কোরআনে কি বৃষ্টি সংক্রান্ত কোনো মিরাকল আছে?
সূচনা
বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক হারুন ইয়াহিয়া তার একটি প্রবন্ধে দাবি করেছিলেন যে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বৃষ্টির গঠন, অনুপাত এবং প্রভাব সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে, যেসকল তথ্য কোরআন নাজিল হওয়ার সময়ে আবিষ্কৃত হওয়া সম্ভব ছিলো না। [1] এই প্রবন্ধে আমরা হারুন ইয়াহিয়ার সেই প্রবন্ধটি বিশ্লেষণ করবো এবং জানবো তার উপস্থাপিত দাবীসমূহ সত্য কিনা।
বিশ্লেষণ
হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,
বৃষ্টি প্রকৃতপক্ষেই পৃথিবীতে প্রাণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের একটি। কোনো অঞ্চলে প্রাণের দীর্ঘস্থায়ীতার জন্য বৃষ্টি একটি পূর্বশর্ত। মানুষসহ জীবন্ত সবকিছুর জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করা বৃষ্টির কথা কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে বৃষ্টির গঠন, অনুপাত এবং প্রভাব সম্পর্কে কিছু বাস্তব তথ্য দেওয়া হয়েছে। কোরআন নাজিল হওয়ার সময়ে যে এসকল তথ্যের কোনোটাই আবিষ্কৃত হওয়া সম্ভব ছিলোনা সেটিই আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে কোরআন আল্লাহর বাণী। এখন, আসুন বৃষ্টি সম্পর্কে কোরআনে বর্ণিত তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করি।
চলুন দেখি বৃষ্টি সম্পর্কে কোরআনের কোথায় কি তথ্য দেওয়া হয়েছে যা কোরআন নাজিল হওয়ার সময় আবিষ্কার করা সম্ভব ছিলোনা।
হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,
বৃষ্টির অনুপাত
সূরা আয-যুখরুফের একাদশতম আয়াতে বৃষ্টিকে পরিমিতভাবে বর্ষিত পানি বলা হয়েছে। আয়াতটি নিম্নরূপ:
“এবং যিনি আকাশ থেকে পরিমাণমত পানি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর তা দ্বারা আমি এক মৃত ভূখণ্ডকে পুনরুজ্জীবিত করেছি। এভাবেই তোমাদেরকে (কবর থেকে) বের করা হবে।”
– আল-কোরআন ৪৩:১১আয়াতটিতে উল্লেখিত ‘পরিমাণ’ শব্দটি বৃষ্টির অনেক বৈশিষ্ট্যের সাথেই সম্পর্কযুক্ত। প্রথমত, পৃথিবীতে সর্বদাই একই পরিমাণে বৃষ্টি পড়ে। প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবী থেকে আনুমানিক ১৬ মিলিয়ন টন পানি বাষ্পীভূত হয়ে থাকে। সংখ্যাটি প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীতে যে পরিমাণ পানি বর্ষিত হয়ে থাকে তার সমান। তারমানে, পানি একটি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী একটি সুষম চক্রের মাধ্যমে ক্রমাগত প্রবাহিত হয়।
এখানে হারুন ইয়াহিয়ার ব্যবহৃত আয়াতে উল্লেখিত “পরিমিত” শব্দটি যে হারুন ইয়াহিয়া তার লেখায় যেসকল তথ্য তুলে ধরেছেন সেসকল তথ্যকেই নির্দেশ করে সেটা আমরা কিভাবে নিশ্চিত হবো? তিনি যা লিখেছেন তা একটি আয়াতের একটি অংশকে কেন্দ্র করে তার নিজস্ব অনুমান ব্যতীত কিছু নয়। তিনি যা অনুমান করেছেন, আয়াতটিতেও তা-ই বুঝানো হয়েছে, সেটা তিনি প্রমাণ করতে পারবেননা।
আয়াতটি পড়লে স্বাভাবিকভাবেই আমরা বুঝতে পারি যে আয়াতটিতে বুঝানো হয়েছে, আল্লাহ আকাশ থেকে প্রয়োজনমতো পানি বর্ষন করেন, প্রয়োজনের কম বর্ষন করেন না, প্রয়োজনের বেশিও না। আয়াতটি প্রকাশ করে, তিনি এতো কম পানি বর্ষন করেন না যা প্রয়োজন মেটাতে পারেনা, আবার এতো বেশিও পানি বর্ষন করেন না যা ক্ষতিগ্রস্ত করে, বরং তিনি এমন পরিমাণে পানি বর্ষন করেন যে পরিমাণ জমির জন্য ভালো, যে পরিমাণ আমাদের উপকার করে, অপকার করেনা। এই আয়াতে ব্যবহৃত “পরিমিত” শব্দটি আল্লাহর সঠিক বিবেচনা এবং সুবিচার প্রকাশ করে।
কোনো কোনো পাঠকের মনে হতে পারে আমি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই আয়াতের অপব্যাখ্যা দিচ্ছি। যাদের মনে হবে আমি কোনো অপব্যাখ্যা দিচ্ছি তারা এই আয়াতের তাফসীরে প্রখ্যাত তাফসীরকারকগণ কি বলেছেন দেখে নিতে পারেন। আসুন দেখি, প্রখ্যাত তাফসীরকারক ইবনে কাসির এই আয়াতের তাফসীরে কি বলেছেন,
“তিনি আকাশ হতে এমন পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টি বর্ষণ করেন যে, তা জমির জন্যে যথেষ্ট হয়। এর ফলে ভূমি শস্য-শ্যামল হয়ে ওঠে। এই পানি মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু পানও করে থাকে। এই বৃষ্টির দ্বারা মৃত ও শুষ্ক জমিকে সজীব করে তোলা হয়। শুষ্কতা সিক্ততায় পরিবর্তিত হয়। জঙ্গল ও মাঠ-ময়দান সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে এবং গাছপালা ফুলে ফলে পূর্ণ হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রকারের সুন্দর ও সুস্বাদু ফল-মূল উৎপন্ন হয়। এটাকেই আল্লাহ তা’আলা মৃতকে পুনর্জীবিত করার দলীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেনঃ ‘এই ভাবেই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।'” [2]
হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,
বৃষ্টি সংক্রান্ত আরেকটি পরিমাণ এটির পতনের গতির সাথে সম্পর্কিত। বৃষ্টি-মেঘের সর্বনিম্ন উচ্চতা ১২০০ মিটার। এই উচ্চতা থেকে একফোঁটা বৃষ্টির সমপরিমাণ ওজন এবং আয়তনের একটি বস্তু ছাড়া হলে সেটি ক্রমাগত গতিবৃদ্ধি করবে এবং ঘন্টায় ৫৫৮ কিলোমিটার গতিতে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে। অবশ্যই এমন গতিতে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়া কোনো বস্তু বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করবে। এভাবেই যদি বৃষ্টি বর্ষন হয় তাহলে সকল চাষের জমি ধ্বংস হয়ে যাবে, আবাসিক এলাকা, ঘরবাড়ি, যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে মানুষ বাইরে হাঁটাচলা করতে পারবে না। অধিকন্তু, এই হিসাবসমূহ কেবল ১২০০ মিটার উপরে থাকা মেঘের জন্য, যেখানে ১০,০০০ মিটার উচ্চতায়ও বৃষ্টি-মেঘ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অমন উচ্চতা থেকে পড়া একফোঁটা বৃষ্টি অনেক ধ্বংসাত্মক একটি গতিতে পৌঁছাতে পারতো। কিন্তু, এটি এভাবে কাজ করেনা; যতো উচ্চতা থেকেই পড়ুক না কেনো, ভূমিতে পৌঁছানোর সময় বৃষ্টির গড় গতি ঘন্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এমনটা হয়ে থাকে তাদের বিশেষ আকার গ্রহণ করার কারণে। যখন বৃষ্টি একটি নির্দিষ্ট গতিসীমায় পৌঁছায় তখন এই বিশেষ আকার বায়ুমন্ডলের ঘর্ষণ প্রভাব বৃদ্ধি এবং ত্বরণ হ্রাস করে।
এক্ষেত্রে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই, উপরের জবাবটিই যথেষ্ট।
হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,
বৃষ্টির গঠন
বৃষ্টি কিভাবে তৈরি হয় তা দীর্ঘসময় ধরে মানুষের কাছে অনেক বড় একটি রহস্য ছিলো। এয়ার রাডার আবিষ্কার হওয়ার পরই কেবল কোন পর্যায়সমূহের মধ্যে দিয়ে বৃষ্টি গঠিত হয় তা জানা সম্ভব হয়েছে। বৃষ্টি তিনটি পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে গঠিত হয়: প্রথমে, বৃষ্টির কাঁচামাল বাতাসে উদিত হয়। তারপর মেঘ গঠিত হয় এবং সবশেষে বৃষ্টি ফোঁটার আবির্ভাব ঘটে। শতশত বছর পূর্বেই এই পর্যায়সমূহ স্পষ্টভাবে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে যেখানে বৃষ্টির গঠন সম্পর্কে যথাযথ তথ্য দেওয়া হয়েছে;
“আল্লাহ সেই মহান সত্তা যিনি বাতাস পাঠান। অতঃপর এই বাতাস মেঘ উঠিয়ে আনে। তারপর তিনি যেভাবে ইচ্ছা এই মেঘ আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তা খণ্ড খণ্ড করেন। এরপর তুমি দেখতে পাও, এই মেঘের মধ্য থেকে বৃষ্টি নির্গত হয়। তিনি যখন তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এই বৃষ্টি পৌঁছে দেন তখনি তারা আনন্দিত হয়।”
– আল-কোরআন ৩০:৪৮
সপ্তম শতাব্দীর একজন মানুষের জন্য এটি পর্যবেক্ষণ করা এবং অনুধাবন করা কোনোভাবেই কোনো কঠিন কাজ ছিলোনা যে বাতাসের ফলে মেঘ একস্থান থেকে আরেক স্থানে যায় বা মেঘ খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয় কিংবা মেঘ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। এই আয়াতে বৃষ্টি সম্পর্কে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়না যা কোরআন নাজিল হওয়ার সময়ে আবিষ্কার করা সম্ভব ছিলোনা এবং পরবর্তীতে আবিষ্কৃত হয়েছে। আয়াতটি কেবল যা মানুষ স্বাভাবিকভাবেই পর্যবেক্ষণ করতে পারতো তা আল্লাহর কীর্তি বলে দাবি করে। এখানে বৈজ্ঞানিক মিরাকলের কিছু নেই।
হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,
প্রথম পর্যায়: “আল্লাহ, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন…” সমুদ্র ফেনায় থাকা অসংখ্য বায়ু বুদবুদ ক্রমাগত বিস্ফোরিত হতে থাকে এবং পানির কণাসমূহকে আকাশের দিকে নিক্ষিপ্ত করতে থাকে। অতঃপর লবণাক্ত এই কণাসমূহ বাতাসের মাধ্যমে বাহিত হয় এবং বায়ুমণ্ডলের উপরের অংশে চলে যায়। অ্যারোসল নামক এই কণাসমূহ নিজেদের আশেপাশে থাকা জলীয়বাষ্প সংগ্রহ করার মাধ্যমে মেঘ গঠন করে।
এখানে হারুন ইয়াহিয়া যা বলেছেন তার সাথে কোরআনের কোনো মিল নেই। তিনি যা বলেছেন কোরআন যে তাই নির্দেশ করে তার প্রমাণ কি? “আল্লাহ, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন…” এইটুকু কথার মধ্যে বৃষ্টি সম্পর্কে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়না যা কোরআন নাজিল হওয়ার সময়কালে জানা সম্ভব ছিলোনা।
হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,
দ্বিতীয় পর্যায়: “অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে খন্ড- বিখন্ড করে দেন…” মেঘ জলীয়বাষ্প থেকে গঠিত হয় যা বাতাসের সল্ট ক্রিস্টাল বা ডাস্ট পার্টিকল সমূহের আশেপাশে ঘনীভূত হয়। এসবে থাকা পানির ফোঁটাসমূহ অনেক ক্ষুদ্র হওয়ায় বাতাসে ভেসে থাকে এবং আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। সেজন্যই আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে।
এখানে আয়াতটি কেবল এতটুকুই বলছে যে আল্লাহ নিজের ইচ্ছেমতো মেঘমালাকে আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করেন, যা এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করেনা যা সপ্তম শতাব্দীর মানুষদের জানা সম্ভব ছিলোনা। বাতাস যে মেঘের ওপর প্রভাব ফেলে সেটি বোঝার জন্য কোনো ঈশ্বরের দূত প্রয়োজন ছিলো না।
হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,
তৃতীয় পর্যায়: “এবং তুমি দেখতে পাও ওটা হতে নির্গত হয় বারিধারা …” সল্ট ক্রিস্টাল এবং ডাস্ট পার্টিকল সমূহকে ঘিরে থাকা পানির কণাসমূহ ঘন হয় এবং বৃষ্টি ফোঁটা গঠন করে। এভাবে যেসকল ফোঁটা বাতাসের চেয়ে ভারী হয়ে যায় সেসকল ফোঁটা মেঘ থেকে প্রস্থান করে এবং বৃষ্টি হিসেবে ভূমিতে পড়তে শুরু করে।
এখানে আয়াতটি কেবল এতটুকুই বলছে যে মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে। কোরআন নাজিল হওয়ার সময়কালে কি মানুষ জানতেন যে মেঘ থেকেই বৃষ্টি পড়ে? কোরআন থেকেই সর্বপ্রথম জানতে পেরেছেন? এখানে মিরাকল কোথায়?
হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,
মৃত ভূ-খণ্ড কে জীবিত করা
কোরআনের বেশকিছু আয়াত বৃষ্টির একটি বিশেষ ক্রিয়ার দিকে আমাদের মনোযোগ আহবান করে, তা হল ‘মৃত জমিতে জীবন দান করা’। এটি একটি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে এভাবে,
“আর তিনিই তাঁর রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদস্বরূপ বায়ু পাঠিয়েছেন এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্র পানি বর্ষণ করেছি, যাতে তা দ্বারা মৃত ভূ-খন্ডকে জীবিত করি এবং আমি যে সকল জীবজন্তু ও মানুষ সৃষ্টি করেছি, তার মধ্য থেকে অনেককে তা পান করাই।”
– আল-কোরআন: ২৫:৪৮-৪৯পানি দ্বারা পৃথিবীকে সাজানোর পাশাপাশি উর্বরতাসাধনেও বৃষ্টির একটি প্রভাব রয়েছে। সমুদ্র থেকে বাষ্পীভূত হয়ে মেঘে পৌঁছানো বৃষ্টি ফোঁটাসমূহ নির্দিষ্ট কিছু উপাদান ধারণ করে যা একটি মৃত জমিতে জীবন দান করে। এই জীবন দানকারী ফোঁটাসমূহকে ‘পৃষ্ঠ-টান ফোঁটা’ বলে। এই পৃষ্ঠ-টান ফোঁটা সমূহ সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরিভাগের ওপর গঠিত হয়, যাকে জীববিজ্ঞানীরা মাইক্রো লেয়ার বলেন। এক মিলিমিটারের দশভাগের একভাগের চেয়েও সূক্ষ্ম এই লেয়ারে আণুবীক্ষণিক জলজ উদ্ভিজ্জ এবং প্রাণী কণার দূষণ থেকে সৃষ্ট অনেক জৈব উচ্ছিষ্ট থাকে।
হারুন ইয়াহিয়া যেসকল তথ্য দিয়েছেন তার উল্লেখিত আয়াতটি যে সেসকল তথ্যকেই নির্দেশ করে সেটি আমরা কিভাবে নিশ্চিত হবো? আয়াতটি কেবল এতটুকুই বলে যে, আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষন করেন আর সেই বৃষ্টির ফলে মৃত প্রায় ভূ-খণ্ড প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এবং মানুষসহ অন্যান্য অনেক জীব সেই বৃষ্টির পানি পান করতে পারে। এই আয়াতে খুব পরিষ্কারভাবেই এটি বোঝানো হয়েছে যে পানির অভাবে বা অনুপস্থিতিতে একটি ভূ-খণ্ডের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, মরুভূমিতে পরিণত হয়, তাতে গাছপালা তরু-লতা কিছুই টিকে থাকতে পারেনা, আল্লাহ্ বৃষ্টি বর্ষণ করলেই সেই ভূ-খণ্ড প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে, তাতে গাছপালা জন্ম নেয় এবং সেইসাথে মানুষসহ অন্যান্য জীবজন্তু পানযোগ্য পানি পায়। বৃষ্টি যে পানির অভাবে মৃতপ্রায় ভূ-খণ্ডকে প্রাণবন্ত করে তোলে, বৃষ্টির পানি যে মানুষসহ অন্যান্য জীবজন্তু পান করে থাকে সেসব না জানার মতো অজ্ঞ সপ্তম শতাব্দীর মানুষেরা ছিলেননা।
হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,
এদের মধ্যে কিছু উচ্ছিষ্ট নিজেদের মধ্যে সমুদ্রের পানিতে দূর্লভ কিছু উপাদান, উদাহরণস্বরূপ: ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, পটাসিয়াম এবং তামা, দস্তা, কোবল্ট ও সীসার মতো ভারী কিছু ধাতু সংগ্রহ করে। বাতাসের মাধ্যমে এসকল “সার” সমৃদ্ধ ফোঁটা আকাশে উৎক্ষিপ্ত হয় এবং তারপর একটি সময় পর তারা বৃষ্টির অভ্যন্তরে থেকে ভূমিতে পতিত হয়। পৃথিবীতে থাকা বীজ এবং উদ্ভিদ এসব বৃষ্টি ফোঁটা থেকে তাদের বিকাশের জন্য প্রচুর ধাতব লবণ এবং অপরিহার্য উপাদান খুঁজে পায়। এই ঘটনাটি কুরআনের এই আয়াতের মাধ্যমে জানানো হয়েছে:
“আর আমি আসমান থেকে বরকতময় পানি নাযিল করেছি। অতঃপর তা দ্বারা আমি উৎপন্ন করি বাগ-বাগিচা ও কর্তনযোগ্য শস্যদানা।”
– আল-কোরআন ৫০:৯
এখানে হারুন ইয়াহিয়ার ব্যবহৃত আয়াতটি কেবল এই ধারণাই প্রকাশ করে যে “পানি ব্যতীত গাছপালা মারা যায়”। সপ্তম শতাব্দীর একজন মানুষের জন্য বৃষ্টিকে ‘কল্যাণকর’ বা ‘বরকতময়’ বলে মনে করায় কোনো অলৌকিকতা নেই। কেননা সপ্তম শতাব্দীর মানুষরা এতোটা নির্বোধ ছিলেন না যে তারা এটা বুঝার সামর্থ্য রাখতেন না যে, “পানি ব্যতীত গাছপালা মারা যায়” বা “পানি ব্যতীত মানুষ, অন্যান্য প্রাণী এবং গাছপালা কেউই টিকে থাকতে পারবে না” আর সেজন্য “পানি কল্যাণকর”।
উপসংহার
হারুন ইয়াহিয়া তার লেখায় যেসকল আয়াত ব্যবহার করেছেন, সেসব আয়াত খুব সহজেই পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায় এমন তথ্যই দেয়। এমন কোনো তথ্য দেয় না বা তথ্যের ইংগিত পাওয়া যায় না যা সপ্তম শতাব্দীর একজন মানুষের জন্য জানা বা বোঝা অসাধ্য ব্যাপার। কোরআনের সহজ কথার ওপর হারুন ইয়াহিয়ার আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত তথ্য সমূহ আরোপ করা হাস্যকর এবং অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক।
আরও পড়ুন
তথ্যসূত্র
- About the Rain in the Qur’an [↑]
- তাফসির ইবনে কাসির, ষষ্ঠদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৫৫৯ – ৫৬০ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"