কোরআনে বর্ণিত উত্তরাধিকার আইন মূলত সম্পত্তি ভাগ করার একটি ত্রুটিপূর্ণ এবং ভুল পদ্ধতি। উত্তরাধিকার আইনের মত আইন প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে যেই অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, এই আইনটি পড়লেই বোঝা যায়, যিনি এই আইনটি করেছেন তার এই সম্পর্কে বাস্তব কোন অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান নেই। কারণ এই ধরণের আইন প্রণয়নের পূর্বে বিভিন্ন ধরণের ঘটনা এবং বিভিন্ন সংখ্যক পারিবারিক সদস্যের ক্ষেত্রে আইনটি কীভাবে প্রয়োগ হবে, তার বিবেচনা থাকা জরুরি। কারণ এক একটি পরিবারে এক এক রকম সদস্য থাকে, কোন পরিবারে দুই ছেলে, কোন পরিবারে তিন মেয়ে, কোন পরিবারে এক ছেলে তিন মেয়ে, কোন পরিবারে তিন ছেলে এক মেয়ে, সাথে বাবা মা ইত্যাদি। উত্তরাধিকার আইন করলে প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই আইনটি কাজ করবে কিনা, সেটি জেনেবুঝে আইনটি করার দরকার হয়। কিন্তু কোরআনের এই নিয়মের মধ্যে এমন গাণিতিক ত্রুটি রয়েছে যা স্পষ্টভাবে আল্লাহ ও নবীর গণিত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করে। গাণিতিক এই ভুল শুধুমাত্র একটি সাধারণ হিসাবের ভুল নয়, বরং এটি এক গভীর অসঙ্গতি, যা কোনো সর্বজ্ঞানী সত্তার পক্ষ থেকে আসা হতে পারে না। মধ্যযুগের আরব সমাজের জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার অভাব, সীমিত জ্ঞান এবং তাদের অশিক্ষিত চিন্তাধারা এই ত্রুটিপূর্ণ আইন প্রণয়নের পেছনে মূল কারণ বলে প্রতীয়মান হয়। যেহেতু এরকম ভুল কোন সর্বশক্তিমান সত্তার কাছ থেকে আসা হতে পারে না, তাই এই ভুলটি স্পষ্টভাবেই ইসলামের সত্যতা নিয়ে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
কোরআনের উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী, যখন সম্পত্তি ভাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর নির্দিষ্ট ভগ্নাংশ বর্ণিত হয়। কিন্তু কিছু বাস্তব ক্ষেত্রে, এসব ভগ্নাংশ যখন যোগ করা হয়, সেটি মোট সম্পত্তির চেয়ে বেশি হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, একজন মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা, স্ত্রী এবং সন্তানদের মধ্যে ভাগ করলে দেখা যায়, নির্ধারিত অংশগুলো যোগ করলে ১০০% এর বেশি হয়। এই ধরনের ত্রুটি কোনো নিখুঁত সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনায় থাকার কথা নয়। গণিত সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা একজন একজন ব্যক্তির পক্ষেও, সম্পত্তি ভাগের এরকম বিধান দেয়া অসম্ভব। এ থেকে বোঝা যায়, এই নির্দেশনা মধ্যযুগের একজন সাধারণ, অশিক্ষিত, মরুভূমির রাখালের অজ্ঞতাপ্রসূত চিন্তাধারার ফল।
গাণিতিক নিয়ম খুবই স্পষ্ট। যখন কোনো সম্পত্তি ভাগ করা হয়, তখন ভগ্নাংশগুলোর যোগফল অবশ্যই ১ হতে হবে। এর বেশি বা কম হলে পুরো সম্পত্তি সঠিকভাবে ভাগ করা সম্ভব হয় না। কোরআনে বর্ণিত নিয়মগুলোতে এই সরল নিয়মটি মানা হয়নি, যা স্পষ্ট করে দেয় যে এই আইন কোনো আলৌকিক জ্ঞান থেকে আসেনি। বরং এটি সেই সময়ের মানুষের অপরিপক্ব জ্ঞানের প্রতিফলন।
এই বিষয়ে আমাদের যে বিষয়টি জানা থাকা জরুরি তা হচ্ছে, কোন কিছু ভাগ করার সময় ভগ্নাংশগুলোর যোগফল সর্বদাই ১ হতে হবে। এর এর কম বা বেশি হওয়া যাবে না। কারণ সম্পূর্ণ সম্পত্তিকেই এক হিসেবে ধরে ভাগ করা হয়।
আউল নীতি: কোরআনের ভুল সংশোধনের একটি মানবিক প্রচেষ্টা
‘আউল’ মানে ‘বৃদ্ধি’। যখন অংশগুলোর যোগফল একটি ভগ্নাংশ হয় যার লব বড়, হর ছোট, তখন হরকে লবের সমান করে নিতে হয় তথা হরের মধ্যে বৃদ্ধি করতে হয় এটাকে ‘আউল’ বলে। যেমন, মৃত ব্যক্তি রেখে গেছেন স্বামী ও তিন বোন। তাহলে স্বামীর অংশ + তিন বোনের অংশ = ১/২ + ২/৩ = ৭/৬ । এ অবস্থায় স্বামীকে দিতে হবে ৩/৭ এবং তিন বোনকে দিতে হবে ৪/৭ । ‘রদ্দ’ অর্থ ‘ফেরত দেয়া বা ফিরিয়ে দেয়া’। ‘রদ্দ’ হলো আউলের বিপরীত। যখন অংশগুলোর যোগফল একটি ভগ্নাংশ হয় যার লব ছোট, হর বড়, তখন হরকে হ্রাস করে লবের সমান করতে হয়। এটাকে ‘রদ্দ’ বলে।
খলিফা উমরের আমলে যখন এই গাণিতিক সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে, তখন তিনি “আউল নীতি” প্রবর্তন করেন, যা কোরআনের ভগ্নাংশের ভুলগুলোকে সংশোধন করার একটি মানবিক প্রচেষ্টা মাত্র। কোন সীমিত জ্ঞানের অধিকারী মরণশীল মানুষ যখন আল্লাহর বিধানকে যথাযথভাবে অনুসরণ না করে, উল্টো ঠিক করার চেষ্টা করে, সংশোধিত কোন নতুন আইন প্রবর্তন করে, যা কোরআনের আইনকে বদলে দেয় বা পরিমার্জনা করে ফেলে, তখনই সেখানে আল্লাহর জ্ঞান মানুষের জ্ঞানের কাছে পরাজিত হয়ে যায়। আল্লাহর সংজ্ঞা অনুসারে, আল্লাহ যেহেতু সর্বজ্ঞানী, তাই তার দেয়া উত্তরাধিকার আইন সমস্ত ক্ষেত্রেই সঠিক হওয়ার কথা। কিন্তু সেই আইনের যেকোন প্রকার সংশোধনী আনাই, মূলত ইসলামের মৌলিক দাবীকেও ভুল প্রমাণ করে ফেলে। আউল নীতি অনুসারে, প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর প্রাপ্য অংশকে সামঞ্জস্য করে মূল সম্পত্তির মধ্যে ভাগ করা হয়। এটি কোরআনের আয়াতের ওপর একটি পরিবর্তনশীল নীতি, যা মূল আয়াতের ভুলকে ঢাকার চেষ্টা করে। এই ধরনের পরিবর্তন স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে কোরআন নিখুঁত কোনো দলিল নয় এবং এর মধ্যে গাণিতিক ভুল রয়েছে।
কোরআনের আয়াত
এবারে আসুন কোরআনের উত্তরাধিকার আইনটি পড়ি। প্রথমেই এই সম্পর্কিত কোরআনের আয়াতগুলো পড়ে নিই,
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু`এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের সন্তান থাকে। যদি সন্তান না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ। (কুরআন-৪:১১)
আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না করে। এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
(কুরআন-৪:১২)
উদাহরণ ১: পিটজা ভাগ করা
একটি পিটজা ভাগ করার সময় যদি ১/৮ করে ভাগ করা হয়, তবে মোট ৮ টি টুকরো হবে। যদি ১/৮ করে ভাগ করার পরে দেখা যায়, নবম বা দশম মানুষ এসে যুক্ত হয়, তাহলে শেষে যুক্ত হওয়া ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা আর কোন পিটজার অংশ পাবেন না। কারণ ১/৮ করে টুকরো করা পিটজাকে কে ৮ জনার বেশী মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেয়া যাবে না। ৯ জনার মধ্যেও এটি ভাগ করা সম্ভব, কিন্তু তখন পিটজাটি পুনরায় ভাগ করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে প্রতিটি ভাগ ১/৯ করে হবে, এবং প্রত্যেককে ঐ ১/৯ করে দিতে হবে। ৯টি ১/৯ অংশ যোগ করলে যেন ১ হয়। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে মোট যোগফল ১ হতে হবে। সেই সময়ে মোট টুকরোগুলোর ভগ্নাংশের যোগফল যদি ১ এর বেশি হয়ে যায়, তাহলে ১ এর বেশী হয়ে যাওয়া অংশটুকু আর কাউকে দেয়া যাবে না। এগুলো স্কুলজীবনেই মানুষ পাটিগণিত করলে শিখে যায়। আসুন ৮ জনার মধ্যে ভাগ করে দিলে যোগফল কেমন হবে দেখে নিই,
এবার ধরুন, ৯ জন ব্যক্তিড় মধ্যে সেই একই পিটজা, যেটি ১/৮ অংশে ভাগ করা হয়ে গেছে, তাদের মধ্যে ভাগ করার চেষ্টা করা হল। যেহেতু পিটজা ৮টি টুকরো আছে, ৯ জনের মধ্যে সমানভাবে পিটজা ভাগ করা সম্ভব হবে না। শেষ ব্যক্তি পিটজা থেকে বঞ্চিত হবে। অথবা অন্য সকলের অংশ কমিয়ে দিয়ে সেই অংশটি তাকে দিতে হবে। কিন্তু অন্যদের অংশ কমিয়ে দিলে, তাদের অংশ আর ১/৮ থাকবে না। তাদের অংশ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এই বিষয়টি গাণিতিকভাবে একটি সাধারণ ধারণা। অথচ কোরআনের আয়াতগুলোর মধ্যে এরকম গাণিতিক সমস্যা স্পষ্টভাবে দেখা যায়, যা একটি আদর্শিক, নিখুঁত সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আসা নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
উদাহরণ ২: আবুল মিয়ার সম্পত্তির ভাগ
উপরে বর্ণিত কোরআনের আয়াতগুলো ইসলামে সম্পত্তির হিসেবের মৌলিক আয়াত। ছেলে মেয়ে স্বামী স্ত্রী কে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন তার হিসেব। আচ্ছা, এবারে আসুন ধরি, জনাব আবুল মিয়ার পরিবারে রয়েছে তার বৃদ্ধ পিতা মাতা, তার স্ত্রী, এবং তিন কন্যা। আবুল মিয়া মারা গেলেন, এবং উনার সম্পত্তি কোরআনের উপরের আয়াত মোতাবেক ভাগ বাটোয়ারা করা হবে। হিসেব করার সুবিধার জন্য ধরে নিচ্ছি আবুল মিয়া ১০০ টাকার সম্পত্তি রেখে গেছেন। এখন ভাগ বাটোয়ারা কীভাবে করবো?
১। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের সন্তান থাকে।
- এই আয়াত অনুসারে যেহেতু মৃতের সন্তান আছে, তাই তার বৃদ্ধ পিতা মাতা প্রত্যেকে পাবেন ছয় ভাগের এক ভাগ করে। অর্থাৎ এক একজন পাবেন (১০০÷৬ = ১৬.৬৬) টাকা করে। দুইজন মিলেে পাবেন ১৬.৬৬×২ = ৩৩.৩৩ টাকা।
২। আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু`এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক।
- এবারে আসুন তার তিন কন্যা কতটুকু সম্পত্তি পাবে তার হিসেবে। উপরের আয়াত থেকে বোঝা যায়, আবুল সাহেবের তিন কন্যা পাবে মালের তিনভাগের দুই ভাগ। অর্থাৎ ( ১০০× ২/৩ = ৬৬.৬৭) টাকা।
৩। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর।
- এবারে মৃত আবুল মিয়ার স্ত্রীর হিসেব। উপরের আয়াত মোতাবেক তিনি পাবেন আট ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ (১০০÷৮ = ১২.৫০) টাকা।
এভাবে আসুন হিসেব করি। আবুল সাহেব মোট ১০০ টাকা রেখে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে কোরআনের এই নিয়ম অনুসারে
যারা পাবেন | যত পাবেন |
পিতামাতা | ৩৩.৩৩ টাকা |
তিন কন্যা | ৬৬.৬৭ টাকা |
স্ত্রী | ১২.৫০ টাকা |
মোট | ৩৩.৩৩ + ৬৬.৬৭ + ১২.৫০ = ১১২.৫০ টাকা |
কিন্তু টাকাগুলো ভাগ করে দেয়ার সময় দেখা যাছে, ১২.৫০ টাকা কম হয়ে যাচ্ছে। মোট টাকা আছে ১০০, অথচ সবাইকে দিতে হবে ১১২.৫০। এই বাড়তি ১২.৫০ টাকা কোথা থেকে আসবে? আল্লাহ পাক নাজিল করবেন? এরকম বড় ধরণের গাণিতিক ভুল দিয়ে সম্পত্তির হিসেব করা খুবই বিপদজনক।
উদাহরণ ৩: বিলকিস বেগমের সম্পত্তির ভাগ
ধরে নিই, বিলকিস বেগম মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় উনি ১০ লক্ষ টাকা রেখে গেছেন। উনার এক কন্যা, পিতামাতা এবং স্বামী ছাড়া আর কেউ নেই। এখন আসুন, কোরআন অনুসারে উনার সম্পত্তির ভাগ করি।
আউল নীতির উদ্ভব
ইসলামের শুরুর দিনগুলোতে, নবী মুহাম্মদ-এর সময় থেকে প্রথম খলিফা আবু বকর-এর শাসনামলে, উত্তরাধিকার আইন ছিল একেবারে সরল ও সুস্পষ্ট। কোরআনে যে নির্দিষ্ট বিধানগুলো দেয়া হয়েছিল, সেগুলো মেনে সম্পত্তির ভাগাভাগি হতো। কিন্তু ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা, উমর ইবনে আল-খাত্তাবের শাসনামলে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটল, যা ইসলামের উত্তরাধিকার আইনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।
একদিন উমরের শাসনকালে একজন মহিলার মৃত্যু হয়। তিনি স্বামী ও দুই বোন রেখে গিয়েছিলেন। ইসলামী উত্তরাধিকার আইন অনুসারে, এই অবস্থায় স্বামী পাবেন এক-অর্ধাংশ এবং দুই বোন পাবেন দুই-তৃতীয়াংশ। কিন্তু এই হিসেবটি সমস্যার সৃষ্টি করল। যদি স্বামীকে এক-অর্ধাংশ দেয়া হয়, তবে দুই বোনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ বাকি থাকবে না, এবং যদি দুই বোনকে তাদের অংশ দেয়া হয়, তবে স্বামীর এক-অর্ধাংশ সম্পূর্ণভাবে দেয়া সম্ভব হবে না।
খলিফা উমর এই জটিল সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার জন্য বিশিষ্ট সাহাবিদের একত্রিত করলেন। তিনি তাদের সামনে কোরআনের নির্দেশগুলো উপস্থাপন করে বলেন, “আল্লাহ স্বামীর জন্য এক-অর্ধাংশ এবং দুই বোনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু এখন আমি কীভাবে এই সম্পদ বণ্টন করব? যদি স্বামীর অংশ দিয়ে শুরু করি, তবে দুই বোনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ থাকবে না, আর যদি দুই বোনকে আগে দেই, তাহলে স্বামীর জন্য তার প্রাপ্য অংশ থাকবে না। আমাকে পরামর্শ দিন।”
সাহাবিরা নীরবে ভাবলেন। কিছু সাহাবি প্রস্তাব করলেন যে ‘আউল’ নামক একটি সমাধান প্রয়োগ করা যেতে পারে। ‘আউল’-এর মূল ধারণা ছিল, সম্পত্তি কম হলে উত্তরাধিকারীদের প্রত্যেকের প্রাপ্য অংশ সমানভাবে কমিয়ে সম্পদ বণ্টন করা। কিন্তু এই ‘আউল’ পদ্ধতি মানতে গেলে, কোর আনে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে দেয়া যাচ্ছে না, তার চাইতে কমিয়ে দিতে হচ্ছে।
সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ সাহাবী ইবনে আব্বাস ছিলেন এই প্রস্তাবের প্রবল বিরোধী। তিনি বললেন, “এটি আল্লাহর নির্ধারিত ভাগের বিপরীতে যাচ্ছে। কোরআনের বিধানে কোনো পরিবর্তন আনা উচিত নয়।” কিন্তু হযরত উমর বাদবাকি সাহাবিদের মধ্যে বেশিরভাগের মতামত গ্রহণ করলেন এবং বললেন, “আমি এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় দেখি না যাতে সম্পদকে সবার মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে বণ্টন করা যায়।”
এভাবে খলিফা উমর প্রথমবারের মতো ‘আউল’-এর নিয়ম প্রয়োগ করলেন। স্বামীর প্রাপ্য এক-অর্ধাংশ এবং দুই বোনের প্রাপ্য দুই-তৃতীয়াংশ সমানভাবে কমিয়ে সকলের মধ্যে বণ্টন করা হলো। এই সিদ্ধান্ত ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হয়। পরবর্তীতে, চারটি সুন্নি মাযহাবও উমরের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেয় এবং ‘আউল’-এর ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে। কিন্তু স্পষ্টতই, এই আইনটি কোরআনে আল্লাহর হুকুমের সরাসরি বরখেলাপ। কারণ এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে কোরআনের বিধানকে বদলে দিতে হয়।
ইমাম ইবনে আব্বাস তার অবস্থানে অটল ছিলেন, কিন্তু উমরের এই সিদ্ধান্ত ছিল সাহসী এবং প্রয়োজনীয়। উমর বুঝতে পেরেছিলেন, কোরআনে সম্পত্তি ভাগে সমস্যা রয়েছে। নতুবা কোরআনের বাইরে তার নতুন কোন সংশোধিত বিধান দেয়ার প্রয়োজনই ছিল না, যেখানে কোরআনেই এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয়া আছে। সমস্যাটি হচ্ছে, কোরআনের আয়াতটি তো রয়েই গেছে, সেটি তো আর বদলে দেয়া যায়নি। সেটি দেখলেই তো পরিষ্কার হয় যে, এই আইনটিতে সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু নবীর মৃত্যুর পরে ওহী আসা তো বন্ধ হয়ে গেছে, তাহলে কোরআনে আল্লাহর হুকুম উমর কীভাবে সংশোধন করতে পারেন? সম্পত্তি ভাগের এই নতুন বিধানের অর্থই হচ্ছে, কোরআনে বর্ণিত আল্লাহর বিধানের ওপর মাতব্বরি করা, তাই না?
আউল সম্পর্কে আলেমদের মতামত
এবারে আসুন বিখ্যাত কয়েকটি ইসলামি ওয়েবসাইট থেকে কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক, [1]
Al-‘Awl
‘Awl is applied where the shares exceed the heritage, such as where the decedent leaves behind a wife, parents and two daughters (the shares being, the wife’s one-eighth, the parents’ one-third, the two daughters’ two-thirds; here the estate falls short of the sum of one-eighth, one-third and two-thirds [27/24]). Similarly, if a woman dies and leaves behind her husband and two agnate sisters, the share of the husband is one-half, and that of the sisters two-thirds; here the estate falls short of the sum of half and two-thirds (7/6). ‘Awl occurs only if the husband or the wife is present.
The schools differ regarding the issue. Will he deficit, in such a case, be diminished proportionately from the shares of all the sharers, or will it be diminished from the shares of only some of them?
The four Sunni schools accept the doctrine of ‘awl, the rule that all the shares will be diminished proportionately, exact like the creditors’ claims when the assets fall short of meeting them. Hence the heirs are wife, parents and two daughters, according to these schools it will be an instance of ‘awl. The obligation is met by dividing the heritage into 27 parts, though it earlier comprised 24 parts. The wife will take 3/27 (i.e. her share becomes 1/9 instead of 1/8), the parents take 8/27 and the daughter 16/27.
The Imamiyyah do not accept the doctrine of ‘awl and keep the corpus (in the previous example) fixed at 24 parts by diminishing the share of the two daughters. Hence the wife takes her complete share of 1/8 (which is 3/24), the parents take 1/3 (which is 8/24), and the remainder goes to the two daughters.
The four schools argue in favour of the validity of ‘awl and the reduction of all the shares by citing the precedent of a woman who died during the reign of the Second Caliph, ‘Umar, leaving behind a husband and two agnate sisters. The Caliph gathered the Companions and said: “The shares determined by God for the husband and the two sisters are a half and two-thirds respectively. Now if I start with the husband’s share, the two-thirds will not remain for the two sisters, and if I start with the two sisters, the half will not remain for the husband. So give me advice.”
Some advised him to follow ‘awl by diminishing all the shares proportionately, while Ibn ‘Abbas vehemently opposed it. But ‘Umar did not accept his view and acted according to the opinion of others, telling the heirs: “I do not see any better way regarding this estate but to distribute it amongst you in proportion to your shares.” Hence ‘Umar was the first person to apply ‘awl to the shares and all the Sunni schools followed him.
The Imamiyyah argue regarding the invalidity of the doctrine of ‘awl by observing that it is impossible for Allah, subhanahu, to divide an estate into shares of half and two-thirds, or shares of one-eighth, one-third and two-thirds, because, otherwise, ignorance and frivolity would be attributed to Him, while He is too exalted to deserve such attributes. Hence, it has been narrated from ‘Ali (‘a) and his pupil ‘Abd Allah ibn ‘Abbas that they said: “He Who can count the number of sand grains (in the universe) surely knows that the number of shares do not exceed six.”
The Imamiyyah always diminish the share of the daughters or sisters, and the shares of the husband, the wife and the parents remain unaltered; because the daughters and the sisters have been assigned a single share and do not face a reduction from a higher to a lower share. They, therefore, inherit as sharers in the absence of a male heir and as residuaries in his presence, and at times they are entitled along with him to less than what they are entitled to when alone.
However, the share of the husband is reduced from a half to one-fourth, the wife’s from one-fourth to one-eighth, the mother’s from one-third to one-sixth, and in certain cases the father, inherits one-sixth as a sharer; the share of none of them further diminishes from its determined minimum, and nothing is reduced from it. Hence, when the shares exceed the corpus, a start will be made from this minimum limit and the remainder will go to the daughters or sisters.
Al-Shaykh Abu Zuhrah, in al-Mirath ‘inda al-Ja’fariyyah, quotes Ibn Shihab al-Zuhri1 as having said, “If it were not for the preference given to the fatwa of the just leader ‘Umar ibn al-Khattab over the fatwa of Ibn ‘Abbas, the observation of lbn ‘Abbas is worthy of being followed by every scholar and worthy of consensus over it.” The Imamiyyah have adopted the opinion of Ibn ‘Abbas –may God be pleased with both of them– which is a good rule, as pointed out by Ibn Shihab al-Zuhri, who was an ocean of knowledge.
……………………………………………
1.The famous and great Tabi’i faqih who has been highly eulogized by the Sunni ‘ulama’. He had met ten Sahabah.
বঙ্গানুবাদঃ
যখন উত্তরাধিকারের অংশগুলো মোট সম্পদের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন ‘আউল প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, মৃত ব্যক্তি স্ত্রী, বাবা-মা এবং দুই কন্যা রেখে গেলে (যেখানে স্ত্রীর অংশ এক-অষ্টমাংশ, বাবা-মায়ের এক-তৃতীয়াংশ, এবং দুই কন্যার দুই-তৃতীয়াংশ হয়; এখানে মোট অংশ এক-অষ্টমাংশ, এক-তৃতীয়াংশ এবং দুই-তৃতীয়াংশের সমান হওয়ার কারণে সম্পদ কমে যায় [২৭/২৪])। একইভাবে, যদি একজন নারী মারা যান এবং তার স্বামী ও দুই বোন রেখে যান, তবে স্বামীর অংশ এক-অর্ধাংশ এবং বোনদের অংশ দুই-তৃতীয়াংশ হয়; এখানে সম্পত্তির পরিমাণ এক-অর্ধাংশ এবং দুই-তৃতীয়াংশের সমান হওয়ায় মোট সম্পদ কমে যায় (৭/৬)। ‘আউল কেবল তখনই ঘটে যখন স্বামী বা স্ত্রী জীবিত থাকে।
এই বিষয়ে বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে, কি সমস্ত উত্তরাধিকারীর অংশ সমানভাবে কমানো হবে, নাকি কেবল কিছু উত্তরাধিকারীর অংশ কমানো হবে?
চারটি সুন্নি মাযহাব ‘আউল-এর মতবাদ মেনে নেয়, যেখানে সমস্ত উত্তরাধিকারীর অংশ সমানভাবে কমানো হয়, ঠিক যেমন ঋণদাতাদের দাবি তখন কমে যায় যখন সম্পদ তাদের দাবি পূরণের জন্য যথেষ্ট হয় না। তাই স্ত্রীর অংশ, বাবা-মায়ের অংশ এবং দুই কন্যার অংশ প্রয়োগ করা হলে এটি ‘আউল-এর একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে। সম্পদকে ২৪ অংশের পরিবর্তে ২৭ অংশে ভাগ করে এই দাবিগুলো পূরণ করতে হয়। স্ত্রী ৩/২৭ অংশ পাবেন (অর্থাৎ তার অংশ এক-অষ্টমাংশের পরিবর্তে এক-নবমাংশ হবে), বাবা-মা ৮/২৭ পাবেন এবং দুই কন্যা ১৬/২৭ পাবেন।
ইমামিয়্যাহ ‘আউল-এর মতবাদ গ্রহণ করে না এবং সম্পদকে ২৪ অংশেই স্থির রাখে, দুই কন্যার অংশ কমিয়ে। তাই স্ত্রী তার পুরো এক-অষ্টমাংশ (যা ৩/২৪) পাবেন, বাবা-মা তাদের এক-তৃতীয়াংশ (যা ৮/২৪) পাবেন, এবং অবশিষ্ট অংশ দুই কন্যার মধ্যে বণ্টিত হবে।
চারটি সুন্নি মাযহাব ‘আউল-এর বৈধতার পক্ষে যুক্তি প্রদান করেন, যেখানে দ্বিতীয় খলিফা উমর (রাযি.) এর শাসনকালে এক মহিলার মৃত্যু হয়, যিনি স্বামী ও দুই বোন রেখে যান। খলিফা সাহাবিদের একত্রিত করে বললেন, “আল্লাহ স্বামীর জন্য এক-অর্ধাংশ এবং দুই বোনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ নির্ধারণ করেছেন। এখন যদি আমি স্বামীর অংশ দিয়ে শুরু করি, তবে দুই বোনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ থাকবে না, এবং যদি আমি দুই বোনের অংশ দিয়ে শুরু করি, তবে স্বামীর জন্য এক-অর্ধাংশ থাকবে না। তাই আমাকে পরামর্শ দিন।”
কিছু সাহাবি পরামর্শ দিলেন ‘আউল অনুসরণ করার, যেখানে সমস্ত অংশ সমানভাবে কমানো হবে। ইবনে আব্বাস (রাযি.) কঠোরভাবে এর বিরোধিতা করলেন। তবে উমর (রাযি.) তার মতামত গ্রহণ করেননি এবং অন্যান্যদের মতামত অনুযায়ী কাজ করেন। তিনি উত্তরাধিকারীদের বললেন, “আমি এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় দেখি না যাতে তোমাদের অংশ অনুযায়ী সম্পদ বণ্টন করা হয়।” তাই উমর (রাযি.) প্রথম ব্যক্তি ছিলেন যিনি ‘আউল প্রয়োগ করেন এবং চারটি সুন্নি মাযহাব তার অনুসরণ করেন।
ইমামিয়্যাহ ‘আউল-এর অগ্রহণযোগ্যতার পক্ষে যুক্তি প্রদান করেন, তারা বলেন, আল্লাহ (সুবহানাহু) কখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন না যেখানে সম্পদের ভাগ এক-অর্ধাংশ এবং দুই-তৃতীয়াংশ বা এক-অষ্টমাংশ, এক-তৃতীয়াংশ এবং দুই-তৃতীয়াংশ হয়। কারণ এতে অজ্ঞতা এবং খেয়ালীপনা তার প্রতি আরোপ করা হয়, যা আল্লাহর মহিমার সাথে মানানসই নয়। তাই আলী (আ.) এবং তার ছাত্র আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তারা বলেছেন, “যিনি পৃথিবীর প্রতিটি বালুকণার সংখ্যা জানেন, নিশ্চয়ই জানেন যে অংশগুলো কখনো ছয়টির বেশি হবে না।”
ইমামিয়্যাহ সবসময় কন্যা বা বোনদের অংশ কমান, আর স্বামী, স্ত্রী ও বাবা-মায়ের অংশ অপরিবর্তিত থাকে। কারণ কন্যা ও বোনদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের অংশ কমে যায় না। তারা একজন পুরুষ উত্তরাধিকারীর অনুপস্থিতিতে ভাগীদার হিসেবে এবং তার উপস্থিতিতে রেসিডুয়ারি হিসেবে উত্তরাধিকার পায়। মাঝে মাঝে তারা পুরুষ উত্তরাধিকারীর সাথে একসাথে কম উত্তরাধিকার পায়।
তবে স্বামীর অংশ এক-অর্ধাংশ থেকে এক-চতুর্থাংশে এবং স্ত্রীর অংশ এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-অষ্টমাংশে কমে যায়। মায়ের অংশ এক-তৃতীয়াংশ থেকে এক-ষষ্ঠাংশে এবং কিছু ক্ষেত্রে বাবার অংশ এক-ষষ্ঠাংশে কমে যায়। তাদের নির্ধারিত সর্বনিম্ন অংশ কখনো আরও কমে না এবং তা থেকে কিছুই কমানো হয় না। তাই যখন অংশগুলো মোট সম্পদের চেয়ে বেশি হয়, তখন এই সর্বনিম্ন সীমা থেকে শুরু করা হয় এবং অবশিষ্ট অংশ কন্যা বা বোনদের কাছে যায়।
আল-শাইখ আবু জুহরা আল-মিরাথ ‘ইন্দা আল-জাফারিয়্যাহ-তে ইবনে শিহাব আল-জুহরির উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যিনি বলেছেন, “যদি ন্যায়পরায়ণ নেতা উমর ইবনে আল-খাত্তাবের ফতোয়াকে ইবনে আব্বাসের ফতোয়ার উপর অগ্রাধিকার না দেওয়া হত, তাহলে ইবনে আব্বাসের মতামত এমন ছিল যা প্রতিটি আলেম অনুসরণ করতেন এবং তার উপর ইজমা সংঘটিত হত।” ইমামিয়্যাহ ইবনে আব্বাসের মতামত গ্রহণ করেছেন, যা ইবনে শিহাব আল-জুহরি দ্বারা প্রমাণিত যে এটি একটি উত্তম নিয়ম।
এবারে আসুন কাতারের বিখ্যাত ফতোয়ার ওয়েবসাইট ইসলামওয়েব থেকে এই সম্পর্কে পড়ি, [2]
The origion of ‘Awl in inheritance law
222526
2-10-2013 – Thul-Qi’dah 28, 1434
515
Question
Assalamu Alaykum, Scholars apply concept of Awl when the total inheritance shares shoots up more than what is available. Is there any Marfoo’ ahadith which says that the Prophet(pbuh) applied the doctrine of Awl. Why Allah mentioned shares in the Quran in such a way that in many cases, when we add up becomes greater than what is available?. Please explain.
Answer
All perfect praise be to Allaah, The Lord of the Worlds. I testify that there is none worthy of worship except Allaah, and that Muhammad, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, is His Slave and Messenger.
There is no Hadeeth reported from the Prophet, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, that indicates that he, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, applied ‘Awl (which means that the shares of inheritors exceed the whole of the inheritance) regarding the issues of inheritance. However, he sallallaahu ‘alayhi wa sallam, urged us to act according to the Sunnah (way) of the rightly-guided caliphs and stated that that Sunnah and the consensus of scholars are sources of legislation, saying: “You must follow my Sunnah and that of the rightly-guided caliphs. Abide by it and hold on tight to it [as if] with your molar teeth…” [Abu Daawood, At-Tirmithi, Al-Haakim who graded it Saheeh (sound), and Ath-Thahabi and Al-Albaani agreed with him]
He, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, also said: “Allaah will not cause my Ummah (or he said: the Ummah of Muhammad) to agree on misguidance; and the Hand of Allaah is with the Jamaa’ah (the group which follows the Quran and authentic Sunnah); and whoever deviates from that will be in Hell.” [At-Tirmithi]
The Prophet, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, also said: “I asked my Lord for four things and He gave me three and refused to give me the fourth. I asked my Lord not to let my nation agree on misguidance and He gave me that……” [Ahmad narrated it as Marfoo‘, i.e. traceable to the Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention )]
‘Awl was applied by the rightly-guided caliph ‘Umar may Allaah be pleased with him and the Companions during his time agreed with that. However, Ibn ‘Abbaas may Allaah be pleased with him held another opinion after the death of ‘Umar, an opinion that has become nearly obsolete. Ibn Qudaamah said in Al-Mughni: “The opinion of applying ‘Awl has been adopted by all Muslim scholars except Ibn ‘Abbaas and a small group that held another opinion… We do not know at the present time anyone who adopts the opinion of Ibn ‘Abbaas. We do not know of any disagreement among the jurists of the Islamic states regarding applying ‘Awl. All perfect praise be to Allaah.”
The cause of ‘Awl presented itself during the time of the rightly-guided caliph ‘Umar ibn Al-Khattaab may Allaah be pleased with him. It was stated in the Al-Mawsoo‘ah Al-Fiqhiyyah:
“The first case of ‘Awl was for a woman who died and left behind a husband and two sisters. This occurred during the beginning of the caliphate of ‘Umar. He consulted the Companions and said: “By Allaah, I do not know which of you comes first and which comes next. If I start with the husband and give him his right in full, the two sisters will not take their right in full; and if I start with the two sisters and give them their right in full, the husband will not take his right in full.” According to the most recognized accounts, Al-‘Abbaas ibn ‘Abdul Muttalib may Allaah be pleased with him suggested that he could apply ‘Awl. Other accounts have it that it was ‘Ali ibn Abi Taalib or Zayd ibn Thaabit. It was narrated that Al-‘Abbaas said: “O Leader of the Believers, tell me: If a man passed away and left six dirhams, and he owed three dirhams to one man and four to another, what would you do? Would you not make the wealth into seven parts?” He said, “Yes.” Upon this, Al-‘Abbaas said: “It is the same thing.” Thus, ‘Umar applied the principle of ‘Awl.”
This is indeed justice because if the deceased is in debt to some persons and leaves wealth that cannot pay off his debt, it will not be fair to give some of them while depriving the others. Rather, what justice dictates is to decrease the share of each. Thus, someone who is entitled to one third of the total debt should take one-third of the existing assets, and someone who is entitled to one-sixth should take one-sixth of the existing assets, and so on.
Ibn Al-Qayyim may Allaah have mercy upon him said in I‘laam Al-Muwaqqi‘een: “The Companions applied ‘Awl in inheritance and applied decrease to all heirs by drawing analogy from the decrease applied to the shares of creditors in case where the total assets of a bankrupt person cannot pay off all entitlements. Moreover, the Prophet, sallallaahu ‘alayhi wa sallam, said to creditors: ‘Take what you find and that is all that you are entitled to.’ This is pure justice, while exclusively depriving some creditors and giving some of them their full share is not just.”
Indeed, the principle of ‘Awl reflects the beauty of Islam in terms of its justice in matters and its suitability for dealing with new developments.
Allaah Knows best.
বঙ্গানুবাদঃ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের পালনকর্তা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ উপাসনার যোগ্য নয়, এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দাস ও রাসূল।
কোনো সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়নি যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মীরাসের ক্ষেত্রে ‘আউল (যা উত্তরাধিকারীদের অংশ মোট সম্পদের চেয়ে বেশি হয়ে যায়) প্রয়োগ করেছেন। তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে খলিফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাহ অনুযায়ী চলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে তাদের সুন্নাহ ও বিদ্বানদের ইজমা শরিয়তের উৎস। তিনি বলেন: “তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাহ এবং খলিফায়ে রাশেদীনদের সুন্নাহ অনুসরণ করবে। এটিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে, যেন তোমরা তোমাদের কশ দাঁত দিয়ে এটি ধরে রেখেছো…” [আবু দাউদ, তিরমিজী, আল-হাকিম (যিনি এটিকে সহীহ বলেছেন) এবং তা সাথে ইমাম যাহাবী ও শাইখ আলবানী একমত হয়েছেন]।
তিনি আরও বলেন: “আল্লাহ আমার উম্মাহকে (বা তিনি বলেছেন: মুহাম্মাদের উম্মাহ) পথভ্রষ্টতার ওপর ঐক্যবদ্ধ হতে দেবেন না; এবং আল্লাহর সাহায্য জামা‘আতের সাথে থাকে; আর যে কেউ তা থেকে বিচ্যুত হবে, সে জাহান্নামে থাকবে।” [তিরমিজী]
আরও বলেছেন: “আমি আমার প্রভুর কাছে চারটি বিষয় চেয়েছিলাম, যার মধ্যে তিনটি আমাকে দেওয়া হয়েছে এবং একটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আমি আমার প্রভুর কাছে আবেদন করেছিলাম যেন আমার জাতি পথভ্রষ্টতায় একমত না হয়, এবং তিনি আমাকে সেটি দিয়েছেন…” [আহমাদ মারফু‘ হিসেবে এটি বর্ণনা করেছেন, যা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর থেকে নির্দেশিত]।
‘আউল প্রথমবার খলিফায়ে রাশেদীন উমর (রাযি.) এর শাসনকালে প্রয়োগ করা হয়, এবং সেসময়ের সাহাবিগণ এতে সম্মত হন। তবে ইবনে আব্বাস (রাযি.) উমর (রাযি.) এর মৃত্যুর পর ভিন্ন মত পোষণ করেন, যা পরে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। ইবনে কুদামাহ আল-মুগনীতে বলেছেন: “‘আউল প্রয়োগের মতামত সকল মুসলিম ফকিহগণের মধ্যে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য হয়েছে, ইবনে আব্বাস এবং কিছু ক্ষুদ্র দল ছাড়া… বর্তমানে আমরা জানি না যে ইবনে আব্বাসের মতামত কেউ অনুসরণ করেন। ‘আউল প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইসলামী রাষ্ট্রসমূহের ফকিহদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।”
প্রথমবার ‘আউল-এর প্রয়োগ খলিফা উমর ইবনে আল-খাত্তাব (রাযি.) এর শাসনকালে ঘটে। আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়্যাহতে বলা হয়েছে:
“প্রথম ‘আউল এর ঘটনা ঘটে এক মহিলার ক্ষেত্রে, যিনি স্বামী ও দুই বোন রেখে যান। এটি উমরের (রাযি.) খেলাফতের শুরুর সময় ঘটে। তিনি সাহাবিদের সাথে পরামর্শ করেন এবং বলেন, ‘আল্লাহর কসম, আমি জানি না কে আগে আসে আর কে পরে আসে। যদি আমি স্বামীকে পুরো অধিকার দেই, তবে দুই বোন তাদের অধিকার পুরো পাবেন না; আর যদি আমি দুই বোনকে পুরো অধিকার দেই, তবে স্বামী তার অধিকার পুরো পাবেন না।’ সর্বাধিক স্বীকৃত বর্ণনা অনুযায়ী, আল-আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাযি.) তাকে ‘আউল প্রয়োগের পরামর্শ দেন।”
‘আউল ইসলামের ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক, যা নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত সমাধান।
আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানী।
তথ্যসূত্র
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"