১৪০০ বছর আগেই আবিষ্কার ?

Print Friendly, PDF & Email

সূচিপত্র

ভূমিকা

মুসলিমদের একটা স্বভাব হচ্ছে তারা বিজ্ঞানের কোন কিছুই আবিষ্কার করতে পারেনা, যখনই বিজ্ঞান কোন কিছু আবিষ্কার করে তখন তারা নির্লজ্জ বেহায়ার মত বলে, ভাগ্যিস বিজ্ঞান এসব আবিষ্কার করেছিলো, নয়তো নাকি জানাই যেতো না কুরআনে এসব আগেভাগেই বলা আছে। চিন্তা করুন এরা কতটা মূর্খ। অর্থাৎ তারা বলতে চাচ্ছেন তাদের চিরশত্রু ইহুদি, খ্রিস্টান, নাস্তিক বিজ্ঞানীরা এসব আবিষ্কার না করলে তারা কুরআনে এসব খুঁজে পেতেন না।

তাদের এরকম কিছু মিথ্যা দাবির জবাব তুলে ধরা হল।

১. বিজ্ঞান কিছুদিন আগে জেনেছে চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই

সূরা ফুরক্বানের ৬১ নং আয়াতে কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।

সূরা ফুরক্কান আয়াত ৬১

উত্তর: না। Anaxagoras (500 BCE–428 BCE) নামক একজন গ্রিক ফিলসফার ছিলেন যিনি প্রথমে চাঁদের নিজস্ব আলো নেই সেটা প্রস্তাব করেন। (1)


এবং নিন্মোক্ত ৩ টি আয়াতের ব্যাখ্যা সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য তাফসীর “তাফসীরে ইবনে কাসির” থেকে দেখলেই বুঝবেন কুরআন স্পষ্টভাবেই বলছে চাঁদ ও সূর্যের আলো পৃথক পৃথক, এর ফলেই দিন রাত্রির সৃষ্টি হয়।
আয়াত ৩ টি হচ্ছেঃ

25:61
ﺗَﺒَﺎﺭَﻙَ ﭐﻟَّﺬِﻯ ﺟَﻌَﻞَ ﻓِﻰ ﭐﻟﺴَّﻤَﺎٓﺀِ ﺑُﺮُﻭﺟً۬ﺎ ﻭَﺟَﻌَﻞَ ﻓِﻴﮩَﺎ ﺳِﺮَٲﺟً۬ﺎ ﻭَﻗَﻤَﺮً۬ﺍ ﻣُّﻨِﻴﺮً۬ﺍ
কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।
71:16
 وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُورًا وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا 
 এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে।
10:05
  هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاء وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُواْ عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ مَا خَلَقَ اللّهُ ذَلِكَ إِلاَّ بِالْحَقِّ يُفَصِّلُ الآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
-তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে উজ্জল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিল সমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে।


25:61 এর কয়েকটি বিখ্যাত ইংরেজি অনুবাদঃ
Abdullah Yusuf Ali- Blessed is He Who made constellations in the skies,and placed therein a Lamp and a Moon giving light;
Habib Shakir- Blessed is He Who made the constellations in the heavens and made therein a lamp and a shining moon.
Pickthal- Blessed be He Who hath placed in the heaven mansions of the stars, and hath placed therein a great lamp and a moon giving light!
Saheeh international- Blessed is He who has placed in the sky great stars and placed therein a (burning) lamp and luminous moon.


71:16 এর কয়েকটি বিখ্যাত ইংরেজি অনুবাদঃ
Yousuf Ali- And made the moon a light in their midst, and made the sun as a (Glorious) Lamp?
Habib Shakir- And made the moon therein a light, and made the sun a lamp?
Pickthal- And hath made the moon a light therein, and made the sun a lamp?


10:05 এর কয়েকটি ইংরেজি অনুবাদঃ
Yousuf Ali- It is He Who made the sun to be a shining glory(1391) and the moon to be a light (of beauty), and measured out stages for her; that ye might know the number of years and the count (of time). Nowise did Allah create this but in truth and righteousness.(1392) (Thus) doth He explain His Signs in detail, for those who understand.(1393)
Habib Shakir- He it is Who made the sun a shining brightness and the moon a light, and ordained for it mansions that you might know the computation of years and the reckoning. Allah did not create it but with truth;He makes the signs manifest for a people who
Pickthal- He it is who appointed the sun a splendour and the moon a light, and measured for her stages, that ye might know the number of the years, and the reckoning. Allah created not (all) that save in truth. He detaileth the revelations for people who have knowledge.

এগুলা প্রমাণ করে কুরআন স্পষ্ট ভাবেই বলছে চাঁদের নিজস্ব আলো রয়েছে। নূর মানে কখনোই প্রতিফলিত আলো নয়। ফেরেশতারা কি “প্রতিফলিত আলো” দিয়ে তৈরি? সূরা আন নূর মানে কি “প্রতিফলিত আলোর শ্লোক”? অবশ্যই না।

২. বিজ্ঞান মাত্র দুশো বছর আগে জেনেছে চন্দ্র এবং সূর্য কক্ষপথে ভেসে চলে

সূরা আম্বিয়া ৩৩ নং আয়াতে কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﻭَﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭَ ﻭَﺍﻟﺸَّﻤْﺲَ ﻭَﺍﻟْﻘَﻤَﺮَ ﻛُﻞٌّ ﻓِﻲ ﻓَﻠَﻚٍ ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥ.
বাংলা অনুবাদ- আর তিনিই রাত ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেছেন; সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।

সূরা আম্বিয়া আয়াত ৩৩

উত্তর: না। চাঁদ যে পৃথিবীর চারপাশ ঘোরে সেটা মানুষ আগেই জানত। তাই রেফারেন্স দেবার প্রয়োজন বোধ করছি না। আর সূর্যের ব্যাপারটা হয়ত বিজ্ঞান পরেই প্রমাণ দিতে পেরেছে। কুরআন যখন রচিত হয়েছিল তখন Heliocentric সৌরজগতের ধারণা এত জনপ্রিয় এবং প্রতিষ্ঠিত ছিল না। তাই এখানে সূর্যের অর্বিট যে পৃথিবীর চারপাশে বোঝানো হয়নি সেটা না ভাবা অযৌক্তিক।
এখানে আরবি শব্দ “ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥَ”  দিয়ে “সাঁতার কাটে” বলা হয়েছে, কৌশলে এটাকে “কক্ষপথ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।

৩. বিজ্ঞান সেইদিন জেনেছে ফিঙ্গারপ্রিন্টের কথা

সূরা কিয়ামাহ’র ৩ ও ৪ নং আয়াতে ১৪০০ বছর আগেই জানানো হয়েছে মানুষের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে মানুষকে আলাদা ভাবে শনাক্ত করা সম্ভব, যা আজ প্রমাণিত।

75:3
أَيَحْسَبُ الْإِنسٰنُ أَلَّن نَّجْمَعَ عِظَامَهُۥ
মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্র করতে পারবনা?
75:4
بَلٰى قٰدِرِينَ عَلٰىٓ أَن نُّسَوِّىَ بَنَانَهُۥ
বস্তুতঃ আমি তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগ পর্যন্ত পুনঃবিন্যস্ত করতে সক্ষম।
অথবা- পরন্ত আমি তার অংগুলিগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।(অনুবাদ মাওলানা মহিউদ্দিন খাঁন)

সূরা কিয়ামাহ আয়াত ৩-৪

উত্তরঃ
এখানে ফিঙ্গারপ্রিন্টের কথা কোথায়?
এখানে যদি আল্লাহ বলতেন যে আমি তার মাথা পর্যন্ত সঠিকভাবে বানিয়ে দিতে সক্ষম, তার মানে কি এটা বুঝাতো যে প্রত্যেক মানুষের মাথার ছাপ আলাদা? হাস্যকর।
মোরাল: Eisegesis করে অনেক কিছু পাওয়া যায়। 

৪. ‘ বিগ ব্যাং’ থিওরি আবিষ্কার হয় মাত্র চল্লিশ বছর আগে

সূরা আম্বিয়া ৩০ নং আয়াতে কুরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوٓا أَنَّ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنٰهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَآءِ كُلَّ شَىْءٍ حَىٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ
যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখেনা যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবেনা?

সূরা আম্বিয়া আয়াত ৩০

উত্তর:
এই কথাটা অনেক শুনি। কথা হলো বিগ ব্যাং এর ৯.৩ বিলিয়ন বছর পরে এই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। তো, এই আয়াতে কিভাবে বিগ ব্যাং খুঁজে পেলেন মুমিন ভাইয়েরা? বিজ্ঞান বলে বিগ ব্যাং এর সময় পৃথিবী ছিলো না, কিন্তু আল্লাহ পৃথিবী আর আকাশ আলাদা করলেন! এইটা কি ভাই বিগ ব্যাং এর সহিহ ইসলামী ভার্শন?? লুল…
এই আয়াতে বিগ ব্যাং তো নেই ই, বরং তৎকালীন সময়ের একটা প্রচলিত ভুল ধারনা ফুটে উঠেছে এখানে। সেই সময় সবাই ভাবতেন যে, আকাশ হল ছাদের মত, আর পৃথিবী বিছানা… এই ছাদ আর বিছানা অর্থাৎ আকাশ আর পৃথিবী একসময় জোড়া লাগানো অবস্থায় ছিল। পরে তা আলাদা হয়ে গেছে। এই কথার সত্যতা উক্ত আয়াতেই লুকিয়ে আছে।
আয়াতটির শুরুতেই বলা হয়েছে, “কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে…” এর উত্তরে কি আসে? উত্তরটা আসে এমন, “হ্যা, কাফেররা ভেবে দেখে…” কি ঠিক বললাম? অর্থাৎ, ব্যাপারটা আগেই কাফেররা জানতো। আমরা দৈনন্দিন অনেক ব্যাপারেই এরকম উক্তি ব্যবহার করি। যেমন, আপনি গুরুত্বপুর্ন কোন কাজে ব্যস্ত, আপনার বন্ধু এসে আজাইরা প্যাচাল শুরু করলো। তখন আপনি কি বলবেন? বলবেন, “তুমি কি দেখছো না আমি কাজ করছি?” উত্তর আসবে, “হ্যা, আমি দেখছি”… ঠিক, এমন করেই কুরানে আরবের তৎকালীন জানা একটি বিষয় তুলে ধরতেই আল্লাহ বলেছেন, “কাফেররা কি ভেবে দেখে না?”

৫. পানি চক্রের কথা বিজ্ঞান জেনেছে বেশি দিন হয়নি

সূরা যুমার ২১ নং আয়াতে কুরআন এই কথা বলেছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَلَكَهُۥ يَنٰبِيعَ فِى الْأَرْضِ ثُمَّ يُخْرِجُ بِهِۦ زَرْعًا مُّخْتَلِفًا أَلْوٰنُهُۥ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرٰىهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَجْعَلُهُۥ حُطٰمًا ۚ إِنَّ فِى ذٰلِكَ لَذِكْرٰى لِأُولِى الْأَلْبٰبِ
তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন; অতঃপর ভূমিতে নির্ঝর রূপে প্রবাহিত করেন এবং তদ্বারা বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর ওটা শুকিয়ে যায় এবং তোমরা ওটা পীত বর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তিনি ওটা খড়কুটায় পরিণত করেন? এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য।

সূরা যুমার আয়াত ২১

উত্তরঃ এখানে পানিচক্র কই পেলেন? এটা তো বাচ্চাও বলতে পারবে। এটাতো Layman’s term এ দেখানো হল। আবার Eisegesis.

৬. ইসলাম আমাদেরকে ডান দিকে ফিরে ঘুমাতে উৎসাহিত করেছে; বিজ্ঞান এখন বলছে ডান দিকে ফিরে ঘুমালে হার্ট সব থেকে ভাল থাকে

উত্তরঃ না। বিজ্ঞান নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থার মানুষের জন্য নির্দিষ্ট করে না বলে কখনই এভাবে ঢালাওভাবে বলেনা। হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে একেক অবস্থার জন্য একেকটা সাজেস্ট করা হয়। (2) আর স্বাভাবিক অবস্থায় শোয়ার ক্ষেত্রে ডানে বামে না ফিরে ঘুমানোকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। (3)

৭. বিজ্ঞান এখন আমাদের জানাচ্ছে পিপীলিকা মৃত দেহ কবর দেয়, এদের বাজার পদ্ধতি আছে

কুরআনের সূরা নামল এর ১৭ ও ১৮ নং আয়াতে এই বিষয়ে ধারণা দেয়।

27:17
وَحُشِرَ لِسُلَيْمٰنَ جُنُودُهُۥ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ وَالطَّيْرِ فَهُمْ يُوزَعُونَ
সুলাইমানের সামনে সমবেত করা হল তার বাহিনীকে, জিন, মানুষ ও পক্ষীকুলকে এবং তাদেরকে বিন্যস্ত করা হল বিভিন্ন বুহ্যে।
27:18
حَتّٰىٓ إِذَآ أَتَوْا عَلٰى وَادِ النَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌ يٰٓأَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوا مَسٰكِنَكُمْ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمٰنُ وَجُنُودُهُۥ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছল তখন এক পিপীলিকা বললঃ হে পিপীলিকা বাহিনী! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর, যেন সুলাইমান এবং তার বাহিনী তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পদতলে পিষে না ফেলে।

সূরা নামল আয়াত ১৭-১৮

উত্তরঃ এখানে আমরা এইসব দাবির প্রমাণ পেলাম না খালি চোখে যা দেখা যায় তা ভিন্ন। তবে হ্যাঁ একটি মজার ব্যাপার পেলাম যে পিঁপড়া কথা বলে। হাহাহা 😀

৮. ইসলাম মদ পানকে হারাম করেছে, চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে মদ পান লিভারের জন্য ক্ষতিকর

উত্তর: ইসলাম মদ পান হারাম করেছে মুমিনরা যাতে যুদ্ধে টাল না হয়ে পড়ে সেই জন্য, কোন বৈজ্ঞানিক উপকারিতার জন্য না।

৯. ইসলাম শুকরের মাংসকে হারাম করেছে। বিজ্ঞান আজ বলছে শুকরের মাংস লিভার, হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর

উত্তর: একই কথা গরুর মাংস, খাসির মাংসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কই? এগুলো তো নিষিদ্ধ নয়?

১০. রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুগ্ধ উৎপাদন এর ব্যাপারে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান জেনেছে মাত্র কয়েক বছর আগে

সূরা মুমিনূনের ২১ নং আয়াতে কুরআন এই বিষয়ে বর্ণনা করে গেছে।

وَإِنَّ لَكُمْ فِى الْأَنْعٰمِ لَعِبْرَةً ۖ نُّسْقِيكُم مِّمَّا فِى بُطُونِهَا وَلَكُمْ فِيهَا مَنٰفِعُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ
এবং তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে চতুস্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে। তোমাদেরকে আমি পান করাই ওদের যা আছে তা থেকে; এবং এতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকারিতা এবং তোমরা উহা হতে আহার কর।

সূরা মুমিনুন আয়াত ২১

উত্তরঃ Milk allergy, Lactose intolerance এগুলোর নাম শুনেছেন? গুগল করেন। 

১১.মানুষের জন্ম তত্ব ভ্রুণ তত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞান জেনেছে এই কদিন আগে

কুরআনে বিভিন্ন সূরায় এই বিষয়ে জানিয়ে গেছে ১৪০০ বছর আগে।

উত্তর:

আমরা দেখি যে কোরআনে পাঁচটি ধাপের বর্ণনা রয়েছে –

  • প্রথম ধাপ : নুৎফা (نُطْفَه) – বীর্য
  • দ্বিতীয় ধাপ : ‘আলাক্বা (عَلَق) – রক্তপিণ্ড
  • তৃতীয় ধাপ : মুদাঘা (مُضْغَه) – গোশতের খণ্ড বা পিণ্ড
  • চতুর্থ ধাপ : ‘আদাম (عَظَمَ) – হাড়
  • পঞ্চম ধাপ : গোশত দিয়ে হাড়কে ঢেকে দেওয়া।

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে হযরত মুহাম্মদের সময়কালেও মানব ভ্রুণের এই ধাপগুলো অজানা ছিল না, বরং মধ্যপ্রাচ্যে অনেকাংশে এগুলো সাধারণ জ্ঞান ছিল। হিপক্রিতাস, এরিস্টটল এবং গ্যালেনের প্রত্যেকেরই লেখাতে এই ধাপগুলোর বর্ণনা করেছেন:

  • প্রথম ধাপ : বীর্য
  • দ্বিতীয় ধাপ : মাসিক রক্ত
  • তৃতীয় ধাপ : মাংস
  • চতুর্থ ধাপ : হাড়
  • পঞ্চম ধাপ : গোশত দিয়ে হাড়কে ঢেকে দেওয়া

এই গ্রীক বিজ্ঞান আরবীয়দের কাছে পরিচিত ছিল। বলা বাহুল্য এটাও গ্রিক দেরই কপি পেস্ট। “কুরআনের বিজ্ঞান” ওই সময় পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। :p

কুরআনের এই বিজ্ঞান পুরোপুরি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। পৃথিবীর কোনো ভ্রূণ তত্ত্ববিদ পাগল হয়ে গেলেও দাবি করবে না যে মানব শিশু জন্মের কোনো পর্যায়ে সে রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়!

১২. ভ্রণতত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞান আজ জেনেছে পুরুষই ( শিশু ছেলে হবে কিনা মেয়ে হবে) তা নির্ধারণ করে

(সূরা নজমের ৪৫, ৪৬ নং আয়াত, সূরা কিয়ামাহ’র ৩৭- ৩৯ নং আয়াত)
উত্তর: এই রেফারেন্স গুলোতে শুধুমাত্র সন্তান ছেলে বা মেয়ে হবে সেটা বলা হয়েছে। 
এটা জানতেও “বিজ্ঞান” লাগে? লাগে কমন সেন্স। তাছাড়া আল্লাহ তৃতীয় লিঙ্গের কথা বা উভলিঙ্গের কথা ভুলে গেলেন বেমালুম?

১৩. পৃথিবী দেখতে কেমন? এক সময় মানুষ মনে করত পৃথিবী লম্বাটে, কেউ ভাবত পৃথিবী চ্যাপ্টা , সমান্তরাল… কোরআন ১৪০০ বছর আগে জানিয়ে গেছে পৃথিবী দেখতে অনেকটা উট পাখির ডিমের মত গোলাকার

উত্তর: সেই জাকিরিয় ত্যানা। “ﺩَﺣَﺎﻫَﺎ” মানে উটপাখির ডিম? এটার মানে বিস্তীর্ণ করা। 
দুহিয়া মনে ডিম। দাহাহা এসেছে উট পাখি ডিম পাড়ার সময় সময় পা দিয়ে যে জায়গা টুকু বিস্তীর্ণ করে সেটা থেকে। কোনো পুরনো অনুবাদে বিস্তৃত করার বদলে এই উটপাখির ডিম শব্দ ব্যবহৃত হয়নি।
আর যদি কথাটির মনে উটপাখির ডিমই ধরি তাহলে, উটপাখি আগে এসেছিল না পৃথিবী?
পুরো সুরাটির মনে কি হবে?
“তারপর আমি পৃথিবীকে উটপাখির ডিম বানাইয়া দিলাম”?
Verb এর জায়গায় আরবিতে noun দিয়ে রিপ্লেস করা যায়??
Eratosthenes (276 BCE – 195 BCE) প্রথম গ্রিক গণিতবিদ যিনি পৃথিবীর পরিধি মাপেন। পরিধি কিসের হয়?

১৪. পৃথিবীতে রাত এবং দিন বাড়া এবং কমার রহস্য মানুষ জেনেছে দুশ বছর আগে

সূরা লুকমানের ২৯ নং আয়াতে কুরআন এই কথা জানিয়ে গেছে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে !!

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন?

সূরা লুকমান আয়াত ২৯

উত্তর: আয়াত গুলো আবার পড়ে দেখুন। আবার Layman’s term। ওখানে তাইই বলা আছে যা একজন কমন ম্যান এর জানার কথা। এর মধ্যেও বিজ্ঞান খোঁজা বোকামি। বরং সারা পৃথিবীর দিকে তাকালে ভালভাবেই বোঝা যায় যে পৃথিবীতে কখনই দিনের মধ্যে রাত বা রাতের মধ্যে দিন প্রবেশ করেনা, সারা পৃথিবীতে একই সময়ে দিন বা রাত থাকতে পারে।

১৫. একটি শিশু যখন গর্ভে থাকে তখন সে আগে কানে শোনার যোগ্যতা পায় তারপর পায় চোখে দেখার

সূরা সাজদাহ আয়াত নং ৯ এবং সূরা ইনসান আয়াত নং ২ তে আল্লাহ ১৪০০ বছর আগেই এই কথা বলে গেছে আলহামদুলিল্লাহ!

32:9
ثُمَّ سَوّٰىهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّوحِهِۦ ۖ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصٰرَ وَالْأَفْئِدَةَ ۚ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ
অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
76:2
إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسٰنَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنٰهُ سَمِيعًۢا بَصِيرًا
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।

আবারও Eisegesis. শুধুমাত্র শব্দগুলো আগে লেখা হয়েছে বলে মিলে গেল?? দুইটাই ডেভেলপ হয় 16 week এ। 

শেষকথাঃ ঐসমস্ত মুমিনদের উদ্দেশ্য আমার আবেদন রইল, যারা বিজ্ঞানের আবিষ্কার করার পরেই আয়াতকে বিকৃত করে বিজ্ঞানের সাথে মিলাবার চেষ্টা করেন, আপনারা এবার কুরআন থেকে নিজেরা মাত্র ২-৩ টা তথ্য আবিষ্কার করে দেখান। সব আবিষ্কার তো কাফেররাই করল। দয়া করে আর এইভাবে বিজ্ঞানের মায়রেবাপ করবেন না। ধর্ম ধর্মের জায়গায়, বিজ্ঞান বিজ্ঞানের জায়গায়, যে কেউ চাইলে একটিকেই গ্রহণ করতে পারবে। কারন ধর্ম চলে শুধুমাত্র অন্ধবিশ্বাসের ভিত্তিতে, আর বিজ্ঞান চলে যুক্তি ও প্রমাণের ভিত্তিতে।

তথ্যসূত্র

লেখকঃ MD Abdullah

4 thoughts on “১৪০০ বছর আগেই আবিষ্কার ?

  • April 8, 2020 at 1:11 AM
    Permalink

    আপনার লেখা পড়ে আমার মনে কিছু প্রশ্নের উদয় হলো তা মুলত ১.পৃথিবীতে যদি কেউ কিছু আবিষ্কার করে পরবতিতে তার জন্য ঐ ব্যক্তিকেই তার সম্মাননা দেয়া হয় বিজ্ঞান কি নতুন কিছু আবিষ্কার করেছে নাকি তা ১৫৫০ বছর আগের কোরআনে বননা করা ছিল যা কেবল বিজ্ঞান পেল।
    ২.কোরআনের কোথাও কি বলা হয়েছে যে এটি সাইন্স কে প্রমান করতে এসেছে ?
    ৩.কোরআন কি আজকের সাইন্স এর আগে নাজিলকৃত নাকি পরে আপনি কোরানের সাথে সাইন্স কে তুলনা করছেন কেন?
    ৪.সবশেষ প্রশ্ন হলো আপনি নিজেকে নাস্তিক দাবি করেন তাহলে এ গ্রন্থে কি বলা আছে তা নিয়ে আপনি এত মাথা ঘামান কেন?আপনার কাছে কি নাস্তিকতা আর ভাল লাগছেনা?

    Reply
  • December 4, 2023 at 12:00 PM
    Permalink

    মুসলমানরা বলে ‘কোরান ১৪০০ বছর আগে বলেছে পৃথিবী উটের ডিমের মতো গোলাকার’ কিন্তু বাস্তবতা হলো আমাদের পৃথিবী কোনো উটের ডিমের মতো গোলাকার নয় আসলে আমাদের পৃথিবী একটি বৃত্তের মত গোলাকার যে কেউ উটের ডিমের ছবি এবং একটি বৃত্তের ছবি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ‘আমাদের পৃথিবী কি উটের ডিমের মতো গোলাকার নাকি আমাদের পৃথিবী বৃত্তের মতো গোলাকার?

    Reply
  • January 14, 2024 at 12:53 PM
    Permalink

    ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞَ ﻭَﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭَ ﻭَﺍﻟﺸَّﻤْﺲَ ﻭَﺍﻟْﻘَﻤَﺮَ ﻛُﻞٌّ ﻓِﻲ ﻓَﻠَﻚٍ ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥ.
    বাংলা অনুবাদ- আর তিনিই রাত ও দিন এবং সূর্য ও চাঁদ সৃষ্টি করেছেন; সবাই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।

    এখানে আরবি শব্দ “ﻳَﺴْﺒَﺤُﻮﻥَ” দিয়ে “সাঁতার কাটে” বলা হয়েছে, কৌশলে এটাকে “কক্ষপথ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।

    এই লেখায় হয়ত ভুল আছে। পুরো আরবি আয়াতটা ট্রান্সলেটরে দিলে এই লেখা আসে
    “তিনিই রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, না, তারা কক্ষপথে সাঁতার কাটে।”

    আপনি বলেছেন সাতার কাটার জায়গায় কক্ষপথ লিখে দিয়েছে। কিন্তু অনুবাদে আলাদা শব্দ দেখানো হয়েছে। একটু দেখবেন এটা

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *