হাত হলো প্রাণীদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা মূলত স্তন্যপায়ী প্রাণী, বিশেষত মানুষের শারীরবৃত্তীয় এবং শারীরিক গঠনের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য। হাতের গঠন এবং কার্যক্রম মানবজাতির অস্তিত্ব এবং বিবর্তনের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। প্রাণীদের হাত হলো একটি অঙ্গ, যা সাধারণত শরীরের উপরের অংশে অবস্থিত এবং এটি বিভিন্ন কাজ করতে ব্যবহৃত হয়, যেমন—ধরা, স্পর্শ করা, কাজ করা ইত্যাদি। হাতের সাহায্যে প্রাণীরা তাদের চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে এবং প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করতে পারে। তবে, হাত কেবল মানুষের জন্যই সীমাবদ্ধ নয়; অন্যান্য প্রাণীদেরও বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ রয়েছে যা হাতে পরিণত হয়েছে বা হাতের মতো কাজ করে।
হাতের উদ্ভব সম্পর্কে আলোচনা করলে, আমরা বিবর্তন তত্ত্বে ফিরে যেতে পারি। জীববিজ্ঞান অনুসারে, বর্তমান সময়ে হাতের যে গঠন এবং কার্যক্রম দেখা যায়, তা দীর্ঘ বিবর্তনের ফসল। হাতের উদ্ভব হয়েছে প্রাচীনতম মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পাখনা থেকে, বিশেষ করে মাছ প্রজাতির পূর্বপুরুষদের মধ্যে দেখা যায় যে, তাদের পাখনার কিছু অংশ ছিল যা পরে বিকশিত হয়ে বিভিন্ন ভূমির প্রাণীদের ক্ষেত্রে অঙ্গ হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রাচীন জলজ প্রাণীরা যখন ভূমিতে উঠতে শুরু করল, তখন তাদের অঙ্গগুলো নতুন ধরনের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার প্রয়োজনে পরিবর্তিত হতে থাকে। ক্রমান্বয়ে, পাখনার স্থানে শক্ত অস্থি এবং গঠন তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে হাতের আদল ধারণ করে। এভাবেই বিবর্তনের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাখনা থেকে হাতের উদ্ভব হয়েছে।
মানবজাতির হাতের বিবর্তন মূলত আমাদের পূর্বপুরুষদের উদ্ভবের সময় শুরু হয়েছিল, যখন প্রথম দিকের প্রাইমেটরা গাছের উপর বসবাস করত। এই প্রাইমেটদের হাতগুলো গাছের শাখা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল, যা তাদের গাছের মধ্যে চলাচল করতে এবং শিকার করতে সহায়তা করেছিল। পরবর্তীতে, যখন মানবজাতি স্থলভাগে বেশি সময় কাটাতে শুরু করল, হাতের আঙুল এবং কব্জি আরও বেশি নমনীয় হয়ে উঠল, যা বিভিন্ন সূক্ষ্ম কাজ সম্পাদনে সহায়ক হয়েছিল। বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী, মানবজাতির হাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর অঙ্গগুলির নমনীয়তা, আঙুলের সঠিক অনুক্রমিক বিন্যাস এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির বিপরীতমুখীতা (opposability), যা মানবজাতিকে অন্যান্য প্রাইমেটদের থেকে আলাদা করেছে এবং জটিল হাতের কাজ করতে সক্ষম করেছে। বৃদ্ধাঙ্গুলির এই বিপরীতমুখীতা মানুষের জন্য বিভিন্ন কাজ যেমন, ধরার ক্ষমতা, অস্ত্র ও জটিল সরঞ্জাম তৈরি এবং ব্যবহার করা সহজ করেছে। এর ফলে মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশ এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতার বৃদ্ধিতেও হাতের ভূমিকা অপরিসীম।
হাতের ব্যবহার আধুনিক মানবজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের কাজে হাতের ভূমিকা অপরিসীম। আমরা হাতের সাহায্যে লিখতে পারি, খাওয়া-দাওয়া করতে পারি, যন্ত্রপাতি চালাতে পারি এবং আরও নানা সূক্ষ্ম কাজ করতে সক্ষম হই। হাত ছাড়া আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজই করতে পারতাম না। উদাহরণস্বরূপ, শিল্পী তার কল্পনাশক্তির মাধ্যমে চিত্র অঙ্কন করতে হাতের ব্যবহার করে, বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে যন্ত্রপাতি পরিচালনা করতে হাত ব্যবহার করেন, এবং খেলোয়াড়রা খেলার সময় বল ধরা বা ছোড়ার জন্য হাতের ব্যবহার করেন। এছাড়া, মানুষের আবেগ প্রকাশেও হাতের ভূমিকা আছে। আমরা হাত দিয়ে ইশারা করে, স্পর্শ করে এবং অন্যকে সাহায্য করে আমাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি।
অন্যদিকে, অন্যান্য প্রাণীর হাতের বিকাশ তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে বিবর্তিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বানর এবং গরিলা প্রজাতির প্রাণীদের হাত তাদের গাছের শাখা ধরে রাখতে এবং ঝুলে থাকতে সহায়ক। এভাবে তাদের হাতের গঠন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিকশিত হয়েছে। আবার বাদুড়ের ক্ষেত্রে, তাদের হাতের হাড়গুলি ডানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা তাদের উড়তে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, হাত কেবল ধরার জন্য নয়, বরং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং বিভিন্ন কাজে অংশ নিতে প্রাণীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। সার্বিকভাবে, আধুনিক বিবর্তন তত্ত্ব এবং জীববিজ্ঞান অনুসারে হাতের উদ্ভব এবং এর বিকাশ মানবজাতি ও অন্যান্য প্রাণীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাতের বিকাশ আমাদের পূর্বপুরুষদের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করেছে এবং আধুনিক মানবজাতির মস্তিষ্কের বিকাশ এবং জ্ঞানীয় ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে।
খুব অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, কোরআন হাদিসের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহর হাতের কথা খুব পরিষ্কারভাবেই বলা আছে। এমন নয় যে, এটি রূপক অর্থে বলা আছে, খুব পরিষ্কারভাবে হাতের কথাই সেখানে বলা হয়েছে। হাত শব্দটির অর্থ হচ্ছে, শরীরের যে অঙ্গ দ্বারা প্রাণীরা নানা ধরণের কাজ করে থাকে। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, স্কন্ধ-প্রান্ত হতে অঙ্গুলীশীর্ষ পর্যন্ত দেহাংশ, বা বাহু। কিন্তু সর্বশক্তিমান যেই সত্তা হও বললেই সব হয়ে যায়, তার হাত আসলে কেন দরকার, সেই হাতগুলো দিয়ে সে কী করে, সেগুলো চিন্তাশীল মানুষের মনেই জাগবে [1] [2]
তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা দেয় না। ক্বিয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী তাঁর হাতের মুষ্ঠিতে থাকবে, আর আকাশমন্ডলী থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে। মাহাত্ম্য তাঁরই, তারা যাদেরকে তাঁর শরীক করে তিনি তাদের বহু ঊর্ধ্বে।
— Taisirul Quran
তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করেনা। কিয়ামাত দিবসে সমস্ত পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুষ্টিতে এবং আকাশমন্ডলী ভাঁজ করা থাকবে তাঁর ডান হাতে। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে।
— Rawai Al-bayan
আর তারা আল্লাহকে যথোচিত সম্মান করেনি অথচ কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন থাকবে তাঁর হাতের মুঠিতে এবং আসমানসমূহ থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে [১]। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের উর্ধ্বে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৩৯ঃ৬৭ )
আল্লাহ বললেন- হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলাম তাকে সেজদা করতে কিসে তোমাকে নিষেধ করল? তুমি কি দম্ভ দেখালে, না তুমি খুব উচ্চ মানের অধিকারী হয়েছ?
— Taisirul Quran
তিনি বললেনঃ হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সাজদাহবনত হতে তোকে কিসে বাধা দিল? তুই কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলি, নাকি তুই উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?
— Sheikh Mujibur Rahman
আল্লাহ বললেন, ‘হে ইবলীস, আমার দু’হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহঙ্কার করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?’
— Rawai Al-bayan
তিনি বললেন, ‘হে ইবলীস! আমি যাকে আমার দু’হাতে [১] সৃষ্টি করেছি, তার প্রতি সাজদাবনত হতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?’
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
( কোরআন ৩৮ঃ৭৫ )
আর কিছু জায়গাতে আল্লাহর হাতের কথা বলা আছে, যদি এই আয়াতগুলোতে রূপক অর্থেই বলা হয়েছে, যা আমাদের এই আলোচনার বিষয়বস্তু নয় [3] [4]
আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে।
( কোরআন ৪৮ঃ১০ )
আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক। একথা বলার জন্যে তাদের প্রতি অভিসম্পাত। বরং তাঁর উভয় হস্ত উম্মুক্ত।
( কোরআন ৫ঃ৬৪ )
এবারে আসুন কয়েকটি হাদিস পড়ে নিই,
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৬/ জাহ্মিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ৩১৩৮. কিয়ামতের দিনে নবী ও অপরাপরের সাথে মহান আল্লাহ্র কথাবার্তা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৭০০৫, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৭৫১৩
৭০০৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ইহুদী পণ্ডিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললো, কিয়ামতের দিন আল্লাহ আসমান সমূহকে এক আঙ্গুলে, ভূমন্ডলকে এক আঙ্গুলে, পানি ও কাঁদামাটি এক আঙ্গুলে এবং অবশিষ্ট সৃষ্টিকে এক আঙ্গুলে উঠিয়ে ঝাঁকুনি দিয়ে বলবেন, আমিই একমাত্র বাদশাহ, আমিই একমাত্র বাদশাহ। আমি তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখলাম, তিনি তার উক্তির সত্যতার প্রতি বিস্মিত হয়ে এমনভাবে হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁতগুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের বানীঃ وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ পড়লেন। তারা আল্লাহর যথার্থ মর্যাদা উপলদ্ধি করেনি (৬ঃ ৯১)। والأرض جميعا قبضته يوم القيامة والسماوات مطويات بيمينه سبحانه وتعالى عما يشركون কিয়ামতের দিন সমস্ত পৃথিবী থাকবে তার হাতের মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ থাকবে তার করায়ত্ত, পবিত্র ও মহান তিনি এরা যাকে শরীক করে, তিনি তার ঊর্ধ্বে (৩৯ঃ ৬৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ)
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা
পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ – শিঙ্গায় ফুৎকার
৫৫২৪-[8] ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ইয়াহূদী পাদ্রি নবী (সা.) -এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা (তাওরাতে) পেয়েছি যে, আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন আকাশমণ্ডলীকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। জমিনকে এক আঙ্গুলের উপর, পর্বতমালা ও গাছসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এবং কাদা-মাটিকে এক আঙ্গুলের উপর, আর অন্যান্য সমস্ত সৃষ্টিজগতকে এক আঙ্গুলের উপর রাখবেন। অতঃপর এ সমস্ত কিছুকে নাড়া দিয়ে বলবেন, আমিই বাদশাহ, আমিই আল্লাহ! ইয়াহুদী পাদ্রির কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) এই বিস্ময়ে হয়ে হেসে ফেললেন, তিনি যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। অতঃপর তিনি (সা.) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন- (وَ مَا قَدَرُوا اللّٰهَ حَقَّ قَدۡرِهٖ ٭ۖ وَ الۡاَرۡضُ جَمِیۡعًا قَبۡضَتُهٗ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَ السَّمٰوٰتُ مَطۡوِیّٰتٌۢ بِیَمِیۡنِهٖ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ) – “আল্লাহ তা’আলার যতটুকু সম্মান করা দরকার ছিল তারা ততটুকু সম্মান করেনি, অথচ কিয়ামতের দিন সম্পূর্ণ পৃথিবী তাঁর মুষ্টিতে থাকবে এবং আকাশমণ্ডলী ডান হাতে গুটানো থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে”- (সূরা আয যুমার ৩৯: ৬৭)। (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহ: বুখারী ৭৪১৪, মুসলিম ১৯-(২৭৮৬), তিরমিযী ৩২৩৮, মুসনাদে আহমাদ ৪০৮৭, আবূ ইয়া’লা ৫৩৮৭, আস সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী ১১৪৫১, আল মু’জামুল কাবীর লিত্ব তবারানী ১০১৮১, আল মু’জামুল আওসাত্ব ৫৮৫৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ)
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ৪৪/ তাফসীরুল কুরআন
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৬. সূরা আল-মায়িদাহ
৩০৪৫। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দয়াময় আল্লাহ তা’আলার ডান হাত পূর্ণ। সর্বদা তা অনুগ্রহ ঢালছে। রাত দিনের অবিরাম দান তাতে কখনো কমতি ঘটাতে পারে না। তিনি আরো বলেন, তোমরা লক্ষ্য করেছ কি যেদিন থেকে তিনি আসমান-যামীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন হতে কত না দান করে আসছেন, অথচ তার ডান হাতে যা আছে তাতে কিছুই কমতি হয়নি। (সৃষ্টির পূর্বে) তার আরশ ছিল পানির উপর। তার অপর হাতে রয়েছে মীযান (দাঁড়ি-পাল্লা)। তিনি তা নীচু করেন ও উত্তোলন করেন (সৃষ্টির রিযিক নির্ধারণ করেন)।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৯৭)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি হল নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপঃ “ইয়াহুদীরা বলে, আল্লাহ তা’আলার হাত রুদ্ধ। ওরাই আসলে রুদ্ধহস্ত এবং ওরা যা বলে তজ্জন্য ওরা অভিশপ্ত। বরং আল্লাহ তা’আলার উভয় হাতই প্রসারিত, যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন”— (সূরা আল-মায়িদাহ ৬৪)।
ইমামগণ বলেন, এ হাদীস যেরূপে (আমাদের নিকট) এসেছে, কোনরূপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সন্দেহ-সংশয় ব্যতীতই তার উপর সেভাবেই ঈমান আনতে হবে। একাধিক ইমাম এ কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুফইয়ান সাওরী, মালিক ইবনু আনাস, ইবনু উয়াইনাহ, ইবনুল মুবারাক (রাহঃ) প্রমুখ। তাদের মতে এরূপ বিষয় বর্ণনা করা যাবে, এগুলোর উপর ঈমান রাখতে হবে, কিন্তু তা কেমন এ কথা বলা যাবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯৭/ তাওহীদ
৭৪১৩. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ যমীনকে তাঁর মুঠোয় নিয়ে নেবেন। (৪৮১২) (আধুনিক প্রকাশনী- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ২১. জাহমিয়্যাহ মতবাদ প্রত্যাখ্যাত
৪৭৩২। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন আসমানসমূহকে গুটিয়ে তাঁর ডান হাতে নিয়ে বললেবন, আমি সর্বময় কর্তা ও মালিক, স্বৈরাচারীরা ও অহংকারকারীরা কোথায়? অতঃপর পৃথিবীসমূহকে গুটিয়ে অপর হাতে নিয়ে বলবেন, আমি মালিক স্বৈরাচারীরা ও অহংকারীরা কোথায়?[1]
সহীহ।
[1]. মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
এবারে সহীহ আত-তিরমিযী শরীফ থেকে [5] কয়েকটি পাতা পড়ে নিই-
এবারে তিরমিযী শরীফ থেকে পড়ি [6] –
তথ্যসূত্র
- কোরআন ৩৯ঃ৬৭ [↑]
- কোরআন ৩৮ঃ৭৫ [↑]
- কোরআন ৪৮ঃ১০ [↑]
- কোরআন ৫ঃ৬৪ [↑]
- সহিহ আত-তিরমিযী খণ্ড ৫ পৃষ্ঠা ৪৪৫, ৪৪৬ [↑]
- তিরমিযী শরীফ, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৮১, ৮২ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"