বৌদ্ধধর্ম- নাস্তিকতা নাকি আস্তিকতা? -২
গৌতম বুদ্ধ ভারদ্বাজকে প্রশ্নের মাধ্যম উত্তর দিলেন, দেবতা আছেন কী? এরূপ জিজ্ঞাসিত হয়ে দেবতা আছেন বলে যিনি বলেন, আর অবশ্যই বিদিত হয়ে ‘আমার বিদিত আছে যিনি এরূপ বলেন; অতঃপর বিজ্ঞপুরুষের এক্ষেত্রে একান্তই নিষ্ঠাবান হওয়া উচিত যে, ‘দেবতা আছেন’।”
এক্ষেত্রে গৌতম স্বীকার করে নিলেন? কিন্তু পাঠকের প্রশ্ন কোন দেবতা? সেটি পরবর্তীতে গৌতম বুদ্ধ একদম স্পষ্ট করেন।
গৌতম বুদ্ধের উত্তরে ভারদ্বাজ বললেন “কেন, ভবৎ গৌতম! আপনি আমাকে প্রথমেই বর্ণনা করেন নাই?”
পুণঃরায় গৌতম বুদ্ধ বললেন, “ভারদ্বাজ! ইহা জগতে সুপ্রসিদ্ধ ও সর্বজন সম্মত যে “উৎপত্তি দেবতা আছেন।”
তাহলে এই সূত্রে ভগবান বুদ্ধ স্পষ্ট করে দিলেন উৎপত্তি দেবতা আছেন। উপরের দেবতার সংজ্ঞানুযায়ী উৎপত্তি দেবতাই হল সৃষ্টিকর্তা। এ বিষয়টি বৌদ্ধরা অস্বীকার করলে তা কি ত্রিপিটক বা বুদ্ধের অবমাননা নয়? যেখানে গৌতম বুদ্ধ সরাসরি স্পষ্ট করেছেন সৃষ্টিকর্তা বা উৎপত্তি দেবতা যা মহাব্রহ্মা নামে প্রথম পর্বে উপস্থাপন করেছি। তাহলে কীভাবে বৌদ্ধ ধর্ম নাস্তিক্য হতে পারে তার বিচার পাঠকেরাই করবেন।
রেফারেন্সঃ
(১) ত্রিপিটক, সূত্ত পিটকে মধ্যম নিকায়(২য় খন্ড) অনুবাদক পন্ডিত শ্রীমৎ ধর্ম্মাধার মহাস্থবির, মহাসঙ্গারব সূ্ত্র (৪৮৫ নং, পৃষ্ঠা নং ৩৪১)
লিখেছেনঃ Sina Ali
সহমত
আমার প্রশ্ন, গৌতম বুদ্ধই এই কথাগুলো বলেছেন তার প্রমাণ কী?? ত্রিপিটকে থাকলেই হয়ে গেল প্রমাণ??
,
আরে ভাই যেখানে ত্রিপিটকই বহুবার পরিবর্তন হয়েছে সেখানে ত্রিপিটককে প্রমাণ হিসেবে কীভাবে নিতে পারেন আপনি??
,
গৌতম বুদ্ধ নিজেও বলেছেন কোনো গ্রন্থকে অযৌক্তিকভাবে স্বতঃপ্রমাণিত স্বীকার না করতে।
,
ত্রিপিটকে লেখা অযৌক্তিক অংশগুলো সংশোধন করা অসম্ভব কিছু নয়। কারণ এটাতো বুদ্ধেরই লেখা নয়।
,
স্পষ্ট কথা, মহামতি গৌতম বুদ্ধ বলেছেন- গুরু বলেছে বলেই বিশ্বাস করতে হবে এমন কোন কথা নেই, জাতি বলেছে বলেই বিশ্বাস করতে হবে তাও নয়, শাস্ত্রে আছে বলেই মেনে নিতে হবে এমন নয়, আগে বোধগম্য কিনা দেখো, পরীক্ষণ চালাও, গ্রহণীয় হলে গ্রহণ করো যেটা বাস্তবিক কল্যাণকর ও শ্রদ্ধার।
,
আপনি নিশ্চয়ই এ কথাটা এখানে বিস্তারিত দেখেছেন,কেসমুত্তিসুত্ত,অঙ্গুত্তর শিখায়, সূত্র পিটক।
,
এজন্য আমরা এসব হালকা যুক্তি গ্রহণ করিনা।আমিও যুক্তিতে বিশ্বাস করি।
,
বৌদ্ধ মতবাদ নিয়ে ব্লগে লিখতে কমপক্ষে পঞ্চাশ টা বই পড়ুন এবং আরো গভীর ভাবে গবেষণা করুন। আমার পছন্দের লেখক রাহুল সংকৃত্যায়ন।
বৌদ্ধ ধর্ম আস্তিক নয় নাস্তিকও নয়, ঠিক তার মাঝামাঝি। বৌদ্ধ ধর্মে অন্ধ বিশ্বাস করা মুল্যহীন। বৌদ্ধ ধর্মে দেবতা আছে বলা হয়েছে, বৌদ্ধ ধর্মে পুনঃ জন্ম আছে বিশ্বাস করে। বুদ্ধের অতীত জীবনের জাতক গুলোই তার সাক্ষী। আধুনিক বিজ্ঞান পূণঃ জন্ম নিয়ে গবেষনা করছে। তার কিছু ডকুমেন্টও আমরা পায়, যেমন- https://www.youtube.com/watch?v=6Ics8sRNwKI বা reflections-on-life-after-life ইত্যাদি।
বৌদ্ধধর্মের দেব-ব্রহ্মের উল্লেখ আছে। তবে তারা ঈশ্বর বা গড নয়। তাঁরাও কর্মের অধীন, মানুষ সহ সকল প্রাণী/সত্ত্ব নিজ নিজ কর্মের অধীন। স্বীয় পাপ-পুণ্যের ফলে একটি সত্ত্বা স্বর্গলোকে, ব্রহ্মলোকে, নরকে, মানুষ্যকুলে, তীর্যককুলে ইত্যাদি ইত্যাদি ৩১লোকভূমিতে প্ররিক্রমা করে থাকে।
এখানে যেকয়েকটি আর্টিকেলে বুদ্ধ তথা বৌদ্ধধর্ম বিষয়ক নাস্তিক্য কিংবা আস্তিক্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে অতিথি লেখক মহোদয়- পুরো ত্রিপিটক পাঠ না করেই টুকিটাকি দু-একটি গ্রন্থ থেকে নিজের মনগড়া কথাগুলো তুলে ধরেছেন।
অথচ তথাগত গৌতমবুদ্ধ বুদ্ধত্বপ্রাপ্তির পর সর্বপ্রথম যে গাথা/শ্লোক/উক্তি করেছিলেন- তাতে স্পষ্ট হয় যে বুদ্ধ কখনো সৃষ্টকর্তা গড ঈশ্বর কিংবা সর্বশক্তিমান ভগবান নামক কাল্পনিক কাউকে স্বীকার করেন নি। বিনয়পিটকের ১ম খণ্ডে “মহাবর্গ” গ্রন্থে বুদ্ধের ঐ উদান গাথাটি তুলে ধরা হয়েছে-
“ অনেক জাতি সংসারং সন্ধাবিস্সং অনিব্বিসং. গহকারকং গবেসন্তো দুঃখাজাতি পুণং পুণং। গহকারক ……………(মহাবর্গ…)
অর্থাৎ জন্মপ্ররিক্রমায় আমি অনেকবার সংসারে জন্ম গ্রহন/প্রতিসন্ধি গ্রহন করেছি, কিন্তু কোথাও সেই গৃহকারক/সষ্ট্রা নামক কাউকে খোজে পাইনি, এবার আমি দুঃখ উৎপাদকারী লোভ দ্বেষ মোহকে হত করেছি, সেই গৃহকারক/সষ্ট্রার আর কোনো শক্তি নেই আমাকে দুঃখ দেওয়ার, দেহধারন করার সবটুকুই আমি আজ ভঙ্গ করে দিয়েছি। আজ থেকে আমি মুক্ত……………।
অনুরোধ থাকবে- লেখক মহোদয় যেন, ত্রিপিটকের আরো বিস্তারিত পাঠ করে- জ্ঞানগর্ভ আলোচনা উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়।”
বুদ্ধ অলীক-কাল্পনিক কোনো কথা যেমন বলেননি, তেমনি কারো কাছ হতে কিছু শুনেও বলেননি। তিনি ছিলেন গতানুগতিক ধারার সম্পূর্ণ বিপরীত। যা কিছু তিনি বলেছেন বা শিক্ষা দিয়েছেন সবই হল বিজ্ঞানীদের মত পরীক্ষিত, গবেষণা লব্দ এবং চিরন্তন সত্য। এজন্য তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বলতে পেরেছেন-‘কোনো কিছু অন্ধভাবে বিশ্বাস বা গ্রহণ করবেনা।’ তিনি উদাত্তভাবে সকলকে আহ্বান করেছেন-‘এহি পস্সিকো।’ অর্থাৎ এসো দেখো। ‘এসো বিশ্বাস করো’ তিনি এরূপ বলেননি। এসে দেখতে বলেছেন। অর্থাৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাচাই-বাচাই করতে বলেছেন। যেভাব জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে, ভিজিয়ে, পিটিয়ে স্বর্ণকার স্বর্ণের খাঁটিত্ব প্রমাণ করে থাকেন। যেখানে অন্যান্য সব ধর্ম বা ধর্মের প্রবর্তকেরা যা বলেছেন বা গ্রন্থে যা লিখা আছে, সবকিছুকে অসন্দিগ্ধ হয়ে প্রশ্নাতীতভাবে বিশ্বাস ও গ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন, সে ক্ষেত্রে একমাত্র বুদ্ধই অন্ধভাবে গ্রহণ না করে প্রথমে এসে পরীক্ষা করে সত্য বলে প্রমাণিত হলে তবেই গ্রহণ ও অনুকরণ করতে উপদেশ দিয়েছেন। সত্যকে গ্রহণ করতেও তিনি কাউকে বাধ্য করেননি। গ্রহণ-বর্জনের স্বাধীনতা প্রত্যেকের রয়েছে। তিনি কাউকে গ্রন্থের, তাঁর এবং তাঁর শিক্ষার গোলাম বানাতে চাননি। তাঁর শিক্ষা যদি ব্যক্তির লোভ, দ্বেষ ও মোহ ক্ষয়ের সহায়ক হয়, মানবতার উৎকর্ষ সাধনে সহায়ক হয়, ভেদাভেদ অবসান করে প্রেম, ভালবাসা, সদ্ভাব, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়, তবেই তা গ্রহণ করতে বলেছেন। অন্যথায় বর্জন করে চাপমুক্ত বা ভারমুক্ত থাকতে বলেছেন।
আজ হতে ছাব্বিশ শ’ বছর পূর্বে বুদ্ধ বলেছিলেন-
১) এ বিশ্বকে পরিচালনার জন্য কেহ নাই এবং সৃজনকারীও কেহ নাই। যা বিজ্ঞানীরা আধুনিক গবেষণায়ও সত্য প্রমাণ করেছেন। এজন্য বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আইন স্টাইন (১৯৭৯-১৯৫৫) স্বীকার করেছেন-‘আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের গ্রহণোপযোগী যদি কোনো ধর্ম থাকে, তা একমাত্র বৌদ্ধ ধর্ম।’
২) ঈশ্বরও নাই, আত্মাও নাই। যাকে লোকেরা আত্মা মনে করে থাকে, তা হল চেতনার প্রবাহ। সে প্রবাহ যে কোন সময় রোধ হতে পারে। ছাব্বিশ শ’ বছর পূর্বে বলা বুদ্ধের এ অকাট্য সত্য আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমাণ করেছে। ইংল্যাণ্ডে জন্মগ্রহণকারী বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী ষ্টিফেন হকিং (১৯৪২-২০১৪) দৃঢ়তা সহকারে দাবী করেছেন-‘ব্রহ্মাণ্ডে যদি ঈশ্বর আছে বলে প্রমাণ করে দেখাতে পারে, তাহলে আমি তাকে আমার সর্বস্ব দিয়ে দেব।’
ইংলিশ প্রকৃতিবাদী বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) স্টিফেন হকিংয়ের পূর্বেই অসীম সাহসিকতার সাথে ঘোষণা করেছিলেন-‘ঈশ্বর থাকলে তাহলে আমাকে এসে প্রমাণ করে দেখাও।’
জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্ক্স (১৮১৮-১৮৮৩) বলেছেন-‘এক গভীর ষড়যন্ত্র হতে ঈশ্বরের জন্ম হয়েছে।’
৩) ঈশ্বর ও ভাগ্যবাদ হল অলীক কল্পনা, যা জীবনের সত্যতা এবং বাস্তবতা হতে দূর করে আমাদেরকে পরনির্ভর গোলাম বা দাস বানিয়ে থাকে।
৪) পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সহায়তায় যা কিছু জানা যায়, ইহাকেই জ্ঞান বলে মান্য করা হয়। সত্যিকারভাবে জ্ঞানই জানতে পারে যে, কোনটা বাস্তব এবং কোনটা অবাস্তব। কোনটা সত্য এবং কোনটা অসত্য। জ্ঞানের দ্বারাই সমগ্র সংসার আলোকিত হচ্ছে।
৫) যজ্ঞের দ্বারা যেমন কিছু হয়না, তেমনি ধর্ম গ্রন্থ সমূহের অন্ধানুকরণেও কিছু হয়না। প্রকৃতির বিধান সমূহ হবন, পূজা, গ্রন্থপাঠ অথবা কর্মকাণ্ডের দ্বারা পরিবর্তন করা যায়না। এজন্য ভণ্ডামি, প্রতারণা, অন্ধবিশ্বাস ও মিথ্যাদৃষ্টিতে নিজের জীবনকে ব্যর্থ করা উচিত নয়।
৬) পূজা পাঠ বা গঙ্গা স্নানে পাপ ধৌত হয়না। কেননা গঙ্গার জল শরীরকে ধৌত করে, পাপকে নয়। পাপ বিচরণ করে মনে। জলে মন ধৌত হয়না।
৭) আমার প্রাণ যেরকম, অন্যের প্রাণও তাদের জন্য সেরকম। যে রকম আমার প্রাণ রক্ষায় আমি তৎপর, সেরকম অন্যরাও। এজন্য নিজের সাথে তুলনা করে কাউকে আঘাত কিংবা হত্যা করবেনা। নিজেও বাঁচো এবং অন্যকেও বাঁচতে দাও।
৮) অন্য কেহ বলেছে বলে মান্য করবেনা, রীতি-রেওয়াজ পূর্ব হতে চলে আসছে বলে মান্য করবেনা, জেষ্ঠ্য ব্যক্তিরাও বলছেন বলে মান্য করবেনা, ধর্ম গুরুরা বলেছেন বলেও মান্য করবেনা। মান্য তাহাই করবে, যা স্বীয় মনের পরীক্ষায় হিংসা, ক্রোধ, আসক্তি ক্ষয়ে সহায়ক হচ্ছে এবং সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
৯) কোনো পরম্পরা বা রীতি-নীতি যদি মানব কল্যাণের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে তা মানার অবশ্যই প্রয়োজন নাই।
১০) নিজেকে না জেনে আত্ম দর্শন করা যায়না। নির্বাণের অবস্থাতেই নিজেকে সম্যকভাবে জানা সম্ভব হয়।
১১) এ সংসারে সবকিছু হল ক্ষণিক এবং নশ্বর। সবই হল অণু-পরমাণুর খেলা। কোনো কিছুই স্থায়ী, নিত্য ও শাশ্বত নয়। সব কিছুর অহরহ উৎপত্তি-বিলয় হচ্ছে।
১২) একজন ধূর্ত ও মন্দ বুদ্ধি সম্পন্ন বন্ধু, বন্য পশুর চেয়েও ভয়ানক হয়ে থাকে। কেননা, পশু আপনার শরীরকে ক্ষত-বিক্ষত করে, কিন্তু মন্দ বুদ্ধির বন্ধু মস্তিস্ককেই ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়।
১৩) আপনি যতই পবিত্র এবং উত্তম শব্দ পড়ুন বা বলুন না কেন, যদি সেগুলি আপনি নিজের জীবনে অনুশীলন না করেন, সেগুলি কোন উপকারে আসবেনা বা তাতে আপনি লাভবান হবেননা।
১৪) স্বাস্থ্য হল পরম লাভ, সন্তুষ্টিতা হল পরম সম্পদ।
১৫) হাজার যোদ্ধার সাথে হাজার বার যুদ্ধ করে হাজার বার জয়লাভ করার চেয়ে উত্তম হল আত্মজয়ী হওয়া। তাতে নিজের মন নিয়ন্ত্রিত হয়। সুনিয়ন্ত্রিত মনই হল কল্যাণকর।
১৬) মানুষকে ভুল পথে পরিচালনার জন্য তার মনই দায়ী। অন্য কোন শত্রু নয়।
১৭) ক্রোধের জন্য আপনাকে শাস্তি দেওয়া হবেনা, বরং ক্রোধ নিজেই আপনাকে শাস্তি প্রদান করবে।
‘সৎপুরুষ প্রধান’ এটা বুদ্ধের একটি দক্ষতা বা ভালো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। যিনি বুদ্ধত্বলাভ করেন কেবল তিনিই (সম্যকসম্বুদ্ধ বা বুদ্ধ) এই গুণের অধিকারী হন- উক্ত সূত্রে সেটাই বলা হয়েছে। ত্রিপিটকে উল্লেখিত অধিদেব, উৎপত্তি দেবতা, ব্রহ্মা, মহাব্রহ্মা সবাই দেবতা। এসব দেবতাকে একজন সৃষ্টিকর্তা দাবি করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ অধিদেব দেবতাদের সংখ্যা যেমন অসংখ্য তেমনি উৎপত্তি দেবতার সংখ্যাও অসংখ্য। ব্রহ্মাদের সংখ্যাও অনেক, এক ব্রহ্মার আয়ু শেষ হলে আরেকজন ব্রহ্মার উৎপত্তি হয়। আরো দেবতা আছে যেমন সম্মতি দেবতা ইত্যাদি। আস্তিকদের দাবি মতে তো সৃষ্টিকর্তা একজনই।
//”অধিদেবগণকে জ্ঞাত হয়ে তিনি নিজের এবং অপরের সব বিষয় জানেন। তিনি শাস্তা, সংশয়াপন্ন অনুসরণকারীদের প্রশ্নের সমাধান করেন।
“দেবতা” বলতে তিন প্রকার দেবতা; যথা : সম্মতি-দেবতা, উৎপত্তি-দেবতা, বিশুদ্ধি-দেবতা। সম্মতি-দেবতা কারা? সম্মতি-দেবতা বলা হয় রাজা, রাজকুমার ও দেবীদের (রাজার স্ত্রী)। এরাই সম্মতি-দেবতা। উৎপত্তি-দেবতা কারা? উৎপত্তি-দেবতা বলা হয় চতুর্মহারাজিক দেবতা, তাবতিংস দেবতা… ব্রহ্মকায়িক দেবতা এবং তার উপরে অবস্থানকারী দেবগণকে। এঁরাই উৎপত্তি দেবতা। বিশুদ্ধি-দেবতা কারা? বিশুদ্ধি-দেবতা বলা হয় তথাগত, তথাগত শ্রাবক, ক্ষীণাসব অর্হৎ এবং পচ্চেক সম্বুদ্ধগণকে। এরাই বিশুদ্ধি-দেবতা। ভগবান সম্মতি-দেবতাদের অতিদেবরূপে, উৎপত্তি-দেবতাদের অতিদেবরূপে, বিশুদ্ধি-দেবতাদের অতিদেবরূপে অভিজ্ঞাত হয়ে, জেনে, তুলনা করে, বিবেচনা করে, বিচার করে প্রকাশ করেন।”// ১৮. পারায়ণানুগীতি গাথা বর্ণনা- ১১৯, চূলনির্দেশ, খুদ্দক নিকায়]