ফ্যাক্ট, হাইপোথিসিস, থিওরি এবং ল’
সূচিপত্র
ভূমিকা
বেশ কয়েক বছর আগে জাকির নায়েকের বিবর্তন তত্ত্ব বিষয়ক একটি ভিডিও দেখেছিলাম, ভিডিওটি খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেই ভিডিওতে জাকির নায়েক বলেছিলেন, বিবর্তন তত্ত্ব হচ্ছে জাস্ট এ থিওরি, কোন প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়। এমনকি, বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই নাকি বিবর্তন তত্ত্বকে মেনে নেয় নি। এই কথাগুলো এত বেশী জনপ্রিয়তা পায় যে, এরপরে অসংখ্য মানুষের মুখে আমরা একই কথা বারবার শুনেছি। যাদের কাছে শুনেছি, তাদের প্রায় সবাইকেই জিজ্ঞেস করেছি, আচ্ছা, বিজ্ঞানের জগতে তত্ত্ব বা সায়েন্টিফিক থিওরি কাকে বলা হয়, বলতে পারেন? আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে বুয়েটের ছাত্র পর্যন্ত যাদের সাথে কথা হয়েছে, একজনও সায়েন্টিফিক থিওরি কাকে বলে বলতে পারেন নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এই কারণে যে, একটি সায়েন্টিফিক টার্ম ব্যবহার করতে হলে সেই সম্পর্কে যে নূন্যতম ধারণা থাকা জরুরি, সেটি না থাকার পরেও জাকির নায়েক থেকে শুরু করে হালের আরিফ আজাদ, সকলেই এটি ব্যবহার করেন। আজকের আলোচনা এই বিষয়ে। আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করবো, হাইপোথিসিস কাকে বলে, থিওরি কাকে বলে, ল কাকে বলে। সায়েন্সের জগতে এগুলো কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। আমরা সাধারণ চায়ের দোকানের আড্ডায় অনেক সময়ই অনেক কথা বলি, অনেক শব্দ ব্যবহার করি, কিন্তু একাডেমিকভাবে এই শব্দগুলোর অর্থ অনেক সময় ভিন্ন হয়। যেমন ধরুন, আমরা বলি, ঐ ছেলেটি রাতের বেলায় রাস্তায় ঘোরে, এটা তার দর্শন। অথচ, দর্শন একটি প্রতিষ্ঠিত স্কুল অফ নলেজ। এই শব্দটি একাডেমিক আলোচনায় ব্যবহার করতে হলে এর সংজ্ঞা ভালভাবে জেনে ব্যবহার করতে হবে। আম ভাষায় আমরা যা ব্যবহার করি, সেটি একাডেমিক আলোচনার যোগ্য নয়। এই কারণে, জাকির নায়েক থেকে আরিফ আজাদদের এই ধরণের বক্তব্য একাডেমিক আলোচনায় একদমই হাস্যকর। তবে এই ক্ষেত্রে শুধু হাস্যকর বললে ভুল হবে, রীতিমত প্রতারণাপূর্ণ এবং মিথ্যাচার। সেই মিথ্যাচার নিয়েই আজকের আলোচনা।
ফ্যাক্ট বা পর্যবেক্ষণযোগ্য উপাদান
বিজ্ঞানের জগতে ফ্যাক্ট হচ্ছে সরাসরি ইন্দ্রিয় দ্বারা পর্যবেক্ষণযোগ্য বিষয়াদি। যেমন ধরুন, একটি আপেল গাছ থেকে নিচের দিকে পড়ে। উপরের দিকে উড়ে চলে যায় না। এটি একটি ফ্যাক্ট। এটি পৃথিবীর সকল গাছের জন্য সত্য, সকল আপেল কমলা কলা সবকিছুর জন্য একই ফলাফল আসবে। এগুলো সবই হচ্ছে ফ্যাক্ট। এর ওপর ভিত্তি করে এর কারণ ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হবে, কেন এটি ঘটছে সেই বিষয়ে কিছু ধারণা বা অনুমান তৈরি করতে হবে। সেই ধারণা বা অনুমানগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে সেই ধারণা বা অনুমানটিকে বৈজ্ঞানিক অনুকল্প বা হাইপোথিসিস বলা হবে।
অনুকল্প বা হাইপোথিসিস
অনুকল্প হলো কোনো একটি ঘটনা বা বিষয়ের একটি প্রস্তাবিত ব্যাখ্যা বা বিবরণ। কোনো অনুকল্পকে বৈজ্ঞানিক অনুকল্প হতে হলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুযায়ী এটিকে পরীক্ষাযোগ্য হতে হবে, পরীক্ষার সময় কীভাবে পরীক্ষাটি করা হচ্ছে সেটি উল্লেখ করে দিতে হবে এবং এর ফলসিফায়েবিলিটি উল্লেখ করে দিতে হবে। যেন পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মানুষ সেটিকে পুনরায় পরীক্ষানিরীক্ষা করে এর সত্যতা যাচাই করতে পারেন। সেই অনুকল্প বা হাইপোথিসিসটি পূর্ববর্তী পর্যবেক্ষণসমূহের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠলেই তাকে বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিস বলা হবে এবং সেটি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হবে। বৈজ্ঞানিক অনুকল্প আর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এক জিনিস নয়। একটি কার্যকর অনুকল্প হলো বিস্তারিত গবেষণার জন্য অস্থায়ীভাবে গৃহীত একটি অনুকল্প। এটিকে নিয়ে বারবার পরীক্ষা করা হবে, এবং কোন পরীক্ষায় যদি একটি বারও সেটি ভুল প্রমাণ করা যায়, সেটিকে বাতিল করে দেয়া হবে। কিন্তু যদি সবগুলো পরীক্ষায় সেটি উত্তীর্ণ হয়, এবং একইসাথে ভবিষ্যতে কী ঘটবে সেই সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারেন, তখন সেটিকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা সায়েন্টিফিক থিওরি হিসেবে মনোনীত করা হতে পারে।
উপরে বর্ণিত ফ্যাক্টের আলোচনায় আমরা দেখেছিলাম, আপেল গাছ থেকে নিচের দিকে পড়ে। সেটি ছিল পর্যবেক্ষণযোগ্য উপাদান বা ফ্যাক্ট। এর ওপর ভিত্তি করে ধরুন দশজন বিজ্ঞানী দশ ধরণের অনুমান করতে পারেন। এর কারণ ব্যাখ্যার চেষ্টা করতে পারেন। সেই ধারণা বা অনুমানগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে করা হলে, সেগুলোকে বৈজ্ঞানিক অনুকল্প বা সায়েন্টিফিক হাইপোথিসিস বলা হবে।
বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা সায়েন্টিফিক থিওরি
একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হলো এমন একটি বিষয়ের ব্যাখ্যা, যা পর্যবেক্ষণ, পরিমাপ এবং ফলাফলের মূল্যায়নের সময় অবজেকটিভ, বৈজ্ঞানিক ও স্বীকৃত উপায় ব্যবহার করা হয় এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বারবার পরীক্ষানিরীক্ষা ও যাচাইবাছাইয়ের পরে যেই সিদ্ধান্তে আসা হয়। প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলি কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং আমাদের প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করেছে। অনেক বিজ্ঞানী অনেক ধরণের অনুকল্প বা হাইপোথিসিস দিতে পারেন, সেগুলোকে বারবার পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয় এবং সবগুলো পরীক্ষায় সেটি অনুকল্প বা হাইপোথিসিসকে সমর্থন করলে, কোথাও ভুল প্রমাণ করা না গেলে, ভবিষ্যতে কী ঘটবে বা ফিউচার প্রেডিকশন দিতে পারলে তাকে তখন থিওরি হিসেবে গন্য করা হয়। প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব কোন অনুমান বা ধারণা নয়, বরঞ্চ বিজ্ঞানের জগতে সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ একটি বিষয়।
উপরে বর্ণিত গাছ থেকে আপেল নিচের দিকে পড়ার ফ্যাক্ট থেকে অনেকে অনেক অনুমান বা ধারণা দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু সেই সব অনুমান বা ব্যাখ্যার মধ্যে স্যার আইজ্যাক নিউটনের গ্রাভিটেশনাল থিওরি বা তত্ত্বটি সবগুলো পরীক্ষানিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, কোন পরীক্ষায় এটিকে ভুল প্রমাণ করা যায় নি, এবং মঙ্গল গ্রহে আপেলটি কীভাবে নিচের দিকে পড়বে, সেটিও বলা হয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে নিউটনের সেই হাইপোথিসিসটিকে থিওরির মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যদি একটি পরীক্ষাতেও কোন ভুল পাওয়া যেতো, তাহলে সেটিকে আর থিওরি হিসেবে গণ্য করা হতো না।
সায়েন্টিফিক ল’ বা সূত্র
একটি প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা সায়েন্টিফিক থিওরি যখন কোন ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে পারে, তখন সেই ব্যাখ্যার ওপরে নির্ভর করে মাঝে মাঝে কিছু সূত্র দেয়া হতে পারে। যেমন, উপরের আপেল নিচের দিকে পড়ার ঘটনাটির ক্ষেত্রে একটি সূত্র দেয়া হতে পারে যে, আপেলটি কী গতিতে নিচের দিকে পড়বে। সেই গতিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হতে পারে। তবে সকল থিওরি থেকেই যে সূত্র বা ল’ আসবে, এমন কোন কথা নেই।
মূল আলোচনা
আমরা আম জনতা থিওরি বলতে যা বুঝি, এবং বিজ্ঞানের জগতে থিওরি বলতে যা বোঝায়, তা মোটেও এক নয়। ধরুন আমরা আম জনতার ভাষায় বলতে পারি, আওয়ামী লীগ এক টাকার চালের থিওরি দিয়েছে। বা ওটা কলিমুদ্দীনের থিওরি। মানে বোঝাচ্ছে, আওয়ামী লীগ বা কলিমুদ্দীন বাসায় বসে বসে চিন্তা করে কিছু সিদ্ধান্ত তৈরি করেছে। কিন্তু এই থিওরি বিজ্ঞানের থিওরি নয়। সায়েন্টিফিক থিওরি একেবারেই আলাদা। কোন রাম শ্যাম যদু মধু কিছু বললেই বা অনুমান করলেই সেটি বৈজ্ঞানিক অনুকল্প বা সায়েন্টিফিক হাইপোথিসিসই হতে পারবে না, তত্ত্ব বা থিওরি হওয়া তো অনেক দূরের বিষয়। আসুন নিচের ছবিগুলো থেকে আরো ভালভাবে বিষয়টি বুঝে নিই,
বিজ্ঞানের জগতে এই প্রতিটি বিষয় আলাদা এবং ওয়েল ডিফাইন্ড। আপনি হাইপোথিসিসের ক্ষেত্রে থিওরি ব্যবহার করতে পারবেন না, বা থিওরির জায়গায় হাইপোথিসিস ব্যবহার করতে পারবেন না। করলেই আপনার বক্তব্য ভুল বলে গণ্য হবে। যেখানে যেটি ব্যবহারযোগ্য, সেখানে শুধুমাত্র সেটিই ব্যবহার করতে হবে। এগুলোর মধ্যে, ফ্যাক্ট হচ্ছে তা, যা আপনি সরাসরি আপনার ইন্দ্রিয় দ্বারা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যেমন আগুনে আমাদর চামড়া পুড়ে যেতে পারে। এখন আপনি তা সরাসরি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এটা হচ্ছে ফ্যাক্ট। পৃথিবীর সকল মানুষই এটি পরীক্ষা করে দেখতে পারে। প্রভাবক এবং পরিবেশ একই থাকলে পৃথিবীর সকল মানূষের ক্ষেত্রে এটি সত্য হবে। এরকম ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়গুলো বা যা সরাসরি পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষাযোগ্য, বিজ্ঞানের জগতে সেগুলো হচ্ছে ফ্যাক্ট। আর কোন ঘটনা বিশ্লেষণ করতে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়, কিংবা অনেকগুলো ফ্যাক্ট একত্রিত করে যেই এক বা একাধিক অনুমান দাড় করানো হয় সেটা/সেগুলোকে বলা হয় হাইপোথিসিস বা অনুমান। যেমন আগুনে হাত দিলে আপনার চামড়া পুড়ে যায়। এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে আপনি অনুকল্প বা হাইপোথিসিস দাড় করাতে পারেন এমন যে ( শুধুমাত্র বোঝার সুবিধার জন্য এই উদাহরণগুলো ব্যবহার করছি, বিজ্ঞানের জগতে এরকম উদাহরণ গ্রহণযোগ্য নয় ),
১) আগুনের মধ্যে এমন এক প্রাণী আছে তা কামড়ে আপনার চামড়া পুড়িয়ে ফেলে।
২) আগুনের তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে আপনার চামড়া সেই তাপ সহ্য করতে পারে না।
৩) আগুনের দেবতা বা ফেরেশতা তাকে ধরলে রাগ করে আপনার চামড়া পুড়িয়ে দেয়।
এখন এই তিনটি অনুমান বা হাইপোথিসিসের ওপর ভিত্তি করে আপনি পরীক্ষা চালান। নানা তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেন। পরীক্ষার ফলাফল পাবেন ২ নম্বরটি। তাহলে আপনার ২ নম্বর হাইপোথিসিসটি প্রমাণিত হলো। বাকিগুলো বাতিল হলো। আবার, প্রমাণিত হলেই যে হাইপোথিসিসটি ধ্রুব সত্য তা নয়। যেকোন কিছুও ধ্রুব সত্য নয়। যেকোন সময় আরো ভাল যুক্তি প্রমাণ তথ্য পাওয়া গেলে এটা পালটে ফেলতে হবে। বিজ্ঞানের জগতে ধ্রুব সত্য বলে কিছু নেই। যখনই বিপরীত কোন প্রমাণ পাওয়া যাবে, যেকোন বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে সংশোধন করে নিতে হবে। বিজ্ঞানের জগতে তিনটি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ থিওরি হচ্ছে, থিওরি অর রিলেটিভিটি, গ্রাভিটেশনাল থিওরি, ইভোল্যুশন থিওরি। এই থিওরিগুলোর মধ্যে ইভোল্যুশন থিওরি হচ্ছে মানুষের মনোজগতকে সবচাইতে বড় ধাক্কা দেয়া সর্বাধিক আলোচিত এবং চর্চিত থিওরি। বিজ্ঞানের জগতে সায়েন্টিফ থিওরি অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী।
ব্যাক ক্যালকুলেশন
বিজ্ঞানের জগতে সবচাইতে জরুরি যেই বিষয়টি, তা হচ্ছে পরীক্ষানিরীক্ষার ক্ষেত্রে আপনার সততা। মনে রাখতে হবে, কোন বিশেষ হাইপোথিসিস প্রমাণ করা যদি আপনার উদ্দেশ্য হয়, সেই অনুসারে সুবিধাজনক তথ্য উপাত্ত যদি আপনি সংগ্রহ করেন, এর বিপরীতের যেই তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তা লুকাবার চেষ্টা করেন, শুধু আপনার হাইপোথিসিসকে প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে, তাহলে সেটা অসততা হবে, প্রতারণা বলে গণ্য হবে। এবং আপনার মনে রাখতে হবে, পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষানিরীক্ষা, যাচাই বাছাই থেকে প্রাপ্ত ফলাফল আপনাকে যেইদিকে নিয়ে যাবে, সেটিকেই আপনার মেনে নিতে হবে। আগেই ফলাফল নির্ধারণ করে রাখলে সেটি আর গ্রহণযোগ্য হবে না।
ছোটবেলা আমরা যখন পরীক্ষা দিতাম, গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে যেই নিয়ম পালন করে এগুলো হয়, সেই নিয়মই পালন করতে হবে। অনেক সময় আমরা আরেকজনার কাছে উত্তর কত এসেছে জিজ্ঞেস করি। সে হয়তো বলে, তার উত্তর এসেছে ১। তখন অনেক ছাত্র একটি কৌশল করে, শেষ লাইনে ‘X= ১’ লিখে গাণিতিক সমস্যাটির সমাধান নিচের দিক থেকে শুরু করে উপরের দিকে ওঠে। এটি একদমই অসততা এবং প্রতারণা। বরঞ্চ, গাণিতিক সূত্রগুলো এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে এগিয়ে যাওয়াই আপনার উচিত ছিল। সেগুলো ব্যবহার করে যেই উত্তর আসবে, সেটিই আপনার উত্তর হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। আর সেটি যদি সঠিক উত্তর না হয়, তারপরেও আপনি সততার সাথে সমস্যাটির সমাধানের চেষ্টা করেছেন, এবং নিয়ম পালন করেছে। তখন বুঝতে হবে, আপনার সূত্র বা পদ্ধতিতে কোন জায়গাতে ভুল ছিল বিধায় ফলাফলটি ভুল এসেছে। এভাবেই সমস্যাটির সমাধান করতে হবে। পেছনের দরজা ব্যবহার করা উচিত নয়।
টেক্সাস শার্প শুটার ফ্যালাসি
ধরুন, আপনার উদ্দেশ্য কোরআন বা বাইবেল বা রামায়নের সাথে বিজ্ঞানকে মেলাতে হবে। তখন যদি শুধুমাত্র সেইসব প্রমাণ আপনি গ্রহণ করেন, যা আপনার হাইপোথিসিসের সাথে মেলে, তাহলে সেটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়। নির্ভেজাল চোর চোট্টামি। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য টেক্সাস শার্প শুটার ফ্যালাসি কাকে বলে, তা জেনে নেয়া খুবই জরুরি। নিচের ছবিতে সেটি বোঝানো হয়েছে।
উপসংহার
জাকির নায়েক থেকে শুরু করে আজকের আরিফ আজাদরা সত্যিকার অর্থে চায় যেভাবেই হোক নিজ নিজ ধর্মকে সত্য প্রমাণ করতে। তথ্য প্রমাণ পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রাপ্ত ফলাফল যাই হোক না কেন, কোন কিছুই আসলে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবে না। একজন সত্যানুসন্ধানীর দায়িত্ব হচ্ছে, যুক্তি তথ্য প্রমাণ আমার নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলেও, তা মেনে নেয়া। কিন্তু ধর্মে অন্ধবিশ্বাসী মানুষের জন্য এটি কখনই সম্ভব নয়।
সত্য জানার জন্য এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরনই সবচাইতে ভাল পদ্ধতি। অমুক বইতে লেখা তাই সত্য, আল্লায় কইছে তাই সত্য, সেগুলোর সাথে এই পদ্ধতি তুলনীয়ই নয়। কারণ সেগুলোর সপক্ষে কোন প্রমাণ নেই, কোন যুক্তি নেই।
আরো ভালভাবে জানার জন্যঃ
ভালো লাগলো।
অসাধারণ!
খুব সুন্দর লেখা হয়েছে, অনেক জ্ঞান লাভ করলাম