নাস্তিকদের জীবনের উদ্দেশ্য কি?

জীবনের উদ্দেশ্য

প্রশ্ন: যদি ঈশ্বর বা পরকাল না থাকে তাহলে এই জীবনের অর্থ কি, কেন জন্য এই বেঁচে থাকা?

আপনার জন্য জীবনের অর্থ ঠিক তাই যা আপনি জীবনের অর্থ হিসেবে নিজের জন্য ঠিক করে নিবেন। বিষয়টা একজন মানুষের নিজস্ব ব্যাপার। অনেক নাস্তিকই এটা বুঝতে পারে যে তাদের এতটুকু মানসিক সামর্থ্য আছে যে তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জীবনের অর্থ বা উদ্দেশ্য দাঁড় করাতে পারবে। এবিষয়ে বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন জাগতে পারে। নিচে তার কিছু নমুনা উল্লেখ করা হলো।

প্রশ্ন: নিজস্ব উদ্ভাবিত জীবনের উদ্দেশ্য কি ন্যায় সংগত?

এটা ব্যক্তিগত মতামতের বিষয়।

কিছু মানুষ মনে করে জীবনের অর্থ এই জীবনের যাত্রাপথই, অন্যদিকে কিছু মানুষের কাছে জীবনের অর্থ হচ্ছে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানো। অতএব, সবার জীবনের উদ্দেশ্য এক নয়। কেউ কেউ যেহেতু মনে করে জীবনের গন্তব্য থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তার অর্থ এই নয় যে বা যারা জীবনের এই যাত্রাপথ কে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সে বা তারা কোন ভুলের মধ্যে আছে।

“জীবনের কোন উদ্দেশ্য বা অর্থ নাই, কারণ পরকাল বলতে কিছু নাই” এই জাতীয় কথা আমাদের কাছে তেমন অর্থ বহন করে না। যদি কোন প্রকার পরকাল বলতে কিছু না থাকে, তাহলে এই জীবনটা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ এখানে এই জীবনটা অত্যন্ত দুর্লভ। যদি হীরা ধুলাবালির মতোই অত্যন্ত সুলভ কিছু হতো তাহলে একটি হীরক খণ্ড ধুলোবালির মতোই সস্তা কিছু হতো। যেহেতু, এই জীবনটাই আমাদের একমাত্র জীবন, তাই আমাদের চেষ্টা করতে হবে তার যথাযথ ব্যবহার করতে।

প্রশ্ন: এটা ভ্যালিড বা ন্যায্য হতে হবে?

আপনি কেন এই ধরনের পূর্ব শর্ত দাঁড় করাবেন যে আপনার জীবনের উদ্দেশ্যে বা অর্থ বাহ্যিক ভাবে যাচাইকৃত হতে হবে? আসলে এই বিষয়টা যাচাই করার কথা আপনার নিজেকেই, বাইরের কারো নয়।

প্রশ্ন: আমাদের জীবন যে মূল্যবান সেটা কার সিদ্ধান্তে বুঝবো?

এই ব্যাপারে কারো সিদ্ধান্তের প্রয়োজন নেই। আমাদের সবারই বেঁচে থাকার একটা কারণ আছে, যাকে বলা হয় Survival Instinct, যা কিনা বিবর্তনের পরিক্রমায় জৈবিকভাবে বিকশিত (Biologically evolved) হয়ে  আমার আপনার মধ্যে বিরাজ করছে। একই রকমভাবে আমার এবং আপনার মধ্যে জৈবিকভাবে বিবর্তিত বা বিকশিত (Biologically evolved) পছন্দের প্রবণতা আছে যন্ত্রণা থেকে আনন্দের প্রতি কিংবা মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকার প্রতি। এটা কোন দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে ন্যায্যতা পাবার কিছু নয়। জৈবিক প্রক্রিয়ার কারণেই আমি আপনি বেঁচে থাকাটাকে মূল্যবান মনে করি।

ধার্মিক বন্ধুরা এসব উত্তর সমূহে সন্তুষ্ট হয় না। এখানে সমস্যা হচ্ছে, তারা একটি চরম বা চূড়ান্ত উত্তর আশা করে, যদিও বাস্তবে তেমন কিছুই থাকে না। এটাই জীবন। হতে পারে আমরা জীবনের যে অর্থ দাঁড় করাবো তা ছাড়া হয়তো এই জীবন চরম অর্থে পুরোপুরি শূন্য, উদ্দেশ্যহীন অস্তিত্ব। আর আপনি যদি এই উত্তরে খুশি না হন তার অর্থ এই না যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। এটা নিতান্তই আপনার ব্যক্তিগত অনুমান। আমাদের জন্য আমাদের নিজস্ব দাঁড় করানো অর্থ বা উদ্দেশ্যই যথেষ্ট।

View Comments (1)

Leave a Comment