ইসলামে হাদিসের গুরুত্ব এবং অপরিহার্যতা

Print Friendly, PDF & Email

সূচিপত্র

ভূমিকা

হাদিস নিয়ে লজ্জিত একশ্রেণির মুসলিমদের বর্তমানে খুব জোরেসোরে প্রচার প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন হাদিস নিয়ে মুক্তমনা নাস্তিক অজ্ঞেয়বাদী বা সংশয়বাদীদের অসংখ্য লেখা এবং সমালোচনার জবাব দিতে না পেরে, নাস্তিকদের প্রশ্নের তোপের মুখে তারা এখন বলতে বাধ্য হচ্ছেন, তারা আর হাদিস মানেন না! তারা বর্তমানে বলছেন, শুধুমাত্র কুরআনই যথেষ্ট, আর কিছুর প্রয়োজন নেই। যা বলবার, কুরআনেই বলা আছে, এর বাইরে যা আছে সবই বিকৃত। কিন্তু এই কথাগুলোর মধ্যে সবচাইতে বড় সমস্যাটি হচ্ছে, কোরাআন যেই পদ্ধতিতে সংকলিত হয়েছে, হাদিসও সংকলিত হয়েছে একই পদ্ধতিতে। অনেক মুসলিমই যেটি জানেন না সেটি হচ্ছে, কোরআনের হাফেজের পাশাপাশি ইসলামের ইতিহাসে ছিল হাদিসের ওপরেও হাফেজ। অর্থাৎ, কিছু লোক যেমন কোরআন মুখস্ত করেছে, লিখে রেখেছে, ঠিক একইভাবে কিছু লোক হাদিস মুখস্ত করেছে, লিখে রেখেছে। ছাত্রদেরকে তা আবার ধরে ধরে শিখিয়ে গেছে, মুখস্ত করিয়ে গেছে। এমনকি, উচ্চারণ কীভাবে করতে হবে, সেটি পর্যন্ত শিক্ষা দিয়ে গেছে। আরো যা জানা দরকার, সেটি হচ্ছে নবী মুহাম্মদ নিজেই এই ধরণের মানুষ সম্পর্কে বারবার সাবধান করে গেছেন। হাদিস সংকলনের ইতিহাস সম্পর্কে না জেনে এরা প্রায়শই নানা ধরণের অজ্ঞতাসুলভ কথাবার্তা বলে বসেন, যা সম্পর্কে তাদের বিন্দুমাত্র কোন জ্ঞান নেই সেইসব বিষয়ে বিজ্ঞ মতামত দিতে চেষ্টা করেন। দীর্ঘদিন ধরেই আমরা লক্ষ্য করছি, বিতর্কে কুলিয়ে উঠতে না পেরে অনেকেই এই চোরা পদ্ধতি ব্যবহারের চেষ্টা করছে, যা এক ধরণের অসততা। আজকের আলোচনা সেই বিষয়টি নিয়ে। আমরা প্রমাণ করবো, কোরআনই হাদিস মেনে চলার নির্দেশনা দেয়, এবং হাদিস ছাড়া কোরআন আসলে কোন অর্থ বহন করে না। উল্লেখ্য, হাদিসকে বলা হয় কোরআনের ব্যাখ্যা। নবী মুহাম্মদ, তার সাহাবী, তাবে তাবেইনগণ কোরআনকে যেভাবে বুঝেছে, যেভাবে পালন করেছে, সেটিই হচ্ছে কোরআন ও ইসলামের বিধান বোঝার বিশুদ্ধ পদ্ধতি। সেই সাথে, প্রেক্ষাপট, নাজিলের সময়, শানে নজুল ইত্যাদি বাদ রেখে শুধুমাত্র কোরআন পড়লে কোরআনের কোন অর্থই বোধগম্য হবে না, এই লেখাটিতে সেটিও আমরা প্রমাণ করবো।

হাদিস কাকে বলে?

হাদিস এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে নতুন, প্রাচীন ও পুরাতন এর বিপরীত বিষয়। এর আরেকটি অর্থ হলো, কথা। হাদিস বা আছার হলো মূলত ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদের বাণী ও জীবনাচরণ, একই সাথে তিনি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ইসলামকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন সেটি। হাদিসের উপদেশ মুসলমানদের জীবনাচরণ ও ব্যবহারবিধির অন্যতম পথনির্দেশ। কুরআন এবং হাদিসই হচ্ছে ইসলামের যেকোন নীতি, আইন কিংবা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে প্রনিধানযোগ্য গ্রন্থ। ইসলামের পরিভাষায়, নবী মুহাম্মদ যা কিছু বলেছেন, যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমতি দিয়েছেন অথবা মৌখিক বা মৌন সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদিস বলা হয়। একইসাথে, নবী মুহাম্মদ যে বিধান অনুসরণ করেছেন, যা তার প্রখ্যাত সাহাবীগণ শিখেছেন এবং পালন করেছেন, সেগুলোও হাদিসের অন্তর্ভূক্ত। যেমন, হযরত উমর তার শাসনামলে যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, সেগুলোও হাদিস হিসেবে উল্লেখিত হয়।

মূলত, ইসলামে কোরআন, তার ব্যাখ্যা হচ্ছে হাদিস, এবং এর সাথে থাকে বিভিন্ন ঐতিহাসিকের লিখিত সীরাত বা জীবনী গ্রন্থ। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে রচিত হয় তাফসীর। তাফসীর রচনার ক্ষেত্রে কোরআনের পরে হাদিসকেই সবচাইতে গুরুত্ব দেয়া হয়। এখানে সহিহ হাদিস, হাসান হাদিস, এগুলো যেহেতু অসংখ্যবার যাচাইকৃত, সেকারণে এগুলোকেই বিশুদ্ধতম তথ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, এবং শরিয়তের আইনের উৎসও এইগুলো।

হাদিসের প্রকারভেদ নিচে বর্ণনা করা হলোঃ

  • ১। ক্বওলী হাদীস: কোন বিষয়ে নবী মুহাম্মদ যা বলেছেন, অর্থাৎ যে হাদীসে তার কোন কথা বিবৃত হয়েছে তাকে ক্বওলী (বাণী সম্পর্কিত) হাদিস বলা হয়।
  • ২। ফে’লী হাদীস: মুহাম্মদের কাজকর্ম, চরিত্র ও আচার-আচরণের ভেতর দিয়ে অর্থাৎ তার কোন কাজের বিবরণ উল্লেখিত হয়েছে তাকে ফে’লী (কর্ম সম্পর্কিত) হাদিস বলা হয়।
  • ৩। তাকরীরী হাদীস: সাহাবীগণের যে সব কথা বা কাজ মুহাম্মদের অনুমোদন ও সমর্থন প্রাপ্ত হয়েছে, সে ধরনের কোন কথা বা কাজের বিবরণ হতেও শরীয়াতের দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। এইসব হাদিসকে তাকরীরী (সমর্থন মূলক) হাদীস বলে।

হাদিসের দুইটি অংশ থাকে। একটি হচ্ছে সনদ, আরেকটি হচ্ছে মতন।

সনদঃ হাদিসের মূল কথাটুকু যে সূত্র পরম্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে সনদ বলা হয়। এতে হাদিস বর্ণনাকারীদের নাম একের পর এক সজ্জিত থাকে।

মতনঃ হাদিসের মূল কথা ও তার শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।

তাহলে সুন্নাহ কাকে বলে? হাদীসের অপর নাম সুন্নাহ্। সুন্নাত শব্দের অর্থ চলার পথ, কর্মের নীতি ও পদ্ধতি। যে পন্থা ও রীতি নবী মুহাম্মদ অবলম্বন করতেন তাকে সুন্নাত বলা হয়। অন্য কথায় নবী মুহাম্মদ প্রচারিত আদর্শই সুন্নাত।

হাদিস কি ২০০ বছর পরে লিখিত?

বর্তমান সময়ে অনলাইন ফেইসবুক ইউটিউবের কল্যানে ইসলামের খুবই বেইসিক জ্ঞানহীন কিছু ইসলামিক বক্তার আবির্ভাব ঘটেছে, যাদেরকে কোরআন শব্দটির অর্থ জিজ্ঞেস করলে তারা পারেন না, অথচ তারা হাদিস অস্বীকার করে বসে আছেন। তারা তাদের অনুসারীদের বলেন, হাদিস মানা জরুরি নয়। কারণ হিসেবে তারা বলতে চান, হাদিস ২০০ বছর পরে লিখিত হয়েছে! এরকম অদ্ভুত কথা একমাত্র ইসলাম সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞানও যাদের নেই, তাদের পক্ষেই বলা সম্ভব। এইসকল কথা শুধু যে মিথ্যা তাই নয়, অজ্ঞতাপ্রসূত বোকামিও বটে। কারণ, নবী মুহাম্মদের জীবদ্দশাতেই হাদিস লিখিত হয়েছে। সেখানে, নবীর মৃত্যুর ২০০ বছর পরে হাদিস লেখা হয়েছে, এরকম কথা এতটাই হাস্যকর যে, এর কোন জবাব দেয়াও আসলে সম্ভব নয়।

মুহাম্মদ কি হাদিস লিখতে নিষেধ করেছেন?

নবী মুহাম্মদ প্রাথমিক অবস্থায় কোরআনের সাথে হাদিস মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় হাদিস লিখে রাখতে নিষেধ করেছিলেন। সেই হাদিসটি আমরা দেখে নিই। পড়ার সময় মনে রাখতে হবে, এই বর্ণনাও কিন্তু আমরা হাদিস থেকেই পাই। এই হাদিস লিখিত না থাকলে আমরা তো এই নির্দেশনাটি জানতেই পারতাম না [1]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৬/ যুহুদ ও দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণহীনতা সম্পর্কিত বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ১৬. ধীর-স্থীরভাবে হাদীস বর্ণনা করা এবং ইলম লিপিবদ্ধ করার হুকুম
৭২৩৮। হাদ্দাব ইবনু খালিদ আযদী (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমার বাণী তোমরা লিপিবদ্ধ করোনা। কুরআন ব্যাতিত কেউ যদি আমার বানী লিপিবদ্ধ করে থাকে তবে যেন তা মুছে ফেলে। আমার হাদিস বর্ণনা কর, এতে কোন অসুবিধা নেই। যে ব্যাক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করবে- হাম্মাম (রহঃ) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে; তবে সে যেন জাহান্নামে তাঁর ঠিকানা বানিয়ে নেয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)

পরবর্তী সময়ে যখন অধিক সংখ্যক কোরআনে হাফেজ তৈরি হলো, তখন মুহাম্মদ হাদিস লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেন। তিনি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন এবং হাদিস লিখে রাখার নির্দেশ দেন [2]

সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৯/ শিক্ষা-বিদ্যা, (জ্ঞান-বিজ্ঞান)
পরিচ্ছেদঃ ৪১৭. ইলম লিপিবদ্ধ করা সম্পর্কে।
৩৬০৭. মুসাদ্দাদ (রহঃ) ….. আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি যা কিছু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে শ্রবণ করতাম, তা লিখে রাখতাম। আমি ইচ্ছা করতাম যে, আমি এর সবই সংরক্ষণ করি। কিন্তু কুরাইশরা আমাকে এরূপ করতে নিষেধ করে এবং বলেঃ তুমি যা কিছু শোন তার সবই লিখে রাখ, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মানুষ, তিনি তো কোন সময় রাগান্বিত অবস্থায় কথাবার্তা বলেন এবং খুশীর অবস্থায়ও বলেন। একথা শুনে আমি লেখা বন্ধ করি এবং বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অবহিত করি। তখন তিনি তার আংগুল দিয়ে নিজের মুখের প্রতি ইাশারা করে বলেনঃ তুমি লিখতে থাক, ঐ যাতের কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন, যা কিছু এ মুখ হতে বের হয়, তা সবই সত্য।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ)

হাদিস কখন লিখিত হয়?

ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুহাম্মদের আমলেই হাদিস লিখিত হয়েছে। তাই হাদিস মুহাম্মদের মৃত্যুর ২০০ বছর পরে লিখিত, এরকম হাস্যকর কথা আর হয় না [3] [4] [5]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩/ ইলম বা জ্ঞান
পরিচ্ছেদঃ ৮১। ইলম লিপিবদ্ধ করা
১১৪। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) …. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণের মধ্য আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) ব্যতীত আর কারো কাছে আমার চাইতে বেশী হাদীস নেই। কারণ তিনি লিখে রাখতেন, আর আমি লিখতাম না। মা’মার (রহঃ) হাম্মাম (রহঃ) সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩/ ইলম বা জ্ঞান
পরিচ্ছেদঃ ৮৪। ইলম মুখস্ত করা
১২০। আবূ মুস‘আব আহমদ ইবনু আবূ বাকর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমি আপনার কাছ থেকে বহু হাদীস শুনি কিন্তু ভুলে যাই। তিনি বলবেন তোমার চাঁদর খুলে ধর। আমি খুলে ধরলাম। তিনি দু’হাত অঞ্জলী করে তাতে কিছু ঢেলে দেওয়ার মত করে বললেনঃ এটা তোমার বুকের সাথে লাগিয়ে ধর। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। এরপর আমি আর কিছুই ভুলিনি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩/ ইলম বা জ্ঞান
পরিচ্ছেদঃ ৮৪। ইলম মুখস্ত করা
১১৯। ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ লোকে বলে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বড় বেশী হাদীস বর্ণনা করে। (জেনে রাখ,) কিতাবে দুটি আয়াত যদি না থাকত, তবে আমি একটি হাদিসও বর্ণনা করতাম না। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ
“আমি সেসব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদেরকে লা‘নত দেন এবং অভিশাপকারিগণও তাদেরকে অভিশাপ দেয় কিন্তু যারা তওবা করে এবং নিজদিগকে সংশোধন আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে, ওরাই তারা, যাদের প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা বাকারাঃ ১৫৯-১৬০)
(প্রকৃত ঘটনা এই যে,) আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে কেনাবেচায় এবং আমার আনসার ভাইয়েরা জমা-জমির কাজে মশগুল থাকত। আর আবূ হুরায়রা (রাঃ) (খেয়ে না খেয়ে) তুষ্ট থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে লেগে থাকত। তাই তারা যখন উপস্থিত থাকত না, তখন সে উপস্থিত থাকত এবং তারা যা মুখস্থ করত না সে তা মুখস্থ রাখত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

এমনকি, নবী মুহাম্মদের অন্যতম প্রিয় সাহাবী হযরত আলীও হাদিস লিখে রাখতেন, যা নিচের হাদিস থেকে পরিষ্কার হয়, [6]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২২/ হজ্ব (হাজ্জ)
পরিচ্ছেদঃ ১১৭০. মদীনা হারম হওয়া
১৭৪৯। মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত এই সহীফা ছাড়া আর কিছুই নাই। তিনি আরো বলেন, ’আয়ির নামক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মদিনা হল হারাম। যদি কেউ এতে কুরআন–সুন্নাহর খেলাফ অসঙ্গত কোন কাজ করে অথবা কুরআন-সুন্নাহর খেলাফ, আচরণকারী আশ্রয় দেয়, তাহলে তাঁর উপর আল্লাহর লা’নত এবং সকল ফেরেশতা এবং মানুষের। সে ব্যাক্তির কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত কবুল করা হবে না।
তিনি আরো বলেন, মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তাদানের অধিকার সকলের ক্ষেত্রে সমান। তাই যে ব্যাক্তি কোন মুসলিমের দেওয়া নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করবে, তাঁর প্রতি আল্লাহর লা’নত এবং সকল মানুষের ও ফিরিশতাদের। আর কবুল করা হবে না তাঁদের কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত। যে ব্যাক্তি তাঁর মাওলার (মিত্রের) অনুমতি ব্যতীত অন্য অন্য কাওমের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তাঁর প্রতিও আল্লাহর লা’নত এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের। সে ব্যাক্তির কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত কবুল করা হবে না। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, “আদলুন” অর্থ বিনিময়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ)

আরো বেশ কয়েকটি হাদিসে এই বিষয়টি এসেছে। হযরত আলী যাতে হাদিস লিখে রাখতো তাকে সহীফা বলতেন। এই বিষয়টি নিচের হাদিস থেকে আরো পরিষ্কার হয় [7]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৯১২. বন্দীকে মুক্ত করা। এ বিষয়ে আবু মুসা (রাঃ) কর্তৃক নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত রয়েছে
২৮৩৩। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … আবূ জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলী (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর কোরআনে যা কিছু আছে তা ছাড়া আপনাদের নিকট ওহীর কোন কিছু আছে কি? তিনি বললেন, না, সে আল্লাহ তা‘আলার কসম! যিনি শস্যদানাকে বিদীর্ন করেন এবং প্রাণী সৃষ্টি করেন। আল্লাহ কুরআন সম্পর্কে মানুষকে যে জ্ঞান দান করেছেন এবং সহীফার মধ্যে যা রয়েছে, এ ছাড়া আমি আর কিছু জানিনা। আমি বললাম, এ সহীফাটিতে কি আছে? তিনি বললেন, ‘দীয়াতের বিধান, বন্দী মুক্তকরণ এবং কোন মুসলিমকে যেন কোন কাফিরের পরিবর্তে হত্যা করা না হয় (এ সম্পর্কিত নির্দেশ)।’
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ জুহাইফাহ (রাঃ)

হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে ইমাম মালিকের “মুয়াত্তা” সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান প্রামান্য হাদীসগ্রন্থ। তিনি প্রায় একলক্ষ হাদীস থেকে যাচাইবাছাই করে প্রায় একহাজার নয়শ হাদীস সংকলন করেছেন। তার জন্ম: ৭১১ খ্রিস্টাব্দ, ৯৩ হিজরী – মৃত্যু ৭৯৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৭৯ হিজরীর ৭ই রবিউস সানি। ইমাম মালিকের “মুয়াত্তা” গ্রন্থটি হাদীস সংকলনের ব্যাপারে বিপুল-উৎসাহ উদ্দিপনার সৃষ্টি করেছিল। এটি হাদীসশাস্ত্র অধ্যায়নে মুসলিম মণিষীদের প্রধান আর্কষণে পরিণত হয়েছিল। এর পূর্বে ইমাম আবু হানীফা দেশ-দেশান্তরে সফর করে বিপুল পরিমাণ হাদীস সংগ্রহ করেছেন তার সংখ্যাই হলো ৪০ হাজার। এই ৪০ হাজার থেকে সহীহ ও আমলযোগ্য আহকামের হাদীসগুলো বাছাই করে তিনি একটি হাদীসের কিতাব লিখেন, যার নাম কিতাবুল আছার। এ বিষয়ে সদরুল আইম্মা মুয়াফফাক বিন আহমদ ‘মানাকিবুল ইমামিল আযম’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ৪০ হাজার হাদীস থেকে বাছাই করে কিতাবুল আছার লিখেছেন। [8]

এরই ফলশ্রূতিতে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বে সর্বত্র হাদীস চর্চার কেন্দ্র কিতাবুল “উম্ম” এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের “মাসনাদ” গ্রন্থদ্বয় হাদীসের উপর গুরুত্বপুর্ণ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। এরপরে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে অনেক মুসলিম মণিষী বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর হাদীস সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে বিখ্যাত হলেন ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবূ দাউদ, ইমাম তিরমিজী, ইমাম নাসাঈ, এবং ইমাম ইবনে মাজাহ। এদের সংকলিত হাদীস গ্রন্থগুলো হলো সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে আবূ দাউদ, সুনান আত-তিরমিজী, সুনানে নাসাই এবং সুনানে ইবনে মাজাহ। এই ছয়খানা হাদীসগ্রন্থকে সন্মিলিতভাবে সিহাহ সিত্তাহ বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থ বলা হয়। আব্বাসিয় যুগে হাদীস লিপিবদ্ধের কাজ পরিসমাপ্ত হয়।

সহিহ/হাসান/জইফ/জাল হাদিস

আলোচনার শুরুতেই যেই বিষয়টি আমাদের জেনে নেয়া জরুরি, সেটি হচ্ছে, সহিহ হাদিস কাকে বলে, হাসান এবং জইফ হাদিস কাকে বলে, জাল হাদিসই বা কাকে বলে। এই বিষয়ে ইসলামের অন্যতম প্রখ্যাত ইমাম, ইমাম নববী বলেছেন, “যে হাদিসের সনদ নির্ভরযোগ্য ও সঠিকরূপে সংরক্ষণকারী বর্ণনাকারীদের সংযোজনে পরপরাপূর্ণ ও যাহাতে বিরল ও ত্রুটিপূর্ণ বর্ণনাকারী একজনও নাই, তাহাই সহিহ হাদিস। ” এর মধ্যে কী কী ভাগ রয়েছে, তা নিচে সরাসরি বই থেকে উল্লেখ করা হলো। [9]

হাদিস
হাদিস 3

সিহাহ সিত্তাহ হাদিস সংগ্রহের শর্তাবলী

ছয়টি প্রখ্যাত হাদিস গ্রন্থ যাদেরকে একত্রে সিয়াসিত্তাহ বলা হয়, এই হাদিস গ্রন্থগুলোর হাদিস সংগ্রহের ক্ষেত্রে হাদিস গ্রন্থের সংকলকগণ কী কী শর্তাবলী পালন করেছেন, সেগুলো জেনে নেয়া জরুরি [10]

হাদিস 5
হাদিস 7
হাদিস 9
হাদিস 11

হাদিস অগ্রাহ্য করার সমস্যাবলী

ইসলামের বিধিবিধানে হাদিস শাস্ত্র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কুল। যদিও ইসলামের মূল ভিত্তিই হচ্ছে বিশ্বাস, ইসলাম মৌলিকভাবে শুধুমাত্র অপ্রমাণিত কিছু বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু সেগুলো বাদ দিলে শুধুমাত্র হাদিস শাস্ত্রের কথা বিবেচনা করলে বোঝা যায়, হাদিস শাস্ত্র ইসলামের খুবই গুরুত্বপুর্ণ উপাদান। মূলত, হাদিস ছাড়া ইসলামের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। কারণ হাদিস হচ্ছে কোরআনের ব্যাখ্যা। নবী মুহাম্মদ কোরআনকে কীভাবে বুঝেছেন, কীভাবে পালন করেছেন, কীভাবে তার সাহাবীদের শিক্ষা দিয়েছেন, সেইসব কিছু। এটি বাতিল হয়ে গেলে যার যেমন খুশি কোরআনকে ব্যাখ্যা করে নিতে পারবে। এছাড়াও অনেক বিষয় রয়েছে যার বিধান সরাসরি কোরআন থেকে পাওয়া যায় না। কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি। এছাড়াও নামাজ পড়ার পদ্ধতি, কয় রাকাত পড়তে হবে, হজ্ব কীভাবে করতে হবে, রোজা কীভাবে রাখতে হবে, হাদিস ছাড়া এগুলো সবই জানা অসম্ভব হয়ে যাবে।

কোরআন হাদিস আলাদা করার উপায়

হাদিস মানে হচ্ছে, নবী মুহাম্মদের জীবন যাপন, তার নির্দেশ, পরামর্শ, বক্তব্য, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতি, মৌন সম্মতি এবং এই ধরণের সকল কিছুর সম্মিলন। হযরত মুহাম্মদের ওপর ওহীর মাধ্যমে কুরআন নাজিল হয়েছে ২৩ বছর ধরে এবং এলোমেলোভাবে। ২৩ বছরের দীর্ঘ সময় ধরে নাজিল হওয়াই হচ্ছে কোরআনকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দেয়ার প্রমাণ। যেন মুহাম্মদ প্রতিটি আয়াত মানুষকে বোঝাতে পারেন। নইলে একবারে কোরআন নাজিল করে দিলেই হতো। সেই সাথে মুহাম্মদ যদি নিজে না বলে দেন যে, এই আয়াতটি অমুক সুরার সাথে যুক্ত হবে, বা এই মাত্র এই আয়াতটি ওহীর মাধ্যমে নাজিল হলো, এগুলো না বললে কোনটি মুহাম্মদের নির্দেশ আর কোনটি আল্লাহর ওহী, তা আলাদাই করা যাবে না৷ মুহাম্মদ যে বলেছেন, এটি কুরআনের সুরা, এই কথাটুকুই হাদিস৷ হাদিস অস্বীকার করলে কুরআন ভয়ঙ্কর এক সংকটে পরে, কারণ কুরআনের কোন আয়াত মুহাম্মদের নিজস্ব বক্তব্য কিনা তা বোঝা যাবে না৷ শুধুমাত্র নবী মুহাম্মদই বলতে পারে, কোনটি আল্লাহর ওহী আর কোনটি নবীর নিজের উপদেশ বা পরামর্শ। সেটি নবী মুহাম্মদ না বলে দিলে, অর্থাৎ হাদিস না থাকলে কুরআনের আর কোন মূল্য থাকে না। যে কেউ কুরআনের যেকোন আয়াত নিয়ে দাবী করতে পারে, এটি আসলে নবী মুহাম্মদের নিজস্ব মতামত। ঐটি যে জিব্রাইলের মাধ্যমে আসা ওহী, তা নবী মুহাম্মদ নিজ মুখে না বললে বোঝার উপায় নেই।

সেইসাথে, কোন আয়াত কবে নাজিল হলো, প্রেক্ষাপট কী ছিল, আয়াত নাজিলের সময় কে কে শুনেছেন, সেগুলো অনেক কিছুই পাওয়া যায় হাদিসে। হাদিস না মানলে কোরআনের আয়াতগুলো নাজিলের প্রেক্ষাপটই বোঝা যাবে না।

কলেমায় শাহাদাহ

ইসলামের একটি অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে, কলেমা। কালেমা হচ্ছে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস সংবলিত কয়েকটি আরবি পংক্তির নাম। এর মাধ্যমেই ইসলামের প্রথম স্তম্ভ শাহাদাহ্‌ পূর্ণতা পায়। আরবিতে এর অর্থ “সাক্ষ্য দেয়া”। ইসলামে দ্বিতীয় কলেমা কলেমায় শাহাদাহ্‌ (বা শাহাদাত) বলতে আল্লাহ্‌র একত্ব ও মুহাম্মদ(সঃ) যে তার শেষ নবী তার শপথ নেয়াকে বোঝায়। শাহাদাহ্‌ আবৃত্তি করাকে সুন্নী মুসলমানেরা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি মনে করেন।

আরবিতে: أشهد أن لا إله إلاَّ لله ، وأشهد أن محمد رسول الله

ইংরেজিতে অনুবাদ: I testify that there is none worthy of worship except Allah, and I testify that Muhammad is the messenger of Allah.

বাংলায় অনুবাদ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য কিছু নেই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বার্তাবাহক|

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ভিত্তি এই শাহাদাহ এর উল্লেখ কুরআনে কোথাও নেই। এর জন্য হাদিসের সাহায্য নিতে হয়।

ইসলামে চুরির শাস্তি

ইসলামে চুরির শাস্তি হিসেবে কোরআনে বর্ণিত আছে, চোর নারী হোক বা পুরুষ, তার ডান হাত কেটে দাও। এই আয়াতে কোথাও বলা নেই, কতটুকু চুরি করলে এই আইনটি প্রযোজ্য হবে। যেমন ধরুন, আম গাছ থেকে কেউ একটি আম চুরি করলে, বা একটুকরো রুটি কেউ চুরি করলে, তার এই কৃতকর্মের জন্য কোরআনের এই আয়াত অনুসারে তার হাত কেটে দিতে হবে। কিন্তু হাদিসে আবার বলে দেয়া হয়েছে, কতটুকু চুরি করলে এই আইনটি প্রযোজ্য হবে। কোরআনে এটিও বলা নেই, এই আইনটি অপ্রাপ্তবয়ষ্ক ছেলেমেয়ে বা মানসিক ভারসাম্যহীনদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এর অর্থ হচ্ছে, হাদিস বাদ দিলে এই আয়াত আইন হিসেবে কার্যকর করা এক মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। [11]

আর চোর ও চোরনী তাদের হাত কেটে দাও, তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ, আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। আল্লাহ হলেন মহাপরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞানী।
Taisirul Quran
আর যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে, তোমরা তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসাবে তাদের (ডান হাত) কেটে ফেল, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি, আর আল্লাহ অতিশয় ক্ষমতাবান, মহা প্রজ্ঞাময়।
Sheikh Mujibur Rahman
আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আযাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
Rawai Al-bayan
আর পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও; তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হিসেবে (১)। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৫ঃ৩৮ )

মৃত মাছ কেন হালাল?

কোরআনে মৃত সকল প্রাণি খাওয়া হারাম করা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, [12] [13]

মরা প্রাণী, রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা — শুধুমাত্র এগুলোই তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন। কিন্তু কেউ যদি বাধ্য হয় এগুলো খেতে এবং তার ভেতরে খাওয়ার কোনো আকাঙ্খা না থাকে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত না খায়, তাহলে তার কোনো পাপ হবে না। আল্লাহ অবশ্যই অনেক ক্ষমা করেন, তিনি নিরন্তর দয়ালু।
( কোরআন ২ঃ ১৭৩ )

তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ।
( কোরআন ৫ঃ৩ )

উপরের আয়াত দুটি থেকে স্পষ্ট, মরা প্রাণীকে খাওয়া আল্লাহ হারাম ঘোষনা করেছেন। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, মৃত মাছ খাওয়া কী হালাল নাকি হারাম। এই বিষয়ে কুরআনে বলা হচ্ছে, [14]

তোমাদের জন্য সমুদ্র শিকার ও তা খাওয়া হালাল করা হয়েছে।
( কোরআন ৫:৯৬ )

লক্ষ্য করে দেখুন, এখানে শুধুমাত্র সমুদ্রে শিকার হালাল করা হয়েছে। নদীর মাছ বা মৃত মাছ খাওয়া কিন্তু হালাল করা হয় নি। তাহলে আহলে কুরআনের অনুসারীগণ কী মৃত মাছ খান না? মৃত মাছ বা গরু ছাগলের কলিজা খেতে হলে অবশ্যই হাদিসের শরণাপন্ন হতে হবে। শুধুমাত্র হাদিসেই বিষয়টি বিশ্লেষণ করা আছে [15]

সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ২৩/ আহার ও তার শিষ্টাচার
পাবলিশারঃ তাওহীদ পাবলিকেশন
পরিচ্ছদঃ ২৩/৩১. কলিজা ও পীলহা।
১/৩৩১৪। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের জন্য দু’ প্রকারের মৃতজীব ও দু’ ধরনের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দু’টি হলো মাছ ও টিড্ডি এবং দু’ প্রকারের রক্ত হলো কলিজা ও প্লীহা।
আহমাদ ৫৬, ৯০, সহিহাহ ১১১৮। তাহকীক আলবানীঃ সহিহ। উক্ত হাদিসের রাবী আবদুর রহমান বিন যায়দ বিন আসলাম সম্পর্কে আবুল ফারাজ ইবনুল জাওযী বলেন, তার দুর্বলতার ব্যাপারে সকলে একমত। আবুল কাসিম বিন বিশকাওয়াল বলেন, তার ভাই তাকে দুর্বল বলেছেন। আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তার হাদিস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়, তিনি দুর্বল। আবু যুরআহ আর-রাযী ও ইমাম তিরমিযি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৩৮২০, ১৭/১১৪ নং পৃষ্ঠা) উক্ত হাদিসটি সহিহ কিন্তু আবদুর রহমান বিন যায়দ বিন আসলাম এর কারণে সানাদটি দুর্বল। হাদিসটির ২৯ টি শাহিদ হাদিস রয়েছে, ১০ টি খুবই দুর্বল, ৯ টি দুর্বল, ৮ টি হাসান, ২ টি সহিহ হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ আহমাদ ৫৬৯০, দারাকুতনী ৪৬৮৭, শারহুস সুন্নাহ ২৮০৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হাদিস না মানার সবচেয়ে বড় সমস্যা

ইসলামের পুজনীয় ঈশ্বর আল্লাহ পাক একটি আয়াত নাজিল করে নবী মুহাম্মদকে স্পষ্টভাবে আর কোন বিয়েশাদি করতে নিষেধ করে দিয়েছিল। আল্লাহ বলেছেন, [16]

এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন।
( কোরআন ৩৩ঃ৫২ )

এই সুরাটি নাজিল হওয়ার পরেও নবী মুহাম্মদ বেশ কয়েকটি বিবাহ করেছেন। এমনকি, মৃত্যুর কিছুদিন আগেও তিনি বিয়ে করেছেন। যার প্রমাণ পাওয়া যায় ইবনে কাসীরের আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে [17]

হাদিস 13

এই আয়াতের কারণে সবচেয়ে বড় যেই সমস্যাটি দেখা দেয়, আল্লাহ এই আয়াতটি বাতিল বা মানসুখ করেন নি। কিন্তু মুহাম্মদ এরপরেও বিবাহ করে থাকলে তো তিনি সরাসরিই আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেছিলেন। শয়তানকে যে কারণে অভিশাপ দেয়া হয়েছিল, তার চেয়ে এটি তো আরো ভয়ঙ্কর বিষয়। এই সমস্যার সমাধান একমাত্র পাওয়া যায় হাদিসে। হাদিস অমান্য করলে মেনে নিতে হবে, মুহাম্মদ আল্লাহর হুকুম অমান্য করে কাফের হয়ে গিয়েছিলেন [18]

সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২৬/ নিকাহ (বিবাহ)
পরিচ্ছেদঃ ২. আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলের উপর যা ফরয করেছেন এবং অন্যদের জন্য যা হারাম করেছেন- আল্লাহর নৈকট্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে
৩২০৮. মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন মুবারক (রহঃ) … আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইনতিকালের পূর্বে আল্লাহ তাআলা তার জন্য হালাল করে দিয়েছিলেন যাকে ইচ্ছা তিনি মহিলাদের মধ্য থেকে বিবাহ করতে পারবেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

তারপরেও কিছু সমস্যা থাকে। উসুলে কোরআন বা নাসেখ মানসুখের নিয়ম অনুসারে, কোরআনের কোন আয়াত বাতিল বা রহিত করতে হলে আল্লাহ পাক থেকে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত দরকার হয়, যা কোরআনের ঘোষণা। কিন্তু এরকম কোন কোরআনের আয়াত পাওয়া যায় না, যেখানে ঐ আয়াতটি বাতিল করে পুনরায় আল্লাহ নবীকে বিবাহের অনুমতি দিচ্ছেন [19]

আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?
( সূরা বাকারাঃ ১০৬ )

কোরআন কী বলে?

মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনে অসংখ্যবার নবী মুহাম্মদকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কোরআনে পরিষ্কার ভাবেই বলে দেয়া হয়েছে, মুহাম্মদ কোন নির্দেশ দিলে সেটি অবশ্য পালনীয়। যারা সেটি অমান্য করবে তারা স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে। আসুন কোরআনের আয়াতগুলো পড়ি। মুহাম্মদ কোন নির্দেশ দিলে সেটি অবশ্য পালনীয় [20]

আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী উক্ত নির্দেশের ভিন্নতা করার কোন অধিকার রাখে না। যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করে সে স্পষ্টতই সত্য পথ হতে দুরে সরে পড়ল।
Taisirul Quran
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিনা নারীর সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবেনা। কেহ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সেতো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট।
Sheikh Mujibur Rahman
আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।
Rawai Al-bayan
আর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোনো (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো (১)।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৩৩ঃ৩৬ )

মুহাম্মদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে কোরআন বুঝিয়ে দেয়ার [21]

(অতীতের রসূলদেরকে পাঠিয়েছিলাম) স্পষ্ট প্রমাণাদি আর কিতাব দিয়ে; আর এখন তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আর যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
Taisirul Quran
তাদের প্রেরণ করেছিলাম স্পষ্ট নিদর্শন ও গ্রন্থসহ এবং তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে।
Sheikh Mujibur Rahman
(তাদের প্রেরণ করেছি) স্পষ্ট প্রমাণাদি ও কিতাবসমূহ এবং তোমার প্রতি নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষের জন্য স্পষ্ট করে দিতে পার, যা তাদের প্রতি নাযিল হয়েছে। আর যাতে তারা চিন্তা করে।
Rawai Al-bayan
স্পষ্ট প্রমাণাদি ও গ্রন্থাবলীসহ (১)। আর আপনার প্রতি আমরা কুরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে (২), তা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেন এবং যাতে তারা চিন্তা করে।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ১৬ঃ৪৪ )

মুহাম্মদের বিধিনিষেধ আল্লাহও মেনে চলতে বলেছে,[22]

রসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর তোমাদেরকে যাত্থেকে নিষেধ করে তাত্থেকে বিরত থাক, আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।
Taisirul Quran
অতএব রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।
Sheikh Mujibur Rahman
রাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।
Rawai Al-bayan
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমারা গ্রহণ কর এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ কর তা থেকে বিরত থাক (২) এবং তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ শাস্তি দানে কঠোর।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৫৯ঃ৭ )

আল্লাহর সাথে মুহাম্মদেরও আনুগত্য করতে হবে, যার স্পষ্ট নির্দেশনা আছে [23] [24] [25] [26] [27] [28]

যে রসূলের আনুগত্য করল, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল, কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে (জোরপূর্বক তাকে সৎপথে আনার জন্য) আমি তোমাকে তাদের প্রতি পাহারাদার করে পাঠাইনি।
Taisirul Quran
যে কেহ রাসূলের অনুগত হয় নিশ্চয়ই সে আল্লাহরই অনুগত হয়ে থাকে, এবং যে ফিরে যায় আমি তার জন্য তোমাকে রক্ষক রূপে প্রেরণ করিনি।
Sheikh Mujibur Rahman
যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি।
Rawai Al-bayan
কেউ রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল (১), আর কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে আপনাকে তো আমরা তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠাই নি।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৪ঃ৮০ )

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর আর রসূলের আনুগত্য কর আর তোমাদের ‘আমালগুলোকে নষ্ট করে দিও না।
Taisirul Quran
হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের কর্মফল বিনষ্ট করনা।
Sheikh Mujibur Rahman
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। আর তোমরা তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করো না।
Rawai Al-bayan
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর, আর তোমরা তোমাদের আমলসমূহ বিনষ্ট করো না।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৪৭ঃ৩৩ )

তোমরা আল্লাহকে মেনে চল আর তাঁর রসূলকে মেনে চল আর (মন্দ থেকে) সতর্ক থাক আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে জেনে রেখ আমার রসূলের দায়িত্ব হল সুস্পষ্টভাবে (আমার বাণী) পৌঁছে দেয়া।
Taisirul Quran
আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করতে থাক ও রাসূলের অনুগত হও এবং সতর্ক থাকো, আর যদি বিমুখ থাকো তাহলে জেনে রেখ যে, আমার রাসূলের দায়িত্ব ছিল শুধু স্পষ্টভাবে (আদেশ) পৌঁছে দেয়া।
Sheikh Mujibur Rahman
আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর রাসূলের আর সাবধান হও। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখ যে, আমার রাসূলের দায়িত্ব শুধু সুস্পষ্ট প্রচার।
Rawai Al-bayan
আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। আর সাবধানতা অবলম্বন কর; তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রাখ যে, আমাদের রাসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টভাবে প্রচার করা।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৫ঃ৯২ )

বল : আল্লাহর আনুগত্য ও রসূলের আনুগত্য কর, অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে লও তাহলে তার (অর্থাৎ রসূলের) উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী, আর তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী, তোমরা যদি তার আনুগত্য কর তবে সঠিক পথ পাবে, রসূলের দায়িত্ব হচ্ছে স্পষ্টভাবে (বাণী) পৌঁছে দেয়া।
Taisirul Quran
বলঃ তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর; অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য সে দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী; এবং তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎ পথ পাবে, রাসূলের দায়িত্বতো শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।
Sheikh Mujibur Rahman
বল, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর।’ তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে সে শুধু তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য কর তবে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।
Rawai Al-bayan
বলুন, ‘তোমরা আল্লাহ্‌র আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর।’ তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তিনিই দায়ী এবং তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্বের জন্য তোমরাই দায়ী; আর তোমরা তার আনুগত্য করলে সৎপথ পাবে, মুলতঃ রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ২৪ঃ৫৪ )

তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে লও (তাহলে তোমাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য জোর জবরদস্তি করা হবে না) কেননা, আমার রসূলের দায়িত্ব কেবল (আমার বাণী) স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া।
Taisirul Quran
আল্লাহর আনুগত্য কর এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আমার রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে প্রচার করা।
Sheikh Mujibur Rahman
তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। কিন্তু তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমার রাসূলের তো একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছে দেয়া।
Rawai Al-bayan
আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর; অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমাদের রাসূলের দায়িত্ব শুধু স্পষ্টভাবে প্রচার করা।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৬৪ঃ১২ )

বলে দাও, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসকল ক্ষমা করবেন, বস্তুতঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
Taisirul Quran
তুমি বলঃ যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমার অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসেন ও তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করেন; এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
Sheikh Mujibur Rahman
বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।
Rawai Al-bayan
বলুন, ‘তোমরা যদি আল্লহকে ভালোবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর (১), আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ্‌ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৩ঃ৩১ )

সেই সাথে, মুহাম্মদকে অমান্য করা যাবে না [29], এটিও পরিষ্কারভাবে বলা আছে,

আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তাঁর পায়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন; তাতে তারা চিরকাল থাকবে
Taisirul Quran
কেবল আল্লাহর বাণী পৌঁছানো এবং তা প্রচার করাই আমার কাজ। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।
Sheikh Mujibur Rahman
কেবল আল্লাহর বাণী ও তাঁর রিসালাত পৌঁছানোই দায়িত্ব। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।
Rawai Al-bayan
‘শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে পৌঁছানো এবং তাঁর রিসালতের বাণী প্রচারই আমার দায়িত্ব। আর যে-কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে (১)।’
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৭২ঃ২৩ )

মুহাম্মদ কী হালাল হারাম করতে পারেন?

এমনকি, কোরআনে মুহাম্মদকে হালাল হারাম নির্ধারণ করার অধিকারও দেয়া হয়েছে [30]

যারা প্রেরিত উম্মী নাবীকে অনুসরণ করবে যা তাদের কাছে রক্ষিত তাওরাত ও ইনজীলে তারা লিখিত পাবে। সে তাদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অসৎ কাজ করতে নিষেধ করে, পবিত্র বস্তুসমূহ তাদের জন্য হালাল করে, অপবিত্র বস্তুগুলো তাদের জন্য নিষিদ্ধ করে, তাদের থেকে গুরুভার সরিয়ে দেয় আর সেই শৃঙ্খল (হালাল-হারামের বানোয়াট বিধি-নিষেধ) যাতে ছিল তারা বন্দী। কাজেই যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান প্রদর্শন করে, তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করে আর তার উপর অবতীর্ণ আলোর অনুসরণ করে, তারাই হচ্ছে সফলকাম।
Taisirul Quran
যারা সেই নিরক্ষর রাসূলের অনুসরণ করে চলে যার কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জীল কিতাবে লিখিত পায়, যে মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেয় ও অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করে, আর সে তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ বৈধ করে এবং অপবিত্র ও খারাপ বস্তুকে তাদের প্রতি অবৈধ করে, আর তাদের উপর চাপানো বোঝা ও বন্ধন হতে তাদেরকে মুক্ত করে। সুতরাং তার প্রতি যারা ঈমান রাখে, তাকে সম্মান করে এবং সাহায্য করে ও সহানুভূতি প্রকাশ করে, আর সেই আলোকের অনুসরণ করে চলে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, তারাই (ইহকালে ও পরকালে) সাফল্য লাভ করবে।
Sheikh Mujibur Rahman
যারা অনুসরণ করে রাসূলের, যে উম্মী নবী; যার গুণাবলী তারা নিজদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃংখল- যা তাদের উপরে ছিল- অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সাথে যে নূর নাযিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম।
Rawai Al-bayan
‘যারা অনুসরণ করে রাসূলের, উম্মী (১) নবীর, যার উল্লেখ তারা তাদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিপিবদ্ধ পায় (২), যিনি তাদের সৎকাজের আদেশ দেন, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করেন, তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন এবং অপবিত্র বস্তু হারাম করেন (৩)। আর তাদেরকে তাদের গুরুভার ও শৃংখল হতে মুক্ত করেন যা তাদের উপর ছিল (৪)। কাজেই যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং যে নূর তার সাথে নাযিল হয়েছে সেটার অনুসরণ করে, তারাই সফলকাম (৫)।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৭ঃ১৫৭ )

হাদিসেও বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে [31]

হাদীস সম্ভার
১৩/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯৯) মিকদাম বিন মা’দিকারিব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শোন! আমাকে কুরআন দান করা হয়েছে এবং তারই সাথে তারই মতো (সুন্নাহ) দান করা হয়েছে। শোন! সম্ভবতঃ নিজ গদিতে বসে থাকা কোন পরিতৃপ্ত লোক বলবে, ‘তোমরা এই কুরআনের অনুসরণ কর; তাতে যা হালাল পাও, তাই হালাল মনে কর এবং তাতে যা হারাম পাও, তাই হারাম মনে কর। সতর্ক হও! আল্লাহর রসূল যা হারাম করেন, তাও আল্লাহর হারাম করার মতোই।
(আবূ দাঊদ ৪৬০৬, ইবনে মাজাহ ১২, দারেমী ৫৮৬, মিশকাত ১৬৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মিকদাম (রাঃ)

মুহাম্মদ কী শেষ রাসুল?

কোর আনে মুহাম্মদকে শেষ নবী বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে এখানে যেই আরবি শব্দটি এসেছে তাকে বাঙলা বা ইংরেজিতে অনুবাদ করলে সিল বা সিলমোহর হিসেবে অভিহিত করা যায়। এর অর্থ যদি এক একজন এক একভাবে করেন, তাহলে ইসলামের মূল বিশ্বাসই আর অবশিষ্ট থাকে না। আহমদিয়াগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যা ভিন্নভাবে করেছে। আরো লক্ষ্য করে দেখুন, মুহাম্মদকে শেষ নবী বলা হলেও শেষ রাসুল কিন্তু বলা হয় নি। কেউ যদি হাদিস অস্বীকার করে নিজেকে আরেকজন রাসুল হিসেবে আজ দাবী করে, কোরআনের ভিন্ন এক ব্যাখ্যা হাজির করে, তাহলে মুসলিমরাই সবচেয়ে বড় বিপদে পড়বে [32]

মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমাদের মধ্যেকার কোন পুরুষের পিতা নয়, কিন্তু (সে) আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞাতা।
Taisirul Quran
মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমাদের মধ্যেকার কোন পুরুষের পিতা নয়, কিন্তু (সে) আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞাতা।
Sheikh Mujibur Rahman
মুহাম্মাদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয়; তবে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী।* আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ। * মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী; তাঁর পর আর কোন নবী আসবেন না-এ বিষয়টি আল-কুরআনের এই আয়াত দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।
Rawai Al-bayan
মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন (১); ববং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আর আল্লাহ্ সর্বকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ।
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কুরআন ৩৩ঃ৪০ )

এদের সম্পর্কে মুহাম্মদের সতর্কবাণী

মুহাম্মদ নিজেই সেইসব ব্যক্তিদের সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছেন। সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদ তাদের নিয়েও আলোচনা করেছিলেন [33] [34] [35] [36] [37] [38] [39]

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ৬. সুন্নাতের অনুসরণ আবশ্যক
৪৬০৫। উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ রাফি‘ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অচিরেই তোমাদের মধ্যকার কোনো ব্যক্তি তার গদি আঁটা আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকাবস্থায় তার নিকট আমার নির্দেশিত কোনো কর্তব্য বা নিষেধাজ্ঞা পৌঁছবে, তখন সে বলবে, আমি অবহিত নই। আমরা যা আল্লাহর কিতাবে পাবো শুধু তারই অনুসরণ করবো।(1)
সহীহ।
(1). তিরমিযী, হাকিম। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান সহীহ। ইমাম হাকিম ও যাহাবী একে শাখইনের শর্তে সহীহ বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উবায়দুল্লাহ ইবনে আবু রাফে (রাঃ)

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৯/ জ্ঞান
পরিচ্ছেদঃ ১০. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের ব্যাপারে যা বলা নিষেধ
২৬৬৩। আবূ রাফি’ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যেন তোমাদের মধ্যে কাউকে এমন অবস্থায় না পাই যে, সে তার সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে এবং তার নিকট যখন আমার আদিষ্ট কোন বিষয় অথবা আমার নিষেধ সম্বলিত কোন হাদীস উত্থাপিত হবে তখন সে (তাচ্ছিল্যভরে) বলবে, আমি তা জানি না, আল্লাহ তা’আলার কিতাবে আমরা যা পাই, তারই অনুসরণ করবো।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৩)
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি কোন কোন বর্ণনাকারী সুফইয়ান-ইবনুল মুনকাদির (রাহঃ)-এর সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন। আবার কোন কোন বর্ণনাকারী সালিম আবূন নাযর হতে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনু আবী রাফি হতে, তিনি তার পিতা হতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে, এই সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
ইবনু উয়াইনাহ যখন পৃথকভাবে উভয় সনদের উল্লেখ করতেন তখন মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদিরের বর্ণনাকে সালিম আবূন নাযরের বর্ণনা হতে পৃথক করে বর্ণনা করতেন এবং যখন উভয় সনদ একত্র করে বর্ণনা করতেন তখন প্রথমোক্তভাবে সনদটির উল্লেখ করতেন। আবূ রাফি’ (রাযিঃ) ছিলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুক্তদাস, তার নাম আসলাম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ রাফি‘ (রাঃ)

সুনান ইবনু মাজাহ
ভূমিকা পর্ব
পরিচ্ছেদঃ ২. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তার বিরুদ্ধবাদীর প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ।
১/১২। আল-মিক্বদাম ইবনু মাদীকারিব আল-কিনদী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ অচিরেই কোন ব্যাক্তি তার আসনে হেলান দেয়া অবস্থায় বসে থাকবে এবং তার সামনে আমার হাদীস থেকে বর্ণনা করা হবে, তখন সে বলবে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে মহামহিম আল্লাহ্‌র কিতাবই যথেষ্ট। আমরা তাতে যা হালাল পাবো তাকেই হালাল মানবো এবং তাতে যা হারাম পাবো তাকেই হারাম মানবো। (মহানবী (সাঃ) বলেন) সাবধান! নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তার অনুরূপ।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ:তিরমিযী ২৬৬৪, আবূ দাঊদ ৪৬০৪, দারিমী ৫৮৬।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: তাখরীজুল মিশকাত ১৬৩।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মিকদাম (রাঃ)

সুনান ইবনু মাজাহ
ভূমিকা পর্ব
পরিচ্ছেদঃ ২. রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর হাদীসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তার বিরুদ্ধবাদীর প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ।
২/১৩। আবূ রাফি (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি যেন তোমাদের কাউকে এরূপ না পাই যে, সে তার আসনে হেলান দিয়ে বসে থাকবে এবং (এই অবস্থায়) আমার প্রদত্ত কোন আদেশ অথবা আমার প্রদত্ত কোন নিষেধাজ্ঞা তার নিকট পৌঁছলে সে বলবে, আমি কিছু জানি না, আমরা আল্লাহ্‌র কিতাবে যা পাবো তার অনুসরণ করবো।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী ২৬৬৩, আবূ দাঊদ ৪৬০৫, আহমাদ ২৩২৪৯।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: তাখরীজুল মিশকাত ১৬২।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ রাফি‘ (রাঃ)

হাদীস সম্ভার
১৩/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৫০১) ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, বিদায়ী হজ্জে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকেদের মাঝে খোতবা (ভাষণ) দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ‘‘শয়তান এ বিষয়ে নিরাশ হয়ে গেছে যে, তোমাদের এই মাটিতে তার উপাসনা হবে। কিন্তু এতদ্ব্যতীত তোমরা যে সমস্ত কর্মসমূহকে অবজ্ঞা কর, তাতে তার আনুগত্য করা হবে—এ নিয়ে সে সন্তুষ্ট। সুতরাং তোমরা সতর্ক থেকো! অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি; যদি তা দৃঢ়তার সাথে ধারণ করে থাকো তবে কখনই তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না; আর তা হল আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাহ (কুরআন ও হাদীস)
(হাকেম ৩১৮, সহীহ তারগীব ৩৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

হাদীস সম্ভার
১৩/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৫০৩) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রত্যেক কর্মের উদ্যম আছে এবং প্রত্যেক উদ্যমের আছে নিরুদ্যমতা। সুতরাং যার নিরুদ্যমতা আমার সুন্নাহর গণ্ডির ভিতরেই থাকে সে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় এবং যার নিরুদ্যমতা এ ছাড়া অন্য কিছুতে (সুন্নাত বর্জনে) অতিক্রম করে সে ধ্বংস হয়ে যায়।
(ইবনে আবী আসেম, ইবনে হিব্বান, আহমাদ ৬৯৫৮, ত্বাহাবী, সহীহ তারগীব ৫৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ)

হাদীস সম্ভার
১৩/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৫০৪) আনাস (রাঃ) বলেন, তিন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তুলনা কোথায়? তাঁর তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন ক’রে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু আমাদের তাঁর চেয়ে বেশী ইবাদত করা প্রয়োজন)।’ সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব।’
দ্বিতীয়জন বললেন, ‘আমি সারা জীবন সিয়াম রাখব, কখনো সিয়াম ছাড়ব না।’ তৃতীয়জন বললেন, ‘আমি নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) সিয়াম রাখি এবং সিয়াম ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নাত হতে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।
(বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ৩৪৬৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)

শুধু নবীর নির্দেশ মানলে হবে?

নবী মুহাম্মদ তার জীবদ্দশাতেই বেশ কয়েকজনকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। আরবি আশারা শব্দের অর্থ দশ। আর মুবাশশারা অর্থ সুসংবাদপ্রাপ্ত। অতএব, আশারায়ে মুবাশশারা অর্থ সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন। ইসলামি পবিভাষায়, আশারায়ে মুবাশশারা বলতে বোঝায় মুহাম্মদ (সা) এর দশজন পুরুষ সাহাবী হাদিস অনুযায়ী যারা জীবদ্দশায় জান্নাতের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। এছাড়াও কয়েকজন নারীও জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছিলেন [40]

সুনান ইবনু মাজাহ
ভূমিকা পর্ব
পরিচ্ছেদঃ ১৮. জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবা (রাঃ)-দের সম্মান
১/১৩৩। রিবাহ ইবনুল সাঈদ ইবনু যায়দ ইবনু আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ ব্যাক্তির মধ্যে দশম জন। তিনি বলেনঃ আবূ বাকর জান্নাতী, উমার জান্নাতী, উসমান জান্নাতী, আলী জান্নাতী, ত্বলহাহ্ জান্নাতী, যুবায়র জান্নাতী, সা’দ জান্নাতী ও আবদুর রহমান ইবনু আওফ জান্নাতী। সাঈদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, নবম ব্যাক্তি কে? তিনি বলেন, আমি।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী ৩৭৪৮
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: মিশকাত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

নবী মুহাম্মদ সরাসরি তার হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাহকে নাকে দড়ি বাধা উটের মত কামড় দিয়ে ধরে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন [41]

সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ভূমিকা পর্ব
পরিচ্ছেদঃ ৬. হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদীনের সুন্নাতের অনুসরণ।
২/৪৩। ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন হৃদয়গ্রাহী নাসীহাত করেন যে, তাতে (আমাদের) চোখগুলো অশ্রু ঝরালো এবং অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হল। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এতো যেন নিশ্চয়ই বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদের থেকে কি প্রতিশ্রুতি নিবেন (আদেশ দিবেন)? তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের আলোকিত দ্বীনের উপর রেখে যাচ্ছি, তার রাত তার দিনের মতই (উজ্জ্বল)। আমার পরে নিজেকে ধ্বংসকারীই কেবল এ দ্বীন ছেড়ে বিপথগামী হবে।
তোমাদের মধ্যে যে বেঁচে থাকবে সে অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। অতএব তোমাদের উপর তোমাদের নিকট পরিচিত আমার আদর্শ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের আদর্শ অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য। তোমরা তা শক্তভাবে দাঁত দিয়ে আকড়ে ধরে থাকবে। তোমরা অবশ্যই আনুগত্য করবে, যদি হাবশী গোলামও (তোমাদের নেতা নিযুক্ত) হয়। কেননা মুমিন ব্যাক্তি হচ্ছে নাসারন্ধ্রে লাগাম পরানো উটতুল্য। লাগাম ধরে যে দিকেই তাকে টানা হয়, সে দিকেই যেতে বাধ্য হয়।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। 
তাখরীজ আলবানী: সহীহাহ ৯৩৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ) 

এছাড়াও বহুবার নবী মুহাম্মদ তার সাহাবী, তাবেই, তাবেইনদের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষনা দিয়ে গেছেন। ইসলামের বিধান সম্পর্কে তাদের বক্তব্যই হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি। তারা যেভাবে কোরআন হাদিস তথা ইসলামকে বুঝেছে, তাদের বাদ দিয়ে কেউ যদি পরবর্তী সময়ে নতুন কিছু বলে, কোরআনের নতুন অর্থ বের করে, সেগুলো ইসলামের কোন বিষয় বলে পরিগণিত হতে পারে না [42] [43] [44] [45]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬৮/ কোমল হওয়া
পরিচ্ছেদঃ ২৬৮৯. দুনিয়ার জাঁকজমক ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি থেকে সতর্কতা
৫৯৮৬। আবদান (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শ্রেষ্ঠ হল আমার যমানার লোক। তারপর উত্তম হল এদের পরবর্তী যমানার লোক তারপর উত্তম হল এদের পরবর্তী যমানার লোক, তারপর এমন সব লোকের আবির্ভাব হবে, যাদের সাক্ষ্য তাদের কসমের পূর্বেই হবে, আর তাদের কসম তাদের সাক্ষ্যের পূর্বেই হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৬/ সাহাবী (রাঃ) গণের ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৫২. সাহাবা, অতঃপর যারা তাদের সন্নিকটে, অতঃপর যারা তাদের সন্নিকটে (অর্থাৎ তাবিঈ ও তাবে তাবিঈগনের) ফযীলত
৬২৪২। হাসান ইবনু আলী আল-হুলওয়ানী (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) এর সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ সর্বাপেক্ষা উত্তম মানুষ আমার যুগ (অর্থাৎ সাহাবীগণ) এরপর যারা তাদের সাথে সংযুক্ত (অর্থাৎ তাবীঈগণ) এরপর যারা তাদের সাথে সংযুক্ত (অর্থাৎ তাবে-তাবেঈগন)। এরপর তিনি বলেন, আমি সঠিক জানি না তৃতীয় কিংবা চতুর্থটি সম্পর্কে। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তাদের পরবর্তীতে এমন লোক আসবে, যাদের কেউ কেউ কসমের আগে সাক্ষ্য দেবে এবং সাক্ষ্যের আগে কসম করবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ)

সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৫/ মানত ও কসম
পরিচ্ছেদঃ ২৮. মান্নত পূর্ণ করা
৩৮১০. মুহাম্মদ ইন আবদুল আ’লা (রহঃ) … ইমরান ইবন হুসায়ন (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে আমার সময়ের লোকই উত্তম, এরপর তারা, যারা তাদের নিকটবর্তী। এরপর যারা তাদের পরবর্তী, তারপর তাদের পরবর্তী। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমার স্মরণ নেই, তিনি তা দু’বার বলেছেন, না তিনবার। এরপর তিনি ঐসকল লোকের কথা বললেনঃ যারা খিয়ানত করে, আমানতদারী রক্ষা করে না। তারা সাক্ষ্য দেয়, অথচ তাদেরকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকা হয় না; মান্নত করে অথচ মান্নত পূর্ণ করে না। আর তারা মোটা-তাজা হবে।
তাহক্বীকঃ সহীহ। সহীহ আত-তিরমিযী ২২২২, সহীহুল জামে’ ৩৩১৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা
পরিচ্ছেদঃ ৫৭. যে লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছেন এবং তার সাহচর্য লাভ করেছেন তার মর্যাদা
৩৮৫৯৷ আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার যুগের ব্যক্তিরাই উত্তম। তারপর তাদের পরবর্তীগণ, তারপর তার পরবর্তীগণ। তারপর এরূপ ব্যক্তিদের আগমন ঘটবে, যারা সাক্ষী দেবার আগে শপথ করবে অথবা শপথের আগে সাক্ষ্য দিবে।
সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৬২), বুখারী ও মুসলিম।
এ অনুচ্ছেদে ‘উমার, ইমরান ইবনু হুসাইন ও বুরাইদাহ (রাযিঃ) কর্তৃকও হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ)

হাদিস সংকলনের ইতিহাস

হাদিস সংকলনের ইতিহাস লিখতে গেলে বিশাল ইতিহাস লিখতে হবে। তাই সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু আলোচনা করি, এবং সরাসরি বই থেকেই বাদবাকি অংশ দেখে নিই।

সহিফা হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ একটি হাদীস সংকলন, যা হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ছাত্র হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ সংকলন করেন। তিনি ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ এর ভাই ছিলেন। ঠিক কত সালে তিনি এই হাদিস গ্রন্থ সংকলন করেন জানা না গেলেও আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু এর মৃত্যুর আগে সংকলন করেন বলেই আলেমদের গবেষণা। সেই হিসেবে হাদিস গ্রন্থটি হিজরী ৫৮ সালের আগেই সংকলিত [46]। এর সংকলনকারী অষ্টম শতাব্দী এর একজন হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ। এটি পরে বিংশ শতাব্দীতে মুহাম্মাদ হামিদুল্লাহ তাহকীক করে প্রকাশ করেন। এই বইয়ের দুইটি কপি; একটি পাওয়া যায় দামেস্ক এর গ্রন্থাগার এবং অন্যটি বার্লিনের একটি গ্রন্থাগারে। ড.হামিদুল্লাহ এই দুটি পাণ্ডুলিপি সামনে রেখে সম্পাদনা করেন। শুরুতে একটি বিস্তৃত ভূমিকাও লেখেন যা যেমন তথ্যবহুল, তেমনি প্রাঞ্জল । তিনি আরবীর সাথে সাথে উর্দু ও ফরাসি ভাষাতেও এই সাহিফা হাম্মাম ইবন মুহাব্বিহ প্রকাশ করেন। আগ্রহী পাঠকের জন্য সেই বইটির পিডিএফ লিঙ্ক আপনাদের দেয়া হলো [47]

এরপরে ইমাম আবু হানিফা হাদিস সংকলন করেন [48] , এরপরে আসে ইমাম মালিকের হাদিস [49]। আসুন সরাসরি বই থেকেই বিষয়গুলো পড়ে নিই, [50]

হাদিস 15
হাদিস 17
হাদিস 19
হাদিস 21
হাদিস 23
হাদিস 25
হাদিস 27
হাদিস 29
হাদিস 31
হাদিস 33
হাদিস 35

সৌদিআরবের সর্বোচ্চ আলেমদের বক্তব্য

বর্তমান সমজে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ আলেমদের দ্বারা পরিচালিত একটি ওযেবসাইট হচ্ছে islamqa.info, যা সারা পৃথিবীতে ইসলামের গ্রহণযোগ্য রেফারেন্স হিসেবে স্বীকৃত। সেই ওয়েবসাইটের একটি প্রশ্নের উত্তর এখানে খুবই গুরুত্বপুর্ণ। [51]

Ruling on one who rejects a saheeh hadith
115125
Publication : 02-03-2016
Question
Does the one who rejects a saheeh hadith become a disbeliever? One of the brothers rejects some of the saheeh hadiths that are narrated in al-Bukhaari, Muslim and elsewhere, on the grounds that they contradict the Quran. What is the ruling on one who rejects a saheeh hadith? Does he become a disbeliever?
Answer
Praise be to Allah.
Firstly:
The Prophet’s Sunnah is the second source of Islamic sharee‘ah. The revelation came down to the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) with the Sunnah as it came down to him with the Qur’an. The proof of that is the words of Allah, may He be exalted (interpretation of the meaning):
“Nor does he speak of (his own) desire.
It is but a revelation revealed”
[an-Najm 53:3-4].
Allah, may He be exalted, has enjoined upon the believers complete submission to the words of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) and his hadith and rulings, to the extent that He, may He be glorified, swore by His divine self that whoever hears the words of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him), then rejects them and does not accept them, has nothing to do with faith at all. He, may He be glorified and exalted, said (interpretation of the meaning):
“But no, by your Lord, they can have no Faith, until they make you (O Muhammad (blessings and peace of Allah be upon him)) judge in all disputes between them, and find in themselves no resistance against your decisions, and accept (them) with full submission”
[an-Nisa’ 4:65].
Hence there was consensus among the scholars that whoever denies that the Sunnah constitutes shar‘i evidence in general terms, or rejects a hadith of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him – knowing that it is the words of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) – is a disbeliever, who has not attained even the lowest level of Islam and submission to Allah and His Messenger.
Imam Is-haaq ibn Raahawayh (may Allah have mercy on him) said:
Whoever hears a report from the Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him) that he accepts as being sound, then rejects it, not by way of dissimulation (when he has no choice because of a threat), is a disbeliever. End quote
As-Suyooti (may Allah have mercy on him) said:
You should understand, may Allah have mercy on you, that whoever denies that the hadith of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) constitutes shar‘i evidence – whether he denies a report that speaks of something that the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) said or did, if that hadith fulfils the conditions stipulated in usool al-hadith – has committed an act of disbelief that puts him beyond the bounds of Islam, and he will be gathered (on the Day of Resurrection) with the Jews and Christians, or with whomever Allah wills of the disbelieving groups. End quote.
Miftaah al-Jannah fi’l-Ihtijaaj bi’s-Sunnah (p 14)
Al-‘Allaamah Ibn al-Wazeer (may Allah have mercy on him) said:
Rejecting the hadith of the Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him) when one is aware that it is his hadith constitutes blatant disbelief. End quote.
Al-‘Awaasim wa’l-Qawaasim (2/274)
It says in Fataawa al-Lajnah ad-Daa’imah:
The one who denies that we should follow the Sunnah is a disbeliever, because he is expressing disbelief in Allah and His Messenger, and rejecting the consensus of the Muslims. End quote.
Fataawa al-Lajnah ad-Daa’imah (vol. 2, 3/194)
See also the answers to questions no. 604, 13206 and 77243
Secondly:
As for the one who rejects a hadith and does not accept it, denying that it is the words of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him), he is not like those who come under the first category. We understand that many followers of the new “enlightenment” trend – who have taken it upon themselves to judge the Prophet’s Sunnah on the basis of their views and affiliation – in fact, have not come up with anything new. Rather they are a continuation of the innovators who came before them, whose specious arguments the scholars quoted and took it upon themselves to refute them.
To these people and others like them we say:
Academic methodology dictates that we should examine several important matters before rejecting a hadith or denying that it is the words of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him). These conditions are as follows:
The first condition:
We should see whether there is a complete contradiction between what is mentioned in the hadith and what is mentioned in a Qur’anic text that is clear and unambiguous in meaning and not abrogated. We should emphasise here the condition of complete contradiction – and not just an apparent contradiction that may come to the mind of one who hastens to jump to conclusions when examining hadith. Perhaps those who are involved in denying the hadiths will agree with us on this condition, because most of the apparent contradictions that occur to many people are not contradictions in reality; rather they are mere speculation in the mind of the objector and it is possible, with deliberation and by examining the shades of meaning of different words, to answer the one who thinks that there is a contradiction, and demonstrate how the hadith is in harmony with the fundamentals and sublime aims of sharee‘ah. Whoever studies the book of al-‘Allaamah Ibn Qutaybah ad-Deenoori entitled Mukhtalif al-Hadith will realise how reckless many of them were in their denial of hadiths on the basis of the claim that they are not in accordance with the Qur’an, or that they contradict sound reasoning, but when Ibn Qutaybah mentions the correct explanation of these hadiths given by the scholars, it becomes clear that there is a sound interpretation for them that is in harmony with Islamic teachings, and that the notion that these hadiths contradict the Quran is based on corrupt understanding.
We ask these people and their ilk, who have the audacity to reject the Sunnah and cast aspersions on the hadiths of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) without any academic methodology or acceptable critical guidelines, and without properly understanding the fundamentals of hadith science that they are talking about, the following:
Do you think that it is possible for a hadith to completely contradict the Holy Qur’an to the extent that the examiner may think that this hadith is not the words of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him), at the time when we see all the scholars of Islam, from the time of the Companions of the Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him) up until the present day, in agreement on accepting this hadith and commenting on it, interpreting it, quoting it as evidence and acting upon it?
Doesn’t rational thinking – on which they claim to base their argument – dictate that they should respect the consensus of specialists on the matter that is at the heart of their specialty?
Can anyone have the audacity to say that physicists, chemists, mathematicians, educationalists or economists, for example, have made a mistake if they agree on a matter – especially when the one who is objecting to them is not one of the specialists in that field; rather all that can be said is that he has read some articles about it or a few books along the lines of Science For Dummies or The Complete Idiot’s Guide to Science [i.e., books that offer a basic introduction to a field]?
The second condition:
There should be a weakness in one of the links of the isnaad that could have led to the mistake mentioned in the text.
Similarly, we think that this condition is in harmony with sound methodology and is a valid condition. No one should disagree on this point who understands anything about the principles of academic criticism. Denying that a text is the words of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) should mean that there is a weak link in the chain of narration that led us to mistakenly believe that this hadith is the words of the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him), when in fact it is not.
Imam ash-Shaafa‘i (may Allah have mercy on him) – who is prominent in terms of knowledge and faith, and was the first one to write on the topic of usool al-fiqh – said:
If a hadith is narrated by trustworthy narrators from the Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him), then that is sufficient to regard it as a sound hadith.
Ikhtilaaf al-Hadith, in al-Umm (10/107).
And he said:
There is no other way to determine whether a hadith is sound or otherwise except by knowing how honest and trustworthy the narrators are, with the exception of very few hadiths.
Ar-Risaalah (para. 1099)
And he also said:
Muslims of good character are those who are good and sound in and of themselves… As for what they say and do, it is to be regarded as sound and acceptable, unless we find something in their actions that indicate otherwise. So we should be cautious with them in cases where their actions differ from what is expected of them.
Ar-Risaalah (para. 1029-1030); see also al-Umm (8/518-51 9)
After narrating some of the academic principles concerning this matter, which is something that he discussed a great deal in his various books, Imam ash-Shaafa‘i (may Allah have mercy on him) says that what he stated – some of which we have quoted here – is not the view of only a few scholars, or his own personal view; rather these are the principles on which there was consensus among the scholars who came before him. He says:
At the beginning of this book of mine, I quoted, in support of what I discuss of principles and guidelines, from a number of earlier scholars who had knowledge of the Qur’an and Sunnah, different scholarly opinions, analogy and rational thinking, and none of them differed with another. They said: This is the view of the scholars among the Companions of the Messenger of Allah, the Taabi‘een, and the generation who followed them, and it is our view. Whoever diverges from this path is, in our view, diverging from the path of the Companions of the Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him) and the path of the scholars who came after them, until the present day, and he is one of the people of ignorance. And all of them said: we cannot see anything but the consensus of the scholars in all regions, unanimously agreeing to regard as ignorant the one who departs from this path. And they – or most of them – went even further and expressed more stringent views with regard to the one who departs from this path, but there is no need to quote them here.
Ikhtilaaf al-Hadith, al-Umm (10/21). See also: ar-Risaalah (para. 1236-1249).
The first thing that the one who rejected a hadith that is attributed to the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him) must do is research and find out the identity of the narrator who was mistaken in his transmission of this hadith. If the one who denies the hadith cannot find an acceptable reason in the isnaad for rejecting the hadith, then this indicates that he is mistaken in his methodology. It also indicates that it is essential to have another look and try to understand the hadith and the Qur’an and the aims and goals of sharee‘ah.
So how about if the hadith was narrated with the soundest isnaads on the face of the earth? How about if the hadith was narrated via many chains of transmission – as is the case with most of the hadiths that are rejected by the proponents of “enlightenment” – and from a number of the Sahaabah (may Allah be pleased with them)?
The third condition:
One should express his reservations about a hadith as a personal view based on his own reasoning, which may be right or wrong, and he should avoid stating his view as certainty, as if it is the correct view. He should also avoid making accusations against others who differ with him or casting aspersions on the intelligence of Muslim scholars. This applies in cases where there is a valid reason to hold such a view, and provided that one is qualified to speak about such matters and is proficient in the skills needed to understand and research them. A hadith may appear to be da‘eef (weak) to one scholar for a particular reason, but he should not speak in accusatory tones of those who accepted the hadith.
Whoever does not comply with these three conditions and persists in denying and rejecting the hadiths is exposing himself to grave danger, because it is not permissible for a Muslim to reach a conclusion that is not based on proper methodology and without following any guidelines, and criticise other scholars (who disagree with him), otherwise he may fall into sin and error.
Imam Ahmad (may Allah have mercy on him) said: Whoever rejects the hadith of the Messenger of Allah (blessings and peace of Allah be upon him) is on the brink of doom. End quote.
Al-Hasan ibn ‘Ali al-Barbahaari said:
If you hear a man casting aspersions upon a hadith or denying a hadith, or giving precedence to something else over a hadith, then suspect his commitment to Islam, for he is undoubtedly following whims and desires and innovation.
If you hear a man, when you quote a hadith, showing no interest in it on the basis that he only wants to hear quotations from the Qur’an, you should not doubt that he is a man who is following the path of the heretics, so get up and leave him, and bid him farewell. End quote.
Sharh as-Sunnah (113-119)
Shaykh al-Islam Ibn Taymiyah (may Allah have mercy on him) said:
Whatever the Messenger (blessings and peace of Allah be upon him) narrates from his Lord, it is obligatory to believe in it, whether we understand its meaning or not, because he is the most truthful one [namely the Prophet (blessings and peace of Allah be upon him)]. Whatever it says in the Qur’an and Sunnah, every believer must believe in it, even if he does not understand its meaning. End quote.
Majmoo‘ al-Fataawa (3/41)
See also the answers to questions no. 245, 9067 and 20153
And Allah knows best.

এই উত্তরটির বঙ্গানুবাদ দেয়া হচ্ছে। বঙ্গানুবাদ করেছেন শাহেদ খান। কেউ অনুবাদটি কপি করলে অনুগ্রহ করে সংশয় ডট কম, এই লেখাটি এবং শাহেদ খানের নাম যুক্ত করবেন।

প্রশ্ন ১১৫১২৫:
কেউ যদি সহীহ হাদিস অস্বীকার করে তাহলে কি সে অবিশ্বাসী তে পরিণত হয়? একজন ভাই বুখারী, মুসলিম এবং অন্যত্র বর্ণিত কিছু সংখ্যক সহীহ হাদীস কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হবার কারণে তা অস্বীকার করেন। সহীহ হাদিস অস্বীকার কারীর ব্যাপারে ফয়সালা কি? সে কি একজন অবিশ্বাসী তে পরিণত হয়?
উত্তর
সকল প্রশংসা আল্লাহর।
প্রথমত:
ইসলামিক শরীয়াহর দ্বিতীয় উৎস হল নবীর সুন্নাহ। নবীর (সা:) কাছে সেই রূপে সুন্নাহর মাধ্যমে বাণী এসেছে, ঠিক যে রূপে এসেছে কোরআনের মাধ্যমে। আল্লাহর নিজের বাণী ই তার প্রমাণ:
“আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না।তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরিত হয়।” [আন- নাজম ৫৩:৩-৪ ]
আল্লাহ বিশ্বাসীদের উপর নবীর কথা, হাদীস এবং নির্দেশনা সমূহ এমন ভাবে গ্রহণ করতে বলেছেন যে; তিনি তার পবিত্র সত্তার কসম খেয়ে বলেন, যে কেউ নবীর কথা শ্রবণ করে, তারপর সেটা প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদেরকে স্বীকার করে নেয় না তাদের বিশ্বাস করা না করায় কিছু যায় আসে না। তিনি বলেন:
“কিন্তু না, আপনার রবের শপথ তারা মুমিন হবে না যতক্ষন পর্যন্ত তারা নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচার ভার আপনার উপর অর্পণ না করে; অতঃপর আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।” [আন নিসা ৪:৬৫]
এ কারণে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ঐক্যমত্য ছিল যে, যদি কেউ এটা সাধারণ ভাবে অস্বীকার করে যে সুন্নাহ শরীয়তের একটি দালিলিক উৎস, অথবা নবীর কোনো হাদিস প্রত্যাখ্যান করে এটা জানা সত্ত্বেও যে সেটা নবীর বাণী–তবে সে একজন অবিশ্বাসী, যে কিনা ইসলামের এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাসের নিম্নতম স্তরেও পৌঁছাতে পারেনি।
ইমাম ইস- হাক ইব্ন রহাওয়াহ বলেনঃ
যদি কেউ আল্লাহর রাসূলের বর্ণিত কিছু শোনে এবং যদি সেটা সে হাদিসটি সহিহ হওয়ার কথা স্বীকার করে, তারপর সেটা প্রত্যাখ্যান করে, কোন রকম অভিনয় না করে (যখন কোন হুমকির কারণে তার অন্য কোন উপায় না থাকে) তাহলে সে একজন অবিশ্বাসী।
আস- সুয়ূতী বলেনঃ
এটা বুঝতে হবে যে, যদি কেউ এটা অস্বীকার করে যে নবীর হাদিস শরীয়াহর একটি প্রামাণ্য দলিল- যদি সে এমন কোন বিবরণ অস্বীকার করে যেটা এমন কিছু বর্ণনা করে যা নবী বলেছেন বা করেছেন, যদি সেই হাদিস টা হাদিসের উসুলের শর্ত সমূহ পূরণ করে- তাহলে সে একজন অবিশ্বাসীর ন্যায় আচরণ করলো যা তাকে ইসলামের গণ্ডির বাইরে নিক্ষেপ করে এবং সে ইহুদি এবং খ্রিস্টান দের দলভুক্ত হবে (কিয়ামতের দিন) অথবা অন্য যে কোন অবিশ্বাসী দলের সাথে যার সাথে আল্লাহ চান। [মিফতাহ আল-জান্নাহ ফী’ ইহতিযাজ বি’স – সুন্নাহ (পৃষ্ঠা ১৪)]
আল- ‘ আল্লামাহ ইবন আল- ওয়াজির বলেনঃ
যখন কেউ জেনে শুনে আল্লাহর রাসূলের হাদিস অস্বীকার করে এটা ভয়ংকর অবিশ্বাসের সামিল। [আল-‘ আওয়াসিম ওয়া’ল – কাওয়াসিম (২/২৭৪)]
ফাতাওয়া আল – লাজনাহ আদ – দা ‘ ইমাহ তে বলা হয়েছে:
যে ব্যক্তি এটা অস্বীকার করে যে, আমাদের সুন্নাহ্ মেনে চলা উচিৎ তাহলে সে একজন অবিশ্বাসী, কারন সে আল্লাহ এবং তার রাসূলের প্রতি অবিশ্বাস জ্ঞাপন করছে এবং সমগ্র মুসলিমদের ঐক্যমত কে পরিত্যাগ করছে। [ফাতাওয়া আল – লাজনাহ আদ – দা ‘ ইমাহ (ভল.২,৩/১৯৪)
দ্বিতীয়ত:
আর যে ব্যক্তি কোন হাদিস স্বীকার না করে তা পরিত্যাগ করে এ জন্য যে তা আসলে নবীর কথা নয়, সে প্রথম শ্রেণীভুক্ত মানুষদের মত নয়। আমরা এটা বুঝি যে নতুন “যুক্তিবাদী জ্ঞানালোকিত” ধারার অনেক অনুসারী আছেন- যারা তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ধ্যান ধারণা দিয়ে নবীর সুন্নাহ কে বিচার করছেন – তারা আসলে নতুন কিছুই করছেন না। উপরন্তু তারা তাদের পূর্ববর্তী বিদআতীদের ই অনুসারী, যাদের অসার দাবিকে বিশেষজ্ঞ গন তাদের যুক্তি দ্বারাই খণ্ডন করেছেন।
এ সকল ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের মত আরও যারা আছেন তাদের প্রতি এটাই বলবো যে:
তাত্ত্বিক পদ্ধতি অনুযায়ী কোন হাদীস প্রত্যাখ্যান করার পূর্বে অথবা সেটা যে রাসূলের বাণী তা অস্বীকার করার পূর্বে আমাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় যাচাই করে দেখতে হবে। এই শর্তসমূহ নিম্নরূপঃ
প্রথম শর্ত:
আমাদের দেখতে হবে যে হাদীসে যা বর্ণিত হয়েছে তার সাথে কোরআনের পরিষ্কার এবং দ্ব্যর্থহীন ভাবে উল্লেখিত কোন কিছু যা পরবর্তীতে বাতিল করা হয়নি তার মধ্যে কোন বৈসাদৃশ্য আছে কিনা। এখানে আমাদের সম্পূর্ণ বৈপরীত্য আছে কিনা এই শর্তের উপর জোর দিতে হবে – কোন আপাত প্রতীয়মান বৈসাদৃশ্য থেকে কোন সিদ্ধান্তে আসা যাবে না যেটা হাদিস পরীক্ষা করে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে আসতে চাওয়া কারো মাথায় আসতে পারে। সম্ভবত যারা হাদিস অস্বীকার করতে চায় তারাও আমাদের সাথে এই শর্তের ব্যপারে একমত হবে। কারন অধিকাংশ আপাত বৈসাদৃশ্য যেগুলো মানুষের মনে উদয় হয় সেগুলো আসলে বাস্তবিক অর্থে বৈসাদৃশ্য নয়; বরঞ্চ সেগুলো আপত্তিকারির মনে উদিত হওয়া নিছক কল্পনা মাত্র এবং যে ব্যক্তি বৈসাদৃশ্য আছে মনে করে- সুচিন্তিত পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন শব্দের বৈচিত্রপূর্ন অর্থ সমূহ পরীক্ষা করে তাকে জবাব দেয়া সম্ভব এবং এটা প্রমাণ করা যায় যে কিভাবে হাদিস সমূহ বুনিয়াদি বিষয়াদির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং তা শরীয়তের উদ্দেশ্য কে মহিমান্বিত করে। কেউ যদি আল-‘আলামাহ্ ইবন কুতাইবাহ আদ- দীরুনির মুখতালিফ আল-হাদিস পড়ে তাহলে অনুধাবন করতে পারবে যে, যারা কুরআনের সাথে সামঞ্জ্যপূর্ণ নয় অথবা তারা যুক্তিগ্রাহ্য বিচারে বৈসাদৃশ্য পূর্ন এই অভিযোগে হাদিস সমূহ অস্বীকার করে তাদের অনেকেই কত টা বেপরোয়া। কিন্তু যখন ইবন কুতাইবাহ্ স্কলার দের দেয়া এসব হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা পেশ করেন, এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে এ সব হাদিসের যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা আছে যা ইসলামের শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এই সমস্ত হাদিস সমূহ কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা আসলে বিকৃত উপলব্ধির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
যে সমস্ত মানুষ সুন্নাহ কে প্রত্যাখ্যান করার ধৃষ্টতা দেখায় এবং কোন তাত্ত্বিক পদ্ধতি অথবা গ্রহণযোগ্য স্পষ্ট নির্দেশিকা ছাড়া রাসূলের হাদিস সমূহ কে সমালোচনা করে এবং সঠিক ভাবে হাদিস শাস্ত্রের বুনিয়াদী বিষয় সমূহ অনুধাবন না করে সে সম্পর্কে কথা বলে সেই সব লোকদের কাছে আমাদের প্রশ্ন:
কোন নিরীক্ষকের মনে হতে পারে যে এই হাদিস আসলে রাসূলের বাণী নয়, এর উপর ভিত্তি করে আপনি কি মনে করেন যে কোন হাদিস সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র কোরআনের বিপরীত হতে পারে যেখানে আমরা দেখতে পাই যে আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণের সময়কাল থেকে আজ পর্যন্ত সকল ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ হাদিসের গ্রহণ যোগ্যতার উপর ঐক্যমত পোষণ করেন এবং এর উপর মন্তব্য করেন, ব্যাখ্যা করেন, প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং এর উপর আমল করেন।
যুক্তিসংগত চিন্তাধারা (যেটাকে তারা তাদের যুক্তির ভিত্তি বলে দাবি করে) কি এটাই নির্দেশ করে না যে তারা বিশেষজ্ঞদের সেই বিষয়ের উপর ঐক্যমত্যকে সম্মান করবে যেটা তাদের বিশেষ জ্ঞানের কেন্দ্রীয় অংশ।
উদাহরণ স্বরূপ কেউ কি এমন কথা বলার দুঃসাহস দেখাবে যে পদার্থবিদগণ, রসায়নবিদগণ, গণিতবিদগণ, শিক্ষাবিদগণ অথবা অর্থনীতিবিদরা একটি ভুল করে ফেলেছেন যদি তারা কোন বিষয়ের উপর একমত হন – বিশেষত যখন সেই ব্যক্তি যিনি তাদের উপর অভিযোগ করছেন নিজেই ওই বিষয়ের উপর বিশেষজ্ঞ না হন; বরঞ্চ যেটা বলা যেতে পারে যে তিনি ওই বিষয়ে কয়েকটি নিবন্ধ পড়েছেন মাত্র অথবা বিজ্ঞান সংক্রান্ত কিছু শিক্ষানবিস বই অথবা বিজ্ঞান বিষয়ক ‘The complete idiot’s guide’ (যে বইগুলো কোন বিষয়ের উপর একেবারে প্রাথমিক ধারণা দেয়)।
দ্বিতীয় শর্ত:
সনদে উল্লেখিত সূত্র সমূহের মধ্যে কোন একটি তে দুর্বলতা থাকবে যেটার মাধ্যমে হাদীসে উল্লেখিত ভুল হয়ে থাকতে পারে।
অনুরূপভাবে, আমরা মনে করি যে এই শর্তটি যুক্তিযুক্ত কার্যপ্রণালীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং একটি অকাট্য শর্ত। যারা একাডেমিক সমালোচনার মূলনীতি সম্পর্কে কোন কিছু বোঝে তারা কখনই এই বিষয়ে ভিন্নমত করবে না। কোন হাদিস কে রাসূলের বাণী হিসেবে অস্বীকার করার মানে এই হবে যে বর্ণনা সূত্র সমূহের মধ্যে কোন একটি দুর্বল সূত্র রয়েছে যেটা আমাদের ভুলবশত বিশ্বাস করতে প্ররোচিত করে যে এই হাদিসটি রাসূলের বাণী, কিন্তু আসলে তা নয়।
ইমাম আশ- শাফা ‘ ই যিনি জ্ঞান এবং বিশ্বাসের জন্য বিখ্যাত এবং উসুল- আল ফিকহ বিষয়ে লেখা লেখি করা প্রথম ব্যক্তি- বলেছেনঃ
যদি কোন হাদিস রাসূলের নিকট হতে কোন বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনাকারীর মাধ্যমে বর্ণিত হয়, তাহলে এটিকে সহীহ হাদীস হিসেবে বিবেচনা করতে এটি ই যথেষ্ঠ হবে। [ইখতিলাফ আল- হাদীস,ইন আল- উম্ম (১০/১০৭)]
এবং তিনি বলেনঃ
খুব অল্প কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া, কোন হাদিস সহীহ কিনা তা নির্ধারণ করতে বর্ণনাকারীরা কত টা সৎ এবং বিশ্বাসযোগ্য তা যাচাই করা ছাড়া ভিন্ন কোন পথ নেই। [আর- রিসালাহ (পারা ১০৯৯)
এবং তিনি আরো বলেন:
ভালো চরিত্রের মুমিন তারাই যারা তাদের নিজেদের কাছে ভালো এবং নির্ভরযোগ্য…. তারা যা বলে এবং করে, তা যুক্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করতে হবে, যদি না আমরা তাদের কাজের মধ্যে এমন কিছু খুঁজে পাই যেটা অন্যকিছু নির্দেশ করে। সুতরাং তাদের কাছ থেকে যেটা প্রত্যাশিত সেটা থেকে যখন তাদের কাজের অমিল হয় সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। [আর- রিসালাহ (প্যারা ১০২৯-১০৩০); আরো দেখুন আল- উম্ম (৮/৫১৮-৫১৯)]
এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত কিছু একাডেমিক মূলনীতি উদ্ধৃত করে, যেটা তিনি তার বিভিন্ন কিতাবে প্রচুর পরিমাণে আলোচনা করেছেন- ইমাম আশ- শাফা ‘ ই বলেন – (যার মধ্যে কিছু আমরা এখানে উল্লেখ করেছি) – তিনি যা বলেছেন তা শুধুমাত্র অল্প কয়েক জন বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিভঙ্গী নয়, অথবা তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী নয়, বরঞ্চ এগুলো সেই সব মূলনীতি যার উপরে আলেমগণের ঐকমত্য ছিল যারা তার আগে এসেছেন।
তিনি বলেনঃ
আমার এই বইয়ের শুরুতে, আমি যে মূলনীতি এবং নির্দেশনা সমূহের ব্যাপারে আলোচনা করেছি তার সমর্থনে আমি পূর্ববর্তী বহু আলেমগণের উদ্ধৃতি দিয়েছি যাদের কুরআন এবং সুন্নাহর জ্ঞান ছিল, ভিন্ন ভিন্ন মতামত, ব্যাখ্যা এবং যুক্তির প্রয়োগ ছিল,
এবং তাদের কেউই অন্যদের সাথে এ ব্যপারে ভিন্নমত করেন নি। তারা বলেছেনঃ এটা হল আল্লাহর নবীর সাহাবী, তাবিয়ীন এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের আলেমগণের দৃষ্টিভঙ্গী এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও তাই। আমাদেরকে মতে, যে এই পথ থেকে বিচ্যুত হয় সে আল্লাহর রাসূলের সাহাবীদের এবং তার পর হতে আজ পর্যন্ত আগত আলেমগণের পথ হতে বিচ্যুত হয়েছে এবং সে মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত। এবং তাদের সবাই বলেছেন: আমরা সমগ্র অঞ্চলের আলেমগণের মধ্যে এ ব্যপারে ঐকমত্য ব্যতীত আর কিছুই দেখি না, সর্বসম্মতি ক্রমে তাকে মূর্খ হিসেবে অভিহিত করতে যে এই পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে । এবং তারা অথবা তাদের মধ্যে অধিকাংশই আরো অগ্রসর হয়ে যারা এই পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের ব্যাপারে আরো কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছেন, কিন্তু সেগুলো এখানে উদ্ধৃত করার কোন প্রয়োজন নেই।
[ইখতিলাফ আল-হাদিস, আল- উম্ম (১০/২১)। আরো দেখুন: আর- রিসালাহ (প্যারা ১২৩৬-১২৪৯)]
যে নবীর সাথে সংশ্লিষ্ট কোন হাদিস প্রত্যাখ্যান করেছে তার প্রথম যেটি অবশ্যই করা উচিৎ তা হল বর্ণনাকারীর পরিচয় গবেষণা করে খুঁজে বের করা যে এই হাদিস বর্ণনা করার সময় ভুল করেছে। যে হাদিস প্রত্যাখ্যান করে সে যদি হাদিস টি প্রত্যাখ্যান করার জন্য সনদে কোন গ্রহণযোগ্য কারন খুঁজে না পায়, তাহলে এটা নির্দেশ করে যে সে তার কার্যপ্রণালি তে ভুল করছে। এটা আরো নির্দেশ করে যে, এটা জরুরী যে আরো ভালো ভাবে দেখা এবং হাদিস ও কুরআন এবং শরীয়তের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করা ।
যদি হাদিসটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধতম সনদে বর্ণিত হয়ে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে কী হবে? সেক্ষেত্রে কি হবে যদি সেই হাদিসটি অনেকে গুলি সূত্রে বর্ণিত হয় এবং অনেক সাহাবীর কাছ থেকে – যেটা আসলে বেশির ভাগ হাদিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যা নব্য বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত।
তৃতীয় শর্ত:
কোন হাদিসের ব্যপারে কারো বিচার সে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী রূপে সীমাবদ্ধ রাখবে, যেটা সঠিক ও হতে পারে, ভুল ও হতে পারে এবং তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীকে নিশ্চিত রূপে সঠিক বলা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। এছাড়া যারা তার সাথে দ্বিমত করে তাদের প্রতি অভিযোগ করা থেকে এবং মুসলিম আলেমগণের বুদ্ধিমত্তার উপর কুৎসা রটনা থেকে ও বিরত থাকা উচিৎ। এটা সেই সব ক্ষেত্রে ও প্রযোজ্য যেখানে এ রকম দৃষ্টিভঙ্গী রাখার পিছনে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ রয়েছে, এবং সে যদি এই ব্যপারে কথা বলার যোগ্যতাসম্পন্ন এবং এ গুলো বোঝা ও পর্যালোচনা করার মত দক্ষও হয়। একটি হাদিস কোন বিশেষ কারণে একজন আলেমের কাছে যঈফ মনে হতে পারে, কিন্তু তিনি যারা হাদিসটি গ্রহণ করেছে তাদের ব্যাপারে বিদ্বেষপূর্ণ সুরে কথা বলবেন না।
যে এই ৩ টি শর্তের সাথে একমত নয় এবং হাদিস অস্বীকার এবং প্রত্যাখ্যান করার ব্যপারে অটল থাকে সে নিজেকে বিশাল বিপদের মধ্যে নিমজ্জিত করছে। কারণ কোন মুসলিমের জন্য যথাযথ কার্যপদ্ধতি এবং কোন নীতিমালা অনুসরণ ব্যতীত উপসংহারে উপনীত হওয়া এবং অন্য আলেমদেরকে সমালোচনা করা (যারা তার সাথে দ্বিমত করে) জায়েজ নয়। তা না হলে সে ত্রুটি এবং পাপের মধ্যে নিমজ্জিত হতে পারে।
ইমাম আহমাদ বলেছেন: যে আল্লাহর রাসূলের হাদিস কে প্রত্যাখ্যান করে সে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত।
আল- হাসান ইবন ‘ আলী আল- বর্বাহারি বলেছেনঃ
যদি তুমি কোন মানুষকে কোন হাদিসের উপর বিষোদগার করতে অথবা অস্বীকার করতে শোন অথবা হাদিসের উপরে অন্য কিছুকে অগ্রাধিকার দিতে দেখ , তাহলে ইসলামের প্রতি তার অঙ্গীকারকে সন্দেহ করো, সে সন্দেহাতীত ভাবে খেয়াল খুশি মত নিজের ইচ্ছা এবং বিদআতের অনুসরণ করছে।
যখন তুমি কোন হাদিস উদ্ধৃত করো যদি দেখো কেও তার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে না এই কারণে যে সে শুধুমাত্র কুরআন থেকে উদ্ধৃতি শুনতে আগ্রহী, তাহলে তুমি কোন সন্দেহ পোষণ করবে না যে সেই ব্যক্তি পথভ্রষ্টদের পথ অনুসরণ করছে। অতএব তাকে ত্যাগ করো এবং তাকে বিদায় জানিয়ে দাও।
শরহে আস- সুন্নাহ (১১৩-১১৯)।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেছেনঃ
রাসূল তার রবের কাছ থেকে যা কিছুই বর্ণনা করেন তা বিশ্বাস করা বাধ্যামূলক, আমরা তার অর্থ বুঝি আর না বুঝি, কারণ তিনি সর্বাধিক সত্যবাদী। কুরআন এবং সুন্নাহ তে যা কিছুই বলা আছে, প্রত্যেক বিশ্বাসী কে তাতে বিশ্বাস রাখতে হবে, যদি সে এটার অর্থ না ও বোঝে।
মাজমু ‘ আল ফাতাওয়া (৩/৪১)
আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত।

অন্যান্য আলেমদের মতামত

প্রখ্যাত ইসলামিক আলেম আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবের একটি ভিডিও আসুন দেখে নিই,

আরেকজন প্রখ্যাত আলেম ড আবু বকর যাকারিয়ার একটি ভিডিও দেখে নিই,

আরেকজন প্রখ্যাত আলেম আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রাজ্জাকের একটি ভিডিও একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ,

আরো একটি ভিডিও দেখি,

হাদিসের কতিপয় পরিভাষা

  • সাহাবী: যিনি ঈমানের সঙ্গে মুহাম্মদের সাহচর্য লাভ করেছেন এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাকে মুহাম্মদের সাহাবী বলা হয়।
  • তাবেঈ: যিনি মুহাম্মদের কোন সাহাবীর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষ তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবেঈ বলা হয়।
  • তাবে-তাবেঈ: যিনি কোন তাবেঈ এর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষ তাঁকে দেখেছেন এবং মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁকে তাবে-তাবেঈ বলা হয়।
  • মুহাদ্দিস: যিনি হাদীস চর্চা করেন এবং বহু সংখ্যক হাদীসের সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাঁকে মুহাদ্দিস বলা হয়।
  • শাইখ: হাদীসের শিক্ষাদাতা রাবীকে শায়খ বলা হয়।
  • শাইখান: সাহাবীগনের মধ্যে আবূ বকর (রা.) ও উমর (রা.) – কে একত্রে শাইখান বলা হয়। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রে ইমাম বুখারী (রাহি.) ও ইমাম মুসলিম (রাহি.)-কে এবং ফিক্বহ-এর পরিভাষায় ইমাম আবূ হানীফা (রাহি.) ও আবূ ইউসুফ (রাহি.)-কে একত্রে শাইখান বলা হয়।
  • হাফিয: যিনি সনদ ও মতনের বৃত্তান্ত সহ এক লাখ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হাফিয বলা হয়।
  • হুজ্জাত: অনুরূপভাবে যিনি তিন লক্ষ হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাঁকে হুজ্জাত বলা হয়।
  • হাকিম: যিনি সব হাদীস আয়ত্ত করেছেন তাকে হাকিম বলা হয়।
  • রিজাল: হাদীসের রাবী সমষ্টিকে রিজাল বলে। যে শাস্ত্রে রাবীগণের জীবনী বর্ণনা করা হয়েছে তাকে আসমাউর-রিজাল বলা হয়।
  • রিওয়ায়াত: হাদীস বর্ণনা করাকে রিওয়ায়াত বলে। কখনও কখনও মূল হাদীসকেও রিওয়ায়াত বলা হয়। যেমন- এই কথার সমর্থনে একটি রিওয়ায়াত (হাদীস) আছে।
  • মারফূ: যে হাদীসের সনদ (বর্ণনা পরম্পরা) মুহাম্মদ পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মারফূ হাদীস বলে।
  • মাওকূফ: যে হাদীসের বর্ণনা- সূত্র ঊর্ধ্ব দিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে , অর্থাৎ যে সনদ -সূত্রে কোন সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনুমোদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাওকূফ হাদীস বলে। এর অপর নাম আসার।
  • মাকতূ: যে হাদীসের সনদ কোন তাবেঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাকে মাকতূ হাদীস বলা হয়।
  • তা’লীক: কোন কোন গ্রন্থকার হাদীসের পূর্ণ সনদ বাদ দিয়ে কেবল মূল হাদীস বর্ণনা করেছেন। এরূপ করাকে তা’লীক বলা হয়।
  • মুদাল্লাস: যে হাদীসের রাবী নিজের প্রকৃত শাইখের (উস্তাদের) নাম উল্লেখ না করে তার উপরস্থ শাইখের নামে এভাবে হাদীস বর্ণনা করেছেন যাতে মনে হয় যে, তিনি নিজেই উপরস্থ শাইখের নিকট তা শুনেছেন অথচ তিনি তাঁর নিকট সেই হাদীস শুনেন নি- সে হাদীসকে মুদাল্লাস হাদীস এবং এইরূপ করাকে ‘তাদ্লীস’ আর যিনি এইরূপ করেন তাকে মুদালস্নীস বলা হয়।
  • মুযতারাব: যে হাদীসের রাবী হাদীসের মতন ও সনদকে বিভিন্ন প্রকারে বর্ণনা করেছেন সে হাদীসকে হাদীসে মুযতারাব বলা হয়। যে পর্যন্ত না এর কোনরূপ সমন্বয় সাধন সম্ভবপর হয়, সে পর্যন্ত এই হাদীসের ব্যাপারে অপেক্ষা করতে হবে অর্থাৎ এই ধরনের রিওয়ায়াত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
  • মুদ্রাজ: যে হাদীসের মধ্যে রাবী নিজের অথবা অপরের উক্তিকে অনুপ্রবেশ করিয়েছেন, সে হাদীসকে মুদ্রাজ এবং এইরূপ করাকে ‘ইদরাজ’ বলা হয়।
  • মুত্তাসিল: যে হাদীসের সনদের ধারাবাহিকতা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ণরূপে রক্ষত আছে, কোন সত্মরেই কোন রাবীর নাম বাদ পড়ে নি তাকে মুত্তাসিল হাদীস বলে।
  • মুনকাতি: যে হাদীসের সনদে ধারাবাহিকতা রক্ষত হয় নি, মাঝখানে কোন এক সত্মরে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েছে, তাকে মুনকাতি হাদীস, আর এই বাদ পড়াকে ইনকিতা বলা হয়।
  • মুরসাল: যে হাদীসের সনদে ইনকিতা শেষের দিকে হয়েছে, অর্থাৎ সাহাবীর নাম বাদ পড়েছে এবং তাবেঈ সরাসরি মুহাম্মদের উল্লেখ করে হাদীস বর্ণনা করেছেন তাকে মুরসাল হাদীস বলা হয়।
  • মু’আল্লাক: সনদের ইনকিতা প্রথম দিকে হলে, অর্থাৎ সাহাবীর পর এক বা একাধিক রাবীর নাম বাদ পড়লে তাকে মু’আল্লাক হাদীস বলা হয়।
  • মু‘দাল: যে হাদীসে দুই বা ততোধিক রাবী ক্রমান্বয়ে সনদ থেকে বাদ পড়েছে তাকে মু‘দাল হাদীস বলে।
  • মুতাবি ও শাহিদ: এক রাবীর হাদীসের অনুরূপ যদি অপর রাবীর কোন হাদীস পাওয়া যায় তবে দ্বিতীয় রাবীর হাদীসকে প্রথম রাবীর হাদীসের মুতাবি বলা হয়। যদি উভয় হাদীসের মূল রাবী অর্থাৎ সাহাবী একই ব্যক্তি না হয় তবে দ্বিতীয় ব্যক্তির হাদীসকে শাহিদ বলে। আর এইরূপ হওয়াকে শাহাদাত বলে। মুতাবা’আত ও শাহাদাত দ্বারা প্রথম হাদীসটির শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • মা‘রূফ ও মুনকার: কোন দুর্বল রাবীর বর্ণিত হাদীস অপর কোন মাকবূল (গ্রহণযোগ্য) রাবীর বর্ণিত হাদীসের বিরোধী হলে তাকে মুনকার বলা হয় এবং মাকবূল রাবীর হাদীসকে মা‘রূফ বলা হয়।
  • সহীহ: যে মুত্তাসিল হাদীসের সনদে উল্লেখিত প্রত্যেক রাবীই পূর্ণ আদালত ও যাবত (ধারণ ক্ষমতা) গুণ সম্পন্ন এবং হাদীসটি যাবতীয় দোষত্রুটি ও শায মুক্ত তাকে সহীহ হাদীস বলে।
  • হাসান: যে হাদীসের মধ্যে রাবীর যাবত (ধারণ ক্ষমতা) এর গুণ ব্যতীত সহীহ হাদীসের সমস্ত শর্তই পরিপূর্ণ রয়েছে তাকে হাসান হাদীস বলা হয়। ফক্বীহগণ সাধারণত সহীহ ও হাসান হাদীসের ভিত্তিতে শরীয়াতের বিধান নির্ধারণ করেন।
  • যঈফ: যে হাদীসের রাবী কোন হাসান হাদীসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাকে যঈফ হাদীস বলে।
  • মাওযূ‘: যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে মুহাম্মদের নামে মিথ্যা কথা রটনা করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে, তার বর্ণিত হাদীসকে মাওযূ‘ হাদীস বলে।

রাবীর সংখ্যা বিচারে হাদীস প্রধানত দু‘প্রকার। যথা: ১. মুতওয়াতির (متواتر) ও ২. আহাদ (أحاد)।

  • ১. মুতওয়াতির: বৃহৎ সংখ্যক রাবীর বর্ণিত হাদীস, মিথ্যার ব্যাপারে যাদের উপর একাট্টা হওয়া অসম্ভব, সনদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যা বিদ্যমান থাকলে হাদীসকে মুতওয়াতির (متواتر) বলা হয়।
  • ২. আহাদ: أحاد তিন প্রকার। যথা:
    • মাশহুর: যে কোন সত্মরে হাদীস বর্ণনা কারীর সংখ্যা যদি দুই এর অধিক হয়, কিন্তু মুতওয়াতির এর পর্যায়ে পৌঁছে না তাকে মাশহুর (مشهور) বলে।
    • আযীয: যে কোন সত্মরে হাদীস বর্ণনা কারীর সংখ্যা যদি দু‘জন হয় ।
    • গরীব: যে কোন সত্মরে হাদীস বর্ণনা কারীর সংখ্যা যদি এক জন হয় ।
  • শায: একাধিক নির্ভরযোগ্য রাবীর বিপরীত একজন নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনাকে শায হাদীস বলে।
  • কিয়াস: অর্থ অনুমান, পরিমাপ, তুলনা ইত্যাদি। পরিভাষায়: শাখাকে মূলের সঙ্গে তুলনা করা, যার ফলে শাখা ও মূল একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
  • তাক্বলীদ: দলীল উল্লেখ ছাড়াই কোন ব্যক্তির মতামতকে গ্রহণ করা।
  • ইজতিহাদ: উদ্দিষ্ট জ্ঞান অর্জনের প্রচেষ্টা চালানোকে ইজতিহাদ বলে।
  • শরীয়াত: অর্থ: আইন, বিধান, পথ, পন্থা ইত্যাদি। পরিভাষায়: মহান আল্লাহ্‌ স্বীয় দ্বীন হতে বান্দার জন্য যা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন তাকে শরীয়াত বলে।
  • মাযহাব: অর্থ- মত, পথ, মতবাদ ইত্যাদি। ফিক্বহী পরিভাষায়: ইবাদাত ও মু‘আমালাতের ক্ষেত্রে শারঈ হুকুম পালনের জন্য বান্দা যে পথ অনুসরণ করে এবং প্রত্যেক দলের জন্য একজন ইমামের উপর অথবা ইমামের ওসীয়ত কিংবা ইমামের প্রতিনিধির উপর নির্ভর করে তাকে মাযহাব বলে।
  • নাযর: কোন বিষয়ে উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য চিন্তা-ভাবনা করাকে নাযর বলে।
  • আম: সীমাবদ্ধ করা ছাড়াই যা দুই বা ততোধিক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে তাকে আম বলে।
  • খাস: আম এর বিপরীত, যা নির্দিষ্ট বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে।
  • ইজমা: কোন এক যুগে আলিমদের কোন শারঈ বিষয়ের উপর এক মত পোষণ করাকে ইজমা বলে।
  • মুসনাদ: যার সনদগুলো পরস্পর এমনভাবে মিলিত যে, প্রত্যেকের বর্ণনা সুস্পষ্ট।
  • ফিক্বহ: ইজতিহাদ বা গবেষণার পদ্ধতিতে শারঈ হুকুম সম্পর্কে জানার বিধানকে ফিক্বহ বলে।
  • আসল বা মূল: এমন প্রথম বিষয়, যার উপর ভিত্তি করে কোন কিছু গড়ে উঠে। যেমন- দেয়ালের ভিত্তি।
  • ফারা বা শাখা: আসলের বিপরীত যা কোন ভিত্তির উপর গড়ে উঠে।
  • ওয়াজিব: যা আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি পাওয়া যাবে।
  • মানদূব: যা আমল করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর পরিত্যাগ করলে শাস্তি হবে না।
  • মাহযূর: যা পরিত্যাগ করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর আমল করলে শাস্তি পাওয়া যাবে।
  • মাকরূহ: যা পরিত্যাগ করলে সাওয়াব পাওয়া যাবে আর আমল করলে শাস্তি হবে না।
  • ফাৎওয়া: জিজ্ঞাসিত ব্যক্তির নিকট থেকে দলীল ভিত্তিক শারঈ হুকুম সুস্পষ্ট বর্ণনা করে নেয়াকে ফাৎওয়া বলে।
  • নাসিখ : পরিবর্তিত শারঈ দলীল যা পূববর্তী শারঈ হুকুমকে রহিত করে দেয় তাকে নাসিখ বলে।
  • মানসূখ: আর যে হুকুমটি রহিত হয়ে যায় সেটাই মানসূখ।
  • মুতলাক্ব: যা প্রকৃতিগত দিক থেকে জাতির সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে কিন্তু অনির্দিষ্টভাবে একটি অর্থকে বুঝায়।
  • মুকাইয়্যাদ: যা মুতলাক্বের বিপরীত অর্থাৎ জাতির সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে না। বরং নির্দিষ্ট একটি অর্থকে বুঝায়।
  • হাক্বীকাত: শব্দকে আসল অর্থে ব্যবহার করাকে হাক্বীকত বলে। যেমন- সিংহ শব্দটি এক প্রজাতির হিংস্র প্রাণীকে বুঝায়।
  • মাজায: শব্দ যখন আসল অর্থকে অতিক্রম করে তার সাথে সাদৃশ্য রাখে এমন অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে মাজায বলে। যেমন- সাহসী লোককে সিংহের সাথে তুলনা করা।

উপসংহার

উপরের আলোচনা থেকে এই বিষয়গুলো পরিষ্কার যে, কোরআন এবং হাদিসের সংকলন একদমই একইভাবে হয়েছে, এবং হাদিস ছাড়া ইসলামের আসলে কোরআনের কোন অর্থ হয় না। এর সত্যতা ও অস্তিত্ব নিয়েও বড় ধরণের সংকট তৈরি হয়। অনেক মুসলিমই আজকাল হাদিস অস্বীকার করতে চাচ্ছেন, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি হচ্ছে, ইসলামে অন্তর্ভূক্ত থেকে নিজেকে মুসলিম দাবী করে হাদিস অস্বীকার করা আসলে অযৌক্তিক এবং মূর্খতা প্রসূত কথাবার্তা। আমরা নাস্তিকরা নিজেরাও হাদিস মানি না, কিন্তু সেটি মৌলিকভাবে ইসলামকে অস্বীকার করার মাধ্যমে। ইসলাম রেখে ইসলামের অন্যতম ভিত্তিকে অস্বীকার করা খুবই হাস্যকর বিষয়। হাদিসে অবৈজ্ঞানিক এবং নবী মুহাম্মদের চরিত্র সম্পর্কে এমন সব বিবরণ আছে, যা প্রতিটি মুসলিমের জন্যেই লজ্জার। সেটি আমরা বুঝি। কিন্তু হাদিস অস্বীকার করে ফেলা যে ইসলাম থেকেই আসলে বের হয়ে যাওয়া, সেটি তাদেরও বোঝা প্রয়োজন। অবশ্য না বুঝলেও চলবে। উনারা হাদিস ছাড়া খুব বেশিদিন কোরআনেও বিশ্বাস রাখতে পারবেন না।

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৭২৩৮ []
  2. সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৬০৭ []
  3. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১১৪ []
  4. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১২০ []
  5. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১১৯ []
  6. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৭৪৯ []
  7. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৮৩৩ []
  8. ইমাম ইবনে মাজাহ আওর ইলমে হাদীস, পৃ: ১৬৪ []
  9. হাদিস সংকলনের ইতিহাস, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, খায়রুন প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪৬, ৪৭ []
  10. হাদিস সংকলনের ইতিহাস, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, খায়রুন প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪৪৬ – ৪৪৯ []
  11. কোরআন ৫ঃ৩৮ []
  12. কোরআন ২ঃ ১৭৩ []
  13. কোরআন ৫ঃ৩ []
  14. কোরআন ৫:৯৬ []
  15. সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৩১৪ []
  16. কোরআন ৩৩ঃ৫২ []
  17. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাসীর, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৯ []
  18. সুনান আন-নাসায়ী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩২০৮ []
  19. সূরা বাকারাঃ ১০৬ []
  20. কোরআন ৩৩ঃ৩৬ []
  21. কোরআন ১৬ঃ৪৪ []
  22. কোরআন ৫৯ঃ৭ []
  23. কোরআন ৪ঃ৮০ []
  24. কোরআন ৪৭ঃ৩৩ []
  25. কোরআন ৫ঃ৯২ []
  26. কোরআন ২৪ঃ৫৪ []
  27. কোরআন ৬৪ঃ১২ []
  28. কোরআন ৩ঃ৩১ []
  29. কোরআন ৭২ঃ২৩ []
  30. কোরআন ৭ঃ১৫৭ []
  31. হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ১৪৯৯ []
  32. কুরআন ৩৩ঃ৪০ []
  33. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৫ []
  34. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২৬৬৩ []
  35. সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ১২ []
  36. সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ১৩ []
  37. হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ১৫০১ []
  38. হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ১৫০৩ []
  39. হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ১৫০৪ []
  40. সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ১৩৩ []
  41. সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ৪৩ []
  42. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫৯৮৬ []
  43. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬২৪২ []
  44. সূনান নাসাঈ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৮১০ []
  45. সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৩৮৫৯ []
  46. Are There Any Early Hadiths? []
  47. সহিফা হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ []
  48. ইমাম আবু হানিফার হাদিস সংকলন গ্রন্থ []
  49. প্রথম খণ্ড, দ্বিতীয় খণ্ড []
  50. হাদিস সংকলনের ইতিহাস, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, খায়রুন প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৩০৫-৩১৫ []
  51. Ruling on one who rejects a saheeh hadith []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

3 thoughts on “ইসলামে হাদিসের গুরুত্ব এবং অপরিহার্যতা

  • May 8, 2021 at 1:20 PM
    Permalink

    দালিলিক লেখা।

    Reply
  • August 28, 2021 at 7:31 PM
    Permalink

    হায়রে আসিফ ভাই আপনি নিজেই উল্লেখ করলেন সনদের বিষয়টা,যেখানে কিনা ৫-৬ জন বর্ণনাকারী থাকে,এই ৫-৬ জন বর্ণনাকারীর সাহায্যে হাজার হাজার হাদিস এসেছে, তো মুহাম্মদের আমলে হাদিস লিখা থাকলে তার মৃত্যুর পরে কেনো এই ৫-৬ জন বর্ণনাকারীর সাহায্যে হাদিস আনা হলো(যেখানে বর্ণনাকারীরা সৎ ছিলো কিনা,স্বরণশক্তি ভালো ছিলো কিনা এসব দেখা হয়েছে), এর দ্বারাই তো স্পষ্ট বুঝা যায় যে অধিকাংশ হাদিসেই যে সমস্যা রহিয়াছে,

    এটা ইসলামের ভিত্তিকে দুর্বল করে,আর আপনি এইভাবে তাদের পক্ষে কথা লিখলেন??

    যারা হাদিসের সমস্যা নিয়ে কথা বলছে তারা ঠিকই বলেছে,অধিকাংশ হাদিসই মুহাম্মদের মৃত্যুর বহু পরে লিখিত।

    Reply
  • October 13, 2023 at 12:29 PM
    Permalink

    Sunnah. com এর সুনান-আন-নাসাই হাদিসগ্রন্থের ৫৫৭৪ এবং ৫৫৭৫ নাম্বারে দুইটা হাদিস আছে যেটা দেখে আমি প্রায় ‘থ’ কিংবা ভাল পরিমাণ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।

    একই হাদিস, একটা শব্দ তো পরের কথা, একটা লেটার এমনকি একটা দাঁড়ি-কমাও কমবেশী নাই কিন্তু একটা হাদিস সহি আর একটা হাদিস জঈফ।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *