নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ, অনুভূতি ও নাস্তিকতা

Print Friendly, PDF & Email

‘নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ’ শুনলেই যে কোন সভ্য মানুষ আতকে উঠবেন। নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ মানেই সেখানে গণতন্ত্র, বাক-স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতান্ত্রিক আইন, মানবিক অনুশাসন, সুশিক্ষা, নাগরিক অধিকার, মানুষের মানবিক মর্যাদা, সভ্য আচরণ নেই এবং এব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়াই নিশ্চিত হতে পারেন যে কেউ। মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি তারা কতটা ভাল বা কতটা ভাল সমাজ তথা রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করতে পেরেছেন! একটি দেশ বা সমাজ ততটুকুই সভ্য, সে ধর্ম নামের কুসংস্কার থেকে নিজেকে যতটা মুক্ত করতে পেরেছে। ধর্ম বা ধর্মীয় মতাদর্শ কর্তৃক পরিচালিত বা প্রভাবিত একটি সমাজ কখনও মানবিক সমাজ হতে পারে না; সে যে ধর্মই হোক না কেন।
বর্তমান পৃথিবীতে মুসলিম অধ্যুষিত দেশ মানেই আপনি নির্দ্বিধায় ধরে নিতে পারেন সেটি একটি অসভ্য, অগণতান্ত্রিক দেশ এবং সেখানে মূর্খদের আবাদ হয়। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের মত ধর্মের প্রতি এতটা কমিটেড আর কোন গোষ্ঠি নেই এবং মুসলমানরাই শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চায় সবচাইতে পিছিয়ে আছে। মুসলমানরাই সবচেয়ে বেশি ধর্ম পালন করে এবং মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোই সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ। তারা নামজ পড়ে, রোজা রেখে, হজ্জ্ব করে, যাকাত দিয়ে, কোরবানি দিয়ে, লাখ-লাখ মসজিদ তৈরি করে যে সকল অপকর্ম করেন তা কোন নাস্তিকের পক্ষে চিন্তা করাও অসম্ভব। বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা তাদের মূর্খতা দিয়ে ‘অনুভূতি’ শব্দের এক নতুন ভাবার্থ দাড় করাতে সক্ষম হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে আমরা বাঙলাদেশের কথাই আলোচনা করব। বাঙলাদেশ দরিদ্র হলেও নানা দিক থেকে পৃথিবীর অন্য যে কোন মুসলিম অধ্যুষিত দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে আছে। এখানে এখনও নারীরা শিক্ষা অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ে যেতে পারে, ছেলে মেয়ে একসাথেই একই শ্রেনীকক্ষে পড়তে পারে, অল্প-স্বল্প হলেও শাসকদের সমালোচনা করা যায়, এখানে এখনও মানুষ ছবি আকে, মূর্তি বানায়, নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সকল পেশায় নিয়োজিত হয়, এখানে এখনও নাচ-গান-সিনেমা-নাটক হারাম বলে নিষিদ্ধ হয়নি, ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের চর্চা নিষিদ্ধ হয়নি, এখনও ব্লাসফেমি চালু হয়নি, এখনো প্রেম নিষিদ্ধ হয়নি, ব্যভীচারের অভিযোগে নারীকে পাথর মেরে হত্যা শুরু হয়নি। এতসব ভালগুণ বাঙলাদেশ ছাড়া অন্য কোন মুসলিম দেশে নেই। তারপরেও, মুসলমানের অনুভূতি এখানে নতুন মাত্রা পেয়েছে যেই অনুভূতির গুণে মানুষ হত্যা নগণ্য ব্যাপার হয়ে গিয়েছে এবং অনুভূতির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও জুটে গেছে যেহেতু মুসলমানের রাষ্ট্রও মুসলমান। অনুভূতির প্ররোচনায় মুসলমানরা নাস্তিক, অন্য ধর্মালম্বী ও প্রগতিশীল মানুষদের উৎপীড়ন, উৎখাত, অত্যাচার অব্যাহত রেখেছে। তাই আসুন বাঙলাদেশ নামক মুসলিম অধ্যুষিত ভূখন্ডের অনুভূতি সম্পন্ন ঈমানদার মুসলমানদের কর্মকান্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরি।
প্রথমেই বলে রাখা দরকার নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ বাঙলাদেশের মুসলমানরা বা বিশ্বের মুসলমানরা যে বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন, অসহনশীল, মারিমুখী ও জঙ্গী সেটা হল নাস্তিকতা। মুসলমান ছাড়া অন্য যে কোন ধর্ম বা মতবাদে বিশ্বাসী মাত্রই মুসলমানের শত্রু তবে নাস্তিকরাই মুসলমানদের প্রধান শত্রু। একমাত্র নাস্তিকদের যুক্তিবাদী লেখা বা সমালোচনা ছাড়া অন্য কোন কারণে মুসলমানের অনুভূতির ফুলঝুরি দেখা যায় না ফলে শুধু নাস্তিকদের ধ্বংস করে তাদের নাম-নিশানা পৃথিবী থেকে মুছে দিতে তারা রাজপথে আন্দোলন, সহিংসতা, ওয়াজের নামে ঘৃণা ও জঙ্গীবাদ ছড়ানো এহেন কিছু নেই যা করছে না। ধর্ম অবিশ্বাসের অপরাধ মুসলমানদের কাছে সব চাইতে বড় অপরাধ; এজন্যই নাস্তিকরা মুসলমানদের প্রধান শত্রু। তবে কেউ আল্লা-খোদায় বিশ্বাস করে, এমন কথা মুখে বলে যে কোন অপরাধই করুক না কেন, মুসলমানের কাছে সে নাস্তিক নয় এবং তাতে অনুভূতির কিছু যায় আসে না; এমনকি নিজের মেয়েকে ধর্ষণ করলেও মুসলমানরা তাকে নাস্তিক বলে না, তারও নাকি আল্লা-খোদায় বিশ্বাস আছে! অনুভূতিও তখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে না।
আস্তিক ও নাস্তিক সর্বনাম দুটোর বিষয়ে পরিষ্কার হয়ে নেওয়া জরুরী; কেননা মুসলমানের কাছে আস্তিক-নাস্তিকের ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ আলাদা।
আমরা আস্তিক বলতে বুঝি যিনি কোন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন, বিশ্বাস করেন কোন অলৌকিক মোজেজায় এই মহাবিশ্ব চলছে; যা কিছু ঘটেছে , ঘটছে এবং ঘটবে সবই পূর্ব নির্ধারিত। বিশ্বাস করেন কোন গ্রন্থের শ্লোকে যাকে সে মনে করে সৃষ্টিকর্তার বাণী, বিশ্বাস করেন পরকালে। সর্বোপরি তার ধর্মের নির্দেশিত পথে জীবন যাপনের চেষ্টা করেন। অন্যদিকে নাস্তিক সেই, যিনি কোন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন না; অলৌকিকতায় বিশ্বাস করেন না; ধর্ম-বিজ্ঞান-দর্শন-সমাজ বিজ্ঞান যে কোন বিষয়কে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেন অনুসন্ধিৎসু মন থেকে; কোন গ্রন্থ ঐশ্বরিক হতে পারে এমন বিশ্বাস করেন না; বিশ্বাস করেন না পাপ-পূণ্য বা পরকালের শাস্তি-পুরস্কারে যেহেতু তার কাছে এসবের কোন যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মোটাদাগে আমরা আস্তিক-নাস্তিক বলতে এসবই বুঝে থাকি।
এখানে একটি বিষয় আলোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ যে, শুধু মৌখিক ঘোষণাতেই প্রমানীত হয়না কেউ একজন আস্তিক বা নাস্তিক। একজন ব্যক্তির প্রাত্যাহিক জীবনাচরণ, তার বিশ্বাস, অবিশ্বাস, তার প্রকাশিত চিন্তাভাবনা, কর্মকান্ডের মধ্য দিয়েই বুঝা যায় আসলে সে আস্তিক নাকি নাস্তিক। যে কেউ তার নিজের সুবিধার্থে বা ধান্দা হাসিলের জন্য সুবিধামত ভাব দেখাতে পারেন তিনি ধার্মিক, তিনি নাস্তিক বা তিনি প্রগতিশীল। আমি বলতে চাচ্ছি একজন ব্যক্তির কর্মকান্ডই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যদিও নব্বই ভাগ মুসলমানের এ বিষয়ে কোন চিন্তা নাই।
মুসলমানের দৃষ্টিতে আস্তিকঃ মুসলমানের দৃষ্টিতে সেই আস্তিক বা আল্লা-খোদা ও তার প্রেরিত পুরুষ ও গ্রন্থে তার বিশ্বাস আছে যিনি কখনও ধর্মের সমালোচনা করেননি, ধর্ম বিরোধী কোন বক্তব্য দেননি বা ধর্ম, ধর্মীয় গ্রন্থ ও নবী-রাসুল নিয়ে সমালোচনামূলক কোন লেখা লিখেননি।
মুসলমানের দৃষ্টিতে নাস্তিকঃ মুসলমানের দৃষ্টিতে নাস্তিক সেই ব্যক্তি যিনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে, তার বিধিবিধান নিয়ে সমালোচনা করেন বা লিখেন। বিশেষ করে যারা সমালোচনামূলক লেখা লিখেন তাদের মুসলমানরা ধরে নেয় বড় নাস্তিক হিসেবে এবং তাদের হত্যা করা বা শারীরীক আক্রমণ করা মুসলমানদের প্রধান টার্গেট।
উপরের আলোচনা থেকে আমাদের ধারণা পরিষ্কার যে মুসলমানের অনুভূতি শুধু নাস্তিকতার সাথে সম্পৃক্ত। ধর্ম বিরোধী যত কর্মকান্ড আছে তার সবগুলো করলেও মুসলমানের কাছে সে আস্তিক এবং তাদের অনুভূতির কোন ক্ষতিসাধিত হয়না। খুন-ধর্ষণ-চুরি-জালয়াতি-মিথ্যাচার সব কিছু করলেও আস্তিক এবং এসব কর্মকান্ডের জন্য কখনো কোন মুসলমানের অনুভূতি আহত হয়েছে বলে শোনা যায়নি। মোদ্দা কথা হল ইসলাম ধর্ম বা নবীর বিরুদ্ধে কিছু না বললে অথবা না লিখলেই সে আস্তিক। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, ধর্ম বিরোধী কোন কর্মকান্ডের জন্য আজ অবধি মুসলমানরা কাউকে নাস্তিক ঘোষনা দিয়ে তার ফাঁসি দাবী করেছে বা তাদের অনুভূতি আহত হয়ে মুমূর্ষু হয়েছে এমন প্রমাণ নেই। শুধু কেউ যদি বলেন সে ধর্মে অবিশ্বাস করেন, ধর্মের সমালোচনা করেন ধর্মীয় পুরুষদের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তবেই হয়েছে, আর যায় কোথায়; মুসলমানের অনুভূতি তখন আহত হয়ে মৃতপ্রায় হয়ে ওঠে, মুসলমান জিহাদী আক্রোশে জেগে ওঠে।
লম্পট, দুর্নীতিবাজ, ধর্ষক, আদর্শহীন, কপট, মিথ্যাবাদী, খুনীরা যখন সমাজপতি হন, নেতা হন তখন মুসলমানের ধর্মানুভূতি জেগে ওঠে না, তাদের পায়ে তেল মালিশ করতে ধর্মীয় আদর্শের কোন সমস্যা হয় না কারণ তারা তো আর বলেনি যে তারা নাস্তিক। একজন নাস্তিক সৎ, নির্লোভ, মানবিক, সহনশীল ও পরপোকারী হলেও মুসলামানের সে শত্রু কারণ সে ধর্মে বিশ্বাস করে না, ধর্মের সমালোচনা করে ফলে মুসলমানের কাছে সে গ্রহনযোগ্য নয়; তাকে হত্যা করা, বাতিল করা মুসলমানের জন্য জায়েজ হয়ে যায়। একজন নাস্তিকের থেকে লোটপাটকারী, চোরাকারবারি, খুনীও মুসলমানের কাছে ভাল কারণ সে খুন-ধর্ষণ-লোটপাট যাই করুক ধর্ম বিরোধী কোন কথা বলেনা। মুসলমান যদিও দাবী করে এসব কাজ ধর্ম বিরোধী। প্রশ্নটা সেখানেই- আস্তিক বা ধার্মিক কিভাবে ধর্ম বিরোধী কাজ করে অথবা ধর্ম বিরোধী কাজ করলে কিভাবে তিনি ধার্মিক বা আস্তিক হলেন?
এবার আমরা উদারণ হিসেবে বাঙলাদেশের একজন বিখ্যাত নাস্তিকের কথা বলব যাকে সবাই চেনেন এবং নব্বই ভাগ ঈমানদার মুসলমান যাকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করেন; তিনি অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ। হুমায়ুন আজাদ ঘুষ খান নি, ধর্ষন করেন নি, ব্যাঙ্ক ডাকাতি করেন নি, অর্থ পাচার করেন নি, খুন করেন নি, অবৈধভাবে অন্যের জমি দখল করেননি, কাউকে শারীরীকভাবে আক্রমন করেন নি, মসজিদ ভাঙ্গেন নি, মন্দির-মূর্তি ভাঙ্গেন নি, সরকারি অর্থ লোপাট করেন নি, অবৈধ উপার্জন করেন নি, নারী পাচার করেন নি, মাদক ব্যবসা করেন নি, সুদের ব্যবসা করেন নি, ত্রানের টাকা মারেন নি, শ্রমিক ঠকাননি, ছিনতাই করেন নি। তিনি ধর্মে বিশ্বাস করেন নি। তিনি ধর্মের সমালোচনা করেছেন, লিখেছেন ধর্ম ও প্রথার বিরুদ্ধে যার কারণে মুসলমান তাকে বাতিল করতে চেয়েছে, তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে, তার উপর চাপাতি নিয়ে আক্রমণ করেছে। হুমায়ূন আজাদ যদি বর্ণিত সকল নোংরা কাজগুলো করতেন এবং ধর্ম ও প্রথার বিরুদ্ধে কলম না চালাতেন মুসলমানের অনুভূতির কোন ক্ষতি হত না। উলটো তিনি যদি অবৈধ উপার্জন করে তা দিয়ে বিশাল একটা আলিসান মসজিদ বানিয়ে দিতেন তাহলে মুসলমান সারাদিন তার পায়ে তেল মালিশ করত। দেশের অন্যসব শয়তান লোকদের মতই মুসলমানরা তাকেও পূজা করত। এটাই নব্বই ভাগ মুসলমানের অনুভূতি ও তাদের চরিত্র।
নব্বইভাগ বলে মুসলমানরা যখন চিৎকার করে ওঠে, তাদের নব্বইভাগের দেশে এই হবে না সেই হবে না সেটা যে কতটা হাস্যকর হয়ে ওঠে তা বোঝার মত নূন্যতম বোধও এদের নেই। তারা যেহেতু নব্বই ভাগ, ফলে এদেশের নব্বই ভাগ খুনী-ধর্ষক-দুর্নীতিবাজ-ব্যাঙ্ক ডাকাত-অসৎ ব্যবসায়ী- পাচারকারী-চোরাকারবারিও মুসলমান। এতে অনুভূতির কোন সমস্যা হয় না? মুসলমানরা কি কখনো বলেছে যারা এসব জঘন্য কাজ করে তারা আল্লা ও তার নবীতে বিশ্বাস করে না বা তারা মুসলমানদের শত্রু? বলে নি। তাদের একমাত্র শত্রু নাস্তিকরা।
নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে কোন নাস্তিক থাকতে পারবে না, ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করা যাবে না, নবীকে নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না। করলে তাকে ফাঁসি দিতে হবে। সরকার শাস্তি না দিলে তারাই নাস্তিকের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। করেছেনও। এই দাবীগুলো নব্বই ভাগ মুসলমানের দাবী। এখানে একটি বিষয় স্পস্ট করা জরুরী, যেহেতু নব্বইভাগই মুসলমান, তার মানে দেশের সকল অরাজকতা ও নোংরামির নব্বইভাগই মুসলমানরা করে থাকেন
এবং এব্যাপারে তাদের কোন মুখ খোলে না। আমরা একটি একটি করে কিছু বিষয় আলোচনা করব যা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে স্বাভাবিক ভাবে চলছে নিরবে নিভৃতে এবং এতে তাদের নৈতিকতার, ঈমানের, অনুভূতির কোন সমস্যা হচ্ছে না, এসবের বিরুদ্ধে তারা কথাও বলছে না, সরকারের কাছে বিচার দাবীও করেছে বলে শোনা যায়নি-

১। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বার বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, রানার আপ সহ সব কাপ জিতে ফেলেছে, এখনও খুব ভাল রেটিঙয়ে আছে। প্রতি অর্থবছরে হাজার হাজার কোটি টাকা বাঙলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হচ্ছে অবৈধভাবে এতে নব্বইভাগ মুসলমানের অনুভূতির চুলও নড়ে না।
২। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ধর্ষণ চলছে দেদারছে। ধর্ষণের বিচার হয় না, ঊল্টো নির্যাতিতার পরিবারকে ক্ষমতাধরেরা হুমকি দেয়। ধর্ষিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। মুসলমানের অনুভূতি ধর্ষণেও কাপে না।
৩। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে তাদের ধর্মালয়ের যে কমিটি থাকে, দেখা যাবে হাতে গোণা দুই একটি ছাড়া অধিকাংশের সভাপতি চোর-বাটপার-দুর্নীতিবাজ-সুদখোর অথবা এলাকার সবচেয়ে বড় ক্যাডার। মুসলমানের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় কারণ এটা তাদের আদর্শের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ নয়, এতে তাদের ধর্মীয় অনুভূতির কোন সমস্যা হয় না। কোন বদমাশ যদি অপকর্ম করে টাকা কামিয়ে মসজিদ দেয় মুসলমানের তাতে গায় লাগে না। মিসজিদ নাকি আল্লার ঘর; লুটপাটের টাকায় আল্লার ঘর বানালেও মুসলমান খুশি থাকে।
৪। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে সকল মুসলমানই হালাল খান, ইউরোপ-আমেরিকা গিয়েও হালাল ফুড খোজেন। কিন্তু হালাল খাবারটা কি হালাল রোজগার দিয়ে কিনতেছেন কিনা সেটা চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ না। শূকর খাওয়া তো দূরের কথা নাম শুনলেই মুসলমান নাউজুবিল্লাহ বলে। কিন্তু দুর্নীতির টাকা দিয়ে গরুর কিনলেই সেটা মুসলমানের কাছে হালাল। শূকর হারাম, ঘুষ হালাল। অনুভূতিতে কোন সমস্যা হয়েছে?
৫। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মোটামুটি সকল সরকারি অফিসেই টু-পাইস আছে, দু-একজন ছাড়া সবাই দেদারছে খাইতেছেন আবার এই টাকা দিয়াই ধর্ম-কর্ম, ঈদ-কোরবান করতেছেন মুসলমানের তাতে কিছু যায় আসে নি।
৭। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এমন খাবার খুজে পাওয়া মুসকিল যেটা ভেজাল বা বিষমুক্ত। মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে দিনের পর দিন তাদের বিষ খাইয়ে যাওয়া আর জটিল রোগ ও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এককথায় বলা যায় স্লো পয়জনিং। যারা এই জঘন্য কাজ করছে তারা মুসলমানের শত্রু না, মুসলমান তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলে না।
৮। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে জনগণের টাকা খরচ করে রাস্তা বা কোন স্থাপনা বানালে ৬ মাসও টিকে না। বাজেটের সিংহভাগই লোটপাট। মুসলমানের আদর্শের সাথে এই অপকর্ম অসঙ্গতিপূর্ণ নয়।
৯। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে কোমলমতি শিশুদের পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়। চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বছতার কথা বলা বোকামি। মুসলমানরা ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়, ঘুষ খেয়ে চাকরি দেয়, আবার ঘুষ খেয়ে দেওয়া ঘুষের টাকা তুলে নেয়। এতে মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতির কোন সমস্যাই হয়নি আজ অবধি। বিসিএস নিয়োগের যত প্রার্থী থাকে তারাও নব্বইভাগ মুসলমান। সকলেরই প্রথম পছন্দ থাকে এডমিন বা পুলিশ বা ট্যাক্স; কেন? সবার বেতন স্কেল একই তবু কেন এসব চান; কারণ ঐসবে টাকা আছে, ক্ষমতা আছে। মুসলমান তখন ধর্মীয় আদর্শ ভুলে যায়, অনুভূতিরও সমস্যা হয় না।
১০। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমান সব বাবা-মা’ই চান তার ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুক রোজা রাখুক, ধর্ম-কর্ম করুক। কিন্তু কোন দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোরের বাবা-মা সন্তানের অনৈতিকতার জন্য তাকে ত্যাজ্য করেছে বলে শোনা যায়নি। কোন পরহেজগার মুসলমান মা-বাবাকে বলতে শুনি নাই যে তার সন্তান যদি দুর্নীতি করে অসৎ পথে উপার্জন করে তবে তারা সেটা খাবে না অথবা তার সাথে সম্পর্ক থাকবে না। মুসলমান বাবা-মা উলটো ছেলের অবৈধ উপার্জন নিয়ে গর্ব করে, অনুভূতির কোন সমস্যা হয় না। অন্যদিকে ছেলে-মেয়ে যদি ধর্মে অবিশ্বাস করে বা নাস্তিক হয় তখন উনাদের ঈমানদন্ড খাড়া হয়ে যায়।
১১। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে রমজান মাসেও (তাদের কাছে নাকি পবিত্র মাস) পণ্যদ্রবের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় এতে আদর্শের কিছু যায় আসে না।
১২। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমান বাবারা মেয়ে বিয়ে দেবার সময় সৎ পাত্র খোজেন না, খোজেন টাকা-ওয়ালা পাত্র। ছেলে কিভাবে টাকা কামাই করে সেটা সুসলমান চিন্তা করে না। মালদার পার্টি হলেই হল। দরিদ্র তবে সৎ জামাইয়ের থেকে ঘুষখোর-লম্পট-টাকাওয়ালা জামাই মুসলমানের কাছে পছন্দের। অনুভূতিরা তখন সিন্ধুকে তালা মারা থাকে।
১৩। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে রাজনৈতিক, প্রতিপত্তের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জমিজাতি-পার্ক, হাওর-বাওর বিল খাল দখল করা খুবই স্বাভাবিক। মুসলমানের অনুভূতি এসবে নির্বিকার থাকে। সরকারি খাস জমি দখল করে মসজিদ বানাতে মুসলমানের কোন অসুবিধা হয় না বরং কেউ এটা নিয়ে কথা বললে ধর্ম-বিরোধী বলে তাকে আক্রান করে মুসলমানরা।
১৪। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে প্রতিবছর লঞ্চ ডুবিতে, সড়ক দুর্ঘটনায় হাজার হাজার মানুষ মরে কিন্তু ৯০ ভাগ মুসলমান এর স্থায়ী সমাধান চেয়ে চিৎকার করেনা কারণ ‘আল্লার মাল আল্লা লইয়া যায়’।
১৫। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে পুলিশকে ক্ষমতা ধরেরা ইচ্ছেমত ব্যবহার করতে পারে, থানা-আইন-আদালতের উপর মানুষ আস্থা রাখেনা কারণ ওখানে প্রতিকার চাইতে গিয়ে উলটো বিপদে পড়ার সাম্ভাবনাই বেশি। নব্বই ভাগ পুলিশ-প্রশানের লোক-উকিল-বিচারক কিন্তু মুসলমান।
১৬। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে সত্যি বলাটাই অপরাধ, বললে নির্ঘাত বিপদ বরং তোষামদ আর তেলবাজিই শ্রেয়। তেলবাজিতে মুসলমানের ধর্মীয় সমস্যা নেই।
১৭। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে রুটিন মাফিক টেন্ডার লইয়া দুই গ্রুপের গোলাগুলি, খুনোখুনি হয়। নব্বই ভাগ ঠিকাদারওতো মুসলমান, তাই না!
১৮। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র খুন হয় কিন্তু বিচার হয় না। তদন্ত কমিটি হয় যার রিপোর্ট কোনদিন পাওয়া যাবে না। কিছুদিন পর খুনিরা সগৌরবে বেরিয়ে আসেন এবং পুরষ্কৃত হন। নব্বইভাগ ছাত্র সন্ত্রাসী তো মুসলমানই।
১৯। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ইয়াবা ব্যবসায়ীও সাংসদ হন। এইটা গুরুত্বপূর্ণ না কারণ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতির কোন ক্ষতি হয় না এতে।
২০। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে শ্রমিকেরা বিল্ডিং চাঁপা পড়ে, আগুনে পুড়ে মরেন, মাঝে মাঝেই বকেয়া বেতনের জন্য রাস্তায় নামেন আর পুলিশ পেটায়। হন্তারকদের বিচার হয় না কারণ এটা মুসলমানদের অনুভূতিতেও লাগে না। মুসলমান আবার ছবক দেন তাদের ধর্মে নাকি শ্রমিক ঠকানো নিষেধ। বলি এদেশের ৯০ ভাগ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও অন্যান্য ব্যবসায়ী কি নাস্তিক?
২১। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশের শত শত মা-বোনদের ফাঁদে ফেলে বিক্রি করে পাচার করে দেওয়া হয় নানা দেশে। যারা নিজ দেশের মা-বোনকে বিক্রি দেয়, পাচার করে দেয় তার বিরুদ্ধে মুসলমানের কিছু বলার থাকে না। তারা নাস্তিকদের থেকে প্রসংশনীয় মুসলমানের কাছে।
২২। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে অবৈধ ভাবে উপার্জনকারী ধনীরা রাষ্টে-সমাজে সম্মানিত। তাদের মুখোশ উম্নোচন করে বয়কট করার কথা আসেনা বরং নাস্তিকদের কল্লা ফেলার ফতোয়া দেওয়া হয়। মুসলমানের আদর্শ কি চমৎকার!
২৩। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে যারা সর্বোচ্চ ধনী তারাও ঋণ খেলাপী হন। একবার লোন নিয়ে আর ফেরত দেনা না। সর্বোচ্চ ধনী যারা তারা সর্বোচ্চ ট্যাক্সদাতা নন। হাস্যকর হলেও মুসলমানের কিছু যায় আসে না।
২৪। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা-পাহাড়ী- আদিবাসীরা যে কত শান্তিতে আছেন সেটা নাই বা বললাম।
২৫। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশে ষাটের অধিক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক আছে। এর ৯০ ভাগ গ্রাহকও মুসলমান। এরা ব্যাঙ্কের নানা রকম স্কিমে সুদে টাকা রাখেন, সুদ খান। ইসলাম বলে সুদ খাওয়া নাকি নিজের মায়ের সাথে জেনা করার সমান। বছরের পর বছর কোটি কোটি মুসলমান নিজের মায়ের সাথে জেনা করেই চলেছে তাতে ধর্মীয় অনুভূতির কোন সমস্যা হয়নি। নিজের মায়ের সাথে জেনা করেও আল্লা-খোদায় বিশ্বাস রাখা যায়! আস্তিক হওয়া যায়! মুসলমানের একদল আবার ব্যাঙ্ককে ইসলামী লেবেল লাগিয়ে সুদের নাম বদলে লাভ বা মুনাফা বলে হালাল করে নিচ্ছে; মুসলমানের অনুভূতিটা তখন ব্যাঙ্কের লকারে তালা মারা থাকে।
এমন শত শত ফিরিস্তি লিখলেও শেষ হবে না। এহেন কোন জঘন্য কর্ম নাই যে নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে হয়না। সব করা যাবে শুধু ধর্মের সমালোচনা করলেই কল্লা ফালানো মুসলমানের দায়িত্ব হয়ে যায়। মুসলমানের ঈমানদন্ড শুধু একটি কারণেই খাড়া হয় সেটা হল নাস্তিকতা। এমনকি ধর্মের মুখোশে অপকর্ম করে গেলেও মুসলমানের অনুভূতি আহত হয় না। ধর্ম মানিনা একথা মুখে বললেই বা লিখলেই মুসলমান হিংস্র দানব ওঠে। মুসলমান মুখে যাই বলুক তার জঘন্য আদর্শ তার রাষ্ট্র-সমাজের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। ধর্মকে মুসলমান নৈতিকতার ভিত্তি বলে জিকির করলেও এই নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে কোন নীতি-নৈতিকতার ছাপ মুসলমানের ব্যক্তি জীবনে, সমাজে বা রাষ্ট্রে দেখা যায় না।
শুধু নাস্তিকদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সই মুসলমানের নৈতিকতা ও অনুভূতির মানদণ্ড।

2 thoughts on “নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ, অনুভূতি ও নাস্তিকতা

  • September 26, 2018 at 10:11 AM
    Permalink

    কবে মুমিনরা সত্য জানবে?

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *