09.দাসীদের সাথে আযলের কারণ

আজকাল আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক মুসলিমই এইসমস্ত বর্বর অপকর্ম ধামাচাপা দিতে বলতে থাকেন, পরিবার পরিজনহীন অসহায় নারীরা কোথায় যাবে, কী করবে, সেই কারণে দয়াল নবী বাধ্য হয়ে তাদের বন্দী করে দাসী বানিয়ে সাহাবীদের ভোগ করতে দিতেন! এইসব নির্লজ্জ কথা বলতে তাদের একটুও সংকোচ হয় না। কিন্তু হাদিস থেকে জানা যায়, যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে সহবতই ছিল নবীর দলবলের প্রধান উদ্দেশ্য। নিচের হাদিসটি পড়লে সেটি স্পষ্ট হয়ে যায়। লক্ষ্য করে পড়ুন, বস্ত্র উন্মোচন করি নি, কথাটি নবীর সামনে কত স্বাভাবিকভাবেই না বলছেন এই সাহাবী [1]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১৪. নফল (বিশেষ পুরস্কার ও অনুদান) হিসাবে কিছু দেওয়া এবং বন্দীদের বিনিময়ে (আটকে পড়া) মুসলমানদের মুক্ত করা
৪৪২১। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … ইয়াস ইবন সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা বলেছেন, আমরা ফাযারা গোত্রের সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের আমীর ছিলেন আবূ বাকর (রাঃ)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আমাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন যখন আমাদের এবং (গোত্রের) পানির স্থানের মাঝে এক ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান ছিল, তখন আবূ বাকর (রাঃ) আমাদেরকে শেষ রাতের অবতরণের (বিশ্রামের) নির্দেশ দিলেন। সুতরাং আমরা রাতের শেষাংশেই সেখানে অবতরণ করলাম। এরপর বিভিন্ন দিক দিয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালালেন এবং পানি পর্যন্ত পৌছলেন। আর যাদের পেলেন হত্যা করলেন এবং বন্দী করলেন।
আমি লোকদের একটি দলের দিকে দেখছিলাম যাদের মধ্যে শিশু ও নারী রয়েছে। আমি আশংকা করছিলাম যে, তারা হয়তো আমার আগেই পাহাড়ে পৌছে যাবে। অতএব, আমি তাদের ও পাহাড়ের মাঝে তীর নিক্ষেপ করলাম। তারা যখন তীর দেখতে পেল থেমে গেল। তখন আমি তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে এলাম। তাদের মাঝে চামড়ার পোশাক পরিহিত বনী ফযরার একজন মহিলাও ছিল এবং তার সঙ্গে ছিল তার এক কন্যা। সে ছিল আরবের সব চাইতে সুন্দরী কন্যা। আমি সকলকেই হাকিয়ে আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে নিকট এলাম। আবূ বকর (রাঃ) কন্যাটিকে আমাকে নফল হিসাবে প্রদান করলেন।
এরপর আমি মদিনায় ফিরে এলাম। আমি তখনও তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি। পরে বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাকে আমার খুবই পছন্দ হয়েছে এবং এখনও আমি তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি। পরের দিন আবারও বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হলো। তখন তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। “আল্লাহ তোমার পিতাকে কতই সুপুত্র দান করেছেন।” তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে আপনার জন্যই আল্লাহর কসম! আমি তার বস্ত্র উমোচন করিনি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ কন্যাটিকে মক্কায় পাঠিয়ে দিয়ে তার কয়েকজন মুসলমানের মুক্তির ব্যবস্থা করলেন, যারা মক্কায় বন্দী ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইয়াস ইবনু সালামাহ ইবনু আকওয়াহ (রহঃ)

জিহাদিদের উন্মত্ত ধর্ষণ প্রক্রিয়ার ফলে যদি বন্দিনীটির গর্ভসঞ্চার হয় তাহলে কী হবে? অনেক জিহাদিই চাইতো না যে তাদের সেক্স-মেশিনটি তাড়াতাড়ি গর্ভসঞ্চার করে বসুক, সুতরাং তারা আযল করতো। এই প্রথা সম্পর্কে মুহম্মদের মনোভাব ছিল ঘোলাটে, কখনও তাকে এই প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা যায়, কখনও বা তাকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। কিন্তু কোথাও সেই যুদ্ধবন্দিনীকে সাথে সাথে মুক্তি দিতে বলতে দেখা যায় না। সেই যুদ্ধবন্দিনীর সাথে আযল পদ্ধতিতে সেক্স করলো কি করলো না সেটি মহামানব মুহাম্মদের কাছে এত গুরুত্ত্বপূর্ণ, অথচ সেই যুদ্ধবন্দিনীটি মোটেও গুরুত্ত্বপূর্ণ নয়? একজন মহামানবের কাছ থেকে যদি আমি আশা করে থাকি যে, তিনি এই কথা শোনার সাথে সাথে ঐ জিহাদীর বিচারের ব্যাবস্থা করবেন, এবং সেই যুদ্ধবন্দিনীকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দেবেন, তাহলে কি খুব বেশি আশা করা হয়ে যায়?

আসুন নিচের হাদিসটি পড়ি। এখানে দেখা যাচ্ছে, সাফিয়্যা আরেকজন সাহাবীর ভাগে পড়েছিল, যাকে নবী পছন্দ করে নিজে নিয়ে নেন। হাদিসটির বাকি অংশে বর্ণনা করা হচ্ছে, আযল করার কারণ [2] !

ইসলাম ও গনিমতের মাল

বন্দিনী নারীগণ যেন দ্রুত গর্ভবতী না হয়ে যায়, সেই দিকে মুহাম্মদের জিহাদী সৈন্যদের ছিল খুব সজাগ দৃষ্টি। নিচের হাদিসটি পড়ুন [3]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯৭/ তাওহীদ
পরিচ্ছদঃ ৯৭/১৮. আল্লাহর বাণীঃ তিনিই আল্লাহ্ সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদাতা। (সূরাহ আল-হাশর ৫৯/২৪)
৭৪০৯. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বানী মুসতালিক যুদ্ধ বিষয়ে বর্ণনা করেন যে, মুসলিমগণ যুদ্ধে কতকগুলো বন্দিনী লাভ করলেন। এরপর তাঁরা এদেরকে ভোগ করতে চাইলেন। আবার তারা যেন গর্ভবতী হয়ে না পড়ে সে ইচ্ছাও তারা করছিলেন। তাই তারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আযল বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এতে তোমাদের কোন লাভ নেই। কারণ আল্লাহ্ ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যত জীবন সৃষ্টি করবেন, তা সবই লিখে রেখেছেন। মুজাহিদ (রহ.) কাযআ (রহ.)-এর মাধ্যমে আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যত জীবন সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, আল্লাহ্ তা‘আলা অবশ্যই তা সৃষ্টি করবেনই। (২২২৯) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হাদিসটি সরাসরি বই থেকেও দেখে নিই [4]

বনী মুসতালিক যুদ্ধ
যুদ্ধবন্দী গর্ভবতী

অর্থাৎ যুদ্ধে জেতার পরে আল্লাহ রাসুল সকল প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষকে হত্যা করলেন এবং তিনি তাদের সকল নারী এবং শিশুকে বন্দী হিসেবে নিলেন। এবারে আসুন, সহজ নসরুল বারী গ্রন্থে থেকে এই সম্পর্কিত হাদিসের ব্যাখ্যা পড়ে নিই [5]

অর্থাৎ আমরা যদি বাঁদীর সাথে আযল না করি, তাহলে বাঁদী উম্মে ওয়ালাদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ আমাদের মালের প্রতি মহব্বত আছে। আমরা তাকে বিক্রি করে তার মূল্য দ্বারা উপকৃত হতে চাই। কিন্তু উম্মে ওয়ালাদ হয়ে গেলে তাকে বিক্রয় করতে পারব না। এজন্য আমরা বাঁদীর সাথে আযল করতে চাই। যাতে বাঁদীর গর্ভ সঞ্চার না হয়। সুতরাং এ বিষয়ে আপনি কী বলেন?

4

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৪২১ []
  2. বুখারী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৯, হাদিস নম্বরঃ ২০৮৮ []
  3. সহীহ বুখারী (তাওহীদ), হাদিস নম্বরঃ ৭৪০৯ []
  4. বুখারী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দশম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৪৯, হাদিস নম্বরঃ ৬৯০৫ []
  5. সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী, ১১ তম খণ্ড, আরবি-বাংলা, সহজ তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ উসমান গনী, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৫০৭, ৫০৮ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"