র‍্যাপিডলি ইভলভিং হিউম্যান উইথ স্পেন্সার ওয়েলস – অনুবাদ

Print Friendly, PDF & Email

(এই অংশটা জাস্ট আগ্রহ সৃষ্টির জন্য। এই লেখায় পাবেন –
১। প্রাচীন ডিএনএ এর সাহায্যে মানব প্রজাতির উদ্ভব ও পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে গবেষণার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
২। আমাদের ফিনোটাইপগুলো, যাকে আমরা রেশিয়াল ক্যারেক্টারিস্টকস বলি যেমন চুল ও ত্বকের রং সেগুলোর বিবর্তন
৩। মানুষের সাথে আর্কাইক হিউম্যান স্পিসিজ যেমন নিয়ান্ডারথাল ও দেনিসোভানদের মিশ্রণ ও তারফলে আমাদের মধ্যে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্যপ্রাপ্তি ও বিবর্তন
৪। কৃষির বিকাশের ফলে এই পরিবর্তিত পরিবেশে আমাদের বিবর্তন, যেমন দুধ হজম করার সক্ষমতার তৈরি, জনসংখ্যার প্রচণ্ড বৃদ্ধি, এদিকে আগের চেয়ে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাওয়া, গড় আয়ু কমে যাওয়া
৫। আমাদের শর্করাসমৃদ্ধ কৃষিজ খাদ্যাভাসের সাথে আমাদের হান্টার-গ্যাদারার শরীরের অসামঞ্জস্য ও এজন্য ডায়াবেটিস ও ওবিসিটির মত রোগের সৃষ্টি
৬। বর্তমানে জিন টেকনোলজির সাহায্যে আগে থেকেই সাম্ভাব্য জিনগত রোগ সম্পর্কে জেনে যাওয়া ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া অর্থাৎ পারসোনালাইজড মেডিসিনের ধারণা, জন্মের আগেই প্রিইমপ্ল্যান্ড জেনেটিক ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা ও সুস্থ সন্তান তৈরি করা, ক্রিস্পার টেকনোলজির মাধ্যমে অসুস্থ রোগের জিন কেটে বাদ দেয়ার সক্ষমতা অর্জন
৭। এগুলোর ফলে ভবিষ্যতে জন্মের আগেই এথলেটিসিজম, বুদ্ধিমত্তা, রোগপ্রতিরোধের মত প্রয়োজনীয় জিনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলোর সিলেক্ট করে নেয়ার সক্ষমতা, এতে আমাদের ভবিষ্যৎ বিবর্তনের গতি বৃদ্ধি ও একে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা অর্জন
৮। এর ফলে মানুষের ডাইভারসিটি কমে যাওয়া ফলে করোনার, ইবোলা, জিকার মত এপিডেমিক-প্যানডেমিকে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া তাই ব্যাপারটা নিয়ে সাধারণের বিজ্ঞানশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা

শিরোনামের নামটি আসলে ২০১৮ সালে তৈরি একটি ডকুমেন্টারির, যা মানুষের সাম্প্রতিক বিবর্তনের ব্যাপারে আমাদেরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান দেয় (উপরের লিস্ট দেখুন)। ২০ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের এই ডকুমেন্টারিটি তৈরি হয়েছে এর ভাষ্যকার ও জেনেটিসিস্ট স্পেন্সার ওয়েলসের ভাষ্যের অলটারনেশনের মাধ্যমে যা আমি ভাষ্যকার ও স্পেন্সার ওয়েলস এর বক্তব্য আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করে অনুবাদ করেছি। আগ্রহী হয়ে থাকলে দেখতে পারেন, আকারে একটু বড় হবে।)

ভাষ্যকার: আমরা মানুষেরা অনেক সময়ই ভাবি যে আমাদের বর্তমান অবস্থাই আমাদের বিবর্তনের শেষ অবস্থা। কিন্তু যদি আমরা এই পৃথিবীতে প্রজাতি হিসেবে আমাদের ক্ষুদ্র সময়কে রিওয়াইন্ড করি তাহলে আমরা দেখতে পারব এই সময়ের মধ্যে আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে, আর এও দেখব যে আমরা অনেকটাই “ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেস” এ রয়েছি।

স্পেন্সার ওয়েলস: বিবর্তনের সবচেয়ে সহজ সংজ্ঞা হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে জিন ফ্রিকুয়েন্সিতে পরিবর্তন। তাই যে বলবে আমাদের বিবর্তন শেষ হয়ে গেছে তিনি পাগল ছাড়া কিছুই নন। যতবারই কোন ব্যক্তির সন্তান হচ্ছে ততবারই বিবর্তন হচ্ছে।

ভাষ্যকার: হতে পারে আমরা বিবর্তন সম্পর্কে সবসময় সচেতন থাকিনা। কিন্তু আমরা মানুষেরা প্রায় দুই লক্ষ বছর আগে প্রজাতি হিসেবে আফ্রিকায় উদ্ভূত হবার পর থেকেই আমাদের জিনকে পরিবর্তন করে চলেছি ও এই পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে নতুন নতুন পরিবেশে নিজেদেরকে পরিবর্তন করে ও খাপ খাইয়ে নিয়ে চলেছি। কিন্তু স্পেন্সার ওয়েলস এর মত জেনেটিসিস্টরা বলছেন বিগত দশ হাজার বছর ধরে মানুষের মধ্যকার পরিবর্তন অভাবনীয় হারেই ঘটছে।

স্পেন্সার ওয়েলস: আমরা অবশ্যই দ্রুতগতিতে বিবর্তিত হচ্ছি, আর দেখে মনে হচ্ছে আমাদের এই বিবর্তন কেবল শুরুই হয়েছে।

ভাষ্যকার: বিগত ৩০ বছরে জেনেটিসিস্টরা একটি বৃহদাকার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন, যার কাজ হচ্ছে মানব জাতির মধ্যকার জিনেটিক পরিবর্তনগুলোকে লিপিবদ্ধ করা। এই পরিবর্তনগুলো হতে পারে চুলের বাইরের অংশের পরিবর্তন, চোখের রং এর পরিবর্তন, শরীরের রং এর পরিবর্তন, খাদ্য হজমের সক্ষমতার পরিবর্তন, যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুতে মানুষের ফিটনেসকে নির্ধারিত করেছিল।

স্পেন্সার ওয়েলস : প্রত্যেকের ডিএনএ একটি কাহিনীকে বহন করে। এই গল্পটি হচ্ছে আপনার এনসেস্ট্রির, আর এটি আপনাকে মানবজাতির উদ্ভবের কাহিনীতে নিয়ে যায়, যা আমাদের সকলেরই কাহিনী।

ভাষ্যকার: ১৯৮০ ও ৯০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা এই কাহিনী বলার জন্য ডিএনএ-কে ব্যবহার করা শুরু করে। তারা প্রথমে মায়েদের থেকে পাস হওয়া মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ও তারপর বাবাদের থেকে পাস হওয়া ওয়াই ক্রোমোজোম নিয়ে এই কাজ করা শুরু করে। এর ফলে তারা মানুষের জীবনের ইতিহাসের মানচিত্র নির্মাণ করে। যেখানে মানব অভিপ্রয়াণ কোথা থেকে কোথায় হয়েছে, কখন হয়েছে বের হয়ে যায়, আর এদের সবার পূর্বপুরুষ হিসেবে সবার মূলে থাকে দুজন মানুষ, সাইন্টিফিক এডাম (ওয়াই ক্রোমোজোম থেকে হিসাব করে) ও ইভ (মাইটোকনড্রিয়াল ডিএনএ থেকে হিসাব করে)। সেই সময় পর্যন্ত এই কাজটি করার জন্য মানুষের খুব বিশেষ দল থেকে তাদের ডিএনএ সংগ্রহ করতে হয়েছে।

স্পেন্সার ওয়েলস: দেখা গেল যে, যেসব গোষ্ঠী তাদের ডিএনএ দান করেছে, তারা ছিল আমাদের প্রজাতি কিভাবে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে অভিপ্রয়াণ করেছে সে ব্যাপারে খুটিনাটি বুঝবার জন্য একরকম পরিষ্কারতম সাইনপোস্ট। এই জনগোষ্ঠীগুলো নির্দিষ্ঠ স্থানে বহু সময় ধরে বাস করে এসেছে। এরা হচ্ছে বিশ্বের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো। তারা একই স্থানে এক লক্ষ, এমনকি দশ লক্ষ বছর ধরে বাস করছে।

ভাষ্যকার: যার অর্থ হচ্ছে, তাদের ডিএনএ সামগ্রিক মিশ্রিতকরণ থেকে তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকেছে, যে মিশ্রিতকরণের ফলে আমাদের বাকিদের ডিএনএ বিগত কয়েক শতকে পরিবর্তিত হয়ে গেছে।

স্পেন্সার ওয়েলস: এই একই স্থানে এত দিন যাবৎ বসবাস করা ও গত কয়েক শতকে হওয়া মিশ্রণ থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন রাখা জনগোষ্ঠীগুলোর সাথে তুলনা করলে, আপনি মানুষকে আরও গভীর ঐতিহাসিক কনটেক্সটে ফেলতে পারবেন।

ভাষ্যকার: মানুষের এই অভিপ্রয়াণের ঐতিহাসিক মানচিত্রটি উদঘাটন করার বিশাল প্রচেষ্টা থেকে মূল যে জিনিসটি পাওয়া গেল তা হল, আমরা যতই বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকি না কেন, আমাদেরকে যত ইউনিকই দেখা যাক না কেন, আমাদের জিনেটিক মার্কার আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে একটি স্থানেই, আর তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র সংখ্যক মানুষের মধ্যে, যারা আফ্রিকায় মাত্র ৬০,০০০ বছর আগে বাস করত। আমাদের চোখ, ত্বক, চুল, উচ্চতা আর অন্যান্য সব বৈশিষ্ট্যগুলো, যেগুলো এখন আমাদেরকে উপরি উপরি সংজ্ঞায়িত করে, যেগুলোর ভিত্তিতে আমরা রেইসগুলোকে সংজ্ঞায়িত করতাম, সেগুলো এসেছে তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিককালেই, পৃথিবী জুড়ে আমাদের পূর্বপুরুষের ছড়িয়ে যাবার পরেই। আর এর মাধ্যমে আমাদেরকে নিজেদের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য বিবর্তিত করতে বাধ্য করা হয়েছে।

স্পেন্সার ওয়েলস: এই শক্তিগুলোর সবগুলোই আমাদেরকে ভিন্ন ভিন্ন চেহারা দিয়েছে। আমরা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছি, আর আমরা ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হতে থাকব। এতটাই দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছি বা হব যা ডিএনএ এর ব্যাপারটা আবিষ্কার হবার আগে কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। এই গল্পটা আসলেই খুব ইন্টারেস্টিং। গল্পটা মানব জাতির ঐক্য নিয়ে।

ভাষ্যকার: এটা সেই গল্প যা আমাদের পূর্বপুরুষের এই পৃথিবীর শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাবার পরও শেষ হয়নি। জিন টেকনোলজির সাম্প্রতিক অগ্রগতিগুলোকে ধন্যবাদ। এর মাধ্যমে ওয়েলস সহ অনেক বিজ্ঞানীরা কেবল এটাই জানতে পারছেন না যে কখন ও কোথায় আমাদের মধ্যকার এই পার্থক্যগুলোর সৃষ্টি হল, একই সাথে কেন ও কিভাবে এই পার্থক্যগুলো আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল সেটাও তারা জানতে পারছেন। কম সূর্যালোকের অঞ্চল মধ্য এশিয়াকেই ধরা যাক। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে, যেসব জিন মিউটেশনের কারণে ফরসা গায়ের রং এর জন্য সিলেক্টেড হয়, সেগুলো এই অঞ্চলে আমাদের পূর্বপুরুষের তুলনামূলক কালো ত্বকের চেয়ে সুবিধাজনক ছিল। কেননা ফরসা ত্বক থাকলে বেশি পরিমাণে সূর্যালোক এসে ভাইটামিন ডি উৎপাদন করতে পারে।

স্পেন্সার ওয়েলস: শুরুতে আমাদেরকে দেখতে আজকের আফ্রিকানদের চেহারার কাছাকাছি ছিল। কিন্তু আফ্রিকা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মহাদেশ। তাই আমাদের সেখানে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের দরকার যা আমরা পাই মেলানিন থেকে। দুই লক্ষ বছর আগে আমাদের কাছে SPF 50 ছিল না। তাই আমরা কালো ছিলাম। এরপর যখন আমরা উচ্চতর অক্ষাংশের দিকে যেতে থাকলাম আমাদেরকে সেই পিগমেন্টেশনের অর্থাৎ কৃষ্ণবর্ণের কিছুটা হারাতে হয়েছিল, কারণ সেইসময় আমাদের ত্বকের গভীরতর স্তরের জন্য কিছু পরিমাণে অতিবেগুণী রশ্মির প্রয়োজন ছিল যার ফলে ভাইটামিন ডি এর উৎপাদন হত।

ভাষ্যকার: ইউরোপে সোনালী চুল ও নীল চোখ সম্ভবত র‍্যান্ডম জিনেটিক মিউটেশনের ফলে উদ্ভুত হয়েছে, এরপর সেক্সুয়াল সিলেকশনের কারণে বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে দূর দূরান্তে ছড়িয়ে গেছে।

স্পেন্সার ওয়েলস: সম্ভবত এগুলো অস্বাভাবিক ফিনোটাইপ ছিল। নিরপেক্ষ থাকলে এগুলোর যতটা বেশি বিস্তৃত থাকা উচিৎ ছিল এগুলো তার চেয়ে বেশি বিস্তৃত হয়েছে। সুতরাং এগুলো সম্ভবত কোনরকম সিলেকশনের মধ্য দিয়ে গেছে যেগুলো টিকে থাকার জন্য পরিবেশগত সুবিধা প্রদান করেনা। সুতরাং সম্ভবত এটি একারণেই হয়েছে যে পুরুষেরা সোনালী চুলের মেয়েদেরকে বেশি পছন্দ করত।

ভাষ্যকার: সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞানীরা জিনের একটি নতুন উৎস্য আবিষ্কার করেছেন যেগুলো আমাদের অতীতের বিষ্ময়কর গোপনীয়তাকে উদঘাটিত করছে। প্রাচীন হাড় ও দাঁত থেকে জিন মেটারিয়াল উদ্ধার করার নতুন পদ্ধতিগুলো আমাদেরকে দেখিয়েছে যে আমাদের পূর্বপুরুষের কেউ কেউ ছিল নিয়ান্ডারথাল, যারা মানুষই ছিল না।

স্পেন্সার ওয়েলস: নিয়ান্ডারথালদের জিনোম ছিল একটি প্রকৃত ট্যুর ডি ফোর্স। এটা ছিল আমাদের প্রাচীন ডিএনএ সিকুয়েন্স করার ক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। আর এর ফলে জানা গেল যে, আফ্রিকার বাইরে বাস করা আধুনিক মানুষেরা আসলে কেবল নিয়ান্ডারথালদের সাথে যৌনমিলনে আবদ্ধই হয়নি, সেই সাথে এদের যৌনমিলনের ফলে প্রজননক্ষম সন্তানেরও জন্ম হয়, আর আজকের নন-আফ্রিকান মানুষদের জিনোমের ২% আসলে নিয়ান্ডারথালদের।

ভাষ্যকার: দেখা গেল আমাদের জিনোমে নিয়ান্ডারথাল জিনগুলো তুচ্ছ আর্টিফ্যাক্টের চাইতেও অনেক বেশি কিছু। এগুলো আমাদের শরীর, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মত বৈশিষ্ট্যগুলোর উন্নয়ন ঘটিয়ে আমাদের মধ্যে হওয়া দ্রুত বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকতে পারে।

স্পেন্সার ওয়েলস: এটা আসলে বোঝাই যায়। কারণ আমরা একটা আফ্রিকান প্রজাতি হিসেবেই, যারা খুবই সম্প্রতি আফ্রিকা থেকে বের হয়ে সমস্ত পৃথিবী জুড়েই নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে, ফলে সম্মুখীন হচ্ছে নতুন নতুন পরিবেশের, নতুন নতুন প্যাথোজেনের। এদিকে নিয়ান্ডারথালরা লাখ লাখ বছর ধরেই আফ্রিকার বাইরে ছিল আর তারা শারীরিকভাবে নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়েও নিয়েছিল। সুতরাং বোঝাই যায় যে এই নতুন আগত আফ্রিকান মানুষেরা ইতিমধ্যেই যারা নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছে তাদের জিনোম থেকে সেই জিনগুলোকে বেছে বেছে গ্রহণ করবে যেগুলো তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। (মানে যেসব মানুষ নিয়ান্ডারথালদের সাথে মিশ্রণের ফলে ঐ জিনগুলো পেয়েছে তারা টিকে গেছে, যারা ফিজিকাল করেনি আর সেই জিনগুলো পায়নি তাদের সন্তানরা নতুন পরিবেশে আর টেকেনি। যারা নিয়ান্ডারথালদের জিনগুলো নিয়ে টিকে গেছে তারাই পরে আফ্রিকার বাইরে সবার পূর্বপুরুষ, তাই আফ্রিকার বাইরের সবার মধ্যে নিয়ান্ডারথাল জিন রয়ে গেছে)।

ভাষ্যকার: পৃথিবী জুড়ে ভ্রমণ করা আমাদের পূর্বপুরুষেরা এশিয়ায় প্রবেশ করে এবং তারা প্রাচীন মানবদের আরেকটি দলের সাথে মিশ্রিত ও উপকারপ্রাপ্ত হয়। এরা হল দেনিসোভান, যাদের জিনোমকে ২০১২ সালে সিকুয়েন্স করা হয়। এর সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায় আজকের দিনের তিব্বতীয়দের মধ্যে। অনেক দিন ধরেই এটা জানা যে উচ্চ স্থানে বাস করা তিব্বতীয়রা অন্যদের তুলনায় অধিক মাত্রায় অক্সিজেনবাহী লোহিত রক্ত কণিকা বহন করে। উচ্চ স্থানে, যেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ কম, সেখানে টিকে থাকার জন্য এই সুবিধাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

স্পেন্সার ওয়েলস: আর তাই অধিক লোহিত রক্ত কণিকা থাকার এই সক্ষমতাটি আপনাকে নিম্ন অক্সিজেনের অঞ্চলে টিকে থাকার সুযোগ করে দেয়। এর ফলে আপনার রক্ত বেশি করে অক্সিজেন আপনার শরীরে বহন করে নিয়ে যেতে পারে।
ভাষ্যকার: এই সক্ষমতাটি এসেছে EPAS-1 নামে একটি জিনের মিউটেশন থেকে, যা লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা নির্ধারণে সাহায্য করে। কিন্তু দেখা যায়, এই মিউটেশনটা মানুষের মধ্যে হয়নি।

স্পেন্সার ওয়েলস: এই মিউটেশনটির কারণেই এই বিশেষ সক্ষমতাটি লাভ হয়। কিন্তু দেখা গেল এই জিনটি মানুষের মধ্যে আসলে এসেছে দেনিসোভানদের থেকে। (মানে এই জিনের মিউটেশনটি মানুষ নয়, দেনিসোভানদের মধ্যে হয়েছে। মানুষ দেনিসোভানদের সাথে সঙ্গম করেছে, আর যেসব বাচ্চাদের মধ্যে এই মিউটেটেড জিন ঢুকেছে তারা টিকে গেছে, যাদের মধ্যে জিনটা আসেনি আর যারা দেনিসোভানদের সাথে ফিজিকাল করেনি তারা আর টেকেনি, ফলে সব তিব্বতীয়দের মধ্যে এখন সেই জিন রয়ে গেছে।) সুতরাং আমাদের কাজিন স্পিসিজগুলো থেকে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদের মধ্যে প্রবেশ করেছে, আর এগুলো আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে কারণ এগুলো আমাদের উপকারে এসেছে।
ভাষ্যকার: হয়তো প্রাচীন ডিএনএ থেকে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি মানবসভ্যতার সবথেকে বৈপ্লবিক উন্নয়নটির সাথে সম্পর্কিত। আর তা হল প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে কৃষির উদ্ভব।

স্পেন্সার ওয়েলস: আমরা জানি প্রাথমিকভাবে সেই কৃষি বিপ্লবটি ঘটেছিল একই সাথে কয়েকটি মাত্র স্থানে।

ভাষ্যকার: মধ্যপ্রাচ্যে গম ও বার্লি, এশিয়ায় ধান, মেসোআমেরিকায় ভুট্টা, পেরুতে আলুর চাষ দিয়ে কৃষির সূচনা ঘটে।

স্পেন্সার ওয়েলস: এটি ছিল সংস্কৃতিতে একটি বিশাল পরিবর্তন, যাকে পরিপূর্ণভাবে একটি বিপ্লব বলা চলে। আর্কিওলজিস্টগণ একে নিওলিথিক রেভোল্যুশন বা নবপলীয় বিপ্লব বলে থাকে।

ভাষ্যকার: আর্কিওলজিস্টরা আমাদেরকে কখন ও কোথায় এই নিওলিথিক রেভোল্যুশন ঘটেছিল সেই বিষয়ে জানালেও বিশ্বজুড়ে কিভাবে এর বিস্তার ঘটে তা রহস্যই রয়ে গেছে।
স্পেন্সার ওয়েলস: এটা কি কেবলই একারণেই হয়েছিল যে, এদের আশেপাশে থাকা শিকারী সংগ্রাহক বা হান্টার গ্যাদারারা এই নতুন কৃষকদের দেখে বলল, দেখো এই লোকদের কাছে অনেক খাবার আছে, আমাদেরও তাদের পদ্ধতিটা ট্রাই করে দেখা উচিৎ? এটা কি কোন সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ছিল নাকি এটা আক্ষরিক অর্থেই এটি কৃষকদের ফার্টাইল ক্রিসেন্ট অঞ্চল থেকে ইউরোপ ও অন্যান্য অঞ্চলে অভিপ্রায়ন বা মাইগ্রেশন ছিল?

(ফারটাইল ক্রিসেন্ট বলতে মধ্যপ্রাচ্যের সেসময়ের মেসোপটেমিয়া, আসিরিয়া, ফোনেশিয়া, মিশর অঞ্চল নিয়ে বাঁকা চাঁদের আকারের ভূখণ্ডটিকে বোঝায়। অঞ্চলটির পূর্বপ্রান্তে রয়েছে পারশিয়ান গালফ, পশ্চিম প্রান্তে রেড সি, আর উত্তরে রয়েছে ভূমধ্যসাগর। এই অঞ্চলের পূর্ব দিকের অঞ্চলে, মানে যেখানে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সেখানে তাইগ্রিস ও ইউফ্রেতিস নদী রয়েছে, আর পশ্চিম অঞ্চলে যেখানে মিশরীয় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সেখানে রয়েছে নীল নদ। এই ফারটাইল ক্রিসেন্টেই দশ হাজার বছর পূর্বে প্রথম কৃষির সূচনা ঘটে।)

ভাষ্যকার: পুনরায় ডিএনএ-তে প্রবেশ করা যাক

স্পেন্সার ওয়েলস: আমরা এই নিওলিথিক রেভোল্যুশনের সময়ের পূর্বের ও পরের লোকেদের জিনোমকে বিশ্লেষণ করি, আর দেখি যে, হ্যাঁ, সত্যি সত্যি কৃষকদের মাইগ্রেশন বা অভিপ্রায়ণ ঘটেছিল। এই ফারটাইল ক্রিসেন্ট থেকে কৃষকেরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে মধ্য ইউরোপে প্রবেশ করেছিল। আর নিজেদের সাথে এরা নিয়ে এসেছিল কৃষিকেও। এটা কেবলই সংস্কৃতিরই অভিপ্রায়ণ ছিল না, একই সাথে ছিল আক্ষরিক অর্থেই মানুষেরও অভিপ্রায়ণ। আর এর ফলে সেই অঞ্চলে যেসব লোক বাস করত তাদেরকে তারা সেখান থেকে সরিয়ে নিজেরা জায়গা দখলও করে নিয়েছিল।

ভাষ্যকার: আর ডিএনএ স্টাডিগুলো থেকে দেখা যায়, আমাদের শরীর কৃষিতে স্থির হবার পর নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়া বন্ধ করে দেয়নি। যেমন আমাদের দুধ হজম করার সক্ষমতার কথাই ধরুন। সব শিশুই দুধের প্রাথমিক শর্করা ল্যাক্টোজকে হজম করতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেই সেটা সম্ভব হয়না।

স্পেন্সার ওয়েলস: মানুষের মধ্যে ল্যাক্টোজ ইনটোলারেন্স থাকার বিষয়টিকে একরকম ডিফল্টই বলা যায়। তাই পৃথিবীর বেশিরভাগ সমাজের প্রাপ্তবয়স্করা দুধ হজম করতে সক্ষম হন না, যদিও তারা ছোটবেলায় দুধ হজম করতে সক্ষম ছিলেন।

ভাষ্যকার: কিন্তু তাদের সাথে এরকমটা হত না যদি তাদের পূর্বপুরুষেরা হত ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্যের গবাদি পশুর খামারি।

স্পেন্সার ওয়েলস: যেসব সমাজ পশুদের, বিশেষ করে গরু, ছাগল, ভেড়ার মত দুধ প্রদানকারী গবাদি পশুদেরকে পোষ মানিয়েছিল তারা গত আট হাজার বছর আগে তাদের সংস্কৃতিতে ও চূড়ান্তভাবে তাদের খাদ্যাভাসে নতুন পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল। এরফলে ইউরোপীয় জনসংখ্যার মধ্যে একটি সিংগেল মিউটেশন ঘটে যা মানুষকে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় দুধ হজম করার সক্ষমতা প্রদান করে।

ভাষ্যকার: ক্যালরি ও প্রোটিনের এই নতুন সমৃদ্ধ উৎস্য এই বিশেষ মিউটেশনের লোকদেরকে একটি অসাধারণ সুবিধা প্রদান করেছিল। এটি তাদেরকে তাদের গৃহপালিত পশুদের দুধ ও দুধ থেকে তৈরি অন্যান্য খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হবার জন্য যোগ্য করে তুলেছিল।

স্পেন্সার ওয়েলস: এর ফলে এরা হয় অধিক স্বাস্থ্যবান, তাদের সন্তানদের সংখ্যা অধিক ছিল, আর সময়ের সাথে সাথে তাদের এই বৈশিষ্ট্যটি ছড়িয়ে যায়। এর অর্থ হচ্ছে যেসব লোকের এই মিউটেশনটি ছিল তারা টিকে যেতে সমর্থ হয়। এভাবেই সিলেকশন কাজ করে।

ভাষ্যকার: এমনকি এই জিনেটিক এডাপ্টেশন ছাড়াও কৃষির কারণে মানুষের জনসংখ্যা সারা পৃথিবী জুড়েই প্রচণ্ড মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। দুই হাজার বছর আগে যেখানে পৃথিবীতে মাত্র কয়েক মিলিয়ন মানুষের বাস ছিল, সেখানে আজ জনসংখ্যা সাত বিলিয়নের থেকেও বেশি।

স্পেন্সার ওয়েলস: কৃষির সাথে সম্পর্কিত জনসংখ্যার বৃদ্ধি খুবই সহজ একটি ব্যাপার। যদি আপনার অধিক পরিমাণে সন্তান থাকে, তাহলে আপনি অধিক পরিমাণে বেশি ফসল ফলাবেন, যার ফলে প্রাকৃতিকভাবেই কৃষিভূক্ত অঞ্চল বৃদ্ধি পাবে, আর এর ফলে আপনি আরও বেশি সন্তান গ্রহণ করতে চাইবেন।

ভাষ্যকার: এর মানে এই নয় যে কৃষি আমাদেরকে আমাদের শিকারী-সংগ্রাহক পদ্ধতির তুলনায় অধিকতর স্বাস্থ্যবান বানিয়েছে।

স্পেন্সার ওয়েলস: আমার ধারণা বেশিরভাগ লোকই শিকারী-সংগ্রাহকদেরকে নোংরা, পাশবিক, কম আয়ুর লোক ছিল। কিন্তু আসলে শিকারী সংগ্রাহকেরা ছিল তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যবান, শক্তসামর্থ ও খুব লম্বা।

ভাষ্যকার: গড়ে সাত ইঞ্চি বেশি লম্বা এই নিওলিথিক কৃষকেরা একই স্থানে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। শিকারী-সংগ্রাহকদের হাড় ও দাঁত বেশি শক্তিশালী ছিল। আর কোন কারণে মৃত্যুর মুখে পতিত না হলে তারা বেশি দিন বাঁচতোও বটে।

স্পেন্সার ওয়েলস: তাই এই সমস্ত ম্যাট্রিক্সগুলোই নির্দেশ করছে যে জীবনযাত্রার সেই আমূল পরিবর্তনটি শারীরিকভাবে আমাদের জন্য ভাল ছিল না। তাহলে প্রশ্ন উঠবে, যদি এই নতুন খাপ খাইয়ে নেয়াটা এতটা নেতিবাচকই হয়ে থাকে তাহলে এই পরিবর্তনটা ঘটল কেন? আর এর উত্তর হল, এটি ঘটেছে কেননা তাদের প্রচুর পরিমাণে সন্তান ছিল। তারা শক্তির উৎস্য পেয়েছে, তারা ১০ থেকে ১৫ সন্তানের পরিবার পেয়েছে, যা কোনদিনই শিকারী-সংগ্রাহকরা করত না। শিকারী-সংগ্রাহকেরা তাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে খুবই ভাল ছিল। কিন্তু কৃষকেরা যতটা সম্ভব বেশি সন্তান চাইত, কেননা এর ফলে আরও বেশি পরিমাণে ফসল ফলানো যায়, কারণ এই সন্তানেরা ক্ষেতে গিয়ে কৃষিকাজ করবে। তাই এখানে একধরণের ফিডব্যাক লুপ কাজ করে।

ভাষ্যকার: শিকারী সংগ্রাহকদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল শিকার করতে গিয়ে বা যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রতিকূল পরিবেশের শিকার হওয়া। প্রথম কৃষকদের ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল সংক্রামক রোগসমূহ, যেগুলো এসেছিল প্রধাণত তাদের নতুন প্রতিবেশী গবাদি পশুদের কাছ থেকে।

স্পেন্সার ওয়েলস: এটা আসলে একটি মজার স্ট্যাটিস্টিক্স। আমরা মানুষেরা আমাদের পূর্বপুরুষ শিকারী সংগ্রাহকদের আয়ুষ্কালকে ঊনবিংশ শতকের শের্ষার্ধের পূর্বে ছুঁতেই পারিনি।

ভাষ্যকার: যখন রোগের জার্ম থিওরির আবিষ্কার হয়।

স্পেন্সার ওয়েলস: ভিক্টোরিয়ান লন্ডনে বসবাসরত একজন কারখানা-শ্রমিকের গড় আয়ু ছিল দশ হাজার বছর পূর্বের প্রাথমিক নিওলিথিক কৃষকদের গড় আয়ুর সমান। এই সময়ে মানুষ ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সে মারা যেত।

ভাষ্যকার: আজকের দিনেও ওয়েলস মনে করেন আমাদের শরীর এখনও খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য সংগ্রাম করছে।

স্পেন্সার ওয়েলস: নিওলিথিক রেভোল্যুশনের ফলে আমাদের খাদ্যাভাসের যে পরিবর্তন হয়েছিল তার সাথে পরিপূর্ণভাবে এখনও আমরা খাপ খাইয়ে নিতে পারিনি। খাদ্যাভাসের এই পরিবর্তনটা ছিল অধিক পরিমাণে শর্করার দিকে ঝুঁকে যাওয়া। যদি আপনি অতীতে গিয়ে নিওলিথিক পরিবর্তনেরও পূর্বের মধ্যপ্রাচ্যের শিকারী-সংগ্রাহকদের খাদ্যাভাসের দিকে নজর দেন তাহলে দেখবেন, খাদ্য সংগ্রহের জন্য তারা দেড়শোরও বেশি প্রজাতির উদ্ভিদকে ব্যবহার করছে, আর বন্য পরিবেশে বাস করা অনেক ধরণের প্রজাতির শিকার করছে। আর আজকের দিনে পৃথিবী জুড়ে দেখবেন, আমাদের খাদ্যের ৬৫-৭০% আসছে তৃণ এর তিনটি প্রজাতি থেকে – গম, ধান ও ভুট্টা। এটা ছিল আমাদের খাদ্যাভাসের একটি আমূল পরিবর্তন। এই পরিবর্তন খুব বেশি সময় পূর্বে ঘটেনি। প্রজন্মের সংখ্যা হিসাব করলে এটা কয়েক শত প্রজন্ম আগেরই কথা। আর কেউ কেউ বলছেন, আজকে আমরা যেসব রোগ দেখি তার কয়েকটি যেমন ডায়াবেটিস, ওবিসিটি, যেগুলো উচ্চ শর্করার খাদ্যগ্রহণের সাথে সম্পর্কিত, তা আমাদের প্রাচীন শিকারী-সংগ্রাহক বা হান্টার-গ্যাদারার বায়োলজি ও নতুন সংস্কৃতিতে নতুন খাদ্যাভাসের মধ্যকার অসামঞ্জস্যকে প্রতিফলিত করে। আমাদের নতুন খাদ্যাবাসটি উচ্চ শর্করাসমৃদ্ধ, আর আমাদের শরীরবৃত্তি এখনও এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি।

ভাষ্যকার: আমরা কোথা থেকে এসেছি, আর কিভাবে আমরা পরিবর্তিত হয়েছি এই বিষয়ে আমাদের জ্ঞানকে ডিএনএ যত বেশি বৈপ্লবিকভাবে সমৃদ্ধ করেছে, তত বেশি এটি আমাদেরকে সচেতনভাবে আমাদের ভবিষ্যতের গতিকে আকৃতি দিতেও এটি সহায়তা করছে।

স্পেন্সার ওয়েলস: আমি মনে করি জিনেটিক্স বিষয়ে গবেষণার ফলে আমাদের অসুখ বিসুখের জৈবরাসায়নিক ও শারীরবৃত্তীয় ভিত্তি উদঘাটিত হতে যাচ্ছে।

ভাষ্যকার: বর্তমানে অফ দ্য শেলফ জনেটিক টেস্টিং কিটগুলো হল বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি। এগুলো কেবল এর গ্রাহকদেরকে তাদের জিনেটিক এনসেস্ট্রির বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করেনা, একই সাথে নির্দিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে তাদের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে আর এক্ষেত্রে তাদের করণীয় কী হতে পারে এই ব্যাপারেও জানিয়ে দেয়। ইতিমধ্যেই আমাদের ডিএনএ-কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে ওষুধ ও চিকিৎসা বের হয়ে গেছে।
স্পেন্সার ওয়েলস: পারসোনালাইজড মেডিসিন নিয়ে আমার আমার কল্পনা এটাই। আপনার সাথে কোন কিছু খারাপ হবার জন্য আর তারপর চিকিৎসার জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে না। এর আগেই আপনি এর সাথে ডিল করতে পারবেন। আপনি জানবেন যে এই রোগটা আপনার জীবনে আসতে চলেছে, আপনার জিনেটিক প্রোফাইল, আপনার জীবনযাত্রা, আপনার পারিবারিক ইতিহাস অনুযায়ী আপনার এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেই সাথে আপনি এও জানবেন যে এই অসুখকে প্রতিহত করার জন্য আপনাকে কিরকম বেয়াম করতে হবে বা কিরকম ওষুধ খেতে হবে। এটা মেডিসিন প্র্যাক্টিসিং এর জন্য অধিকতর স্মার্টার উপায়।

ভাষ্যকার: পরবর্তী বৈপ্লবিক পদক্ষেপ হবে জিনগত বা জন্মগত রোগকে এগুলোর উদ্ভূত হওয়া থেকেই প্রতিহত করা। যেসব পিতামাতা সন্তানের জন্য ইন ভিট্রো ফারটিলাইজেশনকে বেছে নেয় তারা বর্তমানে প্রি-ইমপ্ল্যান্টেশন জিনেটিক ডায়াগনোসিস বা পিজিডি নামে একটি পদ্ধতির সাহায্যে ভ্রূণের জিনেটিক ডিফেক্টগুলোকে শনাক্ত করতে পারে, যার ফলে ইমপ্ল্যান্ট করার জন্য কেবল সুস্থ ভ্রূণকেই নির্বাচিত করা যায়। এক্ষেত্রে সন্তানের লিঙ্গ ও চোখের রং এর মত সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলোকেও নির্বাচিত করা যায়। সাম্প্রতিক ল্যাব এক্সপেরিমেন্টগুলো একে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। CRISPR নামে একটি জিন এডিটিং টেকনিক ব্যবহার করে গবেষকগণ অসুস্থ ভ্রূণের সাধারণ হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত অসুস্থ ডিএনএ বাদ দিয়ে তার জায়গায় সেই জিনের সুস্থ ভারশনটি বসিয়ে সেই ভ্রূণকে পুরোপুরি সুস্থ করতে সক্ষম হয়েছেন।

স্পেন্সার ওয়েলস: আমার মতে সেটা আমার কল্পনায় ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য বিষয়ক সব থেকে মহান কাজ হবে। জন্মের আগেই প্রত্যেক শিশুর জিনোম সিকুয়েন্স হয়ে যাবে। আর এই তথ্যকে আপনি তার ভবিষ্যতের অসুখের ব্যাপারে জানার জন্য ব্যবহার করবেন। আর কেবল সেটাই যে তা নয়, শুধু সেটা হলে খুব ভয়ংকর ব্যাপার হত। এই তথ্য আপনাকে আরও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে সহায়তা করবে, আপনাকে অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করবে। এটাই আসল ভিশন।

ভাষ্যকার: অবশ্যই যেকোন নতুন প্রযুক্তির সাথে জড়িত থাকে ঝুঁকিও। এই নতুন টেকনিকগুলো মানুষকে মানব বিবর্তনকে এত দ্রুত গতিতে চালিত করবে যা আগে কখনোই ঘটেনি। আর ওয়েলস মনে করেন, একটি সমাজ হিসেবে আমাদের আগে থেকেই জেনে রাখা দরকার যে কোথায় সীমারেখা টানতে হবে।

স্পেন্সার ওয়েলস: আমার কাছে চিন্তার বিষয় হচ্ছে, মানুষ একই রকমের বৈশিষ্ট্যগুলোকে নির্বাচন করবে আর এর ফলে আমাদের মধ্যে বৈচিত্র্য হারিয়ে যাবে। আর এই বৈচিত্র্য, বিশেষ করে জিনগত বৈচিত্র্য বা জিনেটিক ডাইভার্সিটি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি আমরা কিছু নোংরা সংক্রামক রোগগুলোর দিনকে অতিক্রম করে এসেছি, যেগুলো পৃথিবীর অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ মানুষেরই মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। কিন্তু আমরা ইবোলা, জিকার মত এপিডেমিকগুলোর ব্যাপারেও জানি। এইসব মহামারি সবসময়ই ছিল, আর এগুলো আবার আসবে। এই রকম মহামারীর হাত থেকে যে জিনিসটা আমাদেরকে একটি প্রজাতি হিসেবে টিকে থাকতে উপযোগী করে তোলে, আর ইতিহাস জুড়ে করে এসেছে তা হল যথেষ্ট পরিমাণে জিনগত বৈচিত্র্যকে বজায় রাখা, যাতে সেই রোগগুলোর প্রতি রেজিস্টেন্ট বা প্রতিরোধী মানুষেরও অস্তিত্ব থাকে।

ভাষ্যকার: নির্দিষ্ট শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই জিনকে নির্বাচিত করা হোক, আর এথলেটিসিজম, বুদ্ধিমত্তা, বা রোগমুক্ত জীওনের জন্যই নির্বাচিত করা হোক, এই সমস্ত নির্বাচনেরই থাকবে বড় রকমের সামাজিক ফলাফল।

স্পেন্সার ওয়েলস: আপনি কার বিরুদ্ধে সিলেক্ট করছেন সেটাই হল ভয়ঙ্কর বিষয়। আর এখানেই দরকার, এই বিতর্কে একটি বিজ্ঞানগতভাবে শিক্ষিত জনসাধারণ যুক্ত হোক এবং এই সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করুক। এটা কখনই কেবল মাত্র বিজ্ঞানীদের হাতে ছেড়ে দিলে চলবে না।

ভাষ্যকার: আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তৈরি হব ধরে নিয়েই ওয়েলস জেনেটিক টেকনোলজি ও আমাদের প্রজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী।

স্পেন্সার ওয়েলস: অনেক ব্যক্তিই আছেন যাদের জিনগত রোগ হয়েছে কিন্তু তারা হয়তো তা প্রতিহত করতে পারতেন। আর এজন্যই আমার মতে পারসোনালাইজড মেডিসিন আমাদের জীবনযাত্রার মানে বিশাল উন্নতিসাধন করবে। আমি মনে করি এর ফলে মানুষ আসলেই বেশি সুখি হবে, বেশি স্বাস্থ্যবান হবে আর বেশিদিন বাঁচবে।

ভাষ্যকার: এখন আমাদের হাতের কাছে থাকা জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং জিনেটিক টেস্ট থেকে শুরু করে প্রিসিশন মেডিসিন, ও সিলেক্টিভ প্রিনেটাল স্ক্রিনিং পর্যন্ত সবকিছুর সাহায্যে আমাদের জীবনকে উন্নত করার জন্য আমাদের বিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি খুব বেশি দূরে নয়, এর জন্য আমরা প্রস্তুত থাকি, বা না থাকি।

One thought on “র‍্যাপিডলি ইভলভিং হিউম্যান উইথ স্পেন্সার ওয়েলস – অনুবাদ

  • March 20, 2020 at 3:10 PM
    Permalink

    অসংখ্য ধন্যবাদ দারুন একটা অনুবাদের জন্য , অনেক কিছু জানলাম, এরকম আরো লেখা দিলে ভালো লাগবে

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *