পর্দা|সমাধান নাকি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত?

Print Friendly, PDF & Email

আজকাল বাংলাদেশের যে কোনো জায়গায় হাটতে গেলে দেখা যায় মেয়েরা প্রায় সবাই বোরকা পড়ে চলাফেরা করছে।বিভিন্ন ধরণের বোরকা, বিভিন্ন ধরণের স্কার্ফ আর হিজাব। তার মানে পর্দায় কোনো আপোস নেই।

  • আসলে পর্দা কি?
  • পর্দা কতটুকু?
  • পর্দা কেন?
  • এতো পর্দার পরও কেনো ধর্ষণ, ইভটিজিং বেড়েই চলেছে?
  • কারা ধর্ষণ করছে?
  • কেন ধর্ষণ করছে?

আগে দেখা যাক কোরান-হাদীস পর্দা সম্পর্কে কি বলে।

সূরা নং ২৪ আন নূর (আলো) আয়াত নং ২৮-
“অতঃপর যদি তোমরা সেখানে কাউকে না পাও তাহলে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’ তাহলে ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য অধিক পবিত্র। তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবগত।”

উক্ত আয়াতকে মোটামুটি পর্দা সম্পর্কিত প্রথম আয়াত বললে মনে হয় ভুল হবে না। এই আয়াতটির মানে হচ্ছে কারো অনুমতি ব্যতীত কেউ গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ করবে না। যদি কেউ চলে যেতে বলে তাহলে চলে যেতে হবে। জোর জবরদস্তি করা যাবে না। এটা খুবই স্বাভাবিক।

সূরা নং ২৪ আন নূর (আলো) আয়াত নং ৩০-
“মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।”

এটা হল পর্দা সম্পর্কিত দ্বিতীয় আয়াত। মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসূলকে মুমিন পুরুষদের বলতে বলেছেন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি তথা চোখকে কন্ট্রোল করে। অর্থাৎ এমন জিনিস দেখবে না বা এমন কিছুর দিকে তাকাবে না যা তাদের যৌন উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এরপর রয়েছে লজ্জাস্থান মানে তাদের পুরুষাঙ্গের যেন হেফাযত করে, মানে সামলে রাখে। এটা পুরুষদের পর্দা।

আর পুরুষদের লোলুপ দৃষ্টি, যৌনবাক্য, যৌনস্পর্শ এবং যৌন আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নারীর পর্দা। এখন বিবেচ্য বিষয় কার পর্দা আগে? লোকালয়ে কোন হিংস্র জন্তু প্রবেশ করলে মানুষকে আক্রমণ করে, তখন হিংস্র জন্তুর ভয়ে মানুষ খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকবে নাকি ওই জন্তুকে খাঁচায় বন্দী করবে?

মুমিনগণ কি এই পর্দা মেনে চলছে? যদি মুমিনগণ পর্দা মেনে চলে তাহলে নারীদের কি পর্দা তথা বোরকার দরকার আছে? মুমিন বান্দারা  কোরান শরীফের এই পবিত্র আয়াত কতটা মেনে চলছে? এমন কোন মুমিন বান্দা আছে কি যে নারীদের দিকে তাকায় না? এমন কোন মুমিন বান্দা আছে কি যে নিজের পুরুষাঙ্গ শাসন করে? পুরুষাঙ্গ বাদ থাকুক, হাত, মুখ এগুলো কি কন্ট্রোল করে? বরং উস্কে দেয়।

তা হলে পর্দাটা আসলে আগে দরকার মুমিনদের। চোখ কন্ট্রোল করতে না পারলে মুমিনদের চোখে পট্টি বাধতে হবে। পুরুষদের পুরুষাঙ্গ কন্ট্রোল করা আয়ত্ত করতে হবে। আর পুরুষাঙ্গ কন্ট্রোল করতে না পারলে কি করা যায়? এটাকে তো পট্টি পরিয়ে লাভ নেই।তখন কর্তনই শ্রেয়। 

সূরা নং  ২৪ আন নূর (আলো) আয়াত নং ৩১-
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।”

শ্রদ্ধেয় পাঠক, এখানে আল্লাহ মুমিন নারীদের একই কথা বলতে বলেছেন। চোখ এবং যৌনাঙ্গ কন্ট্রোল করা। তারা যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করে এমন কিছু দেখবে না এবং মহিলাঙ্গ কন্ট্রোল করবে। নারীরা তাদের নারীঅঙ্গ বোধ হয় কন্টোল করতে পারে। কারণ এখন পর্যন্ত নারীরা পুরুষদের ধর্ষণ করেছে শোনা যায় নাই তেমন একটা। তবে দুএকটা ঘটতেও পারে। তবে পুরুষরা যেভাবে গণহারে শিশুবালক, শিশুবালিকা, নারী এমনকি বৃদ্ধাদেরও ধর্ষণ করছে সে তুলনায় কিছুই না। পুরুষগণ নারীদের দেখে উত্তেজিত হয়ে যায় তাই মহিলারা বোরকা পরে, তা হলেতো মহিলারাও পুরুষদের দেখে উত্তেজিত হয় যেহেতু দৃষ্টি সংযত করতে বলা হয়েছে তাই পুরুষদেরও বোরকা পরা উচিৎ।

এরপর দেখুন, “আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া” – এই কথা দিয়ে কি বুঝানো হয়েছে? কী কী প্রকাশ পায়? পাঠক ধরুন, নারীরা সব ঢেকেই চলতে পারে যেমন পায়ে পা মুজা, হাতে হাত মুজা, মুখে উপর নেটের পর্দা। কিন্তু অবয়ব? তাদের বক্ষদেশ?নিতম্বদেশ? এটাতো প্রকাশ পাবেই। আল্লাহতো জানেন মুমিনদের আসল আকর্ষণ নারীদের বক্ষদেশ। তাইতো বেহেস্তি হুরদের উন্নতবক্ষা করেছেন, কিন্তু পৃথিবীর নারীদের  স্তন না দিলেই পারতেন! কিংবা অন্য কোন সিস্টেমেও দিতে পারতেন। যেমন পুরুষদের বিশেষ সময়ে বিশেষ অঙ্গ বিশেষ রূপ পায়, তেমন করে বাচ্চাদের খাওয়াবার সময় অথবা অন্য কোন প্রয়োজনের সময় সেগুলো ভেসে উঠতো। তা হলেতো এতো ঝামেলাই হত না। আল্লার সিস্টেমের জন্য নারীরা কেন খেসারত  দিবে?

“আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় “– তাতে মহান আল্লাহর সমস্যা নেই। তবে তা প্রকাশিতই হোক।এতো বস্তাবন্দী হওয়ারতো দরকার নেই। স্বাভাবিক শালীনতা বজায় রাখলেই হল। বস্তাবন্দী হয়ে নিজের বিকাশ ও আরামকে হারাম করে নিজেকে ঘামের দুর্গন্ধে দুর্গন্ধিত করে কি লাভ!

প্রিয় পাঠক এবার আসুন পরের বাক্যে। “তারা যেন ওড়না দিয়ে তাদের বক্ষদেশ আবৃত করে”– এখানে মহান আল্লাহ সাধারণ পোশাকের সাথেই ওড়না দিয়ে বুক ঢেকে রাখতে বলেছেন। বোরকার কথা বলেননি। আর আরব দেশে পুরুষরাওতো বোরকার মত লম্বা পোশাক পরে, স্কার্ফও পরে। নারীরাও তাই। শুধু রঙের পার্থক্য। সাদা আর কালো। এখানেও বাঙালি মুমিনারা বৈষম্যের শিকার। কারণ তারা ঠিকই আলখাল্লা পরে আর পুরুষেরা প্যান্টশার্ট।

এবার আসি এরপরের বাক্যে নারীরা কাদের কদের সামনে যাবে, কাদের সামনে যাবে না।নারীরা না হয় না গেলো পুরুষরা যদি আসে? তাদেরও তো একই কন্ডিশন দেয়া উচিত, অমুক অমুকের সামনে তারা সৌন্দর্য প্রকাশ যেন না করে।

যাদের কাছে মহিলাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে তাদের সাথেওতো সম্পর্ক হতে পারে বা এরাওতো ধর্ষণ করতে পারে। অনেক মুমিন পিতা তার ঔরস জাত মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। সৎ মেয়ের কথা নাহয় বাদই দিলাম।

আসল কথা হল মন। সবার উচিৎ মনকে কন্ট্রোল করা। আর নিষিদ্ধ জিনিসে কৌতূহল বেশি। তাই যত ঢেকে ঘুরে রাখার প্রচার আর প্রসার  হবে তত মনে হবে, আহা কী মজার জিনিস যেন! যে সকল দেশে ইসলাম নেই, যেখানে মেয়েরা বিকিনি পরে ঘুরে বেড়ায়, এমন অনেক অঞ্চল আছে যেখানে মেয়েদের ঊর্ধাঙ্গ উদোম থাকে সেখানেতো তাহলে অনবরত ধর্ষণ হওয়ার কথা। তা কি হচ্ছে? আসলে মুমিনগণ জন্ম গ্রহণ করে বেহেস্ত আর হুরপরীর স্বপ্ন নিয়ে, বড় হয় নারীদের যৌন সামগ্রী মনে করে, তাই পর্দাটর্দাতেও কাজ হয় না। আর শিশুধর্ষণ? মহান আল্লাহ তার তেপান্ন বছরের রাসূল আর নয় বছরের শিশু আয়েশাকে সঙ্গমে লিপ্ত করিয়েছেন। মুমিনরা ভাবে, আহা এতে যেন কত মজা! এখনতো কেউ আর নয় বছরের মেয়ে বিয়ে দিবে না তাই শিশুধর্ষণ করে এর সাধ নেয়া।

সূরা নং ২৪ আন-নূর(আলো) আয়াত নং ৫৯-
“আর তোমাদের সন্তান-সন্ততি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন তারাও যেন অনুমতি চায় যেমনিভাবে তাদের অগ্রজরা অনুমতি চাইত। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।”

শুধু সন্তানরা নয় পৃথিবীর সকল অফিস আদালতে অনুমতি নিয়েই রুমে প্রবেশ করতে হয়।

সূরা নং ২৪ আন-নূর(আলো) আয়াত নং ৬০-
“আর বৃদ্ধা নারীরা, যারা বিয়ের প্রত্যাশা করে না, তাদের জন্য কোন দোষ নেই, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের কিছু পোশাক খুলে রাখে এবং এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী। “

অর্থাৎ বৃদ্ধাদের পর্দা না করলেও চলবে। কিন্তু আমাদের দেশে বৃদ্ধারা আরো বেশি পর্দা করে। গ্রামের বেশ পুরানো প্রচলিত কথা আছে “নাড়া ক্ষেতে বেড়া দিয়ে লাভ নেই।” 
তাই বৃদ্ধাদেরকে বোরকার আযাব থেকে রক্ষা করুন।

সূরা নং ৩৩ আল আহজাব(জোট) আয়াত নং ৩২-
“হে নবী-পত্নিগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।”

এই আয়াতটিকেও পর্দার আয়াত বলা যায়, তবে সম্পূর্ণ রূপে নবীপত্নিদের জন্য। মহান আল্লাহ নবীর ব্যাপারে খুবই তৎপর। কেন নবীপত্নিরা কোমল কন্ঠে কথা বলবে না? তারা কি চিৎকার চেঁচামেচি করবে? যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, যারা নারীদের কোমল কণ্ঠে যৌন উত্তেজনায় উত্তেজিত হয়, আল্লাহ কি তাদের শাস্তি দিতে পারেন না? কিংবা ব্যাধি সারিয়ে দিতে বা সুস্থ করতে পারেন না। নাকি তাদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহরও নেই, নবীরও নেই। তাই নারীদেরকেই শাসন-বারণ। আল্লাহ এতো দুর্বল কেন! নবী এত দুর্বল কেন!

সূরা নং ৩৩ সূরা আল আহজাব(জোট) আয়াত নং ৩৩-
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পূতপবিত্র রাখতে।”

এই আয়াতটিকেও পর্দার আয়াত বলা যায়। এটাও নবীপত্নিদের জন্য। সৌন্দর্য প্রদর্শন করা বারণ। আল্লাহ হুরদের মহাসুন্দরী করে তৈরি করবেন। আর পৃথিবীর নারীদের সৌন্দর্য তার পছন্দ না। পুরুষরা নারীদের সৌন্দর্য দেখবে বলে নারীরা গৃহে অবস্থান করবে? মানে নজর বন্দী। 

সূরা নং ৩৩ আল আহজাব(জোট) আয়াত নং ৫৩-
“হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর ঘরসমূহে প্রবেশ করো না; অবশ্য যদি তোমাদেরকে খাবারের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে (প্রবেশ কর) খাবারের প্রস্ত্ততির জন্য অপেক্ষা না করে। আর যখন তোমাদেরকে ডাকা হবে তখন তোমরা প্রবেশ কর এবং খাবার শেষ হলে চলে যাও আর কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ো না; কারণ তা নবীকে কষ্ট দেয়, সে তোমাদের বিষয়ে সঙ্কোচ বোধ করে; কিন্তু আল্লাহ সত্য প্রকাশে সঙ্কোচ বোধ করেন না। আর যখন নবীপত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আর আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ।”

উপরে আয়াতটাও পর্দার আয়াত ধরে নেয়া যায়। নবী আল্লাহর কথা ভাববেন? নাকি আল্লাহ নবীর চিন্তায় অস্থির হয়ে যাবেন? এখানে দেখা যাচ্ছে আল্লাহই নবীর তাঁবেদার। কিসে নবীর আরাম! কিসে নবীরর কষ্ট! তা নবী বলতে পারছেন না, নবীর হয়ে আল্লাহ বলে দিচ্ছেন। বাহ চমৎকার। 

সূরা নং ৩৩ আল আহজাব (জোট) আয়াত নং ৫৯-
হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবে*র কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। *( জিলবাব হচ্ছে এমন পোশাক যা পুরো শরীরকে আচ্ছাদিত করে।)

জিলবাব মানে বড় চাদর। যা গায়ে জড়িয়ে নেয়া যায়। এখানেও কিন্তু বোরকার কথা বলা হয়নি। চাদর জড়ানোর কথা বলেছেন। আমাদের শাড়ীর মতই। শাড়ী কি পুরো শরীর আচ্ছাদিত করে না?

“ফলে তাদের কষ্ট দেয়া হবে না।” মানে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। তার মানে আরবে নারীদের উত্যক্ত অর্থাৎ ইভটিজিং করা হত। আল্লাহ এতো উল্টা বিচার কেন করেন? যারা উত্যক্ত করছে তাদের শাস্তি দিবেন না, তাদের পর্দার ব্যবস্থা করবেন না, তাদের ঘরে বেধে রাখার ব্যবস্থা করবেন না। তাদের বাইরে আসা নিষিদ্ধ ঘোষণা করবেন না। উল্টো নারীদের ঘরে আটকে, পর্দার ব্যবস্থা করে তাদেরকে কষ্ট থেকে মুক্তি দিবেন। কি হাস্যকর।

আর নবীপত্নি, নবীকন্যা, মুমিনারা কষ্ট পেলো না। বাকিরা কষ্ট পেলে বা তাদের উত্যক্ত করলে আল্লাহর বা নবীর কোন সমস্যা নেই। আল্লাহর কি মহান বিচার!

সূরা নং ৭ আল আরাফ (উচু স্থান) আয়াত নং ২৬-
“হে বনী আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম। এগুলো আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।”

আচ্ছা, আল্লাহতালা কি আমাদের জন্য সপ্ত আসমান হতে পোশাক অবতীর্ণ করেছেন বলে মনে হয়? যদি তাই হত তাহলেতো কোন সমস্যাই ছিল না। সবাই মনের আনন্দে এক রকম পোশাক পরে সিনেমার এলিয়েনদের মত ঘুরে বেড়াতো। পৃথিবীর এক এক জায়গায় মুসলমানরা এক এক রকম পোশাক পরতো না। অন্যান্য ধর্মের লোকদের কথা না হয় বাদ দিলাম। আসলে পোশাক  নির্ধারিত হয় ভৌগলিক অবস্থানের কারণে। মানুষের জীবনে ভৌগলিক প্রভাব পড়লেই তা দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে যায়।

হাদিস

হাদিস নং ১৪৬,সহিহ বুখারী
আয়িশা (রা:) থেকে বর্ণিত
“নবী(সা:) এর স্ত্রীগণ রাতের বেলায় প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে খোলা ময়দানে যেতেন। আর উমর (রা:) নবীকে বলতেন, “আপনার স্ত্রীগণকে পর্দায় রাখুন।” কিন্তু আল্লাহর রাসূল তা করেন নি। এক রাতে ইশার সময় নবীর স্ত্রী সওদা বিনতু যাম’আ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী। উমর তাকে ডেকে বললেন, “হে সওদা! আমি কিন্তু তোমাকে চিনে ফেলেছি।” যেন পর্দার হুকুম  অবতীর্ণ  হয় সেই উদ্দেশ্যেই তিনি এ কথা বলেছিলেন। অতঃপর আল্লাহতালা পর্দার হুকুম অবতীর্ণ করেন।”

আল্লাহ কিংবা নবী কেউ কিন্তু পর্দার জন্য উদগ্রীব ছিলেন না। পর্দার জন্য উদগ্রীব ছিলেন উমর সাহেব। নবীপত্নিগণ কেউ যেন চিনতে না পারে তাই রাতের অন্ধকারে প্রাকৃতিক ডাকে খোলা ময়দানে যেতেন। আহা কি করুণ অবস্থ! সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকতেন উমর সাহেব। যেই সওদা হাগু করতে বের হলেন অমনি উনি চিৎকার করে উঠলেন, সওদা আমি তোমাকে চিনছি। কী ভয়ানক! কী নির্লজ্জ! ছি ছি! গ্রাম এলাকায় একটা কথা আছে, ‘হাগে বেটার সরম না দেখে বেটার সরম।’ আবার বলেছেন, আমি এরকম বলছি যাতে পর্দার আয়াত নাযিল হয়। আর সত্যি সত্যি পর্দার আয়াতও সাথে সাথে নাযিল হয়ে যায় কী আশ্চর্য! আল্লাহ উমরের কথায় আয়াত পাঠিয়ে দিলেন। বাহ আল্লাহতো দেখি যে যেমন চায় তেমন আয়াত পাঠিয়ে দিতেন। আল্লাহ কিন্তু একটা পায়খানা বানানোর আয়াত পাঠাতে পারতেন। তাতে পরিবেশ ও পর্দা দুটোই রক্ষা পেত।
আর সকল নারীই জানেন এবং বোঝেন পর্দা করে অর্থাৎ জিলবাব (বড় চাদর যা পুরো শরীর আচ্ছাদিত করে) গায়ে দিয়ে হাগামুতা করা কত কঠিন কাজ। এখন আল্লাহর রহমতে রুমে রুমে বাথরুম এখন আর পর্দা করে বাথরুমে যেতে হয় না।

হাদিস নং ৩২৪ সহিহ বুখারী
হাফসা রা: থেকে বর্ণিত
“তিনি বলেন, আমরা আমাদের যুবতীদের ঈদের সালাতে বের হতে নিষেধ করতাম। এক মহিলা বনূ কালাফের মহলে এসে পৌঁছলেন এবং তিনি তার বোন হতে বর্ণনা করলেন। তার ভগ্নিপতি নবীর সঙ্গে বারটি গাযওয়াহে (বড় যুদ্ধ) অংশ গ্রহণ  করেছিলেন। তিনি বলেন তার বোনও তার সঙ্গে ছয়টি গাযওয়ায় শরীক ছিলেন। সেই বোন বলেন, আমরা আহতদের পরিচর্যা ও অসুস্থদের সেবা করতাম। তিনি নবীকে জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের কারো ওড়না না থাকার কারণে বের না হলে কোন অসুবিধা আছে কি? আল্লাহর রাসূল বললেন, তার সাথীদের ওড়না পরিয়ে দেবে, যাতে সে ভাল মজলিস ও মুমিনদের দাওয়াতে শরীক হতে পারে। যখন উম্মু আতিয়া আসলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি নবী হতে এরূপ শুনেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমার পিতা তার জন্য কুরবান হোক। আমি নবীকে বলতে শুনেছি, যুবতী, পর্দানশীন  ও ঋতুবতী মহিলারা বের হবে এবং ভাল স্থানে ও মুমিনদের দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করবে। অবশ্য ঋতুবতী মহিলা ঈদগাহ হতে দূরে থাকবে। হাফসা বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুবতীও কি বেরুবে? তিনি বললেন, সে কি আরাফাতে ও অমুক অমুক স্থানে উপস্থিত হবে না?”

এখানেও দেখা যাচ্ছে ওড়নাই পরতে বলা হয়েছে। আর নারীরাও সব জায়গায় যাবে। আহতদের পরিচর্যা আর অসুস্থদের সেবা করা যখন সেই সময়ই হত তাহলে এখনো চাকরি করা যাবে।

এই যে হাদিস কোরান আলোচনা হল এখানে কিন্তু শিশুকন্যাদের পর্দার কথা কোথাও ঘুণাক্ষরেও বলা হয় নাই। কিন্তু অনেক জায়গায়, অনেক পরিবারে, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুকন্যাদের এমনভাবে  স্কার্ফ পরানো হয় যেটা শিশুর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক বিকাশের পথ রুদ্ধ করে। তাকে পলে পলে হেয় করে। মেয়ে হয়ে জন্মানোকে নিজের দুর্ভাগ্য ও অপরাধ মনে করে।
হাদিস কোরানের আলোকে নিম্ন লিখিত কারণেই পর্দাপ্রথা। কিন্তু পর্দা কি এগুলো বন্ধ করতে পারছে?

১। ব্যভিচার যেন না হয়।
পর্দা করে কি ব্যভিচার করা যায় না? বরং আরো ভালো করে করা যায়। বোরকা থাকায় পরিচয় গোপন করে যত্রতত্র যাতায়াত করা যায়।

২। নারীদের যেন কেউ উত্যক্ত না করে।
বোরকা পরেও নারীরা ইভটিজিঙের শিকার হচ্ছে। ধর্ষণ ও খুন থেকেও রেহাই পাচ্ছে না।

৩। পুরুষরা নারীদের দেখে যেন প্রলুব্ধ না হয়।
পুরুষরা জানে নারী কি জিনিস। জানে নারীর শরীরের কোথায় কি আছে। তারা শুধু চামড়ার চোখ দিয়ে দেখে না মনের দুষ্ট চোখ দিয়েও দেখে। বোরকা দিয়ে কি মনের দৃষ্টি আটকানো যায়?

পরকালে পর্দার কি পুরস্কার তা জানা নাই। তবে অনেকেই ইহকালে পর্দা তথা বোরকার অনেক ফযিলতের কথা বলেন। যেমন

#নিত্য নতুন জামাকাপড় বা শাড়ীর চিন্তা করতে হয় না। ধোয়া, মাড় দেয়া, ইস্ত্রি করার যন্ত্রণা নেই। বোরকাতে মার দিতে হয় না, ইস্ত্রি  না করলেও চলে। বোরকার নিচে কি পরলাম কে দেখবে।

#চুল আচড়ানো, পরিপাটি হওয়া, খোঁপা বা বেণি করার ঝামেলাও থাকে না। শুধু মুখে মেকআপ করলেই হল।

#বোরকা পরে বাইরে গেলে পরিবার বা স্বামী   আপত্তি করে না। ফলে চাকরি করতে পারা যায়। তা না হলে ঘরে বসে থাকতে হবে।

#বোরকা ও স্কার্ফ পরার ফলে  সানবার্ন হয় না। ধুলাবালু থেকেও চুল আর চামড়া রক্ষা পায়।

#বোরখার সাথে মুখটা ঢেকে রাখলে যেকোনো প্রকার কাজ করা যায় সহজে কেউ চিনতে পারে না।

#বোরকা পরা সহজ এবং কম সময়ের প্রয়োজন হয়।

#এখন বোরকা অনেক ডিজাইনের হওয়ায় স্মার্টও মনে হয়, দেখতেও সুন্দর লাগে।

মানে শুধু পর্দার জন্য বোরকার ব্যবহার হয় না। অন্য কারণও আছে।

পর্দা আসলে দরকার নারীপুরুষ সবারই, তবে বাহ্যিক পর্দার চেয়ে দরকার অন্তরের পর্দার। যেমন দরকার বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে মানসিক সৌন্দর্যের। পুরুষের উচিত নারীকে যৌনবস্তু মনে না করে মানুষ মনে করা। আর নারীদেরও উচিত নিজেকে পুরুষের খাদ্য মনে না করে মানুষ মনে করা। নারীদের উচিত নিজেকে বোরকার মধ্যে না লুকিয়ে সময় মত যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া, প্রতিবাদ করা। না হয় নিজেকে লুকাতে লুকাতে একদিন হয়ত পুরুষের অরণ্যে মানুষনারীদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। শুধু নারীদেরকেই খুঁজে পাওয়া যাবে।

লিখেছেনঃ মিষ্টি কুল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *