হিন্দু ধর্ম ও গোমাংসরহস্য: বেদ

Print Friendly, PDF & Email

ভূমিকা

‘গোমাংস’ শব্দটি শুনলেই আজকাল অধিকাংশ হিন্দুরা আঁতকে ওঠেন। গোমাংস তাদের কাছে নিষিদ্ধ এক বস্তু। তাই গোমাংস খাওয়ার অপরাধে ভারতে হয়ে চলেছে হত্যা, নির্যাতন। গরু নিয়ে ভারতের রাজনীতি এখন সরগরম। গো রক্ষার জন্যে গঠিত হয়েছে নানান দল। ভাগ্যচক্রে পশু গরু এখন হয়ে উঠেছেন গোমাতা!

কিন্তু ইতিহাস বলে হিন্দুরা আগে গোমাংস খেত। তাহলে কেন তারা গোমাংস খাওয়া বন্ধ করলো? কিভাবে হিন্দুদের গোমাংসের জোগান দেওয়া আদিম গরু আজকের গোমাতা হয়ে উঠলো?

এ সবই বিস্ময়কর রহস্যে আবৃত। সেই রহস্য ভেদ করা দুরূহ, দুঃসাধ্য। তবুও সেই রহস্যের যবনিকা সরানোর অদম্য ইচ্ছাতেই এই লেখাটি লিখছি।

বৈদিক আর্যরা মাংস খেত এবং তাদের দেবতাদের উদ্দেশ্যেও তা উৎসর্গ করতো। ঋগবেদে অশ্ব পাক করার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে –

  • “হে অশ্ব! অগ্নিতে পাক করার সময় তোমার গা দিয়ে যে রস বেরোয় এবং যে অংশ শূলে আবদ্ধ থাকে, তা যেন মাটিতে না পড়ে ও ঘাসের সঙ্গে মিশে না যায়। দেবতারা লালায়িত হয়েছেন, তাদের দেওয়া হউক।“ ১/১৬২/১১
  • “যে কাষ্ঠদণ্ড মাংসপাক পরীক্ষার্থে আণ্ডে দেওয়া হয়, যে সকল পাত্রে ঝোল রক্ষিত হয়, যে সকল আচ্ছাদন দ্বারা উষ্ণতা রক্ষিত হয়…এরা সকলেই অশ্বের মাংস প্রস্তুত করছে।“ ১/১৬২/১৩   
  • “ যারা চারদিক থেকে অশ্বের মাংস রান্না দেখছে, যারা বলছে যে গন্ধ মনোহর হচ্ছে- এখন নামাও, যারা মাংস পাবার জন্য অপেক্ষা করছে তাদের সঙ্গে আমাদের সংকল্প এক হউক” ১/১৬২/২

ঋগ্বেদে মহিষ হত্যা ও রান্না করার উল্লেখও বারংবার পাওয়া যায়। প্রধান দেবতা ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে বধ করবার জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত হয়ে আছেন। বৃত্রকে হত্যাকারী ইন্দ্রের সেই কীর্তি বারবার বেদে ও পরবর্তী ধর্মগ্রন্থসমূহে উক্ত হয়েছে। ঋগবেদ ৫/২৯/৮ অনুসারে ইন্দ্র বৃত্রকে বধ করবার সময় সোমরসের সাথে মহিষের মাংস খেয়েছিলেন-

“হে ইন্দ্র! যখন তুমি মহিষের মাংস ভক্ষণ করেছিলে , যখন ঐশ্বর্য সম্পন্ন তিনপাত্র সোমরস তুমি পান করেছিলে, তখন তিনি বৃত্র সংহার করেছিলেন, তখন সমস্ত দেবতা সোমপানকারী ইন্দ্রকে ভৃত্যবৎ যুদ্ধস্থলে আহ্বান করেছিলেন।“

 ঋগবেদ ৬/১৭/১১ এ দেবতা পূষা ও বিষ্ণুকে ইন্দ্রের জন্য শত মহিষ পাক করতে বলা হয়েছে-

“হে ইন্দ্র! অখিল মরুৎগণ সম্প্রীতিভাজন হইয়া তোমাকে স্তোত্র দ্বারা বর্ধিত করে , তোমার জন্য পূষা ও বিষ্ণু শত মহিষ পাক করুন এবং মদকর শত্রুনাশক সোম পূর্ণ তিনটি নদী প্রবাহিত হউক।”  

ঋগবেদ ৫/২৯/৭ এ উল্লেখ আছে অগ্নি ইন্দ্রের জন্য তিনশত মহিষ পাক করেছিলেন-

“ইন্দ্রের মিত্রভূত অগ্নি স্বীয় মিত্র ইন্দ্রের কার্যে সহায়তা করিবার জন্য সত্বর তিনশত মহিষ পাক করিলেন; এবং ইন্দ্র বৃত্র বধের জন্য মনুপ্রদত্ত সোমরস এককালে পান করিলেন।“

অন্যান্য পশুর পাশাপাশি গোহত্যা ও গোভক্ষণও বৈদিক যুগে বহুল প্রচলিত ছিল।যদিও বৈদিক মানুষদের কাছে গরু নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী বলে বিবেচিত হত। গরু অর্থে ‘গো’ শব্দটি ঋগ্বেদের পারিবারিক মণ্ডলে ১৭৬ বার (1) এসেছে এবং গবাদি পশু সম্পর্কিত শব্দসমূহ মোটামুটি ৭০০ বার (2) এসেছে। বৈদিক যুগে একজন ধনী লোককে গোমত বলা হত।(3) গোত্রের প্রধানকে বলা হত গোপ বা গোপতি । গরুর জন্য অনেক যুদ্ধও সংঘটিত হত। তাই গভিষ্টি(4), গব্যু(5) , গবেষণ(6) এর মত যুদ্ধবাচক শব্দগুলো গবাদি পশু হতে এসেছে। কন্যাকে বলা হত দুহিতা ( যে দুধ দোয়ায়) । এমনকি অনেক দেবতাদের উৎপত্তিও গরু থেকে দেখানো হয়েছে, তাদের গোজাত(7) বলা হত।

ঋগ্বেদে গরু

এত গুরুত্ব থাকার পরেও বৈদিক আর্যরা  গোহত্যা করতো। বৈদিক দেবতাদের ছিল গোমাংসের প্রতি বিশেষ লোভ।

বৈদিক দেবতা ইন্দ্র গরু খেতে বেশ ভালোবাসতেন। ঋক মন্ত্রে বারবার ইন্দ্রকে গরু ভক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

 ঋগবেদ ১০/৮৬/১৩  এ বলা হয়েছে-

वृषा॑कपायि॒ रेव॑ति॒ सुपु॑त्र॒ आदु॒ सुस्नु॑षे ।

घस॑त्त॒ इन्द्र॑ उ॒क्षणः॑ प्रि॒यं का॑चित्क॒रं ह॒विर्विश्व॑स्मा॒दिन्द्र॒ उत्त॑रः ॥ १०.०८६.१३

 “হে বৃষাকপিবনিতে! তুমি ধনশালিনী ও উৎকৃষ্ট পুত্রযুক্তা এবং আমার সুন্দরী পুত্রবধূ। তোমার বৃষদিগকে ইন্দ্র ভক্ষণ করুন , তোমার অতি চমৎকার, অতি সুখকর হোমদ্রব্য তিনি ভক্ষণ করুন। ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ।”  (8)

ঋগবেদ ১০/২৭/২ এ বলা হয়েছে- 

यदीद॒हं यु॒धये॑ सं॒नया॒न्यदे॑वयून्त॒न्वा॒३॒॑ शूशु॑जानान् ।

अ॒मा ते॒ तुम्रं॑ वृष॒भं प॑चानि ती॒व्रं सु॒तं प॑ञ्चद॒शं नि षि॑ञ्चम् ॥ १०.०२७.०२

“( ঋষি বলিতেছেন) – যে সকল ব্যক্তি দৈব কর্মের অনুষ্ঠান না করে এবং কেবল তাহাঁদিগের নিজের উদর পূরণ করিয়া স্ফীত হইয়া ওঠে , আমি যখন তাহাঁদিগের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে যাই, তখন, হে ইন্দ্র! তোমার নিমিত্ত পুরোহিতদিগের সহিত একত্র স্থূলকায় বৃষকে পাক করি এবং পঞ্চদশ তিথির প্রত্যেক তিথিতে সোমরস প্রস্তুত করিয়া থাকি।” (9)

ঋগবেদ ১০/২৮/৩ এ ঋষি বলছেন-

अद्रि॑णा ते म॒न्दिन॑ इन्द्र॒ तूया॑न्सु॒न्वन्ति॒ सोमा॒न्पिब॑सि॒ त्वमे॑षाम् ।
पच॑न्ति ते वृष॒भाँ अत्सि॒ तेषां॑ पृ॒क्षेण॒ यन्म॑घवन्हू॒यमा॑नः ॥ १०.०२८.०३

” হে ইন্দ্র! যখন অন্ন কামনাতে তোমার উদ্দেশ্যে হোম করা হয় , তখন তাহারা শীঘ্র শীঘ্র প্রস্তরফলক সহযোগে মাদকতাশক্তিযুক্ত সোমরস প্রস্তুত করে, তুমি তাহা পান কর। তাহারা বৃষভ সমূহ পাক করে , তুমি তাহা ভোজন কর।” (10)

ইন্দ্র নিজেও তার জন্য পনের অথবা বিশটি বৃষ পাক করে দেওয়ার জন্য বলেছেন। এইসব বৃষ খেয়ে ইন্দ্র তার শরীরকে স্থূল করতে চান, উদরকে পূর্ণ করতে চান-

उ॒क्ष्णो हि मे॒ पञ्च॑दश सा॒कं पच॑न्ति विंश॒तिम् ।

उ॒ताहम॑द्मि॒ पीव॒ इदु॒भा कु॒क्षी पृ॑णन्ति मे॒ विश्व॑स्मा॒दिन्द्र॒ उत्त॑रः ॥ १०.०८६.१४

 “আমার জন্য পঞ্চদশ এমন কি বিংশ বৃষ পাক করিয়া দেয়। আমি খাইয়া শরীরের স্থূলতা সম্পাদন করি, আমার উদরের দু’পার্শ্ব পূর্ণ হয়, ইন্দ্র সকলের শ্রেষ্ঠ। ১০/৮৬/১৪ (11)

ঋগবেদ ৬/৩৯/১ এ ঋষি গোপ্রমুখ অন্নের জন্য প্রার্থনা করেছেন-
मन्द्रस्य कवेर्दिव्यस्य वह्नेर्विप्रमन्मनो वचनस्य मध्वः | 
अपा नस्तस्य सचनस्य देवेषो युवस्व गर्णते गोग्राः ||

“ হে ইন্দ্র! তুমি আমাদিগের সেই সোমরস পান কর। ইহা মদকর, বিক্রান্ত, স্বর্গীয়, প্রাজ্ঞসম্মত, ফলোপধায়ক, সুপ্রসিদ্ধ ও সেবনীয়। হে দেব, তুমি আমাদিগকে গো প্রমুখ অন্ন দান কর।“ ৬/৩৯/১ (*)

অগ্নির উদ্দেশ্যে ঋগ্বেদ ৬/১৬/৪৭ এ বলা হয়েছে-          

आ ते॑ अग्न ऋ॒चा ह॒विर्हृ॒दा त॒ष्टं भ॑रामसि ।

ते ते॑ भवन्तू॒क्षण॑ ऋष॒भासो॑ व॒शा उ॒त ॥ ६.०१६.४७

 “হে অগ্নি! আমরা তোমাকে হৃদয় দ্বারা সংস্কৃত ঋক রূপ হব্য প্রদান করিতেছি। বলশালী বৃষভ ও ধেনুগণ তোমার নিকট পূর্বোক্ত রূপ হব্য হউক।”  (12)

১০ মণ্ডলে অগ্নিতে ঘোড়া, বৃষ, মেষকে আহুতি দিতে দেখা যায় –

यस्मि॒न्नश्वा॑स ऋष॒भास॑ उ॒क्षणो॑ व॒शा मे॒षा अ॑वसृ॒ष्टास॒ आहु॑ताः ।

की॒ला॒ल॒पे सोम॑पृष्ठाय वे॒धसे॑ हृ॒दा म॒तिं ज॑नये॒ चारु॑म॒ग्नये॑ ॥ १०.०९१.१४

 “যে অগ্নির উপরও বিস্তর ঘোটক, বলবান বৃষ, পুরুষত্ব বিহীন মেষ আহুতি রূপে অর্পণ করা হইয়াছে  , যিনি জলের পালন কর্তা , যাহার পৃষ্ঠে সোমরস, যিনি যজ্ঞের অনুষ্ঠাতা , সেই অগ্নির উদ্দেশ্যে মনে মনে চিন্তা করিয়া এই সুন্দর স্তব রচনা করিয়াছি।” ১০/৯১/১৪ (#)  

৮ম মণ্ডলে  অগ্নিকে গোখাদক বলা হয়েছে-

उ॒क्षान्ना॑य व॒शान्ना॑य॒ सोम॑पृष्ठाय वे॒धसे॑ ।

स्तोमै॑र्विधेमा॒ग्नये॑ ॥ ८.०४३.११

“ Let us serve Agni with our hymns, Disposer, fed on ox and cow,
Who bears the Soma on his back.” ( Rigveda 8/43/11 ; Translated by Grifiith)

ঋগবেদের বিবাহ সুক্তে দেখা যায়, বিবাহের সময় বৃষ হত্যা করা হত-

सू॒र्याया॑ वह॒तुः प्रागा॑त्सवि॒ता यम॒वासृ॑जत् ।

अ॒घासु॑ हन्यन्ते॒ गावोऽर्जु॑न्योः॒ पर्यु॑ह्यते ॥ १०.०८५.१३

The bridal pomp of Sūrya, which Savitar started, moved along.In Magha days are oxen slain, in Arjuris they wed the bride. (10/85/13 ; Translated by Griffith)

রমেশচন্দ্র দত্ত অবশ্য এর অন্যরকম অনুবাদ করেছেন-

“পতিগৃহে গমনকালে সূৰ্য্য সূর্য্যাকে যে উপঢৌকন দিয়াছিলেন, তাহা অগ্রে অগ্রে চলিল। মঘা নক্ষত্রের উদয় এই উপঢৌকনের, অঙ্গভুত গাভীদিগকে তাড়াইয়া লইয়া যায়, অর্জনী, অর্থাৎ ফাল্গুণী নামক দুই নক্ষত্রের উদয় কালে সেই উপঢৌকন বহিয়া লইয়া যায়।“

ঋগবেদ ১০/৭৯/৬ এ গরুকে খণ্ড খণ্ড করে কাটার কথা বলা আছে-

किं देवेषु तयज एनश्चकर्थाग्ने पर्छामि नु तवामविद्वान | 
अक्रीळन करीळन हरिरत्तवे.अदन वि पर्वशश्चकर्त गामिवासिः || 

“ হে অগ্নি! তুমি কি দেবতাদের মধ্যে কোন অপরাধ পাইয়া ক্রোধ ধারণ করিয়াছ? আমি জানি না, এজন্য তোমাকে একথা জিজ্ঞাসা করিতেছি? যেমন খড়্গ দ্বারা কোন গাভীকে খণ্ড খণ্ড করে ছেদন করে সেরূপ তুমি ক্রীড়া কর আর না কর , তুমি উজ্জ্বল হইয়া তোমার আহারীয়দ্রব্য ভোজনকালে পর্বে পর্বে কর্তন কর।“ (@)

মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় মৃতকে গোচর্ম দ্বারা ঢেকে দেওয়া হত-

अ॒ग्नेर्वर्म॒ परि॒ गोभि॑र्व्ययस्व॒ सं प्रोर्णु॑ष्व॒ पीव॑सा॒ मेद॑सा च ।

नेत्त्वा॑ धृ॒ष्णुर्हर॑सा॒ जर्हृ॑षाणो द॒धृग्वि॑ध॒क्ष्यन्प॑र्य॒ङ्खया॑ते ॥ १०.०१६.०७

“ হে মৃত! তুমি গোচর্মের সাথে অগ্নি শিখা স্বরূপ কবচ ধারণ কর, তোমার প্রচুর মেদের দ্বারা তুমি আচ্ছাদিত হও, তা হলে  এ যে দুর্ধর্ষ অগ্নি, যিনি বলপূর্বক ও অহংকারের সাথে তোমাকে দগ্ধ করতে উদ্যত হয়েছেন, তিনি একেবারে তোমার সর্বাংশে ব্যপ্ত হতে পারবেন না।“ ১০/১৬/৭  ($)

গোহত্যা এত বিপুল পরিমাণে হত যে গোহত্যার জন্য নির্দিষ্ট স্থান ছিল। তাই ঋগ্বেদ ১০/৮৯/১৪ এ বলা হয়েছে-

कर्हि॑ स्वि॒त्सा त॑ इन्द्र चे॒त्यास॑द॒घस्य॒ यद्भि॒नदो॒ रक्ष॒ एष॑त् ।

मि॒त्र॒क्रुवो॒ यच्छस॑ने॒ न गावः॑ पृथि॒व्या आ॒पृग॑मु॒या शय॑न्ते ॥ १०.०८९.१४

” হে ইন্দ্র! যে অস্ত্র ক্ষেপন করিয়া পাপাত্মা রাক্ষসকে বিদীর্ণ করিলে , তোমার সেই নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্র কোথায় রহিল? যেরূপ গোহত্যাস্থানে গাভীগণ হত হয় , তদ্রুপ তোমার ওই অস্ত্র দ্বারা নিহত হইয়া বন্ধুদ্বেষী রাক্ষসগণ পৃথিবীতে পতিত হইয়া শয়ণ করে।” (13)

যজুর্বেদে গরু

কৃষ্ণ যজুর্বেদের কয়েকস্থানে সরাসরি গরু বলির কথা বলা আছে-

“On the full moon (the Soma) is pressed for the gods; during this half-month it is pressed forth for them, and a cow for Mitra and Varuna is to be slaughtered for them at the new moon. In that (4) he sacrifices on the day before, he makes the sacrificial enclosure. In that he drives away the calves, he metes out the seat and the oblation holder. In that he sacrifices, he produces with the gods the pressing day. He drinks for the half-month Soma in carouse with the gods. In that he sacrifices at the new moon with clotted curds for Mitra and Varuna, the cow which is slaughtered for the gods becomes his also.” (Krishna yajurveda, taittiriya samhita,  2/5/5 Translated by Keith )

 এবং –

“At the time of the (offering of the) cow, he should offer on one potsherd to Mitra and Varuna, this (offering) corresponds to his foe’s cow which is to be slaughtered; his (offering) is on one potsherd, for he cannot obtain the animal (offering) by means of (many) potsherds.” ( Krishna yajur veda, taittiriya samhita, 2/2/9 , Translated by Keith)

যজুর্বেদ এর এক স্থান হতে পরোক্ষ ভাবে গরু বলির কথা জানা যায়-

“সৃষ্টির পূর্বে প্রজাপতি একাই ছিলেন, তিনি কামনা করলেন প্রজা ও পশু সৃষ্টি করব। তিনি শরীর থেকে বপা উদ্ধৃত করে অগ্নিতে নিক্ষেপ করলেন, তা থেকে শৃঙ্গরহিত অজ উৎপন্ন হল।তাকে তার অনুরূপ দেবতাকে অর্পণ করে তিনি প্রজা ও পশু লাভ করেন। যে ব্যক্তি প্রজা ও পশু কামনা করবে সে প্রজাপতির উদ্দেশ্যে শৃঙ্গরহিত অজ অর্পণ করবে। প্রজাপতিকে তার ভাগ দিয়ে সেবা করলে প্রজাপতি প্রজা ও পশু উৎপন্ন করে থাকেন। যাদের শ্মশ্রু আছে , তা পুরুষের রূপ, যা শৃঙ্গহীন তা অশ্বাদির, নীচে দন্তপাটি যাদের আছে তা গাভী প্রভৃতির, মেষের খুরের মত শফ বিশিষ্ট যারা তারা অজ জাতি- এগুলি গ্রাম্য পশু, এভাবে প্রজাপতি সকল পুরুষাদি লাভ করলেন। যে তিনটি পশু একসঙ্গে লাভ করতে চায়, সে সোম ও পুষার উদ্দেশ্যে এরূপ তিনটি পশু দেবে।“ ( কৃষ্ণ যজুর্বেদ তৈত্তিরীয় সংহিতা ২ কাণ্ড/ ১ম প্রপাঠক)

অথর্ববেদে গরু

অথর্ব বেদেও ঋগবেদের বিবাহ সুক্তে উল্লেখিত ঋকটি রয়েছে-

সূর্যয়া বহতুঃ প্রাগাৎ সবিতা যমবাসৃজৎ।

মঘাসু হন্যতে গাবঃ ফল্গুনীষু ব্যুহ্যতে।। ১৪/১/১৩

গ্রিফিথ এর অনুবাদ করেছেন-

“The bridal pomp of suryaa , which savitar started , moved along . In magha days are oxen slain, in Phalgunis they wed the bride.”  

হুইটনিও গ্রিফিথ এর মত একই ধরণের অনুবাদ করেছেন।

তুলসী রাম আচার্য সহ অনেকে এর অন্যরকম অনুবাদ করেছেন-

“The bridal procession of Surya proceeds which Savita, her father, starts. The bullocks are made to move in Magha nakshatra and the bride is inducted into the groom’s home in Phalguni nakshatra.”

ঋগবেদের মত অথর্ব বেদেও দেখা যায় মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় গরুর চামড়া ব্যবহার করা হত-

অগ্নের্বর্ম পরি গোভির্ব্যয়স্ব সংস প্রোর্ণুষ্ব নেদিসা অঊভিস্ত চ।

 নেৎ ত্বা ধৃষ্ণুর্হরসা হির্হৃষাণো দধৃগ্ বিধক্ষন্ পরীঙ্খায়াতৈ।। ১৮/২/৬/৮

–হে প্রেত, তুমি গাভীর অবয়বের দ্বারা দাহক অগ্নির আচ্ছাদক বর্ম ধারণ কর, মেদ ও অন্যান্য স্থূল অঙ্গের দ্বারা নিজেকে আচ্ছন্ন কর, তা না হলে ধর্ষক, স্বতেজে রসহরণশীল অগ্নি তোমাকে দাহ করবার জন্য ফেলে দেবে। ( অনুবাদক- বিজন বিহারী গোস্বামী)

ব্রাহ্মণে গরু

বেদের সংহিতা অংশের পরে ব্রাহ্মণ অংশ রচিত হয়। বিভিন্ন ব্রাহ্মণ গ্রন্থেও গোহত্যা ও গোমাংস ভক্ষণের কথা পাওয়া যায়।

ঐতরেয় ব্রাহ্মণে ( ১/৩/৪) রাজা অথবা অন্য কোনো সম্মানীয় ব্যক্তি উপস্থিত হলে বৃষ অথবা বৃদ্ধা গাভী হত্যা করার কথা বলা হয়েছে-

“ যেমন নররাজ অথবা অন্য পূজ্য ব্যক্তি উপস্থিত হইলে বৃষ অথবা বেহৎ ( গর্ভনাশিনী বৃদ্ধা গাভী) হত্যা করে, সেইরূপ অগ্নির যে মন্থন হয় , তাহাতেই সোমের উদ্দেশ্যে অগ্নির হত্যা করা হয়, কেননা অগ্নিই দেবগণের পশু।“ (অনুবাদক- রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী)

পরবর্তীকালের গৃহ্যসূত্র, ধর্মসূত্র, ধর্মশাস্ত্র প্রভৃতিতে এই প্রথার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়।

এছাড়া ঐতরেয় ব্রাহ্মণে (২/৬/৮) এ দেবতারা গরুকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন-

“ (পুরাকালে ) দেবগণ পুরুষকে (মনুষ্যকে) পশুরূপে আলম্ভন ( যজ্ঞে হনন) করিতে উদ্যত হইয়াছিলেন। সেই হননোদ্যত পুরুষ হইতে যজ্ঞভাগ পলায়ণ করিল ও অশ্বে প্রবেশ করিল। সেইজন্য অশ্ব যজ্ঞযোগ্য হইল। অনন্তর যজ্ঞভাগ কর্তৃক পরিত্যাক্ত সেই পুরুষকে দেবগণ সম্পূর্ণ রূপে বর্জন করিলেন; সেই পুরুষ (তখন) কিম্পুরুষ হইল।

তাহারা অশ্বের আলম্ভনে উদ্যত হইলেন। সেই হননোদ্যুক্ত অশ্ব হইতে যজ্ঞভাগ পলায়ণ করিল এবং গরুতে প্রবেশ করিল। সেই হইতে গরু যজ্ঞের যোগ্য হইল। দেবগণ সেই যজ্ঞভাগ কর্তৃক পরিত্যক্ত অশ্বকে বর্জন করিলেন; সেই অশ্ব (তখন) গৌর মৃগ হইল।

তাহারা গরুর আলম্ভনে উদ্যত হইলেন।সেই বধোদ্যুক্ত গরু হইতে যজ্ঞভাগ পলায়ণ করিল ও অবিতে (মেষে) প্রবেশ করিল। সেই হইতে অবি যজ্ঞের যোগ্য হইল। তখন দেবগণ যজ্ঞ ভাগ কর্তৃক পরিত্যাক্ত গরুকে বর্জন করিলেন, সে গবয় হইল।

তাহারা অবির আলম্ভনে উদ্যত হইলেন। সেই বধোদ্যুক্ত অবি হইতে যজ্ঞভাগ পলায়ণ করিল ও অজে (ছাগলে) প্রবেশ করিল। সেই হইতে অজ যজ্ঞের যোগ্য হইল। দেবগণ যজ্ঞভাগ কর্তৃক পরিত্যাক্ত অবিকে বর্জন করিলেন ; সে উষ্ট্র হইল।

এই যজ্ঞভাগ অজে বহুকাল ধরিয়া ক্রিড়া করিয়াছিল । সেই হেতু এই যে অজ , সে পশুগণ মধ্যে  (যজ্ঞে) সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত।

তাহারা অজের আলম্ভনে উদ্যত হইলেন। সেই বধোদ্যুক্ত অজ হইতে যজ্ঞভাগ পলায়ণ করিল ও এই ( পৃথিবীতে) প্রবেশ করিল। সেই হইতে এই ( পৃথিবী) যজ্ঞের যোগ্য হইল। তখন দেবগণ যজ্ঞভাগ কর্তৃক পরিত্যাক্ত অজকে বর্জন করিলেন, সে শরভ হইল। “ (অনুবাদক- রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী)

ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৪/১৮/৮ এ বৃষকে হত্যা করার কথা বলা আছে-

“ মহাব্রত দিনে সবনীয় পশুর স্থানে বিশ্বকর্মার উদ্দিষ্ট উভয় পার্শ্বে উভয় বর্ণযুক্ত বৃষভ আলম্ভনযোগ্য। অতএব (ঐ দিনে) উহারই আলম্ভন করিবে।“ (অনুবাদক- রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী)

শতপথ ব্রাহ্মণে (১/১/৪) একটি উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। এখানে অসুরেরা মনুর বৃষকে হত্যা করার জন্য মনুর অনুমতি চাইলে তিনি কোনো আপত্তি করেন না এবং সেই বৃষটিকে হত্যা করা হয়-

“১৪ । মনুর একটি ঋষভ ( বৃষ ) ছিল। ঐ ঋষভে অসুর ও শত্রুগণের হননকারী শব্দ (বাক) প্রবেশ করে । তাহার শ্বাস ও শব্দে পীড়িত হইয়া অসুর ও রক্ষোগণ চলিয়া গিয়াছিল । অনন্তর তাহারা এই আলাপ করে – ‘হায়! এই ঋষভ আমাদের পাপ (পরাজয়) সম্পাদন করিতেছে; কি প্রকারে আমরা ইহাকে বিনাশ করিব!’ কিলাত ও আকুলি নামে অসুরগণের দুই পুরোহিত ছিলেন।

১৫। তাহারা উভয়ে বলিলেন – ‘মনু শ্রদ্ধাদেব (অত্যন্ত শ্রদ্ধালু- সহজে অন্যের কথায় বিশ্বাস করেন) ; আমরা ইহার অভিপ্রায় জানিব।‘ তাহারা আগমন করিয়া তাহাকে বলিলেন – ‘হে মনু! আমরা আপনার যাগ করিব!’

‘কাহার দ্বারা?’                                  

‘এই ঋষভের দ্বারা।‘

মনু ‘তাহাই হউক’ বলিলে তাহারা সেই ঋষভকে বধ করায় ঐ শব্দ (বাক) অপগত হইল। “

( অনুবাদক- শ্রী বিধূশেখর ভট্টাচার্য)

শতপথ ব্রাহ্মণ ৩/১/২/২১  এ গাভী ও ষাঁড়ের মাংস খেতে অনেক বারণ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেই বিখ্যাত যাজ্ঞবল্ক্যের কথা বলা হয়েছে। যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন, গরুর মাংস নরম হলে তিনি তা খান-

“তারপর তিনি (অধ্বর্যু) তাকে শালায় নিয়ে যান। সে গরু বা ষাঁড়ের মাংস না খাক কারণ গরু এবং ষাড় পৃথিবীর সব কিছুকে ধারণ করে থাকে। দেবতারা বললেন , ‘ সত্যই, গাভী এবং ষাঁড় এখানে সবকিছুকে ধারণ করেঃ এস, অন্য প্রজাতির যত বীর্য (পরাক্রম) তা গাভী ও ষাঁড়কে প্রদান করি।‘ সেইমতো তারা অন্য প্রজাতিদের যত বীর্য ছিল তা  গাভী ও ষাঁড়কে প্রদান করলেন এবং তাই গাভী এবং ষাঁড় সবচাইতে বেশি ভোজন করে। তাই গাভি বা ষাঁড়ের মাংস খেলে সবই খাওয়া হয়। সর্বনাশী গতিযুক্ত সে বিচিত্র যোনিতে জন্মগ্রহণ করবে । মানুষেরা বলবে সে মায়ের গর্ভ নষ্ট করেছে, পাপ করেছে। সে গাভী এবং ষাঁড়ের মাংস না খাক। তবুও যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন, ‘ আমি তো খাই যদি তা নরম (অংশল) হয়’।“ (14)

এছাড়া বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৬/৪/১৮ এর অনুবাদকালে অনুবাদক সীতানাথ তত্ত্বভূষণ মন্তব্য করেছেন-

“এই যুগে গোমাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ ছিল না। এই মন্ত্রে গোমাংস ভোজনের ব্যবস্থা দেওয়া হইয়াছে। এখানে বলা যাইতে পারে যে শতপথ ব্রাহ্মণে (৩/১/২/২১) গোমাংস ভোজন নিষেধ করা হইয়াছে। কিন্তু নিষেধ করিয়াও সেখানে বলা হইয়াছে, ‘হ উবাচ যাজ্ঞবল্কঃ অশ্নামি এব অহম্ অংসলং চেৎ ভবতি’- অর্থাৎ, ‘যাজ্ঞবল্ক্য বলেন, (এই মাংস) যদি অংসল অর্থাৎ কোমল হয়, তাহা হইলে আমি ভোজনই করি’ (৩/১/২/২১) এস্থলে অনড্বান্ (অর্থাৎ বলদ) এবং ধেনুর মাংসের কথা হইয়াছে।“

গোপথ ব্রাহ্মণ, উত্তরভাগ, দ্বিতীয় প্রপাঠক, ১ এ গোবধের কথা পাওয়া যায় –

“ অহিতাগ্নি ব্যক্তির অগ্নিসমূহ মাংস ইচ্ছা করেন। সেই (অগ্নিসমূহ) যজমানকে অগ্রে বিশেষরূপ স্থাপন করেন, সেই যজমান প্রতি ষষ্ঠমাসে ঐন্দ্রাগ্ন পশু আলম্বন (বধ) হত্যা করে। এইভাবে সে ইন্দ্রাগ্নী দ্বারা গ্রসিত আত্মাকে মুক্ত করে (নিরবদয়তে)। আয়ুষ্কাম ব্যক্তি (পশু) আলম্ভন করবেন। ইন্দ্রাগ্নী প্রকৃতপক্ষে প্রাণ ও অপান (বায়ুদ্বয়)। প্রাণ ও অপান (বায়ুদ্বয়) আত্মাকে ধারণ করে, (যজমান) আয়ুষ্মান হয়। যিনি প্রজা কামনা করেন তিনি (পশু) আলম্ভন করবেন। ইন্দ্রাগ্নী হল প্রাণ ও অপান (বায়ুদ্বয়)। প্রাণ ও অপান বায়ু (সাধনের পরই) পশুরা জন্মলাভ করে। (যজমান) পশুমান হন যিনি সুস্বাস্থ্য কামনা করবেন এবং পিতৃলোক ইচ্ছা করবেন (সেই যজমান) একটি শুকহরিত (সবুজ শুক পক্ষী) কিংবা শুণ্ঠ (শ্বেতবর্ণ গো) বধ করবেন। এই হেতু যম এইলোকে এবং অন্যলোকে প্রতিপত্তি লাভ করেন। যে যজমান প্রজাকামী তিনি ত্বষ্টার অশ্বকে হত্যা করবেন। প্রজাপতি প্রজা সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক হয়ে দ্বিতীয় মিথুনকে গ্রহণ করলেন। তিনি ত্বষ্টার অশ্বকে দেখলেন। ত্বষ্টা হলেন রূপের সৃষ্টিকর্তা। এর দ্বারা তিনি প্রজা সৃষ্টি করলেন। তার দ্বারা মিথুনকে লাভ করলেন। যিনি এরূপ জানেন এবং যে বিদ্বান এরূপ জেনে আলম্ভন করেন, তিনি  প্রজাযুক্ত ও মিথুনযুক্ত হন। যিনি ঐন্দ্রাগ্ন পশুযাগ না করে কাম্যপশুযাগে পশু আলম্ভন করেন, তিনি যোনিসমূহ ও কাম্য পশুসমূহ লাভ করেন। (ইষ্টাপূর্তির নিমিত্ত) পশু আলম্ভন করে যাগ করে তিনি সমৃদ্ধি লাভ করেন। “

(অনুবাদক- অধ্যাপক তারকনাথ অধিকারী ; রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচার)  

গোপথ ব্রাহ্মণ, পূর্ব ভাগ, ৩য় প্রপাঠক, ১৭ এ গরু দ্বারা যজ্ঞ করার কথা বলা হয়েছে-

“ কারব নামক ঋষিরা ছিলেন অল্পবিত্ত। তারা এই অগ্নিষ্টোমকে একগু (অর্থাৎ একগাভী দান দ্বারা সম্পন্ন) রূপে দেখলেন।তারা (একটি গরু) আহরণ করেছিলেন। তার দ্বারাই যজ্ঞ করেছিলেন। তারা স্বর্গগমন করেছিলেন। অতএব যিনি ইচ্ছা করেন- আমি স্বর্গে যাবো, তিনি একগু অগ্নিষ্টোম যাগ করবেন একথাই ব্রাহ্মণ বলছেন।“

গোপথ ব্রাহ্মণ, পূর্ব ভাগ, ৩য় প্রপাঠক, ১৮ এ গরুর নানা অংশ কিভাবে ভাগ করা হবে তার বিষদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে-

“ অতঃপর সেজন্যে আমরা সবনীয় পশুর বিভাজন ব্যাখ্যা করবো। (পশুর) অংশসমূহ গ্রহণ করার পর সজিহ্ব হনূদ্বয় হল প্রস্তোতার। সকাকুদ্র কণ্ঠ হল প্রতিহর্তার। শ্যেন-বক্ষ পাবেন উদগাতা। দক্ষিণ পাঁজর সন্ধসহ হল অধ্বর্যুর । বাদিকটা হল উদ্গাতার। বামস্কন্ধ প্রতিপ্রস্থাতার। অথ্যাস্ত্রীসহ দক্ষিণনিতম্ব হল ব্রহ্মার। (ডানদিকের) নীচের জানু ব্রহ্মাচ্ছংসীর। (ডান) উরু পোতার। বামনিতম্ব হোতার। (বামদিকের) নীচের জানু মৈত্রাবরুণের। (বাম) উরু আচ্ছাবকের। ডানবাহু নেষ্টার। বামবাহু সদস্যের। গৃহপতির হল মেরুদণ্ড ও অনূক (মূত্রথলি?)। পত্নীর ভাগ হল জঘন। সেটি তিনি অন্য ব্রাহ্মণকে দিয়ে দেবেন। অগ্নীধ্রর হল মলাশয়, হৃৎপিণ্ড, বৃক্কদ্বয় (কিডনিদ্বয়), অঙ্গুলিসমূহ ও দক্ষিণ বাহু। বামবাহু হল আত্রেয়ের। দুটি ডানদিকের পা হল গৃহপতির ব্রতপদের ( অর্থাৎ যিনি ব্রতান্তে গৃহপতিকে ভোজন করান)। বামপদদ্বয় হল গৃহপত্নীর ব্রতুইদার। তাদের দুজনেরই ওষ্ঠ। তাকে গৃহপতি অন্যদের মধ্যে ভাগ করে দেবেন। ঘাড়ের মাংসল অংশ ও তিনটি পাঁজর হাড় পাবেন গ্রাবস্তুৎ। বামদিকের অপর তিনটি পাঁজরহাড় ও উপস্থের অর্ধেক পাবেন উন্নেতা। এর উপরের অংশ পাবেন চমসধারী অধ্বর্যুরা, শাময়িতার ( অর্থাৎ ঘাতকের) অংশ হল ফুসফুস, সুব্রহ্মণ্যের অংশ হল শির। যিনি পরের দিন সূত্যাসময়ে আহ্বান করবেন তার (অংশ) হল চামড়া। এই ভাবে ছত্রিশটি ভাগ সম্পন্ন হয়।
গরু হল ছত্রিশভাগযুক্ত। বৃহতী ছন্দ ছত্রিশ অক্ষরবিশিষ্ট। বৃহতীর (আশ্রয়) হল স্বর্গলোক। বৃহতীছন্দে দেবতারা স্বর্গে যাগ করেন। বৃহতীর দ্বারা তার স্বর্গলোকে প্রতিষ্ঠিত হন। যে এরূপ বিভাগ করে সে সন্তান ও পশু লাভ করে। আর যে জনেরা এর বিরুদ্ধ আচরণকারী, কিংবা পাপানুষ্ঠানকারী কিংবা হুত-হবিঃ ভক্ষণকারী অথবা অন্যজনেরা, যারা বিমথনকারী , তাদের পশু বিমথিত হয় ,ফলে তাদের স্বর্গলাভ করা হয় না।

দেবভাগ শ্রুত-ঋষি এই পশুবিভাজন করেছিলেন। তিনি এই বিভাগ বভ্রুবংশজ ঋষি গিরিজকে (শিখিয়েছিলেন)। তিনি আবার অন্য মানুষদেরকে বলেছিলেন। সেই থেকে এই (বিভাজন) মানুষদের মধ্যে (প্রচলিত হল)। এই কথা ব্রাহ্মণ বলছেন।“

( অনুবাদক- অধ্যাপক তারকনাথ অধিকারী , রামকৃষ্ণ মিশন ইন্সটিটিউট অব কালচার)

উপনিষদে গরু

বেদের ব্রাহ্মণ ভাগের পরে উপনিষদ রচিত হয়। উপনিষদেও গোমাংস খাওয়ার বিধান পাওয়া যায়। বৃহদারণ্যক উপনিষদে পণ্ডিত পুত্র জন্ম দেওয়ার জন্য স্বামী স্ত্রীকে বৃষের মাংস খেতে বলা হয়েছে-

“অথ য ইচ্ছেৎ পুত্রো মে পন্ডিতো বিগীতঃ সমিতিংগমঃ শুশ্রূষিতাং বাচং

ভাষিতা জায়েত সর্বান্বেদাননুব্রুবীত সর্বমায়ুরিয়াদিতি মাংসৌদনং

পাচয়িত্বা সর্পিষ্মন্তমশ্নীয়াতামীশ্বরৌ জনয়িতবা ঔক্ষেণ বার্ষভেণ বা।। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৬/৪/১৮)

অর্থাৎ, যে চায়- আমার এমন এক পুত্র হউক যে পন্ডিত, প্রখ্যাত, সভাসদ ও সুভাষ হইবে, সর্ববেদ অধ্যয়ণ করিবে এবং পূর্ণায়ু হইবে- তবে তাহারা স্বামী স্ত্রী উভয়ে মাংসমিশ্রিত অন্ন রন্ধন করিয়া তাহাতে ঘি মিশাইয়া খাইবে। এই মাংস তরুণ বা বয়স্ক বৃষের হইলে (তাহারা ঐ রকম সন্তান) জন্ম দিতে পারিবে। ( অনুবাদক- সীতানাথ তত্ত্বভূষণ) (15)

শঙ্করাচার্য বৃহদারণ্যক উপনিষদের ভাষ্যে লিখেছেন-

अथ य इच्छेत्पुत्रो मे पण्डितो विगीतः समितिंगमः शुश्रूषितां वाचं भाषिता जायेत, सर्वान्वेदाननुब्रुवीत, सर्वमायुरियादिति, मांसौदनं पाचयित्वा सर्पिष्मन्तमश्नीयाताम्; ईश्वरौ जनयितवै—अउक्शेण वार्षभेण वा ॥ Verse 6.4.18:॥

18. He who wishes that a son should be born to him who would be a reputed scholar, frequenting the assemblies and speaking delightful words, would study all the Vedas and attain a full term of life, should have rice cooked with the meat of a vigorous bull or one more advanced in years, and he and his wife should eat it with clarified butter. Then they would be able to produce such a son.

‘Vigīta (reputed) literally means ‘variously praised.’ Frequenting the assemblies, i.e. eloquent for scholarship has been separately mentioned. Delightful, lit. pleasant to hear, i.e. words that are chaste and pregnant with meaning. Rice cooked together with meat. The meat is restricted to that of a vigorous bull, able to breed, or one more advanced in years. ( Translated by Swami Madhavananda)

আবেস্তায় গরু

আর্যদের একটি শাখা পারস্যে বসবাস করতো। তাদের ধর্মগ্রন্থের নাম হল আবেস্তা। এই আবেস্তাতেও গোহত্যার কথা পাওয়া যায় ।

আবেস্তার এক স্থানে  একশ পুরুষ অশ্ব, এক হাজার ষাঁড় ও দশ হাজার ভেড়া বলি দেওয়ার কথা পাওয়া যায়-

“ 36. Offer up a sacrifice , O Spitama Zarathrustra! Unto Ardvi Sura Anahita…

37. ‘To her did Keresaspa, the manly hearted , offer up a sacrifice behind the Vairi Pisanah, with a hundred male horses , a thousand oxen , ten thousand lambs.” ( Avesta (sacred books of the east series)/ part 2/ page 60-61)

আবেস্তার আরেকস্থানেও একই কথা পাওয়া যায়।

“107. Offer up a sacrifice , O Spitama Zarathustra! Unto this spring of mine , Ardvi Sura Anahita…

108. ‘Unto her did the tall Kavi Vitaspa offer up a sacrifice behind Lake Frazdanava with a hundred male horses, a thousand oxen , ten thousand lambs.” ( Avesta (sacred books of the east series)/ part 2/ page 79 )

পরবর্তী পর্বসমূহঃ- হিন্দু ধর্ম ও গোমাংস-রহস্যঃ বেদাঙ্গ ; হিন্দু ধর্ম ও গোমাংস-রহস্যঃ ধর্মশাস্ত্র

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ঋগবেদের বাংলা অনুবাদের ক্ষেত্রে রমেশচন্দ্র দত্তের অনুবাদ ব্যবহার করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র-

(1) R.S. Sharma, Material Culture and Social Formations in Ancient India, Macmillan, Delhi, 1983, p 24

(2)   Srinivasan, Concept of Cows in the Rigveda , Motilal BanarsiDass, Delhi, 1979, p 1

(3)  ঋগবেদ 2/41/7 ; 6/45/21 ; 7/27/5 ; 7/77/5; 7/94/9 ; 9/41/4 ; 9/61/3

(4) ঋগবেদ  3/47/4 ; 5/63/5; 6/31/3; 6/47/20; 6/59/7; 8/24/2; 9/76/2

(5) ঋগবেদ  8/53/8; 9/97/15

(6)  ঋগবেদ  7/23/3; 8/17/15; Avesta 5/20/11

(7) ঋগবেদ 6/50/11; 7/35/14; 10/53/5

(8)  Wealthy Vrsakapayi, blest with sons and consorts of thy sons,
Indra will eat thy bulls, thy dear oblation that effecteth much. Supreme is Indra over all. ( Translated by Griffith )

রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর অনুবাদ-

বেদ 2

(9) Then Will I, when I lead my friends to battle against the radiant persons of the godless,Prepare for thee at home a vigorous bullock, and pour for thee the fifteen-fold strong juices. ( Translated by Griffith )

রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর অনুবাদ-

বেদ 4

(10) Men with the stone press out for thee, O Indra, strong, gladdening Soma, and thereof thou drinkest.
Bulls they dress for thee, and of these thou eatest when, Maghavan, with food thou art invited. ( Translated by Griffith )
রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর অনুবাদ-

বেদ 6

(11)  Fifteen in number, then, for me a score of bullocks they prepare,
And I devour the fat thereof: they fill my belly full with food. Supreme is Indra over all. ( Translated by Griffith )

রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর অনুবাদ-

বেদ 8

(*) রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর অনুবাদ-

বেদ 10

(12) Agni, we bring thee, with our hymn, oblation fashioned in the heart.
Let these be oxen unto thee, let these be bulls and kine to thee. ( Translated by Griffith)

রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর অনুবাদ-

বেদ 12

(#)
” He in whom horses, bulls, oxen, and barren cows, and rams, when duly set apart, are offered up,—To Agni, Soma-sprinkled, drinker of sweet juice, Disposer, with my heart I bring a fair hymn forth. “ (Translated by Griffith)
রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর অনুবাদ-

বেদ 14

(@) রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর অনুবাদ-

বেদ 16



($) রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর অনুবাদ-

বেদ 18

(13) Where was the vengeful dart when thou, O Indra, clavest the demon ever beat on outrage? When fiends lay there upon the ground extended like cattle in the place of immolation? ( Translated by Griffith )

রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর অনুবাদ-

বেদ 20

(14) He ( the adhvaryu) then makes him enter the hall. Let him not eat (the flesh) of either cow or the ox; for the cow and the ox doubtless support everything here on earth. The gods spake, ‘ Verily, the cow and the ox support everything here: come, let us bestow on the cow and the ox whatever vigour belongs to other species!’ Accordingly they bestowed on the cow and the ox whatever vigour belonged to other species (of animals);  and therefore the cow and the ox eat most. Hence, were one to eat (the flesh) of an ox or a cow, there would be, as it were, an eating of everything, or, as it were, a going on to the end(or, to destruction). Such a one indeed would be likely born (again) as a strange being, (as one of whom there is) evil report such as ‘he has expelled an ambryo from a woman, he has committed a sin ; let him not eat (the flesh ) of the cow and the ox. Nevertheless yajnavalkya said , ‘ I , for one, eat it, provided that it is tender.’        

( Translated by eggeling)

(15) সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর অনুবাদ করেছেন-

“ Now if one wishes that a son, learned, famous, a frequenter of assemblies, a speaker of delightfull words, that he should study all the Vedas , that he should attain a full term of life , they should have rice cooked with meat and eat it with clarified butter , then they should be able to beget (such a son)- either veal or beef. “ ( Principal Upanishads by Sarvapally Radhakrishnan)

স্বামী নিখিলানন্দ অনুবাদ করেছেন-

“If a man wishes that a son should be born to him who will be a famous scholar, frequenting assemblies and speaking delightful words, a student of all the Vedas and an enjoyer of the full term of life, he should have rice cooked with the meat of a young bull or of one more advanced in years and he and his wife should eat it with clarified butter. Then they should be able to beget such a son.”

স্বামী গম্ভীরানন্দ অনুবাদ করেছেন-

” আর যিনি ইচ্ছা করেন , “আমার পণ্ডিত, বিখ্যাত, সমিতিঙ্গম ও রমণীয় বাক্যের বক্তা পুত্র জাত হউক , সে সর্ববেদ অধ্যয়ণ করুক এবং পূর্ণায়ু প্রাপ্ত হউক”, তিনি তরুণ বা অধিক বয়স্ক বৃষভের মাংসের দ্বারা পলান্ন রন্ধন করাইয়া (স্বামী ও স্ত্রী দুইজনে আহার করিবেন। তাহারা ঐরূপ সন্তানোৎপাদনে সমর্থ হন।”

অজিত কেশকম্বলী II

"মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।"

3 thoughts on “হিন্দু ধর্ম ও গোমাংসরহস্য: বেদ

  • August 24, 2019 at 11:54 AM
    Permalink

    Excellen… এই লেখাটির জন্যই অপেক্ষা করছিলাম…শত কোটি ধন্যবাদ সন্মানিত লেখককে

    Reply
  • February 7, 2024 at 3:59 PM
    Permalink

    আপনি ঋগ্বেদ, যর্জুবেদ,অথর্ববেদ হতে যে বিষয়গুলো তুলে ধরলেন সেগুলো সবগুলাই ভুয়া,মিথ্যা-বানোয়াট।
    আর যাদের রেফারেন্স তুলে ধরেছেন তাদের কতটুকু সংস্কৃত ভাষার জ্ঞান আছে সেইটা অনুবাদ দেখেই বোঝা যাচ্ছে🤣..বেদে ইন্দ্র দ্বারা কোন মানুষই বোঝায় নাই যে মহিষ জবাই করে খাবে🤣আর বেদে দেবতা বলতে হাত-পা বিশিষ্ট কোন মানুষের অবয়ব এমন কিছু ও বোঝায় নাই,, যারা এসব ফালতু কথা লিখসে ওরা শিওর সংস্কৃতি নিয়ে কোন পড়াশোনাই করে নাই😊 সংস্কৃত ভাষার জ্ঞান নেওয়া এহ সোজা নাহ😊যদি পারেন কোন রেফারেন্স না খুজে নিজে সংস্কৃত ভাষায় পড়াশোনা করে আর ভারতে যারা এখনও সংস্কৃত ভাষায় কথা বলে তাদের কাছ থেকে আসল তথা প্রকৃত সংস্কৃত অর্থ জানুন 😊
    পারলে এইটায় দেইখেন Vedic Heritage Portal
    https://vedicheritage.gov.in
    Vedic Heritage Portal
    অথবা dr tulsi ram এর প্রকৃত সংস্কৃত বেদ পড়ে দেখবেন… ধন্যবাদ😊

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *