ইতিহাসইতিহাসে ধর্মধর্মবৌদ্ধহিন্দুধর্ম

হিন্দু ধর্ম ও গোমাংস-রহস্যঃ পাণিনি, চরক, সুশ্রুত, অর্থশাস্ত্র, ত্রিপিটক

পূর্ববর্তী পর্বঃ- হিন্দু ধর্ম ও গোমাংস-রহস্যঃ বেদ ; হিন্দু ধর্ম ও গোমাংস-রহস্যঃ বেদাঙ্গ ; হিন্দু ধর্ম ও গোমাংস-রহস্যঃ ধর্মশাস্ত্র ; হিন্দু ধর্ম ও গোমাংস-রহস্যঃ রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ ; হিন্দু ধর্ম ও গোমাংস-রহস্যঃ সংস্কৃত সাহিত্য

অষ্টাধ্যায়ীতে

পাণিনি চতুর্থ-ষষ্ঠ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দের লোক। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ। তিনি  রচনা করেছিলেন অষ্টাধ্যায়ী নামক ব্যাকরণ গ্রন্থ। অষ্টাধ্যায়ীতে একটি সূত্র রয়েছে, সেটি হল – দাশগোঘ্নৌ সম্প্রদানে। শ্রীশচন্দ্র বসুর অনূদিত অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থে এ সম্পর্কে যা বলা আছে তা নিচে তুলে ধরা হল-

গোমাংস 1

এখানে হতে যা জানা যাচ্ছে তা হল , গোহত্যাকারীকে গোঘ্ন বলা হয় না বরং যার (অতিথির) আগমনে গরু হত্যা করা হয় , তাকেই গোঘ্ন বলা হয়।

আমরা পূর্বেই গৃহ্যসূত্রগুলিতে দেখেছি যে রাজা, পুরোহিত, শ্বশুর প্রভৃতি অতিথির আগমনে তাদের আপ্যায়ণের জন্য গোহত্যা করা হত। তাইতো অতিথির নাম হয়েছিল গোঘ্ন।

চরক সংহিতায়

চরক সংহিতা হল প্রাচীন ভারতের এক চিকিৎসা গ্রন্থ। এতেও ঔষধ হিসাবে গোমাংস ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। চরক সংহিতা ১/২৭ এ বলা হয়েছে-

গব্যং কেবলবাতেষু পীনসে বিষমজ্বরে।

শুষ্ককাসশ্রমাত্যগ্নিমাংসক্ষয়হিতশ্চ তৎ।।

অর্থাৎ, গোমাংস কেবল বায়ুরোগ, পীনস রোগ, বিষমজ্বরে, শুষ্ককাসে, পরিশ্রমজনিত ক্লান্তিতে , অতিশয় অগ্নিতে এবং দেহের মাংসক্ষয়ে বিশেষ হিতকর। ( অনুবাদক- শ্রী সতীশচন্দ্র শর্মা)

সুশ্রুত সংহিতায় 

সুশ্রুত সংহিতা ১ (সূত্রস্থান) / ৪৬ এ গোমাংসের কথা পাওয়া যায়, এবং সুশ্রুত গরুকে এখানে কোনো মাতা হিসাবে দেখছেন না বরং পশু হিসাবেই দেখছেন  –

“ এই সকলের মধ্যে হস্তী, গো, মহিষ, রুরু, চমর, স্বমর , রোহিত, বরাহ, খড়িগ, গোকর্ণ, কালপুচ্ছ, কোন্দ্র, শঙ্কু এবং আরণ্য গো প্রভৃতিকে কুলচর পশু বলে । এই সকলের মাংস বাতপিত্তনাশক, বৃষ্য , মধুরপাকী, মধুররস, শীতল, বলবর্ধক, স্নিগ্ধ, মূত্র ও কফ বর্ধক । … গবয় মাংস- স্নিগ্ধ, মধুররস, কাসের শান্তিকর, মধুর পাক ও স্ত্রীসংসর্গশক্তিবর্ধক। মহিষ মাংস- স্নিগ্ধ, উষ্ণ, মধুররস, বৃষ্য, তৃপ্তিজনক, গুরু এবং নিদ্রা, পুরুষত্ব, বল ও স্তন্য বর্ধক ও মাংসের দৃঢ়তাকারক।“ ( source)

অর্থশাস্ত্রে

কৌটিল্য বা চাণক্যের নাম শোনেননি এমন লোক হয়তো খুব কম আছেন ভারতবর্ষে।

কৌটিল্যের সময়ে মাংসভক্ষণ সুপ্রচলিত ছিল। মাংস বিক্রি করতে হত হাড়ছাড়া, কোনো বিক্রেতা যদি মাংসে হাড় দিত তবে তবে তার হাড়ের সমপরিমাণ মাংস দিয়ে পূরণ করে দিতে হত। অর্থশাস্ত্রে উল্লেখিত আছে-

(মাংসবিক্রয়বিধিঃ) মৃগ-পশূনামনস্থি মাংসং সদ্যোহতং বিক্রীণীরন্। অস্থিমতঃ প্রতিপাতং দদ্যুঃ। তুলাহীনে হীনাষ্টগুণম্।

( সর্বথা অবধ্যাঃ প্রাণিনঃ, তদ্বধে দণ্ড শ্চ-) বৎসো বৃষো ধেনুশ্চৈষামবধ্যাঃ। ঘ্নতঃ পশ্চাশৎকো দণ্ডঃ। ক্লিষ্টঘাতং ঘাতয়শ্চ। ২/২৬/৩

বঙ্গানুবাদঃ (মাংস বিক্রেতা) মৃগ ও পশুদের অস্থিবিহীন সদ্যোহত (নতুন বা শুদ্ধ) মাংস হাড়ছাড়া তাজা মাংস (বাজারে) বিক্রয় করবে। বিক্রীতমাংস যদি অস্থিযুক্ত হয়, তাহলে বিক্রেতাকে প্রতিপাত অর্থাৎ অস্থির সমান ওজনের মাংস অস্থির বদলে পূরণ করে দিতে হবে। মাংস যদি কাউকে ওজনে কম দেওয়া হয় (= তুলাহীনে), তাহলে বিক্রেতা যে পরিমাণ মাংস কম দিয়েছে, তার আটগুণ বেশী দণ্ড দিতে বাধ্য থাকবে। ( অনুবাদক- মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়)

সূনামহিষ নামে একরকমের মহিষ মাংসের জন্য ব্যবহৃত হত বলে অর্থশাস্ত্র হতে জানা যায় –

বৎস্যা বৎসতরা দম্যা বহিনী বৃষা উক্ষাণশ্চ পুংগবাঃ। যুগবাহন-শকটবহা বৃষভাঃ সূনামহিষাঃ পৃষ্ঠস্কন্ধ-বাহিনশ্চ মহিষাঃ।  ২/২৯/৩

বঙ্গানুবাদঃ বৎস ( দুধ পান করে যে বাছুর), বৎসতর ( যে বাছুর স্তন্যপান পরিত্যাগ করেছে , অর্থাৎ কিছু বড় হয়েছে), দম্য (দমনযোগ্য, ক্ষেত্রে কৃষিকর্ম শেখানোর যোগ্য), বহিন (বোঝা বহনক্ষম ষাঁড়), বৃষ (বীর্যসেচনকারী ষাঁড়) এবং উক্ষা (হাল চালানোর যোগ্য)- এই ছয়রকমের পুংগব (পুরুষ গরু) হতে পারে। যুগবহনকারী ও শকটবহকারী, বৃষভ ( বীর্য সেচনকারী) , সূনামহিষ (শুধুমাত্র মাংসের জন্য উপযোগী মহিষ) , পৃষ্ঠ ও স্কন্ধবাহী এই চাররকমের মহিষ হতে পারে। … ( অনুবাদক- মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়)

 কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র অনুসারে মৃত গরুর চামড়া ব্যবহার করা হত বলেই মনে হয় –

(করপ্রতিকরঃ) জরদগু-ধেনু-গর্ভিণী-পষ্ঠোহী-বৎসতরীণাং সমবিভাগং রূপশতমেকঃ পালয়েৎ। ঘৃতস্যাষ্টৌ বারকান্, পণিকং পুচ্ছম্ , অঙ্কচর্ম চ বার্ষিকং দদ্যাদিতি করপ্রতিকরঃ। ২/২৯/২

বঙ্গানুবাদঃ জরদগু ( অর্থাৎ জরদগবী, বৃদ্ধ গাই), ধেনু ( দুধ দেয় যে গাই), গর্ভিণী গাভী, পষ্টোহী ( প্রথম গর্ভবতী গাভী বা বৃষ-গবেষণী অর্থাৎ যে গাভী কোনও বৃষের সাথে সঙ্গত হতে চায়) ও বৎসতরী ( যে গাভী অল্প দিন আগে স্তন্যপান ত্যাগ করেছে)- এই পাঁচ জাতীয় গাভীকে সমবিভাগ করে ( অর্থাৎ প্রত্যেক প্রকার গাভী কুড়িটি করে নিয়ে ) রূপশত গাভী ( অর্থাৎ মিলিতভাবে জরদগু প্রভৃতি একশত গাভী) একজন গোপালক পালন করবে। এই পালক প্রতি বৎসর আট বরাক (=৮৪ কুডুব) ঘি, পুচ্ছ গণনায় দেয় ১ পণ কর ( অর্থাৎ প্রত্যেক পশুর জন্য ১ পণ কর; অতএব ১০০ টি পশুর জন্য ১০০ পণ কর) এবং অঙ্কচর্ম অর্থাৎ পশু মৃত হলে তার চামড়া রাজমুদ্রার দ্বারা চিহ্নিত করে গোহধ্যক্ষকে দেবে। এই প্রকার গোরক্ষণ এবং গবাদি পশু থেকে উৎপন্ন দ্রব্য মালিককে দানকরা-রূপ ব্যাপারকে করপ্রতিকর বলা হয়।  ( অনুবাদক- মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়)

মৃত গরু, মহিষ প্রভৃতির চামড়া, লোম, মূত্রাশয় ,পিত্ত, অন্ত্র, দাঁত, খুর, শিং, অস্থি  ইত্যাদি সম্ভবত ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ  করা হত। এগুলো সংগ্রহ করার কথা অর্থশাস্ত্রে বলা আছে-

কারণমৃতস্যাঙ্কচর্ম গো-মহিষস্য, কর্ণলক্ষণম্ অজাবিকানাং পুচ্ছমঙ্কচর্ম চাশ্বখরোষ্ট্রাণাং, বালচর্মবস্তিপিত্তস্নায়ুদন্তখুরশৃঙ্গস্থীনিচাহরেয়ুঃ। ২/২৯/৬

বঙ্গানুবাদঃ গোপালক (ব্যাধি, জরা প্রভৃতি স্বাভাবিক) – কারণে মৃত গরু ও মহিষের চামড়া রাজমুদ্রার দ্বারা চিহ্নিত করে, ছাগল ও মেষের কান ঐ রকম মুদ্রার দ্বারা চিহ্নিত করে গোহধ্যক্ষকে (যাতে গোহধ্যক্ষের প্রত্যয় হয় যে, স্বাভাবিকভাবেই ঐ সব পশুর মৃত্যু হয়েছে); (গোপালক) ঐ সব মৃত পশুর লোম, চর্ম, বস্তু (মূত্রাশয়), পিত্ত, স্নায়ু (অন্ত্র), দাঁত, খুর, শিং এবং অস্থি (হাড়) আহরণ করে আনবে (এবং সম্ভবতঃ এই জিনিসগুলি রাজকীয় ক্যুপগৃহে জমা দিতে হবে)। ( অনুবাদক- মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় )

এর পরেই বলা আছে মৃত পশুর মাংস বিক্রি করা যাবে। এ থেকে অনুমান হয় সম্ভবত নানা মাংসের সাথে গোমাংসের ক্রয় বিক্রয়ও প্রচলিত ছিল-

( পূর্বানুবৃত্তিঃ) মাংসম্ আমম্ আর্দ্রং শুষ্কং বা বিক্রীণীয়ুঃ । … ২/২৯/৭

বঙ্গানুবাদঃ ( মৃত পশুর) মাংস অপক্ক, আর্দ্র অবস্থায় বা শুকিয়ে নিয়ে বিক্রয় করতে হবে। ( অনুবাদক- মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় )

ত্রিপিটকে

আমরা বিবিধ হিন্দুশাস্ত্র এবং ভারতীয় গ্রন্থসমূহ পর্যালোচনা করেছি গোমাংস ও গোহত্যার অনুসন্ধানে। এবার বৌদ্ধ গ্রন্থ ত্রিপিটকে অনুসন্ধান করা যাক। ত্রিপিটকের নানাস্থানেও নানা পশুর সাথে যজ্ঞে গরুও যে বলি দেওয়া হত তা দেখা যায়।

সূত্রপিটক, সংযুক্তনিকায়, সগাথা বর্গ, যজ্ঞ সূত্রে দেখা যায় কোশলরাজ প্রসেনজিত এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেছেন। তাতে প্রচুর গরু বলির জন্য আনা হয়েছে-

“ ১২০. শ্রাবস্তী নিদান। সে সময়ে কোশল রাজ প্রসেনজিতের মহাযজ্ঞ আয়োজন হয়। পঞ্চশত বৃষভ, পঞ্চশত বৎসতর (দামড়া গোশাবক), পঞ্চশত বৎসতরী, পঞ্চশত ছাগল এবং পঞ্চশত ভেড়া যজ্ঞের জন্য যূপকাষ্ঠে নীত হচ্ছে। দণ্ডে ভীত, ভয়ে ত্রাসিত দাস, দূত ও কর্মচারীরা অশ্রুমুখে রোদন করতে করতে নিজ নিজ কর্তব্য-কর্মগুলো সম্পাদন করছে।

তখন বহুসংখ্যক ভিক্ষু পূর্বাহ্ণ সময়ে চীবর পরিধান করে পাত্র-চীবর (সংঘাটি) নিয়ে শ্রাবস্তিতে পিণ্ডার্থে প্রবেশ করলেন। পিণ্ডচারণ করে ভোজনের পর ভগবানের কাছে উপস্থিত হলেন। উপস্থিত হয়ে ভগবানকে অভিবাদন পূর্বক একান্তে উপবেশন করলেন। একান্তে উপবিষ্ট সেই ভিক্ষুগণ ভগবানকে বললেন, ‘ ভন্তে, কোশলরাজ প্রসেনজিতের মহাযজ্ঞ আয়োজন হয়েছে। সেখানে পঞ্চশত বৃষভ, পঞ্চশত বৎসতর, পঞ্চশত বৎসতরী, পঞ্চশত ছাগল এবং পঞ্চশত ভেড়া যজ্ঞের জন্য যূপকাষ্ঠে নীত হচ্ছে। দণ্ডে ভীত, ভয়ে ত্রাসিত দাস, দূত ও কর্মচারীরা অশ্রুমুখে রোদন করতে করতে নিজ নিজ কর্তব্য কর্মগুলো সম্পাদন করছে।“ (প্রকাশক- ত্রিপিটক পাবলিশিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ)

সূত্রপিটক,অঙ্গুত্তর নিকায়, চতুষ্ক নিপাত, উজ্জয় সূত্রে বলা আছে-

“৩৯. একসময় উজ্জয় ব্রাহ্মণ ভগবানের কাছে উপস্থিত হয়ে প্রীতিপূর্ণ কুশলালাপ করে এক পার্শ্বে উপবেশন করল। উপবিষ্ট অবস্থায় ভগবানকে এরূপ বললঃ

‘মহাশয় গৌতম , আপনি নাকি যজ্ঞের গুণ কীর্তন করে থাকেন।‘ ভগবান বললেন, ‘হে ব্রাহ্মণ, আমি সব যজ্ঞের গুণ কীর্তন করি না, আবার সব যজ্ঞের যে গুণ কীর্তন করি না , তাও নয়। যেরূপ যজ্ঞে গরু, ছাগল, ভেড়া , মুরগী, শুকর তথা বিবিধ প্রাণী হত্যা করা হয় ; সেরূপ হত্যাযজ্ঞের গুণকীর্তন আমি করি না। তার কারণ কী? এরূপ হত্যাযজ্ঞ দ্বারা অর্হত্ত্বে উপনীত অর্হত্ত্ব মার্গে সমাপন্ন হওয়া যায় না।

যেরূপ যজ্ঞে গরু, ছাগল , ভেড়া , মুরগী, শুকর এবং বিবিধ প্রাণী  হত্যা করা হয় না; সেরূপ পশুবলিহীন যজ্ঞের আমি গুণকীর্তন করি আমি। যেমন, নিত্য দান দেওয়া যথোপযুক্ত যজ্ঞ। তার কারণ কি? পশুবলিহীন যজ্ঞ দ্বারা অর্হত্ত্বে উপনীত বা অর্হত্ত্ব মার্গে সমাপন্ন হওয়া যায়।‘

পশুবলি, নরবলি, ঘৃতাহুতি যত মহাযজ্ঞ,

কদলী বৃক্ষ সম সারহীন, নহে মহাফল।

ছাগ, ভেড়া, গরু বিবিধ প্রাণী হননে,

নাহি সম্যকগত , সাধে না মহর্ষিগণে।

যথোপযুক্ত যজ্ঞ জান, প্রাণিবলিবিহীন,

নাহি প্রয়োজন তাতে ছাগ,গরু হনন;

ইহাই সম্যকগত, সাধেন মহর্ষিগণে।

এ মহাফলদায়ী যজ্ঞে তৎপর মেধাবীগণ,

জানিবে এই যজ্ঞ শ্রেষ্ঠ, নাহিক পাপ আগমন;

এতেই বৈপুল্য লাভ , দেবগণও প্রসন্ন হন। “

(প্রকাশক- ত্রিপিটক পাবলিশিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ)

এখানে দেখা যায় এক সময় অন্যান্য পশুর সাথে যজ্ঞে গরুবলিও হত।

১৪৪ তম লাঙ্গুষ্ঠ জাতকে বোধীসত্ত্ব উদীচ্য ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অগ্নির উদ্দেশ্যে গোমাংস উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন এবং পরিশেষে গরুর লেজ, চামড়া, জঙ্ঘা ইত্যাদি অগ্নিতে নিক্ষেপ করেছিলেন। নিচে সম্পূর্ণ জাতকটিই দেওয়া হল সকল পাঠকদের জন্য-  

(শাস্তা জেতবনে আজীবকদিগের মিথ্যা তপস্যার সম্বন্ধে এই কথা বলিয়াছিলেন। সেই সময়ে নাকি আজীবকেরা জেতবনের পশ্চাবর্তী ভূভাগে নানাবিধ মিথ্যা তপশ্চর্যা করিত। তাহারা জঙ্ঘার উপর ভর দিয়া বসিয়া থাকিত, বাদুড়ের ন্যায় অধোমুখে ঝুলিত, কণ্টকের উপর শুইত এবং কণ্টাগ্নি সেবন করিত। তাহাঁদিগের এইরূপ মিথ্যা তপশ্চর্যা দেখিয়া ভিক্ষুরা ভগবানকে জিজ্ঞাসা করিলেন , ‘প্রভু, এইরূপ মিথ্যা তপস্যায় কি কোনো লাভ আছে? ‘ শাস্তা বলিলেন, ‘ভিক্ষুগণ! এবংবিধ মিথ্যা তপস্যায় কিছুমাত্র ইষ্টাপত্তি নাই। পুরাকালে পণ্ডিতেরা এইরূপ মিথ্যা তপস্যায় কল্যাণ হইবে মনে করিয়া জাতাগ্নি লইয়া বনে গিয়াছিলেন, কিন্তু হোমাদি ক্রিয়ার কোনো ইষ্টাপত্তি ঘটে নাই বলিয়া জলদ্বারা অগ্নি নির্বাপিত করিয়াছিলেন এবং পরিণামে কৃৎস্নপরিকর্মের বলে অভিজ্ঞা ও সমাপত্তি লাভ করিয়া ব্রহ্মলোকপরায়ণ হইয়াছিলেন ।‘ অনন্তর তিনি সেই অতীত কথা বলিতে আরম্ভ করিলেনঃ- )

পুরাকালে বারাণসীরাজ ব্রহ্মদত্তের সময় বোধীসত্ত্ব উদীচ্য ব্রাহ্মণকুলে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন । তিনি যেদিন ভূমিষ্ঠ হইয়াছিলেন সেইদিনই তাহার মাতাপিতা জাতাগ্নি গ্রহণ করিয়া অগ্নিশালায় স্থাপন করিয়াছিলেন। অনন্তর বোধিসত্ত্বের বয়স যখন ষোল বৎসর তখন তাহারা বলিলেন, ‘আমরা তোমার জাতাগ্নি রক্ষা করিতেছি । যদি তুমি গৃহ ধর্ম করিতে চাও তাহা হইলে বেদত্রয় অধ্যয়ণ কর ; আর যদি ব্রহ্মলোকে গমন করিবার অভিলাষী হও , তাহা হইলে এই অগ্নিসহ অরণ্যে গমন পূর্বক অগ্নির পরিচর্যা দ্বারা মহাব্রহ্মের আরাধনা করিয়া ব্রহ্মলোকপরায়ণ হও।‘ বোধিসত্ত্ব উত্তর দিলেন, ‘গৃহ ধর্মে আমার প্রয়োজন নাই।‘ ইহা বলিয়া তিনি ঐ অগ্নি লইয়া বনে গেলেন এবং সেখানে আশ্রমপদ প্রস্তুত করিয়া অগ্নির পরিচর্যা করিতে লাগিলেন।

বোধিসত্ত্ব কোনো একদিন এক প্রত্যন্ত গ্রামে দক্ষিণা স্বরূপ একটি গো লাভ করিয়াছিলেন। তিনি ঐ গরুটিকে আশ্রমে আনিয়া ভাবিতে লাগিলেন, ‘ভগবান অগ্নিকে গোমাংস খাওয়াইব।‘ কিন্তু ইহার পরেই তাহার মনে হইল , ‘আশ্রমে ত লবণ নাই; ভগবান বিনা লবণে আহার করিতে পারিবেন না। অতএব গ্রাম হইতে লবণ আনিয়া ভগবান অগ্নিকে সলবণ খাদ্য দিতে হইবে।‘ তখন তিনি গরুটিকে এক স্থানে বান্ধিয়া রাখিয়া লবণ আনিবার জন্য কোনো গ্রামে গমন করিলেন।

বোধিসত্ত্ব চলিয়া যাইবার পর কতিপয় ব্যাধ সেখানে উপস্থিত হইয়া গরুটিকে দেখিতে পাইল এবং উহাকে বধ করিয়া মাংস রান্ধিয়া খাইল। তাহারা যে মাংস খাইতে পারিল না, তাহাও লইয়া গেল, সেখানে কেবল গরুটার লাঙ্গুল, জঙ্ঘা বা চর্ম পড়িয়া রহিল। বোধিসত্ত্ব আশ্রমে আসিয়া এই তিন দ্রব্য দেখিয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন, ‘তাই ত, ভগবান অগ্নি দেখিতেছি, নিজের সম্পত্তি রক্ষা করিতেও অসমর্থ । তিনি তবে আমায় কিরূপে রক্ষা করিবেন? এরূপ অগ্নির পূজা করা নিরর্থক । ইহাতে কিছুমাত্র ইষ্টাপত্তি নাই ।‘ এইরূপে অগ্নি পরিচর্যা সম্বন্ধে হতশ্রদ্ধ হইয়া বোধিসত্ত্ব অগ্নিকে সম্বোধন পূর্বক কহিলেন, ‘ ভো ভগবন অগ্নে! আপনি যখন নিজের সম্পত্তি রক্ষা করিতে অসমর্থ , তখন আমায় কিরূপে রক্ষা করিবেন ? মাংস ত নাই; এখন ইহা খাইয়াই পরিতোষ লাভ করুন।‘ ইহা বলিয়া তিনি লাঙ্গুলাদি যাহা অবশিষ্ট ছিল , তাহা অগ্নিতে নিক্ষেপ পূর্বক এই গাথা বলিলেনঃ

‘ছি ছি অগ্নি! হেয় তুমি বুঝিলাম আজ,

নিত্য নিত্য পূজি তোমা কিবা হয় কাজ?

দিতেছি লাঙ্গুল এই খাও যদি পার;

ইহার তোমার পক্ষে পর্যাপ্ত আহার।

জানি আমি মাংসপ্রিয় তুমি সাতিশয়,

তবে না রক্ষিলে কেন, মাংস মহাশয়?

মাংস নাই আছে মাত্র লেজ, হাড়, চাম;

ইহাই খাইয়া কর, ক্ষুধার বিরাম। ‘

(ইহা বলিয়া বোধিসত্ত্ব জল দ্বারা অগ্নি নির্বাপণ করিলেন এবং ঋষি প্রব্রজ্যা গ্রহণপূর্বক অভিজ্ঞা ও সমাপত্তি লাভানন্তর ব্রহ্মলোকপরায়ণ হইলেন।

সমবধান- তখন আমি ছিলাম এই তাপস , যিনি জল দ্বারা অগ্নি নির্বাপিত করিয়াছিলেন )

( প্রকাশক- ত্রিপিটক পাবলিশিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ)

সূত্র পিটক,দীর্ঘ নিকায়, শীলস্কন্ধ বর্গ, কূটদত্ত সুত্রে আছে  এক ব্রাহ্মণের যজ্ঞে বলি দেওয়ার জন্য সাতশত বৃষ, সাতশত বৎসতর, সাতশত বৎসতরী, সাতশত ছাগল এবং সাতশত মেষ আনা হয়েছিল  –

“ আমি এইরূপ শ্রবণ করিয়াছি । একসময় ভগবান পঞ্চশত ভিক্ষু-সমন্বিত মহাভিক্ষু সংঘের সহিত  মগধে ভ্রমণ করিতে করিতে ঐ দেশের খানুমত নামক ব্রাহ্মণ গ্রামে উপনীত হইলেন ।ওই সময় ব্রাহ্মণ কূটদন্ত রাজভোগ্য, রাজদায়, ব্রহ্মদায় রূপে মগধরাজ শ্রেণিক বিম্বিসার কর্তৃক প্রদত্ত জনাকীর্ণ তৃণকাষ্ঠ-উদক-ধান্যসম্পন্ন খানুমতে বাস করিতেছিলেন। ওই সময় কূটদন্ত ব্রাহ্মণের মহাযজ্ঞ উপস্থিত হইয়াছিল। সাতশত বৃষ, সাতশত বৎসতর, সাতশত বৎসতরী, সাতশত ছাগ এবং সাতশত মেষ যজ্ঞার্থে যূপকাষ্ঠে নীত হইয়াছিল।“ ( প্রকাশক- ত্রিপিটক পাবলিশিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ)

মধ্যম নিকায়, মধ্যম পঞ্চাশ, গৃহপতি বর্গ,কন্দরক সূত্রে যজ্ঞে গরু হত্যার কথা পাওয়া যায়-


৯. ভিক্ষুগণ, কোনো ব্যক্তি আত্মন্তপ-আত্মপরিতাপজনক কার্যে নিযুক্ত ও পরন্তপ-পরিতাপানুযোগে নিযুক্ত? ভিক্ষুগণ, জগতে কোনো ব্যক্তি মূর্ধাভিষিক্ত (মুকুটাভিষিক্ত) ক্ষত্রিয় রাজা কিংবা মহাশাল ব্রাহ্মণ হন , তিনি নগরের পূর্বদিকে অভিনব যজ্ঞশালা (সন্থাগার) নির্মাণ করিয়া, কেশশ্মশ্রু মুণ্ডন করিয়া সখুর মৃগচর্ম পরিধান করেন, ঘৃত ও তৈল দ্বারা শরীর মর্দন (সংবাহন) করেন, মৃগশৃঙ্গ দ্বারা পৃষ্ঠদেশ কণ্ডুয়ন করিতে করিতে স্বীয় মহিষী ও পুরোহিত ব্রাহ্মণসহ যজ্ঞশালায় প্রবেশ করেন । তিনি অন্তর (বিছানা) হীন ভূমিতে সবুজ তৃণে শয্যা রচনা করেন। সমবর্ণ বৎসবতী এক গাভীর প্রথম স্তনে যে দুধ হয় , তদ্বারা রাজা দিন যাপন করেন। দ্বিতীয় জনের দুধ দ্বারা মহিষী যাপন করেন, তৃতীয় জনের দুধ দ্বারা পুরোহিত ব্রাহ্মণ যাপন করেন ও চতুর্থ জনের দুধ দ্বারা (তাহারা) অগ্নি হোম (জুহন) করেন। অবশিষ্ট ক্ষীর দ্বারা বাছুর জীবন ধারণ করে। সে রাজা আদেশ করেন, ‘যজ্ঞের  নিমিত্ত এতগুলি বৃষ …এতগুলি বাছুর ( বৎসতর) … বৎসতরী… ভেড়া হত্যা করা (বলি দেওয়া) হউক। যূপকাষ্ঠের জন্য এতসংখ্যক বৃক্ষ ও যজ্ঞ-ভূমির ঘেরা ও আচ্ছাদনের নিমিত্ত এই পরিমাণ দর্ভ (কুশ) তৃণ ছেদন করা হউক।‘ যে সকল দাস, ভৃত্য, কর্মচারী তথায় থাকে; তাহারাও দণ্ড তর্জিত, ভয় তর্জিত সাশ্রুনয়নে রোদন করিতে করিতে ইহার আয়োজন করে । ভিক্ষুগণ এই ব্যক্তিই আত্মন্তপ-আত্মপীড়াজনক ব্রতানুষ্ঠানে নিরত এবং পরন্তপ-পরদুঃখজনক কর্মানুষ্ঠানে নিয়োজিত।“ (প্রকাশক- ত্রিপিটক পাবলিশিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ)

সূত্রপিটক,অঙ্গুত্তর নিকায়, সপ্তক নিপাত, মহাযজ্ঞ বর্গ এ রয়েছে এক ব্রাহ্মণের যজ্ঞে গরু সহ অনেক পশুকে বলি দেওয়ার জন্য আনা হয়েছিল কিন্তু গৌতম বুদ্ধের উপদেশে সেই পশুগুলোকে সেই ব্রাহ্মণ মুক্ত করে দেয়। –


“ ৪৭.১ একসময় ভগবান শ্রাবস্তীর জেতবনে অনাথপিণ্ডকের বিহারে অবস্থান করছিলেন। সে সময় উগ্গতসরীর ব্রাহ্মণের উদ্দেশ্যে এক মহাযজ্ঞ প্রস্তুত হচ্ছিল। যজ্ঞের জন্য পঞ্চশত ভেড়া, পঞ্চশত এঁড়ে বাছুর, পঞ্চশত বকনা বাছুর, পঞ্চশত ছাগল, পঞ্চশত মেষ যজ্ঞ স্তম্ভের নিকট আনীত হল। …”

সেই ব্রাহ্মণকে উপদেশদানকালে গৌতম বুদ্ধ বলেন, “ ৫. পুনঃ হে ব্রাহ্মণ, যজ্ঞের পূর্বেই অগ্নি স্থাপনকারী , যজ্ঞস্তম্ভ উত্তোলনকারী এরূপ বাক্য ভাষণ করেঃ ‘যজ্ঞে এত সংখ্যক ষাঁড় , এত সংখ্যক বাছুর, এত সংখ্যক বকনা বাছুর, এত সংখ্যক ছাগল, এত সংখ্যক মেষ হত্যা করুন।‘ সে পুণ্য করছি ভেবে অপুণ্যই করে, কুশল করছি ভেবে অকুশলই সম্পাদন করে, সুগতি মার্গ অনুসন্ধান করছি ভেবে দুর্গতি মার্গেরই অনুসন্ধান করে …” ( গৌতম বুদ্ধের সম্পূর্ণ উপদেশ জানতে মূল গ্রন্থ পড়ুন)

গৌতম বুদ্ধের উপদেশে সেই ব্রাহ্মণ যজ্ঞে হত্যার জন্য আনা পশুদের মুক্ত করে দেয়।

(চলবে… )


অজিত কেশকম্বলী II

"মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।"

One thought on “হিন্দু ধর্ম ও গোমাংস-রহস্যঃ পাণিনি, চরক, সুশ্রুত, অর্থশাস্ত্র, ত্রিপিটক

  • পল্লব কুমার রায়

    “একটি হরিণকে তীরে বধ করা হয়েছে”। আপাত দৃষ্টিতে এই বাক্যটির দুটি অর্থ হতে পারে।
    এক হলো,হরিণকে নদীর তীরে বধ করা হয়েছে,অপরটি হলো,হরিণকে তীর দিয়ে বধ করা হয়েছে।
    এখন যে ব্যক্তি যে অর্থ বুঝে,সে ব্যক্তি সেটাই অন্যদের বুঝাবে।

    কিন্তু বাক্যটিতে তীর শব্দটির অর্থ হলো নদীর পাড়।আমি বুঝাতে চাচ্ছি,অবশ্যই কোনো ভাষার অর্থ করতে গেলে,
    সেই ভাষার সবকিছু বিস্তারিত জানতে হবে।

    আর কোনো শব্দের অর্থ একেক সময় একেক রকম হতেই পারে।যেমন ধরুন প্রচলিত শব্দ “জামাই”।এর অর্থ নিজের মেয়ের স্বামীকে জামাই বলা হয়।কিন্তু বর্তমানে নিজের স্বামীকেই স্ত্রীরা জামাই বলে থাকে।

    যদি কোনো স্ত্রী তার ডায়েরিতে লিখে রাখত,”আমার জামাই এবং মেয়ের ছেলে হয়েছে।” তাহলে বর্তমান সমাজ সেটিকে ঘৃণ্য চোখে দেখবে,কারন তারা জানেন জামাই হলো নিজের স্বামী।আর তার স্বামী আর তার মেয়ের কিভাবে ছেলে হতে পারে?এর মানে বর্তমান সমাজ ভাব্বে,অবশ্যই তার স্বামী নিজের মেয়ের সাথে সে*ক্স করেছে।

    অপরদিকে বর্তমানে আমরা পরিক্ষার খাতায়,ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখতে যতটা ভুল করি।তাহলে কি সেইসব বড় বড় গ্রন্থ লিখতে সামান্য পরিমাণ ভুল হয়নি?আপনার এই লেখাতেই তো “ভগবান” না লিখে “ভগবন” লিখেছেন।

    বেদ মুনি-ঋষিদের থেকে সংকলিত লিখিত জ্ঞান।তাহলে আমি যদি বলি,”জীবনের একটি ভীমের মতো শক্তিশালী ছেলে আছে।”আর আপনি শুনলেন বীমের মতো শক্তিশালী।এটা কি সম্ভব নয়?

    দীর্ঘসময় একেই কাজ করলে,স্বভাবতই মস্তিস্ক আমাদের দ্বারা ভুল করায়।আপনি কি আমার পয়েন্ট গুলো বুঝতে পারছেন?আর আমার লেখা একটি “অসমাপ্ত ডায়েরি” কবিতা ছিলো।যেটি আমার স্কুল শিক্ষক আমাকে না জানিয়ে,কিছু সংখ্যক শব্দ পরিবর্তন করে পেপারে ছাপিয়ে দেয় আমার নাম করে।এখন আমার মৃত্যুর পর যদি সেই কবিতাটি কোনো কারণে বিখ্যাত হয়,তাহলে সেই অবিকৃত কবিতার, নাকি বিকৃত কবিতার তাৎপর্য থাকবে?

    পরিশেষে বলতে চাই,আমাদের সনাতন ধর্মের গ্রন্থগুলিকে বহুবার হুমকি,মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে এবং আসল গ্রন্থগুলিকে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে।আপনাকে সনাতন ধর্মের তত্বকথা আলোচনা করতে হলে,অবশ্যই সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থের সাহায্য নিতে হবে এবং তার যথাযথ অনুবাদ করে উন্মুক্ত আলোচনা করতে হবে।

    ধর্মকে পুঁজি করে ব্যবসা সবাই করে,আপনিও করতেছেন।কারন এসব তথ্য দিয়ে,মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে,ওয়েবসাইট,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে নিচ্ছেন।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *