কাঠমোল্লা সমাজের চক্ষুশূল যখন অভিনেতা মোশাররফ করিম

Print Friendly, PDF & Email

‘অন্যান্য অপরাধের মতো ধর্ষনও একটা অপরাধ এবং অনেক জঘন্য অপরাধ’ এই সামান্য শিক্ষা যার ভেতর নেই তার দ্বারাই ধর্ষন নামক অপরাধে অপরাধের শিকারকে দায়ী করা সম্ভব। কেননা তারা পৃথিবীর যেকোনো অপরাধে অপরাধের শিকারকে দায়ী না করলেও ধর্ষনের বেলায় অপরাধের শিকারকেও দায়ী করে। তাদের চিন্তাধারা অনুযায়ী, পুরুষের কামনা বাসনা জাগলে সেই কামনা বাসনা যেহেতু কোনো নারীর কারণে জেগেছে সেহেতু পুরুষ কামনাবাসনা নিবারণের জন্য ধর্ষন করলে নারীও অপরাধী। হ্যা আমিও মনে করি ধর্ষনের জন্য নারী দায়ী কারণ নারী যদি সন্তান জন্ম না দিতো তাহলে এসব অমানুষের জন্ম আসলে হতো না।

সম্প্রতি বিখ্যাত অভিনেতা মোশারফ করিম একটি টিভি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ধর্ষনের জন্য পোশাক দায়ী নয়, ধর্ষনের জন্য আমাদের মানসিকতা দায়ী। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, ধর্ষনের জন্য যদি পোশাক দায়ী হতো তাহলে ছয়/সাত বছরের শিশু ধর্ষিত হতো না। ধর্ষনের জন্য যদি পোশাক দায়ী হতো তাহলে পর্দানশীন নারী ধর্ষিত হতো না। তার মূল বক্তব্য হলো পশুত্ব আমাদের মনে থাকে যে পশুত্বের কারণে আমরা পর্দানশিন, পর্দাবিহীন, শিশু বৃদ্ধ যাকে পাই তাকে দিয়ে যৌন খুদা মেটাতে চাই। মোশারফ করিমের এমন যুক্তিযুক্ত নারী বান্ধব এবং পজিটিভ চিন্তা কাঠমোল্লা সমাজ কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছেনা। কারণ মোশারফ করিমের এমন যুক্তিযুক্ত চিন্তাভাবনা কাঠমোল্লা সমাজের চিন্তাভাবনার পুরো বিপরীত। এসব কাঠমোল্লা সাহেবরা কোনোভাবেই মানতে রাজি নয় যে ধর্ষন পোশাক দোষে হয় না, ধর্ষনের দায় পুরোপুরি ধর্ষকের। তারা মানতে রাজি নয় অপরাধের দায় অপরাধের শিকার হওয়া মানুষের ওপর দেওয়া যায় না।

যেভাবেই হোক তাদের যেন প্রমাণ করতে হবে ধর্ষনের জন্য পোশাক দায়ী। যদিও যুক্তি বাস্তবতা বিবেক সবই ভিন্ন কথা বলে যা তাদের চোখের সামনে। যেভাবে সম্ভব ধর্ষনের জন্য পোশাককে দায়ী করার উদ্দেশ্য নিয়ে তারা আবার বলেন, ছোট শিশু ধর্ষিত হলে পোশাক দায়ী নয়, পর্দানশীন নারী ধর্ষিত হলে পোশাক দায়ী নয় তবে প্রাপ্তবয়স্ক নারী ধর্ষিত হয় পোশাক দোষে। তাদের বেশিরভাগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পোশাককে ধর্ষনের মূল সমস্যা প্রমাণ করতে বলে বসেন, সমাজে যেসব নারী বোরখা হিজাব ইত্যাদি পড়ে না তাদের দেখেই পুরুষ কামনা বাসনা মেটাতে চোখের সামনে যা পায় তাই ধর্ষন করে।

যদিও এসব শিশুসুলভ কথাবার্তার উপযুক্ত জবাব আমরা আগেও অনেক বার দিয়েছি তাও বার বার বলতে হয়। বার বার বলা এজন্য যে আশাকরি বলতে বলতে একটা সময় সমাজে পরিবর্তন আসবে। আমার যদি টাকা পয়সার প্রয়োজন পড়ে তাহলে আমি কারো ওপর হামলা করে জোর করে টাকা আত্মসাৎ করতে পারি না। প্রয়োজন আমার দায় আমার। আমার টাকা পয়সার প্রয়োজন পড়লেই আমি কারো ওপর জোরজুলুম করতে পারি না। যদি করি তাহলে অপরাধ শুধু আমারই হয়। ঠিক তেমনি, আমার কামনা বাসনা এলেই আমি কোনো নারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি না। কামনা বাসনা আমার এবং তার দায়ও আমার। কামনা বাসনা নিবারণের জন্য যদি কারো ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি তাহলেও অপরাধ শুধু আমারই হয়। টাকাপয়সার দরকার পড়লেই যেমন ছিনতাই করা জায়েজ হয়ে যায় না এবং ছিনতাই এর দায় শুধু ছিনতাইকারীর হয় তেমনি কোনো নারীকে দেখে কামনা ভাব আসলেই ধর্ষন করা জায়েজ হয়ে যায় না এবং ধর্ষনের দায় ধর্ষকেরই হয়।

একবার এক মাদ্রাসা ছাত্রের সাথে আমার ধর্ষন নিয়ে বেশ তর্ক বিতর্ক হয়। তাকে যতো যুক্তি উদাহরণ বাস্তবতা দেখানো হোক না কেন সে কিছুতেই মানতে রাজি নয় যে ধর্ষনের জন্য পোশাক দায়ী নয়। কারণ সে যুক্তি বুঝুক আর না বুঝুক, তার ভেতরে ছোটবেলা থেকে নারী স্বাধীনতার প্রতি বিদ্বেষের জন্ম দেওয়া হয়েছে, নারী স্বাধীনতাকে কোনো নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, নারী স্বাধীনতাকে সে চিরকাল কোনো নিষিদ্ধ বিষয় ভেবেই বড় হয়েছে। তাই নারী স্বাধীনতার বিরোধিতা সে করবেই। তাই নারী স্বাধীনতাকে ঘৃণিত করতে ধর্ষন যৌন হয়রানির মতো নারী নিপীড়নের সাথে নারী স্বাধীনতাকে সম্পর্কিত করার চেষ্টা সে করবেই। ধর্ষনের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করা কাঠমোল্লা এবং তার মুরিদদের উদ্দেশ্যে আমি সর্বদা একটি প্রশ্নই রাখি, আমার যদি আপনার ওপর রাগ আসে আর আমি যদি আপনার অন্ডকোষে লাথি মারি তাহলে কি আমার সাথে সাথে আপনিও অপরাধী হবেন? বা, কারো ওপর আসা রাগ যদি আপনার অন্ডকোষে লাথি মেরে কমানোর চেষ্টা করি তাহলে কি আমার এমন কর্মের জন্য সেই লোকও দায়ী হবে? উত্তর অবশ্যই না, তাহলে কেন কোনো নারীকে দেখে কাম ভাব আসলেই ধর্ষনে নারী বা নারীর পোশাক দায়ী হবে? এরকম প্রশ্ন শুনলে কাঠমোল্লা এবং তাদের মুরিদরা চোখে সরষে ফুল দেখতে থাকে যদিও তারা তাদের মূর্খতা থেকে একটুও সরতে রাজি হয় না।

সত্যিকার অর্থে ধর্মের চেয়ে নারী স্বাধীনতা বিদ্বেষ কাঠমোল্লাদের টানে বেশি। কেননা শুধুমাত্র নারীর পোশাক নিয়েই তাদের সমস্যা, অধিকাংশ পুরুষ যে তাদের ধর্মীয় পর্দার বিধান অনুসরণ করে না সেটা নিয়ে তারা একদম কথা বলেন না। অর্থাৎ পুরুষ নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী পড়ুক, নারী নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী পড়ুক তা সহ্য হয় না। সহ্য হবে কিভাবে যে জাতকে তারা সবসময় নিচু ও দূর্বল জাত হিসেবে ভেবে এসেছেন সেই জাত ব্যক্তিস্বাধীনতায় চলবে, পুরুষ আর পুরুষতন্ত্রের পায়ের নিচে থাকবে তা তো সহ্য হবেই না। দুঃখজনক যে এসব পীর মুরিদরা মানুষের ধর্মীয় অন্ধত্ব, অশিক্ষা কুশিক্ষাকে পুঁজি করে জাতিকে নিজেদের বর্বর চেতনায় আবদ্ধ করছে আর সর্বসাধারণও ধর্মীয় অন্ধত্বে হারিয়ে নিজেদের বুকে নিজেরা ছুড়ি মারছে। যারা মানুষকে আলোর পথ দেখাতে চাইছে তাদের ইহুদীদের দালাল বলে ঘোষণা করা হচ্ছে। মানুষের উদ্দেশ্যে দুটো পজিটিভ বাক্য বলে মোশারফ করিম হয়ে গেলেন ইহুদীদের দালাল। কেন এতো ঘৃণা ইহুদিদের প্রতি? কেন ছোটলোকের মতো নিজেদের সকল অপকর্ম আর ব্যর্থতার দায় ইহুদীদের দেওয়া? এভাবে আর কতকাল ঘৃণা চর্চা চলবে? আর অন্ধত্বে হারিয়ে যাওয়া সমাজের চোখের পর্দা কবে খুলবে? সেদিন যেদিন চার সাক্ষীর অভাবে ধর্ষিতার বিচার হবে না? সেদিন যেদিন পর্দা না করায় কারো বোনকে বেত্রাঘাত পেতে হবে? আপনারা না চাইলে কোনোদিনই হবে না।

Marufur Rahman Khan

Marufur Rahman Khan is an Atheist Blogger from Bangladesh.

6 thoughts on “কাঠমোল্লা সমাজের চক্ষুশূল যখন অভিনেতা মোশাররফ করিম

  • March 24, 2018 at 5:35 PM
    Permalink

    দারুণ????????????

    Reply
  • March 27, 2018 at 7:17 PM
    Permalink

    কাঠমুল্লাদের কাছে প্রশ্ন?
    আপনি নিজের ঈমান ঠিক রাখবেন নাকি নিজে কুলাঙ্গার হয়ে অন্যের ঈমান ঠিক করতে যাবেন? উদাহরণসমূহ, রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন তখন আপনার চোখের সামনে শর্ট ড্রেস পরুয়া মেয়ে পড়ল, তখন কি আপনি আপনার ঈমান বিষর্জন দিয়ে মেয়েটির যৌন বিষর্জন করবেন? মন মানষিকতা পাল্টালে রাস্তায় কে কি পড়ল তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের ঈমান নিয়ে মাথা ঘামাতেন।

    Reply
    • March 28, 2018 at 12:00 PM
      Permalink

      ভালো বলেছেন!

      Reply
  • March 28, 2018 at 6:00 PM
    Permalink

    যে সমস্ত কাঠ মোল্লারা ধর্ষণের জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে নারীর পোষাক কে দায়ী করতেছে তারা বিসমিল্লাহ বলে মদের গ্লাসে চুমুক দেওয়া পাবলিক।এরা মদ খেয়ে মাতলামি করে নালায় পরে বলে শালার নালা রাস্তার এক পাসে থাকতে পারিস না।নিজেদের বিকৃত রুচি মিঠানো জন্য এরা ধর্ষণ করে আর তা যায়েজ করার জন্য পোষাক কে দায়ী করে।।মোশারফ যে কথা গুলো বলেছে তা বহু আগে অনেকে অনেক ভাবে বলেছে।। সব দুঃখের বিষয় হল মোশারফের ক্ষমা চাওয়ার বিষয় টা।মোশারফ কাদের কাছে ক্ষমা চাইল? ধর্ষকদের কাছে ক্ষমা চাওয়া ধর্ষণের বৈধতা একই কথা।।।

    Reply
    • March 28, 2018 at 6:08 PM
      Permalink

      সত্য কথা বলায় এখন মোশারফ ইহুদী নাসারাদের দালাল হয়ে গেল।আসলে এরা হল অই সমস্ত পাবলিক যারা মাথায় টুপি দিয়ে মদ বিক্রি করা এক দল সাচ্চা মুমিন যারা বিসমিল্লাহ বলে মদের গ্লাসে চুমুক দেন তারা তাদের ধর্ষক ভাইকে বাচানোর জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে ধর্ষণের জন্য নারীর পোষাকে দায়ী করে চলেছেন।কিন্তু আমাদের দেশে আজ পর্যন্ত যত ধর্ষণ হয়েছে তার একটাও যে পোষাকের জন্য হয়েছে তার কোন প্রমাণ নেই।গত চার বছরে তিন হাজার ৫২৮জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।আরেকটু পিছনে যায় বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১২ সালে ৮৬ জন, ২০১৩ সালে ১৭৯ জন, ২০১৪ সালে ১৯৯ জন, ২০১৫ সালে ৫২১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।।এখন প্রশ্ন হল এই সব শিশুদের বুঝি পোষাক ঠিক ছিল না?মক্তবে পড়তে আসা শিশু থেকে মাদ্রাসায় পড়তে আসা নাবালক শিশুটি যখন হুজুর কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয় তখন কি বলবেন?আচ্ছা তা বাদদেন আমেরিকায় ৯%পুরুষ, পুরুষ কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়।এখন তাদের বিষয়ে কি বলবেন।।তাদের পোষাক ও কি ঠিক ছিল না।।জন্মের পর থেকে আপনার শিশুকে কালো কাপড় দিয়ে ডেকে রাকবেন নাকি আপনার মানসিক চিন্তা পরিবর্তন করবেন? সেটা ঠিক করেন। ধর্ষণ শুধু ঘরে বাইরে নয় আরেকটা অলিখিত ধর্ষণ আছে যার নাম দাম্পত্য ধর্ষণ।সে ক্ষেত্রে আপনি কি বলবেন বৌয়ের পোষাক ঠিক ছিল না?৭১ এ আপনাদের পাকি ভাই আর রাজাকার রা দল বেধে ধর্ষণ করেছিল তখন কি আমাদের মা বোন রা মিনি স্কার্ফ পড়ে ঘুরেছিল নাকি?নাকি তাদের বিকৃত চাহিদা মিটিয়েছিল।।।মদ খাবেন আপনি আবার মাতলামি করে নালায় পড়ে বলবেন শালার নালা রাস্তার এক পাসে থাকতে পারিস না।আমাদের দেশে কম বেশি সব মেয়েরাই শালীন পোষাক পড়ে চলাফেরা করে।।আর আমাদের ধর্ষক ভাইরা বুঝে শালীন পোষাক মানে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ডাকা পোষাক।।কিন্তু যে দেশে গুলোতে পা থেকে মাথা ডেকে ও ধর্ষণ রোধ করতে পারিনি তা নিয়ে কি বলবেন।।।ধর্ষণ হল ধর্ষকের বিকৃত যৌন রুচির প্রকাশ।।সেটা মেনে নেন।।

      Reply
  • April 5, 2018 at 6:33 PM
    Permalink

    করীম সাহেবের নিকট যেটা সমস্যা বলে মনে হয়নি, সেটা যে আসলেই সমস্যা নয় তা বুঝোনোর জন্য তিনি যতটা উচ্যবাচ্য করলেন, তো যেটাকে তিনি মূল সমস্যা বলে মনে করেছেনে, এবং ইমাম গাযালীর রেফারেন্স দিয়ে তা আরো জোরোলো করার চেষ্টা করেছেন (অর্থাৎ আত্মিক বা আভ্যন্তরীন সমস্যা) তো এই সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি কী চেষ্টা করলেন?????

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *