ইসলামমানবাধিকারসম্পাদকীয়

রজম- শরীয়তের অবিচ্ছেদ্য বিধান

ভূমিকা

বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে আমরা প্রায়ই জানতে পারি, আফগানিস্তানে তালেবানরা কিংবা সিরিয়া ইরাকের আইসিস নামক ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো “আল্লাহ হো আকবর” ধ্বনিতে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে রজম বা পাথর ছুড়ে হত্যা করার সেই পুরনো বর্বর আইন আবারো চালু করেছে। এইসব শুনলে আমাদের খুবই খারাপ লাগে। আমরা অনেকেই ভাবি যে, এইসব উগ্রবাদী লোক ধর্মের অপব্যাখ্যা করে এইসব পুরনো বর্বর প্রথা আবার ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। সত্যিকারের ইসলামের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু আসলেই কী এইসব ধর্মের অপব্যাখ্যা? নাকি এসব ইসলাম ধর্মের অলঙ্ঘনীয় বিধান? অনেক মডারেট মুসলিমই বলে থাকেন, এগুলোর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। এগুলো উগ্রবাদীদের তৈরি ভুল ইসলাম। সেইসব কারণে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে দেখা এখন আমাদের জন্য জরুরি। এই বিষয়ে ইসলাম আসলে কী বলে?

ইসলাম কি আসলেই প্রেম ভালবাসা বা ইসলামিক ভাষায় যিনার শাস্তি হিসেবে মাটিতে অর্ধেক পুতে পাথর ছুড়ে হত্যা করাকে সমর্থন করে? দয়াল নবী মুহাম্মদ নিজে কি এই পদ্ধতিতে কখনো মানুষ হত্যা করেছে? তিনি কি এই পদ্ধতিতে মানুষ হত্যাকে সমর্থন করতেন? এই বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের বিধান কী? আসুন তাহলে পুরো বিষয়টি ভালভাবে জেনে নিই।

প্রেম, ভালবাসা হারাম

খুবই অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, ইসলামি শরীয়ার দেশে দুইজন মানুষকে মাটিতে অর্ধেক পুঁতে পাথর ছুড়ে হত্যা করা এবং আল্লাহো আকবর ধ্বনি দেয়ার মত জঘন্য বিষয়টি পরিপূর্ণ ইসলামিক আইন। পৃথিবী যতদিন থাকবে, ইসলাম যতদিন থাকবে, শরীয়া আইনে এভাবেই শাস্তির বিধান প্রয়োগ করতে হবে। একজন প্রকৃত মুসলিম এরকম দৃশ্যে কোন সমস্যাই খুঁজে পাবেন না। কিন্তু দুইজন প্রাপ্তবয়ষ্ক বৈবাহিক সম্পর্ক বহির্ভূত মানুষ প্রকাশ্যে পরস্পরকে ভালবেসে চুমু দিচ্ছে, প্রেম করছে, হাত ধরছে, জড়িয়ে ধরছে, এটি সম্পূর্ণ অনৈসলামিক। এরকম দৃশ্য দেখলেই নাউজুবিল্লাহ পড়ে একজন মুসলিম তাদের শাস্তি দিতে চাইবে। এমন কিন্তু নয়, তারা যৌনকর্ম করে না। তারা সেই দিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে। এমনকি তারা মুতা বিবাহও করে, দাসীদের সাথে যৌনকর্মও হালাল, যুদ্ধবন্দী নারীদের ধর্ষণও হালাল, অথচ ভালবাসা হারাম।!

একজন মুসলিম পুরুষ চারজন স্ত্রী, অগণিত দাসী, এমনকি বাচ্চা মেয়ের সাথেও ইসলামের বিধান মেনে যৌনসঙ্গম করতে পারে। কিন্তু, খুবই স্বাভাবিক মানবিক প্রেম ভালবাসা তাদের কাছে- হারাম হারাম হারাম! এটিই সত্যিকারের ইসলাম। যার প্রমাণ আমরা এই লেখাটিতে দিবো।

হালাল হারাম
একটি কার্টুন যা খুব চমৎকারভাবে ইসলামের একটি রূপ উপস্থাপন করে

দুইজন মানুষের মধ্যে প্রেম বা ভালবাসা হচ্ছে এক ধরণের অদম্য আবেগ। কারো প্রতি ভালোবাসার অতি তীব্র অনুভূতি, বা কোন দৃঢ় আকর্ষণ। তাকে এক নজর দেখার জন্য বুকের ভেতরে হওয়া তোলপাড়। তার জন্য সবকিছু ত্যাগ করতে পারা। এমনকি, জীবন দিয়ে হলেও ভালবাসার মানুষকে রক্ষা করা। আমাদের এই সভ্য জগতে যা আছে, তার মধ্যে সুন্দরতম বিষয় হচ্ছে মানুষে মানুষে প্রেম এবং ভালবাসা। দুইজন ভালবাসার মানুষের চুমু, তাদের একে অন্যকে জড়িয়ে ধরার মত সুন্দর দৃশ্য আর কিছুতে নেই।

কিন্তু ধর্মগুলো শুধুমাত্র বিবাহ ছাড়া সব ধরণের দেখা সাক্ষাত, মেলামেশা, ইত্যাদি হারাম ঘোষনা করেছে। এবং এই ধরণের প্রেম বা ভালবাসার জন্য আব্রাহামিক ধর্মগুলো পাথর ছুড়ে হত্যার বিধান রেখেছে।

কল্পনা করুন তো, রোমিও জুলিয়েট, লাইলি মজনু কিংবা টাইটানিক সিনেমার রোজ আর জ্যাক ইসলামী শরীয়ার দেশে থাকলে, বা নবী মুহাম্মদের সময়ে থাকলে, তাদের সাথে কী করা হতো? টাইটানিক সিনেমার নায়িকা রোজকে সমুদ্রের পানি থেকে তুলে রজমের শাস্তি প্রয়োগ করা হতো না?

ইসলামের ইতিহাসেও কিন্তু এরকম একটি প্রেমের গল্প খুঁজে পাওয়া যায়। যারা আগে পড়েন নি, তারা “একটি প্রেমের গল্প” শিরোনামের এই লেখাটি পড়ে নিন।

রজম কাকে বলে?

রজম (رجم) একটি আরবী শব্দ যার অর্থ প্রস্তরে নিক্ষেপণ। রজম করা অর্থ হচ্ছে, পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা। ইসলামী শরীয়তে বিবাহ বহির্ভূত প্রেম, ভালবাসা, যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিবাহিত অপরাধীকে প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যা করতে হবে এবং অবিবাহিত অপরাধীকে বেত্রাঘাতের পর নির্বাসনে পাঠানো হবে। অপরাধী নারী না পুরুষ, সেটা এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়।

আমরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় পাথর ছুড়ে হত্যা কিংবা রজমের শাস্তির কথা শুনে থাকি, কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমরা অনেকেই কীভাবে এই শরীয়া আইনটি কার্যকর হয় তা জানি না। সরাসরি ছবি এবং ভিডিও দেখলে আমরা বিষয়টি আসলে কতটা বর্বর এবং অমানবিক তা বুঝতে পারি।

রজমের শাস্তি
রজম

এবারে আমরা কিছু ভিডিও দেখে নিই, ভিডিওগুলো ইসলামী শরীয়ার রজমের শাস্তি যে কত ভয়াবহ তা বোঝাবার জন্য দেয়া হচ্ছে। কোমল হৃদয়ের মানুষ অনুগ্রহ করে ভিডিওগুলো দেখবেন না।

Afghan Woman Stoned To Death For Having A Fiancé

রজমের শাস্তির ভিডিও

Germany – Video of men stoned to death
Woman Stoned To Death By Taliban On Video

এবারে একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ দেখে নিই, যেখানে একজন নারীর ওপর রজমের শাস্তি প্রয়োগ করা হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত এবং রজমের শরীয়া আইনের সমালোচনার কারণে ইরানে এই চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। চলচ্চিত্রটির নাম The Stoning of Soraya M. আপনারা ইউটিউবে সার্চ করে পুরো চলচ্চিত্রটি দেখতে পারেন।

The Stoning of Soraya M.
The Stoning of Soraya M.
The Stoning of Soraya চলচ্চিত্র থেকে কিছু দৃশ্য
রজম 5
The Stoning of Soraya চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

কোরআনে রজমের বিধান নেই কেন?

কোরআনে রজমের বিধান না থাকার অসংখ্য ব্যাখ্যা ইসলামের পণ্ডিতগণ দিয়ে থাকেন। এই বিষয়ে সরাসরি হযরত মুহাম্মদের বালিকা বধু আয়িশা এবং হযরত মুহাম্মদের অন্যতম সাহাবী এবং দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমরের সরাসরি বক্তব্য আছে, যা সহিহ হাদিস হিসেবেও প্রমাণিত। আসুন হাদিস দুইটি পড়ি- [1] [2]

সুনানে ইবনে মাজাহ
অধ্যায়ঃ ৯/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ৯/৩৬. বয়স্ক লোকে দুধ পান করলে।
২/১৯৪৪। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে।
মাজাহ ১৯৪৪ সহীহুল বুখারী ১৪৫২, নাসায়ী ৩৩০৭, ২০৬২, মুয়াত্তা মালেক ১২৯৩, দারেমী ২২৫৩, তা’লীক ইবনু মাজাহ।
তাহকীক আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবী মুহাম্মাদ বিন ইসহাক সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও আজালী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি হাসানুল হাদিস। আলী ইবনুল মাদীনী বলেন, তিনি সালিহ। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৫০৫৭, ২৪/৪০৫ নং পৃষ্ঠা)
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)

বয়স্ক লোকে দুধ পান করলে

কোরআনে কেন কোন কোন আয়াত পাওয়া যায় না, কোন কোন আয়াত রহিত বা মানসুখ হয়ে গেছে, সে সম্পর্কে জানতে “কোরআন সংকলন এবং পরিমার্জনের ইতিহাস” শিরোনামের এই লেখাটি পড়তে পারেন। এবারে আসুন উমরের হাদিসটি পড়া যাক [3]

সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ৩০। অপরাধের (নির্ধারিত) শাস্তি
পরিচ্ছদঃ ৪. ব্যভিচারের জন্য বিবাহিতকে রজম করা
৪৩১০-(১৫/১৬৯১) আবূ তাহির ও হারমালাহ্ ইবনু ইয়াহইয়াহ্ (রহঃ) ….. ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “উমর ইবনু খাত্তাব (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বারের উপর বসা অবস্থায় বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন। আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয়ের মধ্যে آيَةُ الرَّجْمِ (ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপের আয়াত) রয়েছে। তা আমরা পাঠ করেছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যভিচারের জন্য রজম করার হুকুম বাস্তবায়ন করেছেন। তার পরবর্তী সময়ে আমরাও (ব্যভিচারের জন্য) রজমের হুকুম বাস্তবায়িত করেছি। আমি ভয় করছি যে, দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর কেউ এ কথা হয়তো বলবে যে, আমরা আল্লাহর কিতাবে (ব্যভিচারের শাস্তি) রজমের নির্দেশ পাই না। তখন আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত এ ফরয কাজটি পরিত্যাগ করে তারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে বিবাহিত নর-নারীর ব্যভিচারের শাস্তি رجم (পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা) এর হুকুম সাব্যস্ত। যখন সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয়, কিংবা গর্ভবতী হয়, অথবা সে নিজে স্বীকার করে।* (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২৭১, ইসলামিক সেন্টার ৪২৭১)
* এ আয়াতটি তিলাওয়াত মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে কিন্তু আয়াতটির হুকুম এখনো বহাল রয়েছে।

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বুখারী ২৪৬২, ৩৪৪৫, ৩৯২৮, ৪০২১, ৬৮৩০, মুসলিম ১৬৯১, তিরমিযী ১৪৩২, আবূ দাঊদ ৪৪১৮, ইবনু মাজাহ ২৫৫৩, আহমাদ ১৫১, ১৫৫, মালেক ১৫৫৮, দারেমী ২৩২২।

সহিহ বুখারী হাদিস নং ৬৮৩০ এর পাদটীকায় এই আয়াতটি সম্পর্কে বলা হয়েছে,

খারেজী এবং কিছু মু‘তাযিলা সম্প্রদায় কোরআনে উল্লেখিত রজমের আয়াতকে অস্বীকার করে, যার তেলাওয়াত মানসুখ হলেও হুকুম অবশিষ্ট আছে।
আয়াতটি হলঃ الشيخ والشيخة إذا زنيا فارجموهما البتة
অথচ আয়াতটি কোরআনের অংশ এবং হুকুমটি অবশিষ্ট আছে এর অনেক প্রমাণ রয়েছে।
(১) আব্দুর রাজ্জাক ও ইমাম ত্ববারী ইবনে আববাসের সূত্রে বর্ণনা করেন: উমর (রাঃ) বলেন: سيجيء قوم يكذبون بالرجم
(২) সুনানে নাসায়ীতে ওবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দিল্লাহ ইবনু উতবার সূত্রে উমর (রাঃ) এর হাদীস :
وأن ناسا يقولون ما بال الرجم وانما في كتاب الله الجلد ألا قد رجم رسول الله সাঃ
(৩) মুয়াত্তা মালেক সা‘য়ীদ বিন মুসায়্যিব এর সূত্রে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস :
إياكم أن تهلكوا عن آية الرجم أن يقول قائل لا أجد حدين في كتاب الله فقد رجم
(৪) বুখারীতে বর্ণিত ৬৮১৯ নং হাদীসে ইয়াহুদী পুরুষ ও একজন মহিলার রজমের ঘটনা। মায়েয বিন মালিকের রজমের ঘটনা, হাদীস নং ৬৮১৪, ৬৮২৪।

এবারে আসুন সহীহুল বুখারী এর একটি পাতা আমরা দেখে নিইঃ [4]

সহীহুল বুখারী এর ষষ্ঠ খণ্ড এর ২০১ নম্বর পাতা

শরীয়ত তথা হাদিসের রেফারেন্স

ইসলামে শরীয়তের উৎস দুইটি, একটি কোরআন আরেকটি হচ্ছে হাদিস। এরপরে ইজমা এবং কিয়াসের দিকে যাওয়ার বিধান। ইসলামের শরীয়তের অন্যতম উৎস হাদিসে রজমের অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যায়, যেখানে নবী নিজেই রজমের শাস্তি প্রদান করতেন।

আল লু’লুওয়াল মারজান
অধায় : হুদুদ
হাদীস নং : ১১০৫
শায়বানী (রহ.) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু আবূ আওফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজম করেছেন কি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, সূরায়ে নূর-এর আগে না পরে? তিনি বললেন, আমি অবগত নই। (বুখারী পর্ব ৮৬ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৬৮১৩; মুসলিম ২৯/৬, হাঃ ১৭০২)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(বুখারী পর্ব ৮৬ অধ্যায় ২১ হাদীস নং ৬৮১৩; মুসলিম ২৯/৬, হাঃ ১৭০২)

উবাদাহ ইবনু ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘তোমরা আমার নিকট হতে আল্লাহর বিধান গ্রহণ কর, কথাটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’বার বললেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, অবিবাহিত নারী-পুরুষকে একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন করতে হবে। আর বিবাহিত নারী-পুরুষকে রজম করতে হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৫৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৭ম খণ্ড, হা/৩৪০২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৫৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত ৭ম খণ্ড, হা/৩৪০২)

গ্রন্থঃ সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ২৯। কাসামাহ্ (খুন অস্বীকার করলে হলফ নেয়া), মুহারিবীন (লড়াই), কিসাস (খুনের বদলা) এবং দিয়াত (খুনের শাস্তি স্বরূপ জরিমানা)
হাদিস নম্বরঃ ৪২৬৭
৬. মুসলিম ব্যক্তির হত্যা কি অবস্থায় বৈধ
৪২৬৭-(২৫/১৬৭৬) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ….. ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন মুসলিমকে হত্যা করা বৈধ নয়, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল। কিন্তু তিনটি কাজের যে কোন একটি করলে (তা বৈধ)।
১. বিবাহিত ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হলে; ২. জীবনের বিনিময়ে জীবন, অর্থাৎ কাউকে হত্যা করলে; ৩. এবং স্বীয় ধর্ম পরিত্যাগকারী, যে (মুসলিমদের) দল থেকে বিচ্ছিন্ন (মুরতাদ) হয়ে যায়। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪২২৮, ইসলামিক সেন্টার ৪২২৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহিহ মুসলিম ৪২৬৭

নিচের হাদিসটি অন্যতম প্রাচীন হাদিস গ্রন্থ মুয়াত্তা মালিক এর। হাদিসটি মন দিয়ে পড়ুন। ইসলামের নবী রজমের শাস্তি কীভাবে প্রয়োগ করতেন, তার ভয়াবহ উদাহরণ এই হাদিসটি। শেষের লাইনে দেখা যাচ্ছে, প্রেমিক লোকটি নিজে পাথরের আঘাতে জর্জরিত হয়েও তার প্রেমিকাকে রক্ষা করার খানিকটা চেষ্টা চালিয়েছিল। একে ভালবাসা বলে, প্রেম বলে। নিজের জীবন তুচ্ছ করেও ভালবাসার মানুষকে রক্ষা করার এই কামনা নবী বোঝে নি, আল্লাহও বোঝে নি। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল রজমের শাস্তি দেয়া। দুইজন ভালবাসার মানুষের ভালবাসা নয়।

আপনি কী বলতে পারেন, জীবনের শেষ মূহুর্তে, যখন কোন মানুষকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, সেই সময়েও ভালবাসার মানুষকে রক্ষা করার এই আপ্রাণ চেষ্টাকে কী বলে?

গ্রন্থের নামঃ মুয়াত্তা মালিক
অধ্যায়ঃ ৪১. হুদুদের অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ১. প্রস্তরাঘাত করা
রেওয়ায়ত ১. আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রাঃ) বলেন, ইহুদীদের একদল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট আসিয়া বলিল, তাহাদের একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোক ব্যভিচারে লিপ্ত হইয়াছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাহাদেরকে জিজ্ঞাসা করিলেন : রজম বা প্রস্তরাঘাতের ব্যাপারে তাওরাতে কি আদেশ রহিয়াছে? তাহারা বলিলঃ আমরা ব্যভিচারকারীকে লজ্জিত করি এবং বেত্ৰাঘাত করিয়া থাকি। আবদুল্লাহ ইবন সালাম বলিলেন, তোমরা মিথ্যা বলিতেছ। তাওরাতে প্রস্তরাঘাতের শাস্তি রহিয়াছে। তাওরাত আনয়ন কর, উহা পড়িয়া দেখ। অতঃপর তাহারা তাওরাত খুলিল এক ব্যক্তি বেত্রাঘাতের উপর হাত রাখিয়া পূর্বাপর অবশিষ্ট আয়াত পড়িয়া শুনাইল। আবদুল্লাহ ইবন সালাম তাহাকে বলিলঃ তোমার হাত উঠাও তো। সে তাহার হাত উঠাইলে দেখা গেল উহাতে প্রস্তরাঘাতের আয়াত রহিয়াছে। অতঃপর সকল ইহুদীই স্বীকার করিল যে, আবদুল্লাহ ইবন সালাম ঠিকই বলিয়াছে তাওরাতে প্রস্তাঘাতের আয়াত বিদ্যমান রহিয়াছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়কে প্রস্তরাঘাতের আদেশ করিলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশে উভয়কে প্রস্তরাঘাত করা হইল। আবদুল্লাহ্ ইবন উমর (রাঃ) বলেনঃ আমি দেখিলাম, পুরুষটি ঐ নারীকে আঘাত হইতে রক্ষা করিতে তাহার উপর ঝুঁকিয়া পড়িতেছিল।
মালিক (রহঃ) বলেনঃ উহার উপর ঝুঁকিয়া পড়িতেছিল অর্থ পুরুষ নিজে প্রস্তরাঘাত সহ্য করিয়াও ঐ নারীকে প্রস্তরাঘাত হইতে রক্ষা করিতে যাইয়া তাহার উপর উপুড় হইয়া পড়িয়ছিল।
হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)

একইরকম আরেকটি হাদিস পাওয়া যায়

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ২৩১৩. বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে তাওরাত আন এবং পাঠ কর (সূরাহ আলে-‘ইমরান ৩ঃ ৯৩)
৪২০০। ইবরাহীম ইবনু মুনযির … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে এমন দু’জন পুরুষ ও মহিলা নিয়ে ইহুদীগণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিত হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, তোমাদের ব্যভিচারীদেরকে তোমরা কিভাবে শাস্তি দাও? তারা বলল, আমরা তাদের চেহারা কালিমালিপ্ত করি এবং তাদের প্রহার করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তাওরাতে প্রস্তর নিক্ষেপের বিধান পাও না? তারা বলল, আমরা তাতে এতদ সম্পর্কিত কোন কিছু পাই না। তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাত আন এবং তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে তা পাঠ কর।
এরপর তাওরাত পাঠের সময় তাদের পন্ডিত-পাঠক প্রস্তর নিক্ষেপ বিধির আয়াতের উপর স্বীয় হস্ত রেখে তা থেকে কেবল পূর্ব ও পরের অংশ পড়তে লাগল। রজমের আয়াত পড়ছিল না। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) তার হাতটি তুলে ফেলে বললেন, এটা কি? যখন তারা পরিস্থিতি বেগতিক দেখল তখন বলল, এটি রজমের আয়াত। অনন্তর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। এবং মসজিদের পার্শ্বে জানাযাগাহের নিকটে উভয়কে ‘রজম’ করা হল। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি সেই পুরুষটিকে দেখেছি যে নিজে মহিলার উপর উপুড় হয়ে তাকে প্রস্তরাঘাত হতে বাচানোর চেষ্টা করছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)

নিচের হাদিসটি থেকে জানা যায়, নবি মুহাম্মদ, তারপরে আবু বকর, এবং উমরও রজমের শাস্তি দিতেন। হযরত উমর এমন আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছিলেন যে, মুসলিমরা হয়তো ভবিষ্যতে রজমের শাস্তি ভুলে গিয়ে তা অস্বীকার করে বসবে।

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ১৭/ দন্ডবিধি
পরিচ্ছেদঃ ‘রজম’-এর প্রমাণ।
১৪৩৭। আহমাদ ইবনু মানী (রহঃ) … উমার ইবনু খাত্তব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘রজম’-এর বিধান দিয়েছেন, আবূ বাকরও ‘রজম’-এর বিধান দিয়েছেন আর আমিও ‘রজম’-এর বিধান দিয়েছি। আল্লাহর কিতাবে অতিরিক্তকরণ যদি আমি হারাম মনে না করতাম তবে অবশ্যই আমি এই বিধানটি আল্লাহর কিতাবে লিখে দিতাম। কারণ আমি আশংকা করি (ভবিষ্যতে) একদল লোক হয়ত এমন আসবে তারা যখন ‘‘রজম’’-এর বিধান আল্লাহর কিতাবে পাবে না তখন তা অস্বীকার করে বসবে।
সহীহ, তা’লীক আলা ইবনু মাজাহ, ইরওয়া ৮/৫০৪, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৪৩১ (আল মাদানী প্রকাশনী)
এই বিষয়ে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি হাসান-সহীহ। একাধিক সূত্রে এটি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সূত্রে বর্ণিত আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)

হাদিসটি পড়ুন। প্রেমিক পুরুষটি তার প্রেমিকাকে শরীর দিয়ে রক্ষা করার একটি শেষ চেষ্টা করেছিল।

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৭৫/ কাফের ও ধর্মত্যাগী বিদ্রোহীদের বিবরণ
পরিচ্ছেদঃ ২৮৪৩. সমতল স্থানে রজম করা
৬৩৬২। মুহাম্মদ ইবনু উসমান (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক ইহুদী পুরুষ ও এক ইহুদী নারীকে হাযির করা হল। তারা উভয়েই যিনা করেছে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যাপারে তোমরা তোমাদের কিতাবে কি পাচ্ছ? তারা বলল, আমাদের পদ্রীরা চেহারা কালো করার ও উভয়কে গাধার পিঠে বিপরীতমুখী বসিয়ে প্রদক্ষিণ করানোর প্রথা চালু করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদেরকে তাওরাত নিয়ে আসতে বলুন। এরপর তা নিয়ে আসা হল।
তাদের একজন রজমের আয়াতের উপর নিজের হাত রেখে দিল এবং এর অগ্র-পাশ্চাৎ পড়তে লাগল। তখন ইবনু সালাম (রাঃ) তাকে বললেন, তোমার হাত উঠও। (হাত উঠাতে দেখা গেল) তার হাতের নিচে রয়েছে রজমের আয়াত। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়ের সম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন, উভয়কে রজম করা হল। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, তাদের উভয়কে সমতল স্থানে রজম করা হয়েছে। তখন ইহুদী পুরুষটাকে দেখেছি ইহুদী নারীটির উপর উপুড় হয়ে পড়ে আছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১৭ঃ দণ্ডবিধি
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৫৫৯-(৫) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন কতিপয় ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জানালো যে, তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী যিনা করেছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘রজমের’ ব্যাপারে তোমরা তাওরাতে কি জেনেছ? তারা বলল, আমরা দোষীকে অপমান করি এবং চাবুক মারা হয়। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে অবশ্যই ‘রজমের’ দণ্ড রয়েছে, তা নিয়ে আসো! অবশেষে তারা তা এনে খুলল ঠিকই কিন্তু তাদের একজন ‘রজমের’ আয়াতের উপর স্বীয় হাত দিয়ে ঢেকে রেখে দিল এবং তারপর এর আগের ও পরের আয়াত পড়ল।
তখন ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমার হাত উঠাও! সে হাত উঠাল। তখন দেখা গেল, সেখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। ইয়াহূদীরা বলল, হে মুহাম্মাদ! সে সত্য বলেছে। এখানে রজমের আয়াত বিদ্যমান আছে। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দুজনকে রজম করে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাদের উভয়কে ‘‘রজম’’ করা হলো। অন্য রিওয়ায়াতে আছে, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালাম বললেন, তোমার হাত উঠাও! সে হাত উঠাল। তখন সেখানে স্পষ্টভাবে রজমের আয়াত বিদ্যমান দেখা গেল। (আয়াত গোপনকারী) সেই লোকটি বলল, হে মুহাম্মাদ! সত্যিই তাওরাতে রজমের আয়াত বিদ্যমান আছে; কিন্তু আমরা নিজেদের মাঝে তা গোপন রাখতাম। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয়কে রজম করার নির্দেশ দিলেন। তখন তাদের উভয়কে রজম করা হলো। (বুখারী ও মুসলিম)(1)
(1) সহীহ : বুখারী ৬৮৪১, মুসলিম ১৬৯৯, আবূ দাঊদ ৪৪৪৯, আহমাদ ৪৪৯৮।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)

নবী মুহাম্মদ যে অনেকবারই রজমের শাস্তি প্রয়োগ করেছেন, তার আরো অনেকগুলো সহিহ হাদিসের বর্ণনা রয়েছে।

সহিহ বুখারী
হাদিস নম্বর ২৭২৪
আবূ হুরায়রা ও যায়দ ইব্‌নু খালিদ জুহানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেন, এক বেদুঈন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনাকে আল্লাহ্‌র শপথ দিয়ে বলছি, আমার ব্যাপারে আল্লাহ্‌র কিতাব মত ফয়সালা করুন।’ তখন তার প্রতিপক্ষ, যে তার তুলনায় বেশি জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন সে বলল, ‘হ্যাঁ, আপনি আমাদের মধ্যে আল্লাহ্‌র কিতাব মত ফয়সালা করুন এবং আমাকে বলার অনুমতি দিন।’ আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘বল’। সে বলল, আমার ছেলে এর নিকট মজুর ছিলো। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে যিনা করেছে। আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, আমার ছেলের প্রাপ্য দণ্ড হল রজম। তখন আমি তাকে (ছেলেকে) একশ’ বকরী এবং একটি বাঁদীর বিনিময়ে তার নিকট হতে ছাড়িয়ে এনেছি। পরে আমি আলিমদের জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা আমাকে জানালেন যে, আমার ছেলের দণ্ড হল একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন। আর এই লোকের স্ত্রীর দণ্ড হল রজম। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম, অবশ্যই আমি তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্‌র কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করব। বাঁদী এবং একশ’ বকরী তোমাকে ফেরত দেয়া হবে। আর তোমার ছেলের শাস্তি একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের নির্বাসন। হে উনায়স! আগামীকাল সকালে এ লোকের স্ত্রীর নিকট যাবে। যদি সে স্বীকার করে তাহলে তাকে রজম করবে। রাবী বলেন, উনায়স (রাঃ) পরদিন সকালে সে স্ত্রীলোকের নিকট গেলেন। সে অপরাধ স্বীকার করল। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশে তাকে রজম করা হল।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী ২৭২৪, ২৭২৫

সহিহ বুখারী ৫২৭১
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট এল, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। লোকটি তাঁকে ডেকে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! হতভাগা ব্যভিচার করেছে। সে এ কথা দিয়ে নিজেকে বোঝাতে চাইল। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তিনি যেদিকে ফিরলেন সে সেদিকে গিয়ে আবার বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! হতভাগা ব্যভিচার করেছে। তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর সেও সে দিকে গেল যে দিকে তিনি মুখ ফিরালেন এবং আবার সে কথা বলল। তিনি চতুর্থবার মুখ ফিরিয়ে নিলে সেও সেদিকে গেল। যখন সে নিজের ব্যাপারে চারবার সাক্ষী দিল, তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে বললেনঃ তুমি কি পাগল হয়েছ? সে বলল, না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে নিয়ে যাও এবং রজম কর। লোকটি ছিল বিবাহিত। (৬৮১৫, ৬৮২৫, ৭১৬৭; মুসলিম ২৯/৫, হাঃ ১৬৯১, আহমাদ ১৪৪৬৯) আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী ৫২৭০, ৫২৭১, ৫২৭২

সহিহ বুখারী ৫২৭২
যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
যুহরী (রহঃ) বলেন, জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে যিনি শুনেছেন, তিনি আমাকে বলেছেন, রজমকারীদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। আমরা মাদীনাহ্‌র মুসল্লায় (অর্থাৎ ঈদগাহে) তাকে রজম করলাম। পাথর যখন তাকে অতিষ্ঠ করে তুলল, সে তখন পালিয়ে গেল। হাররায় আমরা তাকে পাকড়াও করলাম এবং রজম করলাম। অবশেষে সে মৃত্যু বরণ করলো। (৫২৭০; মুসলিম ২৯/৫, হাঃ ১৬৬১, আহমাদ ১৪৪৬৯) আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮০)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ বুখারী ৫২৭০, ৫২৭১, ৫২৭২

বুরায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা মায়েয ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন, ‘আক্ষেপ তোমার প্রতি, চলে যাও, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা কর’। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন এবং সামান্য একটু দূরে গিয়েই পুনরায় ফিরে আসলেন এবং আবারও বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবারও তাঁকে পূর্বের ন্যায় বললেন। এইভাবে তিনি যখন চতুর্থবার এসে বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা! আমি তোমাকে কোন্ জিনিস হতে পবিত্র করব? তিনি বললেন, যিনা হতে। তাঁর কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ছাহাবাদেরকে) জিজ্ঞেস করলেন, ‘লোকটি কি পাগল’? লোকেরা বলল, না তো? তিনি পাগল নন। তিনি আবার বললেন, ‘লোকটি কি মদ পান করেছে’? তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তাঁর মুখ শুঁকে দেখেন; কিন্তু মদের কোন গন্ধ তাঁর মুখ হতে পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সত্যই যিনা করেছ’? তিনি বললেন, জি হ্যাঁ। এরপর তিনি রজমের নির্দেশ দিলেন, তখন তাঁকে রজম করা হল। এই ঘটনার দুই/তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ছাহাবাদের সম্মুখে) এসে বললেন, তোমরা মায়েয ইবনে মালেকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। কেননা সে এমন তওবাই করেছে, যদি তা সমস্ত উম্মতের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়, তবে তা সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।
অতঃপর আয্দ বংশের গামেদী গোত্রীয় একটি মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন, তোমার প্রতি আক্ষেপ! চলে যাও, আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার কর এবং তওবা কর। তখন মহিলাটি বলল, আপনি মায়েয ইবনে মালেককে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমাকেও কি সেভাবে ফিরিয়ে দিতে চান? দেখুন, আমার এই গর্ভ যিনার! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি (সত্যই গর্ভবতী)? মহিলাটি বলল, জি হ্যাঁ।
অতঃপর তিনি বললেন, যাও, তোমার পেটের বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আনছারী এক লোক মহিলাটির সন্তান প্রসব হওয়ার সময় পর্যন্ত তাকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। সন্তান প্রসব হওয়ার পর ঐ লোকটি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে এসে বলল, হুযুর! গামেদী মহিলাটির গর্ভ খালাছ হয়ে গিয়েছে। এবার তিনি বললেন, এই শিশু বাচ্চাটিকে রেখে আমরা মহিলাটিকে রজম করতে পারব না। এমতাবস্থায় যে, তাকে দুধ পান করাবার মত কেউই নেই। এমন সময় আর একজন আনছারী দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমিই তার দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাকে রজম করলেন ।

অন্য এক রেওয়ায়াতে আছে, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মহিলাটিকে বললেন, ‘তুমি চলে যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর’। অতঃপর সন্তান প্রসবের পর যখন আসল, তখন বললেন, আবারও চলে যাও এবং তাকে দুধ পান করাও এবং দুধ ছাড়ান পর্যন্ত অপেক্ষা কর। পরে যখন বাচ্চাটির দুধ খাওয়া বন্ধ হয়, তখন মহিলাটি বাচ্চার হাতে এক খণ্ড রুটির টুকরা দিয়ে তাকে সঙ্গে করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হল। এইবার মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর নবী! এই দেখুন (বাচ্চাটির) দুধ ছাড়ান হয়েছে, এমনকি সে নিজের হাতের খানাও খেতে পারে। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বাচ্চাটিকে একজন মুসলমানের হাতে তুলে দিলেন। পরে মহিলাটির জন্য গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। অতএব তার জন্য বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করা হল। তৎপর লোকদেরকে নির্দেশ করলেন, তারা মহিলাটিকে রজম করল। খালেদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তার মাথায় একখণ্ড পাথর নিক্ষেপ করতেই রক্ত ছিটে এসে তাঁর মুখমণ্ডলের উপর পড়ল। তাই তিনি মহিলাটিকে ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করে গাল-মন্দ করলেন। (এটা শুনে) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, হে খালেদ, থাম! সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! মহিলাটি এমন (খালেছ) তওবা করেছে, যদি কোন বড় যালেমও এই ধরনের তওবা করে, তারও মাগফেরাত হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ার আদেশ করলেন। অতঃপর তার জানাযা পড়লেন এবং তাকে দাফনও করা হল’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৬২)।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
(মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৬২)

এই হাদিসটি আরেকটি রেওয়ায়েতে আছে। কী পরিমাণ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলে এবং এই রকম বর্বরতাকে কতোটা গ্লোরিফাই করা হলে একজন নারী নিজে এসে নিজেকে পাথর মেরে হত্যা করতে বলে ভাবতে পারেন?

অথবা হতে পারে এই রকম বর্বরতা যে মানুষ নিজের ক্ষেত্রেও সমর্থন করে, তা প্রমাণ করতেই এই হাদিসটির অবতারণ করা হয়েছে।

বুলুগুল মারাম
১০ দণ্ড বিধি
পরিচ্ছেদ ০৮.
সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত গর্ভবতীর ‘রজম’ (পাথর নিক্ষেপ করা) বিলম্বিত করা
১২১২। ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
জুহাইনাহ গোত্রের কোন এক স্ত্রীলোক যিনার দ্বারা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে হাজির হয়ে বললঃ হে আল্লাহর নাবী! আমি হদ্দের উপযুক্ত হয়েছি, আপনি আমার উপর যিনার হদ্দ ক্বায়িম করুন (প্রস্তরাঘাতে হত্যা করে আমার প্রায়শ্চিত্ত বা তাওবার ব্যবস্থা করুন)। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ওয়ালীকে (অভিভাবককে) ডাকালেন ও বললেন, তার সাথে ভাল ব্যবহার কর, সন্তান প্রসব করলে আমার নিকট তাকে নিয়ে এসো।
অভিভাবক তাই করলো (সন্তান প্রসব করার পর তাকে নাবীর দরবারে নিয়ে এলো); রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পরনের কাপড় শক্ত করে বেঁধে দিতে আদেশ করলেন, তারপর তার আদেশক্রমে তাকে রজম করা হলো। তারপর তার জানাযা নামায পড়ালেন। উমার (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর নাবী! সে ব্যভিচার করেছে তবু আপনি তার জানাযা নামায পড়লেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বলেনঃ সে তো এমন তাওবাহ করেছে যে, যদি তা মাদীনাসীর ৭০ জনের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয় তবে তাদের জন্য তার এ তাওবাহ যথেষ্ট হয়ে যাবে। (হে উমার!) তুমি কি এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কোন ব্যক্তি পেয়েছ? যে স্বয়ং আল্লাহর জন্য প্রাণ বিসর্জন করেছে।
সহীহ মুসলিম (১৩১৯)
(১৩১৯) মুসলিম ১৬৯৬, তিরমিযী ১৪৩৫, নাসায়ী ১৯৯৭, আবূ দাঊদ ৪৪৪০, ইবনু মাজাহ ২৫৫৫, আহমাদ ১৯৩৬০, ১৯৪০২, দারেমী ২৩২৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহীহ মুসলিম (১৩১৯) (১৩১৯) মুসলিম ১৬৯৬, তিরমিযী ১৪৩৫, নাসায়ী ১৯৯৭, আবূ দাঊদ ৪৪৪০, ইবনু মাজাহ ২৫৫৫, আহমাদ ১৯৩৬০, ১৯৪০২, দারেমী ২৩২৫।

সরাসরি বই থেকেও দেখি, [5]

রজমের বিধান
রজমের শাস্তি

যারা রজমের শাস্তি পরিত্যাগ করে তারা কাফের

প্রশ্ন হচ্ছে, যারা আল্লাহ প্রদত্ত এই বিধানগুলোকে সংস্কারের কথা বলে, সেইগুলো বদলে ভিন্ন কোন ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলে, তারা কী ইসলাম অনুসারে এসব বলে? আল্লাহ প্রদত্ত বিধানের এই ধরণের পরিবর্তন, পরিমার্জন বা সংস্কারকে ইসলামি পরিভাষায় কী বলে? নিচের হাদিসটি পড়ুন, এখানে বলা হচ্ছে, মানুষ আল্লাহর বিধান পরিবর্তন করে ফেলেছিল, যেই কারণে নবী মুহাম্মদ এসে সেই বিধানকে আবার ফিরিয়ে এনেছে। মানে হচ্ছে, নবী মুহাম্মদের আগমনই ঘটেছিল মানুষ আল্লাহর বিধানে যে সকল বিকৃতি সাধন করেছিল, সেগুলো ছুড়ে ফেলে আবার সেই পুরনো আল্লাহর বিধানে মানুষকে ফিরিয়ে নিতে।

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি
পরিচ্ছেদঃ ২৬. দু’ ইয়াহুদীকে রজম করার ঘটনা
৪৪৪৮। আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, বেত্রাঘাতকৃত জনৈক ইয়াহুদীর মুখমন্ডল কালিমালিপ্ত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি তাদের ডেকে প্রশ্ন করলেনঃ তোমরা কি যেনাকারীর এরূপ শাস্তির হুকুম পেয়েছ? তারা বললো, হ্যাঁ। অতএব তিনি তাদের একজন আলিমকে ডেকে বললেনঃ তোমাকে সেই আল্লাহর কসম করে বলছি যিনি মূসা (আঃ)-এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করেছেন! তোমাদের কিতাবে যেনাকারীদের এরূপ শাস্তির কথা উল্লেখ পেয়েছে কি? সে বললো, হে আল্লাহ! না। আপনি যদি এ বিষয়ে আমাকে আল্লাহর কসম না দিতেন, তাহলে আমি অবশ্যই আপনাকে বলতাম না।
আমরা আমাদের কিতাবে যেনাকারীর শাস্তি রজমের উল্লেখ পেয়েছি। কিন্তু আমাদের অভিজাত সমাজে যেনার বিস্তার ঘটলে আমরা কোনো মর্যাদাসম্পন্ন লোককে এ অপরাধে ধরতে পারলেও ছেড়ে দিতাম; তবে দুর্বলদের কাউকে পেলে তার উপর শাস্তি বাস্তবায়িত করতাম। অতঃপর আমরা সকলকে আহবান করে বললাম, চলুন, আমরা যেনার শাস্তির ব্যাপারে সকলে ঐকমত্যে পৌঁছে এমন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই, যাতে সকল শ্রেণীর লোকদের উপর তা বাস্তবায়িত করা যায়। অতঃপর আমরা এর শাস্তিস্বরূপ মুখমন্ডল কালিমালিপ্ত করে অপমান করা এবং বেত্রাঘাত করাতে একমত হই এবং ‘রজম’ পরিত্যাগ করি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি যে তোমার নির্দেশকে পুনর্জীবন দান করেছি, তারা একে প্রাণহীন করার পর। অতঃপর তাঁর নির্দেশে অপরাধীকে রজম করা হয়। অতঃপর মহান আল্লাহ ইয়াহুদীদের সম্পর্কে এ আয়াতগুলো নাযিল করেনঃ ‘‘হে রাসূল! তোমাকে যেন দুঃখ না দেয় যারা কুফরীর দিকে দ্রুত ধাবিত হয় … তারা বলে, তোমাদেরকে এরূপ বিধান দেয়া হলে তোমরা তা গ্রহণ করো অন্যথায় তোমরা বর্জন করো … আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই কাফির (ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে) … আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারাই যালিম (ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে) … আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিধান দেয় না তারা পাপাচারী’’ (সূরা আল-মায়িদাহঃ ৪১-৪৭)। তিনি বলেন, এ আয়াতগুলো কাফির অবাধ্যদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।(1)
সহীহ।
(1). এর পূর্বেরটি দেখুন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ বারা’আ ইবনু আযিব (রাঃ)

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
পরিচ্ছদঃ ২৩. রজম সম্পর্কে
৪৪১৮। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তার ভাষণে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তাঁর উপর কিতাব নাযিল করেছেন। আর তিনি তাঁর উপর যা নাযিল করেছেন, রজম সংক্রান্ত আয়াত তার অন্তর্ভুক্ত। আমরা তা পাঠ করেছি এবং সংরক্ষণ করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম করেছেন আর আমরাও তাঁর পরে রজম করেছি। তবে আমার আশঙ্কা হচ্ছে, কাল প্রবাহের দীর্ঘতায় কেউ হয় তো বলবে, আমরা তো আল্লাহর নাযিলকৃত তিাবে রজমের আয়াত পাইনি।
ফলে তারা আল্লাহর নাযিলকৃত একটা ফরজ পরিত্যাগ করে পথভ্রষ্ট হবে।
জেনে রাখো বিবাহিত নারী-পুরুষ ব্যভিচারের অপরাধে দায়ী প্রমাণিত হলে অথবা অন্তঃসত্তা হলে অথবা স্বীকারোক্তি করলে তাদেরকে রজম করা অবধারিত। আল্লাহর কসম! লোকেরা যদি একথা না বলতো যে, উমার আল্লাহর কিতাবে কিছু বর্ধিত করেছেন। তাহলে আমি অবশ্যই এ আয়াত লিখে দিতাম।(1)
সহীহ।
(1). বুখারী, মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এমনকি বিনা প্রমাণে রজম করতেও ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন নবী মুহাম্মাদ।

সহিহ বুখারী
পরিচ্ছেদঃ ৬৮/৩১. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি আমি যদি সুস্পষ্ট প্রমাণ ব্যতীত রজম করতাম।
৫৩১০. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে লি‘আন করার ব্যাপারটি আলোচিত হল। ‘আসিম ইবনু আদী (রাঃ) এ ব্যাপারে একটি কথা জিজ্ঞেস করে চলে গেলেন। এরপর তাঁর গোত্রের এক ব্যক্তি তার কাছে এসে অভিযোগ করল যে, সে তার স্ত্রীর সাথে অন্য এক লোককে পেয়েছে। ‘আসিম (রাঃ) বললেনঃ অযথা জিজ্ঞাসার কারণেই আমি এ ধরনের বিপদে পড়তাম। এরপর তিনি লোকটিকে নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলেন এবং অভিযোগকারীর ব্যাপারটি তাঁকে জানালেন। লোকটি ছিল হলদে শীর্ণকায় ও সোজা চুল বিশিষ্ট। আর ঐ লোকটি যাকে তার স্ত্রীর কাছে পেয়েছে বলে সে অভিযুক্ত করে সে ছিল প্রায় কালো, স্থুল দেহের অধিকারী।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আল্লাহ! সমস্যাটি সমাধান করে দিন। এরপর মহিলা ঐ লোকটির আকৃতি বিশিষ্ট সন্তান জন্ম দিল, যাকে তার স্বামী তার কাছে পেয়েছে বলে উল্লেখ করেছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের স্বামী-স্ত্রী উভয়কে লি‘আন করালেন। একব্যক্তি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে সে মজলিসেই জিজ্ঞেস করলঃ এ মহিলা সম্বন্ধেই কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন? ‘‘আমি যদি কাউকে বিনা প্রমাণে রজম করতাম, তবে একেই রজম করতাম।’’ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ না, সে ছিলএক মহিলা, যে মুসলিম সমাজে প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত থাকত। আবু সলিহ ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফের বর্ণনায় آدَمَ خَدِلاً শব্দ এসেছে। (৫৩১৬, ৬৮৫৫, ৬৮৫৬, ৭২৩৮; মুসলিম ১৯/হাঃ ১৪৯৭, আহমাদ ৩৩৬০) (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ
সহিহ বুখারী ৫৩১০ (৫৩১৬, ৬৮৫৫, ৬৮৫৬, ৭২৩৮; মুসলিম ১৯/হাঃ ১৪৯৭, আহমাদ ৩৩৬০) (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮১৪)

মুসনাদে আহমদ থেকে আরো দুইটি হাদিস পড়ে নিই( প্রথমটি দীর্ঘ হাদিস হওয়ায় অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়া হচ্ছে), [6] [7]

মুসনাদে আহমাদ
মুসনাদে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) [উমারের বর্ণিত হাদীস]
পরিচ্ছেদঃ
৩৯১।
কিছুক্ষণ পরেই উমার (রাঃ) আবির্ভূত হলেন। আমি তাকে দেখেই বললাম, আজ সন্ধ্যায় উনি এমন এক ভাষণ দেবেন, যা তার আগে আর কেউ দেয়নি। এরপর উমার (রাঃ) মিম্বারে বসলেন। মুয়াযযিনের আযান দেয়া শেষ হলে উমার দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। তারপর বললেনঃ হে জনতা, আমি আজ এমন একটা কথা বলতে যাচ্ছি, যা নেহাৎ ভাগ্যক্রমেই আমি বলার সুযোগ পাচ্ছি। জানিনা, হয়তো আমার আয়ুষ্কালের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েই এটা বলতে পারছি। যারা আমার এ বক্তব্যকে মনে রাখবে ও বুঝবে, তারা যেন তাদের যাত্রার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত গিয়েও তা প্রচার করে। আর যে মনে রাখতে পারবে না ও বুঝবে না সে আমার নামে মিথ্যা প্রচার করুক -এটা আমি অনুমোদন করি না।
নিশ্চয় আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন এবং তার ওপর কিতাব নাযিল করেছেন। তার ওপর যা কিছু নাযিল করেছেন, রজম সংক্রান্ত আয়াতও তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা তা পড়েছি ও বুঝেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও রজম করেছেন, তার পরে আমরাও করেছি। আমার আশঙ্কা হয় যে, দীর্ঘকাল অতিবাহিত হবার পর এক সময় লোকেরা বলতে পারে, আল্লাহর কিতাবে আমরা রজম সংক্রান্ত আয়াত পাইনা। এভাবে আল্লাহর নাযিল করা একটা ফারয বর্জন করে তারা বিপথগামী হয়ে যাবে। বস্তুতঃ বিবাহিত নারী ও পুরুষ ব্যভিচার করলে তার ওপর রজম চালু করা আল্লাহর কিতাবের আওতাভুক্ত একটা অকাট্য সত্য বিধি, যখন তার ওপর সাক্ষ্য, স্বীকারোক্তি বা গর্ভধারণ পাওয়া যাবে।

[বুখারী, মুসলিম, ইবনু হিব্বান, মুসনাদে আহমাদ-১৫৪, ১৫৬, ২৪৯]
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

মুসনাদে আহমাদ
মুসনাদে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) (উমারের বর্ণিত হাদীস)
পরিচ্ছেদঃ
৩৫২। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) বলেন, উমার (রাঃ) একবার হজ্জ করলেন। ঐ সময় তিনি জন সমক্ষে একটা ভাষণ দিতে চাইলেন। আবদুর রহমান ইবনে আওফ বললেন, আপনার নিকট উচ্ছৃংখল জনতা উপস্থিত। এমতাবস্থায় আপনার ভাষণ দান মদীনায় আসা পর্যন্ত স্থগিত রাখুন। পরে তিনি যখন মদীনায় পৌছলেন, আমি তার নিকট মিম্বারের কাছেই উপস্থিত হলাম। শুনলাম, তিনি বলছেনঃ অনেকেই বলে থাকে, রজম আবার কী? আল্লাহর কিতাবে তো ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে কেবল বেত্ৰাঘাতেরই উল্লেখ রয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজম (পাথর মেরে হত্যা) করেছেন এবং তার পরে আমরাও রজম করেছি। এমন আশঙ্কা যদি না থাকতো যে, মানুষ অভিযোগ তুলবে যে, উমার আল্লাহর কিতাবে এমন জিনিস সংযোজন করেছে, যা তাতে নেই, তাহলে আমি রজম সংক্রান্ত আয়াতটি যেভাবে নাযিল হয়েছে সেভাবে কুরআনে সংযোজন করতাম। (৩৯১ নং হাদীস দ্রষ্টব্য)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

উপসংহার

উপরের আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, ভয়াবহ অমানবিক এবং অসভ্য বর্বর এই রজমের হুকুম সম্পর্কিত আয়াতটি বর্তমানের কোরআনে না পাওয়া গেলেও তা অতীতে কোন এক সময়ে ছিল এবং পরবর্তীতে আয়াতটি হারিয়ে যায় কিংবা রহিত হয়ে যায়। কিন্তু রজমের শাস্তির বিধান এখনো ইসলামে আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা ইসলামে বলবৎ থাকবে। যেহেতু ওয়াহী আসা বন্ধ হয়ে গেছে, তাই নবী মুহাম্মদের পরে কোন মানুষের পক্ষে ইসলামি শরীয়তের সামান্যতম হেরফের, সংশোধন, পরিমার্জন, সংস্কার করা সম্ভব নয়।

আপনারা যারা শরীয়া আইনের পক্ষে লড়াই করেন, জিহাদ করেন, তারা একটু ভেবে দেখবেন কি, এই ধরণের আইন এই সভ্য সমাজে প্রয়োগ শুরু হলে সেটি আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে? আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী এই ধরণের বর্বর, অমাননিক এবং অসভ্য আইন চাই?


আরও পড়ুন

তথ্যসূত্র

  1. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বরঃ ১৯৪৪ []
  2. সুনানু ইবনে মাজাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৬ []
  3. সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী), হাদিস নম্বরঃ ৪৩১০ []
  4. সহীহুল বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০১ []
  5. সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ২২৮, ২২৯ []
  6. মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বরঃ ৩৯১ []
  7. মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বরঃ ৩৫২ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

5 thoughts on “রজম- শরীয়তের অবিচ্ছেদ্য বিধান

  • সত্যম সুন্দর প্রতিবাদী

    আপনি আইনটিকে বর্বর বলেছেন কিন্তু আপনি কিছু ভুল ব্যাখ্যা ও দিয়েছে। ইসলামে কোথাও শুধুমাত্র প্রেম ভালোবাসার জন্য রজমের শাস্তি প্রোগ করার কথা নেই। বলা হয়েছে অবৌধ জিনা ব্যভিচার এর ক্ষেত্র।

    কিন্তু এটা কি আসলেই বর্বর নাকি সভ্যতার নামে ধর্ষন, পরিচয়হীন শিশু জন্ম এসব বর্বরতা। আজ তথাকথিত সভ্যতার দেশে কেন ধর্ষিতার হাহাকার আর পরিচয়হীন অনাথ শিশুর পদচারণ। এটাকে কি বলবেন বর্বতা নাকি সভ্যতা????

    কয়টা ধর্সিতার বিচার হয়??? কয়টা অনাথ শিশু বাবা মার পরিচয় পায়??? জবাব দিন??

    প্রেম ভালবাসা শ্বাশতপবিত্র কিন্তু এই পবিত্রতার ভিতর আপনি যৌনতা ঢোকবেন সেটা কিভাবে সভ্যতার নিদর্শনহয়?? পবিত্রতার ভিতর অপবিত্রতা কি আপনার তথাকথিত সভ্যতা। যে সভ্যতা ধর্ষিনেরবিচার করতে পারে না। ধিক সে সভ্যতা!

    Reply
    • কি বললেন।ভালবাসার দৃশ্য সুন্দর।

      এটা যখন সামি স্ত্রির বিষয় থাকে তখন সুন্দর থাকে।যখন অবৈধ হয় তখন তা নোংরামি।

      কিছু ভিডিওতে দেখা যায় পুরুষরা মেয়েদের এমন এমন ইসথানে হাত দিচ্ছে,একজন নারী কিভাবে এগুলো করে?কলপনায়ই আসে না।আর পর্নোগ্রাফি বাদই দিলাম।
      এসব বিষয়ে আপনার এত আগ্রহ থাকলে আপনার মেয়ের বা বোনের সাথে আমাকে এসবের সুযোগ করে দিন।
      আমি সুদর্শন এবং অর্থ আছে।

      Reply
  • জানোয়ারের বাচ্চা তর মনে হয় জম্মের ঠিক নাই এখানে বলতাছে, যিনা ধর্ষণের কথা তুই নটির পোলা প্রেম ভালোবাসা পাইলি কোথায়

    Reply
  • Bazlul Munir

    উমাইয়া ও আব্বাসীয় খিলাফতের সময় লক্ষাধিক জাল হাদিস তৈরী করানো হয়। যার অধিকাংশই সরাসরি কোরআনের বিপরীত।
    কোনআনে আল্লাহপাক স্পষ্ট ঘোষনা করেছেন যে, বিধার দেবার একমাত্র মালিক আল্লাহ। তাই কোরআনের বিপরীত যা কিছু সব বাতিল।
    কোনআনে আল্লাহপাক এটাও ঘোষনা করেছেন যে, কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহর হাতে। সুতরাং একজন মুসলিম কখনোই বিশ্বাস করতে পারেনা যে কোরআনের আয়াত ছাগলে খেয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে আমরা বিকৃত কোরআন পড়ছি।
    সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি সুরা নূর আয়াত ২ এর বিধান unconditionally বিবাহিত / অবিবাহিত নারী/পুরুষ সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য। রজম তাওরাতের বিধান, কোরআনের নয়। এতদসংক্রান্ত সকল হাদিস মিথ্যা ও জাল বিবেচনায় পরিত্যাজ্য।
    আমরা আরো বিশ্বাস করি কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াত মোতাবেক মুরতাদ অর্থাৎ ইসলাম পরিত্যাগকারীর শাস্তি আল্লাহ দেবেন ও সেটা পরকালে। তাই ইহকালে মুরতাদকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া সংক্রান্ত সব হাদিস মিথ্যা ও জাল বিবেচনায় পরিত্যাজ্য।
    হাদিস কখনো কোরআনকে overrule করতে পারেনা। এসব ধর্মব্যবসায়ীদের প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছুই নয়।

    Reply
  • জানোয়ারের বাচ্চা তর মনে হয় জম্মের ঠিক নাই এখানে বলতাছে, যিনা ধর্ষণের কথা তুই নটির পোলা প্রেম ভালোবাসা পাইলি কোথায়

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *