ডাক্তার জাকির আব্দুল করিম নায়েক প্রসঙ্গে

Print Friendly, PDF & Email

ভূমিকা

আমি রাশেদ। আমার এক বন্ধু ডাঃ জাকির নায়েকের অন্ধ ভক্ত। আমার একটি লেখায় আমি ডাঃ জাকির নায়েকের বিজ্ঞানময় কুরআন আবিষ্কারের সমালোচনা করি আর তাতেই বিধি বাম। বন্ধু আমার আমাকে ডাঃ জাকির নায়েকের কিছু দাবি দিয়ে চ্যালেঞ্জ করে বসে যেন পারলে আমি সেসব খণ্ডন করি।

আমি সত্যের সন্ধানী। সেই সত্য যদি ইসলামের পক্ষে হয় তাও আমি গ্রহণ করি, আবার সত্য যদি প্রচলিত ইসলামের বিরুদ্ধে যায় তাও আমি সত্য বলেই গ্রহন করি। সত্যটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সত্যটা কে বলছে বা কোথা থেকে বলছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। আমি অন্ধ বিশ্বাসী নই। ডাঃ জাকির নায়েক যদি নিজের মন মত কুরআনের তাফসির করে সেটাকে আমি অন্তত কখনই সঠিক বলবনা। তাফসির হতে হবে তাফসিরের নিয়ম অনুসরণ করে।

এবার আসি দাবি খণ্ডনে।

চাঁদের নিজস্ব আলো নেই️

দাবিঃ বিজ্ঞান কিছুদিন আগে জেনেছে চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই। সূরা ফুরক্বানের ৬১ নং আয়াতে কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ আসলেই কি কুরআনে এই কথা বলেছে? আসুন দেখা যাক কুরআন কী বলে!

সুরা আল ফুরকান (الفرقان), আয়াত: ৬১
تَبٰرَکَ الَّذِیۡ جَعَلَ فِی السَّمَآءِ بُرُوۡجًا وَّجَعَلَ فِیۡہَا سِرٰجًا وَّقَمَرًا مُّنِیۡرًا
উচ্চারণঃ তাবা-রাকাল্লাযী জা‘আলা ফিছছামাইবুরূজাওঁ ওয়া জা‘আলা ফীহা- ছিরা-জাওঁ ওয়া কামারাম মুনীরা-।
অর্থঃ কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।

এখানে শব্দটি হল মুনীর। অর্থাৎ চান্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন মুনীর রুপে? আসুন আরো একটু গভীরে যাই। মুনীর শব্দটি এসেছে নূর থেকে। মুনীর হল ইসমে ফায়েল যার অর্থ যে নূর দেয়। তাহলে এবার দেখতে হবে নূর অর্থ কী? নূর অর্থ আলো বা স্নিগ্ধ আলো বা দীপ্তিময় আলো। তাহলে দাড়াচ্ছে, মুনীর অর্থ হল আলো দানকারী বা স্নিগ্ধ আলো দানকারী বা দীপ্তিময় আলো দানকারী। এখন প্রশ্ন হল নূর কী ধার করা আলো হতে পারে? না, হতে পারেনা। এর দুইটি কারণ আছে। প্রথমত নূর অর্থ যে ধার করা আলো এটি কোন ক্লাসিক আরবি ডিকশনারিতে নেই আর থাকা সম্ভব ও না। দ্বিতীয়ত আল্লাহ এর গুনবাচক ৯৯ নাম এর একটি হল নূর [1] যা ধার করা আলো হওয়া সম্ভব না। কুরআন শুধু বলছে দীপ্তিময় চন্দ্র, যেটা বাস্তবিক অর্থে ঠিকই আছে। কারণ খালি চোখে চাঁদকে দীপ্তিময়ই লাগে।

আমার মতে চাদের আলোকে ধার করা আলো প্রমাণ করতে গিয়ে আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক আল্লাহকে অসম্মান করেছে! কারণ সে মুনীর অর্থ করেছে যে ধার করা আলো দেয়। অর্থাৎ নূরকে সে ধারকরা আলো বুঝিয়েছে আর আল্লাহ এর গুনবাচক নাম হল নূর। তাহলে আল্লাহ কার আলো ধার করে? যখন তখন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ বলা সাধারণ মুসলিমরা না বুঝেই পরম তৃপ্তিতে তা গিলে খাচ্ছে! খুবই দুঃখজনক!

আরও দেখুন

চন্দ্র এবং সূর্য কক্ষপথে ভেসে চলে️

দাবিঃ বিজ্ঞান মাত্র দু’শো বছর আগে জেনেছে চন্দ্র এবং সূর্য কক্ষ পথে ভেসে চলে। সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতে কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

খন্ডনঃ দেখা যাক কুরআন কী বলে?

সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ৩৩
وَہُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ الَّیۡلَ وَالنَّہَارَ وَالشَّمۡسَ وَالۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ فِیۡ فَلَکٍ یَّسۡبَحُوۡنَ
উচ্চারণঃ ওয়াহুয়াল্লাযী খালাকাল লাইলা-ওয়ান্নাহা-রা ওয়াশ শামছা ওয়াল কামারা কুল্লুন ফী ফালাকিইঁ ইয়াছবাহূন।
অর্থঃ তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। প্রত্যেকে এক একটি বৃত্তাকার পথে সাঁতার কাটে।

প্রথমত আয়াতে কোথাও কক্ষপথ কথাটি নেই। আছে ফালাকিইঁ ইয়াছবাহূন । ফালাক অর্থ বৃত্ত বা বৃত্তাকার কিছু। কোন গ্রহ, উপগ্রহ বা নক্ষত্রের কক্ষপথই বৃত্তাকার না। কক্ষপথসমূহ হয় উপবৃত্তাকার। এবং সম্মুখ গামী। আমরা গ্রহ, নক্ষত্র পরিমণ্ডলকে যতটা সরল মনে করি বিষয়টা এত সরল না। আর যখনি আমরা সূর্য বা চন্দ্রের কক্ষপথ কে ফালাক (চরকির বৃত্তের মত) বলব তখনই পদার্থ বিজ্ঞান অনুসারে সূর্য চন্দ্র পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যাবে। সুতরাং আয়াতে যে ভাবে বলা হয়েছে, সেই ভাবে কক্ষপথ হয়না! জাকির নায়েক এবং হুজুরদের আরো একটু পদার্থ বিজ্ঞানের বেসিক পড়ার দরকার!

এবার আসি জাকির নায়েকের ১৪০০ বছর পূর্বের আলাপে। কক্ষপথের ধারণা কি প্রথমে কুরআন থেকে পাওয়া যায়? উত্তর, না। কক্ষপথের ধারণা পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রীক থেকে। এরিস্টটলের সময় থেকেই জিওসেন্ট্রিক সৌর মণ্ডলের ধারণা তৈরি হয় এবং খ্রিষ্টাব্দ ২ শতকে হেলেনিস্টিক এস্ট্রনমার ক্লাউডিয়াস টলেমিয়াস টলেমি মডেল দাড় করান যেখানে চন্দ্র ও সূর্যের কক্ষপথের ধারণা দেওয়া হয় [2]। সুতরাং সূর্য ও চন্দ্রের যে কক্ষপথ থাকতে পারে এই ধারণা কেবল ১৪০০ বছর না তার থেকেও আরো অন্তত ৩০০ বছরের আগের মানুষও জানত। তারা এটা জানত না যে সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে ঘুরছে। অবাক বিষয় হল ডাঃ জাকির নায়েকের বিজ্ঞানময় কুরআনেও কিন্তু এই তথ্য পাওয়া যায়না। সুতরাং দেখাযাচ্ছে ডাঃ জাকির নায়েকের ইতিহাস ও পদার্থ বিজ্ঞানের জ্ঞানের কমতি আছে এবং তার এই “১৪০০ বছর পূর্বে” কথাটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না!

তাহলে আয়াতটি দিয়ে কি বুঝান হয়েছে? আয়াতটি দিয়ে আমরা খালি চোখে আকাশে যেটা দেখি সেটাই বুঝানো হয়েছে! অর্থাৎ সূর্য পূর্বদিকে উদিত হয় এবং দেখে মনে হয় তা বৃত্তাকার পথে সাঁতার কেটে (ভেসে) পশ্চিমে অস্ত যায়। প্রাচীন তাফসিরসমূহেও এমনটাই বোঝানো হয়েছে।

মানুষের আঙুলের ছাপ️

দাবিঃ সূরা কিয়ামাহ’র ৩ ও ৪ নং আয়াতে ১৪০০ বছর আগেই জানানো হয়েছে মানুষের আঙুলের ছাপ দিয়ে মানুষকে আলাদা ভাবে সনাক্ত করা সম্ভব। যা আজ প্রমাণিত।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআনে আসলে কী বলা হয়েছে

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৩
اَیَحۡسَبُ الۡاِنۡسَانُ اَلَّنۡ نَّجۡمَعَ عِظَامَہٗ ؕ
উচ্চারণঃ আ ইয়াহছাবুল ইনছা-নুআল্লান নাজমা‘আ ‘ইজা-মাহ।
অর্থঃ মানুষ কি মনে করে যে আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করব না?

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৪
بَلٰی قٰدِرِیۡنَ عَلٰۤی اَنۡ نُّسَوِّیَ بَنَانَہٗ
উচ্চারণঃ বালা-কা-দিরীনা ‘আলাআন নুছাওবিয়া বানা-নাহ।
অর্থঃ পরন্ত আমি তার অংগুলির অগ্রভাগ পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।

যখন পূনরুত্থানের আয়াত নাজিল হয়, তখন মক্কার মূর্তিপূজারীরা বলে যে আমরা মরার পর পচে গলে হাড় হয়ে গেলে কি ভাবে আবার পূনরুত্থান হবে! এই প্রেক্ষাপটে এই আয়াত নাজিল করা হয়। ইবনে কাসির তার তাফসিরে যা লিখেছেন সেটা পড়লেই বোঝা যাবে এই আয়াত দুইটির প্রকৃত অর্থ কী বোঝান হয়েছে।

আল্লাহ এই আয়াত দ্বারা বুঝিয়েছেন “আমি এসব (হাড়) বিভিন্ন যায়গা থেকে একত্রিত করে পূনরায় দাড় করিয়ে দেব এবং একে পূর্নভাবে গঠিত করব”। দেখা যাচ্ছে যে, এখানে আঙুলের অগ্রভাগ বলতে সম্পূর্ণ পূনর্গঠনকে বোঝান হয়েছে। আমরা যেমন বলি “তুই আমার চুলটা পর্যন্ত বাঁকা করতে পারবিনা” এর অর্থ এই না যে সত্যিই চুল বাঁকা করার কথা বলা হয়েছে। প্রাচীন আরবিতে এই রকম অনেক সাংকেতিক বা রূপক শব্দ ব্যাবহার করা হত। আল্লাহ নিজেই কুরআনে বলেছে যে কুরআনের কিছু আয়াত রুপক। আসুন আরো গভীরে যাই…….

জাকির নায়েকের ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে দেখে আসি নবীজির কাছ থেকে যারা কুরআনের ব্যাখ্যা শিখেছেন তারা কী বলেছেন এই আয়াত সম্পর্কে [3]

জাকির 2

ইবনে আব্বাস (রা) এবং আরো প্রমুখ বলেন যে এর ভাবার্থ হলঃ আমি একে উট বা ঘোড়ার পায়ের পাতার মত বানিয়ে দিতে সক্ষম। অর্থাৎ উট বা ঘোড়ার পায়ের পাতা যেমন সুগঠিত তেমনি মানুষকেও পূনরুত্থানের সময় সুগঠিত করে তোলা হবে। ইমাম ইবনে জারির (র) বলেন, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ একত্রিত করবনা? হ্যা হ্যা শীঘ্রই আমি এসব (হাড়) একত্রিত করব। আমি তার আঙুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত পূনর্বিন্যাস্ত করতে সক্ষম। আমি ইচ্ছে করলে সে পূর্বে যা ছিল তার চেয়েও কিছু বেশি করে দিয়ে তাকে পূনরূত্থিত করতে পারব। ইবনে কুতাইবা (র) ও যাজ্জাজ (র) এর মতেও এই উক্তির অর্থ এটাই।

সুতরাং যারা নবীজির কাছে (সাহাবিরা) বা যারা সাহাবিদের কাছে কুরআনের ব্যাখ্যা বুঝেছেন তারা বলছেন যে এই আয়াত দুটির ভাবানুবাদ নিতে হবে আর আঙুলের অগ্রভাগ বলতে পূর্নরূপে মানুষকে গঠন বুঝানো হয়েছে সেখানে এক আব্দুল ডাঃজাকের নায়েক বলছে যে না না এই আয়াতের আক্ষরিক অনুবাদ করতে হবে। এমনকি এই আব্দুল পুরোপুরি আক্ষরিক অনুবাদও করে নাই। আয়াতের মধ্যে নিজের মন মত ফিংগার প্রিন্টও ঢুকিয়ে দিয়েছে। এই কাজটাকে কী বলে জানেন? এটাকে বলে কুরআন বিকৃতি। ডাঃ জাকির নায়েক কেবল কিছু জিনিস গড় গড় করে মুখস্ত বলতে পারে কিন্তু সে কুরআনের ইন্ট্যালেকচুয়াল জ্ঞান বিন্দুমাত্র রাখেনা। যে কুরআনের ভাবানুবাদ আর আক্ষরিক অনুবাদের গুরুত্ব বোঝেনা সে আবার তাফসিরও করে! এখনকার মুসলিমরা তাদের নবীর শেখানো কুরআনের ব্যাখ্যাকে বাদ দিয়ে ডাঃ জাকির নায়েকের করা নতুন তাফসির আবার গিলেও খাচ্ছে । আপনি যদি ডাঃ জাকির নায়েক বা তার তৈরি করা তাফসির নিয়ে কোন নেতিবাচক কথা বলেন, বর্তমানে জাকির নায়েক ভক্ত মুসলিমদের আতে ঘা লেগে যায়! এই সব কারণেই আমি তার ওপর রিতিমত বিরক্ত এবং তাকে আব্দুল মার্কা মাশরুম মুফাস্যির বলি। বিনা কারণে বলিনারে ভাই। কারণ আছে!

‘বিগ ব্যাং’ থিওরি️

দাবিঃ ‘বিগ ব্যাং’ থিওরি আবিষ্কার হয় মাত্র চল্লিশ বছর আগে। কুরআনের সূরা আল-আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াতে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআন কী বলে।

সূরা আল আম্বিয়া (الأنبياء), আয়াত: ৩০
اَوَلَمۡ یَرَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ کَانَتَا رَتۡقًا فَفَتَقۡنٰہُمَا ؕ وَجَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّ ؕ اَفَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ
উচ্চারণঃ আওয়ালাম ইয়ারাল্লাযীনা কাফারূআন্নছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা কা-নাতা-রাতকান ফাফাতাকনা-হুমা- ওয়া জা‘আলনা-মিনাল মাই কুল্লা শাইয়িন হাইয়ি আফালাইউ’মিনূন।
অর্থঃ কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?

ডাঃ জাকির নায়েক নাকি এই আয়াতে বিগ ব্যাং খুজে পায়! দাঁড়ান একটু হেসে নেই!

বিগ ব্যাং সম্পর্কে যার একটু হলেও পড়ালেখা আছে সে ভুলেও এই আয়াতে বিগব্যাং খোঁজার ভুল করবেনা। আমাদের এই ইউনিভার্সের সম্প্রসারণ কে থিওরিটিকালি পেছনে নিয়ে গিয়ে মূলত বিগ ব্যাং থিওরি দেওয়া হয় [4]। সেই থিওরিতে বলা হয় আমাদের এই ইউনিভার্স এক মহা বিষ্ফরণের ফসল। ডাঃ জাকির নায়েক মনে করে যে আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে খুলে গেছে কিন্তু কি অবাক কাণ্ড, বিগব্যাং এর সময় এই পৃথিবীর অস্তিত্বই ছিলনা। বিগ ব্যাং থিওরি অনুসারে বিগব্যাং হয়েছে প্রায় ১২ থেকে ১৪ বিলিয়ন বছর আগে। আমাদের পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর। বুঝতে পারছেন বিষয়টা? এর অর্থ দাড়ায় বিগব্যাং হওয়ার সময় থেকে পরবর্তি প্রায় ৯.৫ বিলিয়ন বছর পৃথিবী নামক কিছু ছিলই না! কুরআনে বিগব্যাং খোঁজা বড় ধরনের আতলামি ছাড়া আর কিছুই না!

এবার আসি কুরআনের আয়াতে। এটাতো সিওর হলাম যে এই আয়াতে বিগব্যাং এর ছিটেফোটাও নেই। তাহলে? বিগব্যাং কী আমাদের ইউনিভার্স এর সৃষ্টির ১০০% সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে? উত্তর হল না পারেনা। বিগ ব্যাং থিওরির অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর অনেক কিছুই বিগব্যাং ব্যাখ্যা করতে পারেনা। সিংগুলারিটির অস্তিত্বে আসা বিগব্যাং সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনা। এই ইউনিভার্স এর অস্তিত্বের কি বিগব্যাংই একমাত্র থিওরি ? না এর আগে তো ইটারনাল ইউনিভার্স থিওরি ছিল, মাল্টি ইউনিভার্স থিওরি ছিল এখন বিগব্যাং থিওরি আছে সামনে আরো থিওরি আসবে কারণ ১০০% সঠিক নিশ্চয়তা প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল। একবার ভাবুন তো নতুন থিওরি আসলে যারা বিগব্যাং দিয়ে কুরআন ব্যাখ্যা করতে চাইছেন আদা পানি খেয়ে তাদের কি হবে! কুরআনে বর্নিত ইউনিভার্স সৃষ্টির সাথে কোন থিওরির মিল নেই কিন্তু কোন থিওরি এই পর্যন্ত পূর্নরূপে এই ইউনিভার্স এর এক্সিস্টেন্সের ব্যাখ্যা দিতে পারে নাই। সুতরাং বল এখনো মাঝ মাঠে। কিন্তু ডাঃ জাকির নায়েক কিন্তু কুরআনে বিগব্যাং এর আবিষ্কার করার ফলে লাল কার্ড খেয়ে মাঠের বাইরে।

আরও দেখুন

পানি চক্রের কথা

দাবিঃ পানি চক্রের কথা বিজ্ঞান জেনেছে বেশি দিন হয় নি। সূরা যুমার ২১ নং আয়াতে কুরআন এই কথা বলেছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআন কী বলেঃ

সূরা আয্‌-যুমার (الزّمر), আয়াত: ২১
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَلَکَہٗ یَنَابِیۡعَ فِی الۡاَرۡضِ ثُمَّ یُخۡرِجُ بِہٖ زَرۡعًا مُّخۡتَلِفًا اَلۡوَانُہٗ ثُمَّ یَہِیۡجُ فَتَرٰىہُ مُصۡفَرًّا ثُمَّ یَجۡعَلُہٗ حُطَامًا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَذِکۡرٰی لِاُولِی الۡاَلۡبَابِ ٪
উচ্চারণঃ আলাম তারা আন্নাল্লা-হা আনঝালা মিনাছছামাই মাআন ফাছালাকাহূইয়ানা-বী‘আ ফিল আরদিছুম্মা ইউখরিজূবিহী ঝার‘আম মুখতালিফান আলওয়া-নুহূছু ম্মা ইয়াহীজুফাতারাঁ-হু মুসফাররান ছুম্মা ইয়াজ‘আলুহূহুতা-মা- ইন্না ফী যা-লিকা লাযিকরা-লিঊলিল আলবা-ব।
অর্থঃ তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর সে পানি যমীনের ঝর্ণাসমূহে প্রবাহিত করেছেন, এরপর তদ্দ্বারা বিভিন্ন রঙের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তোমরা তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর আল্লাহ তাকে খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ রয়েছে।

এই আয়াতে নাকি ডাঃ জাকির নায়েক পানিচক্রের বিজ্ঞান খুজে পেয়েছে। এই আয়াতে যেটা বলা হয়েছে তাকে বলা হয় layman’s term. যা আপনি নিজ চোখে দেখেন তার সহজ বর্ণা দেওয়া হয়েছে। একজন ৫ বছরের বাচ্ছা যে পানি চক্রের কিছুই জানেনা সেও বলতে পারে যে বৃষ্টি আকাশ থেকে পড়ে, বৃষ্টির পানি মাটিতে বহমান হয় কারণ সে তার নিজের চোখে এসব দেখে। যার বিন্দু মাত্র বিজ্ঞানের ধারণা নেই সেও জানে বৃষ্টির পানিতে ফসল হয়। বকলম এক গ্রামের লোককে জিজ্ঞেস করেন সেও বলে দিবে। ফসল শুকিয়ে গেলে হলদে হয়ে যায় সেটাও দেখে বলা যায়। সুতরাং, layman’s term এ যারা বিজ্ঞান খোঁজে তারা মহা বলদ ছাড়া আর কিছুই না। এখানে থেমে যেতে পারতাম কিন্তু না আরো আছে। ঐ যে “১৪০০ বছর আগে” আছেনা সেটার মুখেতো ঝামা ঘসা বাকি আছে!

ডাঃ জাকির নায়েকের মতে বিজ্ঞান পানিচক্র আবিষ্কার করেছে এইতো সেদিন কিন্তু কি আশ্চর্য। কুরআনে পানিচক্রের বিজ্ঞান ১৪০০ বছর আগেই বলা আছে! তাই নাকি? প্রকৃত পক্ষে সত্য হল পানিচক্রের অধিকাংশ প্রক্রিয়া মানুষ ঈসা(আ) এর মৃত্যুর ৫০০ বছর আগে থেকে জানে!

হিভ্রু বিব্লিকাল ইতিহাসে রাজা সোলেমানের সময় কালেই পানি চক্রের প্রাথমিক ধারণার বর্ণনা পাওয়া যায়।
গ্রীক স্কলাররা আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব ৫০০-৬০০ তেই বৃষ্টির মূল উৎস যে ভূপৃষ্ঠের পানি এবং তা যে সূর্যের তাপে বাষ্প হয়ে উপরে মেঘ হয় আর বাতাস যে মেঘকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায় তা জানত।

Anaximander ৫৭০ খ্রীস্টপূর্বে এবং চায়নার Xenophanes ৫৩০ খ্রীস্টপূর্ব পানিচক্রের অধিকাংশ পর্যায়ের বিস্তারিত বর্ণনা দেয় [5]। সুতরাং ১৪০০ বছর না প্রায় ২৫০০ হাজার বছর আগের মানুষ ও পানিচক্র সম্পর্কে অধিকাংশই জানত।

লবণাক্ত পানি ও মিষ্ঠি পানি মিশ্রিত হয় না️

দাবিঃ বিজ্ঞান এই সেদিন জেনেছে লবণাক্ত পানি ও মিষ্ঠি পানি একসাথে মিশ্রিত হয় না। ২৫ সূরা ফুরকানের ৫৩ নং আয়াতে কুরআন এই কথা বলেছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ চলুন দেখে আসি কুরআনে কী বলেছে।

সূরা আল ফুরকান (الفرقان), আয়াত: ৫৩
وَہُوَ الَّذِیۡ مَرَجَ الۡبَحۡرَیۡنِ ہٰذَا عَذۡبٌ فُرَاتٌ وَّہٰذَا مِلۡحٌ اُجَاجٌ ۚ وَجَعَلَ بَیۡنَہُمَا بَرۡزَخًا وَّحِجۡرًا مَّحۡجُوۡرًا
উচ্চারণঃ ওয়া হুওয়াল্লাযী মারাজাল বাহরাইনি হা-যা-‘আযবুন ফুরা-তুওঁ ওয়া হা-যা-মিলহুন উজা-জুওঁ ওয়া জা‘আলা বাইনাহুমা-বারঝাখাওঁ ওয়া হিজরাম মাহজূরা-।
অর্থঃ তিনিই সমান্তরালে দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন, এটি মিষ্ট, তৃষ্ণা নিবারক ও এটি লোনা, বিস্বাদ; উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন একটি অন্তরায়, একটি দুর্ভেদ্য আড়াল।

এই আয়াত থেকে ডাঃ জাকির নায়েক দাবি করে যে লোনা পানির সাথে মিষ্টি পানি নাকি মিশ্রিত হয়না। এবার আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ডাঃ জাকির নায়েকের রসায়নের জ্ঞানও কম। রসায়নে এক ধরনের পানি আছে যার নাম Brackish Water. জানেন এই Brackish water কিভাবে তৈরি করা হয়? মিষ্টি পানি আর লোনা পানির মিশ্রণের মাধ্যমে [6]

পৃথিবীতে কিছু জায়গা আছে যেখানে দুই সমুদ্রের পানি মিলিত হয়না এমনকি দুই নদীর পানিও মিলিত হয়না। এটা নির্ভর করে পানির প্রকৃতি, পানি কতটা ঘন আর তাপের ওপর। এই কারণে মিষ্টি পানির সাথে মিষ্টি পানি বা লোনা পানির সাথে লোনা পানি ও না মিলতে পারে। গোয়ালন্দে বা চাদপুরে গেলেই দুই মিষ্টি পানির নদীর পানি মিলিত না হওয়া দেখা যেতে পারে।তার মানে এইনা যে লোনা পানির সাথে মিষ্টি পানি মেশা সম্ভব না। Brackish Water নিয়ে একটু পড়লেই বুঝতে পারবেন যে লোনা পানির সাথে মিষ্টি পানি মিলতে পারে।

আরও দেখুন

ডান দিকে ফিরে ঘুমানো

দাবিঃ ইসলাম আমাদেরকে ডান দিকে ফিরে ঘুমাতে উৎসাহিত করেছে; বিজ্ঞান এখন বলছে ডান দিকে ফিরে ঘুমালে তা হার্ট এর জন্য ভালো।

খণ্ডনঃ না। চিকিৎসা বিজ্ঞান নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থার মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করে বলে। কখনই এভাবে ঢালাওভাবে বলেনা। হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে একেক অবস্থার জন্য একেকটা সাজেস্ট করা হয়। আর স্বাভাবিক অবস্থায় শোয়ার ক্ষেত্রে ডানে বামে না ফিরে ঘুমানোকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। এমনকি অনেক রোগীর ডান বা বাম পাশ হয়ে শোয়ায় ইরিটেশনের কারণে ইনসমনিয়া হয় আবার অনেকের মেরুদন্ডের হাড়ে বা স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা হয় তাদেরকে চিত হয়ে সোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মেডিকের সাইন্স রোগীভেদে বিভিন্ন ভাবে সোয়ার পরামর্শ দেয়। কোন রোগীর ডানদিকে শুলে ভালো হয় কোন রোগীর ডান দিকে শুলে খারাপ হয় কোন রোগীর বাম দিকে শুলে খারাপ হয় কোন রোগীর ভালো হয় আবার কোন রোগীর চিত হয়ে শুলে ভালো হয় [7]
ইসলামে ডানদিক হল সুন্নতি দিক ডান দিকে কিছু করলে সওয়াব পাওয়া যায়। ঢালাও ভাবে সবাই ডান দিকে শুলে সবাই শারীরিক সুফলতা পাবেনা এটাই বাস্তবতা সুতরাং ডানদিকে শুলে সকলে শারীরিক ভাবে ভালো থাকবে বলে লাফালাফি করাটা গাধামি ছাড়া আর কিছুই না।

পিপীলিকা মৃত দেহ কবর দেয়

দাবিঃ পিপীলিকা মৃত দেহ কবর দেয়, এদের বাজার পদ্ধতি আছে। কুরআনের সূরা নামল এর ১৭ ও ১৮ নং আয়াতে এই বিষয়ে ধারণা দেয়।

খণ্ডনঃ আসুন দেখি কুরআনের আয়াত গুলিতে আসলে কী বলা হয়েছে।

সূরা আন নম্‌ল (النّمل), আয়াত: ১৭
وَحُشِرَ لِسُلَیۡمٰنَ جُنُوۡدُہٗ مِنَ الۡجِنِّ وَالۡاِنۡسِ وَالطَّیۡرِ فَہُمۡ یُوۡزَعُوۡنَ
উচ্চারণঃ ওয়া হুশিরা লিছুলাইমা-না জুনূদুহূমিনাল জিন্নি ওয়াল ইনছি ওয়াততাইরি ফাহুম ইউঝা‘উন।
অর্থঃ সুলায়মানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হল।

সূরা আন নম্‌ল (النّمل), আয়াত: ১৮
حَتّٰۤی اِذَاۤ اَتَوۡا عَلٰی وَادِ النَّمۡلِ ۙ قَالَتۡ نَمۡلَۃٌ یّٰۤاَیُّہَا النَّمۡلُ ادۡخُلُوۡا مَسٰکِنَکُمۡ ۚ لَا یَحۡطِمَنَّکُمۡ سُلَیۡمٰنُ وَجُنُوۡدُہٗ ۙ وَہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ
উচ্চারণঃ হাত্তাইযাআতাও ‘আলা-ওয়া-দিন্নামলি কা-লাত নামলাতুইঁ ইয়াআইয়ুহান্নামলুদ খুলূমাছা-কিনাকুম লা-ইয়াহতিমান্নাকুম ছুলাইমা-নুওয়া জুনূদুহূ ওয়াহুম লা-ইয়াশ‘উরূন।
অর্থঃ যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে।

দেখা যাচ্ছে যে পিপীলিকা যে মৃতদেহ কবর দেয় বা পিপীলিকার যে বাজার পদ্ধতি আছে তার কোন উল্লেখ তো দূরের কথা এমন কোন ইংগিতও আয়াত দুটিতে নেই। বরং এটিও একটি layman’s term. সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে পিপীলিকার বাজার পদ্ধতি বা মৃত পিপীলিকাকে কবর দেবার বিষয়টি কুরআনে থাকার দাবিটা আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের মন গড়া।

বরং এই আয়াতকে বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করতে গেলে উল্টো বিপাকে পড়ে যেতে হয়। খেয়াল করে দেখুন যে নবী সুলায়মান পিপীলিকার কথা শুনতে পারছে যা বিজ্ঞান অনুসারে তথা মানুষের শ্রাব্যতার পাল্লা অনুসারে সম্ভব না!

জনাব আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক এই আয়াতে পিপীলিকার বাজার ব্যাবস্থা আর মৃতকে কবর দেওয়া নিজে নিজে মন মতো ঢুকিয়ে কুরআনকে এক অর্থে বিকৃত করেছে। আর এই দুই আয়াতে সে নাকি বিজ্ঞানও খুঁজে পায় যেখানে আয়াত দুইটি বিজ্ঞানের চোখেই প্রশ্নবিদ্ধ!

মদ পান লিভারের জন্য ক্ষতিকর

দাবিঃ ইসলাম মদ পানকে হারাম করেছে , চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে মদ পান লিভারের জন্য ক্ষতিকর।

খন্ডনঃ প্রথমে আমাদের দেখতে হবে ইসলাম কেন মদপান হারাম করেছে! অধিকাংশ মুসলিম বিভিন্ন আয়াত নিয়ে চিল্লা চিল্লি করে কিন্তু এরা জানেইনা কোন আয়াতের নাজিলের প্রেক্ষাপট কী। কারণ তারা নিজেরা ইসলামের ইতিহাস, কুরআন, হাদিস পড়ে দেখেনা। মদ্যপান হারামের আয়াত নাজিল হয় যেন মদ খেয়ে মাতাল হয়ে সাহাবিরা নামাজ পড়তে না পারে। শারীরিক উপকারিতার কথা চিন্তা করে মদকে হারাম করা হয়নি। তাফসিরে ইবনে কাসিরে এই আয়াতসমূহ নাজিলের প্রেক্ষাপট ও কারণ স্পষ্টভাবে বলা আছে [8]

জাকির 4
জাকির 6
জাকির 8

মদ সম্পর্কে প্রথম আয়াত

সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ২১৯
یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡخَمۡرِ وَالۡمَیۡسِرِ ؕ قُلۡ فِیۡہِمَاۤ اِثۡمٌ کَبِیۡرٌ وَّمَنَافِعُ لِلنَّاسِ ۫ وَاِثۡمُہُمَاۤ اَکۡبَرُ مِنۡ نَّفۡعِہِمَا ؕ وَیَسۡـَٔلُوۡنَکَ مَاذَا یُنۡفِقُوۡنَ ۬ؕ قُلِ الۡعَفۡوَ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ تَتَفَکَّرُوۡنَ ۙ
উচ্চারণঃ ইয়াছআলূনাকা ‘আনিল খামরি ওয়াল মাইছিরি কুল ফীহিমা ইছমুন কাবীরুওঁ ওয়া মানাফি‘উ লিন্না-ছি ওয়া ইছমুহুমাআকবারু মিন নাফ‘ইহিমা-ওয়া ইয়াছআলূনাকা মা যা-ইউনফিকূনা কুল্লি ‘আফওয়া কাযা-লিকা ইউবাইয়িনুল্লা-হু লাকুমুল আ-য়াতি লা‘আল্লাকুম তাতাফাক্কারুন।
অর্থঃ তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার।

এই আয়াতটি নাজিল হয় হিজরতের পর পর। তখন মদিনার আনসারেরা মদ পান করত এবং জুয়া খেলে অর্থ উপার্জন করত। জুয়া ও মদ ব্যবসা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলাও হত। তারা মদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে এই আয়াত নাজিল হয়। এখানে মদ ও জুয়াকে কিছুটা উপকারিও বলা হয়েছে। তাফসিরে গেলে দেখা যায় এই উপকার আসলে অর্থনৈতিক উপকার বোঝানো হয়েছে কারণ মদের ব্যবসা আর জুয়া খেলে অনেকে অর্থ উপার্জন করতো।

মদ সম্পর্কে ২য় আয়াত

সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ৪৩
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقۡرَبُوا الصَّلٰوۃَ وَاَنۡتُمۡ سُکٰرٰی حَتّٰی تَعۡلَمُوۡا مَا تَقُوۡلُوۡنَ وَلَا جُنُبًا اِلَّا عَابِرِیۡ سَبِیۡلٍ حَتّٰی تَغۡتَسِلُوۡا ؕ وَاِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡہِکُمۡ وَاَیۡدِیۡکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَفُوًّا غَفُوۡرًا
উচ্চারণঃ ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূলা-তাকরাবুস সালা-তা ওয়া আনতুম ছুকা-রা-হাত্তাতা‘লামূমা-তাকূলূনা ওয়ালা-জুনুবান ইল্লা-‘আ-বিরী ছাবীলিন হাত্তা-তাগতাছিলূ ওয়া ইন কুনতুম মারদা-আও ‘আলা-ছাফারিন আও জাআ আহাদুম মিনকুম মিনাল গাইতি আও লা-মাছতুমুন নিছাআ ফালাম তাজিদূমাআন ফাতাইয়াম্মামূসা‘ঈদান তাইয়িবান ফামছাহূবিউজূহিকুম ওয়া আইদীকুম ইন্নাল্লা-হা কা-না ‘আফুওওয়ান গাফূরা-।
অর্থঃ হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ, আর (নামাযের কাছে যেও না) ফরয গোসলের আবস্থায়ও যতক্ষণ না গোসল করে নাও। কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাক কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা নারী গমন করে থাকে, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তি সম্ভব না হয়, তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-তাতে মুখমন্ডল ও হাতকে ঘষে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল।

এই আয়াতটি নাজিল হয় যখন মাতাল অবস্থায় এক মু্হাজির সাহাবি নামাজ পড়তে গিয়ে ভুল তিলাওয়াত করে। এখানে বলা হয় মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় নামাজ না পড়তে। মদ কিন্তু হারাম করা হয়নি তখনো।

এই ঘটনার পর ঊমর (রা) এর প্রার্থনায় মদকে হারামের আয়াত নাজিল হয়। যেন এই রকম পরিস্থিতি আর তৈরি না হয়।

সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৯০
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَالۡمَیۡسِرُ وَالۡاَنۡصَابُ وَالۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
উচ্চারণঃ ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূইন্নামাল খামরু ওয়াল মাইছিরু ওয়াল আনসা-বুওয়াল আঝলা-মুরিজছুম মিন ‘আমালিশ শাইতা-নি ফাজতানিবূহু লা‘আল্লাকুম তুফলিহূন।
অর্থঃ হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।

সূরা আল মায়িদাহ (المآئدة), আয়াত: ৯১
اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَالۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَالۡمَیۡسِرِ وَیَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَعَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَہَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَہُوۡنَ
উচ্চারণঃ ইন্নামা-ইউরীদুশশাইতা-নুআইঁ ইউকি‘আ বাইনাকুমুল ‘আদা-ওয়াতা ওয়াল বাগদাআ ফিল খামরি ওয়াল মাইছিরি ওয়া ইয়াসুদ্দাকুম ‘আন যিকরিল্লা-হি ওয়া ‘আনিসসালা-তি ফাহাল আনতুম মুনতাহূন।
অর্থঃ শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে?

সুতরাং দেখা যাচ্ছে ইসলামে মদকে হারাম করা হয়েছে কেবল মাত্র সাহাবিরা মাতাল হয়ে নামাজ পড়ত বিধায়।

এলকোহল একটি উতকৃষ্ট জীবানু নাশক। এই করোনার সময় প্রায় সকলেই সেটা ব্যবহার করছে! ধারণা করছি ডাঃ জাকির নায়েকও ব্যবহার করছে!

মদ কি শরীরের জন্য খারাপ? উত্তর, সেটা নির্ভর করছে আপনি কি পরিমান খাচ্ছেন। মদ কি শরীরের জব্য ভালো হতে পারে? জি পারে। পরিমিত এলকোহল শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী [9]। বিশেষ করে হার্টের জন্য। এলকোহল শরীরের খারাপ কোলেস্ট্রল LDL কে কমাতে সাহায্য করে যা হার্টের ব্লক সারাতে সহায়তা করে। অনেক হার্ট স্পেশালিষ্ট তার রোগীর কন্ডিশন বুঝে পরিমিত এলকোহল প্রেসক্রাইব করেন। এমনকি অনেক ঔষধের কাচামাল হিসেবেও এলকোহল ব্যবহার করাহয়। হমিওপ্যাথিতে অধিকাংশ ঔষধেই এলকোহল ব্যবহার করা হয়।

আমার দৃষ্টিতে মদের অপকার দিক থেকে উপকার দিক অনেক অনেক অনেক বেশি। জানেন তো অপারেশন থিয়েটারে এলকোহল একটি মাস্ট আইটেম। ভাবুনতো কত মানুষের জীবন বাঁচাতে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে!

বলুন আল্লাহ হারাম করেছে তাই হারাম। এর মধ্যে বিজ্ঞান ঢুকাতে গেলেই আপনিও ডাঃ জাকির নায়েকের মত আব্দুলে পরিণত হবেন।

শূকরের মাংস খুবই ক্ষতিকর

দাবিঃ ইসলাম শূকরের মাংসকে হারাম করেছে। বিজ্ঞান আজ বলছে শুকরের মাংস লিভার, হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

খণ্ডনঃ কুরআনে শুকরের মাংস হারাম করেছে এমন কয়েকটি আয়াত

সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ১৭৩
اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃَ وَالدَّمَ وَلَحۡمَ الۡخِنۡزِیۡرِ وَمَاۤ اُہِلَّ بِہٖ لِغَیۡرِ اللّٰہِ ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
উচ্চারণঃ ইন্নামা-হাররামা ‘আলাইকুমুল মাইতাতা ওয়াদ্দামা ওয়া লাহমাল খিনঝীরি ওয়ামা উহিল্লা বিহী লিগাইরিল্লা-হি ফামানিদতুররা গাইরা বা-গিওঁ ওয়ালা-‘আ-দিন ফালা-ইছমা ‘আলাইহি ইনাল্লা-হা গাফূরুর রাহীম।
অর্থঃ তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।

সূরা আল আনআম (الانعام), আয়াত: ১৪৫
قُلۡ لَّاۤ اَجِدُ فِیۡ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیَّ مُحَرَّمًا عَلٰی طَاعِمٍ یَّطۡعَمُہٗۤ اِلَّاۤ اَنۡ یَّکُوۡنَ مَیۡتَۃً اَوۡ دَمًا مَّسۡفُوۡحًا اَوۡ لَحۡمَ خِنۡزِیۡرٍ فَاِنَّہٗ رِجۡسٌ اَوۡ فِسۡقًا اُہِلَّ لِغَیۡرِ اللّٰہِ بِہٖ ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّلَا عَادٍ فَاِنَّ رَبَّکَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
উচ্চারণঃ কুল লাআজিদুফী মাঊহিয়া ইলাইইয়া মুহাররামান ‘আলা- তা-‘ইমিইঁ ইয়াত‘আমুহূ ইল্লা আইঁ ইয়াকূনা মাইতাতান আও দামাম মাছফূহান আও লাহমা খিনঝীরিন ফাইন্নাহূ রিজছুন আও ফিছকান উহিল্লা লিগাইরিল্লা-হি বিহী ফামানিদতুররা গাইরা বা-গিওঁ ওয়ালা-‘আ-দিন ফাইন্না রাব্বাকা গাফূরুর রাহীম।
অর্থঃ আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ; যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়। অতপর যে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে এমতাবস্থায় যে অবাধ্যতা করে না এবং সীমালঙ্গন করে না, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়ালু।

যেকোন রেডমিটই হর্ট আর লিভারের জন্য ক্ষতিকর সেই রেড মিটের মধ্যে পড়ে গরুর মাংস, খাসির মাংস, মহিশের মাংস, শূকরের মাংস………। বিজ্ঞানকে বিবেচনা করলে এরা প্রত্যেকেই হার্টের জন্য ক্ষতিকর তাহলে হার্ট বাঁচাতে সবকটাই হারাম করা উচিত ছিল! কিন্তু, তা করা হয়নি। সুতরাং এইসব লেইম ডাবল স্টান্ডার্ড লজিক কোন কাজেই আসবেনা।

বলতে হবে আল্লাহ হারাম করেছে সেই জন্য হারাম। এর পেছনে বিজ্ঞান ঢুকাতে গেলেই রেডমিটের বেড়াজালে আটকে আব্দুল হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। যেমন আব্দুল হয়েছে ডাঃ জাকির নায়েক।

রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুগ্ধ উৎপাদন

দাবিঃ রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুগ্ধ উৎপাদন এর ব্যাপারে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান জেনেছে মাত্র কয়েক বছর আগে। সূরা মুমিনূনের ২১ নং আয়াতে কুরআন এই বিষয়ে বর্ণনা করে গেছে ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআনে কী বলা আছে

সূরা আল মু’মিনূন (المؤمنون), আয়াত: ২১
وَاِنَّ لَکُمۡ فِی الۡاَنۡعَامِ لَعِبۡرَۃً ؕ نُسۡقِیۡکُمۡ مِّمَّا فِیۡ بُطُوۡنِہَا وَلَکُمۡ فِیۡہَا مَنَافِعُ کَثِیۡرَۃٌ وَّمِنۡہَا تَاۡکُلُوۡنَ ۙ
উচ্চারণঃ ওয়া ইন্না লাকুম ফিল আন‘আ-মি লা‘ইবরাতান নুছকীকুম মিম্মা-ফী বুতূনিহা-ওয়া লাকুম ফীহা-মানা-ফি‘উ কাছীরাতুওঁ ওয়া মিনহা-তা’কুলূন।
অর্থঃ এবং তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তু সমূহের মধ্যে চিন্তা করার বিষয় রয়েছে। আমি তোমাদেরকে তাদের উদরস্থিত বস্তু থেকে পান করাই এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে প্রচুর উপকারিতা আছে। তোমরা তাদের কতককে ভক্ষণ কর।

ধরা যাক, উট হল সেই চতুস্পদ জন্তু। আমরা উটের কী পান করি? দুধ, পানি এবং মূত্র । উটের দুধ কী উটের উদরে (পেটে) তৈরি হয়? না দুধ তৈরি হয় স্তনে। দুধে কি উপকারিতা আছে? আছে। দুধে কি কোন অপকারিতা আছে? আছে।

Milk allergy, Lactose intolerance এই বিষয় দুটি পড়ুন বুঝতে পারবেন যে কিছু কিছু মানুষের জন্য দুধ কতটা সমস্যার কারণ। উটে উদর থেকে পানি আর মূত্র পাওয়া যায় যা মুসলিমরা পান করে থাকে।

উটের পেটে যে পানি পাওয়া যায় এটা ১৪০০ বছর না, বরং নবীজির দাদার দাদার দাদার আগের মানুষও জানত কারণ তারা উট মেরে তার মাংস খেত এবং কাটার সময় তার পেটে পানি পেত। মরুভূমীতে বহু প্রাচীন কাল থেকেই তীব্র পানির সংকটে উট মেরে তার পেটের পানি ব্যাবহার করা হয়! মূত্র হল যে কোন প্রানীর দেহের বর্জ্য। উটের মুত্র খেলে কি উপকার হয়?

এই আয়াতে দুধের কোন উল্লেখ নেই। এই আয়াতে রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুধ উৎপাদন বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি, জাস্ট কিচ্ছু বলা হয়নি। তারপরও আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক কিভাবে তার মন গড়া এসব বলে।

এই আয়াতটিকেও খুব সাধারণ laymen’s term হিসেবে দেখুন। আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের মত এখানে বিজ্ঞান খুজতে গেলে কুরআন বিগড়ে যাবে।

জন্ম তত্ত্ব বা ভ্রুন তত্ত্ব

দাবিঃ মানুষের জন্ম তত্ত্ব ভ্রুন তত্ত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞান জেনেছে এই কদিন আগে। সূরা আলাকে কুরআন এই বিষয়ে জানিয়ে গেছে ১৪০০ বছর আগে।

খণ্ডনঃ কুরআনে ভ্রুন তত্ত্ব নিয়ে বেশকয়েকটি সুরায় আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু আমার বন্ধু সুরা আলাকের রেফারেন্স দিয়েছে তাই আমার লেখায় আয়াতটি উল্লেখ করলাম। বাকি রেফারেন্স আমি নিজে থেকেই দিলাম।

সূরা আলাক্ব (العلق), আয়াত: ২
خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ عَلَقٍ ۚ
উচ্চারণঃ খালাকাল ইনছা-না মিন ‘আলাক।
অর্থঃ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৩৭
اَلَمۡ یَکُ نُطۡفَۃً مِّنۡ مَّنِیٍّ یُّمۡنٰی ۙ
উচ্চারণঃ আলাম ইয়াকুনুতফাতাম মিম মানিইয়িইঁ ইউমনা- ।
অর্থঃ সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না?

সূরা আল মু’মিনূন (المؤمنون), আয়াত: ১৩
ثُمَّ جَعَلۡنٰہُ نُطۡفَۃً فِیۡ قَرَارٍ مَّکِیۡنٍ ۪
উচ্চারণঃ ছু ম্মা জা‘আলনা-হু নুতফাতান ফী কারা-রিম মাকীন।
অর্থঃ অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।

সূরা আল মু’মিনূন (المؤمنون), আয়াত: ১৪
ثُمَّ خَلَقۡنَا النُّطۡفَۃَ عَلَقَۃً فَخَلَقۡنَا الۡعَلَقَۃَ مُضۡغَۃً فَخَلَقۡنَا الۡمُضۡغَۃَ عِظٰمًا فَکَسَوۡنَا الۡعِظٰمَ لَحۡمًا ٭ ثُمَّ اَنۡشَاۡنٰہُ خَلۡقًا اٰخَرَ ؕ فَتَبٰرَکَ اللّٰہُ اَحۡسَنُ الۡخٰلِقِیۡنَ ؕ
উচ্চারণঃ ছু ম্মা খালাকনান নুতফাতা ‘আলাকাতান ফাখালাকনাল ‘আলাকাতা মুদগাতান ফাখালাকনাল মুদগাতা ‘ইজা-মান ফাকাছাওনাল ‘ইজা-মা লাহমান ছু ম্মা আনশা’না-হু খালকান আ-খারা ফাতাবা-রাকাল্লা-হু আহছানুল খা-লিকীন।
অর্থঃ এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাকর।

দেখা যাচ্ছে কোরআনে পাঁচটি ধাপের বর্ণনা রয়েছ

প্রথম ধাপঃ নুতফা – বীর্য
দ্বিতীয় ধাপঃ আলাকা – রক্তপিণ্ড (ক্লাসিকাল আরবি ডিকশনারি ও প্রাচীন তাফসির অনুসারে)
তৃতীয় ধাপঃ মুদগা –মাংস খণ্ড বা পিণ্ড
চতুর্থ ধাপঃ ইজামা – হাড়
পঞ্চম ধাপঃ মাংস দিয়ে হাড়কে ঢেকে দেওয়া।

আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের মতে কুরআনেই ১৪০০ বছর আগে প্রথম ভ্রুন তত্ত্ব নিয়ে বলেছে। আমি মাঝে মাঝে অবাক হই এই চিন্তা করে যে History of Embryology না পড়ে বা না জেনে এই লোকটা ডাক্তার হল কি করে!

History of Embryology থেকে জানা যায় যে হিপক্রিতাস, এরিস্টটল এবং গ্যালেনের প্রত্যেকের লেখাতে এই ধাপগুলোর বর্ণনা রয়েছে [10]

প্রথম ধাপ : বীর্য
দ্বিতীয় ধাপ : মাসিক রক্ত
তৃতীয় ধাপ : মাংস
চতুর্থ ধাপ : হাড়
পঞ্চম ধাপ : গোশত দিয়ে হাড়কে ঢেকে দেওয়া

সুতরাং আবারো দেখা যাচ্ছে গ্রীক সাম্রাজ্যের সময় থেকেই ভ্রুন তত্ত্ব বিষয়ক এই ধারণা গুলো প্রচলিত ছিল। এবং আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের এই “১৪০০ বছর আগে বলছে” একটি চরম মিথ্যাচার।

কুরআনে বলা ধাপ গুলো কী Modern Embryology এর সাথে মেলে? সেখানেও রয়েছে মতভেদ। বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।

ভ্রন তত্ত্ব

দাবিঃ ভ্রন তত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞান আজ জেনেছে পুরুষই ( গর্ভের সন্তান ছেলে হবে কিনা মেয়ে হবে) তা নির্ধারণ করে। ভাবা যায়… কুরআন এই কথা জানিয়েছে ১৪০০ বছর আগে। সূরা নজমের ৪৫-৪৬ নং আয়াত, সূরা কিয়ামাহ’র ৩৭-৩৯ নং আয়াতে।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআনে কি বলা হয়েছে

সূরা আন-নাজম (النّجْم), আয়াত: ৪৫
وَاَنَّہٗ خَلَقَ الزَّوۡجَیۡنِ الذَّکَرَ وَالۡاُنۡثٰی ۙ
উচ্চারণঃ ওয়া আন্নাহূখালাকাঝ ঝাওজাইনিযযাকারা ওয়াল উনছা-।
অর্থঃ এবং তিনিই সৃষ্টি করেন যুগল-পুরুষ ও নারী।

সূরা আন-নাজম (النّجْم), আয়াত: ৪৬
مِنۡ نُّطۡفَۃٍ اِذَا تُمۡنٰی ۪
উচ্চারণঃ মিন নুতফাতিন ইযা-তুমনা।
অর্থঃ একবিন্দু বীর্য থেকে যখন স্খলিত করা হয়।

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৩৭
اَلَمۡ یَکُ نُطۡفَۃً مِّنۡ مَّنِیٍّ یُّمۡنٰی ۙ
উচ্চারণঃ আলাম ইয়াকুনুতফাতাম মিম মানিইয়িইঁ ইউমনা- ।
অর্থঃ সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না?

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৩৮
ثُمَّ کَانَ عَلَقَۃً فَخَلَقَ فَسَوّٰی ۙ
উচ্চারণঃ ছু ম্মা কা-না ‘আলাকাতান ফাখালাকা ফাছাওয়া-।
অর্থঃ অতঃপর সে ছিল রক্তপিন্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন।

সূরা আল-ক্বিয়ামাহ (القيامة), আয়াত: ৩৯
فَجَعَلَ مِنۡہُ الزَّوۡجَیۡنِ الذَّکَرَ وَالۡاُنۡثٰی ؕ
উচ্চারণঃ ফাজা‘আলা মিনহুঝঝাওজাইনিযযাকারা ওয়াল উনছা- ।
অর্থঃ অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।

এই আয়াতসমূহের কোথাও গর্ভের সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা পুরুষ নির্ধারণ করে তা বলা হয়নি। নির্ধারণ কথাটিই এই আয়াতসমূহের কোথাও নেই। বলা হয়েছে সৃষ্টির কথা। আরো বলা হয়েছে মানুষ পুরুষের বীর্য ছিল! প্রকৃতপক্ষে মানুষ কখনোই পুরুষের বীর্য ছিল না। মানুষ কেবল মাত্র বীর্য থেকে তৈরি হয়না। বীর্যের একটি উপাদান মানুষের জন্মে একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে মাত্র। কুরআন বলেছে মানুষ নাকি একফোটা বীর্য ছিল। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর থেকে লেইম জোক আর হতে পারেনা।

মানুষ স্বাভাবিকভাবে যা দেখে যা জানে কুরআনে সবকিছুর বর্ণনা সেভাবেই করে। প্রাচীন তাফসিরও সেটাই বলে। কুরআনে বহুবার বলা হয়েছে “তারা কি দেখেনা?” অর্থাৎ আল্লাহ নিজেই কুরাআনকে Layman’s term এ উপস্থাপন করেছে। আফসোস এইটা বোঝার ক্ষতা বা জ্ঞান যদি আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের থাকতো!

গর্ভে থাকতে আগে শোনা তারপর দেখা

দাবিঃ একটি বাচ্চা যখন গর্ভে থাকে তখন সে আগে কানে শোনার যোগ্যতা পায় তারপর পায় চোখে দেখার। ভাবা যায়? ১৪০০ বছর আগের এক পৃথিবীতে ভ্রুনের বেড়ে ওঠার স্তরসমূহ নিয়ে কুরআন বিস্তর আলোচনা করেছে। যা আজ প্রমাণিত! সূরা সাজদাহ আয়াত নং ৯ , ৭৬ ও সূরা ইনসান আয়াত নং ২।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআনে কী বলা হয়েছে

সূরা আস সেজদাহ্ (السّجدة), আয়াত: ৯
ثُمَّ سَوّٰىہُ وَنَفَخَ فِیۡہِ مِنۡ رُّوۡحِہٖ وَجَعَلَ لَکُمُ السَّمۡعَ وَالۡاَبۡصَارَ وَالۡاَفۡـِٕدَۃَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡکُرُوۡنَ
উচ্চারণঃ ছু ম্ম ছাওওয়া-হু ওয়া নাফাখা ফীহি মিররূহিহী ওয়া জা‘আলা লাকুমুছ ছাম‘আ ওয়াল আবসারা ওয়াল আফইদাতা কালীলাম মা-তাশকুরূন।
অর্থঃ অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।

সূরা আদ-দাহর (الدَّهْرِ), আয়াত: ২
اِنَّا خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ اَمۡشَاجٍ ٭ۖ نَّبۡتَلِیۡہِ فَجَعَلۡنٰہُ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرًا
উচ্চারণঃ ইন্না-খালাকানাল ইনছা-না মিন নুতফাতিন আমশা-জিন নাবতালীহি ফাজা‘আলনা-হু ছামী‘আম বাসীরা- ।
অর্থঃ আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।

প্রথমত আয়াতের কোথাও বলানেই যে আগে শ্রবণ ও পরে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। এখানে আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক নিজের ইচ্ছা মত ধরে নিয়েছে! অনেক অতি উতসাহী ডাঃ জাকির নায়েক ভক্ত বলবে আয়াতে শ্রবণ শব্দটা আগে ব্যাবহার করা হয়েছে!

আমার বাবা আমাকে এবার ঈদে নতুন শার্ট ও প্যান্ট দিয়েছেন । এই বাক্যটা দিয়ে কি এইটা বুঝানো হয়েছে যে বাবা আমাকে আগে শার্ট ও পরে প্যান্ট দিয়েছে। না তা বুঝাচ্ছেনা।

প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে দুটি আয়াতেই কেন আগে শ্রবণ ও পরে দৃষ্টি ব্যবহার করা হয়েছে? এর কারণ বুঝতে হলে আপনাকে ভাষার সৌন্দর্যতা সম্পর্কে বুঝতে হবে। কুরআন একটি কাব্যিক গেন্থ। প্রতিটি ভাষাতেই ভাষার কাব্যিক সৌন্দর্য বাড়াতে কিছু শব্দ সংগতি ব্যবহার করা হয়। বাংলাতে যেমন দুধ-ভাত, হাত- পা। আপনি কখনোই ভাত-দুধ বা পা- হাত বলেন না। তেমনি আরবিতেও ছামী‘আম বাসীরা একটি শব্দ সংগতি।

বলেছিলাম না আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের কুরআনের ইন্ট্যালেকচুয়াল জ্ঞানের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। এটা তার আরো একটি উদাহরণ। যেখানে কুরআনের ভাষাগত বিন্যাসের কথা বলা হয় সেখানে এই আব্দুলটা বিজ্ঞান খোঁজে।

Embryology বলে কান ও চোখ দুটোর গঠনই ১৬ তম সপ্তাহে শুরু হয়।

আরও দেখুন

পৃথিবী উট পাখির ডিমের মত

দাবিঃ পৃথিবী দেখতে কেমন? এক সময় মানুষ মনে করত পৃথিবী চ্যাপ্টা … কুরআন সূরা নাযিয়াত এর ৩০ নং আয়াতে ১৪০০ বছর আগেই জানিয়ে গেছে পৃথিবী দেখতে অনেকটা উট পাখির ডিমের মত গোলাকার।

খণ্ডনঃ দেখা যাক কুরআনে কি বলা আছে!

সূরা আন নাযিয়াত (النّزعت), আয়াত: ৩০
وَالۡاَرۡضَ بَعۡدَ ذٰلِکَ دَحٰىہَا ؕ
উচ্চারণঃ ওয়াল আর দা বা‘দা যা-লিকা দাহা-হা-।
অর্থঃ পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।

আয়াতের শেষ শব্দটি দাহা-হা। সকল ক্লাসিক আরবি ডিকশনারিতে যার অর্থ বিস্ত্রিত। এখন প্রশ্ন আসে কেন আমরা কুরআনকে বুঝতে ক্লাসিক আরবি ডিকশনারি থেকে অর্থ করব? কেন আমরা আধুনিক আরবি ভাষার ডিকশনারি থেকে কুরআনের শব্দের অর্থ নিতে পারবনা? কারণ প্রাচীন আরবি আর আধুনিক আরবির মধ্যে অনেক পার্থক্য। কুরআন নাজিল হয়েছে প্রাচীন আরবিতে। কেবল তাই নয় কুরাআনের আরবি প্রাচীন আরবির কুরাইশী ডায়ালেক্টে। সুতরাং, কুরাআনের প্রতিটি শব্দের অর্থ বুঝতে হলে দেখতে হবে প্রাচীন আরবিতে সেই শব্দের অর্থ কী। চর্যা পদ বাংলাভাষার আদি নিদর্শন বলে এখন যদি কেউ আধুনিক বাংলা দিয়ে চর্যাপদ বুঝতে যায় তাহলে এর থেকে বড় গাধামি আর হবেনা। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হল ডাঃ জাকির নায়েক সেই গাধামিটা করেছে। সে দাহা-হা শব্দের আধুনিক আরবির অর্থ উটপাখির ডিম নিয়ে কুরআন বুঝতে গিয়েছেন! অথচ, নবীজির কোন সাহাবির কোন রেওয়ায়েতেই এই উদ্ভট ব্যাখ্যা নেই, কোন প্রাচীন তাফসির গ্রন্থে উটপাখির ডিমের কোন অস্তিত্ব নেই। কোন ক্লাসিক আরবি ডিকশনারিতে দাহা-হা অর্থ উটপাখির ডিম নেই। মূলত আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক বুঝাতে চেয়েছে যে নবীজি বা তার সাহাবি, তাবে, তাবেইন গন আসলে কুরআন বুঝতনা আর নবীজি আসলে তার সাহাবিদের কুরআন শিক্ষা এবং কুরআনের ব্যাখ্যা বুঝাতেই পারে নাই, ১৪০০ বছর পর কুরআনের আসল অর্থ এবং ব্যাখ্যা আব্দুল মার্কা মাশরুম মুফাস্যির ডাঃ জাকির নায়েক বুঝতে পেরেছে। আর এই আব্দুলকে নিয়ে না পড়া না জানা মুসলিমদের যে কি তালবাহানা ইদানিং দেখি।

রাত এবং দিন বাড়া এবং কমা️

দাবিঃ পৃথিবীতে রাত এবং দিন বাড়া এবং কমার রহস্য মানুষ জেনেছে দুশ বছর আগে। সূরা লুকমানের ২৯ নং আয়াতে কুরআন এই কথা জানিয়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে !

খণ্ডনঃ আসুন দেখি কুরআন কী বলে

সূরা লোক্‌মান (لقمان), আয়াত: ২৯
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یُوۡلِجُ الَّیۡلَ فِی النَّہَارِ وَیُوۡلِجُ النَّہَارَ فِی الَّیۡلِ وَسَخَّرَ الشَّمۡسَ وَالۡقَمَرَ ۫ کُلٌّ یَّجۡرِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی وَّاَنَّ اللّٰہَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ
উচ্চারণঃ আলাম তারা আন্নাল্লা-হা ইঊলিজুল লাইলা ফিন্নাহা-রি ওয়া ইঊলিজুন্নাহা-রা ফিল্লাইলি ওয়া ছাখখারাশশামছা ওয়ালা কামারা কুলুলইঁইয়াজরীইলাআজালিম মুছাম্মাওঁ ওয়া আন্নাল্লা-হা বিমা-তা‘মালূনা খাবীর।
অর্থঃ তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন?

এই আয়াতটিও layman’s term. যে চোখে দেখতে পারে এমন যে কাউকে ( শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, বাচ্চা বা বুড়ো) ভোর রাতে বাইরে দাঁড় করিয়ে দেন। সে দেখতে পারবে কিভাবে রাত আস্তে আস্তে দিনে পরিনত হয়। আবার তাকে পড়ন্ত বিকেলে বাইরে দাড়াতে বলুন সে দেখতে পারবে যে কি ভাবে দিন আস্তে আস্তে রাতে পরিনত হয়। Layman’s term বর্ণনা করতে বিজ্ঞান লাগেনা। লাগে কেবল অবজারভেশন।
আসুন আমরা একটা ছড়া বলি…….

“Layman’s term এ যারা বিজ্ঞান খুজতে যায়
তারা উৎকৃষ্ট মানের গাধা ছাড়া আর কিছুই নয়!”

মজার ব্যাপার হল আয়াতের প্রথমেই আল্লাহ নিজেই বলে দিচ্ছেন ‘ তুমি কি দেখনা?’ যার অর্থ সকল দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মানুষ এই আয়াতের বর্ণনা স্বাভাবিক ভাবেই দেখতে পায়। আল্লাহ নিজেই আয়াতটিকে layman’s term হিসেবে বুঝাচ্ছে সেখানে আল্লাহর থেকে বেশি বুঝে আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েক সেখানে বিজ্ঞান খুঁজতে ব্যাস্ত। আরো অবাক ব্যাপার হল এই আব্দুলটার ভক্তরা তার এই গাধামি কে আপ্রিশিয়েট ও করে!

পৃথিবী গোল

দাবিঃ সূরা আর-রহমানের ১৭ এবং সুরা ইনশিকাকের ৩ নং আয়াত ১৪০০ বছর আগেই আমাদের জানিয়েছে যে পৃথিবী গোল, যা বিজ্ঞান কিছুদিন আগে জানতে পেরেছে।

খণ্ডনঃ আসলেই কি এই আয়াতসমূহ দিয়ে পৃথিবী গোল বোঝানো হয়েছে?

চলুন দেখি কুরআনের এই আয়াত সমূহে কী বলা হয়েছে।

সূরা আর রাহমান (الرّحْمن), আয়াত: ১৭
رَبُّ الۡمَشۡرِقَیۡنِ وَرَبُّ الۡمَغۡرِبَیۡنِ ۚ
উচ্চারণঃ রাব্বুল মাশরিকাইনি ওয়া রাব্বুল মাগরিবাইন।
অর্থঃ তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক।

সূরা আল ইন‌শিকাক (الانشقاق), আয়াত: ৩
وَاِذَا الۡاَرۡضُ مُدَّتۡ ۙ
উচ্চারণঃ ওয়া ইযাল আরদুমুদ্দাত।
অর্থঃ এবং যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে।

সূরা আল ইন‌শিকাক (الانشقاق), আয়াত: ৩
وَاِذَا الۡاَرۡضُ مُدَّتۡ ۙ
উচ্চারণঃ ওয়া ইযাল আরদুমুদ্দাত।
অর্থঃ এবং যখন পৃথিবীকে সম্প্রসারিত করা হবে।

কই আয়াত দুইটির কোথাও তো পৃথিবী গোল বলা হয়নি! ও আচ্ছা এখানে তো জনাব আব্দুল মাশরুম মুফাস্যির বিজ্ঞ দিনে আলেম ডাঃ জাকির নায়েকের তাফসির লাগবে। চলুন দেখা যাক ডাঃ জাকির নায়েকের তাফসিরে কি বলা হয়ঃ

সূরা আর রহমানের ১৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে রাব্বুল মাশরিকাইনি ওয়া রাব্বুল মাগরিবাইন (তিনিই দুই উদয়াচল ও অস্তাচলের মালিক)। এখানে উদয়াচল ও অস্তাচল বলতে সূর্য উদয় ও অস্ত যাওয়াকে বোঝানো হয়েছে। আমরা জানি একদিনে পৃথিবিতে দুইবার সূর্য উদয় হয় এবং দুইবার অস্ত যায়। আমরা যখন পূর্ব দিকে সূর্য উদিত হতে দেখি আমেরিকানরা তখন পশ্চিম দিকে সূর্য অস্ত যেতে দেখে। তাহলে আমাদের এখানে সকাল তাদের ওখানে সন্ধ্যা। আবার আমরা যখন সূর্য কে ডুবতে দেখি তখন তারা সূর্য কে উদিত হতে দেখে। এর মানে আমরা পৃথিবীতে দুইবার সকাল দুইবার সন্ধ্যা পরিলক্ষিত হতে দেখি। দুবার সূর্যোদয় আর দুবার সূর্যাস্ত তখনই দেখি যখন পৃথিবী গোলাকার হয়। আর যদি পৃথিবী সমতল বা চ্যাপ্টা হত তাহলে একবারই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হতো। তেমনভাবে সূরা আল-ইনশিক্বাকের ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ওয়া ইযাল আরদুমুদ্দাত (যেদিন পৃথিবিকে সম্প্রসারিত করা হবে), এখানে কিয়ামতের দিবসের কথা বলা হয়েছে।সেদিন পৃথিবিকে আল্লাহ সমতল করবেন। তিনি যদি এখনি পৃথিবিকে সমতল বানাতেন তাহলে তখন কিভাবে সমতল করতেন।

দাঁড়ান একটু হেসে নেই। বুঝতে পেরেছেন কত গণ্ডগোল আছে আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের এই বিজ্ঞানময় তাফসিরে। আব্দুলটা ভুগোল, গণিত আর পদার্থ বিজ্ঞানের রীতিমতো ১৩ টা বাজিয়ে ছেড়েছে।

আমরা কি পৃথিবীতে মাত্র দুইবার সূর্য উদয় আর সুর্য অস্ত দেখি? না। যারা অক্ষরেখা, নীরক্ষরেখা আর দ্রাঘীমা রেখা আর ৩৬০ ডিগ্রী কে অসংখ্য দ্রাঘীমা রেখা দিয়ে কি ভাবে ভাগ করা হয় তা জানেন তারা বুঝতে পারবেন যে ২৪ ঘন্টায় পৃথিবীতে অসংখ্যবার সূর্য উদয় আর অসংখ্যবার সূর্য অস্ত যায় [11] [12]। প্রকৃত পক্ষে প্রতিটি মুহূর্তেই কোথাও না কোথাও সূর্য উদয় হচ্ছে আবার প্রতিটি মুহুর্তেই কোথাও না কোথাও সূর্য অস্ত যাচ্ছে। এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের ভুগোল বিষয়ে ও বেসিক জ্ঞান নেই। আরো বুঝতে পারি দুই অস্তাচল আর উদ্য়াচল দিয়েও পৃথিবী গোল প্রমাণ করতে চাওয়াটা নিতান্তই গাধামি।

তাহলে এই দুই অস্তাচল আর উদয়াচল দিয়ে আসলে কী বোঝানো হয়েছে। সেটা বুঝতে হলে আপনাকে আবারো সেই প্রাচীন তাফসিরে ফিরে যেতে হবে। আরবে প্রধানত দুইটি ঋতু। শীত আর গ্রীষ্ম। শীতকালে সূর্য এক স্থান থেকে উঠলেও গ্রীষ্মকালে সূর্য উদয়ের স্থান পরিবর্তন হয়, একই ভাবে শীত আর গ্রীষ্মকাল ভেদে অস্তাচলেরও পরিবর্তন হয়। এটাও একটি Layman’s term. তারা এটা চোখে দেখত বিধায় জানত।

সম্প্রসারণ যে, যে কোন আকারের বস্তুর হতে পারে এমবকি একটা রেখাংশের ও হতে পারে তা বোধহয় আব্দুল ডাঃ জাকির নায়েকের জানা নেই। এথেকে প্রমাণ হয় যে তার পরিমিতির তথা গণিতের ও বেসিক জ্ঞান নেই।

উপসংহার

এই ১৭ টি দাবি খণ্ডনের মাধ্যমে আমরা যা জানতে আর বুঝতে পারলাম তা হলঃ

  • ডাঃ জাকির নায়েকের পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, ভুগোল, গণিতের বেসিক জ্ঞান নেই।
  • ডাঃ জাকির নায়েক নিজের ইচ্ছা এবং প্রয়োজন মত কুরআনে বিকৃত করে।
  • ডাঃ জাকির নায়েক প্রাচীন তাফসির তথা নবীজির শেখানো কুরআনের ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে নিজের ইচ্ছামত কুরআনের ব্যাখ্যা দিয়ে প্রমাণ করতে চায় যে সে নবীজি থেকেও কুরআন ভালো ব্যাখ্যা করতে পারে।
  • ডাঃ জাকির নায়েক আল্লাহর থেকেও বেশি বুঝতে চায়।
  • ডাঃ জাকির নায়েক কুরআনের ইন্টেলেকচুয়াল জ্ঞানের বিন্দু মাত্র জ্ঞান রাখে না।
  • প্রতিটি মুসলিমের পড়ে জেনে বুঝে ধর্ম পালন করা উচিত। কোন আব্দুলের কথা চোখ বুজে মেনে নেওয়া ঠিক না।

এই লেখা পড়ার জন্য ধৈর্য্যের প্র‍য়োজন আছে। যারা এত ধৈর্য্য নিয়ে লেখাটি পড়ে শেষ করেছেন তাদের ধন্যবাদ ও অভিনন্দন। লেখায় কোন তথ্যগত ভুল থাকলে আমাকে ধরিয়ে দেবেন। সত্যের সাথে থাকবেন।



লেখক – সৈয়দ রাশেদুজ্জামান (রাশেদ)

আরও দেখুন


তথ্যসূত্র

  1. আল্লাহর ৯৯ টি নাম []
  2. Geocentric model []
  3. তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৭তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৪৮, প্রকাশকঃ তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি। প্রকাশিত সাল ২০১০, নবম সংষ্করণ []
  4. Big Bang []
  5. Water cycle []
  6. Brackish water []
  7. LEFT OR RIGHT SIDE SLEEPING BEST FOR YOUR HEART? []
  8. তাফসির ইবনে কাসির (৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম) খন্ড, পৃষ্ঠা ৯০৬-৯০৮. প্রকাশক তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি। প্রকাশিত সাল ২০০৯, নবম সংষ্কার []
  9. 7 Health Benefits Of Drinking Alcohol []
  10. A History of Embryology (1959), by Joseph Needham []
  11. অক্ষাংশ []
  12. দ্রাঘিমা []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন

9 thoughts on “ডাক্তার জাকির আব্দুল করিম নায়েক প্রসঙ্গে

  • July 12, 2020 at 12:08 PM
    Permalink

    “চন্দ্র এবং সূর্য কক্ষপথে ভেসে চলে️” -শিরোনামে যা লেখা হয়েছে তা বেশ হাস্যকর |বর্তমান বিজ্ঞান হলো মহাবিশ্বের সবকিছু গতিশীল, যা সদ্য আবিষ্কার | কিন্তু কুরআনে আগ থেকেই আছে |

    Reply
  • July 12, 2020 at 12:10 PM
    Permalink

    “চন্দ্র এবং সূর্য কক্ষপথে ভেসে চলে️” শিরোনামের লেখাটা বেশ হাস্যকর |

    Reply
  • July 27, 2020 at 6:34 AM
    Permalink

    চাঁদের নিজস্ব আলো নেই️— সূর্য এবং চাঁদ দুটোই আলো দান করে কিন্তু সূর্যকে আলোক উৎপন্নকারী ও দানকারী বলা হয়েছে যেখানে চাঁদকে শুধুই আলোদানকারী বলা হয়েছে।কোরানে কোথাও সূর্য এবং চাঁদকে এক করে দেখা হয় নাই।তাহলে ব্যাপারটা কি এরকমই দাঁড়ায় না যে চাঁদের আলো ধার করা? reference কোরানের মধ্যেই আছে।
    চন্দ্র এবং সূর্য কক্ষপথে ভেসে চলে️– আল্লাহ দেখা যাচ্ছে আমাদের পদার্থ বিজ্ঞানের (অথবা অস্ট্রোলোজি) মাধ্যমিক পরীক্ষাতেই ফেল করে গেলেন।করবেনই বা না কেন, মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রিপারেশনে উপবৃত্ত চ্যাপ্টারটা উনি বাদ দিয়ে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তার কোরানে অনেক হেঁয়ালি করেছেন যার একটা কারণ আছে। উনি হাজার বছর আগের মানুষ এবং হাজার বছর পরের মানুষকে একসাথে বোঝাতে চেয়েছেন। বছর বছর কোরানের আপডেটেড ভার্শন নাজিল করতে চান নাই। ফলে অনেক কিছুই হেঁয়ালি হয়ে গেছে। হয়তো ভেবেছিলেন হাজার বছর পরের মানুষ বুদ্ধিমান হবে এবং বুঝবে। কিন্তু বিধি বাম, মানুষ বেশি বুঝে গেল।
    আম্বিয়া-৩৩ আয়াতটা পড়ে আমার মনে হলো না যে কক্ষপথের ধারণা উনিই আমাদের সর্বপ্রথম দিচ্ছেন বলে দাবি করছেন।
    মানুষের আঙ্গুলের ছাপ️– ক্বিয়ামাহ- ০৪ আয়াতে চুল বাঁকা করা টাইপের যে কোনো চলিত রূপক শব্দ না নিয়ে আল্লাহ মিয়া আঙুলের ডগার মত নিতান্তই অপ্রচলিত গুরুত্বহীন অংশ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন কেন তা আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না। নাকি এই অতি সাধারণ আঙুলের ডগার একটা অসাধারণ বৈশিষ্ট আছে তাই?
    বিগ ব্যাং’ থিওরি️– বিগব্যাং এর সময় এই পৃথিবীর অস্তিত্বই ছিলনা কিন্তু যেটার অস্তিত্ব ছিল সেটার অস্তিত্ব সেই সময়ের আরবি অভিধানে ছিল কিনা তা একটু ভেবে দেখার বিষয়। মহাবিশ্ব বলতে যা বোঝায় সেটাও ওই অভিধানে ছিল বলে বোধ করি না। আল্লাহ মিয়ার উচিত ছিল কোরান নাজিলের আগে আরবি ভাষাটাকে সমৃদ্ধ করা। কিন্তু অত্তান্ত ধূর্ত এই আল্লা মিয়া, কোরান নাজিল করে ভাবছে, দিয়েছি, নিতে পারলে নাও, না পারলে যাও বিদায় হও।বাই দা ওয়ে জাকির নায়েক কে ভাই? আমার আপনার মতো কোরান হাদিস পড়া ছাড়া বেশি কিছু না। জাকির নায়েকের কোন থিওরী ফেল করলো তাতে কি এসে যায়? সে তার মোটা মাথা খাটিয়ে যতটা বুঝেছে, বলেছে। ইটারনাল ইউনিভার্স থিওরি, মাল্টি ইউনিভার্স থিওরি বা বিগব্যাং থিওরি ইত্যাদির সাথে আম্বিয়া- ৩০ আয়াতটা কি মিলে? না, মিলে না। আল্লা মিয়া এখানে যেটা সত্যি সেটা সহজভাবে বলেছে, কোনো থিওরী comply করে নাই।
    পানি চক্রের কথা– সত্যি এই মেডিকেল ডাক্তার যেখানে সেখানে বিজ্ঞান খুজে পায়। জুমআর – ২১ আয়াতে কোনো বিজ্ঞান নাই। আল্লামিয়া বলেছেন এখানে চিন্তার অবকাশ আছে যেটা শুধুমাত্র বুদ্ধিমানরা বুঝতে পারবে। আসলেও আছে। সত্যি কথা বলতে কি এটা একটা হুমকী।
    লবণাক্ত পানি ও মিষ্ঠি পানি মিশ্রিত হয় না️– আল ফুরকান- ৫৩ আয়াতের ব্যাখ্যায় কোন পন্ডিত কি বলে ইসলামকে উদ্ধার করেছেন জানি না তবে আমি যেটা জানি তা হলো; সমুদ্র থেকে পানি বাষ্প হয়ে আকাশে গিয়ে মেঘ হয়ে আবার বৃষ্টি হয়ে ধরণীতে ফিরে আসছে।কিন্তু কোনো অবস্থাতেই সমুদ্রের লবন এই চক্রটাকে ভেদ করতে পারছে না। আসিফ মহিউদ্দিন দেখিয়েছিলেন যে কিছু পানি ঠেলাঠেলি করে সমুদ্র থেকে নদীতে উঠে আসে কিন্তু সেটা দুই এক শতাংশের বেশি হবে না এবং তা দিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায় না। এই দুর্ভেদ্য দেওয়াল যদি ভেঙে যায়, তাহলে বোতলের পানি ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না…. কিন্তু এতো বোতল?! এখানে একটা সমুদ্র রূপকাশ্রয়ী।
    যাই হোক পরের পয়েন্টগুলি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে জাকির নায়েকের মতো স্টেজ পারফর্মারগণ আমাদের মুগ্ধ করে দেয় কারণ আমরা কিছু জানি না, জানার বা বোঝার চেষ্টাও করি না। জাকির নায়করা ইসলামের বা কোরানের ঠিকাদার নন, নবী রাসূলও নন, আমাদের মতোই কোরান হাদিস পড়া মানুষ। এইসব নায়কদের খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার কোনো মানে হয় না।

    Reply
  • January 9, 2021 at 3:57 AM
    Permalink

    জাকির নায়েক না থাকলে কুরআনের বারোটা বেজে গেছিল।

    Reply
  • May 24, 2021 at 3:47 PM
    Permalink

    কুরআনেরর ভুল ধরতে যেয়ে বলদামির চুড়ায় চলে গেছে। এরা নাকি আবার বিজ্ঞানময়।

    Reply
  • July 26, 2021 at 7:05 AM
    Permalink

    মজার ব্যাপার হলো – যারা তথাকথিত আল্লার সংগ্রামী সৈনিক, আল্লার বাণী ও আদর্শ প্রতিষ্টার জন্য প্রাণপাত করছে বা করেছে তারা কিন্তু আল্লার সমর্থন পায় না | আল্লার তাদের প্রতি কোনো আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না | হাজার হাজার বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য যদি সর্বশক্তিমানের সামান্যতম সাহায্য পেত তবে তারা আজ গোটা পৃথিবী জুড়ে তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারতো | সেটা তো হলোই না উল্টে সেই সব সংগ্রাম ও তাদের বড়ো বড়ো সব নেতারা নির্মম ভাবে নিহত হলো | কাদের হাতে নিহত হলো – বিধর্মী দের হাতে, কাফের দের হাতে !! আল্লার শত্রু দের হাতে ! ইনশাল্লাহ ! নির্মম সত্য | যার জন্য এতো সংগ্রাম তার যদি সমর্থন না থাকে তবে তা সম্পূর্ণ অর্থহীন নয় কি?

    Zakir Naik এর কথাই ধরা যাক, অত বড় একজন ধর্ম প্রচারক কিন্তু স্বদেশ থেকে বিতাড়িত, যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, Wanted by Law | বর্তমানে যে দেশে আশ্রিত সেখানে তার কথা বলার ও free movement এর ওপর নিষেধাজ্ঞা | এ ছাড়াও বেশ কিছু দেশে প্রবেশ ও প্রচার এর নিষেধাজ্ঞা | এক কথায় চরম ভোগান্তি ও সমস্যা | এগুলো যে কোনোভাবে সর্বশক্তিমানের Naik এর প্রতি সমর্থনের বা প্রশ্রয়-এর ইঙ্গিত দেয় না সেটা নির্বোধও বুঝতে পারবে |

    এখানে কিছু ধার্মিক আলোচনা গুলিকে হাস্যকর বলেছেন | কিন্তু কেন তাদের হাসি পেল সেটা খুলে বলেন নি | বলার কিছু থাকলে তো ! কথায় বলে নির্বোধ তিন বার হাসে – শুনে হাসে, পরে না বুঝে হাসে এবং শেষে বুঝে হাসে | অর্থাৎ নির্বোধের মুখে হাসি লেগেই আছে, ও নিয়ে ভাবলে চলে না |

    Reply
  • October 15, 2021 at 7:00 PM
    Permalink

    আসিফ মহিউদ্দীনঃ ক্রিশ্চিয়ানিটি আর ইসলামের মধ্যে বড় ধরণের পার্থক্য আছে। ইউরোপে আসার পরে বেশিরভাগ মানুষকেই দেখেছি, তারা ক্রিশ্চিয়ানিটির ওপর ভিত্তি করে সব ধর্মকে মূল্যায়ন করে। কিন্তু প্রতিটি ধর্মই আলাদা এবং সেগুলো বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষতিকর।
    বিবেচনা করা দরকার, কোন ধর্মের সর্বোচ্চ অথরিটি কে বা কী। যেমন ক্রিশ্চিয়ানিটির সর্বোচ্চ অথরিটি হিসেবে চার্চ নিজেকে দাবী করে। তবে এর থেকে অনেকেই বের হয়ে আলাদা অথরিটি হিসেবে দাড়িয়ে গেছে। এভাবে অনেকগুলো আলাদা আলাদা অথরিটি তৈরি হওয়ায় তাদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা করতে হয়েছে, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার। তাই এখন পোপ পর্যন্ত ঘোষনা করছে, নাস্তিকরাও স্বর্গে যেতে পারবে। এটা তারা সামাজিক প্রেশারের কারণেই বলতে বাধ্য হচ্ছে। নাস্তিকরা যেন তাদের ওপর ক্ষুব্ধ না হয়, তার চেষ্টা আর কি।

    সেইসাথে বাইবেলে যা লেখা আছে, সেগুলোকে অধিকাংশ ক্রিশ্চিয়ান খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে না। তাদের নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের সাথে বাইবেল সাংঘর্ষিক হলে তারা বাইবেলকে ভুল বলে ধরে নেয়। সেটা ভাবার সুযোগ তাদের আছে।

    অন্যদিকে, ইসলামের মূল অথরিটি কোরান এবং মুহাম্মদের জীবন। এছাড়া আর কোন অথরিটি নেই। কোরানকে ভুল ভাবার কিছুমাত্র সুযোগ কারো নেই। কোরানকে যেহেতু পাল্টাবার সুযোগ নেই, এবং ব্যাখ্যাগুলোও আসলে হাদিস সহকারে এমনভাবে ওয়েল ডকুমেন্টেড যে, এদিক সেদিক হওয়ার সুযোগ খুবই অল্প। কিছু প্রতারক (আসিফ মহিউদ্দীন গং) শব্দের ভুল অর্থ বের করে কিংবা মানবিক ব্যাখ্যা হাজির করে সামান্য সময়ের জন্য বোকা বানাতে পারবে, তবে সেগুলো আসলে প্রতারণাই। টিকবে না।

    যতদিন পর্যন্ত ইসলামের মূল অথরিটি কোরান এবং মুহাম্মদের জীবনী, ততদিন তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। সংস্কার, সংশোধন যাই করেন, পুরনো জিনিসই ক’দিন পরে ফেরত আসবে। খেলাফত আমলে তো কম চেষ্টা হয় নি। “লাভ কী হয়েছে?”

    আসিফ মহিউদ্দীন গং তাসলিমা নাসরিন দের মতো নির্বোধ, শয়তানের চ্যালারা যুগে যুগে ছিল, ইতিহাসের আস্তাকুড়ে চোলে গেছে, কম তো চেষ্টা হয় নি, “লাভ কী হয়েছে?” 🙂 ইসলাম, তৌহিদবাদ ই একমাত্র বিধান, নীতি যা যুগের পর যুগ, শতকের পর শতক আপন মহিমায় থাকবে ..

    Reply
  • November 14, 2022 at 1:09 AM
    Permalink

    ভাই আমি কোন ধর্মে বিশ্বাস করি না তবে সৃষ্টিকর্তা বিশ্বাস করি। আমি মুসলিম সবাই জানে তবে সত্য প্রকাশ করি না ।চারপাশ,মহাকাশ এর নিখুত নিয়ম কানুন দেখলে কেউ একজন আছে ধরাই যাই। পদার্থবিজ্ঞান এ বলে শুন্য থেকে কিছু আসতে পারে না ।এটাই প্রমান করে এসব কিছুর সৃষ্টিকর্তা আছে একজন তবে কে তা জানি না ,যেহেতু বিজ্ঞান এখনও সৃষ্টির নিখুত প্রমান করতে পারে নাই তাই আপাতত এটাই মানি। আমার কোন বুঝার ভুল থাকলে ধরিয়ে দিবেন।

    Reply
  • December 4, 2023 at 9:33 PM
    Permalink

    United NUR ভাই এখানে খ্রিস্টান ধর্ম সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। আপনি এখানে খ্রিস্টান ধর্মের কথা বলছেন কেন?এটি সম্পূর্ণ বিষয়ের বাইরে। এখানে জাকির নায়েক ওরফে জোকার নালায়েক সম্পর্কে কথা বলা হয়েছে। আর আপনি বলছেন কোরান এবং মুহাম্মদের জীবনই ইসলামের প্রধান কর্তৃত্ব। তাহলে কেন কিছু মুসলিম জাকির নায়েককে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে?

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *