স্টিকিইতিহাসইসলামমানবাধিকারসম্পাদকীয়

ধর্ম অবমাননা, সাম্প্রদায়িকতা এবং মূর্তি ভাঙ্গার সুন্নত

ভূমিকা

ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় আমার বয়স ছিল অল্প। ছোট হলেও সেই সময়ের কথা বেশ স্পষ্ট মনে আছে। কারণ সেই দাঙ্গার ঢেউ বাঙলাদেশেও আঘাত করেছিল। সে সময়ে বয়সে ছোট ছিলাম, বাবা মা বলে দিয়েছিল আমি হচ্ছি মুসলমানের পোলা। নির্মোহ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সবকিছু যাচাই করা তখনো শিখিনি। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাঙলাদেশেও তখন মন্দিরে মূর্তি ভাঙ্গাভাঙ্গি হতে থাকে। আমরাও হিন্দুদের মূর্তি ভাঙলে বন্ধুদের সাথে খুবই আনন্দ করতাম। হাসতে হাসতে বলতাম, মালাউনদের মূর্তিগুলোর এত ক্ষমতা থাকলে মূর্তিগুলো নিজেদের রক্ষা করে না কেন? সেই সময়ে একবারও মনে হতো না, বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময় আল্লাহও কিন্তু ছিল নিশ্চুপ! সারা পৃথিবীতে শত শত মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়, তখনও আল্লাহর কোন খোঁজখবর পাওয়া যায় না। এমনকি, কাবাতেও কয়েকবার আক্রমণ হয়েছিল, কাবা কয়েকবার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়াও হয়েছিল। সেই সময়ও আল্লাহ কাবাকে রক্ষা করতে পারেনি! সেই সময়ে এগুলো একবারও মাথায় আসতো না। শুধু মনে হতো, হিন্দুদের দেবদেবীর ক্ষমতা থাকলে তারা তো মন্দিরগুলো রক্ষা করতেই পারতো!

তখন হিন্দুদের ওপর রাগে ক্ষোভে গা রি রি করতো। ইচ্ছে হতো বাঙলাদেশে বসবাসকারী সব হিন্দুকে ঘাড় ধরে ভারত পাঠিয়ে দেই। বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিশোধ নিই। সবার মুখে শুনতাম, আমাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তাহলে হিন্দুরা কোন সাহসে এই দেশে বসবাস করে, সেটাই বুঝতাম না। বন্ধুদের সাথে বলাবলি করতাম, হিন্দুরা কত খারাপ, হিন্দুরা কত সাম্প্রদায়িক, কত নিকৃষ্ট। তারা ভারতে মুসলমানদের ওপর কতই না অত্যাচার চালাচ্ছে! অন্যদিকে আমরা কত ভাল, কত মহান! আমাদের দেশে হিন্দুরা তো প্রায় রাজার হালে আছে, এইসব আলোচনা। এগুলো বলতে বলতে পাশের বাসার হিন্দু বন্ধুটাকে আর খেলায় নিতাম না। কারণ ওদের উচিত শিক্ষা হওয়া দরকার। বলতাম, শালারা আমাদের দেশে থাকে এই তো অনেক বেশি। আবার খেলায় নেয়ার দরকার কী? আমরা মুসলমানরা অনেক ভাল, মহৎ আর অনেক অসাম্প্রদায়িক বলেই তো তারা আমাদের দেশে থাকতে পারছে! ভারতের হিন্দুদের মত যদি আমরা সাম্প্রদায়িক হতাম, তাহলে এদেশে ধরে ধরে হিন্দুদের জবাই করে ফেলতাম! আমাদের এলাকার এক বড় ভাই বলতো, মালাউন কা বাচ্চা, কাভি নেহি আচ্ছা। যো ভি আচ্ছা, ও ভি শুয়ার কি বাচ্চা।

সেইসময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন বুদ্ধিজীবীর কলাম পড়তাম। সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীরা লিখতেন, ইসলাম এসব ভাঙ্গাভাঙ্গি একদম সমর্থন করে না। ইসলাম সকল ধর্মকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করে। অন্যের ধর্ম পালনের অধিকার দেয়। তারা লিখতেন, নবীজি নাকি অন্য ধর্মের মানুষকে মূর্তি পুজার অধিকারকে সম্মান জানাতেন। এসব পড়ে পরবর্তীতে কিছুটা অসাম্প্রদায়িক হওয়ার চেষ্টা করতাম, কিন্তু ওয়াজে গিয়ে আবার শুনতাম ভিন্ন কথা। ওয়াজীরা বলতেন, মূর্তি ভাঙ্গা হচ্ছে নবীর সুন্নত। তাই মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে হবে। পৃথিবীতে আল্লাহর একচ্ছত্র এবং নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এসব শুনে দ্বিধায় পড়ে যেতাম। আসলে কোন কথাগুলো সত্য?

ইসলাম কী আসলেই অন্য ধর্মের মানুষের মূর্তি পুজার অধিকারকে সম্মান দেয়? ইসলাম কী মূর্তি ভাঙ্গার অনুপ্রেরণা দেয়? পৌত্তলিকদের পুজনীয় মূর্তি ও মন্দির ভাঙ্গা আসলেই কী নবীর সুন্নত? আজকের এই লেখাটিতে সেই বিষয়েই আলোকপাত করা হবে।

শার্লি এবদো বনাম মূর্তি ভাঙ্গা

মুসলিমগণ প্রায়শই দাবী করেন, তাদের নবীকে সকলের সম্মান এবং শ্রদ্ধা করতে হবে। কেউ নবী মুহাম্মদের কার্টুন আঁকলে, ছবি বানালে, মুসলিম উম্মাহ উন্মাদের মত তাদের গলা কাটে। শার্লি এবদো নামক ফরাসী কার্টুন ম্যাগাজিনের ১২ জন কার্টুনিস্টকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে কিছু মুসলিম সন্ত্রাসী হত্যা করেছিল। এই কয়েকদিন আগেই, ক্লাসরুমে বাক স্বাধীনতা বিষয়টি পড়াবার সময়ে ফ্রান্সের একজন শিক্ষক শার্লি এবদোর কিছু কার্টুন ক্লাসরুমে দেখিয়েছিল। ফলশ্রুতিতে তাকেও হত্যা করেছে এক চেচেন মুসলিম। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবেই ফ্রান্স এই কার্টুনগুলো বিভিন্ন দেয়ালে প্রদর্শন করতে শুরু করে। ফ্রান্সের দেয়ালে দেয়ালে এখন শার্লি এবদোর কার্টুন শোভা পাচ্ছে। নবী, পোপ, হিটলার, ট্রাম্প, এমনকি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকেও তারা ছেড়ে কথা বলে না। এই নিয়ে বর্তমানে মুসলিম বিশ্ব উত্তাল। তারা দাবী জানাচ্ছে, তাদের ধর্মের নবীকে সম্মান করতে হবে। অথচ, অন্য ধর্মের মূর্তি ভাঙ্গার সময় বিষয়টি কী তাদের মনে থাকে? উল্লেখ্য, তারা যে সব দেশই এই পর্যন্ত দখল করেছে, প্রায় সব দেশেই প্রাচীন মূর্তি এবং মন্দিরগুলো একদমই ধ্বংস করে ফেলেছে। আফগানিস্তানে তালেবানদের ২০০০ বছর পুরনো বৌদ্ধ মূর্তিগুলো ধ্বংস করার মত ঘটনা অসংখ্যবারই ঘটেছে [1], আইসিসও কম যায় নি [2]। বাঙলাদেশে তো মূর্তি আর মন্দির ভাঙ্গাভাঙ্গি প্রতি মাসের ব্যাপার। কিন্তু এই মূর্তি ভাঙ্গা কী ইসলাম সম্মত?

একজন হিন্দুর কাছে দূর্গা কিংবা শিব বা কালীর মূর্তিও কিন্তু সম্মানিত এবং পবিত্র বিষয়। বাঙলাদেশে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নানা মন্দিরে মূর্তি ভাঙ্গা হয়। ওয়াজে হুজুররা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই মূর্তি ভাঙ্গার উষ্কানি দেন। অথচ, ইসলামের বিধান হচ্ছে, কেউ যদি নবী মুহাম্মদের সামান্যতম সমালোচনাও করে, তাকে বিনা বিচারে যেকোন মুসলিম গিয়ে জবাই করে আসতে পারে। ইসলামে শাতিমে রাসুলের শাস্তি দিতে কোন বিচার আচারের প্রয়োজন নেই। এর মানে হচ্ছে, মুসলিমরা ঠিকই অন্য ধর্মের অবমাননা করতে পারবে, কিন্তু অন্য কেউ ইসলামের বিষয়ে কিছুই বলতে পারবে না। অন্য ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা নাকি তাদের ধর্মীয় অধিকার! আসুন কয়েকটি ভিডিও দেখি, যেখানে অমুসলিমদের পুজনীয় মূর্তি ভাঙ্গার প্রকাশ্যে উষ্কানি দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, এরকম ওয়াজের সংখ্যা লক্ষাধিক। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি দেখানো হচ্ছে,

ইব্রাহীমের মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা

ইসলাম ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নবীর নাম হচ্ছে ইব্রাহীম। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন একটি পৌত্তলিক পরিবারে। তার পিতা ছিল মূর্তি পুজারী। তিনি সেই ছোটবেলা থেকেই লুকিয়ে পৌত্তলিকদের মূর্তি ভেঙ্গে আসতেন। পৌত্তলিকদের মূর্তি ভাঙ্গার অনেকগুলো গল্প ইসলামের নানা গ্রন্থে খুব মহান এবং বীরত্বের কাজ হিসেবে বর্ণিত আছে। ইব্রাহীম কীভাবে মূর্তিপুজারীদের মূর্তি ভেঙ্গে তা নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করতেন, অন্য ধর্মের মানুষকে অপমান অপদস্থ করতেন, অন্য ধর্মের অবমাননা করতেন, সেগুলো কোরআন হাদিসের নানা জায়গায় পাওয়া যায়।

ইসলামিক সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, ইব্রাহীমের সম্প্রদায় দেবদেবীর পুজা করতো। একদিন তিনি কেন্দ্রীয় দেবমন্দিরে গিয়ে মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলার সংকল্প করলেন।

ইবরাহীমের সম্প্রদায় বছরের একটা দিনে উৎসব পালন করত। নবী ইব্রাহীম খুব কৌশলে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে সেখানে যেতে অপারগতা প্রকাশ করলেন। তার পরিকল্পনা ছিল, এই সুযোগে দেবমন্দিরে প্রবেশ করে মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়া। সবাই চলে গেলে তিনি মন্দিরে ঢুকলেন এবং দেব-দেবীদের কুড়াল দিয়ে ভীষণ জোরে আঘাত করে সবগুলোকে গুঁড়িয়ে দিলেন। তবে বড় মূর্তিটাকে পূর্বাবস্থায় রেখে দিলেন। মেলা শেষে লোকজন ফিরে আসলো এবং মন্দিরে গিয়ে প্রতিমাগুলির অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে গেল। তারা বুঝে গেল, এগুলো ইব্রাহীমেরই কাজ। ইব্রাহীম তখন বলতে লাগলো, ঐ বড় মূর্তিটিই এই কাজ করেছে। সেই সাথে এটিও বললো, মূর্তিগুলোর ক্ষমতা থাকলে নিজেদের রক্ষা করলো না কেন? যেসব মূর্তির নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা নেই, তারা কীভাবে মানুষকে রক্ষা করবে? কথাগুলো যৌক্তিক হলেও, ধর্ম অবমাননা নিঃসন্দেহে। একই যুক্তি কিন্তু মসজিদ ভাঙ্গা কিংবা কোরআন পোড়াবার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায়।

আসুন, আল্লামা ইবনে কাসীরের বিখ্যাত গ্রন্থ আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া থেকে ঘটনাটি পড়ি [3]

মূর্তিপুজক
ইব্রাহীম
মূর্তি পুজা
মূর্তি 4
মূর্তি 6
মূর্তি 8

অর্থাৎ, ইসলাম ধর্মের অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একজন নবী, উনি নিজেই বাপদাদার ধর্ম, তার গোত্রের সংস্কৃতি ও বিশ্বাস নিয়ে চরমভাবে ঠাট্টা তামাশা, কটাক্ষ, অবমাননা এগুলো সবই করতেন। তবে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে ঠিক একইভাবে কটাক্ষ, কটূক্তি, সমালোচনা কী করা সম্ভব?

নবী মুহাম্মদের ধর্ম অবমাননা

ইসলাম ধর্মের প্রধান নবী মুহাম্মদ পৌত্তলিকদের দেবদেবী, পূর্বপুরুষদের ধর্ম, এগুলো সম্পর্কে অবমাননাকর কটূক্তি করতো বলেই ইসলামিক সূত্রগুলো থেকে পরিষ্কারভাবেই জানা যায়। মক্কায় সেই সময়ে তাকে ধর্মদ্রোহীতা দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তার ওপর অভিযোগ ছিল-তিনি প্রচলিত ধর্মকে অসম্মান এবং অবমাননা করেছেন। সমাজে শত শত বছর ধরে প্রচলিত ধর্মের সমালোচনা, বাপদাদার ধর্মের অবমাননা, কটূক্তি, দেবদেবী নিয়ে অপমানজনক কথা বলার কারণে বারবার তাকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু নবী কখনোই ধর্ম অবমাননা থেকে সরে আসেন নি। উল্লেখ্য, উনাকে কিন্তু শুরুতেই আক্রমণ করা হয় নি [4]

মূর্তি 10
মূর্তি 12

এই বিষয়ে আরো জানা যায় সীরাতুল মুস্তফা সা. গ্রন্থ থেকে। নবী মুহাম্মদ নিজেই বলতেন, তিনি মূর্তিকে প্রচণ্ড ঘৃণা করতেন [5]

মূর্তি 14
মূর্তি 16
মূর্তি 18
মূর্তি 20
মূর্তি 22

এবারে আসুন আসহাবে রাসুলের জীবনকথাতে বর্ণিত ইবনু হিসামের আল সীরাহ আন-নাবাবিয়্যাহ গ্রন্থের একটি দলিল পড়ে নিই। এখানে দেখুন, কিছু পৌত্তলিক এসে নবীকে জিজ্ঞেস করলো, আপনিই কি সেই ব্যক্তি, যিনি পৌত্তলিকদের বাপ দাদাদের গালাগালি করেন, তাদের উপাস্যকদের দোষের কথা বলেন, পৌত্তলিকদের বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোকেদের নির্বোধ ও বোকা মনে করেন? উত্তরে নবী বললো, হ্যাঁ, আমিই সেই ব্যক্তি। অর্থাৎ তিনিই এই সব কর্ম করে থাকেন [6]

মূর্তি 24

নবী মুহাম্মদ বলেছেন, আমাকে মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এই কথাটি সহিহ হাদিসেও বর্ণিত রয়েছে। [7] [8]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭/ ফাযাইলুল কুরআন
পরিচ্ছেদঃ ১৭. যে সকল ওয়াক্তে সালাত আদায় করা নিষেধ
১৮০৩। আহমাদ ইবনু জাফর আল মা’কিরী (রহঃ) … ইকরামা (রহঃ) বলেন, শাদ্দাদ, আবূ উমামা ও ওয়াসিলার সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং সিরিয়া ভ্রমণকালেও আনাস (রাঃ) এর সহচর ছিলেন। তিনি তার প্রশংসা করেছেন ও তার মহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন। আবূ উমামা (রাঃ) বলেন, আমর ইবনু আবাসা সুলামী (রাঃ) বলেন, আমি প্রাক ইসলাম যুগে সকল মানুষকে পথভ্রষ্ট বলে ধারণা করতাম। তারা কোন ধর্মের উপর নেই। তারা সবাই মুর্তি পূঁজা, দেব-দেবীর পূঁজা করত। তিনি বলেন, তখন আমি মক্কায় এমন এক ব্যাক্তির কথা শুনলাম যিনি বিভিন্ন সংবাদ বর্ণনা করেন। তখন আমি সাওয়ারীর উপর আরোহণ করে তাঁর নিকট এলাম এবং আমি জানতে পারলাম যে তিনি জনসমাবেশ থেকে নিজকে দুরে রাখেন। তাঁর কাওম তাঁর উপর নির্যাতন করে। আমি কৌশলে মক্কায় তার নিকট পৌছিলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার পরিচয় কি?
তিনি বললেন, আমি নবী। আমি বললাম, নবী কি? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আল্লাহ আপনাকে কি দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, আমাকে আত্নীয়তার বন্ধন সুদূঢ় করা, দেব-দেবী ও মূর্তি ভেঙ্গে দেওয়া, আল্লাহকে এক বলে জানা এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছু শরীক না করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কারা আছে? তিনি বললেন, একজন স্বাধীন ব্যাক্তি ও একজন কৃতদাস। তিনি বলেন যে, তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিলেন তাদের মধ্যে আবূ বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ) ছিলেন। আমি বললাম, আমিও আপনার অনুসারী হাত চাই। তিনি বললেন, বর্তমান অবস্থায় তুমি তা পারবে না। তুমি আমার অবস্থা ও লোকজনের অবস্থা কি দেখছ না? তুমি বরং পরিজনদের কাছে ফিরে যাও। যখন আমি বিজয় লাভ করেছি বলে শুনতে পাবে তখন আমার কাছে এসো।
তিনি বললেন, আমি পরিজনদের কাছে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদিনায় গমন করলেন। তখন আমি পরিজনদের মাঝে অবস্থান করছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় গমন করার পর থেকে আমি সর্বদা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর এবং মানুষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলাম। মদিনাবাসীদের একদল লোক আমার কাছে এলেন। তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করলাম। যে ব্যাক্তি মদিনায় আগমন করেছেন তিনি কি করছেন, তাঁর অবস্থা কি? তারা বললেন, লোকজন অতি দ্রুত তাঁর সাহচর্যে যাচ্ছে তাঁর কাওম তাঁকে হত্যা করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তারা সফলকাম হয়নি। আমি এ কথা শুলে মদিনায় গেলাম এবং তাঁর কাছে পৌছলাম। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, তুমি সে ব্যাক্তি যে আমার সাথে মক্কায় সাক্ষাৎ করেছিলে।
(বর্ণনাকারী) বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, ইয়া-নাবী আল্লাহ। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন, অথচ আমি তা জানি না, তা আমাকে শিক্ষা দিন। আমাকে সালাত সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, ফজরের সালাত আদায় করবে। এরপর সূর্য উদিত হয়ে পরিষ্কারভাবে উপরে না উঠা পর্যন্ত তুমি সালাত থেকে বিরত থাক। কেননা সূর্য যখন উদিত হয় তখন সেটা উদিত হয় শয়তানের দু’ শিং-এর মাঝখান দিয়ে। সে সময়ে কাফির তাকে সিজদা করে। এরপর সালাত আদায় কর, তীরের ছায়া তার সমান না হওয়া পর্যন্ত। সালাতে ফিরিশতাগণের উপস্থিতি এবং সাক্ষ্যের ব্যাপার রয়েছে। এরপর সালাত থেকে বিরত থাকো কেননা এ সময়ে জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। এরপর যখন ছায়ায় পরিবর্তন শুরু হয় তখন সালাত পড়তে থাক। ফিরিশতাগণ সালাতে উপস্থিত থাকেন। অর্থাৎ আসরের সালাত আদায় করা পর্যন্ত, তারপর সালাত হতে বিরত থাক সূর্য অস্তমিত না যাওয়া পর্যন্ত। কেননা সূর্য শয়তানের দু’শিং-এর মধ্যে দিয়ে অস্ত যায়। ঐ সময় কাফিররা তাকে সিজদা করে।
রাবী বলেন,আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! উযূ (ওজু/অজু/অযু) সম্পর্কে আমাকে বলে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কোন ব্যাক্তির কাছে যখন ওযুর পানি পেশ করা হয়, এরপর সে কুলি করে ও নাকে পানি দেয় ও তা পরিষ্কার করে। তখন তার মুখমন্ডলের মূখ গহব্বর ও নাকের সকল গুনাহ ঝরে যায়। তারপর যখন সে আল্লাহ পাকের নির্দেশ অনুসারে মুখমন্ডল ধোয় তখন মুখমন্ডলের চারিদিক থেকে সকল গুনাহ পানির সাথে ঝরে যায়। এরপর যখন দু’ হাত ধোয় কুনূই পর্যন্ত, তখন তার উভয় হাতের গুনাহসমূহ আঙ্গুল দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। এরপর উভয় পা গোড়ালী পর্যন্ত ধৌত করলে উভয় পায়ের গুনাহগুলো আঙ্গুল দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। এরপর যদি সে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করে, যথাযথভাবে ও তাঁর অন্তরকে আল্লাহর জন্য মুক্ত করে নেয়, তাহলে সে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে সেদিনের মত যে দিন তার মাতা তাকে প্রসব করোছিল।
আমর ইবনু আবাসা (রাঃ)ও হাদীসটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আবূ উমামা (রাঃ) এর নিকট বর্ণনা করেন। তখন আবূ উমামা (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আমর ইবনু আবাসা! ভেবে দেখ, তুমি কি বলছ! একই স্থানে ঐ ব্যাক্তিকে এত মর্যাদা দেয়া হবে? তখন আমর (রাঃ) বললেন, হে আবূ উমামা (রাঃ)! আমি বয়োবৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি। আমার হাড়গুলো নরম হয়ে গিয়েছে। আমার মৃত্যুকাল নিকটবর্তী হয়ে পড়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর মিথ্যা আরোপের কোন প্রয়োজন আমার নেই। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে না শুনতাম একবার দু’বার, তিনবার এমনকি তিনি সাত বার পর্যন্ত গণনা করলেন। তবে আমি কখনো এ হাদীস বর্ণনা করতাম না। আমি হাদীসটি সাত বারের চেয়েও অনেক বেশীবার শুনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইকরিমা (রহঃ)

রিয়াযুস স্বা-লিহীন
১/ বিবিধ
পরিচ্ছেদঃ ৫১: আল্লাহর দয়ার আশা রাখার গুরুত্ব
২৭/৪৪৩। আবূ নাজীহ ‘আমর ইবনে ‘আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, জাহেলিয়াতের (প্রাগৈসলামিক) যুগ থেকেই আমি ধারণা করতাম যে, লোকেরা পথভ্রষ্টতার উপর রয়েছে এবং এরা কোন ধর্মেই নেই, আর ওরা প্রতিমা পূজা করছে। অতঃপর আমি এক ব্যক্তির ব্যাপারে শুনলাম যে, তিনি মক্কায় অনেক আজব আজব খবর বলছেন। সুতরাং আমি আমার সওয়ারীর উপর বসে তাঁর কাছে এসে দেখলাম যে, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তিনি গুপ্তভাবে (ইসলাম প্রচার করছেন), আর তাঁর সম্প্রদায় (মুশরিকরা) তাঁর প্রতি (দুর্ব্যবহার করে) দুঃসাহসিকতা প্রদর্শন করছে। সুতরাং আমি বিচক্ষণতার সাথে কাজ নিলাম। পরিশেষে আমি মক্কায় তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি কী?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি নবী।’’
আমি বললাম, ‘নবী কী?’ তিনি বললেন, ‘‘আমাকে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন।’’ আমি বললাম, ‘কী নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘জ্ঞাতিবন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল্লাহকে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে।’’ আমি বললাম, ‘এ কাজে আপনার সঙ্গে কে আছে?’ তিনি বললেন, ‘‘একজন স্বাধীন মানুষ এবং একজন কৃতদাস।’’ তখন তাঁর সঙ্গে আবূ বকর ও বিলাল (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ছিলেন। আমি বললাম, ‘আমিও আপনার অনুগত।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি এখন এ কাজ কোনো অবস্থাতেই করতে পারবে না। তুমি কি আমার অবস্থা ও লোকদের অবস্থা দেখতে পাও না? অতএব তুমি (এখন) বাড়ি ফিরে যাও। অতঃপর যখন তুমি আমার জয়ী ও শক্তিশালী হওয়ার সংবাদ পাবে, তখন আমার কাছে এসো।’’
সুতরাং আমি আমার পরিবার পরিজনের নিকট চলে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পরিশেষে) মদ্বীনা চলে এলেন, আর আমি স্বপরিবারেই ছিলাম। অতঃপর আমি খবরাখবর নিতে আরম্ভ করলাম এবং যখন তিনি মদ্বীনায় আগমন করলেন, তখন আমি (তাঁর ব্যাপারে) লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম। অবশেষে আমার পরিবারের কিছু লোক মদ্বীনায় এল। আমি বললাম, ‘ঐ লোকটার অবস্থা কি, যিনি (মক্কা ত্যাগ করে) মদ্বীনা এসেছেন?’ তারা বলল, ‘লোকেরা তার দিকে ধাবমান। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হয়নি।’
অতঃপর আমি মদ্বীনা এসে তাঁর খিদমতে হাযির হলাম। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে চিনতে পারছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তো ঐ ব্যক্তি, যে মক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিল।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা আমার অজানা—তা আমাকে বলুন? আমাকে নামায সম্পর্কে বলুন?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি ফজরের নামায পড়। তারপর সূর্য এক বল্লম বরাবর উঁচু হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকো। কারণ তা শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্যভাগে উদিত হয় (অর্থাৎ এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং সে সময় কাফেররা তাকে সিজদা করে।
পুনরায় তুমি নামায পড়। কেননা, নামাযে ফিরিশ্তা সাক্ষী ও উপস্থিত হন, যতক্ষণ না ছায়া বল্লমের সমান হয়ে যায়। অতঃপর নামায থেকে বিরত হও। কেননা, তখন জাহান্নামের আগুন উস্কানো হয়। অতঃপর যখন ছায়া বাড়তে আরম্ভ করে, তখন নামায পড়। কেননা, এ নামাযে ফিরিশ্তা সাক্ষী ও উপস্থিত হন। পরিশেষে তুমি আসরের নামায পড়। অতঃপর সূর্য ডোবা পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকো। কেননা, সূর্য শয়তানের দু’ শিঙ্গের মধ্যে অস্ত যায় (অর্থাৎ এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং তখন কাফেররা তাকে সিজদাহ করে।’’
পুনরায় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে ওযূ সম্পর্কে বলুন?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ পানি নিকটে করে (হাত ধোওয়ার পর) কুল্লি করে এবং নাকে পানি নিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে, তার চেহারা, তার মুখ এবং নাকের গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তার চেহারা ধোয়, তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির শেষ প্রান্তের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার হাত দু’খানি কনুই পর্যন্ত ধোয়, তখন তার হাতের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়।
অতঃপর সে যখন তার মাথা মাসাহ করে, তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের ডগার পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার পা দু’খানি গাঁট পর্যন্ত ধোয়, তখন তার পায়ের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে গিয়ে নামায পড়ে, আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে–যার তিনি যোগ্য এবং অন্তরকে আল্লাহ তা‘আলার জন্য খালি করে, তাহলে সে ঐ দিনকার মত নিষ্পাপ হয়ে বেরিয়ে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।’’
তারপর ‘আমর ইবনে আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট বর্ণনা করলেন। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, ‘হে ‘আমর ইবনে ‘আবাসাহ! তুমি যা বলছ তা চিন্তা করে বল! একবার ওযূ করলেই কি এই ব্যক্তিকে এতটা মর্যাদা দেওয়া হবে?’ ‘আমর বললেন, ‘হে আবূ উমামাহ! আমার বয়স ঢের হয়েছে, আমার হাড় দুর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মৃত্যুও নিকটবর্তী। (ফলে এ অবস্থায়) আল্লাহ তা‘আলা অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করার আমার কী প্রয়োজন আছে?
যদি আমি এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে একবার, দু’বার, তিনবার এমনকি সাতবার পর্যন্ত না শুনতাম, তাহলে কখনই তা বর্ণনা করতাম না। কিন্তু আমি তাঁর নিকট এর চেয়েও অধিকবার শুনেছি।’ (মুসলিম) (1)
(1) মুসলিম ৮৩২, নাসায়ী ১৪৭, ৫৭২, ৫৮৪, ইবনু মাজাহ ২৮৩, ১২৫১, ১৩৫৪, আহমাদ ১৬৫৬৬, ১৬৫৭১, ১৬৫৭৮, ১৬৫৮০, ১৮৯৪০
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সেইসাথে, মক্কা বিজয়ের দিনে নবী মুহাম্মদ কাবা ঘরের সকল প্রাচীন মূর্তি ধ্বংস করে ফেলেছিলেন। যেই মূর্তিগুলোকে পৌত্তলিকগণ শত শত বছর ধরে শ্রদ্ধার সাথে পুজা করতো। মূর্তিগুলোকে মুহাম্মদ অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশও দেন নি। সরাসরি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছেন [9] [10]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৪৬/ অত্যাচার, কিসাস ও লুণ্ঠন
পরিচ্ছেদঃ ৪৬/৩২. মদের (মৃৎপাত্র) মটকা ভেঙ্গে ফেলা অথবা মশক ছিদ্র করা যায় কি? যদি কেউ নিজের লাঠি দ্বারা মুর্তি বা ক্রুশ অথবা তবলা অথবা কোন অপ্রয়োজনীয় বস্তু ভেঙ্গে ফেলে (তবে তার হুকুম কী)?
২৪৭৮. ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (বিজয়ীর বেশে) মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন কা‘বা শরীফের চারপাশে তিনশ’ ষাটটি মূর্তি ছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাতের লাঠি দিয়ে মূর্তিগুলোকে আঘাত করতে থাকেন আর বলতে থাকেনঃ ‘‘সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, (আয়াতের শেষ পর্যন্ত)’’- (বনী ইসরাঈল/ইসরাঃ ৮১)। (৪২৮৭, ৪৭২০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৩১৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
২২/ হজ্ব (হাজ্জ)
পরিচ্ছেদঃ ১০১৪. কা’বা ঘরের ভিতরে চারদিকে তাকবীর বলা
১৫০৬। আবূ মা’মার (রহঃ) … ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (মক্কা) এলেন, তখন কা’বা ঘরে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানান। কেননা কা’বাঘরের ভিতর মূর্তি ছিল। তিনি নির্দেশ দিলেন এবং মূর্তিগুলো বের করে ফেলা হল। (এক পর্যায়ে) ইবরাহীম ও ইসমা’ইল (আঃ) এর প্রতিকৃতি বের করে আনা হয়- তাদের উভয়ের হাতে জুয়া খেলার তীর ছিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ! (মুশরিকদের) ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম! অবশ্যই তারা জানে যে, (ইব্রাহীম ও ইসমা’ঈল (আঃ)) তীর দিয়ে অংশ নির্ধারণের ভাগ্য পরীক্ষা কখনো করেন নি। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা’বা ঘরে প্রবেশ করেন এবং ঘরের চারদিকে তাকবীর বলেন। কিন্তু ঘরের ভিতরে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন নি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

শুধু যে এগুলো সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়। যখন নবীর ক্ষমতা কম থাকতো, তিনি ইসলামের দাওয়াত দিতেন। আর যখনই ক্ষমতাপ্রাপ্ত হতেন, জিহাদী লোকজন যোগার হয়ে যেতো, মুসলিমরা পৌত্তলিকদের মূর্তি এবং মন্দির ধ্বংস করে দিতো। ইয়ামেনের অন্তর্গত একটি জায়গায় পৌত্তলিকদের একটি তীর্থস্থান ছিল, যার নাম যুল খালাসা। সেটি যোদ্ধা পাঠিয়ে তিনি ধ্বংস করতে হুকুম দেন। এরকম ঘটনা অনেকগুলো। এই সম্পর্কে প্রখ্যাত স্কলার আল্লামা ইবনে কাসীরের আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে বলা আছে, নবী মুহাম্মদ এই তীর্থস্থানটি ধ্বংসের নির্দেশ দেন [11]

যুল খালাসা ধ্বংস

সহিহ বুখারী হাদিস গ্রন্থ থেকে এই সব বিষয়ের সত্যতা পরিষ্কার হয়ে যায় [12] [13] [14] [15] [16]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৫. ঘরবাড়ী ও খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দেওয়া
২৮১১। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি কি আমাকে যিলখালাসার ব্যাপারে শাস্তি দিবে না? খাশআম গোত্রে একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর (রাঃ) বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ’ আশ্বরোহী সাথে নিয়ে রওনা করলাম। তারা নিপুন অশ্বারোহী ছিল। জারীর (রাঃ) বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলীর চিহৃ দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দোয়া করলেন যে, ‘হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং হেদায়েত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন।’
তারপর জারীর (রাঃ) সেখানে গমন করেন এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলে ও জ্বালিয়ে দেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সংবাদ নিয়ে এক ব্যাক্তিকে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর (রাঃ)-এর দূত বলতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ তা‘আলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখনই যুলখালাসাকে আমরা ধংস করে দিয়েছি। জারীর (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাচঁবার বরকতের দু‘আ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজলী (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২১৩১. জারীর ইবন আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) এর আলোচনা
৩৫৪৯। ইসহাক আল ওয়াসিতী (রহঃ) … জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গৃহে প্রবেশ করতে কোনদিন আমাকে বাঁধা প্রদান করেন নি এবং যখনই আমাকে দেখেছেন মুচকি হাসি দিয়েছেন। জারীর (রাঃ) আরো বলেন, জাহিলী যুগে (খাস’আম গোত্রের একটি প্রতীমা রক্ষিত মন্দির) যুল-খালাসা নামে একটি ঘর ছিল। যাকে কা’বায়ে ইয়ামানী ও কা’বায়ে শামী বলা হত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি যুল-খালাসার ব্যাপারে আমাকে শান্তি দিতে পার? জারীর (রাঃ) বলেন, আমি আহমাস গোত্রের একশ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে যাত্রা করলাম এবং (প্রতীমা ঘরটি) বিধ্বস্ত করে দিলাম। সেখানে যাদেরকে পেলাম হত্যা করে ফেললাম। ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবাদ শোনালাম। তিনি (অত্যন্ত খুশী হয়ে) আমাদের জন্য এবং আহমাস গোত্রের জন্য দু’আ করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

যুল খালাসা বুখারী ৩৫৪৯

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২২২৬. যুল খালাসার যুদ্ধ
৪০১৮। ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) … জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসার পেরেশানী থেকে স্বস্থি দেবেনা? আমি বললাম: অবশ্যই। এরপর আমি (আমাদের) আহমাস গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈনিক নিয়ে চললাম। তাদের সবাই ছিলো অশ্ব পরিচালনায় অভিজ্ঞ। কিন্তু আমি তখনো ঘোড়ার উপর স্থির হয়ে বসতে পারতাম না। তাই ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালাম। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন।
এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর হাতের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ্! একে স্থির হয়ে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন’। জারীর (রাঃ) বলেন, এরপরে আর কখনো আমি আমার ঘোড়া থেকে পড়ে যাইনি। তিনি আরো বলেছেন যে, যুল-খালাসা ছিলো ইয়ামানের অন্তর্গত খাসআম ও বাজীলা গোত্রের একটি (তীর্থ) ঘর। সেখানে কতগুলো মূর্তি স্থাপিত ছিলো। লোকেরা এগুলোর পূজা করত এবং এ ঘরটিকে বলা হতো কা’বা।
রাবী বলেন, এরপর তিনি সেখানে গেলেন এবং ঘরটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন আর এর ভিটামাটিও চুরমার করে দিলেন। রাবী আরো বলেন, আর যখন জারীর (রাঃ) ইয়ামানে গিয়ে উঠলেন তখন সেখানে এক লোক থাকত, সে তীরের সাহায্যে ভাগ্য নির্নয় করত, তাকে বলা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিনিধি এখানে আছেন, তিনি যদি তোমাকে পাকড়াও করার সুযোগ পান তাহলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবেন।
রাবী বলেন, এরপর একদা সে ভাগ্য নির্নয়ের কাজে লিপ্ত ছিল, সেই মূহুর্তে জারীর (রাঃ) সেখানে পৌঁছে গেলেন। তিনি বললেন, তীরগুলো ভেঙ্গে ফেল এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই- এ কথার সাক্ষ্য দাও, অন্যথায় তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব। লোকটি তখন তীরগুলো ভেঙ্গে ফেলল এবং (আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এ কথার) সাক্ষ্য দিল।
এরপর জারীর (রাঃ) আবূ আরতাত নামক আহমাস গোত্রের এক ব্যাক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে পাঠালেন খোশখবরী শোনানোর জন্য। লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে সত্তার (আল্লাহর) কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, ঘরটিকে ঠিক খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত উটের মতো কালো করে রেখে আমি এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী এবং পদাতিক সৈনিকদের সার্বিক কল্যাণ ও বরকতের জন্য পাঁচবার দোয়া করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২২২৬. যুল খালাসার যুদ্ধ
৪০১৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … কায়স (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, জারীর (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসা থেকে স্বস্থি দেবে না? যুল-খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি (বানোয়াট তীর্থ) ঘর, যাকে বলা হত ইয়ামনী কা’বা। এ কথা শুনে আমি আহমাস্ গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশজন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে শক্তভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমার বুকের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখতে পেলাম।
(এ অবস্থায়) তিনি দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্! একে (ঘোড়ার পিঠে) শক্তভাবে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাঃ) সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিয়ে তা জ্বালিয়ে ফেললেন। এরপর তিনি (জারীর (রাঃ)) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীর (রাঃ) এর দূত (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) বলল, সেই মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য বাণী সহকারে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত কালো উঠের মত রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈনিকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দোয়া করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ)
পরিচ্ছদঃ ৬৪/৬৩. যুল খালাসার যুদ্ধ।
৪৩৫৬. ক্বায়স (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জারীর (রাঃ) থেকে আমাকে বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল খালাসা থেকে স্বস্তি দেবে না? যুল খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি ঘর, যার নাম দেয়া হয়েছিল ইয়ামানী কা‘বা। এ কথা শুনে আমি আহ্মাস গোত্র থেকে একশ’ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে স্থিরভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমি আমার বুকের উপর তার আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! একে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াত দানকারী ও হিদায়াত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাঃ) সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিলেন আর তা জ্বালিয়ে দিলেন। এরপর তিনি (জারীর (রাঃ)) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীরের দূত (রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বলল, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে চর্মরোগে আক্রান্ত কাল উটের মতো রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর জন্য পাঁচবার বারাকাতের দু‘আ করলেন। (৩০২০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০১৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

যুল খালাসা বুখারী ৪০১৬
যুল খালাসা বুখারী ৪০১৭
যুল খালাসা বুখারী ৪০১৮

নবীর উপস্থিতিতে ধর্ম অবমাননা

সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী মুহাম্মদের সম্মুখেই আবু বকর কাফেরদের দেবদেবী নিয়ে অত্যন্ত অশালীন এবং কুরুচিপূর্ণ গালাগালি করতেন। নবীরও সেখানে নিরব সম্মতি ছিল, নইলে নবী আবু বকরকে তখনই থামাতেন। ফাতহুল বারী গ্রন্থের লেখক ইবনু হাজার আসকালানি এই হাদিসের ব্যাখ্যাতে বলেন, নবী সেই সময়ে আবু বকরের এই কাজে নিরব সম্মতি জানিয়েছিলেন [17]। এই হাদিসটি অত্যন্ত দীর্ঘ বিধায় কিছু অংশ এখানে দেয়া হচ্ছে, আগ্রহী পাঠকগণ বাদবাকি অংশ মূল বই থেকে পড়ে নিতে পারেন। কাফেরদের সাথে যত শত্রুতাই থাকুক না কেন, যত যুদ্ধই হোক না কেন, কাফেরদের দেবদেবী বা ধর্ম নিয়ে এরকম অবমাননাকর, নোংরা এবং কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কোন সভ্য মানুষ কীভাবে বলতে পারে? [18] [19]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৬/ শর্তাবলী
পরিচ্ছেদঃ ১৭০১. যুদ্ধরত কাফিরদের সাথে জিহাদ ও সন্ধির ব্যাপারে শর্তারোপ এবং লোকদের সাথে কৃত মৌখিক শর্ত লিপিবদ্ধ করা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ২৫৪৭, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৭৩১ – ২৭৩৩
২৫৪৭। …
তখন আবূ বকর (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি লাত দেবীর লজ্জাস্থান চেটে খাও। আমরা কি তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যাব?

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মারওয়ান ইবনু হাকাম (রহঃ)

মূর্তি 27

অন্য উপাস্যদের গালি দেয়া নিষেধ?

অনেক মুমিনই দাবী করে থাকেন যে, কোরআনে একটি আয়াতে [20] অন্য ধর্মের উপাস্যদের গালি দেয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এই মিথ্যাবাদী মুমিনেরা যে বিষয়টি লুকায় তা হচ্ছে, এই আয়াতটি নাজিলের প্রেক্ষাপট। মুহাম্মদই আগ বাড়িয়ে কাফেরদের দেবদেবীকে গালাগালি করতো, এর বিপরীতে মক্কার কাফেরগণও পাল্টা হুমকি দিয়েছিল যে, মুহাম্মদ এই কাজ করতে থাকলে তারাও মুহাম্মদের আল্লাহকে গালি দিবে। শুধুমাত্র নিজের আল্লাহকে গালির হাত থেকে রক্ষার জন্য মুহাম্মদ ভীত হয়ে এই আয়াতটি নাজিল করেছিল, যা তাফসীর গ্রন্থগুলোতে খুব পরিষ্কারভাবেই বলা আছে। এই কাজটি মুহাম্মদ মোটেও স্বপ্রোনোদিতভাবে করেনি, পাল্টা হুমকি পাওয়ার পরে করেছিল। এমন নয় যে, মুহাম্মদ কাফেরদের ধর্মগুলো বা বিশ্বাস সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হয়ে নিজেই সেইসব ধর্মের উপাস্যদের গালি দেয়া থেকে বিরত থেকেছিল! শক্তিমত্তায় এবং জনবলে দুর্বল হওয়ার কারণে এই আয়াতটি ছিল মুহাম্মদের কল্পিত আল্লাহকে কাফেরদের গালাগাল থেকে রক্ষার জন্য। পরবর্তীতে ক্ষমতা পাওয়ার পরে মুহাম্মদ সেইসব উপাস্য দেবদেবীদের মূর্তি ও মন্দিরগুলোর কী করেছিল, তা পরে আলোচনা করছি। আপাতত আসুন সেই প্রেক্ষাপটটি জেনে নিই শায়খুল মুফাসসিরীন, ফক্বীহুল উম্মত আল্লামা ছানাউল্লাহ পানীপথীর তাফসীরে মাযহারী থেকে [21]

মূর্তি 29
মূর্তি 31

এবারে এই আয়াতের তাফসীর দেখে নিই ইবনে কাসীরের তাফসীর থেকে [22] । ইবনে কাসীরের তাফসির থেকেও যা জানা যায় তা হচ্ছে, মুসলিমরাই আগে পৌত্তলিকদের প্রতিমাগুলোকে গালাগালি শুরু করে। তখন বাধ্য হয়ে পৌত্তলিক কোরাইশরা মুহাম্মদের চাচা আবু তালিবের কাছে বিচার দেয়, এবং তাদের দেবদেবীকে গালি দিতে নিষেধ করে। সেই সাথে এটিও হুমকি দেয়, মুহাম্মদ তাদের দেবদেবীকে গালি দিলে তারাও মুহাম্মদের আল্লাহকে গালি দিবে। তখন নিতান্তই বাধ্য হয়ে, তাফসীরের ভাষ্য অনুসারে “উপকার থাকা সত্ত্বেও” কাফেরদের প্রতিমাগুলোকে গালি দেয়া থেকে বিরত থাকার আয়াত নাজিল হয়, যেহেতু সেই সময়ে মুসলিমরা সংখ্যালঘু ছিল!

মূর্তি 33
মূর্তি 35

যার যার দ্বীন তার তার?

উপরের আলোচনা থেকে এটি মোটামুটি স্পষ্ট যে, ইসলাম আসলে অমুসলিমদের মন্দির, মূর্তি, এগুলো ধ্বংস করতেই উৎসাহ দেয়। অমুসলিমদের মন্দির এবং মূর্তি ধ্বংস করা ঠিক কিনা, এই বিষয়ে আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে কিছু মডারেট মুসলিম বলতে শুরু করেন, কোরআনে নাকি বর্ণিত আছে, যার যার দ্বীন তার তার! এই আয়াতটি আরো দুই একটি আয়াত দিয়ে তারা প্রমাণ করতে চায়, ইসলাম খুব শান্তির ধর্ম! ইসলাম অন্য ধর্মের মানুষকেও অনেক অধিকার দেয়! বা ইসলাম একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্ম! অথচ, তারা কেউই এই আয়াতটির তাফসীর পড়ে দেখেন না। অনেকে আবার তাফসীর ঠিকই পড়ে, কিন্তু ইসলামের সম্মান রক্ষার্থে মিথ্যা বলে। আসুন এই আয়াতটি নিয়ে আলোচনা করি। এই বিষয়ে প্রখ্যাত ক্লাসিক্যাল তাফসীরগুলো কী বলে জেনে নিই। প্রথমে আয়াতটি দেখি [23]

তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।
( সূরা কাফিরুন, আয়াত ৬ )

আসুন এবারে সরাসরি তাফসীর গ্রন্থগুলো থেকে কুরআনের এই আয়াতটির ব্যাখ্যা পড়ে নিই [24]

মূর্তি 37
মূর্তি 39
মূর্তি 41
মূর্তি 43

উপরের তথ্যসূত্র থেকে এটি পরিষ্কার যে, ইসলাম যার যার ধর্ম তার তার এই কথাতে মোটেও বিশ্বাসী নয়। বরঞ্চ ইসলাম জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণে বাধ্য করে। মুসলিমদের ক্ষমতা যখন কম ছিল, তখন কৌশল হিসেবে এই আয়াত নাজিল হলেও, মুসলিমদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া মাত্রই এই আয়াত মানসুখ হয়ে আক্রমণের আয়াত নাজিল হয়। জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের বিধানও নাজিল হয়।

এবারে আসুন, তাফসীরে জালালাইন থেকে দেখি, এই আয়াতটি নাজিলের প্রেক্ষাপট এবং অর্থ কী! এই আয়াতে কী যার যার ধর্ম নিয়ে সহাবস্থানের কথা বলা হয়েছে, নাকি কাফেরদের বিরুদ্ধে এই আয়াতটি ছিল একটি সাময়িক কৌশল, যেহেতু মুসলিমদের তখনো খুব বেশি ক্ষমতা ছিল না। তাফসিরে কিন্তু সরাসরিই বলা রয়েছে, এই সময়ে মুসলিমরা ছিল সংখ্যালঘু এবং দুর্বল, তাই যেন আল্লাহকে গালি না দেয়া হয়, সেই ভয় থেকেই এই আয়াতটি নাজিল হয়েছিল। পরবর্তীতে মুসলিমরা যখন শক্তিশালী হয়েছে, তারা পুরো আরব উপদ্বীপের সমস্ত মূর্তি ধ্বংস করে দিয়েছে [25]

মূর্তি 45
মূর্তি 47
মূর্তি 49
মূর্তি 51

নবীর মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশ

উপরে যুল খালাসায় সৈন্য পাঠিয়ে অমুসলিমদের উপাসনালয় এবং পুজনীয় মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশের কথা বলা হয়েছে। এরকম উদাহরণ অনেকগুলোই আছে। আসুন আর-রাহীকুল মাখতূম থেকে পড়ি, সেখানে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে সৈন্য পাঠিয়ে নবী মূর্তি, উপাসনালয় এবং সেই সব মূর্তির পুজা কারী মানুষদের সমূলে নিশ্চিহ্ন করতেন। এমনকি মহিলাদেরও বাদ দিতেন না। অবস্থা এমন খারাপ হয়েছিল যে, নবী নিজেই খালিদ বিন ওয়ালিদের ওপর এত হত্যাকাণ্ড দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন [26]

বিভিন্ন অভিযান ও প্রতিনিধি প্রেরণ (السَّرَايَا وَالْبُعُوْثِ):
১. মক্কা বিজয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজকর্ম সুসম্পন্ন করার পর যখন তিনি কিছুটা অবকাশ লাভ করলেন তখন ৮ম হিজরীর ২৫ রমযান উযযা নামক দেব মূর্তি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একটি ছোট সৈন্যদল প্রেরণ করলেন। উযযা মূর্তির মন্দিরটি ছিল নাখলা নামক স্থানে। এটি ভেঙ্গে ফেলে খালিদ (রাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,‏ (‏هَلْ رَأَيْتَ شَيْئًا‏؟‏‏)‏‘তুমি কি কিছু দেখেছিলে?’ খালিদ (রাঃ) বললেন, ‘না’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, ‏(‏فَإِنَّكَ لَمْ تَهْدِمْهَا فَارْجِعْ إِلَيْهَا فَاهْدِمْهَا‏)‏ ‘তাহলে প্রকৃতপক্ষে তুমি তা ভাঙ্গ নি। পুনরায় যাও এবং তা ভেঙ্গে দাও।’ উত্তেজিত খালিদ (রাঃ) কোষমুক্ত তরবারি হস্তে পনুরায় সেখানে গমন করলেন। এবারে বিক্ষিপ্ত ও বিস্ত্রস্ত চুলবিশিষ্ট এক মহিলা তাঁদের দিকে বের হয়ে এল। মন্দির প্রহরী তাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল। কিন্তু এমন সময় খালিদ (রাঃ) তরবারি দ্বারা তাকে এতই জোরে আঘাত করলেন যে, তার দেহ দ্বিখন্ডিত হয়ে গেল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে তিনি এ সংবাদ অবগত করালে তিনি বললেন, ‏(‏نَعَمْ، تِلْكَ الْعُزّٰى، وَقَدْ أَيِسَتْ أَنْ تَعْبُدَ فِيْ بِلَادِكُمْ أَبَدًا‏) ‘হ্যাঁ’, সেটাই ছিল উযযা। এখন তোমাদের দেশে তার পূজা অর্চনার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়ে পড়েছে (অর্থাৎ কোন দিন তার আর পূজা অর্চনা হবে না)।
২. এরপর নাবী কারীম (সাঃ) সে মাসেই ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-কে ‘সুওয়া’ নামক দেবমূর্তি ভাঙ্গার জন্য প্রেরণ করেন। এ মূর্তিটি ছিল মক্কা হতে তিন মাইল দূরত্বে ‘রিহাত’ নামক স্থানে বনু হুযাইলের একটি দেবমূর্তি। ‘আমর যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন প্রহরী জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কী চাও?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর নাবী (সাঃ) এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার জন্য আমাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন।’
সে বলল, ‘তোমরা এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে পারবে না।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘কেন?’
সে বলল, ‘প্রাকৃতিক নিয়মেই তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হবে।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা এখনও বাতিলের উপর রয়েছ? তোমাদের উপর দুঃখ, এই মূর্তিটি কি দেখে কিংবা শোনে?’
অতঃপর
মূর্তিটির নিকট গিয়ে তিনি তা ভেঙ্গে ফেললেন এবং সঙ্গীসাথীদের নির্দেশ প্রদান করলেন ধন ভান্ডার গৃহটি ভেঙ্গে ফেলতে। কিন্তু ধন-ভান্ডার থেকে কিছুই পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি প্রহরীকে বললেন, ‘বল, কেমন হল?’
সে বলল, ‘আল্লাহর দ্বীন ইসলাম আমি গ্রহণ করলাম।’
৩. এ মাসেই সা‘দ বিন যায়দ আশহালী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে বিশ জন ঘোড়সওয়ার সৈন্য প্রেরণ করেন মানাত দেবমূর্তি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। কুদাইদের নিকট মুশাল্লাল নামক স্থানে আওস, খাযরাজ, গাসসান এবং অন্যান্য গোত্রের উপাস্য ছিল এ ‘মানত’ মূর্তি। সা‘দ (রাঃ)-এর বাহিনী যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন মন্দিরের প্রহরী বলল, ‘তোমরা কী চাও?’
তাঁরা বললেন,
‘মানাত দেবমূর্তি ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে আমরা এখানে এসেছি।’
সে বলল, ‘তোমরা জান এবং তোমাদের কার্য জানে।’
সা‘দ মানাত মূর্তির দিকে অগ্রসর হতে গিয়ে
একজন উলঙ্গ কালো ও বিক্ষিপ্ত চুল বিশিষ্ট মহিলাকে বেরিয়ে আসতে দেখতে পেলেন। সে আপন বক্ষদেশ চাপড়াতে চাপড়াতে হায়! রব উচ্চারণ করছিল।
প্রহরী তাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘মানাত! তুমি এ অবাধ্যদের ধ্বংস কর।’
কিন্তু
এমন সময় সা‘দ তরবারির আঘাতে তাকে হত্যা করলেন। অতঃপর মূর্তিটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিলেন। ধন-ভান্ডারে ধন-দৌলত কিছুই পাওয়া যায় নি।
৪. উযযা নামক দেবমূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলার পর খালিদ বিন ওয়ালীদ (সাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৮ম হিজরী শাওয়াল মাসেই বনু জাযামাহ গোত্রের নিকট তাঁকে প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল আক্রমণ না করে ইসলাম প্রচার। খালিদ (রাঃ) মুহাজির, আনসার এবং বনু সুলাইম গোত্রের সাড়ে তিনশ লোকজনসহ বনু জাযীমাহর নিকট গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। তারা (ইসলাম গ্রহণ করেছি) বলার পরিবর্তে (আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি) বলল। এ কারণে খালিদ (রাঃ) তাদের হত্যা এবং বন্দী করতে আদেশ দিলেন। তিনি সঙ্গী সাথীদের এক একজনের হস্তে এক এক জন বন্দীকে সমর্পণ করলেন। অতঃপর এ বলে নির্দেশ প্রদান করলেন যে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর নিকটে সমর্পিত বন্দীকে হত্যা করবে। কিন্তু ইবনু উমার এবং তাঁর সঙ্গীগণ এ নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলেন। অতঃপর যখন নাবী কারীম (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি দু’ হাত উত্তোলন করে দু’বার বললেন, ‏(‏اللهم إِنِّيْ أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدًا) ‘হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তা হতে তোমার নিকটে নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।’(1)
এ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র বনু সুলাইম গোত্রের লোকজনই নিজ বন্দীদের হত্যা করেছিল। আনসার ও মহাজিরীনগণ হত্যা করেন নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী (রাঃ)-কে প্রেরণ করে তাদের নিহত ব্যক্তিদের শোণিত খেসারত এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন। এ ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে খালিদ (রাঃ) ও আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ)-এর মাঝে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং সম্পর্কের অবণতি হয়েছিল। এ সংবাদ অবগত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,
‏(‏مَهَلًّا يَا خَالِدُ، دَعْ عَنْكَ أَصْحَابِيْ، فَوَاللهِ لَوْ كَانَ أَحَدٌ ذَهَبًا، ثُمَّ أَنْفَقَتْهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا أَدْرَكَتْ غُدْوَةَ رَجُلٍ مِّنْ أَصْحَابِيْ وَلَا رَوْحَتَهُ‏)‏‏
‘খালিদ থেমে যাও, আমার সহচরদের কিছু বলা হতে বিরত থাক। আল্লাহর কসম! যদি উহুদ পাহাড় সোনা হয়ে যায় এবং তার সমস্তই তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করে দাও তবুও আমার সাহাবাদের মধ্য হতে কোন এক জনেরও এক সকাল কিংবা এক সন্ধ্যার ইবাদতের নেকী অর্জন করতে পারবে না।(2)

নবীর মূর্তি ধংস
নবীর বর্বরতা

শুধু এইটুকুতেই শেষ নয়। আলীর প্রতি এবং পরবর্তীদের প্রতি নবীর নির্দেশও আমরা দেখে নিই [27]

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১০/ কাফন-দাফন
পরিচ্ছেদঃ কবর সমান করে দেওয়া।
১০৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ….. আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আবূল- হায়্যাজ আল-আসা’দী (রহঃ) কে বলেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন, আমি তোমাকেও সেই দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করছি। তা হলো, কোন উঁচু কবরকে (মাটি) সমান করা ব্যতীত ছাড়বেনা, আর কোন প্রতিকৃতি বিধ্বংস করা ব্যতীত ছাড়বে না। – আল আহকাম ২০৭, ইরওয়া ৭৫৯, তাহযীরুস সাজিদ ১৩০, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১০৪৯ [আল মাদানী প্রকাশনী]
এই বিষয়ে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও হাদীস বর্ণিত রয়েছে। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি হাসান। কোন কোন আলিম এতদনুসারে আমল করেছেন। তারা যমীনের উপর কবর উচূঁ করে বাঁধা অপছন্দনীয় বলে মনে করেন। ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেন, যতটুকু উঁচু করলে এটিকে কবর বলে চিনা যায় তদপেক্ষা কবরকে উঁচু করা আমি পছন্দ করি না। তবে চি‎হ্নস্বরূপ কিছু উঁচু করার দরকার এই জন্য যে, এটিকে যেন কেউ পদদলিত না করে বা এর উপর যেন কেউ না বসে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ওয়াইল (রহঃ)

ভাষ্কর্য তৈরি কী ইসলাম সম্মত?

ইদানিং অনেক মডারেট মুসলিমই দাবী করে থাকেন, ইসলামে পুজনীয় মূর্তি ভাঙ্গা জায়েজ হলেও ভাষ্কর্য বানাতে নাকি কোন বাধা নেই! অথচ, নবী মুহাম্মদ যখন মক্কা বিজয় করেন, সেই সময়ে কাবায় একটি কবুতরের কাঠের মূর্তি ছিল। নবী নিজ হাতেই সেটি ভেঙ্গে দিয়েছেন। সেটি কোন পুজনীয় মূর্তি ছিল না। শুধুমাত্র সৌন্দর্য্য বর্ধনের মূর্তি ছিল। অর্থাৎ, ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা হলে যাবতীয় মূর্তি ভাষ্কর্যই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। [28]

মূর্তি 55

প্রখ্যাত আলেমদের অভিমত

বর্তমান সময়ে সবচাইতে প্রখ্যাত ইসলামের আলেমদের এই বিষয়ে মতামত হচ্ছে, মুসলিমরা যখন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে, তখন অমুসলিমদের সকল মূর্তি এবং মন্দির ধ্বংস করে ফেলতে হবে। কোরআন হাদিস সব গবেষণা করে ইসলামের প্রখ্যাত আলেমগণ এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছেন। এই বিষয়ে সরাসরি ফতোয়াও দেয়া আছে। ফতোয়াটি এখানে দেয়া হলো, যেটি প্রখ্যাত ফতোয়ার ওয়েবসাইট Islamweb থেকে নেয়া – [29]

Demolishing idols in a non-Muslim country
Fatwa No: 190575
Fatwa Date:18-11-2012 – Muharram 5, 1434Email Print
Rating:
Question
Assalamu Alaikum, In the Quran, Allah says that Abraham destroyed the idols to teach the people that idols don’t have any power. In another place, Quran asks to follow the religion of Abraham. Is it required for a muslim living in a hindu country to destroy the idols. Will this not cause religious hatred and communal violence? Is it allowed to construct hindu temple in an islamic country?
Answer
All perfect praise be to Allaah, The Lord of the Worlds. I testify that there is none worthy of worship except Allaah, and that Muhammad sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) is His slave and Messenger.
There is Islamic evidence that it is an obligation to demolish idols and statues, among which is the Hadeeth narrated by ‘Amr ibn ‘Abasah may Allaah be pleased with him that he asked the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ): ”What did Allaah send you with?” He sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) said: “He sent me to keep ties with kinship and demolish idols, and that Allaah Alone should be worshipped without associating anything with Him.” (Muslim)
Also, Abu Al-Hayyaaj Al-Asadi may Allaah be pleased with him said: “ ‘Ali ibn Abi Taalib may Allaah be pleased with him said to me: “Shall I send you for a mission once the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) had sent me for: Do not leave an idol unless it is destroyed, nor you leave an up leveled grave unless you level it down to ground.” (Muslim)
However, this is restricted to the ability of the Muslims in doing so and them being safe from causing a greater harm. Our best example is that of the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) as he used to go to the House of Allaah and perform Tawaaf (circumambulation around the Ka‘bah) while there were 360 idols around it but he did not cause harm to any of them until after the conquest of Makkah and after the Muslims became strong and the polytheists were no longer ruling over Makkah; it was then that the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) destroyed the idols. He sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) prodded the idols with a bow while saying: “The truth has come and falsehood has vanished.” The story is narrated in Saheeh Al-Bukhari and Saheeh Muslim.
The Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) used to take into consideration the prevailing circumstances and leave that which could lead to a greater evil despite the fact that it was permissible in principle. The evidence about this is the Hadeeth of ‘Aa’ishah may Allaah be pleased with her who said: “I asked the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) about Al-Hijr (the area adjacent to the Ka’bah enclosed by a low semi-circular wall), is it from the House (of Allaah)? He sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) said: ’Yes.’ I said, ‘Why did they not include it in the House?’ He sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) said: ’Your people did not have enough resources to spend on it.’ I said: ’Why is the level of its door raised high?’ He sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) said: ’Your people did so, so that they would let whomever they want to enter it and prevent whomever they want from entering it. Your people are close to the Pre-Islamic Period of Ignorance; so I fear that they would reject if I included the Hijr in the House and make its door at a level with the ground.’ ” (Al-Bukhari and Muslim)
Besides, what the Prophet Ibraaheem (Abraham) may Allaah exalt his mention did does not contradict what we have stated, as he did not do that matter until he was capable of doing it and being secure from being harmed. Ibn ‘Aashoor may Allaah have mercy upon him said while interpreting the verse (which means): {And (I swear) by Allaah, I will surely plan against your idols after you have turned and gone away.} (Quran 21:57): “He conditioned that his plan (agaist their idols) be after they depart in order to indicate that he will inflict harm on the idols as soon as he will be able to do so. This proves his strong determination to change evil, because taking the initiative to change evil although it is by hand (physically), is a rank of strong determination, but he would not be able to do so in the presence of idolaters. So, if he were to try to demolish it in their presence, then his act will be in vain. What is meant from changing evil: is to remove it as much as possible, so removing it by hand can only be done with the existence of the ability to do so.”
Finally, it should be noted that it is not permissible for the Muslims to allow non-Muslims to establish one of their temples in a Muslim country, let alone the Muslim country establishing it itself. The conditions that ‘Umar may Allaah be pleased with him put on the non-Muslims living safely in a Muslim country under Muslim rule included: “….that we will not erect in our city any church….”
Allaah Knows best.

উপরের ফতোয়াটির ভাবানুবাদ দেয়া হলো ( অনুবাদক- কোয়েস আলী ) –

প্রশ্নঃ
আসসালামুয়ালাইকুম। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন যে, ইব্রাহিম মুর্তি ভেঙে মানুষকে এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন যে মুর্তির কোন শক্তি নেই। কোরআনের আরেক জায়গায় ইব্রাহিম প্রবর্তিত ধর্মকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এখন, হিন্দু দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের কি মুর্তি ভাঙা বাধ্যতামূলক? এতে কি ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো এবং সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয়ে যাবে না? ইসলামিক দেশে হিন্দু মন্দির স্থাপন করা কি জায়েজ?
উত্তরঃ
ইসলামে মুর্তি ভাঙার নির্দেশনা বিষয়ে যে তথ্য আমরা পাই, তার মধ্যে একটি হাদীস- আমির ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত,যে তিনি নবীকে জিজ্ঞাসা করলেন,”আল্লাহ আপনাকে কি নির্দেশ প্রেরণ করেছেন?” নবী বললেন,”তিনি আমাকে সংহতি বজায় রাখতে পাঠালেন ও মুর্তি ভাঙতে বলেছেন, যাতে আল্লাহর সমকক্ষ কোনকিছুই না থাকতে পারে।“(মুসলিম)
আবার আবু আলা হায়াজ আল আসাদী বলেন, “আলী ইবনে আবু তালিব বললেন, নবী আমাকে যে কাজে পাঠিয়েছিলেন,তোমাকেও সে কাজে পাঠাতে পারি কি-কোন মুর্তি আস্ত রাখবে না, যতক্ষন পর্যন্ত সেগুলো ধংসস্তুপ হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই উচু ধ্বংসস্তুপ সমতল ভূমিতে পরিণত হয়।(মুসলিম)
যাইহোক, এখন মুসলিমদের জন্য এটা সীমিত করা হয়েছে, যাতে তারা বড় ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারে। সেরা উদাহরণ হচ্ছে, নবী সাঃ আল্লাহর ঘরে নিয়মিত যেতেন ও তাওয়াফ করতেন। সেখানে চারপাশের ৩৬০ ডিগ্রি জুড়ে নানা মুর্তি ছিল, কিন্তু তিনি মক্কা বিজয়ের আগে সেগুলোর কোন ক্ষতি করেন নি এবং এরপর যখন মুসলিমরা শক্তিশালী হল এবং বহু ঈশ্বরবাদীরা দুর্বল হল, তখন নবী সাঃ এক ঝটকায় মুর্তিগুলো ভেঙে দিলেন ও বললেন,”সত্য উন্মোচিত হয়েছে, মিথ্যা দূর হয়েছে।“ ইহা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে।
নবী চারপাশকে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতেন এবং আদর্শগত দিকের চেয়ে কোন কাজে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাকে বেশী গুরুত্ব দিতেন। আয়েশা বর্ণিত হাদীস হতে আমরা পাই- ‘আমি নবীকে জিজ্ঞেস করলাম, আল হিজর (কাবা সংলগ্ন অর্ধচন্দ্রাকৃতির দেয়াল ঘেরা স্থান) কি আল্লাহর ঘরের সাথে সংযুক্ত?’ নবী বললেন,’হ্যা’। আমি বললাম, ‘তবে আল্লাহ একে ঘরের সাথে কেন সংযুক্ত করেন নি?’ নবী বললেন,’তোমার লোকেদের যথেষ্ট অর্থ ছিল না”। আমি বললাম, দরজার পাড় এত উচু কেন?’ নবী বললেন,’তোমার লোকেরা এটা করেছে, যাতে তারা কাউকে কাউকে এখানে ঢুকতে দিতে পারে, কাউকে কাউকে না দিতে পারে। তোমার লোকেরা ইসলামপূর্ব সময়ের ন্যায় অজ্ঞ/মূর্খ ছিল। তাই আমি চিন্তিত ছিলাম যে আমি যদি হিজরকে কাবার সাথে যুক্ত করি ও দরজা ভেঙে মাটির সমান করে দিই, তবে তারা আমাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
এখন ইব্রাহিম নবী যা করেছেন, তার সাথে আমাদের বক্তব্য সাংঘর্ষিক না। কেননা, তিনি সক্ষমতা অর্জনের পরেই কাজটা করেছিলেন এবং ক্ষতি থেকে দূরে ছিলেন। ইবনে আসুর বর্ণণা করেন-“আল্লাহর কসম, যখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করব।”
তিনি শর্ত দিলেন যে, মুর্তি ধ্বংসের কাজটা তখনই করতে হবে, যখন সেটার সামর্থ্য আপনার হবে।
এটা দিয়ে প্রমানিত হয় যে, খারাপকে বদলাবার ব্যাপারে নবীর দৃঢ় মনোভাব ছিল কারণ নিজ হাতে মুর্তি ভাঙার উদয়োগ তার দৃঢ় ইচ্ছার বিষয়টি নিশ্চিত করে। কিন্তু মুর্তি পূজারীদের উপস্থিতিতে তিনি সেটা করতে পারতেন না। কারণ, এর ফলে সেই প্রচেষ্টা ব্যার্থ হতে পারে। খারাপকে বদলাবার মানে হল, যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা ও নিজ হাতে ধ্বংস করা। সেটা তখনই সম্ভব, যখন আপনার সামর্থ্য হবে।
সবশেষে, মুসলিম দেশে কোন অমুসলিম মন্দির স্থাপন কিংবা কোন মুসলিম দেশকে করতে দেয়া, মুসলমানের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। হযরত উমরের ইসলামিক শাসনের অধীনে অমুসলিমদের নিরাপত্তা দিয়ে শর্ত দিয়েছিলেন, ’ আমরা আমাদের নগরে কোন চার্চ তৈরী করতে দেব না”

সেইসাথে, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বর্তমান সময়ে ইসলামী শারীয়া সম্পর্কে সবচাইতে বড় পণ্ডিতদের মধ্যে একজন মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ সৌদি আরবের একজন সালাফি স্কলার, যিনি ইসলামকিউএ.ইনফো ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচিত- যা সালাফি মানহাযের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর প্রদান করে। আল জাজিরা এবং সৌদি সরকার সহ অসংখ্য জায়গাতেই তার ব্যাখ্যা রেফারেন্স হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তার দ্বারা পরিচালিত ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে কী বলা, তা আগে জেনে নিই। [30]

Obligation to destroy idols
Question
Is it obligatory to destroy statues in Islam, even if they are part of the legacy of human civilization? Why is it that when the Sahaabah conquered other lands and saw statues there they did not destroy them?.
Answer
Praise be to Allah.
The evidence of sharee’ah indicates that it is obligatory to destroy idols, for example:
1 – Muslim (969) narrated that Abu’l-Hayaaj al-Asadi said: ‘Ali ibn Abi Taalib said to me: “Shall I not send you with the same instructions as the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) sent me? ‘Do not leave any image without defacing it or any built-up grave without leveling it.’”
2 – Muslim (832) narrated from ‘Urwah ibn ‘Abasah that he said to the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him): “With what were you sent?” He said, “I was sent to uphold the ties of kinship, to break the idols, and so that Allaah would be worshipped alone with no partner or associate.”
The obligation to destroy them is even stronger if they are worshipped instead of Allaah.
3 – al-Bukhaari (3020) and Muslim (2476) narrated that Jareer ibn ‘Abd-Allaah al-Bajali said: The Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) said to me: “O Jareer, will you not relieve me of Dhu’l-Khalsah?” That was a house (in Yemen) belonging to the (tribe of) Khath’am, which was called Ka’bat al-Yamaaniyyah. I set out with one hundred and fifty horsemen. I used not to sit firm on horses and I mentioned that to the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him). He struck me on my chest with his hand and said, ‘O Allaah! Make him firm and make him one who guides others and is guided on the right path.’ ” So Jareer went and burned it with fire, then Jareer sent a man called Abu Artaat to the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him). He said, “I did not come to you until we had left it like a scabby camel.” Then the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) blessed the horses of (the tribe of) Ahmas and their men five times.
Al-Haafiz Ibn Hajar said:
This hadeeth indicates that it is prescribed to remove things that may tempt or confuse the people, whether they are buildings, people, animals or inanimate objects.
4 – The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) sent Khaalid ibn al-Waleed (may Allaah be pleased with him) on a campaign to destroy al-‘Uzza.
5 – and he sent Sa’d ibn Zayd al-Ashhali (may Allaah be pleased with him) on a campaign to destroy Manaat.
6 – And he sent ‘Amr ibn al-‘Aas (may Allaah be pleased with him) on a campaign to destroy Suwaa’. All of that happened after the Conquest of Makkah.
Al-Bidaayah wa’l-Nihaayah, 4/712. 776. 5/83; al-Seerah al-Nabawiyyah by Dr. ‘Ali al-Salaabi, 2/1186.
Al-Nawawi said in Sharh Muslim when discussing the issue of image-making:
They were unanimously agreed that whatever casts a shadow is not allowed and must be changed.
Images that cast a shadow are three-dimensional images like these statues.
With regard to what is said about the Sahaabah (may Allaah be pleased with them) not destroying idols in the conquered lands, this is merely conjecture. The companions of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) would not have left idols and statues alone, especially since they were worshipped at that time.
If it is asked, how come the Sahaabah left alone the ancient idols of the Pharaohs and Phoenicians? The answer is that these idols fall into one of three categories:
1 – These idols may have been in remote places that the Sahaabah did not reach; when the Sahaabah conquered Egypt, for example, that does not mean that they reached every part of the land.
2 – These idols may not have been visible, rather they may have been inside Pharaonic buildings etc. The Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) told us to hasten when passing through the abodes of the wrongdoers and those who had been punished, and he forbade entering such places. In al-Saheehayn it is says: “Do not enter upon those who have been punished unless you are weeping, lest there befall you something like that which befall them.” He (peace and blessings of Allaah be upon him) said that when he passed by ashaab al-hijr (the dwellers of the rocky tract – see al-Hijr 15:80), in the land of Thamood, the people of Saalih (peace be upon him).
According to another report narrated in al-Saheehayn, “If you are not weeping, then do not enter upon them, lest there befall you something like that which befall them.”
What we think is that if the companions of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) saw a temple or building belonging of these people, they did not enter it or even look at what was inside it.
This will dispel any confusion about why the Sahaabah did not see the Pyramids or what is inside them. There is also the possibility that their doors and entrances were covered with sand at that time.
3 – Many of these idols that are visible nowadays were covered and hidden, and have only been discovered recently, or they have been brought from remote places that the companions of the Prophet (peace and blessings of Allaah be upon him) did not reach.
Al-Zarkali was asked about the Pyramids and the Sphinx etc: Did the Sahaabah who entered Egypt see them?
He said: They were mostly covered with sand, especially the Sphinx.
Shibh Jazeerat al-‘Arab, 4/1188
Then even if we assume that there was a statue that was visible and not hidden, then we still have to prove that the Sahaabah saw it and were able to destroy it.
The fact of the matter is that the Sahaabah (may Allaah be pleased with them) would not have been able to destroy some of these statues. It took twenty days to destroy some of these statues even with tools, equipment, and explosives etc that were not available to the Sahaabah at all.
This is indicated by what Ibn Khuldoon said in al-Muqaddimah (p. 383), that the caliph al-Rasheed was unable to destroy the estrade of Chosroes. He started to do that, and he gathered men and tools, and burned it with fire, and poured vinegar on it, but he was unable to do it. And the caliph al-Ma’moon wanted to destroy the Pyramids in Egypt and he gathered workers but he could not do it.
With regard to the excuse that these statues are part of the legacy of mankind, no attention should be paid to such words. Al-Laat, al-‘Uzaa, Hubal, Manaat and other idols were also a legacy for those who worshipped them among Quraysh and the Arabs.
This is a legacy, but it is a haraam legacy which should be uprooted. When the command comes from Allaah and His Messenger, then the believer must hasten to obey, and the command of Allaah and His Messenger cannot be rejected on the grounds of this flimsy excuse. Allaah says (interpretation of the meaning):
“The only saying of the faithful believers, when they are called to Allaah (His Words, the Qur’aan) and His Messenger, to judge between them, is that they say: “We hear and we obey.” And such are the successful (who will live forever in Paradise)”
(al-Noor 24:51)
We ask Allaah to help the Muslims to do that which He loves and which pleased Him.
And Allaah knows best.

এই ওয়েবসাইটে বাঙলা অনুবাদও দেয়া রয়েছে- [31]

মূর্তি ভাঙ্গার আবশ্যকতা
প্রশ্ন
ইসলামে প্রতিকৃতি ভাঙ্গা কি আবশ্যক; এমনকি সেটা যদি মানব ঐতিহ্য ও সভ্যতার ঐতিহ্য হয় তবুও? সাহাবায়ে কেরাম যখন বিভিন্ন দেশ জয় করলেন তখন তারা বিজিত দেশগুলোতে প্রতিকৃতিগুলো দেখা সত্ত্বেও সেগুলো ভাঙ্গেননি কেন?
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
শরিয়তের দলিলগুলো মূর্তি ভাঙ্গা আবশ্যক হওয়ার সপক্ষে প্রমাণ বহন করে। এমন দলিলগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১। আবুল হাইয়্যাজ আল-আসাদি (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, আলী বিন আবু তালেব (রাঃ) আমাকে বললেন: “আমি কি তোমাকে সে কাজে পাঠাব না; যে কাজে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তুমি যত প্রতিকৃতি পাবে সেগুলোকে নষ্ট করবে এবং যত উঁচু কবর পাবে সেগুলোকে সমান করে দিবে।”(সহিহ মুসলিম (৯৬৯))
২। আমর বিন আবাসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন: “আপনি কী নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন? তিনি বললেন: ‘আমি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, মূতি ভাঙ্গা এবং আল্লাহ্‌র এককত্ব প্রতিষ্ঠা ও তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করা নিয়ে’ প্রেরিত হয়েছি।”(সহিহ মুসলিম (৮৩২))
মূর্তি ভাঙ্গার আবশ্যকতা আরও তাগিদপূর্ণ হয় যখন আল্লাহ্‌র বদলে সে সব মূর্তির পূজা করা হয়।
৩। জারীর বিন আব্দুল্লাহ্‌ আল-বাজালি (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন: হে জারীর! তুমি আমাকে যুল খালাসা (এটি খাছআম গোত্রের একটি ঘর যাকে ইয়ামেনী কাবা ডাকা হত) থেকে প্রশান্তি দিতে পার না? তিনি বলেন: তখন আমি দেড়শ অশ্বারোহী নিয়ে অভিযানের প্রস্তুতি নিলাম। আমি আমার ঘোড়ার উপর স্থির থাকতে পারতাম না। এ বিষয়টি আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উল্লেখ করলাম। তখন তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন এবং বললেন: اللهم ثبته واجعله هاديا مهديا (হে আল্লাহ্! তাকে স্থির রাখুন এবং পথপ্রদর্শক ও সুপথপ্রাপ্ত বানিয়ে দিন।) বর্ণনাকারী বলেন: জারীর (রাঃ) রওয়ানা হয়ে গেলেন এবং গিয়ে সে কাবাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য আমাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে পাঠালেন; যার কুনিয়ত ছিল আবু আরতা। সেই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন: আমরা সেই মন্দিরটিকে এমন অবস্থায় রেখে আপনার কাছে এসেছি যেন সেটি রোগের কারণে আলকাতরা দেয়া (কালো) উট। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহমাস গোত্রের ঘোড়া ও বীরপুরুষদের জন্য পাঁচবার বরকতের দোয়া করলেন।”(সহিহ বুখারী (৩০২০) ও সহিহ মুসলিম (২৪৭৬))
ইবনে হাজার (রহঃ) বলেন:
এ হাদিসে উদ্ধৃত হয়েছে: যে জিনিস দ্বারা মানুষ ফিতনাগ্রস্ত হয় সেটি দূর করা শরয়ি বিধান; হোক সেটি কোন ভবন বা অন্য কিছু; যেমন- মানুষ, প্রাণী বা ঝড় পদার্থ।(সমাপ্ত)
৪। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর নেতৃত্বে উজ্জা নামক মূর্তিকে ধ্বংস করার জন্য অভিযান পাঠিয়েছিলেন।
৫। তিনি সাদ বিন যায়েদ আল-আশহালি (রাঃ) এর নেতৃত্বে মানাত নামক মূর্তিকে ধ্বংস করার জন্য অভিযান পাঠিয়েছেন।
৬। তিনি আমর বিন আ’স (রাঃ) এর নেতৃত্বে সুআ’ নামক মূর্তিটি ধ্বংসের জন্য অভিযান পাঠিয়েছেন। এ সবগুলো অভিযান হয়েছে মক্কা বিজয়ের পর।
(‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ (৪/৭১২, ৭৭৬, ৫/৮৩) এবং ড. আলী সাল্লাবীর রচিত ‘আস-সিরাতুন নাবাওয়িয়্যাহ’ (২/১১৮৬))
ইমাম নববী ‘শারহে মুসলিম’ এ تصوير (প্রতিকৃতি তৈরী, ছবি অংকন/নির্মাণ) সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন: “আলেমগণ ইজমা করেছেন যে, যেটার ছায়া আছে এমন ছবি তৈরী করা নিষিদ্ধ এবং এটি বিকৃত করা আবশ্যক।”(সমাপ্ত)
যে ছবিগুলোর ছায়া হয় সেগুলো তো এই মূর্তিগুলোর মত দেহের অবকাঠামোবিশিষ্ট ছবিগুলো।
আর সাহাবায়ে কেরাম বিজিত দেশসমূহে প্রতিমাগুলো না ভাঙ্গার যে কথা বলা হয় সেটি নিছক ভিত্তিহীন ধারণা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীবর্গ মূর্তি ও প্রতিমা রেখে দেয়ার কথা নয়। বিশেষতঃ যেহেতু ঐ যামানায় এগুলোর পূজা করা হত।
যদি বলা হয়: তাহলে এই ফেরাউনদের প্রতিকৃতি, ফিনিকীনদের প্রতিকৃতি কিংবা অন্যান্য প্রতিকৃতিগুলো বিজয়ী সাহাবীগণ কিভাবে রেখে দিলেন?
জবাব হল: এই মূর্তিগুলোর ব্যাপারে তিনটি সম্ভাবনা রয়েছে:
এক. এ মূর্তিগুলো এত দূরবর্তী স্থানে ছিল যে, সাহাবায়ে কেরাম সে সব স্থানে পৌঁছেননি। উদাহরণস্বরূপ সাহাবীদের মিশর জয় করার মানে এটা নয় যে, তারা মিশরের সকল স্থানে পৌঁছেছেন।
দুই. কিংবা সেই মূর্তিগুলো দৃশ্যমান ছিল না। বরং সেগুলো ফেরাউনদের ও অন্যদের বাসাবাড়ীর অভ্যন্তরে ছিল। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল জালিম ও শাস্তিপ্রাপ্তদের বাসস্থান অতিক্রমকালে দ্রুত গমন করা। বরং ঐ সমস্ত স্থানে প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে এসেছে যে, “তোমরা শাস্তিপ্রাপ্তদের এলাকায় প্রবেশ করলে কেবল ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ করবে। যেন তাদেরকে যা পাকড়াও করেছে তোমাদেরকে সেটা পাকড়াও না করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরবাসীদের এলাকা অতিক্রম করাকালে এ কথা বলেছেন। যেটা ছিল হুদ আলাইহিস সালামের কওম ছামুদ সম্প্রদায়ের বাসস্থান।
সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমের অপর এক রেওয়ায়েতে আছে: “যদি তোমাদের কান্না না আসে তাহলে এদের গৃহে প্রবেশ করো না; যেন তাদেরকে যা পাকড়াও করেছে তোমাদেরকে সেটা পাকড়াও না করে।”
সাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে যে ধারণা রাখা যায় সেটা হল তাঁরা যদি এদের মন্দির বা বাড়ীঘর দেখেও থাকেন তারা সেগুলোতে প্রবেশ করেননি এবং এগুলোর অভ্যন্তরে যা রয়েছে সেসব তারা দেখেননি।
এর মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক পিরামিড এবং এর মধ্যে যা কিছু ছিল সেগুলো ধ্বংস না করার যে আপত্তি আসতে পারে সেটার জবাব হয়ে যায়। তবে এর সাথে এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, সে যামানায় পিরামিডের প্রবেশপথগুলো বালির স্তুপ দিয়ে ঢাকা ছিল।
তিন. বর্তমানে দৃশ্যমান মূর্তিগুলো তখন বালিতে ঢাকা ছিল, অদৃশ্য ছিল কিংবা এগুলো নব আবিষ্কৃত কিংবা এগুলোকে অনেক দূরবর্তী স্থান থেকে নিয়ে আসা হয়েছে; যে স্থানগুলোতে সাহাবায়ে কেরাম পৌঁছেননি।
ইতিহাসবিদ যিরিকলিকে পিরামিড ও আবুল হুল (একটি মূর্তির নাম) ইত্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, যে সকল সাহাবী মিশর প্রবেশ করেছেন তারা কি এগুলোকে দেখেছেন? জবাবে তিনি বলেন: এ মূর্তিগুলোর অধিকাংশই ছিল বালিতে ঢাকা। বিশেষতঃ আবুল হুল।(শিবহু জাযিরাতিল আরব (৪/১১৮৮))
যদি ধরে নেয়া হয় যে, কোন একটি মূর্তি দৃশ্যমান ছিল; বালিতে ঢাকা ছিল না; সেক্ষেত্রেও সাহাবীরা ঐ মূর্তিটিকে দেখেছেন এবং তারা ঐ মূর্তিটি ভাঙ্গতে সক্ষম ছিলেন এটা সাব্যস্ত হওয়া আবশ্যক।
বাস্তবতা হচ্ছে কোন কোন মূর্তি ধ্বংস করতে সাহাবায়ে কেরাম অক্ষম ছিলেন। কেননা এ ধরণের কোন কোন মূর্তি ভাঙ্গতে মেশিনারি, যন্ত্রপাতি, বিস্ফোরক ও লোকবল থাকা সত্ত্বেও বিশদিন সময় লেগেছে; যেগুলো সাহাবীদের যামানায় ছিল না।
সাহাবীরা যে এগুলো ভাঙ্গতে অক্ষম ছিলেন এর প্রমাণ হল যা ইবনে খালদুন তাঁর ‘মুকাদ্দিমা’-তে (পৃষ্ঠা-৩৮৩) উল্লেখ করেছেন যে, একবার খলিফা আর-রশিদ পারস্যের বাদশার প্রাসাদ ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি সেটি ভাঙ্গার কাজ শুরু করে দেন এবং এর লক্ষ্যে লোকবল জমায়েত করেন, কুঠার সংগ্রহ করেন, প্রাসাদটিকে আগুনে উত্তপ্ত করেন, এর উপরে শির্কা ঢালেন। কিন্তু অবশেষে তিনি ব্যর্থ হন। এবং খলিফা মামুন মিশরের পিরামিডগুলো ভাঙ্গার লক্ষ্যে হাতি জড়ো করেন। কিন্তু তিনিও সক্ষম হননি।
আর মূর্তিগুলো না ভাঙ্গার পক্ষে এ কথা বলে কারণ দর্শানো যে, এ মূর্তিগুলো মানব ঐতিহ্য- এমন কথার প্রতি দৃষ্টিপাতের সুযোগ নাই। কেননা লাত, উজ্জা, হুবাল, মানাত ও অন্যান্য মূর্তিগুলোর যারা পূজা করত কুরাইশরা কিংবা আরব উপদ্বীপের অন্যান্য লোকেরা তাদের নিকট এগুলো তো মানব ঐতিহ্যই ছিল।
এগুলো ঐতিহ্য ঠিকই; কিন্তু হারাম ঐতিহ্য যা ধ্বংস করা ওয়াজিব। যখন আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ এসে যায় তখন একজন মুমিন দেরী না করে সে নির্দেশ পালন করে। এ সমস্ত দুর্বল যুক্তি দিয়ে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আদেশকে প্রত্যাখ্যান করে না। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “রাসূল তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবেন, এই উদ্দেশ্য যখন তাদেরকে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয় তখন মুমিনদের কথা হয় এটাই: তারা বলে আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। আর তারাই সফলকাম।”(সূরা নূর, আয়াত: ৫১)
আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন সকল মুসলিমকে তিনি যা পছন্দ করেন ও যেটার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট তা পালন করার তাওফিক দেন।
আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

এই প্রসঙ্গে ইসলামকিউএ ডট ইনফো নামক প্রখ্যাত সালাফি স্কলারদের দ্বারা পরিচালিত একটি উত্তর প্রাসঙ্গিক পড়ে নেয়া প্রয়োজন [32]

বিধর্মীদের উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান
প্রশ্ন
প্রশ্ন: বিধর্মীদের উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান কি?
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
খ্রিস্টমাস (বড়দিন) কিংবা অন্য কোন বিধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে কাফেরদের শুভেচ্ছা জানানো আলেমদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী হারাম। ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) তাঁর লিখিত “আহকামু আহলিয যিম্মাহ” গ্রন্থে এ বিধানটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: “কোন কুফরী আচারানুষ্ঠান উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন- তাদের উৎসব ও উপবাস পালন উপলক্ষে বলা যে, ‘তোমাদের উৎসব শুভ হোক’ কিংবা ‘তোমার উৎসব উপভোগ্য হোক’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কথা। যদি এ শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করা কুফরীর পর্যায়ে নাও পৌঁছে; তবে এটি হারামের অন্তর্ভুক্ত। এ শুভেচ্ছা ক্রুশকে সেজদা দেয়ার কারণে কাউকে অভিনন্দন জানানোর পর্যায়ভুক্ত। বরং আল্লাহর কাছে এটি আরও বেশি জঘন্য গুনাহ। এটি মদ্যপান, হত্যা ও যিনা ইত্যাদির মত অপরাধের জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে মারাত্মক। যাদের কাছে ইসলামের যথাযথ মর্যাদা নেই তাদের অনেকে এ গুনাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে; অথচ তারা এ গুনাহের কদর্যতা উপলব্ধি করে না। যে ব্যক্তি কোন গুনার কাজ কিংবা বিদআত কিংবা কুফরী কর্মের প্রেক্ষিতে কাউকে অভিনন্দন জানায় সে নিজেকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির সম্মুখীন করে।”(উদ্ধৃতি সমাপ্ত)
কাফেরদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হারাম ও এত জঘন্য গুনাহ (যেমনটি ইবনুল কাইয়্যেম এর ভাষ্যে এসেছে) হওয়ার কারণ হলো- এ শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি স্বীকৃতি ও অন্য ব্যক্তির পালনকৃত কুফরীর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ পায়। যদিও ব্যক্তি নিজে এ কুফরী করতে রাজী না হয়। কিন্তু, কোন মুসলিমের জন্য কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা কিংবা এ উপলক্ষে অন্যকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও; তবে (জেনে রাখ) তিনি তোমাদের জন্য সেটাই পছন্দ করেন।”(সূরা যুমার, আয়াত: ৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”(সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩) অতএব, কুফরী উৎসব উপলক্ষে বিধর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হারাম; তারা সহকর্মী হোক কিংবা অন্য কিছু হোক।
আর বিধর্মীরা যদি আমাদেরকে তাদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানায় আমরা এর উত্তর দিব না। কারণ সেটা আমাদের ঈদ-উৎসব নয়। আর যেহেতু এসব উৎসবের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট নন। আর যেহেতু আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমস্ত মানবজাতির কাছে ইসলাম ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছেন, যে ধর্মের মাধ্যমে পূর্বের সকল ধর্মকে রহিত করে দেয়া হয়েছে; হোক এসব উৎসব সংশ্লিষ্ট ধর্মে অনুমোদনহীন নব-সংযোজন কিংবা অনুমোদিত (সবই রহিত)। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।”(সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮৫)
কোন মুসলমানের এমন উৎসবের দাওয়াত কবুল করা হারাম। কেননা এটি তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে জঘন্য। কারণ এতে করে দাওয়াতকৃত কুফরী অনুষ্ঠানে তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করা হয়।
অনুরূপভাবে এ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে কাফেরদের মত অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টান্ন বিতরণ করা, খাবার-দাবার আদান-প্রদান করা, ছুটি ভোগ করা ইত্যাদি মুসলমানদের জন্য হারাম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদের-ই দলভুক্ত”। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর লিখিত ‘ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম’ গ্রন্থে বলেন: “তাদের কোন উৎসব উপলক্ষে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করলে এ বাতিল কর্মের পক্ষে তারা মানসিক প্রশান্তি পায়। এর মাধ্যমে তারা নানাবিধ সুযোগ গ্রহণ করা ও দুর্বলদেরকে বেইজ্জত করার সম্ভাবনা তৈরী হয়।”(উদ্ধৃতি সমাপ্ত)
যে ব্যক্তি বিধর্মীদের এমন কোন কিছুতে অংশগ্রহণ করবে সে গুনাহগার হবে। এ অংশগ্রহণের কারণ সৌজন্য, হৃদ্যতা বা লজ্জাবোধ ইত্যাদি যেটাই হোক না কেন। কেননা এটি আল্লাহর ধর্মের ক্ষেত্রে আপোষকামিতার শামিল। এবং এটি বিধর্মীদের মনোবল শক্ত করা ও স্ব-ধর্ম নিয়ে তাদের গর্ববোধ তৈরী করার কারণের অন্তর্ভুক্ত।
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন মুসলমানদেরকে ধর্মীয়ভাবে শক্তিশালী করেন, ধর্মের ওপর অবিচল রাখেন এবং শত্রুর বিরুদ্ধে তাদেরকে বিজয়ী করেন। নিশ্চয় তিনি শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী।(মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিস শাইখ ইবনে উছাইমীন ৩/৩৬৯)
সূত্র: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ

প্রখ্যাত বাংলাদেশের আলেম এবং ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রের অন্যতম পণ্ডিত ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়ার সম্পাদনায় প্রকাশিত মো আব্দুল কাদেরের বই বাংলাদেশে প্রচলিত শির্ক বিদ‘আত ও কুসংস্কার পর্যালোচনা গ্রন্থে পরিষ্কারভাবেই বলা আছে যে, শিকর হচ্ছে হত্যাযোগ্য অপরাধ। যারা শিরক করে, তাদের রক্ত মুসলিমদের জন্য হালাল [33]

মূর্তি 57

শরীয়ত কী বলে?

ইসলামী শরীয়ত অনুসারে, একটি ইসলামিক রাষ্ট্রে অন্য কোন ধর্মের মানুষের প্রকাশ্যে অন্য ধর্ম পালন, প্রচার, মন্দির বা চার্চ তৈরি, ধর্মীয় সিম্বল যেমন ক্রুশের লকেট পড়া, গাড়িতে গনেশ বা কৃষ্ণের মূর্তি রাখা, মুসলিমদের নিজ ধর্মে দাওয়াত দেয়া, এগুলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অর্থাৎ, মুসলিমরা যখন অমুসলিমদের দেশে বসবাস করবে, তারা তাদের ধর্ম পালন, ধর্মের দাওয়াত দেয়া, মসজিদ বানানো, আজান দেয়া, ওয়াজ করা, প্রকাশ্যে নামাজ আদায় করার অধিকার দাবী করলেও, ইসলামিক দেশে কোন বিধর্মী এই সুবিধাগুলোর কোনোটাই পাবে না। এটাই ইসলামী শরিয়তের বিধান।

ইসলামী শরীয়ত এই বিষয়ে স্পষ্টভাবেই ঘোষণা দেয়, অমুসলিমদের যদি ইসলামিক শাসনে থাকতে হয়, তাহলে তাদের অপদস্থতার নিদর্শন স্বরূপ জিজিয়া কর দিতে হবে। এই বিষয়ে তাফসীরে জালালাইনে বলা রয়েছে, জিজিয়া হচ্ছে সেই কর, যা কাফেরদের জীবনের বদলে আদায় করা হয়। তাফসীরে এটিও বলা আছে, কাফেররা আসলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার মতই অপরাধী, কিন্তু জিজিয়া কর নিয়ে তাদের আসলে হত্যা করা হচ্ছে না! বেঁচে থাকার সুযোগ দেয়া হচ্ছে! [34]

মূর্তি 59

এই বিষয়ে তাফসীরে মাযহারীতে বলা হয়েছে, [35]

মূর্তি 61
মূর্তি 63
মূর্তি 65

এই বিষয়ে প্রখ্যাত ইসলামিক দাইয়ী জাকির নায়েক কী ব্যাখ্যা দিয়েছে, সেটিও জেনে নিন-

কোরআনে আরো সাম্প্রদায়িকতা 

ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে অসংখ্যবার অমুসলিমদের সমালোচনা, কটাক্ষ, গালাগালি এবং কটূক্তি করা হয়েছে। আসুন কোরআন থেকে কয়েকটি আয়াত দেখে নেয়া যাকঃ

আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। 
কুরআন ৯৮ঃ৬

সমস্ত জীবের মাঝে আল্লাহর নিকট তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা অস্বীকারকারী হয়েছে অতঃপর আর ঈমান আনেনি।
কোরআন ৮:৫৫

নিশ্চয় যারা কুফরী করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সমস্ত লোকের প্রতি আল্লাহর ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের লা’নত।
কোরআন ২-১৬১

বস্তুতঃ এহেন কাফেরদের উদাহরণ এমন, যেন কেউ এমন কোন জীবকে আহবান করছে যা কোন কিছুই শোনে না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কিছুই বোঝে না।
কোরআন ২-২৫৭

কাফেরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হয়ে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নীত হবে-সেটা কতই না নিকৃষ্টতম অবস্থান।
কোরআন ৩-১২

বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।
কোরআন ৩-৩২

আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।
কোরআন ৭:১৭৯

অতএব যারা কাফের হয়েছে, তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো দুনিয়াতে এবং আখেরাতে-তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
কোরআন ৩-৫৬

যাতে ধবংস করে দেন কোন কোন কাফেরকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন-যেন ওরা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়।
কোরআন ৩-১২৭

খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহ্র সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুত: জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।
কোরআন ৩-১৫১

আসুন দুইটি আয়াতের তাফসীর পড়ে দেখি, এইসব সাম্প্রদায়িক আয়াতগুলো আসলেই সাম্প্রদায়িক, নাকি আমাদেরই বোঝার ভুল! দেখে নিই, সর্বাপেক্ষ গ্রহণযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে এই আয়াতগুলোর ব্যাখ্যাতে কী বলা রয়েছে। এখানে ইবনে কাসীর [36] ও জালালাইনের [37] তাফসীর গ্রন্থ থেকে দুইটি আয়াতের তাফসীর দেয়া হলো, যথাক্রমে সূরা আনফালের ৫৫ নম্বর, এবং সূরা আল বাইয়িনার ৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর-

অমুসলিমরা নিকৃষ্ট জীব তাফসীরে ইবনে কাসীর
অমুসলিমরা নিকৃষ্ট জীব তাফসীরে জালালাইন

উপসংহার

উপরের আলোচনা থেকে এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, মুসলিমগণ যখনই ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে, তখনই অমুসলিমদের পুজনীয় মূর্তি ধ্বংস করে ফেলা তাদের সকল নবী ও রাসুলের সুন্নাহ। একে অনুসরণ অনুকরণ এবং পালন করাই প্রতিটি মুসলিমের পবিত্র ধর্মীয় কর্তব্য। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নবী রাসুলদের এই সুন্নাহ বর্তমান সময়ে পালন করতে গেলে পুরো পৃথিবী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পরিপুর্ণ হয়ে উঠবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ এবং যুদ্ধ বিগ্রহের উদ্ভব ঘটবে। অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে, যার ফলশ্রুতিতে আমাদের পৃথিবী হয়ে উঠবে অশান্ত। প্রত্যেকেরই অধিকার রয়েছে, যেকোন ধর্মের সমর্থন বা বিরুদ্ধতা করা। প্রতিটি মানুষেরই অধিকার রয়েছে কোন ধর্মের প্রশংসা বা সমালোচনা করা। প্রতিটি মানুষেরই অধিকার রয়েছে কোন ধর্মকে বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস করা। কিন্তু এই অধিকারটি সকলের জন্য প্রযোজ্য। কোন বিশেষ ধর্ম বা নবীর জন্য বাড়তি কোন খাতির এই আইনে থাকতে পারে না। অধিকার থাকলে সকলের থাকবে, নইলে কারোই থাকবে না। মুসলিমরা যদি তাদের নবীর সমালোচনা বন্ধ করতে চায়, তাহলে সর্বপ্রথম তাদের উচিৎ হবে, কোরআন হাদিস থেকে অমুসলিমদের সম্পর্কে যত বাজে কথা বলা আছে সেগুলো মুছে ফেলা। ইসলাম ধর্ম তো মৌলিকভাবেই অন্য ধর্মের সাথে মিলেমিশে সহাবস্থানকে হারাম মনে করে।

অমুসলিমদের দেশে আল্লাহর উপাসনা যদি অধিকার হয়, মসজিদ বানানো, আজান দেয়া, বোরখা পড়া যদি তাদের অধিকার হয়, মুসলিমদের দেশে অমুসলিমদের মূর্তি পুজার অধিকারও থাকতে হবে। তাদেরও প্রকাশ্যে ধর্ম পালন, নিজ নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রকাশ্যে উদযাপন করার অধিকারও থাকতে হবে। কিন্তু মুসলিমরা কখনোই সৌদি আরব বা অন্যান্য ইসলামিক শরীয়ার দেশে অমুসলিমদের ধর্ম পালনের সমান অধিকারটি দিতে ইচ্ছুক নন, কিন্তু তারা অমুসলিমদের দেশে নিজেদের ধর্ম পালনের অধিকার ষোল আনা উশুল করতে উৎসুক। তারা অন্য ধর্মের সমালোচনা, কটাক্ষ, কটূক্তি করার অধিকার চায়- কিন্তু তাদের ধর্ম নিয়ে কেউ কিছু বলতে পারবে না! এই দ্বিচারিতার মধ্যেই তাদের বসবাস। আসলে, ইসলাম ধর্মটি সেই গোড়া থেকেই এরকম। আর জেনে হোক না জেনে হোক, অসংখ্য মুসলিম এগুলোই সমর্থন করে। কারণ, এটি তাদের বাপদাদার ধর্ম!

এ কারণেই সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, মুমিন হচ্ছে নাকে দড়ি বাঁধা উঠের মত [38]

সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ভূমিকা পর্ব
পরিচ্ছেদঃ ৬. হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ি রাশিদীনের সুন্নাতের অনুসরণ।
২/৪৩। ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন হৃদয়গ্রাহী নাসীহাত করেন যে, তাতে (আমাদের) চোখগুলো অশ্রু ঝরালো এবং অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হল। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এতো যেন নিশ্চয়ই বিদায়ী ভাষণ। অতএব আপনি আমাদের থেকে কি প্রতিশ্রুতি নিবেন (আদেশ দিবেন)? তিনি বলেনঃ আমি তোমাদের আলোকিত দ্বীনের উপর রেখে যাচ্ছি, তার রাত তার দিনের মতই (উজ্জ্বল)। আমার পরে নিজেকে ধ্বংসকারীই কেবল এ দ্বীন ছেড়ে বিপথগামী হবে।
তোমাদের মধ্যে যে বেঁচে থাকবে সে অচিরেই অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। অতএব তোমাদের উপর তোমাদের নিকট পরিচিত আমার আদর্শ এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের আদর্শ অনুসরণ করা অবশ্য কর্তব্য। তোমরা তা শক্তভাবে দাঁত দিয়ে আকড়ে ধরে থাকবে। তোমরা অবশ্যই আনুগত্য করবে, যদি হাবশী গোলামও (তোমাদের নেতা নিযুক্ত) হয়। কেননা মুমিন ব্যাক্তি হচ্ছে নাসারন্ধ্রে লাগাম পরানো উটতুল্য। লাগাম ধরে যে দিকেই তাকে টানা হয়, সে দিকেই যেতে বাধ্য হয়।
তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। 
তাখরীজ আলবানী: সহীহাহ ৯৩৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইরবায ইবনু সারিয়াহ্ (রাঃ)

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ

  • কভারের মূল ছবিটি নেয়া হয়েছে আল বিরুনীর Chronology of the Ancient Nations থেকে, যেখানে বনী ইব্রাহিম মূর্তি ভেঙ্গে ফেলছেন।

তথ্যসূত্র

  1. Taliban blow apart 2,000 years of Buddhist history []
  2. Here Are the Ancient Sites ISIS Has Damaged and Destroyed []
  3. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২৮, ৩৩০, ৩৩১, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৩৪, ৩৩৫ []
  4. সীরাতে ইবনে হিশাম : হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনীগ্রন্থঃ আকরাম ফারুক পৃষ্ঠা ৬১, ৬২ []
  5. সীরাতুল মুস্তফা সা. লেখকঃ আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (রহ.) প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১১৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৫৪, ১৫৫ []
  6. আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০ []
  7. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৮০৩ []
  8. রিয়াযুস স্বা-লিহীন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪৩ []
  9. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ২৪৭৮ []
  10. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ১৫০৬ []
  11. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৫৭ []
  12. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর- ২৮১১ []
  13. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর- ৩৫৪৯ []
  14. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর- ৪০১৮ []
  15. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বর- ৪০১৭ []
  16. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বর- ৪৩৫৬[]
  17. Fath Al Bari 5/340 []
  18. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৫৪৭ []
  19. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৪, হাদিস নম্বরঃ ২৫৪৭ []
  20. সূরা আনআ’ম, আয়াত ১০৮ []
  21. তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৮, ২৭৯, ২৮০ []
  22. তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৬৬, ৮৬৭[]
  23. সূরা কাফিরুন, আয়াত ৬ []
  24. আহকামুল কুরআন, খায়রুন প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৫ – ৩৫৮ []
  25. তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৯৪, ৫৯৫, ৫৯৬, ৫৯৮ []
  26. আর-রাহীকুল মাখতূম, আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ), তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ৪৬৬, ৪৬৭ []
  27. সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ১০৪৯ []
  28. সিরাত ইবন হিশামে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৬-৬৭ []
  29. Demolishing idols in a non-Muslim country []
  30. Obligation to destroy idols []
  31. মূর্তি ভাঙ্গার আবশ্যকতা []
  32. বিধর্মীদের উৎসব উপলক্ষে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান []
  33.  বাংলাদেশে প্রচলিত শির্ক বিদ‘আত ও কুসংস্কার পর্যালোচনা ২. শির্কের পরিণতি []
  34. তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৫৩ []
  35. তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৮, ৩০০, ৩০১ []
  36. তাফসীরে ইবনে কাসীর (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৪৮১ []
  37. তাফসীরে জালালাইন, ইসলামিয়া কুতুবখানা প্রকাশনী, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৮ []
  38. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ৪৩ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

8 thoughts on “ধর্ম অবমাননা, সাম্প্রদায়িকতা এবং মূর্তি ভাঙ্গার সুন্নত

  • S.M. Shihabur Rahman

    অনেক সুন্দর এবং তথ্যবহুল উপস্থাপন। অসংখ্য ধন্যবাদ।

    Reply
  • Akash5271

    Another excellent writing!

    Reply
  • khalilsmr

    এই লেখাটি পড়ে অনৈসলামিকদের বিরুদ্ধে ইসলামের গোপণ ষড়যন্ত্রগুলো জানা হলো। বর্বরতার চরম হায়েনার হিংস্রতা আর অমানবিক অবস্থা ফুটে উঠেছে এই লেখাটিতে যা ইসলামের অন্তঃসারশূণ্য অবস্থা পরিস্কার ফুটেে উঠেছে। কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

    Reply
  • Lahim Ahmed

    ‘হে ঈমানদারগণ! তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব দেবদেবীর পূজা-উপাসনা করে, তোমরা তাদের গালি দিও না। যাতে করে তারা শিরক থেকে আরো অগ্রসর হয়ে অজ্ঞতাবশত আল্লাহকে গালি দিয়ে না বসে। ’ -সূরা আনআম: ১০৮
    যেখানে অন্য ধর্মের দেবতাকে গালি দেওয়া নিষিদ্ধ সেখানে মন্দির ভাঙচুর ও মানুষ হত্যা কীভাবে বৈধ হতে পারে? একজন প্রকৃত মুসলমান কখনোই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত আসে এমন কোনো কাজ করতে পারে না।  

    ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে এবং জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়। ’ -সুনানে আবু দাউদ : ৫১২৩

    সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পবিত্র কোরআন।
    আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে জোরজবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথকে সঠিক মত ও পথ থেকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। ’ -সূরা বাকারা :২৫৬
    সুতরাং ‘তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আমাদের ধর্ম আমাদের জন্য। ’ -সূরা কাফিরুন : ৫

    হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুন্ন করে কিংবা তাদের ওপর জুলুম করে, তবে কেয়ামতের দিন আমি মুহাম্মদ ওই মুসলমানের বিরুদ্ধে আল্লাহর আদালতে লড়াই করব। ’ –সুনানে আবু দাউদ : ৩০৫২

    তিনি (সা.) আরও বলেছেন, ‘অন্যায়ভাবে কোনো অমুসলিমকে হত্যাকারী জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেই ওই ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। ’ –সহিহ বোখারি : ৩১৬৬

    ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন। ’ -সুনানে নাসাঈ : ৪৭৪৭

    রাসূলুল্লাহ (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের চিরাচরিত নিয়ম ছিল, যখন কোনো সেনাবাহিনী প্রেরণ করার প্রয়োজন হতো, তখন যুদ্ধ সম্পর্কিত বিভিন্ন নসিহত, দিকনির্দেশনার পাশাপাশি একথা অবশ্যই বলে দিতেন যে, ‘যুদ্ধকালীন সময়ে বা যুদ্ধের পর কোনো মন্দির-গীর্জা-উপাসনালয় ভেঙে ফেলবে না। ’ -মুসান্নাফ আবি শায়বা : ৩৩৮০৪
    তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না; আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না।’ [মুসলিম : ১৭৩১]
    হে লোক সকল, দাঁড়াও আমি তোমাদের দশটি বিষয়ে উপদেশ দেব। আমার পক্ষ হিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে। কোনো খেয়ানত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না, বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের) অনুরূপ করবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না, বয়োবৃদ্ধকেও না আর নারীকেও না। খেজুর গাছ কাটবে না কিংবা তা জ্বালিয়েও দেবে না। কোনো ফলবতী গাছ কাটবে না। আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছাগল, গরু বা উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের এবং তারা যা ছেড়ে নিজেদের জন্য তাতে ছেড়ে দেবে। [মুখতাসারু তারীখি দিমাশক : ১/৫২; তারীখুত তাবারী]

    মূর্তি পূজা কোন ধর্মই সাপোর্ট করেনা ধর্ম গ্রন্থ অনুযায়ী। তারপরও ভাই শতশত বছর মুসলমানগণ ভারত শাসন করেছেন। কত শত মূর্তি ভেঙেছেন একটু জানতে চাই???

    হিন্দুদের পূজনীয় ব্যক্তি বিবেকানন্দ তার স্বরচিত বইতে লিখেছে, “দেখা যাবে ইসলাম যেথায় গিয়েছে, সেথায়ই আদিম নিবাসীদের রক্ষা করেছে। সেসব জাত সেথায় বর্তমান। তাদের ভাষা, জাতীয়ত্ব আজও বর্তমান।” (প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, পৃষ্ঠা ১১৫)
    ডক্টর তেজ বাহাদুর সাপ্রু বলেছে- “হিন্দুদিগকে রক্ষা করিবার একমাত্র উপায় ইসলাম ধর্মের কতিপয় মূলনীতি- আল্লাহর একত্ববাদ ও মানবের বিশ্বজনীননত্ব।”

    যদি মূর্তি ভাঙা ইসলামের সংস্কৃতি হত তাহলে ইসলামের ইতিহাসের স্বর্ণালি সময়ে কেন আফগানিস্তানের বুদ্ধমূর্তি ভাঙা হল না? কেন ৯৬ এ ভাঙল তালেবান এর আগে কি তারা মুসলমান ছিল না???

    Reply
  • Mithu

    খুব সুন্দর লিখলেন। আমি একজন আলেম। আপনি যা বলেছেন সঠিক বলেছেন।

    Reply
    • Dr. Nokib Uddin

      আপনি যেমন আলেম আমিও তেমন সাইক্রিয়াট্রিস্ট। আপনার মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন।

      Reply
  • Dr. Nokib Uddin

    আমি একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট। আপনার যেগুলো লিখলেন এবং রেফারেন্স দিলেন সেগুলো ত্রুটিপূর্ণ। আপনার উচিত একজন মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।

    Reply
  • Farhan

    Apnar source khubi bhalo abong shotto kintu apni onnobhabe interpret korchen. Apni ki shotti Abu lahab Jahel ar mokkar kafirder shomporke janten ja tara ashole kamon chilo tader choritro kamon. Dhormer pichone tader uddesho ki?Kano shei shomoy Muhammad S eschilen.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *