ইসলামইসলামে নারী

জাইদ-জয়নব, দত্তকপ্রথা ও দুধপান সম্পর্কিত সমস্যাবলী

ভুমিকা

পৃথিবীতে একটি নতুন সন্তানের জন্মের পরেই তার দরকার একজন মা এবং এরপরেই একজন পিতা ও একটি পরিবার। মা, বাবা ও পরিবার হল একটি শিশুর টিকে থাকা ও পরিপূর্ণ মানুষ হবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবলম্বন। অথচ পৃথিবীর সব শিশুর মা, বাবা বা পরিবার পাওয়ার সৌভাগ্য হয়না। যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী ছাড়াও আরও নানা কারণে একটি শিশু এতিম হয়ে যেতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে মানবসমাজে খুব সুন্দর একটি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। একটি এতিম শিশুকে একজন মানুষ দত্তক নিয়ে নিজের আপন সন্তানের মতন লালন-পালন করতে পারে। ফলে একটি এতিম শিশু নতুন একটি পরিবারে আশ্রয় লাভ করতে পারে। এই নতুন পরিবারে সে নতুনভাবে বাঁচার অবলম্বন পায়। একজন সাধারণ শিশুর মতন তার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয়। সারা দুনিয়ায় অসংখ্য সন্তান জন্মদানে অক্ষম পরিবারও আছে। অনেক নিঃসন্তান বাবা-মা এতিম সন্তানদের দত্তক নিয়ে সন্তান লালনপালনের সুখ লাভ করতে পারে। একই সাথে এই বাবা মায়েরা তাদের শেষ বয়সে দত্তক সন্তানদের সেবা ও ভালোবাসা পেয়ে নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারে। বিশ্ববিখ্যাত বহু গুনি মানুষ দত্তক সন্তান ছিলেন। যেমন- দক্ষিণ আফ্রিকার মানবতাবাদী নেতা নেলসন মেন্ডেলা ও একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা প্রযুক্তিবিদ স্টিভ জবস [1] [2]। নবী মুসাও ফারাও কন্যার দত্তক সন্তান ছিলেন [3]। দত্তক নেয়াকে মানবসমাজের ইতিহাসে সব সময়েই মহৎকর্ম হিসেবে ধরা হয়েছে। আজ পর্যন্ত কোন ধর্ম বা ধর্মযাজক বা নবীই দত্তক-প্রথা বাতিল করেনি। বাতিল করার কোন প্রশ্নও ওঠেনি। মানবসমাজে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নিয়ম হিসেবেই দত্তক-প্রথা রয়ে গেছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ইসলাম যেখানে দত্তক-প্রথাকে হারাম করা হয়েছে। চলুন দেখি কীভাবে ইসলামে সন্তান দত্তক নেয়া হারাম হয়ে গেল।

যেভাবে দত্তক প্রথা হারাম হল

ইসলাম আসার আগে আরব সমাজে দত্তক-প্রথা খুব শক্তভাবেই টিকে ছিল। বড় মনের অধিকারী মানুষেরা কাবা ঘরের সামনে শপথ করে সন্তান দত্তক নিতেন। সেই দত্তক সন্তানকে তারা নিজের সন্তানের মতই লালনপালন করতেন। সমাজও দত্তক সন্তানকে আপন সন্তান হিসেবেই জানতো। দত্তক সন্তানদের তাদের পালক পিতার নাম ধরেই ডাকা হতো। দত্তক সন্তান তাদের পিতামাতার উত্তরাধিকার হতো।

পুত্রসন্তানহীন মুহাম্মাদেরও একজন দত্তক-সন্তান ছিল। তার নাম ছিল জাইদ। সবাই তাকে জাইদ বিন মুহাম্মাদ নামেই চিনতো। জাইদ ছিলেন মুহাম্মাদের আযাদকৃত দাস। কাবাঘরের সামনে জনসম্মুখে শপথ নিয়ে জাইদকে নিজের দত্তকপুত্র করে নিয়েছিলেন মুহাম্মাদ [4]। ছোটবেলা থেকে জাইদ মুহাম্মাদের ঘরেই বড় হয়।

দত্তক 1

জাইদ বড় হলে জাইদের বিবাহের আঞ্জাম করেন মুহাম্মাদ। নিজের চাচাতো বোন জয়নাবের কাছে জাইদের জন্য প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু জয়নাব একজন আযাদকৃত দাসকে বিয়ে করতে চাননি [5]। তখন মুহাম্মাদ কুরআনের একটি নতুন আয়াত প্রকাশ করেন।

“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো কাজের আদেশ করলে কোনো ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন (কিছু করার) ক্ষমতা নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।” [6]

এই আয়াত শুনে জয়নাব বিয়েতে রাজি হয়ে যান। তবে জাইদ ও জয়নাবের সংসার সুখের ছিল না। জয়নাব কখনোই একজন আযাদকৃত দাসের স্ত্রী হয়ে থাকতে পছন্দ করেননি।

জাইদ ও জয়নাবের বিয়ের দুই বছরের মাথায় একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে। ইবনে জারীর তাবারীর তারীখ (৩/১৬১) এবং ইবনে সাদ তাঁর তাবাকাত (৮/১০১) গ্রন্থে ঘটনাটি এভাবে উল্লেখ করেন [7]

মুহাম্মাদ ইবনে উমার (আল ওয়াকেদী) বলেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর আল আসলামী বলেছেন, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহিয়া ইবনে হিশাম বলেছেন “রাসূল ﷺ জাইদ বিন হারেছার বাসায় তাঁকে খুঁজতে গেলেন, তখন যাইদকে বলা হতো ‘মুহাম্মাদের পুত্র’। কিন্তু তিনি তাঁকে বাসায় খুঁজে পেলেন না। এমতাবস্থায়, জয়নাব তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে তাঁর রাতের পোশাক পরে বের হলেন। নবীﷺতাঁর মুখ ফেরালেন এবং তিনি (জয়নাব) বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী! সে এখানে নেই, দয়া করে ভেতরে আসুন।’ কিন্তু নবী ﷺ (ভেতরে প্রবেশ করতে) রাজি হলেন না। তিনি (জয়নাব) রাতের পোশাক পরে বের হয়েছিলেন, কারণ তাঁকে বলা হয়েছিলো নবী ﷺ দরজায় দাঁড়িয়ে, তাই তিনি তাড়াহুড়ো করেছিলেন। তিনি নবী ﷺ এর হৃদয়ে জায়গা করে নিলেন। নবী ﷺ অস্পষ্ট গুঞ্জন করতে করতে বের হয়ে গেলেন, (যার মধ্যে শুধু এতোটুকু বোঝা গেলো) ‘সকল প্রশংসা তাঁর যিনি হৃদয়ের পরিবর্তন করেন।

এই বর্ণনায় স্পষ্ট যে নবী পালকপুত্রের স্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পরেছিলেন। ফলে এই ব্যাপারটি নিয়ে অনেক ইসলামী স্কলারকেই বিভিন্ন সময় অস্বস্তিতে পরতে হয়েছে। তাই অনেক মুহাদ্দিসই এই বর্ণনায় বিভিন্ন গলদ খোঁজার প্রয়াস করেছেন। এই সকল মুহাদ্দিসের মতে ঘটনা বর্ণনাকারীদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ও মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহিয়া গ্রহণযোগ্য ব্যাক্তি হলেও আল ওয়াকেদি গ্রহণযোগ্য নন। রেসপন্স টু এন্টি ইসলাম ওয়েবসাইটে এই বর্ণনাকে দুর্বল করতে আল ওয়াকেদীকে ইবনে হাম্বলের বরাতে অগ্রহণযোগ্য বলা হয়েছে। অথচ আমরা পরে দেখবো যে বয়স্কদের স্তন্যপানের বিষয়ে নবী যে সরাসরি নন-মাহরাম নারীর স্তন চুষে খাবার অস্বস্তিকর নির্দেশ দিয়েছেন সেই অস্বস্তিকর নির্দেশকে স্বস্তিকর বানানোর জন্য এই “অগ্রহণযোগ্য” আল ওয়াকেদির একটি ভিন্ন বর্ণনা যেখানে বুকের দুধ দুইয়ে পাত্রে ঢেলে খাবার কথা বলা হয়েছে সেটিকে খরখুটোর মতন আকরে ধরে মুসলিম দাঈরা। আবার অনেকেই দাবী করে যে নবীর এই পরস্ত্রীর প্রতি আকৃষ্ট হবার বর্ণনা নবীর চরিত্রের সাথে যায় না সুতরাং এই বর্ণনা মিথ্যা। অথচ নবীর জয়নাবের প্রতি হটাৎ আকর্ষণ তৈরি হওয়া কিন্তু নবীর চরিত্রের সাথে মোটেই সাংঘর্ষিক না। নবীর মাদানি জীবনে দেখতে পাই যে নবী রাস্তাঘাটে নারী দেখলে উত্তেজিত হয়ে পরতেন [8] , প্রায়ই সুন্দরী নারী দেখলেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন [9], বন্দী নারীদের মাঝে সবচেয়ে সুন্দরী নারীকে নিজের দাসী বানিয়েছেন [10] [11], নিজের বিয়ে করা স্ত্রীকে বঞ্চিত রেখে সেই স্ত্রীর পালার দিনেই, সেই স্ত্রীর খাটেই সুন্দরী দাসীর সথে সংগম করেছেন [12], যা সুনানে নাসাই শরীফের ৩৯৬১ নম্বর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত [13] [14]

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৭। বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ২. কোন মহিলাকে দেখে কোন পুরুষের মনে যৌন কামনা জাগ্রত হলে সে যেন তার স্ত্রীর সাথে অথবা ক্রীতদাসীর সাথে গিয়ে মিলিত হয়
৩২৯৮-(৯/১৪০৩) আমর ইবনু আলী (রহঃ) ….. জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক মহিলাকে দেখলেন। তখন তিনি তার স্ত্রী যায়নাব এর নিকট আসলেন। তিনি তখন তার একটি চামড়া পাকা করায় ব্যস্ত ছিলেন এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের প্রয়োজন পূরণ করলেন। অতঃপর বের হয়ে সাহাবীগণের নিকট এসে তিনি বললেনঃ স্ত্রীলোক সামনে আসে শয়ত্বানের বেশে এবং ফিরে যায় শায়ত্বানের বেশে। অতএব তোমাদের কেউ কোন স্ত্রীলোক দেখতে পেলে সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে। কারণ তা তার মনের ভেতর যা রয়েছে তা দূর করে দেয়।* (ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ৩২৭৩, ইসলামীক সেন্টার ৩২৭১)
* স্ত্রীলোকের শয়তানের আকৃতিতে আসার অর্থ হল, কৃপ্রবৃত্তিকে উস্কে দেয় ও যিনার প্রতি উৎসাহিত করে এবং যিনা তথা স্ত্রী সহবাস করার আস্বাদকে স্মরণ করে দেয় যা শায়ত্বানী প্রভাব।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
২৪/ দাসত্বমুক্তি
পরিচ্ছেদঃ ২. মুকাতাবা (চুক্তিব্ধ গোলাম)-এর চুক্তি ভঙ্গ হলে তাকে বিক্রি করা
৩৯৩১। আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী মুস্তালিক যুদ্ধে জুয়ায়রিয়াহ বিনতুল হারিস ইবনুল মুতসতালিক বন্দিনী হয়ে সাবিত ইবনু কায়িস ইবনু শাম্মাস (রাঃ) বা তার চাচাত ভাইয়ের ভাগে পড়েন। অতঃপর তিনি নিজেকে আযাদ করার চুক্তি করেন। তিনি খুবই সুন্দরী নারী ছিলেন, নজর কাড়া রূপ ছিলো তার। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি চুক্তির অর্থ চাইতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন। তিনি দরজায় এসে দাঁড়াতেই আমি তাকে দেখে অসন্তুষ্ট হলাম। আমি ভাবলাম, যে রূপ-লাবন্য তাকে দেখেছি, শিঘ্রই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এভাবে দেখবেন।
অতঃপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জুয়ায়রিয়াহ বিনতুল হারিস, আমার সামাজিক অবস্থান অবশ্যই আপনার নিকট স্পষ্ট। আমি সাবিত ইবনু কায়িস ইবনু শাম্মাসের ভাগে পড়েছি। আমি মুক্ত হওয়ার চুক্তিপত্র করেছি, চুক্তির নির্ধারিত অর্থ আদায়ে সাহায্য চাইতে আপনার কাছে এসেছি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর চেয়ে ভালো প্রস্তাবে তুমি রাজি আছো কি? তিনি বললেন, কি প্রস্তাব, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ আমি চুক্তির সমস্ত পাওনা শোধ করে তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি আছি।
আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুয়ায়রিয়াহকে বিয়ে করেছেন, একথা সবার মাঝে জানাজানি হয়ে গেলো। তারা তাদের আওতাধীন সমস্ত বন্দীকে আযাদ করে ছাড়তে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শ্বশুর বংশের লোক। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নিজের গোত্রের কল্যাণের জন্য তার চাইতে বরকতময়ী মহিলা আমি আর কাউকে দেখিনি। শুধু তার মাধ্যমে বনী মুস্তালিকের একশো পরিবার আযাদ হয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম শাসক সরাসরি বিয়ে করতে পারেন।
হাসান।
আহমাদ।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)

দত্তক 3

পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
গ্রন্থঃ সূনান নাসাঈ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৭/ স্ত্রীর সাথে ব্যবহার (كتاب عشرة النساء)
হাদিস নাম্বার: 3961
৩৯৬১. ইবরাহীম ইবন ইউনুস ইবন মুহাম্মাদ হারামী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি বাদি ছিল যার সাথে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহবাস করতেন। এতে আয়েশা (রাঃ) এবং হাফসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে লেগে থাকলেন। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই বদিটিকে নিজের জন্য হারাম করে নিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ পাক নাযিল করেনঃ (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ) “হে নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন তা আপনি নিজের জন্য কেন হারাম করে নিয়েছেন (সূরা তাহরীমঃ ১) ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তাহক্বীকঃ সহীহ।

দত্তক 5

উপরের বর্ণনা ঘটনা বা রটনা যাই হোক না কেন, জাইদ ও জয়নাবের মাঝে তালাক হয়ে যায় এবং নবী কুরআনের একটি আয়াত প্রকাশের মাধ্যমে জয়নাবকে বিয়ে করে নেন। এ সময়ে নবী একটি খুব ইন্ট্রেরেস্টিং একটি আয়াত প্রকাশ করেন।

তাকে যখন আপনি বলেছিলেন, তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করো। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন, যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন। আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত [15]

এখানে নবী অন্তরে কী বিষয় গোপন করেছিলেন তার ব্যাখ্যা নবী নিজে কোথাও দেননি। কাজেই অনেকের ধারনা হতেই পারে যে জয়নাবের প্রতি নবীর আকৃষ্ট হয়ে পড়াকে নবী গোপন রেখেছিলেন। তিনি পরস্ত্রী ও তদুপরি পালকপুত্রবধুর প্রেমে পরার মতন গর্হিত কাজকে প্রকাশ করে তীব্র সমালোচনার স্বীকার হতে চাননি। অবশ্য নবীর চরিত্রকে ডিফেন্ড করার জন্য এই দাবীও ওঠে যে “আল্লাহ” নাকি নবীকে ওয়াহির মাধ্যমে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে নবীর সাথে জয়নাবের বিয়ে হবে [16]। এই দাবী করেন শিয়া ইমাম আলি ইবনে আল হুসাইন যার জন্ম নবীর মৃত্যুর ২৭ বছর পরে। তিনি কার মারফত এই ওয়াহির দাবী শুনেছেন সেটি উল্লেখই করেননি। অর্থাৎ এই বর্ণনাটি দুর্বল। তাছাড়া কুরআন, হাদিস বা সিরাতে এই ওয়াহির কোনই উল্লেখ নাই। এখন নবীর মনে কী ছিল তার বিচারের ভার একান্তই পাঠকের।

অবশেষে নবী ও জয়নাবের বিয়ে হল। কিন্তু জয়নাব নবীর দত্তকপুত্র জাইদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হওয়ায় লোকেরা বলে বেড়াতে লাগলো যে নবী নিজের পুত্রবধূ বিয়ে করে ঠিক করেননি। অনেকে নবীর একের পর এক বিবাহ নিয়েও প্রশ্ন তুললো। সমালোচনা তীব্র হতে শুরু করলে নবী একের পর এক কুরআনের আয়াত প্রকাশ করতে থাকলেন।

মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পন করে, নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। [17]

এই আয়াত দ্বারা নবীর জন্য যত খুশি নারী লাভের পথ পরিষ্কার হয়ে গেল। অনেক সমালোচক চুপ হয়ে গেল। অবশ্য এই আয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বেশ আলোচনার দাবী রাখে। অনেক নবী প্রেমিক দাবী করে থাকেন যে নবীর বহুবিবাহের মূল উদ্দেশ্য ছিলো অসহায় বিধবা নারীদের আশ্রয় প্রদান অথবা রাজনৈতিক বন্ধন শক্তিশালীকরন। অথচ এই আয়াতে বোঝা যায় নবীর বহুবিবাহের কারণ আসলে তার প্রবল যৌনাসক্তিজনিত অসুবিধা দূর করা। নবীর নিশ্চই সংসারের নানাবিধ কাজে অসুবিধা দূরীকরণে আরো বিয়ে করার প্রয়োজন ছিল না। ইতোমধ্যেই তার সংসার সামলানোর জন্য পাঁচটি স্ত্রী ছিল। সমালোচনা থামাতে নবী আরো আয়াত প্রকাশ করলেন।

অতঃপর যায়েদ যখন তার (যয়নাবের) সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলো, তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোনো অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে। [18]

এই আয়াত দ্বারা দত্তকপুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করা হালাল হয়ে গেল। কুরআনের এই আয়াত পড়লে মনে হয় ঘরে ঘরে মুমিনরা তাদের পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদের বিয়ে করতে চাচ্ছিল কিন্তু পারছিল না আর আল্লাহ এই আয়াত নাজিল করে এটি জায়েজ করে দিলেন। অথচ এই আয়াত দ্বারা অন্য কোন সাহাবী না বরং কেবল নবীই তার পোষ্যপুত্রবধু বিবাহ হালাল করেছেন। অন্য কোন মুমিন তার পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করতে চাচ্ছিলেন এমন জানা যায়না। অবশ্য এর পরের আয়াতে দত্তকপ্রথাটিকেই বাতিল করে দেয়া হল।

আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন। [19]

এবার আর কারো কিছু বলার থাকলো না। কেয়ামত পর্যন্ত দত্তক প্রথাটি হারাম হয়ে গেল। সব সমালোচনা বন্ধ হয়ে গেল। হাজার বছর ধরে চলে আসা একটি প্রয়োজনীয় প্রথা নিষিদ্ধ হয়ে গেল। অগণিত এতিম সন্তান নতুন পারিবারিক আশ্রয় পাওয়া থেকে বঞ্চিত হল। অগণিত নিঃসন্তান দম্পতি দত্তকের মাধ্যমে সন্তান লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল।

ঘোড়ার আগে গাড়িঃ দত্তকপ্রথা বাতিলের উদ্দেশ্যে বিয়ে?

একটি জনপ্রিয় দাবী হল দত্তকপ্রথার মতন খারাপ একটি প্রথা (!!!)-কে হারাম করে দেয়ার জন্যই নবী জয়নাবকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের বক্তব্য হলো, “জঘন্য” দত্তকপ্রথা আরব সমাজে এতটাই গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল যে, পালকপুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে করে আরবদের দেখাতে হয়েছিল যে, দেখ পালকপুত্র আসলে আসল পুত্র না, বরং তাদের সাবেক স্ত্রীদের বিবাহ করা যায়। অথচ জয়নাবকে বিয়ে করার ঘটনা পরম্পরা পড়লেই বোঝা যায় যে উল্টোটাই সত্য, তথা জয়নাবকে বিয়ে করা জায়েজ করতেই দত্তকপ্রথা হারাম করা হয়েছিল।

আপনি যদি কোন প্রথাকে পরিবর্তন করতে চান তাহলে সেই প্রথার পরিবর্তনের দাবী আগে ঘোষণা করবেন, অন্ততপক্ষে সেই প্রথার ভালোমন্দ নিয়ে প্রচার চালাবেন। যেমন মদ নিষিদ্ধ করার আগে বহুদিন নবী মদপানের বিপক্ষে কয়েকটি আয়াত প্রকাশ করেছেন, পরে একসময় সরাসরি নিষিদ্ধ করেছেন। আরেকটি উদাহরণ বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ প্রচলন। বিধবা বিবাহের পক্ষে বহুদিন প্রচার প্রচারণা চালানোর পরে যখন এর পক্ষে আইন পাশ হল তখন নিজের পুত্রকে দিয়ে বিধবা বিবাহ করালেন। অথচ দত্তকপ্রথা নিষিদ্ধের পূর্বে নবী কখনোই দত্তকপ্রথার বিরুদ্ধে কোন প্রচার প্রচারণা চালান নাই। তিনি যে দত্তকনেয়া অপছন্দ করেন তাও কখনো বলেন নাই। বরং নিজেই জাইদকে কাবার সামনে শপথ করে দত্তক নিয়েছিলেন। কিন্তু যখনই জয়নাবকে বিয়ে করায় মদিনায় সমালোচনার ঝড় উঠলো তখনই নবী দত্তকপ্রথা হারাম করলেন। এখানেই সুস্পষ্ট যে জয়নাবের সাথে বিয়েকে জায়েজ করতেই দত্তকপ্রথা নিষিদ্ধ করতে হয়েছিল, উল্টোটা নয়। মুমিনদের যুক্তি অনেকটা ঘোড়ার আগে গাড়ি লাগানোর গল্পের মতন শোনায়।

দত্তকপ্রথা বাতিলের ফলে সাহাবীদের সমাজে যে সমস্যা হলো

দত্তকপ্রথা বাতিলের সময় বহু সাহাবীর দত্তক সন্তান ছিল। যখন এই প্রথা বাতিলের ঘোষণা আসলো তখন নাকে দড়ি বাধা উটের মতন সবাই তা মেনে নিল। অনেক মা, যারা পুত্রসন্তান দত্তক নিয়েছিলেন তারা তাদের দত্তকসন্তানদের সামনে ইসলামের আরেক ইউনিক নিয়ম তথা পর্দা করতে বাধ্য হলেন যেহেতু এই সন্তানদেরকে এখন তাদের জন্য বিয়ে করা বৈধ হয়ে গেছে। কিন্তু এরপরেও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। অন্তত একজন নারী সাহাবী এই নিষিদ্ধকরণ মানেননি এবং তার পোষ্য জোয়ান পোষ্যপুত্রকে তার সাথে দেখা করতে দিতেন। এটি অবশ্য তার স্বামীর পছন্দ হয়নি। নবীর কাছে এই সমস্যা নিয়ে গেলে নবী মজার একটি কৌশল শিখিয়ে দিলেন [20]

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
১৮। দুধপান
পরিচ্ছেদঃ ৭. বয়স্কদের দুধপান করানো
৩৪৯২-(২৬/১৪৫৩) আমর আন্‌ নাকিদ ও ইবনু আবূ উমর (রহিমাহুমাল্লাহ) ….. আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুহায়ল এর কন্যা সাহলাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার সাথে সালিমের দেখা সাক্ষাৎ করার কারণে আমি আবূ হুযায়ফার মুখমণ্ডলে অসন্তুষ্টির আলামত দেখতে পাচ্ছি অথচ সালিম হল তার হালীফ (পোষ্য পুত্র)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাকে দুধপান করিয়ে দাও। তিনি বললেন, আমি কেমন করে তাকে দুধপান করাব, অথচ সে একজন বয়স্ক পুরুষ। এতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিলেন এবং বললেন, আমি জানি যে, সে একজন বয়স্ক পুরুষ। আমর (রাবী) তার হাদীসে অতিরিক্ত বলেছেন, সালিম বাদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর ইবনু আবূ উমারের বর্ণনায় রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৬৫, ইসলামীক সেন্টার ৩৪৬৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)

এই বর্ণনায় প্রতীয়মান হয় যে নবী সাহলাকে সরাসরি স্তন থেকে দুধপান করানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হল, অনেকেই দাবী করেন সাহলা এখানে সরাসরি নিজের স্তন্য পান করাননি, বরং একটি পাত্রে করে পান করিয়েছেন। এর সপক্ষে তারা তাবাকাতে ইবনে সাদ থেকে নিচের রেওয়াতটি তুলে ধরে [21]

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُمَرَ. حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ أَخِي الزُّهْرِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ:
كَانَ يَحْلُبُ فِي مِسْعَطٍ أَوْ إِنَاءٍ قَدْرَ رَضْعَةٍ فَيَشْرَبُهُ سَالِمٌ كُلَّ يَوْمٍ. خَمْسَةَ أَيَّامٍ. وَكَانَ بَعْدُ يَدْخُلُ عَلَيْهَا وَهِيَ حَاسِرٌ. رُخْصَةً مِنْ رَسُولِ اللَّهِ لِسَهْلَةَ بنت سهيل
সাহলা এক পাত্রে দুগ্ধ দোহন করে রাখলেন। সেখান থেকে সালেম পাঁচদিন এসে দুধ পান করে যায়। এরপর সালেম সাহলা এর সামনে পর্দা ছাড়াই সরাসরি প্রবেশ করতো। সাহলার বিন সুহাইয়েলের সহজতার জন্য রাসূল সাঃ এ সুযোগ প্রদান করেন।

সমস্যা হল এই রেওয়াত বর্ণনা করেছেন আল ওয়াকিদি। এই আল ওয়াকিদিই স্বল্পবসনা জয়নাবকে দেখে মুহাম্মদের আকৃষ্ট হয়ে পরার ঘটনাটিও বর্ণনা করেছেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে মুসলিম স্কলারগন “অগ্রহণযোগ্য” আল ওয়াকেদির একটি বর্ণনা স্বস্তিকর হওয়ায় (পাত্রে করে দুধপান) গ্রহণ করছেন ও অন্যটি অস্বস্তিকর (দত্তকপুত্রের স্ত্রীকে দেখে আকৃষ্ট হওয়া) বিধায় বাতিল করছেন। দেখা যাচ্ছে জয়নাবকে বিয়ের ঘটনা মুমিনদের অনেক পেরেশানিতে ফেলে দিচ্ছে। বয়স্কদের দুধপান করানো নিয়ে বিস্তারিত পাওয়া যাবে এই লেখায় [22]

দত্তকপ্রথার ভালোমন্দ নিয়ে মুমিনীয় লুকোচুরী

মানবসমাজের ইতিহাসে সবসময়ই দত্তকপ্রথাকে একটি মানবিক ও প্রয়োজনীয় প্রথা হিসেবে দেখা হয়েছে। ইসলামই কেবল একমাত্র ব্যতিক্রম। এজন্য মুমিনদের প্রচেষ্টা থাকে দত্তকপ্রথার খুত খুঁজে বের করার। কিন্তু কোনভাবেই কিছু না পেয়ে বিভিন্ন জরিপের আংশিক অংশ তুলে ধরে। এমনই এক ব্যর্থ প্রয়াস করা হয়েছে বাংলাদেশের ইসলামিক এপোলোজিস্টদের দ্বারা পরিচালিত রেসপন্স টু এন্টি ইসলাম নামক একটি ওয়েবসাইটে এর একটি লেখায়। সেখানে লেখক www.independent.co.uk তে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের কিছু পরিসংখ্যান দেখিয়ে দাবী করেছেন যে যুক্তরাজ্যে দত্তককৃত বহু শিশু লাঞ্ছনার অভিযোগ করে।

দত্তক 7

অথচ একই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে এতিমখানার শিশুরা দত্তক নেয়া শিশুদের থেকে অনেক বেশী প্রমাণিত লাঞ্ছনার অভিযোগ করে থাকে।

দত্তক 9

রিপোর্টটি পাওয়া যাবে এখানে [23]। সুতরাং দেখা গেল যে এতিম শিশুদের এতিমখানায় রাখার চেয়ে বরং কোন পালক পিতামাতার অধীনে রাখাই উত্তম। ফস্টার প্যারেন্টিং এখানে খারাপ হল কীভাবে? প্রশ্ন করা উচিত মুমিনেরা কেন তাদের অযৌক্তিক দাবীর সপক্ষে কেবল আংশিক তথ্য উপস্থাপন করে সত্য গোপন করে।

উপসংহার

দত্তকপ্রথার মতন একটি বহুল প্রচলিত প্রয়োজনীয় নয়মকে ইসলাম কীভাবে নিষিদ্ধ করেছিল তা আমরা জানলাম। আমরা দেখলাম নবীর নিজের ব্যক্তিগত খায়েশ পূরণে ও নবীকে সমালোচনা থেকে রক্ষায় কীভাবে একের পর এক কুরআনের আয়াত “নাজিল” হত। আমরা দেখলাম নবীর ইজ্জত বাঁচাতে ইসলামী স্কলারগন কীভাবে এক স্থানে একজন হাদিস সংকলককে অগ্রহনযোগ্য বলেছেন ও অন্য পরিস্থিতিতে তাঁরই বর্ননাকে লুফে নিয়েছে। পরিশেষে আমরা দেখলাম রেসপন্স টু এন্টি ইসলাম এ কীভাবে ইসলামী এপলজিস্টরা একটি পশ্চিমা প্রতিবেদনের আংশিক বক্তব্য তুলে ধরে দত্তকপ্রথার মতন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রথাকে মন্দভাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করে।

তথ্যসূত্র

  1. Nelson Mandela []
  2. Steve Jobs []
  3. Daughter of Pharaoh: Midrash and Aggadah []
  4. তাবারী, ৩৯ তম খন্ড, (বায়োগ্রাফি অব প্রফেটস কম্পেনিয়নস এন্ড দেয়ার সাক্সেসরস), পৃষ্ঠা-৯ []
  5. তাবারী, ৩৯ তম খন্ড, (বায়োগ্রাফি অব প্রফেটস কম্পেনিয়নস এন্ড দেয়ার সাক্সেসরস), পৃষ্ঠা-১৮০ []
  6. সুরা আহযাব:৩৬ []
  7. ইবনে জারীর তাবারী (রহঃ) তাঁর তারীখ (৩/১৬১) এবং ইবনে সাদ তাঁর তাবাকাত (৮/১০১) []
  8. সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিস নং ৩২৯৮ []
  9. সুনান আবু দাউদ, হাদিস- ৩৯৩১ []
  10. তাবারী, অষ্টম খন্ড (ভিক্টরি অব ইসলাম), পৃষ্ঠা ৩৮-৩৯ []
  11. ইবনে ইশাক (লাইফ অব মুহাম্মাদ), পৃষ্ঠা ৪৬৬ []
  12. তাফসিরে ইবনে জারী, সুরা তাহরীম এর তাফসির – ইবনে কাসীর, সুরা তাহরীম | তাফসীরে জালালাইন, সূরা তাহরীম | তাফসীরে মাযহারী সমূহে সূরা তাহরীমের তাফসীর দ্রষ্টব্য []
  13. সুনান নিসাই (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস-৩৯৬১ []
  14. সূনান নাসাঈ (ইফাঃ), খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১০৬। ডাউনলোড লিঙ্ক []
  15. সুরা আযহাব ৩৩ঃ৩৭ []
  16. Detailed discussion about the verse “But you did hide in yourself (i.e. what Allaah has already made known to you that He will give her to you in marriage) that which Allaah will make manifest”  []
  17. সুরা আহযাব ৩৩:৫০ []
  18. সুরা আহযাব ৩৩:৩৭ []
  19. সুরা আহযাব ৩৩ঃ৪ []
  20. সহীহ মুসলিম (হাদিস একাডেমী) হাদিস নং- ১৪৫৩ []
  21. আততাবক্কাতুল কুবরা-৮/২১২, দারুল কুতুব বৈরুত, রাবী নং-৪২১[]
  22. বয়স্ক লোকের দুধপান করা প্রসঙ্গে []
  23. Major study reveals true scale of abuse of children living in care []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"

5 thoughts on “জাইদ-জয়নব, দত্তকপ্রথা ও দুধপান সম্পর্কিত সমস্যাবলী

  • আশ্চর্য যে এর পরও মানুষের বোধ, বুদ্ধির উদয় হলো না | একজন কিভাবে তার নিজের উদ্দেশ্য ও বাসনা মেটানোর জন্য ঈশ্বরের নাম করে একটার পর একটা নিৰ্দেশ জারি করছে, পরিষ্কার নিজের প্রয়োজনে ক্ষমতার অপব্যাবহার করছে অথচ ১৫০০ বছর পরও বেশিভাগ মানুষ তা বুঝতে পারলো না |

    দত্তক প্রথা হারাম কেন? যুক্তি হলো দত্তক সন্তানদের প্রতি নিজের সন্তানেরদের মতো সমব্যাবহার করা যায় না, চেষ্টা করলেও না | অনেকগুলো নিকাহ হালাল কেন? কেননা চেষ্টা করলে সব বিবিদের সঙ্গে সমান ব্যবহার করা যায় | বিবিদের সঙ্গে সমান ব্যবহার সম্ভব কিন্তু শিশুদের / সন্তানদের সঙ্গে নয়? হাস্যকর বললে যেথেষ্ট বলা হয় না ! বহু সন্তান যাদের তাদের বিরুদ্ধেও তো সন্তানরা পিতা-মাতার অবহেলার অভিযোগ আনে | কই বহুসন্তান জন্ম দেওয়া তো হারাম হলো না |

    দত্তক প্রথা হারাম-এর পক্ষে প্রমাণ কি? প্রমাণ হলো America তে দত্তক সন্তানেরা তাদের পিতা মাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে | America তে biological সন্তানেরাও তাদের পিতা মাতার বিরুদ্ধে প্রচুর মামলা করে – ব্যাক্তি স্বাধীনতায় হস্তেক্ষেপ করা হয়েছে বলে | তবে একই যুক্তিতে America মুসলমানদের সন্তানের জন্ম দেওয়া নিষদ্ধ করা হলো না কেন? উল্টে ইসলাম বলে যত সন্তান তত ভালো, সে যে দেশ হোক না কেন, অভিযোগ করুক আর যাই করুক | দ্বিতীয় কথা হলো, সারা বিশ্ব জুড়ে বহুবিবাহের স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অসম ব্যবহারের অভিযোগ করে আসছে কয়েকশো বছর ধরে | কই বহুবিবাহ তো বাতিল হলো না |

    আচ্ছা যাদের নিজেদের সন্তান নেই তাদের ক্ষেত্রে তো অসম ব্যাবহারের প্রশ্নই উঠে না আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তানহীনরাই দত্তক নিয়ে থাকে | তাদেরকে কেন বঞ্চিত করা হলো?

    শুধুমাত্র একজন লোকের শারীরিক চিহিদা মেটানোর জন্য একটি সুন্দর মানবিক ব্যাবস্থা, কতগুলো অসহায় শিশুর আশ্রয় চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল | দুর্ভাগ্য !

    Reply
    • Mahmudul Huq Shafi

      অনেক ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য ও মুল্যবান মন্তব্যের জন্য।

      Reply
      • Anirban Chakroborty

        ইবনে জারীর তাবারী (রহঃ) তাঁর তারীখ (৩/১৬১) এবং ইবনে সাদ তাঁর তাবাকাত (৮/১০১) লেখাটা পাচ্ছিনা। দয়া করে বই এর ছবি বা download link দিন।

        Reply
  • Logical View

    @Anonymous
    আপনার link টাতে দত্তক প্রথা সম্পর্কে একটাও কথা নেই | একটি link দিলেন সেটাতে কি আছে তা একবার দেখলেনও না? আপনার মতো মানুষ ধর্মান্ধ না হলেই আশ্চর্য |

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *