বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং লাল গণহত্যা

Print Friendly, PDF & Email

ইদানীং বহু বামপন্থীকে বিচার বহির্ভূত হত্যা কিংবা বিচারিক হত্যা, যাই হোক না কেন, সেগুলোর বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার কণ্ঠে প্রতিবাদ করতে দেখি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেকোন হত্যাই নিন্দনীয়। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের হত্যা করতে পারে না। পুলিশের হেফাজতে যে কোন অত্যাচার, নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইলিং এর মাধ্যমে তথ্য আদায়ের চেষ্টা, সেগুলো অতি অবশ্যই ভয়াবহ মানবতাবিরোধী কাজ। আমরা যারা নিজেদের সভ্য দাবী করি, তারা সকলেই তার প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু লাল ঝাণ্ডা ঝুলিয়ে স্ট্যালিন মাও সে তুং পলপটের ছবিযুক্ত পতাকা বহন করে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বাক স্বাধীনতার মত লিবারেল বুর্জোয়ায় তারা কীভাবে পরিণত হলো! এটা পুরোপুরি কন্ট্রাডিকটরি। স্ববিরোধীতা। স্ট্যালিন মাও সেতুং এর ছবি নিয়ে বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করার মত হাস্যকর বিষয় আর কী হতে পারে? এখনকার কমিউনিস্টরা কী মানববাদীতে পরিণত হলো? কিন্তু মানববাদ তো তাদের ভাষাতেই বুর্জোয়া মতাদর্শ!

এই লেখাটার উদ্দেশ্য সম্পর্কে খানিকটা বলে নেয়া জরুরি। কিছুদিন আগে প্রখ্যাত মার্ক্সবাদী বদরুদ্দীন উমর একটা কলাম লিখলেন। সেখানে তিনি দাবী করলেন, বাঙলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে কোন নির্যাতন হয় না। আমার ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা বদরুদ্দীন উমরের এক চ্যালা ইনিয়ে বিনিয়ে বদরুদ্দীন উমরের এরকম অসভ্য এবং ইতর মার্কা লেখার পক্ষে বেমালুম সাফাই গেয়ে গেলো! একটু চক্ষু লজ্জা পর্যন্ত হলো না। ঐদিকে আরেকজন হচ্ছে ফরহাদ মজহার। তার এক চ্যালা নিয়মিত ফরহাদ মজহারের নানা আজেবাজে কথার পক্ষে সাফাই গেয়ে যায়। ফরহাদ মজহার কিছুদিনের মধ্যেই মার্ক্সকে একজন ইমানদার মুসলমান না বানিয়ে বোধহয় ছাড়বে না। রাশেদ খান মেনন আর হাসানুল হক ইনুর কিছু চ্যালা আছে, তারাও তাদের নেতার লাইনেই আছে। সারাজীবন লাল ঝাণ্ডা ধরে থেকে বয়স হলে পরে তারাও সুযোগ বুঝে হজ্ব করে আলহাজ্ব হয়ে যাবে নিশ্চিতভাবেই। আবার মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সাহেব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বলে আসলেন, নাস্তিকতা আর কমিউনিজম নাকি পরস্পর বিরোধী। মানে আস্তিকতাই প্রকৃত ও সহি কমিউনিজম! এর পক্ষেও ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা এক চ্যালা ফালতু সব যুক্তি দেখাল। অর্থাৎ কেউ নেতার লাইনের বাইরে ভাবতে পারছে না। রাজনৈতিক মতাদর্শ তাদের বোধবুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করছে। বামপন্থীদের তো এরকম হওয়ার কথা ছিল না।

অবাক হই নি। বাঙালি মূলত মাজারপন্থী জাতি। তারা সবাইকে পীরে পরিণত করতে পারে, এবং পীরের দরজায় মোমবাতি জালানো ছাড়া তাদের স্বাধীন চিন্তা তৈরি হয় না। মুক্তচিন্তা হচ্ছে, নিজের বিবেক বুদ্ধি খাঁটিয়ে যেকোন ধারণাকে গ্রহণ বা বর্জন করা। সেটা ভুল হতে পারে, কিংবা শুদ্ধ। যাইহোক। কিন্তু যুক্তিটুকু হতে হবে নিজের বিচার বিবেচনার। অন্যের মাথা খাটানো বিচার বিবেচনা নয়। নেতা বলেছে, বা ধর্মগুরু বলেছে, তাই মেনে নিতে হবে, সাফাই গাইতে হবে, এমনটা মুক্তচিন্তার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। এমনকি, আমার কথাও কাউকে নির্দ্বিধায় আমি মেনে নিতে বলি না। যে নির্দ্বিধায় সব মেনে নেয়, পার্টি বা নেতার মতের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না, তার সাথে কোন জঙ্গি মুসলমানের আমি তেমন কোন পার্থক্য দেখি না। একজন জামাতি, হেফাজতি, ইসলামিস্ট যেমন কেতাব পড়ে, ধর্মগুরুর সকল মতের সাথে মাথা ঝুলিয়ে সমর্থন দেয়, এখনকার বামপন্থীরাও একই কাজ করছে। তাই বাম রাজনীতির এখন কোন ভবিষ্যত নেই। তারা সমাজতন্ত্রকেও একটি ধর্মে পরিণত করেছে। যেই ধর্মের মোল্লা আছে, পুরোহিত আছে, পীরের দরগা আছে। কেতাব আছে, ভক্ত আছে, অন্ধবিশ্বাস আছে।

আমাদের দেশের বামপন্থীদের মধ্যে মুক্তিচিন্তার বিকাশ ঘটাবার প্রয়াস খুব কম দেখি। প্রচলিত রাজনৈতিক ধারা হচ্ছে, হাসিনা খালেদা এরশাদ যা বলবে, পার্টির কর্মীরা সেটাতেই সমর্থন দেবে। বামপন্থীদের কাছ থেকে আলাদা কিছু আশা করা নিশ্চয়ই অপরাধ নয়। তারা যখন একই লাইনে কাজ করে, কথা বলে, তখন বুঝতে হয়, বামপন্থীদের আসলে গোড়াটুকুই মজবুত হয় নি। তারা ধর্মান্ধ মুসলমান থেকে শুধু দলান্ধ বামপন্থী হয়েছে মাত্র।

আরো আলাপ শুরুর আগে যে কথাটা বলে নেয়া জরুরি, আমি নিজেকে একজন বামপন্থী বলেই মনে করি। তবে হয়তো আমার বামপন্থী বন্ধুদের মত সহি বামপন্থী আমি নই। বিশেষ করে তারা এখন বামপন্থার মোল্লা পুরুত হয়ে উঠেছেন, কে মুমিন বামপন্থী আর কে কাফের বামপন্থী তা ফতোয়া দিয়ে নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। সে যাক। আমার ইউরোপের বামপন্থী বন্ধুরা আমাকে নিও লিবারেল বুর্জোয়া বলে ডাকে, আমি আপত্তি করি না। বামপন্থা, সোশ্যালিজম, বা গণতন্ত্র কোন বদ্ধ বিষয় না। এগুলো যুগের সাথে পরিবর্তন হবে, নিজেদের শুধরে নেবে। আমি শুধরে নেয়ার পক্ষের মানুষ। ক্রমশ বিবর্তনের পথে আমি হাঁটতে চাই। কোন বিষয়কে ধ্রুব বা অপরিবর্তনীয় বলে আমি মনে করি না। আমার কাছে মানব সমাজের সকল সমস্যা সমাধানের কোন ঐশী কেতাব নেই, কোন লাল বই নেই। আমি যেকোন সমস্যা নিয়ে আলাপ করতে চাই, আলোচনার পথ খুলে রাখতে চাই। সমালোচনার জায়গা তৈরি করতে চাই। সমস্যার সমাধান সেভাবেই আসবে। কোন ঐশী কেতাব, পরিপূর্ণ জীবন বিধান বা মানব সমাজের মুক্তি বা প্রলেতারিয়েতের একনায়কতন্ত্র বা নাৎসিবাদ বা জাতীয়তাবাদ কোন মতবাদকেই আমি সমালোচনার উর্ধ্বে মনে করি না। এই দিক দিয়ে বামপন্থীদের সাথে ইসলামপন্থীদের খানিকটা মিল দেখা যায়, যে তারাও ইসলামপন্থীদের মতই সমালোচনা শুনতে চান না। নিজেদের ভুল শুধরে নেয়া তো দুরের ব্যাপার। ইসলামপন্থীরা যেভাবে সব সমালোচনার উত্তর দেন ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র বলে, বা ইসলামোফোবিক বলে, কমিউনিস্টরাও একইভাবে সব কিছু সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র, পুঁজিবাদের দালাল, ইউরোপে আমেরিকার টাকা খাওয়া এসব বলে ধামাচাপা দিতে চান। তবে তাতে সত্য পরিবর্তন হয় না। শুধু নিজেদের রঙ প্রকাশ পায়।

কিন্তু আমি কীভাবে নিজেকে বামপন্থী বলে দাবী করি? তাই ডানপন্থা এবং বামপন্থার ইতিহাস কিছুটা আলাপ করে নেয়া উচিত। এই আলোচনার মোটামুটি শুরু হয়েছিল ফ্রেঞ্চ রেভুল্যুশনের সময়। মহান ফরাসী বিপ্লব। ফরাসী বিপ্লবে যারা ছিলেন প্রচলিত ধর্ম, আইন, রাষ্ট্রব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, প্রথা, সামাজিক নিয়মকানুন ইত্যাদির পক্ষে, তারা ছিলেন ডানপন্থী অথবা রক্ষণশীল। তারা মনে করতেন, যা যেমন আছে সেটাই সর্বশ্রেষ্ঠ, সেটাকেই চালিয়ে নিতে হবে। পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। সেটা ধর্ম সম্পর্কে, প্রথা সম্পর্কে, রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে।

অন্যদিকে আরেকটি দল ছিল, যারা ছিল প্রচলিত সমস্ত প্রথা, ধর্ম, নিয়মকানুন, আইন, রাষ্ট্রব্যবস্থার বিপক্ষে। তারা সবকিছু পরিবর্তন করে বিপ্লব চাইতেন। প্রচলিত যা নিয়ম কানুন ছিল, সে সবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন। তারা ছিলেন বামপন্থী। পরবর্তীতে বামপন্থীদের একটা অংশ সোশ্যালিজম, তার একটা অংশ কমিউনিজম, আরেকটা অংশ এনার্কিজম, আরেকটা অংশ সোশ্যাল ডেমোক্রেসির প্রবর্তন ঘটান। সেই সাথে, বামপন্থীরা দেশে দেশে নানা শুভ আন্দোলনের সূচনা করেন। প্রথার বিরুদ্ধে, ধর্মের বিরুদ্ধে, প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে, নানাভাবে। সেখান থেকে সূচনা হয় পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নারীবাদের মত শক্তিশালী আন্দোলনের, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন ম্যারি ওলস্টোনক্রাফট, সিমোন দ্যা বুভোয়া, রোজা লুক্সেমবুর্গের মত নারী। আমাদের দেশে দিয়েছেন বেগম রোকেয়া, তসলিমা নাসরিনরা। এরপরে শুরু হয় যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনের, যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফরাসী দার্শনিকগণ। বর্তমান সময়ে আরেকটি অংশ কাজ করছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মত সাড়া জাগানো গবেষণা ও আন্দোলনে। তারা পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে বলছে, প্রকৃতির ভারসাম্যের কথা। কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর ভয়াবহ প্রফিটের লোভের বিরুদ্ধে তারা একত্র করছেন পরিবেশবাদী মানুষদের। রক্ষা করতে চাচ্ছেন বন, বনের পশুপাখি। এরা সকলেই বামপন্থী।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান সময়ে অনেক বামপন্থীই কিছু বিশেষ বিষয়ে রক্ষণশীল আচরণে গোড়া ডানপন্থীদেরকেও হারিয়ে দেন। তারা আপোষকামী, তারা সমাজের স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চান। যেটা বামপন্থার মূল চেতনারই বিরুদ্ধে। আমার সমালোচনা তাদের উদ্দেশ্যে। যেসকল বামপন্থী নানা প্রথা, ধর্ম, রাষ্ট্রব্যবস্থার বশ্যতা স্বীকার করে সেসবের সাথে তালে তাল মেলান। কর্তৃপক্ষের কাছে নতজানু হন। আত্মসমর্পন করেন ধর্মের কাছে, প্রথার কাছে, হাঁটু গেড়ে বসেন উপাসনায়। ধর্মকে আঘাত করা যাবে না, রাষ্ট্রকে ছোঁয়া যাবে না, আইনকে সমালোচনা করা যাবে না, প্রচলিত নিয়মেই চলতে হবে, এরকম বদ্ধ ধারণার বশবর্তী যারা, তারা কীভাবে নিজেদের বামপন্থী দাবী করেন আমি জানি না। তারা নিয়মিত নাস্তিকদের ওয়াজ নসিহত করেন, এভাবে লেখা যাবে না, ওভাবে কথা বলা যাবে না। যারা হওয়ার কথা ছিল মুক্তমনাদের প্রধান মিত্র, সেই কমিউনিস্টরা বরঞ্চ আজকাল মোল্লাদের চাইতে বেশী চোখ গরম করে মুক্তমনাদের শাসিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না!

আমার চোখে আরজ আলী মাতুব্বর একজন বামপন্থী, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, রোকেয়া, তসলমা নাসরিন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, এমনকি জীবনানন্দ দাস পর্যন্ত একজন বামপন্থী। জীবনানন্দ প্রচলিত রাবীন্দ্রিক প্রথা থেকে বের হয়ে নতুন সাহিত্য সৃষ্টি না করলে বাঙলা সাহিত্য হয়তো অপূর্ণই রয়ে যেতো। তিনি প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গেছেন। আর অন্যদিকে আধুনিক সময়ের ডানপন্থীরা হচ্ছে আওয়ামী বুদ্ধিজীবীগণ, ফরহাদ মজহার, তার মাজারের খাদেমরা এবং অন্যান্য ভাড়াটে বুদ্ধি বিক্রেতারা। যেমন আল মাহমুদ। এরকম আরও অনেকে।

সেই সাথে আরেকটা বিষয় বলে নেয়া জরুরি, আমি নিজেকে একজন মার্ক্সবাদীও মনে করি। তবে এখানেও আমি হয়তো সেরকম সহি মার্ক্সবাদী নই। মার্ক্স আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে চিন্তা করতে হবে। চিন্তা করার পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। ইতিহাসকে কীভাবে পাঠ করতে হবে, ইতিহাসকে কীভাবে বিবেচনা করতে হবে, সেসব শেখার জন্য মার্ক্স অত্যন্ত জরুরী। তাই বলে আমি মার্ক্সকে নবী মনে করি না। আধুনিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে মার্ক্সকে বাতিল করা তাই আমার পক্ষে সম্ভব। মার্ক্সের নানা জায়গায় ভুল ছিল, নানা সীমাবদ্ধতা ছিল। একজন মার্ক্সবাদী হিসেবে নিজেকে দাবী করি বলেই সেগুলো নিয়ে আলোচনা আমি মন দিয়ে শুনি। মার্ক্সকে নবী রাসুল বানিয়ে মার্ক্সের সমালোচনা মাত্রই সাম্রাজ্যবাদের দালাল বলে চাপাতি নিয়ে হামলে পরি না।

এখন মূল আলোচনায় আসা যাক। সেই যে জোসেফ স্ট্যালিন, মাও সে তুং, পলপট, এদের পোস্টার নিয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করা, ব্যাপারটা কতখানি হাস্যকর এবং মর্মান্তিক। ঠিক যেন হিটলারের ছবি পোষ্টার বানিয়ে, বুকে নাৎসি চিহ্নের ট্যাটু লাগিয়ে ইহুদীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনের মতই। কিন্তু কেন? স্ট্যালিন, মাও সে তুং, পলপট এরা কী করেছিল?

প্রথমেই আসা যাক লেনিনের কথায়। আমরা যারা এখন প্রায় প্রতিনিয়ত নিও লিবারেল বুর্জোয়া বলে গালি খাই, তারা একটা কথা সবসময় বলি। সেটা হচ্ছে, মানুষের জীবন মূল্যবান। সেটা অপরাধীর জীবন নাকি নিরাপরাধের জীবন, সেটা ভিন্ন আলাপ। রাষ্ট্র বা বিচার ব্যবস্থা প্রতিহিংসাপরায়ণ হতে পারে না। চোখের বদলে চোখ, হাতের বদলে হাত, এগুলো অতি প্রাচীন আইন, এবং বর্বর নিয়ম। বর্তমান সময়ে সেগুলো চলতে পারে না। অপরাধীর অপরাধের পেছনে অপরাধীর যেরকম ভূমিকা আছে, সেরকম ভূমিকা আছে সমাজের, প্রথার, শিক্ষাব্যবস্থার। অপরাধের কারণ নির্ধারণ না করে অপরাধীকে নির্মূল করার ব্যবস্থা বা তাকে ভয়ঙ্কর শাস্তি দেয়া অমানবিক।

যেমন ধরুন, কোন ইসলামই জঙ্গি ধরা পরেছে। আধুনিক লিবারেলরা বলেন, সেই ছেলে বা মেয়েটি সঠিক শিক্ষা পেলে বা সভ্য সমাজে বসবাস করলে এমনটা নাও হতে পারতো। তাকে সংশোধনের সুযোগ দেয়া উচিত, এবং চেষ্টা করা উচিত সে যেন জঙ্গিবাদ থেকে ফিরে আসে। সেই সাথে, সে কেন জঙ্গি হল সেটাও বিবেচনা করা জরুরী। যেন অন্য যারা একইভাবে জঙ্গি হওয়ার ট্রেইনিং নিচ্ছে, তারা সেই পথ থেকে ফিরে আসে। সেই জঙ্গিটিকে শাস্তি হিসেবে প্রকাশ্যে পিটিয়ে মারলে বা শাহবাগের মোড়ে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করলে, জনমনে ভীতি সৃষ্টি করলে বরঞ্চ জঙ্গিদের মতাদর্শকেই প্রতিষ্ঠিত করা হয়। শাসক শ্রেণী ভাবতে পারে, এতে জঙ্গিরা ভয় পাবে বা সাধারণ জনগণ আর জঙ্গি হওয়ার সাহস পাবে না। কিন্তু সেটা মস্তবড় ভুল। মিশেল ফুকো দেখিয়ে গেছেন, এতে কোনভাবেই জনগণের অপরাধ প্রবণতা কমে না। মানুষের জীবন যে মূল্যবান, কোন অবস্থাতেই একজন মানুষ যে আরেকজন মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে না, এই ধারণা তাতে নষ্ট হয়। জনগণের কাছে মানুষের জীবনের মূল্য গৌণ হয়ে ওঠে। এরকম ভয়াবহ শাস্তি আসলে মানুষকে আরও বর্বর করে তোলে। আরও বিদ্রোহী করে তোলে।

১৯১৮ সালের ১১ অগাস্ট। লেনিন একটি টেলিগ্রাম পাঠালেন, সেখানে লিখলেন, কমপক্ষে একশ জন ভূমিমালিককে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলাতে। সেই ভূমিমালিকদের অপরাধ ছিল, তারা জমির মালিক। তারা একটা জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছে, স্বাভাবিকভাবেই শিখে এসেছে এই জমির মালিকানা তাদের, এবং যারা তাদের জমিতে কাজ করে তারা তাদের প্রজা। তারা অনেকেই অত্যাচারী ছিল, নির্যাতক ছিল সন্দেহ নেই। কিন্তু এ কেমন বিচার? এ কেমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞ? তারা সকলেই কী অত্যাচারী ছিল? ভূমি মালিক মাত্রই কী অত্যাচারী? কোন পদ্ধতিতে বিচার করা হয়েছিল, কারা অত্যাচারী আর কারা অত্যাচারী নয়? কোন পদ্ধতি কী আদৌ ছিল? তিনি লিখেছেন,

“Comrades! The insurrection of five kulak districts should be pitilessly suppressed. The interests of the whole revolution require this because ‘the last decisive battle’ with the kulaks is now under way everywhere. An example must be demonstrated.

Hang (and make sure that the hanging takes place in full view of the people) no fewer than one hundred known landlords, rich men, bloodsuckers.

Publish their names.

Seize all their grain from them.

Designate hostages in accordance with yesterday’s telegram.

Do it in such a fashion that for hundreds of kilometres around the people might see, tremble, know, shout: “they are strangling, and will strangle to death, the bloodsucking kulaks”.

Telegraph receipt and implementation.

Yours, Lenin.

Find some truly hard people”

লেনিনের চিঠিঃ

লেনিনের আরও কিছু বিখ্যাত বক্তব্যঃ

১) “If for the sake of Communism it is necessary for us to destroy 9/10ths of the people, we must not hesitate.”

২) “One out of ten guilty of parasitism will be shot.”

৩) “Merciless war against the kulaks! Death to the kulaks!”

৪) “launch merciless mass terror against kulaks, priests, and White Guards. Suspicious individuals to be locked up in concentration camp outside city.”

সকল ধর্মগুরুরা কী অত্যাচারী ছিল? সকল রক্ষীরা কী নির্যাতক ছিল? নির্দয় আতঙ্ক সৃষ্টির মানে কী? কতটা নির্দয় হওয়া জরুরি ছিল? সন্দেহজনক সকলকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী করার কথা লেনিন বলে থাকলে, এখনকার ৫৪ ধারা আইনকে আমরা কালো আইন কেন বলি?

ঠিক আছে, না হয় মেনে নিলাম বিপ্লবের সময় লেনিনের হয়তো অনেক বেশি কঠোর হওয়া দরকার ছিল। সে সময়ে জমিদার এবং জারের সমর্থকরাও নিশ্চিতভাবেই কমিউনিস্টদের আরও ভয়াবহভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু স্ট্যালিন? সে কার সাথে যুদ্ধ করছিল? কিসের বিপ্লব করছিল? নিজের মানুষের মেরে লাশের পাহাড় বানিয়ে সে কী করছিল?

শুধুমাত্র কাতিন গণহত্যার কথাই বলা যাক।  ১৯৪০ সালে সোভিয়েত স্বৈরশাসক জোসেফ স্ট্যালিন প্রায় ২২ হাজার সেনাকে হত্যা করে। (http://ipn.gov.pl/en/news/2006/deci…)

এটা স্ট্যালিনের মোট হত্যাযজ্ঞের অতি সামান্য অংশ মাত্র। সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা পুরো সোভিয়েত ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা, যাকে তাকে ধরে নিয়ে সাইবেরিয়ায় কাজ করতে পাঠানো, বাক স্বাধীনতা হরণ, পুলিশী নির্যাতনের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছিল একা স্ট্যালিনই। সেই সময়ে নানা কৌতুকও প্রচলিত আছে, কীভাবে স্ট্যালিন সবার কথা বন্ধ করে রেখছিল। বুদ্ধিজীবী, ভিন্ন মতাবলম্বী, লেখক সাহিত্যিক কবি, যারাই স্ট্যালিনের সামান্যতম সমালোচনা করেছিল, পুঁজিবাদের দালাল আখ্যা দিয়ে সবাইকে পাঠানো হয়েছিল সাইবেরিয়ায়। সেই একই কাজ এখনো করে যাচ্ছে আমাদের বামরাও। সামান্য সমালোচনা শুনলেই পুঁজিবাদের দালাল, সাম্রাজ্যবাদের দোসর বলতে একটুও তাদের কষ্ট হয় না। সমালোচনার জবাব দেয়ার চাইতে বরঞ্চ সেটাই সহজ। ভাগ্যিস তাদের হাতে অস্ত্র নেই, নইলে শ্রেণীশত্রু আখ্যা দিয়ে খতম করতেও তারা কম পারদর্শি ছিল না। পূর্ব বাঙলা কমিউনিস্ট পার্টি তা করে দেখিয়েছে।

স্ট্যালিনকে নিয়ে আসলে শুধু কয়েক পাতা লিখে শেষ করা যাবে না। তার জীবন এক রোমাঞ্চকর গল্পের মতই। প্রথম জীবনে তিনি ব্যাংক ডাকাতি করেছিলেন, গুপ্ত বাহিনী গঠন করেছিলেন। বহুবার তিনি ধরা পরেন এবং নির্বাসিত হন, কিন্তু ফিরে এসে আবারো একই রকম কাজ করতে থাকেন। লেনিনের অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তিনি পার্টির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারই হয়ে যান, জানা যায় এই নিয়ে লেনিন বেশ বিরক্তই ছিলেন। কিন্তু মারা যাওয়ার আগে লেনিনের শেষ পত্রটি কোনদিনই বাইরে প্রকাশ পায় নি। এদিকে ক্ষমতায় একক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ট্রটস্কিকে তিনি দেশ ত্যাগে বাধ্য করেন, গোপন গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে মেক্সিকোতে ট্রটস্কিকে খুনও করান। ট্রটস্কি ছিলেন রুশ বিপ্লবের অন্যতম অংশ, লেনিনের সাথে যার নামও জড়িয়ে আছে ভালভাবে। এরপরে মোটামুটি সমস্ত উপদ্রবকে, সমস্ত বিরোধী শক্তিকে পরিষ্কারভাবে উচ্ছেদই করেন স্ট্যালিন।

যে সময়ে গোটা সোভিয়েত ইউনিয়নে নিদারুণ দুর্ভিক্ষ চলছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছিল, সে সময়ে তিনি ব্যস্ত ছিলেন গ্রাম ও শহরের নাম নিজের নামে নামকরণের। স্ট্যালিন শান্তি পুরস্কার নামে একটি পুরস্কারেরও প্রবর্তন করেন তিনি। ‘মানবতার এক উজ্জ্বল প্রতিভা’ ‘সমাজতন্ত্রের গোড়াপত্তনকারী’ ‘জাতির পিতা’সহ অনেক উপাধি নিজেই নিজেকে দান করেন, বা চাটুকারদের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। এমনকি, ১৯৪৮ সালে তাকে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেয়ার জন্যেও মনোনীত করা হয়েছিল!

আরও মজার বিষয় হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় স্ট্যালিন জাতীয় সংগীতে নিজের নাম ঢুকিয়ে দেন। সেই সাথে নতুন ইতিহাস লিখতে বাধ্য করেন, যেই ইতিহাসে স্ট্যালিনকেই মানব ইতিহাসের মহানায়ক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। গল্প সাহিত্য কবিতা সমস্ত কিছুই তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন। যারাই তার বিরুদ্ধে লিখত, তার পরের দিন কেজিবি সদস্যরা তাকে তুলে পাঠিয়ে দিতো সাইবেরিয়ায়। এমনকি, রূপকভাবে তার বিরুদ্ধে কিছু লিখলেও রেহাই ছিল না। দুর্ভিক্ষের পরে যেই আদমশুমারি হয়েছিল, সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের লোকসংখ্যা অনেক কম হওয়ায় গণনাকারীদেরকেও পাঠানো হয়েছিল সাইবেরিয়ায়। স্ট্যালিন দুর্ভিক্ষে এত মানুষ মারা যাওয়াকে বেমালুম অস্বীকার করে আবার আদম শুমারি করান। সেখানে নিজেই বলে দেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। তখন আর গণনাকারীরা এই সংখ্যাটি পালটাবার সাহস করে নি। কার এত বড় বুকের পাটা?

এ তো গেল স্ট্যালিনের কথা। গণহত্যার হিসেবে মাও সেতুং এর কাছে সে আসলে ছিল  দুগ্ধপোষ্য শিশু মাত্র। মাও সে তুং এর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সময়ে এবং শাসনামলে সর্বমোট ৭ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে। সেই ইতিহাস লিখতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, মাও সে তুং এর সময় চীনের অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপরে দাঁড়ায়। মজবুত হয় গোটা চীনের অবকাঠামো। কিন্তু তা কিসের বিনিময়ে? কত কোটি মানুষের প্রাণের বিনিময়ে?

আসুন দেখি কয়েকজন কমিউনিস্ট শাসকের গণহত্যার পরিসংখ্যান-

মাও সে তুং- প্রায় ৭ কোটি ৮০ লক্ষ ।
জোসেফ স্টালিন- প্রায় ২ কোটি ৩০ লক্ষ
কিম ইল সুন (উত্তর কোরিয়া) –  ১৬ লক্ষ
পল পট(কম্বোডিয়া)- ১৭ লক্ষ ।
মার্শাল টিটো( যুগোশ্লাভিয়া) – ৫ লক্ষ ৭০ হাজার ।
স্লোবদান মিলোসেভিক(যুগোশ্লাভিয়া)-  ১ লক্ষ ৮০ হাজার ।
সাদ্দাম হোসেন(ইরাক) ৬ লক্ষ ।
উপরের একজন শাসকের সময়েও সেসব দেশে বাক স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। যারাই কমিউনিস্ট শাসনের বিরোধীতা করেছে, বা সমালোচনা করেছে, সকলকে হত্যা করা হয়েছে কিংবা নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। এগুলো শুধু সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপপ্রচার নয়। গণহত্যার অসংখ্য তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড? এত হাজার হাজার উদাহরণ যে গুণে শেষ করা যাবে না। এগুলো সাম্রাজ্যবাদী প্রোপাগান্ডা হলে হিটলারের গণহত্যাও ব্রিটিশ মার্কিন প্রোপাগান্ডা, ইয়াহিয়া খানের গণহত্যাও ভারত রাশিয়ার প্রোপাগান্ডা, বিএনপি জামাতের সময়ে ক্রসফায়ারও আসলে আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডা, আওয়ামী লীগের আমলের ক্রসফায়ারগুলিও আসলে বিএনপি জামাতের প্রোপাগান্ডা, গোটা পৃথিবীটাই একটা প্রোপাগান্ডা আর ষড়যন্ত্র। মানুষ তো এখন আর ঘাস খায় না।

সে সময়ে এই ধরণের হত্যা, নির্যাতন, বাক স্বাধীনতা হরণের প্রয়োজন ছিল? এই একই যুক্তি কিন্তু আজকে আওয়ামী লীগ দিচ্ছে। আগে বিএনপি জামাত দিয়েছিল। র‍্যাবের ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, এই সবকিছুরই একটা ব্যাখ্যা প্রচলিত শাসকেরা দেয়ার চেষ্টা করে। জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে অগণিত রক্তের। অসংখ্য মৃত্যুর। মানুষ খুনের জন্য ধর্মের দোহাই দেয়া যেমন অন্যায়, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার দোহাই দেয়াও অন্যায়। বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য রক্তারক্তির প্রয়োজন, এসবই খুব মর্মান্তিক শোনায়, যখন অসংখ্য নারী শিশুর লাশের ছবি সামনে চলে আসে।

আমাদের দেশের কমিউনিস্টরা কী এইসকল গণহত্যাকে শুধুই ইহুদি নাসারাদের ষড়যন্ত্র, বা সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত বলে উড়িয়ে দেবে? এই গণহত্যাগুলোর ফয়সালা তারা কীভাবে করেছে? লিবারেলিজমের যেই ধারণা তারা এখন প্রচার করছে, একই সাথে লিবারেলদের বুর্জোয়া বলে গালি দিয়ে, সেটা তাদের মতাদর্শের সাথে কতটা খাপ খায়?

আর তারা যদি এইসকল গণহত্যার ফয়সালাই এখন পর্যন্ত করে উঠতে না পেরে থাকে, তাহলে তারা কীভাবে ফরহাদ মজহার, কিংবা বদরুদ্দীন উমর, বা মেনন-ইনুর পার্টিতে থেকে তাদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে নিজেদের মতামত প্রকাশ করার সাহস করবে? ধর্ম প্রথা রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধ্বে উঠে মুক্তভাবে চিন্তা করা শিখবে? আর তারা যদি অন্যান্য দলের মত দলীয় লেজুড়বৃত্তিই করতে চায়, তাহলে বামপন্থী বলে নিজেদের কেন দাবী করছে?

তাই আধুনিককালে নতুন আবিষ্কার হওয়া  প্রবল রক্ষণশীল, ধর্ম বা প্রথা বা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে গোড়া এবং ডানপন্থী কমিউনিস্ট বন্ধু এবং পরিচিতজনদের কাছে অনুরোধ, দয়া করে অন্তত স্ট্যালিন বা মাও সে তুং এর ছবি কভার ফটো হিসেবে ব্যবহার করে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিরোধী, ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টার বিরোধী, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বিরোধী জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস দেবেন না। দেখতে খুব হাস্যকর লাগে।

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

One thought on “বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং লাল গণহত্যা

  • June 24, 2020 at 12:46 AM
    Permalink

    আপনার লেখাটি খুব ভালো লাগলো। কিন্তু বিভিন্ন শাসকের গণহত্যার যেসব সংখ্যা উল্লেখ করেছেন, সেগুলির তথ্যসূত্র কী?

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *