14.বীর্য নির্গত হয় কোথা থেকে?

ইসলামের বিশ্বাস অনুসারে, বীর্য উৎপন্ন হয় মেরুদণ্ড এবং বক্ষ পাঁজরের মধ্য থেকে [1] । এটি একটি অত্যন্ত পুরনো বিশ্বাস যা প্রাচীনকালে মানুষের মধ্যে প্রচলিত ছিল, কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে এটি সম্পূর্ণভাবে ভুল এবং ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। আসলে, মানবদেহে বীর্যের উৎপত্তি ও সঞ্চালন একটি জটিল প্রক্রিয়া যা প্রধানত টেস্টিস বা অণ্ডকোষ এবং প্রোস্টেট গ্রন্থির সাথে সম্পর্কিত। বীর্য উৎপন্ন হয় পুরুষের টেস্টিসে, যেখানে শুক্রাণু তৈরি হয়, এবং প্রোস্টেট গ্রন্থি ও সেমিনাল ভেসিকল থেকে নির্গত বিভিন্ন তরল মিলে বীর্য তৈরি হয়। মেরুদণ্ড এবং বক্ষ পাঁজরের সাথে বীর্য উৎপাদনের কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রাচীনকালে শারীরবৃত্তীয় জ্ঞান সীমিত থাকায় মানুষের এমন ভুল ধারণা ছিল। তবে আজকের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে, বীর্য উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াটি মেরুদণ্ড বা পাঁজরের সাথে কোনোভাবেই প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত নয়। আধুনিক বিজ্ঞান অনুসারে, পুরুষের প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে তার প্রজনন অঙ্গের সাথে যুক্ত। টেস্টিস বা অণ্ডকোষ হচ্ছে প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র যেখানে স্পার্মাটোজেনেসিসের মাধ্যমে শুক্রাণু তৈরি হয় এবং সেটি সম্পূর্ণ একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় প্রধান ভূমিকা পালন করে পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন। শুক্রাণু তৈরির পর এগুলো এপিডিডাইমিস নামক একটি অংশে জমা হয় এবং পরে প্রোস্টেট ও সেমিনাল ভেসিকলের সাথে মিশে বীর্য তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে শরীর থেকে নির্গত হয়।

এ প্রক্রিয়ায় মেরুদণ্ডের কোনো ভূমিকা নেই। মেরুদণ্ডের কাজ হলো স্নায়ু সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে; এটি কোনোভাবেই বীর্য উৎপন্ন করে না বা এর উৎপাদনে ভূমিকা রাখে না। পাঁজরের মূল কাজ হচ্ছে ফুসফুস এবং হৃদপিণ্ডের সুরক্ষা দেওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় সাহায্য করা। সুতরাং, কোরআনে বীর্য উৎপাদনের স্থান সম্পর্কে যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা সরাসরি বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রাচীনকালে মানুষের শারীরবৃত্তীয় জ্ঞানের অভাব এবং পর্যবেক্ষণমূলক সীমাবদ্ধতার কারণে এ ধরনের ধারণা প্রচলিত হয়েছিল, যা কুসংস্কার এবং ভ্রান্তি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তবে আজকের যুগে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অগ্রগতির মাধ্যমে এসব ভ্রান্তি দূর হয়েছে এবং বীর্য উৎপাদনের সঠিক প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান বিশেষত অ্যান্ড্রোলজি (পুরুষের প্রজনন বিজ্ঞান) বিষয়ক গবেষণায় দেখা যায় যে, স্পার্মের উৎপাদন ও সঞ্চালন পুরোপুরি প্রজনন অঙ্গের উপর নির্ভরশীল, যা কোনোভাবেই কোরআনে বর্ণিত মেরুদণ্ড বা বক্ষ পাঁজরের সাথে সম্পর্কিত নয়। এসব তথ্য স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, কোরআনে বর্ণিত ধারণাটি একটি ভুল তথ্য এবং প্রাচীনকালের কুসংস্কারের প্রতিফলন। তাই এই প্রাচীন ও ভুল ধারণার বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের উপর নির্ভর করা অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করবে না, বরং মানুষের শারীরবৃত্তীয় প্রকৃতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হবে।

তারপরেও যারা অন্ধভাবে বিশ্বাস করেন যে, বীর্য মেরুদণ্ড ও বক্ষ পাঁজরের মধ্য থেকে নির্গত হয়, তাদের অণ্ডকোষ সার্জারি করে কেটে ফেলে আমরা একটি পরীক্ষা চালাতে পারি, দেখা যাক তাদের মেরুদণ্ড ও বক্ষ পাঁজর থেকে বীর্য উৎপন্ন হয় কিনা! তারা সন্তান জন্ম দিতে পারেন কিনা, এবং স্বাভাবিক যৌন জীবন যাপন করতে পারেন কিনা!

সূরা আত-তারিক, আয়াত ৫
So let man observe from what he was created.
— Saheeh International
So let man consider from what he is created.
— M. Pickthall
অতঃপর মানুষ চিন্তা করে দেখুক কোন জিনিস থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
— Taisirul Quran
সুতরাং মানুষের চিন্তা করা উচিত যে, তাকে কিসের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে।
— Sheikh Mujibur Rahman
অতএব মানুষের চিন্তা করে দেখা উচিৎ, তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?
— Rawai Al-bayan
অতএব, মানুষ যেন চিন্তা করে দেখে তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে [১]!
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা আত-তারিক, আয়াত ৬
He was created from a fluid, ejected,
— Saheeh International
He is created from a gushing fluid
— M. Pickthall
তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে বের হয়ে আসা পানি থেকে।
— Taisirul Quran
তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি হতে,
— Sheikh Mujibur Rahman
তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে দ্রুতবেগে নির্গত পানি থেকে।
— Rawai Al-bayan
তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্থলিত পানি হতে [১],
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা আত-তারিক, আয়াত ৭
Emerging from between the backbone and the ribs.
— Saheeh International
That issued from between the loins and ribs.
— M. Pickthall
যা বের হয় শিরদাঁড়া ও পাঁজরের মাঝখান থেকে।
— Taisirul Quran
এটা নির্গত হয় পৃষ্ঠদেশ ও পঞ্জরাস্থির মধ্য হতে।
— Sheikh Mujibur Rahman
যা বের হয় মেরুদন্ড ও বুকের হাঁড়ের মধ্য থেকে।
— Rawai Al-bayan
এটা নিৰ্গত হয় মেরুদণ্ড ও পঞ্জরাস্থির মধ্য থেকে [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এবারে আসুন এই আয়াতটির তাফসীর থেকে জেনে নিই, এখানে আসলে কী বোঝানো হয়েছে [2]

বীর্য

অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারি, কোরআন অনুসারে, বীর্য উৎপন্ন হয় মেরুদণ্ড এবং বক্ষ পাঁজরের মধ্য থেকে। কিন্তু আসলেই কী তা? আসুন ভিডিওটিতে দেখি, পুরুষের বীর্য আসলে কোথা থেকে উৎপন্ন হয়-

তথ্যসূত্র

  1. সূরা আত-তারিক, আয়াত ৫-৭ []
  2. তাফসীরে মাযহারী, খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা ৪২৮ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"