গেলমান বা প্রমোদ বালক প্রসঙ্গে
ভূমিকা
ভোগবিলাস এবং সেবাযত্নের জন্য হেরেমে অসংখ্য সুন্দরী নারীর পাশাপাশি গেলমান বা প্রমোদ বালক রাখা একটি প্রাচীন রাজা মহারাজা এবং নবাব বাদশাহদের প্রথা। অত্যন্ত অসভ্য এবং বর্বর এই পুরনো প্রথাকে আমরা এখনো যে সমাজ থেকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে পেরেছি তা নয়। প্রাচীনকালে রাজাবাদশাহরা বা জমিদারগণ শিশুকিশোরদের দিয়ে তাদের আরাম আয়েশ ভোগ বিলাসের জন্য, বিনোদন ও উপভোগের জন্য ব্যবহার করতো, যৌনকর্মের কাজেও ব্যবহার করতো (যাদেরকে সমাজ নাম দিয়েছিল ঘেটুপুত্র)। প্রাচীনকালের বিভিন্ন কবিতায়, সাহিত্যে, চিত্রকলায় রাজা বাদশাহদের জন্য হেরেমে সুন্দরী নারী ছাড়াও তাই দাড়িগোঁফহীন অল্পবয়সী সুন্দর চেহারার কিছু প্রমোদ বালকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তারা যে শুধু রাজা বাদশাহদের হাত পা টিপে দিতো তাই নয়, আরো অনেক কাজই তাদের করতে হতো। এই কিছুদিন আগে হুমায়ুন আহমেদের একটি সিনেমা বের হয়েছিল, ঘেটুপুত্র কমলা। আপনারা অনেকেই সিনেমাটি দেখেছেন। পুরনো দিনে জমিদার বা রাজা বাদশাহদের জন্য এগুলো খুবই স্বাভাবিক বিষয় বলেই গণ্য হতো। একজন বালকের জন্য যেই সময়টা খেলাধুলার, শৈশবের আনন্দ উপভোগ করার, সেই সময়টা তাদের কাটাতে হতো রাজা বাদশাহদের মনোরঞ্চন করে, তাদের বিকৃত যৌন চাহিদা পুরণ করে। বর্তমান সময়ে এগুলো আইনত নিষিদ্ধ হলেও, প্রাচীনকালে বা মধ্যযুগেও এগুলো বেশ খোলামেলাভাবেই বিলাসী ধনবান ব্যক্তিগণ চর্চা করতেন।
শিশুশ্রম কাকে বলে?
সেই প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতায় শিশুশ্রম দেখতে পাওয়া যায়। আজকের দিনে কোন সভ্য দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি সিংহাসনে বসে থাকে, আর কোন শিশু যদি তাকে পানির গ্লাস বা মদের পেয়ালা এনে দেয়, হাত পা টিপে দেয়, তাহলে কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে। সেই প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট যেই হোক না কেন, তাকে পদত্যাগ করতে হবে। আজকের দিনে সেইসব আর চলে না। তারপরেও, আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমাদের দেশের খুব স্বাভাবিক সংস্কৃতি ছিল, আমাদের বাবা চাচা দাদা মামা বা বড় ভাই, তাদের নানা ধরণের কাজকর্ম করে দেয়া। যেমন আমি মাঝে মাঝে আমার বাবার পা টিপে দিতাম। আমি নিশ্চিত অনেকেই স্কুল বা মাদ্রাসার শিক্ষকদের মাথা টিপে দেয়া, হাত পা টিপে দেয়া, পিঠ টিপে দেয়া, এই ধরণের কাজ করেছেন। দোকানে যাওয়া, বাজারে যাওয়া, এগুলো অনেক কাজই আমাদেরই করতে হতো। আবার অনেক পরিবারে বাচ্চাদের দিয়ে আরো বেশী পরিশ্রমের কাজ করায়। মনে রাখা জরুরি যে, পরিবারের কিছু কাজ করে দেয়া আর কোন কাজে শ্রম দেয়া কিন্তু ভিন্ন বিষয়। বাচ্চাদের অবশ্যই ছোটখাটো কাজ শেখানো জরুরি। নিজের কাজটি একটি বাচ্চা যেন নিজেরাই করতে পারে, নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা বা নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার শিক্ষাটি পারিবারিকভাবে ছোটবেলা থেকেই দেয়া উচিত। কিন্তু আমরা সেই বিষয়ে আলাপ করছি না। আপনি কোন বাচ্চার পিতা নন, মাতা নন, এরকম বাচ্চাকে দিয়ে সভ্য সমাজে আপনি কোন কাজই করাতে পারবেন না। তা আপনি ঐ বাচ্চাকে যতই আদর করেন না কেন। তাদের দিয়ে সামান্য কোন কাজ করানো মাত্রই আপনাকে মামলার সম্মুখীন হতে হবে। তাদের দিয়ে বাসার কাজকর্ম করানো তো অনেক দূরের বিষয়।
শুরুতেই জেনে নেয়া প্রয়োজন, শিশুশ্রম কাকে বলে। জন্মের সাথে সাথে একটি শিশু যেই সকল অধিকার প্রাপ্ত হয়, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, তার খেলাধুলা, পড়ালেখা, স্বাস্থ্য, সুন্দর শৈশব কাটবার জন্য যা প্রয়োজন সেগুলো। শিশুদের শৈশবের আনন্দময় জীবন থেকে বঞ্চিত করে তাদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করা কিংবা তাদের দাস হিসেবে ব্যবহার, গৃহকর্মে নিয়োজিত করা কিংবা যৌনকাজে নিয়োজিত করা বর্তমান সকল সভ্য দেশেই দণ্ডনীয় অপরাধ। এমনকি, কোন স্কুলে বা মাদ্রাসায় যদি শিক্ষক কোন শিশুকে দিয়ে কাজ করায়, গা হাত পা টেপায়, রাতের বেলা নিজ কক্ষে ডাকে, তার জন্য পান-সিগারেট এনে দিতে বলে, এটা সেটা এনে দেয়ার হুকুম দেয়, তাকে ঘর মুছতে বা এই ধরণের কাজে বাধ্য করে, সেটিও সভ্য দেশগুলোতে দণ্ডনীয় অপরাধের পর্যায়ে পরে। যদিও আমাদের দেশে প্রধানত মাদ্রাসাগুলোতে এই আইনগুলোর তোয়াক্কা করা হয় না। বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক দুরবস্থা হচ্ছে শিশু শ্রমের প্রথম ও প্রধান কারণ। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, লেখাপড়ার খরচ দিতে না পেরে এবং সংসারের অসচ্ছলতার গ্লানি একজন মা-বাবাকে বাধ্য করে তার সন্তানকে শ্রমে নিযুক্ত করতে। এরকম পরিস্থিতিতে শিশুশ্রম বিষয়ক আইন ও নীতিমালাগুলো অনেক সময়ই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় না। কিন্তু সেই সমস্যাটি বাদ দিলে, শিশুদের শ্রমমূলক কাজে নিয়োজিত করা বাংলাদেশ জাতীয় শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী শিশু শ্রমের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য এবং এটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।
দুনিয়ায় হারাম, জান্নাতে হালাল
ইসলামে পৃথিবীতে একই সাথে চার স্ত্রীর অধিক রাখা হারাম করা হয়েছে। কিন্তু জান্নাতে সে অসংখ্য হুর পাবে, তাদের সাথে সঙ্গমও করবে। এ থেকে বোঝা যায়, দুনিয়াতে যা হারাম, জান্নাতে তা হালাল। আবার, স্বর্ণ এবং রেশমী বস্ত্র পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে।
আল-লুলু ওয়াল মারজান
৩৭/ পোষাক ও অলঙ্কার
পরিচ্ছেদঃ ৩৭/২. পুরুষ ও মহিলাদের জন্য স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্র ব্যবহার হারাম এবং স্বর্ণের আংটি ও রেশমী বস্ত্ৰ পুরুষের জন্য হারাম ও তা মহিলাদের জন্য বৈধ এবং রেশমী দ্বারা নকশা করা যার পরিমাণ চার আঙ্গুলের বেশী নয় তা পুরুষের জন্য বৈধ।
১৩৪৩. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। শু’বাহ (রহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এ কথা কি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত? তিনি জোর দিয়ে বললেনঃ হ্যাঁ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী কাপড় পরিধান করবে, সে আখিরাতে তা কখনও পরিধান করতে পারবে না।
সহীহুল বুখারী, পৰ্ব ৭৭ : পোশাক, অধ্যায় ২৫, হাঃ ৫৮৩২; মুসলিম, পর্ব ৩৭ : পোষাক ও অলঙ্কার, অধ্যায় হাঃ ৬০৭৩
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
আবার, জান্নাতে সেই একই স্বর্ণ এবং রেশমী বস্ত্র হালাল করা হয়েছে। সূরা হাজ্জের ২৩ নম্বর আয়াত, সূরা ফাত্বিরের ৩৩ নম্বর আয়াত, সূরা কাহফ এর ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে, আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন আর মুক্তা দিয়ে আর সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের।
Taisirul Quran
যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণ কংকন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোশাক পরিচ্ছদ হবে রেশমের।
Sheikh Mujibur Rahman
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তাদেরকে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং যেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।
Rawai Al-bayan
নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা [১] এবং সেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের [২]।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
অর্থাৎ, দুনিয়াতে যে বিষয়গুলো হারাম, সেগুলো জান্নাতে হালাল হয়ে যাবে। আল্লাহ পাক সেই ঘোষণাই দিয়েছে।
কোরআনে গেলমান বা প্রমোদ বালক
প্রাচীনকালের বিভিন্ন সাহিত্যে যেভাবে বিলাসী জীবনযাপনের অংশ হিসেবে হেরেমভর্তি সুন্দরী যুবতী নারীর কথা বলা আছে, একইভাবে গেলমান বা শিশুকিশোর প্রমোদ বালকদের কথাও বলা আছে। ১৪০০ বছর আগে ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেও আরবের সাহিত্যে বা কবিতায় এই ধরণের অনেককিছুরই প্রমাণ পাওয়া যায়। একইভাবে, কোরআনেও জান্নাত বা বিশ্বাসীদের অনন্ত যৌনাচার আর ভোগবিলাসের স্থানে এই নেয়ামতগুলোর বর্ণনায় তিন জায়গাতে গেলমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে,
তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা।
পানপাত্র কুঁজা ও খাঁটি সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে নিয়ে,
[ সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ১৭–১৮ ]
সুরক্ষিত মোতিসদৃশ কিশোররা তাদের সেবায় ঘুরাফেরা করবে।
[ সুরা : তুর, আয়াত : ২৪ ]
তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা।
[ সুরা : দাহর, আয়াত : ১৯ ]
অনেক ইসলামিস্টই বলার চেষ্টা করবেন যে, ঐসকল গেলমান বা প্রমোদ বালকদের সাথে যৌনকর্মের কথা কোরআন হাদিসে বলা নেই। কিন্তু সুন্দরী গোলাকার স্তনের হুর এবং মুক্তার মত সুন্দর চির কিশোর বালক কী কাজে লাগে, সেগুলোর ইঙ্গিত তো পরিষ্কার। যেখানে জান্নাত হচ্ছে অনন্ত ভোগ বিলাস আর আরাম আয়েশের জায়গা।
গেলমান লোভ এবং চার্চ ও মাদ্রাসাগুলো
প্রায়ই এমন খবর শোনা যায়, মাদ্রাসায় শিশুকামিতার ছড়াছড়ি। অমুক মাদ্রাসার অমুক ইমাম, তমুক মাদ্রাসার তমুক হুজুর মাদ্রাসার শিশুদের ধর্ষণ করেছে। আবার খ্রিস্টানদের চার্চের অবস্থায় একই রকম। হাজার হাজার ফাদারের নামে ছেলে শিশু বলৎকারের অভিযোগ। ইসলাম ধর্মে জান্নাতের যেই বিবরণ রয়েছে, যেখানে ঈমানদার মানুষের স্থান হবে, সুখ-সমৃদ্ধে ভরপুর থাকবে, সেখানে ‘গেলমানের’ (শিশুকিশোর, যারা হবে সুরক্ষিত মনিমুক্তার মতো সুদর্শন) ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে৷ ঈশ্বরের এই অল্পবয়সী বাচ্চা ছেলে সেবক বা প্রমোদ বালক দেয়ার লোভ দেখাবার পেছনে কারণ কী? যেই জান্নাতে সব আপনা আপনি হয়ে যায়, সেখানে এইসব অপ্রাপ্তবয়ষ্ক সেবাদাসের কেন? এবং এগুলো কী মাদ্রাসার হুজুর বা চার্চের ফাদারদের অবচেতনভাবে শিশু কিশোরদের প্রতি আগ্রহী করে তুলছে না? বিকৃতরূচির মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছে না?
জান্নাতে গেলমান বা সেবকের কী কাজ?
ইসলামে জান্নাতের বিবরণ থেকে আমরা সকলেই কমবেশি জানি, বেহেশতে জান্নাতিগণ যা খেতে চাইবেন সেইসবই চলে আসবে। সেখানে জান্নাতিদের পেশাব পায়খানার কোন বালাই থাকবে না। সবকিছুই থাকবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। নগরায়ন, পয়নিষ্কাশন, সরকারী অফিস, থানাপুলিশ ইত্যাদি সেখানে অপ্রয়োজনীয়। খাবার রান্না করা, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা, বাজারসদাই করা, চাকরি বাকরি করে অর্থ উপার্জন, এই সবকিছুই সেখানে অর্থহীন। সবকিছুরই যথেষ্ট মজুদ থাকবে এবং চাওয়ামাত্রই সব হাজির হবে। এরকম অবস্থায়, মনিমুক্তোর মত সুন্দর শিশু সেবক বা গেলমান বা প্রমোদ বালকদের কাজ কী হবে, সেটি খুবই চিন্তার বিষয়।
যেমন ধরুন, কোরআনে জান্নাতের হুরীদের বর্ণনায় বলা আছে, হুরীগণ হবেন উন্নত স্তনের অধিকারী। সেই স্তন হবে গোলাকার এবং উন্নত। কিন্তু সেই স্তন দিয়ে কী করা হবে, তা কিন্তু কোরআনের কোথায় কিছু বলা নেই। কিন্তু বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রই বোঝেন, ঐ স্তন দিয়ে মুমিন জান্নাতিগণ কী করবেন। ঠিক একইভাবে, বলা না থাকলেও প্রমোদ বালক, যারা মুক্তোর মত সুন্দর, উজ্জ্বল, তাদের দিয়ে কী করা হবে, তা সহজেই অনুমেয়। জান্নাতি পুরুষগণ নিশ্চয়ই উন্নত এবং গোলাকার স্তন দিয়ে ফুটবল খেলবে না, তাই না? আসুন কোরআনের আয়াত এবং তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে তার ব্যাখ্যা জেনে নিইঃ


প্রাচীনকালে রাজা বাদশাহদের বিলাসী জীবনযাপন লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেই সব রাজা বাদশাহদের গা টেপানো, পানপাত্র ভর্তি করে দেয়া, খাবার দাবার এনে দেয়া, এইধরণের কাজের জন্য তারা শিশু কিশোরদের ব্যবহার করতো। শিশু সেবকদের সেইখানে থাকার বিষয়টি যার মাথা থেকে বের হয়েছে, সে যে প্রাচীনকালের রাজাবাদশাহদের বিলাসী জীবনযাপনকে মাথায় রেখেই এই চিন্তা করেছেন, তা বলাই বাহুল্য। নবী মুহাম্মদ বর্তমান সময়ে বাঙলাদেশে জন্ম নিলে হয়তো মুসা বিন শমসেরের বিলাসী জীবন যাপন দেখে জান্নাতের কল্পনা সেভাবেই করতেন।
কোরআনের আয়াতগুলোয় জান্নাতবাসীদের সেবায় লিপ্ত চিরকিশোরদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আয়াতগুলোতে দুটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, ‘গেলমান’ বা ‘গিলমান’ ও ‘বিলদান’। আরবিতে ‘গেলমান’ বা ‘গিলমান’ শব্দটি ‘গোলাম’-এর বহুবচন এবং ‘বিলদান’ শব্দটি ‘ওয়ালাদ’-এর বহুবচন, দুটির অর্থই হলো বালক। এবারে তাফসীর গ্রন্থ থেকে আয়াতগুলোর অর্থ পড়ে দেখি।
তাফসীরে ইবনে আব্বাস



তাফসীরে ইবনে কাসীর







তাফসীরে মাযহারী


উপসংহার
আগের দিনের মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের সাথে বর্তমান সময়ের মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের বস্তর ফারাক। আমি বাঙলাদেশে থাকা অবস্থাতেই শিশুদের কাজ করতে দেখেছি, বর্তমানে জার্মানিতে সেরকম কাজ কোন শিশুকে দিয়ে করালে আমার জেল হয়ে যাবে। অতীতে মানুষের যেরকম মনমানসিকতা ছিল, অনেকটা তার ওপর ভিত্তি করেই কোরআন এবং হাদিস, সেই সাথে তাফসীরগুলো লিখিত হয়েছে। ধর্মগ্রন্থগুলো পড়লে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এগুলো ঐশ্বরিক বাণী হওয়া তো দূরের বিষয়, এখনকার সময়ের সবচাইতে বাজে চরিত্রের লোকের চাইতেও তাদের মন মানসিকতা খারাপ। আমরা আমাদের অনেকের বাড়িতেই বয়ষ্ক মানুষ দেখি, যারা মেয়েদের পড়ালেখা করতে দিতে চান না, বা এমন এমন প্রাচীনপন্থী কথা বলেন যা শুনলে তাদের রীতিমত অসভ্য মানুষই মনে হয়। এই সভ্য সমাজেও যদি কেউ ঐ একই পুরনো দিনের মন মানসিকতা লালন করে, সেটি খুবই দুঃখজনক বিষয় হয়ে ওঠে।
হাজার হাজার মুক্তোর মত সুন্দর, উজ্জ্বল, অল্পবয়সী বালক দাস বা গেলমান থাকা সেই প্রাচীন রাজা বাদশাহদের জীবনকেই বারবার মনে করিয়ে দেয়। একজন আধুনিক এবং সভ্য মানুষ কিছুতেই এরকম চিন্তার সাথে নিজেকে মেলাতে পারবেন না। এমনকি, জান্নাতে গিয়ে সেইসব বালকদের দেখলেও একজন সভ্য মানুষের আঁতকে ওঠার কথা। আমাদের মুসলিম ভাই বোনগণ কীভাবে এইসব প্রাচীনপন্থী এবং অসভ্য ধ্যান ধারনাকে মহাবিশ্বের সবচাইতে নৈতিক এবং মানবিক বিষয় বলে মনে করেন, সেটি এক বিস্ময়কর ব্যাপার।
গেলমান নিয়ে ইসলামবিরোধীদের অশালীন অভিযোগের জবাবঃ
https://response-to-anti-islam.com/show/জান্নাতে-কি-আসলেই-সমকাম-থাকবে–/179
আপনাদের লিখাটা পড়ে নতুন কিছু পেলাম না। সেই পুরনো কুযুক্তি।
আপনিই বলছেন, ” দুনিয়াতে অনেক কিছুই অবৈধ যেটা জান্নাতবাসীদের জন্য বৈধ হবে (রেশমের কাপড় পরা,শরাব পান করা”
তো দুনিয়ার নিয়ম তো জান্নাতে প্রযোয্য নয়। কেন একথা বারংবার ভুলে যাচ্ছেন।
”সি-ভিটা কোম্পানী থেকে বলা হলো, যারা তাদের পণ্য সবচেয়ে বেশী কিনবে তাদের মধ্য থেকে শীর্ষ দশ বিজয়ীকে তারা সারাদিন ফ্রী শরবত খাওয়াবে। আরো বলা হলো ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েরা তাদের শরবত পান করাবে। এখন এই ঘোষণা থেকে কার ও মনে কি এই ধারণা জন্মাবে যে, বিজয়ীগণ সেই ছোট্ট ছেলে-মেয়েগুলোর সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করবে?”
পুনরায়, আপনি দুনিয়ার নিয়মে জান্নাতের মান নির্ণয় করছেন। আমার দৃষ্টিতে এটা দৃষ্টিকটু।
আবু নোয়াছের পুরো জীবনী নিয়ে পড়ে থাকলে আপনি এমন রেফারেন্স দিতেন না।
**************
এখন আপনার কাছে জানার ইচ্ছে,
জান্নাতে গেলমারগণ এর কাজ কি কি?একটু জানাবেন।
সুন্দর। আরো বেশি বেশি করে প্রচার দরকার।
প্রশ্ন হলো, জান্নাতে যখন চাহিবা মাত্র সব হাজির হয়, তো আবার কামলা রাখার দরকার কেনো হলো?
কোরআন যে নবী মোহাম্মদের মুখের কথা মাত্র তা
নিচের লিঙ্কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে watch করুন
https://youtu.be/zU9THMg_sI4
আসিফ, আমি আধুনিক ইতিহাসের ছাত্র। আপনাদের ওয়েবসাইটে একটি লেখা পাঠাতে চাই। আউটলুক এক্সপ্রেস কিছুতেই কাজ করে না আমার কম্পিউটারে। আপনাদের জিমেল বা ইয়াহু দিয়ে মেল পাঠানো যাবে? আমি বাংলার তথা দক্ষিণ এশিয়ার ইসলাম ও তার ইতিহাস-রাজনিতির কিছু দিক তুলে ধরতে চাই, আপনারা বিবেচনা করে বাতিল বা গ্রহণ করবেন।
নাস্তিকরা কত বড় জ্ঞানপাপী এই লেখাটা পড়ে বুঝলাম।
লেখক এর কাছে আমার প্রশ্ন? কোন একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন অন্য দেশে যায়।
তখন তাদেরকে আমন্ত্রণ স্বাগতম জানাতে সর্বপ্রথম বিমান থেকে নামার পরে
কাদেরকে সামনে রাখা হয়? শিশু-কিশোরদের। সুদর্শন শিশু-কিশোরদের হাতে ফুল দেওয়া হয় এবং তারা আগত মেহমানকে স্বাগতম জানায়।
এখন আমার প্রশ্ন হল ওই শিশু-কিশোর গুলোকে কি সহবাস করার জন্য রাখে?!
আসলে মূল কথা হলো যার মন-মানসিকতা রুচি যেরকম সে কোন বিষয়কে সেইভাবেই চিন্তা করবে এটাই স্বাভাবিক।
লেখক এখানে বিষয়টাকে পূর্বের রাজা বাদশাদের সাথে মিলালো।
অথচ আমি দেখতেছি বর্তমান আধুনিক বিশ্বে এই কাজটাকে কত সম্মানের সাথে করা হয়
অর্থাৎ কোন বিশেষ অতিথি আগমন কালে তাকে শিশু-কিশোর দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো।
যে সমস্ত হুরদের কে আল্লাহ সহবাস করার জন্য দিবেন তাদের সাথে স্বয়ং আল্লাহ জান্নাতবাসীর বিভাহ পড়াবেন।
তাহলে সেখানে এদের সাথে এই সমস্ত কাজ করার প্রশ্নইত ওঠে না।
অনেকদিন যাবত গেলমান নিয়ে আমার খুব কৌতূহল। ছি! যাইহোক অবশেষে আপনার লেখাটি পড়ে সম্পুর্ন অবগত হলাম। আমি এমন একটা রাষ্ট্রে থাকি যেখানে এসব কথা আলোচনা করা মৃত্যুর সামি। যদি অভয় দেন তবে কিছু তথ্য জানাতে চাই।
অসম্ভব রকমের ভাল লাগল মনে হল গীতা পাঠ করলাম।
যারা কোরআন হাদিসে উল্লেখিত গোলমানে বিশ্বাসী মানসম্পন্নধারী লোক তারা একবার হলেও যেন চিন্তা করে যে তাদের নিজেদেরও বাসায়ও বাচ্চা ছেলে- মেয়ে আছে, তাই গোলমানের আকাঙ্ক্ষা করার আগে তারা অবশ্যই নিজের ছেলে-মেয়েদের পরের বাড়ীতে দিয়ে যেন গোলমানের প্রাক্ট্রিস করিয়ে নেয়।
আপনার গীতা পাঠ করতে ভালো লাগে জেনে ভালো লাগলো।
তবে বেজন্মা মহম্মদের লেখা কোরআন আর মহান হিন্দু সাধুদের লেখা গীতার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ..