ভূমিকা
ইসলাম ধর্মে আল্লাহকে সর্বশক্তিমান, অমুখাপেক্ষী এবং স্রষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যিনি সমস্ত সৃষ্টির উপরে ক্ষমতাবান এবং যিনি কারো ওপর নির্ভরশীল নন। আল্লাহর এই অবস্থান এমন একটি ধারণা সৃষ্টি করে, যেখানে তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিখুঁত এবং সব ধরনের প্রয়োজন থেকে মুক্ত। তবে, কোরআনের কিছু আয়াতে এমন কিছু বক্তব্য দেখা যায়, যা এই অবস্থান এবং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। যেমন, কোরআনের সূরা মুহাম্মদ (আয়াত ৭), সূরা বাকারা (আয়াত ২৪৫), সূরা হাদিদ (আয়াত ১১ এবং ১৮) এবং সূরা আত-তাগাবুন (আয়াত ১৭)-এ আল্লাহকে মানুষের কাছে ঋণ চাওয়ার পরামর্শ দিতে দেখা যায়। যদি আল্লাহ সত্যিই সবকিছুর স্রষ্টা এবং মালিক হন, তবে কেন তাকে কোনো কিছুর জন্য সামান্য মানুষের কাছে “ঋণ” চাইতে হবে? যিনি হও বললেই সবকিছু হয়ে যায়, তিনি কাতর সুরে মানুষের কাছ থেকে ধারকর্য করছেন, বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর। এ ধরনের বক্তব্য একটি অমুখাপেক্ষী সত্তার দাবীর সাথে যৌক্তিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে এবং একটি গুরুতর দার্শনিক প্রশ্নের জন্ম দেয়: একটি সর্বশক্তিমান সত্তার পক্ষ থেকে মানুষের কাছে ঋণ চাওয়া কি তার প্রকৃতির সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করে না?
সূরা মুহাম্মদ, আয়াত ৭
O you who have believed, if you support Allāh, He will support you and plant firmly your feet.
— Saheeh International
O ye who believe! If ye help Allah, He will help you and will make your foothold firm.
— M. Pickthall
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর, তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন আর তোমাদের পাগুলোকে দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।
— Taisirul Quran
হে মু’মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর তবে আল্লাহও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সুদৃঢ় করে দেবেন।
— Rawai Al-bayan
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, তবে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সমূহ সুদৃঢ় করবেন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা বাকারা, আয়াত ২৪৫
Who is it that would loan Allāh a goodly loan so He may multiply it for him many times over? And it is Allāh who withholds and grants abundance, and to Him you will be returned.
— Saheeh International
Who is it that will lend unto Allah a goodly loan, so that He may give it increase manifold? Allah straiteneth and enlargeth. Unto Him ye will return.
— M. Pickthall
এমন ব্যক্তি কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম কর্জ প্রদান করবে? তাহলে তার সেই কর্জকে তার জন্য আল্লাহ বহু গুণ বর্ধিত করে দেবেন এবং আল্লাহই সীমিত ও প্রসারিত ক’রে থাকেন এবং তাঁর দিকেই তোমরা ফিরে যাবে।
— Taisirul Quran
কে সে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণদান করে? অনন্তর তিনি তাকে দ্বিগুণ, বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহই (মানুষের আর্থিক অবস্থাকে) কৃচ্ছ বা স্বচ্ছল করে থাকেন এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
— Sheikh Mujibur Rahman
কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন? আর আল্লাহ সংকীর্ণ করেন ও প্রসারিত করেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরানো হবে।
— Rawai Al-bayan
কে সে, যে আল্লাহ্কে কর্যে হাসানা প্রদান করবে ? তিনি তার জন্য তা বহুগুনে বৃদ্ধি করবেন [১।] আর আল্লাহ্ সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করেন এবং তাঁর দিকেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা হাদিদ, আয়াত ১১
Who is it that would loan Allāh a goodly loan so He will multiply it for him and he will have a noble reward?
— Saheeh International
Who is he that will lend unto Allah a goodly loan, that He may double it for him and his may be a rich reward?
— M. Pickthall
এমন কে আছে যে, আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিবে? তাহলে তিনি তা তার জন্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিবেন আর তার জন্য আছে সম্মানজনক প্রতিফল।
— Taisirul Quran
কে আছে যে আল্লাহকে দিবে উত্তম ঋণ? তাহলে তিনি বহু গুণে একে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।
— Sheikh Mujibur Rahman
এমন কে আছে যে, আল্লাহকে উত্তম করয দিবে ? তাহলে তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।
— Rawai Al-bayan
এমন কে আছে যে আল্লাহকে দেবে উত্তম ঋণ? তাহলে তিনি বহু গুণ এটাকে বৃদ্ধি করবেন তার জন্য। আর তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরুস্কার [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা হাদিদ, আয়াত ১৮
Indeed, the men who practice charity and the women who practice charity and [they who] have loaned Allāh a goodly loan – it will be multiplied for them, and they will have a noble reward.
— Saheeh International
Lo! those who give alms, both men and women, and lend unto Allah a goodly loan, it will be doubled for them, and theirs will be a rich reward.
— M. Pickthall
দানশীল পুরুষরা আর দানশীলা নারীরা আর যারা আল্লাহকে ঋণ দেয়- উত্তম ঋণ, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে, আর তাদের জন্য আছে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিদান।
— Taisirul Quran
দানশীল পুরুষ ও দানশীলা নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ বেশি এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম করয দেয়, তাদের জন্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় দানশীল পুরুষগণ ও দানশীল নারীগণ এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ বেশী এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত ১৭
If you loan Allāh a goodly loan, He will multiply it for you and forgive you. And Allāh is [most] Appreciative1 and Forbearing,2
— Saheeh International
If ye lend unto Allah a goodly loan, He will double it for you and will forgive you, for Allah is Responsive, Clement,
— M. Pickthall
তোমরা যদি আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তবে তিনি তা তোমাদের জন্য দ্বিগুণ করে দেবেন, আর তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আল্লাহ (কারো কাজের) অতি মর্যাদাদানকারী, সহনশীল।
— Taisirul Quran
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ওটা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী ও সহনশীল।
— Sheikh Mujibur Rahman
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তিনি তা তোমাদের জন্য দ্বিগুন করে দিবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, পরম ধৈর্যশীল।
— Rawai Al-bayan
যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর তিনি তোমাদের জন্য তা বহু গুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ গুণগ্ৰাহী, পরম সহিষ্ণু।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সর্বশক্তিমান ও অমুখাপেক্ষী সত্তার সাথে “ঋণ” ধারণার সাংঘর্ষিকতা
যদি আমরা আল্লাহকে এমন এক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করি, যিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং নিজেই সবকিছুর উৎস, তাহলে এই সত্তার কাছে মানুষের দান, ঋণ বা যেকোনো ধরনের উপকরণ নেওয়ার প্রয়োজন হওয়া উচিত নয়। কেননা, তিনি যা চান তা মুহূর্তের মধ্যেই সৃষ্টি করতে পারেন, যা কিছু চান তা তৈরি করতে পারেন, এবং কোনো কিছুর জন্য কারো ওপর নির্ভরশীল নন। তাহলে প্রশ্ন আসে, কেন এই ধরনের আয়াতগুলোতে আল্লাহ নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করছেন, যেখানে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি মানুষের কোনো দয়াদাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভরশীল?
একজন সর্বশক্তিমান সত্তা কি আসলেই “ঋণ” চাইতে পারেন? ঋণ চাওয়ার মানে হলো, ঋণগ্রহীতা নিজে কিছুটা অসহায় বা নির্ভরশীল এবং অন্যের সহায়তা বা উপকরণ প্রাপ্তির প্রয়োজন বোধ করছেন। কিন্তু যদি আল্লাহ স্বয়ং এই ধরনের চাহিদার কথা ব্যক্ত করেন, তবে এটি কি তার সর্বক্ষমতা ও অমুখাপেক্ষীতার ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক নয়? এখানে “ঋণ” শব্দটি যদি কেবল প্রতীকী অর্থেই ব্যবহৃত হয়, তবে প্রশ্ন ওঠে, কেন কোরআনের মতো একটি ঐশ্বরিক গ্রন্থে এমন একটি অসংগত শব্দচয়ন ব্যবহৃত হলো? এমনকি প্রতীকী অর্থেও এটি একটি বিভ্রান্তিকর এবং অস্পষ্ট বক্তব্য, যা আল্লাহর অন্যান্য দাবীর সাথে যৌক্তিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে।
আধ্যাত্মিক ঋণ বনাম আর্থিক ঋণ: একটি দার্শনিক প্রশ্ন
আয়াতগুলোতে আল্লাহর ঋণ চাওয়ার প্রসঙ্গকে যদি আধ্যাত্মিক ঋণ বা প্রতীকী দান হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে আরও একটি দার্শনিক প্রশ্ন সামনে আসে: কেন একজন পরমার্থিক সত্তা নিজেকে “ঋণগ্রহীতা” বা “ঋণের প্রাপক” হিসেবে উপস্থাপন করবেন? ঋণ বা দানের ধারণাটি সম্পদের সীমাবদ্ধতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, যেখানে একজন ঋণগ্রহীতা অন্যের কাছে সাহায্যের প্রত্যাশা করে। যদি আল্লাহ প্রকৃতপক্ষে সবকিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম হন এবং যিনি “কুন ফায়াকুন” অর্থাৎ “হও! আর তা হয়ে যায়” বলে সৃষ্টির আদেশ দেন, তাহলে কেন তাকে মানুষের কাছে ঋণের প্রয়োজন হবে? এই ধরনের বক্তব্যে কি আল্লাহর সত্তার কোনো সীমাবদ্ধতা বা অসহায়ত্বের ইঙ্গিত পাওয়া যায় না? এই আয়াতগুলো কি আল্লাহর সর্বক্ষমতার ওপর একটি প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে না?
যদি আমরা এটিকে প্রতীকী অর্থেও গ্রহণ করি, তবে আরও একটি প্রশ্ন আসে: কেন আল্লাহর মতো একজন অমুখাপেক্ষী সত্তা মানুষের দান বা সম্পদকে একটি “ঋণ” হিসেবে চিহ্নিত করবেন, যা পরে বহুগুণে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়? আল্লাহ ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে মুমিনদেরকে কী সুদ দেবেন? আল্লাহ কি সুদের ব্যবসায়ী নাকি সুদের কারবারি? এটি কি মানুষের ধর্মীয় আস্থা এবং দানের মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে একটি আদান-প্রদান সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা নয়? যদি আল্লাহ মানুষের দানের ওপর নির্ভরশীল না হন, তাহলে কেন তাদের “ঋণ” দিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, যেখানে আখিরাতে তার প্রতিদান বহুগুণে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে?
ধর্মীয় ও দার্শনিক যুক্তির দ্বন্দ্ব: মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচনা
আল্লাহর ঋণ চাওয়ার বিষয়টি একদিকে যদি প্রতীকী বা আধ্যাত্মিকভাবেও বিবেচিত হয়, তারপরেও এটি একটি গুরুতর যৌক্তিক ও দার্শনিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। একজন অমুখাপেক্ষী সত্তার পক্ষ থেকে এমন আহ্বান কি আদৌ যৌক্তিক? এরূপ বক্তব্য কি আল্লাহর পরমার্থিকতা, সর্বশক্তিমত্তা এবং সম্পূর্ণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে না?
এমনকি যদি আল্লাহ এই আয়াতগুলোতে মানুষের হৃদয়ে দানশীলতা ও উদারতার বীজ বপনের চেষ্টা করেন, তবে “ঋণ” শব্দটির ব্যবহার কেন? এটি কি তার নিজের মর্যাদা ও মহত্ত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? আল্লাহ যদি সত্যিই মানুষের দানের প্রয়োজন অনুভব না করেন, তবে কেন এমন আয়াতের প্রয়োজন পড়ল, যেখানে “ঋণ” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে?
উপসংহার: বিশ্বাসের সীমাবদ্ধতা এবং যুক্তির দাবি
আল্লাহর সর্বশক্তিমান, অমুখাপেক্ষী এবং নির্ভরশীলতার ধারণার সঙ্গে “ঋণ চাওয়ার” আয়াতগুলো একটি গভীর বৈপরীত্য তৈরি করে। এটি একটি যৌক্তিক, দার্শনিক ও ধর্মীয় দ্বন্দ্ব, যেখানে ঈমানদারদের বিশ্বাসের ভিত্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। একদিকে, ইসলামের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন আল্লাহ কারো ওপর নির্ভরশীল নন, অন্যদিকে এই ধরনের আয়াতগুলোতে আল্লাহ নিজেই নিজের প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করছেন।
যদি কোরআনকে একটি পরিপূর্ণ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করা হয়, তবে এর ভাষা ও বক্তব্যে এমন কোনো অসংগতি থাকা উচিত নয়, যা বিশ্বাসীদের মনে বিভ্রান্তি বা প্রশ্নের জন্ম দেয়। তাই, এই ধরনের আয়াতগুলো কেবলমাত্র প্রতীকী অর্থে না দেখে, সেগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ, ভাষাগত প্রয়োগ এবং দার্শনিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। আর যদি এসব আয়াত কেবলমাত্র মানুষের দানশীলতাকে উৎসাহিত করার জন্যই হয়, তারপরেও প্রশ্ন জাগে, “ঋণ” শব্দের ব্যবহার কি আদৌ যুক্তিযুক্ত?