করোনা ভাইরাস – বাঁচাবে কে?

করোনা 6

চিরকুট – Chirkut” নামক একটি ফেসবুক পেইজ গত ৪ঠা এপ্রিল, ২০২০ তারিখে একটি ফটো পোস্ট করে, যেখানে লেখা থাকে চমৎকার দুটি কথা। [1]

"যদি বেঁচে যাও এবারের মত
যদি কেটে যায় মৃত্যুর ভয়

জেনো বিজ্ঞান লড়েছিলো একা
মন্দির মসজিদ নয়।"

কি চমৎকার বাস্তববাদী কথা! কিন্তু, এই চমৎকার কথা দুটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কুযুক্তিবাদী আরিফ আজাদ হজম করতে পারেনি, যদিও তার জন্য এটাই স্বাভাবিক। কেননা, আমরা সবাই জানি, ঘি সবার পেটে সহ্য হয় না। কথা দুটি পড়ে রেগে মেগে নাস্তিকদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বিশাল একটি ফেসবুক পোস্ট লিখে ফেলেছেন। [2]

যাইহোক, আরিফ আজাদের পোস্টটা আমার চোখে পড়েছে, কি মনে করে যেনো আমিও পুরো পোস্টটা পড়েই ফেলেছি। অনেকদিন বাদে তার কোনো লেখা আবার পড়া হলো। পড়ে যা মনে হলো, তার বোধবুদ্ধি এখনো সেই হাঁটুর তলাতেই পড়ে আছে, আগের চেয়ে একটুও উন্নত হয়নি। আগেও যেমন তার লেখালেখিতে যুক্তির য-ও খুঁজে পাওয়া যেতো না, পাওয়া যেতো কেবল কিছু অর্থহীন বিশ্বাসকে কিছু হাস্যকর উপায়ে অর্থপূর্ণ করে তোলার ব্যর্থ চেষ্টা, এখনো তাই। দূর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই ধর্মান্ধ বলে, নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে ঠিক ভুল বিচার বিবেচনা করতে অক্ষম বলে, যা নিজের বিশ্বাসের পক্ষে যায় তা-ই অন্ধভাবে মেনে নেয় বলে, আরিফ আজাদের মতো লোকেরা সাধারণ মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারছে। আরিফ আজাদদের লেখা যুক্তিবাদীদের কাছে যতোই হাস্যকর কিংবা অর্থহীন হোক না কেনো, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, তাদের লেখা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের ওপর বেশ প্রভাব রাখে, তাদের লেখা মানুষের অন্ধবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে আর সমস্যাটা সেখানেই। আর তাই, আরিফ আজাদদের হাস্যরসাত্মক লেখার জবাব দেওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও, মাঝেমাঝে দিতেই হয়, নাহলে তাদেরকেই সুবিধা করে দেওয়া হয়।

আচ্ছা, ফেইসবুকের “চিরকুট – Chirkut” নামক পেইজ থেকে পোস্ট হওয়া ঐ কথা দুটো আসলে কি প্রকাশ করে? এটাই প্রকাশ করে যে, মন্দির মসজিদ কিংবা, পূজা প্রার্থনার ক্ষমতা নেই বিপদাপদ থেকে মানুষকে বাঁচানোর, বিজ্ঞানকে আপন করে নিলেই মানুষ বিপদাপদ থেকে রক্ষা পেতে পারে। মন্দিরে পূজা-অর্চনা করে কিংবা, মসজিদে সিজদাহে পড়ে গিয়ে কেউ কারো প্রিয়জনের রোগ ভালো করতে পারেনি, বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারেনি, সংকট দূর করতে পারেনি। বিজ্ঞানের অবদান গ্রহণ করেই যুগ যুগ ধরে মানুষ রোগ ভালো করেছে, বিপদাপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে, সংকট দূর করেছে। বিজ্ঞানের পথ অনুসরণ না করে কেবল দোয়া দরূদ পড়ে নামাজ রোজা করে কিংবা পূজা প্রার্থনা করে কারো রোগ ভালো করা যায়নি, কোনো বিপদ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়নি। যে অন্ধবিশ্বাসীরা দোয়া দরূদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস রাখে, তারা কখনোই এমন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারবে না যে, দোয়া দরূদের প্রভাবে অলৌকিকভাবে কেউ সুস্থ হয়ে উঠছে। দোয়া দরূদ পড়ে ভাঙা পা জোড়া লাগানো যায় না, দোয়া দরূদ পড়ে কাউকে ক্যান্সার থেকে মুক্তি দেওয়া যায় না, দোয়া দরূদ পড়ে দৃষ্টিহীনকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়া যায় না, এসবের জন্য বিজ্ঞানের ওপরই নির্ভর করতে হয়। যতোই দোয়া দরূদ পাঠ করুন, যতোই নামাজ পড়ে কপালে দাগ বানান, যতোই হজ্জ করে আসুন, যতোই যাকাত প্রদান করুন, লাভ হবে না যদি না বিজ্ঞানের দারস্থ হন। বিজ্ঞানকে কখনো কারো দোয়া দরূদের ওপর নির্ভর করতে হয় না, কখনো কারো নামাজ পড়ে কপালে দাগ বানানোর ওপর নির্ভর করতে হয় না, কখনো কারো হজ্জ করে আসার ওপর নির্ভর করতে হয় না, কখনো কারো যাকাত প্রদানের ওপর নির্ভর করতে হয় না। কারণ, বিজ্ঞান বাস্তবেই কাজ করে, আর দোয়া দরূদ কেবল অন্ধবিশ্বাসেই কাজ করে। আর তাই, করোনাভাইরাসের এই মহামারী থেকে কোনোকিছু যদি আমাদের উদ্ধার করতে পারে সেটা একমাত্র বিজ্ঞান, মন্দির মসজিদ নয়। এই সহজ বিষয়টা আরিফ আজাদ বুঝতে পারেনি বা বুঝতে চায়নি, কেননা এই সহজ বিষয়টা তার উদ্ভট বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। তাকে যে এই বিশ্বাসটা রাখতেই হয় যে, বিজ্ঞানের যতো অবদানই থাকুক না কেনো, ডাক্তার কিংবা নার্সরা মানুষকে বাঁচানোর জন্য যতো পরিশ্রমই করুক না কেনো, দিনশেষে আকাশে বসে থাকা তার কোনো কাল্পনিক বন্ধুই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে, দিনশেষে তার কাল্পনিক বন্ধুই আমাদের বাঁচায়।

প্রথমেই আরিফ আজাদ লিখেছেনঃ

বৈশ্বিক এই দূর্যোগেও নিজেদের মার্কেটিং আর বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজ থেকে বিরত থাকতে পারলো না বিজ্ঞান আর প্রগতির এসব ফেরিওয়ালারা(!)

আরিফ আজাদের বক্তব্য অনুযায়ী, অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসে বিজ্ঞানের পথে চলার আহবান করে আমরা নিজেদের মার্কেটিং করছি। না, আমরা নিজেদের মার্কেটিং করছি না। কোভিড-১৯ রোগের এই বৈশ্বিক মহামারীকে ব্যবহার করে আমরা নাস্তিকতাকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা করছি না। আমরা কেবল বিজ্ঞানের অবদান বিনামূল্যে মন্দির মসজিদের কাঁধে তুলে না দেওয়ার আহবানই জানাচ্ছি। মন্দির মসজিদে না গিয়ে যে বিজ্ঞানের দারস্থ হয়েই মানুষ নিজেদের প্রাণ ফিরে পায় সেই বিজ্ঞানের কাজের প্রশংসার ভাগ মন্দির মসজিদকে না দেওয়ার আহবানই আমরা করছি। আরিফ আজাদের মতো লোকেরা যদি মৃত্যুর ভয়ে হাসপাতালে ছুটে সুস্থ হয়ে এসে হাসপাতালের অর্ধেক কৃতিত্ব মন্দির মসজিদকে না দেয়, তাহলে আমাদের আর বলতে হয় না যে, “বিজ্ঞান লড়েছিলো একা, মন্দির মসজিদ নয়”।

করোনা ভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারীর ভেতরও এই বৈশ্বিক মহামারীকেই ব্যবহার করে নিজেদের মার্কেটিং কিন্তু মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি করছে। যখন চীনের উহান শহরে কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেলো, যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে চীনে শত শত মানুষ মৃত্যুবরণ করতে থাকলো, তখন মুসলিমরাই কিন্তু করোনা ভাইরাসকে আল্লাহর গজব বলে নিজেদের মার্কেটিং করেছিলো। এমনকি, এখনো, মুসলিমবিশ্বে করোনা ভাইরাসের শিকার মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে দেখেও, তারা করোনাভাইরাসকে আল্লাহর গজব বলে প্রচার করছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পৃথিবীজুড়ে মানুষ যখন মাস্ক ব্যবহার করে, তখন নিজেদের মার্কেটিং করে মুসলিমরাই বলে, যারা মুসলিম নারীদের নিকাব পরা পছন্দ করে না, যারা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করেছিলো, তারাই আজ মুসলিম নারীদের মতো নিকাব পরছে। অথচ, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে মুসলিম নারীরা নিকাব পরে না। ব্যাংক ডাকাতরাও নিজেদের মুখ ঢেকে ব্যাংক ডাকাতি করে, এখন তারা যদি সারা পৃথিবীর মানুষকে তাদের মতো মুখ ঢেকে চলতে দেখে গর্ববোধ করে, তাহলে আর কিছু বলার থাকে না। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পৃথিবীজুড়ে মানুষ যখন হ্যান্ডশেক বা চুমু এড়িয়ে চলে, তখন মুসলিমরাই নিজেদের মার্কেটিং করে বলে, করোনা ভাইরাসের কারণে অমুসলিমরাও অনেক ইসলামিক হয়ে উঠেছে, পরপুরুষদের সাথে হ্যান্ডশেক করছে না, চুমু খাচ্ছে না। অথচ, ইসলাম অনুযায়ী, দুইজন পুরুষ কিংবা, দুইজন নারী একে অপরের সাথে হ্যান্ডশেক করতে পারে, কোলাকুলি করতে পারে, চুমু খেতে পারে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা যখন সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করে ২০ সেকেন্ড ধরে ঘন ঘন হাত ধোঁয়ার পরামর্শ দেয়, তখন মুসলিমরাই নিজেদের মার্কেটিং করে বলে, মুসলিমরা দিনে পাঁচ বার ওজু করে। অথচ, স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা সাবান বা হ্যান্ডওয়াশের ব্যবহার এবং ২০ সেকেন্ড ধরে ধোঁয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। সবচেয়ে মজার বিষয় এই যে, করোনা ভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারীকে ব্যবহার করে নিজেদের মার্কেটিং করতে গিয়ে মুসলিমরা নিজেদের ধর্মকেই যে একটা মারাত্মক মহামারীর সাথে তুলনা করছে, সেটা তারা বুঝতেও পারছে না।

এছাড়াও, আরিফ আজাদের বক্তব্য অনুযায়ী, অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসে বিজ্ঞানের পথে চলার আহবান করে আমরা “বিদ্বেষ” ছড়াচ্ছি। আরিফ আজাদের মতো পরমতসহিষ্ণুতার অভাবে ভোগা লোকেরা “বিদ্বেষ” শব্দটি ব্যবহার করে ভিন্নমত পোষণকে এক প্রকার অপরাধ হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। আর এমনটা চান কেবল তাদের ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার কাপুরুষোচিত বাসনা থেকে। বিদ্বেষ পোষণ করা খারাপ কিছু নয়, বিদ্বেষ ছড়ানোও খারাপ কিছু নয়। কে কোন বিষয়ে বিদ্বেষ পোষণ করবে আর কে কোন বিষয়কে শ্রদ্ধা করবে সেটা যার যার নিজস্ব ব্যাপার। কে কোন বিষয়কে বড় করে দেখাবে আর কে কোন বিষয়কে ছোট করে দেখাবে সেটাও যার যার নিজস্ব ব্যাপার। আপনার যদি কোনো বিষয়কে বড় করে দেখানোর অধিকার থাকে তাহলেও আমারও সেই বিষয়কে ছোট করে দেখানোর অধিকার থাকতে হবে। আপনি কোন বিষয়কে বড় করে দেখাবেন সেটা যেমন আমি ঠিক করে দিবো না, তেমনি আমি কোন বিষয়কে ছোট করে দেখাবো সেটাও অন্য কারো ঠিক করে দেওয়ার কথা নয়। আমরা এমন বিষয়ে বিদ্বেষ পোষণ করতেই পারি যে বিষয়কে আমরা ভুল বা অর্থহীন কিংবা ক্ষতিকর মনে করি। মজার বিষয় হচ্ছে, আরিফ আজাদ এবং তার মতো কাঁঠালপাতার ফেরিওয়ালারা কিন্তু ঠিকই নাস্তিকতার বিরুদ্ধে, নারীবাদের বিরুদ্ধে, সেকুলারিজমের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়। বিদ্বেষ ছড়ায় ছেলেদের সাথে মেয়েদের বন্ধুত্বের বিরুদ্ধে, বিদ্বেষ ছড়ায় বিবাহবহির্ভূত প্রেমের বিরুদ্ধে, বিদ্বেষ ছড়ায় বিবাহবহির্ভূত দৈহিক মিলনের বিরুদ্ধে, বিদ্বেষ ছড়ায় নারীর পোশাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, বিদ্বেষ ছড়ায় নারীর যৌন স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, বিদ্বেষ ছড়ায় যৌন শিক্ষার বিরুদ্ধে, বিদ্বেষ ছড়ায় নাস্তিকদের বিরুদ্ধে, বিদ্বেষ ছড়ায় সমকামীদের বিরুদ্ধে, বিদ্বেষ ছড়ায় নিজ মতাদর্শের সমালোচনাকারীদের বিরুদ্ধে, বিদ্বেষ ছড়ায় এমন আরও অনেক কিছুর বিরুদ্ধে। এই কাঁঠালপাতার ফেরিওয়ালারাই আবার তাদের ধর্মীয় মতাদর্শের সমালোচকদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ আনে, যা কেবল তাদেরকেই হিপোক্রিটে পরিণত করে। আমরা নাস্তিকরা আমাদের সমালোচনাকে ভয় পাই না। ব্যক্তি আক্রমণ এবং হুমকিধামকি এড়িয়ে যারা ভদ্রভাবে সমালোচনা করতে জানে তাদের আমরা স্বাগত জানাতে জানি।

তারপর আরিফ আজাদ লিখেছেনঃ

প্রথম কথা হলো, বিজ্ঞান আর ধর্মকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার এই অসাধুতা তাদের আজকের নতুন কাজ নয়। সেই বিজ্ঞানি টলেমি আর গ্যালিলিও’র যুগ থেকেই তারা এই কাজটা খুব সুচতুরতার সাথে করে আসছে। কোন দূর্যোগ আর দূর্ভোগ যদি জনজীবনে নেমে আসে, তখনই তারা বলে, ‘এই দ্যাখো! বলেছিলাম না তোমাদের আল্লাহ-ইশ্বর কোন কাজের না? শেষমেশ বিজ্ঞানেই উদ্ধার পেলে তো?’

আরিফ আজাদ বলেছেন, আমরা নাস্তিকরা বিজ্ঞান আর ধর্মকে মুখোমুখি দাঁড় করাই আর এটা আমাদের অসাধুতা। তার বক্তব্য হচ্ছে, ধর্ম ও বিজ্ঞান কখনোই একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক নয়, আমরা নাস্তিকরাই জোর করে ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে সংঘর্ষ দেখাতে চাই। নাস্তিক বা ধর্মের সমালোচকদের বিরুদ্ধে ধার্মিকদের এই বহুল প্রচলিত অভিযোগটির কোনো অর্থ নেই।

ধর্মে রয়েছে বাস্তব জগৎ বিষয়ক, বাস্তবতা বিষয়ক অসংখ্য দাবি। ধর্ম আমাদের শেখাতে চায় আকাশটা কেমন, কেমন এই পৃথিবী, সূর্য কিসের চারদিকে ঘোরে, কেনো বজ্রপাত হয়, শীত গ্রীষ্ম কিভাবে আসে, মাতৃগর্ভে ভ্রূণ কোন সময়ে কোন অবস্থায় থাকে, এমন আরও অনেক কিছু। এদিকে, বিজ্ঞান সত্যের খোঁজে থাকে, খুঁজে বের করে। বাস্তব জগৎ বিষয়ক, বাস্তবতা বিষয়ক সত্য খুঁজে বের করাই বিজ্ঞানের কাজ। যে বিষয়ে ধর্মের বেশকিছু দাবি রয়েছে, সেই বিষয়েই বিজ্ঞান সত্যানুসন্ধান করে। আর তাই, ধর্মকে বিজ্ঞানের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হয়। ধর্ম প্রকৃতি বিষয়ক অসংখ্য ধারণা দেয়, এদিকে বিজ্ঞানের কাজই হলো প্রকৃতি বিষয়ক সকল ভুল ধারণা ভেঙে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা। ধর্ম কেনো বিজ্ঞানের মুখোমুখি হবে না? ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সংঘর্ষ তো হবেই যদি প্রকৃতি বিষয়ক ধর্মের কোনো দাবি বিজ্ঞানের প্রমাণিত তথ্যের বিপরীতে যায়। ধর্ম যখন নীল আকাশকে শক্ত ছাদ বলে দাবি করবে তখন ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সংঘর্ষ হবেই।

ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, যুগ যুগ ধরে ধার্মিকরাই ধর্মকে ব্যবহার করে বিজ্ঞানের অগ্রগতি থামাতে চেষ্টা করেছিলো, বিজ্ঞানের কন্ঠরোধ করতে চেয়েছিলো। ‘পৃথিবী সূর্যকে ঘিরে ঘুরছে’ এই মতবাদ প্রচার করতে গিয়ে কি নির্মম নির্যাতন যে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও আর ব্রুনোকে সহ্য করতে হয়েছিলো তা আরিফ আজাদরা ভুলে যেতে চাইলেও ইতিহাস মনে রাখে। ব্রুনোকে তো পুড়িয়েই মেরেছিলো ঈশ্বরের সুপুত্ররা। ব্রুনোদের অপরাধ ছিলো এটাই যে, তাদের সূর্যকে ঘিরে পৃথিবী ঘোরার মতবাদ খ্রিস্টানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়েছিলো।

তারপর আরিফ আজাদ লিখেছেনঃ

আসলে, বিজ্ঞান কি উদ্ধার করে?

বিজ্ঞানের না আছে হাত, না আছে পা, আর না আছে চোখ। তাহলে, বিজ্ঞান কিভাবে উদ্ধার করবে? বিজ্ঞানের কি কোন শক্তি-সামর্থ্য আছে?

আদতে, বিজ্ঞান তো আলাদাভাবে একক কোন সত্ত্বা নয়। বিজ্ঞান মানে হলো বিশেষ জ্ঞান। কোন ঘটনার বা বিষয়ের পেছনের যে কার্যকারণ, তা উদ্ভাবন, জেনে নেওয়ার নামই হলো বিজ্ঞান। আর, এই কার্যকারণ কিংবা উদঘাটনের পেছনে যারা কাজ করে, তারা আমার-আপনার মতোন মানুষ। সুতরাং, মানুষের পরিশ্রম, জানার স্পৃহা, নতুনকে সামনে আনার অদম্য ইচ্ছার সম্মিলিত প্রয়াসের নাম হলো গিয়ে বিজ্ঞান। তাই, ‘বিজ্ঞান বাঁচায়’ ধারণাটা একটা ভুল ধারণা যা মূর্খতার নামান্তর।

আরিফ আজাদের পুরো লেখাটির সবচেয়ে হাস্যকর পার্ট আমার মতে এটাই ছিলো।

আরিফ আজাদ তার পাঠকদের বোঝাতে চেয়েছেন, যেহেতু বিজ্ঞানের হাত-পা কিংবা চোখ নেই, সেহেতু বিজ্ঞান আসলে আমাদের উদ্ধার করে না। তার বক্তব্য অনুযায়ী, যেহেতু বিজ্ঞান আলাদা কোনো সত্ত্বা নয়, সেহেতু ‘বিজ্ঞান বাঁচায়’ বলাটা ভুল। সত্যিই, একটা মানুষ কি করে এতোটা হাস্যকর হতে পারে আমার মাথায় আসে না! নাস্তিকদের হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করতে গিয়ে আরিফ আজাদের মতো লোকেরা যে নিজেদেরই হাসির পাত্রে পরিণত করে সেটা যদি তারা একটু বুঝতো!

বিজ্ঞান কি? প্রাকৃতিক জগৎ বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করতে আমরা যা করি তাই বিজ্ঞান। বিজ্ঞান হচ্ছে জ্ঞান আহরণের একটি পদ্ধতি, স্বয়ং জ্ঞান নয়। ‘বিজ্ঞান বাঁচায়’ মানে এটা নয় যে, বিজ্ঞান আলাদাভাবে একক কোনো সত্ত্বা যা আমাদের বাঁচায়, বরং, এটাই যে, বিজ্ঞানের অবদান বা জ্ঞান আহরণের একটি পদ্ধতির অবদানই আমাদের বাঁচতে সাহায্য করে। মানুষ বিজ্ঞানের সাহায্যে এযাবৎ অসংখ্য রোগের অসংখ্য ঔষধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ যেমন রোগ ব্যাধি চিহ্নিত করতে শিখেছে, তেমনি রোগ ব্যাধি দূর করতেও শিখেছে। তাই, ‘বিজ্ঞান বাঁচায়’ কথাটি ভুল নয়।

এখানে একটি মজার বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় যে, আরিফ আজাদরা দিনে পাঁচ ওয়াক্ত মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, নাস্তিকরা বা ধর্মের সমালোচকরা ধর্মগ্রন্থের সব কথাই আক্ষরিক ভাবে নেয়, তাই অনেক সময়ই তারা প্রকৃত অর্থটা বুঝতে পারে না। অথচ, আমরা দেখছি আরিফ আজাদ নিজেই ‘জেনো বিজ্ঞান লড়েছিলো একা, মন্দির মসজিদ নয়’ কথাটি আক্ষরিক ভাবে নিয়ে নাস্তিকদের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়ার হাস্যকর চেষ্টা করেছেন। এভাবেই আরিফ আজাদ এবং তার মতো লোকেরা নাস্তিকদের বিরুদ্ধে প্রলাপ বকে ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠীর হাততালি কুড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবেন, ‘উফফ! আজকে নাস্তিকদের দাঁত ভাঙা জবাব দিয়েছি’।

আরিফ আজাদ (প্রতীকী ছবি)

তারপর আরিফ আজাদ লিখেছেনঃ

তাহলে, বিজ্ঞান আসলে আলাদা বা একক কোন সত্ত্বা নয়। এর পেছনে কাজ করে একদল মানুষ। এখন, এই মানুষগুলোর সৃষ্টিকর্তা কে? নাস্তিকরা বলবে, মানুষের কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। মানুষ হলো বিবর্তনের ফসল। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারা এই দূর্যোগে বসে যাদেরকে শোনাতে চাচ্ছে যে, ‘তোমাদের মসজিদ তোমাদের বাঁচায় নাই’, সেই মানুষগুলো কি আদৌ বিবর্তনে বিশ্বাস করে? করেনা। তারা যা বিশ্বাস করে তা হলো, মানুষের সৃষ্টিকর্তা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা।

এখানে, আরিফ আজাদের বক্তব্য হচ্ছে, যারা বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন তাদের একজন সৃষ্টিকর্তা আছে, সেই সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছেন বলেই তারা বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারেন। আরিফ আজাদ তার পাঠকদের বোঝাতে চেয়েছেন যে, আল্লাহই মূলত বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে চিকিৎসকদের মাধ্যমে মানুষকে বাঁচান।

এটা আরিফ আজাদের অন্ধবিশ্বাস যে, বিজ্ঞানের পেছনে যারা কাজ করেন তাদের একজন সৃষ্টিকর্তা আছে এবং সেই সৃষ্টিকর্তাই বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে চিকিৎসকদের মাধ্যমে মানুষকে বাঁচান। আমি বিশ্বাস করতেই পারি, সবকিছু শাঁকচুন্নির নিয়ন্ত্রণে আছে, শাঁকচুন্নিই মূলত বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে চিকিৎসকদের মাধ্যমে আমাদের রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি দেন, তাতে সেটা সত্য হয়ে যায় না। ব্যক্তিগত অন্ধবিশ্বাসকে যারা যুক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে চায় তাদের কি বলা যায়?

এছাড়াও, আরিফ আজাদ তার পাঠকদের বোঝাতে চেয়েছেন, যারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে, তাদের একথা বলে কি লাভ যে ‘তোমাদের মসজিদ তোমার বাঁচায় নাই’।

তারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে বলেই, তারা আল্লাহকে নিজেদের রক্ষক মানে বলেই আমরা তাদের বোঝাতে চাচ্ছি, তাদের বিশ্বাস কতোটা যুক্তিহীন, কতোটা অর্থহীন।

তারপর আরিফ আজাদ লিখেছেনঃ

দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞান যা নিয়ে কাজ করে, বা যা কিছু উদ্ভাবন করে, তার সবটাই প্রকৃতিতে বিদ্যমান। প্রকৃতির উপাদানকে বাইরে ঠেলে রেখে বিজ্ঞান কোনোভাবে কাজ করতে পারবেনা, সেটা মাইক্রোবায়োলোজির অতি ক্ষুদ্রকায় কোষের গাঠনিক ব্যাপার স্যাপার হোক, কিংবা মহাকাশের অতি বৃহদাকার নক্ষত্র। সবকিছুই দিনশেষে প্রকৃতির উপাদান। মানুষ এই উপাদান নিয়েই কাজ করে। আর, প্রকৃতিতে এই উপাদান সৃষ্টি করে রেখেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালা। তাই, বিজ্ঞানকে ইশ্বর বানিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে খারিজ করে দেওয়ার মাঝে কোন আদর্শিকতা নেই, আছে ব্যবসায়িক আর প্রবৃত্তিপূজার ধান্ধা।

‘আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কিছু করো, সবকিছুকে সৃষ্টি করেছেন’। (আস-সাফফাতঃ ৯৬)

আবারও, আরিফ আজাদ নিজের অন্ধবিশ্বাসকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছেন। আপনি চাইলে অতিপ্রাকৃতিক জগতে বিশ্বাস করতেই পারেন। আপনি চাইলে অতিপ্রাকৃতিক সত্ত্বায় বিশ্বাস করতেই পারেন। আপনি চাইলে বিশ্বাস করতেই পারেন, মামদোভূত বলে কিছু আছে। আপনি চাইলে বিশ্বাস করতেই পারেন, সবকিছুই মামদোভূতের সৃষ্টি এবং সবকিছুর ওপরই তার নিয়ন্ত্রণ আছে। কিন্তু, আপনাকে বুঝতে হবে, আপনি কোনোকিছু বিশ্বাস করেন মানেই এটা নয় যে, সেটাই সত্য।

আরিফ আজাদের মতো লোকদের বিখ্যাত মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক এবং মার্কিন মহাকাশ প্রকল্পসমূহের পুরোধা ব্যক্তিত্ব কার্ল সেগানের এই কথাটি সবসময় মনে রাখা উচিতঃ

Sagan standard

এছাড়াও, তাদের মনে রাখা উচিত ব্রিটিশ প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ সমালোচক এবং নব-নাস্তিক্যবাদের চার ঘোড়সওয়ারীর একজন ক্রিস্টোফার হিচেন্সের এই বিখ্যাত কথাটিঃ

Hitchens’s razor

আরিফ আজাদ আবার কুরআনের আয়াত দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না। ছোট ছোট বাচ্চারাও কমিক বুক দিয়ে কমিক চরিত্রের অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করে না। ছোট ছোট বাচ্চাদের বোধবুদ্ধিও আরিফ আজাদের চেয়ে বেশি।

তারপর আরিফ আজাদ লিখেছেনঃ

তৃতীয় ব্যাপার হলো, মসজিদে কেউ রোগ সারানোর জন্যে যায় না। মসজিদে যায় আল্লাহর ইবাদাত করার জন্যে। রোগ হলে কি করতে হবে তার যথাযথ গাইডলাইন ইসলামে খুব সুন্দরভাবে দেওয়া আছে। তবে হ্যাঁ, আমরা যেহেতু বিশ্বাস করি যে, রোগ-শোক আল্লাহর সৃষ্টি, তাই আমরা তার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি তার এই সৃষ্টির অকল্যাণ থেকে আমাদের বাঁচিয়ে তোলেন। তার আরেক কল্যাণকর সৃষ্টি (এটা হতে পারে ওষুধ, হতে পারে খাবার-দাবার, বিশ্রাম ইত্যাদি) দ্বারা আমাদের ওপর আরোপিত অকল্যাণকে মুছে দেন। আমরা তার এক সৃষ্টি থেকে বাঁচতে আরেক সৃষ্টির উসিলা গ্রহণ করি, এবং তার সাহায্য চাই। এটার সাথে মসজিদ আমাদের বাঁচানোর আর মেরে ফেলার তো কোন সম্পর্ক নেই।

হ্যাঁ, একথা আমরা সবাই জানি যে, মসজিদে মানুষ আল্লাহর ইবাদত করতে যায়। কিন্তু, কেবল ইবাদত করতেই যায় বললে ভুল হবে। মানুষ মসজিদে গিয়ে আল্লাহর ইবাদত করে আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে কান্নাকাটি করেন যেনো প্রিয়জনের রোগ সেরে যায়। আর আল্লাহর কাছে এভাবে দুহাত তুলে কান্নাকাটি করার ফল কেবল অন্ধবিশ্বাসেই পাওয়া যায়, বাস্তবে কখনোই পাওয়া যায়নি।

আরিফ আজাদ বলেছেন, রোগ হলে কি করতে হবে তার গাইডলাইন ইসলাম দিয়েছে। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, রোগ হলে চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ না করে কেবল প্রার্থনা করার কথা ইসলাম বলে না।

ইসলাম অনুযায়ী, আল্লাহ যেমন মানুষকে রোগ ব্যাধি দেন, আল্লাহই তেমনি রোগ ব্যাধি থেকে বাঁচান, রোগ দেওয়ার ক্ষমতা যেমন একমাত্র আল্লাহর আছে, তেমনি রোগ থেকে বাঁচানোর ক্ষমতাও একমাত্র আল্লাহরই আছে। অর্থ্যাৎ, আল্লাহ চাইলে কোনোপ্রকার চিকিৎসা ছাড়াই রোগ ভালো হয়ে যাবে আর না চাইলে পৃথিবীর কোনো চিকিৎসাই বাঁচাতে পারবে না। সেই হিসেবে, রোগ হলে চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করার কোনো অর্থ নেই, সেই হিসেবে, রোগ হলে কেবল প্রার্থনা করাই অর্থপূর্ণ। রোগ হলে যদি চিকিৎসার প্রয়োজনই হয়, চিকিৎসা ব্যতীত রোগ নিরাময় না হয়, তাহলে প্রার্থনা কি কাজে লাগে?

এছাড়াও, আরিফ আজাদের এই দাবিটি অর্থহীন যে, রোগ হলে কি করতে হবে তার গাইডলাইন ইসলামে সুন্দরভাবে দেওয়া আছে। প্রকৃতপক্ষে, রোগ হলে ইসলাম যা করতে বলে তা মুসলিমদের জন্য ভীষণ লজ্জার। ইসলাম অনুযায়ী, উটের মূত্র ওষুধ হিসেবে কাজ করে[3] রোগ হলে উটের মূত্র পান করার পরামর্শই ইসলাম দেয়। আবার, ইসলাম অনুযায়ী, কালোজিরা সকল রোগের ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে কাজ করে। [4]

তারপর আরিফ আজাদ লিখেছেনঃ

চতুর্থ ব্যাপার হলো, এই দূর্যোগ কাটাতে যেসব চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে সবাই কিন্তু আপনাদের মতো অন্তর্জালীয় বিজ্ঞানী নয়। তাদের মধ্যে আল্লাহয় বিশ্বাসী, গডে বিশ্বাসী, ঈশ্বরে বিশ্বাসী অনেকে আছেন। পার্থক্য হলো, তাদের কাজ নিয়ে যে আপনারা অন্তর্জালে এভাবে খিস্তিকেউড় করে বেড়ান, তা দেখার তাদের টাইম নাই। টাইম নাই আপনাদেরকেও গোনার।

হ্যাঁ, বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন, ধর্মে বিশ্বাস করেন, দোয়া দরূদে বিশ্বাস করেন, এমনকি অনেকে মামদোভূত বা শাঁকচুন্নিতেও বিশ্বাস করতে পারেন। এসব তাদের একান্ত ব্যক্তিগত বিশ্বাস ছাড়া কিছুই না। একজন বিজ্ঞানী ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেই পারেন, ধর্মে বিশ্বাস করতেই পারেন, দোয়া-দরুদে বিশ্বাস করতেই পারেন। তাতে ঈশ্বরে বিশ্বাসের বা ধর্মে বিশ্বাসের কিংবা দোয়া-দরুদে বিশ্বাসের মূল্য বেড়ে যায় না। একজন বিজ্ঞানীর ঈশ্বরে বিশ্বাস প্রমাণ করে না ঈশ্বর বলে কিছু আছে, একজন বিজ্ঞানী কোনো ধর্মে বিশ্বাস করলেই সেই ধর্ম সত্য হয়ে যায় না, একজন বিজ্ঞানীর দোয়া-দরুদে বিশ্বাস প্রমাণ করে না দোয়া-দরুদে কাজ হয়।

ঈশ্বরে বিশ্বাস কিংবা ধর্মে বিশ্বাস একজন মানুষকে বিজ্ঞানী বানায় না, বিজ্ঞানের পথ অনুসরণই একজন মানুষকে বিজ্ঞানীতে পরিণত করতে পারে। এযাবৎ যতো মানুষ বিজ্ঞানী হয়েছেন তাদের কেউই নিজেদের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কারণে বিজ্ঞানী হননি, নিজেদের অনুসন্ধিৎসু মনের কারণেই তারা বিজ্ঞানী হতে পেরেছেন, ভুল ধারণার ভীড় থেকে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করার ক্ষুধা ছিলো বলেই তারা বিজ্ঞানী হতে পেরেছেন।

বিজ্ঞানে কারো ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কোনো মূল্য নেই। আপনি একজন অশিক্ষিত সাধারণ মানুষই হন আর বিখ্যাত বিজ্ঞানীই হন আপনার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের জায়গা বিজ্ঞানে নেই। বিজ্ঞান সত্যের খোঁজে থাকে, বিজ্ঞান প্রমাণের খোঁজে থাকে।

ধর্ম আমাদের বিশ্বাস করতে শেখায়, বিজ্ঞান শেখায় প্রমাণের ওপর নির্ভর করতে। ধর্ম সন্দেহ পোষণে নিরুৎসাহিত করে, বিজ্ঞান সন্দেহ পোষণে উৎসাহিত করে। ধর্মে অবিশ্বাস করলে ধর্ম জাহান্নামের ভয় দেখায়, ধর্ম কখনোই নিজের অসংগতি মেনে নিতে পারে না। এদিকে, বিজ্ঞানের কাজই ভুল ধারণার অবসান করে সঠিক তথ্য সামনে আনা। আর সেজন্যই আজ ধর্মকে বিজ্ঞানের মধ্যে নিজের গ্রহণযোগ্যতা খুঁজে বেড়াতে হয়।

ধর্মের আজ এতো খারাপ দিন এসেছে যে, ধর্মকে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের জন্য বিজ্ঞানীদের ধর্ম পরিচয় খুঁজে বেড়াতে হয়।

তারপর আরিফ আজাদ লিখেছেনঃ

পঞ্চম এবং সবশেষ ব্যাপার হলো, মসজিদ আমাদের বাঁচাতে পারলো না বিজ্ঞান বাঁচালো, সেই তর্ক বাদ দিয়ে, আপনারা যারা এতোদিন অনেক বড়াই করে বলতেন যে, আপনারা দুনিয়ার সবকিছু জেনে ফেলেছেন, কৃত্রিম প্রাণ আবিষ্কার করে স্রষ্টাকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন, তারা এবার খাস করে একবার তাওবা করে ফেলুন। ক্ষুদ্রকায় একটা ভাইরাস, যাকে খালি চোখে দেখাই যায় না, সেই অদৃশ্য একটা জিনিস আপনাদের কেমন করে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে, তা দেখেও যদি আপনাদের অহমিকার পারদ নিচে না নামে, তাহলে দুনিয়ার আর কোন জিনিসে আপনাদের লজ্জা শরম হবে? এবার তো পা দু’খানা মাটিতে রাখেন।

নাস্তিকদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যাদের ভেতর সঠিক যুক্তিবোধ নেই। নাস্তিকদের মধ্যে অনেকেই অনেকসময় না জেনে না বুঝে ভুল কথা বলে ফেলেন। কিন্তু, আজ পর্যন্ত আমি এমন কোনো নাস্তিক দেখিনি যিনি ‘আমরা দুনিয়ার সবকিছুই জেনে গেছি’ বলে প্রচার করেছেন। নাস্তিকদের সমালোচনার জন্য তাদের নামে মিথ্যাচার করা কেনো এতো প্রয়োজন? তাদের সহজ সাধারণ কথার অন্য মানে দাঁড় করানো কেনো এতো প্রয়োজন? নাস্তিকদেরকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা ছাড়া তাদের সমালোচনা করার সামর্থ্য কি আরিফ আজাদদের নেই? নিজেদের ধর্ম রক্ষার্থে আরিফ আজাদরা যেসব বিষয়ের সমালোচনা করেন বা বিরোধিতা করেন দুঃখজনকভাবে সেসব বিষয়কে সঠিকভাবে উপস্থাপন করার সৎ সাহস তাদের ভেতর খুঁজে পাওয়া যায় না। নাস্তিকতার সমালোচনা করতে গেলে তাদের বলতে হয়, নাস্তিকতা মানে ‘ঈশ্বর নেই’ বিশ্বাস করা বা নাস্তিকতা একটি অন্ধবিশ্বাস। নারীবাদের সমালোচনা করতে গেলে তাদের বলতে হয়, নারীবাদ মানে নারীর পাবলিক প্লেসে প্রস্রাব করার স্বাধীনতার আন্দোলন। বিবর্তন তত্ত্বের সমালোচনা করতে গেলে তাদের বলতে হয়, বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ বানর থেকে এসেছে। তাদেরই বা কি দোষ, নিজেদের ধর্ম রক্ষার্থে তারা যেসব বিষয়ের সমালোচনা করেন সেসব বিষয়কে যদি সঠিকভাবে উপস্থাপন করেন তাহলে তো মানুষের চোখ খুলে যেতে পারে৷ সাধারণ মানুষকে ধর্মান্ধ করে রাখাই যখন উদ্দেশ্য হয়, তখন এধরণের অসততা স্বাভাবিক।

বিজ্ঞান আলাদীনের জিনি না যে, বিজ্ঞানের কাছে কিছু চাইলেই বিজ্ঞান মুহূর্তের মধ্যে তা মুখের সামনে হাজির করে দেবে। নাস্তিকরা বলে না, বিজ্ঞান সবকিছুই জেনে গেছে বা জানতে পারবে। নাস্তিকরা এটাও বলে না, বিজ্ঞান সবকিছুই করতে পারে বা করতে পারবে। আর বিজ্ঞান সবকিছু জানতে না পারলেই বা করতে না পারলেই প্রমাণিত হয়ে যায় না ঈশ্বর আছে। বিজ্ঞান সবকিছু জানতে না পারলেই বা করতে না পারলেই কোনো ধর্ম সত্য হয়ে যায় না। বিজ্ঞান সবকিছু জানতে না পারলেই বা করতে না পারলেই প্রমাণিত হয়ে যায় না যে, দোয়া-দরুদে কাজ হয়।

‘আমাদের সামনে যতো বড় বিপর্যয়ই আসুক না কেন, ভয়ের কিছু নেই, বিজ্ঞান আমাদের উদ্ধার করতে পারবেই’, এমন ধারণা কেউই প্রচার করে না। বিজ্ঞান আমাদেরকে উদ্ধার করার চেষ্টা করতে পারে, চেষ্টায় সফলও হতে পারে, আবার ব্যর্থও হতে পারে। তারপরও, বিজ্ঞানই আমাদের একমাত্র ভরসা। কেননা, বিজ্ঞানই যুগ যুগ ধরে অসংখ্য অসংখ্য প্রাণ বাঁচিয়েছে এবং প্রতিনিয়তই বাঁচিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানই আমাদের জীবনে এনেছে অভাবনীয় পরিবর্তন আর জীবন করেছে সহজ, সুন্দর ও নিরাপদ। সবচেয়ে বড় কথা, সঠিক এবং নিখুঁতভাবে বাস্তবতা নিরূপণে বিজ্ঞানই একমাত্র কার্যকর পদ্ধতি।

২০শে এপ্রিল, ২০২০ তারিখ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীজুড়ে ২৩ লাখেরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ লাখেরও বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন। যারা সুস্থ হয়েছেন তারা কিন্তু বিজ্ঞানের কল্যাণেই সুস্থ হয়েছেন, যথাযথ চিকিৎসা পেয়েছেন বলেই সুস্থ হতে পেরেছেন। দিনশেষে, বিজ্ঞান লড়ে বলেই মানুষ সুস্থ হয়, মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ওঠে।


তথ্যসূত্র

  1. চিরকুট – Chirkut’ নামক ফেসবুক পেইজের ৪ঠা এপ্রিল, ২০২০ তারিখের একটি পোস্ট []
  2. আরিফ আজাদের ৮ই এপ্রিল, ২০২০ তারিখের পোস্ট []
  3. গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
    অধ্যায়ঃ ২৯। কাসামাহ্ (খুন অস্বীকার করলে হলফ নেয়া), মুহারিবীন (লড়াই), কিসাস (খুনের বদলা) এবং দিয়াত (খুনের শাস্তি স্বরূপ জরিমানা) (كتاب القسامة والمحاربين والقصاص والديات)
    হাদিস নম্বরঃ ৪২৪৬
    ২. শক্র সৈন্য এবং মুরতাদদের বিচার
    ৪২৪৬-(১০/…) আবূ জাফার মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ….. আনাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে, “উকল” গোত্রের আটজনের একটি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলো। তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে ইসলামের উপর বাই’আত করল। অতঃপর মাদীনার আবহাওয়া তাদের প্রতিকূল হওয়ায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অভিযোগ করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি আমাদের রাখালের সাথে গমন করে উটের মূত্র এবং দুগ্ধ পান করতে পারবে? তখন তারা বলল, জী- হ্যাঁ। এরপর তারা বের হয়ে গেলে এবং এর (উটের) মূত্র ও দুগ্ধ পান করল। এতে তারা সুস্থ হয়ে গেলো অতঃপর তারা রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে গেলে। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌছল। তিনি তাদের পিছনে লোক পাঠালেন। তারা তাদেরকে পাকড়াও করে নিয়ে এল। তাদের প্রতি নির্দেশ জারি করা হল। তখন তাদের হাত-পা কৰ্তন করা হল এবং তপ্ত লৌহ শলাকা চোখে প্রবেশ করানো হলা। এরপর তাদেরকে রৌদ্রে নিক্ষেপ করা হলো। অবশেষে তারা মারা গেল।
    ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) … বর্ণনা وَطَرَدُوا الإِبِلَ এর স্থলে وَاطَّرَدُوا النَّعَمَ উল্লেখ রয়েছে। রাবী বলেন, অতঃপর তাদের চোখগুলো উপড়ে ফেলা হল। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২০৭, ইসলামিক সেন্টার ৪২০৭)
    হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) []
  4. গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
    অধ্যায়ঃ ৭৬/ চিকিৎসা (كتاب الطب)
    হাদিস নম্বরঃ ৫৬৮৭
    ৭৬/৭. কালো জিরা
    ৫৬৮৭. খালিদ ইবনু সা‘দ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনু আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদিনায় ফিরলাম তখনও তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশুনা করতে আসেন ইবনু আবূ ‘আতীক। তিনি আমাদের বললেনঃ তোমরা এ কালো জিরা সাথে রেখ। এত্থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে যাইতুনের কয়েক ফোঁটা তৈল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এ দিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা, ‘আয়িশাহ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ এই কালো জিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ঔষধ। আমি বললামঃ ‘সাম’ কী? তিনি বললেনঃ মৃত্যু। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৭২)
    হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih) কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য ইসলামের পরামর্শ কালোজিরা খাওয়া। ইসলামের যথাযথ গাইডলাইন এটাই, আরিফ আজাদের উচিত জ্বর ঠান্ডা লাগলে ইসলামের যথাযথ গাইডলাইন মেনে টাটকা উটের মূত্র পান করা। []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

View Comments (20)

  • বিজ্ঞান আর ধর্ম দুইটা দুই জিনিস। ধর্ম একান্তই বিশ্বাসের বিষয়। আর বিজ্ঞান পরীক্ষালব্ধ প্রাপ্ত জ্ঞান। বিজ্ঞান দিয়ে ধর্ম পরীক্ষা যেমন বোকামি তেমনি ধর্মের মধ্যে বিজ্ঞান খোঁজা বোকামি। ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে কেউ শান্তিতে থাকলে থাকুক তাতে নাস্তিকদের এত নাক গলানোর কি আছে। আর কিছু হুজুরের আতেল কথাবার্তার জন্য ধর্ম অনেকের কাছে হাসির খোরাক হয়ে যাচ্ছে। সবাই নিজে ভালো থাকি অন্যকে ভালো রাখি।

    • আপনার অভিযোগের জবাব এই আর্টিকেলেই আছে।

  • আসিফ ভাই, পুরোটাই পড়লাম। অসাধারণ । ইসলামিক বিজ্ঞানের কিছু উদাহরণ থাকলে ভালো হতো। যেমন- "শিলার পাহাড় থেকে শিলাবৃষ্টি হয়।" কারণ এখন মানুষ অহরহ আকাশে শিলাবৃষ্টির ওপর দিয়ে প্লেনে যায় । সত্যটা হয়তো সহজে বুঝতে পারবে। আপনি হয়তো বলতে বলতে বোর হয়ে গেছেন । তাও বলতে হবে ।

    লেখাটা ছাড়বেন না। আমরা কমেন্ট করতে ভয় পেলেও লেখাগুলো বহু মানুষই পড়ি। হতোদ্যম হবেন না। আমাদেরকে হতাশ করবেন না। আমরা অনেকেই আছি। মানুষ কথা বলতে পারে না ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের ভয়ে। ফেসবুকে এখন কিছু লিখলেই শত জনের গালি আর পরোক্ষ হুমকি। আপনাদেরকেই এগিয়ে নিতে হবে এ গুরুদায়িত্ব ।

    গত এক দশকে দেশটা আদিমতার দিকে চলে গেছে। এদেশে জন্মে আমরা আর গর্বিত নই, ব্যথিত। এদেশে আমরাই প্রকৃত সংখ্যালঘু। যাদের যাওয়ার কোন যায়গা নেই। সমৃদ্ধ সংস্কৃতির নাকের ওপরে আজ পানি উঠে যাচ্ছে, শীর্ণকায় হয়ে গেছে ।

    আর একটি জিনিস আপনার কাছ থেকে উঠে আসলে ভাল হয়। এখন যে করোনা পরবর্তী অনু-জীব নিয়ে আলোচনা হয়, সেখান একটি আলোচনা একেবারেই অনুপস্থিত লক্ষ্য করছি। তা হলো ষোড়শ শতাব্দীতে বিজ্ঞানী লিউয়েন হুকের অতশী কাঁচ, মাইক্রোস্কোপ এবং ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কারের কথা। যাঁকে "ফাদার অফ দ্য মাইক্রোবায়োলজি" বলা হয় । ইসলামে ছোঁয়াচে রোগ আছে বা নেই সে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় এই ছোঁয়াচে রোগের কারণ যে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া তা কিন্তু ধর্ম বলে যেতে পারনি। এই সত্য আবিষ্কার করতে কিন্তু এক হাজার বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল (632 - 1624)।

    আরও আলোচনায় আসতে পারে ইসলামে বলা 18,000 প্রজাতির মখলুকাত (প্রানী) সম্পর্কে। যেখানে মাছ আছে 28,000, পাখি 9,000, কীট পতঙ্গ 3,50,000, মানুষ সহ আরো বাকী প্রানী 2,00,000 প্রকারের । ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া কোটি কোটি প্রজাতির । তাহলে 18,000 সংখ্যাটি একদমই বালখিল্য নয়! বিস্তারিত আলোচনার আশা রাখছি । অনেক বিষয় আছে, আপনি খুবই ব্যস্ত বুঝি।

    আর দয়া করে সবাইকে বলবেন Discovery,National Geographic চ্যানেল দুটো দেখতে। যা এখন বাংলাতেই আছে । আর প্রথম আলোর 'বিজ্ঞান চিন্তা ' পড়তে। প্রতিমাসের 15 তারিখে বের হয়। বলবেন যদি হিতে বিপরীত না হয়।

    আর যেটা বেশি আলোচিত হতে দেখছি না সেটা হলো হিলা বিয়ে। যার দ্বারা নারী এ পর্যন্ত বেশি নির্যাতিত হয়েছে । এগুলো নিয়ে আলাদা আলোচনা হতে পারে । হয়ে থাকলে দুঃখিত। ধন্যবাদ আপনাকে ।

    • এটা তো আসিফ ভাইয়ের লেখা না, বস। আমার লেখা, আমার সাথে কথা বলুন।

  • লেখা‌টি নতুন নতুন চিন্তার জন্ম দেয়, ধন্যবাদ।

    • আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি ধৈর্য্যের সাথে পড়ার জন্য।

  • ধন্যবাদ মারুফ ভাই সুন্দর লেখার জন্য।

  • কুরআন এর প্রথম কথাই হচ্ছে পড় যা মানে জ্ঞান আহরণ কর। আর ভাই আপনার কথার কোন প্রাসঙ্গিকতা আমি খুঁজে পেলাম না। হুদাই পেচাল পারলেন আরকি।

    আল্লাহ আপনাকে হিদায়াত দান করুক। দোয়া রইল।

    • আপনার মন্তব্যটি পড়ে বোঝা গেলো, আপনি লেখাটি পড়েননি। এখন, ঈমানী দায়িত্ব থেকে বিরোধিতা করতে হবে তাই অর্থহীন একটি মন্তব্য করে বসলেন।

      মামদোভূত আপনাকে হেদায়েত দান করুক। দোয়া রইলো।

  • Not condescending and haughty grinning any approach, would you tell me what is your profession, just a curiosity. Marx once said, work is liable for forming the character.

  • এই চারটা বাক্য অনেকটা কবিতার মতো। যার ভাবার্থ বু্ঝা দরকার। আরিফ গং তা না করে আক্ষরিক অর্থে কতগুলো নর্দমা লিখে গেল।

    আমার শুধু মানুষের মুক্তির জন্যে কষ্ট হয়।
    আহা মানুষ! পরকালের ধোকায় বিভর তারা।

    আমার কষ্ট হয় এই পুঁজিবাদী সমাজ দেখে।
    জন্মই হলাম গরিব হয়ে।
    আরেকজন জন্মই হলো বিল গেটসের সন্তান হয়ে।
    আজকের যুগের বিজ্ঞানও ঠিক পুঁজিবাদী।

    বিদ্রঃ লেখক, অর্থহীন মন্তব্যের জন্যে দুঃখিত। আপনাকে ধন্যবাদ। লেখাটা ভালো লেগেছে।

  • লেখক,
    সব পড়লাম। আসিফ আজাদ আসলে একটা গোয়েন্দা কাহিনীর মত লিখেছেন। যেটা সে নিজেই সমাধান করেছেন। যেমন কোন গোয়েন্দা কাহিনীতে একটা লাশের পাশে একটা রুমাল পড়েছিলো, সেটা থেকেই কাহিনী শুরু হয় এবং সমাধান হয়। পুরোটাই লেখকের হাতে। কিন্তু রুমাল বাদ দিয়ে ঐ গল্প টাতে আমি অন্য ক্লু র অবতারণা করেও সমাধান করতে পারি। আসিফ আজাদরা কথায় কথায় কুরান হাদীসের রেফারেন্স টেনে আনে, যা আমরা বিশ্বাসই করি না।
    প্রশ্ন একটাই "সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে যারা বিশ্বাস করে না তারা নাস্তিক। অথচ স্বয়ং আল্লাহ বিশ্বাস করে না যে তার কোন সৃষ্টিকর্তা আছে। তাহলে যদি আস্ততিকদের আল্লাহ থেকেই থাকে তবে সেও কি নাস্তিক নয়?"

  • বিজ্ঞান ও ধর্ম তখনই সাংঘর্ষিক যখন ধর্মকে বিজ্ঞান দিয়ে মাপতে যাবেন। আমি ধর্ম পালন করি বিশ্বাস থেকে, যা একান্ত নিজস্ব বিশ্বাস। আমি মোনাজাত করি আল্লাহর কাছে মনের শান্তির জন্য, যা হয়তো বিজ্ঞানের কাছে আমি পাবো না। প্রার্থনা একটা আধ্যাত্মিক ব্যাপার যা মনকে শান্ত করে, জীবনে চলার পথের নানান ঝড় ঝঞ্জাটে মানসিক চাপ কমায়। কিন্তু, ধর্মের কারনে বিজ্ঞানকে দূরে রাখতে হবে এমন কিছু নয়। অনেক মোল্লা ভুল বলে শিক্ষার অভাবে, সুশিক্ষার একটা ব্যাপার আছে। আবার অনেকে নাস্তিকতাবাদ প্রচার করতে গিয়ে মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে হেয় করে, নোংরা কথা বলে সেটা অন্যায়। বিজ্ঞান সমাজে স্থিরতা ও অস্থিরতার জন্য দায়ী না। দায়ী হচ্ছি আমরা যারা বিবাদ সৃষ্টি করে উস্কানিমূলক কথা বলি।

    ভ্যাটিকানের পোপের কাছ থেকে এই বর্তমান সময়েও পৃথিবীর প্রচুর মানুষ দোয়া নেয়। করোনা থেকে বাঁচতে পোপ বিশেষ প্রার্থনা করেছেন, তাই বলে বিজ্ঞানীরা কেও পোপের বিরুদ্ধে কথা বলেন নি।

    একজন ডাক্তার যখন আই সি ইউতে রোগী দেখে এসে রোগীদের আত্মীয়দের বলেন আমরা আমাদের কাজ করেছি এখন আল্লাহকে ডাকেন। এটাতে দোষের কিছু নেই।

    বিজ্ঞান কখনোই ন্যায়, অন্যায় বা মৌলিক গুনাবলী শেখায় না। তাই ধর্ম ও বিজ্ঞান দুটোই এখনো পাশাপাশি বিদ্যমান। হিউম্যান সিভিলাইজেশ্যন ক্যাননট স্ট্যান্ড অনলি সায়েন্স।

  • আসল কথা হল এটাই যে, বিজ্ঞানের কাছে এমন কিছু প্রশ্ন থাকবে যার উত্তর দেওয়া হয়তোবা আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না । কিন্তু ধর্মের কাছে আগে থেকেই উত্তর থাকবে যাকে কিনা কোনোকালেও প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না । নাহলে চাপাতি পড়বে গর্দানে । (ইউটিউবের একটি কমেন্ট সেকশন হতে সংগৃহীত)

    এনিওয়েস মারুফুর ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই চমৎকার লেখার জন্য।
    আপনাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

Leave a Comment