মৃত্যুই শেষ কথা নয়

Print Friendly, PDF & Email

‘ মরণোত্তর দেহদান ’ ব্যাপারটি সচেতন মানুষের কাছে এখন পরিচিত হলেও অনেকের কাছে সামগ্রিক ধারণাটি তেমনভাবে স্পষ্ট নয়। মরণোত্তর দেহদান হল মৃত্যুর পর শবদেহ ধর্মীয় প্রথাসিদ্ধ মতে সৎকার না করে চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থে দান করা। কিন্তু এই দান ভারী অদ্ভুত। যাঁর মৃতদেহ তিনি কিন্তু নিজে এই দান করতে পারে না, সেটাই স্বাভাবিক। কারন মৃত্যুর পর তিনি দান করবেন কি করে? কোন ব্যক্তি জীবিতকালে শুধুমাত্র তাঁর এই ইচ্ছার কথা অঙ্গীকার মাধ্যমে জানিয়ে রাখতে পারেন শুধু। তাঁর ইচ্ছাপূরণের দায়টা কিন্তু নিকটজনের। আর এই ইচ্ছাপুরণটা যাতে হয় সেক্ষত্রে অঙ্গীকারকের একটা ভূমিকা আছে। তা হল এই অঙ্গীকারকের বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। যা দিয়ে সে নিকটজনকে মোটিভেটেড করতে পারবে। কিন্তু প্রশ্ন কেন করা হবে এই দান? তাহলে আমাদের জানতে হবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে মৃতদেহের প্রয়োজনীয়তা কোথায়?

আমাদের কোন জ্ঞানই সম্পূর্ণ হয় না প্রত্যক্ষ জ্ঞানলাভ ছাড়া। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাই শবদেহের প্রয়োজন অপরিসীম। মানদেহের ভিতরে নানা কলকব্জা আছে। সেই কলকব্জার সুশৃঙ্খল কাজের মাধ্যমেই আমাদের দেহের সমস্ত কাজ হয়ে থাকে। তার একটিতেই যদি কোন গন্ডগোল হয় আমরা অসুস্থ হই। হ্যাঁ, একথা ঠিক সমস্ত প্রানী ও উদ্ভিদের মধ্যেও একই রকম না হলেও এইধরণের কলকব্জা আছে। যা দিয়ে তাদের বেঁচে থাকার কাজ হয়।

তাই, আসুন আগে একটু জেনে নেওয়া যাক অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি। অ্যানাটমি কথাটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দ অ্যানাটোম থেকে। যার অর্থ ব্যবচ্ছেদ। যা করে প্রাণীদেহের গঠন অধ্যয়ন করা হয়। মানুষের অ্যানাটমি মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশ যেমন হাড়, মাংসপেশী, হৃৎপিন্ড, মস্তিষ্ক ইত্যাদির আকার গঠন সম্পর্কে অধ্যয়ন। আর ফিজিওলজি শব্দটি এসেছে দুটি গ্রীক শব্দ থেকে, ফিজিস ও লগস। ফিজিস মানে প্রকৃতি আর লগস-এর মানে শিক্ষা। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি প্রানীদেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজের অধ্যয়ন।

প্রাণীদেহের বিশেষত প্রথমে মানবদেহের অভ্যন্তরীন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন ও কার্যকলাপ সম্পর্কে জ্ঞানের জন্য শবদেহের প্রয়োজন জরুরী। চিকিৎসকদের নিজ হাতে শব-ব্যবচ্ছেদ না করলে তাদের মানবদেহের অভ্যন্তরীন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন সুনিশ্চিত জ্ঞান অসম্ভব। আর অসম্পূর্ণ জ্ঞান দিয়ে চিকিৎসায় ভ্রান্তি ঘটা স্বাভাবিক। তাতে রোগীর সমূহ বিপদ ঘটতে পারে এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে জানাই আমাদের দেশে স্নাতকত্তোর চিকিৎসাবিজ্ঞানের পড়ুয়াদের নিজ হাতে ১০টি রোগ নির্ণায়ক ময়নাতদন্ত করতে হবে তা তাদের সিলেবাসেই আছে। তা হয় না, শুধুমাত্র মৃতদেহের অভাবে।

শবদেহের ব্যবচ্ছেদ কিন্তু খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকেই শুরু হয়। হেরোফিলাস (Herophilus) ও এরাসিট্রেটাস (Erasistratus) সেইসময় নরদেহ ব্যবচ্ছেদ করতেন। হিপোক্রেটেটিসের গ্রন্থে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। হেরোফিলাস নাকি প্রায় ৬০০ শবদেহের ব্যবচ্ছেদ করেন। প্রায় সমসময়ে প্রাচীন ভারতেও শবদেহের ব্যবচ্ছেদ হত। সেই সময় সুশ্রুত শবদেহ নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষা করতেন। একথাও জানা যায় সেই সময় ভারতে শল্যচিকিৎসা খুবই উন্নত ছিল। সুশ্রুত-সংহিতায় প্রায় ১২১ টি যন্ত্রের উল্লেখ পাই। এর পরবর্তীকালে ব্রাহ্মণতন্ত্রের হাত ধরে শল্যচিকিৎসা বাধাপ্রাপ্ত হয়। মনুর নিধান দেন শবদেহ নিয়ে পরীক্ষানিরিক্ষা অশুচি। শল্যবিদ্যাকে ‘আসুরিবিদ্যা’ বলে অবজ্ঞা করেন। শুধু ভারতে নয় সারা পৃথিবী জুড়েই ধর্মীয় কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।

এইখানে একটা প্রশ্ন আসে তাহলে আমাদের মৃতদেহের সদগতি হবে কি করে? প্রথমত জানাই, আধাত্মিক, আত্মা, পরলোক ইত্যাদি ধারণা থেকে আমরা যে ধর্মীয় মতে বিশ্বাসী, সেই ধর্মের বিধান অনুসারে আমাদের মৃতদেহের অন্তিম কাজ করা হয়। যা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও অবৈজ্ঞানিক। যে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিধান অনুযায়ী আমরা চলি তার বয়স খুব বেশি তিন হাজার বছর। কিন্তু বিবর্তনের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি আধুনিক মানুষ, বিজ্ঞানীরা যাকে হোমো-স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স বলে অভিহিত করেছেন সেই সময়ের একটা পর্যায়ের পর মানুষ মারা গেলে সেই মৃতদেহ কবর দেওয়া হত। মৃতদেহের সাথে খাবার সামগ্রী দেওয়া হত। কিন্তু এর সঙ্গে আত্মা বা ঐশ্বরিক কিংবা এই জাতীয় কোনো চিন্তার যোগ ছিল না। আমার এই মতে মৃতদেহ কবর দেওয়ার ব্যাপারটা এসেছে মৃতদেহের পচন ও সেই পচন থেকে দূর্গন্ধের জন্য। আগুনে পোড়ানো অনেক পরে এসেছে। এক সময় নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হত।

যাই হোক ধর্মীয় অনুশাষনের চাপে প্রকাশ্যে শবদেহ ব্যবচ্ছেদ ছিল অসম্ভব। কিন্তু যারা জ্ঞানপিপাসুরা নিল চোরাগোপ্তার। এই চোরাগোপ্তার কাহিনী শোনাবো আর জানাবো প্রথম মরণোত্তর দেহদানের কথা।

মানুষ তার জ্ঞান পিপাসা নিবৃত্তির জন্য যেকোন ধরণের ঝুঁকি নিতে কোন দিন পিছ পা হয় নি। আবার এরজন্য নানাধরনের চাতুরীও করেছে। ধর্মীয় বিধিনিষেধের জন্য প্রকাশ্যে শবব্যচ্ছেদ নিষিদ্ধ। আর তাই উনিশ শতকের প্রথম ভাগে ইংল্যান্ডের ডাক্তার রবার্ট নক্স এই বিধি নিষেধকে এড়াবার জন্য চোরাগোপ্তা পথের আশ্রয় নেন। ডাক্তার নক্স কবর স্থান থেকে মৃতদেহ চুরি করে তার গবেষণাগারে সরবরাহের জন্য হেয়ার ও বার্ক নামে দুজন চোরকে কাজে লাগায়। হেয়ার ও বার্ক প্রথমে কবরস্থান থেকে মৃতদেহ চুরি করেই সরবরাহ করতেন। কিন্তু তা সব সময় সম্ভব হতো না। তখন তারা মানুষ খুন করে নিজেদের কাছে কিছুদিন রেখে নক্সের গবেষণাগারে সরবরাহ করতেন। কিছুকালের মধ্যে হেয়ার ও বার্ক ধরা পরে যায়। বিচারে তাদের ফাঁসির সাজা হয়। ১৮২৯ সালে প্রকাশ্যে তাদের ফাঁসি হয়। এই ঘটনাটি তৎকালীন বিখ্যাত চিন্তাবিদ জেরেম বেন্থামকে ভাবায়। তিনি সমস্যাটা বোঝেন। তিনি ঘোষনা করেন যে তাঁর মৃত্যুর পর যেন তার দেহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার কাজে দান করা হয়। তাঁর এই ঘোষণায় গর্জে ওঠে চার্চ। জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। অবশেষে আদালত স্বীকৃতি দেয় যে কোন মানুষ জীবিতকালে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করতে পারবে এবং মৃত্যুর পর কবর না দিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য দানও করা যাবে। ১৮৩২ সালে জেরেম বেন্থামের মৃত্যু ঘটে এবং তাঁর দেহ চিকিৎবিজ্ঞানের স্বার্থে দানও করা হয়। এরপর ইংল্যান্ডের আরো কিছু চিন্তাবিদের দেহ তাদের ইচ্ছানুযায়ী চিকিতসাবিজ্ঞানের জন্য দান করা হয়। ইংল্যান্ডের মিউজিয়ামে আজও জেরেম বেন্থামের কঙ্কাল সংরক্ষিত আছে। জেরেম বেন্থামের মৃতদেহই হলো প্রথম মরণোত্তর দেহদান।

একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আসে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য যদি মৃতদেহের প্রয়োজন তাহলে তো বেওয়ারিশ লাশই আছে। সত্যিই তো! তাহলে কেন মরণোত্তর দেহদানের কথা? এক সময় বেওয়ারিশ লাশ দিয়েই চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজ চলত। কিন্তু আইন হবার পর বেওয়ারিশ লাশ ৪৮ ঘন্টা রেখে দিতে হয়, মৃতদেহের কোনো দাবীদার যদি আসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মৃতদেহে পচন ধরে। এছাড়াও ময়নাতদন্তের ফলে মৃতদেহের বিকৃতি ঘটে। আর এই দেহ শব ব্যবচ্ছেদের পক্ষে অনুকূল নয়। আর দান করা মৃতদেহ রাসায়নিক প্রয়োগ করে উপযোগী করে রাখা হয়। এক্ষেত্রে একটা কথা বলা প্রয়োজন পঠন-পাঠন ছাড়াও মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্য শবব্যবচ্ছেদ জরুরী। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় রোগনির্ণায়ক ময়নাতদন্ত (Patholigical Postmortem)। এক্ষেত্রে আরো একটা কথা বলা উচিত। আমরা মাঝে মাঝেই দেখি চিকিৎসার গাফিলতির জন্য হাসপাতাল বা কোন চিকিৎসালয় ভাঙচুর হচ্ছে, চিকিৎসক বা চিকিৎসালয়ের সাথে যুক্ত কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে। যদি রোগনির্ণায়ক ময়নাতদন্ত (Patholigical Postmortem) বাধ্যতামূলক হয় তাহলে এইধরনের গন্ডগোল এড়ানো সম্ভব। এছাড়াও আরো একটি কারন আছে তাহল এই আমরা মাঝে মাঝেই শুনি অজানা রোগে মৃত্যু। আর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে পারার মধ্য দিয়ে বংশানুক্রমিক রোগ থেকে পরবর্তী প্রজন্মকে সুস্থ করা যায়। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করতে না পারলে চিকিৎসাবিজ্ঞান তো বটেই, সামগ্রিক ভাবে সমাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একমাত্র দান করা মরদেহের সাহায্যেই এই গবেষণা সম্ভব।

মরণোত্তর দেহদান যেহেতু মৃত্যুর পর তাই এবার জেনে নেওয়া যাক মৃত্যু কী?

আসলে মৃত্যু দুই ধরনের।

সাধারণ মৃত্যু – হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের বন্ধ হয়ে যাওয়া মৃত্যু। সোজা কথায় অনেকক্ষণ শ্বাসপ্রশ্বাস নেই, হৃৎপিণ্ডের কোন আওয়াজ নেই এবং বাইরের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ডাক্তারি পরিভাষায় বলি Cardio respiratory failure।

এই মৃত্যু নিদানই বহুদিন ধরে চলে আসছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে আমাদের আরেক ধরণের মৃত্যুর সাথে পরিচয় ঘটে তাহল মস্তিষ্কের বা মস্তিক কাণ্ডের মৃত্যু। ইংরাজী পরিভাষায় যাকে বলা হয় Brain Death বা Brain Stem Death। আমরা সকলেই জানি যে আমাদের দেহের ক্রিয়াকর্মের সমস্ত কিছুর নিয়ন্ত্রক আমাদের মস্তিষ্ক। শিরদাঁড়া আর মস্তিষ্কের সংযোগস্থলকেই বলা হয় মস্তিষ্ক কাণ্ড বা Brain Stem। কারণ এই জায়গাটা দেখতে গাছের গুঁড়ির মত। আর এই মস্তিষ্ক কাণ্ড বা Brain Stem আমাদের বিভিন্ন ক্রিয়ার মূল কাজটি করে।

হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের কাজ বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটলে স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্কের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মস্তিষ্কের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে কৃত্রিম উপায়ে হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের কাজ চালু রাখা যায়। এইখানেই আসে ভেন্টিলেশনের কথা। ভেন্টিলেশনে রাখা হয় কাউকে যখন তার মস্তিষ্কের ক্রিয়া ঠিকঠাক হচ্ছে না। তখন ভেন্টিলেশন চালু করে দেহের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ সঠিক রাখা হয়। যাতে রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক হয়। আর এই ভেন্টিলেশন চালু রেখে চিকিৎসকরা মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক করার প্রয়াস করেন। যখন পারেন না তখন বলেন যে রোগীর মৃত্যু হয়েছে, মস্তিষ্কের বা মস্তিক কাণ্ডের মৃত্যু বা Brain Death বা Brain Stem Death হয়েছে। ভেন্টিলেশন চালু রেখে মস্তিষ্কের বা মস্তিক কাণ্ডের মৃত্যু হয়ে যাওয়া কারো হৃৎপিণ্ড ও শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ বহুকাল চালু রাখা যায়।

মস্তিক কাণ্ডের মৃত্যু নিয়ে একটা অদ্ভুত ঘটনার কথা জানাই। ১৯৯৩ সালে আমেরিকায় এক পথ দূর্ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যু ঘটে। দূর্ঘটনার পর যখন আহত অবস্থায় মহিলাকে হাসপাতালে আনা হয় এবং ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তখন চিকিৎসকেরা খেয়াল করেন ওই মহিলা তিন মাসের অন্তঃসত্তা। তখন চিকিৎসকেরা ভেন্টিলেশন চালু রেখে স্যালাইন-গ্লুকোজ-ফ্রুকটোজ ইত্যাদি পাশাপাশি ওই মহিলার দেহে (জানি না, শবদেহ বলা ঠিক হবে কিনা) দিয়ে গর্ভে থাকা শিশুটিকে বাঁচিয়ে রাখেন। তারপর যথা সময়ে অপারেশন করে শিশু সন্তানের জন্ম দেন। কী অদ্ভুত তাই না! আমরা অনেকেই সন্তানের জন্মের আগে তার পিতার মৃত্যু দেখেছি কিন্তু এক্ষত্রে মায়ের মৃত্যু।

সাধারণ মৃত্যু নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি চিকিৎসক স্টেথো দিয়ে হৃৎপিণ্ডের আওয়াজ শোনার চেষ্টা করেন, নাড়ীর গতি বোঝার চেষ্টা করেন আরো কিছু দেখে নিদান দেন যে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মস্তিষ্কের বা মস্তিক কাণ্ডের মৃত্যু বা Brain Death বা Brain Stem Death নির্ধারণ একটা দীর্ঘসময়ের। মোট চারজন চিকিৎসকের অভিমত একই হলে তবেই মস্তিষ্কের বা মস্তিক কাণ্ডের মৃত্যু বা Brain Death বা Brain Stem Death হয়েছে বলে গণ্য হবে। আর এই নির্ধারণও একটা বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়। প্রাথমিকভাবে রোগীর চিকিৎসারত চিকিৎসক স্থির করে চিকিৎসালয়ের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসককে জানাবেন। দুই জনে দেখে সিদ্ধান্তে সহমত হলে স্বাস্থ্য বিভাগকে জানাবেন। স্বাস্থ্য বিভাগের সুনির্দিষ্ট দুইজন ডাক্তার, চিকিৎসারত চিকিৎসক এবং চিকিৎসালয়ের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক এই চারজনে মিলে বেশকিছু পরীক্ষা করে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেবেন। আবার ৬ থেকে ১২ ঘন্টা পর আবার পরীক্ষা করে নিদান দেবেন যে মস্তিষ্কের বা মস্তিক কাণ্ডের মৃত্যু বা Brain Death বা Brain Stem Death হয়েছে। আরো একটা কথা জানিয়ে রাখি কোমা আর মস্তিষ্কের বা মস্তিক কাণ্ডের মৃত্যু বা Brain Death বা Brain Stem Death এক নয়। কোমা মানে জীবিত কখনই মৃত নয়।

আমরা আগেই আলোচনা করেছি চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ার ক্ষেত্রে শবদেহের প্রয়োজন আছে। আমাদের স্কুলের বিজ্ঞান বই-ই থেকে জেনেছি মানব দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আকৃতির ছবি দেখেছি। এই আকৃতিগুলো জেনেছি নিশ্চয় কল্পনার চোখ দিয়ে নয়। শব-ব্যবচ্ছেদ করে। এই ব্যাপারে যিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন রেনাঁসা যুগের এক অনন্য চিত্র শিল্পী, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২ – ১৫১৯)। আমাদের কাছে উনি পরিচিত মোনালিসা ছবিটির জন্য। কিন্তু অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি চর্চাও করতেন। শব-ব্যবচ্ছেদ করে দেহের বিভিন্ন অংশ প্রত্যক্ষ করে সেই সব অংশের চিত্র প্রস্তুত করেন। তিনিই হার্টের কপাটিকা বা ভালভ আবিষ্কার করেন। মানুষের চোখ নিয়েও তার গবেষণাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দ্য ভিঞ্চির কাজকে এগিয়ে নিয়ে যান আঁদ্রে ভেসালিয়াস। এই প্রসঙ্গে একজন কথা না বললে তা অন্যায় হবে। তিনি হলেন গ্রীক চিকিৎসক গ্যালেন (১৩০ – ২০০ খ্রিস্টাব্দ)। গ্যালেনের সময় মৃত্যুর পর নরদেহ ব্যবচ্ছেদে ধর্মীয় নিষেদ্ধাজ্ঞা থাকায় বানর, শুয়োর ইত্যাদি বন্যপ্রাণীদের দেহ ব্যবচ্ছেদের মধ্য দিয়েই মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আকৃতি কেমন হতে পারে তার একটা কল্পনা করা হয়েছিল মাত্র। পরবর্তীকালে ভেসিলিয়াস যখন মানবদেহ ব্যবচ্ছেদ করে গবেষণা শুরু করেন। তখনই জানা যায় গ্যালন অঙ্কিত বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যে ছবি আছে তা মানুষের নয়, বানরের। ভেসিলিয়াসকেও কিন্তু চোরাগোপ্তা পথেই মানুষের মৃতদেহ সংগ্রহ করতে হয়েছিল।

এবার আসি আমার ভারতবর্ষে, ‘ভারত আবার জগৎসভার শ্রেষ্ঠ আসন লবে’ সেই ভারতবর্ষে। আরো ভাল করে বলি আমার রাজ্য আমার শহর কলকাতায়। ভারতবর্ষের প্রথম মেডিকাল কলেজ স্থাপন হয় আমার শহর কলকাতায়, ১৮৩৫ সালের ২৮ জানুয়ারীতে। সেই সময় অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান ছিলেন ডাঃ হেনরি গুডিব আর কলেজের সুপারিন্টেন্ডেট ছিলেন ডাঃ মাউন্টফোর্ড জোসেফ ব্রামালি। তাঁরা জানতেন আধুনিক চিকিৎসাকে উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে শব-ব্যবচ্ছেদ জরুরী। ডাঃ গুডিব বা ডাঃ মাউন্টফোর্ড জোসেফ ব্রামালি এটা বুঝেছিলেন যে আধুনিক অ্যালাপাথি চিকিৎসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে প্রথমে কুসংস্কার ভাঙ্গতে হবে। আর এই মেডিকাল কলেজের পড়ুয়ারা হবে এই দেশের। তাই এই দেশের মানুষেরা যদি এগিয়ে না আসেন তাহলে এই মেডিকাল কলেজের উদ্দেশ্যই বৃথা হয়ে যাবে। ডাঃ গুডিবের এই মনোভাবের কথা জানাজানি হতেই রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ রুখে দাঁড়ায়। ডাঃ হেনরি গুডিবের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন দ্বারকানাথ ঠাকুর, ডেভিড হেয়ার। সেই সময়কার নামজাদা বিদ্দজন মন্মথনাথ তর্কতীর্থ জানান শাস্ত্র অনুযায়ী শব-ব্যবচ্ছেদ নিষিদ্ধ। আর ছাত্রদেরও হুশিয়ারিও দেন যে শব-ব্যবচ্ছেদে যোগ দিলে তার ফলাফল খারাপ হবে। কিন্তু সমস্ত হুমকিকে তোয়াক্কা না করে দ্বারকানাথ ঠাকুরের আবেদনে সাড়া দিয়ে পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্ত ডাঃ গুডিবের সাথে শব-ব্যবচ্ছেদে থাকবেন বলে জানান। শুধু তাই নয়, তৎকালীন চার জন ছাত্র, উমাচরণ শেঠ, রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত এবং নবীনচন্দ্র মিত্র শব-ব্যবচ্ছেদে অংশ গ্রহন করেন। সেদিন এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে নাকি তোপ দাগা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কৃত কলেজের শিক্ষক পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্তকে কলকাতা ছেড়ে হুগলী জেলার শ্রীরামপুরে গিয়ে বাসা বাঁধতে হয়। অবাক হবেন জানলে প্রথম বারো বছরে কলকাতার মেডিকাল কলেজে ৫০০-র কিছু বেশি শব-ব্যবচ্ছেদ হয়। যদিও সেই সময় এই শব-ব্যবচ্ছেদ হত বেওয়ারিশ লাশ দিয়ে। কিন্তু আইনত জটিলতার জন্য তারপর বন্ধ হয়ে যায়।

বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে চিকিৎসাবিজ্ঞানেরও অগ্রগতি ঘটে। শবদেহ শুধুমাত্র চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষা ও গবেষণার পরিসরে আবদ্ধ থাকল না। শবদেহ থেকে প্রত্যঙ্গ বা কলা প্রতিস্থাপন যুক্ত হল চিকিৎসাবিজ্ঞানে। কিন্তু ইতিহাসের পাতা ওলটালে অতীতেও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কথা পাই। খিস্ট্রীয় তৃতীয় শতকে বিখ্যাত যমজ চিকিৎসক সেন্ট কোসমাস ও সেন্ট দামিয়েন এক ক্যানসার রোগীর পা বাদ দিয়ে মৃতের পা প্রতিস্থাপন করেছিলেন। প্রাচীন ভারতেও এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। ভারতে অতীতে দোষীদের শাস্তি হিসেবে নাক-কান কেটে নেওয়া হত। সেইসময়কার চিকিৎসকরা খুবই নিপুনভাবে মৃতদেহের থেকে নেওয়া অঙ্গ মানে নাক-কান প্রতিস্থাপন করা হত।

বিশ শতকে এই বিষয়ে ঘটে উলম্ফন। শতকের শুরুর বছরে ১৯০১ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার(১৮৬৮-১৯৪৩) অস্ট্রিয়ায় জন্মগ্রহনকারী এই বিজ্ঞানী যিনি প্রধান রক্তের গ্রুপগুলো (A, B, O ( আবিষ্কার করেছিলেন। এর পরে তার দুই সহযোগী আলফ্রেড ভন ডেকাষ্টেলো আর আদ্রিয়ানো স্ট্রুলি AB গ্রুপটি শনাক্তকরেন। এই শনাক্তকরনের ফলাফলেরউপর ভিত্তি করে রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে প্রথম রক্ত পরিসঞ্চালন করেন নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সাইনাই হসপিটালের আরেক অসাধারন ডাক্তার এবং বিজ্ঞানী রুবেন ওটেনবার্গ। ১৯৪১ সালে রকফেলার মেডিকেল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ফিলিপ লেভিন আবিষ্কার করেন Rh অ্যান্টিজেন। যা থাকলে কোন রক্তের গ্রুপকে আমরা বলি পজিটিভ আর না থাকলে বলি নেগেটিভ।

১৯০৫ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রত্যঙ্গদানে ঘটে যুগান্তকারী ঘটনা। ঘটনাটি ঘটে চেকশ্লোভাকিয়ায় চক্ষু চিকিৎসক এডোয়ার্ড কনরাড জার্ম (Eduard conarad Zirm) হাত ধরে। ৪৫ বছরের অ্যালোস গ্লোগা (Alois Gloga) কর্ণিয়াজনিত কারণে দুটি চোখেই দৃষ্টিহীন। তখন এডোয়ার্ড কনরাড জার্ম ১১ বছরের কার্ল ব্রুয়ের ( Karl Brauer) একটি চোখের কর্ণিয়া নিয়ে অ্যালোস গ্লোগার চোখে প্রতিস্থাপন করেন। হ্যাঁ, এই কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন ছিল জীবিত মানুষের থেকে নিয়ে। আর এই ছিল একমাত্র প্রথম ও শেষ জীবিত কারো থেকে কর্ণিয়া সংগ্রহ করে কর্ণিয়াজনিত কারনে কোন ব্যাক্তিকে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন।

অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রচেষ্টা কিন্ত এর আগেও তার প্রচেষ্টা ছিল। পশুর অঙ্গ নিয়ে প্রতিস্থাপন। এমনকি পশুর রক্ত মানবদেহে সঞ্চালন। কিন্তু তা কোন ক্ষেত্রেই সফল হত না। কিন্তু তখনকার চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বুঝেছিলেন এই প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন বা রক্ত সঞ্চালন সফল হতে পারে একমাত্র মানবদেহ হতে সংগৃহীত প্রত্যঙ্গ বা রক্তের মাধ্যমে। আর এই ধারণার জন্ম নিয়েছিল অতীতের চিকিৎসার ইতিহাস থেকেই। বিখ্যাত চিকিৎসক গ্যালেন (১৩০ – ২০০ খিষ্ট্রাব্দ) ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে পশুদেহ মূলত বানরের দেহ ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে মানবদেহের আকৃতির একটা ধারণা দেন। কিন্তু এই ধারণার মধ্যে বহু ভ্রান্তি ছিল। যদিও এই ধারণা বহুদিন টিকে ছিল। বহু প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে মানবদেহই ব্যবচ্ছেদ করেই মানবদেহের গঠন ও আকৃতির সঠিক ধারণা আমাদের সামনে আনেন সেই সময়কার বিজ্ঞানীরা। যার কথা আগেই বলেছি।

এবার আসি আমাদের দেশের কথায়। যতদূর জানা যায় আমাদের দেশে প্রথম মরদেহ দানের ঘটনা ঘটে ১৯৫৬ সালে পুনেতে। শিক্ষাবিদ পাণ্ডুরঙ্গ আপ্তের মৃতদেহ তাঁর ইচ্ছানুযায়ী পুনের মেডিকেল কলেজে দান করেন উনার আত্মীয়স্বজন। এরপর আরেকজনের কথা বলেতেই হবে। তিনি জে বি এস হলডেন। উনি ১৯৫৬ সালে ব্রিটেনের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করে ভারতে এসে, ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহন করেন। এখানে সমাজসেবার সাথে যুক্ত হন। হলডেন ১৯৬৪ সালে ১ ডিসেম্বর ভুবনেশ্বরে মারা যান। তাঁর অঙ্গীকার মত তাঁর মৃতদেহ অন্ধ্রের কাঁকিনাড়া জেলার রঙ্গরাইয়া মেডিক্যাল কলেজে দান করা হয়। দক্ষিণ ভারতের বিজ্ঞান আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ আব্রাহাম কোভুর ও আক্কা কোভুর। তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী তাঁদের মৃত্যুর পর তাদের মরদেহও চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাজে ব্যবহৃত হয়। ঘটনাটি ঘটে ১৯৭০ সালে। ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কায় এল টি টি ই-র নেতা দিলীপ থেলাপ্পান অনশন চলাকালীন মারা যান। উনার অঙ্গীকার অনুযায়ী উনার মৃতদেহ জাফনা মেডিক্যাল কলেজে দান করা হয়।

আর আমাদের রাজ্যে গণদর্পণ সংগঠিত কাজকর্ম করেন ১৯৮৫ সালে। ১৯৯০ সালে পূর্ব অঙ্গীকার মতো সুকুমার হোমচৌধুরীর মরদেহ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে দান করা হয়।

১৯৯৪ সালে ভারত সরকার ‘দ্য ট্রান্সপ্লানটেশন অব হিউম্যান অরগ্যান অ্যাক্ট – ১৯৯৪’ আইন চালু করেন। এই আইনের ফলেই সাধারণ মৃত্যুর পাশাপাশি মস্তিষ্কের মৃত্যুও স্বীকৃতি পায়। এরফলে যান্ত্রিকভাবে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ চালু রেখে মৃতের দেহ থেকে প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে রাস্তা সুগম হয়। ১৯৯৫ সালে আমাদের রাজ্য এই আইন গ্রহণ করে। কিন্তু ২০১০ সাল পর্যন্ত আমাদের রাজ্যে শুধুমাত্র কর্ণিয়া ছাড়া মৃতদেহ থেকে অন্যকোন অরগ্যান সংগ্রহ ও প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয় নি। ২০১০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী এস এস কে এম হাসপাতালে জয়দেব পালের মৃতদেহ থেকে লিভার সংগ্রহ করে সিরোসিস অব লিভারে আক্রান্ত জয়তী চট্টোপাধ্যায়ের দেহ প্রতিস্থাপিত হয়। স্বীকৃত প্রথম মরণোত্তর প্রত্যঙ্গদান হলেও ভারতবর্ষে প্রথম ১৯৮৮ সালের ৬ জুন। নদীয়ার দীনেশচন্দ্র মোদক হঠাৎই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যান। তখন উনার একমাত্র কন্যা বন্দনা মোদকও বিকল দুটি কিডনী নিয়ে মৃত্যুর দিনের অপেক্ষায়। তখন চিকিৎসারত চিকিৎসক ডাঃ এম সি শীল মৃত দীনেশচন্দ মোদকের স্ত্রী লক্ষ্মীদেবীকে জানান যে উনার স্বামীকে ফিরে পাবেন না কিন্তু আপনি আপনার মেয়েকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বাঁচাতে পারেন যদি দীনেশবাবুর মৃতদেহ থেকে কিডনী বন্দনার দেহে প্রতিস্থাপনের অনুমতি দেন। লক্ষ্মীদেবী অনুমতি দেন। বন্দনা আজো বেঁচে আছে আমার আপনার মতই।

চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ও গবেষণার জন্য মৃতদেহ জরুরী তা আমাদের কাছে পরিষ্কার। আমার এও জেনেছি মৃত্যুর পর মৃতদেহ থেকে কলা ও প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে প্রয়োজন অনুসারে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। কিন্তু এই প্রতিস্থাপন কীভাবে সম্ভব তা জেনে নেওয়া যাক। আমরা আগেই জেনেছি মৃত্যু দুই ধরণের, এক) সাধারণ মৃত্যু মানে নিদানিক মৃত্যু আর দুই) মস্তিষ্কের মৃত্যু মানে যাকে আমরা ব্রেণ ডেথ বলি।

সাধারণ মৃত্যু হলে মৃতদেহ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে ৪ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে চোখ মানে দুটো কর্ণিয়া, চামড়া আর ৪৫ থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে কিডনী। আর যদি মৃতদেহ ৪সেলসিয়াসে হিমায়িত রাখা যায় তবে মৃতদেহ সংগ্রহ করে হার্ট ভালভ, কানের হাড়, হাড়মজ্জা, কার্টিলেজ, টেণ্ডন, মাংসপেশি তবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রতিস্থাপনযোগ্য। আর যদি মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটে তবে যন্ত্রের সাহায্যে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ চালু রেখে সমস্ত অরগ্যানই সংগ্রহ করা ও প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে যেমন রক্তের গ্রুপ ম্যাচিং জরুরী তেমনই কলা বা প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও কিছু জরুরী নিয়ম মেনেই চলতে হয়। জীবিতকালে আমরা যেমন আমার নিজের নির্বাচিত কোন ব্যাক্তিকে আমার নিজের কিছুটা লিভার, একটি কিডনী এবং রক্ত দিতে পারি। অন্যকিছু নয়। কিন্তু মরণোত্তর কলা বা প্রত্যঙ্গদানের ক্ষেত্রে আমাদের নির্বাচিত কোন ব্যাক্তিকে তা পারিনা। এক্ষেত্রে আমাদের একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার রক্ত বা কলা কিংবা প্রত্যঙ্গ কোনভাবেই কেনা বা বেচা যাবে না। আরো একটি জরুরী কথা সাধারণ মৃত্যু হলে সেই মৃতদেহ থেকে মৃতের আত্মীয় পরিজন যদি কোন কলা বা প্রত্যঙ্গ দান করতে চান, সেইক্ষেত্রে চিকিৎসক ‘দ্য ট্রান্সপ্লানটেশন অব হিউম্যান অরগ্যান অ্যাক্ট – ১৯৯৪’ আইন অনুযায়ী ১ ঘন্টার মধ্যে ডেথ সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য।

এবার আসি চক্ষুদানের ব্যাপারে। আগেও জানিয়েছি আবারো জানাই যে জীবিতকালে এই দান করা যায় না। আসলে চোখ নয় প্রতিস্থাপন করা কর্ণিয়া অর্থাৎ চোখের স্বচ্ছ মনি। একে বলে কর্ণিয়া গ্রাফটিং বা কেরেটোপ্লাস্টি। এখানে একটা কথা জানা দরকার সব দৃষ্টিহীনকেই কিন্তু দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। বহু কারণে মানুষ দৃষ্টিহীন হতে পারে। কিন্তু একমাত্র কর্ণিয়াজনিত কারণে দৃষ্টিহীন হলেই কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করে দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব। আরো একটি বিষয় জেনে রাখা উচিত আপনার মৃত নিকটজনের দান করা কর্ণিয়া বা চোখ আপনার মনোনীত দৃষ্টিহীন কাউকে দিতে পারবেন না। মারা যাওয়ার চার থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে চোখ সংগ্রহ করতে হয়। যদি এই সময়ের মধ্যে সম্ভব না হয় তবে কি চোখ দান করা সম্ভব হবে না? সম্ভব হবে। কিন্তু তারজন্য কিছু দরকারি কাজ মৃতের নিকটজনকে করতে হবে। তা হলো, যদি ব্যাক্তি চোখ খুলে মারা যায় তবে চোখদুটি বন্ধ করে দিতে হবে। এইটি সময়ের মধ্যে হলেও করতে হবে। আর চোখের ভিতর যেকোন আই ড্রপ দু ফোঁটা দিয়ে দিন। এরপর একটি পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে খুব ভাল করে নিংরে নিন মানে কাপড়টি যেন শুকনো ভিজে থাকে। এবার সেই কাপড়টি চোখের উপর দিয়ে রাখুন, ঘরে এসি চালু থাকলে সেটি বন্ধ করে ফ্যান চালু রাখুন। কাপড়টি শুকিয়ে গেলে পুনরায় একই জিনিস করুন মানে কাপড়টি আবার ভিজিয়ে খুব ভাল করে নিংরে নিন মানে কাপড়টি যেন শুকনো ভিজে থাকে। এবার সেই কাপড়টি চোখের উপর দিয়ে রাখুন। এইভাবে অন্তত বারো ঘন্টা বাদেও চোখ দেওয়া সম্ভব। এবার নিশ্চয় প্রশ্ন আসবে চোখ তো দান করবো কিন্তু কোথায় কিভাবে করবো? মারা যাওয়ার সাথে সাথে যে ডাক্তার মৃত ঘোষনা করেছেন তাকে বলুন যে আপনি বা আপনারা আপনার মৃত নিকটজনের চোখ দান করতে চান। তাহলে তিনি দ্য ট্রান্সপ্লানটেশন অব হিউম্যান অরগ্যান অ্যাক্ট – ১৯৯৪’ আইন অনুযায়ী ১ ঘন্টার মধ্যে ডেথ সার্টিফিকেট দেবেন। এরপর আপনি আপনার স্থানীয় কোন চক্ষু সংগ্রহ কেন্দ্রে ফোন করে জানান। আবারো প্রশ্ন করবেন কোথায় আছে চক্ষু সংগ্রহ কেন্দ্র তা জানবো কি করে? তাই এই লেখার শেষে জেলাভিত্তিক সব চক্ষু সংগ্রহকেন্দ্রে নাম ও ফোন নাম্বার দিয়ে দেওয়া হবে।

এবার আসি চামড়া ত্বকের কথায়। প্লাসটিক সার্জারি হল কোন অসুখ বা দূর্ঘটনাজনিত বা জন্মসূত্রে পাওয়া দৈহিক আকৃতিগত ত্রটির সংশোধনী শল্য চিকিৎসা। অগ্নিদগ্ধ রোগীর নিরাময় ক্ষেত্রে ত্বকের গুরুত্ব অপরিসীম। এবার একটু জেনে নেওয়া যাক অগ্নিদগ্ধের ক্ষেত্রে কেন ত্বকের প্রয়োজন? তাহলে আমাদের জেনে নিতে হবে ত্বক কি আর ত্বকের কাজ কি? ত্বক আসলে নালীবিহীন যন্ত্র। গোটা দেহের ওজনের সাত শতাংশ এই ত্বকের ওজন। ত্বকের মালমশলা বলতে মূলত চর্বিসদৃশ পদার্থ। ত্বকের তিনটি উল্লেখযোগ্য কাজ

১) ত্বক শরীরের মধ্যে তরল এবং সেই তরলের ইলেকট্রোলাইট ধর্মিতার সাম্যবস্থায় বজায় রাখে।
২) শরীরে উত্তাপের নিয়ন্ত্রণ করে।
৩) দেহের বাইরে থেকে অণুজীবদের দেহের ভিতরে প্রবেশ ঠেকাতে প্রাচীরের কাজ করে।

আর কেউ অগ্নিদগ্ধ হলে তার ত্বক সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপরোক্ত কাজগুলো ব্যহত হয়। আর এই ক্ষতি রুখতে অগ্নিদগ্ধ ত্বকের উপর ত্বকের তালি দিয়েই উপশম করা সম্ভব। আর এই তালি দেওয়া হয় কয়েকটি ভাবে।

১) Aultograft (নিজস্ব ত্বক) – সবচেয়ে ভাল উপায়। কিন্তু সবক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না।
২) Homographt (একই প্রজাতি) – মানে মানুষ থেকে মানুষ।
৩) Isographt – সর্বতোভাবে অভিন্ন ব্যাক্তি বা যমজ ভাই বোনের থেকে, Aultograft-এর মতই সর্বোৎকৃষ্ট।
৪) Allograft – এ ক্ষেত্রে দাতা হল মৃত মানুষের থেকে।
৫) Hetrograft/Xenograft – ভিন্ন প্রজাতির জীব থেকে। বর্তমানে সর্বাধিক সংগৃহীত হয় শূকরের থেকে।

অগ্নিদগ্ধের ক্ষেত্রে ত্বকের ব্যবহার ব্যাণ্ডেজের মত। জীবিত মানুষ থেকে ত্বক সংগ্রহ খুবই ব্যয়সাধ্য। দাতাকেও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় এবং কয়েকদিন থাকতে হয়। Homographt `কলাকে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য যদি সংরক্ষণ করতে হয় তাহলে সেটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই মৃতের থেকে নেওয়া ত্বক চটপট পাওয়া যায় এবং ব্যবহার করা যায়। আমাদের দেশে মৃতদেহ থেকে সেইভাবে ত্বক সংগ্রহ হয় না। আমাদের রাজ্যের অবস্থা খুবই করুণ, রাজ্যে একমাত্র স্কিন ব্যাঙ্ক আছে এস এস কে এম হাসপাতালে। যেমন চোখ সংগ্রহ করা হয় তেমন ভাবেই ত্বকও সংগ্রহ করা যেতে পারে। মৃত্যুর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ত্বক সংগ্রহ করতে হবে। যদি এসি রুমে দেহ রাখা যায় তবে ভাল হয়। এস এস কে এম হাসপাতালে জানালে তারাই এসে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। আমাদের একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে মৃতদেহ থেকে ত্বক নেওয়া হলে মৃতদেহ বীভৎস দেখতে হয়ে যাবে। আসলে খুবই অল্প পরিমান ত্বক নেওয়া হয়। আর এই ত্বক নেওয়া হয় পিঠ আর থাইয়ের পিছন দিক থেকে। হেপাটাইটিস, সেপটোসিমিয়া আর ক্যানসারের মৃতের থেকে ত্বক নেওয়া হয় না।

এবার আসি অরগ্যান বা অঙ্গ প্রতিস্থাপন ব্যাপারে।

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক অরগ্যান কী? সেল বা কোষ যেকোন জৈব পদার্থের একক। কিছু সেল বা কোষ নিয়ে তৈরি হয় টিস্যু বা কলা। দুই বা অধিক কলার সমষ্টি মিলে জীবের দেহের প্রয়োজনের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট কাজ করে, তাকে বলে অঙ্গ বা অরগ্যান। আমাদের দেহে কতকগুলে অরগ্যান দুটো করে থাকে। যেমন কিডনী, টেস্টিজ, ওভারি। একটা নষ্ট হয়ে গেলে অন্য একটা কাজ করে। আবার কিছু অরগ্যান আছে একটা করে। যেমন হার্ট, ফুসফুস। আমরা আগেই জেনেছি যে যে জীবিত অবস্থায় কি কি অরগ্যান ও টিস্যু দান করতে পারি। আসলে মরণোত্তর প্রত্যঙ্গ দান করা হয় একমাত্র আরেকজনের জন্য, যে কোন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার জন্য অসুস্থ হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী এবং আরো কিছু কারণে।

প্রতিস্থাপনের জন্য কি কি দরকার প্রয়োজন

১) অরগ্যান দাতা (জীবিত, মৃত ও মস্তিষ্ক মৃত দাতা)
২) অরগ্যান দাতার প্রকৃতি নির্ণয় করা (যাকে বলা হয় টিস্যু ম্যাচিং)
যে কোন ব্যাক্তিই দাতা হতে পারে তবে তা কোন নির্দিষ্ট ব্যাক্তির জন্য, যে কারো জন্য নয়। দাতা ও গ্রহীতার প্রকৃতি এক হওয়া চাই। একেবারে রক্তের মত বলা যেতেই পারে।
৩) অরগ্যান দাতার থেকে সংগৃহীত অরগ্যান প্রতিস্থাপন না হওয়া পর্যন্ত সজীব রাখা।
৪) প্রতিস্থাপিত অরগ্যান রক্ষা করা। যাকে আমরা বলি পোস্ট অপারেশন কেয়ার।

মৃত ব্যাক্তির যে সব অরগ্যান কার্যক্ষম আছে একমাত্র সেই অরগ্যানই সংগৃহীত করে প্রতিস্থাপিত করা হয়।

সাধারণ মৃত্যুর পর যেসব অরগ্যান নেওয়া সম্ভব

১) চোখ (গ্লুকোমা, ক্যানসার, হেপাটাইটিস, এইচ আই ভি বা সেপটোসেমিয়া থাকলে সম্ভব নয়) (একমাত্র কর্ণিয়া জনিত কারনেই দৃষ্টিহীন হলেই তাকে দৃষ্টি ফেরানো সম্ভব) (যদি কেউ কর্ণিয়াজনিত কারণ ছাড়া অন্যকারনে দৃষ্টিহীন হয় তবে সেই দৃষ্টিহীন ব্যাক্তিও চোখ দান করতে পারেন)। আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী ৪ ঘন্টার মধ্যে।
২) ৪ ঘন্টার মধ্যে অস্থি, ত্বক, ইয়ারড্রাম ও ইয়ার বোন।
৩) ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে কিডনী।

কিছু অরগ্যান যা রক্ত সঞ্চালন অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয়।

সেগুলো হচ্ছে ১) কিডনী, ২) হার্ট ও হার্ট ভালভ, ৩) প্যাঙক্রিয়াস, ৪) অস্থিমজ্জা, ৫) রক্ত ও অনান্য সব।

রক্ত সঞ্চালন অবস্থায় প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ ব্যাপারটা একটু খটমটো হয়ে গেল। মৃত ব্যাক্তির রক্ত সঞ্চালন আবার কীভাবে হবে? আমরা আগেই জেনেছি মৃত্যু দুই ধরণের, এক) সাধারণ মৃত্যু মানে নিদানিক মৃত্যু আর দুই) মস্তিষ্কের মৃত্যু মানে যাকে আমরা ব্রেণ ডেথ বলি। দ্বিতীয় ধরণের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এটা সম্ভব। প্রশ্ন আসবেই কী করে? খুব অল্প কথায় জেনে নেওয়া যাক, যদিও পূর্বে এই সম্পর্কে কিছু বলা আছে। মস্তিষ্কের মৃত্যু বলতে বোঝানো হয় মস্তিষ্ক কাণ্ডের মৃত্যু বা ব্রেণস্টেম ডেথ। আসলে আমাদের দেহের সমস্ত কলা বা প্রত্যঙ্গের সঞ্চালনের কেন্দ্রবিন্দু হল মস্তিষ্ক কাণ্ড বা ব্রেণ স্টেম। এই মস্তিষ্ক কাণ্ড বা ব্রেণ স্টেমের মৃত্যু ঘটলে হাজার চেষ্টা করেও কাউকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। অনেক সময়ই আমাদের বিভিন্ন কারণে আই সি ইউ-তে ভর্তি করে ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে রাখা হয়। তাহলে আবার প্রশ্ন এই ভেন্টিলেশন কি কাজ করে? যখন বিভিন্ন কারণে আমাদের মস্তিষ্ক কাণ্ড বা ব্রেণ স্টেম সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না তখন এই ভেন্টিলেশন চালু রেখে ও আরো কিছু ওষুধের মাধ্যমে আমাদের হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজকে চালু রেখে রক্ত সরবরাহ চালু রাখা যায়। এই প্রক্রিয়া চালু রেখে মস্তিষ্কের আঘাতপ্রাপ্ত জায়গার মেরামতি করে আমাদের সুস্থ করে তোলার প্রচেষ্টা হয়। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় এই প্রক্রিয়া চালু রেখে কিছুতেই আর স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তখনই আমরা বলি যে মস্তিষ্ক কাণ্ডের মৃত্যু ঘটেছে। কিন্তু ভেন্টিলেশন চালু রেখে মস্তিষ্কের বা মস্তিক কাণ্ডের মৃত্যু হয়ে যাওয়া কারো হৃৎপিণ্ড ও শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ বহুকাল চালু রাখা যায়। এই প্রসঙ্গে পূর্বে বিশদভাবে বলা আছে। তাই আর পুনারাবৃত্তিতে যাচ্ছি না। এই ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ চালু রেখে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে আমাদের দেহ থেকে সমস্ত অরগ্যানই সংগ্রহ করা সম্ভব।

মস্তিষ্ক কান্ডের মৃত্যু নিয়ে আগেই বলা আছে। নতুন করে আর কিছু বলার নেই।

আসল ফারাকটা চেতনায়। জীবনচর্চায় যদি যুক্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ফাঁক থেকে যায় তবে সেই সচেতনা মূল্যহীন। এর প্রমাণ আমরা প্রায়শই দেখতে পাই। শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে চিকিৎসায় গাফিলতি এই অভিযোগে সরকারি বা বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র ভাঙচুরের হচ্ছে। আবার বিভিন্ন স্থানে অজানা রোগে একই সাথে বহু মানুষের মৃত্যুর খবরও আমাদের অজানা নয়। আর অদ্ভুত ব্যাপার সরকারি দপ্তর কোন রকম তত্ত্বতলাশ ছাড়াই নানারকম গল্প ফেঁদে দায় সারেন। আসলে কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তা জানার জন্য প্রয়োজন ‘রোগ নির্ণায়ক ময়নাতদন্ত’। এই ময়নাতদন্ত সাধারণ ময়নাতদন্ত থেকে আলাদা। এই রোগ নির্ণায়ক ময়নাতদন্ত হলে খুব সহজেই জানা যেতে পারে সত্যিই চিকিৎসায় কোন গাফিলতি ছিল কিনা? এখানে জানাই যে স্নাতকোত্তর পাঠরত প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে নিজহাতে কমপক্ষে ১০টি রোগ-নির্ণায়ক ময়নাতদন্ত আবশ্যিক এবং সমসংখ্যক ক্লিনিসিয়াল-প্যাথলজিস্ট কনফারেন্সে হাজির থাকতে হবে। সারা দেশেই এর সংখ্যা শূণ্য বলা যেতে পারে। আমরা শুধু অনুমানের উপর নির্ভর করে চিকিৎসায় গাফিলতি নিয়ে অভিযোগ কিংবা অভিযোগ খণ্ডনে ব্রতী হই। এই সুযোগকে পুঁজি করেই চিকিৎসা এখন পণ্য।

আবার আসি একবারে গোড়ার কথায়। একজন সচেতন হয়ে মরণোত্তর দেহদান বা প্রত্যঙ্গদানে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু বাস্তবায়িত করতে হয় মৃতের নিকটজনকে। সুতরাং যিনি অঙ্গীকারকারী তাকে তার নিকটজনকে মোটিভিটেট করতে হবে তার মৃত্যুর পরের ইচ্ছাপূরণের জন্য। আমাদের বোঝাতে হবে এটাই আমার মৃত্যুর পর যদি আমার দুটো কর্ণিয়াদুটো কাউকে প্রতিস্থাপন করা যায় তবে দুই থেকে চার জন কর্ণিয়াজনিত কারণে দৃষ্টিহীন ব্যাক্তি দেখতে পাবে পৃথিবীর সমস্ত রঙ, দেখতে পাবে তার প্রিয়জনের মুখ হাসিকান্না আরো অনেক কিছু। একজন বধিরকে শোনানো যেতে পারে পৃথিবীর সব শব্দ। অস্থিমজ্জা দিয়ে লিউকোমিয়া বা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তকে ফিরিয়ে দেওয়া যেতেই পারে স্বাভাবিক জীবন। ৭০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা যেতেই পারে মৃতের থেকে সংগ্রহ চামড়া দিয়ে। মৃতের থেকে সংগ্রহ করে দুটো কিডনী দিয়ে দুজন কিডনী অচল হয়ে যাওয়া মৃতপ্রায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই পারে। এছাড়াও কিডনীর চোরা বাজারও বন্ধ হতে পারে। নূন্যতম খরচে মৃতের হার্ট-ভালভ দিয়ে একজনকে ফিরিয়ে দিতে পারে তার সুস্থ জীবন। এইরকম ভাবে মৃতের আরো অনেক দান করা প্রত্যঙ্গ কাজে লাগানো যেতেই পারে। এই সমস্ত সম্ভবকে বাস্তবায়িত করে তুলতে পারে আমাদের সচেতনতা।

তাহলে মরণোত্তর দেহদান ইচ্ছুক ব্যাক্তিদের করণীয় কী?

ইচ্ছুক ব্যাক্তিকে প্রথমত লিখিতভাবে অঙ্গীকার করতে হবে। সমস্ত সরকারী মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে এই অঙ্গীকার করা যায়। তাছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে গণদর্পণ-এও অঙ্গীকার করা যায়। গণদর্পণ ছাড়াও আরো কিছু সংগঠন আছে তারা কেউ নিজস্বভাবে বা গণদর্পণের সাথে যুক্ত হয়ে এই কাজ করে। দু কপি ফর্ম পূরণ করতে হয়। সরকারী হাসপাতালের ক্ষেত্রে দু কপি ছবি প্রয়োজন। গণদর্পণের ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন নেই। এই দু কপি ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে দুজন স্বাক্ষী প্রয়োজন। এই দুটো পূরণ ফর্মের একটি অঙ্গীকারকারীকে দেওয়া হয়। তারসাথে অঙ্গীকারকারীকে একটি ডোনার-কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ডটি সর্বদা অঙ্গীকারকারীকে নিজের সাথে রাখতে হয়। কারণ অঙ্গীকারকারীর মৃত্যু কোথায় কীভাবে হবে তা আগাম জানা সম্ভব নয়। তখন এই ডোনার-কার্ডটি সহায়ক হতে পারে তার ইচ্ছাপূরণের জন্য। ১৮ বছরের ঊর্দ্ধ যেকোন ব্যাক্তি অঙ্গীকার করতে পারেন। ১৮ বছরের নীচের কাউকে করতে হলে অভিবাবকের অনুমতির প্রয়োজন। আরো একটি ব্যাপার জানিয়ে রাখা উচিত। কারো যদি অঙ্গীকার করা না থেকে তাহলেও কোন মৃত ব্যাক্তির নিকটজন মৃত ব্যাক্তির দেহ বা প্রত্যঙ্গদান করতে পারেন। আগেই জানিয়েছি মৃত্যুর পর যদি হাসপাতালে মৃতের নিকটজনকেই হাসপাতাল কর্ত্তপক্ষকে জানাতে হবে তাদের ইচ্ছার কথা। এখানেও মনে রাখতে হবে মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, সাধারণ না মস্তিষ্ক কান্ডের। আর যদি বাড়িতে হয় তবে মৃতের নিকটজনকেই কাছাকাছি কোন চোখ সংগ্রহকারী সংস্থাকে চোখ সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর মৃতদেহ কাছের যেকোন সরকারী মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে পৌঁছে দিতে হবে মৃতের নিকটজনকে।

এতো গেল মরণোত্তর দেহদান ও প্রত্যঙ্গদান নিয়ে উৎসাহের কথা। কিন্তু বেশ কিছু অসুবিধেও আছে। মৃতদেহ অ্যানাটমি বিভাগে দান করতে গেলে তা করতে হবে অফিস টাইমের মধ্যে। আর সরকারি ছুটির দিন মৃতদেহ দান করা যায় না। এর পিছনে যেমন যুক্তিও আছে ঠিক ততটাই সরকারি নিস্পৃহতাও আছে। যুক্তি হল এই যে সেই হারে মৃতদেহ প্রতিটা হাসপাতালে দান হয় না। কিন্তু মাসে গোনাগুনতি মাসে গড়ে ১০ থেকে ১৫ কিছু দানের জন্য প্রতিটা হাসপাতালে মৃতদেহ গ্রহনের জন্য অ্যানাটমি বিভাগ খোলা রাখতে হবে, সেই অনুসারে লোক নিযুক্ত রাখতে হবে। তার খরচ বিশাল। এই অসুবিধে দূর করার জন্য আমাদের প্রস্তাব আছে এই রকম অফিস সময়ের পর কিংবা ছুটির দিন যদি কোন মৃতদেহ দান করতে কেউ চায় তবে সেই মৃতদেহ হাসপাতালের সাধারণ মর্গে রাখা হোক এবং তারপরের দিন সেই মৃতদেহ অ্যানাটমি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হোক। এই ব্যবস্থা বর্তমানে একমাত্র এস এস কে এম হাসপাতালে এই ব্যবস্থা আছে। যদিও চোখ দান বা প্রত্যঙ্গদানে এই সমস্যা নেই। অনান্য মেডিকাল কলেজেও এই ব্যবস্থা করার প্রয়াস চলছে।

এবার আসি ডেথ সার্টিফিকেটের কথায়। প্রথমেই বলি আমরা অনেকেই যাকে ডেথ সার্টিফিকেট বলি সেটা আসলে ডেথ সার্টিফিকেট নয়, তা হল ডেথ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট। আসলে আমাদের ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করে যেটি দেন সেটি হল ডেথ সার্টিফিকেট। আর এই সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে কর্পোরেশন বা মিউনিসিপালিটি কিংবা পঞ্চায়েত যে সার্টিফিকেট দেয় তা হল ডেথ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট। এই ডেথ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটই আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনী সহয়তার কাজে লাগে। মৃতদেহ দাহ বা কবর দিলে অনেকক্ষেত্রেই শ্মশান বা কবরস্থান থেকে সরাসরি ডেথ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। অন্যথায় শ্মশান বা কবরস্থান থেকে একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তা দিয়ে কর্পোরেশন বা মিউনিসিপালিটি কিংবা পঞ্চায়েত থেকে ডেথ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। মৃতদেহ দানের ক্ষেত্রেও মেডিকাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগ থেকে একটি সার্টিফিকেট দেওয়া হয় তা দিয়ে মৃত যে কর্পোরেশন বা মিউনিসিপালিটি কিংবা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সেই কর্পোরেশন বা মিউনিসিপালিটি কিংবা পঞ্চায়েত থেকে ডেথ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে।

আর কিছু বলার নেই। এখানেই শেষ। প্রশ্ন থাকলে করতেই পারেন।

এরপর বিস্তারিতভাবে জেলাভিত্তিক চক্ষু সংগ্রাহক কেন্দ্রে কথা জানাবো।

বিভিন্ন চক্ষু সংগ্রাহক কেন্দ্রের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়ার আগে বিভিন্ন সংগঠনকে জানাই আপনারা এই বিষয়ে আলোচনা সভা করুন।

প্রথমেই জানাই আপনি যদি মরণোত্তর দেহদান ও প্রত্যঙ্গদানের জন্য অঙ্গীকার করতে চান তবে যোগাযোগ করতে পারেন।

গণদর্পণ
৪, ডি এল খান রোড, কর্পোরেশন ব্লিডিং, কলকাতা – ৭০০ ০২৫
দূরভাষ – (০৩৩) ২৪৫৪ ০৮৯১ / ২৪১৯ ১১৬৫

এইখানে জানিয়ে রাখি গণদর্পণ কোন চক্ষু বা মৃতদেহ সংগ্রহ করে না। একমাত্র প্রত্যঙ্গদানের ক্ষেত্রে সহয়তা করে।

নাস্তিক্য ডট কম সম্পাদকের সংযুক্তিঃ

বাংলাদেশে যারা মরণোত্তর দেহদানে আগ্রহীঃ
জনবিজ্ঞান ফাউন্ডেশন
১০৮ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ
বাংলামটর, ঢাকা
ফোন: ০১৫৫২৩৫৮০১৮
ইমেইল:
[email protected]
[email protected]

LIST of Eye Banks in West Bengal

Kolkata
1) RIO Calcutta Medical College & Hospital Eye Bank.
9433085756 / 9007064831 / 033-22123767 / 033-22413853

2) Atul Ballav Eye Bank
N R S Medical College & Hospital
128, A J C Bose Road, Kolkata – 700 014
9433079384

24 Paraganas North
1) Susrut Eye Foundation & Research Centre
HB-36A/1 Salt Lake, Kolkata – 700 091
(033)- 23341648/1632/6123 & (033) 23580201

2)Netrolok Eye Collection Centre
Thuba, Taki, Pin – 743 429
9434872686 / 9474987431

3) Basirhat Chowrasta Sevayan
Sir R N Mukherjee Road, Chowrasata
Basirhat, Pin 743 411
0321- 7201119 / 9433215636

4) Prova Eye Bank
C/O Disha Eye Hospital & Research Centre
88, Ghosh Para Road, Barrackpore, Pin – 700 120
9830262392 / 9830323021 / 9830323014

5) Rotary Narayan Netralay
CN-5, Sector – V, Salt Lake, Kolkata – 700 091
(033) 23673312 / 30115106

6) International Eye Bank
AD-202, Salt Lake, Kolkata – 700 064
(033) 23585758 / 9830334868

Howrah

1) Ramrajatolla Nabin Sangha
31, Ramcharan Seth Road, Ramrajatolla, Pin – 711104
(033) 9433857835 / 9088849670

2) Apex Club of Bally Eye Bank Donation Centre
406 (Old 93) G T Road, Bally, Howrah Pin – 711 201
2654 5857 / 65090748 / 9830703857 / 9088849670
3) Disha Eye Hospital (Howrah)
Mourigram, Vill & P.O Duilia, P.S – Sankrail. Howrah, Pin – 711 302
(033) 2644 1158

Bardhaman
Durgapur Blind Relief Society
C/o: SDO Office
City centre, Pin – 713 216
(0343) 2572698 / 9732066165

2) Punardristee Eye Foundation Centre
ADDA, Indl. Plot (Konnyapur Electric, Sub-station)
Lower Kumarpur, Assansol, Pin – 713 304
(0341) 2252233 / 2255280 / 9434238144

Murshidabad

1) Murshidabad Eye Care & Donation Society
39/1, Radhaballav Para Lane,
Khagra, Saidabad, Pin – 742 103
(03482) 268104 / 9474322922

2) Disha Eye Hospital (Laldighi)
Berhampore, 69/A/3+4+5, R. N Tagore Road.
Laldighi Plaza, Laldighi, Berhampore. Pin- 742101
(033) 66360000 / FAX 034822555899

24 Paragans (South)

1) Command Hospital Eye Bank
Alipore, Kolkata – 700 027
(033) 2222 6389 / 2222 6317 / 9432225852

2) Sanakar Netralaya
147, Mukundapur, E M Bypass, Kolkata
(033) 41013000 / 9831256896

3) Vivekananda Eye Hospital
Bishnupur, Amtala
7365047790

Birbhum

1) Savior Holistic International Trust
Vivekananda Netralay Rabindrabithi,
Bypass Road, Bolpur, Birbhum.
8001008833 / 9609601969

Nadia

1) Netrajyoti Eye Hospital
118/1, Mission Road, Ranaghat, Nadia,
(03473) 215315 / 215415 / 9475342968 / 9434206067

2) Suvendu Memorial Seva Pratisthan
P.O & Vill : Gobrapota. Nadia
(03472) 220253 / 220106

Purba Medinipur

1) Vivekananda Mission Ashram Netra Niramoy Niketan
Viveknagar, P.O – Chaitanyapur (Haldia)
(03224) 286221

Jalpaiguri

1) Alipurduar Lions Eye Hospital
Chowpathi. P.O – Alipurduar Dist- Jalpaiguri Pin – 736 121
(03224) 255938

Darjeeling

1) Siliguri Lions Eye Bank
Hillcart Road, P.O – Shiliguri, Dist – Darjeeling
2511004 / 2519793

Shiliguri

1) North Bengal Eye Centre
Udham Sing Sarani, Ashrampara. Shiliguri – 734401
(0353) 2004452 / 2004453 / 2640402 / 2642838

2) Shiliguri Greater Lions Eye Hospital
2nd Mile, (Behind Vishal Cinema)
Sevoke Road. Shiliguri – 734001
9733300993 / 9733344451

Dakshin Dinajpur

1) Prayash Atreyee Eye Donation Centre
Raghunathpur, P. O – B. T Park, P. S – Balurghat, Dist – Dakshin Dinajpur
9434166404 / 9734194246

Uttar Dinajpur

1) Uttar Dinajpur Eye Bank & Blind Welfare Society
P.O & P.S – Raiganj, Dist – Uttar Dinajpur
9434207118

Hooghly

1) Bandhu Cornea

Uttarpara

2) Srerampore Seva Kendra O Chakshu Bank
51, Thakurdas Babu Lane, Srerampore, Hooghly Pin – 712 201
9051189361v / 9433073507

3) Bhadreswar Netradan Wallfare Foundation
148/1, Rishi Bankim Avenue, Bhadreswar, Hooghly – 712124
(033) 26332027 / 9830121714

4) Khanyan Dr, B. R. Ambedkar Seba Samity
Vill & P. O – Khanyan, P.S – Pandua
Dist – Hooghly, Pin – 712 517
9903716501

5) M. P. Birla Eye Bank
12, U N Bramhachari Street, (Maruti Bulding, 8th floor) Dist – Hooghly,
Pin – 700017
22817780 / 7781

6) Doyen Dishani
37, Hanseswari Road, Banshberia, Hooghly, Pin – (033) 26344555 / 26527555 / 9433084563 / 9433052503

লেখকঃ শ্যামল চ্যাটার্জ্জী 

One thought on “মৃত্যুই শেষ কথা নয়

  • April 19, 2020 at 4:42 PM
    Permalink

    Just feel to add with your Nice Article

    What is organ donation?
    Organ donation is the harvesting of an individual’s organs after he or she dies for the purpose of transplanting them into another person. The person who gives the organs is called a donor while a person who receives the organ is called a recipient.

    Who can be donor?
    All of us can be organ donors, irrespective of age, caste, religion, community, current or past medical condition. Children can also be organ donors after taking consent for organ donation from their parents.

    However active cancer, active HIV, active infection (for example, sepsis) or Intravenous (IV) drug use are some of the contra-indications. Patients who have Hepatitis C may still donate organs to a patient who also has Hepatitis C. The same is true for Hepatitis B — but this happens in very rare cases. Most cancer patients may donate corneas.

    Which organs and tissues can be donated?
    Vital Organs like heart, liver, kidneys, intestines, lungs, and pancreas can be donated only in case of ‘brain death’. However other tissues like corneas, heart valves, skin, bones etc can be donated only in case of natural death.

    How does Organ Donation help patients with organ failure?
    For organ recipients, a transplant often means a second chance at life. Vital organs such as the heart, pancreas, liver, kidneys and lungs can be transplanted to those whose organs are failing. It allows many recipients to return to a normal lifestyle. For others, a cornea or tissue transplant means the ability to see again or the recovery of mobility and freedom from pain.

    What is the importance of a donor registry?
    A registry is an essential part of understanding who and where potential donors are. A registry gives a planner enough information to devise strategies to get more public cooperation and commitment towards organ donation. Having a registry in place allows doctors and transplant coordinators to check if a brain dead person wished to donate and then approaching the family for consent becomes easier. It helps in saving crucial time in the process of organ donation. At present, we do not have a central registry in India. Through this initiative we intend to make the government of India create one.

    How does organ donation help families of deceased donors to cope with their loss?
    The act of organ donation has the ability to comfort grieving families. It is always difficult to lose a loved one. Many grieving families of organ donors draw comfort from the fact that their loss may help to save or improve the lives of others. Studies carried out to understand how a family’s wounds heal have shown that the support from family members helps a person to overcome grief. The support of friends and religious and cultural beliefs also help donor families. Most of the donor families agreed to donate organs because they felt that it was the only positive outcome from their loss.

    Is organ donation legal in India?
    The primary legislation related to organ donation and transplantation in India,Transplantation of Human Organs Act, was passed in 1994 and is aimed at regulation of removal, storage and transplantation of human organs for therapeutic purposes and for prevention of commercial dealings in human organs.

    When can you donate organs?
    Organ and Tissue Donation after Cardiac Death. Typically when a person suffers a cardiac death, the heart stops beating. The vital organs quickly become unusable for transplantation. But their tissues – such as bone, skin, heart valves and corneas – can be donated within the first 24 hours of death.

    What is an organ donation?
    Organ donation takes healthy organs and tissues from one person for transplantation into another. Experts say that the organs from one donor can save or help as many as 50 people. Organs you can donate include. Internal organs: Kidneys, heart, liver, pancreas, intestines, lungs, Skin.

    How many organs can be donated while alive?
    Living donors potentially can donate:

    One of two kidneys. A kidney is the most frequently donated organ from a living donor.
    One of two lobes of their liver.
    A lung or part of a lung, part of the pancreas, or part of the intestines.
    Can you choose which organ to donate?
    Total body donation generally is not an option if you choose to be an organ and tissue donor. However eye donors still may be accepted. There are also a few medical schools and research organizations that may accept an organ donor for research.

    Why Donate?
    Each year, thousands of people die while waiting for a transplant, because no suitable donor can be found for them. The need for organ donors has never been greater.

    Did you know In India every year nearly:
    500,000 people die because of non-availability of organs.
    200,000 people die of liver disease.
    50,000 people die from heart disease.
    150,000 people await a kidney transplant but only 5,000 get one.
    1,000,000 lakh people suffer from corneal blindness and await transplant.
    Nationally, with a population of 1.2 billion people, the statistic stands at 0.08 persons as organ donors per million population (PMP). This is an incredibly small and insignificant number compared to the statistics around the world.

    Countries like the USA, UK, Germany, Nether lands have a ‘family consent’ system for donations where people sign up as donors, and their family’s consent is required. (These countries have seen the donations double Per Million Population averaging between 10-30 PMP). Other countries like Singapore, Belgium, Spain have a more aggressive approach of ‘presumed consent’, which permits organ donation by default unless the donor has explicitly opposed it during his lifetime. These countries have seen the rate of donations double, averaging between 20-40 PMP.

    We understand it is difficult to think about organ donation when you have just lost a loved one; however organ donation is a generous and worthwhile decision that can save many lives. By donating, each person can save the lives of up to 7 individuals by way of organ donation and enhance the lives of over 50 people by way of tissue donation.

    Source: Govt of Assam, India

    https://hfw.assam.gov.in/frontimpotentdata/organ-donation

    Regards

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *