ধর্মের মনস্তত্ত্ব

বিশ্বাস (Belief)

বিশ্বাস ও জ্ঞান (Belief and knowledge)

মনের ধারণার সঙ্গে বহির্জগতের বস্তুর সাদৃশ্য ও এই সাদৃশ্যে আমাদের বিশ্বাস মনে জ্ঞানের সঞ্চার করে। জ্ঞানকে বিশ্লেষণ করতে তিনটি উপাদান পাওয়া যায় –
(১) a system of ideas in the mind (মনের মধ্যে এক বা একাইক পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত ধারণার অবস্থান)
(২) a fact or a system of facts in the environment (সেই ধারণার সাথে সাদৃশ্য-যুক্ত এক বা একাধিক বস্তুর বাইরের জগতে অবস্থান)
(৩) a belief in their correspondence (১ ও ২ উভয়ের সাদৃশ্যে মনে বিশ্বাস)

তাই দেখা যায়, বিশ্বাস হল জ্ঞানের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। গাছের পাতার সবুজত্ব সম্পর্কে আমার মনে ধারণা আছে। আমার মনের ধারণার সাথে বাইরের বস্তুর অর্থাৎ গাছের পাতার মিল আছে। আবার এই উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্যও আছে। সমস্ত জ্ঞানের ক্ষেত্রেই বিশ্বাস থাকে, কিন্তু বিশ্বাস থাকলেই যে জ্ঞান হবে তা নয়। আমাদের মনে বিশ্বাস থাকতেই পারে যে “সোনার পাহাড়” এর অস্তিত্ব আছে। কিন্তু বাইরের জগতের কোন বস্তুর সাথে আমার এই ধারণার মিল নেই। এক্ষেত্রে বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও যথার্থ জ্ঞান লাভ হল না। অনেক ব্যক্তি নানান কুসংস্কারে বিশ্বাস করে, সেগুলোকেও জ্ঞান বলা যায় না। নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার ফলে আমাদের মনের অনেক ভুল বিশ্বাস দূর হয়, আর অনেক নতুন বিশ্বাস মনে জাগরিত হয়।

বিশ্বাসের প্রকৃতি (Nature of Belief)

যুক্তিবিদ্যা থেকে বিশ্বাসের সংজ্ঞা দেয়া কঠিন, এটা একধরণের চেতন-প্রক্রিয়া। সাধারণত বিশ্বাস বলতে বাস্তবতার ধারণা ও চেতনা (consciousness of reality)। আমি কোন জিনিস বিশ্বাস করি, এর মানে হল আমি ধারণা করি যে এটি বাস্তব, অর্থাৎ আমার মধ্যে আমার বিশ্বাস রিয়ালিটি সম্পর্কে একরকম কনশাসনেস তৈরি করছে। তাই বিশ্বাস হল কোন কিছুর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চয়তার অনুভূতি। যে ব্যক্তি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সে নিশ্চিত, ঈশ্বরকে সে বাস্তব বলে মনে করে।

তো এই বিশ্বাস জ্ঞানমূলক, অনুভূতিমূলক নাকি কর্মপ্রবৃত্তিমূলক? এটা নিয়ে মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। কেউ মনে করেন বিশ্বাস জ্ঞানমূলক। হিউম, জেমস প্রমুখ মনে করেন বিশ্বাসকে ফেলা উচিৎ অনুভূতিগুলোর তালিকায়। আবার বেইন এর মত কারও কারও মতে বিশ্বাস হল কর্মমূলক। আবার অনেকে মনে করেন বিশ্বাসের মধ্যে তিনটি উপাদানেরই অস্তিত্ব আছে। যাই হোক, এই উপাদানগুলো সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাক –

(১) জ্ঞানমূলক (cognitive) উপাদান

যেকোন বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ধারণা বা জ্ঞানের অস্তিত্ব আছে বলে এটা মনে করা হয়। যখন কেউ কোন কিছুতে বিশ্বাস স্থাপন করে তখন সেই সম্পর্কে তার মনে কোন ধারণা থাকে। যে লোক অলৌকিক বিষয়বস্তুতে বিশ্বাস করে, তার মধ্যে সেই অলৌকিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা আছে। ঈশ্বরের ধারণা না থাকলে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা যায় না। দিবাস্বপ্ন বা অলীক কল্পনা ছাড়া যে কোন চিন্তনের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাসের অস্তিত্ব দেখি। অবশ্য এটাও মনে রাখতে হবে যে চিন্তন বা ধারণার অস্তিত্বই বিশ্বাসের একমাত্র অঙ্গ নয়। নিছক চিন্তনের তুলনায় বিশ্বাসের ধারণাটি বেশি ব্যাপক, অবশ্য সব চিন্তনই বিশ্বাস নয়।

(২) অনুভূতিমূলক (Affective) উপাদান

এই অনুভূতি আবার দুইরকম –

(ক) বিশ্বাসের মধ্যে একটি বাধ্যবাধকতার ভাব বা ফিলিং অফ কমপালশন বা ফিলিং অফ কনস্ট্রেইন্ট থাকে। বিশ্বাস করা বা না করা আমাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। যা আমরা বিশ্বাস করি, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করতে বাধ্য হই।

(খ) বিশ্বাসের মধ্যে একটা নিশ্চিন্ত হওয়ার ভাব বা স্বস্তির ভাব (এ ফিলিং অফ রিলিফ) থাকে। মন যখন সন্দেহের দোলায় দুলতে থাকে, তখন মনে একটা অস্বস্তির ভাব জাগে। কিন্তু মন থেকে সন্দেহ দূর করে আমরা যখন বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি তখন মনের এই অস্বস্তির ভাব দূর হয়ে যায়। একারণে কোন কোন মনোবিজ্ঞানী বিশ্বাসকে কেবলই অনুভূতি বলে মনে করেন।

(৩) কর্মপ্রবৃত্তিমূলক (Conative) উপাদান

ঘটনা বা পরিবেশের সাথে সঙ্গতি সাধনের জন্য বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করার জন্য বিশ্বাস আমাদেরকে প্রবৃত্ত করে। ধরা যাক, আমি বিশ্বাস করি যে আমার পরিচিত কোন ভদ্রলোকের চুরির স্বভাব আছে। সেক্ষেত্রে আমি সব সময় তার সম্পর্কে সতর্ক হয়ে চলি। আবার আমার বিশ্বাস আছে যে, আমার কোন এক বন্ধু বেশ দায়িত্বশীল। সেক্ষেত্রে তার উপর কোন একটি কাজের ভার অর্পন করে আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারি। এটা হল বিশ্বাসের কর্মমূলক উপাদান।

মনোবিজ্ঞানী স্টাউটের মতে বিশ্বাস কর্ম করার অন্যতম শর্ত, আবার কর্মের মূলে রয়েছে বিশ্বাসের অস্তিত্ব। মনোবিজ্ঞানী বেইন বলেন, “কোন কিছুতে বিশ্বাস স্থাপন করলে আমরা কাজে প্রবৃত্ত হতে পারি।” বিশ্বাস যেম্ন কর্ম করার শরতস্বরূপ, তেমনি কর্মও বিশ্বাসের শর্তস্বরূপ। আমাদের প্রয়োজন এটা নির্ধারণ করা যে আমরা কিসে বিশ্বাস করব বা করব না। কাজেই বিশ্বাস কর্মের উপর নির্ভরশীল, আবার কর্মও বিশ্বাসের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

বিশ্বাসের ভিত্তি বা কারণ (Grounds or conditions of belief)

বিশ্বাসের কারণগুলোকে, অর্থাৎ যেসব কারণে বিশ্বাস উৎপন্ন হয় বা যেসব অবস্থার উপর বিশ্বাস নির্ভরশীল থাকে তাদেরকে চারভাগে ভাগ করা যেতে পারে –

(ক) জ্ঞানমূলক অবস্থা বা কারণ (cognitive conditions)

(১) প্রত্যক্ষকরণ (perception):

কোন বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবস্থা বা কারণ হল পারসেপশন বা প্রত্যক্ষকরণ। কোন কিছুকে আমরা প্রত্যক্ষ করলে বা পারসিভ করলে তাতে সহজেই আমরা বিশ্বাস স্থাপন করি। কোন কিছু সম্পর্কে মনে কিছুটা অবিশ্বাস থাকলেও তা দেখে বা স্পর্শ করে আমরা সেই বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসকে আরও শক্ত করি। পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা প্রত্যক্ষ করি। চোখের সাহায্যে দেখে, ত্বকের সাহায্যে স্পর্শ করে, নাকের সাহায্যে গন্ধ নিয়ে, জিভের সাহয্যে স্বাদ নিয়ে, কানের সাহায্যে শব্দ নিয়ে আমরা প্রত্যক্ষ অরি। আবছা অন্ধকারে দেখছি সামনে একজন মানুষ আছে, সন্দেহ থাকলে হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখি আসলেই মানুষ কিনা। তাই প্রত্যক্ষকরণ বা পারসেপশন আমাদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি ও নির্ধারণ করে।

(২) স্মৃতি (memory):

স্মৃতি আমাদের মনের মধ্যে যে প্রতিরূপ বা ইমেজগুলোকে জাগরিত অরে সেগুলোর মাধ্যমে আমরা অতীত ঘটনায় বিশ্বাস স্থাপন করি। স্মৃতি এই বিশ্বাস উৎপন্ন করে যে, প্রতিরূপগুলো হচ্ছে অতীতে প্রত্যক্ষকরণ করা বিষয়গুলোরই যথার্থ প্রতিরূপ।

(৩) অনুমান (inference):

দূরে পাহাড় থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে অনুমান করি যে সেখানে আগুন আছে। অনুমানের লক্ষণ হল জানা সত্যের উপর ভিত্তি করে ও তার দ্বারা সমর্থিত হয়ে অজানা সত্যে উপনীত হওয়া। মানে, আগে কোন বিষয় প্রত্যক্ষ করেছি বলে মনে যে বিশ্বাস জেগেছে, তার উপর ভিত্তি করে অজানা কোন বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা হয় অনুমান বা ইনফারেন্স এর সাহায্যে।

(৪) আপ্তবাক্য বা শব্দ (testimony):

নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যে আমরা সহজেই বিশ্বাস স্থাপন করি। কোন বিষয় সম্পর্কে সন্দেহ জাগলেও যখন শুনি কোন প্রামাণ্য গ্রন্থে বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করি।

(৫) জ্ঞান ও শিক্ষণ (knowledge and learning):

কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান সেই সম্পর্কে আমাদের মনে বিশ্বাস উদ্রেক করে। বিশ্বাস হল জ্ঞানের এক অনিবার্য উপাদান। আণবিক শক্তি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করলে, আণবিক বোমার ধ্বং সকারিতা সম্পর্কে মনে বিশ্বাস তৈরি হয়। কাজেই শিক্ষণও বিশ্বাস উৎপাদন করে। যে বিষয় আমরা শিক্ষণ করি, সেই শিক্ষণের ভিত্তিতে পরে কোন একটি কাজ করতে হলে সেটা ভালভাবে করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।

(৬) অবিচ্ছেদ ধারণার অনুষঙ্গ (Inseparable association of ideas):

যদি দুটি বস্তু আমাদের অভিজ্ঞতায় এমনভাবে অনুষঙ্গবদ্ধ বা এসোসিয়েটেড হয়ে পড়ে যে তাদের আমরা অবিচ্ছেদ্য বা ইনসেপারেবল বলে মনে করি, তবে ঐ দুই ধারণার একটির কথা মনে হলে অপরটিও তার সাথে জড়িত এমন বিশ্বাস মনে জাগে। যেমন খাদ্যের সাথে ক্ষুধার সম্পর্ক, জলের সাথে তৃষ্ণার সম্পর্ক। খাদ্য যে ক্ষুধার নিবৃত্তি করে, জল যে তৃষ্ণানিবারণ করে, এই প্রত্যক্ষে খাদ্য ও ক্ষুধা, বা জল ও তৃষ্ণার প্রতিরূপ অবিচ্ছেদ্যভাবে অনুষঙ্গবদ্ধ হয়ে এদের সম্পর্কে বিশ্বাস উৎপাদন করে।

(৭) অভিভাবন (Suggestion):

কোন কথা বারবার বলা হলে বা আভাসে, ইঙ্গিতে, সঙ্কেতে কোন কথা বারবার উল্লেখ করা হলে তার সম্পর্কে আমাদের মনে বিশ্বাস জাগে। “জনি চোর” এই কথাটা যদি পরিচিত সবার মুখ থেকে বারবার শুনতে পাই তাহলে আমাদের মনে বিশ্বাস জাগ্রত হয় যে জনি আসলেই চোর। এভাবে অলীক ঘটনার চিত্তাকর্ষক উচ্ছসিত বর্ণনাও মনে বিশ্বাস উৎপাদন করে। (পৌরাণিক কাহিনীগুলোকে এত চিত্তাকর্ষকভাবে কেন বর্ণনা করা হয় ভেবে দেখুন)

(খ) অনুভূতিমূলক অবস্থা বা কারণ (Affecive or emotional conditions)

(১) মনে ভয় জাগলে আমরা আজগুবি ঘটনাও বিশ্বাস করি।

(২) অনেক সময় অহঙ্কার মানুষকে এতই অন্ধকারে ফেলে যে, সে নিজেকে সবার থেকে বেশি বুদ্ধিমান বলে মনে করে।

(৩) যদি কোন ব্যক্তি অন্যের উপর রেগে যায় তাহলে সে তার বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগকেই সত্য বলে বিশ্বাস করে।

(৪) শ্রদ্ধার আতিশয্যে আমরা কোন ব্যক্তির যে-কোন কথাতেই বিশ্বাস করি, তিনি যতই অবাস্তব কথা বলুন না কেন।

(৫) গিল্ডফোর্ড বলেন, “There is a tendency for the masses to accept the judgments of an expert in a single field when he utters opinions upon any question whatsover.” অর্থাৎ, “কোন ব্যক্তি, যিনি বিশেষ কোন এক ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ, তিনি যখন যেকোন প্রশ্ন সম্পর্কেই অভিমত প্রকাশ করেন, সাধারণের মধ্যে তার বক্তব্যে বিশ্বাস স্থাপন করার এক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।” একজন ব্যক্তি করোনাভাইরাস সম্পর্কে সাধারণের বক্তব্যের চেয়ে একজন ডাক্তার বা ভাইরোলজিস্ট বা ইমিউনোলজিস্ট বা জিনেটিসিস্ট এর কথা বেশি বিশ্বাস করবে। (মিশেল ফুকো তার ডিসকোর্স এর পাওয়ার এর সম্পর্ক আলোচনায় এই প্রসঙ্গটা টেনেছিলেন।)

(৬) গিল্ডফোর্ড বলেন, “We often believe what we wish to believe, even when we know better”। অর্থাৎ, “আমরা প্রায়ই তা বিশ্বাস করি যা আমরা বিশ্বাস করতে চাই। আমরা নিজে সেই সম্পর্কে (অন্য কিছু) ভালভাবে জানলেও যা আসলে বিশ্বাস করতে চাই সেটাই বিশ্বাস করি।” (confirmation bias নামে একটি বায়াস এই ব্যাপারটার ব্যাখ্যা দেয়, সেটা নিয়ে পরে লেখা হবে)।

(৭) ব্যক্তির মনের গঠনগত প্রকৃতি অনেক সময় তার মনে বিশ্বাস উদ্রেক করার কারণ হয়। আশাবাদী ব্যক্তি নিজের ভবিষ্যৎ সাফল্যে বিশ্বাস স্থাপন করে।

(গ) কর্মপ্রবৃত্তিমূলক অবস্থা বা কারণ (Conative conditions)

(১) ব্যক্তির ইচ্ছা বা কর্মপ্রবৃত্তি মনে বিশ্বাস উৎপাদন করে। অসুস্থ শিশুকে সারিয়ে তোলার জন্য মায়ের মনে এমন তীব্র ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা জাগে যে, হাতুড়ে ডাক্তারের উপদেশে অতি সহজেই তিনি বিশ্বাস স্থাপন করেন। বিপদে পড়ে যখন কেউ হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন ও বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার প্রবল ইচ্ছা তার মনে জাগে, তখন যেকোন ব্যক্তির যেকোন উপদেশে সেই ব্যক্তি বিশ্বাস স্থাপন করেন।

(২) সংকল্প মনে বিশ্বাস উদ্রেক করে। জীবনে উন্নতি করার জন্য ব্যক্তি যখন কঠিন সংকল্প গ্রহণ করেন, তখন নিজের গৌরবময় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সহজেই তার মধ্যে বিশ্বাস জাগে।

(৩) কয়েকটি বিশ্বাসের মূলে রয়েছে সহজাত প্রবৃত্তি বা ইনস্টিংক্ট (instinct)। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীগণ মানুষের ধর্মবিশ্বাসের পেছনের বিবর্তনীয় কারণ বের করতে চান। (এই বিষয়ে পরে লেখা হবে)

(ঘ) সামাজিক অবস্থা বা কারণ (Social conditions)

সামাজিক প্রভাবে সমাজের রীতি-নীতি, আদর্শ, ভাবধারা, প্রথা প্রভৃতিতে মানুষ বিশ্বাস স্থাপন করে। অনেক সময় নানারকম কুসংস্কারে মানুষ বিশ্বাস করে এসব সামাজিক কারণেই, যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সেসব কুসংস্কারের যথার্থতা প্রমাণ করা যায়না। ছোটবেলা থেকে শুরু করে পরিণত বয়স পর্যন্ত আমাদের এই বিশ্বাসগুলো অনেক সময় অটুট থাকে। সমাজ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন ছোট-বড় সংগঠন যেমন পরিবার, সংঘ, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম আমাদের মনে নানাভাবে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি করে।

বিশ্বাস, অবিশ্বাস ও সংশয় (Belief, Disbelief, and Doubt)

আগেই বলা হয়েছে বিশ্বাস হল বাস্তবতার ধারণা বা চেতনা। মনোবিজ্ঞানের আলোচনায় বিশ্বাস হল তাই সদর্থক বা ভাবাত্মক (positive) মানসবৃত্তি। বিশ্বাসের বিপরীত হল সংশয়, অবিশ্বাস নয়। অবিশ্বাস বলতে আসলে বিশ্বাসের অভাবকে বোঝায় না, বরং সেটার বদলে অন্য কিছুতে বিশ্বাসকে বোঝায়। তাই অবিশ্বাসও আসলে সদর্থক মানসবৃত্তি। যার মনে ভূত-প্রেতে অবিশ্বাস আছে, সে ভূত-প্রেতের অস্তিত্বহীনতায় বিশ্বাস করে। নৈঞর্থক বা অভাবাত্মক (negative) মানসবৃত্তি হল সংশয়। সংশয় মানে হল বিশ্বাসের অভাব। মনে যখন সংশয় জাগে তখন এক অস্থিরতা দেখা দেয় আর সেই সংশয়ের অবসানের মাধ্যমে মন যদি কোন কিছুকে সঠিক জেনে বিশ্বাস করতে পারে তাহলে সেই অস্বস্তিভাব দূর হয়। বাড়িতে যে ছেলেটি কাজ করে সে আসলেই চোর কিনা সে বিষয়ে মনে সংশয় জাগল। বেশ কয়েকদিন তার কার্যকলাপে নজর রাখার পর যখন ছেলেটির সাধুতার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেল তখন মনের সংশয় দূর হল, আর তার সাধুতায় মন বিশ্বাস স্থাপন করল।

তথ্যসূত্র

১। মনোবিদ্যা; লেখক – প্রমোদবন্ধু সেনগুপ্ত
২। General psychology by J. P. Guildford

নোটঃ লেখাটি ধর্ম-মনস্তত্ত্ব বা ধর্মের সাথে সম্পর্কিত মনস্তত্ত্বের একটি অংশ। পরবর্তিতে লেখাটিকে হালনাগাদ করা হতে পারে।

আরও পড়ুন: আরমিন নবাবি ও রিচার্ড ডকিন্স এর দৃষ্টিতে আস্তিক্যবাদ, নাস্তিক্যবাদ এবং অজ্ঞেয়বাদ

3 thoughts on “বিশ্বাস (Belief)

  • Dada onek shundor article.ata alpo gganer loker dara boja possible noy amar mone hoy. Amar onek kishu jana plus ggan hoilo. Apnake Onek donnabad.

    Reply
  • Sumit Roy

    পড়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *