তাফসীরে ইবনে কাসীর [1] থেকে জানা যায়, সূরা তওবা যে স্বতন্ত্র সূরা, এটি ছিল উসমানের ধারণা। মুহাম্মদ এই বিষয়ে কিছু বলে যান নি। সূরা তওবার শুরুতে তাই বিসমিল্লাহও পড়া হয় না। এখন লাওহে মাহফুজের কোরআনে সূরা তওবা আলাদা সূরা নাকি তা সূরা আনফালের অংশ, তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, উসমানের ধারণার ওপর যা প্রতিষ্ঠিত, তা কি আমরা শতভাগ শুদ্ধ হিসেবে গণ্য করতে পারি?
সাহাবীগণ উসমান (রা)-এর তত্ত্বাবধানে কুরআন মজীদ সংকলন করিবার কালে এই সূরার প্রথমে বিসমিল্লাহ্ লিখেন নাই। তাঁহারা উসমান (রা)-এর নির্দেশে এইরূপ করিয়াছিলেন । তিনি এইরূপ নির্দেশ কেন দিয়াছিলেন, নিম্নোক্ত রিওয়ায়েতে তাহা বর্ণিত হইয়াছে :
ইমাম তিরমিযী (র) বিভিন্ন বর্ণনাকারীর বরাতে মুহাম্মদ ইব্ন বাশার (র) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন : একদা আমি উসমান (রা)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করিলাম, সূরা আনফাল যাহার আয়াতের সংখ্যা এক শতের নিম্নে এবং সূরা তাওবা যাহার আয়াতের সংখ্যা অন্যূন একশত —এই দুইটি সূরার মধ্যবর্তী স্থানে আপনারা ‘বিসমমিল্লাহ্’ লিখেন নাই কেন ? এতদ্ব্যতীত উক্ত সূরাদ্বয়কে আপনারা যে ‘দীর্ঘ সূরা সপ্তক (…)’-এর মধ্যে স্থাপন করিয়াছেন; উহার কারণ কি ? উসমান (রা) বলিলেন : অনেক সময়ে এইরূপ ঘটিত যে, নবী করীম (সা)-এর প্রতি একটি সূরার অংশ বিশেষ নাযিল হইবার পর অন্য একটি সূরার অংশ বিশেষ নাযিল হইত। এইরূপ নবী করীম (সা)-এর উপর একটি সূরা নাযিল হওয়া শেষ হইবার পূর্বে অন্য একটি সূরার অংশ বিশেষ নাযিল হইত। এমতাবস্থায় কোন আয়াত নাযিল হইলে তিনি কোন ওয়াহী লেখক সাহাবীকে ডাকিয়া বলিতেন : ‘যে সূরায় এই এই বিষয় বর্ণিত হইয়াছে, এই আয়াতটিকে উহার মধ্যে (অমুক স্থানে) স্থাপন কর।’ সূরা-আনফাল হইতেছে মদীনায় অবতীর্ণ প্রথম সূরাসমূহের অন্যতম । পক্ষান্তরে, সূরা বারাআত (সূরা তাওবা) হইতেছে মদীনায় অবতীর্ণ শেষ সূরাসমূহের অন্যতম। কিন্তু, উভয় সূরায় বর্ণিত ঘটনা ও কাহিনী প্রায় একরূপ। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি ধারণা করিলাম : ‘সূরা বারাআত পৃথক কোন সূরা নহে; বরং | উহা সূরা আনফাল-এর একটি অংশ।’ অথচ নবী করীম (সা) এ সম্বন্ধে কিছু বলিয়া যান নাই : উপরোক্ত কারণে আমি উহাদিগকে পরস্পর সন্নিহিত করিয়া স্থাপন করিয়াছি; কিন্তু উহাদের মধ্যবর্তী স্থানে (সূরা তাওবার প্রথমে) বিসমিল্লাহ্ লিখি নাই ! তেমনি উপরোক্ত কারণে উভয় সূরা মিলিয়া দীর্ঘ সূরার আকার গ্রহণ করে বলিয়া উহাদিগকে ‘দীর্ঘ সূরা-সপ্তক’-এর মধ্যে স্থাপন করিয়াছি।
উক্ত রিওয়ায়েতকে ইমাম আহমদ, ইমাম আবূ দাউদ, ইমাম নাসাঈ, ইমাম ইব্ন হিব্বান এবং ইমাম হাকিম (র) বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম হাকিম (র) উক্ত রিওয়ায়েত সম্বন্ধে মন্তব্য করিয়াছেন : ‘উহার সনদ সহীহ্; তবে ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম উহাকে বর্ণনা করেন নাই ৷’
আরো বিবরণ পাওয়া যায় সুনানু আবু দাউদ শরীফের হাদিস থেকে। [2]
তথ্যসূত্র
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১২-৫১৩ [↑]
- সুনানু আবু দাউদ শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৭-৪২৮, হাদিস নম্বর ৭৮৬-৭৮৭ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"