কোরআন এবং উল্কা

Print Friendly, PDF & Email

সূচনা

কোরআনের সূরা আল-মুলকের ৫ নং আয়াতটি পড়লে বোঝা যায়, কোরআনের লেখক উল্কাকে তারকারাজির সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন। আয়াতটি পড়লে বোঝা যায়, তিনি জানতেন না যে মাঝেমাঝে আকাশে ছুটে চলা তারার মতো যা দেখা যায় তা আসলে কোনো তারা নয়, যা কোরআনের বৈজ্ঞানিক ভুলের একটি ভালো উদাহরণ এবং যা প্রমাণ করে কোরআন একটি মানব রচিত গ্রন্থ। এই প্রবন্ধে কোরআনের এই অসংগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

উল্কা কি?

উল্কা হচ্ছে মহাকাশে থাকা ছোট শিলাময় বা ধাতব বস্তু। [1] উল্কাসমূহ গ্রহাণু থেকে ছোট এবং একটি শস্যকণা শুরু করে এক মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত হতে পারে। [1] এরচেয়েও ছোট বস্তুসমূহকে Micrometeoroids বা ‘মহাশূন্যের ধূলিকণা’ বলা হয়। [1]

সাধারণত সেকেন্ড প্রতি ২০ কিলোমিটার পরিমানের বেশি গতিতে কোনো উল্কা, ধূমকেতু বা গ্রহাণু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে বায়ুর সাথে সেই বস্তুর সংঘর্ষের ফলে উত্তাপ সৃষ্টি হওয়া আলোর একটি রেখা তৈরি করে। পৃথিবী থেকে এই ঘটনা দেখলে মনে হয় আকাশের কোনো তারা একদিকে ছুটে চলছে। একসময়কার মানুষরা সেটাকেই সত্য বলে বিশ্বাস করতো। বিজ্ঞানের অবদানে আজ আমরা প্রকৃতির অনেককিছুই জানি এবং বুঝি, যা একসময়কার মানুষরা জানতো না, বুঝতো না। কোনো ঘটনার পেছনে থাকা প্রকৃত সত্য না জানলে কোনো অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যা বা নিজেদের অনুমাননির্ভর কোনো ধারণাকেই প্রকৃত সত্য বলে ধরে নিতো।

কোরআন কি বলে?

প্রাচীনকাল বা মধ্যযুগের মানুষদের রাতের আকাশে উল্কা বা গ্রহাণু দেখলে সেটাকে আকাশের তারাই মনে করতে হতো, তাদের বোঝার কোনো উপায় ছিলো না যে ওটাকে দেখে ‘ছুটে চলা তারা’ মনে হলেও ওটা কোনো তারা নয়। প্রাচীনকাল বা মধ্যযুগের একজন সাধারণ মানুষ রাতের আকাশে উল্কা দেখে সেটাকে ‘ছুটে চলা তারা’ মনে করলেও, কোনো সর্বজ্ঞানী ঈশ্বর এই ভুলটা করবেন না। কোনো ধর্মগ্রন্থ পড়ে যদি এমনটা বোঝা যায় যে সেই ধর্মের ঈশ্বর রাতের আকাশে উল্কাকে তারা মনে করেন, তাহলে বুঝতে হবে ধর্মগ্রন্থটি কোনো সাধারণ মানুষের লেখা, যার মধ্যে তার সমসাময়িক ভুল বিশ্বাস ছিলো।

আমরা সবাই এবিষয়ে একমত হতে পারি যে, কোনো ধর্মগ্রন্থ যদি আসলেই ঐশ্বরিক হয়, মানবরচিত না হয়, তাহলে সেই ধর্মগ্রন্থ কোনো ভুল তথ্য ধারণ করবে না, কোনো ভুল বিশ্বাস সেই ধর্মগ্রন্থে স্থান পাবে না। মুসলিমরা দাবি করেন, তাদের ধর্মগ্রন্থে বিন্দুমাত্র ভুল নেই, কোরআন নাজিল হওয়ার সমসাময়িক কোনো ভুল বিশ্বাসের লেশমাত্র নেই। তবে দুঃখজনকভাবে সেটি মুসলিমদের আরও একটি ভুল বিশ্বাস বা তাদের ধর্মের প্রতি তাদের অন্ধত্ব ছাড়া কিছুই না। কেননা, কোরআনের আয়াত থেকে খুব পরিষ্কারভাবেই এটি প্রতীয়মান হয় যে কোরআন যার বাণী তিনি রাতের আকাশে ছুটে চলা উল্কাকে ‘ছুটে চলা তারা’ মনে করতেন, যা মধ্যযুগের সাধারণ মানুষদের মধ্যে প্রচলিত একটি ভুল বিশ্বাসকেই তুলে ধরে।

সূরা আল-মুলকের ৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ নক্ষত্রসমূহ দ্বারা আকাশকে সাজিয়েছেন এবং সেসব নক্ষত্রসমূহকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছেন। একাধিক নির্ভরযোগ্য অনুবাদের সাথে আয়াতটি তুলে ধরছি,

وَلَقَدْ زَيَّنَّا ٱلسَّمَآءَ ٱلدُّنْيَا بِمَصَـٰبِيحَ وَجَعَلْنَـٰهَا رُجُومًۭا لِّلشَّيَـٰطِينِ ۖ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ ٱلسَّعِيرِ ٥

And verily We have beautified the world’s heaven with lamps, and We have made them missiles for the devils, and for them We have prepared the doom of flame.
— English Translation (Pickthall)

And we have, (from of old), adorned the lowest heaven with Lamps, and We have made such (Lamps) (as) missiles to drive away the Evil Ones, and have prepared for them the Penalty of the Blazing Fire.
— English Translation (Yusuf Ali)

আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দিয়ে সুসজ্জিত করেছি আর শয়ত্বানকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য, এবং প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।
— Taisirul Quran

আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং ওগুলিকে করেছি শাইতানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।
— Sheikh Mujibur Rahman

আমি নিকটবর্তী আসমানকে প্রদীপপুঞ্জ দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং সেগুলোকে শয়তানদের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের আযাব।
— Rawai Al-bayan

(কোরআন ৬৭:৫)

নিঃসন্দেহেই, ‘প্রদীপমালা’ শব্দটি আলোচ্য আয়াতে রাতের আকাশের উজ্জ্বল তারকারাজিকে নির্দেশ করে। কেননা, রাতেরবেলা আকাশের দিকে তাকালে আমরা সাধারণত উজ্জ্বল তারকারাজিকেই দেখতে পাই।
অপরদিকে, উল্কা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পর জ্বলে উঠলে কেবল সামান্য কিছু মূহুর্তের জন্যই দৃশ্যমান হয়ে থাকে, তাছাড়া পৃথিবী থেকে উল্কা দেখা যায় না। আলোচ্য আয়াতে নিশ্চয়ই সেই বস্তুর দ্বারা আকাশকে সুশোভিত করার কথা বলা হয়নি যে বস্তু কখনো কখনো সামান্য কিছু মুহূর্তের জন্য দৃশ্যমান হওয়া ছাড়া আকাশে দেখাই যায়না।

লক্ষ্য করুন, আলোচ্য আয়াত অনুযায়ী যে প্রদীপমালা দ্বারা আল্লাহ আকাশকে সুশোভিত করেছেন সেই প্রদীপমালাকেই আবার শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছেন। অর্থ্যাৎ, আলোচ্য আয়াত অনুযায়ী যে তারকারাজি দ্বারা আল্লাহ আকাশকে সুশোভিত করেছেন সেই তারকারাজিকেই আবার শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের বস্তু বানিয়েছেন। এথেকে বোঝা যায়, কোরআনের লেখক জানতেন না যে রাতের আকাশে ছুটে চলা তারার মতো যা অনেকসময় দেখা যায় তা আসলে কোনো তারা নয়, বরং একটি তারার তুলনায় অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি বস্তু।

উপসংহার

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে কোরআনের লেখক উল্কাকে তারকারাজির সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন, উল্কাপাত দেখলে তিনি মনে করতেন তারা ছুটে যাচ্ছে, যা প্রমাণ করে কোরআন কোনো ঐশ্বরিক গ্রন্থ নয়।


তথ্যসূত্র

  1. Meteoroid – Wikipedia [][][]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

Marufur Rahman Khan

Marufur Rahman Khan is an Atheist Blogger from Bangladesh.

2 thoughts on “কোরআন এবং উল্কা

  • December 6, 2019 at 11:54 AM
    Permalink

    hi, nice to talk to you, u r giving metaphore as scientific explanation, I think u still believe in islam, that’s why u r writing against it, to feel you hate it,
    if u know islam is wrong why wasting time on it? I just asked simply. curious to know you.
    u r feminist, I don’t like these types of ppl. truly to say. cz if anything happens between a grl and a boy a feminist force to prove that the boy is wrong. grl are soft, they don’t do hard job. although he is a boy. I just thought about you. don’t mind on it.
    and if you find a religion based on science, how many ppl will make it, u think, are ppl around einstein or newton. even newtons theory are proved wrong after 1000 yrs by einstein theory. then how long a religion will hold based on science. I don’t know. our knowledge about science always change or upgrade or degrade.
    whatever I just thought about it. nothing else I think to fight with.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *