যাদের হার্টে সমস্যা তারা দয়া করে এই লেখাটি পড়বেন না।
বৌদ্ধরা একটি কথা বলতেই থাকে, বুদ্ধ কালাম সূত্রে বলেছেন, এসো, দেখো, ভাল লাগলে গ্রহণ কর, আমি বলেছি বলেই সত্য হবে তা নয়। এই কথা শুনলে কার না ভাল লাগে। কিন্তু তারা এটি বলে না যে, এটি বুদ্ধ ধর্ম প্রচারের প্রথম দিকের সূত্র যা কালামগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। সব ধর্ম প্রবক্তাই প্রথম দিকে এই ধরণের উক্তি করে থাকেন বলে জানতে পারি।
অনেকেই দাবি করে বৌদ্ধ ধর্মে নাকি প্রচুর স্বাধীনতা আছে ধর্ম পালনের ব্যাপারে। কিন্তু বাস্তবতা পুরো ভিন্ন। অন্যান্য অনেক ধর্মের মতো বৌদ্ধ ধর্মেও স্বর্গ, নরক, ইহকাল, পরকাল এবং পূণঃজন্ম বিদ্যমান। বিশেষত নরকের বীভৎস বর্ণনা অনেক সুপ্রচলিত ধর্মকেও হার মানায়। গৌতম বুদ্ধ তাঁর শিষ্যগণকে নরকের দেশণা প্রদান করেন। নরকের নিরয়পালগণ (নরকের অধ্যক্ষ) নরকে পতিত লোকদেরকে নিম্নরূপ শাস্তি দিবেন।
১। প্রতি হাতে-পায়ে একটি করে উত্তপ্ত লৌহ পিন প্রবেশ করানো হবে এবং আরেকটি উত্তপ্ত লৌহ পিন বক্ষের মধ্যে প্রবেশ করানো হবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
২। তারপর তাকে শোয়াইয়া কুঠার দ্বারা ছিন্ন করা হবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
৩। পা উপরের দিকে মাথা নিচের দিকে করিয়া ক্ষুর দ্বারা কাটা হবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
৪। রথে বেঁধে প্রজ্জ্বলিত উত্তপ্ত ভূমিতে উপর নিচে চালিত করা হবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
৫। উত্তপ্ত জ্বলন্ত অঙ্গার পর্বতের উপর হতে নিচে ঠেলে দেয়া হবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
৬। পা উপরের দিকে মাথা নিচের দিকে করে তাকে উত্তপ্ত পিতলের কড়াইয়ে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে সে সিদ্ধ হবে আবার তরলের উপরিভাগে উঠাবে- নামাবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
৭। নরকের পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ উপর নিচে এক প্রাচীর হতে অপর প্রাচীরে তাকে দৌড়ানো করা হবে তখন তার গায়ের চামড়া, মাংস, অস্থি, স্নায়ু দগ্ধ ও ধূমায়িত আবার তাকে উত্তোলন করা হবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
৮। অনেক যন্ত্রণার পরে নরকের পূর্বদিকের দরজা খোলা হবে। তখন নরকবাসী দরজা খোলা দেখে খুশি হয়ে পালাতে চাইবে। কিন্তু বিধিবাম। সেখানে আরো সাংঘাতিক। সেখানে পায়াখানার পুকুরে পতিত হবে। সেখানে সূঁচালো মূখযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণীরা নরকবাসীর চামড়া, অস্থি, স্নায়ু, অস্থিমজ্জা সেই প্রাণীরা ভক্ষণ করিবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
৯। এর পরে নরকবাসীকে হিংস্রপ্রাণীযুক্ত নরকে নেয়া হবে। হিংস্র প্রাণীরা নরকবাসীদেরকে টুকরো টুকরো করে খাবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
১০। তারপরে নরকবাসীকে সিম্বলীবনে যা আদীপ্ত, সংপ্রজ্জ্বলিত, সজ্যের্তিভূত সেখানে উঠানো নামানো হবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
১১। তারপর তাদেরকে অসিপত্রবনে নেয়া হবে। সেই বনের বৃক্ষের পাতাগুলো সূঁচালো। সেই পাতাগুলো নরকবাসীর হাত, পা, কান, নাক ছিন্ন-ভিন্ন করবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
১২। তারপাশে আছে বৈতরণী নদী যা লবণাক্ত। সেখানে নরকবাসী এদিক সেদিক ভাসতে থাকবে এবং কঠিণ যন্ত্রণা ভোগ করবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
১৩। নিরয়পালগণ সেই নদী হতে বড়শি দিয়ে নরকবাসীদেরকে উত্তোলণ করে তাদেরকে তাদের ইচ্ছার কথা জানতে চাইবে। তখন নরকবাসীরা বলবে তারা ক্ষুধার্ত। তারপর নরকবাসীদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য উত্তপ্ত লোহা খাওয়ানো হবে। তারপর নরকবাসীরা পানি চাইবে কিন্তু তাদেরকে পানির বদলে উত্তপ্ত গলিত তামা পান করানো হবে। কঠিন যন্ত্রণা কিন্তু কুকর্মের বিপাক শেষ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু হয় না।
১৪৷ চারি দরজা বিশিষ্ট মহানরক যা লৌহ প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ও লৌহাবরণ দ্বারা বিভক্ত। এর ছাঁদ লোহার তৈরি। মেঝেও লোহা নির্মিত অতিশয় তেজযুক্ত ও উত্তপ্ত চর্তুদিকে শতযোজন পর্যন্ত আগুনের শিখা ছড়িয়ে থাকে। চলতেই থাকবে।
গৌতম বুদ্ধ এক্ষেত্রে ভিক্ষুগণকে বলেছেন, উপরোক্ত নরকের বিবরণগুলো কারো থেকে শুনে বলে নাই বরং তিনি স্বয়ং জ্ঞাত এবং তিনি সেগুলো দেখেছেন।
এরকম নরকের বর্ণনা দিয়ে ধর্ম প্রবর্তকরা কোন ধরনের মানবতার ধর্ম প্রচার করতে চায় তা আমার বোধগম্য নয়। ভয় দেখিয়ে কেন ভাল কাজ করতে বলা হবে? কারো বিভৎস, নোংরা, অমানবিক এবং স্বর্গে যাওয়ার আশায় কেন ভাল কাজ করতে হবে তা পাঠকরাই বিচার করবে।
রেফারেন্সঃ
১। পবিত্র ত্রিপিটকের, অঙ্গুত্তর নিকায়(প্রথম খন্ড), তিক নিপাত, দেবদূত বর্গ, অনুবাদঃ অধ্যাপক সুমঙ্গল বড়ুয়া।
২। পবিত্র ত্রিপিটকের, মধ্যম নিকায়(তৃতীয় খন্ড), শূণ্যতা বর্গ, দেবদূত সূত্র, অনুবাদঃ শ্রী বিনয়েন্দ্রনাথ চৌধুরী।
লিখেছেনঃ Sina Ali
Leave a Comment