মনোবিজ্ঞান

Allodoxaphobia বা ভিন্নমতভীতি

পরিচিতি

Allodoxaphobia শব্দটিতে থাকা ফোবিয়া শব্দের সাথে তো আশা করি কমবেশি আপনারা পরিচিতই, বাকি দুইটি শব্দাংশ এসেছে গ্রীক শব্দ allo (যার অর্থ different বা ভিন্ন) এবং dox (যার অর্থ opinion বা মত) থেকে। তাই এটিকে বলা হয় ভিন্নমতভীতি। অনেক সময় এটিকে Opinionphobia বা Fear of Opinions ও বলা হয়ে থাকে, যদিও সেটার জন্য আরেকটি টার্ম ব্যবহার করা হয়- Doxophobia। আপনারা হয়ত খেয়াল করেছেন যে কিছু মানুষ কোনো ধরণের ভিন্নমত সহ্য করতে পারেন না। তারা কোনো বিষয়ে ভিন্নমত শুনলেই হয়ত বিরক্ত হন, ভীত হন, রাগান্বিত হন, বিচলিত হন, অস্বস্তি বা অসুস্থ বোধ করেন কিংবা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আসলে ভিন্নমতের প্রতি এক ধরণের ভীতি থেকেই তারা এমনটি করেন। ভিন্নমতের প্রতি এই অযৌক্তিক ভীতিকে বলা হয় এলোডক্সাফোবিয়া।

Fear of Opinions Phobia - Allodoxaphobia
Allodoxaphobia

এটি আর দশটি মানসিক সমস্যার মতই বেশিরভাগ সময়ই ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে এবং এটাও আসলে বিভিন্ন ঘটনার রেসপন্স হিসেবেই মানুষের মধ্যে দানা বাঁধে তার অজান্তেই। যেমন ধরুন আপনার একজন বন্ধু তার শারীরিক গঠন, গায়ের রঙ, বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক অবস্থান, পোশাক পরিচ্ছদ, ব্যক্তিগত বিশ্বাস, খাদ্যাভ্যাস, পেশা, অযোগ্যতা বা যে কোনো বিষয়ে নিয়মিত অন্য বন্ধুদের দ্বারা সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছে। আপনারা হয়ত নেহাত মজা হিসেবেই এটিকে তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না। কিন্তু দিনের পর দিন এভাবে বুলিং এর শিকার হতে হতে সে একটা সময় স্বাভাবিক কথাবার্তাকেও ধরে নেবে তাকে হয়ত বুলিং করা হচ্ছে বা হবে। এভাবেই তার মধ্যে এক ধরণের ভীতি বাসা বাঁধবে যেটাতে আসলে তার নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।

লক্ষণ

নিম্নবর্ণিত লক্ষণসমূহ দেখলে বুঝতে পারবেন যে কারও মাঝে এই ভীতি রয়েছে-

  • ভাল হোক মন্দ হোক কারও মতামত শুনলেই রেগে যাওয়া
  • আত্মসম্মানহীনতা বা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা
  • হাতের তালু ঘামা
  • ঘন ও অগভীর নিঃশ্বাস
  • হৃদস্পন্দন গতি বেড়ে যাওয়া বা বুক ধড়ফড় করা
  • হাত, পা বা বিভিন্ন অঙ্গের পেশীতে টান অনুভব করা বা কাঁপুনি
  • বমি বমি ভাব হতে পারে
  • কিছু ক্ষেত্রে Flight-or-Fight Response এমনকি প্যানিক এটাক হয়

কারণ

নির্দিষ্ট কোনো কারণে এই ভীতি তৈরি হয় বলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। সামাজিকভাবে হেয় হওয়া, অতীতের কোনো এক তীব্র ট্রমাটিক ইভেন্ট বা উপর্যুপরি নিপীড়ন এর কারণেই সবচাইতে বেশি মানুষ এ সমস্যায় ভোগেন। নানা কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয় যেমন-

  • অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা থাকলে
  • কোনও ধরণের ট্রমায় ভুগলে
  • নিজের বা পরিবারে কারও মানসিক সমস্যা থাকলে
  • কোনও ধরণের Anxiety Disorder থাকলে
  • Genetic Predisposition থাকলে
  • ডিপ্রেশনে ভুগলে
  • অনলাইনে অতিরিক্ত পরিমাণে সংবেদনশীল কন্টেন্ট দেখলে
  • মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ সমালোচনা বা বিরোধিতার মুখোমুখি হলে

প্রতিকার

যে কোনো ধরণের মানসিক সমস্যার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ধাপই হচ্ছে মূল কারণ খুঁজে বের করা। অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা থেরাপিস্টদের তত্ত্বাবধানে মূলত নিম্নবর্ণিত উপায়ে এটি দূর করা যেতে পারে-
ক্যাফেইন বা ধূমপান কমিয়ে দেয়া
মূল কারণ অনুসন্ধানের ভিত্তিতে নানা রকম থেরাপি নেয়া
অনেক ক্ষেত্রেই Anti-anxiety Meds বা Antidepressants এর মত সাইকিয়াট্রিক মেডিকেশন দ্বারা উপসর্গ গুলোর তীব্রতা কমানো গেলেও মূল কারণের প্রতিকার না করলে পুরোপুরি সুস্থ হয়না।

এই ক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি কাজে আসে পরিবারের বা কাছের লোকজন। প্রথম ও প্রধান কাজই হচ্ছে তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা। এর জন্য সবসময় তাকে অনুভব করাতে হবে যে পরিবেশ তার অনুকূলে রয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে এবং তাকে সমর্থন জুগিয়ে তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা যায়। ধীরে ধীরে খুবই অল্প পরিমাণে নতুন মতামতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে ঐ ব্যক্তি যদি কোনোভাবে অনুভব করতে পারে যে পরিবেশ পূর্ণরূপে তার অনুকূলে নেই তাহলে তার অজান্তেই ভয় কাজ করতে পারে। তাই ভালবাসা, হাসিখুশি আলাপ আলোচনা দিয়ে তাকে উৎফুল্ল রাখার চেষ্টা করতে হবে।

কোনোভাবেই অভিজ্ঞদের ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো ধরণের থেরাপি দেয়া বিশেষত Exposure Therapy দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ হিতে বিপরীত হবার সম্ভবনা এসব ক্ষেত্রে অনেক বেশি থাকে। এক্সপোজর থেরাপিতে সাধারণত যেই সকল বিষয়ের প্রতি ভীতি থাকে সেই সমস্ত বিষয়ের সাথে উপর্যপুরি এক্সপেরিয়েন্স করানো হয় যেমন এক্ষেত্রে ভিন্নমতের সাথে। কিন্তু এতে অনেক সময়ই ভীতি কেটে যাবার বদলে আরও বেশি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

তথ্যসূত্র

এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন,
Allodoxaphobia (Fear of Opinions)
Fear of Opinions Phobia – Allodoxaphobia
Allodoxaphobia

2 thoughts on “Allodoxaphobia বা ভিন্নমতভীতি

  • আমার বন্ধুকে যে যখন প্রশ্ন করি যে সে ধর্ম বলতে কি বোঝে? বা তার দৃষ্টিতে ধর্ম কি? সে উত্তর দেয় “আমি এ বিষয় নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না”। সে অনায়াসে আইফেল টাওয়ার বা বৃহস্পতি গ্রহের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারে, কিন্তু ধর্ম, সৃষ্টিকর্তা কে নয়। এখানেও কিন্তু একটা ভয় কাজ করে তার ভিতরে। এটাও কি Allodoxaphobia?

    Reply
  • নীল আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
    না এটা নয়। এটা তার বায়াসনেস।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *