ইসলামের আল্লাহ কি নিরাকার?

Print Friendly, PDF & Email

ভূমিকা

আমার জন্ম হয়েছিল একটি মুসলিম পরিবারে। মুসলিম পরিবারে জন্ম হওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই আমাকে মানুষ করা হয়েছে মুসলমান হিসেবে। আসলে কেউ কোনদিন জানতেও চায় নি, আমি কোন ধর্মকে সত্য মনে করি। যুক্তি বুদ্ধি বিচার বিবেচনা দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তৈরি হওয়ার আগেই আমার ওপর একটি ধর্ম চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল পরিবার থেকেই। সেই ছোটবেলা থেকেই তাই ইসলামের নানা গল্প কাহিনী শুনেই বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি, মহান এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তালাহ এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি নিরাকার এবং তার কোন শরীক নেই। উনি সর্বত্রই আছেন, অর্থাৎ সর্বত্র বিরাজমান। এইসব শুনে শুনে বড় হয়েছি। কিন্তু ১২-১৩ বছর বয়সে, সেই সময়ে দেশ বিদেশের শত শত বই পড়তাম। সেই সময়ে মনের মধ্যে কিছুটা সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। তাই সেই বয়সে এক বিশাল কাজ করে ফেলেছিলাম। পুরো কোরআনের অনুবাদ এবং প্রধান দুইটি হাদিস গ্রন্থের কিছুটা অংশ বাঙলায় পড়ে ফেলেছিলাম। সেই সময়ে সেটি চাট্টিখানি কথা ছিল না। প্রায় বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। সেই নিয়ে আরেকদিন আলাপ করা যাবে। মূল বিষয়ে আসি। তো, কোরআন হাদিস পড়ে দেখতে পেলাম, কোরআন হাদিসে যা লেখা, তা এতদিন ধরে আমি যা জানতাম তার একেবারেই উলটো কথাবার্তা। কী সর্বনাশ!  এতদিন কী মনের ভুলে কাফের ছিলাম? কার উদ্দেশ্যে এতদিন নামাজ পড়েছি? আল্লাহ কী নিরাকার, নাকি তার আকার আছে? নিরাকার কোন আল্লাহর হদিস কোরআন হাদিসের কোথাও তো নেই! এতদিন ধরে তাহলে কোন নিরাকার আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়তাম? নিরাকার সর্বব্যাপী আল্লাহর ধারণা তো পৌত্তলিকদের ধারণা। আমার এতদিনের নামাজ রোজার তাহলে কী হবে? সব তো বৃথা গেল? মুসিবতের কথা।

তো, কোরআন হাদিসে আল্লাহ সম্পর্কে কী পেলাম? আল্লাহ কি নিরাকার? একেবারেই না। সেই নিয়েই আজকের আলোচনা। যদিও এই সম্পর্কে বেশ কয়েকবারই আলোচনা করেছি। মননশীল এবং চিন্তাশীল পাঠকগণ লেখাটি থেকে চিন্তার রসদ খুঁজে নেবেন, তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হবে। আপনাদের আস্তিক বা নাস্তিক বানানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য হচ্ছে জেনে বুঝে বিবেক বুদ্ধি খাঁটিয়ে যেন আপনারা সিদ্ধান্ত নিতে শেখেন, তা নিশ্চিত করা। সেই সাথে, সংশয় ডট কমের পাঠকগণ যেন যেকোন বিতর্কের সময় রেফারেন্সগুলো একদম হাতের নাগালে পেয়ে যান।

ইসলামী বিশ্বাস মতে, আল্লাহ নামক একজন সর্বশক্তিমান স্রষ্টা গােটা বিশ্বজাহান ও তাতে ছােট বড় যা কিছু আছে সবকিছুর স্রষ্টা। তবে ইসলামের ঈশ্বর আল্লাহ পাকের কিন্তু নির্দিষ্ট আকার আকৃতি রয়েছে। যার প্রমাণ কোরআন এবং হাদিসে পাওয়া যায়।

আল্লাহর আকার আকৃতি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ

আল্লাহর আকৃতি

ইসলামের মূল আকীদা অনুসারে, আল্লাহ তালাহ হযরত আদমকে নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ, আল্লাহ পাকের অবশ্যই আকৃতি রয়েছে। নইলে নিজ আকৃতিতে কীভাবে সৃষ্টি করলেন? [1] [2]

সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৪/ জান্নাত, জান্নাতের নিয়ামত ও জান্নাতবাসীগনের বিবরণ
পরিচ্ছদঃ ১১. জান্নাতে এমন অনেক দল জান্নাতে যাবে যাদের হৃদয় পাখির হৃদয়ের ন্যায়
৬৯০০ মুহাম্মদ ইলূন রাফি’ (রহঃ) … হাম্মাম ইবন মুনাব্বি (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এ হচ্ছে (সে সব হাদীস) যা আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের শুনিয়েছেন। (এভাবে) তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করেন। এর মধ্যে একটি হল এ ই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা আদম (আলাইহিস সালাম) কে তার নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তার দৈর্ঘ্য হল ষাট হাত। তাকে সৃষ্টি করার পর তিনি তাকে বললেন, যাও, এ দলটিকে সালাম কর। তারা হচ্ছে ফিরিশতাদের উপবিষ্ট একটি দল। সালামের জবাবে তারা কি বলে তা খুব মনোযোগ সহকারে শ্রবণ কর। কেননা তোমার এবং তোমার বংশধরদের অভিবাদন এ-ই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি গেলেন ও বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। উত্তরে তারা বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ’। তাঁরা ওয়া রামাতুল্লাহ বাড়িয়ে বলেছেন। এরপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে সে আদম (আলাইহিস সালাম) এর আকৃতিতে যাবে। তার দৈর্ঘ্য হবে ষাট হাত। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ এরপর হতে সৃষ্টি (-র দেহের) দেহের পরিমাণ দিন দিন কমতে থাকে আজ পর্যন্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আল্লাহ এর আকৃতি

শুধু কী আকার আকৃতি? কোরআন এবং হাদীস দ্বারা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ইসলাম ধর্মের ঈশ্বর আল্লাহ পাকের অন্যান্য সকল দেবদেবীদের মতই হাত পা মাথা শরীর চেহারা চোখ কান আঙ্গুল ইত্যাদি সবই আছে। ইসলামের আল্লাহ অন্যান্য দেবদেবীর চাইতে ব্যতিক্রম কিছু নন। আসুন এক এক করে সব তথ্যগুলো যাচাই করি।

আল্লাহর ওজন

ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ পাকের ওজন রয়েছে। যার প্রমাণ মেলে নিচের হাদিসটি থেকে। তাকে বহন করার জন্য বিরাট বিরাট ফেরেশতার দরকার হয় [3]

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৯. জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায় সম্পর্কে
৪৭২৭। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে সকল ফিরিশতা আল্লাহর আরশ বহন করেন, তাদের একজনের সঙ্গে আলাপ করার জন্য আমাকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তার কানের লতি থেকে কাঁধ পর্যন্ত স্থানের দূরত্ব হলো সাতশ বছরের দূরত্বের সমান।[1]
সহীহ।
[1]. তাবারানী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)

কেউ দাবী করতে পারেন, ঐটা আল্লাহর ওজন নয়, আরশের ওজন। কিন্তু সেটিও যুক্তিতে সঠিক বলা যায় না। কারণ, মাঝে মাঝে রাগে দুঃখে শোকে আল্লাহর আরশ কেঁপেও ওঠে। প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর ওজন না থাকলে আরশ বা আল্লাহর সিংহাসন কেঁপে উঠবে কেন? আরো প্রশ্ন হচ্ছে, নবীর এক সাহাবীর মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেন কেঁপে উঠলো? আল্লাহর তো আগে থেকেই জানার কথা, সেই সাহাবী কবে কখন মারা যাবে। আসলে আল্লাহই তো সেই মৃত্যু ঘটান। তাহলে আরশ কেন কাঁপলো? সাধারণত আমরা রাগে দুঃখে শোকের কারণে কেঁপে উঠি। কিন্তু আল্লাহর আরশ কাঁপার প্রয়োজন কী? [4]

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২১২২. স্বাদ ইবন মু’আয (রাঃ) এর মর্যাদা
৩৫৩১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … জাবির (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) এর মৃত্যুতে আল্লাহ্ ত’আলার আরশ কেঁপে উঠে ছিল। আমাশ (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যাক্তি জাবির (রাঃ) কে বলল, বারা ইবনু আযিব (রাঃ) তো বলেন, জানাযার খাট নড়েছিল। তদুত্তরে জাবির (রাঃ) বললেন, সা’দ ও বারা (রাঃ) এর গোত্রদ্বয়ের মধ্যে কিছুটা বিরোধ ছিল, (কিন্তু এটা ঠিক নয়) কেননা, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে عَرْشُ الرَّحْمَنِ অর্থাৎ আল্লাহর আরশ সা’দ ইবনু মু’আযের (মৃত্যুতে) কেঁপে উঠল বলতে শুনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আল্লাহর চেহারা

আল্লাহ আল কুরআনের অনেকগুলো আয়াতে তার চেহারার প্রমাণ দিয়েছেন। সুরা রহমানের ২৭ নম্বর আয়াতের ইংরেজি অনুবাদ এবং বাঙলা অনুবাদ লক্ষ্য করুন [5]

And there will remain the Face of your Lord, Owner of Majesty and Honor.
— Saheeh International
হে রাসূল! কেবল আপনার রবের চেহারাই অবশিষ্ট থাকবে। যিনি নিজ বান্দাদের উপর মহা অনুকম্পা ও অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী। ফলে তাঁকে আদৗ কোন ধ্বংসই পাবে না।
— Bengali Mokhtasar
কিন্তু চিরস্থায়ী তোমার প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)- যিনি মহীয়ান, গরীয়ান,
— Taisirul Quran
অবিনশ্বর শুধু তোমার রবের মুখমন্ডল যিনি মহিমাময়, মহানুভব।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর থেকে যাবে শুধু মহামহিম ও মহানুভব তোমার রবের চেহারা* *চেহারা বলতে কোন কোন তাফসীরকার আল্লাহর সত্তাকে বুঝিয়েছেন।
— Rawai Al-bayan
আর অবিনশ্বর শুধু আপনার রবের চেহারা [১], যিনি মহিমাময়, মহানুভব [২];
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এবারে নিচের আয়াতটি [6] লক্ষ্য করুন-

And do not invoke with Allāh another deity. There is no deity except Him. Everything will be destroyed except His Face.1 His is the judgement, and to Him you will be returned.
— Saheeh International
৮৮. আর আপনি আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কোন মা’বূদকে ডাকবেন না। কারণ, তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি ছাড়া অন্য সবকিছুই ধ্বংসপ্রাপ্ত। ফায়সালা করার ক্ষমতা কেবল তাঁরই। তিনি যা চান ফায়সালা করেন। কিয়ামতের দিন হিসাব ও প্রতিদানের জন্য একমাত্র তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।
— Bengali Mokhtasar
আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তাঁর (সত্তা) ছাড়া সকল কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই, আর তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
— Taisirul Quran
তুমি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডেকনা, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সব কিছু ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
— Sheikh Mujibur Rahman
আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তাঁর চেহারা (সত্ত্বা)* ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল, সিদ্ধান্ত তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। * আয়াতে উল্লিখিত وجه শব্দের অর্থ চেহারা। আল্লাহর চেহারা আছে। আর তাঁর চেহারা যেমন ধ্বংসশীল নয় তেমনি তাঁর সত্ত্বাও ধ্বংসশীল নয়।
— Rawai Al-bayan
আর আপনি আল্লাহ্‌র সাথে অন্য ইলাহ্‌কে ডাকবেন না, তিনি ছাড়া অন্য কোনো সত্য ইলাহ্‌ নেই। আল্লাহ্‌র সত্তা ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল [১]। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আল্লাহর চোখ

আল্লাহ তা’আলা নিজের দেখার ব্যাপারে কুরআনের পঞ্চাশটি আয়াতে প্রমাণ দিয়েছেন। কিন্তু আইন (চোখ) ও আইউন (চোখগুলাে) শব্দ পাঁচটি আয়াতে ব্যবহার করেছেন। হাদিসগুলোতেও আল্লাহর দেখার ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা পাওয়া যায় [7] [8]

হে মুহাম্মাদ! তােমার প্রতিপালকের হুকুম মােতাবেক তুমি ধৈর্য ধর। কারণ, তুমি আমার চোখের সামনে আছ

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১। ঈমান (বিশ্বাস)
পরিচ্ছদঃ ৭৫. মারইয়াম পুত্র ঈসা (আঃ) ও মাসীহিদ দাজ্জাল-এর বর্ণনা।
৩১৫-(২৭৪/…) মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক আল মুসাইয়্যাবী (রহঃ) ….. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবাদের সম্মুখে দাজ্জালের কথা উল্লেখ করে বললেন, অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা টেরা চোখ বিশিষ্ট নন। জেনে রাখ দাজ্জালের ডান চোখ টেরা যেন ফোলা একটি আঙ্গুর। ইবনু উমার (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একবার আমি স্বপ্নে আমাকে কা’বার কাছে পেলাম। গোধূম বর্ণের এক ব্যক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের তোমরা যত লোক দেখেছ তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। চুল তার কাঁধ পর্যন্ত বুলছিল। তার চুলগুলো ছিল সোজা। তা থেকে তখন পানি ঝরছিল। তিনি দু’ ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হল, ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। তারই পেছনে দেখলাম, আরেক ব্যক্তি, অধিক কোঁকড়ানো চুল। তার ডান চোখ ছিল টেরা। সে দেখতে ছিল ইবনু কাতান এর ন্যায়। সেও দু’ ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করছে। জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? বলা হল, মাসীহুদ দাজ্জাল। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৩৩৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এই হাদিসটিই দেখে নিই সরাসরি বই থেকে [9]

নিরাকার 3

কুরআনে উক্ত আয়াতগুলাে এবং বিভিন্ন হাদীস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর চোখ আছে

আল্লাহর হাত

কোরআন হাদিসের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহর হাতের কথা খুব পরিষ্কারভাবেই বলা আছে।

আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?
সুরা ৩৮ঃ৭৫ 

আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে।
কুরআন ৪৮ঃ১০

আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক। একথা বলার জন্যে তাদের প্রতি অভিসম্পাত। বরং তাঁর উভয় হস্ত উম্মুক্ত।
কুরআন ৫ঃ৬৪

নিরাকার আল্লাহ?

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ৪৪/ তাফসীরুল কুরআন
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৬. সূরা আল-মায়িদাহ
৩০৪৫। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দয়াময় আল্লাহ তা’আলার ডান হাত পূর্ণ। সর্বদা তা অনুগ্রহ ঢালছে। রাত দিনের অবিরাম দান তাতে কখনো কমতি ঘটাতে পারে না। তিনি আরো বলেন, তোমরা লক্ষ্য করেছ কি যেদিন থেকে তিনি আসমান-যামীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন হতে কত না দান করে আসছেন, অথচ তার ডান হাতে যা আছে তাতে কিছুই কমতি হয়নি। (সৃষ্টির পূর্বে) তার আরশ ছিল পানির উপর। তার অপর হাতে রয়েছে মীযান (দাঁড়ি-পাল্লা)। তিনি তা নীচু করেন ও উত্তোলন করেন (সৃষ্টির রিযিক নির্ধারণ করেন)।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৯৭)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি হল নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপঃ “ইয়াহুদীরা বলে, আল্লাহ তা’আলার হাত রুদ্ধ। ওরাই আসলে রুদ্ধহস্ত এবং ওরা যা বলে তজ্জন্য ওরা অভিশপ্ত। বরং আল্লাহ তা’আলার উভয় হাতই প্রসারিত, যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন”— (সূরা আল-মায়িদাহ ৬৪)।
ইমামগণ বলেন, এ হাদীস যেরূপে (আমাদের নিকট) এসেছে, কোনরূপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সন্দেহ-সংশয় ব্যতীতই তার উপর সেভাবেই ঈমান আনতে হবে। একাধিক ইমাম এ কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুফইয়ান সাওরী, মালিক ইবনু আনাস, ইবনু উয়াইনাহ, ইবনুল মুবারাক (রাহঃ) প্রমুখ। তাদের মতে এরূপ বিষয় বর্ণনা করা যাবে, এগুলোর উপর ঈমান রাখতে হবে, কিন্তু তা কেমন এ কথা বলা যাবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এবারে সহীহ আত-তিরমিযী শরীফ থেকে [10] কয়েকটি পাতা পড়ে নিই-

নিরাকার 6
নিরাকার 8

এবারে তিরমিযী শরীফ থেকে পড়ি [11]

নিরাকার 10
নিরাকার 12

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯৭/ তাওহীদ
৭৪১৩. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ যমীনকে তাঁর মুঠোয় নিয়ে নেবেন। (৪৮১২) (আধুনিক প্রকাশনী- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ২১. জাহমিয়্যাহ মতবাদ প্রত্যাখ্যাত
৪৭৩২। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন আসমানসমূহকে গুটিয়ে তাঁর ডান হাতে নিয়ে বললেবন, আমি সর্বময় কর্তা ও মালিক, স্বৈরাচারীরা ও অহংকারকারীরা কোথায়? অতঃপর পৃথিবীসমূহকে গুটিয়ে অপর হাতে নিয়ে বলবেন, আমি মালিক স্বৈরাচারীরা ও অহংকারীরা কোথায়?[1]
সহীহ।
[1]. মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)

আল্লাহর হাতের আঙুল

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩০/ তাকদীর
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৭. আল্লাহ তা’আলার দুই আঙ্গুলের মধ্যে সমস্ত অন্তর অবস্থিত
২১৪০। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ অধিক পাঠ করতেনঃ হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত (দৃঢ়) রাখো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমরা ঈমান এনেছি আপনার উপর এবং আপনি যা নিয়ে এসেছেন তার উপর। আপনি আমাদের ব্যাপারে কি কোনরকম আশংকা করেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কেননা, আল্লাহ তা’আলার আঙ্গুলসমূহের মধ্যকার দুটি আঙ্গুলের মাঝে সমস্ত অন্তরই অবস্থিত। তিনি যেভাবে ইচ্ছা তা পরিবর্তন করেন।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৮৩৪)।
আবূ ঈসা বলেন, নাওয়াস ইবনু সাম্আন, উন্মু সালামা, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ও আইশা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান। আমাশ-আবৃ সুফিয়ান হতে, তিনি আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে একাধিক বর্ণনাকারী একইরকম হাদীস বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ আমাশ-আবৃ সুফিয়ান হতে, তিনি জাবির (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে আবূ সুফিয়ানের বর্ণিত হাদীসটি অনেক বেশি সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এবারে সূনান আত তিরমিজী আরো কয়েকটি পাতা পড়ে নিই [12]

নিরাকার 14
নিরাকার 16

আল্লাহর পা

পায়ের পাতার প্রমাণঃ

আবু হুরাইরার বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জাহান্নাম ততক্ষণ ভরবেনা যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর পা জাহান্নামে রেখে দেবেন তখন জাহান্নাম বলতে থাকবে ব্যাস! ব্যাস !!
(বুখারীও মুসলিম, মিশকাত ৫০৫ পৃষ্ঠা)

ইবনু আব্বাসের বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আলকুর্সী মাওাইল কুদামাইন- কুরসী হচ্ছে আল্লাহর দুটি পায়ের পাতা রাখার জায়গা।
(মুসতাদরকে হা-কিম ২য় খণ্ড, ২৮২ পৃষ্ঠা)

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৮৬/ জাহ্‌মিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছদঃ ৩১২৭. আল্লাহ্‌র বাণীঃ আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়নদের নিকটবর্তী (৭ঃ ৫৬)
৬৯৪১। উবায়দুল্লাহ ইবনু সা’দ ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টি স্বীয় প্রতিপালকের কাছে অভিযোগ করল। জান্নাত বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ব্যাপারটি কি হলো যে তাতে শুধু নিঃস্ব ও নিম্ন শ্রেনীর লোকেরাই প্রবেশ করবে। এদিকে জাহান্নামও অভিযোগ করল অর্থাৎ আপনি শুধুমাত্র অহংকারীদেরকেই আমাতে প্রাধান্য দিলেন। আল্লাহ জান্নাতকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমি আমার রহমত। জাহান্নামকে বললেনঃ তুমি আমার আযাব। আমি যাকে চাইব, তোমাকে দিয়ে শাস্তি পৌছাব। তোমাদের উভয়কেই পূর্ণ করা হবে। তবে আল্লাহ তা’আলা তার সৃষ্টির কারো উপর যুলম করবেন না। তিনি জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছানুযায়ী নতুন সৃষ্টি পয়দা করবেন। তাদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নাম বলবে, আরো অভিরিক্ত আছে কি? জাহান্নামে আরো নিক্ষেপ করা হবে, তখনো বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? এভাবে তিনবার বলবে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁর কদম (পা) জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিলে তা পরিপূর্ন হয়ে যাবে। তখন জাহান্নামের একটি অংশ আরেকটি অংশকে এই উত্তর করবে যথেষ্ট হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে ষথেষ্ট হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

নিরাকার 18
নিরাকার 20
নিরাকার 22
[13]

আল্লাহর পায়ের নলা

আল্লাহর পাযের নলা

আল্লাহর রূপ রঙ

আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে? আমরা তাঁরই এবাদত করি।
কুরআন ২ঃ১৩৮

আল্লাহর গলা বা কণ্ঠস্বর

যখন সে তার কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা।
কুরআন ২৮ঃ৩০

অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে আসলেন তখন আওয়াজ হল ধন্য তিনি, যিনি আগুনের স্থানে আছেন এবং যারা আগুনের আশেপাশে আছেন। বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত।
কুরআন ২৭ঃ৮

আল্লাহর কান 

আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ আপনাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন।
কুরআন ৫৮ঃ১

আর আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও দেখেন।
কুরআন ৪ঃ১৩৪

আল্লাহর স্বভাবচরিত্র

আল্লাহ প্রতিশোধ পরায়ন

আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ গ্রহণকারী
কুরআন ৩ঃ৪

আল্লাহ বড় হিংসুটে

আল্লাহ ছাড়া বা আল্লাহর সাথে অন্য কারো উপাসনা করলে আল্লাহর হিংসে লাগে। সে কারণে একে সবচাইতে বড় অপরাধ শিরক বলে গণ্য করা হয়েছে।

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল।
সুরা নিসা- ৪৮

অন্য অনুবাদঃ

আল্লাহ অবশ্যি শিরককে মাফ করেন না৷  এ ছাড়া অন্যান্য যত গোনাহর হোক না কেন তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন৷ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করেছে সেতো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন গোনাহের কাজ করেছে৷
সুরা নিসা- ৪৮

আল্লাহ বড় লজ্জাশীল ও পর্দাশীল

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ২৬/ গণ-গোসলখানা
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
পরিচ্ছদঃ ২. উলঙ্গ হওয়া নিষেধ
৪০১২। ইয়া‘লা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উলঙ্গ হয়ে খোলা জায়গায় গোসল করতে দেখলেন। অতঃপর মিম্বারে উঠে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বললেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ লজ্জাশীল, গোপণীয়তা অবলম্বনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা পছন্দ করেন। তোমাদের কেউ গোসল করতে চাইলে সে যেন গোপনীয়তা অবলম্বন করে।(1) সহীহ।
(1). নাসায়ী, আহমাদ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৩ঃ পাক-পবিত্রতা
পাবলিশারঃ হাদিস একাডেমি
পরিচ্ছদঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ – গোসলের বিবরণ
৪৪৭-(১৮) ইয়া‘লা (ইবনু মুররাহ্) (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উলঙ্গ উন্মুক্ত জায়গায় গোসল করতে দেখলেন এবং (রাগভরে) তিনি মিম্বারে দাঁড়ালেন। প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করলেন, এরপর বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বড় লজ্জাশীল ও পর্দাশীল। তিনি লজ্জাশীলতা ও পর্দা করাকে বেশী পছন্দ করেন। তাই তোমাদের কেউ গোসল করতে গেলে যেন পর্দা অবলম্বন করে। (আবূ দাঊদ)(1) নাসায়ীর এক বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা বড় পর্দাশীল। অতএব তোমাদের কেউ গোসল করতে ইচ্ছা করলে সে যেন কোন কিছু দিয়ে পর্দা করে
(1) সহীহ: আবূ দাঊদ ৪০১২, নাসায়ী ১/৭০, আহমাদ ৪/২২৪।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

লজ্জাশীল আল্লাহ নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ

আল্লাহ পাক কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় নিজেই নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। [14] [15] [16] [17] [18] [19] [20] [21] [22] [23] [24] [25]

নিরাকার 25

হে মূসা, আমি আল্লাহ, প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
কোরআন ২৭:৯

হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা।
কোরআন ২৮ঃ৩০

আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও অধিক জ্ঞানবান।
কোরআন ১২ঃ৫৫

আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক।
কোরআন ৩ঃ২

হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর গলগ্রহ। আর আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
কোরআন ৩৫ঃ১৫

করুনাময় আল্লাহ।
কোরআন ৫৫ঃ১

আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
কোরআন ১১২ঃ২-৪

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
কোরআন ২ঃ২৫৫

সকল প্রশংসা এবং ধন্যবাদ আল্লাহর, তিনি বেহেশত ও পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা। তাকে বন্দনা করি, তিনি ফেরেশতাদেরকে তৈরি করেছেন। তিনি যা ইচ্ছা করেন, তাই সৃষ্টি করেন। আসলে আল্লাহ সবকিছুই করতে পারেন।
কোরআন ৩৫ঃ১

এবং সকল প্রশংসা ও ধন্যবাদের মালিক আল্লাহ কারণ তিনি আলামিন (মানুষ, জিন এবং যা কিছু আছে সবকিছুর)।
কোরআন ৩৭ঃ১৮২

অতএব সকল প্রশংসা ও ধন্যবাদ আল্লাহর উপরে বর্ষিত হোক, কারণ তিনিই জগতের প্রভু।
কোরআন ৪৫ঃ৩৬

নভোমন্ডল, ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ে অবস্থিত সবকিছুর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
কোরআন ৫ঃ১২০

আল্লাহ মাঝে মাঝে হাসেন

আল্লাহ পাক মাঝে মাঝে হাসেন। [26]

রিয়াযুস স্বা-লিহীন
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
হাদিস নাম্বার: 25 ‏
১২/২৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু অতা‘আলা ঐ দু’টি লোককে দেখে হাসেন, যাদের মধ্যে একজন অপরজনকে হত্যা করে এবং দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ করবে। নিহত ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা অবস্থায় (কোন কাফের কর্তৃক) হত্যা করে দেওয়া হল। পরে আল্লাহ তা‘আলা হত্যাকারী কাফেরকে তওবা করার তাওফীক প্রদান করেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে যায়।’’(1)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
(1) সহীহুল বুখারী-২৮২৬, মুসলিম ১৮৯০, নাসায়ী ৩১৬৫, ৩১৬৬, ইবনুূু মাজাহ ১৯১, আহমাদ ৭২৮২, ২৭৪৪৬, ৯৬৫৭, ১০২৫৮, মুওয়াত্তা মালিক ১০০০

নিরাকার 27

আল্লাহর বান্দাদের হুমকি ধামকি দেন

মহাবিশ্বের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক রেগে গেলে বান্দাদের হুমকি ধামকি এবং অভিশাপ দেন। [27] [28] [29] [30] [31]

কখনই নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমি মস্তকের সামনের কেশগুচ্ছ ধরে হেঁচড়াবই-
কোরআন ৯৬/১৫-১৬

আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও দেয়া হবে না যে, তারা মরে যাবে এবং তাদের থেকে তার শাস্তিও লাঘব করা হবে না। আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি।
কোরআন ৩৫ঃ৩৬

সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার।
কোরআন ৯ঃ৩৫

আমি তার নাসিকা দাগিয়ে দিব।
কোরআন ৬৮ঃ১৬

…তাদের জন্যে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে-কুফরের কারণে।
কোরআন ৬ঃ৭০

আল্লাহর রাগ ক্ষোভ

কোরআন এবং হাদিস অনুসারে আল্লাহ পাক রাগ করেন, ক্ষুব্ধ হন, ক্ষিপ্ত হন, অভিশাপ দেন, অর্থাৎ একদম সাধারণ একজন মানুষের মতই তার আচার আচরণ। [32] [33] [34] [4]

আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।
কুরআন ৯৮ঃ৮

তোমাদের নিজেদের প্রতি তোমাদের আজকের এ ক্ষোভ অপেক্ষা আল্লার ক্ষোভ অধিক ছিল, যখন তোমাদেরকে ঈমান আনতে বলা হয়েছিল, অতঃপর তোমরা কুফরী করছিল।
কুরআন ৪০ঃ১০

নিশ্চয় তিনি কাফেরদের ভালবাসেন না।
কুরআন ৩০ঃ৪৫

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২১২২. স্বাদ ইবন মু’আয (রাঃ) এর মর্যাদা
৩৫৩১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … জাবির (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) এর মৃত্যুতে আল্লাহ্ ত’আলার আরশ কেঁপে উঠে ছিল। আমাশ (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যাক্তি জাবির (রাঃ) কে বলল, বারা ইবনু আযিব (রাঃ) তো বলেন, জানাযার খাট নড়েছিল। তদুত্তরে জাবির (রাঃ) বললেন, সা’দ ও বারা (রাঃ) এর গোত্রদ্বয়ের মধ্যে কিছুটা বিরোধ ছিল, (কিন্তু এটা ঠিক নয়) কেননা, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে عَرْشُ الرَّحْمَنِ অর্থাৎ আল্লাহর আরশ সা’দ ইবনু মু’আযের (মৃত্যুতে) কেঁপে উঠল বলতে শুনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

উপসংহার

উপরের সমস্ত রেফারেন্স পড়লে খুব সহজেই বোঝা যায়, কোরআন হাদিসে আল্লাহ সম্পর্কে যা লেখা রয়েছে, খোদ মুসলিমরাই সেইসবের তেমন কিছু জানে না। আশাকরি এই লেখাটি মুসলিমদের উপকার করবে। তাদের ইমান শক্ত করবে। বাদবাকি রেফারেন্স পরে যুক্ত করা হবে। লেখাটি আপনারা বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।

আল্লাহ পাকের আকার আকৃতি এবং বৈশিষ্টগুলো এই লেখাটিতে একত্রিত করার চেষ্টা করছি, আস্তিক নাস্তিক সকলের আলোচনার সুবিধার জন্য। আপনারাও অন্যান্য হাদিস ও কোরআনের আয়াত দিয়ে লেখাটি সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করতে পারেন। আশাকরি ধীরে ধীরে সকলের মিলিত প্রয়াসে লেখাটিতে এই সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াত এবং হাদিস যুক্ত করা হবে।

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৯০০ []
  2. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা নম্বর ৩৩৬, হাদিস নম্বরঃ ৬৯০০ []
  3. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৭২৭ []
  4. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৩১ [][]
  5. সূরা আর-রহমান, আয়াত ২৭ []
  6. সুরা আল কাসাস, আয়াত ৮৮ []
  7. সূরা তুর ৪৮ আয়াত []
  8. সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমি, হাদিস নম্বরঃ ৩১৫ []
  9. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা নম্বর ২০৮, হাদিস নম্বরঃ ৩২৩ []
  10. সহিহ আত-তিরমিযী খণ্ড ৫ পৃষ্ঠা ৪৪৫, ৪৪৬ []
  11. তিরমিযী শরীফ, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৮১, ৮২ []
  12. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), চতুর্থ খণ্ড, পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী, হাদিস নম্বরঃ ২১৪০ []
  13. সহিহ বুখারী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। অষ্টম খণ্ড। পৃষ্ঠা ২০৪ []
  14. কোরআন ২৭:৯ []
  15. কোরআন ২৮ঃ৩০ []
  16. কোরআন ১২ঃ৫৫ []
  17. কোরআন ৩ঃ২ []
  18. কোরআন ৩৫ঃ১৫ []
  19. কোরআন ৫৫ঃ১ []
  20. কোরআন ১১২ঃ২-৪ []
  21. কোরআন ২ঃ২৫৫ []
  22. কোরআন ৩৫ঃ১ []
  23. কোরআন ৩৭ঃ১৮২ []
  24. কোরআন ৪৫ঃ৩৬ []
  25. কোরআন ৫ঃ১২০ []
  26. রিয়াযুস স্বা-লিহীন, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নাম্বারঃ ২৫ []
  27. কোরআন ৯৬/১৫-১৬ []
  28. কোরআন ৩৫ঃ৩৬ []
  29. কোরআন ৯ঃ৩৫ []
  30. কোরআন ৬৮ঃ১৬ []
  31. কোরআন ৬ঃ৭০ []
  32. কুরআন ৯৮ঃ৮ []
  33. কুরআন ৪০ঃ১০ []
  34. কুরআন ৩০ঃ৪৫ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

7 thoughts on “ইসলামের আল্লাহ কি নিরাকার?

  • July 7, 2019 at 6:06 AM
    Permalink

    তথ্যবহুল লেখা । মেরাজ/মিরাজ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা চাই✌

    Reply
    • August 28, 2019 at 8:28 AM
      Permalink

      ভালো লাগলো ভাই

      Reply
  • July 7, 2019 at 7:42 AM
    Permalink

    কোনো জাগতিক সৃষ্টির সঙ্গে আল্লাহর সাদৃশ্য নেই এই অর্থে তিনি নিরাকার। প্রচলিত আইনে ত আইন অমান্যকারীদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়। আল্লাহ কি অপরাধী কে শাস্তি দিতে পারেন না? শাস্তি দিলেই প্রতিশোধ পরায়ণ? নিজের অজ্ঞতার জন্য ধর্ম কেন দায়ী হবে? বিশ্বের মঙ্গল চাইলে পুঁজিবাদ ও তার যত গাঁদ নিয়ে মাথাটা ঘামানো উচিৎ।

    Reply
    • August 6, 2020 at 7:42 PM
      Permalink

      নিজেই বললেন জাগতিক সৃষ্টির সাথে আল্লাহর সাদৃশ্য নেই৷ নিজেই আবার জাগতিক সৃষ্টির প্রতিশোধপরায়নতা কে আল্লাহর সাথে সমতুলনা করলেন৷ স্ববিরোধী কথা হয়ে গেলো না ভাই? আর রেফারেন্স গুলো চেক করলেই তো বোঝা যায় জাগতিক সৃষ্টির সাথে যে ১০০% মিল রয়েছে স্রষ্টা নামক মহাজাগতিক সত্ত্বা টির

      Reply
  • March 30, 2020 at 8:15 AM
    Permalink

    অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর তথ্যগুলি দেওয়ার জন্য । হৃদয়টা ছুয়ে গেল পড়ে আশা করি এরকম আরো অনেক পোস্ট করবেন।
    প্রতীক্ষায় রইলাম,,,,,,

    Reply
  • June 25, 2020 at 12:55 PM
    Permalink

    আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহর আকার আছে।যারা বিশ্বাস করে তিনি নিরাকার তারা কোরআনের আয়াতের অস্বীকার করে।পূর্ববর্তী সালাফগণ সকলেই আল্লাহর আকারে বিশ্বাস করতেন।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *