02.হাজরে আসওয়াদ সাক্ষ্য দিবে

হাজরে আসওয়াদ হল একটি কালো রঙের প্রাচীন পাথর। পাথরটি খুব সম্ভবত আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসা কোন উল্কাপিণ্ড, যা দেখে প্রাচীনকালের মানুষ ভেবেছিল এটি স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন পাথর। এরকম উল্কাপাতের সময় সাধারণত পাথরগুলো উজ্জল আগুনের মত মনে হয়, মাটিতে নেমে আসার পরে দেখা যায় এটি পুড়ে যাওয়া কোন পাথরের মত মনে হচ্ছে। প্রচণ্ড গতিতে বায়ূমণ্ডলের মধ্যে প্রবেশ করার কারণে উল্কাগুলো আগুনের মত জ্বলতে থাকে, পরে ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়। প্রাচীনকালের মানুষের বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় তারা এগুলো সম্পর্কে নানা অলৌকিক কেচ্ছাকাহিনী তৈরি করতো। মুসলিম বিশ্বাস অনুযায়ী এই পাথর আদম ও হাওয়ার সময় থেকে পৃথিবীতে রয়েছে।

মুহাম্মদ ছোটবেলায় হিলফুল ফুজুল নামক একটি সংগঠনের একজন কর্মী ছিলেন। পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে মুহাম্মদ খুব সোচ্চার থাকলেও, বাল্যকালের স্মৃতি বিজড়িত এই কালো পাথরের প্রতি তার ভালবাসার কারণে তিনি পাথরটি কাবাতেই রেখে দেন, এবং এই কালো পাথরকে সম্মানও করেন। যার ফলাফল হিসেবে এই কালো পাথর মুসলিমদের কাছে পরম পুজনীয় এবং সম্মানিত। [1] [2]

বুলুগুল মারাম
পর্ব – ৬ঃ হাজ্জ (হজ্জ/হজ) প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ৫. হাজের বিবরণ ও মক্কায় প্রবেশ – হজ্জরে আসওয়াদের (কালো পাথর) উপর সাজদা করার বিধান
৭৪৭। ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) থেকে বৰ্ণিত। তিনি ’হাজ্জরে আসওয়াদকে চুম্বন করতেন এবং তার উপর মাথা রাখতেন। হাকিম মারফূ’রূপে এবং বায়হাক্বী মাওকুফরূপে।[1]
[1] মারফু-মাওকুফ উভয় বর্ণনায় সহীহ
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

হাজরে আসওয়াদ

সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৯/ হাজ্জ (হজ্জ)
পরিচ্ছেদঃ হাজরে আসওয়াদ রুকন ও মাকামে ইবরাহীমের ফযীলত।
৮৭৮. কুতায়বা (রহঃ) ……. ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে অবতীর্ন হয়েছিল তখন সেটি ছিল দুধ থেকেও শুভ্র। মানুষের গুণাহ- খাতা এটিকে এমন কালো করে দিয়েছে। – মিশকাত ২৫৭৭, তা’লীকুর রাগীব ২/১২৩, আল হাজ্জুল কাবীর, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৮৭৭ (আল মাদানী প্রকাশনী)
এই বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনু আমর ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি হাসান-সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

হাদীস সম্ভার
১০/ হজ্জ
পরিচ্ছেদঃ রুকনদ্বয়ের মাহাত্ম্য
(১১৬৪) আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীম জান্নাতের পদ্মরাগরাজির দুই পদ্মরাগ। আল্লাহ এ দু’য়ের নূর (প্রভা) কে নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন। যদি উভয়মণির প্রভাকে তিনি নিষ্প্রভ না করতেন, তাহলে উদয় ও অস্তাচল (দিগদিগন্ত) কে উভয়ে জ্যোতির্ময় করে রাখত।
(তিরমিযী ৮৭৮, সহীহুল জামে ১৬৩৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ)

শুধু তাই নয়, মুহাম্মদ এমন কথাও বলেছে যে, কিয়ামতের দিনে এই কালো পাথর মানুষের পক্ষে বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। অর্থাৎ এই কালো পাথরের কিছু না কিছু ক্ষমতা তো অবশ্যই আছে, এবং একে খুশি রাখাও জান্নাতে যাওয়ার জন্য জরুরি। মূর্তি এবং পাথরের কোন ক্ষমতা নেই, এই দাবী করা মুহাম্মদের মুখে যখন এরকম স্ববিরোধী বক্তব্য শোনা যায়, তখন হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারি না।

সুনান ইবনু মাজাহ
১৯/ হজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ১৯/২৭. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা
২/২৯৪৪। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন এই পাথরকে উপস্থিত করা হবে। তার দু‘টি চোখ থাকবে, তা দিয়ে সে দেখবে, যবান থাকবে তা দিয়ে সে কথা বলবে এবং সে এমন লোকের অনুকূলে সাক্ষ্য দিবে যে তাকে সত্যতার সাথে চুমা দিয়েছে।
তিরমিযী ৯৬১, আহমাদ ২২১৬, ২৩৯৪, ২৬৩৮, ২৭৯৩, ৩৫০১, দারেমী ১৮৩৯, মিশকাত ২৫৭৮, আত-তালীক আলা ইবনু খুযাইমাহ ২৭৩৫, ২৭৩৬।
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)

সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৭/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ১১৩. হাজরে আসওয়াদ প্রসঙ্গে
৯৬১। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজরে আসওয়াদ প্রসঙ্গে বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ! এই পাথরকে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠাবেন যে, এর দুটি চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখবে এবং একটি জিহ্বা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে। যে লোক সত্য হৃদয়ে একে পর্শ করবে তার সম্বন্ধে এই পাথর আল্লাহ্ তা’আলার নিকটে সাক্ষ্য দিবে।
— সহীহ, মিশকাত (২৫৭৮), তা’লীকুর রাগীব (২/১২২), তা’লীক আলা ইবনু খুযাইমা (২৭৩৫)
এই হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

সুনান আদ-দারেমী
৫. হজ্জ অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ২৬. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার ফযীলত
১৮৭৬. ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন এই পাথরকে আল্লাহ এমন অবস্থায় পুন:উত্থিত করবেন যে, এর দু‘টি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সেটি দেখবে এবং একটি জিহবা থাকবে যা দিয়ে সেটি কথা বলবে এবং যে ব্যক্তি তাকে যথাযথভাবে চুম্বন করেছে, সেটি সেই লোকের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে।(1)
সালমান (তার বর্ণনায়) বলেন: যে ব্যক্তি তাকে চুম্বন করেছে, তার জন্য (অর্থাৎ ‘যথাযথভাবে’ শব্দটি ব্যতীত)।
(1) তাহক্বীক্ব: এর সনদ সহীহ।
তাখরীজ: [41]
আমরা এর পূর্ণ তাখরীজ দিয়েছি মুসনাদুল মাউসিলী নং ২৭১৯; সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৩৭১১, ৩৭১২ ও মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ১০০৫ তে।
এছাড়া, তাবারানী, আল কাবীর ১২/৬৩ নং ১২৪৭৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

এই নিয়ে ঝামেলা আরো বাড়ে, যখন মুহাম্মদ সরাসরি এই পাথরের ফজিলত বর্ণনা করেন, এবং ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আবার এই একই পাথরকে ক্ষমতাহীন পাথর বলে আখ্যায়িত করেন! বলেন যে, এই পাথর কারো ক্ষতি বা উপকার কিছুই করতে পারে না। যা সরাসরি উপরের হাদিসগুলোর নির্দেশনার বিরোধী।

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৬/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তাওয়াফের সময় হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করা মুস্তাহাব
২৯৩৯। খালফ ইবনু হিশাম, মুকাদ্দমী, আবূ কামিল ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি টাক মাথাওয়ালা অর্থাৎ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে কালো পাথর হাজারে আসওয়াদ চুমো দিতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে চুন্বন করব এবং আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর, তুমি কারও ক্ষতিও করতে পার না এবং উপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমায় চুম্বন করতাম না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ)

তথ্যসূত্র

  1. বুলুগুল মারাম, হাদিসঃ ৭৪৭ []
  2. তাহকীক বুলুগুল মারাম মিন আদিল্লাতিল আহকাম বা লক্ষ্যে পৌঁছার দলিলসম্মত বিধিবিধান, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ৩৫৪ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"