কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট

Print Friendly, PDF & Email

ভূমিকা

কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট নিয়ে কিছু বলার আগে একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। গল্পটা বলছি এই কারণে যে, ধরুন কোথাও একটি খুন হয়েছে। খুনের জায়গায় কী কী তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, এবং তথ্য প্রমাণ থেকে কী কী সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, একজন দক্ষ গোয়েন্দা সবসময় সেসবের ওপর ভিত্তি করে যুক্তি এবং প্রমাণ দিয়ে বিচার বিবেচনা করে সিদ্ধান্তে আসেন। উনি এসেই বিশ্বাস করেন না যে, জ্বীন ভুত বা কোন অলৌকিক সত্ত্বা বা ফেরেশতা বা দেবতা বা অসুর বা দৈত্যদানব এসে খুনটি করে গেছে। সেটি করলে তিনি আর দক্ষ গোয়েন্দা বলে বিবেচিত হবেন না। সেটা কোন যুক্তিবাদী চিন্তাশীল মানুষের কাজ নয়।

কারণ আইন আদালত বিচার ব্যবস্থা তথ্য প্রমাণ এবং যুক্তির ওপর নির্ভরশীল। সেখানে ব্যক্তিগত বিশ্বাস মূল্যহীন। তারপরেও যদি এমন প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ভুতে খুন করে গেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সেটাও দেখাবার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাসে এরকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি, কোন খুন ভুতে করে গেছে।

আবার, যদি কোন তথ্য প্রমাণ পাওয়া নাও যায়, তারপরেও একজন দক্ষ গোয়েন্দা কখনো তথ্যপ্রমাণহীনভাবে সেগুলো ভুত পেত্নী বা কোন অপ্রমাণিত অলৌকিক সত্ত্বার ওপরে সেই খুনের দায় চাপাবে না। সে স্রেফ বলবে, সে ইনভেস্টিগেশন ঠিকভাবে করতে পারে নি, তথ্য প্রমাণের অভাবে। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবেই ইনভেস্টিগেশন সফল হয় নি। তিনি বলবেন না, “ভুতে যদি না করে থাকে, তাইলে কে করেছে?”

তাহলে কে করেছে, সেটিই যুক্তি তথ্য প্রমাণ দিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে বের করতে হবে। গোয়েন্দা সাহেব অন্যকে প্রশ্ন করবেন, তাইলে কে করেছে, সেটি তো কোন প্রমাণ হতে পারে না। সেটি বড়জোর একটি প্রশ্ন হতে পারে, বা গোয়েন্দা সাহেবের তথ্যপ্রমাণের অভাবকে নির্দেশ করতে পারে। কিন্তু তথ্য প্রমাণের অভাব অন্য কোন দাবীর প্রমাণ হতে পারে না।

এগুলো যা বলছি, সবই সভ্য শিক্ষিত দেশগুলোর কথা। বাঙলাদেশের পুলিশ অবশ্য সেভাবে কাজ করে না। তারা আগে ঠিক করে দোষী কে বা কারা, তারপরে অভিযুক্তকে মেরে পিটিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করে। সেগুলো সভ্য সমাজে অচল ব্যবস্থা। আমরা সভ্য সমাজের কথাই শুধু আলোচনায় রাখছি। একজন দক্ষ গোয়েন্দার মতই, আসুন আমরা ঈশ্বরের সপক্ষে প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণগুলো আলোচনা করি।

গল্প

ধরা যাক, আপনার বন্ধু, যিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর আকরাম আপনাকে একদিন গোপনে জানালো যে, ঢাকা শহরের সমস্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের পেছনে যিনি মূল গড ফাদার, মূল চালক, তার নাম হচ্ছে, গডফাদার আক্কাস আলী। আপনি সেটা শুনলেন এবং বিশ্বাস করলেন, যেহেতু আপনাকে আপনার বন্ধু তথ্যটি জানিয়েছে।

অর্থাৎ, আপনার শহরে সমস্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আসলে গডফাদার আক্কাস আলীর কারণেই ঘটছে। অর্থাৎ, সেই আক্কাস আলীই সব অপরাধমূলক কাজের আদি কারণ।

আপনি সেই মধ্যযুগের দর্শণ সম্পর্কে কিছু পড়েছেন, তাই আপনি মধ্যযুগীয় দর্শনের ওপর ভিত্তি করে এইভাবে আর্গুমেন্ট সাজালেন-

১। যার উৎপত্তি (যেমন অপরাধের) আছে, তার পেছনে একটি কারণ রয়েছে।
২। আমাদের শহরে অপরাধমূলক কাজ ঘটছে।
৩। সুতরাং এই শহরে অপরাধমূলক কাজের পেছনে একটি উৎপত্তি আছে, বা একটি আদি কারণ আছে।
৪। সেই কারণটিই হলো ‘গডফাদার আক্কাস আলী’। তিনি না করে থাকলে কে করবে?
৫। এখন, আক্কাস আলীর গডফাদার কে, তা ভাবতে বসলে সেই গডফাদারের গডফাদার কে তাও বিবেচনায় আনতে হবে। এভাবে চলতেই থাকবে। যা একটি ইনফিনিট রিগ্রেসে চলে যাবে। তাই ধরে নিতে হবে, আক্কাস আলীর কোন গডফাদার নাই। সেই আদি গডফাদার।

এরপরে, এইসব যুক্তির ওপর ভিত্তি করে, আপনি আক্কাস আলীকে শহরের সমস্ত অপরাধের হোতা হিসেবে তার শাস্তি দাবী করলেন। আরো দাবী করলেন, শহরের সমস্ত অপরাধমূলক কাজ আসলে তার নির্দেশেই ঘটছে। কিন্তু, আপনার শহরে আক্কাস আলী নামে কাউকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। যেই আক্কাস আলীকে দেখা যাচ্ছে না, পরীক্ষা করা যাচ্ছে না, তাকে ফোন করা যাচ্ছে না, তার কোন ঠিকানাও নেই। সে যে গডফাদার, তার কোন বাস্তব এভিডেন্স, যা পরীক্ষা করা যায়, তা পাওয়া যাচ্ছে না। আক্কাস আলীর স্বীকারোক্তি পর্যন্ত নেয়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র আক্কাস আলীর দুই একজন মেসেঞ্জার দাবী করছে, তাদের কাছে নিয়মিত আক্কাস আলীর চিঠি আসে। এবং তারা আক্কাস আলীর বন্ধু। একজন আবার আগ বাড়িয়ে নিজেকে আক্কাস আলীর একমাত্র পুত্রও দাবী করে বসে আছে। কিন্তু তার মায়ের সাথে আক্কাস আলীর কোনদিন দেখাই হয় নি। অদ্ভুত সব কাণ্ড! কিন্তু তারা যে আসলেই আক্কাস আলীর বন্ধু, বা একমাত্র পুত্র, তার কোন এভিডেন্স পাওয়া যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, তাদের কাছে যেই চিঠিগুলো আসে, সেগুলোতে কোন পোস্ট অফিসের সিল নেই। তাই কোন ঠিকানা থেকে ওগুলো আসে তা বোঝা যায় না। বা কোন পোস্ট অফিস থেকেই সেগুলো আসে না। এমনও হতে পারে, ঐ লোকগুলো নিজেরাই চিঠিগুলো লিখে অন্যদের আক্কাস আলীর চিঠি বলে মানুষের কাছে প্রচার করে। হয়তো নিজেদের কেউকেটা বলে প্রমাণের উদ্দেশ্যে। বা নিজেদের দল বানিয়ে চাঁদাবাজি করতে। ক্ষমতার লোভে। আক্কাস আলীকেই যেহেতু পাওয়া যায় না, তাই এইসব দাবী যে মিথ্যা বা সত্য, আক্কাস আলী এসে সেটাও আমাদের জানাচ্ছে না।

তারপরেও আপনার দৃঢ় বিশ্বাস, আক্কাস আলী আছে। নইলে শহরে এত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে কীভাবে? এতগুলো মেসেঞ্জার কী মিথ্যা বলছে? আক্কাস আলীর নিজের একমাত্র পুত্র কী মিথ্যা বলছে?

যখন আপনার কাছে প্রমাণ চাওয়া হলো, তখন আপনি বললেন, সমস্ত অপরাধের একজন গডফাদার না থাকলে শহরের অপরাধ কেন হচ্ছে? ২৩ তারিখে একটি মার্ডার হয়েছে, ২৭ তারিখে দুটো রেইপ হয়েছে, গতমাসে অনেকগুলো জায়গাতে মাদক পাওয়া গেছে। যদি একজন গডফাদার না থেকে থাকে, তাহলে এগুলো কীভাবে হচ্ছে? আপনি দাবী করছেন, র‍্যাশনাল এভিডেন্স অনুসারে এইসবের পেছনে অবশ্যই একজন নির্দেশোদাতা গডফাদার আছে, এবং নিশ্চিতভাবেই সেটি আক্কাস আলী। যেহেতু আপনার কাছে এভিডেন্স রয়েছে, আপনার ইন্সপেক্টর বন্ধুটি আপনাকে একদিন আড্ডায় এই কথাটি জানিয়েছিল।

এখন, আপনার যে এই “র‍্যাশনাল আর্গুমেন্ট” বলে দাবীকৃত বক্তব্য, তার বিপরীতে আপনার জানা জরুরি, শহরে নানা অপরাধ ঘটবার পেছনে কী কী সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। আপনাকে নিচের প্রশ্নগুলো করা হলো।

প্রশ্ন ১। হয়তো শহরে তিনজন বা চারজন গডফাদার রয়েছে। আদি কারণ হিসেবে একজন গডফাদারই যে রয়েছে, আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন?

– উত্তরে আপনি বললেন, একাধিক গডফাদার থাকলে তারা নিজেরা মারামারি করে মরে যেতো, কিংবা সব ধ্বংস করে ফেলতো।
– আপনাকে প্রশ্ন করা হলো, সেই গডফাদারগণ সকলে যে আক্রমণাত্মক চরিত্রেরই হবে, তারা নিজেরা যে বন্ধু নন, আপনি নিশ্চিত হলেন কীভাবে? হয়তো তাদের একজন ড্রাগ বিজনেস করেন, আরেকজন অস্ত্রের, আরেকজন প্রস্টিটিউশনের ব্যবসা। মিলে মিশে করেন। তারা যে সাধারণ লোকের মত নিজেদের মধ্যে মারামারিই করবেন, এত নিশ্চিত হচ্ছেন কোন এভিডেন্সের ওপর ভিত্তি করে?

আপনার কাছে সেরকম কোন এভিডেন্স নেই, তবে আপনি বিশ্বাস করেন এরকম একজনই হবে। দুইজন হলে তারা নির্ঘাত জমিজমা ভাগাভাগি নিয়ে মারামারি করবে। অর্থাৎ আপনার কাছে আসলে কোন ভ্যালিড আর্গুমেন্টও নেই, তবে আক্কাস আলী কেমন হতে পারেন, তার বৈশিষ্ট্য কেমন, এইসব নিয়ে এক ধরণের বিশ্বাস আছে।

প্রশ্ন ২। হয়তো শহরে সেরকম কোন গডফাদারই আসলে নেই। অপরাধ ঘটছে বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন মানুষ দ্বারা, যারা একে অন্যকে চেনেন না। বা অপরাধগুলোর ভিন্ন কোন কারণ রয়েছে। অপরাধগুলো থাকলেই তার পেছনে একজন গডফাদার আছে, এর এভিডেন্স কী?
যেমন,

ক। যিনি খুন হয়েছেন, তিনি হয়তো বিষয়সম্পত্তির হিসেবনিকেশের কারণে, পরিবারের সদস্যদের সাথে এই নিয়ে ঝগড়ার কারণে খুন হয়েছেন। এর পেছনে হয়তো আদিকারণ হিসেবে গডফাদারের কোন দরকার নেই।
খ। যেই নারী রেইপ হয়েছেন, তিনি হয়তো এমন এক লম্পট পুরুষের খপ্পরে পরেছিলেন, যিনি জাতে রেইপিস্ট।
গ। অন্যান্য প্রতিটি ঘটনার পেছনে গডফাদার ছাড়াও অন্যান্য প্রমাণিত এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য কারণ থাকতে পারে। গডফাদারের নির্দেশ ছাড়াও ঘটনাগুলো ঘটে থাকতে পারে।

– উত্তরে আপনি বললেন, এত সুশৃঙ্খল ভাবে কীভাবে এত অপরাধ ঘটছে? যদি এর কোন কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রক না থাকে?

৩। ধরে নিচ্ছি সব অপরাধের পেছনেই একজন গডফাদার আছে। কিন্তু তিনি যে আক্কাস আলীই, তার প্রমাণ কী? তিনি যে ইয়াকুব মোল্লা নন, তার কী কোন প্রমাণ আছে?
– আপনি বললেন, আপনার বন্ধু আপনাকে তা জানিয়েছে।

কিন্তু আপনার বন্ধুটি যে সত্য জানিয়েছে, তার প্রমাণ কী?

আপনি প্রমাণ হিসেবে বললেন, আপনার বন্ধুটি যেহেতু শুকরের মাংশ খায় না, সেহেতু সে মিথ্যা বলতেই পারে না। কিন্তু এটাও কোন ভ্যালিড আর্গুমেন্ট হলো না। হয়তো আরেকজন মানুষ তারই কোন বিশ্বস্ত বন্ধুর কাছ থেকে শুনেছেন, ভগবান দাসই আসলে এই শহরের গডফাদার। সেই বিশ্বস্ত বন্ধুটিও হয়তো শুধু ডাল দিয়ে ভাত খান, তাই তার কথাকে সত্য বলে মেনে নিতে হবে? শুকরের মাংস না খাওয়ার সাথে আক্কাস আলীর গডফাদার হওয়াটুকু কতটা সম্পর্কিত?

৪। ধরে নিচ্ছি গডফাদার আক্কাস আলীই শহরের সমস্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের হোতা। সব চোর চ্যাচ্চর খুনী ডাকাত রেইপিস্টদের আসলে সেই চালাচ্ছে। কিন্তু তাকে কে চালাচ্ছে? তার গডফাদার কে?

– উত্তরে আপনি বললেন, যেহেতু একজন আদিকারণ থাকতেই হবে, সেহেতু আক্কাস আলীই সেই আদি কারণ। তা না হলে সেই গডফাদারকে কে চালাচ্ছে, তার গডফাদারকে কে চালাচ্ছে, তার গডফাদারকে কে চালাচ্ছে, এই ইনফিনিট রিগ্রেসের মধ্যে আমাদের পরে যেতে হবে। সেটা যেহেতু সম্ভব নয়, তাই ধরে নিতে হবে, আক্কাস আলীই মূল গডফাদার।

– আপনাকে প্রশ্ন করা হলো, ইনফিনিট রিগ্রেস এড়াবার জন্য আপনি আক্কাস আলী, মানে প্রথম প্রাপ্ত গডফাদারকেই আদি কারণ ধরে নিচ্ছেন কোন এভিডেন্সের ভিত্তিতে? এমনও তো হতে পারে, আক্কাস আলীর গডফাদার মোকলেস আলী, মোকলেস আলীর গডফাদার কুদ্দুস আলীই আদি কারণ। কুদ্দুস আলীতে গিয়েই আমাদের ইনফিনিট রিগ্রেসে পরার ভয়ে থেমে যেতে হবে। কুদ্দুস আলীর কোন গডফাদার নেই। তাহলে, আমরা কুদ্দুস আলীতে গিয়ে থামবো, না আক্কাস আলীতেই থেমে যাবো, নাকি ভাববো কুদ্দুস আলীর উপরে আরো ছয়জন গডফাদার আছে, এরপরে আর কেউ নেই, অর্থাৎ কত নম্বরে গিয়ে থামবো, তা নির্ধারণ করছেন কোন এভিডেন্সের ভিত্তিতে?

মানে, আদি কারণ হিসেবে আমরা কয়টি স্টেপ উপরে যাবো, একটি না দুইটি বা পনেরো লক্ষ ছাপ্পান্নটি, তা নির্ধারণ করছেন কোন এভিডেন্সের ভিত্তিতে?

মূল আলোচনা

এবারে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। আস্তিকদের মধ্যে যারা খানিকটা গুগল বা ইউটিউব চালাতে জানে কিংবা প্রায় ৭০০-৮০০ বছর আগের দর্শণ সম্পর্কে খানিকটা জানাশোনা আছে, বা এলাকার টঙের দোকানে নিয়মিত যাওয়া আসা আছে, তারা প্রায় একটি মুখস্থ কাহিনী বলে যান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমান স্বরূপ। সেটি হচ্ছে “একটি জনমানবহীন সৈকতে একটি ক্যামেরা পেলে, প্রশ্ন আসবে সেটি কিভাবে সেখানে আসবে, কাউকে না কাউকে সেটা তৈরি করতেই হবে,এমনি এমনি আসবে তো না ইত্যাদি…”। কথাগুলো হুমায়ুন আহমেদের একটি বইতেও পাওয়া যায়। গল্পটি এরকম, মঙ্গল গ্রহে যদি একটি ক্যামেরা পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই প্রশ্ন আসবে, জটিল একটি যন্ত্র এই ক্যামেরাটি কেউ বানিয়েছে নাকি সেটি এমনি এমনি সেখানে সৃষ্টি হয়ে গেছে। এই নিয়ে বিস্তর আলাপ আলোচনা হয়েছে। জটিল যন্ত্র ক্যামেরা বানাতে অবশ্যই একটি চিন্তাশীল, বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জটিল সত্ত্বার প্রয়োজন। তাহলে সেই বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জটিল সত্ত্বাকে কে বানিয়েছে? আল্লাহ? তাহলে প্রশ্ন আসে, আল্লাহ যেহেতু আরো বেশি বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন, এবং জটিল, তাকে বানাতে আরো অধিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এবং জটিলতর কোন সত্ত্বার প্রয়োজন। ঐ একই যুক্তিতে। সেটা সৃষ্টি করতে আবার আরেকটি সত্ত্বা কল্পনা করতে হয়। এভাবে চলতেই থাকবে। কিন্তু যারা সাধারণ বিজ্ঞান পড়েছেন, তারা জানেন, সরলতম থেকে জটিল সত্ত্বাগুলো উদ্ভব হয়। জটিল থেকে সরলতম সত্ত্বার দিকে ধাবিত হয় না।

যাইহোক, সে আরেক আলোচনা। আমরা ঐ গল্পটিতে না গিয়ে গল্পটির পেছনের যেই দার্শনিক দাবী, তা নিয়ে আলোচনা করি। কারণ এই দাবীটি সহজেই ভুল তা প্রমাণ করা যায়। খুব বেশি দার্শন বিষয়ক জ্ঞান ছাড়াই।

এই গল্পটির মুলে রয়েছে “কার্যকারণ তত্ত্ব” বা Cause and Effect of Causality [1] ধারণা বা কনসেপ্ট। এই কনসেপ্ট এর অধীনে সব থেকে বেশি যে আইডিয়া নিয়ে আস্তিক ভাইয়েরা নড়াচড়া করেন সেটি হচ্ছে- কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট ( Kalam Cosmological Argument )। বহু পুরনো একটি দার্শনিক প্রস্তাব।

প্রাচীন বা মধ্যযুগের দর্শন সম্পর্কে খানিকটা জানাশোনা এবং আস্তিক্যবাদের খুব সাধারণ বিষয়াদি সম্পর্কে যারা পড়েছেন, তারা ঘুরে ফিরে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পিছনে যে কয়টি যুক্তি দিবে তা হচ্ছে,

  • অন্টোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট (Ontological Argument)
  • কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট (Cosmological Argument)
  • টেলিওলজিক্যাল আর্গুমেন্ট (Teleological Argument)
  • মোরাল আর্গুমেন্ট (Moral Argument)

এর বাইরে আপনি তেমন কোন যুক্তি পাবেন না, সে যতই বিজ্ঞ বা পণ্ডিতই হোক না কেন। তবে এর মধ্যে অনেকেই হয়ত যুক্তিবিদ্যা বা দর্শনে জ্ঞানহীনতার কারণে জানেনই না উনি কোন যুক্তি দিচ্ছেন। মানে উনারা কী যুক্তি দিচ্ছেন, সেই যুক্তিটিকে আসলে কী বলে, সেই নামটিই জানেন না। এই লেখাটিতে শুধুমাত্র কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট (KALAM COSMOLOGICAL ARGUMENT) বা The first cause argument or cosmological argument নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অন্যান্য আর্গুমেন্টগুলোর যৌক্তিক উত্তর বহু সংখ্যকবার অসংখ্য দার্শনিক দিয়েছেন। এই আর্গুমেন্টের উত্তরও অসংখ্যবাদ দেয়া হয়েছে। আবারও দিচ্ছি। বর্তমান সময়ে দর্শনশাস্ত্রে এগুলো সবগুলোই খুব অগুরুত্বপূর্ণ হালকা আলোচনা বলে বেশিরভাগ দার্শনিকই এই আলোচনাগুলোকে এড়িয়ে চলেন।

কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট

দর্শন শাস্ত্র, বা ইংরেজিতে ফিলোসফি শব্দটির অর্থ হচ্ছে, “জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা”। আরো ভালভাবে বললে, মানুষের অস্তিত্ব, জ্ঞান, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, কারণ, মন এবং ভাষা সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলির অধ্যয়ন। মানব ইতিহাসে প্রায় সকল জ্ঞানই দর্শন থেকে উদ্ভুত। যেকোন বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখা করলে PhD ডিগ্রী দেয়া হয়, যার অর্থ ডক্টর অফ ফিলোসফি। এর অর্থ, যেকোন বিষয়ে উচ্চতর পড়ালেখাই আসলে দর্শনের পড়ালেখা। বস্তুতপক্ষে, দর্শনই মানুষের সকল জ্ঞানের জননী।

শুরুতেই কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু কথা বলে নেয়া জরুরি। কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট হচ্ছে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে একটি অত্যন্ত পুরনো যুক্তির কৌশলী আধুনিকীকরণ। মধ্যযুগীয় ইসলামী দর্শন Ilm al-Kalām বা ইলম উল কালাম যার অর্থ science of discourse অনুসারে এই যুক্তিটির নামকরণ করা হয়েছে [2]। ১৯৭৯ সালে উইলিয়াম লেন ক্রেগ এর একটি বইতে সেই পুরনো দার্শনিক ধারণাটিকে পুনরায় উজ্জীবিত করা হয় এবং জনপ্রিয় করার চেষ্টা হয়। মূলত, এই যুক্তিটি সেই এরিস্টোটলের আমল থেকেই চলে আসছে, যা আসলে অ্যারিস্টটল দ্বারাই প্রবর্তিত। এরিস্টোটল সর্বপ্রথম আনমুভড মুভার (কোনকিছুই ততক্ষণ নড়বে না যতক্ষণ না নড়াচড়া করা কিছু তাকে নাড়াবে – Nothing moves without a prior mover, তাই একটি আদি নড়াচড়া করা কিছুর প্রয়োজন হবে যাকে কেউ নাড়ায় নি।) ধারণার প্রবর্তন করেন, এবং কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট আসলে এরিস্টোটলের এই ধারণারই একটি প্রকরণ।

Mulsim scholar Al Ghazali

বেশিরভাগ ক্লাসিক্যাল গ্রিক দর্শনের তত্ত্বগুলো একটি সময়ে ইসলামী সাম্রাজ্যে অনুদিত হয়, ব্যপকভাবে আলোচিত হতে শুরু করে, এবং পরবর্তীতে মুসলিম পণ্ডিতগণ সেইসব ধারণার ওপর ভিত্তি করে নতুন আলোচনা করেন। আল কিন্দি থেকে শুরু করে ইসলামি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ স্কলার ইমাম গাজ্জালীও এর ওপর গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। প্রস্তাবনাটি এরকমঃ

১. যা কিছুর শুরু আছে তার শুরু হওয়ার পিছনে কোন কারণ আছে
২. এই মহাবিশ্বের শুরু আছে
৩. অতএব এই মহাবিশ্বের শুরু হওয়ার পিছনে কারণ আছে
৪. অতএব সেই কারণটি হচ্ছে ঈশ্বর

William Lane Craig
Kalam cosmological argument

তবে এই যুক্তির পক্ষে সবচাইতে জরুরি কাজটি করেন থমাস অ্যাকুইনাস (Thomas Aquinas)। থমাস অ্যাকুইনাস তার সময়ের অসম্ভব প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন, এবং তাকে বাতিল বা সমালোচনা করার সাহস বহুকাল খ্রিস্টান সমাজে হয় নি। যুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে চাওয়া বহু মানুষ বা সমালোচকদের নাস্তিক বা ধর্মদ্রোহী খেতাব দিয়ে হত্যা করে এই যুক্তির পালটা যুক্তিগুলোকে ইউরোপে চুপ করিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই ইউরোপে অন্ধকার যুগের প্রায় পুরোটাই এই যুক্তিটি রাজত্ব করেছে। কারণ এর বিপক্ষে কাউকে প্রায় কিছুই বলতেই দেয়া হয় নি।

কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের সমস্যাবলী

বিখ্যাত দুইজন দার্শনিক ডেভিড হিউম (David Hume 1711-1776) এবং ইমানুয়েল কাণ্ট (Immanuel Kant) এই কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের সমালোচনা করেন। হিউম বলেন, মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে বা তার স্রষ্টার প্রয়োজন রয়েছে, এরকম কোন ব্যাপার আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে নেই। এবং এই কার্যকারণ তত্ত্ব আর্গুমেন্ট দিয়ে মহাবিশ্বের মধ্যে বসবাস করে সমগ্র মহাবিশ্ব সম্পর্কেই এই সিদ্ধান্তে আসা যায় না। আগপিছের পরম্পরা বিবেচনা না করে এরকম সিদ্ধান্তে আসা হচ্ছে এক ধরণের যৌক্তিক ডিগবাজি খেলা।

অন্যদিকে, ইমানুয়েল কান্ট সরাসরিই এই আর্গুমেন্টকে বাতিল করে দেন। তিনি অনেকটা এরকম ভাবে বলেন, আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার অজুহাতে এরকম তত্ত্ব নিয়ে আসা মোটেও যৌক্তিক নয়(যাকে যুক্তিবিদ্যার ভাষায় আর্গুমেন্ট ফ্রম ইগনোরেন্স বলে)। আমাদের সময় এবং স্থানের মহাবিশ্বের বাইরে সময় এবং স্থান ছাড়া কোন কিছু অস্তিত্বশীল, এমন চিন্তা করা সম্ভব নয়।

কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট একটি ডিডাকটিভ আর্গুমেন্ট, যার কিনা দুইটি প্রস্তাবনা আছে, তাই এর যেকোন একটি ভুল প্রমাণিত হওয়া মানে পুরা আর্গুমেন্টটি ভুল প্রমাণিত হওয়া। আর্গুমেন্টটি এরকম-

১। সব কিছু- যার শুরু আছে, তার কারণ আছে।
২। মহাবিশ্বেরও একটা শুরু আছে, তাহলে তারও একটা কারণ থাকতে হবে। অতএব সেই কারণটি হচ্ছে ঈশ্বর।

প্রথমে বলে নেয়া ভাল যে, হয় ঈশ্বর আছে, না হয় মহাবিশ্ব চিরন্তন (Eternal) – এভাবে শুধুমাত্র দুইটি অপশনে সীমাবদ্ধ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করলে সেটা হবে এক ধরণের লজিক্যাল ফ্যালাসি, যাকে আমরা বলি False Dichotomy fallacy। কারণ এর বাইরেও অন্য কিছু হওয়ার বা ঘটে থাকার সুযোগ আছে। হতে পারে মহাবিশ্ব অন্য কোন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট। আমরা যা জানি না। আর যা জানি না, তা সততার সাথে স্বীকার করে আমরা জানি না বলাই যৌক্তিক।

নিচে আমরা আদি কারণ বা First Cause আর্গুমেন্টটির প্রথম প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করবো, আগে আবারো বলে রাখি ডিডাকটিভ আর্গুমেন্ট এর যেকোন একটি প্রেমিস ভুল হওয়া মানে সম্পূর্ণ আর্গুমেন্টটি ভুল প্রমাণিত হওয়া।

১। “সব কিছুর যার শুরু আছে, তার কারণ আছে।”

প্রথমত সবকিছুর শুরু থাকলেই যে তার কারণ থাকতেই হবে সেটা এখনই জোর দিয়ে বলা যায় না। কারণ আমরা আমাদের পৃথিবীর মধ্যেই এমন কিছু পাই যার কোন কারণ নাই, যেমন- Quantum Virtual Particles। এসব কোন রূপকথা নয়, বিজ্ঞানীরা কিন্তু ব্যবহারিক ভাবেই এর প্রমাণ পেয়েছেন। এছাড়া এই সবকিছুর পেছনেই কারণ থাকা জরুরি, এমনটা কাজ করতে পারে শুধুমাত্র মহাবিশ্বের অন্তর্গত সবকিছুর জন্যে, স্বয়ং মহাবিশ্বের জন্যে নয়। অর্থাৎ স্বয়ং মহাবিশ্বের জন্য কারণ থাকতেই হবে, এমনটা নাও হতে পারে। এই বিষয়টি বোঝার জন্য গাঁথন বা বিভাজনের কুযুক্তি (Fallacy of composition or Division) বুঝে নেয়া জরুরি।

অনেক সময় কোন একটি জিনিস বা বিষয়ের কোন একটি অংশের জন্য কোন তথ্য সত্য হলেও, সামগ্রিক বিষয়টির জন্য সেটি সত্য নাও হতে পারে। Aristotle তাঁর Sophistical Refutations গ্রন্থে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন ধরুন, পানি আমাদের ভিজিয়ে দেয়, সেটি আমরা পান করি। পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দ্বারা গঠিত। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনও আমাদের ভিজিয়ে দিতে পারে বা হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনও আমরা পান করতে পারবো। বরঞ্চ, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দ্বারা যেই পদার্থটি গঠিত হয়, সেটি পানি হয়ে থাকলে শুধুমাত্র তখনই সেটি আমাদের ভিজিয়ে দিতে সক্ষম হবে এবং তখনই সেটি পান যোগ্য হবে।

আবার ধরুন, একটি ক্রিকেট টিমে শচীন, ব্রায়ান লারা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব সেরা খেলোয়ারদের নেয়া হলো। প্রত্যেকেই বিশ্বসেরা খেলোয়াড়। কিন্তু দল হিসেবেই সেটি সেরা হবে, এমন কোন কথা নেই। ধরা যাক, সকল সেরা ব্যাটসম্যান দিয়ে যদি দলটি গঠিত হয়, তাহলে বোলিং করার সময় তারা খারাপ বোলিং করবে। ফলাফল হিসেবে তারা হেরে যেতে পারে। আবার, প্রত্যেকের মধ্যে যদি বন্ধুত্বপূর্ব সম্পর্ক না থাকে, তাহলে তারা হেরে যেতে পারে। প্রত্যেকে খুবই ভাল খেলোয়ার হওয়ার পরেও, তাদের দলটি যে বিশ্বসেরা হবে, এমন কিন্তু বলা যায় না। এভাবে অংশ বিশেষের জন্য কিছু তথ্যের সত্যতার ওপর ভিত্তি করে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হচ্ছে ‘ফ্যালাসি অব কম্পোজিশন’।

এর অর্থ হচ্ছে, একটি বড় বস্তু অনেকগুলো ছোট বস্তু দিয়ে তৈরি হলে, ছোট বস্তুগুলোর বৈশিষ্ট্য যে বড় বস্তুটির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে, সেটি আগে থেকেই বলে দেয়া যায় না। সেটি হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।

অতএব আপনি যদি বলেন, যেহেতু একটি বানানো বস্তুর (ধরুন একটি ক্যামেরা) অবশ্যই কারণ (তৈরির পিছনে) থাকতে হবে, তাই মহাবিশ্বেরও একটি কারণ থাকতে হবে, তাহলে এটি হবে- False Equivalence Fallacy.

কারণ হচ্ছে, Cause n Effect হচ্ছে মহাবিশ্বের (local universe) নিজের নিয়ম (law)। তাই যা কিছু এর মধ্যে অবস্থিত, আমাদের এই স্পেস্টাইম ইউনিভার্স, সেসবের অন্তর্গত সবকিছুর জন্য এই নিয়ম কাজ করবে। একটি ক্যামেরা বা বস্তু মহাবিশ্বের মধ্যকার বস্তু, তাই তার উপর Cause n Effect নিয়ম বর্তাবে। স্পেসটাইম ইউনিভার্সের পূর্বে স্পেসটাইম ইউনিভার্সের নিয়ম খাটবে কিনা, সেটি প্রমাণ সাপেক্ষ।

অর্থাৎ, যেহেতু এটি মহাবিশ্বেরই একটি নিয়ম, তাই খোদ মহাবিশ্বের ওপর তা বর্তাবে না, কারণ খোদ মহাবিশ্ব, মহাবিশ্বের মধ্যে অবস্থিত নয়। এটি জরুরি নয় যে, কোন এক মহাবিশ্বের মধ্যকার নিয়ম সার্বিকভাবে সেই মহাবিশ্বের উপরই বর্তাবে। এবং এটি আপনি প্রমান করতে পারবেন না পরীক্ষানিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ বা পর্যবেক্ষকের অভাবে। কারণ আপনি তো মহাবিশ্বের বাইরে থেকে আপনার মহাবিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন না।

তবে অবশ্যই এর অভ্যন্তরীণ সবকিছু উপর Cause n Effect নিয়ম কাজ করতে পারে।

লক্ষ্য করুন, মহাবিশ্বের অন্তর্ভুক্ত সব কারণই (cause) দৃশ্যমান (evident) বা Tangible (অনুধাবনযোগ্য)। কিন্তু মহাবিশ্বের আদি কারণ (First Cause )- অজানা এবং অদৃশ্য – কারণ তা মহাবিশ্বের উদ্ভবের পূর্বে।

আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখি যে সব বস্তুই পূর্বের কোন বস্তু থেকেই তৈরি হয়। একটি ক্যামেরা তার পূর্বের বিভিন্ন পার্টস থেকে তৈরি হয়। তাই সৃষ্টির প্রথম বস্তু কোন একটি বস্তু থেকেই তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। আপনি বলতে পারেন না যে একটি বস্তু (matter) আরেকটি অবস্তু (non-matter) থেকে আসা সম্ভব (ঈশ্বর কে আমরা অবস্তু-Immaterial ধরে নিচ্ছি)। মোদ্দ কথাটি হচ্ছে,

You can’t create absolute something from absolute nothing. You can’t, and not even God can, create something material from the immaterial.

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, যদি শুন্য থেকে সবকিছু আসে, তাহলে আমরা কেন সবসময় তা দেখি না। বা আমাদের বাসায় হঠাৎ শুন্য থেকে কেন এক কোটি টাকা সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে না?

এর কারণ হচ্ছে- আমরা মহাবিশ্বের ভিতরে থেকেই পর্যবেক্ষণ করি, এর বাইরে থেকে নয়। আমাদের এই মহাবিশ্ব হচ্ছে স্পেসটাইম মহাবিশ্ব। যার দৈর্ঘ্য প্রস্থ উচ্চতা এবং আরেকটি ডাইমেনশন- সময় রয়েছে। এই স্পেসটাইম মহাবিশ্বের সকল নিয়ম শুধুমাত্র এই মহাবিশ্বের অন্তর্গত সবকিছুর জন্য। এর বাইরে এগুলো কাজ করবে না। অর্থাৎ আমাদের ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো সেখানে ইনভ্যালিড বা অকার্যকর।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে- এই তর্কের প্রথম অংশই ভুল, তাহলে সে হিসেবে পুরাটাই ভুল হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

কিন্তু আস্তিক ভাইদের খাতিরে আমি ব্যাপারটা নিয়ে আরও আলোচনা করবো। মহাবিশ্বের প্রথম ঘটনা হচ্ছে বিগ ব্যাং। ঠিক এরপর থেকেই সময়ের উৎপত্তি। তাই বিগ ব্যাং এর পূর্ববর্তী যেকোন কিছুই হচ্ছে Pre-Universe। তাই বিগ ব্যাং এর কারণ যাই হোক না কেন তা হতে হবে Pre-universe. আর আপনি Pre-Universe এর কোন কিছু হিসেব বা পর্যবেক্ষণ (measure or observe) করতে পারবেন না।

তাই তর্কের খাতিরে যদি আমরা ধরেও নিই, যে আমাদের মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে বিগ ব্যাং থেকে এবং তার পেছনে একটি কারণ আছে, তারপরেও আমরা বলতে পারি না কারণটি আসলেই কী, পর্যবেক্ষণের অভাবে।

আপনি এটাও বলতে পারেন না যে আপনার অস্তিত্ব আছে বলে আর কারো বা কোন কিছুর অস্তিত্ব নাই। আমাদের মহাবিশ্বই সবকিছু-এর বাইরে নাই (be-all-and-end-all) তা আপনি প্রমানসহ বলতে পারেন না। হতে পারে আমরা অন্য বড় কিছুর একটি অংশবিশেষ মাত্র (Multiverse/Meta universe বা অন্য কিছু)।

আপনি বলতে পারেন কোন কিছু অন্য কিছু থেকেই আসবে। তবে এর মানে এই নয় যে, কোন কিছু শুন্য থেকে আসতে পারবে না। এবং সেটি আপনি প্রমানও করতে পারবেন না কারণ আপনি পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের মহাবিশ্বে পরম শুন্য (Absolute zero) পাবেন না। যেহেতু পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন না সেহেতু অনর্থক আগডুম বাগডুম বাজিয়ে লাভ নেই।

আবার আপনাকেই যদি বলা হয় প্রমান করেন যে কোন কিছু অন্য কিছু থেকে আসে, আপনি তখন প্রমান দিবেন মহাবিশ্বের অন্তর্ভুক্ত কোন কিছু থেকেই (যেমন ক্যামেরা ), মহাবিশ্বের বাইরে থেকে নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে পরম শুন্য (absolute zero/nothing) থেকে কোন কিছু আসতে পারবে না বা পারে না সেটা আপনিও (আস্তিক ভাইজানরা) প্রমাণ করতে পারবেনই না।

তাই আমরা বলতে পারি, Cause n Effect এর নিয়ম শুধুমাত্র মহাবিশ্বের ভিতরের সবকিছুর জন্যেই প্রযোজ্য হয়। তবে স্বয়ং মহাবিশ্বের জন্যে নয় বা নাও হতে পারে।

কালাম কজমোলজীক্যাল আর্গুমেন্ট এর মাধ্যমে আস্তিকরা বেশির বেশি এটি প্রমান করতে পারবে যে মহাবিশ্ব তৈরির পিছনে একটি কারণ বা ঘটনা বা ঘটনাপ্রবাহ থাকতেই হবে ( যেটি আস্তিক নাস্তিক সবাই মানে), তবে সেই কারণটি যে ঈশ্বর হবে , সেটি কোনভাবেই উনারা প্রমান করতে পারবেন না।

তো এখন কি করা !! এই বিপদ থেকে বাঁচার জন্যে আস্তিক ভাইজানরা তখন একটি নিজের মত স্পেশাল সংজ্ঞা বানালেন সৃষ্টিকর্তার – যিনি কিনা সময়হীন, শুরুহীন, স্পেসহীন, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী ইত্যাদি। কিন্তু আসলেই কী তা? ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে আমরা যেই ঈশ্বরদের কথা জানি, তারা কী স্পেস টাইম ইউনিভার্সের উর্ধ্বে? বাইবেল, কোরান বা বেদের ঈশ্বরেরা কিন্তু স্পেসটাইম ইউনিভার্সের উর্ধ্বে কেউই নন। ধর্মগ্রন্থগুলোতে স্পষ্টতই প্রমাণ মেলে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে ঈশ্বর অমুক কাজটি করেছেন, তমুক জায়গায় বসে ছিলেন। পানির ওপরে কিংবা তিনি ফেরেশতা বানাচ্ছিলেন বা সিংহাসনে সমাসীন হয়েছেন ইত্যাদি। এগুলো কোন বৈশিষ্ঠ্যই স্পেসটাইম ইউনিভার্সের উর্ধ্বে নয়।

তাহলে একি ভাবে আমরা বিশ্বাস করতে পারি- সুপারম্যান , স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান, ড্রাগন ইত্যাদি। কারণ সংজ্ঞা অনুযায়ী এদেরকেও খালি বিশ্বাস করে নিলেই হল, আর কিছু না। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, আমি জানি না সেখানে কি আছে, কিন্তু কিছু একটা থাকার কথা, তাই কিছু একটা বানিয়ে দিয়ে তার একটা স্পেশাল সংজ্ঞা দিয়ে দিলাম (i.e. Ontological argument ), ব্যাস! হয়ে গেল প্রমান!!!

যদিও মহাবিশ্বের শুরু আছে নাকি নাই সেটা নিয়ে এখনও যথেষ্ট বিতর্ক আছে। এর মূল কারণ হচ্ছে- Second law of thermodynamics – Entropy বাড়তেই থাকবে মহাবিশ্বের এবং শক্তি ফুরিয়ে যাবে…

কিন্তু আমি যদি ব্যাপারটা এভাবে দেখি যে, প্রত্যেক বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে পরবর্তী নতুন মহাবিশ্বের একটি Factory Reset হয়, মানে আবার Entropy শুন্য হয়ে যায়। তাহলেই তো Second law লঙ্ঘন হচ্ছে না।

ধরেন, আমি জন্ম হওয়ার টাইমে আমার Entropy = 0 . আমার আগের Entropy কি ছিল সেটা এখানে প্রসঙ্গহীন। এখন এনালজি হিসেবে আমার বাবা-মা কে মহাবিশ্বের পূর্বের অবস্থা ধরুন এবং আমাকে বিগ ব্যাং পরবর্তী মহাবিশ্ব ধরুন। আবার একইভাবে আমার বাচ্চা (পরবর্তী মহাবিশ্ব) হওয়ার টাইমে তার Entropy হবে শুন্য।এভাবে করে Thermodynamics এর কোন সুত্র লঙ্ঘন না করেই কিন্তু মহাবিশ্ব চলতে পারে। (যদিও এটি একান্ত আমার নিজের ধারণা মাত্র, প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক ধারণা নয়)। ব্যাপারটা হাস্যকর হচ্ছে তখনই যখন আপনি বলবেন যে Infinity বাস্তবে সম্ভব না, তাই মহাবিশ্ব চিরন্তন নয়, অথচ আপনেরাই আবার ঈশ্বর কিছু স্পেশাল পাওয়ার দিয়ে তাকে আপনার নিজেরই যুক্তির উর্ধ্বে উঠিয়ে তাকে Infinity রুপ দিচ্ছেন!

যুগ যুগ ধরে বেচারা আস্তিক ভাইয়েরা আমাদের বিজ্ঞানের গ্যাপ গুলার পিছনে পরে আছে, কারণ এসব দিয়েই উনারা খাচ্ছেন!! যেখানে বিজ্ঞান চুপ, সেখানেও উনাদের স্পেশাল ঈশ্বর প্রদত্ত নলেজ আছে। কালাম আর্গুমেন্ট হচ্ছে এইরকম একটি গ্যাপ (Unobservable Cause) দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার আরেকটি ভণ্ডামির প্রমাণ। যেহেতু বিগ ব্যাং এর পূর্ববর্তী cause আমাদের পক্ষে Measure বা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না, তাই উনারা এই গ্যাপটিকে লুফে নিয়ে বানিয়ে দিল তাদের অতি পরিচিত (এবং আদ্রিত )- God of the Gaps।

দর্শণ বা যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান

এরিস্টোটলের আদিকারণ প্রস্তাবনা দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টাটি দেখার সময় প্রশ্ন জাগে, এই ধরণের যুক্তি কিংবা দর্শণের জ্ঞান প্রয়োগ করা ইসলামের দৃষ্টিতে কেমন। দর্শন বা যুক্তিশাস্ত্র অধ্যয়ন সম্পর্কে ইসলামের অবস্থান কী? আল ফিকহুল আকবর একটি আদি ইসলামি আকিদা বিষয়ক গ্রন্থ। ইমাম আবু হানিফার লিখিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অক্ষত রয়ে যাওয়া এটি অন্যতম একটি গ্রন্থ। আসুন, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবের অনুদিত এই বইটি থেকে দর্শন বিষয়ক অধ্যায়টি পড়ি। [3]

ইসলামে যাচাই
কালাম কসমোলজিক্যাল 6
কালাম কসমোলজিক্যাল 8
কালাম কসমোলজিক্যাল 10
কালাম কসমোলজিক্যাল 12
কালাম কসমোলজিক্যাল 14
কালাম কসমোলজিক্যাল 16

ইসলামে বিবেক বিবেচনা ব্যবহার নিষেধ

ইসলামে ধর্ম বিষয়ে মানুষের অভিমত ও বিবেক বিবেচনাকে সরাসরিই নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সুনান আবু দাউদে হযরত আলীর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, ধর্মের মাপকাঠি কখনো মানুষের বিবেক বিবেচনা কিংবা অভিমতের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। এটি হচ্ছে শুধুমাত্র নির্দেশনা পালন [4],

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
১/ পবিত্রতা অর্জন
পরিচ্ছেদঃ ৬৩. (মোজার উপর) মাসাহ্ করার নিয়ম
১৬৪। আ‘মাশ (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছে (‘আলী (রাঃ) বলেনঃ) ধর্মের মাপকাঠি যদি রায়ের (মানুষের মনগড়া অভিমত ও বিবেক-বিবেচনার) উপর নির্ভরশীল হত, তাহলে মোজার উপরিভাগের চেয়ে তলার দিক মাসাহ্ করাই অধিক যুক্তি সঙ্গত হত। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (পায়ের) মোজাদ্বয়ের উপরিভাগই মাসাহ্ করেছেন।[1]
সহীহ।
হাদীসটি ওয়াকী‘ (রহঃ) আ‘মাশ হতে তাঁর (উপরোক্ত) সানাদে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে (‘আলী (রাঃ) বলেনঃ) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর মোজার উপরিভাগ মাসাহ্ করতে দেখার পূর্বে পায়ের তলার দিক মাসাহ করাকে অধিক যুক্তিসঙ্গত মনে করতাম। ওয়াকী’ বলেনঃ এখানে ‘উপরিভাগ’ দ্বারা বুঝানো হয়েছে (পায়ের) মোজাদ্বয়ের উপর। হাদীসটি আ‘মাশ থেকে ঈসা ইবনু ইউনুসও ওয়াকী‘র অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবুস্ সাওদা হাদীসটি ইবনু ‘আবদি খাইর হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ আমি ‘আলী (রাঃ)-কে অযু করার সময় তাঁর দু’ পায়ের উপরিভাগ ধৌত করতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, যদি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এরূপ করতে না দেখতাম’ …। অতঃপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আ‘মাশ (রহঃ)

পরিশিষ্ট

তারপরেও ধরে নিচ্ছি, কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট কিছুটা আলাপ আলোচনা করে দেখার মত গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্গুমেন্ট, যদিও শুধুমাত্র যুক্তিতর্কের খাতিরেই তা ধরে নিচ্ছি। তাহলে ওপরে বর্ণিত গল্পটি ভালভাবে পড়ে নিচের উত্তরগুলো দিতে হবে।

প্রশ্ন ১। হয়তো মহাবিশ্বের তিনজন বা চারজন গডফাদার রয়েছে। আদি কারণ হিসেবে একজন গডফাদারই যে রয়েছে, আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন? আপনার যুক্তি কী এটাই, যে একাধিক হলে তারা কোমড় বেঁধে ঝগড়া শুরু করবে? তাই তারা একাধিক হতে পারে না?

প্রশ্ন ২। হয়তো মহাবিশ্বের উদ্ভবের পেছনে সেরকম কোন গডফাদারই আসলে নেই। মহাবিশ্বের উদ্ভভ ঘটছে বিভিন্ন নিতান্তই প্রাকৃতিক কারণে। মহাবিশ্বে নানা ধরণের ঘটনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই খুবই যৌক্তিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ রয়েছে। মহাবিশ্বে নানা ঘটনা ঘটতে থাকলেই তার পেছনে একজন ঈশ্বর আছে, এর এভিডেন্স কী?

ক। বিদ্যুৎ চমকেছে। এর কারণ যতদিন অজানা ছিল, আপনারা ধরেই নিয়েছেন ঈশ্বর ক্ষেপে গিয়ে শয়তানদের বিদ্যুৎ দিয়ে পিট্টি দিচ্ছেন। কিন্তু এখন আমরা জানি বিদ্যুৎ কেন চমকায়। এর পেছনে কোন অলৌকিক সত্ত্বা নেই।
খ। আপনি আকাশে উড়ে চলে যাচ্ছেন না, বা পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে ছিটকে পরছেন না। আপনি ভাবছেন ঈশ্বর বা কোন দেবতা আপনাকে পৃথিবীতে আটকে রেখেছে। কিন্তু আমরা বলি, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে এমন হচ্ছে। এখানে কোন অলৌকিক সত্ত্বা কল্পনার দরকার নেই।
গ। অন্যান্য প্রতিটি ঘটনার পেছনে ঈশ্বর ছাড়াও অন্যান্য প্রমাণিত এবং পর্যবেক্ষণযোগ্য কারণ থাকতে পারে। ঈশ্বরের নির্দেশ ছাড়াও নিতান্তই ভৌত ও প্রাকৃতিক কারণে ঘটনাগুলো ঘটে থাকতে পারে। কোন কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রক ছাড়াই।

৩। ধরে নিচ্ছি সব কিছু সৃষ্টির পেছনেই একজন ঈশ্বর আছে। কিন্তু তিনি যে আপনার ধর্মেরই ঈশ্বর, তার প্রমাণ কী? আপনি মুসলিম পরিবারে জন্মেছেন এটি একটি ঘটনা মাত্র। তাতে আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ হয় না। ঠিক যেমন আপনার নাম জন হলে, আপনি খ্রিস্টান পরিবারে জন্মালে তাতে ঈশ্বর এবং বাইবেলের সত্যতা প্রমাণ হয় না।
– আপনি বললেন, আপনার নবী আপনাকে তা জানিয়েছে। কিন্তু নবী যে সত্য বলেছে, এরকম প্রমাণ পেয়ে আপনি ধর্মটি গ্রহণ করেছেন নাকি আগে ধর্মটি গ্রহণে বাধ্য হয়ে পরে ধর্মটির সপক্ষে প্রমাণ খুঁজেছেন?

৪। ধরে নিচ্ছি মহাবিশ্বের স্রষ্টা আপনার আল্লাহপাকই সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন এবং নিয়ন্ত্রণ করছেন। সব গ্রহ নক্ষত্র থেকে শুরু করে সলিমুদ্দীন যে আজকে শুকনো মরিচ ডলে ভাত খাবে, এইসব সেই চালাচ্ছে। তাহলে যুক্তিবিদ্যার বেসিক প্রশ্নটিই এখানে আসে, সেই চালককে কে চালাচ্ছে।

তাকে কে চালাচ্ছে? তার গডফাদার কে? তার মত বুদ্ধিমান সত্ত্বা কী এমনি এমনিতেই আছে বা হয়ে গেছে? তাকে কে সৃষ্টি করলো? আপনারা নিজেরাই বলেছেন সব কিছুর স্রষ্টা থাকতে হবে। ধরুন আমি একটি রোবট বানিয়েছি, তাহলে আমি স্রষ্টা আর রোবটটি সৃষ্টি। তাহলে এখানে আপক্ষিকভাবে আমি স্রষ্টা এববং আমার স্রষ্টা কে, তাই আপনার জিজ্ঞাসা। একইসূত্র ধরে, আপনার স্রষ্টার স্রষ্টা কে তা জিজ্ঞেস আমি করতে পারি, আপনার যুক্তি মেনেই। তার স্রষ্টা কে? তার স্রষ্টা কে?…………….. এভাবে চলতেই থাকবে।

– উত্তরে আপনি বললেন, যেহেতু একজন আদিকারণ থাকতেই হবে, সেহেতু আল্লাহই সেই আদি কারণ। তা না হলে তাকে কে চালাচ্ছে, তার গডফাদারকে কে চালাচ্ছে, তার গডফাদারকে কে চালাচ্ছে, এই ইনফিনিট রিগ্রেসের মধ্যে আমাদের পরে যেতে হবে। সেটা যেহেতু সম্ভব নয়, তাই ধরে নিতে হবে, আল্লাহই মূল গডফাদার। তার উপরে কেউ নেই।

– আপনাকে প্রশ্ন করা হলো, ইনফিনিট রিগ্রেস এড়াবার জন্য আপনি আল্লাহ, মানে আপনার স্রষ্টা ঈশ্বরকেই আদি কারণ ধরে নিচ্ছেন কোন এভিডেন্সের ভিত্তিতে? এমনও তো হতে পারে, আল্লাহর স্রষ্টা হচ্ছে কাল্লাহ, কাল্লাহর স্রষ্টা হচ্ছে চিল্লা। সেই আদি কারণ। চিল্লার কোন স্রষ্টা নেই। কারণ চিল্লা নামক স্রষ্টাতে গিয়েই আমাদের ইনফিনিট রিগ্রেসে পরার ভয়ে থেমে যেতে হবে।

তাহলে, আমরা আল্লাহতে গিয়ে থামবো, না চিল্লাতে থেমে যাবো, নাকি ভাববো চিল্লা নামক স্রষ্টার উপরে আরো ছয়জন গড আছে, এরপরে আর কেউ নেই। অর্থাৎ কত নম্বরে বা কততম স্টেপে গিয়ে থামবো, তা নির্ধারণ করছেন কোন এভিডেন্সের ভিত্তিতে?

মানে, আদি কারণ হিসেবে আমরা কয়টি স্টেপ উপরে যাবো, একটি না দুইটি বা পনেরো লক্ষ ছাপ্পান্নটি, তা নির্ধারণ করছেন কোন এভিডেন্সের ভিত্তিতে?

যমজ বাচ্চাদের গল্প

এক মুমিন এক যমজ বাচ্চাদের গল্প ইনবক্সে পাঠালেন, এবং বারবার উত্তরের জন্য তাগাদা দিতে লাগলেন। উনাকে বললাম এইসব শিশুতোষ প্রশ্নের উত্তর অসংখ্যবার দিয়েছি। খুঁজে নিন। এরপরেও উনি প্রায় কাকুতিমিনতি করতে লাগলেন। উত্তর দিতেই হবে। নাছোড়বান্দা একদম। সেকারণেই লিখতে হচ্ছে।

গল্পটা অনেকটা এরকম।

যমজ বাচ্চারা মায়ের পেটের মধ্যে বসে গল্প করছে। একজন পেটের মধ্যে বসে প্রমাণের অভাবে মায়ের অস্তিত্ব স্বীকার করছে না, অন্যজন করছে। মানে একজন মায়ের এবং বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে অবিশ্বাসী, আরেকজন বিশ্বাসী। এ থেকে প্রমাণ করার চেষ্টা যে, তাদের পেটের ভেতরের পৃথিবীর বাইরেও আরেক পৃথিবী আছে। তার মা বাবা আছে। তারা এমনি এমনি হয়ে যায় নি। কেউই এমনি এমনি হতে পারে না। এমনি এমনি অস্তিত্বশীল হওয়া সম্ভব না। অর্থাৎ, এ থেকে স্রষ্টা বা আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা। যে ইহকালের বাইরেও আরেক দুনিয়া আছে। তা হচ্ছে পরকাল।

জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা, আপনার গল্প ধরেই সামনের দিকে আগাই। আল্লাহর স্রষ্টা তবে কে? আল্লাহ কীভাবে আসলো?

মুমিন বান্দা বললেন, উনি আগে থেকেই ছিলেন। উনি আদি অনন্ত।

জিজ্ঞেস করলাম, উনি যে আদি অনন্ত তার তো কোন প্রমাণ নেই। উনার কথিত মেসেঞ্জারদের কেতাবে এরকম দাবী করা হয়। এমনও হতে পারে, আল্লাহর আগের কথা কিছু মনে নেই। উনি মনে করেন, উনার কোন স্রষ্টা নেই। উনি উনার স্রষ্টা থাকার যথেষ্ট প্রমাণ না পেয়ে, নাস্তিকদের মতই যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে বিচার বিবেচনা করে নাস্তিক হয়ে গেছেন। হয়তো উনারও স্রষ্টা আছে। উনারও পাপপূণ্যের বিচার হবে। কারণ আপনার সূত্র মোতাবেক, এমনি এমনি অস্তিত্বশীল হওয়া সম্ভবই না। এইবার উনার ক্ষেত্রে আপনি আপনার যমজ বাচ্চাদের গল্পটা আরেকবার পড়ুন। একই সূত্র মেনে নিলে, তারও স্রষ্টা থাকা সম্ভব। তার পরিচিত কালের বাইরেও আরেকটি মহাকাল থাকা সম্ভব।

মুমিন বান্দা বললেন, আপনি বলতে চান, আল্লাহরও আল্লাহ আছে? কিন্তু আমাদের অস্তিত্ব থাকাটাই কী আল্লাহর অস্তিত্বের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ নয়?

আমি বললাম, আপনার যুক্তি ধরেই আলাপ করি। আমাদের যুক্তি আমি এখনো আনি নি। আপনার যুক্তি ধরেই আলাপ হচ্ছে। আমাদের যুক্তি কী সেটা পরে বলবো। আলোচনার খাতিরে আমরা নম্বর দিয়ে দিই। আল্লাহ-১ হয়তো যেইখানে আছেন, সেখান থেকে আল্লাহ-২ এর অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া অসম্ভব। আল্লাহর অস্তিত্ব থাকাটাই আল্লাহ-২ এর অস্তিত্বের সপক্ষে প্রমাণ হতে পারে। আপনার গল্পের মতই। আল্লাহ-২ হয়তো আল্লাহ-১ এর পরীক্ষা নিচ্ছেন। সরাসরি কোন প্রমাণ দেন নি, তবে ইশারা ঈঙ্গিত দিয়েছেন। এবং আল্লাহ-১ কেও প্রমাণহীনভাবে আল্লাহ-২ কে মেনে নিতে হবে। উলটাপালটা কিছু করলে, আল্লাহ-২ কে বিনা প্রমাণে বিশ্বাস না করলে আল্লাহ-১ কে আল্লাহ-২ ব্যাপক পিট্টি দেবেন।

সেই আল্লাহ-২ নামক সত্ত্বা, সেও হয়তো আমাদের মতই নাস্তিক। সেও জানে না, তারও স্রষ্টা আছে। তার নাম ধরুন আল্লাহ-৩। তারও কোন প্রমাণ নেই। সেও নাস্তিক। তাকে বানিয়েছে আল্লাহ-৪। তাকে বানিয়েছে আল্লাহ-৫। এভাবে যেতে হবে, অনন্তকাল। আপনার যুক্তি মেনেই এসব বলছি।

মুমিন বান্দা বললেন, তাহলে কোথাও না কোথাও তো থামতে হবে, নাকি এটা ইনফিনিট?

আমি বললাম, কোথাও যদি থামতে হয়, কত নম্বরে গিয়ে থামবেন? কীসের ভিত্তিতে থামবেন? কোন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে? কোন যুক্তিতে? আপনার যুক্তি অনুসারেই তা ইনফিনিট পর্যন্ত চলে যাবে। তার চাইতে আমরা যদি ভ্যালিড যুক্তি প্রমাণ তথ্য ব্যবহার করি, সেটাই কী ভাল না?

মুমিন বান্দা বললেন, তাহলে আমাদের অস্তিত্ব কীভাবে আছে?

আমি বললাম, সেটা জানার জন্য আমাদের বিজ্ঞান এবং যুক্তি ব্যবহার করতে হবে। বিশ্বাস নয়। হয়তো আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের অভাবে আমরা অনেক কিছুও জানি না। এই না জানার মানে এটি নয় যে, আমরা কোন রূপকথার গল্পে বিশ্বাস করবো। বরঞ্চ তথ্য প্রমাণ যুক্তি জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে চেষ্টা করবো, বিষয়গুলো আরো ভালভাবে জানার এবং বোঝার। এই চেষ্টাটাকেই আমরা বিজ্ঞান বলি। সেখানে অলৌকিক কোন ব্যাপার নেই। সেখানে আপনার বিশ্বাস করতে হয় না। বিশ্বাস না করলে ভয়ভীতি দেখানো হয় না। জবাই করা হয় না। কোনদিন শুনেছেন, বিগ ব্যাং থিওরি অবিশ্বাস বা সমালোচনার জন্য কাউকে জবাই করা হয়েছে? কিন্তু কোরান বাইবেল তোরাহ বেদ ইত্যাদিকে অবিশ্বাস এবং সমালোচনার জন্য এই পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। প্রাচীন রূপকথাগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য।

কিন্তু কোপাকুপি করে সাময়িক কিছু লাভ হয়তো আপনাদের হয়, সামগ্রিকভাবে আপনারা লজ্জিত এবং অপমানিতই হন। হয়তো কোপাকুপি করে আপনারা খুব সাময়িক বীরত্ব দেখাতে পারেন, কিন্তু আখেরে আপনারা নিজেদের কাছেই নিজেরা লজ্জিত হন। আপনারা মুখে বলেন আপনারা কোপাকুপির বিরুদ্ধে, কিন্তু মনে মনে ঠিকই নাস্তিক জবাই হলে উল্লাসিত হন। কারণ অন্তরে আপনারা ভীতু এবং কাপুরুষ। চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে লাভ হবে না।

অশিক্ষা কুশিক্ষা এবং অজ্ঞতার মধ্যে পৃথিবীর কোন সম্প্রদায় উটের মত মুখ ঢুকিয়ে হুরের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে, এটা সকলেই জানেন। অন্যদিকে, পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। মানব সভ্যতা অক্লান্ত পরিশ্রম করে উদ্ভাবন করছে অসংখ্য জিনিস। সকল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দেশে দেশে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মেয়েরা এখন মহাকাশচারী হচ্ছে। স্পেসশিপ চালাচ্ছে। কত মেধা থাকলে, কত রাতদিন পরিশ্রমের পরে একজন মেয়ে মহাকাশচারী হতে পারে। আর কাল্পনিক সত্ত্বার ভয় দেখিয়ে আপনাদের সৌদি আরবে মেয়েরা এতদিনে মাত্র গাড়ি চালাবার অনুমতি পেলো। ভাবুন তো, কী ভয়াবহ ব্যাপার!

মুমিন বান্দা বললেন, ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ এবং সুমহান মর্যাদা। গাড়ি চালানো তো ড্রাইভারের কাজ। প্লেন চালাবে শ্রমিকেরা। ইসলাম নারীকে রাজরানীর মর্যাদা দিয়েছে। তাই এইসব ছোট কাজকর্ম, খাটুনির কাজকর্ম ইসলাম নারীকে দিয়ে করায় না। নারীরা পায়ের ওপর পা তুলে বাচ্চা জন্ম দিবে আর আরাম করবে।

আমি বললাম, বাহ, অসাধারণ আপনাদের সুমহান মর্যাদা এবং সর্বোচ্চ সম্মান। আপনার সাথে আর আলাপ করতে ইচ্ছা করছে না। যথেষ্ট হয়েছে। ভাল থাকবেন।

মুমিন বান্দা বললেন, তাইলে স্বীকার করেন, আপনি হেরে গেছেন?

আমি বললাম, আচ্ছা। ঠিক আছে। স্বীকার করে নিলাম। খুশি হয়েছেন?


আরও পড়ুনঃ

তথ্যসূত্র

  1. Causality []
  2. Kalam cosmological argument []
  3. আল-ফিকহুল আকবর (বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা), ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস। জাহাঙ্গীর, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ। আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স। []
  4. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ১৬৪ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

10 thoughts on “কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট

  • June 26, 2018 at 8:00 AM
    Permalink

    খুবই যুক্তিপূর্ন জ্ঞানভিত্তিক আলোচনা মহাবিশ্ব সৃষ্টির পিছনে কোন কারন নিয়ে। আপনার নিজস্ব ব্যক্তিগত ধারনাটাও যথাযোগ্য। আমার মতে, মহাবিশ্ব যদি আকস্মিক কোন ঘটনার ফসল হয়ে থাকে, তাহলে এই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে তার কোন ধংব্স হবে না। কিন্তু আজকের বিজ্ঞান বলছে, এই মহাবিশ্বের ব্যবস্থাপনা একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। যেহেতু ধ্বংস হয়ে যাবে, সেহেতু মহাবিশ্ব আকস্মিক কোন ঘটনার ফলে সৃষ্ট কোন ফসল হতে পারে না, এটিকে সৃষ্টি করা হয়েছিল।

    যদি কেউ মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে না থাকে, তাহলে এই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে, এটি কখনও ধ্বংস হবে না, যা বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্যের বিরুদ্ধে যায়। এটা আমার ব্যক্তিগত ধারনা।

    Reply
  • June 26, 2018 at 9:22 AM
    Permalink

    আমার ধারনা, মহাবিশ্ব যদি কারো দ্বারা সৃষ্টি না হয়ে থাকে, তাহলে এর ধ্বংস অসম্ভব, মানে অনন্তাকাল ধরে চলতে থাকবে। কিন্তু, বিজ্ঞান বলছে, এই মহাবিশ্বের ব্যবস্হাপনা একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি ধ্বংস হয় তাহলে একক কোন শক্তি দ্বারা এটা সৃষ্টি হয়েছিলো। প্রুফ হিসাবে আমরা কুরআনকেই বেছে নেই। কিন্তু, এটা কি ভ্যালিড এভিডেন্স?

    Reply
  • July 11, 2018 at 11:58 PM
    Permalink

    খুবই তথ্যবহুল এবং যুক্তিযুক্ত লেখা। আবার পড়ছি।

    Reply
  • October 18, 2018 at 2:57 AM
    Permalink

    একটা পোস্টের ভিতর এতগুলা তথ্য ছিল যা গলধকরণ করার জন্য পাশে Google Search অপশন নিয়ে বসতে হল। মোটকথা, অনেক কিছুই জানা হল। ধন্যবাদ আসিফ ভাই!

    Reply
  • October 19, 2018 at 2:51 PM
    Permalink

    আজকে মন দিয়ে বুঝে পড়লাম ভালো লাগল ধন্যবাদ আসিফ ভাই।

    Reply
  • October 29, 2018 at 4:46 AM
    Permalink

    October 28, 2018

    ইসলামিক জীবন বিধান বা নতুন/নাস্তিক্য জীবন বিধান

    আল্লাহর বানী, “সত্য আসিয়াছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হবেঃ” নাস্তিকগন যদি সত্যিই মানুষের ভালো চান ধর্মকে ও নবীদেরকে গালি না দিয়ে, ধর্ম বিশ্বাসীদেরকে সুরসুরি না দিয়ে, অনভিজ্ঞ লোকদের সাথে কথা না বলে একটি পুর্নাঙ্গ জীবন বিধান দিন। যদি আপনার বিধান (যেমন পিতা মাতার সম্পদ বিতরন, মহিলাদের জীবন (যদি পুরুষদের থেকে আলাদা মনে করেন), কিভাবে বিয়ে হবে নাকি বিয়ের দরকার নেই, বিচার ব্যবস্থ্যা, মায়ের সাথে আপনার মেলামেশার কারনে সন্তান এলে সে আপনার ভাই হবে না আপনার সন্তান হবে,  বিজ্ঞান, জন্ম-মৃত্যু, গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে, ইত্যাদি) উৎকৃষ্ট হয় তবে আল্লাহর ঘোষনা অনুযায়ী আল্লাহর আইন বিলুপ্ত হবেই।

    অন্যদিকে আপনার উদ্দেশ্য যদি হয়ঃ

    ১। ইসলামকে হেয় করে কিশোর নবীনদের বিভ্রান্ত করা;

    ২। তৃতীয় ব্যক্তি/ প্রতিস্টান থেকে টাকা খেয়ে কোরান-হাদিসের ভুল ব্যখ্যা করে/ব্যখ্যা গোপন রেখে ইসলামের বিরোধিতা করা, যা আগেও করেছে, এখনো করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবে;

    ৩। লেখা-লেখি করে web site থেকে টাকা আয় করা। Web Site যত বেশী ব্যবহার তত বেশী টাকা। ইসলামকে যত বেশী শুরশুরি দিবেন তত বেশী সমালোচনা এবং তত বেশী টাকা। ব্যবসাটা মন্দ নয়। 

    তাহলেও আল্লাহর ঘোষনা “সত্য আসিয়াছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হবে” কার্যকর হবে। অর্থাৎ আপনাদের দিন শেষ এবং ততক্ষনে কিছু আয় করে নিলেন, বিদেশের ভিসা পেলেন, বিধর্মীদের ভালোবাসা পেলেন, ইত্যাদি।

    আপনাদের মনে হতে পারে ইসলামের এই সমালোচনা আমিই প্রথম করলাম। কিন্তু
    আপনাদের সমালোচনার মধ্যে কোনো নতুনত্ব নেই (একেই বলে চর্বিত চর্বন)। নতুনত্ব সমালোচনা ছাড়া ১,৪০০ বছর পরে উন্নত বিজ্ঞানের যুগেও আপনাদের জ্ঞান বেড়েছে বলে মনে হবে না।

    Reply
    • August 31, 2021 at 2:18 PM
      Permalink

      @Sarder Nayeem
      আপনি বলেছেন আল্লাহর বানী, “সত্য আসিয়াছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হবে” … ১৪০০ বছর তো পার হয়ে গেল ভাই, আর কবে হবে? … বরং এবার বলতে শুরু করুন “বিজ্ঞান আসিয়াছে, ধর্ম বিলুপ্ত হবে” … আধুনিক বিজ্ঞান (এর আগে বিজ্ঞানের প্রসার খুব সীমিত ছিল) গত ৭০/৮০ বছরে ধর্মের মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছে … শিক্ষা ও জ্ঞান-এর প্রসারের সঙ্গে সব ধর্মে হু হু করে ধর্মত্যাগী বাড়ছে … বিজ্ঞানের ১৪০০ বয়স হলে কি হবে সেটা আশাকরি অনুমান করতে পারবেন

      আপনি “পুর্নাঙ্গ জীবন বিধান” দাবি করেছেন … দেশে দেশে যে সংবিধান ও আইন ব্যবস্থা আছে তা আপনার কোরানের থেকে ১০০০০ গুন বেশি সম্পূর্ণ ও সামগ্রিক … কোরানের তো একেকটা আয়াতের ৫০ রকম মানে হয় এবং তার উপর ভিত্তি করে ইসলামের ৫০টা শাখা আছে … তারা একে অন্যকে মানে না … কোরান বুঝতে আরো ১০টা বই লাগে … কোরান আবার পুর্নাঙ্গ হলো কবে ?

      আপনি কোরানের বিজ্ঞানের কথা বলেছেন … কোরানের বিজ্ঞান যদি সঠিক হতো তবে সমতল পৃথিবী হতো, রাতে আল্লার আসনের তলায় সূর্য থাকতো, পৃথিবীর উপর সাততলা জান্নাত হতো, নবীদের তৈরী রকেট হাজার বছর আগে চাঁদে পৌঁছে যেত … তামাশার একটা সীমা আছে তো ?

      আপনার অভিযোগ নাস্তিকরা website থেকে টাকা উপার্জন করছে … তা করুক না একটু … ধর্মের নামে মিথ্যাচার করে তো আপনারা ১৪০০ বছর ধরে অনেক উপার্জন করেছেন … রোজগারে কি টান পড়ছে নাস্তিকদের জন্য ? … তাই কি এতো ক্ষোভ এতো অভিযোগ ?

      Reply
  • April 9, 2019 at 6:35 PM
    Permalink

    “মধ্যযুগীয় একজন ইসলামী দার্শনিক কালাম এর নামানুসারে এই যুক্তিটির নামকরণ করা হয়েছে।” – এইসব মনগড়া কথা কেন লেখেন? ডক্টর ক্রেইগের ক্বালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট বইটির কথা বললেন, পড়েছেন সেটা, সেখানে আছে লেখা? নাকি কোথাও থেকে কপি-পেস্ট করেছেন তার জন্য এই ধরণের ডাঁহা মিথ্যাকথা লেখার মাঝে ঢুকে যায়? যেটাই হোক না কেন- এরকম সাটল তথ্য ভুল চলে আসলে একটা লেখার মূল আর্গুমেন্টে কোনো ইফেক্ট হয়তো পড়ে না, কিন্তু লেখকের অজ্ঞতা বা কোনো তথ্য যাচাই না করেই লেখায় অন্তভূর্ক্ত করার প্রবণতা নোটিশ করা যায়। আর্গুমেন্টটি ক্বালাম নামে জনপ্রিয় কারণ এই আর্গুমেন্টটির ডেভেলপমেন্টের একটা বড় অংশ মধ্যযুগের মুসলিম জ্ঞানসাধকদের নিকট। ক্বালাম শব্দের আরবী অর্থ খুব সম্ভবত জ্ঞানের আলোচনা বা এই জাতীয় অর্থ প্রকাশ করে। যারা এই সাধনা করতেন তাদের বলা হতো মুতাকাল্লিম। এইসব কারণে ক্রেইগ যখন তার পিএইচডি থিসিস জমা দেয় কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টটার উপর, সে এই কালাম নামটিই চুজ করে এবং পরে তা জনপ্রিয় হয়ে যায়।

    Reply
  • December 22, 2019 at 6:15 AM
    Permalink

    মাদ্রাসা-মক্তবের ধারে কাছে জিবনে গেছেন বলে মনে হয় না। কালাম শব্দের অর্থ ‘জ্ঞানের আলোচনা’ কোথায় পেলেন ? কালাম শব্দের অর্থ বাক্য বা কথা । যেমন, আল্লাহর সাথে কথা বলে এক নবি ‘কালিমুল্লাহ’ উপাধি পেয়েছে। মুতাকাল্লিম শব্দটি এচমে মাফুলের ছিগা। কালাম এর নামানুযায়ী কালাম কসমলজি হওয়ার কথা বেশি গ্রহণযোগ্য এখানে। এখানে কালাম অর্থ কি বুঝায় এটি শিশুসুলভ কথা । তার নাম যদি সগির উদ্দিন হত তাহলে তা হত সগির কসমলিজি বা উদ্দিন কসমলজি। সবিশেষে, কোন কিছুর অর্থ যখন আপনি নিশ্চিত নন তাহলে কেন তার সমালোচনা বা আলোচনা করেন ?

    Reply
  • January 21, 2024 at 2:06 AM
    Permalink

    অসাধারণ লিখেছেন আসিফ ভাই। কন্টিনজেন্সি আর্গুমেন্ট নিয়েও এমন একটা লেখা চাই ✊

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *