প্রতিক্রিয়াযুক্তিবাদ

একজন মিনার ভাই ও তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিভ্রান্তি

ভূমিকা

বর্তমান সময়ে মুসলিম দাঈ বা ইসলামিক এপোলোজিস্ট বা ইসলামের পক্ষে তথ্য প্রমাণ সহ লেখালিখি যারা করেন, তাদের মধ্যে মুহাম্মদ মুশফিকুর রহমান মিনার ভাইয়ের নাম উল্লেখযোগ্য। অসংখ্য ভুল বা মিথ্যা বলা মুসলিম লেখক এবং বক্তাদের মধ্যে একমাত্র তিনিই আস্তিক বা নাস্তিক, হিন্দু খ্রীস্টান বা মুসলিমদের সকলের মধ্যে নিজের সুসভ্য আচরণ, ভদ্রতা এবং সৌজন্য বোধ দ্বারা একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত নাস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদীদের সাথে খুবই মার্জিত ভাষায় উনি বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেছেন, যা প্রশংসার দাবীদার। সাধারণত বেশিরভাগ মুসলিম বক্তাই গলা উচিয়ে যুক্তির শক্তিমত্তা প্রকাশ করতে যেখানে ব্যস্ত, যুক্তির দুর্বলতা ঢাকতে গলার রগ ফুলিয়ে টেবিল চাপড়িয়ে চিৎকার করতে ব্যস্ত, হুমকি ধামকি গালাগালি ব্যক্তি আক্রমণ এবং মিথ্যা বলতে ব্যস্ত, এরকম অসংখ্য মুসলিম বক্তাদের মধ্যে উনাকে আলাদাভাবে অনেক মুক্তমনা লেখক ব্লগারও পছন্দ করেন। সেটি উনার নিজ যোগ্যতাতেই উনি অর্জন করেছেন।

উনি লেখালেখির পাশাপাশি একটা ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন যেখানে উনি নাস্তিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন। উনাকে অবশ্যই আমি অনেক শ্রদ্ধা করি মার্জিত ভাষা এবং ভদ্রভাবে আলোচনা করার জন্যে, যা কিনা বেশির ভাগ বাংলাদেশি মুমিনরা করেন না। উনি ভুল ভাল বা কুযুক্তি যাই বলুক, অন্তত মার্জিত ভাষায় ভদ্রভাবে বলেন। মানুষ হিসেবে আস্তিক নাস্তিক বাদ দিয়ে ভাবলে উনাকে ভাল মানুষ বলেই মনে হয়।

তাই উনার ওয়েবসাইটে ঢুকে কয়েকটি লেখা পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করছিলাম। একজন শিক্ষিত জ্ঞানী মানুষ যদি ইসলামের এবং কুরআন- হাদিসের প্রশ্নবিদ্ধ এবং হাস্যকর ব্যাপারের একটা সংক্ষিপ্ত লিস্ট/ নমুনা দেখতে চান, তাহলে উনার ব্লগের পোস্ট টাইটেলসমূহ পড়লেই বুঝতে পারবেন। প্রতিটা টাইটেলই প্রমান করে এই ধর্মে কত অর্থহীন এবং হাস্যকর জিনিস আছে। যদি না থাকত, তাহলে মিনার ভাই বা মুমিনদের এইরকম টাইটেল দিয়ে দিয়ে যুক্তি খন্ডন করতে হত না। উনারা উঠে পড়ে লেগে আছেন এইসব অর্থহীন অযৌক্তিক জিনিসকে কিভাবে একটু এদিক সেদিক করে শিক্ষিত মুমিনদের খাওয়ানো যায়, কখনও কখনও তাই বিজ্ঞানের সাহায্য নেন, আর না পারলে বলে দেন বিজ্ঞান সীমিত!! একটু খেয়াল করে দেখেন, যদি কোন ধর্মে সবকিছু পরিষ্কার করে বর্ণিত এবং পরিপূর্ণ থাকে, তাহলে মিনার ভাইয়ের মত লোকদের ওয়েবসাইট দিয়ে ধর্ম বাঁচাতে হয় না। তাদের এই ব্যর্থ প্রয়াসই প্রমান করে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’। একটা দুটো ইস্যু হলে কথা ছিল, হাজার হাজার ইস্যু আছে উনাদের ধর্মে, যা নিয়ে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি প্রশ্ন তুলতে পারেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পুরো ওয়েবসাইট জুড়ে যত রিফিউটেশন বা যুক্তি খণ্ডন আছে, তা বরাবরের মত একটা কমন প্যাটার্ন অনুসরন করে (একি প্যাটার্ন ইহুদি- খ্রিষ্টানরাও অনুসরন করে তাদের যুক্তিখন্ডন করে ) –

  • প্রথমে আরবি শব্দের একাধিক অর্থ খুজে বের করা
  • দ্বিতীয়ত আক্ষরিক অর্থ কে রুপক, রুপক অর্থকে আক্ষরিক বানিয়ে দেয়া
  • তৃতীয়ত শানে নুযূল নিয়ে টানাটানি করা
  • চতুর্থত হাদিসকে বাতিল বা দুর্বল বানিয়ে দেয়া

আবার অনেক সময় একই জিনিসের অনেক রকমের প্রকারভেদ ( CATEGORIZATION) করেন। এরপরে সেই প্রকার (CATEGORY) থেকে নিজের ইচ্ছামত বা সুবিধামত একটি পছন্দ করেন। ঠিক যেমন দাসী, কেয়ামত, আকাশ, সময় ইত্যাদি নিয়ে উনাদের অনেক রকম প্রকারভেদ আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এসব প্রকারভেদ ইসলাম ধর্মে রাসুল নিজেই করে যাননি। নবীর মৃত্যুর পরে ধর্ম রক্ষায় নবীর কিছু অনুসারী এসব প্রকারভেদ বানিয়েছেন, বা ধর্ম বাঁচাতে উনারা নিজেরা নিজেরাই এসব বানাচ্ছেন। উনারা এত বেশী ‘অর্থ সন্ত্রাস’ করেন, যা দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত। একটু কি নতুন কিছু পাবো না?

তারপরেও উনাকে ধন্যবাদ জানাই যে উনি মার্জিত ভাষায় আলোচনা করেন, এবং উনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাই যে উনার ব্লগ পড়ে আমি আরো নাস্তিক হয়ে গেছি। যেহেতু উনি মার্জিত ভাষায় কথা বলেন তাই আমার ইচ্ছে হয়েছিলো উনার ব্লগটি পড়ে দেখার। পড়ার আগে আমি মন দিয়ে চাচ্ছিলাম, সৎভাবে প্রত্যাশা করছিলাম, উনি এমন কিছু অকাট্য যুক্তি দেবেন যাকে কেউ খণ্ডন করতেই পারবে না। ভেবেছিলাম উনার যুক্তি দেখে মনে হবে এইরকম যুক্তি আগে কেন পেলাম না বা আগে কেন এভাবে ভেবে দেখি নি! কিন্তু উনার সব যুক্তি উপরে উল্লেখিত প্যাটার্ন অনুসরন করে দেয়া। যেসব যুক্তি খ্রিস্টান মিশনারীরা খ্রিস্ট ধর্ম রক্ষা করতে ব্যবহার করে করে পচিয়ে ফেলেছে।

এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে উনার কিছু কিছু লিখা দেখে (ডাইনোসর, জিন, মিরাজের ঘটনা ইত্যাদি) তো রীতিমত হাসি পায়! উনি বেশ কিছু তথ্য বিভ্রাট বা ভুল তথ্য দিয়ে বিজ্ঞান না জানা সরল সোজা মুমিনদেরকে বিভ্রান্ত করেছেন। এখানে তার কিছু নিয়ে আলোচনা করা হলো। তবে একটি বিষয় মনে করিয়ে দিচ্ছি, উনি সচেতনভাবে মিথ্যাচার করেছেন নাকি উনার জানায় ভুল রয়েছে, সেই সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। তাই উনাকে মিথ্যাবাদী আমি বলছি না, তবে অতি উৎসাহী হয়ে উনি যে ভুল তথ্য দিয়ে ইসলামকে গ্লোরিফাই করার চেষ্টা করেছেন সেটি নিশ্চিত। উনার ব্লগে উনি ছাড়াও অনেকে লিখে থাকেন, যেহেতু উনার ব্লগ, তাই যে কারো ভুল বা ভন্ডামির দায় উনিও এড়াতে পারেন না। উনি অবশ্যই সব পোস্ট ভালভাবে দেখে শুনে অনুমোদন করেছেন বলেই আমি ধরে নিচ্ছি।

আলফ্রেড ক্রোনার বিষয়ক দাবী

মুসলিম লেখক বা বক্তাদের মধ্যে একটি সাধারণ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় যে, তারা কোন তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই যা ইচ্ছা তাই দাবী করে বসেন। ইতিপূর্বে আমরা বহু ইসলামিক বক্তার মুখে নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে গিয়ে আজান শুনে ইসলাম গ্রহণ করেছেন বলে শুনেছি। শুধু কী নীল আর্মস্ট্রং, এই তালিকায় এমন কোনো ব্যক্তি নেই যার নাম ইসলামিক অ্যাপোলজিস্টগণ ঢোকান নি। সুনীতা উইলিয়ামস, মাইকেল জ্যাকসন, এমনকি ভারতীয় অভিনেত্রী সানি লিওনকে পর্যন্ত তারা ছাড়ে নি। বাঁশের কেল্লা ঘরানার ফেইসবুক পেইজে ঢুকলে জর্জ বুশ থেকে শুরু করে আইনস্টাইন, জর্জ বার্নার্ড শ, চার্চিল, সবাই যে আসলে গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, বা নবীর প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে ফেলতেন, তারা যে আসলে ইসলাম বা কোরআনের প্রশংসা করেছেন, এরকম অসংখ্য পোস্ট পাওয়া যাবে।

জ্ঞান বিজ্ঞানে অংশ গ্রহণ না করা, মূর্খতা এবং কূপমণ্ডূকতায় উটপাখির মত বালির মধ্যে নাক ঢুবিয়ে বসে থাকা একটি গোটা সম্প্রদায় যখন দীর্ঘদিনের হীনমন্যতা ঢাকতে সাদা চামড়ার লোকদের কথা বলে নিজ অজ্ঞতাকে গ্লোরিফাই করার চেষ্টা করে, সেই মনস্তত্ত্ব আমরা বুঝি। নতুন কিছু নয়। কোনো জার্মান বিজ্ঞানী, আমেরিকান দার্শনিক, এদের নাম ব্যবহার করে মূর্খ কিছু মানুষকে বোঝানো সহজ যে, ঐ দেখো, সাদা চামড়ার বড় বড় বিখ্যাত লোকও ইসলাম এবং কোরআন নিয়ে কত ভাল ভাল কথা বলে। মূর্খ মানুষেরা দেখে, বিশ্বাস করে, যাচাই করে দেখার প্রবণতা তাদের মধ্যে নেই। সেই তথ্যসমূহ সত্য না মিথ্যা তারা সেসব যাচাই না করেই বিশ্বাস করে। কারণ তাদের পুরো ব্যাপারটাই বিশ্বাসভিত্তিক। এখানে যাচাই বাছাইয়ের ব্যাপারই নেই। সন্দেহ, অবিশ্বাস বা ক্রস চেক করার দরকারও তাই নেই। বিশ্বাস করতে হবে, সেটাই বড় কথা। তাদের কথাতেই আছে, “ বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর!”

কিন্তু আসলেই কী নীল আর্মস্ট্রং ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন? চাঁদে গিয়ে তিনি কী আজান শুনেছিলেন? সুনীতা উইলিয়ামস কি মূসলিম হয়েছেন? প্রতিটি বক্তব্যের উত্তর আমরা মুক্তমনাগণ অনেকবার দিয়েছে। এবারে মুশফিক মিনার ভাই নাট্যমঞ্চে নিয়ে এসেছেন আরেক বিজ্ঞানীর নাম। সেই নিয়েই লিখছি।

উনার ব্লগে একটি লিখায় জার্মান জুওলজিস্ট ALFRED KRÖNER এর নাম উল্লেখ করে কিছুটা এরকম বলেছেন/বুঝিয়েছেন, নাস্তিকরা কুরআনে বিজ্ঞান বুঝে না, কিন্তু বড় বড় বিজ্ঞানীরা নাকি ঠিকই কুরআনে বিজ্ঞান (!!) খুঁজে পায়। উদাহরণ হিসেবে উনি ALFRED KRÖNER এর নাম উল্লেখ করেছেন। উনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, জার্মানির বিজ্ঞানী ALFRED KRÖNER নাকি কুরআনে বিজ্ঞান দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

মিনার ভাই বলেছেন,
“স্বল্প জ্ঞানের “বিজ্ঞানমনষ্ক”(?) অভিযোগকারীরা ঐ আয়াত থেকে বৈজ্ঞানিক ভুল খোঁজার চেষ্টা করলেও অনেক জ্ঞানীজন কিন্তু ওখানে কোন বৈজ্ঞানিক ভুল পাননি, বরং পেয়েছেন বৈজ্ঞানিক মিরাকল। সেই সাথে মেনে নিয়েছেন কুরআনের অসাধারাণত্ব।”

মিনার 1

মিনার ভাইয়ের উল্লেখিত সেই বিজ্ঞানী কি বলেছে আসুন জানি আসল ঘটনা-

Abdul Majeed al-Zindani একজন বাটপার, অসৎ এবং ভন্ড MILITANT ISLAMIST, যাকে USA ব্যান করেছেন এবং তাকে Specially Designated Global Terrorist বলেছে, কারণ তার সাথে বিন লাদেনের অনেক দিনের সম্পর্ক ছিল। প্রায় ১৯৭৯ দিকে German Professor of Geology – MR. ALFRED KRÖNER সৌদিতে একটি প্রফেশনাল কনফারেন্স যান, যেখানে তাদের কোন রকমের টিভি ইন্টারভিউ কথা আগে থেকে বলা হয়নি, কনফারেন্সের মাঝে হটাৎ করেই তাকে ইন্টারভিউ নেয়া হয়, ইন্টারভিউটি নেন সেই বাটপার এবং ভণ্ড Abdul Majeed al-Zindani, উল্লেখ্য, Alfred Kröner কখনই কুরআন পড়েননি এবং উনি এর কিছুই জানেন না। জিনদানি তাকে একের পর এক বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করতে থাকে তার নিজের পছন্দের কুরআন অনুবাদ থেকে নিয়ে। Alfred Kröner যেহেতু কুরআনের কিছুই জানেন না, তাই তিনি কিছু ক্ষেত্রে বলেন, “এসব এতো আগে জানার কথা নয় (যদি সত্যি হয়েই থাকে তো)” আবার উনি কিছু জায়গায় “আপত্তি”ও করেন। উনি কোনোভাবেই সেসব কোন ঐশী গ্রন্থ বা সোর্স থেকে আসা দাবী করেন নাই, বরং উনি নিজ মুখে বলেছেন, সব ধর্মীয় গ্রন্থেই কিছু না কিছু কালতালিয় ভাবে (মানে টেনা পেঁচিয়ে, অর্থের এদিক অদিক করে) বর্তমানের বিজ্ঞানের সাথে মিলে, এ নতুন কিছু নয়।

বরং উনাকে নিয়ে অজ্ঞ মুমিনরা “কুরআনে বিজ্ঞান” টাইপ কিছু দাবী করাতে উনি বেশ বিরক্ত। উনি সুস্পষ্ট ভাষায় কুরআনে কোন মিরাকল বা বিজ্ঞান পাওয়াকে নাকচ করে দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বাটপার জিনদানি শুধু তার সাথেই এই কাজ করে নাই, কুরআনে বিজ্ঞান প্রমান করতে জিনদানি, Allison (Pete) Palmer এবং William Hay নামের আরো দুজনের সাথে একই বাটপারি করেছিল। ALFRED KRÖNER-এর ইন্টারভিউ যে সময় নেয়া হয়েছে তখন ইন্টারনেট ছিল না, তাই তিনি অনেক পরে জিনদানির এই ভণ্ডামি বুঝতে পারেন। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, ALFRED KRÖNER কুরআনে বিজ্ঞান দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, এমন কোন রকমের বক্তব্য স্বয়ং ALFRED KRÖNER নিজেই দেন নাই, এটা সেই ভণ্ড জিনদানির নিজের মুখের কথা, যা কিনা ক্রোনার বলেছেন বলে তিনি একাই দাবী করেন (যার কোন অডিও/ভিডিও রেকর্ড জিনদানির করা ডকুমেন্টারিতেও নাই), নিচের ভিডিও লিংকে ALFRED KRÖNER এর নিজের বক্তব্য ভাল করে শুনলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

আমি একটা ব্যাপার দেখে আশ্চর্য হই এবং মজা পাই যে, বড় বড় বিজ্ঞানী বা ব্যাক্তি, যেমন কিথ মুর, মরিস বুকালি ইত্যাদি, যাদের কথা বলে মুমিনরা কুরআনে বিজ্ঞান দাবী করেন, এসব বড় বড় ব্যাক্তি/বিজ্ঞানীগন কুরআনে এত এত বিজ্ঞান দেখেও নিজেরা মুসলমান হন না, ব্যাপারটা সত্যিই হাস্যকর। এটা একটা প্যারাডক্স এর মত হয়ে গেল।

ALFRED KRÖNERও তার নিজ বক্তব্যে হাসতে হাসতে বলেন উনিও মুসলমান হননি। এইসব কি তাহলে আপনাদের ইসলামের “তাকিয়া’ এর কোন অংশ?

মিনার ভাইয়ের উচিৎ, সেই ভুলের জন্যে ফেসবুকে/ব্লগে দুঃখ প্রকাশ করা এবং সেটা রিমুভ করা। আশা করি ভবিষ্যতে রেফারেন্সের ব্যাপারে উনি আরো যত্নশীল হবেন।

বিখ্যাত Evolutionary Biologist Julian Huxley সংক্রান্ত মিথ্যা দাবী

মিনার ভাইয়ের ব্লগে “‘স্রষ্টাতত্ত্ব’ যদি সত্য হয়, তাহলে বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগই কেন নাস্তিক?” টাইটেলে একটি লিখা প্রকাশ হয়েছে, যেটা লিখেছেন আরিফ আজাদ (উল্লেখ্য এই আরিফ আজাদ তার পেরাডক্সিকেল সাজিদ ১ নামের বইতে অসংখ্য ভুল এবং ভুয়া তথ্য দিয়ে সরল সোজা মুমিনদের ব্রেইন ওয়াশ করেছেন, যা নিয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে শীঘ্রই)। যেহেতু এটা মিনার ভাইয়ের ব্লগ, আমি আশা করেছিলাম ভুল তথ্য বা একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা টাইপ কিছু উনি তার ব্লগে অনুমোদন করবেন না।

পোস্টে বলা হয়েছে, “ বিবর্তনবাদীদের একসময়ের নেতা জুলিয়ান হাক্সলি-কে এক টকশোতে মার্ভ গ্রিফিন জিজ্ঞেস করলেন, “Why do people believe in evolution?”

তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “The reason we accepted Darwinism even without proof, is because we didn’t want God to interfere with our sexual mores.”

অর্থাৎ, “প্রমাণাদি ছাড়াই বিবর্তনবাদকে আমরা মেনে নিয়েছি কারণ- আমরা চাই না যে, স্রষ্টা আমাদের যৌন আচার-আচরণের (স্বাধীনতায়) নাক গলাক।”

এটি সম্পূর্ণ একটি ভুয়া এবং ভুল তথ্য, একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা বলা যেতে পারে। আরিফ আজাদের কথা বাদই দিলাম, কারন তার বইতে ভুরি ভুরি মিথ্যা এবং ভুল তথ্যে ভরা (যা শীঘ্রই প্রকাশ হবে), কিন্তু মিনার ভাইয়ের উচিৎ ছিল অথেনটিক সোর্স থেকে আগে এটা যাচাই করে নেয়া। Julian Huxley কখনই এই ধরনের কোন কথা বলেন নাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে এটি কোন টকশোতে বলা হয়েছে তা নিয়েই খ্রিষ্টান আস্তিকদের মাঝে বিতর্ক আছে, কেউ বলেন PBS Interview তে, কেউ বলেন Dick Cavett Show তে, আবার কেউ বলেন Merv Griffin Show তে। তবে এই মিথ্যা রটনা সবার প্রথম ছড়ান D. James Kennedy নামের একজন আমিরিকান খ্রিস্টান পাদ্রি/Pastor। এরপর থেকে বাকি আস্তিকরা সেটা যাচাই না করেই ঢালাওভাবে বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করেন, আমাদের মুমিন ভাইরাও খ্রিস্টান সোর্স থেকে ধার করে না বুঝেই ব্যবহার করেন। অনেকেই বলেন কিছুটা এই রকমের কথা (হুবুহু তা নয়) আসলে Julian Huxley এর ভাই Aldous Huxley বলেছিলেন (উনি তখন আস্তিক ছিলেন)। মজার ব্যাপার হচ্ছে জুলিয়ান হাক্সলি এ নিয়ে মারভ গ্রিফিন সাথে কোন টকশো করেছেন বলেও কোনো সূত্রে পাওয়া যায় না। মিনার ভাই চাইলে IMDB Archive এবং WikiQuote (বিখ্যাত ব্যাক্তিদের উদ্ধৃতি) অথবা Merv Griffin Show এর কোন অফিসিয়াল রেফারেন্স চেক করে দেখতে পারেন। শুধু Creationist/আস্তিকদের বই-পুস্তক/ব্লগ/সাইট ছাড়া বাস্তবে এর কোন অথেনটিক রেফারেন্স বা হদিস পাওয়া যায় না। ভন্ড আস্তিক D. James Kennedy ছাড়া আর কেউ সেই টকশো দেখেননি (হয়ত আরিফ আজাদ সাহেব এবং মিনার ভাইও দেখেছে!!)

বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী RICHARD DAWKINS এর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা

একই লেখায় (উপরের) সেই আরিফ আজাদ RICHARD DAWKINS এর উদ্ধৃতি দিয়ে আরো একটি ভুল ইংগিত দিয়েছেন। উনার পুরো বক্তব্য পড়লে মনে হবে, দুনিয়াতে যারা ধর্ম কর্ম পালন করেন তারা সবথেকে বেশী সৎ এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন পালন করে। হা হা কি বিচিত্র যুক্তি মুমিনদের!! অথচ বাস্তবে আমরা দেখি তার উল্টো, জেলখানায় গেলেই বুঝতে পারবেন, এমনকি স্বয়ং মুমিনদের মাঝেই বেশির ভাগই নামে মাত্র মুমিন সেটা আমরা সবাই জানি, প্রমান করতে হবে না। আপনি হয়তো বলতে পারেন যেহেতু জনসংখ্যার বেশিরভাগ আস্তিক, তাই জেলে আস্তিকের সংখ্যাও বেশিই হবে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের মধ্যে EVOLUTION কে মেনে নেয়ার পরিমাণ কেমন? সেই পরিসংখ্যান সামনে আনলে পার্থক্যটি পরিষ্কার হয়ে যায়। যদি বেশিরভাগ জনসংখ্যা আস্তিক হয়ে থাকে,তাহলে বিজ্ঞানীদের মধ্যেও EVOLUTION কে বাতিল করে দেয়া বিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবতা তো তার উল্টো। আমেরিকার বিখ্যাত Pew Research Center (Nonprofit Pew Research Center is one of the least biased, most reliable polling organizations in the country) এর একটি পরিসংখ্যানে (লিং) দেখা যায় ৯৭% বিজ্ঞানীরা বিবর্তনে বিশ্বাস করেন।

এছাড়া আমরা দেখি যে দুনিয়ার বড় বড় PHILANTHROPIST/মানব হিতৈষীদের বেশির ভাগই কাফের বা নাস্তিক। উনার কথা শুনে মনে হবে বিজ্ঞানীরা সব বস্তুবাদী বা ভোগবাদী (উনার মতে), তারা সবাই ফ্রী সেক্স করে বেড়াতে চায়, ঘুষ খেতে চায়, দুর্নীতি করতে চায়, তাই তারা নাস্তিক !!! এইসব যুক্তি দিয়ে মিনার ভাই/আরিফ আজাদ কি তার ব্লগের ইজ্জত বাড়াচ্ছেন আসলেই?

ভাইজানেরা বার বার ভুলে যান যে, তারা নিজেরা তাগুতি আইনে ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে আসছেন, তারা তো নিজেরাই আল্লাহর আইনে জীবন যাপন করেন না। আপনাদের উচিৎ এখুনি দেশ ছেড়ে যাওয়া! কিন্তু দুনিয়ার কোন দেশই পুরোপুরি ধর্মীয় আইনে চলে না, জীবনে চলবেও না। তাহলে বস্তুবাদী/ভোগবাদী যুক্তি কপচিয়ে লাভ কি? চলেন তো সেই বস্তুবাদী বা তাগুতি আইনেই!! আর বিজ্ঞানীরা সেক্স চাইলে তো সবার আগে ইসলাম গ্রহন করবে, কারন দুনিয়াতে একমাত্র ধর্ম যেখানে আপনি দুনিয়াতে পাবেন আনলিমিটেড বউয়ের সাথে সেক্স (একসাথে ৪ জন যদিও), গণিমতের নারীদের সাথে সেক্স, দাসীদের সাথে সেক্স, আবার পরকালেও পাবেন বড় বড় স্তনের ৭২ হুরের সাথে সেক্স!! এত এত সেক্স চায়লে তো নাস্তিক/বিজ্ঞানি সবাই আগে ইসলাম গ্রহন করবে।

এসব হাস্যকর যুক্তি দেয়ার পর বলা হয়েছে, বস্তুবাদ আপনাকে বলে—এই জীবনটাই শেষ জীবন। মৃত্যুর পরে আসলে কিচ্ছু নেই। সুতরাং, জীবনটাকে যেমন খুশি এনজয় করো। এই জন্যেই নাকি রিচার্ড ডকিন্স বলেছে, “THERE IS NO GOD. SO ENJOY YOUR LIFE.”

এটা পড়ে মনে হতে পারে ডকিন্স সাহেব জীবন উপভোগ বলতে শুধু আকাম-কুকাম করতে বলেছেন, অথচ ধর্ম থাকলে সারাক্ষন আপনি যে অযথা ধর্মীয় ভীতির মধ্যে দিয়ে সময় পার করেন, তা থেকে মুক্তি পেতেই ডকিন্স সেই কথা বলেছিলেন। বাস্তবে ধর্ম না থাকলেও আপনি যেমন জীবন উপভোগ করেন, ধর্ম থাকলেও আপনি তেমন করেন, আর জীবন কিভাবে আমাদের মুমিনরা উপভোগ করেন তা আশা করি পাঠকরা সবাই ভাল করেই জানেন (মুসলিম প্রধান দেশগুলাতে গেলেই বুঝবেন)। আপনি স্রষ্টার ভয়ে/নির্দেশে ভাল কাজ করেন, আর একজন নাস্তিক নিজের বিবেক,জ্ঞান-বুদ্ধি থেকেই ভাল কাজ করেন, দুজনের মধ্যে তফাত কি সেটা একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি বুঝতে পারবেন আশা করি। পোস্টের বক্তব্য শুনে মনে হবে, ডকিন্স বুঝাতে চেয়েছেন, যেহেতু স্রষ্টা নাই তাই ফ্রি সেক্স করে বেড়াও, মিথ্যা কথা বল, দুর্নীতি করে বেড়াও ইত্যাদি। অথচ দুনিয়ার কোনো নাস্তিকই আপনাকে এইরকম হাস্যকর উপদেশ দিবেন না। কারন আপনি চাইলেও দেশের আইনের উর্ধ্বে যেতে পারবেন না, আস্তিক হন আর নাস্তিক, আপনাকে কিছু নিয়মের/নির্দেশের মধ্যে দিয়ে যেতেই হবে। এমন কি সমাজ বা পরিবারও আমাদের বাধ্য করে কিছু নির্দেশ মেনে চলতে। এছাড়া আমাদের নিজেদের বিচার-বুদ্ধি,শিক্ষা, বিবেক তো আছেই, যা কিনা আবার আস্তিক ভাইজানেরা স্রষ্টার কাছে দিয়ে রেখেছেন…

CRIME GENE নিয়ে বিভ্রান্তি

সেই একই পোস্টে আরিফ আজাদ সাহেব বলেছেন, “বেশ কিছুদিন আগে এইসব বিবর্তনবাদীরা মানবশরীরে ‘Crime Gene’ টাইপ কিছু একটার অস্তিত্ব নির্ণয়েরও চেষ্টা চালিয়েছে”, উনি আরো বলেছেন এই ক্রাইম জিন তত্ত্ব দিয়ে নাকি বিবর্তনবাদীরা অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। আমি সত্যিই হতাশ এসব যুক্তি দেখে!! আরিফ সাহেবের কথা শুনে মনে হতে পারে বিবর্তনবাদীরা বিশেষ মন্দ উদ্দেশ্যে চেস্টা চালিয়েছিল,কিন্তু সফল হয়নি। মিনার ভাইয়ের উচিৎ এইসব অর্থহীন যুক্তি ব্লগে দেয়ার আগে একটু ভেবে নেয়া। প্রথম কথা হচ্ছে এটা বিবর্তনবাদীরা বের করেছেন এই তথ্য উনি কই পেলেন? উনি কি আসলেই জানেন কবে এবং কারা, কি প্রকাশ করেছিল? এছাড়া অনেক আস্তিকও তো বিবর্তন বিশ্বাস করেন এখন। বিজ্ঞানীরা ত আগে থেকে ভেবে অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু আবিষ্কার করেন না, এইসব ফালতু অযৌক্তিক তথ্য কিভাবে মিনার ভাই তার ব্লগে অনুমোদন করে আমি ভেবে পাই না।

আসল ঘটনা হচ্ছে, ফিনল্যান্ডে ৯০০ অপরাধীর উপর এক গবেষণায় দেখা গেছে যে যাদের বিশেষ দুটো জিন (ক্রাইম জিন) আছে তাদের পূর্বের ইতিহাসে খারাপ আঁচরন করার সম্ভাবনা ১৩ গুন বেশী। গবেষকরা এও বলেছেন যে এই জিন দেখে আগে থেকেই কাউকে ক্রিমিনাল বলা যাবে না। তবে এখানে আসল ব্যাপার হচ্ছে এটা প্রকাশ হয়েছে MOLECULAR PSYCHIATRY নামের একটি PEER-REVIEWED SCIENTIFIC JOURNAL এ। আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি যে এই আরিফ আজাদ আবার Peer-reviewed Scientific Journal কি জানেন না, উনার পেরাডক্সিকেল সাজিদ ১ বইতে উনি সব পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ব্লগ, সাইট ইত্যাদির রেফারেন্স দিয়েছেন। তাই উনার পক্ষেই বলা সম্ভব যে, বিজ্ঞানীরা অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু আবিষ্কার করেন। অবশ্য উনার পুরা লিখা পড়ে মনে হবে বস্তুবাদীরাই বিজ্ঞানীদের দিয়েই এসব করান… হা হা।

বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা/ ইন্টেলেকচুয়াল ডিজঅনেস্টি

এখন, আরেক আলোচনায় আসি। মিনার ভাইয়ের ব্লগে “ইডিপাস কমপ্লেক্স” টাইটেলে একটি লিখায় বিখ্যাত PHYSICIST AND COSMOLOGIST, Dr. Lawrence M. Krauss এর বক্তব্যকে আংশিক ভাবে উপস্থাপন করে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। ইসলামিক অ্যাপোলজিস্ট হামজা জর্জিসের সাথে এক বিতর্কে ইনসেস্ট (নিজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সেক্স) ইস্যু নিয়ে লরেন্স ক্রাউস বলেন, “IT’S NOT CLEAR TO ME THAT ITS WRONG” (আমার কাছে পরিষ্কার নয় কেন এটা ভুল)। এখানে, লরেন্স ক্রাউসের পুরো বক্তব্যের শুধু এতটুকুই তার ব্লগে উল্লেখ করে সাধারন মুমিনদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।

অথচ এরপরে লরেন্স ক্রাউস পুরো ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেন এবং পরিশেষে এও স্পষ্ট করে বলেন যে, উনি এটা করতে কাউকে সুপারিশ করেন না, এটাতে তিনি খুশি হন না, তবে কেউ যদি এই ব্যাপারে নিজেদের যুক্তি দিতে চায় সেটা উনি হয়ত মনযোগ দিয়ে শুনতে রাজি আছেন। এমনকি হামজা যোরযিস নিজে তার TWITTER এ টুইট করেন যে, “Your (Krauss’) point on the issue is unedited and complete, YOU PERSONALLY DIDNT ADVOCATE INCEST BUT YOU DID RATIONALIZE IT (এই ব্যাপারে আপনার বক্তব্য অসম্পাদিত এবং সম্পূর্ণ যে আপনি ইনসেস্ট সমর্থন করেন না, কিন্তু যুক্তিসঙ্গতভাবে ব্যাখ্যা করেন)”। কিন্তু এভাবে আংশিক বক্তব্য উল্লেখ করা খুবি বিভ্রান্তিকর এবং অনাশাতিত। উনি হয়ত সম্পূর্ণ বিতর্কটি দেখেনি নাই।

মিনার ভাই বা পোস্টের লেখক হয়ত ভুলে গেছেন যে উনাদের শরীরেও ইনসেস্ট এর রক্ত আছে, আদমের ছেলে কাবিল তার নিজের বোনের সাথে সেক্স করে উনার মত মুমিনদের বংশধর তৈরি করেছেন সেটা উনারা ভুলেই গেছেন। এছাড়া ইসলামে তো এমন এমন সম্পর্কের সাথে বিয়ে জায়েজ আছে যা শুনলে গা গুলিয়ে যায় এই যমানায়ও। (উল্লেখ্য যে মোহাম্মাদের মেয়ে ফাতেমা বিয়ে করে চাচা সমতুল্য আলীকে, আলী আবার বিয়ে করে মোহাম্মদের নাতীকে, ওমরের মেয়েকে বিয়ে করে মোহাম্মদ, আবার সেই ওমর বিয়ে করে আলীর মেয়েকে, আবু-বকর মোহাম্মদের বন্ধু এবং শ্বশুর, অথচ এই আবু বকরের বউকে আবার বিয়ে করে আলী, এরকমের ঘৃণিত সম্পর্ক আমাদের সমাজে এখন ভাবাই যায় না)

সবথেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই লিখায় যে ইসলামিক অ্যাপোলজিস্ট হামজা জর্জিসের কথা বলা হয়েছে, সেই হামজা জর্জিস কুরআনে আজকাল মুমিনদের কথায় কথায় বিজ্ঞান খোঁজা নিয়ে মন্তব্য করেন, “Regrettably, the scientific miracles narrative has become AN INTELLECTUAL EMBARRASSMENT for Muslim apologists, INCLUDING MYSELF…Significantly, many Muslims who converted to Islam due to the scientific miracles narrative, have left the religion due to encountering opposing arguments

(অর্থ- আফসোস হলেও সত্য, কুরআনে বৈজ্ঞানিক বিস্ময় খুজতে যাওয়া মুসলিম এপলজিস্টদের জন্যে বুদ্ধিবৃত্তিক হয়রানি/বিব্রতকর, এমনকি আমার জন্যেও… কুরআনে এইসব বিজ্ঞান দেখে অনেকেই যারা মুসলমান হয়েছিলেন তারা পরবর্তীতে আবার ধর্ম ছেড়ে দেন বিপরীত যুক্তি শুনে )

এরপরেও কি মুমিনরা কুরআনে বিজ্ঞান খোঁজা থেকে বিরত হবেন?

উপসংহার

এই লেখাটি মোটেও মুশফিক মিনার ভাইয়ের প্রচেষ্টাকে খাটো করার জন্য নয় বা তাকে আক্রমণের উদ্দেশ্যে নয়। শুধুমাত্র যখনই কেউ কোন তথ্য দেবেন, যাচাই করে দেবেন, সেটাই আমি কামনা করি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, উনার রেসপন্স টু এন্টি ইসলাম ওয়েবসাইটে এই ধরণের অনেক লেখা আমার চোখে পরেছে। পর্যাপ্ত সময় থাকলে উনার পুরো ব্লগ নিয়ে রিফিউট দেয়া যেত। এখানে মাত্র কিছু ব্যাপার উল্লেখ করা হলো, ভুল/ভুয়া তথ্য এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্যকে টুইস্ট করে ভিন্ন অর্থ বানিয়ে কিছুটা স্বল্পশিক্ষিত মুসলিমদের বিভ্রান্ত করার সমালোচনা প্রয়োজন দেখেই এতটুকু করতে বাধ্য হইলাম। তবে সেই সাথে এটিও কামনা করি, সঠিক তথ্য এবং প্রমাণ দিয়ে উনি যেন লেখালেখি চালিয়ে যান, নাস্তিকদের সমালোচনাও চালিয়ে যান। কারণ সুস্থ সুন্দর যৌক্তিক সমালোচনার ক্ষেত্র তৈরি হলেই জাতি হিসেবে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ সম্ভব হবে।

তথ্যসূত্র

1- ALFRED KRÖNER
2- লরেন্স ক্রাউস
3- JULIAN HUXLEY
4- RICHARD DAWKINS
5- লরেন্স ক্রাউস এবং হামজা ডিবেট
6- আলফ্রেড ক্রোনারের নিজ বক্তব্য
7- ক্রাইম জিন

3 thoughts on “একজন মিনার ভাই ও তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিভ্রান্তি

  • খুবই সুন্দর ভাবে বাঁ????দিয়েছেন। জানিনা কেন এরা চেরিপিকিং করে।

    Reply
  • kashib

    ভদ্রতা আর নম্রতার জন্য মিনার ভাই আমাদের খুবই প্রিয় তাই ওনার কাছে একটা প্রশ্ন রতেই চাই যে — আপনি আলফ্রেড কুনারের যে ভিডিও লিঙ্ক দিয়েছেন তাতে তিনি বলছিলেন উনিভারস সম্পরকে মহাম্মদ কেমন করে জানল যেটা বিজ্ঞানিরা কিছুদিন আগে জেনেছে তাইলে ভাই আলফ্রেড কুনার জিওলজিস্ট হয়ে উনিভারস নিয়ে মন্তব্য করাটা কি রেফেরেন্স হতে পারে কি ? যে কোন বিজ্ঞানি কোন বিষয়ে মন্তব্য করলেই কি সেইটা সত্যি প্রমানিত হয় ? বা কোন কিছু প্রমানের ক্ষেত্রে কোন বিজ্ঞানির মন্তব্যই কি প্রমান ?
    ভিডিও তে দেখে যা বুঝলাম কেও একজন জিজ্ঞাসা করেছে কুনারকে মহাবিশ্ব নিয়ে মহাম্মদ ১৪০০ বছর আগেই বলে গেছে যেমন করে মুমিনরা বলে তার উত্তরে তিনি বলছেন কেও বলে থাকলে অবাক করার মত জা বিজ্ঞানিরা কিছুদিন আগে জেনেছেন েমন উত্তর যে কোন বেক্তি এই দিবেন । কিন্তু আপনার ভিডিও তে তিনি দাবিকে সমরথন করেন নাই ।

    Reply
    • Bengal Aroz

      এখানে আসল ব্যাপার হচ্ছে যে উনি ক্রোনারের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন উনার এই বক্তব্যকে হালাল করতে, উনি বলেছেন “স্বল্প জ্ঞানের “বিজ্ঞানমনষ্ক”(?) অভিযোগকারীরা ঐ আয়াত থেকে বৈজ্ঞানিক ভুল খোঁজার চেষ্টা করলেও অনেক জ্ঞানীজন কিন্তু ওখানে কোন বৈজ্ঞানিক ভুল পাননি, বরং পেয়েছেন বৈজ্ঞানিক মিরাকল। সেই সাথে মেনে নিয়েছেন কুরআনের অসাধারাণত্ব।”

      অথচ আমরা দেখলাম, প্রথমত ক্রোনার থেকে সিস্টেম করে কথা আদায় করে নেয়া হয়েছিল, দ্বিতীয়ত ক্রোনার কে জিগ্যেস করা হয়েছিল, মোহাম্মাদ আগে এইসব জানল কিভাবে, উনি উত্তর দিয়েছিলেন, এইসব জানার কথা নয়, এর বেশী কিছু নয়, উনি বলেন নাই কুরআনে মিরাকল আছে বা এটা ঐশী গ্রন্থ, বরং উনি স্পষ্ট করে বলেছেন সব ধর্মেই কিছু বিজ্ঞানের (গোজামিল দিয়ে!!) সাথে মিলে যায়। সবথেকে আসল ব্যাপার হচ্ছে উনি সেই একি ইন্টারভিউতেই কুরআন নিয়েই অনেক প্রশ্নে আপত্তি করেছিলেন বলে নিজেই বলেছেন, তাহলে মিনার ভাই যে “কমেন্ট” করলেন সেটা কি করে ভ্যালিড হয়? উনার সৎ সাহস থাকলে উনার কমেন্ট অথবা ক্রোনারের কমেন্ট তুলে নেয়া উচিৎ।

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *