আপনার কচু খেতে ভাল লাগে না?
যেদিন প্রথম বললাম, ‘কচু খেতে আমার ভাল্লাগেনা’ সেদিন বাসায় দেখার মত দৃশ্য তৈরী হল। আমার বাবা বুক চেঁপে ধরে সোফায় বসে পড়লেন। মা শাড়ির আঁচল মুখে চেপে ডুকরে কেঁদে উঠে বললেন, ‘এ কেমন ছেলে পেটে ধরেছি আমি?’ আমার বড় বোনের হাত থেকে কাঁচের গ্লাস পড়ে ঝনঝন শব্দে ভেঙে গেল। আমার দাদী নির্বাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। পরিবারের সবার সাথে আমার কথাবার্তা একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেল। বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণাও চলে এসেছে।
কচু সম্পর্কিত খুঁটিনাটি
কচু Araceae গোত্রভুক্ত একধরনের কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। কচু মানুষের চাষকৃত প্রাচীন উদ্ভিদগুলোর মধ্যে একটি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি কচু দেখতে পাওয়া যায়। রাস্তার পাশে, বাড়ির আনাচে কানাচে, বিভিন্ন পতিত জমিতে অনাদরে-অবহেলায় অনেক সময় কচু জন্মাতে দেখা যায়। কচু বহু জাতের হয়ে থাকে।
বনে জঙ্গলে যেসব কচু আপনাআপনি জন্মায় সেগুলকে সাধারণত “বুনো কচু” বলা হয়। এ ধরনের কচুর অনেকগুলো জাত মানুষের খাবারের উপযোগী নয়। খাবার উপযোগী জাতগুলোর অন্যতম হচ্ছে মুখীকচু, পানিকচু, পঞ্চমুখী কচু, পাইদনাইল, ওলকচু, দুধকচু, মানকচু, শোলাকচু ইত্যাদি। সবজি হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও সৌন্দর্যের কারণে কিছু কিছু প্রজাতির কচু টবে ও বাগানে চাষ করা হয়। এদের মধ্যে কতগুলোর রয়েছে বেশ বাহারী পাতা, আবার কতগুলোর রয়েছে অত্যন্ত সুন্দর ফুল।
এই বাসায় থাকার শর্ত হল আমাকে কচু খেতে হবে, সারাদিনে ৫ বার কচুর গুণকীর্তন করতে হবে এবং আগামী বছর কচুর জন্মভূমি তথা সবচেয়ে বড় খামার পরিদর্শনে যেতে হবে। এছাড়াও বছরে ২ বার নির্দিষ্ট দিনে কচুর উৎসব যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করতে হবে। তার ভেতর এক উৎসব আবার প্রাণী হত্যার উৎসব। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই নিয়মই চলে আসছে। তাছাড়াও কচু বাদে অন্য সবজি যারা খায় তাদের ঘৃণা করতে হবে, অভিশাপ দিতে হবে। তাদের কচু খাওয়ার দাওয়াত দিতে হবে। দাওয়াত কবুল না করলে যুদ্ধ করতে হবে তাকে জোর করে কচু খাওয়ানোর জন্য। একজন সভ্য মানবিক মানুষ হিসেবে এসব অসভ্য বর্বর নিয়ম আমি মানতে পারছিনা।
আরো অনেক অদ্ভুত, নৃশংস নিয়ম রয়েছে। যেমন কেউ যদি কচু সম্পর্কে কোন বিরূপ মন্তব্য করে তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দেয়া আমাদের ঐতিহ্য। আসলে আমরা কচুকে একটু বেশিই ভালবাসি কিনা। কেউ কচু নিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু বললে সহ্য করা যায়, বলেন? আমাদেরও তো কচুনুভূতি রয়েছে, নাকি? আমরা ছোলার কিংবা গাজরের হালুয়াতেও হালকা কচু দিয়ে দেই, আবার বিরিয়ানিতেও কচু খাই। অবাক হওয়ার কিছু নেই, আমরা এরকমই। সব কিছুর সাথে কচু মিক্স না করলে খাবার হজমই হতে চায়না।
কেউ যদি পেস্ট্রীর সাথে কচু মেলাতে না চায় তখনও আমরা নেই ঠেলি। মানবে না মানে? মানতেই হবে। কচুর পুষ্টিগুণ তো সেই ১৬০০ বছর আগেই প্রমাণিত। আর তোমরা আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে পেষ্ট্রী, স্যান্ডউইচ, বার্গার খাওয়া শিখেছো তো মাত্র কয়েক বছর আগে। তার মানে আমার কচুই সেরা।
আমরা সব কিছুর সাথে কচুর সম্পর্ক খুঁজে বেড়াই। বিজ্ঞানের সাথে কচু মেলাতে আমরা পারদর্শী। যেমন ধরুন নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে যেয়ে চাঁদের মাটিতে কচু গাছ দেখেছেন। এরপর থেকে তিনি কচু ছাড়া আর কিচ্ছু মুখে দেননা। অথবা মাইকেল জ্যাকসন কচু খেয়ে স্টেজে গান গাইতে উঠতেন। শেষ জীবনে তিনি কচু খেয়েই বেঁচে ছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
তবে এই কচু গ্রুপের ভেতরেও আবার প্রচুর গ্রুপিং আছে। কেউ কচুর লতি গ্রুপ, কেউ কচুরমুখী, কেউ আবার কচুর ডাটা, কেউ কচুশাক। শাক গ্রুপ মুখী গ্রুপকে দেখতেই পারেনা। আর ডাটা গ্রুপ তো ঘোষণা দিয়েই রেখেছে লতি আসলে কচুর কোন অংশই নয়। তাদের কতল করে ফেলতে হবে। আবার এসব শাখাগুলোর উপশাখাও অনেক। এছাড়াও রয়েছে ওলকচু, মানকচু ইত্যাদি নামের হাজার খানেক গ্রুপ। তারা সবাই নিজেদের একমাত্র সত্য কচু বলেই দাবী করে।
কচুর পরিবারে জন্মালে আপনাকে মনেপ্রাণে মানতে হবে কচুই পৃথিবীর একমাত্র সবজি। এর তরকারিই দুনিয়ার সেরা। বাদবাকি কোন সবজি আসলে অরিজিনাল সবজিই নয়। কচু খেয়ে আপনার গলা কুটকুট করলেও, চুলকে ছিড়ে যেতে চাইলেও খবরদার টু শব্দ করবেন না। একদম চেঁপে যান। বলেছেন কি মরেছেন। কচুখোরদের হাতে আপনি কচুকাটা হয়ে যেতে পারেন। মাত্রতো আর কটা দিন। চুপচাপ নাক চেঁপে ধরে কচুটা ঢক করে গিলে ফেলুন তো।
ওই। আবার শুরু করে দিয়েছে, ‘কচুই সেরা, কচুই সেরা। কচু ছাড়া আর কোন সবজি নেই। কচু ছাড়া আর কোন সবজি নেই। ……… ‘
(স্যাটায়ার পোস্ট। পুরোটাই কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে কোন মিল নাই। কোন অংশ মিলে গেলে তা নিছক অনিচ্ছাকৃত অথবা পাঠকের অলীক কল্পনামাত্র।)
আপনার চমৎকার স্যাটায়ার লেখার জন্য কচুৎসবের কচুকীয় শুভেচ্ছা
আপনার কচু নিয়ে এমন কুচ কুচে কচু কুচ লেখার জন্য কচু দিবস দিয়ে ঘোড়ার কচুর মহোৎসব করে কচু পূজার আয়োজন করার দাবি জানাচ্ছি।
শাতিল ভাই এমন একটা লেখা লেখছিল।