নাস্তিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন
বাংলাদেশে নাস্তিকরা তাদের অধিকার আদায়ে আনুষ্ঠানিক আন্দোলন শুরু করলে তার ৬ দফা দাবি হতে পারে নিম্নরূপ –
১. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্মঃ ইসলাম’ ও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ বাদ দিতে হবে!
’৭২ এর সংবিধানের আলোকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাপন্থী সংবিধান গড়তে হবে। ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ – এই নীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
২. ‘মুসলিম পারিবারিক আইন’, ‘হিন্দু আইন’ সহ সকল ধর্মভিত্তিক আইন বাতিল করতে হবে।
রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান – এই নীতির ভিত্তিতে আমরা একটি অভিন্ন দেওয়ানি বিধান বা ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড (Uniform Civil Code) চাই।
আর রাষ্ট্র যদি বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন বাতিল করতে না পারে; তবে যারা নাস্তিক, আজ্ঞেয়বাদী, সংশয়বাদী বা প্রচলিত ধর্মের বাইরের কেউ হিসেবে পরিচয় দেয় — তাদের জন্য বিশেষভাবে পশ্চিমা ধরনের সিভিল কোড প্রণয়ন করতে হবে; এক্ষেত্রে মানবতাবাদ, যুক্তিবাদ, লিঙ্গসমতা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আইন প্রণয়ন করতে হবে।
বর্তমান ‘স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট’ সংস্কার করে বিভিন্ন ধর্ম ও নাস্তিকতায় বিশ্বাসী মানুষেরা যাতে নিজ ধর্ম ত্যাগ না করেই বিবাহ করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের ক্ষেত্রে উক্ত বিশেষ সিভিল কোড প্রযোজ্য হবে।
এরূপ দম্পতির সন্তানদের নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী ধর্ম বেছে নিয়ে পালন করার অধিকার থাকবে।
৩. রাষ্ট্রীয়ভাবে নাস্তিকদের একটি গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের মৌলিক ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে তাদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানে মানুষকে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে।
এরই অংশ হিসেবে মানুষকে তাদের পিতৃসূত্রে পাওয়া ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ বা নাস্তিকতায় আসার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
যেমন : কোন হিন্দু বা মুসলিম ব্যক্তি তার ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিকতায় আসলে তার পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি সকল ডকুমেন্টে ‘নাস্তিক’ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার ব্যবস্থা প্রণয়ন ও সহজলভ্য করতে হবে।
৪. কোন শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ ধর্ম পালনে অনীহা দেখালে বা ধর্মে বিশ্বাস না করলে, তার উপর তার অভিভাবক কর্তৃক কোন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন, জোরজবরদস্তি, অত্যাচার, নির্যাতন করা যাবে না।
অনুরূপে কোন শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ ধর্মবিশ্বাসে বা ধর্মপালনে উদ্যোগী হলে এক্ষেত্রেও তার প্রতি কোন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন, ধর্ম পালনে বাধাদান, জোরজবরদস্তি করা চলবে না।
এছাড়া, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের উপরও তার ধর্মে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কারণে তার পরিবার বা সমাজ কর্তৃক শারীরিক, মানসিক নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা চলবে না।
এক্ষেত্রে কোন প্রকার সন্তান ত্যাজ্য করার মতো ব্যাপার গ্রহণযোগ্য হবে না।
উপরোক্ত বিষয়াবলি নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন এবং সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৫. ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা’, ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইন’ সহ সকল বাক স্বাধীনতাবিরোধী আইন যা সাধারণত নাস্তিক বা মুক্তচিন্তকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে ব্যবহৃত হয়, অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং নাস্তিকসহ নির্দিষ্ট ধর্মগোষ্ঠীর লোকজনের জন্য বৈষম্যবিরোধী বা Anti-discrimintion আইন প্রণয়ন করলেও করা যেতে পারে।
আমরা ধর্মীয় উস্কানিবিরোধী আইন মেনে নেব —
তবে এর মাধ্যমে শুধু যেসব নাস্তিকেরা ইসলাম ধর্ম নিয়ে তথাকথিত অবমাননামূলক কার্টুৃন, লেখা ইত্যাদি রচনা করে শুধু তাদেরই নয়;
বরং পাশাপাশি যেসব মোল্লা, আলেম বা মাওলানারা নাস্তিকদের নিয়ে কূৎসা রটায় বা হাসি-তামাশা করে; কিংবা ওয়াজ করতে এসে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা ইহুদীদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে হাসিতামাশা করে তাদের বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
তবে শিক্ষামূলক বা মানুষের বিশ্বাস পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে মার্জিত ভাষায় আলোচনা, বিতর্ক অনুষ্ঠান, বই প্রকাশ ইত্যাদির পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৬. সকল মুক্তচিন্তার ব্লগার ও লেখক হত্যার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। তাদের হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে তারা কি লিখেছিলেন বা তাদের ধর্মবিশ্বাস কোন বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না।
প্রয়োজনে ব্লগার হত্যার বিচারে আলাদা ট্রাইবুন্যাল গঠন করতে হবে। ভবিষ্যতেও যেসব ব্লগার, লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের ধর্মে অবিশ্বাসের কারণে জঙ্গীদের হুমকিতে থাকবেন; তাদের পূর্ণ নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, হুমকিতে থাকা ব্লগার বিদেশে যেতে বলা বা ব্যবস্থা করা নিরাপত্তা নিশ্চিতের মধ্যে পড়ে না; দেশের ভেতরেই নিরাপত্তা চাই। তবে, কেউ স্বেচ্ছায় সকল আইন-কানুন মেনে বিদেশে যেতে চাইলে তার পূর্ণ অধিকার দিতে হবে এবং কোন প্রকার বাধা প্রদান চলবে না।
ঘরের কোনায় বসে ইন্টারনেটে বা ব্লগ লিখে আর কতই বা কি করা যেতে পারে।
এখন আমাদের সময় এসেছে মূলধারায় এসে এবং প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে দাবি আদায় করার!!
Credit : Sumit Selim