বিজ্ঞান কি মৃত্যু ঠেকাতে পেরেছে?

nature

প্রশ্ন: বিজ্ঞান কি মৃত্যু ঠেকাতে পেরেছে? বিজ্ঞান এখনো অমরত্ব দান করতে পারেনি। তার মানে কোরানের বাণী সত্য। অর্থাৎ, কোরান আল্লাহর বাণী।

উত্তর: মানুষকে অমরত্ব দেবার জন্য গবেষণা অনেক দিন ধরেই চলছে। বিজ্ঞান এখনো মৃত্যুকে পুরোপুরি জয় করে মানুষকে অমর করতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু মৃত্যুকে বিলম্বিত করেছে। এক কালে সামান্য কলেরা রোগ মহামারী আকার ধারন করত। বসন্ত রোগে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যেত। সামান্য কাটাছেড়ায় ইনফেকশন হয়ে মানুষের অঙ্গহানী ঘটত। আধুনিক বিজ্ঞান আমাদেরকে বিভিন্ন ভাইরাসের ভ্যাক্সিন দিয়েছে। আমরা এ্যান্টিবায়োটিক পেয়েছি, প্রায় প্রতিটা রোগেরই ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। বিভিন্ন রোগ পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে সফলভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপনও হচ্ছে। বিভিন্ন মরণব্যাধির চিকিৎসা হচ্ছে। সফলভাবে হার্ট এবং ব্রেনে সার্জারী হচ্ছে। এছাড়াও নানাবিধ জীবনরক্ষাকারী ওষুধপত্র ব্যবহার করতে পারছি। এমনকি কৃত্রিমভাবে হৃদপিন্ড সচল রাখার মাধ্যমে মানুষকে বাচিয়ে রাখাও সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ আমরা যে দীর্ঘ আয়ু পাচ্ছি তার কৃতিত্ব মূলত চিকিৎসাবিজ্ঞানেরই। বিজ্ঞানের অবদানেই আজ শিশু মৃত্যহার এত কমেছে, মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির পেছনে যতগুলো বিষয় দায়ী, তার ভেতর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নয়ন।

বর্তমানে মানুষের আয়ু পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এখন থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে ব্রোঞ্জ যুগে মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ২৬ বছর। সেখানে ২০১৬ সালে মানুষের গড় আয়ু দাড়িয়েছে প্রায় ৭২ বছর। WHO থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ৫.৫ বছর।

জাপান, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন এসব দেশগুলোতে মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৮৩ বছর। এসব দেশ বিজ্ঞানে যথেষ্ঠ উন্নত এবং নাগরিকরা সুশিক্ষিত-সুবিবেচক, পরিবেশ সচেতন। আবার উল্টোদিকে আফ্রিকান কিছু দেশ যেমন সিয়েরা লিওন, চাঁদ, এ্যাংগোলা, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া এসব দেশে গড় আয়ু সবচেয়ে কম। মাত্র ৫০ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। এসব অনুন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসাসেবার অবস্থাও খুবই নাজুক।

কোরানে আছে:
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু।
সূরা আল-ইমরানঃআয়াত-১৮৫
প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।
সূরা আম্বিয়াঃআয়াত-৩৫
জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।
সূরা আনকাবুতঃআয়াত-৫৭

মুমিন ভাইয়েরা মাঝে মাঝেই বলে থাকেন এই আয়াতগুলো ভুল প্রমান করে দেখাতে। কিন্তু বিষয়টা এমন নয় যে কোরান নাজিলের পর থেকেই আজ্রাইল এসে টপটপ করে প্রাণীদের জান কবজ করা শুরু করল। তার আগে পর্যন্ত প্রাণীরা অনন্তকাল ধরে বেচে থাকতো- এমন কোন প্রমানও পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, প্রাণীকুল সৃষ্টির শুরু থেকেই জন্মগ্রহণ করছে এবং মারা যাচ্ছে। এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। এভাবেই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা পায়। এই সাধারন ঘটনাটা বেশিরভাগ মানুষই অনেক আগে থেকেই জানত। খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপারকে কোন গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করলেই সেই গ্রন্থ কোন ঐশী গ্রন্থ হয়ে যায়না। উদাহরনস্বরুপ বলা যায়- আমি কোন বইতে লিখলাম ‘পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে’। এতে করে কি এটা প্রমানিত হয় যে, আমার আগে কেউ এই সত্য জানতো না? অথবা আমার গ্রন্থটা ঈশ্বর প্রেরিত? নাকি আমি বইতে লেখার পর থেকে পৃথিবী ঘোরা শুরু করেছে? বরং এটাই সত্য যে, আমি আমার যুক্তি ও জ্ঞান প্রয়োগ করে যে বিষয়টিকে সত্য বলে জেনেছি সেটিকেই আমার রচিত গ্রন্থে যুক্ত করেছি। আবার এমন কোন ঘটনারও এখন পর্যন্ত প্রমান পাওয়া যায়নি যাতে প্রমানিত হয় আল্লাহ, কালী, জিউস, গডরা চাইলেই কাউকে অমর বানিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে অবশ্যই আল্লাহর প্রিয় বান্দা নবী, রাসূলেরেরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চিরকাল বেচে থাকতেন।

তবে প্রকৃতির অনেক ব্যাপারের মতই এটারও ব্যতিক্রম রয়েছে। অর্থাৎ, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে’ কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। কোরানের অজস্র বৈজ্ঞানিক ভুলের ভেতর এটিও একটি ভুল। পৃথিবীর অনেক প্রাণীরই কখনোই স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেনা। যেমন-

এ্যামিবা: একটি এককোষী প্রাণী। যারা মাইটোসিস কোষ বিভাজনের সাহায্যে একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এ্যামিবাতে পরিনত হয়। এছাড়াও প্রতিকূল পরিবেশে ‘সিস্ট’ গঠনের মাধ্যমে এরা পুরোপুরি জড় পদার্থের মতই আচরন করে। আবার টিকে থাকার পরিবেশ পেলে এরা আবার জীবিত হয়ে ওঠে। তাই বলা যায়, এরা আক্ষরিক অর্থেই ‘অমর’।

ওয়াটার বিয়ার: এরা পানি ও অক্সিজেন ছাড়া এবং তীব্র প্রতিকূল পরিবেশেও বছরের পর বছর টিকে থাকতে পারে। এদেরকে মহাকাশে পাঠিয়ে দিলেও এরা দিব্যি বেচে থাকতে পারে। এরা যেমন অতি উচ্চ তাপমাত্রায় টিকতে পারে তেমনি প্রায় পরমশূন্য তাপমাত্রায়ও টিকে থাকতে পারে। উচ্চ মাত্রার তেজস্ক্রিয়তাকেও এরা বুড়ো আংগুল দেখিয়ে দিব্যি টিকে থাকতে পারে।

অমর জেলিফিস: এরা পূর্ণবয়ষ্ক হবার পর আবার শিশু অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। সোজা কথায়, শিকারে পরিনত না হলে বা দূর্ঘটনায় না পড়লে এদের কোন স্বাভাবিক মৃত্যু হয়না।

Axolotl: এরা এদের শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংগ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে পুনরায় উৎপাদন করতে পারে।

এছাড়াও আরো কিছু প্রাণী আছে। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা এসব প্রাণীদের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ‘সকল প্রাণী মরণশীল’ বলে আয়াত নাজিল করে দিয়েছেন। এসকল প্রাণীর জন্য যা খুবই অপমানজনক।

বিজ্ঞান কি ‘মৃত’ কে ‘জীবিত’ করতে পারবে?

বিভিন্ন প্রাণীর জিন মানুষের শরীরে ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা অতিক্রমের জন্য গবেষনা চলছে। যেমন- ওয়াটার বিয়ারের জিন ব্যবহার করে মানুষ তেজস্ক্রীয় বিকিরন প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। আবার, সম্প্রতি মার্কিন গবেষকরা কয়েকটি শূকরের মৃত্যুর চার ঘন্টা পর তাদের মস্তিষ্ককে আংশিকভাবে জীবিত করে আক্ষরিক অর্থেই মৃতদেহে প্রাণের সঞ্চার করেছেন। এছাড়াও কয়েকদিন আগে প্রথমবারের মত মৃত নারীর জরায়ু থেকে শিশুর জন্ম হয়েছে।

অমরত্বের গবেষণায় বিজ্ঞান দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন আমরা মৃত্যুকেও জয় করে ফেলবো।

View Comments (2)

  • স্বাভাবিক মৃত্যু কোনো জীবেরই হয় না, শরীরের কোনো অঙ্গ নষ্ট বা অথচ না হলে।

  • "প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে" এটা কোনো নতুন কথা হিসেবে কুরআনে আসেনি, এর দ্বারা মানুষকে সাবধান করা হয়েছে যে তারা তাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবেই। সুতরাং, তারা যেনো ভয় করে। আর উপরে যেসব প্রাণীর কথা বলা হয়েছে তাদের টিকে থাকার ক্ষমতা অনেক বেশি হতে পারে কিন্তু এমন কথা কোথাও নাই যে এরা মরে না। তোমাদের মতো মাথা মোটা গোঁড়া চিকন কলাবিজ্ঞানীরা এটা বুঝে না।

Leave a Comment