মুসা, যিশু, কৃষ্ণের পৌরানিক ‘ইন্দো-ইরানীয়’ উৎস
অনেকে মনে করেন যে মোজেস ও কৃষ্ণের জীবনীর মিল এর কাহিনীর আর্য বা Indo-European রুট আছে। এবং এটা সত্য। তবে যেসব মিথলজিকাল তথ্য আমাদের বাংলাভাষী ব্লগজগতে ঘুরপাক খেয়ে আসছে তার মধ্যে যথেষ্ট অসঙ্গতি ও ত্রুটি রয়েছে।
এবং এসব ভুল তথ্যের সোর্স হল ১৮৭৫ সালে প্রকাশিত একটি কন্সপিরেসি থিওরিস্ট বই The World’s Sixteen Crucified Savior যা থেকে বিভিন্ন অংশ কপি করে লেখকগন প্রকাশ করে আসছেন এবং নিজে রিসার্চ না করে অনলাইনে সেসব ম্যাটেরিয়াল হবহু কপি করছেন যা এই বই থেকে নেয়া।
প্রথমত মোজেস ও কৃষ্ণের জীবন কাহিনী তে কেন মিল আছে সেটার পিছনে কারনটা একটু অন্যরকম। সেজন্য ইরানের প্রথম সম্রাজ্য আকেমেনিড এর প্রতিষ্ঠাতা Cyrus the Great এর জীবনীর দিকে তাকাতে হবে। Cyrus নাম টার আসল আবেস্তান পার্সিয়ান উচ্চারন হল কুরুশ যা বৈদিক কুরু (মহাভারতের কৌরব বংশের মিথিকাল প্রতিষ্ঠাতা) শব্দের সাথে সম্পর্কিত। আর ইরানি ভাষা (ফার্সি, কুর্দি, পশতু, ওশেটি) ও উত্তর ভারতীয় ভাষা (হিন্দি-উর্দু, বাংলা, পাঞ্জাবি, মারাঠি), কালচার ও প্যাগান ধর্ম একটা কমন ইন্দো-ইরানিয় রুট থেকে এসেছে যা ইন্দো-ইউরোপীয় এর একটি শাখা। তাই ঐতিহাসিক ও পৌরাণিক অনেক কাহিনী তে উভয় কালচারের ব্যাপক মিল রয়েছে যা সেই কমন ইন্দো-ইরানিয় বা আর্য রুট থেকে এসেছে।
কুরুশের জীবনী অনুযায়ী(১) Astyages (Rishti Vaiga) স্বপ্নে দেখে যে তার কন্যা মন্দনার গর্ভে যে সন্তান জন্মাবে সে একদিন বিপ্লবী হবে এবং তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে মহারাজ হবে। তখন সে তার জেনারেল হার্পাগাস কে ডাকে এবং বলে কুরুশের জন্মের পরপরই যেন তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু হার্পাগাস তা করতে চায়না এবং জন্মের পরেই হার্পাগাস শিশুটিকে মেষপালক মিথ্রিডেটস এর কাছে দিয়ে দেয়। কুরুশ বড় হয়ে যখন তার নানা কে পরাজিত করে মহারাজ হয় এরপর সে ব্যাবিলনের রাজা নিবুসাদনিসার কে পরাজিত করে প্রথম মানবাধিকার সংবিধান রচনা করে যা Cyrus Cylinder নামে পরিচিত। নিবুসাদনিসার ব্যাবিলনে ইহুদি দের বন্দি করে দাস বানিয়ে রেখেছিলো কিন্তু কুরুশ তাদের মুক্ত করে দেয় এবং জেরুজালেমের মন্দির বানানোর অনুমতি দেয়। ইহুদি ধর্মের বর্তমান রূপ টা ঠিক ওই সময়েই গড়ে উঠছিল। তাই ইহুদি রা যখন তোরাহ রচনা করতে শুরু করে তখন তারা কুরুশের জীবনীর আদলে মোজেস এর জীবনী রচনা করে এবং ব্যাবিলনের আগে তারা মিশরেও বন্দি ছিল এমন মিথ রচনা করে। যদি বৈজ্ঞানিক ও আর্কিওলজিকালি প্রমানিত যে ইহুদি রা কখনো মিশরে বন্দি ছিলনা।
তো কুরুশ ও কৃষ্ণের জীবনীর যে মিথলজিকাল মিল রয়েছে তা একটা কমন ইন্দো-ইরানিয় Warrior Cult থেকে এসেছে। এবং পরবর্তি তে সাইরাসের জীবনী অনুকরন করে লেখার ফলেই মোজেস ও কৃষ্ণের জীবনীর মিল রয়ছে যেটা একটা কমন ইন্টার্সেকশনের কারনের হয়েছে, কোন ডিরেক্ট সম্পর্ক থেকে না। এছাড়াও পুরাণ অনুযায়ী কৃষ্ণের জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর এটা একটা ভুল তথ্যা।
যিশুর জীবনীর সাথে যেই ইন্দো-ইউরোপীয় দেবতার জীবনীর মিল রয়েছে তা হল মিত্র (Mithra)। আহুরা মাজদার রশ্মি দেবি আনাহিতার একটি পাথরের উপর পড়েছিলো। আর এ পাথর ফেটে মিত্রের জন্ম হয়।(২)(৩) আর তার জন্ম গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ২৫ ডিসেম্বর। যেই একই সপ্তাহ স্যটার্নালিয়া, শাব ই ইয়ালদা ও আরো অনেক winter solstice এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। এভাবেই ফাদার-সন-হলি স্পিরিট ট্রায়াড ও ভার্জিন বার্থের মিল রয়েছে। আর এই ট্রিনিটির সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় সম্রাট Artaxerxes ii এর সুসা প্রাসাদের শীলালিপি তে।(৪) ঐতিহাসিক জিসাস একজন সাধারন রেবেল ছিল এবং তাকে অসাধারন করার জন্যই মিত্রর কাহিনীর সাথে তার জীবনী মেশানো হয় যে রোমান ও ইরানি দের সবচেয়ে প্রিয় দেবতা ছিল।
মিত্র হল রোমান মার্স এর সাথে কগনেট। আর পার্সিয়ান ভার্সন টাই পার্থিয়ান পিরিয়ডে জনপ্রিয় হয়। পার্থিয়ান নেভি মূলত ইটালির কোস্টাল রিজিওন গুলাতে ছড়ায় এবং তারপর সারা ইউরোপ এ ছড়িয়ে পরে। ইংল্যান্ড, জার্মানী ও ফ্রান্সে বহু mithraeum তৈরি হয়েছিল।
এছাড়াও অনেকে মনে করেন ভারতে ব্রাম্মনরাই কেবল আর্য ডিএনএ বহন করে। এটা ভুল। ব্রাম্মন দের শরীরে আর্য ডিএনএ সবচেয়ে বেশি কিন্তু ভারতবর্ষে সবার মধ্যেই কমবেশি আর্য রক্ত আছে।
সোর্সঃ
১। Herodotus এর Histories
২। Morduck. Anahita Mother of Mithra
৩। Mithraism
৪। The Roman cult of Mithraism, its origin from Indo-Iranian religion and its integration into the Christianity Introduction and Prehistory
৫। Artaxerxes ii, SUSA (A2Sa, A2Sd)