবনে আখতাবের সাথে শত্রুতার কারণ
মৌলিকভাবে ইসলাম ধর্ম যেহেতু একটি যুক্তি প্রমাণহীন অন্ধবিশ্বাস, তাই এই ধর্মের প্রবর্তক যে প্রশ্ন এবং যুক্তি বিরোধী হবেন তা সহজেই অনুমেয়। আসুন একটি ওয়াজ শুনি, ওয়াজে বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম আহমদুল্লাহ ও আব্বাসী ইহুদিদের সম্পর্কে কী ঘৃনাত্মক বক্তব্য দিচ্ছে তা পর্যালোচনা করি। সেই সাথে, ইহুদীদের প্রতি এই ঘৃণার কারণ যে তাদের প্রশ্ন এবং জিজ্ঞাসা, অর্থাৎ ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং, সেটিও আহমদুল্লাহরা স্বীকার করবেন।
নবী মুহাম্মদের সাথে হুয়াই ইবনে আখতাবের প্রধান শত্রুতা ছিল ধর্ম বিষয়ে। ধর্ম নিয়ে হুয়াই ইবনে আখতাব নানা ধরণের প্রশ্ন করতো, যার বেশিরভাগই মুহাম্মদ উত্তর দিতে পারতো না। নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায়, হুয়াই ইবনে আখতাবের নানা ধরণের যুক্তি এবং প্রশ্ন শুনে নবী বেচারার ছিল খুব কাহিল অবস্থা! সেই কারণেই অনেক সময় রেগেমেগে যেতো নবী [3]
ইয়াহুদীদের বৈরিতা
ইবন ইসহাক বলেন : আল্লাহ্ তা’আলা যেহেতু আরবদের মধ্য থেকে নবী প্রেরণ করে, তাদেরকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন, এজন্যে ইয়াহূদী পণ্ডিতগণ হিংসা-বিদ্বেষবশত রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সঙ্গে শত্রুতাকে তাদের ব্রতরূপে গ্রহণ করে। তাদের সাথে ছিল আওস ও খাযরাজ গোত্রের কিছু লোক—যারা জাহিলিয়াতের উপর বহাল রয়েছিল। তারা ছিল মুনাফিক, তাদের পিতৃপুরুষের ধর্ম শিরকের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং পুনরুত্থানে অবিশ্বাসী। কিন্তু ইসলামের প্রভাব এবং তাদের স্বজাতির লোকদের ইসলাম গ্রহণের ফলে তারাও বাহ্যত ইসলাম গ্রহণে বাধ্য হয় এবং একে তারা ঢালরূপে গ্রহণ করে প্রাণ রক্ষায় সচেষ্ট হয়। কিন্তু গোপনে গোপনে তারা কপটতায় লিপ্ত ছিল। ইয়াহূদীদের চাওয়া-পাওয়া ও কামনা-বাসনার সাথে তাদের মিল ছিল । কেননা তারাও নবী করীম (সা)-কে অস্বীকার এবং ইসলামের বিরোধিতা করত। ইয়াহূদী পণ্ডিতদের অবস্থা ছিল এই যে, নানারূপ বিব্রতকর প্রশ্ন করে তারা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে বিরক্ত ও অতিষ্ঠ করত এবং নানারূপ সন্দেহ জাল বিস্তার করে সত্যকে অসত্য দিয়ে ঢাকবার প্রয়াস পেত । তাদের প্রশ্নের জবাবে কুরআন শরীফের আয়াত নাযিল হত। হালাল ও হারাম সংক্রান্ত মুসলিমগণের অল্প কিছু প্রশ্ন বাদে সকল প্রশ্ন তাদেরই থাকত ।
গোত্রওয়ারীভাবে ইয়াহূদী পণ্ডিতদের নামধাম এরূপ :
বনূ নযীরের
হুয়াই ইবন আখতাব এবং আবূ ইয়াসির ইবন আখতাব ও হুয়াই ইব্ন অখিতাব নামে তার দু’ভাই, সালাম ইব্ন মুশকাম, কিনানা ইব্ন রবী‘ ইব্ন আবুল হুকায়ক, সালাম ইব্ন আবুল হুকায়ক, আবূ রাফি’ আল আওয়ার—একেই রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাহাবীগণ খায়বরের যুদ্ধে হত্যা করেছিলেন। রবী’ ইবন আবুল হুকায়ক, আমর ইবন জাহাশ, কা’ব ইবন আশরাফ-এ ব্যক্তি তাঈ গোত্রের শাখাগোত্র বনূ নাবহানের লোক ছিল। তার মা ছিল বনূ নযীর গোত্রীয়। হাজ্জাজ ই আমর-এ ব্যক্তি কা’ব ইব্ন আশরাফের মিত্র ছিল। কুরদাম ইবন কায়স-এ ব্যক্তিও কা’ব ইব্ন আশরাফের মিত্র ছিল। এরা সবাই ছিল বনূ নযীরের লোক ।




নবীর কঠোর সমালোচক ছিলেন হুয়াই
নবী মুহাম্মদের কাজকর্ম, নারীলোভ সম্পর্কে সেই সময়ে অনেকেই মুখ খুলেছিলেন, অনেকেই সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু তাদের নবী গুপ্ত ঘাতক পাঠিয়ে নিয়মিতই খুন করাতেন। এই সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন সাফিয়ার পিতা হুয়াই ইবনে আখতাব। আসুন দেখি, তিনি নবী মুহাম্মদের কী সমালোচনা করতেন, এবং সমালোচনাগুলো আসলেই যৌক্তিক ছিল কিনা [4]

এবারে আসুন দেখি, হুয়াই ইবনে আখতাবের সমালোচনাগুলো আসলেই সত্য ছিল, নাকি সেগুলো বিদ্বেষবশত অপপ্রচার ছিল? আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, নবীর একইসাথে ছিল ১১ যৌন সঙ্গী। একই রাতে তিনি লাগাতার ১১ জনার সাথে যৌন সঙ্গম করতেন। এই বিষয়ে অন্যত্র বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে, আসুন আপাতত একজন আলেমের মুখ থেকে শুনে নিই,
এবারে আসুন দ্বিতীয় পয়েন্টে যাই। অনেক মুসলিমকেই আজকাল বলতে শোনা যায় যে, নবী নাকি খুবই অল্প খেতেন, এবং অল্প খেতে পরামর্শ দিতেন। এমনকি, অল্প আহার করা নাকি নবীর সুন্নতও। অথচ সহিহ হাদিস বলে ভিন্ন কথা। নবী খাবারের ব্যাপারে ভয়াবহ লোভীই ছিলেন বলে হাদিস থেকে বোঝা যায়। আসুন হাদিসগুলো পড়ি, যেখানে দেখা যায়, একটি বকরী বা ছাগলের দুই দুইটি সামনের রান খাবার পরেও নবী আরও রান চাইতেন। আপনি ভাবুন তো, মাঝারি সাইজের একটি বকরী বা ছাগলের সামনের রানে কয় কেজি মাংস হয়? দুই দুইটি রান খাবার পরেও একজন কীভাবে আরও রান চাইতে পারে? [5] [6] –
সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
২৬. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর তরকারীর বর্ণনা
১২৬. আবু উবায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য এক ডেগ গোশত রান্না করলাম। তিনি বকরীর সামনের উরুর গোশত অধিক পছন্দ করতেন। তাই আমি তাকে সামনের একটি পা দিলাম। তারপর তিনি বললেন, আমাকে সামনের আরেকটি পা দাও। তখন আমি তাকে সামনের আরেকটি পা দিলাম। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে সামনের আরেকটি পা দাও। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! বকরীর সামনের পা কয়টি থাকে? তিনি বললেন, সে মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! যদি তুমি চুপ থাকতে তাহলে আমি যতক্ষণ সামনের পা চাইতাম, ততক্ষণ তুমি দিতে পারতে।[1]
[1] মুজামুল কাবীর, হা/১৮২৮৬; মুসনাদে বাযযার, হা/৮৩৪৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
ভূমিকা
পরিচ্ছেদঃ ৭. খাদ্যে বরকত প্রদানের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে
৪৫. শাহর ইবনু হাওশাব, আবু উবাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য এক হাঁড়ি (গোশত) রান্না করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন: ’আমাকে সামনের একটি রান দাও।’ তিনি সামনের রানের গোশত পছন্দ করতেন। সে তাঁকে সামনের রান দিল। তিনি আবার বললেন: ’আমাকে সামনের রান দাও।’ তখন সে তাঁকে সামনের রান দিল। তিনি আবারও বললেন: ’আমাকে সামনের রান দাও।’ তখন আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! একটি ছাগলের সামনের রান কয়টি হয়? তিনি উত্তরে বললেন: ’যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার কসম! তুমি যদি চুপ থাকতে তাহলে যতক্ষণ আমি চাইতাম ততক্ষণ তুমি আমাকে সামনের রান দিতেই থাকতে।’[1]
[1] তাহক্বীক্ব: সনদ হাসান, শাহর ইবনু হাওশাবের কারণে।
তাখরীজ: তাবারানী, কাবীর ২২/৩৩৫ নং ৮৪২; তিরমিযী, শামাইল ১৭০।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
আবু বকরের সাথে দ্বন্দ্ব
নবীর সাথে সাথে আবু বকরের সাথে ইহুদীদের নানা ধরনের ধর্মতাত্ত্বিক তর্ক হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সে সব তর্কে বেশিরভাগ সময়ই মুসলিমরাই ইহুদিদের আক্রমণ করে বসতো। যুক্তির বিরুদ্ধে যুক্তি, তর্কের বিরুদ্ধে তর্ক, কথার বিরুদ্ধে কথার জবাব সংস্কৃতিটি মুসলিমদের মধ্যে একদম শুরু থেকেই অনুপস্থিত। সেই কারণেই আমরা দেখতে পাই, প্রশ্ন করায় আবু বকর ঘুষি মেরে বসতো[7]
আবু বকরের ইহুদি শিক্ষালয়ে প্রবেশ
একদিন আবু বকর সিদ্দীক (রা.) ইহুদিদের শিক্ষালয়ে প্রবেশ করলেন। তিনি সেখানে বিপুলসংখ্যক লোককে এক ব্যক্তির চারপাশে সমবেত দেখতে পেলেন। ঐ ব্যক্তিটি ফানহাস নামে পরিচিত ছিল। সে ছিল তাদের একজন পণ্ডিত ও ধর্মনেতা। তার কাছে তখন আশইয়া নামে তাদের আরেকজন ধর্মীয় পণ্ডিতও উপস্থিত ছিলেন।
আবু বকর (রা.) ফানহাসকে উদ্দেশ করে বললেন,
তোমার জন্য আফসোস, হে ফানহাস! আল্লাহকে ভয় কর এবং ইসলাম গ্রহণ কর।
আল্লাহর কসম! তুমি নিশ্চিতভাবেই জানো যে মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। তিনি তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তোমাদের কাছে সংরক্ষিত তাওরাত ও ইনজিলে তোমরা তাঁর বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পেয়েছ।”
তখন ফানহাস জবাবে আবু বকর (রা.)-কে উদ্দেশ করে বলল,
“আল্লাহর কসম, হে আবু বকর! আমাদের আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং তাঁরই আমাদের প্রয়োজন। আমরা তাঁর কাছে কাকুতি-মিনতি করি না, বরং তিনিই আমাদের কাছে তা করেন। আমরা তাঁর কাছে দীনহীন নই, বরং তিনিই আমাদের প্রতি নির্ভরশীল। যদি তিনি আমাদের প্রতি নির্ভরশীল না হতেন, তবে আমাদের সম্পদ থেকে ঋণ চাইতেন না—যেমনটি তোমাদের নবী ধারণা করেন। তিনি আমাদেরকে সুদ থেকে বিরত থাকতে বলেন, অথচ নিজেই তা আমাদের থেকে গ্রহণ করেন।”
আবু বকরের ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া
এই কথা শুনে আবু বকর (রা.) রাগান্বিত হলেন এবং ফানহাসের গালে জোরে চড় মারলেন। তিনি বললেন,
“যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই মহান সত্তার কসম! যদি তোমাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি না থাকত, তবে আমি তোমার মাথা চূর্ণ করতাম, হে আল্লাহর শত্রু!”
রাবি বলেন, এরপর ফানহাস রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গিয়ে অভিযোগ করল,
“হে মুহাম্মদ! আপনার সঙ্গী আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন। দয়া করে আপনি তা লক্ষ্য করুন।”
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আবু বকর (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন,
“তুমি তার সঙ্গে এমন আচরণ করলে কেন?”
আবু বকর (রা.) বললেন,
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিশ্চয়ই এই আল্লাহর শত্রু আল্লাহ সম্পর্কে জঘন্য মন্তব্য করেছে। সে বলেছে যে, আল্লাহ দরিদ্র, অথচ তারা ধনী। তার এই কথায় আমি অসন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার গালে আঘাত করেছি।”
কিন্তু ফানহাস সাথে সাথেই তার মন্তব্য অস্বীকার করে বসে।


আসুন ইহুদীরা এই বিষয়টি কেন উত্থাপন করেছিল সে সম্পর্কেও জেনে নেয়া যাক। ইহুদীদের এই প্রশ্নটি খুবই যৌক্তিক ছিল বলেই বোঝা যায়। ইসলাম ধর্মে আল্লাহকে সর্বশক্তিমান, অমুখাপেক্ষী এবং স্রষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যিনি সমস্ত সৃষ্টির উপরে ক্ষমতাবান এবং যিনি কারো ওপর নির্ভরশীল নন। আল্লাহর এই অবস্থান এমন একটি ধারণা সৃষ্টি করে, যেখানে তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিখুঁত এবং সব ধরনের প্রয়োজন থেকে মুক্ত। তবে, কোরআনের কিছু আয়াতে এমন কিছু বক্তব্য দেখা যায়, যা এই অবস্থান এবং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। যেমন, কোরআনের সূরা মুহাম্মদ-আয়াত ৭, সূরা বাকারা-আয়াত ২৪৫, সূরা হাদিদ-আয়াত ১১ এবং ১৮) এবং সূরা আত-তাগাবুন-আয়াত ১৭-এ আল্লাহ মানুষের কাছে ঋণ চেয়েছেন বলে দেখা যায়। যদি আল্লাহ সত্যিই সবকিছুর স্রষ্টা এবং মালিক হন, তবে কেন তাকে কোনো কিছুর জন্য সামান্য মানুষের কাছে “ঋণ” চাইতে হবে? যিনি হও বললেই সবকিছু হয়ে যায়, তিনি কাতর সুরে মানুষের কাছ থেকে ধারকর্য করছেন, বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর। এ ধরনের বক্তব্য একটি অমুখাপেক্ষী সত্তার দাবীর সাথে যৌক্তিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে এবং একটি গুরুতর দার্শনিক প্রশ্নের জন্ম দেয়: একটি সর্বশক্তিমান সত্তার পক্ষ থেকে মানুষের কাছে ঋণ চাওয়া কি তার প্রকৃতির সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করে না? আসুন আয়াতগুলো পড়ি, যেই আয়াতগুলো পড়লে যেকোন যুক্তিবাদী মানুষের মনেই প্রশ্নগুলো জাগতে পারে,
সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৭
O you who have believed, if you support Allāh, He will support you and plant firmly your feet.
— Saheeh International
O ye who believe! If ye help Allah, He will help you and will make your foothold firm.
— M. Pickthall
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন আর তোমাদের পাগুলোকে দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।
— Taisirul Quran
হে মু’মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তবে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সুদৃঢ় করে দেবেন।
— Rawai Al-bayan
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সমূহ সুদৃঢ় করবেন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা বাকারা, আয়াত ২৪৫
Who is it that would loan Allāh a goodly loan so He may multiply it for him many times over? And it is Allāh who withholds and grants abundance, and to Him you will be returned.
— Saheeh International
Who is it that will lend unto Allah a goodly loan, so that He may give it increase manifold? Allah straiteneth and enlargeth. Unto Him ye will return.
— M. Pickthall
এমন ব্যক্তি কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম কর্জ প্রদান করবে? তাহলে তার সেই কর্জকে তার জন্য আল্লাহ বহু গুণ বর্ধিত করে দেবেন এবং আল্লাহই সীমিত ও প্রসারিত ক’রে থাকেন এবং তাঁর দিকেই তোমরা ফিরে যাবে।
— Taisirul Quran
কে সে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণদান করে? অনন্তর তিনি তাকে দ্বিগুণ, বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহই (মানুষের আর্থিক অবস্থাকে) কৃচ্ছ বা স্বচ্ছল করে থাকেন এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
— Sheikh Mujibur Rahman
কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন? আর আল্লাহ সংকীর্ণ করেন ও প্রসারিত করেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরানো হবে।
— Rawai Al-bayan
কে সে, যে আল্লাহ্কে কর্যে হাসানা প্রদান করবে ? তিনি তার জন্য তা বহুগুনে বৃদ্ধি করবেন [১।] আর আল্লাহ্ সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করেন এবং তাঁর দিকেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা হাদিদ, আয়াত ১১
Who is it that would loan Allāh a goodly loan so He will multiply it for him and he will have a noble reward?
— Saheeh International
Who is he that will lend unto Allah a goodly loan, that He may double it for him and his may be a rich reward?
— M. Pickthall
এমন কে আছে যে, আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিবে? তাহলে তিনি তা তার জন্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবেন আর তার জন্য আছে সম্মানজনক প্রতিফল।
— Taisirul Quran
কে আছে যে আল্লাহকে দিবে উত্তম ঋণ? তাহলে তিনি বহু গুণে একে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।
— Sheikh Mujibur Rahman
এমন কে আছে যে, আল্লাহকে উত্তম করয দিবে ? তাহলে তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।
— Rawai Al-bayan
এমন কে আছে যে আল্লাহকে দেবে উত্তম ঋণ? তাহলে তিনি বহু গুণ এটাকে বৃদ্ধি করবেন তার জন্য। আর তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরুস্কার [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা হাদিদ, আয়াত ১৮
Indeed, the men who practice charity and the women who practice charity and [they who] have loaned Allāh a goodly loan – it will be multiplied for them, and they will have a noble reward.
— Saheeh International
Lo! those who give alms, both men and women, and lend unto Allah a goodly loan, it will be doubled for them, and theirs will be a rich reward.
— M. Pickthall
দানশীল পুরুষরা আর দানশীলা নারীরা আর যারা আল্লাহকে ঋণ দেয়- উত্তম ঋণ, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে, আর তাদের জন্য আছে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিদান।
— Taisirul Quran
দানশীল পুরুষ ও দানশীলা নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ বেশি এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম করয দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় দানশীল পুরুষগণ ও দানশীল নারীগণ এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ বেশী এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত ১৭
If you loan Allāh a goodly loan, He will multiply it for you and forgive you. And Allāh is [most] Appreciative1 and Forbearing,2
— Saheeh International
If ye lend unto Allah a goodly loan, He will double it for you and will forgive you, for Allah is Responsive, Clement,
— M. Pickthall
তোমরা যদি আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তবে তিনি তা তোমাদের জন্য দ্বিগুণ করে দেবেন, আর তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আল্লাহ (কারো কাজের) অতি মর্যাদাদানকারী, সহনশীল।
— Taisirul Quran
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ওটা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী ও সহনশীল।
— Sheikh Mujibur Rahman
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তিনি তা তোমাদের জন্য দ্বিগুন করে দিবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, পরম ধৈর্যশীল।
— Rawai Al-bayan
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর তিনি তোমাদের জন্য তা বহু গুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ গুণগ্ৰাহী, পরম সহিষ্ণু।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আল্লাহর স্রষ্টা কে প্রশ্ন করায় নবীর রাগ
একটি খুবই জরুরি প্রশ্ন, যেই প্রশ্নটি সকলের মাথাতেই আসে যে, আল্লাহ থেকে থাকলে আল্লাহকে কে বানিয়েছে! কিন্তু নবীকে এই প্রশ্ন করলে নবী তেলেবেগুনে জ্বলে উঠত বলে জানা যায় [8]
আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে ইহুদিদের ধৃষ্টতাপূর্ণ জিজ্ঞাসাবাদ
ইবন ইসহাক বলেন: আমাকে সাঈদ ইবন জুবায়র জানিয়েছেন যে, একবার কতিপয় ইহুদি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, “হে মুহাম্মদ, আল্লাহ তো সমগ্র সৃষ্টি জগতকে সৃষ্টি করেছেন, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?”
এ প্রশ্ন শুনে রাসূল (সা.) এত রেগে যান যে, তাঁর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে যায় এবং তিনি তাদেরকে আল্লাহর গযবের ব্যাপারে সাবধান করে দেন। এ সময়ে তাঁর কাছে জিবরীল (আ.) আসেন এবং তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, “হে মুহাম্মদ! আপনি শান্ত হোন।” এরপর তিনি ইহুদিদের প্রশ্নের যে জবাব আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলেন, তা তাঁকে শোনালেন:
“আপনি বলুন, তিনি আল্লাহ একক ও অদ্বিতীয়, আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন; তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি, তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।” (১১২:১-৪)
রাসূলুল্লাহ (সা.) সমবেত ইহুদিদের সামনে উপরোক্ত সূরা পড়ে শোনানোর পর তারা বলল, “হে মুহাম্মদ! আপনার এ বক্তব্য না হয় বুঝলাম। এখন বলুন, তাঁর আকার-আকৃতি কেমন? তাঁর হাত কেমন? তাঁর বাহু কেমন?”
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) আগের চাইতেও বেশি রাগান্বিত হলেন এবং তাদের পুনরায় সতর্ক করলেন। এ সময় জিবরীল (আ.) তাঁর কাছে আসলেন এবং প্রথমবার যা বলেছিলেন, তার পুনরাবৃত্তি করলেন। আর এ প্রশ্নের যে জবাব আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলেন, তা তাঁকে শোনালেন। আল্লাহর সেই জবাব হল:
“তারা আল্লাহকে যথোচিত সম্মান করে না। কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আকাশমণ্ডলী থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাকে শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।”(৩৯:৬৭)

বনু নাদীরের নিমন্ত্রণ এবং মুহাম্মদের পলায়ন
বনু নাদির গোত্রের প্রধানগণ নবী মুহাম্মদ ও তার সাহাবীদের নিমন্ত্রণ করেছিল আলোচনার উদ্দেশ্যে, চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল নবী মুহাম্মদের নবী হওয়ার প্রমাণ দেখাতে। ইহুদিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মুহাম্মদ যদি ইহুদি আলেমদের সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেন, তাহলে বনু নাদীর গোত্রের সবাই ইসলামের সত্যতা বুঝতে পারবে এবং ইসলামকে কবুল করে নিবে। একটি নির্দিষ্ট স্থানে মুহাম্মদ ৩০ জন সঙ্গী নিয়ে আসবে, অপরদিকে ইহুদিরাও ৩০ জনকে নিয়ে আসবে। নবী সেখানে গেলেন তার সাহাবীগণ সহ। কিন্তু বিতর্ক শুরুর আগেই হঠাৎ তিনি সেখান থেকে উঠে চলে আসলেন, অন্য সবাইকে ফেলে চুপিচুপি। অন্য সাহাবীগণ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেন, কিন্তু নবীর আর কোন খোঁজ খবর নেই! তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরে আরেকজনার কাছ থেকে শুনলেন নবী মদিনা চলে গেছেন। তারা মদিনা ফিরে আসলেন। ফিরে আসার পরে জানতে পারলেন, নবীকে নাকি জিব্রাইল এসে চুপিচুপি বলেছে, তারা যেখানে বসে ছিল সেই ঘরের ছাদে কিছু লোক নবীকে হত্যা করার জন্য বসে ছিল। কিন্তু সেই লোকগুলো কেন নবীর সাহাবীদের হত্যা করলো না, কেন সাহাবীদের কেউই এরকম কাউকে দেখতে পেলেন না, নবীও বা কাউকে কিছু না বলে একা একা চলে আসলেন কেন, তার সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। অর্থাৎ এই ইহুদিদের এই গোপন ষড়যন্ত্রের কথা শুধুমাত্র নবী একাই জানেন, যার কোন বাস্তব প্রমাণ নেই। সেইদিন বন্ধু সঙ্গি সাথীদের বিপদের মুখে ফেলে নবীর চম্পট দেয়ার এই ঘটনাটি কতটা হাস্যকর এবং ইহুদিদের সাথে বিতর্ক এড়াবার কৌশল, তা বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রই বুঝবেন। এর পরদিনই মুহাম্মদের নেতৃত্বে বনু নাদিরের ওপর আক্রমণ চালানো হয় [9] [10] –

রাসূলুল্লাহ (সা) তখন তাদের একটি ঘরের দেয়ালের পাশে বসা ছিলেন। তারা বলল, কে আছে যে, ছাদে উঠে ওখান থেকে একটি পাথর ফেলে দিয়ে মুহাম্মাদকে হত্যা করে আমাদেরকে তাঁর হাত থেকে নিষ্কৃতি দেবে? আমর ইবন জাহহাশ এগিয়ে এসে বলল, আমি এ জন্যে প্রস্তুত আছ। সে মতে পাথর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে সে স্থানে উঠে । রাসূলুল্লাহ্ (সা) তখনও সেখানে একদল সাহাবীসহ বসা ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন হযরত আবু বকর (রা) উমর (রা) এবং আলী (রা)। ওদের দুরভিসন্ধি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট আসমানী সংবাদ এসে যায়। তিনি কাউকে কিছু না বলে উঠে পড়েন এবং মদীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। দীর্ঘক্ষণ ঘটনাস্থলে ফিরে না আসায় সাহাবীগণ তাঁর খোঁজে বের হন, মদীনার দিক থেকে আগত এক লোককে দেখে তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কথা তাকে জিজ্ঞেস করে। সে ব্যক্তি বলেছিল যে, আমি তো তাঁকে মদীনায় প্রবেশ করতে দেখেছি। এ সংবাদ পেয়ে সাহাবীগণ সকলে মদীনায় ফিরে এলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট সমবেত হলেন। তিনি ইয়াহুদীদের বিশ্বাসঘাতকতার কথা তাঁদেরকে অবহিত করলেন।

উপরের দলিলে দেখতে পারলেন যে, মুহাম্মদ হুট করে তার নবুয়্যতের প্রমাণ না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। এবারে আসুন দেখা যাক, এর আগে পরে কী ঘটেছিল [11]
সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৪/ কর, খাজনা, অনুদান ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সম্পর্কে
পরিচ্ছেদঃ ১৬১. বনূ নযীরের ঘটনা সম্পর্কে।
২৯৯৪. মুহাম্মদ ইবন দাঊদ ইবন সুফইয়ান (রহঃ) ……. আবদুর রহমান ইবন কা’ব ইবন মালিক (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী হতে বর্ণনা করেছেন যে, কুরায়শ কাফিররা আবদুল্লাহ ইবন উবাই এবং তার মূর্তি-পূজক সাথীদের, যারা আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোক, এ মর্মে পত্র লেখে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের আগে মদীনায় অবস্থান করছিলেনঃ তোমরা আমাদের সাথী (মুহাম্মদ) কে জায়গা দিয়েছ। এ জন্য আমরা আল্লাহ্র নামে শপথ করে বলছি, হয়তো তাঁর সাথে যুদ্ধ কর, নয়তো তাঁকে বের করে দাও। অন্যথায় আমরা সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করে তোমাদের যোদ্ধাদের হত্যা করব এবং তোমাদের স্ত্রীদের আমাদের দখলে আনব।
আবদুল্লাহ ইবন উবাই এবং তার মূর্তিপূজারী সাথীরা এ খবর পাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌছবার পর তিনি তাদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং বলেনঃ তোমরা কুরায়শদের নিকট হতে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী চিঠি পেয়েছ, কিন্তু তা তোমাদের জন্য এত মারাত্মক নয়, যত না ক্ষতি তোমরা নিজেরা নিজেদের করবে। কেননা, তোমরা তো তোমাদের সন্তান-সন্ততি ও ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সংকল্প করছ।
তারা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এরূপ কথা শুনলো, তখন তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। এ খবর কুরায়শ কাফিরদের কাছে পৌছলে তারা বদর যুদ্ধের পর ইয়াহুদীদের নিকট লিখলোঃ তোমরা ঘরবাড়ী ও দুর্গের অধিকারী। কাজেই তোমাদের উচিত আমাদের সাথী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুদ্ধ করা। অন্যথায় আমরা তোমাদের সাথে এরূপ করব, সেরূপ করব। আর আমাদের ও তোমাদের স্ত্রীদের মাঝে কোন পার্থক্য থাকবে না।
যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তারা এরূপ চিঠি পেল, তখন বনূ নযীরের ইয়াহুদীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলো এবং তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ মর্মে অবহিত করে যে, আপনি আপনার সাথীদের থেকে ত্রিশজন নিয়ে আমাদের কাছে আসুন এবং আমাদের ত্রিশজন আলিম আপনার সংগে এক আলাদা স্থানে দেখা করবে। তারা আপনার কথা শুনবে, যদি তারা আপনার উপর ঈমান আনে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে আমরা আপনার উপর ঈমান আনব।
পরদিন সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের উপর হামলা করেন এবং তাদের অবরোধ করে বলেনঃ আল্লাহ্র শপথ! তোমরা যতক্ষণ অঙ্গীকার না করবে, ততক্ষণ আমি তোমাদের ব্যাপারে নিশ্চিত নই। তখন তারা (ইয়াহুদীরা) অঙ্গীকার করতে অস্বীকার করে। ফলে তিনি সেদিন তাদের সাথে দিনভর যুদ্ধে রত থাকেন। পরদিন তিনি বনূ নযীরকে বাদ দিয়ে বনূ কুরাইযার উপর আক্রমণ করেন এবং তাদের অঙ্গীকারবদ্ধ হতে বলেন। ফলে তারা তাঁর সংগে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। তখন তিনি তাদের নিকট হতে প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় বনূ নযীরকে অবরোধ করেন এবং তাদের সাথে ততক্ষণ যুদ্ধ করেন, যতক্ষণ না তারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়।
বনূ নযীরের লোকেরা তাদের উটের পিঠে ঘরের দরজা, চৌকাঠ ইত্যাদি যে পরিমাণ মালামাল নেওয়া সম্ভব ছিল, তা নিয়ে যায়। এবার বনূ নযীরের খেজুরের বাগান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকারে আসে, যা আল্লাহ্ তা’আলা বিশেষভাবে প্রদান করেন। যেমন আল্লাহ্ বলেনঃ
وَمَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَلاَ رِكَابٍ
অর্থাৎ আল্লাহ্ কাফিরদের মাল হতে যে সস্পদ তাঁর রাসূলকে প্রদান করেন, তা হাসিলের জন্য তোমরা তোমাদের ঘোড়া অথবা উট হাঁকাও নি, অর্থাৎ ঐ সম্পদ বিনা যুদ্ধে হাসিল হয়।
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ মালের অধিকাংশই মুহাজিরদের মাঝে বণ্টন করে দেন এবং অভাবগ্রস্ত দু’জন আনসারকে তা হতে অংশ প্রদান করেন। এ দু’জন ছাড়া অন্য আনসার সাহাবীদের মাঝে এ মাল বিতরণ করা হয়নি। অবশিষ্ট মাল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সাদকা স্বরূপ ছিল, যা বনূ ফাতিমার নিয়ন্ত্রণে ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পিতা হুয়াই ইবনে আখতাবকে জবাই
এরপরে বনু কুরাইজা গোত্রকে নবী ২৫ দিন ধরে অবরোধ করে রেখে শেষে তাদের আত্মসমর্পনে বাধ্য করে, এবং সেখানে বন্দীদের মধ্যে হুয়াই ইবনে আখতাবকেও অন্য পুরুষদের সাথে হত্যা করে [12]

প্রশ্ন জাগতে পারে, এই জবাই কী নবী নিজে করেছিল, নাকি তার অনুপস্থিতিতে তার সাহাবীরা করেছিল? সহিহ হাদিস থেকেই জানা যায়, মুহাম্মদ বানু কুরাইজার বাজারে শত শত মানুষকে লাইন ধরে দাড় করিয়ে নিজে উপস্থিত থেকে জবাই করছিলেন। সেই সময়ে একজন নারী, যিনি সম্ভবত স্বজন হারাবার বেদনাতেই পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলেন আর নবীকে গালি দিচ্ছিল। সে জানতো, এই কারণে তাকেও হত্যা করা হবে, কিন্তু হাসতে হাসতেই তিনি মৃত্যুকে বেছে নিয়েছিলেন। যা দেখে আয়িশা নিতান্তই অবাক হয়ে যায় [13] [14]
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৯/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১২১. নারী হত্যা সম্পর্কে
২৬৭১। ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী কুরাইযার কোনো মহিলাকে হত্যা করা হয়নি। তবে এক মহিলাকে হত্যা করা হয়। সে আমার পাশে বসে কথা বলছিল এবং অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তার নাম ধরে ডেকে বললো, অমুক মহিলাটি কোথায়? সে বললো, আমি। আমি (‘আয়িশাহ) বললাম, তোমরা কি হলো, (ডাকছো কেন)? সে বললো, আমি যা ঘটিয়েছি সেজন্য (সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়েছিলো)। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তাকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হলো। আমি ঘটনাটি আজও ভুলতে পারিনি। আমি তার আচরণে অবাক হয়েছিলাম যে, তাকে হত্যা করা হবে একথা জেনেও সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো।(1)
(1). হাসান।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৯/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৫. মহিলাদের হত্যা সম্পর্কে।
২৬৬২. ‘আবদুল্লাহ্ ইবন মুহাম্মদ নুফায়লী (রহঃ) ….. আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনূ কুরাইযার মহিলাদের থেকে কোন মহিলাকে হত্যা করা হয়নি, কিন্তু একজন মহিলাকে (হত্যা করা হয়), যে আমার পাশে বসে কথা বলছিল এবং অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পুরুষদের এক বাজারে হত্যা করেছিলেন। তখন জনৈক আহবানকারী সে মহিলার নাম ধরে ডাকে যে, অমুক মহিলা কোথায়? তখন সে বলে, এই তো আমি। আমি (আয়িশা) তাকে জিজ্ঞাসা করিঃ তোমার ব্যাপার কি? তখন সে বলেঃ আমি একটা ঘটনা ঘটিয়েছি, (অর্থাৎ সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দেয়)। আয়িশাহ (রাঃ) বলেনঃ তখন সে (আহবানকারী) তাকে নিয়ে যায় এবং তার শিরচ্ছেদ করে। তিনি বলেনঃ আমি সেই ঘটনাটি এখনো ভুলতে পারিনি। কেননা তার আচরণে তাজ্জবের ব্যাপার এই ছিল যে, সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিল, অথচ সে জানত যে, তাকে হত্যা করা হবে।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
এই ঘটনাটির আরেকটি বর্ণনা উল্লেখ করছি। এই বর্ণনাটি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক [15]
সেদিন বনী কুরায়জার রমণীদের মধ্যে হত্যা করা হয়েছিলো কেবল বানানা নাম্নী এক রমণীকে। সে ছিলো বনী নাজির সম্প্রদায়ের মেয়ে। কিন্তু তার বিয়ে হয়েছিলো বনী কুরায়জার এক যুবকের সাথে। তাদের দাম্পত্যপ্রণয় ছিলো অত্যন্ত গভীর। তখন অবরোধের শেষ পর্যায়। তাদের সকলেই বুঝলো, এবার আর তাদের নিস্তার নেই। বানানা তার স্বামীকে বললো, তোমাকে তো এবার আমার কাছ থেকে পৃথক করে ফেলা হবে। তাই যদি হয় তবে আমার আর বেঁচে থেকে কাজ কী? যুবক বললো, মোহাম্মদ জয়ী হলে তোমাকে হত্যা করবে না। করবে চিরদাসী। কারণ তার ধর্মে নারী হত্যার বিধান নেই। কিন্তু তুমি কারো দাসী হয়ে থাকবে, সে কল্পনাও আমার জন্য অসহনীয়। তার চেয়ে তুমি এক কাজ করো। ওই আটা পেশার যাঁতার চাকতিটি এখান থেকে নিচে গড়িয়ে দাও। যদি ওই চাকতির আঘাতে কোনো মুসলমান সৈনিক নিহত হয়, তবে সেই অপরাধে তোমাকে দেওয়া হবে মৃত্যুদণ্ড। আমি চাই তোমাকে মৃত্যুদণ্ডই দেওয়া হোক। বানানা তার স্বামীর কথামতো যাঁতার চাকতিটি দুর্গের একটি ফোকর দিয়ে নিচে গড়িয়ে দিলো। বাইরে তখন মধ্যাহ্নের প্রখর উত্তাপ। ওই সময় মুসলিম সৈন্যদের অনেকে দুর্গের দেয়ালের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। চাকতি সোজা গড়িয়ে পড়লো সেরকম বিশ্রামরত এক সৈনিকের মাথায়। ফলে অল্পক্ষণের মধ্যে শাহাদত বরণ করলেন তিনি।
ওরওয়ার বর্ণনায় এসেছে, জননী আয়েশা বলেছেন, যখন বনী কুরায়জার পুরুষদেরকে হত্যা করা হয়, তখন বানানা ছিলো আমার কাছে। প্রায় সারাক্ষণ হাস্য-কৌতুকে মেতে থাকা ছিলো তার স্বভাব। ওদিকে তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করা হচ্ছিলো, আর সে মাঝে মাঝেই কৌতুক করে বলছিলো, কী মজা! আজ বনী কুরায়জার পুরুষদেরকে বধ করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বাইরে থেকে আওয়াজ এলো, বানানা কোথায়? সে সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো, এই যে আমি এখানে । আমি বললাম, হতভাগিনী! লোকটি তোমার কে? সে বললো, আমাকে ডাকা হচ্ছে হত্যা করার জন্য। আমি বললাম, কী কারণে? সে বললো, নিশ্চয় কোনো অপরাধ করেছি। জননী আয়েশা আরো বলেছেন, যার উপরে মৃত্যুর পরওয়ানা ঝুলছে, তার এরকম আনন্দ-উচ্ছলতা করার কথা আমি জীবনে শুনিনি। তার কথা আমার আজও মনে পড়ে যায় ।

এবারে আসুন একটি ওয়াজ শুনি,
নবী মুহাম্মদের খায়বার আক্রমণ
অন্যান্য ইহুদী গোত্রের মতই, নবী মুহাম্মদ অত্যন্ত ধনী ইহুদী গোত্রের অঞ্চল খায়বার আক্রমণ করেন। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে (৭ হিজরি) এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় মদিনা নগরী থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত খায়বার নামক এলাকায়। খায়বার ছিল একসময়ের ইহুদি অধ্যুষিত একটি সমৃদ্ধ উপনিবেশ, যেখানে শক্তিশালী দুর্গ, চাষযোগ্য জমি ও খনিজসম্পদ ছিল। এখানকার ইহুদিরা শুধু ধর্মীয়ভাবেই নয়, বরং অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকেও তৎকালীন আরব সমাজে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখে চলেছিল। মুসলিমদের ইতিহাসে বলা হয়, খায়বারের ইহুদি নেতারা বনু কুরাইজা ও বনু নাযির গোত্রকে মদিনার মুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকে দিয়েছিল এবং পরবর্তীতে তারা গাতাফান গোত্র ও মরু বেদুঈনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে মদিনা আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল, তবে মুসলিমদের এসব তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে কারণ এইসকল তথ্যই একপাক্ষিক। এইসব প্রেক্ষাপটে নবী মুহাম্মদের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী খায়বার আক্রমণ করে এবং একের পর এক দুর্গ দখল করে নেয়।
যুদ্ধটি ছিল সংঘর্ষপূর্ণ এবং এর ফলে বহু ইহুদি নিহত ও বন্দি হয়। যুদ্ধে মুসলমানরা জয়লাভ করলেও খায়বারের ইহুদিদের সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত করা হয়নি। বরং একটি চুক্তির মাধ্যমে তাদের খায়বারে বসবাস করতে দেওয়া হয়—এই শর্তে যে, তারা প্রতি বছর উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক মুসলমানদেরকে প্রদান করবে। এই যুদ্ধ-পরবর্তী সময়েই একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে যায়, যা ইসলামী ঐতিহাসিকদের মধ্যেও বহু বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। আত্মীয় স্বজন হারানো শোকার্ত একজন ইহুদি নারী নবী মুহাম্মদকে একটি ভোজের আমন্ত্রণ জানান এবং সেখানে বিষ মেশানো ছাগলের মাংস পরিবেশন করেন। নবী তা খাওয়ার পর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন এবং এই বিষের প্রভাব দীর্ঘ সময় তার স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল এবং এক সময়ে নবীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল।
স্বজনদের লাশের ওপর দিয়ে আনা হলো সাফিয়াকে
নবী মুহাম্মদের বাহিনীর হাতে একে একে সাফিয়্যার পিতা, চাচা, স্বামী সহ আত্মীয়স্বজনদের অধিকাংশ নিহত হন। মানসিকভাবে সুস্থ একজন নারী নিজের পুরো পরিবার পরিজন হারানোর ভয়াবহ শোক রাতারাতি ভুলে স্বেচ্ছায় নবীর বিছানায় উঠে রঙ্গলীলা আর প্রেমকেলী করতে শুরু করবে, এটি নিতান্তই অবাস্তব একটি ইসলামিক দাবী! কামূস দুর্গের পতনের পরে সাফিয়্যা সহ অনেক নারী মুসলিমদের হাতে গনিমতের মাল হিসেবে বন্দী হয়। এদের মধ্যে সাফিয়্যাকে হযরত বিলাল নিয়ে আসার সময় সাফিয়্যার আত্মীয়স্বজনদের ক্ষতবিক্ষত লাশের ওপর দিয়েই নিয়ে আসেন। খুবই ভয়াবহ একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তখন। এই বর্ণনাটি পাওয়া যায় আসহাবে রাসুলের জীবনকথা বই সহ অনেক সীরাত গ্রন্থেই [16] –

সাফিয়ার স্বামী কিনানাকে হত্যা
নববিবাহিতা সাফিয়ার স্বামীর নাম ছিল কিনানা, যিনি ছিলেন খায়বারের ইহুদিদের কোষাধ্যক্ষ বা খাজাঞ্চী, বা ধনভান্ডারের রক্ষক। খায়বারের লুকানো সম্পদ কোথায় আছে সেটি জানার জন্য কিনানাকে প্রচণ্ড রকম নির্যাতন করেন বলে জানা যায়। শুধু তাই নয়, এরপরে সাফিয়ার স্বামী কিনানাকে খুবই নির্মমভাবে হত্যা করেছিল বলে জানা যায় [17]
সীরাতুন নবী (সা) পৃষ্ঠা ৩৫৪
উম্মুল মু’মিনীন সুফিয়্যার ঘটনা
ইবন ইসহাক বলেন: আল্লাহ যখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বনু আবুল হুকায়কের কামূস দুর্গের বিজয় দান করলেন, তখন অন্য এক রমণীসহ সুফিয়্যা বিনত হুয়াই ইবন আখতাব তাঁর কাছে আনা হলেন। এদেরকে নিহত ইহুদিদের মৃতদেহের পাশ দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। সুফিয়্যার সঙ্গী রমণীটি যখন তাদের মৃতদেহ দেখতে পেল, তখন সে ভীষণ চিৎকার জুড়ে দিল, নিজের মুখমণ্ডলে করাঘাত করতে লাগল এবং মাথায় ধুলো মাখাতে লাগল।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তা দেখে বললেন, “ঐ শয়তান মহিলাটিকে আমার নিকট থেকে দূরে সরিয়ে নাও!” এরপর তিনি সুফিয়্যাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে বললেন। সুফিয়্যা নিজেকে অত্যন্ত গুটিয়ে নিয়ে তাঁর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন, আর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর ওপর নিজের চাদরখানা বিছিয়ে দিলেন। তখন উপস্থিত মুসলমানরা বুঝে নিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে নিজের জন্যে বেছে নিয়েছেন।
এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বিলালকে লক্ষ্য করে বললেন, “যখন তুমি ঐ ইহুদি মহিলাকে ঐভাবে করতে দেখলে, তোমার হৃদয় থেকে কি দয়া-মায়া উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিল, হে বিলাল! তুমি যে দুটি মহিলাকে তাদের আত্মীয়-স্বজনের মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে এলে?”
সুফিয়্যা কিনানা ইবন রবী’ ইবন আবুল হুকায়কের স্ত্রী থাকা অবস্থায় একদিন স্বপ্ন দেখেন যে, চন্দ্র তাঁর কোলে এসে পড়েছে। তিনি তাঁর স্বামীর কাছে স্বপ্নটি বিবৃত করলে সে বলেছিল, “তুমি হিজাজ অধিপতি মুহাম্মদের পাণিপ্রার্থনা করছো বৈ অন্য কিছু নয়।” কথাটি বলে সে এত জোরে তাঁর গালে একটি চপেটাঘাত করল যে, এর ফলে তাঁর চোখ নীল হয়ে যায়। সুফিয়্যা যখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আনা হলেন, তখনও তাঁর চেহারায় সেই চপেটাঘাতের চিহ্নটি স্পষ্ট ছিল।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কী?” তখন তিনি তাঁকে সে সম্পর্কে অবহিত করলেন।
কিনানা ইবন রবী’র শাস্তি
কিনানা ইবন রবী’কে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট আনা হলো। বনু নযীরের গুপ্তধনরাশি তার কাছেই রক্ষিত ছিল। তিনি তাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, কিন্তু সে তা কোথায় আছে জানাতে অস্বীকার করল।
এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এক ইহুদিকে আনা হলো। সে জানাল যে, কিনানা ইবন রবী’কে প্রতিদিন ভোরে একটি বাড়ির ভগ্নাবশেষের চারদিকে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) কিনানাকে বললেন, “তুমি কি জ্ঞাত আছো যে, এরপর যদি তোমার কাছে গুপ্তধন পাওয়া যায়, তবে তোমাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হবে?”
সে বলল, “হ্যাঁ।”
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সেই বিরান বাড়িটি খননের নির্দেশ দিলেন। যথারীতি সেখান থেকে কিছু গুপ্তধন উদ্ধারও করা হলো। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে অবশিষ্ট গুপ্তধন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, কিন্তু সে তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানাল।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) যুবায়র ইবন আওয়ামকে নির্দেশ দিলেন, “তার কাছ থেকে গুপ্তধন উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তাকে শাস্তি দিয়ে যেতে থাকো।”
যুবায়র তার বুকে চকমকি পাথর ঘষে আগুন জ্বালিয়ে শাস্তি দিতে থাকলেন, যতক্ষণ না সে আধমরা হয়ে পড়ল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে…

মানুষ যেভাবে মালে পরিণত হয়
লাজলজ্জার বালাই না করেই ইসলাম একজন মানুষকে মাল হিসেবে পরিগণিত করে, বিশেষ করে নারীকে। একজন মানুষ, যিনি কিছুক্ষণ আগেও স্বাধীন ছিলেন, ইসলামের ছোবলে তিনি পরিণত হলেন একটি মালে! আসুন একটি হাদিস পড়ি, [18]
সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৪/ কর, খাজনা, অনুদান ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সম্পর্কে
পরিচ্ছেদঃ ১৫৯. গনীমতের মালে নবী (ﷺ) -এর পছন্দনীয় অংশ
২৯৮৪. নাসর ইবন আলী (রহঃ) ….. আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সাফিয়্যা ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পসন্দ করা মালের অংশ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
গনিমতের মালের ভাগাভাগি
নবী মুহাম্মদ এবং তার জিহাদী সেনাবাহিনী খায়বার আক্রমণের পরে খায়বার জয় করেন এবং নারী ও শিশুদের গনিমতের মাল হিসেবে বন্দী করেন। এরপরে বন্দী নারীদের দলবেঁধে একসাথে করা হয় ভাগাভাগির জন্য। যেন গরু ছাগলের মত, যার যাকে ইচ্ছা বেছে নিবে। তখন নবীর সাহাবী দাহিয়া কালবী নবীর কাছে একটি দাসী চাইতেই নবী তাকে বললেন, এদের মধ্য থেকে যাকে পছন্দ নিয়ে যাও। তিনি বেছে বেছে সবচাইতে সুন্দরী সাফিয়্যা বিনত হুয়াইকে নিলেন নিজের যৌনদাসী হিসেবে। এমন সময় এক ব্যক্তি নবী মুহাম্মদকে সাফিয়্যার রূপের কথা বলতেই, নবী দিহয়া সহ সাফিয়্যাকে ডেকে পাঠালেন। তারপর দিহয়া সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলে নবী সাফিয়্যাকে নিজের জন্য রেখে দিলেন, এবং দিহয়াও নবীর মনের খায়েস বুঝতে পেরে সাফিয়্যার বদলে সাতজন দাসীকে চেয়ে বসলেন। নবী সাতজন দাসীর বিনিময়ে সাফিয়্যাকে নিজের ভাগে নিলেন। তারপর ফেরার পথেই তিনি সাফিয়্যার সঙ্গে বাসর উদযাপন করেন [19] [20] –
সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৪/ কর, খাজনা, অনুদান ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সম্পর্কে
পরিচ্ছেদঃ ১৬২. খায়বরের যমীনের হুকুম সম্পর্কে।
২৯৯৯. দাঊদ ইবন মু’আয (রহঃ) …… আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বরের উপর যুদ্ধ পরিচালনা করেন। আমরা যুদ্ধ করে তা জয় করি। অবশেষে বন্দীদের একত্রিত করা হয় (যাতে মুসলিমদের মাঝে তা সহজে বন্টন করা যায়)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৭/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৪. দাসী আযাদ করে তাকে বিবাহ করা ফযীলত
৩৩৬৬। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের যুদ্ধে যান। বর্ণনাকারী বলেন আমরা খায়বারের কাছে অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করলাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ তালহা (রাঃ) সাওয়ার হলেন। আমি ছিলাম আবূ তালহা (রাঃ) এর রাদীফ (তাঁর বাহনে তার পশ্চাতে উপবিষ্ট) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের গলি দিয়ে রওনা দিলেন। এ সময় আমার হাটু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উরুদেশ স্পর্শ করছিল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উরু থেকে লুঙ্গী সরে যাচ্ছিল। আর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উকর শুভ্রতা দেখছিলাম। যখন তিনি বসতীতে প্রবেশ করলেন তখন বললেন, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হোক। বস্তুত আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের অঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন সতর্ককৃতদের প্রভাত হয় কত মন্দা’ একথা তিনি তিনবার বলেন।
বর্ণনাকারী বলেন ঐ সময় লোকজন তাদের কাজে বের হচ্ছিল। তারা বলতে লাগলো, আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ। বর্ণনাকারী আবদুল আযীয বলেন, আমাদের কোন কোন উস্তাদ বলেছেন, পুরা বাহিনী। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা খায়বার জয় করলাম, এবং বন্দীদের একত্রিত করা হল। তখন দিহয়া (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কায়েদীদের মধ্যে থেকে আমাকে একজন দাসী প্রদান করুন। তিনি বললেনঃ যাও একজন দাসী নিয়ে নাও। তিনি সাফিয়্যা বিনত হুয়াই কে নিয়ে নিলেন। তখন এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ইয়া নবী আল্লাহ! আপনি বনু কুরায়যা ও বনু নযীরের সর্দার হুযাইনের কন্যা সাফিয়্যাকে দিহয়াকে দিয়ে দিয়েছেন? ইনি একমাত্র আপনারই উপযুক্ত হতে পারে। তিনি বললেন, তাকে সাফিয়্যাসহ ডাক।
তারপর দিহয়া (রাঃ) সাফিয়্যাসহ উপস্থিত হলেন। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন, তখন তিনি দিহয়া (রাঃ) কে বললেন, তুমি সাফিয়্যা ব্যতীত কয়েদীদের মধ্য থেকে অন্য কোন দাসী নিয়ে নাও। বর্ণনাকারী বলেন তিনি সাফিয়্যাকে আযাদ করলেন এবং তাঁকে বিবাহ করলেন।
আনাসকে লক্ষ্য করে সাবিত (রাঃ) বললেন, হে আবূ হামযা! তিনি তাঁকে কী মাহর দিলেন? তিনি বললেন, তিনি তাঁর সত্তাকে মুক্তি দান করেন এবং এর বিনিময়ে তাঁকে বিবাহ করেন। তারপর তিনি যখন (ফেরার) পথে ছিলেন তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) সাফিয়্যা (রাঃ) কে তাঁর জন্য প্রস্তুত করেন এবং রাতে তার কাছে পাঠিয়ে দেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে বাসর উদযাপনের পর ভোর হলে তিনি ঘোষণা করলেন, যার নিকট যা কিছু আছে তা নিয়ে যেন উপস্থিত হয়। আর তিনি চামড়ার বড় দস্তরখান বিছালেন। বর্ণনাকারী বলেন, একথা শুনে কেউ পানীয়, কেউ খেজুর ও কেউ ঘি নিয়ে হাযির হল। তারপর এসব মিলিয়ে তারা হায়স তৈরী করেন। আর তাই ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওলীমা।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
দিহয়াতুল কালবীর ঝোপ বুঝে কোপ
গনিমতের মাল ভাগাভাগির শুরুতেই, নবী মুহাম্মদের সাহাবী দাহিয়া কালবী খায়বারের সেরা সুন্দরী সাফিয়াকে নিজের যৌন দাসী করার আবদার করেন। নবী মুহাম্মদ সাফিয়াকে না দেখেই সেই আবদার মঞ্জুর করে ফেলেন। কিন্তু একটু পরেই একজন সাফিয়ার রূপ সৌন্দর্য্যের কথা নবীকে বলায়, নবী দাহিয়াকে ডেকে পাঠান এবং সাফিয়াকে ফেরত নেয়ার চেষ্টা করেন। নবীর সাহাবী দাহিয়া নিশ্চয়ই নবীর চরিত্র কেমন তা সম্পর্কে অবগত ছিলেন, তাই তিনিও এর বিনিময়ে গুনে গুনে সাতটি দাসী নিয়ে তারপরে সাফিয়াকে দিতে রাজি হয়। একে বলা হয় ঝোপ বুঝে কোপ মারা। দাহিয়া নবীর নারীলোভ সম্পর্কে জানতেন বলেই, এরকম কোপটি মারতে পেরেছিলেন [21]
সুনান ইবনু মাজাহ
১২/ ব্যবসা-বাণিজ্য
পরিচ্ছেদঃ ১২/৫৭. পশুর পরিবর্তে পশু অধিক দরে নগদ ক্রয়-বিক্রয়।
২/২২৭২। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা (রাঃ) কে সাতটি দাসীর বিনিময়ে খরিদ করেন। রাবী আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, দিহয়াতুল কালবী (রাঃ) এর নিকট থেকে (তাকে খরিদ করেন)।
মুসলিম ১৩৬৫, আবূ দাউদ ২৯৯৭ আহমাদ ১৩১৬৩।
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবী হুসায়ন বিন উরওয়াহ সম্পর্কে আবুল ফাতহ আল-আযদী বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি সত্যবাদী। যাকারিয়্যা বিন ইয়াহইয়া আস-সাজী বলেন, তার মাঝে দুর্বলতা রয়েছে। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ১৩১৯, ৬/৩৯০ নং পৃষ্ঠা)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
ষোড়শী তরুণীর সাথে ৫৭ বছরের নবী
সাফিয়া বিনতে হুয়াই যখন নবী মুহাম্মদের কাছে বন্দী হন, তখন তাঁর বয়স আনুমানিক ১৬ বছর, অন্যদিকে মুহাম্মদের বয়স ছিল প্রায় ৫৭ বছর। এই বয়সের পার্থক্য যে কোনো সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকেই বিস্ময়কর এবং প্রশ্ন উত্থাপনকারী। বিশেষ করে যখন বিবাহটি হয় যুদ্ধবন্দিত্ব ও পরিবার ধ্বংসের প্রেক্ষাপটে। একজন ষোড়শী তরুণী, যার সামনে হঠাৎ করেই তাঁর স্বামী ও পিতার রক্তাক্ত মৃতদেহ, স্বজনদের লাশ চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তাঁকে এক বিজয়ীর বিছানায় নেয়ার জন্য সাজানো হচ্ছে, জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে, যে বয়সে তার দাদার সমান, এটি নিছক একটি বিবাহ নয়, বরং ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রকাশ। তাঁর সম্মতি এখানে কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকেই যায়।
আধুনিক মানবাধিকার, নারীর সম্মান এবং স্বাধীন সিদ্ধান্তের আলোকে এই ধরনের ঘটনা গভীর প্রশ্ন তোলে। এমন একটি সম্পর্ক, যেখানে বয়সের ব্যবধান অত্যন্ত বেশি, আর পরিস্থিতিগতভাবে মেয়েটি মানসিকভাবে ভঙ্গুর অবস্থায়, সেটিকে ভালোবাসার সম্পর্ক না বলে অধিকতর বাস্তব ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। ইতিহাসে এমন বিবাহকে ‘আল্লাহর ইচ্ছা’ বা ‘ধর্মীয় নির্দেশ’ হিসেবে দেখানো হলেও, আসলে তা ছিল রাজনীতি, ক্ষমতা ও বিজয় প্রতিষ্ঠার কৌশল। সাফিয়ার ঘটনাও এর ব্যতিক্রম নয়। এই সম্পর্কের পেছনে ছিল নারীর ইচ্ছার অনুপস্থিতি, যুদ্ধজয়ের প্রতীক হিসেবে নারীদেহ ভোগ ও দখল এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর স্থান নির্ধারণের এক নির্মম বাস্তবতা। আসুন সাফিয়ার কাছ থেকেই জেনে নিই, বন্দী হওয়ার সময় নবীকে কী পরিমাণ ঘৃণা করতো সাফিয়া [22]
hakim:6789 – Abū ʿAbdullāh al-Aṣbahānī > al-Ḥasan b. al-Jahm b. Maṣqalah > al-Ḥusayn b. al-Faraj > Muḥammad b. ʿUmar > Muḥammad b. Mūsá > ʿUmārah b. al-Muhājir > Āminah b. Abū Qays al-Ghifāriyyah
[Machine] “I am one of the women who accompanied Safiyyah to the Messenger of Allah ﷺ . I heard her say, ‘I did not reach the age of seventeen when I entered upon the Messenger of Allah ﷺ .’ He said, ‘And Safiyyah passed away at the age of fifty-two during the time of Mu’awiyah and she was buried in the Baqi’ cemetery.’ Al-Dhahabi remained silent about it in his summary.”
– Remains Silent (Dhahabī)
§ Safiyyah b. Huyayy in Book of the Companions

আদৌ কী তাদের বিয়ে হয়েছিল?
আনাস ইবন মালিক নবী মুহাম্মদের ঘরের সেবক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন, যার কারণে নবীর ঘরের ভেতরের কাহিনী সম্পর্কে তার জানাশোনা অন্যদের থেকে বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। আনাস থেকে যেই বিবরণ জানা যায়, খায়বার থেকে ফেরার পথে নবী সাফিয়ার সাথে সঙ্গম করেন, কিন্তু সেই সময়ে মুসলিমরা আসলে কেউই নিশ্চিত ছিলেন না, সাফিয়াকে নবী স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছেন নাকি যোউনদাসী হিসেবে। পরবর্তীতে তারা পর্দা দেখে বুঝতে পারেন, সাফিয়াকে স্ত্রী হিসেবেই নবী গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কীভাবে গ্রহণ করেছেন, সেটি তো পরের বিষয়। তাদের তো বিবাহ হতে হবে, সেখানে সাক্ষীও লাগবে। ইসলামের বিধান তো সেটিই। সাক্ষীসাবুদ ছাড়া নিজে নিজে নবী কীভাবে বিবাহ করলেন? আর বিবাহ করে থাকলে, অন্যরা জানলো না কেন? আসলেই কী কোন বিয়ে হয়েছিল? নাকি নবী স্রেফ অল্পবয়সী সাফিয়াকে নিয়ে বিছানায় চলে গেছেন? [23]
সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৬/ নিকাহ (বিবাহ)
পরিচ্ছেদঃ ৭৯. সফরে সহবাস
৩৩৮৫. আলী ইবন হুজুর (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বৰ্ণিত। তিনি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার এবং মদীনার মধ্যস্থলে তিনদিন সফিয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ)-এর সংগে কাটান। আমি তার ওয়ালীমার জন্য মুসলিমদের দাওয়াত দিলাম, আর তাতে মাংস ও রুটি কিছুই ছিল না। তিনি চামড়ার দস্তরখান বিছাতে আদেশ করলেন, লোকেরা তার উপর খেজুর, পনির, ঘি রাখতে লাগলো, এটাই ছিল তাঁর ওয়ালীমা। মুসলিমগণ বলতে লাগলো, তিনি উম্মাহাতুল মুমিনীনের একজন না তাঁর দাসীদের একজন? তারা বললোঃ যদি তার সামনে পর্দা লটকান হয়, তবে তিনি উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের অন্তর্ভুক্ত। আর যদি পর্দা না করা হয়, তবে তিনি বাঁদীদের একজন। যখন প্রত্যাবর্তনের সময় হলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সওয়ারীর হাওদার পেছনে তাঁর বসার ব্যবস্থা করা হলো এবং অন্যান্য লোক ও তার মধ্যে পর্দা ঝুলানো হলো।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
নবীকে ঘৃণা করতো সাফিয়া
এবারে আসুন সবচাইতে জরুরি তথ্যটি জেনে নিই। নবীকে কী সাফিয়া বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল? নবীর প্রতি সাফিয়া কী প্রেম অনুভব করেছিল? নবীর বিছানায় যাওয়ার জন্য সাফিয়া কী আগে থেকেই মরিয়া হয়ে ছিল? অন্যের স্ত্রী থাকা অবস্থাতেই কী বেগানা পুরুষ নবীকে স্বপ্নে দেখে সাফিয়ার স্বপ্নদোষ হতো? অনেক মুসলিমই একটি বর্ণনা নেনে দাবী করেন, নবীর খায়বার আক্রমণের আগেই সাফিয়া নবীকে নিয়ে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। বর্ণনাটি সত্য হলেও, বর্ণনাটি সাফিয়া কী উদ্দেশ্যে করেছিল তা ধারণা করা যায়। নইলে মুসলিমরা সত্যিই কী এটি বিশ্বাস করে যে, তাদের বিশ্বাসের মাতা সাফিয়া কিনানার স্ত্রী থাকা অবস্থাতেই পরপুরুষ বৃদ্ধ মুহাম্মদকে স্বপ্নে দেখে স্বপ্নদোষ ঘটিয়ে ফেলতেন? অথচ সাফিয়ার হাদিস থেকে জানা যায়, নবীর প্রতি সেই সময় পর্যন্ত প্রচণ্ড ঘৃণা ছিল সাফিয়ার [24]
Sahih Ibn Habban (11/607)
عن عبد الله بن عمر رضي الله عنه قال : … قالت صفية :وكان رسول الله صلى الله عليه وسلم من أبغض الناس إليَّ قَتل زوجي وأبي وأخي فما زال يعتذر إليَّ ويقول : ( إن أباك ألَّب علي العرب وفعل وفعل ) حتى ذهب ذلك من نفسي .۔۔ رواه ابن حبان في ” صحيحه ” ( 11 / 607 ) ، .
Abdullah Ibn Umar narrates that Safiya said:”Rasool Allah was among the most hated person for me, while he killed my husband, father and brother. Then he used to make excuses that my father used to incite the Arabs against him. He kept on apologizing for so long till I was no more angry.
Grading: Sahih (authentic)
সাফিয়াকে বিছানায় তোলা হয় অল্প পরেই
নিচের হাদিসগুলো লক্ষ্য করুন। খায়বার থেকে মদিনা ফেরার পথে খায়বার থেকে মাত্র কয়েক মাইল দুরে সাদ্দুস্ সাহ্বা নামক স্থানেই সাফিয়ার সাথে সঙ্গম করে নবী। সম্পূর্ণ নিশ্চিতভাবে এই জায়গাটির অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি, কিন্তু এই জায়গাটি খায়বার থেকে ৬-৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ছিল, অর্থাৎ খুবই কাছাকাছি একটি জায়গা ছিল। উটের পিঠে চড়ে এখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টাতেই পৌঁছানো সম্ভব। অর্থাৎ, মদিনা ফেরার পথে মাত্র সদ্য পিতা, স্বামী, স্বজন হারানো সাফিয়াকে বিছানায় তুলেছিল নবী মুহাম্মদ [25] [26]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৬/ জিহাদ ও যুদ্ধকালীন আচার ব্যবহার
পরিচ্ছেদঃ ৫৬/৭৪. যে ব্যক্তি খিদমত গ্রহণের উদ্দেশে যুদ্ধে বালকদের নিয়ে যায়।
২৮৯৩. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ ত্বলহাকে বলেন, তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে একটি ছেলে খুঁজে আন, যে আমার খেদমত করতে পারে। এমনকি তাকে আমি খায়বারেও নিয়ে যেতে পারি। অতঃপর আবূ ত্বলহা (রাঃ) আমাকে তার সাওয়ারীর পেছনে বসিয়ে নিয়ে চললেন। আমি তখন প্রায় সাবালক। আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমত করতে লাগলাম। তিনি যখন অবতরণ করতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দু‘আ পড়তে শুনতামঃ ‘হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি।’ পরে আমরা খায়বারে গিয়ে হাজির হলাম। অতঃপর যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে দুর্গের উপর বিজয়ী করলেন, তখন তাঁর নিকট সাফিয়্যা বিনতু হুয়াই ইবনু আখতাবের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করা হলো, তিনি ছিলেন সদ্য বিবাহিতা; তাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে নিজের জন্য মনোনীত করলেন। অতঃপর তাঁকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন। আমরা যখন সাদ্দুস্ সাহ্বা নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন সফিয়্যাহ (রাঃ) হায়েয থেকে পবিত্র হন। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানে তাঁর সঙ্গে বাসর যাপন করেন। অতঃপর তিনি চামড়ার ছোট দস্তরখানে ‘হায়সা’ প্রস্তুত করে আমাকে আশেপাশের লোকজনকে ডাকার নির্দেশ দিলেন। এই ছিল আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে সাফিয়্যার বিয়ের ওয়ালিমা। অতঃপর আমরা মদিনার দিকে রওয়ানা দিলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর পেছনে চাদর দিয়ে সফিয়্যাহ্কে পর্দা করছেন। উঠানামার প্রয়োজন হলে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর উটের কাছে হাঁটু বাড়িয়ে বসতেন, আর সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর উপর পা রেখে উটে আরোহণ করতেন। এভাবে আমরা মদিনার নিকটবর্তী হলাম। তখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উহুদের দিকে তাকিয়ে বললেন, এটি এমন এক পর্বত যা আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। অতঃপর মদিনার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ হে আল্লাহ, এই কঙ্করময় দু’টি ময়দানের মধ্যবর্তী স্থানকে আমি ‘হারাম’ বলে ঘোষণা করছি, যেমন ইব্রাহীম (আঃ) মক্কাকে ‘হারাম’ ঘোষণা করেছিলেন। হে আল্লাহ্! আপনি তাদের মুদ এবং সা‘তে বরকত দান করুন।’ (৩৭১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৯১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১৪/ কর, ফাই ও প্রশাসক
পরিচ্ছেদঃ ২১. গানীমাতের মালে সেনাপতির অংশ
২৯৯৫। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আমরা খায়বারে আক্রমণ করি। মহান আল্লাহ যখন এ দুর্গ জয় করালেন তখন হুয়াইয়ের কন্যা সফিয়্যাহর সৌন্দর্যের কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বর্ণনা করা হয়। তিনি সদ্য বিবাহিতা ছিলেন এবং তার স্বামী এ যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নিজের জন্য পছন্দ করলেন। অতঃপর তাকে নিয়ে সেখান থেকে রওয়ানা হলেন। ’আমরা সাদ্দুস-সাহবা নামক জায়গাতে পৌঁছলে তিনি মাসিক ঋতু থেকে পবিত্র হন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে নির্জনবাস করেন।[1]
[1]. সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
অনিশ্চিত সূত্র থেকে এই জায়গাটির অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করেছি, এই তথ্যটি সম্পর্কে আমি একদম নিশ্চিত নই। এই জায়গাটি হওয়ার কথা, A location within approximately 6 miles (9.6 kilometers) to 30 kilometers south of Khaybar. খায়বার থেকে যেখানে হেঁটে পৌঁছাতে ৭ ঘণ্টার মত লাগার কথা। উটের পিঠে চড়ে গেলে আরও কম সময় লাগাড় কথা।

একটানা তিনরাত তাঁবুর ভেতর
নবী মুহাম্মদ সাফিয়াকে পেয়ে নিশ্চয়ই খুবই আনন্দিত ছিলেন, কারণ সাফিয়াকে পাওয়ার পরেই সেখানেই নবী ও তার বাহিনী টানা তিনরাত অবস্থান করে। এই তাঁবুর অভ্যন্তরের ঘটনা হয়তো কখনোই পুরোপুরি জানা যাবে না। কিন্তু ইতিহাসের নীরবতা ও তীব্র বৈসাদৃশ্য আমাদের ভাবতে বাধ্য করে—কোনো নারীর পক্ষে কি আদৌ সম্ভব, তাঁর এতসব হারানোর পর, এত দ্রুত এক নতুন সম্পর্ক ও পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া? তার স্বজনদের খুনীকে বিছানায় যৌনসুখ দেয়া? আসুন হাদিসটি পড়ি, [27]
সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১২৯. কুমারী মহিলা বিবাহ করলে, তার সাথে কতদিন অবস্থান করতে হবে।
২১২০. ওয়াহব ইবন বাকীয়্যা, উসমান আবূ শায়রা …. আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাফিয়্যা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন, তখন তিনি তাঁর সাথে তিন রাত অতিবাহিত করেন। রাবী উসমান অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, এই সময় তিনি (সাফিয়্যা) সাইয়্যেবা ছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
তাঁবুর বাইরে সারারাত পাহারা
খায়বার আক্রমণের সময় সাফিয়ার স্বামীকে বন্দী করা হয় এবং পরবর্তীতে মুসলমানরা তার কাছ থেকে খায়বারের কোষাগারের সন্ধান জানতে চায়। কিনানা তথ্য দিতে অস্বীকার করলে তাকে খুব নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয় এবং অবশেষে হত্যা করা হয়। তার পরই রাসূলুল্লাহ (সা) সাফিয়াকে নিজের জন্য নির্বাচিত করেন এবং তাকে বন্দিনী থেকে মুক্ত করে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। যখন সাফিয়াকে নবীর তাঁবুতে আনা হয়, তখন সাহাবী আবু আইয়ুব আল-আনসারি গভীর রাতে নবীর তাঁবুর সামনে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকেন। সকালে নবী তাকে দেখে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি এখানে কেন দাঁড়িয়ে ছিলে?” আবু আইয়ুব (রা) উত্তর দেন, “হে আল্লাহর রাসূল! এই নারী সদ্য বিধবা হয়েছে। তার স্বামী ও স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে। আমি ভয় করছিলাম, যদি সে আপনার কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাই সারারাত পাহারা দিয়েছি।” নবী তার এই সতর্কতার জন্য তাকে দোয়া দেন এবং ধন্যবাদ জানান।[28]

এই বিষয়টি আরও পাওয়া যায় মুস্তাদরাক আল হাকিম গ্রন্থেও [29]
hakim:6787 – ʿAbdullāh b. Isḥāq al-Khurāsānī al-ʿAdl > Yaḥyá b. Jaʿfar b. al-Zibriqān > ʿAbd al-Wahhāb b. ʿAṭāʾ > Khālid al-Ḥadhhāʾ > Kathīr b. Zayd > al-Walīd b. Rabāḥ > Abū Hurayrah > Lammā
[Machine] When the Messenger of Allah ﷺ entered Safiyyah’s tent, Abu Ayub slept at the door of the Prophet ﷺ . When morning came and the Messenger of Allah ﷺ saw him, he raised his voice in takbeer (saying “Allahu Akbar”) and Abu Ayub had a sword with him. He said, “O Messenger of Allah, she was a newlywed woman who had just gotten married, and I had killed her father, brother, and husband. So I did not trust her with you.” The Messenger of Allah ﷺ laughed and said to him, “Well done.”
– Sound (Dhahabī)
§ Safiyyah b. Huyayy in Book of the Companions
নবীকে বিবাহ না করলে যা হতো
যুদ্ধে পরাজিত বাহিনীর নারীদের সাথে আসলে কী হয়, কী পরিমাণ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে তারা থাকেন, সেটি খুব সহজেই অনুমেয়। যখন তারা বিপক্ষের সেনাবাহিনীর সৈন্যদের হাতে বন্দী হয়, তাদের সাতেহ যে খুব নির্মম কিছুই হবে, এটি তারা বুঝেই যান। বিশেষ করে বিপক্ষে যদি থাকে মুহাম্মদের মত মানুষ। এরকম পরিস্থিতিতে গণধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একটিই উপায় থাকে, সেটি হচ্ছে বিপক্ষের নেতৃস্থানীয় কারো বিছানায় যাওয়া। নেতাগোছের কারো বিছানায় গেলে অন্তত গণধর্ষণের শিকার হতে হবে না। নবী মুহাম্মদের দাসী বা স্ত্রীর ওপর অন্য কেউ নজর দিতে পারে না, এটি নিশ্চয়ই সাফিয়ার জানা ছিল। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই, গণধর্ষণের চাইতে তার জন্য শুধুমাত্র নবী দ্বারা ধর্ষিত হওয়া বেছে নেয়াটিই ছিল বুদ্ধিমানের কাজ। সাফিয়া আসলে সেটিই করেছে।
কারণ সাফিয়া ভাগে পরেছিল দাহিয়া কালবির। আর ইসলামের একটি বিধান হচ্ছে, মুসলিমরা তাদের দাসদাসীদেরকে অদল বদল করে ভোগ করতে পারে। ইসলাম ধর্মে যেহেতু দাসী বিক্রি কিংবা উপহার হিসেবে দান করে দেয়া সম্পূর্ণ বৈধ, কেনা বা উপহার সূত্রে প্রাপ্ত দাসীকে ভোগ করাও যেহেতু বৈধ, সেহেতু এটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে, নবী মুহাম্মদের সাহাবীগণ দাসী অদল বদল করতেন। ধরুন একজন সাহাবী যুদ্ধবন্দী হিসেবে একজন ক্রীতদাসীকে পেলেন। কিছুদিন ধরে সেই ক্রীতদাসীকে তিনি ইচ্ছেমত ভোগ করলেন। সেই একই সাহাবীর বন্ধুও একজন নারীকে গনিমতের মাল হিসেবে পেলেন। তিনিও তার দাসীকে ভোগ করলেন।
এখন ইসলামের বিধান মোতাবেক, তারা দুইজন দুইজনার দাসীকে পরস্পর উপহার দিলেন, বা সমমূল্যে বিক্রয় করলেন। এরপরে নতুন দাসীকে তারা ইচ্ছেমত ভোগ করলেন। অর্থাৎ, এই যে দাসী বিক্রি বা উপহার হিসেবে দান করার বিধানটি খালি চোখে খুব সাধারণ মনে হলেও, আসলে এর মধ্যে লুকিয়ে আছে আরো কুৎসিত চিত্র। এই বিধানটি কাজে লাগিয়ে গনিমতের মাল হিসেবে প্রাপ্ত একটি মেয়েকে সাহাবীগণ সবাই মিলে মিশে ভোগ করতে পারবে, অদল বদল করে। এর অর্থ হচ্ছে, একটি মেয়ে মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হলে তাকে সবাই মিলে ভোগ না করা পর্যন্ত তার কোন নিস্তার নেই। খালি চোখে একদম সহজ একটি বিধানের মধ্যে লুকিয়ে আছে ভয়াবহ কুৎসিত একটি ব্যাপার। আসুন এই সম্পর্কিত একটি হাদিস পড়ে নিই [30] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫১/ হিবা ও এর ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৫১/৩৬. প্রচলিত অর্থে যদি কেউ বলে এই দাসীটি তোমার খিদমাতের জন্য দিলাম, এটি বৈধ।
وَقَالَ بَعْضُ النَّاسِ هَذِهِ عَارِيَّةٌ وَإِنْ قَالَ كَسَوْتُكَ هَذَا الثَّوْبَ فَهُوَ هِبَةٌ
কোন কোন ফিকাহ্ বিশারদ বলেন, এটি আরিয়ত হবে। তবে কেউ যদি বলে, এ কাপড়টি তোমাকে পরিধান করতে দিলাম, তবে তা হিবা হবে।
২৬৩৫. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বর্ণিত গ্রন্থ হতে বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ) সারাকে সঙ্গে নিয়ে হিজরত করলেন। লোকেরা সারার উদ্দেশে হাজিরাকে হাদিয়া দিলেন। তিনি ফিরে এসে (ইবরাহীমকে) বললেন, আপনি কি জেনেছেন, কাফিরকে আল্লাহ পরাস্ত করেছেন এবং সেবার জন্য একটি বালিকা দান করেছেন।
ইবনু সীরীন (রহ.) বলেন, আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন, অতঃপর (সেই কাফির) সারার উদ্দেশে হাজিরাকে দান করল। (২২১৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৪৫৯)
بَابُ إِذَا قَالَ أَخْدَمْتُكَ هَذِهِ الْجَارِيَةَ عَلَى مَا يَتَعَارَفُ النَّاسُ فَهُوَ جَائِزٌ
حَدَّثَنَا أَبُو الْيَمَانِ أَخْبَرَنَا شُعَيْبٌ حَدَّثَنَا أَبُو الزِّنَادِ عَنْ الأَعْرَجِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ هَاجَرَ إِبْرَاهِيْمُ بِسَارَةَ فَأَعْطَوْهَا آجَرَ فَرَجَعَتْ فَقَالَتْ أَشَعَرْتَ أَنَّ اللهَ كَبَتَ الْكَافِرَ وَأَخْدَمَ وَلِيْدَةً وَقَالَ ابْنُ سِيْرِيْنَ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْدَمَهَا هَاجَرَ.
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারী থেকে এই সম্পর্কে একটি দলিল দেখে নিই, [31] –

সাফিয়াকে আয়িশার গালাগালি
নবীর শিশু স্ত্রী আয়িশাও সাফিয়্যাকে গালাগালি করতেন বলে জানা যায়। এর অর্থ হচ্ছে, সাফিয়্যাকে ইহুদির কন্যা হওয়ার বিভিন্ন জনার কাছ থেকেই নানান কটূবাক্য শুনতে হতো। কারণ মুসলিমদের কাছে আদর্শ রমণী নবীর স্ত্রী আয়িশা যেখানে এসব বলতেন, অন্যরাও নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলতেন না। অন্যরা নিশ্চয়ই আয়িশার মত আদর্শ নারী ছিলেন না, তাই না? [32] –
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৫/ কিয়ামত ও মর্মস্পর্শী বিষয়
পরিচ্ছেদঃ ৫১. (ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা বা নকল সাজা নিষেধ)
২৫০২। আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বললেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সাফিয়্যা তো বামন মহিলা লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছো, তা সাগরের পানির সাথে মিশালেও তা উক্ত পানিকে দূষিত করে ফেলতো।
সহীহঃ মিশকাত তাহকীক সানী (৪৮৫৩, ৪৮৫৭), গাইয়াতুল মারাম (৪২৭)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
সাফিয়াকে নবীর অশ্রাব্য গালাগালি
এরপরেই নবী মুহাম্মদ সাফিয়্যার তাঁবুতে যান এবং সাফিয়্যাকে চিন্তিতা ও অবসাদগ্রস্তা দেখতে পান। নবী মুহাম্মদ এই সময়ে অত্যন্ত রাগান্বিত অবস্থায় সাফিয়্যাকে বন্ধ্যা ও নেড়ি বলে গালাগালি করেন। কেন গালাগালি করেন, তার বর্ণনা পরে দিচ্ছি। আগে সেই অত্যন্ত অমর্যাদাকর এবং নোংরা গালিগুলো দেখে নিই [33] [34]-
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৬/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ৬৪. বিদায়ী তাওয়াফ বাধ্যতামুলক কিন্তু ঋতুমতী মহিলার ক্ষেত্রে তা পরিত্যাজ্য
৩০৯৮। মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না, ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) … হাকাম ইবরাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রওনা হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন সাফিয়্যাকে তাঁর তাঁবুর দরজায় চিন্তিতা ও অবসাদগ্রস্তা দেখতে পেলেন। তিনি বললেনঃ বন্ধ্যা, নেড়ি! তুমি আমাদের (এখানে) আটকে রাখবে? তিনি পুনরায় তাকে বললেনঃ তুমি কি কুরবানীর দিন (বায়তুল্লাহ) যিয়ারত করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে রওনা হও।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
15th The Book of Pilgrimage
(67)Chapter: The farewell Tawaf is obligatory, but it is waived in the case of menstruating women
‘A’isha (Allah be pleased with her) reported:
When Allah’s Apostle (ﷺ) decided to march (for return journey), he found Safiyyah at the door of her tent, sad and downcast. He remarked. Barren, shaven-head, you are going to detain us, and then said: Did you perform Tawaf Ifada on the Day of Nahr? She replied in the affirmative, whereupon he said: Then march on.
Reference : Sahih Muslim 1211ag
In-book reference: Book 15, Hadith 432
USC-MSA web (English) reference: Book 7, Hadith 3066

সাফিয়াকে বন্ধ্যা নেড়ি বলে গালির কারণ
একটি প্রশ্ন মনে জাগতে পারে যে, সেইদিন নবী যে সাফিয়াকে এরকম অশ্রাব্যভাষায় গালাগালি করলো, তার কারণ কী ছিল? নিচে বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে খুব পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, সেইদিন নবী মুহাম্মদ সাফিয়ার সাথে যৌনসঙ্গমের ইচ্ছে করেছিল, কিন্তু সাফিয়ার পিরিয়ড বা হায়েজ হওয়ায় নবী তা করতে পারেন নি। ভাবুন তো, সাফিয়াকে নবী শুধু একটি ভোগ্যপণ্যই ভাবতো, যার সাথে যখন খুশি সেক্স করা যাবে। নইলে সাফিয়ার পিরিয়ড হওয়ায় যৌন সঙ্গম করতে না প্যাঁরে নবী এরকম গালাগালি করবেন কেন?
পাঠক লক্ষ্য করে পড়ুন, এই হাদিসে নবী বলছেন বলে বর্ণিত আছে যে, সাফিয়া তাদের সেখানে আটকে রাখবে কিনা। ঠিক একই বক্তব্য পাবেন অন্য হাদিসে। এর অর্থ হচ্ছে, এই হাদিসগুলোর সময়কাল এক, ঘটনাও একই। শুধু বিভিন্ন জন বিভিন্ন অংশ শুনে বর্ণনা করেছে [35] [36] [37] [38] –
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৬/ হাজ্জ (হজ্জ/হজ)
পরিচ্ছেদঃ ৬৪. বিদায়ী তাওয়াফ বাধ্যতামুলক কিন্তু ঋতুমতী মহিলার ক্ষেত্রে তা পরিত্যাজ্য
৩০৯৭। হাকাম ইবনু মূসা (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কোন পুরুষ স্ত্রীর সাথে সাধারণত যা করার ইচ্ছা করে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাফিয়্যা (রাঃ) এর সাথে তাই করার ইচ্ছা করলেন। তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তিনি হায়যগ্রস্তা। তিনি বললেনঃ তাহাল সে তো আমাদের এখানে আটকে রাখবে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি কুরবানীর দিন (বায়তুল্লাহ এর) যিয়ারত করেছেন। তিনি বললেনঃ তাহলে সে তোমাদের সঙ্গে যাত্রা করুক।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৬/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ৬৪. বিদায়ী তাওয়াফ বাধ্যতামুলক কিন্তু ঋতুমতী মহিলার ক্ষেত্রে তা পরিত্যাজ্য
৩০৯৫। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা’নাব (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আশংকা করছিলাম যে, সাফিয়্যা (রাঃ) তাওয়াফে ইফাযা করার পূর্বে হায়যগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন এবং বললেনঃ সাফিয়্যা কি আমাদের আটকে রাখবে? আমরা বললাম, তিনি তাওয়াফে ইফাযা করেছেন। তিনি বললেনঃ তাহলে নয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৬/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ৬৪. বিদায়ী তাওয়াফ বাধ্যতামুলক কিন্তু ঋতুমতী মহিলার ক্ষেত্রে তা পরিত্যাজ্য
৩০৯৪। কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … আবদুর রহমান ইবন কাসিম তার পিতা থেকে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উল্লেখ করলেন, সাফিয়্যা (রাঃ) এর হায়য হয়েছে। অবশিষ্ট যুহরীর হাদীসের অনুরূপ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আব্দুর রহমান ইবনু কাসিম (রহঃ)
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৬/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ৬৪. বিদায়ী তাওয়াফ বাধ্যতামুলক কিন্তু ঋতুমতী মহিলার ক্ষেত্রে তা পরিত্যাজ্য
৩০৯৬। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সাফিয়্যা বিনত হুওয়াই হায়যগ্রস্তা হয়ে পড়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হয়ত সে আমাদের আটকে রাখবে। সে কি তোমাদের সঙ্গে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেনি? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তবে তোমরা চল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
এবারে আসুন সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ থেকে এই বিষয় সম্পর্কে আরেকটু জেনে নিই [39] –
আল্লামা কুরতুবী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞজ্ঞাণ বলেন, হজ্জের সফরে হযরত আয়িশা ও সুফিয়্যা (রাযিঃ) দুইজনই ঋতুমতী হইয়াছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি তাহাদের দুইজনের ক্ষেত্রে বিরাট পার্থক্য পরিলক্ষিত হইতেছে। কেননা, তিনি হযরত সুফিয়া (রাযিঃ)কে বলিয়াছেন দুর দুর্ভাগী, তোমার কল্যাণ না হউক। আর হযরত আয়িশা (রাযিঃ) কে বলিয়াছেন ইহা এমন একটি বস্তু যাহা আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)-এর কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করিয়া দিয়াছেন)।
ইহা দ্বারা কাহাকেও কাহারও উপর প্রাধান্য দেওয়া উদ্দেশ্য নহে, বরং স্থান-কাল-পাত্র ও অবস্থার প্রেক্ষিতে কথা বিভিন্ন হয়। ফলে নবী সান্তাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হযরত আয়িশা (রাযিঃ)-এর কাছে তাশরীফ নিলেন, তখন তিনি হজ্জ ছুটিয়া যাওয়ার আশংকায় মনক্ষুণ্ণ হইয়া কাঁদিতেছিলেন। ফলে তাহাকে সান্ত্বনা দেয়া প্রয়োজন ছিল সেই মতে তাঁহাকে সান্ত্বনামূলক বাক্য দ্বারা সান্ত্বনা দিয়াছেন। পক্ষান্তরে হযরত সাফিয়্যা (রাযিঃ)। তিনি হজব্রত পালন শেষ করায় “নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহার সঙ্গে এমন ইচ্ছা করিয়াছিলেন যাহা একজন পুরুষ নিজের স্ত্রীর সঙ্গে ইচ্ছা করিয়া থাকে।” এতদুভয়ের অবস্থার বিভিন্নতার কারণে সম্বোধনে বিভিন্নতা যথাযোগ্য হইয়াছে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ (ফতহুল মুলহিম ৩২৭)।

(৩১১৭) হাদীছ (ইমাম মুসলিম (রহ.) বলেন) আমার নিকট হাদীছ বর্ণনা করেন হাকাম বিন মুসা (রহ.) তিনি …. আয়িশা (রাযিঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, কোন পুরুষ নিজ স্ত্রীর সহিত সাধারণত যাহা করার ইচ্ছা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও (তাঁহার স্ত্রী) সাফিয়্যা (রাযিঃ)-এর সহিত উহা করার ইচ্ছা করিলেন। তখন তাহারা বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, তিনি ঋতুমতী। তিনি ইরশাদ করিলেন, তাহা হইলে তো সে আমাদেরকে আটকাইয়া রাখিবে। তাহারা আরয করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। তিনি কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত করিয়া ফেলিয়াছেন। তিনি ইরশাদ করিলেন, তাহা হইলে সে তোমাদের সহিত রওয়ানা করুক।


শেষ জীবনেও সাফিয়ার স্বজনদের প্রতি ভালবাসা
সাফিয়া ইসলাম গ্রহণ করে নবী-পত্নীর মর্যাদায় আসীন হলেও, তিনি কখনও নিজের ইহুদি পরিচয়কে পুরোপুরি বিসর্জন দেননি। অনেক ঐতিহাসিক সূত্রে দেখা যায়, তিনি তাঁর গোত্র, তাঁর জাতি এবং তাঁদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিকে আজীবন হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছিলেন। এমনকি নবী মুহাম্মদের সঙ্গে জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত থেকেও, তিনি তাঁর ইহুদি পরিচয় গোপন করেননি—বরং এক পর্যায়ে বলেছিলেন, “আমি হারুন (আ.) এর বংশধর, আমার চাচা মুসা (আ.), এবং আমি ইহুদি জাতির সন্তান।”
একাধিক বর্ণনায় জানা যায়, সাফিয়া তাঁর ইহুদি ভাইকে সাহায্য করেছেন—তাঁর জন্য সম্পত্তি বরাদ্দ করে দিয়েছেন, এমনকি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। অনেক মুসলিম সাহাবি ও নবীপত্নী এই আচরণে অস্বস্তি প্রকাশ করলেও, সাফিয়া কখনো নিজ স্বজনদের প্রতি সহানুভূতি হারাননি। এই অবস্থান হয়তো ছিল তাঁর একধরনের নীরব প্রতিবাদ। তিনি হয়তো প্রকাশ্যে কিছু বলেননি, প্রকাশ্যে কিছু বলা সম্ভবও ছিল না। কিন্তু তাঁর আচরণে বোঝা যায়—তিনি হয়তোবা মেনে নিয়েছিলেন নিজের বর্তমান, কিন্তু ভুলে যাননি অতীত। [40]
সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
২২. ওয়াসিয়াত অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ৪২. যিম্মিগণের প্রতি ওয়াসীয়াত করা
৩৩৩৭. ইবনু উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, সাফিয়্যাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার এক ইয়াহুদী আত্মীয়ের (অথবা ভগ্নিপতির) জন্য ওয়াসীয়াত করেছিলেন।[1]
[1] তাহক্বীক্ব: এর সনদ ইবনু উমার পর্যন্ত সহীহ।
তাখরীজ: আব্দুর রাযযাক ১৯৩৪২, ১৯৩৪৪; বাইহাকী, ওয়াসাইয়া ৬/২৮১ তা’লিক হিসেবে; ইবনু আবী শাইবা ১১/১৬১ নং ১০৮১২।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
একজন যুদ্ধবন্দি নারী, যাঁর স্বামী ও পিতা নবীর আদেশে নিহত, সেই নারী যখন নবীপত্নী হিসেবে “উম্মাহাতুল মুমিনীন”-এর আসনে অধিষ্ঠিত হন, তখন তাঁর ভেতরের দ্বন্দ্ব, তাঁর গভীর অভিমান—তা প্রকাশ না করেও ভাষা খুঁজে পেয়েছিল স্বজনদের প্রতি তাঁর নিরব ভালোবাসায়। এই ভালোবাসা ছিল গভীর, নীরব এবং অতল। শেষ জীবনেও তিনি নিজ জাতির প্রতি শ্রদ্ধা, স্মৃতি এবং আত্মিক টান ধরে রেখেছিলেন—যা তাঁর ব্যক্তিত্বের একটি অনন্য দিক হয়ে ইতিহাসে রয়ে গেছে।
উপসংহার
সাফিয়া বিনতে হুয়াই-এর জীবন ইতিহাসের এমন এক অধ্যায়, যা ধর্ম, রাজনীতি এবং মানবতার সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি একজন নবীপত্নী, এক পরাজিত জনগোষ্ঠীর কন্যা, যুদ্ধবিধ্বস্ত এক নারীর প্রতীক, যাঁর জীবন বারবার শোক, সংশয় এবং সংঘাতের মধ্যে দোদুল্যমান থেকেছে। তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে শুধু ধর্মীয় আখ্যান হিসেবে দেখলে আমরা ইতিহাসের মানবিক দিকটি হারিয়ে ফেলি। এই গল্প আমাদের শেখায়, বিজয়ের কাহিনি যেমন গর্বের হতে পারে, তেমনি পরাজয়ের গল্পও থাকে, লুকানো কান্না হিসেবে।
আজকের যুগে দাঁড়িয়ে, সাফিয়ার মতো নারীদের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়—ইতিহাস কেবল বিজয়ীদের লেখা দলিল নয়, পরাজিতদের নীরবতাও সেখানে সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাফিয়া বিনতে হুয়াই একজন নবী-পত্নী হয়েও ছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এক নারীর প্রতীক। তাঁর গল্পে আছে পরাজয়ের বেদনা, পরিচয়ের দ্বন্দ্ব, আর মানুষের মর্মান্তিক সত্যের মুখোমুখি হওয়া। এই না-বলা গল্পগুলো আলোচনার টেবিলে আনলেই আমরা সত্যিকার অর্থে মানবিক ইতিহাস নির্মাণ করতে পারি—যেখানে সাহস আছে, প্রশ্ন আছে, আর আছে নিঃশব্দ প্রতিরোধের স্বর।
তথ্যসূত্র
- সিরাতে রাসুলুল্লাহ, ইবনে ইসহাক, প্রথমা প্রকাশনী, অনুবাদঃ শহীদ আখন্দ, পৃষ্ঠা ২৮১ [↑]
- সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৬ [↑]
- সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯১, ১৯৩, ২৩৫ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৩৯, ৪০ [↑]
- সহীহ শামায়েলে তিরমিযী, হাদিসঃ ১২৬ [↑]
- সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ৪৫ [↑]
- সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫২-২৫৩ [↑]
- সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৯ [↑]
- সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৯ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৮ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৯৪ [↑]
- সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৭-২৩৮ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিসঃ ২৬৭১ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৬৬২ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৬৪ [↑]
- আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, খণ্ড ৫, মুহাম্মদ আবদুল মা’বুদ, পৃষ্ঠা ২৭৫-২৭৬ [↑]
- সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৪ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৮৪ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৯৯৯ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৩৬৬ [↑]
- সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিসঃ ২২৭২ [↑]
- মুস্তাদরাক আল হাকিম, হাদিসঃ ৬৭৮৯ [↑]
- সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৩৮৫ [↑]
- Sahih Ibn Habban (11/607) [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ২৮৯৩ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ২৯৯৫ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২১২০ [↑]
- সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৮ [↑]
- মুস্তাদরাক আল হাকিম, হাদিসঃ ৬৭৮৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ২৬৩৫ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, কাজী ছানাউল্লাহ পানিপথী, নবম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৪১ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ২৫০২ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৯৮ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৯, হাদিসঃ ৩০৯৮ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৯৭ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৯৫ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৯৪ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৯৬ [↑]
- সহিহ মুসলিম শরীফ (প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসহ বঙ্গানুবাদ), আল-হাদীছ প্রকাশনী, ১২ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮, ২১৮-২১৯ [↑]
- সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ৩৩৩৭ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"
Chaos! Asif bhai.
সাফিয়া র ঘটনা পড়লে কান্না এসে যায় আসিফ ভাই। এই নর পশু গুলো কবে বুজবে। কত আরব দের গুলামি করবে এরা????
নারীরা যেন ভোগের বস্তু কেবল।
ইসলাম নিয়ে উচ্চ ধারণা ছিল।
সত্য জানানোর জন্য আসিফ ভাইকে ধন্যবাদ।
We are Asif
#weareasif
আমাদের, নারীদের, প্রতি এদের দৃষ্টিভঙ্গী কেমন তা এক সাফিয়্যার ঘটনা থেকেই বোঝা যায়।
আমাদের (নারীদের) প্রতি এদের দৃষ্টিভঙ্গী কেমন তা সাফিয়্যার ঘটনা পড়লেই বোঝা যায়।
এরকম চরিত্রহীনকে যারা সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী বলে তাদের নিজেদেরই চরিত্র নাই।
মুহাম্মদকে ছোটবেলায় ভিকটিম হিসেবে দেখানো হয়েছিল যা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। কুরায়শরা ১৩ বছরে নবী বা সাহাবাদের হত্যা করেনি, কিন্তু নবী মদিনাতে তার বিপক্ষদের এটা করেছে। কুরায়শদের জ্ঞান, মানবিকতা, সহিষ্ণুতা সবকিছুই মুহাম্মদ থেকে অনেক উন্নত ছিল। এগুলো আজ বুঝতে পারি। এটা নিয়ে লিখতে পারেন আসিফ ভাই।