আরমিন নবাবি ও রিচার্ড ডকিন্স – আস্তিক্য, নাস্তিক্য এবং অজ্ঞেয়বাদ
সূচিপত্র
ভূমিকা
কিছু লোক ঈশ্বরের উপর তাদের বিশ্বাসের অভাবকে ব্যাখ্যা করার সময় তুলনামূলক ‘নিরাপদ’ অবস্থানে থাকার জন্য বলতে পছন্দ করেন, “আমি নাস্তিক্যবাদী (atheist) নই, আমি একজন অজ্ঞেয়বাদী (Agnostic)”। অনেকেই অজ্ঞেয়বাদীদেরকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা ব্যক্তি বা এখনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেননি এমন ব্যক্তি বলে ভেবে থাকেন। কিন্তু অজ্ঞেয়বাদ কোন স্বাধীন চিন্তাধারা নয় যা আস্তিক্যবাদ ও নাস্তিক্যবাদ এর ভেতরে বা বাইরে অবস্থান করে। আর এটা নাস্তিক্যবাদ এর সাথে মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ নয় (অর্থাৎ নাস্তিক্যবাদ ও অজ্ঞেয়বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন নয়, এদের একে অপরের উপর অংশত উপরিপাতন বা ওভারল্যাপ আছে)। অজ্ঞেয়বাদ নাস্তিক্যবাদ এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়। নাস্তিক্যবাদ হল “আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?” এই প্রশ্নের উত্তর। অন্যদিকে অজ্ঞেয়বাদ হল, “আপনি কি কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কিনা এটা জানেন?” এই প্রশ্নের উত্তর। আর তাই, একজন ব্যক্তির পক্ষে একই সাথে নাস্তিক্যবাদী এবং অজ্ঞেয়বাদী হওয়া সম্ভব। আপনি যদি একই সাথে নাস্তিক্যবাদী এবং অজ্ঞেয়বাদী হন তাহলে আপনি দাবি করেন না যে, এরকম কোন চূড়ান্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই যার দ্বারা নির্দিষ্টভাবে ঈশ্বরের প্রতিটি সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা যায়, আবার আপনি এটাও বিশ্বাস করেন না যে, কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। (লেখক এই অবস্থানের ব্যক্তিদেরকে এগনস্টিক এথিয়েস্ট বলেন যারা একই সাথে এথিয়েস্ট এবং এগনস্টিক হন। তাদের অবস্থানটির নাম হল এগনস্টিক এথিয়েজম।)
অজ্ঞেয়বাদের ব্যাখ্যা
অজ্ঞেয়বাদ শব্দটি ইংরেজি যে শব্দটির পারিভাষিক শব্দ, অর্থাৎ “Agnostic” শব্দটিকে ভাংলে আসে গ্রিক “a” এবং “gnostos”। gnostos অর্থ জ্ঞানী, আর তার আগে উপসর্গ “a” মিলে agnostic শব্দের আক্ষরিক অর্থ হয়েছে জ্ঞানহীন। সেই অর্থে একজন ব্যক্তি অনেক বিষয়ে agnostic হতে পারেন। কিন্তু এটার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবহার দেখা যায় ধর্মীয় বিশ্বাসের বেলায়। যখন ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রশ্ন আসে, তখন দুটি মৌলিক অবস্থানের সূচনা ঘটে যাদের মধ্যে যেকোন একটিকে গ্রহণ করতে হয়। এটা অনুসারে, হয় আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে পারেন, অথবা অবিশ্বাস করতে পারেন। কিন্তু যদি অপশনগুলোকে আরও একটু নীরিক্ষণ করেন তাহলে আপনি জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে মোট চারটি অবস্থান দেখতে পারবেন:
১। জ্ঞেয়বাদী আস্তিক (Gnostic theist): আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন এবং এটা যে সত্য এই বিষয়ে আপনার জ্ঞান আছে (বা এটা যে সত্য তা আপনি জানেন)।
২। অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক (Agnostic theist): আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কিন্তু জানেননা যে এটা সত্যি কিনা (অর্থাৎ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে আপনার জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন)।
৩। জ্ঞেয়বাদী নাস্তিক (Gnostic atheist): ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এটা জেনে আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন (অর্থাৎ আপনি জানেন যে ঈশ্বর নেই এবং তাই আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না)।
৪। অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক (Agnostic atheist): ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই এটা না জেনেই আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন (অর্থাৎ আপনি জানেননা যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই কিন্তু আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না।)
তৃতীয় অবস্থানটিকে, অর্থাৎ জ্ঞেয়বাদী নাস্তিক্যবাদ বা Gnostic atheism অবস্থানটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, “আমি বিশ্বাস করি এবং “জানি” যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই”। অন্যদিকে চতুর্থ অবস্থানটিকে, অর্থাৎ অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক্যবাদ বা Agnostic atheism বলা হয় যা বলে, “ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে, এতে আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমি এটা জানিনা যে ঈশ্বরের অনস্তিত্ব সত্য কিনা”। এই দুই দাবীর পার্থক্য সূক্ষ্ম কিন্তু এটাকে বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
অবিশ্বাস করা আর অন্য কিছুতে বিশ্বাস করা এক নয়
একজন নাস্তিক্যবাদীকে ঈশ্বর নেই এটা প্রমাণ করতে বলা হলে এটা ধরেই নেয়া হয় যে সেই নাস্তিক্যবাদী লোকটি “ঈশ্বর নেই” এই কথাটিতে বিশ্বাস করেন। জ্ঞেয়বাদীই নাস্তিক্যবাদীগণ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু নাস্তিক্যবাদীদের মধ্যে অনেক অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকও আছেন যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এটাও নিশ্চিতভাবে দাবী করেন না। দুটোই বৈধভাবে নাস্তিক্যবাদ বা atheism। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে atheism বা নাস্তিক্যবাদ এবং agnosticism বা অজ্ঞেয়বাদ সম্পূর্ণভাবে দুটি আলাদা বিষয় নয়।
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এটাই কাউকে নাস্তিক শ্রেণীভুক্ত করার জন্য যথেষ্ট। কোন কিছুতে বিশ্বাসহীনতা মানেই এই নয় যে এটাকে মিথ্যা বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। এটার কেবল এই অর্থই থাকতে পারে যে এটা যে সত্য সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত নন। উদাহরণস্বরূপ আপনার একজন বন্ধু বিশ্বাস করতে পারে যে ফোর্ড বিশ্বের সবচেয়ে ভাল গাড়ির কোম্পানি। আপনার এই বিষয়ে কোন বিশেষ মতামত বা ভাবনা নেই। আপনি বিশ্বাস করেন না যে ফোর্ড অন্য কোন ব্র্যান্ডের গাড়ির চেয়ে ভাল, কিন্তু এটা যে বিশ্বের সবচেয়ে ভাল কার ব্র্যান্ড না আপনি এটাও জানেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনি আপনার বন্ধুটির দাবীর বিষয়ে agnostic বা অজ্ঞেয়বাদী।
দ্য বার্ডেন অব প্রুফ বা প্রমাণের দায়
ধরুন, আমি আপনার কাছে একটি অসম্ভব দাবি নিয়ে এলাম। সেটা হল, “আমার কাছে একটি দুই ফুট লম্বা লেপ্রিকন (Leprechaun – রূপকথায় বর্ণিত একধরণের অবাস্তব জীব) আছে। এটা আমার সিন্দুকে থাকে। কেবলমাত্র আমিই এই লেপ্রিকনকে দেখতে পারি আর এই লেপ্রিকনের অস্তিত্বের কোন ফিজিকাল এভিডেন্স নেই।” কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয় যে এই লেপ্রিকনটির কোন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু আমি এটারও কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে পারছি না যে এই লেপ্রিকনের কোন অস্তিত্ব আছে। আর এই ধরণের দাবিকেই আনফলসিফায়াবল ক্লেইম (Unfalsifiable claim) বা প্রমাণ-অযোগ্য দাবি বলা হয়।
যখন একটি প্রমাণ-অযোগ্য দাবিকে সামনে নিয়ে আসা হয়, তখন বার্ডেন অব প্রুফ বা প্রমাণের দায় তার উপরের বর্তায় যে ব্যক্তি দাবিটি নিয়ে এসেছেন। অন্যথায় এবসার্ডিটি বা বিমূর্ততার সূচনা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ প্রমাণ-অযোগ্য দাবি সংক্রান্ত চিন্তন পরীক্ষণগুলো বা থট এক্সপেরিমেন্টগুলোর (Thought Experiment) কথাই চিন্তা করুন, যেমন “ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার”, “ইনভিজিবল পিংক ইউনিকর্ন”, স্যাগানের “দ্য ড্রাগন ইন মাই গ্যারেজ” এবং “রাসেলস টিপট” এর অস্তিত্ব। এই প্রত্যেকটি থট এক্সপেরিমেন্টেই পূর্ববর্তী উদাহরণের লেপ্রিকনের মত কোন না কোন আশ্চর্যজনক এবং অসম্ভব প্রাণীর কথা বলা হয়েছে যাদের অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে অপ্রমাণ করা যায় না।
আর এখানেই অজ্ঞেয়বাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হয়ে দাঁড়ায়। অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকগণ স্বীকার করেন যে, তারা ঈশ্বরকে নির্দিষ্টভাবে অপ্রমাণ করতে পারবেন না। কিন্তু তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপর সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবকে চোখে আঙ্গুলে দেখিয়ে দিতে পারেন এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
কিছু দাবীকে অপ্রমাণ করা যায়
উপরের যুক্তিগুলো কেবল প্রমাণ-অযোগ্য দাবি বা যে দাবিগুলোকে সত্য বা মিথ্যা বলে প্রমাণ করা যায় না তারদের উপরেই প্রয়োগ করা যায়। যখন এই যুক্তিগুলো বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসে প্রযুক্ত হয় তখন অনেক ধর্মীয় দাবিগুলোই তুলনামূলক নিশ্চয়তার সাথে অপ্রমাণ করা সম্ভব। কারণ সেই দাবিগুলো নিজে থেকেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এগুলো যুক্তির মুখে এমনিতেই ভেঙ্গে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, আব্রাহামীয় ঈশ্বর ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের দ্বারা উপাসিত হন। ধরুন আব্রাহামীয় ঈশ্বর একই সাথে সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান এবং সর্বমঙ্গলময়। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য আমরা যে জগৎকে দেখছি সেখানে একই সাথে থাকতে পারে না বা কোএক্সিস্ট করতে পারে না। যখন বড় বড় দূর্যোগ ঘটে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায় তখন ঈশ্বরের পক্ষে একই সাথে সর্বমঙ্গলময় এবং সর্বশক্তিমান হওয়াটা অসম্ভব হয়ে যায়।
হয় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এরকম দূর্যোগ আটকানোর কোন ক্ষমতা নেই অথবা এই সর্বমঙ্গলময় ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষের দুঃখ দুর্দশা সম্পর্কে একেবারেই ভাবনাচিন্তা করেন না। সুতরাং ঈশ্বরের প্রতিটি সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা সম্ভব নাও হতে পারে তবে ঈশ্বরের কিছু কিছু স্ববিরোধী সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা সম্ভব।
স্পেক্ট্রাম অব থিস্টিক প্রোবাবিলিটি অথবা আস্তিকীয় সম্ভাবনার বর্ণালী
আমাদের জীবনের অনেক বিষয়ের মতই আস্তিক্যবাদ এবং নাস্তিক্যবাদকে সাদা বা কালো এর মত দৃঢ় চরম-দ্বিমুখিতায় না ফেলে একটি স্পেক্ট্রাম বা বর্ণালীতে ফেলতে হয় (অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে হয় আস্তিক নয় নাস্তিক এভাবে শ্রেণীবিভক্ত না করে তাকে আস্তিক্যবাস থেকে নাস্তিক্যবাদ পর্যন্ত বর্ণালীর কোন একটি অবস্থানে রাখার কথা বলা হচ্ছে)। রিচার্ড ডকিন্স তার বিখ্যাত বই “দ্য গড ডিল্যুশন”-এ এই স্পেক্ট্রাম অব থিস্টিক প্রোবাবিলিটি বা আস্তিকীয় সম্ভাবনার বর্ণালী এর ধারণাটি দেন। এখানে আস্থিক্যবাদ থেকে নাস্তিক্যবাদ পর্যন্ত মোট সাতটি অবস্থানের কথা বলা হয়েছে। এমন নয় যে এই সাতটি অবস্থান নিয়েই বর্ণালীটি, বরং বর্ণালীর ধারণায় এই সাতটি অবস্থানের দুটো পাশাপাশি অবস্থানের মধ্যেও কোন অবস্থান থাকতে পারে। কিন্তু এই সাতটি অবস্থান হচ্ছে বর্ণালীটির মদ্যে থাকা সাতটি মাইলফলক যা দিয়ে বর্ণালীর ভিতরের বিভিন্ন অবস্থানকে সরলভাবে প্রকাশ করা যায়। নিচে এগুলোর সারমর্ম দেয়া হল:
১। সবল আস্তিক্যবাদ (Strong theism): ব্যক্তি সন্দেহমুক্ত হয়ে জানেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। সি. জি. ইয়াং এর ভাষায়, “আমি বিশ্বাস করি না, আমি জানি”।
২। কার্যত আস্তিক্যবাদ (De facto theism): ব্যক্তি একশভাগ নিশ্চিন্ত নন যে ঈশ্বর আছেন, কিন্তু মনে করেন তার অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে ভেবেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেন।
৩। দুর্বল আস্তিক্যবাদ (Weak theism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ৫০% এর বেশি, কিন্তু খুব একটা বেশি নয়। ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত নন কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাসের দিকে ঝুঁকে থাকেন।
৪। পরিপূর্ণ অজ্ঞেয়বাদ (Pure agnosticism) অথবা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা (Compleat impartiality): ঈশ্বর থাকার সম্ভাবনা ৫০%। ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা, তার সত্য হবার সম্ভাবনা ও মিথ্যা হবার সম্ভাবনা ব্যক্তির কাছে সমান।
৫। দুর্বল নাস্তিক্যবাদ (Weak atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা ৫০% এর কম, কিন্তু খুব একটা কম নয়। ব্যক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত নন কিন্তু সন্দেহবাদের (Skepticism) দিকে তিনি ঝুঁকে থাকেন।
৬। কার্যত নাস্তিক্যবাদ (De facto atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা খুবই কম, কিন্তু ০% এর উপরে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এব্যাপারে ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে ইতিবাচক নন কিন্তু তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক কম বলে মনে করেন এবং ঈশ্বর বলে কিছু নেই ভেবেই জীবন অতিবাহিত করেন।
৭। সবল নাস্তিক্যবাদ (Strong atheism): ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা শূন্য। ব্যক্তি শতভাগ নিশ্চিন্ত যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।
ডকিন্স বলেন, বেশিরভাগ আস্তিক মানুষ তাদের সন্দেহের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্মীয় বিশ্বাসকে শক্তভাবে আকড়ে থাকেন, এবং তাই নিজেদেরকে ১ নং অবস্থানেই ফেলেন। এদিকে বেশিরভাগ নাস্তিক নিজেদেরকে ৭ নং অবস্থানে ফেলেন না, কারণ প্রমাণের অভাবে নাস্তিক্যবাদের উদ্ভব হয় এবং প্রমাণের উপস্থিতি সবসময়ই চিন্তাশীল মানুষের চিন্তাকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। বিল মার এর নেয়া এক সাক্ষাতকারে ডকিন্স নিজেকে ৬ নং অবস্থানে ফেলেন বলে স্বীকার করেছিলেন। তবে পরবর্তিতে এনথোনি কেনি এর নেয়া এক সাক্ষাতকারে ডকিন্স প্রস্তাব করেন “৬.৯” নং অবস্থানই বেশি শুদ্ধ হবে।
যদি আপনাকে নিজের বিশ্বাসকে ডকিন্সের স্কেলে রেট করতে বলা হয় তাহলে আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে ফেলবেন?
সম্পর্কিত পাতা: নাস্তিকতার দর্শন
এই লেখাটি আরমিন নবাবি এর লেখা প্রবন্ধ “Atheism vs Agnosticism: What is the difference?”, তার লেখা গ্রন্থ “Why There Is No God: Simple Responses to 20 Common Arguments for the Existence of God” এবং রিচার্ড ডকিন্স এর লেখা গ্রন্থ “The God Delusion” – এ উল্লিখিত আস্তিক্যবাদ, নাস্তিক্যবাদ ও অজ্ঞেয়বাদ সম্পর্কিত আলোচনার উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। লেখাটি পোস্টদাতার ব্যক্তিগত মতামতের প্রতিফলন নয়।
আমি নিজেকে ডকিন্সের স্কেলে ৬ নং এ ফেলবো।
লেখককে ধন্যবাদ, দারুণ লেখাটি অনুবাদ করার জন্য। আশা করছি , আপনি ভবিষ্যতে আরো সুন্দর সুন্দর লেখা উপহার দেবেন।
লেখককে ধন্যবাদ
জ্ঞান কি?
জ্ঞান আল্লাহর সেই অংশ যা ব্যক্তির মধ্যে কাজ করে, ব্যক্তিদের মধ্যে মহান সম্পর্কের সূচনা করে এবং গতিময় ক্রিয়াকলাপগুলি নির্ধারণ করে যা সেই ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত জাতির কল্যাণে অবদান রাখে। এর বাইরেও জ্ঞান সকল জাতির মঙ্গলে অবদান রাখে।
জ্ঞান আপনার সত্য স্ব, আপনার সত্য মন এবং মহাবিশ্বের আপনার সত্য সম্পর্কের প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়াও এটি বিশ্বের মধ্যে আপনার বৃহত্তর আহ্বান এবং আপনার প্রকৃতির এক নিখুঁত ব্যবহার, আপনার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা এবং দক্ষতা, এমনকি আপনার সীমাবদ্ধতাও — এ সমস্ত কিছুই বিশ্বের ভালোর জন্য দেওয়া হয়েছে।
জ্ঞান ভালবাসার সত্য বীজ ধারণ করে, এমন ভালবাসা নয় যা নিছক অনুভূতি হয়, এমন ভালোবাসা নয় যা ভয় থেকে জন্মে একটি তাত্পর্যপূর্ণ ইচ্ছাকে ঘিরে নেশার এক ধরনের রূপ। জ্ঞান হ’ল সত্যিকারের ভালবাসার বীজ, সেই ভালবাসা নয় যা বিজয় লাভ করতে, অধিকার করতে এবং আধিপত্য অর্জন করতে চায়, কিন্তু যে ভালবাসা সেবা করতে চায়, ক্ষমতায়িত করতে চায় এবং অন্যকে মুক্তি দিতে চায়।
জ্ঞানের সাথে সম্পর্ক
পবিত্র আত্মার উপস্থিতি একটি সম্পর্ক। এটি একটি চ্যালেঞ্জ। এটা জ্ঞান।
জ্ঞান আপনার প্রাথমিক সম্পর্ক কারণ এটি আল্লাহর সাথে আপনার সংযোগ।
এই জ্ঞান প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে একটি বৃহত্তর বুদ্ধি যা আবিষ্কারের জন্য অপেক্ষা করছে, তবে এর পুরো অস্তিত্ব সমস্ত জীবনের স্রষ্টার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এটি এমন একটি উত্স নয় যা আপনি নিজেকে সমৃদ্ধ করতে বা অন্যের উপর সুবিধা অর্জনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন, কারণ জ্ঞান এই জিনিসগুলি করবে না। এর উদ্দেশ্য এবং এর বাস্তবতা হ’ল সমস্ত জীবনের স্রষ্টার প্রতি সাড়া দেওয়া এবং মানবিকতার অস্তিত্বের এই মহান দ্বারপ্রান্তের কাছে এগিয়ে যেতে মহান আহ্বানের প্রতি সাড়া দেওয়া।
জ্ঞান কি করে
“বিচ্ছিন্নদের জ্ঞানের মাধ্যমে মুক্ত করা হয়। দুষ্টদের জ্ঞানের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা হয়। মূর্খদের জ্ঞানের মাধ্যমে বুদ্ধিমান করা হয়। আল্লাহ এইভাবে কেবল মানব পরিবারকেই নয়, বিচ্ছেদে বসবাসকারী সমস্ত সৃষ্টিকে মুক্তি দেন, যা দৈহিক মহাবিশ্ব দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হয় যা আপনি কেবল কল্পনা করতে পারেন ”
“জ্ঞান আপনাকে সঠিক লোকের দিকে নিয়ে যাবে এবং ধীরে ধীরে এবং সাবধানতার সাথে সঠিক বোঝার বিকাশ করবে যদি আপনি ধৈর্যশীল, অধ্যবসায়ী এবং আপনার পদ্ধতির প্রতি আন্তরিক হন। ”
“জ্ঞান “জানে কী অপরিহার্য, এবং এটিকে বোকা বানানো বা অন্য কোনও কিছু দ্বারা চালিত করা যায় না।”
“যদি জ্ঞানকে আপনার সম্পর্কের মধ্যে এবং সম্পর্কের বিষয়ে আপনার সিদ্ধান্তের মধ্যে আনা না যায়, তবে জ্ঞান আপনার মধ্যে কেবল একটি সম্ভাবনাই হয়ে থাকবে।”
“আপনি যদি জ্ঞান ছাড়াই বেছে নেন, জ্ঞান আপনাকে অনুসরণ করবে না। আপনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে পারেন যে আপনি সঠিক কাজ করছেন। এমনকি আপনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসও করতে পারেন যে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু যদি জ্ঞান আপনার সাথে না যায়, তবে আপনার কোনও স্থিতিশীলতা এবং আপনার প্রয়াসে কোনও নিশ্চয়তা নেই। ”
“জ্ঞান ভালোর জন্য সমস্ত মানসিক এবং শারীরিক ক্ষমতা সক্রিয় করে। এটি মানবিক স্বার্থের জন্য সমস্ত ধরণের স্বতন্ত্র অনুসরণকে পরিচালনা করে। চারুকলায়, বিজ্ঞানগুলিতে, সমস্ত প্রয়াসে, সহজ অঙ্গভঙ্গিতে এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কর্মে জ্ঞান একটি বৃহত্তর জীবন প্রদর্শন করে এবং এর সাথে নিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সমস্ত উচ্চ গুণকে শক্তিশালী করে।”
শাকচুন্নি, জ্বীন ভূত থাকার সম্ভাবনাএবং সৃষ্টিকর্তা থাকার সম্ভাবনা আমার মতে প্রায় শুন্য।
আমি ডকিন্সের স্কেলে ৬.৯৯ দিব।
তবে হ্যা, আমি এই ব্যাপারে ১০০% নিশ্চিত যে, পৃথিবীর সব ধর্মই বানোয়াট। (আমি যেসব ধর্মের সংস্পর্শেএসেছি)
ধর্মগ্রন্থ গুলো অনৈতিক এবং অবৈজ্ঞানিক তথ্যে পরিপূর্।
আমি মনে করি, এখানে যেটাকে অজ্ঞেয়বাদ বলা হচ্ছে। সেটা মোটেও অজ্ঞেয়বাদ নয়। এটা সংশয়বাদ বা Skepticism
অজ্ঞেয়বাদ হলো এমন এক দর্শন যার মতে ইশ্বর আছে কি নেই তা মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এবং এটা আমরা জানিনা। যদি বিজ্ঞান কখনো ইশ্বর আবিষ্কার করতে পারে তাহলে নাস্তিক্যবাদ নিজেই নিজেকে বাতিল করে দেবে এবং ইশ্বরকে মেনে নেবে। কিন্তু অজ্ঞেয়বাদ নিজেকে আরো শক্তিশালী করে নিজেকে টিকিয়ে রাখবে।
একজন অজ্ঞেয়বাদী কি ধরনের হয়। সেটা যদি না জানেন তাহলে বলি। তারা ধর্মবিরোধী ও অবিশ্বাসী। কারণ এর কোনো প্রমাণ নেই। যেমন ধরে নিলাম আল্লাহ আছেন। ইসলাম সত্য ধর্ম। কিন্তু সমস্যা হল। আল্লাহ যদি পরকালে আমাদের জাগ্রতই না করেন। যদি তিনি আমাদের ধোকা দেন। যদি তার কোনো স্রষ্টা থাকে কিন্তু তিনি আমাদের কাছ থেকে তা লুকান। আফসোস আমরা কখনোই সত্যটা জানতে পারব না। একই ভাবে ইশ্বর হয়ত আছেন কিন্তু তার কোনো প্রমাণ হয়ত তিনি রাখেননি।
তাই আমি ১-৭ এর কোনোটাই আমার জন্য গ্রহনযোগ্য নয়। আমি অজ্ঞেয়বাদী। নাস্তিক, শ্বরবাদী, ধর্মহীন উদাসীন, সংশয়বাদীথের আমি পছন্দ করি। কারন তারা তাদের ধারণা অন্যের উপর চাপায় না। মানবতা ও স্বাধীনতা চায়।