ধর্ম ও ধর্মেশ্বর – প্রথম পর্ব
সূচিপত্র
১. ঈশ্বর ও মানুষঃ
বিশ্বের প্রতিটা মানুষই অসাধারণ এক জিজ্ঞাসু মন নিয়ে জনগণ করে। জন্মের পর হতেই দু-চোখে দেখতে পায় রঙিন পৃথিবী, স্পর্শ ইন্দ্রিয়ের স্বাদ নিতে হাতের মাধ্যমে ছুঁয়ে দেখতে চায় জগতের সবকিছু, পরিশেষে স্বাদ ইন্দ্রিয় দ্বারা বুঝতে হাতের নিকট যা পায় তার সব কিছুই মুখে নিয়ে দেখতে চায় একটি শিশু। আপনি প্রত্যেকটি ছোট শিশু মাঝেই এই গুনগুলি দেখতে পাবেন। এরপর যখন বড় হতে থাকে, তখন বাড়তে থাকে জ্ঞান, জন্ম নিতে থাকে প্রশ্নের। এটা কি, ওটা কি, এটা কেন হল, সেটা কিভাবে হল ইত্যাদি রকমের প্রশ্ন চলতেই থাকে। উত্তর পেলেই জিজ্ঞাসু মন শান্ত হয়ে যায়, নয়তো জিজ্ঞাসু মন কৌতূহলী হয়ে উঠে জানার পিপাসায়, চলতে থাকে তার অনুসন্ধান, সত্যানুসন্ধান।
জানতে চাওয়ার এই অসাধারণ ক্ষমতা মানুষের মাঝে রয়েছে বলেই হয়তো মানুষ আজ সমগ্র প্রাণী জগতে শ্রেষ্ঠতম। শুধুমাত্র জানার আগ্রহেই মানুষ জীবনকে বাজি রেখে পাড়ি দিচ্ছে অনন্ত অসীম মহাকাশে, পৌঁছে যাচ্ছে অতল সমুদ্রের তলদেশে, চাঁদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে চাঁদের বুকে। কি অসাধারণ কৌতূহলী মন মানুষের, কি মারাত্মক ক্ষমতা, যেন হার মানতে রাজি নয় কোন কিছুতেই।
পৃথিবীতে মানুষের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন প্রাণী থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে অবশেষে মানুষের নিকটই মস্তক নত করতে হয়। যেমন কুকুর। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি এবং শ্রবণ শক্তি মানুষের চেয়েও অনেক বেশি। বাদুর সূর্যের আলোয় কোন কিছু দেখতে না পেলেও শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে অনায়াসে চলতে পারে দিনের আলোয়। সর্পের বিষ মুহূর্তেই সবচেয়ে শক্তিশালীকেও পতিত করতে পারে মৃত্যুমুখে। মানুষের চাইতে এসব প্রাণীর ক্ষমতা ক্ষেত্রবিশেষে বেশি হলেও, তারা প্রাণী জগতে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠতে পারলো না।
কিন্তু কেন?
কারণ যাই হোক না কেন, মানুষকে সামান্য দোপেয়ে প্রাণী হতে সর্বশ্রেষ্ঠত্তের স্থানে উন্নীত হতে এরকম প্রশ্নই যে প্রধান ভূমিকা হিসাবে কাজ করেছে, এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
মানুষের চিন্তা শক্তিই মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসাবে অধিষ্ঠিত করেছে। সে চিন্তা করেছে নিজেকে নিয়ে, জীবন ও জগতকে নিয়ে। কোথা হতে আগমন এই মানুষের?
পৃথিবী এতো সুন্দর কেন?
মাথার উপরে এতোবড় ঢাকনার ন্যায় আকাশ আসলে কি?
বৃষ্টি কেন হয়?
মেঘে শীলা থাকে কিভাবে?
বিজলী চমকায় কেন?
মেঘ বিশাল গর্জন করে কেন?
বাতাস আসে কোথা হতে?
সূর্য কোথায় চলে যায়, কোথা হতে আসে?
চাঁদ কখনো বৃত্তাকার, কখনো অর্ধবৃত্তাকার, এমন হয় কেন?
নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর রাত দিন হয় কেন?
এরকম সহজ সরল প্রশ্ন মানুষের মনে জন্ম নেয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, এমন প্রশ্নই চিন্তা জগতের আদি প্রশ্ন। আমরা আজ যে সভ্যতায় বসত করছি, মাত্র দু-লক্ষ বছর পূর্বে আমাদেরই পূর্ব পুরুষ কোথায় আর কিভাবে জীবন যাপন করেছে, তা জানতে গেলে এক অসাধারণ রোমাঞ্চকর কল্পনায় হারিয়ে যেতে হয়। কখনো কখনো তো বিশ্বাসই হতে চায় না। বিজ্ঞানের ফসিল রেকর্ডের তথ্যের ভিত্তিতে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব হয়েছে প্রায় দু লক্ষ বছর পূর্বে। দু লক্ষ বছর বাদ দিন, মাত্র এক লক্ষ বছর পূর্বেই আমাদের পূর্ব পুরুষদের জীবন বৈচিত্র্য কেমন ছিল, তা বিশ্বাসই করতে চাইবেন না। কারণ, আপনার জন্মই হয়েছে আধুনিক এক সভ্য সমাজে। অথচ মাত্র এক লক্ষ বছর পূর্বেও আমাদেরই পূর্ব পুরুষ বাস করতো বনে-জঙ্গলে নয়তো কোন পাহারের গুহায়, খাবার হিসাবে খেতো গাছের ফলমূল নয়তো শিকার থেকে পাওয়া বন্য জন্তুর কাঁচা মাংস, কারণ আগুন হয়তো তখনো মানুষ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় নি। ছোট ছোট গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে তারা একত্রে বসত করতো বিভিন্ন বিপদ আপদ হতে একত্রে সাহায্য পাবার জন্য। শিকার করতে গিয়ে কখনো শিকার করতো, কখনো বা নিজেরাই হিংস্র জন্তুর শিকার হয়ে যেত। গ্রীষ্মকালে গরমের উত্তাপ থেকে বাঁচতে থাকতো উলঙ্গ এবং শীতকালে শীত নিবারণে ব্যবহার করতো গাছের শুকনো পাতা, বাকল এবং পশুর চামড়া। লজ্জা নামক অনুভূতি তখনো তাদের মাঝে গড়ে উঠে নি। এই অনুভূতি আধুনিক সভ্য সমাজেরই আবিষ্কার। পুরুষের সমস্ত শরীরের কোথাও লজ্জা নেই, লজ্জা কেবল দু উরুর মাঝের পুরুষাঙ্গে এবং নারীর লজ্জা চিহ্নিত হয় স্তনে এবং যোনীতে। তাই শরীরের অন্যান্য অংশ খোলা থাকলেও চলবে কিন্তু ঐ বিশেষ জায়গা সর্বদা ঢেকে রাখতে হবে। পরে ঐ বিশেষ জায়গারই নাম হয় লজ্জাস্থান। কি বিচিত্র মানুষের চিন্তা ভাবনা।
প্রশ্ন করা এবং চিন্তা করা মানুষের জন্মগত প্রবৃত্তি। এই প্রশ্ন এবং চিন্তা তৎকালীন সময়ে সঠিক উত্তর পেতো না বলেই মানুষদেরকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল কল্পনার। জন্ম দিতে হয়েছে দেব-দেবীর, যার আধুনিক সংস্করণ হিসাবে রূপলাভ করেছে ঈশ্বরে। পৃথিবীতে তাই দেব-দেবতার কোন অভাব নেই। আরো যে কত দেব-দেবী সময়ের স্রোতে ভেঁসে গেছে, তার তো কোন ইয়াত্তাই নেই। তবুও সর্বশেষ এক হিসাবে দেখা যায় পৃথিবীতে মোট দেব-দেবীর সংখ্যা তেত্রিশ কোটিতে এসে ঠাঁই নিয়েছিল, আর ঈশ্বরের সংখ্যা দাঁড়িয়ে গেছে ৪২০০ এরও অধিক। সেই সময় প্রত্যেক গোষ্ঠীর জন্য ছিল আলাদা আলাদা দেব-দেবী, ছিল আলাদা আলাদা ঈশ্বর। সেসব ঈশ্বরও আবার মানুষের মতই রাগ করে, আবার খুশিও হয়, কখনো কখনো তো রাগের চোটে পুরো জাতিকেও ধ্বংস করে ফেলে। যার উদাহরণ পাওয়া যায় পৃথিবীর সর্বশেষ ধর্ম ও ধর্ম গ্রন্থে আদ ও সামুদ জাতির প্রতি ইসলামের আল্লাহর আক্রোশ। এখানেই শেষ নয়, এক ঈশ্বর আবার আরেক ঈশ্বরের বেজায় শত্রু। প্রত্যেক ঈশ্বরই নিজেকে এবং নিজের ধর্ম ও ধর্ম গ্রন্থকে সঠিক ও সত্য হিসাবে দাবী করে এবং পৃথিবীর সকল ঈশ্বর, ধর্ম ও গ্রন্থকে মিথ্যা বানোয়াট হিসাবে অগ্রাহ্য করে। এক ঈশ্বর আরেক ঈশ্বরের সহিত মারামারি কিংবা যুদ্ধ লেগেছে এমন তো শোনা যায় না, তবে এক ঈশ্বর অন্য ঈশ্বর প্রেমীদের কিন্তু ঠিকই ঘৃণা করতে শেখায় ধর্ম গ্রন্থের মধ্য দিয়ে। শুধু তাই নয়, ক্ষেত্র বিশেষে তো হত্যা করারও আদেশ প্রদান করে।
পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মের ঈশ্বরই ব্যক্তি ঈশ্বরের ন্যায়। যেমন, মানুষের তোষামোদ করলে মানুষ যেমন খুশি হয়, তদ্রূপ ঈশ্বরের তোষামোদ করলে ঈশ্বরও খুশি হয়। মানুষ যেমন খুশি হয়ে প্রতিদান স্বরূপ কিছু উপহার প্রদান করে, ঈশ্বরও তদ্রূপ খুশি হয়ে পরকালে অনন্ত সুখের স্থান উপহার দেন। মানুষের মত ঈশ্বরও রাগ করে, তাই শাস্তি স্বরূপ তৈরি করেছেন জাহান্নাম বা নরক। মজার বিষয় হল, আগের যুগে রাজা-বাদশাহ গনদের মত ঈশ্বরেরও নির্ধারিত রাজ্য রয়েছে, রয়েছে নির্দিষ্ট সিংহাসন। রাজা যেমন নিজে কোন কর্ম না করে কেবল হুকুম করে এবং কর্ম সম্পাদন করে তার কর্মচারীগন, ঈশ্বরও তদ্রূপ নিজে কোন কর্ম না করে কেবল হুকুম দেন এবং তা পালন করেন তার কর্মচারীগন দেব-দেবী নয়তো ফেরেশতা। সত্যিই আজব সাদৃশ্য মানুষ আর ঈশ্বরের মাঝে।
যুগে যুগে ধর্মকে ধারণ করে বাঁচিয়ে রেখেছে এই মানুষই। মানুষই ইহা রক্ষার্থে কখনো সখনো বইয়ে দিয়ে রক্তগঙ্গা, মেতে উঠেছে রক্তের হলি খেলায়, আবার কখনো করেছে ব্রেন ওয়াশ। সৃষ্টি করেছে মানুষে মানুষে বিভেদ, করতে শিখিয়েছে মানুষে মানুষে ঘৃণা। কোন মুসলিম যদি ভুলক্রমে কোন হিন্দুর শরীর ছুঁয়ে দেয়, তবে দৌড়ে গিয়ে দুর্গার নাম জপ করতে করতে গঙ্গাস্নান করতে হয়েছে পবিত্র হতে, কিন্তু শরীরে গোবর লেগে গেলে, শরীরের পবিত্রতা নষ্ট হয় না। অপরদিকে কোন হিন্দু যদি ভুলক্রমেও কোন মুসলিমের শরীর ছুঁয়ে দেয়, তবে পবিত্রতার জন্য ঐ মুহূর্তে গায়ের পাঞ্জাবী না হোক, অন্তত পবিত্র হতে ওযু নিশ্চয় করতে হবে। এই বিভেদ গুলো কে তৈরি করেছে ঈশ্বর আর তার ধর্ম ব্যতীত? কি ফালতু ধর্ম এসব, যেখানে সামান্য ছোঁয়া লাগলেই ধর্মের পবিত্রতা নষ্ট হয়। সত্যিই ভাবতে অবাক হতে হয়।
ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ এবং ঈশ্বর, এই তিন নিয়ে মানুষের মাঝে বেজায় মতবাদ। আর তারই ফলশ্রুতিতে পৃথিবীতে আজ ৪২০০ ধর্মের বাস। প্রত্যেকেই তার পরিবার সূত্রে পাওয়া ধর্মকেই সঠিক, সত্য ও সুন্দর মনে করে এবং বাঁকি সকল ধর্ম ও ঈশ্বরকে মিথ্যা মনে করে। অথচ, ঈশ্বর বলে যদি কেহ থেকেই থাকে, তবে তার হওয়া উচিত ছিল একজন এবং তার ধর্ম ও গ্রন্থও হওয়া উচিত ছিল একটি। তাহলে সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে এতো বাহারি ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ এবং ঈশ্বরের আমদানি হল কোথা থেকে? সত্য হবে যে কোন একটি, নয়তো সবগুলোই মিথ্যা। আর সত্য হলে, তা কোন ধর্ম ও কোন ঈশ্বর সত্য? হাজার হাজার বছর যাবত এই সমস্যার সমাধান হয়ে উঠে নি, ভবিষ্যতেও হবে না। এখানে একজন মানুষ যদি সকল ধর্ম, ধর্ম গ্রন্থ এবং ঈশ্বরকে অস্বীকার করে, তবে তার আর দোষ কোথায়, যেখানে সারা পৃথিবীর কেউ জানে না সঠিক ধর্ম কোনটি এবং সঠিক ঈশ্বরই বা কে। যে যার মত করে নিজের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ধর্মকেই সত্য প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছে সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই, যে ধারা বর্তমান অবধি চলে আসছে বহাল তবিয়তে।
আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে কৌতূহলী মন কেবলই জানতে চায়, জানার জন্যই করে প্রশ্ন। আর ধর্ম বলে কেবলই বিশ্বাস করতে, যাচাই বাছাই করে সত্য মিথ্যা নির্ণয় করে গ্রহণ করতে নয়। ক্ষেত্রবিশেষে তো প্রশ্নকারীরই টুঁটি চেপে ধরা হয় উত্তর প্রদানে ব্যর্থ হলে। আমরা যুগ যুগ ধরেই দেখে আসছি যে, ধর্ম রক্ষায় কোন ধর্মের কোন ঈশ্বরই নিজে স্বর্গরাজ্য হতে মর্তে আগমন করে নি। উনি তার রাজ্যে থেকেই মানুষকে রোবটের ন্যায় ব্যবহার করিয়ে ধর্ম রক্ষা করিয়েছেন মানুষকে দিয়েই। উদাহরণ স্বরূপ নবী মুহাম্মদের কথা বলা যেতেই পারে। ইসলামের ভাষ্যানুসারে পেয়ারা নবী নিজে থেকে কিছুই করে না, সব করায় তার আল্লাহ। অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ এখানে আল্লাহর রোবট। কোরান হল তার রিমোট। কোরানিক রিমোটে যা প্রোগ্রামিং করা আছে, রোবট মুহাম্মদ ঠিক সেটাই করছে। বড়ই হাস্যকর মনে হয় তখন, যখন এই ধার্মিকরাই বলে যে, আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন করে দিয়েছে। আদ ও সামুদ জাতি কি স্বাধীন ছিল না, নাকি তারা মানুষই ছিল না। আশ্চর্য রকমের দ্বিমুখীতা নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে একমাত্র ধার্মিকরাই। ধর্ম রক্ষার জন্য কোন ঈশ্বরের কোনই ভূমিকা নাই, কিন্তু সেই ধর্ম রক্ষার্থেই ধার্মিকদের হচ্ছে ঘুম কামাই।
২. মানুষের আবির্ভাবঃ
আমরা আজ আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে নিশ্চিত রুপেই জানতে পারি যে, প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে এক মহা সম্প্রসারন তথা বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে আমাদের এর মহাবিশ্বের যাত্রা শুরু হয়েছে। তারও বহু কোটি বছর পরে সৃষ্টি হয়েছে আমাদের এক ক্ষুদ্র সৌরজগত এবং তারও বহু পরে, প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে সৃষ্টি হয়েছে এই ক্ষুদ্র পৃথিবী, যা ছিল সূর্যের ন্যায় একটি জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড। সেই অগ্নিপিন্ড ক্রমান্বয়ে শীতল হলে কঠিন আকার ধারন করতে সময় লেগেছে প্রায় আরো বহু কোটি বছর। এরপরে সৃষ্টি হয়েছে নানা রাসায়নিক উপাদানের, সৃষ্টি হয়েছে পানি, জন্ম নিয়েছে নদ-নদী, সাগর-মহাসাগর। এরপরে রাসায়ানিক কিছু মৌলিক উপাদানের ভিত্তিতেই সৃষ্টি হয় জেলির ন্যায় থকথকে আঠালো জাতীয় এক প্রকার বিশেষ পদার্থের, যা পরবর্তীতে পানি ও সূর্যের আলোক রশ্নি হতে বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহের মাধ্যমে আকারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে এবং সৃষ্টি হয় আদি সরল কোষ। সময়ের স্রোতে সরল কোষ যে জটিল কোষে রুপান্তরিত হতে পারে, তা সরল কোষ ও জটিল কোষের পার্থক্য থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায়। এই কোষই একটা সময় নিজের প্রতিলিপি গঠনে সক্ষম হয়, যা পরবর্তীতে নতুন আরেক কোষের জন্ম দেয়। প্রাচীন শীলা গবেষনা করে জানা গেছে যে, প্রায় ৩৫০ কোটি বছর পূর্বে শ্যাওলা জাতীয় উদ্ভিদের আবির্ভাব হয়। সে সময় মানুষ তো অনেক দূর, কোন প্রানীরই অস্তিত্ত্ব ছিল না। সেই সরল কোষই পৃথিবীর প্রথম প্রান, যা পরবর্তীতে আন্দোলিত করে সমগ্র ধরনী। এরপর কোটি কোটি বছরের ব্যবধানে বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় জন্ম নিতে থাকে নতুন নতুন প্রজাতীর। প্রথম প্রানের সূচনা লগ্ন হতে যেমন লক্ষ লক্ষ প্রানীর আবির্ভাব হয়েছে, তদ্রুপ হয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রানীর বিলুপ্তি। আজ থেকে মাত্র ২৫ লক্ষ বছর পূর্বেও যেসব প্রানী পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতো, সেসব ডাইনোসরের আজ কোন অস্তিত্ত্বই নেই।
পঁচিশ লক্ষ বছর পূর্বে একটা বিশালাকার উল্কাপাতের ফলে পৃথিবী হতে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল প্রায় ৭৫% এরও বেশি প্রজাতীর প্রানী। বাঁকি মাত্র ২৫% এরও কম প্রজাতীর প্রানী হতেই পুনরায় জন্ম নিয়েছে বর্তমানের প্রায় ১৭ লক্ষ প্রজাতীর প্রানী, তার মধ্য হতে এক প্রজাতী হল হোমো সেপিয়েন্স তথা মানুষ। মানুষ আজ নিজেদের এতোটাই উন্নত ও সম্মানিত মনে করে যে, নিজেদের প্রানী ভাবতেই লজ্জাবোধ করে, অথচ আজ থেকে মাত্র এক লক্ষ বছর পূর্বেও এই মানুষই অন্যান্য বন্য জন্তুর ন্যায় পশু শিকার করে তাদের কাঁচা মাংশ ভক্ষন করত, পাহারের গুহা নয়তো গাছের উপরে রাত কাটাতো এবং পোশাক হীন উলঙ্গ থাকতো।
আধনিক মানুষের আবির্ভাব হয়েছে প্রায় দু লক্ষ বছর পর্বে।
বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় ১৭ লক্ষ প্রজাতি প্রানীর একটি হলাম আমরা মানুষ।
বর্তমান বিশ্বে অতীতের কি পরিমান প্রানীর প্রজাতী বিলুপ্তি হয়েছে, তার একটু নমুনা দেখুন
বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন যখন বিবর্তন তথ্য প্রকাশ করলেন, তখন সমস্ত ধর্ম তথ্যবীদ এবং ধার্মিকগন ঘৃনায় রি রি করে উঠলো। আমরা মানুষ অন্য কোন জন্তু জানোয়াের বিবর্তনের ফসল, তা যে ধর্ম জগতে বড়ই লজ্জার ও ঘৃনার, কেননা ঈশ্বর তো তার গ্রন্থে এমন বলে না। সমগ্র ধর্ম গ্রন্থের ঈশ্বরই তাদের নিজ নিজ গ্রন্থে বলেছেন যে, তারা মানুষ সৃষ্টি করেছে বর্তমানেরই আদলে, অতীতেও এমন ছিল, ভবিষ্যতেও এমনই থাকবে। শুধু মানুষ কেন, জগতের সব কিছুই ঠিক এরকম ভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে, যাদের কোন পরিবর্তন হয় নি, আর হবেও না। সেই সূচনা লগ্ন হতেই প্রতিটি প্রানী ও উদ্ভিদ যেমন ছিল, বর্তমানেও ঠিক তেমনই রয়েছে।
বিজ্ঞানী ডারউইনের বিবর্তন তথ্যের সত্যতা প্রমানের মত প্রযুক্তি তখন ছিল না বলেই, বিজ্ঞান মহলেই তার বিবর্তন তথ্যকে হাইপোথিসিস হিসাবে ফেলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে যখন প্রযুক্তি অনেকটাই অগ্রগামী হয়েছে, তখন ডারউইনের সেসব হাইপোথিসিস গুলোর সত্যতা প্রমানের সময় এসে গেল। আধুনিক জিনোমিক্স, ডি.এন.এ ম্যাচিং, ডি.এন.এ রিডিং, ফসিল রেবর্ড সহ আরো অন্যান্য সকল পরীক্ষায় যখন বিবর্তন তথ্যগুলোর সত্যতা প্রমানিত হতে থাকলো, তখন ধর্ম জগতে আরো একবার ঘৃনার কালি উপচে পরতে থাকলো এবং বিজ্ঞানকে ভ্রান্ত এবং বিবর্তন তথ্যকে মিথ্যা প্রমানে উঠেপরে লেগে গেল। এরই সূত্র ধরে বিজ্ঞানী ওয়ালেসের বিবর্তন তথ্যের সাথে ডারউইনের বিবর্তন তথ্য গুলিয়ে ফেলে বিবর্তন বিদ্যাকে ভ্রান্ত প্রমানের চেষ্টা করে ধার্মিক সমাজ। বিজ্ঞানী ওয়ালেস, চার্লস ডারউইনেরও পূর্বে বিবর্তন সম্বন্ধে গবেষনা চালিয়ে কিছু তথ্য প্রদান করেছিলেন। শুধু তাই নয়, বানর থেকে মানুষের আবির্ভাব, এরকম মিথ্যাচার পর্যন্ত ডারউইনের নামে রটিয়ে বিবর্তনবাদকে মিথ্যা প্রমানের চেষ্টা করেছে, যার ধারাবাহিকতা মুসলিম সমাজ আজও অব্যাহত রেখেছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, এইসব ধর্মীয় পাবলিক জীবনে কোনদিনও ডারউইনের বিবর্তনবিদ্যা সম্বলিত “দ্যা অরিজিন অব স্পিসিস” বইটি পড়া তো দূর, জীবনে চোখেই দেখে নি। শুধু তাই নয়, এরা আধুনিক বিজ্ঞানের কোন খোঁজ খবরও রাখে না। তাছাড়া, যেখানে বর্তমান মুসলিম জাতির ডিজিটাল নবী টাই বাবা জাকির নায়েক পর্যন্ত এরকম মিথ্যাচার করে থাকে, সেখানে পা ফাটা আম জনতাদের আর দোষ দিয়ে লাভ কি?
দেখুন, ডিজিটাল নবী টাই বাবা জাকির নায়েক (সঃ) এর বিবর্তন বিষয়ে মাত্র পাঁচ মিনিটের বক্তব্যে মাত্র পঁচিশটি ত্যানাবাজি সংগ্রহ করা গিয়েছে। ভিজিট করুনঃ
(embed)https://youtu.be/bk5q9TeGo14(/embed)
মুসলিম পাবলিকদের মাঝে এখনো ফসিলের মিসিং লিংক, মিসিং লিংক বলে গলাবাজি করে বিবর্তন বিদ্যাকে মিথ্যা প্রমানিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, আধুনিক বিজ্ঞান এতোটাই এগিয়েছে যে, বর্তমানে বিবর্তনের সত্যতা প্রমানে ফসিল রেকর্ড হল সবচেয়ে দূর্বল প্রমান, যদিও বর্তমানে মিসিং লিংকের আর ঘাটতি নেই। আধুনিক জিনোমিক্স কিংবা ডি.এন.এ রিডিং এর মাধ্যমেই বিবর্তন বিদ্যার সত্যতা প্রমানিত হয়ে যায়। তবুও যদি আমরা সেই দূর্বল প্রমান ফসিল রেকর্ডকেই সামনে আনি, তবে আমরা দেখতে পাবো যে, এই ফসিল রেকর্ড থেকেই বিবর্তনের সত্যতা নিরুপিত হয়ে যায়। পৃথিবীর সূচনা লগ্ন হতে একেকটা পর্যায় বা ধাপকে বিজ্ঞান একেকটা যুগ হিসাবে বিবেচনা করে। আপনি হাজারো চেষ্টা করলেও, বিবর্তনের যে যুগে ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া যায়, সে যুগে কোন মানুষের ফসিল পাবেন না। তদ্রুপ, যে যুগে জেব্রা ছিল না, সে যুগে জিরাফের অস্তিত্ত্ব পাবেন না। অনুরুপ, যে যুগে উভচর প্রানীর ফসিল পাবেন না, সে যুগে পাখি সদৃশ কোন প্রানীর অস্তিত্ত্ব পাবেন না। এর কারন হল, বিবর্তনের ধারা বাহিকতায় মানুষের পূর্বে ডাইনোসর ছিল, তাই ডাইনোসরের পূর্বে মানুষের ফসিল পাওয়া সম্ভব নয়। জেব্রা থেকেই জিরাফের উদ্ভব, তাই বিবর্তনের যে যুগে জেব্রা ছিল না, সে যুগে জিরাফের কোন অস্তিত্ত্ব পাবেন না। বিবর্তনের ধারাবাহিকতার মাত্র একটা ক্ষেত্রেও যদি এর ব্যতিক্রম দেখা যেত, তবে পুরো বিবর্তন বিদ্যাই বালির তৈরি খেলা ঘরের মতই ভেঙ্গে পরতো বিজ্ঞানেরই নিকট। তখন ধার্মিকদের আর ত্যানাবাজির প্রয়োজন পরতো না, বরং বিজ্ঞানই প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে বলতো বিবর্তন তথ্য মিথ্যা।
এরপরেও ধার্মিক সমাজ আজ অবধী বিবর্তনের এই ধারাবাহিকতা মানতে নারাজ, যেখানে বর্তমান বিশ্বের প্রায় সমস্ত বিজ্ঞানী বিবর্তন বিদ্যাকে সমর্থন করতে বাধ্য হচ্ছে। বড়ই দুঃখের বিষয় হল, বিবর্তন বিদ্যা বর্তমানে এতোটাই শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে যে, ভবিষ্যতেও এটাকে মিথ্যা প্রমানের কোন সম্ভাবনাই নেই, ঠিক একারনেই তা বর্তমানে কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয় গুলোতে বিবর্তন বিদ্যাকে পাঠ্যসূচিতে পড়ানো হচ্ছে। অপরদিকে ধার্মিক সমাজ এখনো গলাবাজি করেই চলেছে, ঠিক যেমন গলাবাজি করেছিল সেই সময়, যে সময়ে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিন করছে এরকম বাইবেল বিরোধী বক্তব্য প্রদান করার অপরাধে খ্রিষ্টান বাবাজীরা বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছিল। বর্তমানে খ্রিষ্ট ধর্ম সভ্য হলেও, সেই একই কৌশল ব্যবহার করছে বর্তমানের মুসলিম সমাজ।
বিজ্ঞানের গবেষনালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে আজ নিশ্চিত রুপেই বলা যায় যে, পৃথিবীতে প্রথম প্রানের আবির্ভাব ঘটেছিল প্রায় ৩৫০ কোটি বছর পূর্বে এবং এরই ধারাবাহিকতায় আধুনিক মানুষের আবির্ভাব ঘটে মাত্র দু-লক্ষ বছর পূর্বে। সেই দু-লক্ষ বছর পূর্বের মানুষ প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার সহিত সংগ্রাম করতে করতে প্রাচীন বন্য যুগ, এরপর প্রস্তর যুগ, এরপর অগ্নি যুগ এসব অতিক্রম করে অবশেষে লৌহ যুগ অতিক্রম করে বর্তমানের আধুনিক যুগে পৌঁছাতে পেরিয়ে গেছে প্রায় দু-লক্ষ বছর। অবশেষে মানুষ সভ্যতা পেয়েছে মাত্র ১০ হাজার বছর পূর্বে। প্রাচীনকালে এই মানুষ আর বন্য জন্তুদের মাঝে ব্যবধানটা ছিল খুবই অল্প। কারন, তাদের জীবন বৈচিত্র আর অন্যান্য বন্য জন্তুদের জীবন বৈচিত্র ছিল প্রায় একই রকম। আজকের এই মানুষ গুলোও যুক্ত ছিল খাদ্য-খাদক চক্রের একটা পর্যায়ে, যা বর্তমানে খাদ্য চক্রের সেই পর্যায় থেকে উত্তীর্ন হয়ে খাদ্য চক্রের উপরেই প্রভাব বিস্তার করে রীতিমত মাতব্বরি করছে।
শুরুর দিকে মানুষ গাছেই বসবাস করতো, আর খাবার সংগ্রহ করতো গাছের ফলমুল এবং এক পশু দ্বারা অন্য পশু স্বীকার করার পরিত্যাক্ত কাঁচা মাংশ। এরপর যখন দলবদ্ধ ভাবে পাহারের গুহায় বসবাস শুরু করল, তখন থেকেই দলবেঁধে যেত শিকারে। এরও বহু পরে মানুষ বর্ষা, বল্লম, তীর-ধনুক অতিক্রম করে প্রস্তর যুগে অবস্থান করলো। পাথর দ্বারা তৈরি করতে পারলো শক্তিশালী অস্ত্র, যা শিকার ধরায় বেশ কার্যকর। পোশাক বলতে কেবল গাছের শুকনো বড় পাতা, গাছের বাকল, নয়তো পশুর চামরা। শীত নীবারনের জন্যই তারা এসব ব্যবহার করতো, নয়তো বাঁকি সময় উলঙ্গই থাকতো সবাই। ভাষা তখনো আবিষ্কার হয় নাই, কেবল এলোমেলো ভাবে চিৎকার চেঁচামেচী ও শারীরিক অঙ্গ ভঙ্গিমার মাধ্যমেই প্রকাশ হত মনের ভাব। এরপর পাথরে পাথরে ঘর্ষন দিয়ে আগুন জ্বালাতে সক্ষম হল, সভ্যতার আরো একটি ধাপ তারা অতিক্রম করলো এই আগুন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। এর সাহায্যে এবার একদিকে যেমন পশুর মাংশ, মাছ আগুনে পুড়িয়ে ভক্ষন করা যায়, অন্যদিকে রাতের বেলা অাগুনের জন্য চারদিক যেমন আলোকিত হত, তদ্রুপ বন্য হিংস্র জন্তুর আক্রমন থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। শুরু হল আরেক নবযুগের। এরই ধারাবাহিকতায় একটা সময় আসে লৌহ যুগ। এযুগের মানুষ বড়ই সভ্য। তারা ভাষা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে, লোহার সাহায্যে ধারালো অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম হয়েছে, পোশাক তৈরিতে সক্ষম হয়েছে, মানুষ সমাজ বদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেছে, সমাজের প্রধান নিযুক্ত করা হয়েছে, সবিশেষ এ যুগেই আগমন ঘটেছে ঈশ্বরের। এর পূর্বে ঈশ্বর নামক কোন কিছুর অস্তিত্ত্বই ছিল না পৃথিবীতে। ঈশ্বরও যেন মানুষদের সভ্য হওয়ার প্রতীক্ষায় দিন গুনছিল। সেই তখন থেকেই ঈশ্বরের আমদানী হতে হতে ৪২০০ ঈশ্বরে এসে ঠাঁই মিলেছে। মানুষ এখন বাহারী ঈশ্বরের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে কোনটা যে সত্য ঈশ্বর, সেই ভ্রান্তি নিরসনে অস্থীর। ধর্মান্ধদের ব্যাপার আলাদা, তারা পৈত্রিক সূত্র পাওয়া ধর্মেকেই সত্যরুপে আঁকরে ধরে জীবন অতিবাহিত করতে পারে। বিবেক, বুদ্ধি, বিবেচনা ও জ্ঞান, সব কিছুই অন্ধ বিশ্বাসের নিকট বন্দী।
যতদিন পোশাক ছিল না, ততদিন পোশাক নিয়ে ঈশ্বরের কোন মাথা ব্যথা ছিল না। যখনই পোশাক আবিষ্কার করলো, তখনই ঈশ্বরের পোশাক নিয়ে চুলকানী শুরু হল।
যখন মানুষ সব রকম পশু শিকার করে ভক্ষন করতো, তখন ঈশ্বরের আহারের ক্ষেত্রে কোন মাথা ব্যথা ছিল না। কিন্তু যখনি মানুষ সভ্য হল, তখনই খাদ্যের প্রতি ঈশ্বর হারাম হালালের বিধান চালু করলো।
যখন মানুষ প্রকৃতির সহিত সংগ্রাম করে কোন রকমে জীবনকে বাঁচিয়ে চলতো, তখন কোন ধর্মের কোন ঈশ্বরের দেখা ছিল না। কিন্তু যখনই মানুষ সভ্য সমাজ গঠন করলো, তখনই ঈশ্বর মানুষদের প্রতি প্রকট হতে শুরু করলো। কখনো তার অনুসারী মানুষদের প্রতি সদয় হয়, তো অন্য ঈশ্বরের অনুসারী মানুষদের প্রতি হয় ক্ষিপ্ত। কখনো আবার তিনি প্রেরন করেন তারই মনোনীত মানুষ তার ধর্ম ও গুনগান প্রচারের জন্য। ক্ষেত্র বিশেষে যুদ্ধ করে হত্যাযজ্ঞও চালিয়ে নেয়। ঈশ্বরও বড়ই সুবিধাবাদী, দুর্দিনে নীরব দর্শক, সুদিনে উদয় হয় ধর্ম, ধর্ম গ্রন্থ এবং ধর্মতত্ত্ববিদদের অভিমত অনুসারে স্রষ্টার সৃষ্টি প্রথম মানব মানবীর যে জীবন বৈচিত্র পাওয়া যায়, তা কখনোই প্রাচীন কালে বসবাস করা কোন মানব-মানবী নয়। কেননা, ঈশ্বরের সৃষ্টি প্রথম মানব মানবী পাহারের গুহায় রাত কাটাতো না, তারা পশুর কাঁচা মাংশ ভক্ষন করতো না, তারা উলঙ্গ হয়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো না, তারা মনের ভাব প্রকাশে কোন ভাষা ব্যবহার করতো না (কারন ভাষা তখন আবিষ্কার হয় নি), তারা বিবাহ বহিূর্ভুত সেক্সে আবদ্ধ হত (কারন, প্রাচীন কালে বিয়ে নামক কোন প্রথা ছিল না)।
এবার আপনিই বলুন, এমন কোন ধার্মিক ও ধর্মগ্রন্থ স্বীকার করবে যে ঈশ্বরের সৃষ্টি প্রথম মানব-মানবী এভাবে দিনাতিপাত করেছে?
আপনি সনাতন ধর্মের মনু ও শতরুপার কথাই চিন্তা করুন। তাদের জীবন ছিল আজ থেকে মাত্র ১০ হাজার বছর পূর্বের মত আধুনিক। বাইবেলের এ্যাডাম ও ইভের কথা চিন্তা করুন, তাদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। সবিশেষ কোরানের আদম হাওয়ার জীবন বৈচিত্র চিন্তা করুন, সেই একই ব্যাপার লক্ষ্য করতে পারবেন।
অথচ নৃ-বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে যে, ভাষা আবিষ্কার হয়েছে মাত্র ১০ হাজার বছর পূর্বে এই সভ্য সমাজে। তার পূর্বে মানুষ এলোমেলো কিছু শব্দ ও চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতো, যার প্রমান মেলে প্রাচীন শীলালিপি থেকে। অথচ ধর্মের এসব প্রথম মানব মানবী আধুনিক পোশাক পরিধান করতো, ভাষার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতো, পশু শিকার করতে হতো না ইত্যাদি ইত্যাদি, যা সকল দিক থেকেই মাত্র ১০ হাজার বছর অতীতের সমাজ ব্যবস্থারই ইঙ্গিত প্রদান করে। কাজেই ধর্ম গ্রন্থের মনু-শতরুপা, এ্যাডাম-ইভ কিংবা আদম-হাওয়া যাই বলুন না কেন, এরা আধুনিক সভ্য সমাজের প্রথম মানুষ হলেও হতে পারে, কিন্তু পৃথিবীর প্রথম মানব -মানবী হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নাই।
এখনো আফ্রিকার আমাজান অঞ্চলে এমন কিছু মনুষ্য জাতির সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আধুনিক সভ্যতা হতে এখনো বহু দূরে রযেছে। যারা এখনো তীর ধনুক কিংবা বর্শা বল্লমের সাহায্যে বন্য জন্তু শিকার করে এবং আগুনে পুড়িয়ে ভক্ষন করে। এখনো দলবেঁধে শিকার করে এবং শিকারে ব্যর্থ হলে সবাই অনাহারে থাকে, এখনো তাদের জীবন কাটে পাহারের গুহায় নয়তো ঝুপড়ি ঘরে। এদের মাঝে এখনো কোন ধর্মের ছোঁয়া নেই, নেই বাহারী ঈশ্বর নিয়ে বাক বিতন্ডা। কখনো পৌঁছে নি কোন ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ নবী-রাসূল কিংবা দেব-দেবতা। দিব্যি তাদের জীবন কেটে যাচ্ছে হাজার হাজার বছর যাবত কোন প্রকার ধর্ম ও ঈশ্বর ছাড়াই। এরা এখনো সভ্যতা পায় নি, হয়তো এজন্যই ঈশ্বরও তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন নি।
৩. ধর্মের আবির্ভাবঃ
পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবী সম্বন্ধে ধর্ম আমাদের যে জ্ঞান প্রদান করে, আধুনিক বিজ্ঞান প্রদান করে তার সম্পূর্ন উল্টো। অনুরুপভাবে, ধর্মের আবির্ভাবের ব্যাপারে ধর্ম ও ধর্ম গ্রন্থ আমাদের যে জ্ঞান প্রদান করে, বিজ্ঞান এক্ষেত্রে প্রদান করে তার ব্যতিক্রম। ধর্মের কেচ্ছা কাহিনী আমাদের জানায় যে, ঈশ্বর তার সৃষ্ট প্রথম মানব-মানবীর হাত ধরেই ধর্ম এ পৃথিবীতে আগমন করিয়েছে। ইসলামে প্রথম মানব-মানবী আদম ও হাওয়া, খ্রিষ্টান ধর্মে এ্যাডাম ও ইভ, সনাতন ধর্মে মনু- শতরুপা। ঈশ্বর ও তার প্রেরিত পুরুষদের বক্তব্য অনুযায়ী, এরাই পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবী এবং এদের মাধ্যমেই ঈশ্বর তার মনোনীত ধর্ম পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। অথচ বৈজ্ঞানিক গবেষনায় জানা যাচ্ছে যে, এরা মাত্র ১০ হাজার বছর পূর্বের সভ্য সমাজের বাসিন্দা, যেখানে সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী প্রাচীন মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে প্রায় দু-লক্ষ বছর পূর্বে। কাজেই ধর্মের এসব কেচ্ছা কাহিনী যে নেহাতই কাল্পনিক, তা বুঝতে কোন রকেট সায়েন্স লাগে না।
প্রচলিত ঈশ্বর বিশ্বাসী ধর্মগুলো বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে যে, প্রচলিত ধর্মের ঈশ্বর গুলো মানুষ সৃষ্টিই করেছে পৃথিবীতে মানুষের চাষ করার জন্য। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছে তার তোষামোদ করার জন্য, কেননা তাদের খুশি করতে পারলেই পরকালে মিলবে অসীম সুখের এক দুনিয়া। এরজন্য তিনিই নির্ধারন করে দিয়েছেন মানুষের জীবন বিধান। খাবার খাওয়া হতে শুরু করে টয়লেট যাওয়া এবং কার সহিত কেমন সম্পর্ক রাখতে হবে তার হিসাব থেকে শুরু করে স্ত্রীর সাথে কিভাবে সেক্স করতে হবে সেই নিয়ম পর্যন্ত নির্ধারন করে দিয়েছেন এসব ধর্মের ঈশ্বর গুলো। এখানে মানুষের স্বাধীনতা বলে আর কিছু নেই, যদি পরকালে সুখ চান, তবে ঈশ্বরের এসব বিধান আপনাকে মানতেই হবে। আর এরকম জীবন বিধান মানুষের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন আমাদের মতই কোন মানুষের মাধ্যমে, যে জীবন বিধানই বর্তমানের প্রচলিত ধর্ম।
মানুষ কি করবে, কি করবে না; কি খাবে, কি খাবে না; কারে বিয়ে করবে, কারে বিয়ে করবে না; কিভাবে খেতে হবে, কিভাবে টয়লেট যেতে হবে, কিভাবে সেক্স করতে হবে, এরকমভাবে মানুষকে পুরোপুরি পরাধীন করে ফেলেছে ধর্মগুলো। প্রতিটি মানুষের জীবন বিধান ঈশ্বর তার জন্মের পূর্ব হতেই নির্ধারিত করে রেখেছেন। মানুষ কেবল জন্ম নিচ্ছে এবং ঐ পরিবার যে ধর্ম ও ঈশ্বরে বিশ্বাসী, নতুন শিশুটির উপর সেই ধর্ম ও ধর্মের বিধান চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, বিশ্বাস করানো হচ্ছে পরিবারের বিশ্বাসী ঈশ্বরে। অন্যান্য ধর্ম কেমন, সেসব ধর্মের ঈশ্বর কেমন, এসব জানার কোন সুযোগই নেই, কারন একই সাথে বিশ্বাস করানো হয় যে,অন্যান্য সকল ধর্ম ও ঈশ্বর মিথ্যা, একমাত্র তার পরিবার থেকে পাওয়া ধর্ম ও ঈশ্বরই সত্য ও সুন্দর।
মনু-শতরুপা, এ্যাডাম-ইভ কিংবা আদম-হাওয়া, প্রতিটি চরিত্র বিশ্লেষন করে সহজেই বুঝা যায় যে, তারা মাত্র ১০ হাজার বছর পূর্বের পৃথিবীর সভ্য মানুষ। এছাড়াও স্রষ্টার সৃষ্টি প্রথম মানব-মানবী অসভ্য যাযাবর ছিল, বন্য জন্তু শিকার করে তাদের কাঁচা মাংশ ভক্ষন করতো, পোশাক ছাড়া উলঙ্গ ঘুরে বেড়াতো, পাহারের গুহায় বাস করতো, এমন বাস্তবতা ধর্মের জন্যই হানীকর বলে, তাদেরকে আধুনিক সভ্য মানুষদের মত কল্পনা করতে বাধ্য হয়েছে। যদি এমন সভ্য মানুষই ঈশ্বরের সৃষ্টি প্রথম মানব-মানবী হয়, তবে দু-লক্ষ বছর পূর্বের সেসব অসভ্য যাযাবর মনুষ্য জাতির স্রষ্টা কে? তাদের মাঝে না ছিল কোন ভগবানেশ্বরাল্লাহ, না ছিল কোন দেব-দেবতা কিংবা নবী-রাসূল। সারাদিন ব্যস্ত থাকতো পশু শিকারে, নয়তো হিংস্র জন্তুর কবল হতে আত্মরক্ষা করতে। তখন ঈশ্বরের মনে হল না যে, সেসব অসভ্য যাযাবর মানুষদের জন্য ধর্মের প্রয়োজন, তাদের হিংস্র জন্তুর হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন, তাদের সভ্য করা প্রয়োজন। কিন্তু যখনই মানুষ লক্ষ বছর অতিক্রম করে একটা সুন্দর সভ্য সমাজে উন্নীত হয়েছে এবং আবিষ্কার করেছে ভাষা, ঠিক তখনি যেন ঈশ্বরের প্রয়োজন পরলো প্রেরিত পুরুষের মাধ্যমে তার ধর্ম প্রচারের। ব্যাপারটা যেন তেলা মাথায় তেল দেয়ার মত।
অপরদিকে নৃ-বিজ্ঞান আমাদের ধর্মের উৎপত্তি ব্যাপারে কি জ্ঞান দান করে?
নৃ-বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে যে, পৃথিবীতে প্রায় দু লক্ষ বছর পূর্বে মানুষ আবির্ভাবের পরে তারা প্রকৃতিতে ছিল বড্ড বেশি অসহায়। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার সহিত তাদের টিকে থাকতে হয়েছে যুদ্ধ করে। সামান্য রোগ শোকেই তাদের মৃত্যু হয়েছে, কখনো হতে হয়েছে হিংস্র পশুর শিকার, বাস করতে হয়েছে গাছের ডালে নয়তো পাহারের গুহায়। প্রাকৃতিক ঝড় যখন আশ পাশের সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিচ্ছিলো, তখন তারা দেখেছিল প্রকৃতির এক ভয়ংকর রুপ। সেই ভয়ানক শক্তির হাত থেকে নিস্তার পেতে তাদেরকে ঐ শক্তিরই পূজা করা ব্যতিত আর কোন উপায় ছিল না। দিনশেষে সূর্য যখন হারিয়ে যায়, তখন রাতের কালো অন্ধকারে তারা ভয়ে সঙ্কুচিত হয়ে থেকেছে নিশ্চয়। এরপর সকালের ঝলমলে আলোয় আবার তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। সূর্য যদি কখনো আর উদয় না হয়, তাহলে তাদের অবস্থা যে কি হতে পারে, তা তারা অনুমান করতে পেরেছিল রাতের অন্ধকারে বসত করে। তাই সূর্যকেও পূজা করা শুরু করলো, যাতে সে নিয়মিত উদয় হয়। ঠিক এরকম ভাবেই সূচনা হয়েছিল প্রকৃতি পূজার।
কোন ঈশ্বর বা ধর্মের আবির্ভাব তখনো হয় নি, কারন ভাষা তখনো আবিষ্কার হয় নি। মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতো শারীরিক অঙ্গ ভঙ্গির মাধ্যমে এবং চিৎকার চেঁচামেচি করে। এরপর সময়ের ধারাবাহিকতায় বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের জ্ঞান বুদ্ধি এবং চিন্তার পরিসর। সেই পরিসরের ভিত্তিতেই তাদের মগজে ঠাঁই নিলো যে, এসব খন্ড খন্ড শক্তি নিয়ন্ত্রনের জন্য কেউ না কেউ নিশ্চয় রয়েছে। এরই ভিত্তিতে জন্ম নিলো দেব-দেবতার। এখন থেকেই শুরু হল প্রকৃতি পূজা বাদ দিয়ে প্রকৃতির সেই সব শক্তির নিয়ন্ত্রক দেব-দেবতা পূজার। দেবতাদের তুষ্ট করতে পারলেই তারা সকল প্রকার বিপদ আপদ হতে তাদের রক্ষা করবে এবং অনেক রকম সুযোগ সুবিধা দেবে।
ঈশ্বর বা ধর্ম চিন্তা তখনো তাদের মগজে আসন গেঁরে বসতে পারে নি। কারন, তাদের মগজ তখনো এতোটা বেশি প্রস্ফুটিত হয় নি। কিন্তু ততদিনে মানুষ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যাপার চিন্তা করে দলবদ্ধ হয়ে একত্রে বসত করা শুরু করেছে এবং যাযাবর জীবন ত্যাগ করে, স্থায়ীভাবে বসত গড়ে তুলেছে। ভাষা তখনো আবিষ্কার হয় নি। মনের ভাব প্রকাশে এখন শারীরের অঙ্গ ভঙ্গিমার মাধ্যমে যোগ হল চিত্রাঙ্কন। চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ পেতে শুরু করলো পূর্বের থেকেও অনেক বেশি, যার প্রমান মেলে প্রাচীন শীলা লিপিতে। প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন সমাজ বা গোত্রেই তাদের নিজের মত করে দেব-দেবীর সৃষ্টি করে পূজা আর্চনা শুরু করেছে এবার। ঠিক এরই ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর সমস্ত গোত্রের দেব-দেবীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় তেত্রিশ কোটিতে। যেহেতু সমগ্র ধর্ম জগতে সবচেয়ে প্রাচীন ধর্ম সনাতন, সেহেতু এই ধর্মে তেত্রিশ কোটি দেব-দেবতা পাওয়া মোটেই অসম্ভব কিছু নয়।
সময়ের সাথে সাথে মানুষ ক্রমেই সভ্যতার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, বৃদ্ধি পাচ্ছিল জ্ঞান, বুদ্ধি এবং এবং জীবন যাপনের সহজ কৌশল, সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাদের চিন্তার প্রসারতা এবং গভীরতা। চোখের সামনে একজন জ্যলজ্যান্ত মানুষ হঠাৎ অচেতন হয়ে গেল, মারা গেল। কেন এমন হল, অচেতনের পূর্বে তার শরীরে কি ছিল, আর মৃত্যুর পরে কি নাই, যার জন্য সে অচেতন?
স্বপ্নের মাধ্যমে মানুষের শরীর এক জায়গায় থাকলেও নিজেকে আবিষ্কার করে অনেক দূরের কোন স্থানে। অতঃপর ঘুম ভেঙ্গে দেখতে পায় সে তার আপন নীরেই বর্তমান, তাহলে কে গিয়েছিল ঐ দেশে, আর এতো দ্রুত সেখান থেকে আসলামই বা কেমন করে? তখনই তারা নিজের মাঝে আরেক স্বত্ত্বার আবিষ্কার করলো, আবিষ্কার করলো আমার মাঝে আরেক আমি। সেই আমিরই পরবর্তীতে নাম হল আত্মা। ঘুমের মাধ্যমে আত্মা কাছে কোথাও ঘুরতে যায়, তাই ঘুম শেষে পুনরায় ফিরে আসে শরীর মাঝে। কিন্তু মৃত্যুর মাধ্যমে আত্মা হয়তো অনেক দূরে চলে যায়, তাই আর ফিরে আসতে পারে না। হয়তো কোন একদিন ফিরে আসতে পারে, এই বিশ্বাসে তারা মৃত ব্যক্তিকে মাটিতে পুঁতে রেখে আসার সময় সেখানে নানা রকমের খাবার, পানি, গাধা ইত্যাদি রেখে আসতো। যাতে আত্মা ফিরে আসলে ঘুম থেকে জেগে উঠে ক্ষুধা পেলে খেতে পারে এবং গাধার পিঠে আরোহন করে ফিরে আসতে পারে।
ধর্ম এবং ঈশ্বরের ধারনা কিন্তু মানব মস্তিষ্কে এখনো স্থান পায় নি। আমরা জানি, পৃথিবীর প্রতিটা যুগেই কোথাও না কোথাও এমন কিছু মানুষের জন্ম হয়, যারা হয় অনেক জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান। তৎকালীন সময়েও এমন মানুষের জন্ম হতো, তাইতো তারা ক্রমান্বয়ে অসভ্য জাতি থেকে ধীরে ধীরে সভ্য জাতিতে উন্নীত হতে পেরেছে। সেই সময় আত্মার আবিষ্কারের পরে দু-একজন বুদ্ধিমান মানুষ সেই ধারনার সহীত আরো কিছু রং মিশিয়ে সেই আত্মার জন্য আরেকটি জগত তথা আত্মার জগতের কল্পনা করে। সেই জগতকে আবার স্বর্গ ও নরক দুভাগে বিভক্ত করেছে। সেই স্বর্গে যাবার রাস্তাও তৈরি করে দিয়েছে কিছু বিধানের আমদানী করে। এই মানুষই একটা সময় হতে তাদের নিজ গোত্রে সম্মানীয় ব্যক্তি হয়ে উঠে এবং নিয়ম নীতি নির্ধারন করতে থাকে, হয়ে উঠে গোত্র প্রধান। শুরু হতে থাকে নিয়ম নীতির আবিষ্কার, এবং যত হাত বদলাতে থাকে, ততই যোগ হতে থাকে নিয়ম নীতির। একটা সময় প্রশ্ন উঠলো, এই স্বর্গ নরক, পৃথিবী সব কিছু সৃষ্টি করেছে কে? ঠিক এই প্রশ্নের উত্তরেই এবার আমদানী করতে হল ঈশ্বরকে এবং দেব-দেবতা হয়ে গেল সেই ঈশ্বরেরই বিশেষ দূত। এবার জন্ম নিলো ঈশ্বরকে খুশি করার বিধি বিধান, তৈরি হতে থাকলো নিয়ম নীতির, যার নাম নির্ধারিত হল ধর্ম।
ব্যাপারটি এ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকলে কোন সমস্যা হত না। কিন্তু ব্যাপারটি এবার ঈশ্বর ও দেব-দেবতার সীমা অতিক্রম করে মানুষই মাঝে মধ্যে নিজেকে ঈশ্বরের দূত হিসাবে দাবী করতে থাকে। যেখানে সেখানে আবির্ভাব ঘটতে থাকে সেসব দূতের। তারা অতি সম্মানীয় হতে থাকে সাধারন মানুষদের নিকট। এতে একদিকে যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়, অন্যদিকে তদ্রুপ নেতাও হওয়া যায় সহজে। আর বিশ্বাস করার জন্য ধর্মান্ধদের তো কোন অভাবই নেই, বর্তমানেও নেই, অতীতেও ছিল না। এরাই পরবর্তীতে ধর্ম ও ঈশ্বরের নামে জন্ম দিতে থাকে ধর্ম গ্রন্থের। সেখানে এক ধর্ম যেমন অন্য ধর্মকে ঘৃনা করতে শেখায়, তদ্রুপ এক ঈশ্বরও অন্য ঈশ্বরের প্রতি ক্রোধান্বিত হয়। আর সেই সব ধর্ম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে যুদ্ধ বিগ্রহে মেতে উঠে ঈশ্বরে চ্যালারা। যুগ যুগ ধরে বর্তমান অবধী মানুষের মাঝে ধর্ম ও ঈশ্বর ঠিক এভাবেই টিকে রয়েছে।
৪. ভগবানেশ্বরাল্লাহর আবির্ভাবঃ
পৃথিবীতে বহুল প্রচলিত যত ধর্মের ঈশ্বর রয়েছে, তন্মধ্যে মনে হয় ভগবানের আবির্ভাব হয়েছে সবার আগে। এজন্য এ ধর্মকে সনাতন তথা আদি ধর্মও বলা হয়। মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি যখন আরো প্রস্ফুটিত হল, তখন তারা সেসব খন্ড খন্ড শক্তির ভিন্ন ভিন্ন দেব-দেবতার চিন্তা অতিক্রম করে, এসবের সব কিছুর নিয়ন্ত্রনকারী হিসাবে একটা স্বত্ত্বাকে কল্পনায় নিয়ে আসলো, যা ধর্মভেদে নামের ভিন্নতা দেখা দিল। আর বাঁকি সবাই ঠাঁই পেলো সেই এক ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ হিসাবে, যারা ঈশ্বরের হুকুম পালন করে। অর্থ্যাৎ ঈশ্বরকে কল্পনা করলো নেতা হিসাবে, আর দেব-দেবীগন সেই নেতার হুকুমের গোলাম, আর মানুষ হল সেই নেতাকে সর্বদা তুষ্ট রাখার যন্ত্র মানব। এহেন অবস্থায় পৃথিবীর যাবতীয় কর্মকান্ড বিবেচনা হতে থাকলো সেই ঈশ্বরের লীলা হিসাবে। শুরু হল একেশ্বরবাদী ভাবনা এবং মাত্র ছয়-সাত হাজার বছর পূর্বেই জন্ম নিল ভগবানের। ঠিক এরই পথ ধরে ভন্ডামীর যাত্রা শুরু। তৎকালীন সময়ে মানুষ হয়তো ভন্ডামীটা বুঝতে পারে নি, হয়তো এটাও বুঝতে পারে নি যে, ভবিষ্যতের মানুষ ধর্ম এবং ঈশ্বরকে এভাবে ব্যবহার করবে।
এরপর দেখা দিতে থাকলো ভগবানের প্রেরিত দূত, যারা মানুষের মধ্য হতেই একজন নিজেকে ভগবানের দূত দাবী করে ফায়দা তোলায় কাজে লেগে পরা শুরু করলো। প্রায় কোথাও না কোথাও দেব-দেবী তাদের উপর ভর করে তাদের মনোনীত পুরুষ হিসাবে নিযুক্ত করা শুরু করলো, এমনকি দেবী মাতাও নারীদের উপর ভর করা শুরু করলো, শুরু হল ধান্দাবাজির এক নতুন অধ্যায়ের। আর এই ধান্দাবাজী অব্যাহত রাখতে পাবলিকদের অভাব নেই। এসব লোক হয় অত্যন্ত চতুর প্রকৃতির। ভগবানের বানী বলে নিজের বক্তব্যকে সুন্দর রুপে প্রতিষ্ঠা করে সমাজে। আর সেসব মেনে নেয়ার জন্য দেখানো হয় স্বর্গের লোভ, নয়তো নরকের বিভৎস ভয়। আর প্রাচীন সেসব কাল্পনিক শক্তির নিয়ন্ত্রকেরা হয়ে গেল ভগবানের দেব-দেবী, যা বর্তমান অবধী রয়ে গেছে বহাল তবিয়তে। যেমন, সূর্যের দেবতা, বৃষ্টির দেবতা, স্বর্গের দেবতা, যৌন দেবতা, ইত্যাদি ইত্যাদি।
মজার বিষয় হল, ঈশ্বর বা আল্লাহর আবির্ভাব কিন্তু তখনো ঘটে নি। মাত্র দুই হাজার বছর পূর্বে ঈশা মসীহের হাত ধরে আগমন ঘটে ঈশ্বরের। তার পূর্ব পর্যন্ত একা রাজ করেছে ভগবান এবং বাহারী রকমের দেব-দেবতা। কখনো ভগবান পৃথিবীতে দেব-দেবতা প্রেরন করেন, কখনো বা দেব-দেবতা মানুষের শরীরে ভর করে ধর্ম রক্ষা ও প্রচার করে থাকেন। এরপরের যুগে ঈশ্বরের আবির্ভাবের পরে ঈশ্বর নিজেই তার পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন আধুনিক সভ্য সমাজের মানুষদের সঠিক পথ দেখাতে। অর্থ্যাৎ, প্রায় দু লক্ষ বছর যাবত আদিম মানুষগুলো সঠিক পথেই ছিল। তাই তাদের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর তার কোন পুত্র বা কন্যা পাঠানোর প্রয়োজন মনে করলেন না।
মাতা মেরী বিবাহ বহির্ভূত গর্ভবতী হলেন এবং জন্ম দিলেন এক পুত্র সন্তানের। সেই পুত্রই বড় হয়ে নিজেকে ঘোষনা করলেন ঈশ্বর পুত্র হিসাবে এবং আমদানী করলেন খ্রীষ্ট ধর্ম। ঈশা মসীহের পিতা হলেন স্বয়ং ঈশ্বর এবং মাতা হলেন মেরী, অথচ ঈশ্বর ও মেরী স্বামী-স্ত্রী নয়। প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা এই সম্পর্কের ঠিক কি নাম করন করবে, তা আজ অবধী নির্ধারিত হয় নি।
আমরা জানি ঈশা মসীহকে কত নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। পৃথিবীর এমন কোন পিতা রয়েছে, যিনি সন্তানের এমন করুন মৃত্যু স্বচক্ষে দেখার পরেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে? অথচ পিতা ঈশ্বর বসে বসে এমন দৃশ্যই নীরবে উপভোগ করেছেন। অথচ যোশেফ নিজ জন্মদাতা পিতা না হওয়া স্বত্ত্বেও সন্তানের লাশ নিতে হাজির হয়েছিলেন, কিন্তু পরম দয়াময় পিতা ঈশ্বর পালন করেন নীরব ভূমিকা।
সবিশেষ প্রায় ১৪৫০ বছর পূর্বে নবী মুহাম্মদের হাত ধরে আগমন ঘটে আরেক নতুন ঈশ্বরের, নাম আল্লাহ। মরুবাসী বিধবা আমিনার এতিম সন্তান উত্তপ্ত মরুর বুকে মেষ চড়াতে চড়াতে হয়ে গেল নবী, জন্ম দিল এক নতুন স্রষ্টার। ২৫ বছর বয়সী তরতাজা হত দরিদ্র এই যুবক আর্থিক সংকট কাটাতে হয়ে যান তৎকালীন সময়ের সম্ভ্রান্ত পরিবারের দুই বার বিধবা হওয়া খ্রিষ্টান মহিলা খাদিজার চাকর। সে সময় তার ব্যবসা দেখাশোনার জন্য একজন বিশ্বস্ত কর্মচারীর খুব প্রয়োজন ছিল তার। মুহাম্মদ সে সময়ে বিশ্বাসী হিসাবে বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। মুহাম্মদের বিশ্বস্ততার সূত্র ধরেই ৪০ বছর বয়সী খ্রিষ্টান খাদিজা ২৫ বছর বয়সী পৌত্তলিক পরিবারের সন্তান মুহাম্মদকে বিয়ের অফার দেন। এতোবড় ধনী পরিবারে বিয়ে করা তো ছিল সৌভাগ্যের বিষয়, তাই মুহাম্মদের না বলার কোন সুযোগই ছিল না, অন্তত তপ্ত মরুর বুকে মেষ চড়ানোর চাইতে উত্তম জীবন উপহার পেতে চলেছিলেন। মুহাম্মদ ও খাদিজার বিয়ে হল এবং মুহাম্মদ হল খাদিজার ঘর জামাই। বউয়ের সম্পদে ফুটানী করা ব্যতিত আর কোন কাজ ছিল না তার। ঠিক এ সময়ই অবকাশ পেলেন নতুন নতুন চিন্তা ভাবনার। সেই চিন্তার গভীরতার জন্য তাকে আশ্রয় নিতে হল হেরা পর্বতের গুহায়। সেই সময় ধর্ম গুরুগন নীস্তব্ধতার জন্য পাহারের গুহাকেই পছন্দ করতেন। ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানে নতুন ধর্ম আমদানীর ছক তৈরি করে হেরা পর্বতের গুহা থেকে এক নতুন মানবের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। মুহাম্মদ থেকে হয়ে গেলেন নবী মুহাম্মদ, (মনোবিজ্ঞানের ভাষায় স্কিটজোফ্রেনিয়া রোগী) আবির্ভাব হল এক নতুন স্রষ্টার, নাম দিলেন আল্লাহ। সেই আল্লাহ ও মুহাম্মদের মধ্যে কথোপ কথোনের জন্য আমদানী হল আল্লাহর বিশেষ কর্মচারী জীব্রাইল, কারন যোগাযোগের জন্য আল্লাহ তখন মোবাইল আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় নি। এবার সেই আল্লাহর এক নতুন ধর্মের আমদানী ঘটলো, নাম হল ইসলাম।
আপনারা নিশ্চয় জানেন, কোন কিছু কেউ দেখতে না পেলেও যখন নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি দেখতে পায়, বা কিছু শুনতে পাওয়া যা কেউ শুনতে পায় না, এমন লক্ষনকে মনোবিজ্ঞানে বলে হ্যালুসিনেশন।
স্কিটজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষন
এখানেও লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, মানুষ যখন সভ্য সমাজে উন্নীত হয়েছে, ঠিক তখনই আল্লাহর প্রয়োজন হয়েছে নবী প্রেরনের, প্রয়োজন হয়েছে নয়া ধর্মের আমদানী করার। সভ্য মানুষকে সভ্য করতে নবী পাঠালেন, অথচ দু-লক্ষ বছর পূর্বের আদিম মানুষদের জন্য আল্লাহ কোন নবী বা ধর্মের আমদানী করলেন না। আল্লাহও অন্যান্য ঈশ্বরের ন্যায় সভ্য মানুষদের সভ্য করার চেষ্টা করেছে, অসভ্য মানুষদের সভ্য করতে নয়। যেন আল্লাহও তেলা মাথায় তেল ঢালতে বেশ পারদর্শী।
এখানে মুসলিম পাবলিক দাবী করে যে, পৃথিবীতে মানুষ আবির্ভাবের পর হতে এ পর্যন্ত এক লাখ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লাখ চব্বিশ হাজার নবী রাসূল প্রেরন করেছেন। এদের মধ্য হতে নবী মুহাম্মদই হল সর্বশেষ নবী। কিন্তু বাস্তবে নবী মুহাম্মদের পূর্বে ইসলাম ধর্মের পক্ষ থেকে যেসব নবীর আগমনের কথা শোনা যায়, সেসব কেবল শোনা কথাই, এসবের কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। তার প্রথম কারন হল, নবী মুহাম্মদের সময় পৃথিবীতে একজনও মুসলিম ধর্মের অনুসারী ছিলেন না। যদি মুহাম্মদের পূর্বে এতো বিপুল পরিমান নবী রাসূলের আগমন ঘটতো, তবে ইসলাম ধর্মের একজন মানুষও বেঁচে থাকবে না, এটা পুরাই অবাস্তব বক্তব্য।
দ্বিতীয়ত, ইসলাম ধর্ম মতে পৃথিবীতে প্রথম মানব-মানবী হলেন আদম ও হাওয়া। যাদের কথা বলার জন্য নির্দিষ্ট ভাষা ছিল, যে ভাষা আল্লাহ জান্নাতেই শিখিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ নৃ-বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে যে, মানুষের মৌখিক ভাষা আবিষ্কার হয়েছে মাত্র ১০ হাজার বছর পূর্বে। আর আরবী ভাষার জন্ম হয়েছে সেমিটিক ভাষা থেকে। এখন সেমিটিক ভাষার জন্ম কত বছর পূর্বে, সেই হিসাব করলেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে আদম-হাওয়া আসলে মাত্র কয়েক হাজার বছর পূর্বের মানুষ, পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবী নয়।
সেমিটীয় ভাষা পরিবারের সঙ্গে যুক্ত যত গুলো ভাষা ছিল, তার মধ্যে আরবী ভাষা অন্যতম। হিব্রু ও আরামীয় ভাষার সাথে এ ভাষার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আধুনিক আরবী ভাষার ২৭ রকমের উপভাষা রয়েছে। তৎকালীন সময়ে সমগ্র আরব ভূখন্ড জুড়েই এসব উপভাষার প্রচলন ছিল। বিশ্বের অনেক ভাষা যেমন আরবী ভাষা থেকে ধার নেয়া, তদ্রুপ আরবী ভাষাও বাইজেন্টীয় গ্রীক ভাষা এবং ফার্সি ভাষা থেকে ধার নেয়া এবং এর সাথে নিজস্ব চিন্তা ধারা যুক্ত করে এবং নতুন নতুন শব্দের যোগ ঘটিয়ে এবং ব্যকরন পরিবর্তন করে ভাষাটি সমৃদ্ধশালী হয়। সকল সেমিটীয় ভাষার একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, ব্যঞ্জন দিয়ে শব্দরূপ বা ধাতুমূল গঠিত। সাধারণত তিনটি ব্যঞ্জন নিয়ে একটু ধাতুমূল গঠিত হয় এবং প্রতিটির একটি মূল অর্থ থাকে। এরপর এর মূলকে বিভিন্ন ভাবে স্বরবর্ণ, উপসর্গ, মধ্যসর্গ, অন্তপ্র্যত্যয় বসিয়ে অন্যান্য কাছাকাছি অর্থের শব্দ সৃষ্টি করা যায়। উদাহরণস্বরূপ আরবী সালিম শব্দকেই বিবেচনা করুন, যার অর্থ নিরাপদ। আরো সঠিক ভাবে এর অর্থ পুরুষ। এখান থেকে পাওয়া যায় সাল্লাম অর্থ সরবরাহ করা, আসলামা অর্থ সমর্পণ বা জমা দেয়া, ইস্তালামা অর্থ গ্রহন করা, ইস্তাস্তালামা অর্থ আত্মসমর্পণ করা, সালামুন অর্থ শান্তি, সালামাতুন অর্থ নিরাপত্তা, মুসলিমুন অর্থ মুসলিম। আরবী ভাষার এই বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে আপনি ইচ্ছামত কোন অর্থের কাছাকাছি একটা শব্দ তৈরি করে নিতে পারেন।
ইসলামের আবির্ভাবের ঠিক আগের যুগেই আরব উপদ্বীপে আরবী ভাষার জন্ম হয় বাইজেন্টীয় গ্রীক ভাষা এবং ফার্সি ভাষা থেকে ধার নিয়ে। প্রাক ইসলামী আরব কবিরা আরবীর যে ভাষা ব্যবহার করত, তা ছিল অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের। আরবী ভাষাতে খুব সহজেই নিজের প্রয়োজনে শব্দ ও পরিভাষা তৈরি করা যেত এবং এখনো যায় এবং জাকির নায়েক বিজ্ঞানের সাথে মিল করনে যা ব্যবহার করে চলেছে অবিরত এবং পাবলিকদের মানুষ থেকে ধার্মিক বানিয়ে চলেছে। ইসলাম প্রচারকেরা তাদের ধর্ম প্রচার করতে আরব উপদ্বীপের সীমানা ছাড়িয়ে ৭ম শতাব্দীতে বেড়িয়ে পরে এবং প্রথমে দামেস্কে এবং পরে বাগদাদে রাজধানী স্থাপন করে। ঠিক এই সময় ভূমধ্য সাগরের তীরবর্তী বিশালএলাকা জুরে আরবী ভাষা, প্রধান প্রশাসনিক ভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হত।
আবার, ইসলাম ধর্মের আদম-হাওয়া ক্যারেক্টার দেখা যায় বাইবেলের এ্যাডাম ও ইভ চরিত্রে। প্রায় একই রকম কাহিনী। কাজেই মুহাম্মদ যে এই প্রথম মানব-মানবীর কাহিনী বাইবেল থেকে ধার করে নি, সেটাও ১০০% নিশ্চিত করে বলা যায় না।
ঠিক একই রকম ভাবে আমরা যদি আধুনিক বিশ্বের বহুল আলোচিত ধর্ম গুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করি, তবে আমরা দেখতে পাবো যে, সূদুর প্রাচীন যুগে মানুষ যখন উলঙ্গ হয়ে বনে বাঁদারে ঘুরে বেড়াতো, বন্য পশু শিকার করে তাদের কাঁচা মাংশ ভক্ষন করতো, শীত নীবারনে গাছের বাকল পশুর চামড়া ব্যবহার করতো, তখন কিন্তু কোন ভগবানেশ্বরাল্লাহর উদ্ভব ঘটে নি। যখনি মানুষ সেইসব প্রাচীন যুগ থেকে ধাপে ধাপে সভ্যতায় এসেছে, নিজেদের দুঃখ দুর্দশা অনেকটাই লাঘব করতে সমর্থ হয়েছে, ঠিক তখনই যেন সকল ভগবানেশ্বরাল্লাহর নিদ্রা ভঙ্গ হয়েছে।
আমাজান অঞ্চলের কিছু বাসিন্দা এই বর্তমান যুগেও সেই আদিম যুগেই পিছিয়ে রয়েছে, সভ্যতার “স” পর্যন্ত তাদের নিকট পৌঁছে নি। তাদের নেই কোন ভগবানেশ্বরাল্লাহ, নেই কোন ধর্ম ও ধর্ম গ্রন্থ। জন্ম হয়েছে একদিন, মৃত্যু হবে একদিন, এটুকু চিন্তাতেই তাদের জীবন সীমাবদ্ধ। তাদের জীবনে কোন ভগবানেশ্বাল্লাহর প্রয়োজন হয় নি, তদ্রুপ তাদের ব্যাপারেও ভগবানেশ্বরাল্লাহ বড়ই বেখেয়ালী। যদি তারাও আধুনিক সভ্যতায় উন্নীত হতে পারতো, তবে আশা করা যায় যে, ভগবানেশ্বাল্লাহর আগমন সেখানেও ঘটতো।
ভগবানেশ্বরাল্লাহ আসলে একটা যুগের সৃষ্টি। সূদুর প্রাচীন কালেও কোন ভগবানেশ্বরাল্লাহর অস্তিত্ত্ব ছিল না, বর্তমানের এই আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে কোন নয়া ঈশ্বরের জন্ম হয় না, ভবিষ্যতের জন্যও যে ঈশ্বরের প্রোডাকশন বন্ধ, এটা অনুমান করা যায় সহজেই। অথচ এরই মাঝামাঝি সময়ে ঈশ্বরদের দাপট এতো বেশি ছিল যে, মাত্র কয়েক হাজার বছরের ব্যবধানে জন্মলাভ করেছে ৪২০০ ধর্মের। যেন ধর্মেশ্বর বিস্ফোরন। এরপর প্রায় ১৪৫০ বছর পূর্ব হতেই নয়া ঈশ্বর ও নয়া ধর্মের প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে গেছে, এ প্রোডাকশন শূন্যের কোঠায় এসে পৌঁছে গেছে বললেও ভুল বলা হয়, বলতে হবে মাইনাসের কোঠায় চলে গেছে। কারন, নয়া ধর্মের আমদানী তো দূর, মাত্র অল্প কিছু ধর্ম ও ধর্মেশ্বর ব্যতিত বাঁকি প্রায় সকল ধর্মই বিলীন হয়ে গেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির স্রোতে। বাঁকি যে কয়েকটা ধর্ম ও ধর্মেশ্বর এখনো টিকে রয়েছে মগজ ধোলাই আর কুপাকুপির দাপটে, সেটাও যে বিদায় নিতে কত সময় লাগতে পারে, তা অনুমান করতে খুব বেশি কষ্ট হয় না মোটেই।
তবে এরই মাঝখানে একটা প্রশ্ন এসেই যায়। প্রাচীনকাল এবং আধুনিক যুগ, উভয় যুগেই কোন ধর্ম ও ধর্মেশ্বরের আমদানী ঘটে নি, কিন্তু এর মাঝামাঝি পর্যায়েই জন্ম নিয়েছে সকল ঈশ্বর ও সকল ধর্মের। এরকম কেন?
একটু চিন্তা করলেই দেখতে পাবেন যে, প্রাচীনকালের মানুষ জ্ঞান ও বুদ্ধিতে এতোটাই কমজোর ছিল যে, তাদের মগজে যত সহজে প্রকৃতির শক্তি পূজা ঠাঁই নিতে পেরেছিল, ঈশ্বরের ধারনা ছিল তার চেয়েও অনেক বেশি জটিল এবং প্রকৃতির রহস্য সম্বন্ধে ছিল একেবারেই অজ্ঞ। তাই সেসব রহস্যের সমাধান কল্পেই দেব-দেবী এবং শেষ পর্যন্ত ঈশ্বর কল্পনার আশ্রয় নিতে হয়েছে। এরপর থেকে মানুষ যতই জ্ঞান বুদ্ধিতে উন্নত হয়েছে, ততই হয়েছে বিজ্ঞান নির্ভর এবং দূর হয়েছে ইশ্বর চিন্তা। তারই ফলশ্রুতিতে বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আশির্বাদে ধর্ম ও ঈশ্বরের প্রোডাকশন চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। ধর্ম ও ঈশ্বর কল্পনা যে মানুষের অজ্ঞতারই ফসল, এটাও তার একটা জলজ্যান্ত উদাহরন।
৫. বিজ্ঞান ও ঈশ্বরঃ
বিজ্ঞান হল কোন বিষয় বা বস্তু সম্পর্কিত সুশৃঙ্খলিত ও বিশেষ জ্ঞান। প্রকৃতির রহস্য উদঘাটনের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করাই বিজ্ঞানের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয় এই যে, এই বিজ্ঞানকেই ব্যবহার করে কিছু ক্ষমতালোভী গোষ্ঠী বা জাতি তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থে ব্যবহার করে মানুষের জীবনকেই দুর্বিষহ করে তুলেছে। যার জলজ্যান্ত প্রমান হিরোশিমা নাগাসাকি এবং বর্তমানের পরিবেশ বিপর্যয়। তবে কি বিজ্ঞান খারাপ?
না, বিজ্ঞান আসলে ভালোও নয়, মন্দও নয়। বিজ্ঞান বিজ্ঞানই। ইহার ভালো মন্দ নির্ভর করে মানুষের ব্যবহারের উপর। বিজ্ঞান ছুড়ি আবিষ্কার করলো ডাক্তারের অপারেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে অসুস্থ রোগীকে বাঁচানোর জন্য। এখন এই ছুড়ি আপনি ব্যবহার করে যদি মানুষ খুন করা শুরু করেন, তবে তার দায়ভার কখনো বিজ্ঞানের উপর এসে বর্তায় না।
পূর্বেই আমরা জেনেছি যে, পৃথিবীতে ভগবানেশ্বরাল্লাহদের আবির্ভাব ঘটেছে মাত্র ছয় থেকে সাত সহস্র বছর পূর্বে। যদি মানুষই না থাকে, তবে ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব মানুষের নিকট থাকে কিভাবে? আর সেই মানুষের আবির্ভাবের সূত্রানুসারেই এই পৃথিবীতে মানুষের আগমন মাত্র দশ হাজার বছরের বেশি পূর্বে নয় (ধর্মানুযায়ী)। কিন্তু বিজ্ঞানের আবির্ভাব যে ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে, এটা বলা একেবারেই সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, কিছু সহজ সাধ্য যুক্তি ও সাধারন জ্ঞান প্রয়োগে আমরা এটা অন্তত নিশ্চিত করেই বলতে পারি যে, ঈশ্বরের প্রথম মানব-মানবী প্রেরনের পূর্বেও যারা লক্ষ বছর যাবত বনে জঙ্গলে বসত করেছে, বিজ্ঞানের আবির্ভাব তাদেরই হাত ধরে। কারন, তাদেরকেই প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য আবিষ্কার করতে হয়েছে নানা ধরনের ক্রিয়া কৌশল এবং যন্ত্রপাতি। পশু স্বীকার করতে তৈরি করতে হয়েছে বর্শা, বল্লম, ফলা ইত্যাদি, তৈরি করতে হয়েছে বিভিন্ন রকম ফাঁদ, যার ধারাবাহিকতায় একটা সময় তৈরি হয় তীর-ধনুক। এগুলোই তো বিশেষ জ্ঞান, বিশেষ কৌশল, মূলত বিজ্ঞানের যাত্রা ঠিক এখান থেকেই শুরু হয়েছে। কাজেই, আমরা দাবী করতে পারি যে, পৃথিবীতে মানুষ আবির্ভাবের পর হতেই মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই জন্ম দিয়েছে বিশেষ বিশেষ জ্ঞানের, যেখান থেকেই বিজ্ঞানের পথ যাত্রা শুরু। অপরদিকে ভগবানেশ্বরাল্লাহ যেহেতু পৃথিবীতে মানুষের আগমন ঘটিয়েছে মাত্র দশ হাজার বছর পূর্বে, সেহেতু আমরা বলতেই পারি যে (ধর্মের আঙ্গিকে), পৃথিবীতে ভগবানেশ্বরাল্লাহর মানুষ পাঠানোর পূর্ব থেকেই বিজ্ঞানের আবির্ভাব হয়েছিল।
আধুনিক যুগের ধার্মিকগন বিজ্ঞানের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব প্রমানে উঠেপরে লেগে গেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এসব ধার্মিক পাবলিকদের যদি বিজ্ঞান ও ঈশ্বর বিশ্বাসের নূন্যতম জ্ঞানও থাকতো, তবে ধর্ম ও ঈশ্বরের নামে এরকম তামাশার জন্মই দিতে পারতো না। বিজ্ঞান চলে যুক্তি ও প্রমানের উপর ভর দিয়ে। অপরদিকে ঈশ্বর না যৌক্তিক বিষয়, না প্রমানের। ইহা নেহাতই এক অন্ধ বিশ্বাসের ফসল, যার আগমন ঘটেছে প্রাচীন কালের অসহায়ত্বকে কেন্দ্র করে। আপনি বিশ্বাস করলেই আপনার মগজে ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব আছে, না করলে নাই। ঈশ্বর কেবলই মানুষের অন্ধ বিশ্বাস ও অজ্ঞতায় বসত করে, বাস্তব জগতে নয়। বিজ্ঞানের কাজ ইন্দ্রিয়লব্ধ বিষয় বা বস্তু গবেষনা করা, কোন অতিন্দ্রিয় স্বত্ত্বা বা আজগুবী বিষয় যার থাকা বা না থাকার কোন ভিত্তি নেই, এমন বিষয় বা বস্তুর গবেষনা করা নয়, এজন্য বিজ্ঞানকে বস্তু বিজ্ঞানও বলা হয়। যদি এমন আজগুবী বিষয় নিয়ে গবেষনা করার কাজ বিজ্ঞানের হতো, তবে ঘোড়ার ডিম, ভূত, পেতনী, ট্যাঁস গরু, রাম গরুরের ছানা ইত্যাদি বিষয়েও গবেষনায় নামতে হতো। বিজ্ঞান তাহলে আর বিজ্ঞান থাকতো না, হয়ে যেত ধর্ম আর ধর্মেশ্বরের মতই বিনুদুনের উৎস। বিজ্ঞানে কোন বিষয়ের গবেষনা করতে হলে, নূন্যতম কিছু শর্ত থাকতে হয়। যেমন, যে বিষয় নিয়ে গবেষনা করবে, অন্তত তার বাস্তব অস্তিত্ত্ব থাকতে হবে, নয়তো তার প্রভাব থাকতে হবে। কেউ একজন ঘোড়ার ডিমের দাবী করলো, আর বিজ্ঞান তার গবেষনায় ঝাঁপিয়ে পরলো, এরকমটা ধর্মীয় বিজ্ঞানে গবেষনার কাজ হতে পারে, আধুনিক বিজ্ঞানের নয়। তারপর তার অস্তিত্ত্বের প্রমান দিতে না পারলে কিংবা তার কোন প্রভাবের প্রমান দিতে না পারলেই তার অস্তিত্ত্ব রয়েছে বলে স্বীকৃতি দেয়া, যেমন ভগবানেশ্বরাল্লাহ, জিন, পরী, ভূত, পেতনী, ফেরেসতা ইত্যাদি। কাজেই ঈশ্বরে বিশ্বাস ও বিজ্ঞান সম্পূর্নভাবে একে অন্যের বিপরীত। অথচ আধুনিক ধার্মিকগন এবং কিছু জ্ঞান পাপী পাবলিক সেই বিজ্ঞান দিয়েই ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব প্রমানের চেষ্টা করছে এবং সহস্র বছরের পুরোনো ধর্মগ্রন্থ হতে বিজ্ঞানের নামে তামাশা খুঁজে বের করে চলেছে। প্রমানের চেষ্টা করছে কোরান, বেদ, বাইবেল একেকটা গ্রন্থ বিজ্ঞানের একেকটা বিশাল ডিব্বা, যা সহস্র বছর পূর্বেই বলা ছিল। শুধু কি তাই, এই নির্বোধ গুলো নির্লজ্জের মত এটাও বলতে লজ্জাবোধ করে না যে, ধর্মগ্রন্থ থেকেই নাকি বিজ্ঞান তথ্য চুরি করে বিজ্ঞানের নামে চালায়। এরা ধর্মগ্রন্থ চিপে বিজ্ঞান বের করছে, যাতে আগামী প্রজন্মকে পুনরায় ধর্মের চাদরে টেনে আনা যায় এবং যুগ যুগ ধরে এ ব্যবসাটা যেন অব্যাহত থাকে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, মানুষ বিজ্ঞানের আশির্বাদে নাস্তিক হচ্ছে, নাকি বৈজ্ঞানিক ধর্মগ্রন্থের আশির্বাদে আস্তিক হচ্ছে, সে ব্যাপারে কিন্তু কোন ধর্মের কোন ঈশ্বরেরই কোন প্রকার মাথা ব্যথা নেই। যত মাথা ব্যথা দেখতে পাবেন, শুধুমাত্র ধর্ম ব্যবসায়ীদের। ঈশ্বর যদি চাইতেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষ ধার্মিক হোক, তবে দিন দিন ধর্মহীন তথা নাস্তিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতো না। এজন্য ঈশ্বর কিন্তু কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেন নি, বরং ঈশ্বর পুত্রেরা যুগে যুগে যুদ্ধ বিগ্রহ বাধিয়ে, হাতে তুলে নিয়েছে তলোয়ার, যারই ধারাবাহিকতায় আজ চলছে চাপাতির ব্যবহার। বর্তমান যুগে নাস্তিকদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে, ফলে কোন ভগবানেশ্বরাল্লাহ কিন্তু নবী-রাসূল বা দেব-দেবতা কিংবা ঈশ্বর পুত্র, ঈশ্বর নাতি-নাতনী প্রেরন করছেন না কিংবা ঈশ্বর নিজেও আবির্ভূত হচ্ছেন না। আসল কথা হল, ভগবানেশ্বরাল্লাহ যদি থেকেও থাকেন, তবে কোটি কোটি ইউনিভার্স এর মধ্যে, কোটি কোটি গ্রহের মধ্যে অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পৃথিবী নামক গ্রহে বসবাসকারী সামান্য মানুষ কি করছে না করছে তা রাত দিন পর্যবেক্ষন করার প্রয়োজন কি রয়েছে? একটু কমন সেন্স প্রয়োগ করুন তো। এতে কি ভগবানেশ্বাল্লাহর কোন লাভ ক্ষতি আছে? পৃথিবীর সব মানুষ আস্তিক হলেই তার লাভ কি, আর সব মানুষ নাস্তিক হলেই বা তার ক্ষতি কি? ঈশ্বর কি এরকম লাভ ক্ষতির হিসাব করেন? মোটেও না। কোন মহান ও মহৎ ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব যদি থেকেও থাকে, তবে তাঁর মন-মানসিকতা এরকম ছোট লোকের মত হতেই পারে না। এসব হিসাব করে ঈশ্বরের চ্যালারা, কেননা অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খেয়ে ভূড়ি বাড়ানোর ব্যবসাটা যে বন্ধ হয়ে যাবে। ঠিক একারনেই এরা যে কোন মূল্যে কাল্পনিক ঈশ্বরের ভিত্তিতে যে কোন মূল্যে ধর্ম ও ধর্ম গ্রন্থকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিজ্ঞানের আশ্রয় নিয়ে ধর্মগ্রন্থ হতে অপবিজ্ঞান প্রচার করতে পর্যন্ত পিছু পা হয় না, আর সমর্থন করার জন্য পরকাল লোভী পাবলিকদের তো অভাব নেই।
ঈশ্বর কি এবং তার অস্তিত্ত্ব আছে কি নাই, এটা গবেষনা করার কাজ বিজ্ঞানের নয়, বড়জোর ঈশ্বর সম্পর্কিত বিষয়কে দর্শনের আওতায় নেয়া যেতে পারে। এরকম কাল্পনিক বিষয় যদি বিজ্ঞানের আওতায় আনা হত, তবে ঘোড়ার ডিম, পঙ্খীরাজ ঘোড়া, ট্যাঁশ গরু, রাম গরুরের ছানা ইত্যাদি বিষয়কেও গবেষনায় আনা হত। কেউ যদি এমন দাবী করে যে, সমগ্র মহাবিশ্ব একটা বিশাল ঘোড়ার ডিমের মধ্যে সম্প্রসারিত হচ্ছে, আর সেই ডিমের উপর বসে কোন এক ঈশ্বর মহাবিশ্ব পরিচালনা করছেন, এরকম আজগুবী দাবীর পেছনে বিজ্ঞানের ব্যয় করার মত সময় নাই। বরং দাবীদারকে তার দাবীর স্বপক্ষে যুক্তি ও প্রমান উপস্থাপন করতে বলা যেতে পারে। কেননা, দাবীদার এরই উচিত তার দাবীর স্বপক্ষে যুক্তি প্রমান হাজির করা। অনুরুপ ভগবানেশ্বরাল্লাহর অস্তিত্ত্ব আছে কি নাই, থাকলে এতোদিনও জীবিত রয়েছে কিনা, এসব দাবীর স্বপক্ষে দাবীদারকেই যুক্তি ও প্রমান হাজির করতে হবে। ভগবানেশ্বরাল্লাহ নীরাকার, তার জন্ম মৃত্যু নাই, সৃষ্টি ধ্বংশ নাই, সে অনন্ত অসীম এরকম অযৌক্তিক ত্যানাবাজিতে ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব প্রমানিত হয় না, উল্টা আরো প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আর সেই সব প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর প্রদানে ব্যর্থ হয়ে যদি হাতে চাপাতি তুলে নেন, তবে আপনার বিশ্বাসী ঈশ্বরের অস্তিত্ত্বটা যে কতটা সত্য, তা প্রমানিত হয়ে যায়। কোরান দাবী করেছে মুহাম্মদ সত্য, আর মুহাম্মদ দাবী করেছে কোরান সত্য, এরকম তামাশা মার্কা চাক্রিক যুক্তির পেছনে সময় ব্যয় করার মত সময় বিজ্ঞানের হাতে নেই। অনুরুপ কৃষ্ণ দাবী করেছে গীতা সত্য, আবার গীতা দাবী করেছে কৃষ্ণ সত্য, কিংবা বাইবেল দাবী করেছে যীশু সত্য, অপরদিকে যীশুর দাবী বাইবেল সত্য, এগুলো সবই তামাশা মার্কা চাক্রিক যুক্তি, যার দ্বারা অন্ধ বিশ্বাসীদের মানুষ থেকে ধার্মিকে পরিনত করা হচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়, ধর্মের অযুহাতে ঈশ্বরের ইজ্জত বাঁচাতে ঈশ্বর পুত্ররা বরাবরই ঈশ্বরের টুঁটি চিপে ধরেছে ইতিহাস তার জ্বলন্ত সাক্ষী। সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে, নাকি পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিন করে, শুধুমাত্র এই একটি তথ্যের ভিত্তিতেই কতজন বিজ্ঞানীকে অকালে প্রান দিতে হয়েছে, কতজনকে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং কতজনকে দেশ ত্যাগী করা হয়েছে, তা নিশ্চয় আপনাদের অজানা নয়। বাইবেল দাবী করে সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে, আর বিজ্ঞানীদের দাবী ছিল সূর্য নয়, পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিন করে। বাইবেলের এই বিজ্ঞান বিরোধী বক্তব্যের জন্যই তৎকালীন সময়ের ধর্ম যাজকদের বিচার নামক প্রহসনের মুখোমুখী হতে হয়েছিল বিজ্ঞানীদের। তবুও কিন্তু ঈশ্বর পুত্রেরা সূর্যকে পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিন করাতে পারে নি, পৃথিবী ঠিকই তার আপন গতিতে প্রদক্ষিন করে চলেছে সূর্যকে। ঈশ্বর কিন্তু ঠিকই লজ্জা পেয়েছে তার বাইবেলীয় বিজ্ঞানের জন্য, তাই আর তার চ্যালারা এ বিষয়ে মাথা গরম করে না।
তারও কয়েক সহস্র বছর পূর্বে কৃষ্ণের ব্যাপারটা একটু বিবেচনা করুন। তিনি কিভাবে ধর্মীয় যুক্তি উপস্থাপন করে অর্জুনকে যুদ্ধের জন্য তেল মারছে, একবার গীতা পাঠ করুন। শোনা যায়, কৃষ্ণই নাকি স্বয়ং ভগবান যিনি মনুষ্য রুপ ধারন করে মর্তে আগমন করেছেন। তিনি মর্তে কি করেছেন? কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান হোক কিংবা তার অবতার হোক, তার আগমনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তিনি তা না করে উল্টা অর্জুনকেই তেল মারছে যুদ্ধ করে রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠার জন্য, অন্যদিকে প্রমান করেছে কৃষ্ণ নারী লোভী এক অসভ্য।
সবশেষে ইসলামের ছায়াতলে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন। এরা তো আল্লাহ ও নবীর ইজ্জত রক্ষার্থে এই আধুনিক সভ্য সমাজেও একদিকে যেমন চাপাতি ব্যবহার করছে, অন্যদিকে বুকে বোমা বেঁধে ইহুদী নাসারাদের জাহান্নামের চৌরাস্তায় পাঠিয়ে নিজে পৌঁছে যাচ্ছে জান্নাতের ৭২ জন হুর পরীর কোলে। লজ্জার বিষয় হলেও সত্য যে, আজও ইসলামের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোকে কথা বলার অপরাধে কল্লা উড়িয়ে দেয়া হয় সুযোগ পেলেই। আজ পর্যন্ত কি শুনেছেন, ইসলামের বিপক্ষে কথা বলার দরুন আল্লাহ কাউকে শাস্তি দিয়েছে কিংবা হত্যা করেছে? অবশ্যই না, অথচ আল্লাহর চ্যালাদের গায়ে হেব্বি এলার্জি, নাড়ায়ে দে তাকবীর হুংকার দিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে চাপাতি হাতে। একটা সময় যে কাজ খ্রিষ্টীয় যাজকগন করতো, বর্তমানে সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে শান্তির ধর্ম ইসলাম। ইসলাম ধর্ম ও কোরান যা বলে, তার উল্টা কথা বলে অন্যান্য মুসলিমদের মনে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করলেই আপনার কল্লা উড়িয়ে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হবে। ঠিক এভাবেই লোভ, ভয় আর হুমকীর মাধ্যমে সমালোচকদের চুপ করিয়ে ঈশ্বরকে বাঁচানোর একটা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কার্যকলাপে মনে হয়, পৃথিবীতে মানুষ থাক বা নাক, ঈশ্বর আর তার ধর্ম বেঁচে থাকলেই চলবে। ঠিক এজন্যই হয়তো বর্তমান ভারতে গরু আম্মা হত্যার অপরাধে তাদের গো আব্বা রাগান্বিত না হলেও, গো পুত্ররা কিন্তু ঠিকই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে এবং গো আম্মা হত্যার অপরাধে অপরাধীকে পিটিয়ে মারে। যেন মানুষের জীবনের চাইতে গরুর মূল্য অনেক বেশি। অনুরুপ মুসলিম দেশগুলোতে প্রতি বছর ঈদ নামক অনুষ্ঠানের অযুহাতে একদিনে লক্ষ লক্ষ গরু ছাগল হত্যা করে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়া হয়। আল্লাহও যেন এদের মতই রক্ত পিপাসু এক হায়েনা। কালী পূজায় পাঁঠা বলীর আয়োজন দেখলে মনে হয়, এদের দেব-দেবীরাও যেন সমরুপ ক্যারেক্টারের। আর এইসব রক্ত পিপাসু ঈশ্বরদের অস্তিত্ব প্রমানে বিজ্ঞানের নানাবিধ সূত্রকে কাজে লাগিয়ে ধর্মগ্রন্থ গুলোকে বৈজ্ঞানিক প্রমানে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। “এই তো এইখানে ভগবানেশ্বরাল্লাহ বিজ্ঞানের এই থিওরী রুপক অর্থে দিয়ে গেছে, যা আধুনিক বিজ্ঞান মাত্র প্রমান করলো।” ঠিক এরকম তামাশা মূলক বিনুদুন দেখতে পাবেন সকল ধর্মের ধার্মিকদের মুখে। অথচ, কোন ধর্ম গ্রন্থেই সরাসরি কোন বিজ্ঞানের থিওরী দেখতে পাবেন না। এটা দ্বারা ওটা বুঝানো হয়েছে, ওটা দ্বারা সেটা বুঝানো হয়েছে, এরকম তামাশা মুলক বক্তব্য থেকেই এরা বিজ্ঞান চিপে চিপে বের করে ধর্ম গ্রন্থগুলোকে বিনুদুনের গ্রন্থ বানিয়ে তুলেছে দিনে দিনে। আর এ তামাশা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।
গীতা, বেদ ও বাইবেল এসব গ্রন্থের তো সংশোধন হতে হতে নতুন করে সংশোধনের আর জায়গাই অবশিষ্ট নেই। আর সর্বশেষ ডাউনলোড হওয়া গ্রন্থ কোরানে তো এখন নিত্য নতুন শব্দার্থের আমদানী করতে হচ্ছে বিজ্ঞানের সহিত মিল করনে। তবুও ক্ষেত্র বিশেষে সামলিয়ে উঠতে না পেরে বলছে, এ বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহই ভালো জানে, নয়তো বিজ্ঞান এখনো এ বিষয় আবিষ্কার করতে পারে নি, নয়তো দাবী করবে বিজ্ঞান কোনদিনই উক্ত বিষয় জানতে পারবে না। মানে ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের আরো অগ্র গতিতে ঐ অজানা বিষয়ের মধ্যে বিজ্ঞানের নতুন কোন আবিষ্কার মিল করনের ধান্দা। যাতে আগামী প্রজন্মের নিকট কোরানকে বিজ্ঞানময় বুঝানো যায়। এরকম মিল করন হয়তো চলতেই থাকবে আরো কয়েক শতাব্দী।
৬. ধর্মের ঈশ্বর কেন মানুষ নির্ভর?
আপনি কি কখনো দেখেছেন কিংবা শুনেছেন যে, কোন ধর্মের ঈশ্বর নিজেই পৃথিবীতে আগমন করেছেন তার অস্তিত্ত্বের সত্যতা প্রমানে? নিশ্চয় শোনেন নি, অথচ তিনি নিজে আড়ালে থেকে তাঁর মতামত, আদেশ-উপদেশ ও ইচ্ছা অনিচ্ছা প্রকাশে নারী ও পুরুষ প্রেরন করেছেন যুগে যুগে। যাদের বলা হয় নবী-রাসূল কিংবা দেব-দেবী তথা অবতার কিংবা ঈশ্বর পুত্র। প্রশ্ন তো আসতেই পারে, তিনি নিজে কেন তার অস্তিত্ত্ব প্রমানে আমাদের সামনে আসতে পারেন না?
সবচেয়ে আদি ধর্ম সনাতান ধর্মের অনেকেই তবু দাবী করেন যে, স্বয়ং ভগবানই মনুষ্য রুপ ধারন করে জন্ম নেন এই পৃথিবীর বুকে এবং পরিচিত হন দেব-দেবী রুপে। যেমন কৃষ্ণকেই অনেকে স্বয়ং ভগবান হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। অথচ কৃষ্ণের যে ক্যারেক্টার, সেই ব্যক্তিই যদি ভগবান হয়, তবে বলতে আপত্তি থাকে না যে, সনাতন ধর্মই আসলে ভুয়া। এরকম দাবী নেহাতই ঘোড়ার ডিমের দাবীর ন্যায় সস্তার ভন্ডামী ব্যতিত আর কিছুই নয়। কেননা, আর দশ জন সাধারন মানুষের জীবন যেভাবে কাটে, এদের জীবনও একই রুপ। কোন দেব-দেবী কি মায়ের গর্ভ ছাড়াই জন্ম বা সৃষ্টি হয়েছে, কিংবা জন্মের পর হতেই কথাবার্তা ও চলাফেরা করতে পেরেছে, কিংবা শিশুকালে অনাহারে থেকেছে দিনের পর দিন? বাস্তবে কিন্তু এরকম কিছুই হয় না। সাধারন মানুষ আর এদের মধ্যে পার্থক্য হল, সাধারন মানুষ দেব-দেবীর পূজা করেই তুষ্ট, আর এসব দেব-দেবীগন এদের নিকট হতে পূজা নিয়েই তুষ্ট। প্রতিটি যুগেই এমন দু-এক জন করে মানুষের জন্ম হয়, যারা আর দশজন মানুষের চাইতে অনেকটাই ব্যতিক্রম এবং বেশি জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন। এরা এই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজেকে দেব-দেবী হিসাবে দাবী করে অসাধারন ব্যক্তিত্ত্বে উন্নীত হয়ে যায়। কেননা সহজ সরল মানুষ গুলো এসব ব্যক্তির বুদ্ধি আর চালাকীর নিকট মস্তক নত করতে বাধ্য হয়। তখন এদেরই বানী পরবর্তীতে পরিনত হয়ে যায় ঈশ্বরের বানী হিসাবে।
সনাতন ধর্মে স্বয়ং ভগবানকেই মনুষ্য দেহ ধারন করে পৃথিবীতে আগমনের কথা শোনা যায়। যদি এমনটাই হয়, তবে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়। ভগবানকে যদি পৃথিবীতে আসতেই হয়, তবে মনুষ্য দেহ ধারন করে আসতে হবে কেন? তার নিজের স্বরুপ কি খুবই কুৎসিত, নাকি দানবীয় আকৃতি যা দেখলে ভয় পেতে পাবে মানুষ?
ভগবান শ্রী কৃষ্ণের কথাই বিবেচনা করুন। গীতায় সুন্দর ভাবে অর্জুনের ব্রেন ওয়াশের মাধ্যমে যুদ্ধ করার জন্য তেল মারছে। কেন রে ভাই, ভগবানকে কেন যুদ্ধের জন্য তেল মারতে হবে? উনি চাইলে কি যুদ্ধ ছাড়াই সকল সমস্যার সমাধান হতে পারে না? নাকি ভগবান শ্রী কৃষ্ণের অতিলৌকিক পাওয়ার হারিয়ে গিয়েছিল?
ভগবানের কথা ছেড়ে এবার ঈশ্বরের কথায় আসুন। পৃথিবীর সমগ্র মানুষের পাপ মোচনের লক্ষ্যে মাতা মেরীর গর্ভে যে ঈশ্বর তার পুত্রকে প্রেরন করলেন, সেও একজন মানুষই ছিলেন। তার সব কিছুই একজন সাধারন মানুষের মতই ছিল। ব্যতিক্রম কেবল এটুকুই যে, তিনি নিজেকে ঈশ্বর পুত্র দাবী করে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার করেছেন, যেখানে অন্যান্য দেব-দেবী কিংবা নবী-রাসূল নিজেকে কখনোই ঈশ্বর পুত্র দাবী করেন নি। কিন্তু সেই ঈশ্বর পুত্রকে যেরকম নির্মম ভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা পৃথিবীর কোন পিতার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হবে না, অথচ ঈশ্বরের নিকট যেন এটা কোন ব্যাপারই না। এথেকেও প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, যীশু কি ঈশ্বরেরর বৈধ পুত্র ছিল? নয়তো পরম দয়াময় হয়েও তিনি কিভাবে পরম নিষ্ঠুরতার ন্যায় নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারেন?
এরপর আসুন ধর্মের সর্বশেষ ভার্সন ইসলামে। এ ধর্মানুযায়ী মানুষকে সুপথ প্রদর্শনের লক্ষ্যে এক লাখ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূল প্রেরন করেছেন স্বয়ং আল্লাহ, যাদের সর্বশেষ কাতারে রয়েছেন নবী মুহাম্মদ। অথচ বাস্তবতার নিরীখে তা সরাসরি মিথ্যাচার। কারন, নবী মুহাম্মদের পূর্বে পৃথিবীতে ইসলাম নামক কোন ধর্মই ছিল না, তদ্রুপ আল্লাহ নামেও কোন ঈশ্বর ছিলেন না। ইতিহাস সেসব বিষয়ে আমাদের পূর্নাঙ্গ জ্ঞান প্রদান করে। কাজেই নবী মুহাম্মদের পূূর্বে এতো বিশাল সংখ্যার নবী আগমনের যে বক্তব্য, তা সরাসরি যুক্তিহীন ভাবেই মিথ্যাচার।
পৃথিবীতে এতো নবীর আমদানী ঘটিয়েছেন যে আল্লাহ, তিনি নিজে একটিবারের জন্যও আরশ থেকে পৃথিবীতে ল্যান্ড করতে পারলেন না। এখানেও ভগবান ও ঈশ্বরের ন্যায় আল্লাহও সম্পূর্ন মনুষ্য নির্ভর পরগাছার ন্যায়। যিনি নিজে কোন কিছু করার ক্ষমতাই রাখেন না, তিনি তার উদ্দেশ্য পুরন করিয়ে নেন মানুষ ও ফেরেসতার দ্বারা।
এখানে একজন রাখাল বালক মেষ চড়াতে চড়াতে অভাবের তাড়নায় হয়ে যায় খাদিজার চাকর। শেষ বয়সে খাদিজা তার অর্ধেক বয়সী মুহাম্মদকে বিয়ে করে বানিয়ে নিল ঘর জামাই। মুহাম্মদ কিন্তু তখনো নবী হয়ে উঠে নি। বিয়ের কিছুদিন পর হতেই হেরা গুরা নামক পাহারে সময় কাটাতে লাগলেন। তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন ধর্মগুরু এবং অনেকেই একাকী সময় কাটানোর জন্য বিভিন্ন পাহারের গুহাকেই পছন্দ করতেন। মুহাম্মদই যে প্রথম পাহারের গুহায় সময় কাটাতেন ব্যাপারটি মোটেই এরকম নয়। ধনী খ্রিষ্টান দুই বার বিধবা হওয়া মহিলা খাদিজাকে বিয়ে করে মুহাম্মদ যে মনের দিক থেকে কতটা সুখে রয়েছিল, তার অনুমান করা যায় নতুন বউকে রেখে রাত দিন হেরা পর্বতের গুহায় সময় কাটানো থেকে। যুবক ছেলে বিয়ের পরে বউয়ের আকর্ষনে দীর্ঘ দিন বাড়ি থেকে বেরই হতে চায় না। আর বেচারা মুহাম্মদ বিয়ের কিছুদিন পর হতেই পাহারের গুহায় রাত দিন কাটানো শুরু করেছিল। এখানে অনেকেই দাবী করবে যে, খাদিজা মুহাম্মদের জন্য খাবার নিয়ে যেত। কিন্তু এতে মুহাম্মদের প্রতি খাদিজার প্রেম প্রকাশ পায়, খাদিজার প্রতি মুহাম্মদের প্রেম প্রকাশ পায় না। খাদিজার তো এরকম করতেই হত, কারন এই বয়সে দুই বার বিধবা হওয়া খাদিজা যদি স্বামীকে হারায়, তবে চতুর্থ বার যে বিয়ের জন্য কোন মানুষকে পেত তার গ্যারান্টি ছিল না। অপরদিকে এই বয়সে প্রত্যেক মানুষেরই ভরসা করার মত একজন মানুষের প্রয়োজন হয়, খাদিজা সেটা পেয়েছিল, তাই তা হারাতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক।
ধনী মহিলাকে বিয়ে করার সুবাদে তার আর কোন অভাব অভিযোগ থাকলো না। সংসার পরিচালনার জন্যও কোন কর্ম করতে হল না। তাই হেরা গুহায় সময় কাটাতে কোন বাধা বিপত্তি থাকলো না তার। খাদিজাকে বিয়ে না করে যদি কম বয়সী কোন মেয়েকে বিয়ে করতো, তবে সংসার পরিচালনার জন্য তাকে কোন না কোন পেশা গ্রহন করতেই হত, নয়তো সারা জীবন রাখালই থাকতে হত। তখন সারাদিন কাজ শেষে বাড়িতে ফিরতেই হত, এতে পর্বতের গুহায় আর যাওয়া হত না, মুহাম্মদের নবীও আর হওয়া হত না। যা হোক, মুহাম্মদের চল্লিশ বছর বয়সে ফেরেসতা জীব্রাইল এসে দিনে দিনে আল্লাহর ওহী দিতে থাকলো। শত বাধা-বিপত্তি, লাঞ্চনা-গঞ্জনা, অপমান, যুদ্ধ বিগ্রহ করতে হল মুহাম্মদকেই। অপরদিকে আল্লাহ বেচারা তার আরশ মোবারকে বসে বসে হুকুম প্রদান করেই যাচ্ছে, আর সে হুকুম পৌঁছে দিচ্ছে জীব্রাইল। আল্লাহ নিজে এই পৃথিবীতে এসে মুহাম্মদের সহিত সরাসরি সাক্ষাত তো দূর, কথা পর্যন্ত বলেন নি। এখানেও দেখা যায়, ইসলামের আল্লাহও পুরোপুরি মনুষ্য নির্ভর পরগাছা গোছের। ভগবান বলুন, ঈশ্বর বলুন, আর আল্লাহই বলুন, সবাই মূলত একই গোডাউনের আলাদা আলাদা প্যাকেটে মোড়ানো প্রোডাক্ট।
ঈশ্বর কেন মনুষ্য নির্ভর, এই প্রশ্নটাকেই যদি উল্টা করে করা হয়, তবে আসল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হয়। প্রশ্ন করুন, ঈশ্বর কেন মনুষ্য নির্ভর হবে না? যা নেই তা প্রতিষ্ঠিত করে ব্যবসা চলাতে গেলে, সেই না থাকা বিষয়টিকে তো দাবী কারীর উপরেই নির্ভরশীল হতে হবে। এর বিকল্প আর তো কোন রাস্তাই নাই। যদি ঈশ্বর বলে কেউ থাকতো, তবে মানুষকে সুপথ প্রদর্শনের জন্য না হোক, অন্তত যারা ঈশ্বরের বিধি বিধান পালন করে আসছে বছরের পর বছর ধরে, সেই সব ধার্মিকদের খুশি করার জন্য হলেও ঈশ্বরের উচিত ছিল ঐ সব ধার্মিকদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও দর্শন দেয়া। যাতে মৃত্যুটা অন্তত তৃপ্তি সহকারে হয়। নয়তো ঈশ্বরকে অকৃতজ্ঞ বলাটা একটুও অযৌক্তিক হবে না।
৭. প্রেরিত পুরুষ কেন নারী প্রেমী?
আমি শুনেছি, যুগে যুগে পথভ্রষ্ট মানুষদের সুপথ প্রদর্শনের লক্ষ্যে ঈশ্বর যুগে যুগে পুরুষ প্রেরন করেছেন, যার মাধ্যমে ঈশ্বর তার আদেশ, উপদেশ ও নিষেধ প্রকাশ করেছেন। দেখিয়েছেন পরকালের সীমাহীন লোভ ও বিভৎস ভয়। বর্তমান পৃথিবীতে প্রথম স্থানে রয়েছে যেসব ধর্ম, তন্মধ্যে সনাতন, খ্রিষ্টান ও ইসলাম উল্লেখযোগ্য। উক্ত ধর্মত্রয়ের মাঝে একমাত্র যীশুকেই দেখা যায় তার ব্যক্তিগত জীবদ্দশায় কোন নারী প্রীতি নাই। কিন্তু অন্যান্য দুই ধর্মের প্রেরিত পুরুষদের জীবদ্দশায় নারীর যে ভূমিকায় দেখা যায়, তা ইতিহাসকেও লজ্জায় ফেলে দেয়।
ধর্মের আবির্ভাবের সময়কাল হতে উক্ত তিন ধর্মের মধ্যে সনাতন ধর্মকেই সবচেয়ে প্রাচীন হিসাবে বিবেচনা করা যায়। এ ধর্মের একেক জন দেব-দেবতার যৌনকর্মের ব্যাখ্যা শুনলে আপনার মনে হবে, আপনি যেন কোন সেক্সুয়াল চটি বই পড়ছেন। সনাতন ধর্মের মূল উদ্দেশ্যই যেন যৌনতা। যেখানে দেব-দেবীর মধ্যে কামের দেবতা পর্যন্ত রয়েছে এবং পুরুষের লিঙ্গের পর্যন্ত পূজা করা হয়। আর রমরমা যৌনতার কাহিনী স্বরুপ বিষ্ণু নায়ারন এবং তুলসী প্রেমের কাহিনী তুলে ধরাই যায়, যদিও তা কয়েক রকম ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়, তবু মূল ঘটনা একই। তুলসী ছিলেন শ্রী কৃষ্ণের প্রেমিকা অপরদিকে রাধিকার বান্ধবী। তার স্বামী ছিল শঙ্খচুর নামক দৈত্যঋষী। বিষ্ণু নারায়ন তুলসীর রুপে মুগ্ধ হয়ে যায় এবং তিনি শঙ্খচুরের রুপ ধারন করে তুলসীর সহিত যৌনকর্মে মিলিত হয়। উক্ত বিষয়টি তুলসীর স্বামী শঙ্খচুর বুঝতে পারলে তুলসী দেবীকে অভিশাপ দেয়, ফলে তুলসী হয়ে যায় তুলসী গাছ। যে তুলসী গাছের পূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীগন করে থাকে।
উক্ত ঘটনা আরো কয়েক রকম ভাবেও বর্ণনা করা হয়েছে। তবে যত রকম ভাবেই বর্ণনা করা হোক না কেন, মূল ঘটনার কিন্তু কোনরুপ বিকৃত হয় না। যেমন, ব্রাক্ষবৈবর্ত পুরান ভাষ্যমতে, শঙ্খচুর পত্নী তুলসীর এমন যৌনাচারের বিষয় জানার পরে শঙ্খচুরের অভিশাপে তুলসী পরিনত হয় তুলসী গাছে এবং বিষ্ণু পরিনত হয় শালগ্রামম শীলা নামক প্রস্তর খন্ডে, যা পাওয়া যায় হিমালয় পর্বতের দক্ষিনাংশে গঙ্গাকি নদীতে।
তথ্যসূত্রঃ সুধীরচন্দ্র সরকার, পৌরানিক অভিধান, পৃঃ ১৯৯, ৫০৪
অন্যদিকে মহাদেব শীব হলেন যৌন শক্তিতে সর্বশক্তিমান এবং তার স্ত্রী হলেন পার্বতী। একদিন মহাদেব শীব তার স্ত্রীর সহিত যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত ছিলেন। তার যৌনক্রিয়া এতোটাই চরম পর্যায়ে ছিল যে, পার্বতীর অবস্থা মরনাপন্ন হয়ে উঠে। তিনি তখন প্রান রক্ষার জন্য বিষ্ণুর নাম জপ করতে থাকেন এবং প্রান রক্ষার জন্য প্রার্থনা করতে থাকেন। ভগবান বিষ্ণু তখন স্বীয় সুদর্শন চক্র দ্বারা শীবেরর লিঙ্গ উভয়ের মাঝখান থেকে কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে পার্বতীর প্রান রক্ষা করেন।
তথ্যসূত্রঃ সুন্দর পুরান, নাগর খন্ড, পৃঃ ৪৪৪১, শ্লোকঃ ১-১৬
এরপর আসুন শ্রী কৃষ্ণের কথায়, যিনি এতোটাই নারী কামী ছিলেন যে, তার এসব কুকর্মকে সনাতন ধর্মে কৃষ্ণ লীলা নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। একাধারে যার গোপীর সংখ্যা ষোল হাজারেরও অধিক এবং স্ত্রীর সংখ্যা ছিল নয়। (যদিও কৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যার ব্যাপারে মত বিরোধ রয়েছে।) শুধু তাই নয়, মামী পর্যন্ত এ লীলায় বাদ পরে নি।
অপরদিকে দৃষ্টি ফেরান ইসলাম ধর্মের প্রতি। নবী মুহাম্মদকে তো পেয়ারা নবী হিসাবেই আখ্যায়িত করা হয়। এখন এ দীলের নবী, মায়ার নবী যে কোন দিক থেকে দীলের নবী ও মায়ার নবী, সে সম্পর্কেও একটু জানা দরকার। নবীর দীলে এতোটাই পেয়ার ছিল যে, ২৫ বছর বয়সে দুই বার বিধবা হওয়া ৪০ বছর বয়সী খ্রিষ্টান মহিলাকেও যেমন বিয়ের প্রস্তাবে না করতে পারেন নি, তদ্রুপ ৫২ বছর বয়সে ৬ বছরের শিশুকেও পেয়ার করতে কোনরুপ দ্বিধা ও লজ্জাবোধ করেন নি। পেয়ারের এক অনন্য উদাহরন সৃষ্টি করে গেছেন ইতিহাসে, বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহর জন্য। মাঝখানে রয়েছে বিধবা বিবাহ, পালক পুত্রবধু বিবাহ, যুদ্ধ বন্দিনী বিবাহ। এছাড়াও রয়েছে উপহার পাওয়া যৌনদাসী মারিয়া কিবতীয়া, যাকে মুসলিম সমাজ আবার উপপত্নী নাম করনে চালাতে চায়, যেমন কৃষ্ণের লুচ্চামীকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কৃষ্ণ লীলা বলে চালাতে চায়।
★বিবাহের সময় আয়েশার বয়স ছিল ছয় বছর।
★ আয়েশা সেই সময় কাপড়ের তৈরি পুতুল খেলতো।
মুহাম্মদের সমগ্র জীবনে স্ত্রীর সংখ্যা ছিল ১১ জন। একসঙ্গে নয় জন স্ত্রী জীবিত ছিলেন। প্রথম স্ত্রীর জীবদ্দশায় পেয়ারা নবী যখন তরতাজা যুবক, তখন তার স্ত্রী হলেন প্রায় বৃদ্ধা। এসময় তিনি বৃদ্ধা স্ত্রীর সহিত থাকতে পছন্দ করতেন না বলে হেরা গুহার পর্বতে চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত রাত দিন সময় কাটাতেন, নাকি আল্লাহর ওহী পাবার অপেক্ষায় সময় কাটাতেন, তা স্পষ্ট হয় খাদিজা মৃত্যুর পরে। শোনা যায় খাদিজা মুসলিম হয়েছিলেন, কিন্তু তার জীবদ্দশায় তিনি এক ওয়াক্ত নামাজ পরেছেন এরকম কিন্তু শোনা যায় না। এরপরেও মুহাম্মদ দ্বিতীয় বিবাহের চিন্তা করেন নি, নাকি ঘর জামাইয়ের এতো বড় দুঃসাহস হয় না বলেই নীরবতা পালন করেছেন, সেটাও কিন্তু স্পষ্ট হয় স্ত্রী খাদিজা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে। একই সাথে নয়জন বিবি জীবিতাবস্থায় ছিলেন এবং অারো দুই জন যৌনদাসী ছিল, তন্মধ্যে মারিয়া কিবতীয়ার নামটাই বহুল আলোচিত। এই দাসীর গর্ভের জন্ম হয় মুহাম্মদের এক পুত্র সন্তান, নাম ঈব্রাহীম, যদিও জন্মের কিছুদিন পরেই আল্লাহ ঈব্রাহীমকে তার নিকট টেনে নেয়।
★ মুহাম্মদ এক রাতে নয় জন বিবির সাথেই সেক্স করতেন। বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়ুন।
শুধু পেয়ারা নবী একা নয়, মদিনায় পলায়ন তথা হিজরতের পরে যুদ্ধ বন্দিনীদের ধরে এনে সাহাবাদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দিতেন, যাতে সাহাবাগন স্ত্রীর অভাব বোধ করে মুহাম্মদকে ছেড়ে চলে না যায়। মহানবী যে কেবল নিজের চিন্তাই করতেন, এমনটা নয়। তার সাহাবাদের নিকটও ছিলেন অধিক পেয়ারী। তিনি নিজে যেমন একাধিক বিবাহ করেছেন এবং যৌনদাসী পালন করেছেন, তদ্রুপ সাহাবাদেরও একাধিক বিবাহের অনুমতি দানে ভুল করেন নি। এতেও খায়েশ না মিটলে যৌনদাসী রাখারও অনুমতি প্রদান করেছেন। একাকী কয়েক দিনের জন্য দূরে কোথাও কাজের উদ্দেশ্যে গিয়ে যদি নারীর প্রতি পেয়ার জাগে, তবে সেক্ষেত্রেও আদেশ দিয়েছেন মুতা বিবাহের, যদিও তা একটা সময় বাতিল হয়ে যায়।
★ যুদ্ধ বন্দিনী নারীদের সহিত সেক্স করা যায়েজ, তবে স্বামী জীবিত থাকলে সে বিবাহ বাতিল হবে। বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি পড়ুন।
★ পেয়ারা নবী নিজেই যুদ্ধ বন্দিনীদের মাঝে থেকে পছন্দ করে নিতেন। বিস্তারিত জানতেঃ
(I) হাদিসের লিঙ্ক
(ii)
গ্রন্থের নামঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ (2984)
অধ্যায়ঃ ১৪/ কর, খাজনা, অনুদান ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সম্পর্কে
পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পরিচ্ছদঃ ১৫৯. গনীমতের মালে নবী (ﷺ) -এর পসন্দনীয় অংশ।
২৯৮৪. নাসর ইবন আলী (রহঃ) ………… আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ সাফিয়্যা ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পসন্দ করা মালের অংশ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
প্রশ্ন হল, মহান ভগবানেশ্বরাল্লাহ যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন তার ধর্ম প্রচার করার জন্য এবং মানুষকে মানবতা শেখানোর জন্য, তারা কিভাবে এতোটা বিকৃত নারী কামী স্বভাবের হতে পারে? আর ভগবানেশ্বরাল্লাহই বা কোন রুচিতে সেই সব প্রেরিত পুরুষদের বিকৃত যৌনাচারকে সমর্থন করে নীরব থাকে? মানুষকে সুপথ প্রদর্শন ও মানবতা শিক্ষা দানের জন্য কি নারী কামী হওয়াটা অত্যাবশ্যক ছিল? তবে তো প্রত্যেক ধর্মের প্রেরিত পুরুষ বা ধর্ম প্রচারকদেরই নারী কামী হওয়া উচিত ছিল। যীশু কি নারী কামী ছিলেন? গৌতম বুদ্ধ কি নারী কামী ছিলেন? তাদের ধর্ম কি প্রতিষ্ঠা পায় নি? তবে সনাতন ও ইসলাম ধর্মে এতো যৌনলীলা দৃষ্ট হয় কেন? যার চরিত্র বিশ্ব বাসীর জন্য উত্তম হওয়া উচিত ছিল, যিনি বিশ্ব মানবতার জন্য সকল শ্রেনীর মানুষদের মাঝে উদাহরন হওয়া উচিত ছিল, তাদের জীবনটাই যদি এতোটা লীলাময় হয়, তবে তাদের এসব কর্মকান্ড গুলোকে সমর্থন করা পাবলিকদের মন মানসিকতা এবং বিবেচনা বোধ যে কোন লেভেলের, তা বিশ্লেষনের জন্য মনোবিজ্ঞানের নিকট স্পেশাল ভাবে হস্ত প্রসারিত করতে হয় না।
এবার আসুন, এদের নারী হবার সম্ভাব্য কিছু কারন বিবেচনা করি। সনাতন ধর্মে বিভিন্ন দেব-দেবীর যেসব যৌন লীলার বর্ণনা ও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, তা কেবল অতি রঞ্জিতই নয়, চরম হাস্যকরও বটে। সনাতন ধর্ম যত প্রাচীন, সেই সময়ের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে, তৎকালীন সময়ে সেক্স বিষয়ে বর্তমানের মত এতো বিধি নিষেধ ছিল না। দেব-দেবতাদের আগমনের যে সময় অনুমান করা হয়, তৎকালীন সময়ে বিয়ে নামক কোন প্রথারই থাকার কথা নয়। আমার যতদূর ধারনা, দেব-দেবীদের এহেন কর্মকান্ড ও বিকৃত যৌনাচারকে মানুষের নিকট ভালোভাবে উপস্থাপন করতেই প্রাচীন সেসব গ্রন্থে বিয়ে নামক অনুষ্ঠানের আমদানী করেছেন গ্রন্থাকারগন। নয়তো তৎপরবর্তী সময়ে তাদেরকেও সাধারন মানুষ বলে চিহ্নিত করা হত, দেব-দেবী আর হয়ে উঠতেই পারতো না। সেই প্রাচীন কালে সেক্স ছিল একটি সাধারন ব্যাপার, তাই ধর্ম গ্রন্থগুলোতেও সেইসব বিষয় সুন্দর রুপে উপস্থাপিত হয়েছে অবলীলায়। ঠিক একারনেই হয়তো কৃষ্ণের গোপীর সংখ্যা ১৬ হাজার অতিক্রম করে গিয়েছিল।
অপরদিকে পেয়ারা নবী মুহাম্মদের যৌন জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, মাত্র ১৪০০ বছর পূর্বে মানুষ বহুলাংশে সভ্য হয়ে উঠেছিল। সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে সুখে শান্তিতেই জীবন যাপন করতো। নয়তো ২৫ বছর বয়সে পৌত্তলিক পরিবারের এক সুদর্শন যুবক দুই বার বিধবা হওয়া ৪০ বছর বয়সী ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর এক মহিলাকে বিয়ের ব্যাপারটা লোকজন সাধারন দৃষ্টিতে দেখতো না, যেখানে স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বয়স সর্বদায়ই অনেক কম হতো। বিয়ে নামক বিধানকে যে তৎকালীন সময়ের মানুষজন খুব শ্রদ্ধা করতো, সেটা বুঝা যায় যখন ৫২ বছর বয়সে মুহাম্মদেরই ঘনিষ্ট বন্ধুর ছয় বছরের শিশু মেয়েকে বিয়ে করে। তখন মানুষ জন ছিঃ ছিঃ করে উঠলেও আল্লাহর অযুহাতে পরবর্তী সময়ে সেটাকে আর ভিন্ন ভাবে দেখে নি কেউ। এমনকি পালক পুত্র বধুকেও বিবাহের সময় লোকজন ছিঃ ছিঃ করে উঠলেও ঐ আল্লাহর অযুহাতেই মুক্তি মেলে। অার এরকম জঘন্য ঘটনাকে মুসলিম জাতি উত্তম কর্ম হিসাবে যেসব লজিক উপস্থাপন করে, তা শুনে সত্যিই অবাক হতে হয় তাদের বিবেচনা বোধ দেখে। ধারনা করি, যদি মুহাম্মদ তার নিজ মাতাকেও বিবাহ করত কোন কোরানিক আয়াতের সহায়তায়, তবুও এই মুসলিম জাতি সেখানেও নবীর মহৎ কর্ম খুঁজে পেতো এবং যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিত, ওটাই ঠিক আছে।
তৎকালীন সময়ে পশু পালনের ন্যায় দাসী পালনেরও অনুমতি ছিল এবং ইচ্ছা হলেই সে দাসীকে বিছানায় শোয়ানো যেত। নবী মুহাম্মদ সেই প্রচলিত বিধানেও কিন্তু গা ভাঁসাতে দ্বিধা করেন নি, যার প্রভাবে দাসী মারিয়া কিবতীয়া গর্ভবতী হয়ে ঈব্রাহীম নামক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। পেয়ারা নবী তৎকালীন সমাজের অনেক বিধি নিষেধের উপর হস্তক্ষেপ করলেও, দাসীর ব্যাপারে কিন্তু টুঁ শব্দটিও করেন নি। বরং কোরান হাদিসে দাসীর সহিত কিভাবে সেক্স করা যাবে, আজল করা যাবে কিনা এসব ব্যাপারের উল্লেখ ঘটিয়ে দাসীর সহিত মাস্তি করার প্রথাটাকে পাকাপোক্ত করে গেছেন। ঠিক এরই প্রভাবে সৌদি থেকে বাংলাদেশী গৃহকর্মী গর্ভবতী হয়ে কাঁদতে কাঁদতে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়। দাসী প্রথায় হস্তক্ষেপ কেন করেন নি, তা কিন্তু সহজেই অনুমেয়। এ থেকেও কিন্তু অনেক কিছু বিবেচনা করা যায়।
★ সৌদিতে বাংলাদেশী গৃহকর্মীদের অবস্থার কিছু করুন চিত্রঃ
(I)
(ii)
(iii)
দেব-দেবী এবং নবী-রাসূল সমগ্র বিশ্ব বাসীর জন্য উত্তম আদর্শ। আর তাদের আদর্শই যদি এতো লীলাময় উত্তম হয় এবং এসব উত্তম কর্মের লাইসেন্স প্রদান করে যে ভগবানেশ্বরাল্লাহ, সহসাই প্রশ্ন জাগে সেই ভগবানেশ্বরাল্লাহর মানুষিকতার প্রতি। যিনি নিজেও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য অসংখ্য এবং অসাধারন সুন্দরী নারীর লোভ দেখিয়ে নিজেকে নারীর দালালের পরিচয় দিয়েছেন।
কি অদ্ভুত….
ধর্ম, ধর্ম গ্রন্থ, প্রেরিত পুরুষ এবং তাদের ঈশ্বর, সবই যেন যৌন লীলায় লীলাময়। এতোটাই লীলাময় যে, ধর্ম গ্রন্থে নারীদের শষ্যক্ষেত্রের সহিত পর্যন্ত তুলনা করতে আল্লাহ লজ্জাবোধ করেন নি। প্রচলিত ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ জুড়ে যে পরিমান যৌন লীলা লিপিবদ্ধ করা রয়েছে, যদি সেই পরিমান মানবতার কথা লিপিবদ্ধ থাকতো, তাহলে হয়তো আজ আমাদের মত মানুষদের ধর্মের সমালোচনায় কলম ধরতে হতো না। কলমটা সমাজের অন্য কোন অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ধরতে পারতাম। কিন্তু প্রচলিত এসব ধর্ম সমাজে এতোটাই অসঙ্গতির জাল বিস্তার করে রেখেছে যে, সর্বক্ষেত্রে ধর্মটাই সর্ব প্রথমে আসে।
ঈশ্বর থাক বা না থাক সেটা মূল কথা নয়, মূল কথা হল, প্রকৃত ঈশ্বর প্রেমী কোন মানুষ কখনো এরকম নারী প্রেমী হতে পারে না। এরা যুক্তি ও বিবেচনা ছাড়াই সরাসরি ভণ্ড এবং দুশ্চরিত্র। যারা তাদের অপকর্মকে বৈধতা প্রদানের লক্ষ্যে ঈশ্বর নামক একটা অদৃশ্য মাধ্যমকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে চলেছে।
অসাধারণ একটা রচনা,যা পড়লে মনচক্ষু উন্মোচন হয়।