মহাভারতে জাতিভেদ: ব্রাহ্মণ

Print Friendly, PDF & Email

কথিত আছে,  যাহা নাই ভারতে তাহা নাই ভারতে। অর্থাৎ, মহাভারতে যা নেই পুরো ভারতবর্ষেও তা নেই। তৎকালীন ভারতের বিভিন্ন জাতি, সম্প্রদায়ের আচার-অনুষ্ঠানের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে মহাভারতে। ভারতের হৃদয়ে যে জাতিভেদের শেল বিদ্ধ হয়েছে, যা আজও ভারতকে পীড়ন করে চলেছে, তার সম্বন্ধে কি সুদীর্ঘকালের ইতিহাসধারণকারী মহাভারতে কিছুই নেই? না, আছে। মহাভারতে স্থানে স্থানে জাতপাতের সাক্ষ্য মেলে। মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্রের আচরণে বারংবার যেমন জাতিবাদী মানসিকতা ফুটে উঠেছে, তেমনি অনেক চরিত্র বিষম জাতিভেদের শিকার হয়েছেন। এতে ব্রাহ্মণের মহিমা স্থানে স্থানে কীর্তিত হয়েছে। কখনো বা ক্ষত্রিয়রা ব্রাহ্মণদের শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করেছেন।কখনোবা ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়েরা পরস্পর সন্ধিতে আবদ্ধ হয়েছেন। মহাভারতে কঠোর জাতিভেদের পক্ষে বিপক্ষে অনেক কথা রয়েছে। মহাভারতে অধিকাংশেরা যখন জাত পাত নিয়ে গোঁড়া মানসিকতা পোষণ করেছেন তখন অনেক উদারপন্থীরা জাতিভেদকে অস্বীকার করেছেন বা জাতপাত সম্বন্ধে অতটা কঠোর মানসিকতা পোষণ করেননি। বর্ণপ্রথার প্রতি যারা উদার মনোভাব পোষণ করেছেন, তাদের মনোভাব আখেরে সমাজে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবুও তাদের সেই উদারতা তুচ্ছ নয়। তাই মহাভারতের জাতিভেদ বিষয়টির সামগ্রিক আলোচনা হওয়া উচিত বলে মনে করি। সঙ্গত কারণেই অনেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, এর প্রয়োজন কি? এ তো অতীত! অতীতের গর্ত খুড়ে বিষধর সর্পকে বের করে আনা কেন? উত্তরে বলা যায়, ধর্মগ্রন্থ হিসাবে হিন্দুদের মাঝে গীতা এতটাই জনপ্রিয় যে একে বর্তমানে হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বলা যায়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সংঘটনের পূর্বে কৃষ্ণের অর্জুনকে ধর্ম, দর্শন সম্বন্ধে দেয়া উপদেশই গীতা নামে পরিচিত। অনেক পণ্ডিতেরা গীতাকে মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত অর্থাৎ পরবর্তীকালে সংযোজিত অংশ বলে থাকেন। তারা তাদের মতের স্বপক্ষে নানা তথ্য ও যুক্তি পেশ করে থাকেন। অধিকাংশ ধর্মপরায়ণ হিন্দুই খুবসম্ভবত গীতাকে মহাভারতে প্রক্ষিপ্ত বলে মানবেন না। তারা একে মহাভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত বাণী ভাবতেই ভালোবাসবেন। তাই গীতাকে বুঝতে গেলে, এর আলোচনা-সমালোচনা করতে গেলে একে মহাভারতের আঙ্গিকে দেখতে হবে। এছাড়াও ইতিহাস প্রিয় মানুষের কাছে অতীতের ঘটনাবলি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।বিবিধ কারণে ‘মহাভারতে জাতিভেদ’ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।  

বর্ণ

বর্ণপ্রথা নিয়ে আলোচনা করার আগে জানা প্রয়োজন ‘বর্ণ’ কি? পৃথিবীর নানা সমাজেই শ্রেণী বর্তমান। সেই শ্রেণীই ভারতে বর্ণ বলে পরিচিত ছিল। বর্ণ ছিল চারটি। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। এই বর্ণ বা শ্রেণী একসময় হয়ে উঠেছিল জন্মগত অর্থাৎ কেউ স্বেচ্ছায় কর্মের দ্বারা নিজ শ্রেণী নির্ধারণ করতে পারতেন না বরং জন্মের সাথে সাথেই তার বর্ণ নির্ধারণ হয়ে যেত। পিতৃ-পিতামহদের যে বর্ণ ছিল নবজাতকেরও সেই বর্ণই হত।

বর্ণের উৎপত্তি

বর্ণের উৎপত্তি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন কাহিনী মহাভারত হতে জানা যায়। মহাভারতে অনেকস্থানে বলা হয়েছে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র এই চারটি বর্ণ সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা হতে উৎপন্ন হয়েছে। ব্রহ্মার মুখ হতে ব্রাহ্মণ, বাহু হতে ক্ষত্রিয়, উরু হতে বৈশ্য ও পা হতে শূদ্রের উৎপত্তির কথা বলা হয়েছে। মহাভারতের শান্তি পর্বে পরাশর বলেন,

“ধর্ম বিদ পণ্ডিতেরা বলেন, সৃষ্টি কর্তা প্রজাপতির মুখ হতে ব্রাহ্মণ , বাহু হতে ক্ষত্রিয়, উরু হতে বৈশ্য ও চরণ হতে শূদ্রজাতি উৎপন্ন হয়েছে। যারা এই চার বর্ণ হতে পৃথক তাদের সঙ্করজ বলে নির্দেশ করা যায়। “(শান্তি / ২৯৭)  (1)

মহাভারতে 2

আবার মহাভারতের অনেক স্থানে বলা হয়েছে চতুর্বর্ণ কৃষ্ণ বা বিষ্ণু হতে উৎপন্ন হয়েছে। নিচে সেইরকম কথার উদ্ধৃতি দেওয়া হচ্ছে-

“এরপর ভগবান মধুসূদন বিবেচনা করে দিন, রাত, কাল , ঋতু, পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ন, মেঘ ও পৃথিবীর যাবতীয় স্থাবর জঙ্গমের সৃষ্টি করলেন। এরপর তার মুখ হতে একশত ব্রাহ্মণ, বাহু হতে একশত ক্ষত্রিয়, উরুদেশ হতে একশত বৈশ্য এবং পাদদেশ হতে একশত শূদ্র উৎপন্ন হল। হে মহারাজ, ভগবান নারায়ণ এভাবে চারবর্ণের সৃষ্টি বিধান করলেন। ” (শান্তি/২০৭) (2)

আবার অনেক স্থানে বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণ হতে বিভিন্ন বর্ণ উৎপন্ন হয়েছে-

“ ব্রাহ্মণ  হতে ক্ষত্রিয় প্রভৃতি তিনটি বর্ণ উৎপন্ন হয়েছে। এই জন্য ঐ তিন বর্ণের স্বভাবতই সমুদায় যজ্ঞে অধিকার আছে।“ (শান্তি/৬০) 

কোথাও কোথাও আবার বলা আছে, প্রথমে মানুষের সৃষ্টি হয় এবং পরে বর্ণ বিভাগ কল্পিত হয়-

“এরপর সেই প্রকৃতি সম্ভূত হরি থেকে ব্রহ্মার উৎপত্তি হল। ব্রহ্মা প্রজা সৃষ্টি করার ইচ্ছায় দুই চোখ হতেও অগ্নি ও চন্দ্রের সৃষ্টি করলেন। পরে ক্রমে ক্রমে সমস্ত প্রজা সৃষ্টি হলে, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় প্রভৃতি বর্ণবিভাগ কল্পিত হল।” (শান্তি/ ৩৪৩)

মহাভারতে শুধুমাত্র মানুষের বর্ণের কথা পাওয়া যায় না, এখানে দেবতাদের মধ্যেও বর্ণের উপস্থিতির উল্লেখ মেলে। চন্দ্রকে ক্ষত্রিয় ও অগ্নিকে ব্রাহ্মণ বলা হয়েছে এখানে-

“বেদ পুরাণ ইতিহাসে কীর্তিত আছে যে, এরপর সেই প্রকৃতি সম্ভূত হরি থেকে ব্রহ্মার উৎপত্তি হল। ব্রহ্মা প্রজা সৃষ্টি করবার ইচ্ছায় দুই চোখ থেকে অগ্নি ও চন্দ্রের সৃষ্টি করলেন। পরে ক্রমে ক্রমে সমস্ত প্রজা সৃষ্টি হলে , ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় প্রভৃতি বর্ণবিভাগ কল্পিত হল। চন্দ্র ব্রাহ্মণ এবং অগ্নি ক্ষত্রিয়স্বরূপ হলেন।“ ( শান্তি/৩৪৩) (3) 

বিভিন্ন বর্ণের কাজ

দেবতা হতে বিভিন্ন বর্ণের উৎপত্তি দেখিয়ে বর্ণকে বৈধতা প্রদান যেমন করা হয়েছে, তেমনি বিভিন্ন বর্ণের জন্য  বিভিন্ন কাজ স্থির করে দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণের কাজ স্থির হয় যজন, যাজন, অধ্যয়ন, অধ্যাপন, প্রতিগ্রহ, দান প্রভৃতি। যাগযজ্ঞ  প্রভৃতি বিভিন্ন  ধর্মীয় অনুষ্ঠান ব্রাহ্মণেরা করতেন। ক্ষত্রিয়েরা হলেন যোদ্ধা ও শাসক শ্রেণী। ক্ষত্রিয়ের কাজ যুদ্ধ, প্রজারক্ষা, দেশশাসন ইত্যাদি। বৈশ্যেরা ব্যবসা ও কৃষিকাজ করতেন। আর শূদ্রেরা অন্য তিন বর্ণের সেবা করতেন। তারা অপর তিন বর্ণের ভৃত্যের কাজ করতেন। (4) 

ব্রাহ্মণের মহিমা

‘দ্বিপদে ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ, চতুষ্পদে গো’  ( আদি/৭৪) (5)

এটাই ব্রাহ্মণ্যবাদের মূল বক্তব্য। মহাভারতে বারংবার ব্রাহ্মণের মহিমা প্রচারিত হয়েছে। ব্রাহ্মণকে পূজা করা হত।(6) ব্রাহ্মণকে জন্ম থেকেই সকলের নমস্য বলা হয়েছে।  বলা হয়েছে, “ব্রাহ্মণদের মধ্যে কেউ তপস্বী, কেউ উগ্রস্বভাব, কেউ  ক্ষিপ্রকারী, কেউ কেউ বাঘের মত, কেউ  কেউ বরাহের মত, কেউ কেউ কুমির প্রভৃতি জল-জন্তুর মত ও কেউ কেউ সর্পের মত প্রভাবশালী।“ ব্রাহ্মণেরা এমন নানা স্বভাবের হলেও তাদের সকলকেই পূজা করা কর্তব্য এমন বলা হয়েছে। (7)  ব্রাহ্মণকে রাজাদেরও পূজ্য বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণ বালক হলেও রাজাদের পূজনীয়।(8) ব্রাহ্মণের সেবা করা রাজার অলঙ্ঘনীয় রাজধর্ম বলা হয়েছে। (9) ধর্ম সর্বদা ব্রাহ্মণে অবস্থান করে বলা হয়েছে। (10) ব্রাহ্মণকে দেবতার বন্ধু বলা হয়েছে। (11)  ব্রাহ্মণকে দেবতার স্তরে উন্নীত করা হয়েছে।(12)  কখনও কখনও বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণেরা দেবতা অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ। তাদের দেবতাদেরও দেবতা বলা হয়েছে।(13) “ ব্রাহ্মণেরা পিতৃ, দেবতা ও উরগদের পূজ্য।ব্রাহ্মণদের হবনীয় দ্রব্য প্রদান করলে দেবতারা তা গ্রহণ করেন। দেবতারা যজ্ঞে তৃপ্ত হয়ে পৃথিবী প্রতিপালন করে থাকেন। যেহেতু ব্রাহ্মণ দেবতাদের মুখ তাই  যজ্ঞ না করে ব্রাহ্মণের মুখে আহুতি দিলেই পৃথিবী রক্ষিত হতে পারে। যিনি ব্রাহ্মণের মুখে আহুতি দেন না , তার জ্বলন্ত অগ্নিতে হোম করার কোনো প্রয়োজন  নেই। ব্রাহ্মণেরা এই জন্যই অগ্নি বলে অভিহিত হন। (14)  অতএব ব্রাহ্মণই সর্বপ্রধান, তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কেউই নেই। সকল বর্ণের মধ্যেও ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ বলে পরিগণিত হন। (15) চন্দ্র, সূর্য, জল, বায়ু, ভূমি, আকাশ ও দিকসমুদায় ব্রাহ্মণের শরীরে প্রবেশ করে অন্ন গ্রহণ করে থাকেন। যে পাপাত্মার গৃহে ব্রাহ্মণগণ ভোজন করেন না, দেবতা ও পিতৃরা কখনই তার গৃহে জন্মগ্রহণ করেন না। ব্রাহ্মণেরা পরিতৃপ্ত হলেই দেবতা ও পিতৃরা পরম পরিতুষ্ট হন। ব্রাহ্মণের উদ্দেশ্যে যে যে দ্রব্য প্রদান করা হয় , দেবতা ও পিতৃরা সেই সেই দ্রব্য দ্বারাই পরম পরিতুষ্ট হন।(16) ব্রাহ্মণেরা যার প্রতি রুষ্ট হন তাকে ত্রিভুবনের মধ্যে কেউই রক্ষা করতে পারেন না। যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণের নিন্দা করে, সূর্যোদয়ে অন্ধকারের মতই তাকে বিনষ্ট হতে হয়।“ (17) তাই ব্রাহ্মণের নিন্দা করতে ও শুনতে সবসময় বারণ করা হত। বলা হয়েছে, “ব্রাহ্মণদের অপবাদ শ্রবণ করা কখনো কর্তব্য নয় । যে স্থানে তাদের অপবাদ কীর্তিত হয় সেখানে মাথা নিচু করে থাকা বা সেখান থেকে চলে আসাই কর্তব্য। “(অনুশাসন/৩৩)

ব্রাহ্মণকে অপমান করলে রাক্ষস হয়ে জন্মগ্রহণ করতে হবে বলা হয়েছে।(18) “ব্রাহ্মণকে অবমাননা করলে পুত্র ও পশু নষ্ট হয়(19) আর ব্রাহ্মণদের সাথে যারা বিরোধ করে তারা ছয় মাসের বেশি বাচে না।(20) যে ব্যক্তি মোহবশত ব্রাহ্মণকে তিরস্কার করে , তাদের মহাসমুদ্রে ছুড়ে মারা মাটির টুকরোর মত শীঘ্রই বিনষ্ট হতে হয়।“ (21) 

ব্রাহ্মণ স্বর্গ ও নরকের ঠিকাদারিও নিয়েছিল। ব্রাহ্মণের ইচ্ছাতেই মানুষ স্বর্গ বা নরক লাভ করতো। (22) ব্রাহ্মণ মানুষের পাপ পুণ্যেও ছাড় দিয়ে থাকতো। ব্রাহ্মণকে সেবা করলে কারো পাপের লেশমাত্র থাকতো না।(23) ব্রাহ্মণের কাছে কোনো ব্যক্তি তার পাপকর্ম প্রকাশ করলে তার পাপের লেশমাত্রও থাকতো না। যে ব্যক্তি পাপ কাজ করে ব্রাহ্মণকে ভালো ভালো দ্রব্য দান করতো , পরকালে তার উৎকৃষ্ট গতি লাভ হত।(24)  “ব্রাহ্মণেরা ক্রুদ্ধ হলে দেবতাকে দেবত্বহীন এবং অদেবতাকে দেবতা বানাতে পারেন।(25) দেবতা, পিতৃলোক, গন্ধর্ব, রাক্ষস, অসুর ও পিশাচদের মধ্যে কেউই তাদের পরাজিত করতে সমর্থ হন না।ব্রাহ্মণদের পরাভবের জন্য অসুরেরা জলে এবং ব্রাহ্মণদের প্রসাদবলে দেবতারা স্বর্গে অবস্থান করছেন। ব্রাহ্মণদের দেবরাজ ইন্দ্রও ভয় পান। ইন্দ্র অহল্যার সতীত্ব নাশ করলে গৌতমের অভিশাপে তার মুখ সবুজ (26) বর্ণের শ্মশ্রুজালে সমাকীর্ণ হয় এবং মহর্ষি কৌশিকের অভিশাপে তার অণ্ডকোশ (27) নিপতিত হয়। পরিশেষে মেষের অণ্ডকোশ দিয়ে তার অণ্ডকোশ নির্মাণ করা হয়।(28) ব্রাহ্মণের অভিশাপে ভগবান চন্দ্রমা কলঙ্কযুক্ত ও সমুদ্র লবণে পরিপূর্ণ হয়েছে এবং ব্রাহ্মণের প্রভাবে দেবরাজ ইন্দ্রের দেহ প্রথমে সহস্র যোনিচিহ্নে পরিপূর্ণ হয় এবং পরিশেষে আবার ব্রাহ্মণের প্রসাদে ইন্দ্র সহস্র নয়ন হন । (29) সর্জ্জাতি রাজার যজ্ঞে মহর্ষি চব্যন অশ্বিনীকুমারদের যজ্ঞ ভাগ প্রদান করতে চাইলে , ইন্দ্র তার প্রতি বজ্র নিক্ষেপে উদ্যত হলে চব্যনের অভিশাপের কারণে ইন্দ্র  স্তম্ভিত বাহু হয়েছিলেন। প্রজাপতি দক্ষ যজ্ঞবিনাশের কারণে ক্রুদ্ধ হয়ে তপস্যা করে রুদ্রের কপালে একটি চোখ উৎপাদন করেছিলেন। যখন রুদ্র ত্রিপুরাসুরকে বধ করার জন্য  দীক্ষিত হন তখন ভৃগু নন্দন তার মাথার একটি জটা উৎপাটন করে রুদ্রের প্রতি নিক্ষেপ করলে সেখান থেকে সর্পেরা প্রাদুর্ভূত হয়। সেই সমস্ত সর্প রুদ্রকে বারবার দংশন করাতেই রুদ্রের কণ্ঠ নীল বর্ণ হয়েছে।(30) ব্রাহ্মণেরা সমুদ্রের জলকে অপেয় করেছেন। দেবগুরু বৃহস্পতি অমৃত উৎপাদনের সময় পুরশ্চরণ করার জন্য যখন জলে আচমন করেন তখন জল অত্যন্ত কলুষিত ছিল। তা দেখে বৃহস্পতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে সমুদ্রকে অভিশাপ দেন , “আমি পুরশ্চরণ করবার জন্য আচমন করছিলাম কিন্তু তুমি এক্ষণে স্বচ্ছ হলে না , অতএব আজ থেকে মৎস্য কচ্ছপ ও মকর প্রভৃতি জলজন্তুরা তোমাকে কলুষিত করবে।“ সেই থেকে সমুদ্র বিভিন্ন জলজন্তুতে পরিপূর্ণ হয়েছে।(31) পূর্বে মহর্ষি ভরদ্বাজ আকাশ গঙ্গা মন্দাকিনীতে অবতীর্ণ হয়ে আচমন করছিলেন। এই অবসরে ভগবান বিষ্ণু ত্রিবিক্রম মূর্তি ধারণ করে সেখানে আগমন করেন। মহর্ষি তাকে দেখামাত্র আকাশগঙ্গার জল দ্বারা তার বক্ষে আঘাত করেন। বিষ্ণুর বুকে আঘাত হওয়ায় সেখানে একটি চিহ্ন অঙ্কিত হয়েছিল। তখন থেকে বিষ্ণুর বক্ষঃস্থল শ্রীবৎস চিহ্নে অঙ্কিত আছে। মহর্ষি ভৃগুর অভিশাপে অগ্নি সর্বভক্ষতা প্রাপ্ত হয়েছেন।“ (32) 

মহাভারতে 4

“ব্রাহ্মণেরা ধর্মের উৎপত্তি স্থান।“ তাই ব্রাহ্মণদের মনোরথ পূর্ণ করার কথা বলা হয়েছে। “ব্রাহ্মণেরা পূর্ণ মনোরথ না হলে রাজার নানাপ্রকার ভয়, মিত্রক্ষয় ও শত্রুর প্রাদুর্ভাব উপস্থিত হয়। বিরোচন পুত্র বালি ব্রাহ্মণদের প্রতি অসূয়া প্রকাশ করায় লক্ষ্মী তাকে পরিত্যাগ করে দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে চলে গিয়েছিলেন। তা দেখে দানবরাজ বালি অত্যন্ত অনুতপ্ত হয়েছিলেন।(33)  ব্রাহ্মণেরা নতুন লোক এবং লোকপালের সৃষ্টি করতে পারেন।ব্রাহ্মণরা যাদের পছন্দ করেন তারা রাজা হন, আর যাদের অপছন্দ করেন তারা পরাভূত হয়ে থাকেন। যে মূর্খেরা ব্রাহ্মণদের অযশ ঘোষণা করে, তারা নিশ্চয়ই  বিনষ্ট হয়।(34) ব্রাহ্মণেরা সর্বদা বিদ্বেষীদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে থাকেন। ব্রাহ্মণদের দয়ার অভাবে শক, যবন, কম্বোজ, দ্রাবিড়, কলিন্দ, পুলিন্দ, কুশীনর, কোলিসর্প, মাহিষক , পৌন্ড্র, মেকল, লাট, কোন্নশীর, শৌণ্ডিক, দরদ, দর্ব্ব , চৌল, শবর, বর্বর প্রভৃতি ক্ষত্রিয় জাতি ক্ষত্রিয়ত্ব হারিয়ে শূদ্রত্ব লাভ করেছে। (35) ব্রাহ্মণদের কাছে পরাজিত হওয়াই ভালো, তাদের পরাজিত করা কখনো উচিত নয়।ব্রাহ্মণদের তেজের প্রভাবে ক্ষত্রিয়দের তেজ ও বলের উপশম হয়। ভৃগুবংশীয়রা তালজঙ্ঘদের , অঙ্গীরার বংশীয়রা নীপদের এবং মহর্ষি ভরদ্বাজ বৈতহব্য ও ঐলদের পরাস্ত করেছেন।(36)  ব্রাহ্মণদের বিরোধীতা করে  পরম সুখে জীবিত থাকতে পারে এমন লোক জীবলোকে এখনো জন্মায়নি এবং জন্মাবার সম্ভাবনাও নেই। মুঠো দিয়ে বায়ু ধরা এবং হাত দিয়ে চাঁদ স্পর্শ করা ও পৃথিবী ধারণ করা যেমন দুষ্কর , ব্রাহ্মণদের পরাজিত করাও তেমনি সুকঠিন। (37) যেমন আকাশের সৃষ্টি, হিমালয় পর্বতের পরিচালন ও সেতুবন্ধন দ্বারা গঙ্গাস্রোতের প্রতিরোধ করা নিতান্ত দুঃসাধ্য তেমনি ব্রাহ্মণদের পরাজিত করা অত্যন্ত সকঠিন।(38) ব্রহ্মবিরোধ উপস্থিত করে কোনো রাজাই পৃথিবী শাসনে সমর্থ হতে পারেন না।(39) এই জগত যা হতে উৎপন্ন হয়েছে এবং যাতে বিলীন হবে ব্রাহ্মণদের তা অবিদিত নেই ।(40) ব্রাহ্মণেরা স্বধর্ম, ভূত-ভবিষ্যৎ সমস্ত কিছু অবগত আছেন। কাঠের মধ্যে আগুন যেমন গূঢ়ভাবে অবস্থান করে , তেমনি ইহলোকে যা পাঠ, যা শ্রবণ ও যে বিষয়ক কথোপকথন করা যায় , সেই সবই ব্রাহ্মণের মাঝে গূঢ়ভাবে অন্তর্নিবিষ্ট রয়েছে। (41) ভগবান বলেছেন, ব্রাহ্মণের উচ্ছিষ্ট জননীর হৃদয়ের মত হীতকর। যারা  ঐ উচ্ছিষ্ট ভোজন করে তারা শাশ্বত ব্রহ্মপদবী প্রাপ্ত হয়।“(42)

একসময় দ্বারাবতী নগরে কৃষ্ণের পুত্র প্রদ্যুম্ন ব্রাহ্মণদের উপরে ক্রুদ্ধ হয়ে কৃষ্ণকে জিজ্ঞেস করেন, “ ব্রাহ্মণেরা কি কারণে ইহলোক ও পরলোকে ঈশ্বর বলে অভিহিত হন এবং তাদের পূজা করলে কি ফল লাভ হয়?”

উত্তরে কৃষ্ণ বলেন, “ ধর্ম, অর্থ ও কামের অনুশীলন, মোক্ষলাভের উদযোগ, যশ ও শ্রীলাভ, রোগশান্তি এবং দেবতা ও পিতৃদের পূজা করার সময় ব্রাহ্মণদের পরিতুষ্ট করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। ব্রাহ্মণেরা চাঁদের মত জগতের আনন্দদায়ক এবং উভয়লোকে সুখদুঃখদাতা । ব্রাহ্মণ হতেই সকল কল্যাণ লাভ হয়ে থাকে। তাদের অর্চনা করলে আয়ু, কীর্তি, যশ ও বল পরিবর্ধিত হয়। তারা সকলের আদি ও ব্রহ্মাণ্ডের ঈশ্বর বলে অভিহিত হয়ে থাকেন। এখন আমি স্বয়ং ঈশ্বর মনে করে কখনোই তাদের অনাদর করতে পারি না। এখন তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হওয়া কোনোক্রমেই তোমার কর্তব্য নয় । ব্রাহ্মণেরা সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ; তাদের অগোচর কিছুই নেই। তারা ক্রুদ্ধ হলে সমস্ত জগত ভস্ম করে নতুন লোক ও লোকেশ্বর সৃষ্টি করতে পারেন। অতএব পরম তপস্বী জ্ঞানবান মহাত্মারা সর্বদা তাদের উপাসনা করবেন ।“ (অনুশাসন/ ১৫৯)

ব্রাহ্মণের মহিমা বর্ণনা করার পর কৃষ্ণ একটি উপাখ্যান বর্ণনা করা শুরু করেন। তাতেও ব্রাহ্মণের মহিমা ও ব্রাহ্মণের প্রতি কৃষ্ণের ভীতি ফুটে ওঠে।

এই ধরণের বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনীর মাধ্যমে ব্রাহ্মণের মহিমা বারংবার প্রচার করা হয়েছে মহাভারতে।

ব্রাহ্মণের গুণ

বিবিধ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করার পাশাপাশি মহাভারতে ব্রাহ্মণকে বিভিন্ন গুণ অর্জন করার কথাও বলা হয়েছে। যেমন উদ্যোগ পর্বে বলা হয়েছে, “ ধর্ম, সত্য, তপ, দম, অমাৎসর্য, লজ্জ্বা, তিতিক্ষা, অনসূয়া, দান, শাস্ত্র, ধৈর্য ও ক্ষমা এই ১২ টি ব্রাহ্মণের মহাব্রত বলে অভিহিত হয়।“( উদ্যোগ /৪৪) (43)

আদি পর্বে বলা হয়েছে, “হে মহাত্মন রুরো! অহিংসা পরম ধর্ম, এই জন্য ব্রাহ্মণদের কখনো কোনো জীবহিংসা করা উচিত নয়।বেদে এরূপ কথিত আছে যে, ব্রাহ্মণেরা সর্বদা শান্তমূর্তি , বেদবেদাঙ্গবেত্তা ও সর্বজীবের অভয়প্রদ হবেন। অহিংসা-সত্যবাক্য,ক্ষমা ও বেদবাক্য ধারণ এগুলি ব্রাহ্মণের পরম ধর্ম।“ (আদি/১১) (44)

অনুশাসন পর্বে যুধিষ্ঠির ভীষ্মকে জিজ্ঞেস করেন, “কেমন গুণের অধিকারী হলে ব্রাহ্মণেরা সাধু হিসাবে পরিগণিত হন? কেমন ব্রাহ্মণকে ধন দান করা উচিত? কি ধরণের ব্রাহ্মণকে ভোজন করানো উচিত?”

উত্তরে ভীষ্ম বলেন, “বৎস! ব্রাহ্মণেরা ক্রোধবিহীন, ধর্মপরায়ণ, সত্যবাদী ও জিতেন্দ্রিয় হলেই সাধু বলে পরিগণিত হয়ে থাকেন। সেই সমস্ত ব্রাহ্মণকে এবং যারা অহংকারহীন , সহিষ্ণু, জিতেন্দ্রিয়, সর্বভূতহিতৈষী, মিত্রতা পরায়ণ, লোভ বিহীন, পবিত্র, বিদ্বান, লজ্জ্বাশীল, সত্যবাদী ও স্বকর্মপরায়ণ, তাদের দান করলে মহাফল লাভ হয়। যে ব্রাহ্মণ চারবেদ ও সকল বেদাঙ্গ অধ্যয়ণ করেন এবং যিনি ষড়বিধ কর্মে প্রবৃত্ত হন , তিনিই ভোজন করাবার উপযুক্ত পাত্র। যথার্থ গুণবান পাত্রে দান করলে দাতার সহস্রগুণ ফল লাভ হয়।  শাস্ত্রজ্ঞান, সদ্ব্যবহার ও সৎ চরিত্রসম্পন্ন একমাত্র ব্রাহ্মণকে দান করতে পারলেই দাতার কুল পবিত্র হয়। “ (অনুশাসন/২২) (45)

ব্রাহ্মণকে দান

ব্রাহ্মণেরা ছিলেন ভীক্ষাজীবি। মানুষের দানের মাধ্যমেই তারা নিজেদের জীবনধারণ করতেন।  পুরো মহাভারতে স্থানে স্থানে ব্রাহ্মণকে দানের কথা বলা হয়েছে। ব্রাহ্মণকে দানের বিভিন্ন মহিমা প্রচার করা হয়েছে।  ব্রাহ্মণকে দান করলে পুণ্য, স্বর্গ ইত্যাদি লাভ হবে বলা হয়েছে। বারংবার ব্রাহ্মণকে প্রচুর অর্থ দান করতে বলা হয়েছে। ব্রাহ্মণকে বস্ত্র ও বিভিন্ন বর্ণের গোরু,বাছুর, অলঙ্কার ইত্যাদি দান করলে ব্রহ্মলোক, ইন্দ্রলোক, সূর্যলোক, চন্দ্রলোক, অগ্নিলোক, অপ্সরালোক ইত্যাদি লোক প্রাপ্ত হবে বলে বলা হয়েছে। (46) শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণকে শত যূথপতি দীর্ঘশৃঙ্গ বলবান অলঙ্কৃত বৃষ দান করলে প্রতিজন্মেই অতুল ঐশ্বর্য লাভ হবে বলা হয়েছে।(47) “ব্রাহ্মণকে গুণসম্পন্ন বস্ত্রাবৃত তরুণী গাভী দান করলে পাপের লেশমাত্রও থাকেনা। গোদাতাকে কখনোই অন্ধকার নরকে নিপতিত হতে হয় না। কিন্তু যে ব্যক্তি জলশূণ্য পুকুরের মত দুধবিহীন বিকলেন্দ্রিয় জরারোগসম্পন্ন গাভী দান করে ব্রাহ্মণকে নিরর্থক তার লালন পালনের দ্বারা কষ্ট ভোগ করায় , তাকে নিশ্চয়ই ঘোরতর নরকে নিপতিত হতে হয়।(48) ব্রাহ্মণকে বিধি অনুসারে গোরু দান করলে ওই গোরুর শরীরে যত রোম আছে, তত বছর স্বর্গ লাভ হয়।“ এমনকি নিজেকে বিক্রি করে তার মূল্যে ব্রাহ্মণকে গোরু দান করলে যতকাল গোজাতি পৃথিবীতে বিদ্যমান আছে, ততকাল স্বর্গ ভোগ করা যায় এমন বলা হয়েছে।  যুদ্ধে জয় করে ব্রাহ্মণকে গোরু দান করার ফলে আত্মবিক্রয়ীর ফল লাভ হবে এমন বলা হয়েছে।(49) মোদ্দাকথা, ব্রাহ্মণকে দান করলে ইহকালে ও পরকালে সুখ সুনিশ্চিত। “ধেনুর অভাবে ব্রাহ্মণকে তিল নির্মিত ধেনু প্রদান করলে পরলোকে পরম সুখে ক্ষীর সমুদ্র উপভোগ করা যায়। গ্রীষ্মকালে ব্রাহ্মণকে ছাতা দান করলে তার কখনো মানসিক পীড়া উপস্থিত হয় না এবং তিনি বিষয় কষ্ট হতে শীঘ্রই মুক্ত হতে সমর্থ হন।(50) ব্রাহ্মণকে পাদুকা দান করলেও অনেক ফল  লাভ হবার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছ এর ফলে দাতার বিপদের লেশমাত্রও থাকবে না , শত্রুরা কখনোই তাকে পরাজিত করতে পারবে না।(51) ব্রাহ্মণকে তিলদানের  অনেক ফললাভের কথা বলা হয়েছে। “যিনি আশ্বিন মাসে ব্রাহ্মণদের ঘি প্রদান করেন অশ্বিনীকুমারদ্বয় তাদের রূপ দান করেন। যিনি ব্রাহ্মণদের ঘৃতপায়েস দান করেন, রাক্ষসেরা কখনো তার গৃহে উপদ্রব করে না।”(52) “ব্রাহ্মণদের কলস দান করলে কেউ পিপাসায় মারা যায় না। খাদ্যের অভাবে তাকে কষ্ট পেতে হয় না। তার কখনো বিপদ হয় না।”(53) “যিনি রান্না বান্নার জন্য বা আগুন পোহানোর জন্য ব্রাহ্মণকে কাঠ দান করেন, তিনি সংগ্রামে জয়লাভ করেন, সকল কাজে সিদ্ধিলাভ করেন এবং অগ্নিদেব তার প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট থাকেন।” (54) যে রাজা বিদ্বান ব্রাহ্মণকে ভূমি প্রদান করেন তিনি ইহজন্মে অভিলষিত রাজ্যভোগ ও পরজন্মে সার্বভৌমত্ব লাভ করতে সমর্থ হন। যে ব্যক্তি ইহজন্মে ব্রাহ্মণকে কালকৃষ্ট, বীজসম্পন্ন ও ফল সমন্বিত ভূমি অথবা উৎকৃষ্ট গৃহ দান করেন, তিনি পরজন্মে সমস্ত লোকের কামনা পুরণ করতে সমর্থ হন। রাজার সকল অর্থই  নিঃসন্দেহে ব্রাহ্মণদের জন্য সঞ্চিত হয়ে থাকে। “(55)

ব্রাহ্মণকে প্রতিপালন করে যে ধন উদ্বৃত্ত হবে তা দিয়ে অন্য সবাইকে প্রতিপালন করা রাজার কর্তব্য এমন বলা হয়েছে। (56) ব্রাহ্মণদের পিতার মত প্রতিপালন করা রাজার অবশ্য কর্তব্য বলা হয়েছে। (57) কখনও ব্রাহ্মণদের দেহকে পুত্রের মত প্রতিপালন করার কথা বলা হয়েছে। “ব্রাহ্মণের ঋণ পরিশোধ রাজার অবশ্য কর্তব্য।“(58) রাজাকে ব্রাহ্মণদের আরাধনা করতে বলা হয়েছে। “ব্রাহ্মণদের আরাধনা করাই রাজার সর্বোৎকৃষ্ট কার্য।“ যে সকল ব্রাহ্মণ রাজার জনপদে বাস করবেন তাদের বিবিধ ভোগ্য বস্তু প্রদান করা ও তাদের নমস্কার করার কথা বলা হয়েছে। “ব্রাহ্মণেরা শান্তভাবে অবস্থান করলে রাজ্য নির্বিঘ্নে থাকে। আর তারা ক্রুদ্ধ হলে মারণ-উচ্চাটন প্রভৃতি নানা উপায় ও তপস্যার মাধ্যমে প্রাপ্ত তেজ দ্বারা সব কিছু দগ্ধ করতে সক্ষম হন। অতএব তাদের পিতার মত পূজা ও সম্মান করা অবশ্যকর্তব্য। মেঘ যেমন জলধারা বর্ষণ করে শস্য উৎপাদনের মাধ্যমে লোকের জীবন রক্ষা করছেন, তেমনি ব্রাহ্মণদের প্রসাদেও লোকযাত্রা নির্বাহ হচ্ছে। অভিচারাদি ক্রিয়া দ্বারা তাদের বিনাশ করা সম্ভব নয়। তাদের গতি কখনোই প্রতিহত হয় না। বনের মধ্যে অগ্নিশিখা যেমন সমস্ত বন দগ্ধ করে থাকে, তেমনি ব্রাহ্মণেরা ক্রুদ্ধ হলে সব ভস্ম করতে সমর্থ হন। অতি সাহসি ব্যক্তিরাও তাদের দেখে ভীত হয়ে থাকে। তাদের গুণের ইয়ত্তা নেই।“ (59)

এছাড়া, ব্রাহ্মণেরা ধন,অলঙ্কার, গাভী, খাদ্য প্রভৃতির সাথে সাথে  দাস-দাসী এবং নারীও উপঢৌকন হিসেবে পেতেন। (60) রাজারা ব্রাহ্মণদের প্রচুর অর্থ দান করতেন। (61) এমনকি ব্রাহ্মণকে সমগ্র পৃথিবী দান করে স্বর্গ লাভের কথাও মহাভারতে বলা হয়েছে।(62) 

মহাভারতে 6

লক্ষ্য করলে দেখা যায় নানা মহিমা প্রচারের মাধ্যমে ব্রাহ্মণেরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন তবে এর ব্যতিক্রমও কিন্তু মহাভারতে দেখা যায়। এই মহাকাব্যে কোথাও আবার ব্রাহ্মণকে প্রচুর অর্থ রাখতে বারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “ব্রাহ্মণের প্রচুর অর্থ অনর্থের মূল। এর প্রভাবে তাদের অহংকার ও মোহ উৎপন্ন হবার বিলক্ষণ সম্ভাবনা থাকে। ব্রাহ্মণেরা মোহে অভিভূত হলে ধর্ম নিশ্চয়ই বিলুপ্ত হয়ে যায়। ধর্ম অন্তর্হিত হলে প্রাণীরা ক্ষণকালও জীবন ধারণ করতে সমর্থ হয় না। “ ( অনুশাসন/৬১)

একদিকে ব্রাহ্মণকে দানের মহিমা যেমন বারবার প্রচার করা হয়েছে, অপরদিকে যাচক ব্রাহ্মণ অপেক্ষা অযাচক ব্রাহ্মণকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। মহাভারত থেকে এর অবিকল উদ্ধৃতি দেওয়া যাক-

“ভীষ্ম বললেন, বৎস! যাচক ব্রাহ্মণদের চেয়ে অযাচক ব্রাহ্মণকে দান করলেই মহৎফল লাভ হতে পারে। যাচক ব্রাহ্মণের চাইতে অযাচক ব্রাহ্মণ নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ। রক্ষা ক্ষত্রিয়ের ও যাঞ্চা ব্রাহ্মণের ধৈর্যস্বরূপ। ধৈর্যশালী বিদ্বান ব্রাহ্মণ পরিতুষ্ট হয়ে দেবতাদের প্রীত করতে পারেন। যাচক ব্রাহ্মণেরা দস্যুদের মত লোকদের বিপদগ্রস্ত করে , এই জন্য পণ্ডিতেরা যাঞ্চাকে চৌর্যস্বরূপ বলে নির্দেশ করে থাকেন। যাচকেরা মৃতকল্প বলে অভিহিত হয়। দানশীল মহাত্মাদের কখনোই অবসন্ন হতে হয় না; প্রত্যুত তারা আপনার ও অন্যের জীবিকা নির্বাহ করে পরম সুখে কালহরণ করে থাকেন। মানুষেরা দয়ার অধীন হয়ে ব্রাহ্মণদের ধনদান করেন বটে, কিন্তু যে সকল ব্রাহ্মণ নিতান্ত দুঃখী হয়েও কারো কাছে প্রার্থনা  করেন না তাদের দান করাই সর্বতোভাবে কর্তব্য। যদি তোমার রাজ্যে অযাচক দরিদ্র ব্রাহ্মণেরা বাস করে থাকেন, তাহলে তুমি তাদের ছাইচাপা আগুনের মত মনে করবে। ঐ তপোবলসম্পন্ন মহাত্মারা পৃথিবীকেও অনায়াসে পুড়িয়ে দিতে পারেন। অতএব তাদের সৎকার করা তোমার অবশ্য কর্তব্য। তুমি সর্বদা জ্ঞান, বিজ্ঞান, তপস্যা ও যোগবলসম্পন্ন ব্রাহ্মণদের পূজা এবং অযাচক মহাত্মাদের সম্মুখীন হয়ে তাদের ধনদান করবে। সকাল ও সন্ধ্যায় সংস্কৃত অগ্নিতে আহুতি দিলে যে ফল লাভ হয় , বেদব্রতপরায়ণ ব্রাহ্মণদের দান করলে সেই ফল লাভ হয়ে থাকে। অতএব যারা বেদবিধান অনুসারে বিদ্যা উপার্জন ও নিয়মানুষ্ঠান করে কারো আশ্রয় না নিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন এবং যে সকল ব্রাহ্মণ প্রশংসালাভের জন্য তপোনুষ্ঠান  করেন না, তুমি গৃহনির্মাণ, ভৃত্য নিয়োগ এবং বিবিধ পরিচ্ছদ ও ভোগ্য বস্তু প্রদান করে তাদের পরিতুষ্ট করবে। তারা যার ধন প্রভৃতি প্রতিগ্রহ করেন, তার পরম ধর্ম সাধন করা হয়। যে সকল ব্রাহ্মণের স্ত্রী-পুত্রেরা সুবৃষ্টির অপেক্ষাকারী কৃষকের মত ভোজ্য বস্তুর প্রতীক্ষা করে, তাদের ভোজন করিয়ে ভোজ্য বস্তু প্রদান করা তোমার অবশ্য কর্তব্য। “ ( অনুশাসন/৬০)

ব্রাহ্মণ ভোজন

ব্রাহ্মণকে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য দান করলে বিভিন্ন ফললাভ হবার কথা বলা হয়েছে। ব্রাহ্মণদের সুপক্ক অন্ন দান করতে বলা হয়েছে।(63) জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে ব্রাহ্মণদের মূলের সাথে কালশাক দান করলে ইহলোকে অভিষ্ট গতি লাভ হয় এমন বলা হয়েছে। “মূলা নক্ষত্রে সমাহিত হয়ে ব্রাহ্মণদের ফলমূল দান করলে পিতৃ লোকের তৃপ্তি সম্পাদন ও অভিলষিত গতি লাভে সমর্থ হওয়া যায়”।(64) “ব্রাহ্মণকে দধিপাত্র দান করলে মনুষ্য দেহান্তে বহু গোধন সম্পন্ন ব্যক্তির গৃহে জন্মগ্রহণ করে।“ ব্রাহ্মণকে মধুঘৃত সংযুক্ত দুগ্ধ প্রদান করলে দেবলোকে পূজিত হওয়া যায়।“ব্রহ্মচারী জিতেন্দ্রিয় ব্রাহ্মণ প্রাতঃকালে যার গৃহে ভোজন করেন, ভগবান অগ্নি তার প্রতি নিতান্ত প্রসন্ন হন। যে ব্যক্তি মধ্যাহ্নসময়ে ঐরূপ ব্রাহ্মণগণকে গো, হিরণ্য, বস্ত্র প্রদান করেন দেবরাজ তার প্রতি অত্যন্ত প্রীত হয়ে থাকেন। আর যে ব্যক্তি অপরাহ্নে অন্ন প্রভৃতি দান দ্বারা দেবতা, পিতৃ ও ব্রাহ্মণগণের তৃপ্তি সাধন করেন, তিনি নিঃসন্দেহে বিশ্বদেবদের প্রীতি লাভ করতে সমর্থ হন।“

ব্রাহ্মণ যাতে কখনোই ক্ষুধার্ত না থাকেন সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হত।মহাভারতের অনুশাসন পর্বে তাই বলা হয়েছে, “যদি তোমার রাজ্যে ব্রাহ্মণ ক্ষুধায় অতিশয় কাতর হন, তাহলে তোমার নিশ্চয়ই ব্রহ্মহত্যার পাপ জন্মাবে। মহারাজ শিবি বলেছেন যে, যে রাজার অধিকার মধ্যে প্রজারা বিশেষত ব্রাহ্মণেরা আহারের  অভাবে অশেষ বধ ক্লেশ স্বীকার করেন , সে রাজার জীবনে ধিক। যে রাজার রাজ্যে স্নাতক ব্রাহ্মণ ক্ষুধায় একান্ত কাতর হন, সেই রাজার রাজ্য নিঃসন্দেহে নিতান্ত অবসন্ন ও প্রতিপক্ষ ভূপালদের দ্বারা আক্রান্ত হয়।“ ( অনুশাসন/৬১)

ব্রাহ্মণকে অন্নদান করলে স্বর্গ লাভ হবে বলা হয়েছে। (65) “গুরুতর পাপ করে ব্রাহ্মণকে অন্ন দান করলে সেই পাপ বিনষ্ট হয়ে যায়।“ নিজের পরিবারকে কষ্ট দিয়েও ভিক্ষুক ব্রাহ্মণকে অন্নদান করার কথা মহাভারতের একস্থানে বলা হয়েছে। (66) ব্রাহ্মণেরা উপস্থিত হলে ঘরের শিশুদেরকে খাওয়ানোর আগে ব্রাহ্মণদের ভোজন করানোর কথা বলা হয়েছে। (67) “ব্রাহ্মণদের ভোজ্য বস্তু প্রদানের সময় ‘সম্পনং’ , পানীয় প্রদানের সময় ‘তর্পণং’ এবং পায়েস, যবাগু ও তিল প্রদানের সময় ‘সুশৃতং’ বলে জিজ্ঞাসা করা বিধেয়।“ এমন বলা হয়েছে মহাভারতে। (68)

অনুশাসন পর্বে এক স্থানে সুন্দরভাবে ব্রাহ্মণকে অন্নদানের মহিমা কীর্তিত হয়েছে-

“অন্ন দান সমস্ত দান অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ , অতএব সরল হৃদয়ে অন্ন দান করা ধর্মাকাঙ্খীদের অবশ্য কর্তব্য। অন্ন মানবদের প্রাণস্বরূপ, অন্ন হতেই প্রাণীরা সমুদ্ভূত হয় এবং অন্নেই সকল লোক প্রতিষ্ঠিত থাকে, সুতরাং অন্নদান অপেক্ষা উৎকৃষ্ট দান আর কিছুই নেই। দেবতা, পিতৃ ও মানুষেরা অন্নদানেরই ভূরি ভূরি প্রশংসা করে থাকেন। মহারাজ রন্তিদেব অন্ন দান করেই স্বর্গে আরোহণ করেছেন। অতএব খুশি মনে স্বাধ্যায়নিরত ব্রাহ্মণদের ন্যায়লব্ধ অন্ন প্রদান করা মানুষের অবশ্য কর্তব্য। যে ব্যক্তি সন্তুষ্টচিত্তে সহস্র ব্রাহ্মণকে অন্ন ভোজন করান , তাকে কখনোই তীর্যগযোনি লাভ করতে হয় না। পাপী ব্যক্তিও দশ হাজার ব্রাহ্মণকে ভোজন করালে অধর্ম থেকে মুক্তিলাভ করতে পারে। বেদবেত্তা ব্রাহ্মণ স্বাধ্যায়নিরত ব্রাহ্মণগণকে ভিক্ষালব্ধ অন্ন দান করলে নিশ্চয়ই ইহলোকে সুখভোগ করতে সমর্থ হন। যে ক্ষত্রিয় ব্রহ্মস্ব গ্রহণে পরাঙ্মুখ হয়ে ন্যায় অনুসারে প্রজাপালন করে সমাহিতচিত্তে বেদবেত্তা ব্রাহ্মণদেরকে ভুজবলার্জিত অন্ন প্রদান করেন , তাকে কখনোই পূর্বকৃত অধর্মের ফলভোগ করতে হয় না। যে বৈশ্য কৃষিলব্ধ দ্রব্য ছয়ভাগে ভাগ করে একভাগ ব্রাহ্মণকে প্রদান করে , সে সমুদায় পাপ হতে বিমুক্ত হয়। আর যে শূদ্র প্রাণপণে ভারবহন প্রভৃতি দ্বারা অর্থ উপার্জন করে ব্রাহ্মণদের অন্ন দান করে , তার সমুদায় পাপ বিনষ্ট হয়ে যায়। যে ব্যক্তি হিংসাহীন হয়ে পরিশ্রম দ্বারা অন্ন উপার্জন করে ব্রাহ্মণদের প্রদান করে , সে কখনোই দুঃখে অভিভূত হয় না। মনুষ্য ন্যায় অনুসারে অন্ন উপার্জন করে হৃষ্ট চিত্তে ব্রাহ্মণদের দান করলে সমুদায় পাপ হতে বিমুক্ত হতে পারে। যে ব্যক্তি নিরন্তর অন্নদান করে সে সৎপথাবলম্বী , বলশালী ও নিষ্পাপ হয়। … গৃহস্থ প্রথমে ব্রাহ্মণদের ভোজন করিয়ে শেষে নিজে ভোজন করবেন। … যে ব্যক্তি বেদ, ধর্ম , ন্যায় ও ইতিহাসবেত্তা হাজার ব্রাহ্মণকে ভোজন করান , তাকে কখনোই সংসার-কষ্ট ভোগ করতে হয় না। তিনি নিশ্চয়ই পরলোকে অশেষ সুখ ভোগ ও পরজন্মে রূপবান, কীর্তিমান ও ধনবান হয়ে পরমসুখে কাল হরণ করতে সমর্থ হন। (অনুশাসন/১১২)

ব্রাহ্মণকে স্ত্রী সমর্পণ

মহাভারতে অতিথি সৎকারের এক অভিনব পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। সুদর্শন নামে এক ব্যক্তি গৃহস্থাশ্রমে থেকে মৃত্যুকে জয় করার আশায় তার স্ত্রী ওঘবতীকে বলেন কখনো অতিথি সেবায় পরাঙ্মুখ না হতে। তিনি বলেন, “ অতিথি যাতে সন্তুষ্ট হন, তুমি বিচার-বিবেচনা না করে তাই করবে। এমনকি অতিথিকে আত্মসমর্পণ করতে হলেও তাতে পরাঙ্মুখ হয়ো না…”

একদিন ধর্ম ব্রাহ্মণবেশে অতিথিরূপে সুদর্শনের গৃহে উপস্থিত হন। ব্রাহ্মণবেশী ধর্ম ওঘবতীকে তার সেবা করতে বলেন। ওঘাবতীকে তিনি বলেন, “রাজনন্দিনী! আমি তোমার সাথে সম্ভোগ করতে চাই।যদি গৃহস্থাশ্রমে তোমার যথার্থ ভক্তি থাকে, তাহলে তুমি নিজেকে দিয়ে আমাকে সন্তুষ্ট কর।“

 স্বামী সুদর্শনের অতিথি সেবার কথা স্মরণ করে ওঘবতী ব্রাহ্মণবেশী ধর্মের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান।

সুদর্শন এসে এই ঘটনা দেখতে পান কিন্তু তিনি ক্রোধ ও ঈর্ষা ত্যাগ করে অতিথি ব্রাহ্মণকে বলেন, “ ব্রহ্মণ! আপনি পরমসুখে আমার স্ত্রীকে নিয়ে সম্ভোগ করুন, এ নিয়ে আমি অসন্তুষ্ট নই।“ অতিথি সৎকার করাই গ্রহস্থের পরম ধর্ম। আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে অতিথিকে নিজের প্রাণ, ভার্যা ও আমার যা কিছু ধন আছে সমস্তই প্রদান করব। “ ( অনুশাসন/ ২)

পূর্বে শুধু ব্রাহ্মণ নয়, অন্য অতিথিদেরও নিজের স্ত্রী সমর্পণ করার নিয়ম খুব সম্ভবত ছিল।

ব্রাহ্মণের ধন অপহরণ

দান, দক্ষিণা ইত্যাদির মাধ্যমে ব্রাহ্মণ যে ধন উপার্জন করতো তা অপহরণের ব্যাপারে বেশ নিষেধাজ্ঞা দেখা যায় মহাভারতে।(69) দেখা যায়, ব্রাহ্মণের অর্থকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।  বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণকে ভূমি দান করে  তা প্রত্যাহরণ করা কখনো উচিত নয়। কারণ ওই ক্ষেত্রহরণের জন্য অবসন্ন ব্রাহ্মণদের অশ্রুপাত হলে অপহরণকারীর তিনকুল এককালে ধ্বংস হয়ে যায়। (অনুশাসন/৬২) (70)

ব্রহ্মস্ব বা ব্রাহ্মণের ধন অপহরণ করলে গুরুতর পাপ হয়ে থাকে এমনও বলা হয়েছে মহাভারতে-

“ ব্রহ্মস্ব অপহরণ করলে আবার তেমন গুরুতর পাপ জন্মে থাকে। ব্রাহ্মণের ধন ও পত্নী অপহরণ করা কখনো উচিত নয়।“ ( অনুশাসন/৬৯)

ব্রাহ্মণের ধন অপহরণ করলে কি রকম ক্ষতি হতে পারে, এ সম্বন্ধে একটি অলৌকিক গল্পের অবতারণা করা হয়েছে-

একবার নাকি এক বানর এক শেয়ালকে শ্মশানের মধ্যে দুর্গন্ধযুক্ত মাংস ভক্ষণ করতে দেখে জিজ্ঞেস করেছিল, সে পূর্বজন্মে এমন কি পাপ কাজ করেছিল যার জন্য আজ তার এই দুরবস্থা হল। এর উত্তরে শেয়াল বললো , সে পূর্বজন্মে ব্রাহ্মণের নিকট অঙ্গীকার করে তাকে অর্থ প্রদান করেনি। তাই সে এমন কুৎসিত শেয়াল যোনি লাভ করে ক্ষুধার্ত হয়ে মৃত পশুর মাংস ভক্ষণ করছে।

এরপর সেই শেয়াল বানরটিকে জিজ্ঞেস করলো সে কি কারণে বানর হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। বানর বললো, পূর্বজন্মে সে নাকি লোভবশত ব্রাহ্মণের ফল অপহরণ করেছিল! তাই তার বানর হয়ে জন্মগ্রহণ করতে হল। (71)

বানর আর শেয়ালের উপাখ্যানে আরো বলা হয়েছে- 

“ ব্রাহ্মণেরা সর্বদা …এই উপদেশ প্রদান করতেন যে, ব্রহ্মস্ব অপহরণ করা কোনো ক্রমেই বিধেয় নয়। ব্রাহ্মণদের প্রতিনিয়ত ক্ষমা করা অবশ্য কর্তব্য। ব্রাহ্মণ বালক দরিদ্র বা কৃপন হলেও তাকে অবজ্ঞা করা বিধেয় নয়। ব্রাহ্মণের কাছে যা অঙ্গীকার করবে , তা সাথে সাথেই তাকে অর্পণ করা উচিত। ব্রাহ্মণকে নিরাশ করা কোনোভাবেই কর্তব্য নয়। প্রথমে আশা দিয়ে পরে হতাশ করলে ব্রাহ্মণ আগুনের মত ক্রোধে প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠেন। তিনি একবার ক্রোধদৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই হতাশকারীকে কাঠের মতই এককালে ভস্ম করতে পারেন। … যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণকে প্রীত করতে পারে, তার পুত্র , পৌত্র , বন্ধু, বান্ধব, অমাত্য , পশু , নগর ও জনপদ ইত্যাদি সবকিছু নিরাপদে থাকে। ব্রাহ্মণের তেজ সূর্যকিরণের মত তীব্র। অতএব ব্রাহ্মণের কাছে প্রতিশ্রুত হয়ে তা প্রদান করা অবশ্য কর্তব্য। ব্রাহ্মণকে দান করলে নিশ্চয়ই স্বর্গ লাভ হয়। দান অপেক্ষা মহৎ কাজ আর কিছুই নেই। ইহলোকে ব্রাহ্মণকে দান করলে, পিতৃলোক ও দেবলোকের তৃপ্তি সাধন করা হয়। অতএব ব্রাহ্মণদের দান করা অবশ্য কর্তব্য। ব্রাহ্মণই দানের প্রধান পাত্র। যেকোনো সময়ে হউক না কেন, ব্রাহ্মণ গৃহে উপস্থিত হলে তাকে পূজা না করে বিদায় করা কখনো উচিত নয়।“ ( অনুশাসন / ৯)

ব্রাহ্মণের দণ্ড

ব্রাহ্মণেরা যেমন প্রচুর সুযোগ সুবিধা ভোগ করতো তেমনি শাস্তির ক্ষেত্রেও তাদের অনেক ছাড় দেওয়া হত। ব্রাহ্মণদের সাধারণত তেমন গুরু দণ্ড প্রদান করা হত না। মহাভারতের বন পর্বে এই প্রসঙ্গে বামদেব বলেছেন, “যিনি তপোবলে ব্রহ্মসাক্ষাৎকার লাভ করেন, তিনিই জীবলোকে শ্রেষ্ঠ; সেই ব্রাহ্মণ কায়িক, মানসিক ও বাচনিক দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে না। “( বন/ ১৯২) (72)


তবে কোথাও বলা হয়েছে, “ব্রাহ্মণ অপরাধী হলে তাকে অজিন ও দণ্ডধারণ করিয়ে তার মস্তক মুণ্ডন করা কর্তব্য। “ (শান্তি/ ২৬৭)

একই অপরাধে যখন অন্যান্য বর্ণের মৃত্যুদণ্ড হত তখন ব্রাহ্মণকে এই দণ্ড থেকে ছাড় দেওয়া হত। তাকে কখনো হত্যা করা হত না। (73) মহাভারতে বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণ সর্ব বর্ণের গুরু ও পূজ্য তাই ব্রাহ্মণ সর্বপ্রকার পাপে লিপ্ত হলেও তাকে কখনোই হত্যা করা উচিত নয়।(74)  অন্যান্য বর্ণের চেয়ে ব্রাহ্মণের জীবনকে মূল্যবান দেখিয়ে ব্রাহ্মণের হত্যাকে ব্রহ্মহত্যা নাম দেওয়া হয়(75) এবং ব্রহ্মহত্যাকে মহাপাতক (76) বলে চিহ্নিত করা হয়। ব্রহ্মহত্যা কখনোই অনুমোদিত ছিল না। (77) ব্রাহ্মণকে হত্যা করা ছাড়াও অন্য  অপরাধেও ব্রহ্মহত্যার পাপে পাপী হতে হত (এক্ষেত্রে ব্রহ্মহত্যা দ্বারা কোনো গুরু অপরাধ বোঝানো হত)। যেমনঃ “অকৃতজ্ঞ ব্যক্তির ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়।(78) ব্রাহ্মণের প্রতি আক্রোশ প্রকাশ করলে ব্রহ্মহত্যার পাপ হয়। (79) যে ব্যক্তি গুণবান ব্রাহ্মণকে ভিক্ষা প্রদান করার জন্য স্বয়ং আহ্বান করে ভিক্ষা নেই বলে প্রত্যাখ্যান করে, যে নির্বোধ সাঙ্গবেদাধ্যায়ী উদাসীন ব্রাহ্মণের বৃত্তিচ্ছেদ করে , যে ব্যক্তি তৃষ্ণার্ত গোরুদের জল পানে বাধা দেয়, … যে অধর্মপরায়ণ মূঢ় ব্রাহ্মণকে অকারণ মর্মভেদী দুঃখ প্রদান করে … তাদের সকলকেই ব্রহ্মঘাতী বলে নির্দেশ করা যায়।“  (80)

বিভিন্ন প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে এই ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে মুক্তও হওয়া যেত। এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-

“ ব্রহ্মহত্যাকারী খট্বাঙ্গ ও নরকপাল ধারন করে ভিক্ষা করে একবার মাত্র আহার , সর্বদা অধ্যবসায়সম্পন্ন , অসূয়া সম্পন্ন ও অধঃশায়ী হয়ে যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠান, ভৃত্যের সাহায্য ছাড়া নিজেই কাজ করে এবং জনসমাজে নিজের কুকর্ম প্রকাশ করলে বারো বৎসরের পর নিজ পাপ হতে মুক্ত হয়। এছাড়া পণ্ডিতদের ব্যবস্থা বা স্বেচ্ছানুসারে শস্ত্রধারীদের শস্ত্রে জীবন পরিত্যাগ , অধঃশীরা হয়ে জ্বলন্ত আগুনে তিনবার নিজেকে নিক্ষেপ, বেদ পাঠ করতে করতে শত যোজন গমন, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে সর্বস্ব বা জীবন যাপনোপযোগী ধন অথবা পরিচ্ছদ সমবেত গৃহ প্রদান এবং গো ও ব্রাহ্মণের রক্ষা সম্পাদন এই সকলের অন্যতর কার্যের অনুষ্ঠান করলেও ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপ হতে মুক্তিলাভ হতে পারে।“

“আর যে ব্যক্তি প্রতিনিয়ত অল্প আহার করে সে ছয় বৎসরে, যে ব্যক্তি মাসের মধ্যে সপ্তাহ প্রাতঃকালে আহার, সপ্তাহ সায়ংকালে আহার, সপ্তাহ অযাচিত ব্রত অবলম্বন ও একমাস উপবাস করে সে এক বৎসরে এবং যে ব্যক্তি কেবল উপবাসে কালযাপন করে , সে অল্প দিনের মধ্যেই ব্রহ্মহত্যার পাপ থেকে মুক্ত হয়। অশ্বমেধ যজ্ঞ করলেও ব্রহ্মহত্যাপাপ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। শ্রুতি অনুসারে যে ব্যক্তি অশ্বমেধ যজ্ঞ শেষ করে স্নান করে সে সমস্ত পাপ হতে মুক্ত হয়। যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণের জন্য যুদ্ধে প্রাণ ত্যাগ করে তাকে আর ব্রহ্মহত্যা পাপ ভোগ করতে হয় না। সহস্র ধেনু পাত্রসাৎ করতে পারলে ব্রহ্মহত্যা ও অন্যান্য গুরুতর পাপ হতে মুক্তিলাভ করা যায়। (81)

আমরা আগে দেখেছি যে ব্রাহ্মণকে সাধারণত তেমন কোনো শাস্তি দেওয়া হত না কিন্তু মহাভারত হল চরম স্ববিরোধী গ্রন্থ। তাই ব্রাহ্মণের শাস্তির ক্ষেত্রে শিথিলতার ব্যতিক্রমও মহাভারতে পরিলক্ষিত হয়। মহাভারতে বলা হয়েছে, “… যদি ব্রাহ্মণেরা অত্যাচারপরায়ণ হন , তাহলে তাদের শাস্তি দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। এই বিষয়ে মহর্ষি শুক্রাচার্য যেমন বলেছেন , তা একাগ্রমনে শ্রবণ কর। ধর্মপরায়ণ রাজা ব্রাহ্মণকে যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র তুলে আসতে দেখলে তাকে স্বধর্মানুসারে প্রহার করবেন। যিনি বিনাশোন্মুখ ধর্মকে রক্ষা করে থাকেন তিনিই যথার্থ ধার্মিক; সুতরাং অধর্মে প্রবৃত্ত ব্রাহ্মণকে প্রহার করলে অধর্মদোষে দূষিত হতে হয় না, কেন না ক্রোধই সেই প্রহারের কারণ। যাইহোক ব্রাহ্মণকে বিনাশ না করে তার প্রাণ রক্ষা করাই কর্তব্য। ব্রাহ্মণ অপরাধী হলে তাকে রাজ্য হতে নিঃসারিত করিবে। ব্রাহ্মণ সত্য বা মিথ্যা দোষে লিপ্ত হলে তার প্রতি দয়া প্রকাশ করবে। ব্রাহ্মণ ব্রহ্মহত্যা, গুরুতল্পগমন,ভ্রুণ হত্যা অথবা রাজার প্রতি বিদ্বেষ করলে তাকে রাজ্য হতে নিষ্কাশিত করাই কর্তব্য।  কষাঘাত ইত্যাদি দ্বারা ব্রাহ্মণের শারীরিক দণ্ডবিধান করা কোনোক্রমেই বিধেয় নয়। যারা ব্রাহ্মণের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন করে , তারাই রাজার প্রিয় পাত্র হয়ে থাকে।“ ( শান্তি/৫৬)

বদ ব্রাহ্মণ

ব্রাহ্মণেরা সবসময় শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। তাদের পূজা করা হত। তারপরেও  যেসব ব্রাহ্মণেরা ব্রাহ্মণ্যধর্মের নিয়মকানুন মেনে চলতেন না তাদের পছন্দ করা হত না। এই প্রসঙ্গে মহাভারতে বলা হয়েছে, “ … যে ধরণের ব্রাহ্মণকে দান করা উচিত নয় তা বলছি, শোনো। ব্রাহ্মণেরা কৃতবিদ্য হয়েও যদি পতিত, জড়, উন্মত্ত, কুষ্ঠী, ক্লীব, যক্ষ্মারোগী, অপস্মাররোগগ্রস্ত , অন্ধ, চিকিৎসক, দেবল, বৃথানিয়মধারী সোমবিক্রয়ী, ক্রীড়াপরায়ণ, গায়ক, নর্তক, বাদক, বৃথাভাষী, যোদ্ধা, শূদ্রযাজী, শূদ্রাধ্যাপক, শূদ্রদাস, শূদ্রাপতি, বেতনভূক অধ্যাপক ও শিষ্য, স্মৃতি ও বেদোক্ত কর্মবিবর্জিত মৃতনির্যাতক, তস্কর, অজ্ঞাতকুলশীল, গ্রামণী, পুত্রিকাপুত্র, ঋণকর্তা, কুসীদজীবী, প্রাণীজীবি, স্ত্রীজীবি, অস্ত্রজীবী হয়…তাদের শ্রাদ্ধে নিমন্ত্রিত করা কখনো উচিত নয়।“ ( অনুশাসন/২৩)

একইভাবে অন্য স্থানে বলা হয়েছে, “ যে সব ব্রাহ্মণ পণ্ডিতাভিমানী, বেদ নিন্দুক, শ্রুতিবিরোধী, কুতর্কে অনুরক্ত, আক্রোশনিরত, বহুভাষী, সর্বাভিশংকী, মূঢ়, অব্যবস্থিতচিত্ত ও কটুভাষী হয় তাদের স্পর্শ করাও উচিত নয়। পণ্ডিতেরা এমন ব্রাহ্মণদের কুকুরের মত বলে নির্দেশ করে থাকেন। যেমন কুকুরেরা চিৎকার ও অন্যকে বধ করার চেষ্টা করে, তেমনি তারাও কেবল বৃথা বাকজাল বিস্তার ও সমুদায় শাস্ত্রের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করে থাকে। “ ( অনুশাসন/৩১) (82)

(চলবে…)

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ রেফারেন্স দেওয়ার সময় অনুশাসন, শান্তি, বন, সভা ইত্যাদি শব্দ দ্বারা ইত্যাদি পর্ব এবং তার সাথের সংখ্যা দ্বারা ঐ পর্বের অধ্যায় সংখ্যা বোঝানো হয়েছে।

সহায়ক গ্রন্থ-

লেখাটি লিখতে কালিপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত মহাভারতের সাহায্য নেওয়া হয়েছে এবং এই মহাভারত থেকেই রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে। নাস্তিক্য ডট কমের গ্রন্থাগারে কালিপ্রসন্ন সিংহের সম্পূর্ণ মহাভারত পাওয়া যাবে। (লিংক)


তথ্যসূত্র ও টীকা-

(1) “বেদে এইরূপ নির্দিষ্ট আছে যে , ব্রাহ্মণগণ ব্রহ্মার মুখ হইতে, ক্ষত্রিয়েরা বাহু হইতে, বৈশ্যেরা উরুদ্বয় হইতে এবং শূদ্র পাদযুগল হইতে প্রাদুর্ভূত হইয়াছেন। এই বর্ণ চতুষ্টয়ের পরস্পর ভিন্ন বর্ণ সংযোগে অনুলোমজ ও প্রতিলোমজ সঙ্কর জাতি সকল সমুৎপন্ন হইয়াছে।“

( কর্ণ পর্ব/ ত্রয়স্ত্রিংশত্তম অধ্যায়)

“বায়ু কহিলেন, মহারাজ! ব্রাহ্মণ ব্রহ্মার মুখ হইতে , ক্ষত্রিয় বাহু হইতে , বৈশ্য উরুযুগল হইতে এবং চতুর্থ বর্ণ শূদ্র তাহার পাদদেশ হইতে সম্ভূত হইয়াছেন। “ ( শান্তি পর্ব/ দ্বিসপ্ততিতম অধ্যায়)

(2) কৃষ্ণ বলেন তার মুখ ব্রাহ্মণ, বাহু ক্ষত্রিয়, উরু বৈশ্য, পাদদ্বয় শুদ্র হয়েছে। ( বন পর্ব / ঊননবত্যাধিকশততম অধ্যায়) (২০১৮ সালে প্রকাশিত কালিপ্রসন্নের মহাভারতের বনপর্বের অষ্টাশীত্যাধিকশততম অধ্যায়ে এই উক্তিটি রয়েছে)

“তিনি মুখ হইতে ব্রাহ্মণ, বাহুযুগল হইতে ক্ষত্রিয়, উরুদ্বয় হইতে বৈশ্য এবং চরণযুগল হইতে শূদ্র উৎপাদন করিয়াছেন। “

( ভীষ্ম পর্ব/ সপ্তষষ্টিতম অধ্যায়)

সর্বকর্তা লোকের হিতকারী বরপ্রদ ব্রাহ্মণেরা নারায়ণের বাক্য সংযমকালে মুখ হইতে প্রাদুর্ভূত হইয়াছেন। ব্রাহ্মণ হইতে অন্যান্য বর্ণ সমুদায় উৎপন্ন হইয়াছে। ব্রাহ্মণই দেবাসুরগণের সৃষ্টি কর্তা।“

(শান্তি পর্ব/ ত্রিচত্বারিংশদধিকত্রিশততম অধ্যায়)

(3) “বেদ পুরাণ ইতিহাসে কীর্তিত আছে যে, অনন্তর সেই প্রকৃতি সম্ভূত হরি হইতে ব্রহ্মার উৎপত্তি হইল। ব্রহ্মা প্রজা সৃষ্টি করিবার অভিলাষ করিয়া লোচনযুগল হইতে অগ্নি ও চন্দ্রের সৃষ্টি করিলেন। পরে ক্রমে ক্রমে সমস্ত প্রজা সৃষ্টি হইলে , ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় প্রভৃতি বর্ণবিভাগ কল্পিত হইল। চন্দ্র ব্রাহ্মণ এবং অগ্নি ক্ষত্রিয়স্বরূপ হইলেন। ক্ষত্রিয় হইতে ব্রাহ্মণ যে গুণ বিষয়ে প্রধান হইলেন, ইহা সর্বলোক প্রত্যক্ষ। ব্রাহ্মণ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রাণী কেহই নহে। ব্রাহ্মণের মুখে হোম করিলেই প্রদীপ্ত হুতাশনে আহুতি প্রদান করা হয়। “

( শান্তি পর্ব/ ত্রিচত্বারিংশদধিকত্রিশততম অধ্যায়)

(4) “ ব্রাহ্মণগণ শৌচ, ক্ষত্রিয়গণ পরাক্রম, বৈশ্যেরা পৌরুষ এবং শূদ্রেরা সেবা দ্বারা সম্পত্তি লাভ করিয়া থাকেন।“ (অনুশাসন পর্ব/ ষষ্ঠ অধ্যায়)

“ হে রাজরষে! ব্রাহ্মণের প্রতিগ্রহলব্ধ, ক্ষত্রিয়ের জয়প্রাপ্ত, বৈশ্যের ন্যায়রজিত ও শূদ্রের শুশ্রূষা দ্বারা উপার্জিত অর্থ যৎকিঞ্চিত হইলেও ধর্মফলপ্রদ ও প্রশংশনীয় হইয়া থাকে। সর্বদা ত্রিবর্ণের সেবা করা শূদ্রেরই পরম ধর্ম। ব্রাহ্মণ বিপদগ্রস্ত হইয়া ক্ষাত্র ধর্ম বা বৈশ্য ধর্ম আশ্রয় করিলে পতিত হয় না কিন্তু শূদ্র ধর্ম আশ্রয় করিলে তাহারে নিশ্চয়ই পতিত হইতে হয়। শূদ্র ত্রিবর্ণ সেবা দ্বারা জীবিকা নির্বাহে অসমর্থ হইলে বাণিজ্য, পশুপালন বা শিল্প কর্ম করিতে পারে। যে ব্যক্তি কদাপি নাট্য, বহুরূপ প্রদর্শন এবং মদ্য মাংস ও লৌহ চর্মের ব্যবসায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে নাই, তাহার জীবিকারথ ঐ সমুদায় অবলম্বন করা নিতান্ত অকর্তব্য। আর যে ব্যক্তির বহুকাল অবধি ঐ সকল কারয দ্বারা জীবিকা নির্বাহ হইয়া আসিতেছে সে যদি ঐ সমুদায় পরিত্যাগ করিতে পারে, তাহা হইলে তাহার পরম ধর্ম লাভ হয়, সন্দেহ নাই। “ (শান্তি পর্ব/ পঞ্চনবত্যাধিকদ্বিশততম অধ্যায়)

“ হে মহারাজ, ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই তিন বর্ণের সেবা করিয়া জীবিকা নির্বাহ করাই শূদ্রের শ্রেয়স্কর। ওই সেবাদ্বারা শূদ্রেরা সময়ক্রমে বিপুল ধর্ম লাভ করিতে সমর্থ হয়। যদি কোনো শূদ্রের পিতৃপিতামহাদি কখনও কাহারও সেবা না করিয়া থাকে , তথাপি সেবা ভিন্ন অন্য বৃত্তি অবলম্বন করা তাহার কদাপি বিধেয় নহে। সেবাই শূদ্রের পরম ধর্ম। … বৈশ্যগণ সেই দেবতার অর্চনা করিয়া কৃষি গো রক্ষাদি কারযে নিযুক্ত হয়। বৈশ্যের শস্যোতপাদন, ক্ষত্রিয়ের শস্য রক্ষা , ব্রাহ্মণের উপভোগ ও শূদ্রের ক্রোধ ও শঠতা পরিত্যাগ পূর্বক যজ্ঞীয় দ্রব্য আহরণ ও যজ্ঞস্থান মার্জনাদি করাই কর্তব্য। এরূপ হইলে কখনই ধর্ম নষ্ট হয় না, ধর্ম নষ্ট না হইলেই প্রজাগণ সুখে অবস্থান করিতে সমর্থ হয় এবং প্রজাগণ সুখী হইলেই দেবগণের পরম পরিতোষ জন্মে।ফলত নরপতি ধর্মানুসারে প্রজাপালন, ব্রাহ্মণ বেদাধ্যয়ন, বৈশ্য ধনোপারজন, শূদ্র শুশ্রূষা নিরত হইলেই সর্বত্র সম্মানিত হইয়া থাকেন।যে ব্যক্তি এই নিয়মের অন্যথাচরণ করে তাহারে নিশ্চয়ই ধর্ম ভ্রষ্ট হইতে হয়। … ব্রাহ্মণ দমগুণান্বিত, ক্ষত্রিয় বিজয়ী , বৈশ্য ধনী এবং শূদ্র নিয়ত ইহাদের সেবাতৎপর হইলেই সমধিক সম্মানভাজন হইয়া থাকেন।“ (শান্তি পর্ব/ চতুরনবত্যাধিকদ্বিশততম অধ্যায়)

“ স্ব স্ব ধর্মানুসারে কারযানুষ্ঠান করাই সকলের কর্তব্য। ইহলোকে জীবিকানির্বাহারথ ব্রাহ্মণের প্রতিগ্রহ, ক্ষত্রিয়ের করগ্রহণ, বৈশ্যের কৃষ্যাদিকারয , শূদ্রের ব্রাহ্মণাদি বর্ণত্রয়ের সেবা এই চারিপ্রকার উপায় বিহিত হইয়াছে… ভীরু রাজা, মিথ্যাবাদী সর্বভোজী ব্রাহ্মণ, চেষ্টাবিহীন বৈশ্য, অলস শূদ্র, অসচ্চরিত্র বিদ্বান, অসদ্বব্যবহারযুক্ত কুলীন, ব্যভিচারিণী স্ত্রী, রাগযুক্ত যোগী, মূর্খ বক্তা এবং রাজ্যবিহীন বা প্রজার প্রতি স্নেহ শূণ্য নরপতি সকলেরই উপহাসাস্পদ হইয়া থাকে। “  (শান্তি পর্ব/ একনবত্যাধিকদ্বিশততম অধ্যায়)

“ এইরূপে বর্ণ চতুষ্টয় সমুৎপন্ন হইলে ব্রহ্মা এই নিয়ম করিলেন যে, ব্রাহ্মণ সকলের শ্রেষ্ঠ হইয়া ধর্মের রক্ষণাবেক্ষণ , ক্ষত্রিয় পৃথিবীর অধীশ্বর হইয়া নিয়মিত দণ্ডবিধান দ্বারা প্রজাগণের প্রতিপালন, বৈশ্য ধন ধান্যের দ্বারা তিন বর্ণের ভরণপোষণ এবং শূদ্র এই তিন বর্ণের পরিচর্যা করিবে।“ ( শান্তি পর্ব/ দ্বিসপ্ততি তম অধ্যায়)

“ ব্রাহ্মণের জপ, ক্ষত্রিয়ের দেবগণের তৃপ্তি সাধনারথ পশুহিংসা, বৈশ্যের দেব দ্বিজের তৃপ্তিসাধনারথ শস্য উৎপাদন ও শূদ্রের তিন বর্ণের সেবাই যজ্ঞ বলিয়া নির্দিষ্ট আছে।“ (শান্তি পর্ব/ অষ্টত্রিংশদধিকদ্বিশততম অধ্যায়)

(5) “ যেমন দ্বিপদের মধ্যে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ, চতুষ্পদের মধ্যে গো শ্রেষ্ঠ, গুরুজনের মধ্যে পিতা শ্রেষ্ঠ, সেইরূপ স্পর্শবান পদার্থের মধ্যে পুত্র সর্বশ্রেষ্ঠ। “ ( মহাভারত/ আদিপর্ব / ৭৪ অধ্যায়)

“যাবতীয় জন্তুর মধ্যে মনুষ্য, মনুষ্যমধ্যে ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণমধ্যে মন্ত্রজ্ঞই শ্রেষ্ঠ। সর্বভূতের আত্মাভূত বেদশাস্ত্রবিশারদ সর্বজ্ঞ ব্রাহ্মণগণ সতত পরমার্থ অবগত হইয়া থাকেন।“  ( শান্তি পর্ব/ চতুরদশাধিকদ্বিশততম অধ্যায়)

“ দ্রুপদ কহিলেন, হে দ্বিজেন্দ্র নিখিল ভূতের মধ্যে প্রাণী, প্রাণীর মধ্যে বুদ্ধিমান, বুদ্ধিমানের মধ্যে মনুষ্য, মনুষ্যের মধ্যে ব্রাহ্মণ এবং ব্রাহ্মণের মধ্যে বেদজ্ঞ পুরুষেরাই শ্রেষ্ঠ। তন্মধ্যে যাহারা বেদে কৃতবিদ্য হইয়াছেন, তাহারাই শ্রেষ্ঠ; কৃতবুদ্ধি বৈদিকের মধ্যে যাহারা জ্ঞানানুরূপ কারয করেন, তাহারাই শ্রেষ্ঠ, তন্মধ্যে ব্রহ্মবেত্তারাই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলিয়া পরিগণিত হইয়া থাকেন।“ ( উদ্যোগ পর্ব/ পঞ্চম অধ্যায়)

“ তখন পক্ষী কহিল, হে তাপসগণ! চতুষ্পদমধ্যে গোধন , ধাতুদ্রব্য মধ্যে সুবর্ণ, শব্দমধ্যে মন্ত্র এবং দ্বিপদমধ্যে ব্রাহ্মণই শ্রেষ্ঠ।“  ( শান্তি পর্ব/ একাদশ অধ্যায়)

(6) “ ইনি আমার আচারযের প্রিয় পুত্র ও আমার পূজনীয় বিশেষত ব্রাহ্মণ , শত্রুতাপন অর্জুন এইরূপ বিবেচনা করিয়া অশ্বত্থামাকে কৃপা প্রদর্শন পূর্বক পরিত্যাগ করিয়া স্বত্বর কৌরব সেনা সংহারে প্রবৃত্ত হইলেন। “ ( ভীষ্ম পর্ব/ দ্বিসপ্ততিতম অধ্যায়)

“ ভীষ্ম কহিলেন, ধর্মরাজ! … তুমি বেদ বেদাঙ্গ বেত্তা ধর্ম নিষ্ঠ ব্রাহ্মণগণকে দেখিবামাত্র গাত্রোত্থান পূর্বক তাহাদিগের চরণ বন্দন ও অর্চনা করিয়া পুরোহিত সমভিব্যাহারে অন্যান্য কারয সমুদায় সম্পাদনে প্রবৃত্ত হইবে।… তুমি যদি নিতান্ত ধনহীন হও, তথাপি ব্রাহ্মণগণকে ধনবান দেখিয়া বিচলিত হইও না। উহাদিগকে যথাশক্তি ধনদান, সান্ত্বনা ও তাহার রক্ষণাবেক্ষণে তৎপর হইলেই তুমি স্বর্গলাভ করিতে পারিবে।“ ( শান্তি পর্ব/ একসপ্ততিতম অধ্যায়)

“ ব্রাহ্মণগণ পরস্পর পরস্পরের দেবতা স্বরূপ। তাহারা বিবিধ মনোরথ সফল করিবার মানসে নানা প্রকার যজ্ঞের অনুষ্ঠান ও সকলকেই হিতকর উপদেশ প্রদান করেন, এই নিমিত্ত তাহারা দেবগণেরও দেবতা বলিয়া অভিহিত হইয়া থাকেন। … রিক, যজু ও সামবেদবেত্তা ব্রাহ্মণ দেবতার ন্যায় সকলেরই পূজ্য। “ (শান্তি পর্ব/ ষষ্টিতম অধ্যায়)

(7) অনুশাসন পর্ব/ পঞ্চত্রিংশত্তম অধ্যায়

(8) আদি পর্ব/ ৫৬ অধ্যায়

(9) “ যুধিষ্ঠির কহিলেন, পিতামহ! রাজধরমে এমন কোন নিয়ম আছে যাহা কোনোকালে কাহারও লঙ্ঘন করা বিধেয় নহে।

“ভীষ্ম কহিলেন, ধর্মরাজ! তুমি বিদ্যাবৃদ্ধ তপস্যানিরত, সচ্চরিত্র ব্রাহ্মণগণকে নিয়ত সেবা করিবে। উহাই অতি উৎকৃষ্ট পবিত্র ধর্ম। তুমি দেবগণের প্রতি যেরূপ ব্যবহার করিয়া থাক, ব্রাহ্মণগণের প্রতিও সেইরূপ ব্যবহার করা তোমার কর্তব্য। ব্রাহ্মণগণ ক্রুদ্ধ হইলে নানাবিধ অনিষ্ট সাধন করিতে পারেন। উহাদের প্রীতি অমৃততুল্য ও ক্রোধ বিষতুল্য । উহাদের প্রীতি নিবন্ধন লোকের মহীয়সী কীর্তি লাভ হয় এবং উহারা ক্রুদ্ধ হইলে দারুণ ভয় উপস্থিত হইয়া থাকে।“  ( শান্তি পর্ব/ দ্বিচত্বারিংশদধিকশততম অধ্যায়)

(10)   “ ধর্ম সর্বদা সত্য ও ব্রাহ্মণগণে অবস্থান করিতেছে। ব্রাহ্মণগণ ধার্মিক হইলেই বেদজ্ঞ হইয়া থাকেন। বেদ হইতেই যাগ যজ্ঞাদি সুসম্পন্ন হয়। যজ্ঞ দ্বারা দেবগণ পরমপ্রীত হইয়া থাকেন। দেবতারা প্রীত হইয়া প্রতিনিয়ত ইন্দ্রের নিকট প্রজাগণের গুণ কীর্তন করিলে তিনি তাহাদিগের প্রতি প্রসন্ন হইয়া তাহাদিগকে অন্নদান করেন। অন্নই প্রাণীদিগের জীবনধারণের উপায়। অন্ন হইতেই প্রজাগণ প্রাণ ধারণ করিয়া থাকে এবং দণ্ড ক্ষত্রিয় মূর্তি ধারণ পূর্বক প্রতিনিয়ত জাগরিত থাকিয়া তাহাদিগকে রক্ষা করে।“ ( শান্তি পর্ব/ একবিংশত্যাধিক শততম অধ্যায়)

(11) “ পশুগণের বন্ধু পর্জন্য, রাজার বন্ধু মন্ত্রী, স্ত্রীর বন্ধু স্বামী, ব্রাহ্মণের বন্ধু দেব।“ ( উদ্যোগ পর্ব/ ত্রয়স্ত্রিংশত্তম অধ্যায়)

(12) “ তখন হংসরূপী ব্রহ্মা কহিলেন, হে সাধ্যগণ! বেদপাঠ ব্রাহ্মণের দেবত্ব, ব্রত উহাদের সাধুত্ব ও মৃত্যু উহাদের মনুষ্যত্ব সম্পাদন করিয়া থাকে।“ ( শান্তি পর্ব/ ত্রিশততম অধ্যায়)

(13) “ ব্রাহ্মণগণ পরস্পর পরস্পরের দেবতা স্বরূপ। তাহারা বিবিধ মনোরথ সফল করিবার মানসে নানা প্রকার যজ্ঞের অনুষ্ঠান ও সকলকেই হিতকর উপদেশ প্রদান করেন, এই নিমিত্ত তাহারা দেবগণেরও দেবতা বলিয়া অভিহিত হইয়া থাকেন। … রিক, যজু ও সামবেদবেত্তা ব্রাহ্মণ দেবতার ন্যায় সকলেরই পূজ্য।

(14) “ যে অগ্নিরে যজ্ঞের মন্ত্র, হোতা, কর্তা, দেবতা মনুষ্যাদি সমুদায় লোকের হিতসাধক বলিয়া বেদমন্ত্র ও শ্রুতিতে নির্দেশ করিয়াছে, সেই অগ্নি ব্রাহ্মণ বলিয়া অভিহিত হইয়া থাকেন। যেমন মন্ত্র ব্যতিরেকে আহুতি প্রদত্ত ও পুরুষ ব্যতিরেকে তপ অনুষ্ঠিত হয় না , সেইরূপ অগ্নি ব্যতিরেকে দেবতা, বেদ, মনুষ্য ও ঋষিগণের পূজা হয় না, এই নিমিত্ত অগ্নি হোতা বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছেন। মনুষ্যগণের মধ্যে ব্রাহ্মণেরই হোত্রিকারযে অধিকার আছে, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের তদ্বিষয়ে কিছুই অধিকার নাই। এই নিমিত্তই ব্রাহ্মণেরা অগ্নিস্বরূপ।“ ( শান্তি পর্ব/ ত্রিচত্বারিংশদধিকত্রিশততম অধ্যায়)

(15) (মহাভারত/ আদিপর্ব /২৮ অধ্যায়)

(16) অনুশাসন পর্ব/ চতুস্ত্রিংশত্তম অধ্যায়

(17) শান্তি পর্ব/ পঞ্চত্রিংশদধিকশততম অধ্যায়

(18) শল্য পর্ব/ চতুশ্চত্তারিংশত্তম অধ্যায়

(19) অনুশাসন পর্ব/ ত্রয়োবিংশতিতম অধ্যায়

(20) শান্তি পর্ব/ অষ্টাদশাধিকত্রিশততম অধ্যায়

(21) অনুশাসন পর্ব/ চতুস্ত্রিংশত্তম অধ্যায়

(22) “ ব্রাহ্মণগণের তুষ্টি সম্পাদন করিলে দেবতারা সাতিশয় প্রীত ও প্রসন্ন হইয়া থাকেন। ব্রাহ্মণগণের বাক্যবলেই লোকে স্বর্গলোক লাভ করিতে সমর্থ হয়। তুমি পিতৃ, দেব ও ব্রাহ্মণগণকে অর্চনা করিয়া জ্ঞানশূন্য, শ্লেষ্মা ক্লিন্নকলেবর ও ম্রিয়মান হইলে নিঃসন্দেহে অনন্ত পুণ্যলোক প্রাপ্ত হইবে। স্বর্গলাভ প্রত্যাশায় ব্রাহ্মণগণের অর্চনা করিবে, শ্রাদ্ধকালে অনিন্দিত ব্রাহ্মণগণকে ভোজন করাইবে।“ ( বন পর্ব/ একোন দ্বিশততম অধ্যায়)

“কেহই ব্রাহ্মণকে পরিত্যাগ করিয়া এই লোক বা পরলোক জয় করিতে পারে না…” ( বন পর্ব / ষড় বিংশতিতম অধ্যায়)

একমাত্র ব্রাহ্মণ প্রভাবে স্বর্গ ও নরক উভয়ই লাভ হয়ে থাকে।

(23) আমি নারদের মুখে শুনিয়াছি, ইহলোকে ব্রাহ্মণের সেবা করাই পরম পবিত্র ও  উৎকৃষ্ট ধর্ম। ব্রাহ্মণের সেবা করিলে পাপের লেশমাত্রও থাকে না। ব্রাহ্মণ হইতে ক্ষত্রিয়ের মহারথিত্ব , কীর্তি, বুদ্ধি ও সম্পত্তি লাভ হইয়া থাকে। অতুল ঐশ্বর্যের নিমিত্ত সৎকুল সম্ভূত ধর্ম জ্ঞান সম্পন্ন পরম পবিত্র ব্রাহ্মণ গণের সেবা করাই কর্তব্য। ব্রাহ্মণ সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। ব্রাহ্মণগণ যাহারে প্রশংসা করেন, সেই অভ্যুদয়শালী হন। অতএব জিতেন্দ্রিয় ও পবিত্র হইয়া ব্রাহ্মণের আজ্ঞানুবর্তী হওয়া মনুষ্যমাত্রেরই বিধেয়। (অনুশাসন পর্ব/ চতুস্ত্রিংশত্তম অধ্যায়)

(24) অনুশাসন পর্ব/ দ্বাদশাধিকশততম অধ্যায়

(25) অনুশাসন পর্ব/ একপঞ্চাশদধিকশততম অধ্যায়

(26) সবুজ বর্ণ

(27) অন্ডকোশ

(28) শান্তি পর্ব/ ত্রিচত্বারিংশদধিকত্রিশততম অধ্যায়

(29) অনুশাসন পর্ব/ চতুস্ত্রিংশত্তম অধ্যায়

(30) শান্তি পর্ব/ ত্রিচত্বারিংশদধিকত্রিশততম অধ্যায়

(31) শান্তি পর্ব/ ত্রিচত্বারিংশদধিকত্রিশততম অধ্যায়

(32) শান্তি পর্ব/ ত্রিচত্বারিংশদধিকত্রিশততম অধ্যায়

(33) শান্তি পর্ব/ নবতিতম অধ্যায়

(34) অনুশাসন পর্ব/ ত্রয়স্ত্রিংশত্তম অধ্যায়

(35) অনুশাসন পর্ব/ ত্রয়স্ত্রিংশত্তম অধ্যায়

অনুশাসন পর্ব/ পঞ্চত্রিংশত্তম অধ্যায়

(36) অনুশাসন পর্ব/ চতুস্ত্রিংশত্তম অধ্যায়

(37) অনুশাসন পর্ব/ ত্রয়স্ত্রিংশত্তম অধ্যায়

(38) অনুশাসন পর্ব/ পঞ্চত্রিংশত্তম অধ্যায়

(39) অনুশাসন পর্ব/ পঞ্চত্রিংশত্তম অধ্যায়

(40) অনুশাসন পর্ব/ চতুস্ত্রিংশত্তম অধ্যায় 

(41) অনুশাসন পর্ব/ চতুস্ত্রিংশত্তম অধ্যায়

(42) শান্তি পর্ব/ ত্রিনবত্যাধিকশততম অধ্যায়

(43) ( উদ্যোগ /৪৪)

(44) “হে মহাত্মন রুরো! অহিংসা পরম ধর্ম, এই নিমিত্ত ব্রাহ্মণদিগের কখন কোনো জীবহিংসা করা উচিত নহে।বেদে এইরূপ কথিত আছে যে, ব্রাহ্মণেরা সর্বদা শান্তমূর্তি , বেদবেদাংগবেত্তা ও সর্বজীবের অভয়প্রদ হইবেন। অহিংসা-সত্যবাক্য,ক্ষমা ও বেদবাক্য ধারণ এইগুলি ব্রাহ্মণের পরম ধর্ম। আপনি ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণের ক্ষত্রিয় ধর্ম অবলম্বন করা অনুচিত।“ (মহাভারত/ আদিপর্ব/ একাদশ অধ্যায়)

“… আপনি ব্রাহ্মণের ন্যায় দয়াময় হইয়া কি নিমিত্ত ক্ষত্রিয়কূলে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন? ( বন পর্ব / পঞ্চত্রিংশত্তম অধ্যায়)

(45) ( অনুশাসন পর্ব/ দ্বাবিংশতিতম অধ্যায়)

মার্কণ্ডেয় কহিলেন, সহস্র অশ্বমেধ ও সত্যকে এক মানদণ্ডে পরিমাণ করিলে সহস্র অশ্বমেধ সত্যের অর্ধাংশ হইতে পারে কিনা সন্দেহ । অতএব সতত সত্যপরায়ণ হওয়া অপেক্ষা ব্রাহ্মণের শ্রেয়স্কর আর কিছুই নাই। হে ধর্মরাজ! পৃথিবী কাশ্যপ অগ্নি ও মার্কণ্ডেয় ব্রাহ্মণের বিষয়য়ে এইরূপ স্ব স্ব অভিপ্রায় ব্যক্ত করিয়া যথাস্থানে প্রস্থান করিলেন। “ (অনুশাসন পর্ব/ দ্বাবিংশতিতম অধ্যায়)

(46) অনুশাসন পর্ব/ একোনশীতিতম অধ্যায় 

(47) অনুশাসন পর্ব/ অষ্টসপ্ততিতম অধ্যায়

(48) অনুশাসন পর্ব/ সপ্তসপ্ততিতম  অধ্যায়

(49) অনুশাসন পর্ব/ ত্রিসপ্ততি তম অধ্যায়

(50) অনুশাসন পর্ব/ পঞ্চষষ্টিতম অধ্যায়

(51)   অনুশাসন পর্ব/ ষটষষ্টিতম অধ্যায়

(52) অনুশাসন পর্ব/ পঞ্চষষ্টিতম অধ্যায়

(53) অনুশাসন পর্ব/ পঞ্চষষ্টিতম অধ্যায়

(54) অনুশাসন পর্ব/ পঞ্চষষ্টিতম অধ্যায়

(55) অনুশাসন পর্ব/ দ্বিষষ্টিতম অধ্যায়

(56) “ ব্রাহ্মণগণকে প্রতিপালন করিয়া যে ধন উদ্বৃত্ত হইবে তদ্বারা অন্যলোককে প্রতিপালন করা রাজার আবশ্যক। ব্রাহ্মণ যদি ধনহীন হইয়া আত্মরক্ষারথ রাজ্য পরিত্যাগ করিতে ইচ্ছা করেন, তাহা হইলে নরপতি তাহার ও তাহার পত্নীর নিমিত্ত বৃত্তিবিধান করিয়া দিবেন। ব্রাহ্মণ তাহাতেও নিবৃত্ত না হইলে রাজা ব্রাহ্মণ সমাজে গমন পূর্বক তাহারে কহিবেন, মহাশয় আপনি এ স্থান হইতে গমন করিলে আমার রাজ্যস্থ ব্যক্তিগণ আর কাহারে আশ্রয় করিয়া জীবন ধারণ করিবে? এক্ষণে আপনি আমার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করুন। ব্রাহ্মণ ভোগারথী হইয়া রাজ্য পরিত্যাগ করিলে তাহারে ভোগ্যবস্তু প্রদান কর্তব্য বলিয়া স্বীকার করেন, কিন্তু এ বিষয়ে আমার মত নাই। “ ( শান্তি পর্ব/ একোননবতিতম অধ্যায়)

(57) “ ব্রাহ্মণগণকে প্রার্থনানুরূপ বিবিধ ভোগ্য বস্তু ও অলঙ্কার প্রদান, নমস্কার ও পিতার ন্যায় তাহাদিগকে প্রতিপালন করা রাজার অবশ্য কর্তব্য। ইন্দ্র হইতে যেমন জীবগণের মঙ্গল লাভ হয়, তদ্রুপ ব্রাহ্মণ হইতে রাজ্যের মঙ্গল লাভ হইয়া থাকে। “ ( অনুশাসন পর্ব/ চতুস্ত্রিংশত্তম অধ্যায়)

(58) অনুশাসন পর্ব/ দ্বিষষ্টিতম অধ্যায়

(59) অনুশাসন পর্ব/ ত্রয়স্ত্রিংশত্তম অধ্যায়

(60) “ তিনি রাজা ও রাজপুত্রগণকে পরাভব করিয়া হেমালংকার ভূষিত দশলক্ষ কন্যা ব্রাহ্মণগণকে প্রদান করেন।“ ( দ্রোন পর্ব/ ষষ্টিতম অধ্যায়)

“আমরা যদি ব্রাহ্মণগণকে অশ্ব, গো, দাসী, সমলংক্রিত হস্তী, গ্রাম, জনপদ, ক্ষেত্র ও গৃহ প্রদান না করিয়া মাৎসর্য পরায়ণ হই , তাহা হইলে আমাদিগকে নিশ্চয়ই কলি স্বরূপ হইতে হইবে।“ বলদেব ব্রাহ্মণদের অসংখ্য গোরু, ঘোড়া, রত্ন, সোনা, রূপা ও দাস প্রদান করেছিলেন।

(61) “ তিনি কুরুজাংগলে বিস্তীর্ণ যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়া ব্রাহ্মণগণকে অপরিমিত সুবর্ণ দান করিতে লাগিলেন এবং পরিশেষে প্রভূত দক্ষিণা দান সহকারে শত সহস্র অশ্বমেধ, রাজসূয়, পবিত্র ক্ষত্রিয় যজ্ঞ ও অন্যান্য নিত্য নৈমিত্তিক ক্রিয়াকলাপের অনুষ্ঠান করিয়া অভিলষিত গতি লাভ করিলেন।“ ( দ্রোন পর্ব/ ষটপঞ্চাশত্তম অধ্যায়)

“পরম শ্রদ্ধা সহকারে ব্রাহ্মণগণকে এক লক্ষ ছয় অযুত গো, দশ সহস্র অশ্ব ও একলক্ষ নিষ্ক প্রদান করিলেন।“

“বিপ্রগণকে প্রত্যহ ধন প্রদান করিতে আমার যেন শ্রদ্ধা থাকে।“

“যে যে ব্রাহ্মণ যে যে স্থানে থাকিয়া যে যে প্রিয় বস্তু প্রার্থনা করিতেন, মহাত্মা ভাগিরথ সেই সেই ব্রাহ্মণকে সেই সেই স্থানে সেই সেই অর্থ সমুদায় প্রদান করিতেন। ব্রাহ্মণদিগকে তাহার কিছুই অদেয় ছিল না। পরিশেষে ওই মহাত্মা ব্রাহ্মণগণের প্রসাদে ব্রহ্মলোকে গমন করেন।“

(62) যিনি ব্রাহ্মণগণকে সমুদায় পৃথিবী দান করেন , তাহাদের উভয়েরই সমান ফল লাভ হয়। আমরা শ্রবণ করিয়াছি অনেকানেক মহীপাল যজ্ঞানুষ্ঠান পূর্বক ব্রাহ্মণগণকে সমুদায় পৃথিবী দান করিয়া স্বর্গে গমন করিয়াছেন।  ( দ্রোণ পর্ব/ দশাধিক শততম অধ্যায়)

(63) “যিনি ব্রাহ্মণগণের তৃপ্তি সাধনের নিমিত্ত পূতমনে সুপক্ক সুস্বাদু অন্ন প্রদান করেন , তিনিও আমার প্রেমাস্পদ।“ (অনুশাসন পর্ব/ অষ্টম অধ্যায়)

(64) অনুশাসন পর্ব/ চতুষষ্টিতম অধ্যায়

(65) বিধিপূর্বক সুব্রাহ্মণদিগকে অন্নদান করিলে নিঃসন্দেহেই তোমার স্বর্গ লাভ হইবে।“ ( অনুশাসন পর্ব/ ত্রিষষ্টিতম অধ্যায়)

(66) “যে ব্যক্তি আপনার মঙ্গল ইচ্ছা করেন, তিনি পরিবারকে কষ্ট প্রদান করিয়াও ভিক্ষুক ব্রাহ্মণকে অন্নদান করিবেন।যে ব্যক্তি লক্ষণযুক্ত যাচক ব্রাহ্মণকে অন্ন দান করেন তিনি আপনার পরলোকহিতকর পরম নিধি স্থাপন করিয়া রাখেন।… যদি কোনো ব্যক্তি গুরুতর পাপ কর্ম করিয়াও যাচক ব্রাহ্মণকে অন্ন দান করে তাহার সেই পাপ অচিরাৎ বিনষ্ট হইয়া যায়।“

(67) “তোমরা কোনো স্থানে আতিথ্য স্বীকার করিলে গৃহস্থ শিশুদিগের ভোজন না হইলেও অগ্রে তোমাদিগকে ভোজন করাইবে।“ ( অনুশাসন পর্ব/ পঞ্চত্রিংশত্তম অধ্যায়)

(68) শান্তি পর্ব/ ত্রিনবত্যাধিকশততম অধ্যায়

(69) “ সর্বদা ব্রাহ্মণের ন্যায় ব্রহ্মস্ব রক্ষা করা সকল বর্ণেরই অবশ্য কর্তব্য। যে ব্রাহ্মণের অপকার করে তাহারে রাজ্য হইতে নির্বাসিত করাই উচিত। ব্রহ্মস্ব রক্ষা করিলে সমস্ত বিষয়ই রক্ষিত হয়। অতএব ব্রাহ্মণ দিগকে প্রসন্ন করাই রাজার অবশ্য কর্তব্য।“ ( শান্তি পর্ব/ পঞ্চসপ্ততিতম অধ্যায়)

যে ব্যক্তি গুরুর নিমিত্ত আপতকালে ব্রাহ্মণ ভিন্ন অন্য জাতির ধন হরণ করে , তাহারে চৌর্য দোষে দূষিত হইতে হয় না। ( শান্তি পর্ব/ চতুস্ত্রিংশত্তম অধ্যায়)

ব্রাহ্মণের ধন ও পত্নী অপহরণ করা কদাপি বিধেয় নহে। ( অনুশাসন পর্ব/ একোনসপ্ততিতম অধ্যায়)

(70) যাহারা অতিথিপ্রিয় সাগ্নিক যজ্ঞানুষ্ঠান নিরত ব্রাহ্মণের উপাসনা করেন, তাহাদিগকে কখনোই শমনসদনে গমন করিতে হয় না। ব্রাহ্মণের ঋণ পরিশোধ এবং দুর্বল ব্যক্তিদগকে রক্ষা করা রাজার অবশ্য কর্তব্য। ব্রাহ্মণকে ভূমি দান করিয়া প্রত্যাহরণ করা কদাপি বিধেয় নহে। কারণ ওই ক্ষেত্রহরণ নিবন্ধন একান্ত অবসন্ন ব্রাহ্মণদিগের অশ্রুপাত হইলে অপহরতার তিনকুল এককালে ধ্বংস হইয়া যায়।  অনুশাসন পর্ব/ দ্বিষষ্টিতম অধ্যায় 

(71) ( অনুশাসন পর্ব/ নবম অধ্যায়)

(72) ব্রাহ্মণের প্রতি কদাচ দণ্ড বিধান করিবে না। ( শান্তি পর্ব/ একোনষষ্টিতম অধ্যায়)

(73) “ ব্রাহ্মণ, গো, শিশু ও স্ত্রীলোকসকল অবধ্য আর যাহাদিগের অন্ন ভোজন করিতে হয় ও যাহারা শরণাপন্ন হইয়া থাকে , তাহারাও অবধ্য বলিয়া পরিগণিত।“ ( উদ্যোগ পর্ব/ পঞ্চত্রিংশত্তম অধ্যায়)

“ বৃদ্ধ লোকে সর্বদা এইরূপ উপদেশ প্রদান করিয়া থাকেন যে, গো, ব্রাহ্মণ, নৃপ, স্ত্রী, সখা, মাতা, গুরু, এবং মৃতপ্রায়, জড়, অন্ধ, নিদ্রিত , ভীত, মদমত্ত , উন্মত্ত ও অনবহিত ব্যক্তিদিগের প্রতি কদাচ শস্ত্র প্রহার করিবে না।“ ( সৌপ্তিক পর্ব/ ষষ্ঠ অধ্যায়)

(74) “স্বধর্ম নিরত ক্ষত্রিয়গণের লুব্ধ ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণ ভিন্ন অন্য জাতিদিগকে সংহার করা কর্তব্য কর্ম। ব্রাহ্মণ সর্ববর্ণের গুরু ও পূজ্য; অতএব তিনি সর্বপ্রকার পাপে লিপ্ত হইলেও কদাপি কাহারও বধ্য নহেন।“ (উদ্যোগ পর্ব/ একাশীতিতম অধ্যায়)

“ তখন গরুড় মাতৃবাক্য স্মরণ করিয়া কহিলেন, “ হে দ্বিজোত্তম! আমি মুখ ব্যাদান করিতেছি , তুমি অতি সত্বর বহির্গত হও; ব্রাহ্মণ সর্বদা পাপাচারণ তৎপর হইলেও আমার অবধ্য। “ ( আদিপর্ব / ২৯ অধ্যায়)

(75) “ অন্যান্য প্রাণিবধ অপেক্ষা ব্রাহ্মণবধ গুরুতর পাতক।হে ধম্ম! তুমি ব্রাহ্মণ বধ করিতে উদ্যত হওয়াতে এক্ষণে তোমার অন্তরে পাপের সঞ্চার হইয়াছে, অতএব আমি অভিশাপ দিতেছি, তুমি শূদ্র যোনি প্রাপ্ত হইবে। “ ধম্ম তদীয় শাপপ্রভাবে বিদূররূপে শূদ্রযোনিতে জন্মগ্রহণ করেন।” (মহভারত/ আদিপর্ব / ৬৩ অধ্যায়)

(76) “ সর্ব জন্তু বিনাশের পাপ অপেক্ষা ব্রহ্মহত্যার পাপ গুরুতর। মহর্ষিগণ ব্রহ্মহত্যারে মহাপাতক বলিয়া কীর্তন করিয়াছেন। “ ( অনুশাসন পর্ব/ ত্রয়স্ত্রিংশত্তম অধ্যায়)

“ব্রাহ্মণ বধ ও আত্মত্যাগ এই উভয়ের মধ্যে আমার মতে আত্মত্যাগ শ্রেয়ঃ , কারণ অজ্ঞানত ব্রহ্মহত্যা করিলেও উহার পাতক হইতে নিষ্কৃতি নাই। “ (মহাভারত/ আদিপর্ব / ১৬১ অধ্যায়)

“তোমরা যাহা কহিতেছ , এ অতি অসৎ পরামর্শ; ব্রহ্ম হত্যা করা কোনোক্রমেই বিধেয় নহে।“(আদিপর্ব /৩৭ অধ্যায়)

(77) “ হে ভারতবংশাবতংস! ব্রহ্মস্ব হরণ, ব্রহ্মহত্যা, ব্রাহ্মণগণের প্রতি দ্বেষ, তাহাদিগের সহিত বিরোধ, তাহাদিগকে নিন্দায় আনন্দ ও প্রশংসায় ঈর্ষা প্রকাশ , কার্যকালে তাহাদিগকে আহ্বান না করা, এবং তাহারা যঞ্চা করিলে তাহাদিগের প্রতি অসূয়া প্রদর্শন এই আটটি মনুষ্যের বিনাশের পূর্ব নিমিত্ত , প্রাজ্ঞ ব্যক্তি এই সমুদায় দোষ পর্যবেক্ষণ করিয়া উহা পরিত্যাগ করিবেন।“ ( উদ্যোগ পর্ব/ দ্বাত্রিংশত্তম অধ্যায়)

(78) “ অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি ব্রহ্মহত্যা পাপে লিপ্ত হয়। “ ( দ্রোণ পর্ব/ চতুরশীত্যাধিকশততম অধ্যায়)

(79) “ব্রাহ্মণের প্রতি আক্রোশ প্রকাশ করলে ব্রহ্মহত্যার তুল্য পাপ হয়।“ ( অনুশাসন পর্ব/ দ্বাবিংশতিতম অধ্যায়) 

(80) অনুশাসন পর্ব/ চতুরবিংশতিতম অধ্যায়

(81)   শান্তি পর্ব/ পঞ্চত্রিংশত্তম অধ্যায়

 “… তথায় ত্রিরাত্র উপবাসী হইয়া স্নান করিলে ব্রহ্মহত্যাজনিত পাতক হইতে মুক্ত হয়।“

(82) “ কাশ্যপ কহিলেন, যে ব্রাহ্মণ সুশীল না হন , সাঙ্গবেদ , সাংখ্য, পুরাণ ও কৌলিন্য কখনোই তাহার উদ্ধারসাধনে সমর্থ হয় না।

অগ্নি কহিলেন, যে ব্রাহ্মণ অধ্যয়ণশীল হইয়া আপনার পান্ডিত্যাভিমান প্রকাশ করিয়া থাকেন এবং যিনি ইচ্ছা পূর্বক আপনার বিদ্যাবলে অন্যের যশ বিলুপ্ত করেন , তিনি নিশ্চয়ই উৎকৃষ্ট ধর্ম হইতে পরিভ্রষ্ট ও সত্যপ্রয়োগে অসমর্থ হন এবং তাহার কখনোই অক্ষয়লোক লাভ হয় না।

অজিত কেশকম্বলী II

"মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।"

One thought on “মহাভারতে জাতিভেদ: ব্রাহ্মণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *