বাইবেলের কালো অধ্যায়
খৃষ্টবিশ্বাসীদের একটা কথা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত। তাদের যখনই বাইবেলের নোংরামির কথা বলা হবে, তাঁরা হঠাৎ বলে বসেন, “This is Old Testament, you know!” এটা বাইবেলের খারাপ অংশগুলো এড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু না, যেমনটা তথাকথিত মডারেট মুসলিমগন মাদানী সুরায় বর্ণিত জঘন্য আয়াতগুলিকে এড়িয়ে যান। আপনি এটা তো মানবেন যে যিনি পুরাতন নিয়মের ঈশ্বর তিনিই নতুন নিয়মের ঈশ্বর। এখন সেই ঈশ্বর যিনি ১ম শমূয়েল ১৫:২-৩ পদে ইস্রায়েলী জাতিকে আজ্ঞা দেন যেন তারা অমালেকী জাতির সকল লোককে হত্যা করে, নতুন নিয়মে এসে নিজেকে শান্তিপ্রিয় ভালোবাসার কান্ডারী বলে দাবী করেন। তাঁর কি বাইপোলার ডিস্অর্ডার ছিল?
১ শমূয়েল ১৫:২-৩
“বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েলের প্রতি অমালেক যাহা করিয়াছিল, মিসর হইতে উহার আসিবার সময়ে সে পথের মধ্যে উহার বিরুদ্ধে যেরূপ ঘাঁটি বসাইয়াছিল, আমি তাহা লক্ষ্য করিয়াছি। এখন তুমি গিয়া অমালেককে আঘাত কর, ও তাহার যাহা কিছু আছে, নিঃশেষে বিনষ্ট কর, তাহার প্রতি দয়া করিও না; স্ত্রী ও পুরুষ, বালক-বালিকা ও স্তন্যপায়ী শিশু, গরু ও মেষ, উষ্ট্র ও গর্দভ সকলকেই বধ কর।”
যে ঈশ্বর পুরাতন নিয়মে শিশুবধের বিধান দেন, সেই একই ঈশ্বর যদি নতুন নিয়মে এসে দাবী করেন যে তিনি আমাদের ভালোবাসেন তাহলে কিভাবে আমি তাঁর কথা বিশ্বাস করবো? বাইবেলের ইয়াহ্ওয়ে বা যিহোবা একজন খুনি, গণহত্যাকারী বদরাগী চরিত্র। তিনি কনানদেশীয়দের ওপর গণহত্যা চালিয়ে নিজদেশ হতে তাদের উৎখাত করেছেন, অমালেকীদের হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন, ফ্যারাওর ওপর রাগ করে নির্দোষ শিশুদের মেরে ফেলেছেন, কৃতদাস প্রথাকে সমর্থন করেছেন, ঠিক আল্লাহর মতই যে সকল ইহুদীগন যিহোবার উপাসনা হতে নিজেদের বিরত রাখবে এবং তাঁর নিন্দা করবে তাদের পাথর মেরে হত্যা করার বিধান দিয়েছেন দ্বিতীয় বিবরন গ্রন্থে। এখন এই বিভৎস ঈশ্বর এসে নতুন নিয়মে বললেন আমি তোমাদের ভালোবাসি। আমি এরকম লোকের কথা কেন বিশ্বাস করবো? ঈশ্বর হোন আর যা-ই হোন, এধরনের লোককে পুলিশে দেওয়া উচিত।নতুন নিয়ম, ২য় তীমথিয় ৩:১৬ মতে, “সম্পূর্ন পবিত্র শাস্ত্র ঈশ্বরের অনুপ্রেরনা দ্বারা রচিত।” এখন এখানে পবিত্র শাস্ত্র বলতে পুরাতন নিয়ম কে বোঝানো হয়েছে, কারণ সাধু পৌল যখন পত্রাবলী লিখছিলেন নতুন নিয়ম তখনও সম্পূর্ন হয়নি। এখন সেই একই পৌল যিনি নতুন নিয়মের সর্বাধিক পুস্তক (১৩ টি) রচনা করেছেন তিনি বলছেন পুরাতন নিয়ম ঈশ্বরের অনুপ্রেরনা দ্বারা রচিত, তাহলে কি পুরাতন নিয়মে অ-ইহুদিদের গণহত্যাও কি ঈশ্বরের অনুপ্রেরনায় হয়েছে? আর পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর আজ্ঞা দিচ্ছেন দুধের শিশুকে মেরে ফেল, এটাও কি ঈশ্বরের অনুপ্রানীত বাণী?
স্বয়ং যীশু বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত আকাশ আর পৃথিবী অটল থাকবে, ব্যবস্থার পুস্তকও অটুট থাকবে। এখানে যারা খৃষ্টাবিশ্বাসী নন তাদের জন্য বলে রাখা ভালো, ভাববাদী মোশে কর্তৃক লিখিত পুরাতন নিয়মের প্রথম পাঁচটি পুস্তককে ব্যবস্থার পুস্তক বা তোরাহ্ বলা হয়, সেই পুস্তক যেখানে ঈশ্বর ঈশনিন্দার শাস্তি স্বরূপ পাথর মেরে হত্যার বিধান দিয়েছিলেন। আর এখনও আকাশ ও পৃথিবী ধ্বংস হয়নি, তাহলে যীশুর মতে পুরাতন নিয়ম বাতিল হয়নি। আর যদি বাতিল হয়ে থাকে, তাহলে যীশু মিথ্যা কথা বলছেন।
খৃষ্টধর্মের অনুসারীদের কাছে একটা প্রশ্ন রইল। পুরাতন নিয়ম বাতিল হয়েছে না কি হয়নি? যদি পুরাতন নিয়ম বাতিল না হয়ে থাকে তাহলে কি ঈশ্বরের আদেশে হওয়া গণহত্যা কে কি আপনি সমর্থন করেন? আর যদি বাতিল হয়ে থাকে তাহলে কি যীশু মিথ্যা কথা বলেছেন?
খৃষ্টানরা কেবল তর্ক করার করার সময়ই লজ্জিত হয়ে বলেন যে তাঁরা পুরাতন নিয়ম মানেননা। কিন্তু অন্য সময় চার্চে পুরাতন নিয়ম থেকে শিক্ষা দেওয়া হয়, যে Ten Commandments পুরাতন নিয়মের অংশ তা পালন করতে শেখানো হয়, Book of Psalms থেকে পাঠ করা হয়, Proverbs যা Old Testament এর অংশ তা থেকে morality শেখার পরামর্শ দেন পাস্টারগণ। কিন্তু যখনই কেউ বলে ফেলবেন, বাইবেলে ঈশ্বর কেন গণহত্যার আদেশ দিলেন, ওমনি সাথে সাথে তাঁরা বলবেন, “But that’s Old Testament, you know!”
যদি খৃষ্টবিশ্বাসীগণ পুরাতন নিয়ম বাতিল হওয়ার অযুহাত দেন, তাহলে তাঁরা Christian Bible থেকে Old Testament কেন ছেঁটে বের করে দিচ্ছেননা?
ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টানগণ দাবি করে থাকেন, বাইবেল নাকি নৈতিকতা শিক্ষার চূড়ান্ত গাইডবুক। ঈশ্বরের অস্তিত্ব না মানলে নাকি নৈতিক হওয়া যায়না! তাহলে ঈশ্বর কেন ১ শমূয়েল ১৫:২-৩ এ দুধের শিশু হত্যার ফরমান জারী করলেন। কেনই বা মোজেস অ-ইহুদি পুরুষদের মেরে মহিলাদেরকে নিজেদের জন্য রেখে দিতে বললেন, আর কেনই বা ঈশ্বর মোজেসের কথায় সম্মতি জানালেন? এগুলি যদি ঈশ্বরের নৈতিকতার দৃষ্টান্ত হয়, তাহলে বলতে বাধ্য হবো, সাধারণ মানুষের নীতিজ্ঞান ঈশ্বরের নীতিজ্ঞান অপেক্ষা শ্রেয়।
আর সেই একই ঈশ্বর কোন্ লজ্জায় নিজেকে শান্তিদূত বলে দাবী করেন? ঈশ্বর যদি ত্রিত্ব (trinity) হন তাহলে পিতার সংগে যীশুও সমান ভাবে দোষী, কারন ত্রিত্ববাদ মতে পিতা যা করেন তাতে যীশুর সম্মতি থাকে।New Testament ও কোনো অংশে কম যায়না। New Testament সরাসরি দাসপ্রথাকে সমর্থন করেছে।
১ তীমথিয় ৬:১-২
যে সব দাসদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তারা সবাই তাদের মনিবদের সমস্ত সম্মান পাবার যোগ্য বলে মনে করুক, যেন কেউ ঈশ্বরের নামের এবং আমাদের শিক্ষার নিন্দা করতে না পারে। যে দাস খ্রীষ্টে বিশ্বাসী মনিবের অধীন সে যেন বিশ্বাসী ভাই বলেই সেই মনিবকে তুচ্ছ না করে বরং আরও ভালভাবে তাঁর সেবা করে, কারণ তার সেবায় যিনি উপকার পাচ্ছেন তিনি তো বিশ্বাসী এবং তার প্রিয়। এই সব বিষয় শিক্ষা দাও এবং উপদেশ দাও।
ইফিষীয় ৬:৫
তোমরা যারা দাস, তোমরা যেমন খ্রীষ্টের বাধ্য তেমনি ভয় ও সম্মানের সংগে অন্তর থেকে তোমাদের এই জগতের মনিবদের বাধ্য হয়ো।
তীত ২:৯
ক্রীতদাসদের বল, সর্ববিষয়ে মনিবের বাধ্য হয়ে তাঁদের যেন তুষ্ট করে। তারা যেন মুখে মুখে তর্ক না করে বা কিছু চুরি না করে।
তাছাড়া New Testament এ নারীকে পুরুষের তুলনায় ছোট করে দেখানো হয়েছে।
১ করিন্থীয় ১১:৩
কিন্তু আমার ইচ্ছা এই, যেন তোমরা জান যে, প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।
১ করিন্থীয় ১১:৭-১০
বাস্তবিক মস্তক আবরণ করা পুরুষের উচিত নয়, কেননা সে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি ও গৌরব; কিন্তু স্ত্রী পুরুষের গৌরব। কারণ পুরুষ স্ত্রীলোক হইতে নয়, বরং স্ত্রীলোক পুরুষ হইতে। আর স্ত্রীর নিমিত্ত পুরুষের সৃষ্টি হয় নাই, কিন্তু পুরুষের নিমিত্ত স্ত্রীর। এই কারণ স্ত্রীর মস্তকে কর্তৃত্বের চিহ্ন রাখা কর্তব্য- দূতগণের জন্য।
১ তীমথিয় ২:১১-১৪
নারী সম্পূর্ণ বশ্যতাপূর্বক মৌনভাবে শিক্ষা গ্রহণ করুক। আমি উপদেশ দিবার কিম্বা পুরুষের উপরে কর্তৃত্ব করিবার অনুমতি নারীকে দিই না, কিন্তু মৌনভাবে থাকিতে বলি। কারণ প্রথমে আদমকে, পরে হবাকে নির্মাণ করা হইয়াছিল। আর আদম প্রবঞ্চিত হইলেন না, কিন্তু নারী প্রবঞ্চিতা হইয়া অপরাধে পতিত হইলেন।
এমনকি স্বয়ং যীশু অ-ইহুদিদের কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন। মথি ১৫:২১-২৬ পদ পড়লে দেখা যাবে মেয়ের ভূত তাড়াতে এক কনানদেশীয় মহিলা যীশুর কাছে আসলে যীশু তাকে কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন।
মথি ১৫:২১-২৬
পরে যীশু তথা হইতে প্রস্থান করিয়া সোর ও সীদোন প্রদেশে চলিয়া গেলেন। আর দেখ, ঐ অঞ্চলের একটী কনানীয় স্ত্রীলোক আসিয়া এই বলিয়া চেঁচাইতে লাগিল, হে প্রভু, দায়ূদ-সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন, আমার কন্যাটী ভূতগ্রস্ত হইয়া অত্যন্ত ক্লেশ পাইতেছে। কিন্তু তিনি তাহাকে কিছুই উত্তর দিলেন না। তখন তাঁহার শিষ্যেরা নিকটে আসিয়া তাঁহাকে নিবেদন করিলেন, ইহাকে বিদায় করুন, কেননা এ আমাদের পিছনে পিছনে চেঁচাইতেছে। তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষ ছাড়া আর কাহারও নিকটে আমি প্রেরিত হই নাই। কিন্তু স্ত্রীলোকটী আসিয়া তাঁহাকে প্রণাম করিয়া কহিল, প্রভু, আমার উপকার করুন। তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, সন্তানদের খাদ্য লইয়া কুকুরদের কাছে ফেলিয়া দেওয়া ভাল নয়।
ধর্ম নামক এই গোলকধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসুন। যুক্তিবাদী হন। বিনা পিতায় সন্তান জন্ম, মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান এসব বস্তাপঁচা অযৌক্তিকতাকে চ্যালেঞ্জ করুন। প্রশ্ন করুন নিজেকে, আমি কি সেই ঈশ্বরকে সম্মান জানাবো যিনি দুধের শিশুদের হত্যা করার বিধান দেন?
©জিশান উল হক
বাইবেল পড়ার জন্য ধন্যবাদ!! আপনি কোরাণ পড়েন, কোরাণ পড়ে আপনার উপকার হবে কি না জানিনা, তবে আপনাকে আল্লাহ কোন কিছুর বিচার করার অধিকার দেননি।। অন্ধ কাউকে পথ দেখাতে পারে না।।।।।
আল্লাহ আমাকে অধিকার দেওয়ার কেউ নয়, বরং আমাকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার আমি আল্লাহকে দিতে বাধ্য নই। আল্লাহ যদি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে অবশ্যই আমি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করার কন্সেন্ট আল্লাহকে দিচ্ছি কিনা সেটা আগে তার নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। যদি ধর্ষকের ন্যায় আল্লাহও আমার অনুমতির তোয়াক্কা না করে, তাহলে একজন ধর্ষক ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকেনা।