21.ধার্মিক বা ধর্মান্ধ দেশেগুলোতে ধর্ষণ কম হয়?

ধার্মিক বা ধর্মবিশ্বাসীদের পক্ষ থেকে একটি দাবী প্রায়শই আমাদের সামনে আসে। তারা দাবী করেন যে, ইউরোপ আমেরিকা বা অন্যান্য সভ্য দেশে নাকি প্রতিদিন অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, অথচ সৌদি বা আফগানিস্তানে ধর্ষণের পরিমাণ খুবই কম। এ থেকে তারা বোঝাবার চেষ্টা করেন, ধর্মপ্রবন দেশেই মেয়েরা নাকি নিরাপদ! ধর্মান্ধ বা ধর্মপ্রবণ দেশগুলিতে ধর্ষণের সংখ্যা কম হওয়ার ধারণাটি একদমই একটি ভ্রান্ত ধারণা, কারণ ধর্ষণের রিপোর্টের সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে আইনি, সামাজিক, এবং সাংস্কৃতিক বাধা বড় ভূমিকা পালন করে। এই দেশগুলোতে ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতা নিয়ে নারীদের অভিযোগ করতে সাহস না পাওয়া এবং আইনত বা সামাজিকভাবে বিচার পেতে ব্যর্থ হওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। ধর্মীয় আইনের কঠোর নিয়ম, সামাজিক প্রথা এবং নারীদের উপর আরোপিত কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে এই ধরনের অপরাধ প্রায়ই আড়ালে থাকে।

ধর্মপ্রবণ রক্ষণশীল দেশগুলোতে ধর্ষণের শিকার একজন নারীর পক্ষে ধর্ষণের বিচার চাওয়া, পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা কিংবা আদালতের শরণাপন্ন হওয়া একটি বিশাল ঝুঁকির কাজ। অধিকাংশ সময়ে ধর্ষিতাকেই নানাভাবে অপমান অপদস্থ করা হয়। সামাজিকভাবে হেয় করা হয়, সেইসাথে পারিবারিকভাবেও। ধর্ষণের প্রমাণ দিতে দিতে তার জীবন দিতে হয়। সামাজিক লজ্জা আর পারিবারিক অপমান করার কথা তো বাদই দিলাম।

ইসলামিক শরীয়া আইন অনুসারে চারজন পুরুষ সাক্ষী প্রয়োজন হয়, ধর্ষণ যে হয়েছে তা প্রমাণ করতে। সাক্ষীসাবুদ আনতে না পারলে মেয়েটাকেই শাস্তি পেতে হয় জিনার দায়ে। এটাই শরীয়া আইন। বিস্তারিত এখানে বলা হয়েছে [1]

এখন এতগুলো পুরুষ সাক্ষী নিয়ে কোন মেয়ে খুব প্ল্যান মাফিক ধর্ষিত হতে যায়? তাই সেসব দেশে ধর্ষণের কোন অভিযোগই আরোপ করা হয় না। কারণ মেয়েরা জানে, এগুলোই তাদের ভবিতব্য। এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে উল্টো তাকেই শাস্তি পেতে হবে। হেয় হতে হবে। তাকেই চরিত্রহীন প্রমাণ করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই তাই মুসলিম দেশগুলোতে ধর্ষণের অফিশিয়াল রিপোর্টের সংখ্যা কম থাকে। অন্যদিকে ধর্মহীন সেক্যুলার দেশগুলোতে গাড়িতে কোন মেয়ের শরীর স্পর্শ করলেও সাথে সাথেই পুলিশ চলে আসে। মেয়েরা নির্ভয়ে সেগুলো প্রকাশও করতে পারে। তাতে তাকে সামাজিকভাবে লজ্জিত হতে হয় না।

একইসাথে, ধর্মপ্রবণ দেশগুলোতে স্বামী দ্বারা ধর্ষিত হলে সেটিকে ধর্ষণ হিসেবেই গণ্য করা হয় না। আর সভ্য দেশগুলোতে স্বামী বয়ফ্রেন্ড যেই হোক, কারো বিনা অনুমতিতে বা সম্মতি ছাড়া স্পর্শ করাও অপরাধ হিসেবে গণ্য। তাই সভ্য দেশগুলতে রিপোর্টেড ক্রাইমের সংখ্যা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক।

অন্যদিকে, ধর্মনিরপেক্ষ, সভ্য এবং প্রগতিশীল দেশগুলোতে নারীর অধিকার এবং স্বাধীনতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এই দেশগুলিতে নারীরা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান অধিকার এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পান। ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে নারীদের সম্মান এবং আইনি সুরক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশ্বের অন্যতম প্রগতিশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সুইডেনে ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্টের হার বেশি, কারণ নারীরা সহজেই আইনি প্রতিকার পেতে পারেন এবং বাসে ট্রেনে কর্মক্ষেত্রে যেকোন স্থানে যৌন হয়রানির শিকার হলেই তারা রিপোর্ট করতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে কোন সামাজিক বাধা তো থাকেই না, বরঞ্চ এরকম সাহসের কাজ করার জন্য তাদেরকে আলাদা সম্মান দেয়া হয়। সেখানে “নো মিনস নো” আইন প্রয়োগ করা হয়, যা সম্মতির অভাবে যে কোনো যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে। তাই ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির রিপোর্টের সংখ্যা বেশি হলেও, এটি সমাজের সমৃদ্ধ ন্যায়বিচার ব্যবস্থার প্রমাণ।


তথ্যসূত্র

  1. ইসলামি শরিয়তে ধর্ষণের শাস্তি []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"